নিউরোপ্লাস্টিসিটি সম্পর্কে আমরা কমবেশী জানি। সহজ কথায় মানুষের ব্রেইনের কানেকশনে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা যায় চর্চার মধ্য দিয়ে। লণ্ডনের বাস ও ট্যাক্সি ড্রাইভার দিয়ে নিয়ে একটি নিউরোইমেজিং স্টাডি আছে, সেখানে দেখা গেছে যারা অনেকদিন ধরে শহরের আঁকাবাঁকা পথে অলিতে-গলিতে গাড়ি চালিয়ে অভ্যস্ত তাদের হিপ্পোক্যাম্পাসের পিছনের দিকের অংশ বেশ বড় হয়ে গেছে।[১] কারণ, স্থানসংক্রান্ত স্মৃতি ধারণে এই অংশটার ভূমিকা আছে।
ঠিক তেমনি মস্তিষ্কের যেই অংশটা মানুষের যৌনতা সংক্রান্ত বিষয়ে ভূমিকা রাখে সেই অংশটা বেশী ব্যবহার করলে বা সেই অংশ স্বাভাবিক উপায়ে ব্যবহৃত না হয়ে অন্য উপায়ে ব্যবহৃত হলে সেই অংশে পরিবর্তন আশা করাটাই স্বাভাবিক।
এখন ধরুন, আপনি কিছু সেক্স ওয়ার্কারদের নিয়ে ইমেজিং স্টাডি করলেন। আপনি এদের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অংশটা অন্যদের চেয়ে বড় পেতে পারেন। বাংলাদেশে যারা Male who sex with Male (MSM) বা সহজ ভাষায় হোমোসেক্সুয়েল (গে বা সমকামী)-দের নিয়ে ঘাটাঘাটি করেছেন তারা জানেন, এরা অধিকাংশই হয় সেক্স-ওয়ার্কার। সুতরাং, এদের স্টাডিতে ব্রেইনের নির্দিষ্ট অংশ বড় পাওয়াটা অস্বাভাবিক না। এ অবস্থায় আপনার অনুসিদ্ধান্ত নিচের কোনটি হওয়া স্বাভাবিক:
১. হোমোসেক্সুয়্যালিটির কারণে উক্ত অংশ বড় পাওয়া গিয়েছে
২. উক্ত অংশ বড় হওয়ার কারণে তারা হোমোসেক্সুয়েল
যারা দ্বিতীয়টির ব্যাপারে মত দিবে, তাদের দুটো অবস্থা হতে পারে:
১. তারা বিজ্ঞানের ইনফারেন্স কিভাবে টানতে হয় জানেনা
২. তারা হোমোসেক্সুয়েলীটিকে জন্মগত বোঝাতে চাচ্ছে
প্রসঙ্গত ইঁদুরের ব্রেইনে এই অংশটি তথা নিউক্লিয়াস গ্রুপের নাম Sexually Dimorphic Neucleas (SDN), যা হাইপোথ্যালামাসের অংশ।
১৯৯১ সালে সাইমন লিভে নারী ও পুরুষের মরদেহের মগজ নিয়ে একটি স্টাডি করেন। পুরুষদের মধ্যে ১৯ জনকে হোমোসেক্সুয়েল ও ১৬ জন হেটারোসেক্সুয়েল বলে তিনি ধরে নেন( Presumed !)। [২],[৩] তার স্টাডি অনুযায়ী হাইপোথ্যালামাসের সামনের দিকের অংশে ‘ইন্টারস্টিসিয়াল নিউক্লিয়াস অব হাইপোথ্যালামাস’-এর নিউক্লিয়াসের চারটি গ্রুপের মধ্যে ৩নং গ্রুপটি মেয়ে হেটারোসেক্সুয়েলদের চেয়ে ছেলে হেটারোসেক্সুয়েলদের এবং ছেলে হেটারোসেক্সুয়েলদের চেয়ে ছেলে হোমোসেক্সুয়েলদের প্রায় দ্বিগুণ বড় থাকে। [৩] তিনি এর থেকে সিদ্ধান্ত দেন যে সেক্সুয়েল অরিয়েন্টেশনের পার্থক্য হওয়ার একটি বায়োলজিক্যাল কারণ আছে: সহজ কথায় গ্রুপ ৩ বড় বলেই ‘হোমো’রা হোমো।
পাঠক এবার চিন্তা করে দেখুন, আপনার কাছে নিউরোপ্লাস্টিসিটি ও হোমোসেক্সুয়েলদের সেক্সুয়েল প্র্যাকটিস সম্পর্কে যে জ্ঞান আছে তাতে কি আপনি এরকম সিদ্ধান্তে হঠাৎ চলে যাবেন?
মজার বিষয় হল, ইউনিভার্সিটি অব আমস্টারডাম-এর নিউরো-বায়োলজির প্রফেসর সোয়াব, ট্রান্সসেক্সুয়েলিটির প্রফেসর গোরেন এবং হফম্যান ১৯৯৫ সালে দেখান যে, জন্মের সময় SDN-এর নিউক্লিয়াস সংখ্যা, ২ থেকে ৪ বছর বয়সে SDN-এর নিউক্লিয়াস সংখ্যার ২০ শতাংশ থাকে। অত:পর ২ থেকে ৪ বছর বয়স পর্যন্ত একই হারে এই সংখ্যা বাড়তে থাকে। ৪ বছরের পরে গিয়ে মেয়েদের ক্ষেত্রে এই অংশটি ছোট হয়ে যেতে থাকে। তারা আরও বলেন: “No difference in SDN cell number was observed between homosexual and heterosexual men.” অর্থাৎ হোমো এবং হেটারোদের কোষ সংখ্যায় কোন পার্থক্য পাওয়া যায়নি। তাদের মতে সেক্সুয়েল অরিয়েন্টেশন নিয়ন্ত্রণে জেনেটিক্সের সাথে পারিপার্শ্বিক এবং মন-সামাজিক প্রভাবকগুলোও ভূমিকা রাখে। [৪]
সুতরাং নিউরোপ্লাস্টিসিটি বিষয়টি যে এখানে ভূমিকা রাখছে সেই দিকেইতো সিদ্ধান্ত যাওয়ার কথা। ড. কেনেথ ক্লিভিনটনও একই কথা বলছেন:
“There is a body of evidence that shows the brain’s neural networks reconfigure themselves in response to certain experiences. Therefore, the difference in homosexual brain structure may be a result of behavior and environmental conditions.” [৫]
অন্যদিকে সাইমন লিভে তার রিসার্চ প্রকাশ করার সাথে সাথে নিউজ মিডিয়া (নিউইয়র্ক টাইমস) তার স্টাডি নিয়ে যেভাবে রিপোর্ট করেছে [৬] তিনি যখন পরিষ্কার করেছেন যে তার রিসার্চ হোমোসেক্সুয়েলিটিকে জেনেটিক প্রমাণ করেনি তখন কিন্তু মিডিয়ায় সেভাবে কভারেজ পায়নি। তিনি বলেন:
“It’s important to stress what I didn’t find. I did not prove that homosexuality is genetic, or find a genetic cause for being gay. I didn’t show that gay men are born that way, the most common mistake people make in interpreting my work.” [৭]
সাইমন লিভের আর্টিকেলটির আরও কিছু দুর্বলতা নিয়ে রবার্ট নাইট আলোচনা করেছেন।[৮] তিনি দেখান যে লিভের স্টাডিতে ৬ জন সমকামী এইডস-এর মারা যায়। অন্যদিকে ড. বাইন দেখিয়েছেন যে এইডস আক্রান্ত রোগীর সাইড ইফেক্ট হিসেবে উক্ত গ্রুপ থ্রি নিউক্লিয়াস বড় হতে পারে। এছাড়াও, সাইমন লিভের এ বিষয়ে কোন ফলোআপ স্টাডি নেই। [৯]
তদুপরি, সাইমন লিভে নিজে ছিলেন প্রকাশ্য হোমোসেক্সুয়েল এবং তার এই রিসার্চের পিছনে স্পষ্ট এজেণ্ডা ছিল হোমোসেক্সুয়েলিটিকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা। তিনি বলেন:
“It’s important to educate society, I think this issue does affect religious and legal attitudes.” [৫]
সুতরাং পুরো বিশ্বে অস্বাভাবিক যৌনাচারকে স্বাভাবিক করার যে প্রচেষ্টা চলছে, অপেক্ষাকৃত রেজিস্টান্ট মুসলিম দেশগুলোতেও ঠিক একই এজেণ্ডা নিয়ে নেমেছে অভিজিৎ গং। বিভ্রান্তিকর, দুর্বল রিসার্চ ও মিথ্যাচারের উপর ভিত্তি করে তারা হোমোসেক্সুয়েলীটির মত মানসিক রোগের চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করছে অনেক মানুষকে, তাদেরকে ঠেলে দিচ্ছে এইডস এর মত ভয়াবহ রোগের দিকে। [১০]
[হোমোসেক্সুয়েলিটির আরও দুটো তথাকথিত এভিডেন্স ‘টুইন স্টাডি’ এবং ‘হোমোসেক্সুয়াল জিন’ নিয়ে পরবর্তীতে লিখা থাকবে]
তথ্যসূত্র:
১. Maguire EA1, Woollett K, Spiers HJ. London taxi drivers and bus drivers: a structural MRI and neuropsychological analysis. Hippocampus 2006[cited 2014 March 24];16(12):1091-101. Available at: PubMed
২. What does science say about homosexuality.[Internet] 2006 April 4 [Cited 2014 March 24]; Available at: http://www.inqueery.com/html/science_and_homosexuality.html
৩. Simon L. A Difference in hypothalamic structure between heterosexual and homosexual men. Science. 1991 Aug 30 [cited 2014 March 24];253(5023):1034-7. Available at: Pubmed
৪. Swaab DF1, Gooren LJ, Hofman MA. Brain research, gender and sexual orientation. J Homosex. 1995[cited 2014 march 24];28(3-4):283-301. Available at: Pubmed
৫. D. Gelman, D. Foote, T. Barrett, M. Talbot, “Born or Bred,” Newsweek, 24 February 1992, 46-53.
৬. Natalie Angier. Zone of brain linked to men’s sexual orientation. New York Times;. [Internet]. 1991 Aug 30 [cited 2014 March 24 ]; Available at: http://www.nytimes.com/1991/08/30/us/zone-of-brain-linked-to-men-s-sexual-orientation.html
৭. Sex and the Brain. Discover, March 1994, Vol. 15, No. 3, p. 64.
৮. Robert Knight. BORN OR BRED? Science Does Not Support the Claim That Homosexuality Is Genetic. [Internet] [Cited 2014 March 24]; Available at: http://www.cwfa.org/images/content/bornorbred.pdf
৯. Jonathan Marks. What it means to be 98% Chimpanzee. London: University of California Press; 2002; p 114.
১০. “Gay, bisexual, and other men who have sex with men (MSMa), particularly young black/African American MSM, are most seriously affected by HIV.” Fast Facts;[Cited 2014 March 24] Available at: http://www.cdc.gov/hiv/statistics/basics/ataglance.html
Leave a Reply