বিবর্তনতত্ত্ব, বিজ্ঞান এবং বিশ্বাস

বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম

বিলুপ্ত হোমিনিন প্রজাতির জিনোম এবং হিউম্যান ইভল্যুশন সংক্রান্ত আবিস্কারের জন্য ভ্যান্তে পাবো ২০২২ নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন। তিনি নিয়ানডার্থাল জিনোমের সিকোয়েন্সিং করেছেন।

এই সংবাদটির আলোকে স্রষ্টায় অবিশ্বাসীদের দাবী হলো, এই আবিস্কার মানুষের বিবর্তন প্রমাণ করেছে, সুতরাং আব্রাহামিক ধর্মগুলোর আদম-হাওয়া তত্ত্বের কোন ভিত্তি নেই।

মনে হয় যেন,নিয়ানডার্থাল জিনোম সিকোয়েন্সিং এবং হিউম্যান জিনোমের সাথে তুলনা করতে পারা মানেই মানুষের বিবর্তন প্রমাণিত হওয়া।

সায়েন্টিজমের অনুসারী এবং নিও-এথিস্টদের স্ট্র্যাটেজি হচ্ছে বিজ্ঞানের মধ্যে তাদের ফিলোসফি ঢুকিয়ে ধর্মবিরোধী মতবাদের পক্ষে প্রচার চালানো। সেই হিসেবে এ ধরনের হাইপ কোন অস্বাভাবিক বিষয় না।

তাই তাদের এই হাইপকে একপাশে রেখে আমাদের তিনটি প্রশ্নের আলোকে বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করা দরকার।

১. বিবর্তন তত্ত্ব বৈজ্ঞানিক ভাবে সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত কি না?

২. বিবর্তন তত্ত্ব স্রষ্টায় বিশ্বাসের সাথে সাংঘার্ষিক কিনা?

৩. বিবর্তনতত্ত্ব ইসলামের সাথে সাংঘার্ষিক কিনা?

প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর অনেক বিস্তৃত এবং বড় কলেবরে এক বা একাধিক খণ্ডের বই-এর দাবী রাখে। তবে, এই পোস্টে খুব সংক্ষেপে ১ ও ২ নং প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আলোচনা থাকবে।

প্রথমেই, ২নং প্রশ্ন। এই প্রশ্নের উত্তরটি সবচেয়ে সহজে দেয়া যায়-

স্রষ্টার বিশ্বাসের সাথে বিবর্তনবাদ কোনভাবেই সাংঘার্ষিক নয়। কারণ, স্রষ্টা চাইলে সরাসরি জৈব প্রজাতিকে তাদের আকৃতিতে সৃষ্টি করতে পারেন অথবা ধারাবাহিক বিবর্তনের মাধ্যমে তৈরী করতে পারেন। এটি মেটাফিজিক্যালী ইমপসিবল কোন বিষয় নয়, কারণ এটি লজিক্যালী পসিবল।

এখন, প্রথম প্রশ্নের উত্তর নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা থাকবে। কিন্তু, উক্ত আলোচনায় যাবার আগে চলুন হালকা জেনে নেই বিজ্ঞান কিভাবে কাজ করে।

বিজ্ঞান যে কোন তত্ত্ব প্রমাণের জন্য পরীক্ষা নিরীক্ষামূলক তথ্য ও প্রমাণের ওপর নির্ভর করে। তবে, বর্তমান বৈজ্ঞানিক জগৎ কোন ঘটনার অতিপ্রাকৃতিক ব্যাখ্যার অনুমতি দেয় না। অর্থাৎ, বিজ্ঞানের শর্ত হচ্ছে কোন তত্ত্বের প্রমাণে কেবল প্রাকৃতিকভাবে পর্যবেক্ষণযোগ্য ব্যাখ্যা এবং উপাত্ত দিতে হবে।

দেখা যাচ্ছে, বিজ্ঞানে যে কোন তত্ত্বের প্রমাণের প্রশ্নে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় জ্ঞানতত্ব এবং দর্শন চলে আসে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, প্রাকৃতিক নিয়ম দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে না এরকম ঘটনার প্রাকৃতিক কারণ খোঁজা যেন বন্ধ হয়ে না যায়।

যেমন- পাখি কিভাবে উড়ছে? এই প্রশ্নে উত্তরে আমি যদি এটুকু বলে থেমে যাই যে আল্লাহ তাদের ওড়ার ক্ষমতা দিয়েছেন তাই উড়ছে, তাহলে পাখির উড়তে পারার যে এ্যারোডাইন্যামিক পদ্ধতি সে সম্পর্কে গবেষণা থেমে যাবে।

এ কারণে, বিজ্ঞানীরা, হোক সে বিশ্বাসী বা অবিশ্বাসী, বৈজ্ঞানিক গবেষণার সময় পদ্ধতিগত প্রকৃতিবাদ (Methodological naturalism)- এর আশ্রয় নেন।

কিন্তু, নব্য-নাস্তিকরা (Neo-atheist)-রা মানুষের মাঝে বিজ্ঞানের বড়ত্ব প্রচার করতে গিয়ে দর্শনগত প্রকৃতিবাদ (Philosophical naturalism) কে জুড়ে দেন। ফলে, বিষয়গুলোকে অনভ্যস্তরা সহজেই বিভ্রান্ত হয়ে পরে। আস্তিক বিজ্ঞানীরা প্রাকৃতিক ঘটনার বিষয়টিকে দুভাবে বিবেচনা করেন। একদল, বিজ্ঞান এবং ধর্মীয় (স্রষ্টায়) বিশ্বাসকে দুটো সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয় হিসেবে বিবেচনা করে আলাদা রাখতে চান। আরেকদল মনে করেন, স্রষ্টা সবকিছুই বৈজ্ঞানিক নিয়মের মধ্যে করেন, সুতরাং বৈজ্ঞানিক নিয়ম আবিস্কার স্রষ্টাকে জানারই একটি পদ্ধতি। তদুপরি, বিজ্ঞান যেহেতু কিছু দার্শনিক অনুমান ধরে নিয়ে কাজ করে বিজ্ঞান সংজ্ঞানুযায়ীই সীমাবদ্ধ। যাই হোক, এটি সম্পূর্ণ আলাদা একটি আলোচনার বিষয়।

এখন চলুন দেখি, বিজ্ঞান প্রাকৃতিক কোন পর্যবেক্ষণ ব্যাখ্যায় কিভাবে কাজ করে? বিজ্ঞানীরা কোন পর্যবেক্ষণের কার্যকারণ ( causual inference ) ব্যাখ্যার জন্য “ থিওরী – হাইপোথিসিস- রিসার্চ-অবজারভেশন- থিওরী” এই চাক্রিক প্রক্রিয়াটির মধ্য দিয়ে যান।

বিজ্ঞানের ইতিহাসে প্রথমদিকে অবশ্য বিষয়টি এরকম ছিল না। তখন, বিজ্ঞানীরা কজাল ইনফারেন্সের জন্য শুধু মাত্র যৌক্তিক সিদ্ধান্ত (Rational Inference)-এর ওপর নির্ভর করতেন। সপ্তদশ শতাব্দীর সায়েন্টিফিক রিভলুশন থেকে শুরু করে বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত এজন্য পরীক্ষা নিরীক্ষালব্ধ জ্ঞান (Empiricism)-এর ওপর জোড় দেয়া হয়। উদাহরণস্বরূপ, আমার পর্যবেক্ষণলব্ধ ‘ হাঁস’ গুলো যদি সবসময় ‘কালো’ হয়, আমি সিদ্ধান্ত দিতে পারবো যে ‘হাঁস কালো’।

এই পদ্ধতির একটি সমস্যা হল আপনি যদি একটি সাদা হাস দেখে ফেলেন, আমার থিওরী ভেঙ্গে যাবে। (Problem of Induction)

পরর্বতীতে কার্ল পপার এই আরোহ পদ্ধতি (Inductive approach)কে প্রশ্ন করে বলেন যে, বিজ্ঞান মূলত কাজ করে অবরোহ পদ্ধতিতে (Deductive Approach)। অর্থাৎ, কোন ঘটনার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা চিন্তাভাবনা করে এক বা একাধিক থিওরী তৈরী করেন, এরপর তার পক্ষে পরীক্ষা নিরীক্ষালব্ধ প্রমাণ যোগার করার চেষ্টা করেন। এ প্রক্রিয়া কয়েকটি প্রতিযোগিতামূলক তত্ত্বের মধ্যে একটি বা আরেকটির প্রমাণ পোক্ত হয়।

বর্তমানে বিজ্ঞানীরা এই দুটি পদ্ধতির সমন্বয়ে কাজ করেন। তারা অবজারভেশন থেকে একটি থিওরী ভাবেন এবং তা থেকে বিভিন্ন হাইপোথিসিস দাড় করান। অত:পর, উক্ত হাইপোথিসিসকে প্রমাণ বা অপ্রমাণের জন্য রিসার্চ প্রসেসের মধ্য দিয়ে তথ্য যোগাড় করেন। এই প্রক্রিয়া হাইপোথিসিস ভুল হলে থিওরীর পরিবর্তন বা পরিমার্জন করা হয়। এভাবে, কোন কজাল ইনফারেন্সের জন্য যথেষ্ট তথ্য উপাত্ত যোগাড় হলে একটি কজাল থিওরী আপাত প্রমাণ হয়।

এখন, বিবর্তনতত্ত্ব হচ্ছে এমন একটি তত্ত্ব যা একটি কোষ থেকে প্রাকৃতিক উপায়ে বর্তমান পৃথিবীর অসংখ্য জৈব প্রজাতির আগমনকে ব্যাখ্যার চেষ্টা করে। বিজ্ঞানী ডারউইন তার প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ (যেমন: ফিঞ্চ পাখির ঠোট, কৃত্রিম সংকরায়ণ, বিভিন্ন প্রাণীর কাছাকাছি গঠন [Homology], ফসিল এভিডেন্স) প্রভৃতির আলোকে বি

এখন, বিবর্তনতত্ত্ব হচ্ছে এমন একটি তত্ত্ব যা একটি কোষ থেকে প্রাকৃতিক উপায়ে বর্তমান পৃথিবীর অসংখ্য জৈব প্রজাতির আগমনকে ব্যাখ্যার চেষ্টা করে। বিজ্ঞানী ডারউইন তার প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ (যেমন: ফিঞ্চ পাখির ঠোট, কৃত্রিম সংকরায়ণ, বিভিন্ন প্রাণীর কাছাকাছি গঠন [Homology], ফসিল এভিডেন্স) প্রভৃতির আলোকে বিবর্তনতত্ত্ব প্রদান করেন। এরপর এই তত্ত্ব সত্য হলে কি কি ধরনের পর্যবেক্ষণ লব্ধ উপাত্ত পাওয়া যাবার কথা এই ধরনের হাইপোথিসিস দেন এবং তার সপক্ষে কিছু যৌক্তিক প্রমাণ উপস্থাপনের চেষ্টা করেন।

যেমন একটি হাইপোথিসিস হল, বিবর্তনতত্ত্ব সত্য হলে ফসিল বেডে ক্রমান্বয়িক (Gradual) জটিল প্রজাতি পাওয়া যাবে (Common Descent)। এর প্রমাণস্বরুপ, জীবাশ্মবিদ্যার বিজ্ঞানীদের প্রচেষ্টা দেয়া দেখা গেছে যে যতই পুরোনো ফসিল বেডে যাওয়া যায় ততই তুলনামূলক সরল জীবাশ্ম পাওয়া যায়। প্রসঙ্গত, ফসিল বেডে যত গভীরে যাওয়া যায়, তা সাধারনত ততই আগের জিওলজিকাল এইজকে রিপ্রেজেন্ট করে।

কিন্তু, পরিক্ষানীরিক্ষা লব্ধ তথ্য প্রমাণ সব সময় যে হুবহু থিওরীর পক্ষে যাবে তা নয়। যেমন, ফসিল এভিডেন্স-এর বিষয়টিতেই আসা যাক। ডারউইনের বিবর্তনতত্ত্ব অনুযায়ী, ফসিল বেডে দুটি বিষয় ঘটতে হবে। এক, ধাপে ধাপে সরল থেকে জটিল প্রজাতি পাওয়া যাবে (Common Descent)। দুই, প্রজাতিগুলোর ফসিলের মধ্যে একটি ক্রমান্বয়িক ধারাবাহিকতা (Gradualism) থাকবে। কিন্তু, প্যালেন্টোলজিস্ট নাইলস এলড্রেজ এবং স্টিফেন জে. গোল্ড দেখিয়েছেন যে ফসিলে Common Descent থাকলেও Gradualism নেই। বরং, আছে Sudden appearance এবং Stasis। যাই হোক, বিষয়টি নিয়ে বিজ্ঞানীরা এখন দ্বিধাবিভক্ত। তবে, Common descent-এর ব্যাপারে সবাই একমত।

বিবর্তনতত্ত্বের আরেকটি প্রস্তাবনা হলো, প্রজাতির প্রজন্মান্তরে সৃষ্ট বৈচিত্র (Variation) এবং প্রাকৃতিক নির্বাচন। যেমন, কৃত্রিম সংকরায়নের মধ্য দিয়ে অধিক দুগ্ধদানকারী গাভীর জাত তৈরী করা হলে, খামারীরা উক্ত জাতটিকে কৃত্রিম ভাবে চয়ন করেন (Artificial selection)। ঠিক একই ভাবে, অধিক লোমযুক্ত ভাল্লুক বরফের দেশে প্রাকৃতিক ভাব সিলেক্টেড হয় (Natural selection)।

কিন্তু, প্রজাতিতে প্রজন্মান্তরে এই ভ্যারিয়েশন কিভাবে আসে? জেনেটিক্স আবিস্কারের আগ পর্যন্ত ভ্যারিয়েশন আসার বিষয়টি শক্ত কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিলো না। জেনেটিক্স আসার পর দেখা গেল যে মিউটেশনসহ বিভিন্ন ধরনের পপুলেশন জেনেটিক প্রক্রিয়ায় প্রজাতির বৈচিত্র তৈরী এবং প্রাকৃতিক নির্বাচন হতে পারে। এর প্রেক্ষিতে ডারউইনের মূল তত্ত্ব মোডিফাই হয়ে, বিভিন্ন বিজ্ঞানীর হাত ধরে ইভল্যুশনারী সিনথেসিস (তথা সিনথেসিস থিওরী)-তে রূপান্তরিত হয়।

এই পরিবর্তীত তত্ত্বের প্রমাণ হিসেবে মলিকিউলার হোমোলজী থেকে ফাইলোজেনেটিক্স (জেনেটিক ট্রি তৈরী)-এর বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষা চালানো হয়। তবে মজার বিষয় হল মলিকিউলার হোমোলজি থেকে প্রাপ্ত প্রজাতি বিন্যাস এবং বয়স, ফসিল ডেটিং এবং এনাটমিক হোমোলজি থেকে প্রাপ্ত বিন্যাস এবং বয়সের সাথে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ম্যাচ করে না। আবার দেখা যায়, হরাইজন্টাল জিন ট্রান্সফারের কারণে প্রজাতির জন্য সুনির্দিষ্ট জেনেটিক গঠন অনেকটাই অস্বচ্ছ হয়ে যায়। ফলে, মলিকিউলার হোমোলজীর মাধ্যমে প্রজাতির বিবর্তনীয় ধারা বের করার গবেষণা অনেক ধরনের জটিলতায় আক্রান্ত।

বর্তমানে সিনথেটিক থিওরীর প্রসেসগুলোর (অর্থাৎ, মিউটেশন ও অন্যান্য পপুলেশন জেনেটিক প্রসেস) সীমাবদ্ধতা বিবেচনা করে একদল বিজ্ঞানী বিভিন্ন বিকল্প প্রসেসের কথা বলছেন। যেমন: ন্যাচারাল জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, সিমবায়োসিস, নিও-লামার্কিজম প্রভৃতি। এই সকল বিজ্ঞানীদের থিওরীকে একত্রে বলা হচ্ছে The Third Way of Evolution. যাই হোক, থার্ড ওয়ের প্রবক্তারাও মূল বিবর্তনতত্ত্বের গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা Common Descent এর ব্যাপারে সর্বসম্মতভাবে একমত। উপরন্তু, তারাও ফিলোসফিক্যাল ন্যাচারালিজম-এর বাইরে কোন প্রস্তাবনা দিতে রাজি নন।

কিন্তু, অনেক সময় একই পর্যবেক্ষণের একাধিক ব্যাখ্যা থাকতে পারে। তখন, তুলনামূলক প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে কোনটি গৃহীত হবে, তা নির্ধারিত হয় অন্যান্য সম্পূরক তথ্য প্রমাণ এবং তাত্ত্বিক চিন্তা গবেষণার আলোকে।

জীবজগতের পর্যবেক্ষণে ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইনের প্রবক্তারা একটি ভিন্ন প্রস্তাবনা এনেছেন। তাদের মতে প্রজাতির উৎপত্তি ও বিভিন্ন ধাপে আগমন ইন্টেলিজেন্ট এজেন্সির ইন্টারভেনশন ছাড়া ব্যাখ্যা করা সম্ভব না। তাদের মতে ‘কমন ডিজাইন’ প্রজাতির সাদৃশ্যের একটি বিকল্প প্রস্তাবনা হতে পারে। তারা হোমোলজিকে বিবর্তনবাদের প্রমাণ হিসেবে দেখানোকে চাক্রিক যুক্তি মনে করেন। কারণ, আমি দুই বা ততোধিক প্রজাতির গাঠনিক সাদৃশ্য দেখে যদি কোন তত্ত্ব দাড় করাই যে ‘গাঠনিক সাদৃশ্য থাকলে দুটো প্রজাতি পূর্ববর্তী কোন কমন প্রজাতি থেকে এসে থাকবে’ এবং তার প্রমাণ হিসেবে ‘দুই বা ততোধিক প্রজাতির গাঠনিক সাদৃশ্য’-কেই উপস্থাপন করি তা চাক্রিকই মনে হবে।

অন্যদিকে, তারা দেখিয়েছেন যে, জীবজগতের কিছু কিছু গঠন Irreducibly Complex এবং বিবর্তনবাদীদের প্রস্তাবিত প্রক্রিয়াগুলোতে একটি নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত পরিবর্তিত জিন পপুলেশনে সেট হতে পারে তথা একটি নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত প্রজাতির পরিবর্তন আসতে পারে, যা প্রজাতির ক্লাসিফিকেশন হাইয়ারারকিতে (Kingdom-Phylum-Class-Order-Family-Genus-Species) জেনাস পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। উক্ত প্রক্রিয়াতে ম্যাক্রো পরিবর্তন আসার জন্য প্রয়োজনীয় সময় এবং পপুলেশন সাইজ মহাবিশ্বের ইতিহাসে নেই।

প্রসঙ্গত, ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির কোন পর্যবেক্ষণযোগ্য ইনডাকটিভ প্রমান না থাকায়, তারা এবডাকটিভ ইনফারেন্স একটি পদ্ধতি ব্যবহার করেন। তাদের মতে মানুষকে যেমন ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে জটিল কাঠামো নির্মান করতে দেখা যায়, তথা জটিল কাঠামো দেখে যেমন এর পেছনে মানুষের মত কোন ইন্টেলিজেন্স ইনফার করা যায়। তেমনি, জীবজগতের জটিলতা দেখেও এর পেছনে ইন্টেলিজেন্ট এজেন্টকে ইনফার করা যায়।

কিন্তু, ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইনতত্ত্ব ‘ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইনার’ নামক ‘অপ্রাকৃতিক’ এজেন্সিকে ইনফার করে বিধায়, ডমিনেন্ট সায়েন্টিফিক সার্কেল-এর তাদের তত্ত্বের কোন গ্রহনযোগ্যতা নেই। একদিকে, যারা অবিশ্বাসী তারা দর্শনগত কারনেই এই তত্ত্বর্কে কোন সুযোগ দিতে রাজী নন। অন্যদিকে, যারা বিশ্বাসী তারা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে Methodological Naturalism বজায় রাখতে গিয়ে উক্ত তত্ত্বের সুযোগ দিতে রাজী নন। এই দ্বিতীয় দলটির আরেকটি আশংকা হচ্ছে, ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন God of the gaps ফ্যালাসীর আশ্রয়ে দাড়িয়ে আছে। প্রসঙ্গত, God of the gaps হচ্ছে বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় বর্তমান সময়ে বোঝার সীমাবদ্ধতা থাকলে, তাকে স্রষ্টা করেছেন বলে চালিয়ে দেয়া। তবে একজন সতর্ক পাঠক বুঝতে পারবেন যে ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন তত্ত্বের ফর্মুলেশনটি ঠিক এরকম নয়।

সুতরাং, ১ নং প্রশ্নের উত্তরে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, ডারউইনের বিবর্তনতত্ত্বের পক্ষে তথ্য প্রমাণ এমন নয় যে তা সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত হয়েছে। সর্বচ্চো এটুকু বলা যায় যে, বিভিন্ন ভাবে তথ্য প্রমাণ একত্র করার প্রচেষ্টা অব্যহত আছে। মজার বিষয় হলো, Methodological Naturalism-এর সীমায় প্রজাতির উৎপত্তি ব্যাখ্যায় বিবর্তনতত্ত্বের বিকল্প কোন তত্ত্বের প্রবেশাধিকারই নেই। অর্থাৎ, বিবর্তনতত্ত্বের পক্ষে সাপোর্ট যতটানা Empirical তার চেয়ে বেশী Philosophical.

এজন্য অধিকাংশ সময়ই বিবর্তনতত্ত্বের আলোচনা তত্ত্ব থেকে ‘বিবর্তনবাদ’-এ চলে যায়। এ আলোচনায় অটোমেটিক ভাবেই দর্শন চলে আসে। ফলে, আর্নস্ট মেয়ার, আলফ্রেড রাসেল ওয়ালেস, রোনাল্ড ফিসার বা ডগলাস ফুতুয়ামা থেকে আমরা রিচার্ড ডকিন্স বা ইউভাল নোয়া হারারীদের বেশী চিনি।

তিন নাম্বার প্রশ্নের উত্তরটি নিয়ে ড. শোয়েব আল মালিক তার বই Islam and Evolution: Al-Ghazālī and the Modern Evolutionary Paradigm -এ বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। অধিক আগ্রহীরা এই ফ্রি বইটি ডাউনলোড করতে পারবেন এখান থেকে- https://library.oapen.org/handle/20.500.12657/48443

তবে আরেকটি পর্বে এই বিষয়টির একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা রাখার চেষ্টা করবো, ইন শা আল্লাহ।
..

০৬.১০.২০২২

বানান সম্পাদনা: তাওহিদ হাসান

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *