Md. Abdullah Saeed Khan

বিবর্তনবাদ নিয়ে একটি কথোপকথন

কিছুদিন আগে ফেসবুকের একটি গ্রুপে Imran Hasan-র একটি আলোচনায় Pratim Lala নামক একজন ইসলামবিদ্বেষী বর্ণহিন্দু নাস্তিকতার ভেক ধরে মন্তব্য করছিল। কথোপকথন এর শুরুর দিকেই তার বক্তব্য অনেকটা এরকম ছিল,

“আমার মনে হচ্ছে, আপনারা কেউই বোধহয় এ সমন্ধে নিধার্মিকদের যুক্তি একেবারেই পড়ে দেখেননি।”

কথা হচ্ছিল স্রষ্টার অস্তিত্ব সম্পর্কে। স্বাভাবিকভাবেই এই বিষয়ের আলোচনায় বিবর্তনবাদ চলে আসে। তাই আমি এভাবে শুরু করেছিলাম:

“একটি ফসিল ‘ক’ এবং একটি ফসিল ‘খ’ কে পাশাপাশি রেখে বলা যেতে পারে হয় ‘ক’ থেকে ‘খ’ বিবর্তন প্রক্রিয়ায় এসেছে। আবার বলা যেতে পারে, ‘ক’ এর পরে ‘খ’ এসেছে তবে তাতে ‘ক’ এর ডিএনএকে রিপ্রোপ্রামিং করে ‘খ’ সৃষ্টি করা হয়েছে। এখন এ দুটো হাইপোথিসিস প্রমাণ করার জন্য দরকার ইনডাইরেক্ট এভিডেন্স। যেহেতু ‘ক’ এবং ‘খ’ এখন ইতিহাস এদের ট্রানজিসন অবজার্ভড নয়।

এমতাবস্থায় বিবর্তন প্রমাণ করতে হলে অন্তত একটি ম্যাক্রোইভ্যলিউশনের উদাহরণ আনা দরকার হবে। অর্থাৎ একটি ব্যাকটেরিয়া স্পিসিস, আরেকটি ব্যাকটেরিয়া স্পিসিসে ন্যাচারাল সিলেকশনের মধ্য দিয়ে পরিণত হয়েছে। কিন্তু এ ধরণের কোন উদাহরণ নেই। তবে রিপ্রোগ্রামিং করে যে একটি সফটওয়্যারকে আরেকটি সফটওয়্যারে পরিণত করা যায় তার যথেষ্ট উদাহরণ আছে। অর্থাৎ ‘ক’ থেকে ‘খ’ আসার দ্বিতীয় তত্ত্বটির ইনডাইরেক্ট অবজারভেবল এভিডেন্স আছে।”

এখানে দুটো পয়েন্ট লক্ষণীয়, একটি হল যেই ঘোল দিয়ে দুধের স্বাদ মেটানোর চেষ্টা করা হয় সেই ফসিল দিয়ে বিবর্তনের প্রমাণ দেখানোর ভ্যালিডিটি টেস্টের পদ্ধতি ব্যক্ত করা হয়েছে এই বক্তব্যে, আরেকটি বিষয় হল ম্যাক্রোইভ্যলিউশনের উদাহরণ কেন আনতে হবে সে বিষয়টি এখানে স্পষ্ট করে বলে দেয়া হয়েছে। (অর্থাৎ ম্যাক্রোইভ্যলিউশনের ডাইরেক্ট এভিডেন্স ডারউইনিয়ান ইভ্যলিউশনের ইনডাইরেক্ট এভিডেন্স হিসেবে কাজ করবে)

কিন্তু প্রতিম লালা উত্তর দিলেন এভাবে,

“আমাকে যদি এখানে বিবর্তনকে প্রমাণ করতে হয়, তাহলে তা হবে দুঃখজনক। //অর্থাৎ একটি ব্যাকটেরিয়া স্পিসিস, আরেকটি ব্যাকটেরিয়া স্পিসিসে ন্যাচারাল সিলেকশনের মধ্য দিয়ে পরিণত হয়েছে। কিন্তু এ ধরণের কোন উদাহরণ নেই।// এসব মিথ্যাচার করে কি লাভ? আপনাকে কে বলল, এরকম কোন উদাহরণ নেই?”

এমন ভাব যেন দুনিয়ার সব বিজ্ঞান তিনি বুঝেন এবং তিনি উদাহরণ থাকার ব্যাপারে নিশ্চিত। এখানে প্রকাশিত ‘অহংকার’ প্রায় প্রত্যেক বাঙ্গালী নাস্তিকদের সাধারণ বৈশিষ্ট্য।

যাই হোক আমি তাকে সরাসরি বললাম: “উদাহরণ দেন।”

তিনি উত্তর করলেন: “প্রথমে বলে রাখি সময় নষ্ট করাচ্ছেন। আর দ্বিতীয় কথা হল, কিছু কিছু মুসলিম এখন কোরানে বিবর্তন আছে বলে নতুন ফতোয়া দিচ্ছে। এমনকি কোরান থেকে সুরা কোট করা হচ্ছে, এ বিষয়ে। দেখার বিষয় আপনারা কখন ওল্টান। অপেক্ষা করেন উদাহরণ দিচ্ছি।”

দেখুন কথা প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে দেয়ার একটি চেষ্টা আছে। এ ধরণের উদাহরণ খুঁজতে গিয়ে সবচেয়ে ভাল যে উদাহরণটা আনা যাবে তা সম্পর্কে আমি তাকে ইঙ্গিত দিলাম এবং বুঝিয়ে দিলাম কেন সেটি ম্যাক্রোইভ্যলিউশনের কোন উদাহরণ নয়।

“রিচার্ড লেন্সকি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় ইভ্যলিউশন এক্সপেরিমেন্ট চালিয়েছেন। ১৯৮৮ সাল থেকে চলমান প্রক্রিয়াটিতে ই. কোলাই এখনও ই. কোলাই আছে। (ডাইরেক্টলি অবজারভড এভিডেন্স দেয়ার অনুরোধ থাকল)”

পরের কমেন্টে আমি আরও ব্যাখ্যা করলাম এই এক্সপেরিমেন্ট থেকে একটি মাইক্রোইভ্যলিউশনের উদাহরণ দেয়া যায়, তবে সেটা ম্যাক্রোইভ্যলিউশনের ধারে কাছেও নয়।

“রিচার্ড লেন্সকির পরীক্ষায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবজারভেশন হল, অক্সিজেন মিডিয়ামে সাইট্রেট ইউটিলাইজিং ব্যাকটেরিয়ার আগমন। যার কারণ হল একটি ট্রান্সপোজন মেডিয়েটেড জিন ডুপ্লিকেশন ইভেন্ট। যার ফলে একটি প্রোমোটার একটি ইনএকটিভ জিনকে অতিক্রম করে একটি সাইট্রেট ইউটিলাইজিং এনজাইমের জিন যা অলরেডি ই. কোলাইতে ছিল, তার নিকটে চলে আসে। ফলে ব্যাকটেরিয়া সাইট্রেট ইউটিলাইজ করতে পারে। লক্ষ্যণীয় এটি হল মাইক্রোইভ্যলিউশন, ম্যাক্রো নয়।”

লক্ষণীয় বিবর্তনবাদীরা এই উদাহরণ টেনে, একটি কুমির বারবার দেখিয়ে সাতটি কুমির প্রমাণ দেয়ার ঘটনার অবতারণা করেন। মাইক্রো দেখিয়ে ম্যাক্রোকে প্রমাণ দেয়া দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর চেষ্টার মতই।

এরপর দেখুন মজা:

১. Pratim Lala: বাংলায় বন্যা আহমেদের চেয়ে ভাল ভাবে এ বিষয়ে আর কেউ লেখেনি বলে আমার ধারনা। তাই তার লেখার লিঙ্ক দিচ্ছি, সেখানেই প্রমাণ গুলি খুব পরিস্কার করে দেয়া আছে। বন্যা আহমেদের বইয়ের লিংক।

Pratim Lala: আপনি অবান্তর প্রস্নগ নিয়ে আসছেন

Abdullah Saeed Khan: বন্যা আহমেদের বই আমার পড়া হয়ে গেছে। তার বইয়ে এ ধরণের প্রমাণের কথা বলা হয়নি। ইন ফ্যাক্ট তার বইয়ে নিও-ডারউইনিজম নিয়ে কোন আলোচনা নেই বললেই চলে।

২. Pratim Lala: ঠিক আছে। আপনি pin down করেন আপনি কোন জিনিস জানতে চাইছেন। এবং কেন আপনার মনে হচ্ছে Direct Evidence না হলে আপনি মেনে নিতে পারছেন না।

৩. Pratim Lala: আর নিঊডারিনিজম বলত্রে আপনি কি বুঝচ্ছেন

Abdullah Saeed Khan: তাহলে আপনি ডাইরেক্ট এভিডেন্স দেখাতে পারছেন না। যখন দেখাতে পারবেন তখন ইনশাআল্লাহ সেটা নিয়ে আলোচনা হবে। আপনার সঙ্গে আলোচনা করে ভাল লাগল। ধন্যবাদ।

৪. Pratim Lala: সবচেয়ে বড় কথা বিবর্তন একটি প্রতিষ্টিত ত্বত্ত। এর এখন কেবল Fine Tune করা সম্ভব। অসংখ্য উদাহরণ, Peer Reviewed Journal, তথ্য এ বিষয়ে রয়েছে। একে উড়িয়ে দেওয়ার কোন রাস্তা নেই। আর Direct evidence থাকবে না কেন? প্রচুর Intermediate ফসিল উদ্ধার হয়েছে। Google – এ খোঁজ নিলেই এদের পাওয়া যায়। তবে আপনি যে specific bacteria speciman নিয়ে বলছেন তা নিয়ে আমার জানা নেই। এটা স্বীকার করতে আমার কোন বাধা নেই। তবে নতুন করে জানতেও বাধা নেই।

৫. Pratim Lala: Since the experiment’s inception, Lenski and his colleagues have reported a wide array of genetic changes; some evolutionary adaptations have occurred in all 12 populations, while others have only appeared in one or a few populations. One particularly striking adaption was the evolution of a strain of E. coli that was able to use citric acid as a carbon source in an aerobic environment. তথ্য সুত্র ;http://myxo.css.msu.edu/ecoli/overview.html.

এবার আমার হাসি পাচ্ছে।

লক্ষ্য করুন, যে অহংকারী নাস্তিক এত স্পর্ধা নিয়ে বললেন উদাহরণ আনবেন, তিনি ১ নং কমেন্টে উদাহরণ পাশ কেটে গেছেন। ২ নং পয়েন্টে তিনি জানতে চাচ্ছেন কেন ম্যাক্রোইভ্যলিউশন গুরুত্বপূর্ণ, অথচ এটা কিন্তু প্রথম কমেন্টেই এক্সপ্লেইন করেছি। ৩ নং পয়েন্ট দেখে মনে হচ্ছে ‘নিও-ডারউইনিজম সম্পর্কে তার ধারণাই নেই। ৪ নং পয়েন্টে বিজ্ঞানীদের মাথায় কাঁঠাল ভেঙ্গে বিবর্তনের প্রতি তাদের ‘অন্ধবিশ্বাস’ প্রকাশ করেছেন, এছাড়া কোন স্পেসিফিক ব্যাকটেরিয়া নিয়ে আমি ম্যাক্রোইভ্যলিউশনের উদাহরণ চাইনি বরং যে কোন উদাহরণ চেয়েছি এবং ৫ নং পয়েন্টে সাইট্রেট ইউটিলাইজিং ব্যাকটেরিয়ার ব্যপারটি আবিস্কার করে তিনি মনের আনন্দে ‘হাসছেন’ যে আস্তিকটা কত বড় গাধা এরকম প্রমাণ দেখেই নাই! অথচ এই সাইট্রেটের ঘটনাটা কেন হয়, কিভাবে হয় সেই ম্যাকানিজমসহ সংক্ষেপে আলোচনা কিন্তু এই ব্যাক্তির উপলব্ধির ১৮ মিনিট আগেই করা হয়েছে।

সুতরাং আপনারাই চিন্তা করুন এমতাবস্থায় কোরআনের এই আয়াতটি আমল করার বিকল্প আছে কি?

“রহমানের (আসল) বান্দা তারাই যারা পৃথিবীর বুকে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং মূর্খরা তাদের সাথে কথা বলতে থাকলে বলে দেয়, তোমাদের সালাম।” (সুরা ফুরকান, আয়াত ৬৩)

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top