বায়োটেকনলজিস্ট মাতি লাইজোলা ছিলেন এক সময়ের কড়া ডারউইনবাদী। জীবের আণবিক লেভেলে গবেষণা করা এই বিজ্ঞানী এক সময় ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন তত্ত্ব নিয়ে পড়া শুরু করেন এবং ডিজাইনতত্ত্বে আশ্বস্ত হয়ে ডারউইনবাদ ছেড়ে ডিজাইনতত্ত্বের দিকে ধাবিত হন। তার এই ব্যক্তিগত পড়াশুনা, অভিজ্ঞতা ও চিন্তাভাবনাকে গুছিয়ে তিনি একটি বই লিখেছেন। বইটির নাম: Heretic: One Scientist’s Journey from Darwin to Design।
অ্যামাজনে বইটির রিভিউয়ারদের মধ্যে একজন বইটির শেষের দিক থেকে একটি প্যারা তুলে দিয়েছেন। প্যারাটিতে লেখক (মাতি লাইজোলা) বিবর্তনতত্ত্বের বিশাল পরিচিতিকে খুব অল্প কথায় চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন। নিচে আপনাদের জন্য প্যারাটিকে কোনরকম অনুবাদ করে দিচ্ছি।
বিবর্তন খুব ধীরে হয়, তবে তারাতারিও হয়। বিবর্তন গতিশীল এবং সময়ের সাথে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে পারে, শুধু সেই ক্ষেত্র ব্যতীত যখন মিলিয়ন বছরের ব্যবধানে কোন জীবকে একই রকম রাখে। এটি জীবের চূড়ান্ত জটিলতাকেও ব্যাখ্যা করে, আবার মার্জিত সরলতাকেও বুঝিয়ে দেয়। এটি আমাদের শেখায় কিভাবে পাখি উড়তে শিখেছে এবং একই সাথে কিভাবে উড়ার যোগ্যতা হাড়িয়েছে। বিবর্তন চিতা বাঘকে বানিয়েছে দ্রুতগতিসম্পন্ন এবং কচ্ছপকে বানিয়েছে ধীরগতির। এটি কোন কোন প্রাণীকে বানিয়েছে বড় এবং কোন কোনটাকে ছোট, কাউকে বানিয়েছে চোখ ধাঁধানো সুন্দর ও কাউকে বানিয়েছে বিরক্তিকর ধূসর। এটি মাছকে জোড়পূর্বক হাটতে শিখিয়েছে এবং হাটতে পারা প্রাণীকে পুনরায় সমুদ্রে পাঠিয়ে দিয়েছে। এটি একটি গঠন থেকে অন্যান্য গঠনের বিস্তার ঘটায়, একই সাথে ভিন্ন গঠনকে একই গঠনে এনে মিলিত করে। এটি সূক্ষাতিসূক্ষ ডিজাইনকেও ব্যাখ্যা করে, আবার দীর্ঘ সময় ধরে ‘জাঙ্ক’ তৈরী করে। বিবর্তন কিছু সময় এলোপাতাড়ি ও দিক নির্দেশনাহী এবং অন্য সময় একটি লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে আগায়। বিবর্তনের অধীনে জীবন হল একটি দয়ামায়াহীন স্বার্থপর যুদ্ধক্ষেত্র, তবে সেই সময় বাদে যখন এটি পরার্থপরতা শেখায়। এবং বিবর্তন এসব করে নতুন নতুন গজিয়ে ওঠা হাইপোথিসিসের মাধ্যমে। আধুনিক বিবর্তনতত্ত্ব হল সকল তত্ত্বের ‘রুব গোল্ডবার্গ’ মেশিন। এবং এতসব অভিনব কল্পনাবিলাসের ফলাফল কি? ‘ফ্লগিস্টন’ নামক অকার্যকর তত্ত্বের ন্যায়, এটি কোন কিছু ব্যাখ্যা না করেও সবকিছুই ব্যাখ্যা করে।
…..
বি.দ্র.:
১. মূল ইংলিশ প্যারাটুকু খুব সাবলিলভাবে লেখা। যার মর্যাদা আমি অনুবাদে রাখতে পারিনি। যাদের আগ্রহ আছে বইটির নাম ধরে সার্চ দিয়ে অ্যামজনে ঢুকে Michael A. Johnson-এর রিভিউটা পড়বেন।
২. বইটি পড়ার সৌভাগ্য এখনও হয়নি। তবে উক্ত প্যারাটি পড়ে বইটি পড়ার আগ্রহ লক্ষগুনে বেড়ে গিয়েছে।
Leave a Reply