আমি হব সকাল বেলার পাখি
সবার আগে কুসম বাগে
উঠব আমি ডাকি।
(কাজী নজরুল ইসলাম)
ভোরের আকাশে আলোর আভা দেখা দেয়ার পূর্বমূহুর্তে শুরু হয়ে যায় পাখিদের কলকাকলী। কি সুমধুর সেই কণ্ঠ! যুগে যুগে পাখির ডাক মোহিত করেছে কত না কবিদের। জন্ম দিয়েছে কত শত কবিতার! পাখির অপরুপ গঠন এবং শরীরে রঙের মোহনীয় বিন্যাস অনেক শিল্পীর চিত্রকল্পে ঠাই করে নিয়েছে। আবার, পাখি সংক্রান্ত বিজ্ঞান জন্ম দিয়ে একটি স্বতন্ত্র শাখার।
আমরা অধিকাংশ মানুষ হয় পাখিদের বৈজ্ঞানিক গঠন নিয়ে আগ্রহী নই। ওটা বিজ্ঞানীদের কাজ। কিন্তু, জানালের পাশে বসে অপূর্ব সুরে ডাকতে থাকা পাখি নিয়ে কখনও ভাবনার গভীরে হারিয়ে যাই নি এমন মানুষ হয়তো নেই। হয়ত পড়ন্ত বিকেলে কমলাভ-লাল আকাশে নীড়ে ফিরতে থাকা পাখিদের দেখে শিহরিত হয়েছি। ডানা মেলে নির্দ্বিধায় ভেসে বেড়ানো পাখিগুলোকে দেখে হয়েছি ইর্ষান্বিত।
কিন্তু, কখনও কি ভেবে দেখেছি কিভাবে পাখিগুলো বাতাসে ভেসে বেড়ায়? কেন তারা তাদের শরীরের ভারে পড়ে যায় না? কেন এক লাফে ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে উড়ে যেতে পারে অনিমেষে?
বিজ্ঞানীরা আমাদের জন্য কিছু উত্তর বের করে এনছেন। তারা দেখেছেন যে সকল পাখি উড়তে পারে তাদের হাড়গুলো অন্য প্রাণীদের তুলনায় ফাঁপা। ফলে পাখির শরীর হালকা হয়।
অন্যদিকে পাখির ডানার গঠণও উড্ডয়নের জন্য যথাযথ। আপনি কখনও কবুতর বা ময়ুরের পালকের দিকে মনোযোগ দিয়ে তাকালে দেখবেন প্রতিটি পালকে একটি লম্বা কাঠির মত অংশ (শ্যাফট) থেকে নারকেল গাছের পাতার মত ছোট ছোট লম্বা অনেকগুলো অংশ (বার্ব) বেড়িয়ে গেছে। বার্বগুলো পরস্পর সমান্তরালে থাকে। প্রতিটি বার্ব থেকে সমকোণে আরও ক্ষুদ্র কাঠির মত বার্বিউল বের হয়ে আসে যার মধ্যে আবার কাঁটার মত হুক থাকে। একেকটি বার্বকে বার্বিউল সহ দেখতে চিরুনীর মত লাগে। আপনি যদি দুটি চিরুনীর দাতগুলো একটিকে আরেকটির ভেতর প্রবেশ করান, কি হবে বলুন তো? এরা পরস্পর সংলগ্নভাবে আটকে যাবে। পাখির বার্বগুলোও এভাবে একটির সাথে আরেকটি আটকে থাকে। ফলে তাতে বাতাস প্রবেশ করতে পারে না। কি অসাধারণ তাই না?
পাখির মসৃণ গঠনও পাখির ওড়ার জন্য সাহায্য করে। এমনকি শক্ত জোয়ালের পরিবর্তে চঞ্চুর উপস্থিতি ওড়ার জন্য উপকারী। পাখির বুকের প্রশস্ত হাড় (স্টার্নাম) পাখার মাংসপেশী শক্তভাবে লেগে থাকার জন্য প্রয়োজনীয়।
পাখি যখন উড্ডয়নের জন্য ডানা ঝাপটাতে থাকে তখন পাখাগুলো একবার নিচে এবং আরেকবার উপরে যায়। নিচে চাপ দেয়ার সময় পাখির প্রশস্ত পাখা উপরিতলের বাতাস নিচের তুলনায় দ্রুত প্রবাহিত হয় । ফলে, পাখার উপরস্থিত বাতাসের চাপ কমে যায় এবং নিচের বাতাসের চাপে পাখি উপরে উঠতে থাকে।
Leave a Reply