Md. Abdullah Saeed Khan

পড়াশোনা কিভাবে করবেন?

ভেবে দেখলাম জীবনে তিনটা কারণে পড়াশোনা করেছি। তিনটি ক্ষেত্রে অবশ্য পড়াশোনার ধরণ ছিলো ভিন্ন।

এক, পরীক্ষা পাশের জন্য। এই পড়ালেখাটা ছিলো খুবই সীমাবদ্ধ এবং সিলেবাস ভিত্তিক। পরীক্ষার আগে অনেকটা মুখস্থ করা জন্য।

দুই, কোন প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য। এই পড়ালেখাটা মূলত শুরু হয়েছে ক্লাস এইট থেকে। প্রশ্নগুলোকে অনেকটা থিওলজি, রিলিজিওন, ফিলোসফি এবং সায়েন্স ক্যাটেগরিতে ফেলা যায়। শুরুটা হয়েছিল তাকদির দিয়ে। এরপর, প্রজাতির উৎপত্তি (বিবর্তনবাদ, ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন), জীবের উৎপত্তি (অ্যাবায়োজেনেসিস), মহাবিশ্বের উৎপত্তি (কসমোলজি), মাইন্ডের ধরণ ও আত্মার অস্তিত্ব (ফিলোসফি অব মাইন্ড, কম্পিউটার সায়েন্স, কোয়ান্টাম মেকানিক্স), এবং ফিলোসফি অব রিলিজিওন। এই পড়ালেখার সময় বেশী বেইনস্টর্ম করতে হয়েছে। অবশ্য এটি এখনও চলছে। কখনও কম, কখনও বেশী।

তৃতীয়, কোন স্কিল অর্জন করতে গিয়ে। যেমন, ক্লিনিক্যাল স্কিল, রিসার্চ স্কিল এবং স্ট্যাটিসটিক্যাল স্কিল। এ পড়ালেখার ধরণ ছিল অনেকটা নিড বেইজড। যতটুকু জানা প্রয়োজন, ততটুকু ঠিক গভীরে থেকে জেনে আসা। যেন ফাউন্ডেশনটা ভাল হয়।

মনে পড়ে, এমবিবিএস-এর পর, বিবর্তন ও ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন থিউরী পড়তে গিয়ে মনে হল যে জেনেটিক্সটা ভাল মত বোঝা দরকার। ফলে, আমাদের দু্টো টেক্স বই ছিল লিপিনকট এবং হার্পার। দুইটা বই খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ে ফেললাম। আলবার্ট সাহেবের মলিকিউলার বায়োলজি অব সেল বইটিও কিনে ফেলেছিলাম, পড়বো বলে। ঢাউস সাইজের বইটা পড়া হয়ে ওঠেনি। তবে অন্য একটা বেশ বড় বই পড়া হয়েছে নিউরোসায়েন্স নিয়ে। মাইন্ড কিভাবে কাজ করে ভাবতে গিয়ে মনে হল নিউরোসায়েন্স ইন ডেপ্থ বোঝা দরকার। ডেল পার্ভস এর একটা টেক্স বই আছে, পুড়োটা খুব মনোযোগ দিয়ে পড়লাম।

তবে, টেক্সবই না পড়লেও এই বিষয়গুলো সম্পর্কিত পপুলার বই পড়া হয়েছে অনেকগুলো এবং আর্টিকেল হয়ত কয়েক হাজার।

এইসব পড়তে গিয়ে অবশ্য নিজের পাঠ্যবই-এর মনোযোগ গিয়েছিলো কমে। কিন্তু, সমস্যা হয়নি তেমন। কারণ, বিষয়গুলো রিলেটেড হওয়ায় মেডিসিনের পাঠ্যবই ডেভিডসনের অনেককিছুই বুঝতে সুবিধে হয়েছে।

তবে, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধরনের পড়ার স্টাইল আমি সবচেয়ে বেশী উপকারী হিসেবে পেয়েছি। এই পড়ার ফলে একটা লং-টাইম কনসেপচুয়ের মেমরী ডেভেলপ করেছে।

ইদানিং, এই দীর্ঘ পড়ালেখা, লিখালিখি এবং স্কিল তৈরীর ফল ক্যারিয়ারেও পাচ্ছি। আলহামদুলিল্লাহ। হয়ত এ কারণেই এমফিল এডমিশন পরীক্ষায় শুধু অংশগ্রহণ করতে গিয়ে চান্স পেয়ে গেছি। জীবনের প্রথম IELTS পরীক্ষায় কোন সিরিয়াস প্রিপারেশন ছাড়াই ব্যাণ্ড স্কোর ৮ পেয়েছি। অবশ্য মহান রবের রহমাহ ছাড়া এগুলো সম্ভব হতো না। সকল প্রশংসা তাঁর।

আমি সবাইকে অনুরোধ করবো বুঝে পড়ার অভ্যাস করতে এবং স্কিল ডেভেলপমেন্টে মনোযোগ দিতে। শুধু মুখস্থ করে কোন লাভ নেই, যদি আপনি না বুঝেন। আবার, শুধু বুঝে লাভ নেই, আপনি যদি জ্ঞান এপ্লাই না করতে পারেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top