(Falsifiability in science)
ধরুন, আপনার কাছে আপনার বন্ধু এসে দাবী করল তার বাসার চিলেকোঠায় ‘নোম’ নামক এক প্রকার কিম্ভূতকিমাকার প্রাণী আছে। প্রাণীগুলো সাইজে লিলিপুটদের মত। সবুজ রঙের।
আপনি একজন রিজনেবল মানুষ। আপনি জানতে চাইলেন এই প্রাণী আছে তার প্রমাণ কি?
আপনার বন্ধু বলল যে, সে নিজ চোখে দেখেছে। আপনি তার কথায় বিশ্বাস করতে পারলেন না। এজন্য স্বচক্ষে দেখতে তার বাসায় গেলেন। কিন্তু, আপনি দরজা খুলে সম্পূর্ণ পরিচ্ছন্ন গোছানো একটি রুম ছাড়া কিছু দেখতে পারলেন না। আপনার বন্ধুও প্রমাণ হিসেবে তার বিশ্বাস ছাড়া কোন এনোম্যালী তথা বাসার স্বাভাবিক অবস্থা থেকে ব্যতিক্রম কিছু উপস্থাপন করতে পারলো না।
আপনার মনে হল আপনার বন্ধু বোধ হয় হ্যালুসিনেট করছে। কিন্তু, আপনি তার ইভ্যালুয়েশন করে কোন মেডিকেল কারণ খুজে পেলেন না। আপনার কাছে কোন উপাত্ত না থাকায় বা‘নোম’ এর উপস্থিতি প্রমাণ বা অপ্রমাণের কোন উপায় না থাকায়, তার বিশ্বাসকে আপনি মিথ্যাও প্রতিপন্ন করতে পারলেন না।
আপনার বন্ধুর দাবীটি(বা প্রকল্প বা তত্ত্বটি) বৈজ্ঞানিকভাবে মিথ্যা প্রমাণ যোগ্য নয় বিধায় বিজ্ঞানের দর্শনের পরিভাষায় একে বলা হচ্ছে ‘unfalsifiable statement’।
বিজ্ঞানের দার্শনিক (Philosopher of Science) কার্ল পপারের মতে কোন তত্ত্বকে ‘বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব’ হিসেবে স্বীকৃতি দেবার জন্য তা Falsifiable হতে হবে। অর্থাৎ, একদল গবেষক যদি দাবী করে যে নতুন এক ধরনের শ্বসনতন্ত্রের রোগ দেখা দিয়েছে যার পিছনের একটি ভাইরাস দায়ী। অন্য গবেষকদের সেটি পরীক্ষানিরীক্ষার মাধ্যমে মিথ্যা(বা মিথ্যা নয়) প্রমাণ করার সুযোগ থাকতে হবে।
কোন উপাত্ত ব্যাখ্যার জন্য প্রদত্ত তত্ত্ব যদি মিথ্যা প্রমাণ করার সুযোগ না থাকে তাহলে তা বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব হিসেবে স্বীকৃতি পাবে না।
এখন, কোন উপাত্তের অবস্থা যদি এমন হয় তা ব্যাখার জন্য প্রদত্ত তত্ত্ব পরীক্ষানিরীক্ষা করে পর্যবেক্ষণ সম্ভব নয়, সেক্ষেত্রে দার্শনিক রিজনিং প্রয়োগ করে উক্ত তত্ত্বের বিশ্বাস যোগ্যতা যাচাই করা যেতে পারে। কিন্তু, সেটা বিজ্ঞানের জগতের বাইরে দর্শনের জগতে প্রবেশ করবে।
সুতরাং, আমরা যারা গবেষক হতে চাই, আমাদের মনে রাখতে হবে যে আমরা আমাদের পর্যবেক্ষণ লব্ধ উপাত্ত থেকে রিজনিং-এর মাধ্যমে যে তত্ত্ব দিয়ে উক্ত উপাত্তের কার্যকারণ ব্যাখ্যা করতে চাই, তা যেন ফলসিফাইয়েবল হয়।