Md. Abdullah Saeed Khan

সৃষ্টিতে স্রষ্টার নিদর্শন (২): উট যেভাবে পানি জমিয়ে রাখে

কখনও কি চিন্তা করেছেন আপনাকে যদি মরুভূমিতে খাবার এবং পানি ছাড়া ছেড়ে দেয়া হয় আপনার কি অবস্থা হবে? পানি ও খাবার ছাড়া আপনি ৩৬ ঘন্টার মুখে মৃত্যুমুখে পতিত হবেন। অথচ একটি উট একই পরিস্থিতিতে বাঁচতে পারে ৩ সপ্তাহ পর্যন্ত। আবার ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় বাঁচতে পারে ৮ দিন।  কিন্তু কিভাবে?

হ্যা, এই উটেই আছে আমাদের জন্য চিন্তার খোরাক। উটের পিছনে যে কুজটি দেখতে পাচ্ছেন করুণাময় আল্লাহ সেটিকে দিয়েছেন উটের প্রয়োজন বিবেচনায় রেখেই। কুজের মধ্যে সঞ্চিত থাকে চর্বি। যা উটের খাদ্যের ভাণ্ডার হিসেবে কাজ করে। কিন্তু প্রশ্ন হল এই চর্বি যদি সাড়া শরীরে ছড়িয়ে থাকত তাহলে অসুবিধে কি ছিল? উত্তর, চর্বির তাপপ্রতিরোধক বৈশিষ্ট্যের কারণে, চর্বি যদি উটের পুরো শরীর জুড়ে থাকত, মরুভূমির প্রচণ্ড গরম আবহাওয়ায় উটের অভ্যন্তরে উৎপন্ন তাপ উটের ভিতরে আটকা পড়ত এবং উটটি মারা পড়ত। অন্যদিকে এই কারণেই কিন্তু তিমির শরীর আবার চর্বি দিয়েই ঘেরা। যাতে সমুদ্রের শীতল তাপ তিমির ভিতরের মেটাবলিক প্রক্রিয়া বন্ধ করে দিতে না পারে।

আপনি কি জানেন একজন মানুষ ঘন্টায় সর্বচ্চো কত লিটার পানি পান করতে পারে? খুব বেশী ঘাম হলেও ঘন্টায় এক থেকে দেড় লিটারের বেশী পানি খাওয়ার সুযোগ নেই। কারণ হঠাৎ বেশী পানি খেলে রক্তে লবনের ঘনত্ব কমে যায়। ফলে রক্ত থেকে বিভিন্ন কোষে পানি ঢুকে কোষ গুলো ফুলে যেতে থাকে। এভাবে হঠাৎ পানি খেলে লোহিত রক্ত কণিকায় পানি ঢুকে রক্তকণিকাগুলো ভেঙ্গে যাবে আবার মস্তিষ্কে অতিরিক্ত পানি (cerebral oedema) জমলে একজন মানুষ মারাও যেতে পারে।

শুনলে অবাক হবেন, একটি ৬০০ কেজি উট মাত্র ৩ মিনিটে ২০০ লিটার পানি গিলে ফেলতে পারে। এ্যাঁ, তাহলেতো উটটির রক্তে অতিরিক্ত পানি ঢুকে লোহিত রক্ত কণিকাগুলো ভাঙ্গন সৃষ্টি করার কথা? না তা কিন্তু হয় না। কারণ মহান আল্লাহ উটকে দিয়েছেন পানিশূণ্যতা সহ্য করার প্রচণ্ড ক্ষমতা। মানুষ যেখানে পানি কমে মাত্র ১০ শতাংশ ওজন হ্রাস সহ্য করতে পারে, সেখানে উট পারে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত। ফলে এত দ্রুত পানি খেলেও পর্যাপ্ত রিহাইড্রেশন হয়ে যায়। তদুপরি  উটের লোহিত কণাগুলো আমাদের শরীরের ন্যায় গোলাকার নয়, ডিম্বাকৃতির (Oval); ফলে হঠাৎ পানি বেড়ে গেলেও লোহিত কোষগুলোর সেল মেমব্রেন ভেঙ্গে যায় না। আবার এই ওভ্যাল আকৃতির কারনে পানিশূণ্য অবস্থায় কোষগুলো অপেক্ষাকৃত চিকন জালিকা দিয়ে সহজে চলাচল করে অক্সিজেন সরবরাহ অব্যাহত রাখতে পারে।

মরুভূমির খরতাপে পানি পাওয়া বড়ই দুস্কর। তাই উটকে দেয়া হয়েছে পানি ধরে রাখার অপূর্ব ক্ষমতা। উটের শ্বাসনালি দিয়ে যে পানি জলীয় বাস্প হয়ে বের হয়ে যায়, এর নাসারন্ধ্রের অপেক্ষাকৃতি পুরু মিউকাস মেমব্রেন তার প্রায় ৬৬ শতাংশ ধরে রাখতে পারে। এটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্য। এছাড়াও পানিশূন্য অবস্থায় উট প্রায় ৭৬ শতাংশ প্রস্রাব কমিয়ে দিতে পারে। এমনকি পায়খানার সাথে নি:সৃত পানি কমিয়ে দিতে পারে প্রায় ৫০ শতাংশ।

উটের মধ্যে যদি এই বৈশিষ্ট্যগুলো একসাথে না থাকত তাহলে কি উটের পক্ষে এই প্রখর রোদে বেঁচে থাকা সম্ভব হত? কখনই না। তাহলে এই উট কি একা একা ধাপে ধাপে তৈরী হয়েছে? উট কি মরুভূমির তাপমাত্রা, অধিক তাপমাত্রায় পানির প্রয়োজনীয়তা, পানির ধরে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় শারীরিক পরিবর্তনের ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি ও মলিক্যুলার বায়োলজি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ নিয়েছিল?   

কতই না নিঁখুত করুনাময় স্রষ্টার সৃষ্টি পরিকল্পনা। নিশ্চয়ই, সকল প্রশংসা তাঁর। 

এজন্যই কি আল্লাহ আমাদের কাছে প্রশ্ন রেখেছেন-

“তাহলে কি এরা উটগুলো দেখছে না, কিভাবে তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে ?”
(সূরা গাশিয়া, সুরা:৮৮; আয়াত:১৭)

সহায়ক পাঠ:

১) Harun Yahya, For man of understanding, page: 41-45

২) http://en.wikipedia.org/wiki/Camel#Evolution

৩) http://discovermagazine.com/2009/jan/05-20-things-you-didnt-know-about-fat#.UWRJBZNTAXs

৪) http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/12053855

৫) http://books.google.com/books?id=g3CbqZtaF4oC&lpg=PP1&pg=PA96#v=onepage&q&f=false

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top