“শয়তান তোমাদেরকে অভাব অনটনের ভীতি প্রদর্শন করে এবং অশ্লীলতার আদেশ দেয়। পক্ষান্তরে আল্লাহ তোমাদেরকে নিজের পক্ষ থেকে ক্ষমা ও বেশী অনুগ্রহের ওয়াদা করেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সুবিজ্ঞ”।–সূরা বাক্বারা: ২৬৮
কোন জাতিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে আসার জন্য শয়তান ধীরে ধীরে উক্ত জাতির মধ্যে অশ্লীলতার বিস্তৃতি ঘটায়। শয়তার এই কাজটা করে ধীরে ধীরে। একটু মনোযোগ দিয়ে চিন্তা করলেই দেখা যাবে, মুসলিম জাতিতে অশ্লীলতা ছড়িয়ে দেয়ার জন্য শয়তান কি পদ্ধতি অবলম্বন করেছে। শয়তান প্রথমে নারী ও পুরুষকে পর্দার বাইরে নিয়ে এসেছে। এটা ছিলো বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে। এরপর, রেডিও ও টেলিভিশন জমানার আগে অসংখ্য গল্প, উপন্যাস, নাটক, সাহিত্যে ছেলে ও মেয়েদের মধ্যবর্তী কথাবার্তা ও হাত ধরাধরি না করে গল্প করাকে (তথা প্রেম) স্বাভাবিক হিসেবে সাবকনসাস মাইন্ডে ঢুকিয়ে দিয়েছে।
রেডিও ও টেলিভিশন আসার পরে প্রথম উপরোক্ত ধরনের বিষয়গুলোকে ‘শোনা’ ও ‘দেখা’ এ দুটো পদ্ধতিতে মগজে প্রথিত করেছে। তার ফলে আমাদের বিংশ শতাব্দীর শেষের দশ ও একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকে এমন একদল তরুণ তৈরী হয়েছে যারা উপরোক্ত ধরনের প্রেমকে ‘হারাম’ মনে করত না (আল্লাহ আমাকে এ ধরনের নিকৃষ্ট ধারণা থেকে হেফাজত করুন)।
প্রথম প্রথম শয়তানের স্ট্র্যাটেজি ছিলো আকারে ইঙ্গিতে অশ্লীলতার বীজ মন-মগজে রোপন করা। কিন্তু কিন্তু, সময়ের সাথে যখন শয়তানের ধোকায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেড়েছে শয়তান অশ্লীলতা ছড়ানোর স্ট্র্যাটেজিকে আরও বেশী প্রকাশ্যে নিয়ে এসেছে।
টেলিভিশন কেন্দ্রিক মিডিয়া ইন্ড্রাস্ট্রিতেও প্রথম প্রথম সরাসরি অশ্লীলতা প্রবেশ করানো হয় নি। ধীরে ধীরে মননকে কলুষিত করে অশ্লীলতা ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রথম প্রথম প্রেমের নামে আপাতদৃষ্টিতে অশ্লীল নয় এমন দৃশ্য থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে বিভিন্ন সিনেমা নাটকে একটা দুটো স্ন্যাপশট হলেও নগ্নতা ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে পর্ণের দিকে ধাবিত করার প্রথম সুড়সুড়ি। এভাবে প্রথমে তৈরী হয়েছে এমন একদল তরুণ যারা বিনোদনের নামে পর্ণ দেখাকে প্রথমে গোপনে এবং পরে প্রকাশ্যে স্বাভাবিক বানিয়ে ফেলেছে। এছাড়াও তৈরী হয়েছে কিছু পর্ণ এডিক্ট।
এখন চলছে শয়তানের দাবার শেষ চাল। যৌনতাকে ছড়িয়ে দেয়ার কাজে শয়তানের দোসররা এখন অনেকটাই প্রকাশ্য। ‘ক্লোজআপ কাছে আসার গল্প’ এবং ‘দেখিয়ে দাও অদেখা তোমায়’ অশ্লীলতাকে প্রকাশ্যে জনসম্মুখে ছড়িয়ে দেয়ার প্রথম ধাপ।
একটা গুনাহ যতক্ষণ গোপন থাকে ক্ষমা চেয়ে আল্লাহর ফিরে আসার সুযোগ থাকে। কিন্তু, গুনাহটি যখন প্রকাশ্যে স্বাভাবিকভাবে প্রচলিত হয়ে পরে তখন সেটি উক্ত আক্রান্ত জাতিতে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এনে উপস্থিত করে।
যারা আল্লাহর কৃপায় যারা এখনও ‘জাহান্নামের কাছে আসার গল্পের’ সম্পর্কে সচেতন, উক্ত সচেতনতা মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করা তাদের কর্তব্য।
দাঁত মাজার জন্য ইউলিভারের ক্লোজ-আপ বা অন্য টুথপেস্ট ব্যবহার করতেই হবে, এমন কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আপনি পাবেন না। তাহলে কেন তাদের পণ্য কিনছেন।
তারা প্রকাশ্যে ‘অশ্লীলতার’ আদেশ দিচ্ছে দেখেও কি আপনাদের কাছে বিষয়টি ক্লিয়ার নয় যে এরা কার দাসত্ব করছে। আপনি কি টাকা দিয়ে শয়তানের কাছ থেকে পণ্য কিনবেন? প্রশ্নই উঠে না।
এছাড়া আর কি করতে পারেন? হ্যা, ‘কাছের আসার গল্প’ ও ‘দেখিয়ে দাও অদেখা তোমায়’ জাতীয় ইঙ্গিতপূর্ণ অশ্লীলতার আহবানের বিভ্রান্তি নিয়ে ফেসবুকের নিউজফিডকে ‘অনেকদিন’ সরব রাখতে পারেন। আবার বলছি, ‘অনেকদিন’ এবং ‘অনেকে’ মিলে সরব থাকতে পারেন। আল্লাহ আমাদের শয়তানের ফিৎনা থেকে রক্ষা করুন।
Leave a Reply