নতুন করোনা ভাইরাস ও আমাদের করনীয়
..
২০০৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারী। বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থার কাছে একটি ফোন আসল। কে ফোন করেছে? গনচীনের স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় থেকে ফোন। তারা ২০০২ সালের শেষের দিকে চীনের গুয়াংডং প্রদেশে অন্যরকম কিছু নিউমোনিয়ার (Atypical Pneumonia) কেস পেয়েছে যাদেরকে সাধারণ চিকিৎসা দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা যাচ্ছে না। ফেব্রুয়ারী গড়িয়ে মার্চ যেতে না যেতেই এ ধরনের আরো কেস আবিস্কার হতে লাগলো ভিয়েতনাম, হংকং, কানাডা ও সিঙ্গাপুরে।
দেখা গেল এটি শ্বাসযন্ত্রের নতুন একটি রোগ যা খুবই ভয়াবহ আক্রমন করে মানুষকে মৃত্যুর দিকে ধাবিত করে। নতুন রোগের নাম দেয়া হল Severe Acute Respiratory Syndrome (SARS) । রোগটা দ্রুত আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ থেকে অন্যদের শ্বাসনালীতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অবস্থার ভয়াবহতা আঁচ করতে পারল। ২০০৩ সালের ১২ই মার্চ এক সংবাদ সম্মেলন করে বিশ্বব্যাপী সতর্কতা জারি করা হল।
কয়েকদিনের মধ্যেই সার্সের কারণ হিসেবে আবিস্কার হল একটি ভাইরাস। যাকে বলা হয় সার্স করোনা ভাইরাস। গুয়াংডং প্রদেশের কোন একটি গবাদীপশুর বাজার থেকে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে বলে ধারণা করা হয়।
সেইবার পুরোবিশ্বে ২৯টি দেশে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছিল যা প্রায় ৮০৯৮জনকে আক্রমন করে ৭৭৪ জনের মৃত্যু ঘটায় (৯.৪%)।
ভাইরাস মানুষের শ্বাসনালীতে অহরহই আক্রমন করে। প্রতি বছরই আমরা অনেকেই কমন কোল্ড-এ ভুগি। কিন্তু, করোনা ভাইরাসের মত দ্রুত মৃত্যূ খুব কম ভাইরাসই ডেকে আনে। গতবছর আমাদের দেশে যে ডেঙ্গু ভাইরাস আক্রমন হয় তাতে সঠিক সময় চিকিৎসা করায় মৃত্যু হার ০.২%-এরও নিচে ছিলো।
এরপর ২০১২ সালে সৌদি আরবে আবার একই ধরনের একটা ভাইরাস ধরা পরলো প্রায় ২২ জনের মধ্যে। এবারও কালপ্রিট একটি করোনা ভাইরাস। এই ভাইরাসের নাম দেয়া হল মিডল ইস্ট রেসপিরেটরী সিনড্রোম তথা মার্স করোনা ভাইরাস। এটি ছড়িয়ে পড়েছে সম্ভবত উট থেকে। ২০১৪ সাল পর্যন্ত এটি সৌদিতে ৬৮৮ জনকে আক্রান্ত করেছে। তার মধ্যে প্রায় ২৮২ জন মারা গেছে।
সেবার বাংলাদেশের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান IEDCR খুবই দক্ষতার সাথে মধ্যপ্রাচ্য থেকে ফেরত আসা সন্দেহজনক মার্স কেসকে নিবিড় পর্যবেক্ষনে রাখায় তা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়েনি।
এবার ২০১৯ সালে ডিসেম্বরের শেষে আবার একটি নতুন করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। সন্দেহ করা হচ্ছে এটি চীনের হুবাই প্রদেশের উহান শহরের একটি প্রাণীবাজারে সাপ থেকে ছড়িয়ে পড়েছে। আজকে পর্যন্ত চিনে ৪১ জন ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তবে চিনের বাইরে কোন মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। সারা পৃথিবীতে ১২/১৪টি দেশে প্রায় ১৩০০টি কেস নিশ্চিত হয়েছে। সম্প্রতি আমাদের নিকটবর্তী ভারতে এগারটি এবং নেপালে একটি কেস পাওয়া গেছে।
সুতরাং করোনা ভাইরাস আমাদের দেশেও ছড়িয়ে পরতে পারে। তবে আমাদের ভীত না হয়ে সতর্ক হতে হবে। লক্ষ্যনীয়, করোনা ভাইরাস যাদের আক্রান্ত করে তাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম হলে সাধারনত মারাত্মক রোগ করতে পারে। কিন্তু, কিভাবে আমরা করোনা ভাইরাস থেকে নিজেকে বাঁচাবো? (বিস্তারিত ডানের ছবিতে)
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে নিচের ব্যবস্থাগুলো নেয়া জরুরী-
– সাবান ও পানি দিয়ে অন্তত বিশ সেকেন্ড হাত ধোয়া
– নিজের চোখ, নাক ও মুখ আধোয়া হাতে না ধরা
– যারা করোনা ভাইরাস আক্রান্ত তাদের নিকটে না যাওয়া
যদি আসেপাশে কারও জ্বর, গলাব্যাথা, কাশি বা শ্বাসকষ্ট থাকে তাকে ডাক্তার দেখান এবং
– বাসায় থাকতে বলুন
– অন্যদের স্পর্শ এরিয়ে চলতে বলুন
– কাশির সময় মুখ ও নাক টিস্যু দিয়ে ঢেকে রাখতে বলুন, টিস্যুটি ময়লার ড্রামে ফেলে হাত ধুয়ে ফেলতে বলুন
এছাড়া যেসব দেশে (বিশেষ করে চীন) করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে সেগুলো থেকে কেউ আসার পর যদি ১৪ দিনের মধ্যে জ্বর (১০০ ফারেনহাইট বা তার বেশী), গলাব্যাথা, কাশি ও শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় দ্রুত হাসপাতালে যোগাযোগ করুন এবং ছবিতে দেয়া IEDCR-এর ফোন নাম্বারে ফোন করে জানান।
যেসব দেশে এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী সন্দেহ করা হচ্ছে বা নিশ্চিত হওয়া গেছে তার নাম ও আজকে পর্যন্ত কেস সংখ্যা নিম্নরুপ-
১. চীন – ১৩০০জন
২. ফ্রান্স – ৩জন
৩. জাপান – ৩জন
৪. অস্ট্রেলিয়া – ১জন
৫. মালয়েশিয়া – ১জন
৬. নেপাল – ১জন
৭. সিঙ্গাপুর – ৩জন
৮. দক্ষিণ কোরিয়া- ২জন
৯. তাইওয়ান – ৩জন
১০. থাইল্যান্ড- ২জন
১১. ইউএসএ- ২জন
১২. ভিয়েতনাম – ২জন
১৩. ভারত-১১ জন
আসুন আমরা সতর্ক হই এবং আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি যেন আল্লাহ আমাদের এই এপিডেমিক থেকে রক্ষা করেন এবং সুস্থ রাখেন। …
লাস্ট আপডেট: ২৫/০১/২০২০, রাত ১০.২৬