Md. Abdullah Saeed Khan

করোনা ভাইরাসের অ্যান্টিবডি টেস্ট কেমন হতে হবে- সেনসিটিভ না স্পেসিফিক?

কোন টেস্টের সেনসিটিভিটি কি?

ধরুন, আপনি জানেন ১০০ জন ব্যক্তির করোনা আছে। আপনি একটি নতুন টেস্ট ‘ক’ তৈরী করেছেন যার সেনসিটিভিটি আপনি দেখতে চান। আপনি উপরোক্ত ১০০ ব্যক্তির রক্ত নিয়ে আপনি নতুন পরীক্ষাটি করলেন এবং দেখলেন যে ৮০ জন ব্যক্তির করোনা পজিটিভ এবং ২০ জন ব্যক্তির করোনা নেগেটিভ।

তাহলে উক্ত ৮০ জন ব্যক্তির জন্য টেস্ট ‘ক’ ট্রু পজিটিভ এবং ২০ জন ব্যক্তির জন্য ফল্স নেগেটিভ। এখানে সেনসিটিভিটি হলো উক্ত ১০০ জন করোনা রোগীর মধ্যে কতজনকে কে সঠিকভাবে নির্ণয় করতে পারে। সে হিসেবে আমাদের টেস্ট ‘ক’ এর সেনসিটিভিটি হল ৮০%। কারণ, সে ৮০ জনের ক্ষেত্রে সঠিক ভাবে করোনা ধরতে পেরেছে।

করোনা ভাইরাসের অ্যান্টিবডি টেস্ট কেমন হতে হবে

কোন টেস্টের স্পেসিফিসিটি কি?

ধরুন, আপনি একই টেস্ট এমন ১০০ জন মানুষের মধ্যে করলেন যাদের ক্ষেত্রে আপনি rt-PCR করে নিশ্চিত হয়েছেন যে করোনা নেই। এদের মধ্যে আপনার টেস্টটি ৯০ জনের ক্ষেত্রে করোনা ভাইরাস নেগেটিভ বললো এবং ১০ জনের ক্ষেত্রে (ভুলভাবে) করোনা ভাইরাস পজিটিভ বললো।

তাহলে উক্ত ৯০ জন হল ট্রু নেগেটিভ এবং ১০ জন হল ফল্স পজিটিভ। এখানে স্পেসিফিসিটি হলো উক্ত ১০০ জন সুস্থ মানুষের মধ্যে কতজনকে সঠিকভাবে সুস্থ বলতে পারলো। অর্থাৎ, আমাদের টেস্ট ‘ক’ এর স্পেসিফিসিটি হল ৯০%।

এখন করোনা রোগ নির্ণয় করে এমন কোন টেস্ট যদি ৮০% সেনসিটিভ হয় তার অর্থ হল উক্ত টেস্ট একশ জনে ২০ জন রোগীর করোনা নির্ণয় করতে পারে না। অর্থাৎ, ২০ জনের ক্ষেত্রে ফলস নেগেটিভ আসে। এটা একটা সমস্যা। আমাদের টেস্ট যদি করোনা রোগী ধরতে না পারে, তার অর্থ অনেক রোগী করোনা নিয়ে ঘুরে বেড়াবে এবং ছড়াতে থাকবে।

সুতরাং, আমরা যদি করোনা ভাইরাস নির্ণয়ের কোন র‍্যাপিড টেস্ট ডেভেলোপ করি (খরচ ও সময় বাঁচানোর উদ্দেশ্যে) তাহলে ঐটার সেনসিটিভিটি যত ভালো হয় তত উত্তম। এ ধরনের একটি টেস্ট হল করোনা ভাইরাসে এন্টিজেন টেস্ট।

অ্যান্টিবডি টেস্ট-এর ক্ষেত্রে কোনটা বেশী গুরুত্বপূর্ণ?

প্রশ্ন হল, আমি যদি এমন একটি টেস্ট ডেভেলোপ করি যেটা আসলে করোনা ভাইরাসকে নির্ণয় না করে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে আমাদের শরীরের সৃষ্ট প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে নিণয় করে, তাহলেও কি তার সেনসিটিভিটি গুরুত্ব রাখে? চলুন একটু ভেবে দেখি।

এ ধরনের একটি টেস্ট হতে পারে করোনা ভাইরাসের বিপরীতে সৃষ্ট অ্যান্টিবডি নির্ণয়। উপরের উদাহরণটা চিন্তা করুন। ধরুন, আমাদের টেস্ট ‘ক’ ১০০ জনের মধ্যে ৮০ জনের রক্তে অ্যান্টিবডি নির্ণয় করতে পারে এবং ২০ জনের ক্ষেত্রে ভুল করে। এটার অর্থ দাড়াবে এই যে, আমাদের টেস্ট ৮০ জনের ক্ষেত্রে বলতে পারে যে অ্যান্টিবডি তৈরী হয়েছে। কিন্তু, ২০ জনের ক্ষেত্রে ভুলভাবে বলবে যে অ্যান্টিবডি তৈরী হয়নি। ভাল ব্যপার হল, ২০ জনের ক্ষেত্রে প্রকৃতপক্ষে অ্যান্টিবডি আছে। কিন্তু, আমার টেস্ট তাদের রক্তে নির্ণয় করতে ব্যর্থ হয়েছে।

লক্ষ্য করুন, আমরা চাই একজন ব্যক্তির অ্যান্টিবডি তৈরী হয়ে যাক। সুতরাং, আমার র‍্যাপিড অ্যান্টিবডি ডিটেক্টিং টেস্ট যদি ২০ জনের ক্ষেত্রে নাও নির্ণয় করে আমাদের সমস্যা নেই। কারণ, উক্ত ২০ জনের ক্ষেত্রে ইতমধ্যে অ্যান্টিবডি আছে, সুতরাং করোনা ভাইরাস নতুন করে আক্রমণ করলেও সে প্রোটেক্টেড থাকবে (আশা করা যায়)*।

কিন্তু, আমার অ্যান্টিবডি টেস্ট তখন ঝামেলা করবে যখন তার স্পেসিফিসিটি কম হবে। কারণ, যদি আমার টেস্ট ‘ক’-এর ৯০% স্পেসিফিসিটি থাকে এটি ১০ জন ব্যক্তিকে বলবে যে তাদের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরী হয়েছে আসলে যাদের শরীরের করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরী হয়নি (ফলস পজিটিভ)। সেক্ষেত্রে উক্ত ১০ জনের ক্ষেত্রে একটি মিথ্যা নিরাপত্তাবোধ তৈরী হবে। কিন্তু, আমি কোন ভাবেই চাইবো না কোন সুস্থ ব্যাক্তির করোনা ভাইরাসের বিপরীতে অ্যান্টিবডি না থাকলেও তাকে বলা যে তার অ্যান্টিবডি আছে। কেননা সেক্ষেত্রে সে প্রতিরোধের ব্যপারে শিথিল হয়ে করোনা ভাইরাস দিয়ে আক্রান্ত হয়ে যেতে পারে।

সুতরাং, যে কোন অ্যান্টিবডি ডিটেকশন টেস্ট-এর ক্ষেত্রে আমরা চাইবো তা যেন সর্বোচ্চ স্পেসিফিক হয়**।

অন্যদিকে যে কোন করোনা ভাইরাস ডিটেকশন টেস্টের ক্ষেত্রে আমরা চাইবো তা যেন সবোর্চ্চ সেনসিটিভ হয়।

*যদি ডেঙ্গুর মত (ভিন্ন স্ট্রেইন দিয়ে) অ্যান্টিবডি ডিপেনডেন্ট এনহেন্সমেন্ট নামক ঘটনা ঘটে তাহলে অবশ্য সমস্যা।

** তবে আমি যদি অ্যান্টিবডি টেস্ট দিয়ে পরোক্ষভাবে করোনা ভাইরাস জনিত রোগ কোভিড-১৯ নির্ণয় করতে চাই, অর্থাৎ একজন ব্যক্তির রক্তে অ্যান্টিবডির উপস্থিতি দেখে জানতে চাই যে তার করোনা ভাইরাস ইনফেকশন হয়েছিলো কি না, সেক্ষেত্রে আমার জন্য উক্ত টেস্টে সেনসিটিভিটি গুরুত্বপূর্ণ হবে।

……

কিছু টেকনিক্যাল কথা (যারা জানে তাদের জন্য)-

আমরা জানি কোন ইভেন্টের প্রিভ্যালেন্স বেশী হলে পজিটিভি প্রেডিক্টিভ ভ্যালু বেশী হয়। সুতরাং, করোনা ভাইরাসের এন্টিবডি যদি ওয়াইডস্প্রেড হয়ে থাকে (যা আমরা এই মূহুর্তে জানি না), তার অর্থ হল এন্টিবডি ডিটেকশন কিটের পজিটিভি প্রেডিক্টিভ ভ্যালু বেশী হবে। সুতরাং, ফলস পজিটিভ কম হবে । ফলস পজিটিভ কম হলে তার স্পেসিফিসিটি বেশী থাকবে। সুতরাং, আমাদের টেস্টের এন্টিবডি ডিটেকশন সেনসিটিভিটি কম্প্রোমাইজড হলেও এন্টিবডির প্রিভ্যালেন্স বেশী হয়ে থাকলে আমাদের এন্টিবডি ডিটেকশন কিট খুবই হেল্পফুল হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top