আর্কিয়া হল এক কোষী আনুবীক্ষুণীক জীবের একটি গ্রুপ (ডোমেইন)। এই ডোমেইনের সদস্য হল ব্যাকটেরিয়ার মত এক কোষী অনুজীব যাদের কোন নিউক্লিয়াস ও মেমব্রেন বাউন্ড অর্গ্যানিলিস নেই। প্রথমে উত্ত্বপ্ত ঝর্ণা, লবনাক্ত লেক এর মত কঠিন প্রাকৃতিক পরিবেশে পাওয়া যায় বলে এদেরকে ‘এক্সটারমোফাইল’ বলা হত। পরবর্তীতে এদেরকে মাটি, সমুদ্র, জলাভূমি, এমনকি মানুষের কোলনেও পাওয়া গেছে।
যতদিন পর্যন্ত আর্কিয়নের আণবিক গঠন জানা যায় নি ততদিন এদেরকে বলা হত আর্কিব্যাকটেরিয়া। এদেরকে প্রক্যারিওটের মধ্যে রাখা হয়েছিল। পরে যখন গবেষণার মধ্য দিয়ে দেখা গেল এরা ভিন্ন ধরণের স্ট্রাকচারাল মলিকিউল দিয়ে গঠিত তখন বিজ্ঞানিরা পরলেন বিপাকে। কেননা একদিকে এদের আনুবিক্ষনিক গঠন ব্যাকটেরিয়ার মত আবার অন্য দিকে এদের বেশ কিছু ‘জিন’ ও মেটাবলিক পাথওয়ে ইউক্যারিওটের মত। আবার, এদেরকে বিশাল সংখ্যায় প্রকৃতিতে পাওয়া যাচ্ছে। ফলে বিজ্ঞানিদের আর্কিয়া নামক একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন ডোমেইন-ই তৈরী করতে হল। উইকিপিডিয়াতে কথাগুলো এভাবে আছে:
‘In fact, the Archaea have an independent evolutionary history and show many differences in their biochemistry from other forms of life, and so they are now classified as a separate domain in the three-domain system.’
আসুন দেখি আর্কিয়ার সেল মেমব্রেনে কী পাওয়া গেল:
Membrane structures.
Top, an archaeal phospholipid: 1, isoprene chains; 2, ether linkages; 3, L-glycerolmoiety; 4, phosphate group.
Middle, a bacterial or eukaryotic phospholipid: 5, fatty acid chains; 6, ester linkages; 7,. D-glycerol moiety; 8, phosphate group.
Bottom: 9, lipid bilayer of bacteria and eukaryotes; 10, lipid monolayer of some archaea.
প্রতিটি কোষের সেল মেমব্রেন গঠিত হয় ফসফোলিপিড বাইলেয়ার দিয়ে। এই ফসফোলিপিড অনু গুলো তৈরী হয় স্যাচুরেটেড ও আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিডের লম্বা চেইনের সাথে ফসফাটিডিক এসিড এর এস্টার বন্ধন(-COO-) দিয়ে।
কিন্তু, আর্কিয়নের আনবিক গঠন পরীক্ষা করে দেখা গেল যে, এক্ষেত্রে ফসফোলিপিডের লিপিড অংশটুকু আইসোপ্রিনাইল এলিফেটিক জৈব অনু দিয়ে গঠিত। অর্থাৎ এর লিপিড অংশটুকু তে এমন কিছু জৈব অনু আছে যেগুলোর আবার সাইডব্রানচিং আছে। অন্যদিকে এই অনুগুলো ব্যাকটেরিয়ার মত ফসফাটিডিক এসিডের সাথে এস্টার বন্ধনে যুক্ত না হয়ে ইথার(-CO-) বন্ধন দিয়ে যুক্ত। (ইথার বন্ধন এস্টার বন্ধনের চেয়ে বেশী রেসিলিয়েন্ট)
ফসফাটিডিক এসিডের গঠনে একটি গ্লিসারিন অনুর তিনটি হাইড্রোক্সাইড অনুর মধ্যে একটি হাইড্রোক্সাইড ফসফেট এর সাথে সমযোজী বন্ধনে যুক্ত থাকে। প্রকৃতিতে গ্লিসারিনের দুটি ময়েটি পাওয়া যায়। একটি ডান-হাতী, আরেকটি বা-হাতী। আর্কিয়নের স্টেরিওকেমিস্ট্রি তে দেখা গেছে যে এদের গ্লিসারিন অনুটি প্রোক্যারিয়ট বা ইউক্যারিয়টের ঠিক উল্টো। (মিরর ইমেজ)
এ বিষয়গুলো দেখে বোঝা যায় যে আর্কিয়ন তার সেল মেমব্রেন তৈরীর জন্য সম্পূর্ণ ভিন্ন সেট অব এনজাইম্স ব্যাবহার করে। ভিন্ন এনজাইম অর্থ হল ভিন্ন জেনেটিক কোড।
ফলে বিজ্ঞানীরা, আর্কিয়নকে ব্যাকটেরিয়া বা প্রোটজোয়ার মাঝে না রেখে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি ডোমেইনে রাখতে বাধ্য হলেন। এবং যথারীতি বিবর্তনবাদীরা ‘ব্যাকটেরিয়া থেকে আর্কিব্যাকটেরিয়া ও তার থেকে প্রোটোজোয়া’ না বলে তিনটি ডোমেইনের একটি ‘কমন এনসেস্টর’ খুজতে লেগে গেলেন।
আর্কিয়নের খাবারের বৈচিত্রও অন্যরকম। যারা ফটোট্রফ তারা নিজেদের খাদ্য নিজেরাই তৈরী করে সূর্যের আলোর সাহায্যে। যারা লিথোট্রফ তারা খায় অজৈব অনু। আর যারা অর্গেনোট্রফ তার খায় জৈব অনু।
গ্র্যান্ড প্রিজমেটিক স্প্রিং: এখানে থার্মোস্ট্যাবল আর্কিয়া পাওয়া যায়
কিছু আর্কিয়নের প্রজাতি বেঁচে থাকে ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার উপরে, তার প্রোটিনের কোন প্রকার ডিজেনারেশন ছাড়াই। আবার কিছু পাওয়া গেছে পোলার রিজিয়নে অত্যন্ত ঠান্ডার মধ্যে ফ্রিজিং হওয়া ছাড়াই। কিছু বাঁচে এক্সট্রিম এসিডিক বা এলক্যালাইন পরিবেশে। কিছু আবার একেবারে কম লবণযুক্ত পানিতে অসমোসিসের শক এবজর্ব করার মত থিক সেল মেমব্রেন নিয়ে বাঁচে।
চিন্তা করুণ এদের প্রজাতির কত ভ্যারাইটি (সুবহানআল্লাহ)। এটা দেখে বিবর্তনবাদী জীববিজ্ঞানীরা এখন আর্কিয়নের ডিফারেন্ট ও ইনডিপেন্ডেন্ট ইভোলিউশনারী হিস্ট্রি রচনা করছেন। এজন্য ওনাদের ট্রিতে এখন তিনটি কান্ড।
(চিন্তা করে দেখুন এককোষী অনুজীবের জন্য সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি ইতিহাস )
ইভোলিউশনের ‘বিস্ময়’ মানুষ, যারা কিনা মাত্র ১.৫% শতাংশ জেনেটিক মেক আপে এপদের থেকে পৃথক(!), তারা আবার এই আর্কিয়নদের নিজেদের সুবিধাজনক স্থানে ব্যবহার শুরু করে দিয়েছেন(!)
যেমন, মিথানোজেনিক ব্যাকটেরিয়া কে ব্যবহার করা হচ্ছে সুয়েজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট এ। আবারPyrococcus furiosus এর মত এক্সটারমোফাইলকে ব্যবহার করা হচ্ছে PCR reaction-এ। কারণ এরা যে ডিএনএ পলিমারেজ তৈরী করে তা থার্মস্ট্যাবল। PCR এ মানুষের ডিএনএ এর ডাবল হেলিক্স এর প্রতিটি হেলিক্স কে পৃথক করার জন্য দ্রবণের তাপমাত্রা ৯৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত ওঠানো হয়। এ তাপমাত্রায় প্রোক্যারিয়ট বা ইউক্যারিয়টের উক্ত এনজাইমটির টারশিয়ারি স্ট্রাকচার হারিয়ে ডি ন্যাচার হয়ে যাবে। অথচ Pyrococcus furiosus এর ডিএনএ পলিমারেজ এনজাইম এ তাপমাত্রায় ডিন্যাচার হয় না। (সুবহানআল্লাহ)
আসলে বিবর্তববাদীদের লক্ষ্য হল তাদের মত করে পৃথিবীর ইতিহাসকে সাজানো। (শুধুমাত্র উইকিপিডিয়া পড়লেও এ বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যায়) যদিও পৃথিবীর ইতিহাস ও জীব সমূহের গঠন বৈচিত্র এর উল্টোটাই সাক্ষ্য দিয়ে চলেছে।
“(হে নবী; এ লোকদের জিজ্ঞেস কর) কোন সৃষ্টিকর্তা ছাড়া এরা কি নিজেরাই সৃষ্টি হয়েছে? না কি এরা নিজেরাই নিজেদের সৃষ্টিকর্তা? না কি পৃথিবী ও আসমানকে এরাই সৃষ্টি করেছে ? প্রকৃত ব্যাপার হলো, তারা বিশ্বাস করে না।” (সূরা তূর, আয়াত ৩৫,৩৬)
(অর্থাৎ এই লোকেরা আসল ও শ্বাশত কথার প্রতি প্রত্যয় স্থাপন করতেই প্রস্তুত নয়।)
রেফারেন্স:
১) http://en.wikipedia.org/wiki/Archaea
২) http://en.wikipedia.org/wiki/Cell_membrane
৩) Lippincot’s Illustrated Reviews of Biochemistry, Chapter: Protein structure and function
৪) Davidson’s Principles and Practice of Medicine, Chapter: Molecular and genetic factors in disease
৫) Tafhim Ebook
ছবির উৎস: গুগল ও উইকিপিডিয়া
Leave a Reply