পদ্ধতিগত প্রকৃতিবাদ (Mathodological naturalism)-এর শর্ত অনুযায়ী কোন তত্ত্বকে বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব বলার জন্য অন্যতম শর্ত হল তত্ত্বটি ‘falsifiable’ হতে হবে। যেহেতু পদ্ধতিগত প্রকৃতিবাদ বস্তুজগত পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে লব্ধ উপাত্তের ভিত্তিতে কাজ করে, সেহেতু তত্ত্বটির গঠন এমন হতে হবে যেন পরীক্ষানিরীক্ষার মাধ্যমে তাকে ভুল প্রমাণ করার সুযোগ থাকে। জরুরী নয় যে, তত্ত্বটি ভুল প্রমানিত হবেই। বরং, বার বার পরীক্ষার মধ্য দিয়ে তত্ত্বটির সত্যতা বলিষ্ঠ হতে পারে। কিন্তু, তত্ত্বটির গঠন যদি এমন হয় যে তা কোন পদ্ধতি অনুসরণ করে পরীক্ষা নিরীক্ষা করার সুযোগ না থাকে তাহলে তাকে বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব না বলে ‘বিশ্বাস’ বলাই ভাল।
বিষয়টি একটি উদাহরণ দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করি- ধরি, আপনি একটি দাবী করলেন যে, পৃথিবীর সব কাক কালো। আপনার দাবীর পিছনের আপনি আপনার পর্যবেক্ষণ লব্ধ এক হাজার কাকের একটি তথ্য উপস্থাপন করলেন। কিন্তু, আপনার তত্ত্বটি ফলসিফাইবেল। কারণ, একজন ব্যক্তিও যদি একটি সাদা কাক আপনার সামনে উপস্থিত করতে পারে, আপনার তত্ত্বটি মিথ্যা প্রমাণিত হবে। কিন্তু, আপনি যদি দাবী করেন যে, আপনার বাসার ছাদে একটি ফিনিক্স নামক পাখি আছে, যা মৃত্যুর সময় ছাই হয়ে যায় এবং ছাই থেকে পুনঃর্জন্ম নিতে পারে এবং যা কেবল আপনি-ই দেখতে পারেন- কোন বস্তুগত পদ্ধতি দিয়ে এটিকে মিথ্যা প্রমানিত করা যাবে না। ফলে, আপনার তত্ত্বটি বৈজ্ঞানিক হবে না, হবে ‘বিশ্বাস’।
আপনার তত্ত্বটিকে হয়ত গুরুত্বের সাথে নিয়ে দর্শনের আলোকে মিথ্যা প্রমাণ করার চেষ্টা করা যাবে। সেক্ষেত্রে, এটি সর্বচ্চো একটি দার্শনিক দাবীতে পরিণত হবে। কিন্তু, পদ্ধতিগত প্রকৃতিবাদের অধীনে এটিকে কোন বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের মর্যাদা দেয়া যাবে না।
এবার আসুন দেখি ‘বিবর্তনবাদ’ কি ফলসিফাইবল কিনা?
বিবর্তনবাদী জে. বি. এস. হেলডেনকে একবার জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, কোন্ প্রমাণ হলে তিনি বিশ্বাস করবেন যে বিবর্তনবাদ মিথ্যা? তিনি বলেছিলেন, কেউ যদি ‘প্রি-ক্যামব্রিয়ান পাথর’-এ একটি খরগোশের ফসিল আবিস্কার করতে পারে, তাহলে তিনি বিশ্বাস করবেন যে বিবর্তনবাদ ভুল।
উল্লেখ্য, ক্যামব্রিয়ান এরা হচ্ছে ৫৩০ মিলিয়ন বছর পূর্বের একটি ভূতাত্ত্বিক সময় যখন প্রায়টি ২০টি নতুন পর্ব অতি অল্প সময়ে আবির্ভূত হয়।
লক্ষ্য করুন, কেউ যদি একটি খরগোশের ফসিল আনতে সক্ষমও হয়, সেক্ষেত্রে ফসিলের বর্তমান ইতিহাসটি পরিবর্তিত হয়ে যাবে, কিন্তু বিবর্তনবাদ মিথ্যা প্রমাণিত হবে না। কারণ, বিবর্তনবাদীরা তখন দাবী করতে পারবেন যে, এটি ‘কনভারজেন্ট বিবর্তন’-এর উদাহরণ। সহজ কথায় তারা বলবেন, পৃথিবীর ইতিহাসে খরগোশ দু’বার বিবর্তিত হয়ে আবির্ভাব হয়েছে, একবার ক্যামব্রিয়ান এরা আগে এবং আরেকবার পরে।
যেমনটা চোখের বিবর্তনের ক্ষেত্রে তারা দাবী করে। অক্টোপাস ও মানুষের চোখ একই রকম। কিন্তু, দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন পর্বের প্রাণী। ফলে, তাদের দাবী হচ্ছে এটি কনভারজেন্ট বিবর্তনের ফসল।
অর্থাৎ, বিবর্তনবাদকে কার্যত কোন অবজারভেশন দিয়েই আপনি মিথ্যা প্রমাণ করতে পারবেন না।
মজার বিষয় হল, ‘বিবর্তনবাদ’-তত্ত্বকে কার্যত অপ্রমাণযোগ্য করে গেছেন স্বয়ং ডারউইন। তিনি জটিল অঙ্গ তথা কমপ্লেক্স অর্গ্যান (যেমন: চোখ) কিভাবে বিবর্তিত হল- সে ব্যাপারে একটি প্রকল্প দিয়েছেন যে- “অসংখ্য, ক্ষুদ্র, একটার পর একটা (ক্রমান্বয়ে) পরিবর্তন ”-এর মধ্য দিয়ে কমপ্লেক্স অর্গ্যান বিবর্তিত হয়েছে। কিন্তু, কোনো অঙ্গের ব্যাপারেই সেই অসংখ্য, ক্ষুদ্র, ক্রমান্বয়ে পরিবর্তনের ধাপ তিনি দেখাননি। অথচ, তার বই-এ তিনি লিখছেন-
“যদি এটা দেখানো যায় যে, এমন কোন জটিল অঙ্গ বিদ্যমান যেগুলো অসংখ্য, ক্রমান্বিত, ক্ষুদ্র পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে তৈরী হয়নি, আমার তত্ত্ব নিশ্চিতভাবেই ভেঙ্গে পড়বে। কিন্ত, আমি এ ধরনের কোন অঙ্গ দেখছি না”। (1)
কথার ধরণ থেকে মনে হচ্ছে যেন, তিনি ইতোমধ্যে এ ধরনের অসংখ্য প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন যে বিভিন্ন জটিল অঙ্গ অসংখ্য, ক্রমান্বিত, ক্ষুদ্র পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে আবির্ভুত হয়েছে।
টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের দার্শনিক রবার্ট কুনস এ প্রসঙ্গে বলছেন-
“এটা কিভাবে প্রমাণ করা যাবে যে কোন কিছু এমন একটি পদ্ধতি দ্বারা তৈরী হয়েছে যে পদ্ধতি সম্পর্কে ‘অসংখ্য, ক্ষুদ্র, ক্রমান্বিত পরিবর্তন’- (শব্দগুলোর) চেয়ে বেশী কিছু বলা হয়নি? এবং কেনই বা (বিবর্তনবাদের) সমালোচকদের এ ধরণের কিছু প্রমাণ করতে হবে? প্রকৃতিতে প্রাপ্ত অন্তত একটি অঙ্গ যে বাস্তবেই উক্ত প্রক্রিয়ায় তথা সুনিদির্ষ্ট সম্পূর্ণ নিয়মতান্ত্রিক ক্ষুদ্র ক্রমান্বিত পরিবর্তনের প্রক্রিয়ায় আসা সম্ভব- তা দেখানোর দায়িত্বতো ডারউইন ও তার অনুসারীদের”। (2)
উপরিল্লিখিত, আপনার ফিনিক্স তত্ত্বটি বিশ্বাস করে আপনার অসংখ্য ফলোয়ার তৈরী হতে পারে। সেক্ষেত্রে এটি একটি ‘বিলিফ সিস্টেম’-এ পরিণত হবে। ঠিক তেমনি, ‘বিবর্তনবাদ’ বিজ্ঞান ছাড়িয়ে একটি ‘বিলিফ সিস্টেম’ তথা ‘বস্তুবাদী দর্শনে’ পরিণত হয়েছে।
…
রেফারেন্স:
(1) Darwin C. Difficulties on theory. In: The Origin of Species on the Origin of Species by means of Natural Selection or the Preservation of Favoured Races in the Struggle for Life. 1859. p. 166.
(2) Dembski BWA. Five Questions Evolutionists Would Rather Dodge [Internet]. [cited 2018 Jan 24]. Available from: https://sites.google.com/…/oldshepherd1…/fiveevolutiondodges
Leave a Reply