মানুষের আদি পিতা-মাতা ও বিজ্ঞান সাংবাদিকতা

সাংবাদিকরা যখন বিজ্ঞান নিয়ে কথা বলেন তখন যে বিজ্ঞানের ‘ছেড়ে দে মা কেন্দে বাঁচি’ অবস্থা হয় তার সবচেয়ে উদাহরণ হল বাংলাদেশের চিকিৎসা বা চিকিৎসকদের নিয়ে করা প্রতিবেদন। ধরে নিলাম অধিকাংশ বাংলাদেশী সাংবাদিকদের নিয়ে এত বড় আশা কঠিন যে তারা কোন বিষয় সম্পর্কে বিস্তর জেনে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ দিবে। কিন্তু পাশ্চাত্যের সংবাদমাধ্যমগুলোর কি অবস্থা? বিজ্ঞানের কোন বিষয়ে তাদের কোন প্রতিবেদনে কি বিশ্বাস করা যায়?

ব্যক্তিগতভাবে আমার এই ধরনের সকল ‘পপুলার সায়েন্স নিউজ’-এ এক সময় ভালই আস্থা ছিল। কিন্তু, এখন আর তা করতে পারি না। কারণ, বিবর্তনবাদ, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রভৃতি নিয়ে সায়েন্স নিউজ রাইটারদের চটকদার নিউজ পড়ার পর যতবারই একটু গভীরে ঘেটে দেখেছি ততই তাদের তথা সায়েন্স (নিউজ) রাইটারদের প্রতি আমার বিশ্বাস হালকা হয়ে গেছে। সায়েন্স রাইটাররা দুই ধরনের হয়- হয় তারা ভাল জানে এবং জেনে ইচ্ছেকৃত স্পেসিফিক এজেন্ডা (সায়েন্টিজম-এর প্রসার) এর জন্য লিখে, অথবা, তারা জিনিসটা সম্পর্কে না জেনে বা না বুঝে লিখে। সব সায়েন্স নিউজ পোর্টাল এরকম হয় তাও বলছি না। তবু, সায়েন্স নিয়ে কোন ‘নিউজ’ দেখলে চেষ্টা করি মূল রিসার্চটা কি বলেছে একটু ঘেটে দেখার। বিশেষ করে, যদি সময় পাই, যে বিষয়টির টেকনিকাল দিকগুলো সম্পর্কে পড়েছি, অন্তত সে বিষয়গুলো একটু দেখে নেই।   


যাই হোক, ফেসবুকে ডেইলী মেইলের একটি নিউজ সবাই শেয়ার করছে যাতে বলা হচ্ছে যে, মার্ক স্টিকল ও ডেভিস থেলার নামক দু জন বিজ্ঞানী তাদের ২০১৮ সালের একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখিয়েছেন সমস্ত মানুষ এক জোড়া মানুষ থেকে এসেছে এবং এক লক্ষ বছর আগে একটি সর্বব্যপী দূর্ঘটনায় পৃথিবীর সব স্পিসিস প্রায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।(1)

এই নিউজ যারা পড়েছেন এবং শেয়ার করেছেন তাদের মধ্যে দু’ধরনের রিসপন্স দেখলাম-
১. যারা ডারউইনবাদকে বিতর্কিত তত্ত্ব বলে মনে করেন তারা এই গবেষণাটিকে বিবর্তনের বিপরীতে এভিডেন্স হিসেবে দেখছেন এবং তারা ইমপ্লিসিট ভাবে মনে করছেন যে এই আবিস্কার মেজর রিলিজিওন বর্ণিত ‘আদম-হাওয়া’ থেকে মানুষের আবির্ভাবকে এনডর্স করে।
২. যারা ডারউইনবাদকে প্রশ্নাতীতভাবে সত্য মনে করেন, তারা হয় চুপ আছেন বা এই রিসার্চ বিবর্তনতত্ত্বকে এনডর্স করে বলে মনে করছেন।

আগে থেকে এই ধরনের রিসপন্স সম্পর্কে পরিচিতি থাকায় আমি ভাবলাম মূল রিসার্চটা একটু পড়ে দেখা দরকার। যেই ভাবা সেই কাজ। আর্টিকেলটা পড়লাম। মলিকিউলার ইভল্যুশন সম্পর্কে আইডিয়া না থাকলে আর্টিকেল থেকে মূল বক্তব্য বের করাটা একটু কঠিন। তবে আমি যতটুকু বুঝেছি সেখান থেকে পাঠকদের জন্য আমার দুই পয়সা-
  
মূল রিসার্চটার টাইটেল হল “Why should mitochondria define species?” এটি প্রকাশিত হয়েছে হিউম্যান ইভল্যুশন জার্নালে ২০১৮ সালের মে মাসে(2)। নিচে আর্টিকেলে মূল বিষয়গুলো নিজের ভাষায় বলার চেষ্টা করছি।

১. আমরা জানি, প্রতিটি বহুকোষী জীব-এ মাইটোকন্ড্রিয়া নামক অঙ্গানু থাকে যা এটিপি হিসেবে শক্তি সঞ্চিত রাখে।

২. কোষে নিউক্লিয়ার ডিএনএ ছাড়াও মাইটোকন্ড্রিয়ার নিজস্ব ডিএনএ আছে।

৩. নিউক্লিয়ার ডিএনএ-তে মিউটেশনের ফলে জীবের ফিনোটাইপে (অর্থাৎ বাহ্যিক আকার আকৃতি ও বৈশিষ্ট্য) পরিবর্তন হয়।

৪. কিছু কিছু মিউটেশন আছে যাকে বলে ‘নিউট্রাল মিউটেশন’। কারণ, এই ধরনের মিউটেশনের ফলে প্রোটিনের অ্যামাইনো এসিড সিকোয়েন্সে কোন পরিবর্তন হয় না।

৫. কিন্তু, নিউক্লিয়ার ডিএনএ-তে এই ধরনের মিউটেশনের ফলেও ফেনোটাইপে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন  লক্ষ্য করা যায়।   

৬. প্রায় সব মিউটেশনই প্রোটিনের মূল ফাংশনের ব্যঘাত ঘটায়- হয় তার কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয় বা বিকল করে ফেলে। ফেনোটাইপে এ ধরনের পরিবর্তন হলে, উক্ত প্রানীটি রিপ্রোডাক্টিভ ক্ষমতা কমে যায়। কারণ, তার এক বা একাধিক ফাংশনে ত্রুটি থাকায় সে বেঁচে থাকার লড়াই-এ হেরে যায়। এ কারণে এই ধরনের মিউটেশনগুলো পরবর্তি জেনারেশনের প্রবাহিত হতে পারে না। অর্থাৎ, নিউক্লিওটাইড চেঞ্জযুক্ত প্রাণীগুলো অন্য প্রাণীর সাথে প্রতিযোগিতায় পরাজিত হয়। (এভাবে, মিউটেশনযুক্ত প্রাণীর মারা যাওয়া ও অরিজিনাল ফাংশনাল  সিকোয়েন্সযুক্ত প্রাণীর বেঁচে থাকার প্রক্রিয়াকে বলে পিউরিফাইং সিলেকশন।)

৭. এর ফলে ‘মা’ প্রানী ও ‘সন্তান’ প্রাণীর নিউক্লিয়ার ডিএনএ-তে খুব বেশী পরিবর্তন পাওয়া যায় না।

৮. কিন্তু, মাইটোকন্ড্রিয়ার ডিএনএ-এর ক্ষেত্রে ‘নিউট্রাল মিউটেশন’ কোন গুরুত্বপূর্ণ ফাংশনাল পরিবর্তন (ফেনোটাইপিক পরিবর্তন) আনে না। অর্থাৎ, মাইটোকন্ড্রিয়ার ডিএনএতে এই নিউট্রাল মিউটেশনগুলো থেকে যায়। অর্থাৎ ‘মা’ থেকে ‘সন্তানে’ জননকোষ বিভাজনের সময় সংঘটিত মাইটোকন্ড্রিয়াল মিউটেশনগুলো থেকে যায়।

৯. মাইটোকন্ড্রিয়ার ডিএনএতে এই নিউট্রাল মিউটেশনগুলো থেকে যাওয়া উপকারিতা কি?

১০. উপকারিতা হল- এর ফলে ‘মা’ এর তুলনায় ‘সন্তানদের’ মাইটোকন্ড্রিয়াতে যথেষ্ট জেনেটিক ডাইভারসিটি তৈরী হয়।

১১.  এখন, আপনি যদি ধরে নেন যে মাইটোকন্ড্রিয়ার ডিএনএ-তে প্রতিবার রিপ্রোডাকশনের সময় সংঘটিত পরিবর্তনগুলো একটি স্থির হারে হয় এবং আপনার যদি কোন স্পিসিস-এর প্রতি রিপ্রোডাকশনে মিউটেশনের হার জানা থাকে, তাহলে আপনি কোন প্রজাতির আভ্যন্তরিন জেনেটিক ডাইভারসিটি থেকে উক্ত প্রজাতি ও তার কমন এনসেস্টর-এর মর্ধবর্তী সময় বের করতে পারবেন(3)। (এই সময়কে বলা হয় কোলেসেন্স টাইম)

১২. বিজ্ঞানী স্টিকেল ও থেলার কোষের মাইটোকন্ড্রিয়ার এই বৈশিষ্ট্যটি ব্যবহার করে মানুষের কমন এনসেস্টর কত পূর্বে ছিলো এবং একই সাথে অন্যান্য প্রাণীদের কমন এনসেস্টর কতপূর্বে ছিলো তার একটি এস্টিমেট বের করেন।

১৩. তারা মাইটোকন্ড্রিয়ার COI barcode ডাটাবেজ BOLD-এর ডাটা ব্যবহার করেন। লক্ষ্যনীয় যে, GenBank এবং BOLD ডাটাবেজ মিলে প্রায় ৫০ লক্ষ প্রানীর COI barcode ডাটা সংরক্ষিত আছে।

১৩. তাদের হিসেব অনুযায়ী মানুষের কমন এনসেস্টর ছিলো প্রায় ১ লক্ষ বছর আগে। অর্থাৎ, প্রায় ১ লক্ষ বছর আগে একজন পুরুষ ও নারী থেকে বর্তমান মানব জাতি এসেছে। 

১৪. মজার বিষয় হলো, একই সাথে তারা অন্যান্য প্রাণীর বারকোড থেকে হিসেব করেন যে প্রাণী জগতের বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৯০%-এর কমন এনসেস্টর-এর বয়সও প্রায় ১ লক্ষ থেকে ২ লক্ষ বছর। অর্থাৎ, মানুষের মত অন্যান্য প্রাণীও ১ থেকে ২ লক্ষ বছর পূর্বের এক জোড়া কমন এনসেস্টর থেকে এসেছে।

১৫. এর অর্থ কি? সহজ বাংলায়, স্টিকেল ও থেলারের গবেষণা অনুযায়ী বর্তমানে প্রাণীজগতের প্রায় ৯০% প্রায় ১ লক্ষ থেকে ২ লক্ষ বছর আগের সংশ্লিষ্ট প্রজাতির এক জোড়া থেকে এসেছে। উদাহরণস্বরুপ, মানুষের ক্ষেত্রে এক জোড়া নারী-পুরুষ, বাঘের ক্ষেত্রে একজোড়া বাঘ ও বাঘিনী, ইত্যাদি। যারা প্রায় ১ লক্ষ থেকে ২ লক্ষ বছর আগে প্রায় কাছাকাছি সময় জীবিত ছিলো ।

১৬.  মানুষের ক্ষেত্রে এ ধরনের হিসেব (Estimate) আগেও করা হয়েছে।

১৭. লক্ষ্যনীয়, মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ শুধুমাত্র নারীদের জনন কোষ থেকে সন্তানের জাইগোটে প্রবাহিত হয়। ফলে, কেউ মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ থেকে মানুষের এনসেস্ট্রি অ্যানালাইজ করলে মানুষের সর্বশেষ কমন ‘মা’-কে ট্রেস করতে পারবে। ঠিক একই ভাবে শুধুমাত্র ‘Y’ ক্রোমোজোম নিয়ে এনসেস্টি অ্যানালাইজ করলে মানুষের সর্বশেষ কমন ‘বাবা’ কে ট্রেস করা যাবে।

১৮. মাইটোকন্ড্রিয়ার ভিত্তিতে প্রথম কমন ‘মাইটোকনড্রিয়াল ইভ’ এর বয়স বের করেন বিজ্ঞানী কেন, স্টোনকিং এবং উইলসন। তাদের হিসেবে অনুযায়ী মানুষের কমন ‘মাইটোকনড্রিয়াল ইভ’-এর বয়ষ প্রায় ২ লক্ষ বছর। অর্থাৎ ২ লক্ষ বছর আগে আমাদের কমন ‘মা’ পৃথিবীতে বিচরণ করেছিলেন। (4)


১৯.  ‘Y’ ক্রোমোজোম-এর ভিত্তিতে মানুষের কমন বাবা তথা ‘Y ক্রোমোজোমাল অ্যাডাম’-এর বয়স হিসেব ২০০০ সালের দিকে হিসেব করা হয়েছিলো প্রায় ৫০০০০ বছর(5)। যা ‘মাইটোকনড্রিয়াল ইভ’ থেকে প্রায় দেড় লক্ষ বছর ছোট।

২০. কিন্তু, পরবর্তীতে আরও রাইগোরাসটিল গবেষণা করে ‘মাইটোকনড্রিয়াল ইভ’ এবং ‘Y ক্রোমোজোমাল অ্যাডাম’-এর বয়স হিসেব করা হয় যথাক্রমে ৯৯ থেকে ১লক্ষ ৪৮ হাজার বছর এবং ১লক্ষ ২০ হাজার থেকে ১লক্ষ ৫৬ হাজার বছর(6)।

২১. বৈজ্ঞানিক গবেষণা অনুযয়ী, ‘মাইটোকনড্রিয়াল ইভ’ এবং ‘Y ক্রোমোজোমাল অ্যাডাম’ প্রায় কাছাকাছি সময় বাস করেছিলেন।


২২. তবে আমাদের মনে রাখা দরকার, এগুলো আসলে কিছু Provisional Estimate. কোন কনফার্মড হিসেবে নয়(7)।

২৩. যাই হোক, এখন আমরা যদি ১৫ নম্বর পয়েন্ট আবার পড়ি- স্টিকেল ও থেলারের গবেষণা অনুযায়ী বর্তমানে প্রাণীজগতের প্রায় ৯০% প্রায় ১ লক্ষ থেকে ২ লক্ষ বছর আগের সংশ্লিষ্ট প্রজাতির এক জোড়া থেকে এসেছে। উদাহরণস্বরুপ, মানুষের ক্ষেত্রে এক জোড়া নারী-পুরুষ, বাঘের ক্ষেত্রে একজোড়া বাঘ ও বাঘিনী, ইত্যাদি। যারা প্রায় ১ লক্ষ থেকে ২ লক্ষ বছর আগে প্রায় কাছাকাছি সময় জীবিত ছিলো।

২৪. এই রিসার্চ থেকে দুটি সিদ্ধান্তে আসা যেতে পারে।

২৫. এক, ১ থেকে ২ লক্ষ বছর আগে কোন এক বড় ধরনের  ক্যাটাস্ট্রফিক ইভেন্ট-এর কারণে তখনকার প্রায় অনেক প্রজাতির ‘ভিন্ন নিউক্লাওটাইড সিকোয়েন্স’ যুক্ত ভাই-বোনেরা মারা যায়। ফলে, যে একজোড়া পুরুষ-নারী থেকে পরবর্তী জেনারেশন-এর ডাইভারসিফিকেশন হয়। (একে বলা হয় পপুশেন বোটল নেক)


২৬. দুই,  ১ থেকে ২ লক্ষ বছর আগে পৃথকভাবে একজোড়া করে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী পৃথিবীতে পাঠানো হয় এবং তা থেকে পরবর্তী জেনারেশন-এর ডাইভারসিফিকেশন হয়।

২৭. মজার বিষয়, ‘ম্যাটেরিয়ালিস্ট’-দের জন্য ২৫ ও ২৬ দুইটাই প্রবলেমেটিক। কারণ, ২৫ ঠিক হলে নূহ (আ)-এর প্লাবণ-এর মত একটি ক্যাটাস্ট্রফের ইঙ্গিত পাওয়া, যার সম্পর্কে প্রায় সকল ধর্মগ্রন্থে বিভিন্নভাবে বর্ণনা এসেছে। আর, ২৬-কে তারা outright রিজেক্ট করে।

২৮. এজন্য আলোচ্য রিসার্চের দুইজন অথারকে বলতে শুনা যায়-

“This conclusion is very surprising,” co-author David Thaler of the University of Basel is quoted as saying, “and I fought against it as hard as I could.” His co-author is fellow geneticist Mark Stoeckle of Rockefeller University in New York (3)

২৯. মজার বিষয় হলো এরা আগে ২০০৪ সালের একটি পেপারে একই অথাররা পাখির দুটো লিনিয়েজ পরীক্ষা করে বলেছিলেন-
“The ad hoc modifications to neutral theory commonly proposed to account for low variation in individual cases, namely, recurrent bottlenecks or selective sweeps, struggle as general mechanisms. If bottlenecks limit variation, then a universal low ceiling implies recent population crashes for all species. This appears unlikely– almost a Noah’s Ark hypothesis–although perhaps long-term climate cycles might cause widespread periodic bottlenecks.” (8)

৩০. সবার শেষে Evolution News-এর এন্ড্রু জোনস-এর একটি কথা কোট করে শেষ করছি –

“In any case, one thing is clear: reconstructing the past is a complicated business and it is still full of surprises. There may be even bigger surprises in store.”

রেফারেন্স:

1.      McManus L. Every person was spawned from single pair of adults living up to 200,000 years ago, scientists claim | Daily Mail Online [Internet]. Daily Mail. 2018 [cited 2018 Nov 26]. Available from: https://www.dailymail.co.uk/news/article-6424407/Every-person-spawned-single-pair-adults-living-200-000-years-ago-scientists-claim.html?fbclid=IwAR25ZFBERNCQqdzNrdMfrQkVIFS8CSbBvJlRXTv8seHsngm-W8DR39Ke_HA

2.      Stoeckle MY, Thaler DS. Why should mitochondria define species? Hum Evol. 2018;33:1–30.

3.      Jones A. New Paper in Evolution Journal: Humans and Animals Are (Mostly) the Same Age? Evolution News. 2018.

4.      Cann RL, Stoneking M, Wilson AC. Mitochondrial DNA and human evolution. Nature [Internet]. 325(6099):31–6. Available from: http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/3025745

5.      Thomson R, Pritchard JK, Shen P, Oefner PJ, Feldman MW. Recent common ancestry of human Y chromosomes: Evidence from DNA sequence data. Proc Natl Acad Sci U S A [Internet]. 2000;97(13):7360–5. Available from: http://www.pnas.org/content/97/13/7360.abstract%5Cnhttp://www.pnas.org/content/97/13/7360.full.pdf

6.      Poznik GD, Henn BM, Yee MC, Sliwerska E, Euskirchen GM, Lin AA, et al. Sequencing Y chromosomes resolves discrepancy in time to common ancestor of males versus females. Science (80- ). 2013;341(6145):562–5.

7.      Klinghoffer D. About “Y Chromosome Adam” and & “Mitochondrial Eve” [Internet]. Evolution News. 2013 [cited 2018 Nov 26]. Available from: https://evolutionnews.org/2013/08/about_y_chromos/

8.      Stoeckle MY, Thaler DS. DNA barcoding works in practice but not in (neutral) theory. PLoS One. 2014;9(7):3–9.

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *