Md. Abdullah Saeed Khan

#বিবর্তনকথন ৪: তিমির বিবর্তন নিয়ে প্রতারণা

কয়েক মাস আগে আগে নীল তিমির বিবর্তন নিয়ে রোর বাংলায় একটা পোস্ট দেয়া হয়েছিলো। পোস্টটি রোর বাংলার জনপ্রিয়তার কারণে অনেক পাঠকের কাছে পৌছে যায়। রোর যদি তার জনপ্রিয়তাকে কেন্দ্র করে জনশিক্ষা ও সমাজকল্যানমূলক আলোচনাগুলো মানুষের কাছে পৌছে দেয় তাতে তারা প্রশংসিত হবে সন্দেহ নেই, কিন্তু একটি অপ্রমানিত তত্ত্বকে যদি প্রমানিত হিসেবে প্রচার করে তাহলে দু:খ থেকে যায়।

রোর উক্ত আর্টিকেলে তিমির বিবর্তনের যে সরলরৈখিক চিত্র উপস্থাপন করেছিলো বিষয়টা এতটা সরল না।

রোরের উপস্থাপিত ছবিটা অনেকটা এরকম:

প্যাকাইসিটাস-অ্যাম্বুলোসিটাস-ব্যাসিলোসরাস-ডরুডন থেকে আজকের অডোনটয়েড তিমি এবং মিস্টিসিটি তিমি ।

কিন্তু, প্যাকাইসিটাস এবং অ্যাম্বুলোসিটাস ছিলো মেসোনাইকিড প্রাণী। মেসোনাইকিড এক ধরনের মাংসাশী ‘খুরযুক্ত’ প্রাণী যারা সময়ের আবর্তনের বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বর্তমান যত ‘খুরযুক্ত’ প্রাণী আছে এরা সবাই তৃণ‌ভোজী এবং এদেরকে বলা হয় আর্টিওড্যাকটাইল।

মজার বিষয় হলো বিবর্তনবাদীদের জগতে তিমির বিবর্তন-এর উপরে উল্লিখিত চিত্রের ডেফিনিটিভ বা ইরিফিউটেবল প্রমাণ নেই। কারণ?

প্যাকাইসিটাস এবং অ্যাম্বুলোসিটাস থেকে তিমি আসার বিষয়টা নির্ধারন হয়েছে অ্যানাটমিকাল (জীবাশ্ম হাড়ের অ্যানাটমি) ফাইলোজেনী দিয়ে। অন্যদিকে, মলিকুলার ফাইলোজেনেটিক অ্যানালাইসিস থেকে দেখা যায় যে তিমি (সিটাসিয়া গোত্র) আসলে আর্টিওড্যাকটাইল গোত্রের কাছাকাছি, মেসোনাইকিড গোত্রের কাছাকাছি নয়।

অর্থাৎ, মলিকুলার বিবর্তনবাদীদের হিসেবে তিমি এসেছে জলহস্তি, গরু, ছাগল, হরিণের গোত্রের (আর্টিওড্যাকটাইল) কমন পূর্বপুরুষ থেকে। আর, মরফোলজিকাল (অ্যানাটমিকাল) বিবর্তনাবাদীদের মতে তিমি এসেছে বিলুপ্ত প্যাকাইসিটি ও অ্যাম্বুলোসিটি গোত্রের কমন পূর্বপুরুষ থেকে।

এমনকি প্যাকাইসিটাস ও অ্যাম্বুলোসিটাসের (মেসোনাইকিড)-এর মত আর্টিওড্যাকটাইলি গোত্র থেকে আর্টিওসিটাস ও রোডোসিটাসকে (ফসিল হাড়ের হিসেবে অনুযায়ী) তিমির সরলরৈখিক পূর্বপুরষ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

আরও মজার বিষয় হলো আর্টিওড্যাকটাইলি থেকে তিমি আসার বিষয়টিকে যারা গবেষণায় প্রচার করছেন তারা বলতে চাচ্ছেন যে প্যাকাইসিটাস ও অ্যাম্বুলোসিটাস হয়ত ‘কনভারজেন্ট ইভল্যুশন’ হয়ে তিমি হতে যাচ্ছিল কিন্তু এর পরে আর অগ্রসর হতে পারে নি।

..

বিবর্তনবাদীরা যেভাবে ‘বিবর্তনবাদকে’ ধর্মগ্রন্থের মত সত্য ধরে নিয়ে জীবজগতের ভিতর বিবর্তন ঢুকিয়ে দিচ্ছেন এবং এজন্য যে সব বৈজ্ঞানিক টুল (যেমন : কনভারজেন্ট ইভল্যুশন ও ডাইভারজেন্ট ইভল্যুশন) আবিস্কার করেছেন আপনি সে প্রক্রিয়া এবং উক্ত টুল ব্যবহার করে যে কোন প্রাণীকে অন্য প্রাণীর ‘কমন এনসেস্টর’ থেকে বিবর্তিত হিসেবে (কমন ডিসেন্ট) প্রমাণ করতে পারবেন।

এই প্রেক্ষিতে এতদিন ভাবছিলাম মৎসকন্যার সবচেয়ে নিকটবর্তী গোত্র (Extant Sister Group) কোনটা হতে পারে? হঠাৎ সেদিন আবিস্কার করলাম ‘সিন্ধুঘোটক (Sea cow)’ বা ‘সিল (seal)’ হতে পারে মৎসকণ্যার সবচেয়ে নিকটবর্তী বিবর্তনীয় আত্মীয় (evolutionary relative)।

…..

রেফারেন্স রিডিং:

1. Thewissen JGM, Williams EM, Roe LJ, Hussain ST. Skeletons of terrestrial cetacean and the relationship of whales to ariodactyls. Nature. 2001;413(September):277–81.
2. Gingerich PD, Ul Haq H, Zalmout IS, Khan IH, Malkani MS. Origin of whales from early Artiodactyls: Hands and feet of eocene protocetidae from Pakistan. Science (80- ). 2001;293(5538):2239–42.
3. Wong, K. ‘The Mammals That Conquered the Seas’ in ‘Evolution: A Scientific American Reader’. The University of Chicago Press (2006), p. 182-192

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top