মাইণ্ড-বডি প্রবলেম: কিছু ভাবনা

মাইণ্ড-বডি প্রবলেম: কিছু ভাবনা

পাঁচ বছরের বয়সের আগে একটি শিশুর বাম অথবা ডান দিকের সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ার এপিলেপসির কারণে যদি অপারেশন করে ফেলে দেয়া হয় কি হতে পারে বলুনতো?

আপনারা হয়তো ভাবছেন বাচ্চাটির একদিক পঙ্গু হয়ে পড়বে, একদিকের দৃষ্টি বাঁধাগ্রস্থ হবে, এক কানে শুনতে পারবে না, বাম দিক ফেলে দিলে কথা বলতে পারবে না ইত্যাদি। কিন্তু বাস্তবতা হল এ ধরনের সমস্যাগুলো সাধারণত হয় না। এর কারণ হলো নিউরোপ্লাস্টিসিটি।

ডেভোলপমেন্টের সময় আমাদের মস্তিস্কের এক বিলিয়ন নিউরনের এক ট্রিলিয়ন কানেকশন যদি একটার পর একটা করে তৈরী হত তাহলে ব্রেইন তৈরী হতে হতে আমাদের হায়াত শেষ হয়ে যেত। কিন্তু মায়ের গর্ভে থাকাকালীন সময়টাতে আমাদের নিউরনের কোষগুলো তৈরী হলেও কানেকশনগুলো তথা ডেনড্রাইট ও এক্সনগুলো তাদের জায়গা খুঁজে নেয় জন্মের পরে।

যে সদ্যজাত শিশুটির কোমলতা ও মায়া আমাদের আচ্ছন্ন করে রাখে, সেই শিশুটির মস্তিস্কে ঘটে যেতে থাকে বিস্ময়কর রকমের জটিল ঘটনা। আমাদের কান, চোখ, নাক, স্বাদ, স্পর্শ ইত্যাদি অনুভূতি বহনকারী নার্ভের এক্সনগুলো এ সময়ে ব্রেইনের কর্টেক্সে তাদের জায়গা করে নিতে থাকে। অন্যদিকে ব্রেইনের কোষগুলোর প্রতিটির প্রায় ১০০ থেকে ১০০০টি ডেনড্রাইট এই সাথে একই সময় তৈরী হয়ে ছড়িয়ে পড়ে এবং পার্শ্ববর্তী নিউরনের সাথে যোগাযোগ তৈরী করে। তবে যে ড্রেনড্রাইট এবং এক্সনগুলো ব্যবহার হয় না সেগুলো নিয়ন্ত্রিত প্রক্রিয়ায় নষ্ট হয়ে যায়। যে নিউরণগুলো ব্রেইন থেকে শরীরের অন্যান্য অংশকে যুক্ত করে তাদের সাথেও একই ঘটনা হয়।

মজার বিষয় হলো, যে শিশুটি জন্মগত অন্ধ হয়ে জন্মায় তার স্পর্শানুভূতি পোস্ট সেন্ট্রাল জাইরাসের পাশাপাশি, দেখার জন্য নিয়োজিত ব্রেইনের অক্সিপিটাল কর্টেক্সেও জায়গা করে নেয়। ফলে ব্রেইল ব্যবহার করে পড়ালেখা করার মতো কাজটি জন্মান্ধ ব্যাক্তিরা অত্যন্ত দক্ষতার সাথে করতে পারে। তাদের কানের নার্ভগুলোর এক্সন সুপিরিওর টেম্পোরাল লোবের পাশাপাশি ব্রেইনের পিছনের অংশেও পৌছায়। ফলে এদের শ্রবণ শক্তিও হয় তুখোর।  

কিন্তু একবার যখন এক্সনগুলো নিজেদের জায়গা করে নেয় তখন যদি তার জায়গা থেকে তাকে বিচ্ছিন্ন করা হয় কিংবা জায়গাটাকেই নষ্ট করে দেয়া হয়, সেক্ষেত্রে কি হবে? প্রকৃত পক্ষে এই ক্ষেত্রে এক্সনগুলো ব্রেইনের অন্য জায়গায় ভাগ বসায় এবং ব্রেইনের অন্য অংশগুলোও স্বাচ্ছন্দে তাদের জায়গার ভাগ দেয়। এ ঘটনাকেই বলে নিউরোপ্লাস্টিসিটি। 

পাঁচ বছরের শিশুদের ব্রেইন সবচেয়ে প্লাস্টিক থাকে। ফলে এ সময়ে একটি হেমিস্ফিয়ার কেঁটে ফেলে দিলেও অন্য হেমিস্ফিয়ারটিতে ব্রেইনের রিঅর্গ্যানাইজেশন হয়। শিশুটি বড় হলে কথাও বলতে পারে, ঠিকমত দেখতে সমস্যা হয় না এবং কোন পাশ পঙ্গুও হয়ে পড়ে না।

কিন্তু বড়দের ক্ষেত্রে কি এ ধরনের ঘটনা হয়? উত্তর: হয়। আগে মনে করা হত এডাল্ট ব্রেইনে রিঅর্গ্যানাইজেশন হয় না। কিন্তু নিউরোসায়েন্সের নতুন গবেষনা সমূহ এই নোশনকে ভুল প্রমাণিত করেছে। এ কারণেই দেখা যায় ঠিকমত ফিজিওথেরাপী নিতে পারলে স্ট্রোক রোগীরা আগের মতই চলতে পারছে। তবে এ বিষয়টি এত সহজ নয়। স্ট্রোক হয়ে যাওয়া পর যে হাতটি কার্যত নড়ছে না তাকে নড়ানোর চেষ্টা করাটা অনেক ধৈর্য্যের ব্যপার। প্রচণ্ড মানসিক শক্তির ব্যপার।

হ্যাঁ, মানসিক শক্তির ব্যবহারেই ব্রেইনে সুনির্দিষ্ট পর্যবেক্ষনযোগ্য পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। ওয়েট এ মিনিট! মানসিক শক্তির ব্যবহারে ফিজিক্যাল পরিবর্তন? ইয়েপ, অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজঅর্ডারের রোগীদের ‘কনস্ট্রেইন ইনডিউসড থেরাপী’ প্রয়োগ করলে তাদের এই সমস্যা সমাধান হয়ে যায়। কারণ এই বিশেষ ধরনের বিহেভিওরাল থেরাপী ব্যবহার করে দেখা গেছে  পর্যাপ্ত মেন্টাল প্রশিক্ষন ব্রেইনের দায়ী সার্কিটগুলোকে রিঅর্গানাইজ করতে পারে। ডিজটোনিয়ার রোগীদের এ ধরনের প্রশিক্ষন দিয়ে চিকিৎসা করা গেছে।

সুতরাং পর্যবেক্ষন বলছে, মানসিক শক্তি ব্রেইনের উপর সামহাউ অনির্ভরশীলভাবে প্রভাব বিস্তার করতে পারে। সুবহানআল্লাহ, মাইণ্ডবডি প্রবলেমের এই বিষয়গুলো আমাদের আত্মা সম্পর্কে এবডাক্টিভ ইনফারেন্স নিতে নি:সন্দেহে  উৎসাহিত করে।

রেফারেন্স রিডিং:

The Mind and the Brain: Neuroplasticity and the Power of Mental Force by

Jeffrey M. Schwartz, M.D., and Sharon Begley

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *