হাও মাও খাও, মানুষের গন্ধ পাও।
বাচ্চাদের ভূতের গল্পে ভূত মানুষের গন্ধ দিয়ে মানুষকে চিনে নেয়। তবে, বাস্তবে ভূত না থাকলেও একটা ক্ষুদ্র প্রাণী মানুষকে খুঁজে বের করে তার গন্ধ দিয়ে। আর তা হল আমাদের অতি পরিচিত ‘মশা’।
আমাদের প্রতিদিনের সঙ্গী মশা সুযোগ পেলেই ত্বকে বসে শুঁড়টা প্রবেশ করিয়ে আরাম করে রক্ত সেবন করতে থাকে। কখনও কি ভেবে দেখেছেন মশা কিভাবে আমাদের খুঁজে পায়? কিভাবে সে বুঝে যে এই প্রাণীর ত্বকে বসতে হবে এবং ইঞ্জেকশনের মত শুঁড়টা গেঁথে দিতে হবে?
মশার মাথা ও সবুজ রঙ্গের গন্ধগ্রহনকারী স্নায়ু, উৎস
মশা মূলত তার লক্ষ্যবস্তুকে খুঁজে বের করে উক্ত লক্ষ্যবস্তু নিঃসৃত গন্ধ শুঁকে। বাতাসে ভেসে বেড়ানো কার্বন ডাই-অক্সাইড, পরিবেশের তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা, মানুষের পায়ের গন্ধ, এবং ল্যাকটিক এসিড হল মশার মূল আকর্ষণ। মানুষ প্রতিদিন যে শত শত গন্ধকণা (odorous molecules) পরিবেশে ত্যাগ করে তার একটা অংশ মশা খুঁজে নেয়। মশা এই কাজটা করে তার অ্যান্টেনা ও মুখে অবস্থিত প্রায় ১০০ বা তার বেশী (প্রজাতিভেদে) রিসেপটর দিয়ে। এই রিসেপ্টরগুলোকে বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলে ওডোরেন্ট রিসেপ্টর (OR)। (১)
ওডোরেন্ট রিসেপ্টর কিভাবে কাজ করে? সহজ ভাষায় রিসেপটরগুলোর কাজ হল তালা ও চাবির মত। একটা তালা যেমন সুনির্দিষ্ট গঠনের চাবি ছাড়া খুলে না। ঠিক একইভাবে একটি নির্দিষ্ট ওডোরেন্ট রিসেপ্টর একটি সুনির্দিষ্ট রাসায়নিক পদার্থের সাথে বন্ধন তৈরী করলেই কেবল এক্টিভেট হয়। এই যেমন এডিস মশার কথা চিন্তা করুন। এডিস মশার বিশেষত্ব হল মানুষকে কামড় দেয়া। এটি মানুব নিঃসৃত গন্ধকণাগুলোর মধ্যে sulcaton নামক একটি গন্ধকণার প্রতি সুনির্দিষ্টভাবে আকৃষ্ট হয়। এই গন্ধকণাটি মানবদেহ থেকে অনেক বেশী পরিমানে বের হয় (২)। ফলে উক্ত গন্ধকণাকে চিনে নিয়ে এডিস মশা মানব ত্বকে এসে কামড় বসিয়ে দেয়।
মশার গন্ধ চেনার প্রক্রিয়া, উৎস
একটি রাসায়নিক কণা যখন ওডোরেন্ট রিসেপ্টরের সাথে পরিপূরকভাবে লেগে যায়, তখন তৎসংশ্লিষ্ট কোষে বিশেষ তড়িৎরাসায়নিক প্রক্রিয়া শুরু হয় যার মাধ্যমে প্রাণীটির স্নায়ুতন্ত্রে সিগন্যাল পৌছে (৩)। তবে ওডোরেন্ট রিসেপ্টরের ঠিক মত কাজ করার জন্য রিসেপ্টরের সাথে ওডোরেন্ট কো-রিসেপ্টর (Orco) নামক আর এক ধরনের সুনির্দিষ্ট প্রোটিন আছে যা মশার ‘নাক’-এ নির্দিষ্ট পরিমানে ও স্থানে থাকতে হয়। সিগন্যাল তৈরী হওয়ার মাধ্যমে মশা তার নিকটবর্তী পরিবেশ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে।
মজার বিষয় হল আমরা মশা তাড়াতে যে ওষুধগুলো ব্যবহার করি এগুলো কাজ করে মশার গন্ধ নেয়ার ক্ষমতাকে বন্ধ করে দেয়ার মাধ্যমে। এই প্রেক্ষিতে মশার কবল থেকে রক্ষা পেতে নতুন এবং আরও কার্যকরী উপায় বের করতে চলছে বিস্তর গবেষণা (৪)।
সম্মানিত পাঠক, একবার চিন্তা করে দেখুনতো মশার মধ্যে মানুষের গন্ধ নির্ণয় করার ক্ষমতা কিভাবে আসল? এটা কি কোন এলোপাতাড়ি প্রক্রিয়ায় (random process) একা একাই আসা সম্ভব? নাকি এটা কোন বুদ্ধিমান স্বত্তার কাজ যে জানে যে গন্ধে কি কি অণু আছে, যে জানে যে কিভাবে উক্ত অণুর পরিপূরক গঠনযুক্ত রিসেপ্টর তৈরী হতে হবে, যে জানে যে কিভাবে উক্ত রিসেপ্টরের মাধ্যমে স্নায়ুতন্ত্রে তড়িৎরাসায়নিক প্রক্রিয়ার সূচনা করতে হবে, যে জানে যে উক্ত স্নায়ুতন্ত্র কিভাবে কাজ করে?
“নিশ্চয় মানুষ তার রবের প্রতি বড়ই অকৃতজ্ঞ। আর সে নিজেই (নিজের কাজ-কর্মের মাধ্যমে) এ বিষয়ের সাক্ষী। আর ধন-সম্পদের প্রতি অবশ্যই সে খুবই আসক্ত।” [সূরা আদিয়াত ১০০, আয়াত ৬-৮]
রেফারেন্স:
১. Shen HH. How do mosquitoes smell us? The answers could help eradicate disease. Proc Natl Acad Sci U S A. 2017;114(9):2096–8.
২. McBride CS, Baier F, Omondi AB, Spitzer SA, Lutomiah J, Sang R, et al. Evolution of mosquito preference for humans linked to an odorant receptor. Nature. 2014;515(7526):222–7.
৩. Ha TS, Smith DP. Insect Odorant Receptors: Channeling Scent. Cell. 2008;133(5):761–3.
৪. Potter CJ. Stop the biting: Targeting a mosquito’s sense of smell. Cell . 2014;156(5):878–81.
Leave a Reply