প্যালিনড্রোম (০২.০২.২০২০)

……..

আজকের তারিখের প্রেক্ষিতে অনেকেই নতুন ভাবে Palindrome(প্যালিনড্রোম) শব্দটির সাথে পরিচিত হয়ে গেলেন। বাংলায় একে অর্থ করলে হয় ‘দ্বিমুখী শব্দ’। যেমন আজকের তারিখ-

‌০২০২২০২০ (০ – ২ – ০ – ২ – ২ – ০ – ২ – ০)

অর্থাৎ, দুই দিক থেকে পড়লে একই তারিখ পাচ্ছেন। এবার দেখুন নিচের শব্দগুলি-

নবজীবন (ন – ব – জী – ব – ন)

নিধুরাম রাধুনি (নি – ধু – রা – ম – রা – ধু – নি)

শব্দগুলো যেদিক থেকেই পড়ুন অর্থ এই থাকে। বাংলায় দ্বিমুখী শব্দ তৈরীতে দক্ষতা দেখিয়েছিলেন দাদাঠাকুর খ্যাত শরৎচন্দ্র পন্ডিত। তার লেখা একটি কবিতার লাইন এরকম-

‘রাধা নাচে অচেনা ধারা’

কি মজার বিষয় তাই না?

গনিতেও এরকম প্যালিনড্রোমের অসংখ্য উদাহরন আছে। যেমন – ১ দিয়ে তৈরি সমসংখ্যক অঙ্কের দুটি সংখ্যার গুণফল সবসময় প্যালিনড্রোমিক হবে (১)। উদাহরণ,
১১x১১=১২১
১১১x১১১=১২৩২১
১১১১x১১১১=১২৩৪৩২১
১১১১১x১১১১১=১২৩৪৫৪৩২১

এবার চলুন কিছু ইংরেজী প্যালিনড্রোমের উদাহরণ দেখি-

mom (m – o – m)

madam (m – a – d – a – m)

গিনেস বুক আব ওয়ার্ল্ড রেকর্ড অনুযায়ী ইংরেজীতে সবচেয়ে বড় প্যালিনড্রোমিক ওয়ার্ড (২) হচ্ছে –

DETARTRATED (D – E – T – A – R – T – R – A – T – E – D)

শব্দটির অর্থ হল জৈব যৌগ ‘tartrate’ অপসারণ করা হয়েছে ।

ইংরেজ কবি জেমস্ লিনডন-এর কবিতা ‘Doppelgänger’ হল সবচেয়ে বড় পরিচিত প্যালিনড্রোমিক কবিতা (৩)। এটি অবশ্য শব্দের গঠনের দিক দিয়ে দ্বিমুখী না। বরং, চরণের বিন্যাসের দিক দিয়ে দ্বিমুখী। যেমন কবিতাটির শুরু, মধ্য ও শেষের কিছু চরণ লক্ষ্য করুন-

Entering the lonely house with my wife
I saw him for the first time
………
………
I puzzled over it, hiding alone,
Watching the woman as she neared the gate.
He came, and I saw him crouching
Night after night.
Night after night
He came, and I saw him crouching,
Watching the woman as she neared the gate.
…….
…….
I saw him for the first time,
Entering the lonely house with my wife

কবিতাটি যে চরণ দিয়ে শুরু হয়েছে শেষও হয়েছে সেই চরণ দিয়ে। চরণগুলো ঠিক মাঝখানে এসে উল্টে গিয়েছে। যেন আয়নায় নিজের প্রতিফলন।

সুতরাং প্যালিনড্রোমের ব্যবহার যদি খুব বুদ্ধিমত্তার সাথে করা যায় এবং তাতে এক ধরনের সাহিত্যিক বোধ জুড়ে দেয়া যায় তা হয়ে ওঠে চমৎকার শিল্পকর্ম। কোন লেখক যদি তার লেখায় এমনভাবে প্যালিড্রোমের ব্যবহার করেন যে তিনি যেই প্রেক্ষাপট থেকে আলোচনা করছেন তা প্রকাশ্যে বা গোপনে ফুটে ওঠে, বিষয়টা কেমন হবে বলুনতো? একটা দ্বিমুখী শব্দ তৈরী করাই তো কঠিন। তার ওপর আবার এমন শব্দাবলী খুঁজে বের করা যা কোন গভীর অর্থ ধারণ করে এবং সে শব্দাবলীর বাক্যের অর্থপূর্ণ স্থানে সন্নিবেশ করা কতটা শিল্পাচাতুর্য্য হতে পারে চিন্তা করে দেখুনতো?

বুঝাতে পারিনি বোধ হয়। চলুন একটি উদাহরণ থেকে বুঝে নেই।

আল্লাহ আজ্জা ও জাল্লা কুরআনুল কারীম-এর সুরা ইয়াসীনে সায়ত্রিশ নং আয়াত থেকে চল্লিশ নং আয়াত পর্যন্ত দিন ও রাত্রীর আবর্তণ এবং সূর্য ও চাঁদের চলনপথ ও পরিণতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। চল্লিশ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ বলছেন –

“ সূর্যের জন্য সম্ভব নয় চাঁদের নাগাল পাওয়া, আর রাতের জন্য সম্ভব নয় দিনতে অতিক্রম করা, আর প্রত্যেকই (তার) কক্ষ পথে ভেসে বেড়ায়।“

এবার চলুন আয়াতটার আরবী দেখি-

لَا الشَّمْسُ يَنبَغِي لَهَا أَن تُدْرِكَ الْقَمَرَ وَلَا اللَّيْلُ سَابِقُ النَّهَارِ ۚ وَكُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ


কি? কিছু দেখতে পেলেন? চলুন এবার আরেকটু কাছে গিয়ে দেখি। আয়াতের শেষাংশে লক্ষ্য করুন-

وَكُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ

এবার নিচের অংশটুকু দেখুন।

كُلٌّ فِي فَلَكٍ

এই অংশটুকুর অর্থ হল- ‘প্রত্যেকেই কক্ষপথে’। ভাল মত দেখলে বুঝতে পারবেন ‘ইয়া’ অক্ষরকে কেন্দ্র করে ‘ক্বাফ, ‘লাম’ ও ‘ফা’ প্যালিনড্রোমে জড়িয়ে আছে-

كُ لٌّ فِ ي فَ لَ كٍ

এবং, এর ঠিক পর পরই যে শব্দটি আছে তা হল- ইয়াসবাহু’ন। যার অর্থ ‘ভেসে বেড়ানো বা সাতার কাটা বা ঘুরা’। মজার বিষয় হল শব্দটি শুরু হয়েছে ‘ইয়া’ দিয়ে। অর্থাৎ, শেষের শব্দটির ‘ইয়া’ থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে পূর্ব শব্দত্রয়ে ‘ইয়া’-কে কেন্দ্র করে যে প্যালিনড্রোম তৈরী হয়েছে তা একটি অর্থ বহন করে (নিচের ছবি)। অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলা যেন দেখিয়ে দিচ্ছেন নক্ষত্ররাজী কিভাবে তাদের কক্ষপথে ঘুরে বেড়ায়।

প্যালিনড্রোম

কু’রআন আসার আগে আরবী সাহিত্যের রথি মহারথীরা দ্বিমুখী শব্দ তৈরী করতো। সেগুলো হত অর্থহীন কিছু শব্দ বা বাক্য। কিন্তু, কোরআনের শব্দ গাঁথুনি লক্ষ্য করুন। কি সুন্দর! সুবহানাল্লাহ।
কু’রআনীক প্যালিনড্রোমের এরকম আরেকটি উদাহরণ হল সুরা মুদ্দাসসির-এর তৃতীয় আয়াত (দ্বিতীয় ছবি)।

quranic palindrome

নিশ্চয়ই এই কু’রআন আল্লাহর পক্ষ থেকেই এসেছে। সুতরাং, চলুন আমরা কু’রআন পড়ি এবং কু’রআনের আলোয় জীবনকে আলোকিত করি।


পরিশিষ্ট:
কু’রআনুল কারীমের এরকম আরও কিছু সাহিত্যিক মাধুর্য্য সম্পর্কে জানতে পড়ুন ভাই আবদুল্লাহ আল মাসুদের ‘কোরআন বোঝার মজা’ (৪)। এ বইটি এবার বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে।

এছাড়াও ‘Linguistic miracle of Quran’ লিখে Google বা YouTube-এ অনুসন্ধান করলে পেয়ে যাবেন এ রকম অনেক মজার তথ্য। যেমন দেখুন এখানে ()।

আর যারা ইংরেজীতে বই পড়ে মজা পান তারা পড়তে পারেন Nouman Ali Khan এবং Sharif Randhawa রচিত বই – Divine Speech (৭)। অথবা, Bassam Saeh রচিত The Miraculous Language of the Quran: Evidence of Divine Origin (৮)

….
রেফারেন্স:

১. https://bit.ly/2uZFIA4
২. https://bit.ly/38ZtR3y
৩. https://bit.ly/37McW4h
৪. https://bit.ly/3b6aMP9
৫. https://bit.ly/3aXFwBE
৬. https://bit.ly/2RSyK8R
৭. https://amzn.to/3b4Lukf
৮. https://amzn.to/391I1kA

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *