এই প্রশ্নটির উত্তর নিয়ে আলোচনার আগে আসুন জানি ‘রোগ’ কি?
এমন একটি সময় আমরা পার করছি যখন আমাদের প্রতিটি কমন সেন্স শব্দ নিয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যার প্রয়োজন হয়ে পড়ছে।
যেমন, ‘রোগ’ কি? আমরা সবাই বুঝি যে রোগ হচ্ছে এমন একটি অবস্থা যা আমাদের স্বাভাবিক কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটায় বা সহজতা থেকে দূরে সরায়। অর্থাৎ, রোগ হচ্ছে অ-সুস্থতা। এ অসুস্থতা অনেক ধরণের হতে পারে। তন্মধ্যে শারীরিক, মানসিক, ও সামাজিক অসুস্থতার প্রভাব সাধারণত আমরা ব্যক্তিগত পর্যায়ে সহজে বা দ্রুত উপলব্ধি করি।
প্রশ্ন হল, এখানে ‘স্বাভাবিক’ বলতে কি বুঝায়?
জটিলতা চলে আসে এখানেই। কারণ, স্বাভাবিক-এর সংজ্ঞায়ন জটিল।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী normally distributed কোন ভ্যালুর গড় থেকে দুই স্ট্যান্ডার্ড ডেভিয়েশন পর্যন্ত হয়ত স্বাভাবিক।
জৈবিকভাবে শারীরিক অঙ্গের স্বাভাবিক কাজের ব্যঘাত বা ব্যতিক্রম হচ্ছে অস্বাভাবিক।
মানসিকভাবে অধিকাংশ মানুষের মাঝে আমরা যে আচরণ দেখতে পাই বা যে আচরণ সামাজিক ‘নর্ম’ এর সাথে সাজুয্যপূর্ণ তাই স্বাভাবিক।
আর, সামাজিকভাবে যা সমাজের সাংস্কৃতিক বা সামাজিক ‘নর্ম’ এর মধ্যে তাই স্বাভাবিক।
তাহলে ‘নর্ম’ কি?
নর্মস হল সমাজের অধিকাংশ মানুষের কাছে যেই আচরণটি গ্রহনযোগ্য। একটি সমাজের নর্মস নির্ধারিত হয় সেই সমাজের পূববর্তী সময় থেকে প্রচলিত গ্রহণযোগ্য আচরণ (সংস্কৃতি ও ট্রাডিশন),, বর্তমান মানুষদের বিশ্বাস এবং মোরাল ভ্যালুস এর দ্বারা। আবার, মানুষের বিশ্বাস ও মোরাল ভ্যালুস নির্ধারিত হয় তার ধর্ম, পড়াশোনা এবং ট্রাডিশনের মাধ্যমে।
এবার আবার একটু ‘রোগ’-এ ফিরে আসি।
যখন কোন রোগ হয়, চিকিৎসকরা রোগটির কারণ নির্ধারণ করে চিকিৎসা করার চেষ্টা করেন। কিছু রোগ আছে যেগুলো মানুষের জেনেটিক্স দিয়ে নির্ধারিত এবং এখনও যেগুলোর চিকিৎসা আবিস্কার হয়নি।
যেমন, হানটিংটিন ডিজিজ। এটি একটি নিউরোলজিকাল রোগ যাতে আক্রান্ত রোগী অস্বাভাবিকভাবে হাত পা ছোড়াছুড়ি করতে থাকে যার ওপর তার কোন নিয়ন্ত্রণ নেই।
এই রোগটি হয় হানটিংটিন (HTT) জিনে একটি কোডন CAG এর বারংবার পুনরাবৃত্তির কারণে। আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে মানুষভেদে এই রিপিটেশনের পরিমাণ ১০ থেকে ৩৫ হতে পারে। রিপিটের পরিমান যত বেশী তত বয়সের দিকে দিয়ে তত আগে রোগের লক্ষণ গুলো প্রকাশ পায়।
লক্ষ্যনীয়, CAG রিপিটের ভ্যারিয়েশনের কারণে HTT জিনের বিভিন্ন ধরণ হয় তাকে আমরা ‘রিপিট লেঙদ পলিমরফিজম’ বলতে পারি।
লক্ষ্যনীয়, রিপিট লেংদ পলিমরফিজমের কারণে যে এবনারমাল বিহেভিয়ার তৈরী হচ্ছে, তাকে কিন্তু আমরা রোগ বলছি, স্বাভাবিক বলছি না।
এবার আসুন আরেকটি রোগের উদাহরণ দেই। এই রোগটির সাথে এন্ড্রোজেন রিসেপটর (AR) জিনে রিপিট লেংদ পলিমরফিজম-এর সম্পর্ক আছে বলে একদল বিজ্ঞানী উপাত্ত পেয়েছেন (১)। AR জিনে রিপিট লেংদ পলিমরফিজমের জন্য যে সমস্যাটি হয় তার নাম হচ্ছে মেল টু ফিমেল ট্রা/নস/সেক/সুয়েলিজম। অর্থাৎ, যখন কোন পুরুষ অন্যদের পুরুষদের প্রতি আকর্ষণ অনুভব (ইয়াক!) করে তার পিছনের সম্ভাব্য কারণ হতে পারে এই রোগ।
এখন, রোগী হিসেবে এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা সহানুভূতি পেতে পারে, কিন্তু হানটিংটিনকে যেমন আমরা ‘স্বাভাবিকতার’ সংজ্ঞা পাল্টে ‘ব্যতিক্রম’ বলছি না, ঠিক একইভাবে ‘ট্রা/নস/সেক/সুয়েলিজম’ কে ‘লগদভক’-এর মধ্যে ফেলে ‘অসুস্থতার’ পরিবর্তে ‘সুস্থতা’ বলার কোন কারণ নেই।
হ্যা, যারা বলতে চায়, তারা কিন্তু আরও ‘কোর’-এর পরিবর্তনের চেষ্টা চালাচ্ছে। তারা চাচ্ছে সোসাইটাল নর্ম-এর মধ্যে পরিবর্তন আনতে।
আমরা আগে দেখেছি, একটি সমাজের নর্মস নির্ধারিত হয় সেই সমাজের পূববর্তী সময় থেকে প্রচলিত গ্রহণযোগ্য আচরণ (সংস্কৃতি ও ট্রাডিশন), বর্তমান মানুষদের বিশ্বাস এবং মোরাল ভ্যালুস-এর দ্বারা। আবার, মানুষের বিশ্বাস ও মোরাল ভ্যালুস নির্ধারিত হয় তার ধর্ম, পড়াশোনা এবং ট্রাডিশনের মাধ্যমে।
আপনারা নিশ্চয় বুঝতে পারছেন যে কিভাবে তারা নর্মকে পরিবর্তন করতে চাচ্ছে?
Leave a Reply