ফ্যাটি লিভার আধুনিক মানুষের রোগ

ফ্যাটি লিভার, ন্যাশ এবং লিভার সিরোসিস

জনাব রফিকুল ইসলাম একজন ব্যবসায়ী। পুরোনো ঢাকার ব্যস্ত মার্কেটে তার কাজ মূলত বসে থেকে ব্যবসার তদারকী করা। ভোজনরসিক রফিক সাহেব ধূমপানের মত বদ অভ্যাস না করলেও একটু ভালো খাবারের লোভ সামলাতে পারেন না। এজন্য তার ওজন বেড়েছে বল্গাহীনভাবে। তার বিএমআই এখন ৩০। ডাক্তারদের ভাষায় অবিজ। একটু বাড়তি ওজন ছাড়া রফিক সাহেবের হিসেবে এতদিন সবকিছু ঠিকঠাক ভাবেই চলছিলো। কিন্তু, গত এক মাস যাবৎ তিনি শারীরিক দুর্বলতা অনুভব করছেন। মাঝে মাঝে পেটের উপরিভাগে ব্যথাও হচ্ছে। প্রস্রাবের চাপটাও বেড়েছে। টিভিতে স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রোগ্রাম থেকে তিনি জানতে পেরেছিলেন যে ডায়াবেটিসের লক্ষণ হল শারীরিক দুর্বলতা, বেশী বেশী ক্ষুধা এবং ঘন ঘন প্রস্রাব। তাই তিনি মেডিসিন বিভাগের একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেন। চিকিৎসক তাকে রক্তের সুগার, লিপিড প্রোফাইল পরীক্ষা করতে বলেন এবং পেটের আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে দেন। ওবেসিটির পাশপাশি ধরা পড়ে ডায়াবেটিস, হাই-ব্লাড প্রেসার এবং ফ্যাটি লিভার।  

প্রাদুর্ভাব

ফ্যাটি লিভার ডিজিজ। শব্দগুলো থেকেই বুঝা যাচ্ছে লিভারে ফ্যাটি জমা হয়ে সৃষ্ট রোগের নামই হচ্ছে ফ্যাটি লিভার ডিজিজ তথা ফ্যাটি লিভার। যদি ফ্যাটের কারণে  লিভারে ফ্যাট দুটি কারণে জমা হতে পারে। এক, অ্যালকোহল পান  এবং দুই, অ্যালকোহল ব্যতীত অন্য কারণ। প্রথমটিকে বলা হয় অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ এবং দ্বিতীয়টিকে বলা হয় নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ। বাংলাদেশে যেহেতু অ্যালকোহল পান এখনও লুকিয়ে লুকিয়ে এবং অনিয়মিত ফেনোমেনা সেহেতু অ্যালকোহলজনিত ফ্যাটি লিভার এ দেশে এখনও প্রাধান্য বিস্তার করতে পারেনি। তবে সারা বিশ্বের ন্যায় নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (এন.এ.এফ.এল.ডি) বাড়ছে আশংকাজনক হারে। লিভারের কোষ হেপাটোসাইটের ৫%-এর বেশী জুড়ে যদি লিপিড (তথা ফ্যাট) জমা হয় বা লিভারের মোট ওজনের ৫% যদি ফ্যাট হয় তখন একে বলা হয় নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ। বোঝার সুবিধার্থে আমরা প্রবন্ধের বাকি অংশে নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভারকে শুধু ফ্যাটি লিভার বলব।

পৃথিবী জুড়ে প্রতি ১০০ জনে প্রায় ২৫ জন লোক ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত। পাশ্চাত্যে দীর্ঘ মেয়াদী লিভার রোগের প্রধানতম কারণ হল ফ্যাটি লিভার। ফ্যাটিলিভারের প্রাদুর্ভাবের দিকে দিয়ে উন্নত দেশগুলোর এক সময় এগিয়ে থাকলেও দক্ষিণ এশিয়াও এখন পিছিয়ে নেই। দক্ষিণ এশিয়ায় ফ্যাটি লিভারের প্রাদুর্ভাব ৫ থেকে ৩০ শতাংশ। তন্মধ্যে, বাংলাদেশ আছে সবচাইতে এগিয়ে। হ্যা, এখানে ফ্যাটি লিভারের প্রাদুর্ভাব ৪ থেকে প্রায় ৩৪ শতাংশ।

জনাব রফিক ফ্যাটি লিভারের রিপোর্ট নিয়ে এসেছেন লিভার বিশেষজ্ঞের চেম্বারে। সিরিয়াল আসার অপেক্ষায় বসে বসে ফ্যাটি লিভার সংক্রান্ত একটা পুস্তিকা পড়ছিলেন। রফিক সাহেবের মনে মনে ভাবলেন- তার মানে বাংলাদেশে প্রায় ১০০ জনে ৩৪ জন মানুষ ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত? কিন্তু, কেন হচ্ছে এই রোগ? পরের পৃষ্ঠা উল্টোতেই পেলেন তার প্রশ্নের জবাব।

রিস্ক ফ্যাক্টর

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *