মৌমাছি

মৌমাছি

মৌমাছি, মৌমাছি

কোথা যাও নাচি নাচি

দাঁড়াও না একবার ভাই।

ওই ফুল ফোটে বনে

যাই মধু আহরণে

দাঁড়াবার সময় তো নাই।

নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্য রচিত ‘কাজের লোক’ কবিতাটি মুখস্ত করে করে আমরা নব্বই-এর শিশুরা ছোট থেকে বড় হয়েছি। যখন কয়েক ক্লাস উপরে উঠেছি তখন জেনেছি যে মৌমাছি এক ফুল থেকে আরেক ফুলে মধু আহরণ করে বেরায়। আবার এই কাজ করতে গিয়ে তারা এক ফুলের রেণু আরেক ফুলে নিয়ে পরাগায়ন করে। যার পরিণতিতে আমরা পাই ফল, আর গাছ পায় বীজ ছড়িয়ে দেয়ার উপায়।

কখনও কি আমাদের মনে কৌতুহল জাগেনি যে মৌমাছি কিভাবে মৌচাক থেকে ছড়িয়ে পড়ে ফুলের খোঁজে? কিভাবে ফুল চিনে নেয়? কিভাবেই বা মৌচাকে ফিরে আসে দলবদ্ধ ভাবে? কেনই বা মৌচাকে মধু জমা করতে থাকে?

হয়ত আমরা এগুলো দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি তাই প্রশ্ন জাগে না। কিন্তু নিরিবিলি কিছুক্ষণ বিষয়টি নিয়ে ভাবলে আগ্রহ না জন্মে উপায় নেই।

Bee Movie নামে একটি চমৎকার এনিমেশন মুভি আছে। কাহিনীটা এরকম যে মৌমাছি জাতির একজন তরুণ পড়াশোনা শেষ করে মধু তৈরীর কারখানায় জয়েন করবে। কিন্তু সে যখন জানতে পারে যে মধু তৈরীর কারখানায় একজন কর্মচারীর সারাজীবন একই কাজ করতে হবে তখন তার বিষয়টি ভালো লাগে না। পাশাপাশি মৌমাছিদের একটি নিয়ম হল তারা মানব জাতির সাথে কথা বলতে পারবে না। কিন্তু, সে এই রুলটা ভেঙ্গে ফলে। সে সুবাদে তার একজন মানব সঙ্গীও জুটে যায়। এরপর দু’জনে মিলে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াতে থাকে। এক সময় আবিস্কার করে যে মানুষ তাদের আহরিত মধু কেড়ে নিয়ে খেয়ে ফেলছে। সে বিষয়টি মেনে নিতে না পেরে মামলা করে এবং মামলায় জিতে যায়। ফল স্বরুপ আহরিত মধু জমতে জমতে একসময় অতিরিক্ত হয়ে যায়। মৌমাছির কাজ কর্ম বন্ধ হয়ে যায়। এরপর প্রকৃতিতে যে ভারসাম্যহীনতা তৈরী হয় তার ফলে নেমে আসে খড়া। ধীরে ধীরে সব গাছ শুকিয়ে যেতে থাকে। সবুজ প্রকৃতি হয়ে পড়ে নিথর ও নির্জীব।

মুভিটি ২০০৭ সালে মুক্তি পেলেও মৌমাছির গুরুত্বের স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে এইতো বছর কয়েক আগে। মৌমাছিকে ঘোষণা দেয়া হয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জীবিত প্রজাতি হিসেবে। (১) কিন্তু কেন? কারণ পৃথিবীর কৃষিশিল্পের সত্তর শতাংশ ফসল আসে মৌমাছির সুবাদে। 

মৌমাছি রস আহরণ করতে ফুলে বসে । ফুলের মধ্যে পরাগরেণু এমনভাবে লেগে থাকে যেন রস আহরণের সময় পরাগরেণু মৌমাছির গায়ে লেগে যায়। উক্ত মৌমাছি আরেকটি ফুলে গিয়ে বসলে পরাগায়ন ঘটে। এরপর ফুল থেকে তৈরী হয় ফল। উক্ত ফল পুনরায় অন্য কোন প্রাণীর শক্তি যোগান দেয়ার পাশপাশি বীজটিকেও অন্য জায়গায় ছড়িয়ে দেয়। কি চমৎকার মিথস্ক্রিয়া?

মৌমাছি ফুলের রস সংগ্রহ করে মধু আকারে মৌচাকে জমা করতে থাকে। যতটুকু তাদের প্রয়োজন তার চেয়ে অনেক বেশী। ফলে উক্ত মধু আমরা সংগ্রহ করতে পারি। যাতে আছে নানাবিধ উপকারী খাদ্য উপাদান।

কতই না সুন্দর এই পারস্পরিক উপকারের জাল। ফুল কি জানত তাকে পরাগরেণু ছড়িয়ে দিতে মৌমাছির আশ্রয় নিতে হবে? পরাগরেণুর আঠালো গড়ন সংশ্লিষ্ট গাছের জেনেটিক গঠনে কিভাবে তৈরী হল? মৌমাছি কি নিজে জানে যে সে কিভাবে পুরো পৃথিবীর এত উপকার সাধন করছে? নাকি সকল জীবের স্রষ্টা আল্লাহ তাকে পথ দেখিয়ে দেন?-

“অতঃপর সর্বপ্রকার ফল থেকে আহার কর এবং আপন পালনকর্তার উম্মুক্ত পথ সমূহে চলমান হও। তার পেট থেকে বিভিন্ন রঙ এর পানীয় বের হয়। এতে মানুষের জন্য রয়েছে রোগের প্রতিকার। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শন রয়েছে।” সুরা আন নাহল, আয়াত- ৬৯।

    

রেফারেন্স:
১. Concio CJH. Bees Declared To Be The Most Important Living Being On Earth [Internet]. The Science Times. 2019 [cited 2020 May 19]. Available from: https://www.sciencetimes.com/articles/23245/20190709/bees-are-the-most-important-living-being-on-earth.htm

রিলেভেন্ট ভিডিও-

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *