হঠাৎ_ভাবনা: ২

ছোটবেলা থেকেই আমার ম্যাথ, ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি এবং বিশেষ করে  বায়োলজির প্রতি আলাদা একটা আকর্ষণ কাজ করত। এর পিছনে অন্যতম কারণ বলে মনে করি আমার ভিতরের স্রষ্টায় বিশ্বাস নিয়ে সৃষ্ট কনফিউশন । ক্লাস এইট থেকে কনফিউশনের শুরু। মুসলিম ব্যকগ্রাউণ্ড থেকে উঠে আসায় স্বাভাবিকভাবেই কনফিউশনের উত্তর খুঁজতে হাতের কাছে থাকা বিভিন্ন বই পড়েছি। তবে কোরআন পড়তে গেলে একটা বিষয় সবসময় আমার চিন্তায় অনুরণন হত যে আল্লাহ বলছেন তার সৃষ্টিতে বুদ্ধিমানদের জন্য নিদর্শন আছে।

আলহামদুলিল্লাহ এই বায়োলজি ও মলিকিউলার বায়োলজির জ্ঞানই আমার স্রষ্টা বিশ্বাসের কনফিউশন দূর করতে অধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলো।

মেডিকেলে পড়ার সুবাদে মানুষের ইন্ট্রিকেট গঠন নিয়ে পড়ার সুযোগ হয়েছে। মলিকিউলার লেভেল থেকে অর্গানিক লেভেল পর্যন্ত মানুষের কমপ্লেক্সিটি ও ইন্টেগ্রেটেড কমপ্লিমেন্টারী অর্গ্যানাইজেশন  যতই পড়েছি ততই এর পিছনের ডিজাইনারের প্রতি বিশ্বাস দৃঢ় হয়েছে এবং প্রতিবার স্রষ্টার কাছে শুকরিয়া আদায় করেছি। আলহামদুলিল্লাহ।

আল্লাহর নিদর্শন দেখে তার শুকরিয়া আদায় করাটা একজন বিশ্বাসীর সহজাত ফিতরাত হওয়ার কথা। কিন্তু, ডারউইনিজম আমাদের এই ফিতরাতকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়।

ডারউইনিজম হল ফিলোসফিকাল ন্যাচারিজম-এর একটি বিলিফ সিস্টেম যা আমাদের বলছে যে যখন বায়োলজির মধ্যে ডিজাইন দেখবে তখন মনে করার কোন কারণ নাই যে তা কোন ডিজাইনার করেছে। এগুলা নাকি এলোমেলো হয়েছে। সিম্পল থেকে অধিকতর কমপ্লেক্স ডিজাইন আসছে এলোপাতাড়ি মিউটেশনের কারণে।

আপনাকে বলা হয় বিজ্ঞান চর্চার সময় মেথডোলজিকাল ন্যাচারালিজম ফলো করতে। অর্থাৎ বিজ্ঞান চর্চার সময় আপনি ডিজাইন দেখে ডাউকিন্সের মত বলবেন: Biology is the study of complicated things that give the appearance of having been designed for a purpose (1). অর্থাৎ, এগুলো ডিজাইনড না বরং, ডিজাইনড বলে মনে হয়।  অথবা, ফ্রান্সিস ক্রিকের মত কোষের ডিজাইন দেখার সময় মনে রাখবেন যে: Biologists must constantly keep in mind that what they see was not designed, but rather evolved. (2)

অর্থাৎ, আপনি বিশ্বাসী হলেও আল্লাহর সৃষ্ট ডিজাইন দেখে প্রশান্তি নিয়ে আল্লাহর প্রশংসা করতে পারবেন না। কারণ, আপনাকে ‘মেথোডোলজিকাল ন্যাচারালিজম’ ফলো করতে হবে। কিন্তু,  আপনাকে এই রুল কে দিয়েছে? বায়োলজিতে একটি  ডিজাইনের পিছনের ডিজাইনারের ইনফারেন্স টানা যাবে না এ বিষয়ে আপনাকে কারা বাধ্য করছে? কেন করছে?

একজন আর্কিওলজিস্ট কোন প্রাচীন আর্টিফেক্ট পেলে কিছু নিদর্শনের আলোকে বলছে এগুলো কোন বুদ্ধিমান সত্তা করে থাকবে। সার্চ ফর এক্সট্রাটেরিস্ট্রিয়াল ইনটেলিজেন্স (সেটি) প্রোগ্রামের বিজ্ঞানীরা ‘ইন্টেলিজেন্ট’ সিগনাল-এর অপেক্ষায় আছে- ইনটেলিজেন্ট এলিয়েন ডিটেকশনের জন্য। ক্রিপ্টোলজিস্টরা নয়েজের মধ্যে থেকে বুদ্ধিমান মানুষ কর্তৃক ক্রিপটিক ম্যাসেজ বের করার চেষ্টা করছে। কিন্তু, বায়োলজীতে, মোর স্পেসিফিক্যাল, ডিএনএতে আপনাকে এনকোডেড ইনফরমেশন দেখেও আপনাকে বলতে হবে যে এগুলো এলোপাতাড়ি প্রক্রিয়ায় আসছে। আর্কিওলজি, সেটি ডিজাইন খুঁজে বের করলে পদ্ধতিগত বস্তুবাদ (মেথডলজিকাল ন্যাচারালিজম) থেকে বের হয় না, কিন্তু, বায়োলজিতে ডিজাইন খুঁজলে আপনি পদ্ধতিগত বস্তুবাদ থেকে বের হয়ে যান। পরিস্কার ডাবল স্ট্যান্ডার্ড।

ম্যাথোডোলিক্যাল ন্যচারালাজিম ফলো করতে বলার মধ্য দিয়ে আপনার সাবকনসাসে ফিলোসফিক্যাল ন্যাচারাজিমকে গোপনে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। ফলে যে স্রষ্টার উপস্থিতি তার সৃষ্টিতে আপনি স্পষ্ট অনুভব করতে করতে পারেন, আপনার ফিলোসফিকাল এলিগিয়েন্স পরিবর্তিত হয়ে যাওয়ায় আপনি তা পারছেন না।

ইন ফ্যাক্ট, যারা বায়োলজির ওভারহেলমিং ডিজাইন দেখে ডারউইনিয়ান প্রসেসকে ইনএডেকোয়েটে হিসেবে অনুধাবন করছে তারাও প্যানস্পারমিয়া নামক প্রক্রিয়ায় জীবের উৎপত্তির ব্যাখ্যা দিচ্ছে। (3) অর্থাৎ, বাইরে থেকে ‘সামহাউ’ এই ইনট্রিকেট ডিজাইন পৃথিবীতে আসছে। কিভাবে আসল এই প্রশ্ন অন্যদের ইনভেস্টিগেশনের জন্য রাখা আছে।

কতটা হাস্যকর ডিজাইনের উপস্থিতি পেয়েও ফাইনাল কজ হিসেবে ‘ডিজাইনারকে’ অস্বীকার করার চেস্টা।

বিশেষ করে আপনি যখন এদেরকে বলবেন ডিজাইনারের কথা  তারা প্রশ্ন করবে: ডিজাইনারকে কে ডিজাইন করল? অর্থাৎ, এদের ফিলোসফিকাল কনফিউশান বা প্রিসাপোজিশন তখন বের হয়ে আসে। অর্থাৎ, এরা যতই বৈজ্ঞানিক ইনভেস্টিগেশনের সময় ফিলোসফিকালী নিউট্রাল থাকার অভিনয় করুক না কেন, প্রকৃতভাবে এরা অধিকাংশ ফিলোসফিক্যালী বস্তুবাদী।

লক্ষ্য করুন, যে কোন ঘটনার কার্যকারণ হিসেবে চার ধরনের কজ-এর কথা এরিস্টটল বলেছেন। যারা বিশ্বাসী তারা বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের সময় স্রষ্টাকে (ফিলোসফিক্যালী বা রিভিলেশন-এর মাধ্যমে) ফাইনাল কজ হিসেবে জেনেই অন্যান্য কজগুলোকে জানার চেষ্টা করে বা করতে পারে। সেক্ষেত্রে জীবজগতের ডিজাইন থেকে স্রষ্টার নিদর্শন চোখে পড়ে এবং বিশ্বাস আরও দৃঢ় হয়। কিন্তু, ডারউইনিজম (যেভাবে একে নিওএথেইস্টরা উপস্থাপন করে থাকে) তার দার্শনিক বস্তুবাদী বায়াসের কারণে ডিজাইন থেকে ডিজাইনারের ইনফারেন্সকে বাধা দেয়।

একজন বিশ্বাসীর সহজাত প্রবণতা হল সৃষ্টিতে স্রষ্টার নিদর্শন দেখে আল্লাহর প্রশংসা ও পবিত্রতা ঘোষণা করবে। কিন্তু, ডারউইনিজম এই সহজাত প্রবণতা তথা ফিতরাতকে নষ্ট করতে চায়।

আর এ কারণেই প্রয়োজনীয় এভিডেন্স না থাকা সত্যেও ডারউইনিজমকে বিজ্ঞান হিসেবে উপস্থাপন করার একাদেমিয়াতে আজ সর্বগ্রাসী তৎপরতা। 


বি.দ্র. : আমি কিন্তু, বিবর্তনবাদের কথা বলিনি, বলেছি ডারউইনবাদের কথা। বিবর্তনবাদ একটি গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব যা প্রজাতির ভ্যারিয়েশনকে টু সাম এক্সটেন্ট ব্যাখ্যা করে। ডারউইনবাদ হল এই তত্ত্বের সর্বগ্রাসী প্রয়োগ।

 

Reference:

1. Quoted from “The Blind Watchmaker”

2. Quoted from ‘What Mad Pursuit’ 3. Steele, E. J., et al (2018) “Cause of Cambrian Explosion – Terrestrial or Cosmic?”,Progress in Biophysics and Molecular Biology, 136. pp. 3-23

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *