চলুন, একটা মজার বিষয় চিন্তা করি- নিজেকে চ্যাট জিপিটির স্থানে রেখে কল্পনা করি।
ধরি, আপনি এমন ক্ষমতা পেয়ে গেলেন যে পৃথিবীর সমস্ত মানুষের সমস্ত লেখা আপনি পড়েছেন এবং মনে রাখতে পারছেন, ঐ লেখাগুলোতে ব্যবহৃত প্রতিটি শব্দ কতবার ব্যবহার হয়েছে এবং কোন শব্দ বা শব্দাবলীর আগে বা পরে ব্যবহার হয়েছে তা মনে রাখতে পারছেন, এবং সেই শব্দগুচ্ছের পারস্পরিক সম্পর্কের আলোকে আপনি লিখতে পারছেন।
কিন্তু, এই অস্বাভাবিক ক্ষমতার বিনিময়ে আপনার মধ্যে থেকে বোঝার ক্ষমতা নিয়ে নেয়া হয়েছে। অর্থাৎ, আপনি সব ভাষা শিখেছেন, সব তথ্য জানেন। কিন্তু, তার অর্থ জানেন না।
কি হবে একবার ভেবে দেখুন তো।
আপনাকে যে প্রশ্ন করা হবে, আপনি উত্তর করতে গিয়ে আপনার শেখা শব্দাবলীর মধ্যে সবচেয়ে সম্ভাব্য শব্দাবলির কম্বিনেশন ব্যবহার করবেন। কিন্তু, প্রথম দিকে আপনার এই শব্দাবলির কম্বিনেশন অনেক ক্ষেত্রেই অর্থহীন হবে। কিন্তু, ধরি আপনাকে শত শত মানুষের একটি দল, যারা অর্থ বোঝে তারা ভুল করলে ধরিয়ে দিয়েছেন। এভাবে আপনি সঠিক শব্দাবলির কম্বিনেশন সম্পর্কে একটা জেনে নিয়েছেন। সেক্ষেত্রে, আপনি যত বেশী জানবেন ততই হিউম্যান লাইক রিসপন্স দিতে পারবেন। কিন্তু, আপনি নিজে তার কিছুই বুঝবেন না।
অর্থাৎ, আপনি কোন কিছু না বুঝে নকল করছেন। কিন্তু, নকল করার ক্ষেত্রে অসংখ্য মানুষের ব্যবহৃত বাক্যের প্যাটার্ন থেকে সবচেয়ে সম্ভাব্য প্যাটার্ণকে মিমিক করছেন।
এমতাবস্থায়, আপনাকে একটি অধিক উন্নত মানের দ্রুত কার্যক্ষম সম্পন্ন নকলযন্ত্র ছাড়া আর কিছু কি বলা যাবে?
না, তাই না?
এবার চলুন একটু অন্যভাবে চিন্তা করি। আসলে ‘বুঝা’ (understanding) বলতে কি বুঝায়? হতে পারে আমাদের ব্রেইনের ভিতর এ ধরনেরই কোন ঘটনা ঘটছে। অর্থাৎ, আমরা ছোট বেলা থেকে যত ধরনের তথ্য দেখা, শোনা, গন্ধ নেয়া, স্বাদ পাওয়া এবং অনুভব করার বিভিন্ন অঙ্গের মাধমে পেয়ে এসেছি, আমাদের যখন কোন কিছু সম্পর্কে বলা হয়, আমাদের ব্রেইন উক্ত তথ্যগুলোর মধ্যে সম্ভাব্য স্ট্যাটিসটিক্যাল রিলেশনগুলো চেক করে, এবং তার ভিত্তিতে উত্তর দেয়।
আপনি হয়ত ভাবছেন- না। আমাদের ব্রেইন শুধু এরকম না। আমাদের মধ্যে মৌলিকভাবে মেশিন থেকে পার্থক্য আছে।
ওয়েল আপনি ঠিকই চিন্তা করেছেন। কিন্তু, পার্থক্যটা আসলে কোথায়?
এটি বুঝতে আপনাকে আরেকটু গভীরভাবে ভাবতে হবে।
যখন আমরা বিভিন্ন তথ্য বিভিন্ন সেন্সের মাধ্যমে জানছি, তখন আমাদের ব্রেইন আসলে বিভিন্ন ধরনের তথ্যের ফ্রিকোয়েন্সী ক্যালকুলেট করছে এবং তার ভিত্তিতে একটি সম্ভব্যতা হিসেব করছে।
আমি যখন একটি কালো পাখি দেখে, কা কা শব্দ শুনে কাক বলছি। তখন, আমি তাকে কাক হিসেবে চিনতে পারছি, কাক সম্পর্কে আমার পূর্বের নলেজ এর কারণে। এই নলেজ-এর মধ্যে আছে কাকের ভিজুয়েল, অডিটরী এবং লিঙ্গুয়িস্টিক তথ্য।
খেয়াল করে দেখুন, এখানে আমার ব্রেইন দু’ধরনের রিজনিং ব্যবহার করছে। একটি হচ্ছে ইনডাকটিভ। অর্থাৎ, আমার পূর্বের দেখা সব কাক কালো এবং কা কা শব্দ করে।
সুতরাং, একই ধরনের ইমেজ, সাউন্ডযুক্ত কোন পাখি সদৃশ দৃশ্য আমার চোখে পড়লে তাকে আমি কাক বলি। তবে এক্ষেত্রে, আমি ডিডাকটিভ রিজনিংও ব্যবহার করছি। কিভাবে? আমার জ্ঞানের সাপেক্ষে, যেহেতু হুবুহু কাক সদৃশ, কা কা শব্দ তৈরীকারী, কালো রঙ্গের সব পাখিই কাক- সেহেতু আমি এখন যে পাখিটা দেখছি তা কাক।
মজার বিষয় হলো, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স খুব এফিসিয়েন্টলি এই কাজটা করতে পারে।
তাহলে, মানুষের ইন্টেলিজেন্সের সাথে এ.আই.-এর পার্থক্যটা কোথায়?
পার্থক্যটা বুঝতে চলুন কিছুক্ষণ আগের উদাহরণটাতে আবার যাওয়া যাক। আমি, কাক সদৃশ পাখিটাকে জানালার শেইডে বসে থাকতে দেখে কাক বলছি, তখন আমি আসলে আরও কিছু সম্ভাবনাকে নাকচ করছি। এই সম্ভাবনাগুলো অবশ্য আমি কখনও শিখিনি। বরং, আমার ‘সেন্স’ আমার অজান্তেই কিছু ‘কাউন্টার ফ্যাকচুয়েল’কে নাকচ করছে। অর্থাৎ, এই যে কালো কাক সদৃশ কা কা শব্দকারী প্রাণীটি আমি দেখছি, তা যদি কাক না হয়ে অন্য কিছু হত তাহলে তার আওয়াজ, আকৃতি, বা রং কেমন হতে পারতো? এখন, এই ধরনের বিকল্প সম্ভব্যতা বা ব্যাখ্যাতো বিলিয়ন ট্রিলিয়ন বা অসংখ্য অগনিত হতে পারে। কিন্তু, আমরা সম্ভাব্য সবচেয়ে সঠিক ধারণাকে বেছে নিতে পারি। কিভাবে?
‘কমন সেন্স’ ব্যবহার করে। আমরা এই যে কমন সেন্স ব্যবহার করে সম্ভাব্য অসংখ্য ব্যাখ্যা থেকে একটি বেছে নেই, এটা হচ্ছে অ্যাবডাকটিভ রিজনিং।
ইন্টট্রেস্টিং বিষয় হচ্ছে, সকল প্রকার আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইনডাকটিভ এবং ডিডাকটিভ রিজনিং ব্যাবহার করে। কারণ, এগুলো প্রোগ্রাম করা যায়। কিন্তু, এখন পর্যন্ত অ্যাবডাকটিভ রিজনিং-প্রোগ্রাম করার করার কোন পদ্ধতি আবিস্কৃত হয়নি।
এমনকি বিভিন্ন সাইডওয়েস দিয়ে যদি অ্যবডাকশন প্রোগ্রামও করা যেত ‘কমন সেন্স’ কিভাবে প্রোগ্রাম করবে?
আরেকটু গভীরে ভাবলে বুঝা যায় যে, কমন সেন্সের বিষয়টি আমাদের উপলব্ধি করার ক্ষমতার সাথে অতপ্রতভাবে জড়িত। আমাদের ব্রেইনে ভিজুয়েল, অডিটরি, অলফ্যাকটরি, গাসটেটরি এবং প্রোপ্রিউসেপটিভ ইনফরমেশন যাওয়ার পর আমরা যে পারসিভ তথা উপলব্ধি করি, সেটাকে বলা হয় কোয়ালিয়া। আমাদের ইমোশোন আমাাদের অনন্য একটি বৈশিষ্ট্য।
কোয়ালিয়া, ইমোশন, কমন সেন্স, ফ্রি-উইল হচ্ছে মানুষের ইন্টেলিজেন্স-এর ইউনিক বৈশিষ্ট্য। হ্যা আমাদের স্বাধীন ইচ্ছেশক্তি ব্যবহার করে আমরা ‘না’ বলতে পারি। স্বাধীন ইচ্ছেশক্তি এবং কমন সেন্স-এর কারণেই আমাদের ব্রেইন অগনিত অল্টারনেটিভ থেকে সর্বত্তোম বেছে নিতে জানে। অসীম সময়ে হাতড়ে না বেড়িয়ে থামতে জানে।
আমাদের এই বৈশিষ্ট্যগুলো নন-কম্পিউটেবল। এগুলোর কারণে, আমরা তথা মানুষরা বুঝতে পারি যে কোন প্রোগ্রাম হাল্ট করবে এবং কোনটি হাল্ট না কররে চলতেই থাকবে। কিন্তু, কম্পিউটার অ্যালগরিদম তা নির্ধারণ করতে পারে না।
আর, আমাদের আছে একটি সমন্বিত সেন্স বা self-awareness। আমাদের নিজেদের সম্পর্কে। যাকে আমরা নাম দিয়েছি কনসাসনেস। আর হ্যা, আমাদের কনসাসনেস আছে, কারণ আমাদের আছে আরও মৌলিক একটি সত্ত্বা। আর তা হল আমাদের আত্মা (soul), যা আমাদের মেশিন থেকে আলাদা করেছে।
সকল প্রশংসা আল্লাহর!
..