গবেষণায় যুক্তিপ্রয়োগ

রিসার্চ বা গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ হচ্ছে Inference । বাংলায় এর অর্থ হচ্ছে সিদ্ধান্ত নেয়া বা অনুমান করা।

আমরা যখন কোন রিসার্চ বা গবেষণা করি, তখন একটি গবেষণা চক্রের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। উক্ত গবেষণা চক্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ইনফারেন্স।

গবেষণা চক্রের গড়নটা হচ্ছে অনেকটা এ রকম- তত্ত্ব (Theory) – প্রকল্প (Hypothesis) – উপাত্ত (Observation) –অনুমান/সিদ্ধান্ত (Inference)- তত্ত্ব (Theory)।

ইনফারেন্স করার জন্য বৈজ্ঞানিকরা যে চিন্তা প্রক্রিয়া ব্যবহার করেন তাকে বলা হয় যুক্তি প্রয়োগ তথা Reasoning।

বৈজ্ঞানিক গবেষণায় কারণ খুঁজে বের করার প্রক্রিয়া বা যুক্তি প্রয়োগ (Reasoning) বিভিন্ন রকম হতে পারে। চলুন উদাহরণ দিয়ে বিষয়গুলো বোঝার চেষ্টা করি।

এক, ধরুণ আপনি ভিন্ন কোন গ্রহে প্রাণের খোঁজে গিয়েছেন। আপনি জানেন যে, কোন স্থানে জীব থাকলে পানিও থাকবে (প্রস্তাব ১)। আপনি উক্ত গ্রহে একটি জীব খুঁজে পেলেন (প্রস্তাব ২)। সুতরাং, আপনি যৌক্তিক সিদ্ধান্তে উপনিত হবেন যে উক্ত গ্রহে পানি আছে (সিদ্ধান্ত)। এই ধরণের রিজনিংকে বলা হয় Deductive Reasoning।

অর্থাৎ, ডিডাকটিভ রিজনিং-কে নিচের কাঠামো দিয়ে প্রকাশ করা যায়।

প্রস্তাব ১: সকল ‘ক’-ই ‘খ’।

প্রস্তাব ২: ‘গ’ হচ্ছে একটি ‘ক’।

সুতরাং: ‘গ’-ও একটি ‘খ’।

দুই, আপনি আপনার জীবনে যতগুলো কাক দেখেছেন সবগুলোই কালো (উপাত্ত)। সুতরাং, আপনার প্রকল্প বা হাইপোথিসিস হচ্ছে যে আপনি যদি আরেকটি কাক দেখেন তা কালো হবে (সিদ্ধান্ত)। এই ধরনের রিজনিংকে বলা হয় Inductive reasoning।

উপাত্ত: আপনার দেখা সকল কাক কালো।

সিদ্ধান্ত: সকল কাকই কালো।

ইনডাকটিভ রিজনিং-এর সমস্যা হলো আপনি সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন আপনার সীমিত পর্যবেক্ষনের মাধ্যমে। হতে পারে আপনার একজন বন্ধু একদিন একটি ‘সাদা কাক’ দেখতে পেলো। তখন আপনার পর্যবেক্ষনের মাধ্যমে প্রাপ্ত সিদ্ধান্তটি ভুল প্রমানিত হবে।

ইনডাকটিভ রিজনিং-কে নিচের কাঠামো দিয়ে প্রকাশ করা যায়।

উপাত্ত: সকল আপাত পর্যবেক্ষণ লব্ধ ‘ক’-ই ‘খ’।

সিদ্ধান্ত: সকল ‘ক’-ই ‘খ’।

তিন, আপনি একজন অনুজীব বিজ্ঞানী। আপনি দেখলেন ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে যে ফ্ল্যাজেলা আছে তাতে চল্লিশটি বিভিন্ন ধরনের প্রোটিন একটি সুনির্দিষ্ঠ গঠনে পরস্পরের সাথে আন্ত:নির্ভরশীল প্রক্রিয়ায় একটি ফিতার ন্যায় অংশের ঘূর্ণনের মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়ার নড়াচড়ার কাজ সম্পন্ন করে। আপনার মাথায় প্রশ্ন আসলো এ ধরনের একটি গঠন কিভাবে সৃষ্টি হল?

আপনি পর্যবেক্ষণ করে দেখলেন যে একমাত্র মানুষের মত ‘বুদ্ধিমান’ সত্ত্বাই এ ধরনের জটিল গঠন তৈরী করতে পারে- যেখানে অনেকগুলো পরস্পর নির্ভরশীল অংশের সমন্বয়ে গঠিত কোন যন্ত্র একটি নির্দিষ্ট কাজ বা উদ্দেশ্য সম্পাদন করতে পারে। কোন এলপাতাড়ি প্রক্রিয়া এ ধরনের জটিল গঠন কখনও একা একা তৈরী হয় না। যেখানে আপনি কখনো দেখতে পান নি একটি টর্ণেডো কোন স্তুপীকৃত ইট থেকে কোন ঘর বানিয়ে দিয়েছে। সেখানে কোন একটি মেশিন একা তৈরী হয়ে গিয়েছে সেটা অসম্ভব।

সুতরাং, আপনি অনুসিদ্ধান্তে আসলেন যে উক্ত ব্যাকটেরিয়া ফ্ল্যাজেলাম কোন র‍্যানডম চান্সের মাধ্যমে সৃষ্টি হওয়া সম্ভব নয়। এর পিছনে নিশ্চয়ই কোন ডিজাইনার ইন্টেলিজেন্স আছে।

এ ধরনের রিজনিং-কে বলা Abductive Reasoning ।

অন্যভাবে একে বলা হয়- Inference to the best explanation

অথাৎ, একাধিক উপাত্তের জন্য যদি কয়েকটি সম্ভাব্য কারণ বা প্রকল্প থাকে, তার মধ্যে সর্বত্তোম কারণ বা প্রকল্পটিকে বেছে নেয়াই হচ্ছে অ্যাবডাকটিভ রিজনিং।

সুতরাং, অ্যাবডাকটিভ রিজনিং-এর কাঠামো হচ্ছে –

প্রস্তাব ১: ‘ক’ হবার জন্য ‘খ’ বা ‘গ’ দায়ী।

প্রস্তাব ২: পর্যবেক্ষনে দেখা গেছে ‘ক’ জাতীয় কার্যকারণ ‘চ’-এর পিছনে ‘খ’ দায়ী।

সুতরাং: ‘ক’ হবার পিছনে সবত্তোম ব্যাখ্যা হচ্ছে ‘খ’ দায়ী।

অ্যাবডাকটিভ ইনফারেন্স-এর একটি সমস্যা হল, একটি সর্বচ্চো সম্ভাব্য কারণকে নির্দেশ করে। কিন্তু, উক্ত কারণ যে নিশ্চিতভাবেই দায়ী তা বলতে পারে না। ব্যাবহারিক কারণে আনুসঙ্গিক উপাত্ত থেকে এটিকেই বেস্ট ব্যাখ্যা হিসেবে ধরে নেয়া হয়।

সুতরাং, অনুমান/সিদ্ধান্ত কিভাবে নেয়া হচ্ছে তার ওপর ভিত্তি করে কারণ অনুসন্ধান (Reasoning) তিন ধরনের হতে পারে।

১. Deductive reasoning

২. Inductive reasoning

৩. Abductive reasoning

এই তিন ধরনের রিজনিং প্রক্রিয়াই যে কোন বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। একটি গবেষণায় উক্ত রিজনিং-এর যে কোন একটি বা একাধিক প্রয়োগ হতে পারে।

যারা বৈজ্ঞানিক বা স্বাস্থ্য গবেষক হতে চান, তাদের এই রিজনিং প্রক্রিয়া সম্পর্কে সম্মক ধারণা থাকা এবং তা চর্চা করা জরুরী।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *