জীবনের উৎপত্তি নিয়ে পড়ালেখা করলে দেখবেন বিজ্ঞানীরা পদ্ধতিগত বস্তুবাদের (Methodological Naturalism)-এর আলোকে জীবনের বস্তুগত উৎপত্তি ব্যাখ্যার করার জন্য ‘অ্যাবায়োজেনেসিস’ নামক একটি শাখা খুলেছে। এই শাখার মূল উৎস হল জীবনের বস্তুগত উৎপত্তি ব্যাখা করা। অর্থাৎ, কিভাবে আদিম পৃথিবীতে বিদ্যমান রাসায়নিক ও ভৌত নিয়মাবলীর মাধ্যমেই প্রথম কোষ উৎপন্ন হল।
যদিও বিজ্ঞানী ডারউইনের মতবাদকে এখন অ্যাবায়োজেনেসিস থেকে পৃথক ভাবে উপস্থাপন করা হয় কিন্তু জীবনের উৎপত্তি সম্পর্কে তিনি তার (বস্তুবাদী) মত ব্যক্ত করতে পিছপা হন নাই। তিনি জোসেফ ডাল্টন হুকারকে লেখা একটি পত্রে জীবনের উৎপত্তির সম্পর্কে যা বলছেন তা অনেকটা এরকম: পৃথিবীর আদিম পরিবেশে যদি একটি ‘ইশত গরম ছোট পুকুর’ কল্পনা করা যায় যেখানে সবধরনের অ্যামোনিয়া ও ফসফরাস যৌগ আছে এবং সাথে আছে আলো, উত্তাপ ও বিদ্যুত তাহলে সেখানে হয়ত প্রোটিন তৈরী হয়ে থাকবে যা জীবনের উৎপত্তির কারণ হতে পারে। (১)
তবে, জীবনের উৎপত্তি সংক্রান্ত ‘প্রিমর্ডিয়াল সোপ’ তত্ত্বের প্রথম প্রবক্তা হচ্ছেন অপারিন ও হেলডেন। এই তত্ত্বানুসারে ‘প্রিমর্ডিয়াল সোপ’ হচ্ছে এমন একটি রাসায়নিক পরিবেশ যেখানে বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির প্রভাবে বিভিন্ন জৈব যৌগ এলোপাতাড়ি ভাবে তৈরী ‘হয়ে থাকবে’, যেখান থেকে প্রাণের উৎপত্তির সূচনা হয়েছে।
কিন্তু, ‘প্রিমর্ডিয়াল সোপ’ তত্ত্ব যখন দেয়া হয় তখনও ডিএনএ, আরএনএ, প্রোটিন-এর মত কোষের মৌলিক গাঠনিক উপাদান-এর আনবিক গঠন সম্পর্কে কোন ধারণাই ছিল না। কোষের ভিতর যে আরেকটি ‘স্বয়ংক্রিয়’ ও বিশাল ‘রাজ্য’ আছে এ সম্পর্কেও সে সময় কোন ধারণা ছিলো না।
প্রোটিনের গাঠনিক একক অ্যামাইনো এসিড সম্পর্কে বিজ্ঞানজগত যখন জানলো তখন বিজ্ঞানী মিলার ও ইউরে পৃথিবীর আদিম পরিবেশের একটি ‘ধারণাকৃত’ মডেল তৈরী করে পরীক্ষা চালালেন যে কোন অ্যামাইনো এসিড একা একাই তৈরী হয় কিনা? তাদের পরীক্ষায় প্রোটিন গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ২০টি অ্যামাইনোএসিড-এর মধ্যে সরল কিছু অ্যামাইনো এসিড তৈরী হয়েও ছিলো। কিন্তু, তা এলোপাতাড়ি ভাবে একটি প্রোটিনের গঠন ব্যাখ্যা করতেই সক্ষম নয় একটি কোষের গঠন ব্যাখ্যা করাতো অনেক পরের ব্যপার।
(এ বিষয়ে আরেকটু বিস্তারিত জানতে পারবেন ২ নং রেফারেন্সে প্রদত্ত লিংক-এ)
এরপর যত দিন পার হচ্ছে কোষের অভ্যন্তরীন জগতের ডিজাইনের জটিলতা সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানার সুযোগ হচ্ছে এবং উক্ত ডিজাইন-এর পিছনের ডিজাইনারের প্রয়োজনীয়তা আরও প্রকট হচ্ছে।
তবে, ‘দর্শনগত’ বস্তুবাদের অনুসারীরা তাদের প্রচেষ্টাতে থেমে নেই। তারা চায় যে করেই হোক জীবের উৎপত্তির একটি বস্তুবাদী ব্যাখ্যা দাড় করিয়ে তাদের দর্শনের ভিত্তি হিসেবে তা প্রচার করতে। (৩)
যাই হোক, বর্তমান পৃথিবীর অন্যতম দামী ‘অনলাইন মার্কেটিং কনসালটেন্ট’ পেরি মার্শাল-এর (৪) বিবর্তনবাদ ও ডিজাইন ইস্যু নিয়ে পড়াশোনা অনেক দিন থেকে। সব ধরনের বায়াসকে একপাশে রেখে তিনি ডারউইন-ডিজাইন ডিবেট ফলো করছেন এবং পড়ছেন। তার পড়াশোনার আলোকে তিনি অনেকদিন ধরে www.cosmicfingerprints.com সাইটটিতে লিখছেন। এই সাইট-এ এবং নাস্তিকদের সবচেয়ে বড় সাইটগুলোতে বাঘা বাঘা নাস্তিকদের সাথে তার ডারউইন-ভার্সাস-ডিজাইন নিয়ে তর্ক হয়েছে। ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাকগ্রাউণ্ড থেকে পড়াশোনা করায় তিনি যখন ডিএনএ-এর গঠন নিয়ে পড়েছেন তখন ইনটুশন থেকে অনুভব করেছেন যে কোন ডিজাইন ছাড়া ডিএনএ স্বয়ংক্রিয়ভাবে আসা সম্ভব না। তিনি তার ডারউইন থেকে ডিজাইনে থিতু হওয়ার গল্প লিখেছেন Evolution 2.0: Breaking the Deadlock Between Darwin and Design-বইতে। তার চেষ্টা হচ্ছে কিভাবে ডারউইন ও ডিজাইনের মধ্যে সমোঝোতা করা যায়। সে প্রেক্ষিতে তার বক্তব্য অনেকটা এরকম যে প্রথম কোষকে ডিজাইন করা হয়েছে যার মধ্যে হয়ত বিবর্তিত হওয়ার ইন-বিল্ট ম্যাকানিজম দেয়া ছিলো।
তিনি যখন ডারউইবাদী নাস্তিকদের সাথে বিতর্ক করতেন তখন আবিস্কার করলেন যে নাস্তিকরা সবচেয়ে মৌলিক যে প্রশ্নটিতে কোন ভাবেই ব্যাখ্যা দিতে পারছে না তা হল- ডিএনএ-তে ‘জেনেটিক কোড’ কিভাবে এলোপাতাড়ি প্রক্রিয়ায় আসলো? কোড তৈরীর প্রক্রিয়াটি করে মানুষ, যাদের ‘মাইন্ড’ আছে। ‘মাইন্ড’-এর একটি বৈশিষ্ট্য হলো সে রুল তৈরী করতে পারে এবং ভাঙ্গতে পারে। অন্যদিকে কম্পিউটার শুধু নিয়ম ফলো করে। সুতরাং জেনেটিক কোড স্বয়ংক্রিয়াভাবে তৈরী হওয়ার বিষয়টি যদি পরীক্ষা নিরীক্ষা দ্বারা আবিস্কার ও নিশ্চিত করা যায় তা জীবনের উৎপত্তিতো ব্যাখ্যা করবেই সাথে রোবটিক্স থেকে শুরু ইনফরমেশন টেকনোলজির জগতে একটি বিপ্লব ঘটিয়ে দিবে। সে প্রেক্ষিতে তিনি সকলের জন্য উন্মুক্ত একটি চ্যালেঞ্জ দিয়ে রেখেছেন:
যে কেউ স্বয়ংক্রিয়ভাবে এবং কোন প্রকার বুদ্ধিমত্তা ছাড়া ‘জেনেটিক কোড’ তৈরীর পরীক্ষনিরীক্ষালব্ধ প্রমাণ (Experimental Proof) হাজির করতে পারবে তাকে ৫ মিলিয়ন ইউএস ডলার পুরস্কার দেয়া হবে। তার এই চ্যালেঞ্জটি এখনও কেউ গ্রহণ করতে সক্ষম হয়নি। চ্যালেঞ্জটি নিচের লিংক-এ পাবেন:
“Artificial Intelligence + Origin of Life Prize, $5 Million USD”
https://www.herox.com/evolution2.0
অতএব, জীবনের উৎপত্তি সংক্রান্ত চূড়ান্ত প্রশ্ন হল ‘কিভাবে জেনেটিক কোড’ এল?
….
যারা জার্মানীর ভিসা লাগানোর জন্য নিজের বিশ্বাসকে জলাঞ্জলি দিয়েছেন তারা কেন এই পুরস্কার পাওয়ার চেষ্টা করছেন না। পুরস্কার দেখেছেন? পুরো পাঁচ মিলিয়ন ডলার? তদুপরি আপনার এই আবিস্কার যখন প্যাটেন্ট হবে, চিন্তা করেছেন কি হতে পারে? এটি বিক্রি হবে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারে, আপনি হবেন দুনিয়ার সবচেয়ে বড় ধনী। গুড লাক।
…..
ফুটনোটস:
১. Darwin, C. “To J. D. Hooker 1 February [1871]”. University of Cambridge. Available at: https://www.darwinproject.ac.uk/letter/DCP-LETT-7471.xml
২. এ বিষয়ে আরেকটু বিস্তারিত লিখেছিলাম এই লিংক-এ:
http://shodalap.org/saeeddmc/26145/
৩. জীবের উৎপত্তি সংক্রান্ত অনেকগুলো মতবাদ আছে এখন। যেগুলোর একেকটি কোষের একেকটি বিষয়ের উৎপত্তির ব্যাখ্যা দেয়া চেষ্টা করে। উক্ত তত্ত্ব গুলোর কোনটাই সম্পূর্ণ নয়। সব অনুমান নির্ভর ও ত্রুটিপূর্ণ।
৪. https://www.perrymarshall.com
Leave a Reply