বর্তমানে ফলের দোকানগুলোতে সারা বছর জুড়েই প্রায় সব ফল পাওয়া যায়। অথচ, ১৫-২০ বছর আগেও বিষয়টি এরকম ছিলো না। আমাদের ছোটবেলায়, যখন রেফ্রিজারেটর এত সহজলোভ্য ছিল না, মৌসুমের ফল মৌসুমেই খেতে হত। প্রযুক্তির কল্যাণে এখন অনেক ফলই সংরক্ষণ করা যায়। আবার, বিজ্ঞানীগণ সংকরায়ণ ও জেনেটিক টেকনোলজি ব্যবহার করে বিভিন্ন রকম ফলের জাত তৈরী করছেন যা আকারে ও স্বাদের ভিন্ন। কি চমৎকার তাই না?
প্রতিটি ফলের মূলত দুটি অংশ থাকে। বীজ ও ফলত্বক। ফলের খোসা হল বহিঃত্বক। যে অংশটি আমরা খাই সে হল মধ্যত্বক। বীজের সাথে লেপ্টে থাকে অন্তঃত্বক। প্রজাতি ভেদে ফলের বিভিন্ন অংশে থাকে বিভিন্ন আকর্ষণীয় রঙ। ফলের বীজ অন্যান্য অংশ থেকে কোন শক্তি গ্রহন করে না। তাহলে, ফলের মধ্যত্বকে নানা ধরনের সুমিষ্ট খাদ্যদ্রব্য থাকার রহস্য কি?
এর উত্তর আমরা সবাই হয়ত জানি। অন্যান্য প্রাণী যখন উদ্ভিদের এই ফলগুলো খেয়ে শক্তি ও ভিটামিন আহরণ করে, তখন সে জেনে না-জেনে বীজ ছড়িয়ে দেয়। সেখান থেকে হয় নতুন গাছ। এভাবে উদ্ভিদ তার জেনেটিক ক্রমধারা বিশ্ব চরাচরে বজায় রাখে। কিন্তু, দাড়ান! উদ্ভিদ কিভাবে জানল বীজের চারপাশের সুমিষ্ট মধ্যত্বক তৈরী করে প্রাণীজগতের প্রয়োজনীয় পুষ্টির যোগান দিতে হবে? কিভাবে সে বুঝল যে চলাফেরা করতে পারে এমন জীব তার বীজকে জমিনে ছড়িয়ে দিতে পারবে?
ফলের মধ্যে বিভিন্ন ভিটামিন ও মিনারেলের যে সন্নিবেশ থাকে তা অতুলনীয়। এটি একদিকে শক্তি সরবরাহ করে, অন্যদিকে পুষ্টির যোগান দিয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ফলের মধ্যে থাকে নানার রকম এন্টাই অক্সিডেন্ট, ফাইটোইস্ট্রোজেন এবং এন্টাই ইনফ্লামেটরী অণু। তাই ডায়েটারী গাইডলাইনগুলো সম্ভব হলে প্লেটের অর্ধেক ফল বা সবজি দিয়ে ভরতে বলেন (1)। গাছগুলো কিভাবে এই কম্পোজিশন ঠিক করল? খুবই অসামান্য এই প্রশ্নটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনাচরণের ব্যস্ততায় হারিয়ে যায়।
ফলের রঙ নিয়েই একবার ভেবে দেখুন না। আমরা জানি, আলো কোন তলে পড়লে উক্ত তলে শোষিত হবার পর যে অংশ প্রতিফলিত হয় তা তলের রঙ হিসেবে দেখা দেয়। সুতরাং, ফলের ত্বকে বিন্যস্ত অনুগুলোকেও এমন হতে হবে যেন তা নিদির্ষ্ট মাত্রার আলোকে প্রতিফলিত করে উপযুক্ত হিউ, টেক্সচার, এবং শার্পনেস তৈরী করতে পারে। একবার কি চিন্তা করেছেন কিভাবে ফুল ও ফলের রঙ এত নিখুঁত মিশ্রন তৈরী করে?
অন্যদিকে ফলের বীজটি হয় এমন যে খোলসে আবৃত অবস্থায় অধিকাংশ প্রানীর খাদ্যনালী তা হজম করতে পারে না। গাছগুলো কি বীজ তৈরীর আগে প্রাণীদেহের ফিজিওলজি নিয়ে রিসার্চ করে নিয়েছে?
ফলবান উদ্ভিদ কি নিজে তার জেনেটিক প্রোগ্রামে উক্ত পরিকল্পনা তৈরী করেছে? কার পরিকল্পনায় ফলের মাধ্যমে এই পারস্পরিক উপকারের আয়োজন? কার ইচ্ছেয় উদ্ভিদ ও প্রানীর এই চমৎকার বাস্তুতন্ত্র (ইকোসিস্টেম)?
“অতএব মানুষ একবার লক্ষ্য করুক তার খাদ্যের দিকে। আমরা (কিভাবে তাদের জন্য) বৃষ্টি বর্ষণ করে থাকি। অতঃপর ভূমিকে ভালভাবে বিদীর্ণ করি। অতঃপর তাতে উৎপন্ন করি খাদ্য-শস্য। আঙ্গুর ও শাক-সবজি, যায়তূন ও খর্জুর, ঘন পল্লবিত উদ্যানরাজি এবং ফল-মূল ও ঘাস-পাতা”। (সুরা আবাসা, আয়াত ২৪ – ৩১)
Leave a Reply