গত ১৩/০৭/২০২২ তারিখে নাসার James Webb Space Telescope দিয়ে তোলা মহাশূণ্যের প্রায় ধূলিকনার সমান একটি অংশের ছবি প্রকাশিত হয়। উক্ত স্থিরচিত্রে ধরা পড়েছে প্রায় ৪.৬ বিলিয়ন বছর আগের অসংখ্য নক্ষত্ররাজী ও ছায়াপথের ছবি।
একটা বিশেষায়িত দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে বিজ্ঞানীরা মহাশূন্য পর্যবেক্ষণ করছেন। এতে বিভিন্ন ছায়াপথ থেকে আসা আলো ধরা পড়েছে। কিন্তু, তারা কিভাবে পরিমাপ করছেন যে কোন্ ছায়াপথ কত দূরে অবস্থান করছে? কিভাবে তারা হিসেব করলেন ৪.৬ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরত্বের নক্ষত্র থেকে আসা আলো দূরবীক্ষণ যন্ত্রে ধরা পড়ছে?
সহজ কথায়, পৃথিবী থেকে একটি নক্ষত্রের দূরত্ব কিভাবে হিসেব করা হয়?
এটি বিজ্ঞানীরা করেন দুটো উপায়ে।
এক, পৃথিবীর কক্ষপথের দূরত্ব এবং পৃথিবী থেকে দৃশ্যমান নক্ষত্রের কোণ এর সাহায্য নিয়ে জ্যামিতিক উপায়ে। এ প্রক্রিয়ায় বিজ্ঞানীরা পৃথিবী কক্ষপথের এক প্রান্তে পৌছার পর নক্ষত্রের সাথে পৃথিবীর কোণ হিসেব করেন এবং ৬ মাস পর আরেক প্রান্তে গেলে উক্ত নক্ষত্রের কোণ আবার হিসেব করেন। এভাবে পৃথিবীর কক্ষপথের সাথে নক্ষত্রের যে স্থানিক বিচ্যুতি তৈরী হয় (Parallax) তার সাহায্যে নক্ষত্রটি থেকে পৃথিবীর দূরত্ব হিসেব কসে বের করা যায়। তবে এই ধরণের হিসেব সম্ভব হয় শুধুমাত্র পৃথিবী থেকে ৪০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত তারকাসমূহের ক্ষেত্রে।
দুই, পৃথিবী থেকে ৪০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত তারকার ক্ষেত্রে অনুরূপ সরাসরি দূরত্ব মাপার কোন পদ্ধতি নেই। ফলে বিজ্ঞানীরা আলোর উজ্জ্বলতার পরিমাপ হিসেব করে দূরত্ব নির্ণয় করেন। মজার বিষয় হলো তারকার কালার স্পেকট্রাম উক্ত তারকার উজ্জ্বলতার একটি ভালো নির্দেশক। তারকার রঙের সাথে উজ্জ্বলতার এ সম্পর্ক বের করা হয়েছে পৃথিবী থেকে সরাসরি দূরত্ব পরিমাপযোগ্য তারকার উপর গবেষণা করে।
দূরবর্তী ছায়াপথের উজ্জ্বলতা অনেক কম হয়। তবে ছায়াপথ সমূহের Gravitational Lensing এর কারণে, দূরবর্তী ছায়াপথ সমূহের আলো উজ্জ্বলতা একেবারে শূণ্য হয়ে যায় না।
অন্যদিকে ছায়াপথ (Galaxy) বা নক্ষত্রপুঞ্জের রং-থেকে আবিস্কার হয়েছে যে মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ হচ্ছে। ডপলার ইফেক্টের কারণে একটি গতিশীল বস্তু আপনার থেকে যত দূরে যাবে, উক্ত বস্তু থেকে নি:সৃত তরঙ্গের দৈর্ঘ তত বাড়তে থাকবে। ফলে আলোর ক্ষেত্রে তা লাল আলো বা ইনফ্রারেড আলোতে পরিণত হবে। এ ঘটনাকে বলে Redshift । বিজ্ঞানী স্লাইফার প্রথম আবিস্কার করেন যে দূরবর্তী ছায়াপথ গুলো থেকে আসা আলোর রেড-শিফট হয়েছে। বিজ্ঞানী এডউইন হাবল দেখান যে গ্যালাক্সীগুলো একে অপরের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, তথা মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ হচ্ছে।
মজার বিষয় হল, মহাবিশ্বের সম্প্রসারণজনিত এই রেড শিফট তারকার নিজস্ব গতির ফলে হয় না। বরং, তারকাররাজীর মধ্যবর্তী শূণ্যস্থানের সম্প্রসারণের ফলে হয়। কোন একটি তারকা থেকে নি:সৃত আলো পৃথিবী পর্যন্ত সম্প্রসারমান স্পেস দিয়ে আসতে গিয়ে রেড-শিফট হয়ে যায়।
বিজ্ঞানী হাবল আরও দেখান যে কোন একটি ছায়াপথের দূরে সরে যাওয়ার গতি উক্ত ছায়পথ থেকে পৃথিবীর দূরত্বের সমানুপাতিক। সম্প্রসারমান মহাবিশ্বের কোন কোন জায়গায় সম্প্রসারণের গতি আলোর গতির সমান বা তার বেশী। ফলে উক্ত জায়গা থেকে কোন আলো আমাদের কাছে কখনও পৌছে না। একে বলে Cosmic Event Horizon । ইভেন্ট হরাইজনের অন্তর্গত মহাবিশ্ব হচ্ছে ’দৃশ্যমান’ মহাবিশ্ব। আমরা জানিনা এই ইভেন্ট হরাইজনের পরে মহাবিশ্বের কোনো অংশ আছে কি নেই? বা কতটুকু আছে।
প্রিয় পাঠক, একবার চিন্তা করে দেখুনতো যেই মহাবিশ্ব এত বিশাল, এত বিস্তৃত! সেই মহাবিশ্বের স্রষ্টার ক্ষমতার বিশলতা কত বেশী?
সুবহানআল্লাহ!
“যিনি সৃষ্টি করেছেন স্তরে স্তরে সাত আসমান। রহমানের সৃষ্টিতে আপনি কোনো খুঁত দেখতে পাবেন না; আপনি আবার তাকিয়ে দেখুন, কোনো ত্রুটি দেখতে পান কি?” (সুরা মূলক ৬৭, আয়াত- ৩).
“আর আসমান আমরা তা নির্মাণ করেছি আমাদের ক্ষমতা বলে এবং আমরা নিশ্চয়ই মহাসম্প্রসারণকারী।” (সুরা আল যারিয়াত ৫১, আয়াত-৪৭)
“মানুষ সৃষ্টি অপেক্ষা আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি অবশ্যই বড় বিষয়, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না।” (সুরা গাফির ৪০, আয়াত-৫৭)
“আসমানসমূহ ও যমীনের সৃষ্টিতে, রাত ও দিনের পরিবর্তনে নিদর্শনাবলী রয়েছে বোধশক্তি সম্পন্ন লোকদের জন্য। যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে আল্লাহ্র স্মরণ করে এবং আসমানসমূহ ও যমীনের সৃষ্টি সম্বন্ধে চিন্তা করে, আর বলে, ‘হে আমাদের রব! আপনি এগুলো অনর্থক সৃষ্টি করেননি , আপনি অত্যন্ত পবিত্র, অতএব আপনি আমাদেরকে আগুনের শাস্তি হতে রক্ষা করুন।’” (সুরা আল ইমরান ৩, আয়াত-১৯০,১৯১).
তথ্যসূত্রঃ
1. https://science.howstuffworks.com/question224.htm
2. https://www.space.com/30417-parallax.html
3. https://swimone21.medium.com/how-is-the-expansion-of-the…