Category: আস্তিকতা-নাস্তিকতা

  • যুক্তি ও বিপরীত যুক্তি

    নাস্তিক বিজ্ঞানীরা কি বিশ্বাসের বিপক্ষে বা অবিশ্বাসের পক্ষে যুক্তির কারণে নাস্তিক হয়?

    যুক্তি ও বিপরীত যুক্তি সমান্তরালে চলে। মেডিকেলে পড়ার সময় আমার একজন সহপাঠীর সঙ্গে একদিন ক্লাস শেষে ফেরার পথে এ বিষয়ে কথা হচ্ছিল। সে একটি সুন্দর উপমা দিয়েছিলো যে যুক্তি ও বিপরীত যুক্তির উদাহরণ হচ্ছে রেললাইনের মত, সমান্তরালে চলে।

    তবে, যুক্তিবিদ্যা সম্পর্কে পড়াশোনা থাকলে যুক্তি থেকে অ-যুক্তি ও কু-যুক্তি (logical fallacy) পার্থক্য করা যায়। অনেকে যুক্তিবিদ্যা নিয়ে সিস্টেম্যাটিক্যালী না পড়েও যথেষ্ঠ যুক্তিবোধ রাখেন। মানুষভেদে উক্ত যুক্তিবোধের একটা রেঞ্জ পাওয়া যায়।

    এতদিন বাংলায় অবিশ্বাসীদের যুক্তিচর্চার ক্ষেত্র ছিল তুলনামূলক শূন্য। সে সুযোগে তারা বিশ্বাসের বিপক্ষে পশ্চিমাদের যুক্তি, অযুক্তি ও কুযুক্তিকে বিভিন্ন মোড়কে উপস্থাপন করেছেন। ফলে বিশ্বাসীদের পক্ষেও যে যুক্তির সম্ভার আছে তা অনুপস্থাপিত থেকে গেছে বহুদিন।

    এরপর নাস্তিকদের ব্লগস্ফেয়ারেই মুসলিম ব্লগাররা বিশ্বাসের পক্ষের যুক্তি নিয়ে লিখালিখি করেছেন। এক সময় আলোচনা-সমালোচনা সীমাবদ্ধ ছিল অল্পকিছু মানুষের মধ্যে । ২০১৩ সালে পর বিভিন্ন কারণে উক্ত আলোচনা দ্রুত ছড়িয়ে পড়লো সবার মাঝে।

    কিন্তু, সবার যুক্তিবোধ সমান নয়, আবার যুক্তি তর্কের ক্যাচক্যাচানি সবার ভালও লাগে না। এ কারণে গল্পের আকারে নাস্তিকদের যুক্তির খণ্ডন বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এই জনপ্রিয়তার মধ্য দিয়ে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, আমাদের ওয়ায়েজীনদের একটি বড় অংশ যখন জনসাধারনের মধ্যে সুরে-বেসুরে ইসলামের শিক্ষার রিমাইণ্ডার দিতে ব্যস্ত, তখন আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত তরুন মুসলিমদের একটি বড় অংশ আমলতো দূরের কথা বিশ্বাসের দিক দিয়েই সংশয়াপন্ন হয়ে গেছে। না হলে ‘প্রেম-রস-কাহিনী-উপাখ্যান’ বিহীন যুক্তি-তর্কের গল্পের বই এত জনপ্রিয় হয় কিভাবে?

    যাই হোক মূল কথায় আসি। বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসী দুই পক্ষেরই যুক্তির অভাব নেই। এমনকি এ সংক্রান্ত পড়ালেখা করতে করতে একজনের জীবন পার করে দেয়া সম্ভব। ফলে, অধিকাংশই বিশ্বাসীদের পক্ষে বিপক্ষের যুক্তি নিয়ে গভীর পড়ার সময় বা যোগ্যতা রাখেন না। ফলে, তারা তাদের পারিবরিক বিশ্বাস বা পারিপার্শ্বিক অর্থডোক্স (প্রচলিত) বিশ্বাসের উপর আস্থা রাখেন অথবা এগনস্টিক অবস্থান নিয়ে নিজের কাজ চালিয়ে যান। এমনকি বিজ্ঞানী ও দার্শনিকদের ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য।

    ২০১৩ সালে David Bourget এবং David J. Chalmers একটি গবেষণা প্রকাশ করেন(1)। যার শিরোনাম ছিলো ‘দার্শনিকরা কি বিশ্বাস করেন?” (What Do Philosophers Believe?) উক্ত গবেষণায় তারা দর্শনের বিভিন্ন শাখার দার্শনিকদের কাছে দর্শনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করেন। এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূণ প্রশ্ন ছিল – স্রষ্টায় বিশ্বাস নিয়ে। তাদের গবেষণায় বেরিয়ে আসে যে যারা ‘ধর্মের দর্শন’ (Philosophy of Religion)-এ এক্সপার্ট তাদের মধ্যে মাত্র ২০.৮৭% অবিশ্বাসী এবং ৭৯.১৩% শতাংশ বিশ্বাসী। অন্যদিকে যারা ধর্মের দর্শন বিষয়ে এক্সপার্ট না (অর্থাৎ অন্যান্য দর্শন বিষয়ে এক্সপার্ট) তাদের মধ্যে ৮৬.৭৮% অবিশ্বাসী এবং ১৩.২২% বিশ্বাসী। অর্থাৎ, বলা যায় একজন দার্শনিকের স্রষ্টায় বিশ্বাসের যুক্তি গুলো নিয়ে গভীরভাবে পড়ালেখা করলে বিশ্বাসী হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় চারগুন বেশী।

    কিন্তু, বিজ্ঞানের প্রতিটি শাখার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জ্ঞানের ব্যপ্তি এখন এত বেশী যে উক্ত যে কোন একটি বিষয় নিয়ে একজন গবেষকের জীবনের অধিকাংশ সময় পার করে দিতে হয় বা দিতে পারেন। ফলে, বিশ্বাসের দিক দিয়ে তার অবস্থান বিশ্বাস-অবিশ্বাসের যুক্তি নিয়ে পড়ালেখার উপর নির্ভর করে না বরং নির্ভর করে তার পারিবারিক বা সামাজিক ধর্মীয় শিক্ষা ও অবস্থা, পারিপার্শ্বিক পরিবেশ, একাডেমিক স্থানে সুবিধাজন পজিশনের থাকার প্রবণতা প্রভৃতি বিষয়ের উপর।

    Ecklund এবং Scheitle যুক্তরাস্ট্রের ২১টি এলিট রিসার্চ ইউনিভার্সিটির বিভিন্ন বিজ্ঞানীদের উপর গবেষণা করে দেখেছেন বিভিন্ন শাখার বিজ্ঞানীদের ধার্মিক হওয়ার বিষয়টি তাদের নিজেদের ফিল্ড-এর এক্সপারটিজ-এর উপর নির্ভর করে না বরং নির্ভর করে তাদের বয়স, বৈবাহিক অবস্থা, সন্তান থাকা বা না থাকা, সে নিজে ছোট থাকাকালীন তার পরিবারের ধর্মীয় অবস্থা ইত্যাদির উপর(2)।

    তারা আরও দেখিয়েছেন যে খুব কম বিজ্ঞানীই মনে করেন যে বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে বিবাদ আছে(3)। কিন্তু, নাস্তিকরা, বিশেষ করে নব্য-নাস্তিক (Neo-Atheist)-দের সঙ্গে কথা বললে মনে হয় যেন বিজ্ঞানীরা তাদের যুক্তিবোধের কারণে নাস্তিক হয়ে যায়। অথচ, উপরে আমরা দেখলাম বিশ্বাসের যুক্তি নিয়ে গভীরভাবে পড়লে বিশ্বাসী হবার সম্ভাবনা প্রায় চারগুন বেশী এবং বিজ্ঞানীদের মধ্যে অধিকাংশই শুধু যুক্তির কারণে নিধার্মিক বা নাস্তিক হয় না।

    রেফারেন্স:

    1. Bourget D, Chalmers DJ. Bourget, Chalmers, What Do Philosophers Believe. Philos Stud. 2014;130(3):465–500.

    2. Ecklund EH, Scheitle CP. Religion among Academic Scientists: Distinctions, Disciplines, and Demographics. Soc Probl. 2007;54(2):289–307.

    3. Ecklund EH, Park JZ, Sorrell KL. Scientists Negotiate Boundaries Between Religion and Science. J Sci Study Relig. 2011;50(3):552–69.

    Majidul Mulhid:

    আপনি প্রধানত দুটি পয়েন্ট তুলে ধরেছেন, উভয় নিয়েই আলোচনা করছি।

    ১. দর্শনের অন্যান্য ক্ষেত্রের তুলনায় ধর্মের দর্শনে বিশ্বাসীর সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে আপনি বলেছেন –

    “বলা যায় একজন দার্শনিকের স্রষ্টায় বিশ্বাসের যুক্তি গুলো নিয়ে গভীরভাবে পড়ালেখা করলে বিশ্বাসী হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় চারগুন বেশী।”

    এটিই কিন্তু একমাত্র হাইপোথিসিস নয়, এর আরও এক কারণ হতে পারে, সেটি হল –

    “ধার্মিক বা আস্তিক হওয়ার কারণেই তারা ধর্মের দর্শন নিয়ে পড়ার সিধান্ত নিয়েছে এবং পূর্বধারণার (prejudice) কারণেই সে আস্তিক থাকে।”

    কোন হাইপোথিসিস সঠিক?

    এই গবেষণায় এই সিধান্তে আসার মতো পর্যাপ্ত পরিমাণে তথ্য নেই। তাই আমরা Helen De Cruz-এর একটি গবেষণার [১] উপর নির্ভর করব। এই গবেষণায় দেখা যাচ্ছে ধর্মের দর্শন বিষয়ে স্পেশালাইজেশন করার প্রধান উদ্দেশ্য হল – Faith seeking understanding অর্থাৎ, এটা তাদের বিশ্বাসকে গভীর করতে সাহায্য করে। দ্বিতীয় উদ্দেশ্য হল – Proselytism and witness, অনেকেই অন্য মানুষদের নিজ ধর্মে দীক্ষিত করানোর উদ্দেশ্যে এই বিষয়ে স্পেশালাইজেশন করে।

    এছাড়া, আরও দেখা যায় যে এই ধর্মের দর্শন বিষয়ে পড়ার ফলে যতজন আস্তিক থেকে নাস্তিক হয় (৮.১%), তার তুলনায় নাস্তিক থেকে আস্তিক (১১.৮%) হওয়ার সংখ্যাও ৩.৭% বেশি।

    এর ফলে দেখা যাচ্ছে আপনার হাইপোথিসিসটি ভুল বরং বেশিরভাগ ধর্মের দার্শনিকগণ আগে থেকেই ধার্মিক বা আস্তিক হওয়ার কারণেই ধর্মের দর্শন নিয়ে পড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে।

    ২. আপনার দ্বিতীয় দাবি হল –

    “খুব কম বিজ্ঞানীই মনে করেন যে বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে বিবাদ আছে।”

    এর প্রমাণ হিসেবে যেই আর্টিকেলটি দিয়েছেন সেখানে এমন কিছু লেখা নেই, সেখানে যা লেখা আছে সম্ভবত সেটি আপনি ভুল বুঝেছেন।

    “only a minority of scientists see religion and science as always in conflict”- সম্ভবত এই বাক্যটি পড়ে আপনি এমন ধারনা করেছেন। ভালো করে দেখুন, এখানে ‘ always’ শব্দটি ব্যাবহার করা হয়েছে, অর্থাৎ এর বাংলা করলে দাঁড়ায়, “মাত্র স্বল্পসংখ্যক বিজ্ঞানী ধর্ম ও বিজ্ঞানের মধ্যে সর্বদাই বিরোধ দেখতে পান।”

    এই গবেষণায় পাওয়া যায়, সাবজেক্টদের মধ্যে ১৫% বিজ্ঞানী মনে করে বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে সবসময় সংঘাত আছে, ১৫% বিজ্ঞানী মনে করে বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে কোনো সংঘাত নেই এবং ৭০% বিজ্ঞানী মনে করে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ধর্ম ও বিজ্ঞানের সংঘাত আছে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে মোট ৮৫% বিজ্ঞানী মনে করে ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের বিরোধ আছে। এবং এটাই যুক্তিযুক্ত অবস্থান, ধর্মে কাকতালীয়ভাবে কিছু জিনিস থাকতেই পারে যা বিজ্ঞানের সাথে সাংঘর্ষিক নয়। তাই বলে ধর্মের সব জিনিস বিজ্ঞানসম্মত তা তো নয়। যেমন বিবর্তনবাদ, এটা সম্পূর্ণরূপে ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক। আবার কুরআনে বলা আছে প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে, এটা আবার বিজ্ঞানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। কিন্তু, ধর্মগ্রন্থে একটি ভুল ধরা পড়লেই সেই গ্রন্থের ডিভাইন অরিজিন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে ওঠে।

    আরও একটা পয়েন্ট হল, এখানে বিজ্ঞানীরা ধর্ম বলতে নির্দিষ্ট কোনো ধর্ম নেয়নি, অনেকেই আধ্যাত্মিকতাকেও ধর্ম ধরেছেন। বিজ্ঞানের কাজ ন্যাচারাল ওয়ার্ল্ড নিয়ে কাজ করা, তাই বিজ্ঞান আধ্যাত্মিকতা বিষয়ে কিছু বলতে পারেনা। কিন্তু, বিজ্ঞান ঠিকই বেদ, বাইবেল, গীতা, কুরআনের মধ্যে অনেক ভুল দেখাতে সক্ষম।

    সুতরাং দেখা যাচ্ছে, আপনি প্রথম গবেষণার ক্ষেত্রে ভুল হাইপোথিসিস দাঁড় করিয়েছেন এবং দ্বিতীয় গবেষণার ব্যাপারে শুধুমাত্র সারাংশ পড়ে ভুল বুঝেছেন।

    বিজ্ঞানীদের ক্ষেত্রে কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করা কঠিন, তা জানতে এই ভিডিওটি দেখতে পারেন –

    ===========================

    রেফারেন্সঃ

    [১] My qualitative study of religious attitudes and motivations of philosophers of religion

    https://www.newappsblog.com/…/results-of-my-qualitative…

    উত্তর:

    আপনি আমার বক্তব্য থেকে দুটি পয়েন্ট নিয়ে কথা বলেছেন। কিন্তু, এর বাইরেও একটি পয়েন্টে আমি কথা বলেছি। তা হল- নাস্তিক বিজ্ঞানীদের নাস্তিক হওয়া তাদের বয়স, বৈবাহিক অবস্থা, সন্তান থাকা বা না থাকা, সে নিজে ছোট থাকাকালীন তার পরিবারের ধর্মীয় অবস্থা ইত্যাদির উপর নির্ভর করে।

    এবার আসুন অন্য দুটো পয়েন্ট নিয়ে কথা বলা যাক। আমি বলেছি “একজন দার্শনিকের স্রষ্টায় বিশ্বাসের যুক্তি গুলো নিয়ে গভীরভাবে পড়ালেখা করলে বিশ্বাসী হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় চারগুন বেশী”। এটা বলেছি মূলত মূল পোস্টের ১নং রেফারেন্স-এর পরিসংখ্যান এর আলোকে।

    আপনার আলোচনার প্রেক্ষিতে আমি Helen De Cruz-এর ২০১৮ সালের প্রকাশিত মূল আর্টিকেলটা পড়ে দেখলাম(1)। সে প্রেক্ষিতে আমি আমার হিসেবটি রিভাইজ করতে চাই। লক্ষনীয় আমার হাইপোথিসিস-এর আলোকে একজন দার্শনিক ফিলোসফি অব রিলিজিওন নিয়ে পড়ার আগে নাস্তিকও হয়ে থাকতে পারেন এবং আস্তিকও হয়ে থাকতে পারেন। আবার ডি ক্রজের আর্টিকেল থেকে দেখা যায় তার গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ৮৫ জন আস্তিক ফিলোসফার এর মধ্যে ১১ জন পূর্বে নাস্তিক বা এগনস্টিক ছিল, ৩৩ জন নাস্তিক বা এগনস্টিক দার্শনিকের (২৫ জন নাস্তিক ও ৮ জন এগনস্টিক)-এর মধ্যে ১২ বিশ্বাসী ছিল। আমরা ম্যাকনেমার টেস্ট করলে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সংখ্যার মধ্যে স্ট্যাটিসটিক্যাল সিমিলারিটি দেখতে পাই (p=1.000)। (লক্ষ্যনীয় আর্টিকেলের এই জায়গায় ডি ক্রজ একটা ভুল করেছেন। এখানে ফিসারস এক্সাক্ট টেস্টে হবে না হবে ম্যাকনেমার টেস্ট হবে। কারণ যখন কোন ডাইকোটোমাস ভ্যারিয়েবলকে রিপিটেড মিজার করা হয় তখন ম্যাকনেমার ব্যবহার করতে হয়।(2))। উপরোক্ত হিসেবে অনুযায়ী পূর্বে ৮৬ জন আস্তিক ছিল এবং ৩২ জন নাস্তিক/এগনস্টিক ছিল।

    আপনি একটি ভ্যালিড পয়েন্ট এনেছেন যে এখানে একজন ফিলোসফার অব রিলিজিওনের পূর্বের বিশ্বাসকেও আমলে নিতে হবে। সুতরাং আমরা ডি ক্রুজের ২০১৮ সালের আর্টিকেলের হিসেবেকে আমলে নিয়ে পাচ্ছি একজন দার্শনিকের ফিলোসফি অব রিলিজিওন বিভাগে ঢুকার পূর্বে আস্তিক থাকার সম্ভাবনা ৭২.৮৮% এবং নাস্তিক বা এগনস্টিক থাকার সম্ভাবনা ২৭.১১% এবং উক্ত ডিপার্টমেন্টে ঢুকার পরে আস্তিক হওয়ার সম্ভাবনা ৭২.০৩% এবং নাস্তিক বা এগনস্টিক হওয়ার সম্ভাবনা ২৭.৯৬%। এখন আমরা যদি পূর্ববর্তী বিশ্বাসকে আমলে নেয়ার জন্য বেইস থিওরেম এপ্লাই করি তাহলে দেখা যায় একজন দার্শনিকের ধর্মের দর্শনে এক্সপার্ট হওয়ার থিইস্ট হওয়ার সম্ভাবনা (Likelihood) ৬০.৩৮% এবং অবিশ্বাসী/এগনস্টিক হওয়ার সম্ভাবনা ৫০.৬৮%। অর্থাৎ পূববর্তী বিশ্বাসকে আমলে নিলেও একজন দার্শনিকের ধর্মের দর্শন পড়ে বিশ্বাসী হবার সম্ভাবনা প্রায় ৯.৭৩% বেশী। অর্থাৎ, আবার পূর্বের হিসেবের ৪ গুনের জায়গায় মূল হিসেব হবে ১.১৯ গুণ বেশী।  

    এছাড়া আপনি ডি ক্রুজের ব্লগ থেকে লিখেছেন- এই গবেষণায় দেখা যাচ্ছে ধর্মের দর্শন বিষয়ে স্পেশালাইজেশন করার প্রধান উদ্দেশ্য হল – Faith seeking understanding অর্থাৎ, এটা তাদের বিশ্বাসকে গভীর করতে সাহায্য করে। দ্বিতীয় উদ্দেশ্য হল – Proselytism and witness, অনেকেই অন্য মানুষদের নিজ ধর্মে দীক্ষিত করানোর উদ্দেশ্যে এই বিষয়ে স্পেশালাইজেশন করে।

    এই তথ্য পুরোপুরি সঠিক নয়, কারণ Proselytism and witness অন্তত দ্বিতীয় কারণ নয়। মূল কারণগুলো হল – রিলিজিয়াস আইডেনটিটি (৩৬%), দার্শনিক আগ্রহ (৩৩.১%), দর্শক সংক্রান্ত শিক্ষা থেকে আগ্রহ ২০.১%, সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক বা সামাজিকভাবে ইন্টারেস্টিং মনে করার কারণে ১৪.৪%, ছোটবেলার কোন অভিজ্ঞতার কারণে ১০.৮%, অন্যান্য ৭.৯% এবং  Proselytism and witness ৭.২%। এমনকি যারা রিলিজিয়াস আইডেনটিটি ক্লাসে আগ্রহী ছিল তাদের মধ্যে এই প্রবণতাও ছিল যে তারা তাদের বিশ্বাসকে যুক্তির আলোকে প্রশ্ন করে দেখতে চায়- “I am a catholic, and philosophy of religion helps me in deepening my faith by way of—paradoxically—putting the faith itself into question and even criticizing it. — male assistant professor, public university, Italy.”

    দ্বিতীয় পয়েন্টে বলি – আমি আর্টিকেলটা ভুল পড়ি নি এবং “খুব কম বিজ্ঞানীই মনে করেন যে বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে বিবাদ আছে”-এ কথাটা ভ্যালিড। কেন? বুঝিয়ে বলছি-

    আপনি লিখেছেন- “এই গবেষণায় পাওয়া যায়, সাবজেক্টদের মধ্যে ১৫% বিজ্ঞানী মনে করে বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে সবসময় সংঘাত আছে, ১৫% বিজ্ঞানী মনে করে বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে কোনো সংঘাত নেই এবং ৭০% বিজ্ঞানী মনে করে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ধর্ম ও বিজ্ঞানের সংঘাত আছে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে মোট ৮৫% বিজ্ঞানী মনে করে ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের বিরোধ আছে।“

    আপনার শেষের “৭০% বিজ্ঞানী মনে করে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ধর্ম ও বিজ্ঞানের সংঘাত আছে” থেকে “মোট ৮৫% বিজ্ঞানী মনে করে ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের বিরোধ আছে” কথাটা কিভাবে আসল পরিস্কার নয়। কারণ “৭০% বিজ্ঞানী মনে করে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ধর্ম ও বিজ্ঞানের সংঘাত আছে” এর অর্থ হল “৭০% বিজ্ঞানী মনে করে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই  ধর্ম ও বিজ্ঞানের সংঘাত নেই”। সুতরাং হিসেবটা হওয়ার কথা  “৮৫% বিজ্ঞানী মনে করে ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের নেই।“

    ইন ফ্যাক্ট উক্ত হিসেবের আলোকে স্বয়ং অথররাই বলেছেন যে “only a minority of scientists see religion and science as always in conflict”। এখানে মাইনরিটি হচ্ছে ১৫%।

    আমি অবশ্য স্বীকার করছি কথাটা এভাবে বললে ভাল হত “খুব কম বিজ্ঞানীই মনে করেন যে বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে সার্বক্ষনিক বিবাদ আছে।“

    আপনার অন্যান্য কথার সাথে আমার কিছু জায়গায় মতের ঐক্য এবং কয়েক জায়গায় মতের মিল নেই। তবে সেই বিষয় নিয়ে আলোচনা বা তর্ক চালিয়ে যাওয়ার মত সময় আমার নেই। ধন্যবাদ।

    রেফারেন্স:
    1.           De Cruz H. Religious Beliefs and Philosophical Views: A Qualitative Study. Res Philos [Internet]. 2018;95(3):477–504. Available from: https://www.pdcnet.org/resphilosophica/content/resphilosophica_2018_0095_0003_0477_0504

    2.        McNemar’s test in SPSS Statistics – Procedure, output and interpretation of the output using a relevant example | Laerd Statistics [Internet]. [cited 2019 Mar 8]. Available from: https://statistics.laerd.com/spss-tutorials/mcnemars-test-using-spss-statistics.php

  • ‘নাস্তিকতায় কি’ একটি অন্ধবিশ্বাসের স্থান নেই?

    ফিলোসফার অব সায়েন্স কার্ল পপারের সুন্দর একটি কথা আছে-

    If a proposal or hypothesis cannot be tested in a way that could potentially falsify the proposal, then the proposer can offer any view without the possibility of its being contradicted. In that case, a proposal can offer any view without being disproved. [1]

    একটি প্রস্তাবনা বা প্রকল্পকে যদি কোনোভাবেই পরীক্ষা করে মিথ্যা প্রমাণ করার সুযোগ না থাকে, তাহলে যিনি প্রস্তাবনা করেছেন তিনি কোনো ধরনের বিরোধ ছাড়াই যেকোনো দৃষ্টিভঙ্গি প্রস্তাব করতে পারেন। সেক্ষেত্রে, একটি প্রস্তাবনা কোনো ধরনের ভুল প্রমাণিনিত হওয়ার সম্ভাবনা ছাড়াই যেকোনদৃষ্টিভঙ্গিকে উপস্থাপন করতে পারে।[OM1] 

    এই হিসেবে নাস্তিকদের ‘ডিডেটারমিনিস্ট ম্যাটেরিয়ালিস্ট[OM2] ’ মতবাদটি একটি ‘বিশ্বাস-ব্যবস্থা’ তথা এইটা একটা ‘ধর্ম’। নাস্তিকরা এই ডেটারমিনিস্ট ডিটারমিনিস্ট ম্যাটেরিয়ালিস্ট ব্যবস্থার ওপর ‘বিশ্বাস’ স্থাপন করে আল্লাহকে অস্বীকার করছে। লক্ষ করবেন, তাএদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে মাঝেমধ্যে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে ওঠে। যেমন : তাএদেরকে ফান্ডামেন্টাল ফোর্সেস অব  ইউনিভার্সের[1] উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন করলে বলবে, তা এমনি এমনেই উদ্ভব হয়েছে।  তাদের এই উত্তরটি যেমন তারা (বৈজ্ঞানিক) পরীক্ষা-নিরীক্ষা দ্বারা প্রমাণ করতে পারবে না, তেমনি তাদের এই উত্তরটিকে ভুলও প্রমাণ করা যাবে না। কারণ, এইটা তো একটা ‘বিশ্বাস’।

    প্রশ্ন হলো- ‘বিশ্বাস’ হলে অসুবিধেটা কী? অসুবিধে আছে। অপরদিকে মুসলিমরা বিশ্বাস করে, এই ফোর্সগুলো আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। এবং  মুসলিমরা কখনো দাবি করেনি যে, এটা পরীক্ষা করে প্রমাণ করা যাবে[2]; বরং মুসলিমরা বলছে, ‘এই ফোর্সগুলো আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন’-এই কথাটায় ‘বিশ্বাস’ করাটাই ইসলামের দাবি।

    1. প্রকৃতিতে চারটি মৌলিক শক্তি কার্যরত রয়েছে। যথা: শক্তিশালী পারমাণবিক শক্তি, তড়িৎ চৌম্বকীয় শক্তি, দুর্বল পারমাণবিক শক্তি, মহাকর্ষ বল। এগুলো সামান্যতম কম-বেশি হলেও এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি হত না।তাই এগুলো কোথা এলো এবং কেন ঠিক এমন অনুপাতেই হলো যা দ্বারা মহাবিশ্ব রূপ পেল সেটা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আরো জানতে দেখুন ‘অ্যান আপিল টু কমনসেন্স’, জবাব-১, সমকালীন প্রকাশন।—সম্পাদক
    2. এখানে শুধু প্রাকৃতিক বিজ্ঞান ব্যবহার করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা বোঝানো হচ্ছে। কারণ আলোচ্য শক্তিগুলো আল্লাহর পক্ষ থেকে সৃষ্টি দেখাতে হলে আগে আল্লাহর অস্তিত্ব থাকা আবশ্যক। কিন্তু এটা যাচাই করার মাধ্যম বিজ্ঞান নয়। কারণ বিজ্ঞান পদ্ধতিগত প্রকৃতিবাদের দর্শনের উপর দাঁড়ানো। অর্থাৎ বস্তুজগতের ভিতরে তার ব্যাখ্যা সীমাবদ্ধ। এর বাইরের কোনোকিছু তার ক্ষেত্রের মধ্যে পড়ে না। বিজ্ঞান সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স থেকে জানা যায়, ‘বিজ্ঞান হলো প্রাকৃতিক জগৎ সম্পর্কে জ্ঞানার্জনের একটি উপায়। প্রাকৃতিক জগৎ সম্পর্কে জাগতিক ব্যাখ্যা প্রদানেই এটি সীমাবদ্ধ। অতিপ্রাকৃত কিছু আছে কি না, সে বিষয়ে বিজ্ঞান কিছুই বলতে পারে না। স্রষ্টা আছে কি নেই, এ প্রশ্নের ব্যাপারে বিজ্ঞান নীরব।’ আল্লাহর অস্তিত্ব যেহেতু বস্তুগত জগতের বাইরের বিষয় তাই এ ব্যাপারে বিজ্ঞানের পরীক্ষা-নিরীক্ষা কোনো মাধ্যম

    যেমন পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে :

    ذَلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَ فِيهِ هُدًى لِلْمُتَّقِينَ (2) الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِالْغَيْبِ وَيُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُونَ (3)

    ‘এটি আল্লাহর কিতাব, এর মধ্যে কোনো সন্দেহ নেই৷ এটি হিদায়াত সেই মুত্তাকিদের জন্য, যারা অদৃশ্যে বিশ্বাস করে, সালাত কায়েম করে এবং আমার প্রদত্ত রিজিক হতে ব্যয় করে।’[[3]]

    কিন্তু সমস্যা হলো, অধিকাংশতথাকথিত নাস্তিক্যবাদীকরা তাদের  ‘বিশ্বাস’-এরকে বেলায় বিজ্ঞানকে মুখোশ হিসেবে কাজে লাগাচ্ছে একটা সায়েন্টেফিক ডিসগাইজ দিতে চাচ্ছে। তারা নিজেদের ‘বিশ্বাসকে বৈধতা দিতে গিয়ে বিজ্ঞানেরনকে অপব্যবহার করছে। এমনভাবে তারা বিজ্ঞানের  কথা বলছে, যেন তাদের এই ‘বিশ্বাস’ প্রকৃতপক্ষে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত নিরেট সত্য। অথচ পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে তাদের এই ‘বিশ্বাসগুলো প্রমাণ করা যায় না।

    ঈশ্বরকে মেনে নেওয়ার দাবিটা সম্পূর্ণ বিশ্বাসের। সুতরাং, যাদের মেনে নেওয়া প্রমাণের ওপর নির্ভরশীল, যেমন সৈকত চৌধুরী নামক একজন নাস্তিক রাহাত খানকে প্রতিমন্তব্য করতে গিয়ে বলেছিলেন :

    ‘কিন্তু কেউ যদি ঈশ্বরকে এখানে নিয়ে আসেন, তবে তিনি তা প্রমাণ করুক…’

    তাদেরই বরং ‘ঈশ্বর নেই’ এইটা প্রমাণ করা জরুরি। কেননা, বিজ্ঞানের দাবি তো তারাই তুলছে।

    এই তথাকথিত শ্রেণির নাস্তিকরা যে চরম পর্যায়ের অন্ধবিশ্বাসী গোঁড়া তার প্রমাণ বিভিন্নভাবে পাবেন। যেমন : বিবর্তনের ব্যাপারে বলতে গিয়ে যদি বলেন, ‘অসংখ্য’ মধ্যবর্তী প্রজাতির ফসিল কোথায়? তারা বলবে, প্যালিওন্টোলজি তথা জীবাশ্মবিজ্ঞান এখনো শুরুর পর্যায়ে, ভবিষ্যতে একদিন না একদিন আবিষ্কার হবে। অথচ গত দেড়শ বছরে ১০০ মিলিয়নের ওপর ফসিল আবিষ্কৃত হয়েছে, যাতে একটিও মধ্যবর্তী প্রজাতি নেই। [2]

    হিসেবে বিজ্ঞান নিজেই গণ্য করে না। তাই আস্তিক্যবাদ বা নাস্তিক্যবাদ কোনোটির পক্ষেই বিজ্ঞান রায় দেবে না। তাই কখনোই বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার দ্বারা আল্লাহর অস্তিত্ব বা অনস্তিত্ব প্রমাণ করা যাবে না। এরকম দাবিও অমূলক আলোচ্য ফোর্সগুলো মুসলিমদের জন্য যেহেতু আল্লাহর অস্তিত্বের উপর নির্ভরশীল, তাই তারা স্বাভাবিকভাবেই বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষাকে মানদণ্ড মনে করেনি।  কিন্তু এর বিপরীতে নাস্তিক্যবাদীদের অধিকাংশই নিজেদের বিশ্বাসের ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষাকে মানদণ্ড জ্ঞান করে  যা একেবারেই অমূলক; বিস্তারিত জানতে দেখুন- ‘বিজ্ঞান ও বিশ্বাস-যা আমাদের অজানা’, জবাব-১ সম্পাদক [1] সুরা আল-বাকারা, আয়াত : ২-৩

    সুপরিচিত ব্রিটিশ বিবর্তনবাদী ও জীবাশ্মশ্রমবিজ্ঞানী (প্যালেওন্টোলোজিস্ট) কলিন প্যাটারসন এই বিষয়ে সরল স্বীকারোক্তি দেন-

    No one has ever produced a species by mechanisms of natural selection. No one has ever got near it and most of the current argument in neo-Darwinism is about this question.

    Natural selection is not a mechanism that produces anything new and thus causes species to change, nor does it work miracles such as causing a reptile to gradually turn into a bird. In the words of the well-known biologist D’Arcy Wentworth Thompson, ‘… we are entitled… to see in natural selection an inexorable force, whose function is not to create but to destroy—to weed, to prune, to cut down and to cast into the fire.’  [3]

    প্রাকৃতিক নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কেউ এখনো পর্যন্ত কোনো প্রজাতি তৈরিরী করতে পারেনি। কেউ কখনো প্রজাতি তৈরিরীর কাছেও যায়নি এবং নব্য-ডারউইনবাদের অধিকাংশ যুক্তি এই প্রশ্নকে কেন্দ্র করেই।

    প্রাকৃতিক নির্বাচন এমন কোনো প্রক্রিয়া না, যা নতুন কিছু তৈরী তৈরি করে এবং এইভাবে প্রজাতির পরিবর্তনে ভূমিকা রাখে, এই প্রক্রিয়া একটি সরিসৃপকে পাখিতে পরিণত করতে পারে না। ডি’আরসি ওয়েন্টওর্থ থমসনের ভাষায় ‘.. আমরা প্রাকৃতিক নির্বাচনকে দেখি একটি নির্দয় শক্তি হিসেবে, যার কাজ তৈরিরী করা না; বরং ধ্বংস করা – উপড়ে ফেলা, ছাটাই করা, কেটে ফেলা এবং আগুনে নিক্ষেপ করা।

    কেন ফসিল রেকর্ডে বিবর্তনের কোনো প্রমাণ নেই, বিখ্যাত নব্যনিউ ডারউইনবাদী প্যালেওন্টোলজিস্ট স্টিভেন জে. গোল্ড সেইটা এভাবে ব্যাখ্যা করেন-

    The history of most fossil species includes two features particularly inconsistent with gradualism: 1. Stasis. Most species exhibit no directional change during their tenure on earth.  They appear in the fossil record looking much the same as when they disappear; morphological change is usually limited and directionless. 2. Sudden appearance. In any local area, a species does not arise gradually by the steady transformation of its ancestors; it appears all at once and fully formed.  [4]

    জীবাশ্মের ইতিহাস থেকে দেখা যায় দুটি জিনিস গ্রাজুয়েলিজমের (তথা ধীরগতির পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তনের)-এর সাথে অসংলগ্ন। ১. স্থিরতা (স্ট্যাসিস): অধিকাংশ প্রজাতি পৃথিবীতে উৎপত্তি থেকে মৃত্যু পর্যন্ত কোনো দিকে পরিবর্তন দেখায় না। জীবাশ্ম রেকর্ডে প্রজাতির আগমন এবং বিদায় হওয়ায় কোনো প্রকার পরিবর্তন নাই। আকৃতিগত পরিবর্তন যা হয় তা সীমিত এবং দিকহীন। ২. হঠাৎ আগমন (সাডেন অ্যাপেয়ারেন্স): যে কোন একটি জায়গায় একটি প্রজাতি তাদের পূববর্তী প্রজাতির ধীর পরিবর্তনের মাধ্যমে আবির্ভূত হয় না। প্রজাতি হঠাৎ এবং সম্পূর্ণ শারীরিক গঠন নিয়ে আবির্ভূত হয়।

    অন্যদিকে প্যালিওন্টোলজিস্ট নাইল্স এলড্রেজ জীবাশ্ম রেকর্ড দেখে বিবর্তনবাদীদের হতাশা ব্যক্ত করেন এভাবে :

    No wonder paleontologists shied away from evolution for so long. It seems never to happen.  Assiduous collecting up cliff faces yields zigzags, minor oscillations, and the very occasional slight accumulation of change over millions of years, at a rate too slow to really account for all the prodigious change that has occurred in evolutionary history.  [5]

    বিবর্তন থেকে দীর্ঘকাল ধরে জীবাশ্মবিদদের পশ্চাদপসরণ কোনো বিস্ময়কর ব্যাপার নয়। (অবস্থা এমন যে) এটি কখনো ঘটিতব্য বলে মনে হয় না। এটি কোনো বিস্ময়কর ব্যপার নয় যে, দীর্ঘদিন ধরে জীবাশ্মবিদগণ বিবর্তনবাদ থেকে লজ্জা পেয়ে বেরিয়ে গেছেন। কখনো তারা ফিরে আসবেন বলেও মনে হয় না। স্তরে স্তরে পাহাড় তৈরী হওয়ার ফলে সৃষ্ট জিগজ্যাগ, ছোটোখাটো উঁচুনিচু দোলন এবং লক্ষ লক্ষ বছর ধরে সামান্য পরিবর্তন জমতে জমতে যে রূপান্তর হয়, তা বিবর্তনীয় ইতিহাসে ঘটে যাওয়া বিস্ময়কর পরিবর্তনসমূহের জন্য কোনভাবেই যথেষ্ট নয়। [OM3] 

    সুতরাং বলা যায়, তাদের দাবি স্রেফ ধারণা বা বিশ্বাসের উপর দাঁড়িয়ে আছে।টির ভিত্তিই হল ‘অন্ধবিশ্বাস’।

    তারা বলবে, মিউটেশনের মধ্য দিয়ে বিবর্তন হচ্ছে। অথচ অসংখ্য পরীক্ষাগারে কোটি কোটি মিউটেশনের ঘটনা ঘটানো হয়েছে, এখন পর্যন্ত একটা উদাহরণও নেই যে, মিউটেশনের মাধ্যমেই একটা ব্যাকটেরিয়া প্রজাতি আরেকটা ব্যাকটেরিয়া প্রজাতিতে পরিণত হয়েছে। তুলনামূলক বড়ো প্রাণীদের ব্যাপারে তারা বলবে, যেহেতু বিবর্তন হতে মিলিয়ন মিলিয়ন বছর পার হতে হয়, ফলে আমাদের পক্ষে এই বিবর্তন পুরোপুরি পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব নয়া। (যে কথাটা লুকিয়ে আছে : ‘বিবর্তন’ বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব হলে কী হবে? আমরা তো ‘বিশ্বাস’ করে ধরেই নিয়েছি, বিবর্তন হয়েছেঅর্থাৎ এমন ধারণা যা এখনো প্রমাণিত নয়) কিন্তু ব্যাকটেরিয়ার ব্যাপারটাতে তাদের গল্পটা কী? ব্যাকটেরিয়ার ‘জেনারেশন টাইম’[4] তো খুব দ্রুত। (ব্যাকটেরিয়ার একটি নির্দিষ্ট কলোনি যে সময়ে সংখ্যায় ঠিক দ্বিগুণ হয়ে যায়, তাকে বলে জেনারেশন টাইম) পরীক্ষাগারে বিজ্ঞানের জগতে খুব পরিচিত ব্যাকটেরিয়া E. coli এর জেনারেশন টাইম মাত্র বিশ মিনিট। অর্থাৎ, যদি E. coli এর একটি ১০০ ব্যাকটেরিয়ার কলোনি নেওয়া হয়, তবে বিশ মিনিটের মধ্যে সেটি ২০০ ব্যাকটেরিয়ার কলোনিতে পরিণত হবে। [6]

    এখন পর্যন্ত ব্যাকটেরিয়া নিয়ে ডারউইনবাদী বিবর্তনের সবচেয়ে বড়ো পরীক্ষাটি করেছেন বিবর্তনবাদী বিজ্ঞানী রিচার্ড লেনস্কি। সেই ১৯৮৮ সাল থেকে পরীক্ষা শুরু হয়েছে, এখনো চলছে। ২০১২ সাল নাগাদ E. coli-এর ৫০০০০ জেনারেশন পার হয়েছে। এইগুলো নিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে, প্রতি ৫০০ জেনারেশন পর E. coli-এর স্ট্রেইনগুলো নিয়ে সেগুলোর জেনেটিক স্টাডি করা হয়েছে; অবাক করা বিষয়- এখনো পর্যন্ত E. coli, E. coli-ই রয়ে গিয়েছে! [7]

    তারপরও এই পরীক্ষা চালু রাখা হয়েছে, এই ‘বিশ্বাসে’ যে ডারউইনবাদ একদিন না একদিন প্রমাণিত হবেই হবে। অথচ মিউটেশনের মধ্য দিয়ে আদৌ  কি কোনো ডারউইনবাদী বিবর্তন সম্ভব? বিজ্ঞানিনীরা খুব ভালোমতোই জানেন, প্রাণীকোষে কোনো ‘জেনেটিক ইরর’ হয়ে গেলে সেইটাকে সংশোধনের জন্য প্রাণীকোষেই খুব পরিকল্পিত সিস্টেম তৈরি করা আছে। ফলে কোনো মিউটেশন হয়ে তা পরবর্তী জেনারেশনে সঞ্চালিত হওয়ার সম্ভাবনা একদমই নগণ্য আসল কথা হলো- অধিকাংশ জিনের মিউটেশনের হার প্রতি ১,০০,০০০-এ একটা এবং যে মিউটেশনগুলো হয়, তার অধিকাংশই ক্ষতিকারক। [8]

    এরপরও যদি ধরে নেওয়া হয়, মিউটেশন উপকারী হতে পারে; তারপরও মিউটেশনের মাধ্যমে জিন পরিবর্তন হয়ে একটি নতুন বৈশিষ্ট্য অভিযোজন হতে যে পরিমাণ সময় দরকার, তা বিবর্তনবাদীদের কল্পনার জন্যও অনেক অনেক বেশি। অন্তত এম.আই.টির প্রফেসর মুরে এডেন ও বিবর্তনবাদী জর্জ গেইলর্ড সিম্পসনের হিসেব থেকে সেইটাই বোঝা যায় :

    In a paper titled ‘The  Inadequacy of Neo-Darwinian Evolution As a Scientific Theory,’ Professor  Murray Eden from the MIT (Massachusetts Institute of Technology)  Faculty of Electrical Engineering showed that if it required a mere six  mutations to bring about an adaptive change, this would occur by chance  only once in a billion years – while, if two dozen genes were involved,  it would require 10,000,000,000 years, which is much longer than the age  of the Earth. [9]

    The evolutionist George G. Simpson has performed a calculation regarding the mutation claim in question. He admitted that in a community of 100 million individuals, which could hypothetically produce a new generation every day, a positive outcome from mutations would only take place once every 274 billion years. That number is many times greater than the age of the Earth, estimated to be at 4.5 billion years old. These, of course, are all calculations assuming that mutations have a positive effect on the generations which gave rise to them, and on subsequent generations; but no such assumption applies in the real world. [10]

    ‘বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব হিসেবে নব্যডারউইনবাদের অসম্পূর্ণতা’The  Inadequacy of Neo-Darwinian Evolution As a Scientific Theory’ (বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব হিসেবে নব্যডারউইনবাদের অসম্পূর্ণতা) শিরোনামের একটি প্রবন্ধে এম.আই.টি.-এর ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির প্রসেফর মুরে এডেন দেখিয়েছেন, অভিযোজনের জন্য একটি পরিবর্তন সংঘটিত হতে ৬ টি মিউটেশন দরকার, যা প্রতি এক বিলিয়ন বছরে একবার হতে পারে। সুতরাং, দুই ডজন জিনে পরিবর্তনের জন্য লাগবে ১০,০০০,০০০,০০০ বছর, যা পৃথিবীর বয়সের তুলনায় অনেক বেশি।

    বিবর্তনবাদী জর্জ জি সিম্পসন একটি হিসেব করে দেখিয়েছেন যে, আনুমানিক প্রতি দিনবছর একটি নতুন জেনারেশন তৈরিরী করতে পারে এমন ১০০ মিলিয়ন ব্যক্তির একটি কমিউনিটিতে, একটি ধনাত্মক ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য দরকার ২৭৪ বিলিয়ন বছর। এটা পৃথিবীর বয়সের (প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন বছর) চেয়েও বহুগুণ বেশি। ৪.৫ বিলিয়ন বছর বয়সের তুলনায় অনেকগুণ বেশি। তাও এই হিসেব এটা ধরে নিয়ে যে, মিউটেশন সব জেনারেশনে ধনাত্মক ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসে। কিন্তু বাস্তব জগতে এই ধারণা কার্যকর নয়।র কোন ভিত্তি নেই (অর্থাৎ মিউটেশন সব সময় ধনাত্মক ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসে না)।   

    তবুও নাস্তিকরা কেন মিউটেশনকে বিবর্তন ঘটার ‘প্রভু’ মনে করারে হয়? উত্তর সেই ‘অন্ধবিশ্বাস’; এ ছাড়া বিলিয়ন বছরের ব্যবধানে কোনো জীব মিউটেশনের মধ্য দিয়ে অন্য একটি জীবে পরিবর্তিত হয়নি- তার  প্রমাণ হলো ৩.৫ বিলিয়ন বছর পুরোনো আর্কিয়া (বা আর্কিব্যাকটেরিয়া); বিলিয়ন বছর আগেও যেমন তাদের উত্তপ্ত ঝরনায় পাওয়া যেতো, আজও তাদের গ্র্যান্ড প্রিজমেটিক লেকের মতো উত্তপ্ত জলাশয়ে পাওয়া যায়। [11]

    বিবর্তনবাদীদের তথাকথিত প্রথম কোষটি কীভাবে উদ্ভব হলো- সেই বিষয়ে তো এখনও প্রশ্ন করাই হয়নি। ‘কোষ’ বললে বিষয়টি অনেক জটিল হয়ে যায়, ১৫০ অ্যামাইনো এসিডে ভরা একটা মাঝারি আকৃতির প্রোটিন কীভাবে যে দৈবাৎ দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে এলো, সেটাই না হয় ব্যাখ্যা করুক।

    অথচ ডগলাস এক্স যে বিষয়গুলো এই সম্ভাব্যতা কমাতে পারে, সেগুলোকে বিবেচনায় নিয়ে (অর্থাৎ, বাদ দিয়ে) ১৫০টি অ্যামাইনো এসিডের একটি প্রোটিন তৈরি দুর্ঘটনাক্রমে হওয়ার সম্ভাব্যতাকে হিসেব করেছেন- ১০ এর পরে ১৬৪টি শূন্য বসালে যে সংখ্যাটি হয় (তথা ১০১৬৪[OM4] ) এর মধ্যে ১ বার। বিল ডেম্বসকি হিসেব করে দেখিয়েছেন, আমরা যে মহাবিশ্ব দেখতে পাই, সেখানে ১০৮০টি এলিমেন্টারি পার্টিকল আছে; বিগব্যাং থেকে এখন পর্যন্ত ১০১৬ সেকেণ্ড পার হয়েছে [OM5] এবং দুটো বস্তুর মধ্যে যেকোনো বিক্রিয়া প্ল্যাঙ্কটাইম ১০-৪৩ সেকেন্ডের চেয়ে কম সময়ে হতে পারে না। এই সবগুলো সংখ্যাকে একত্রিত করলে দাঁড়ায় ১০১৩৯[OM6] ; অর্থাৎ, মহাবিশ্বের বয়স, মহাবিশ্বের গাঠনিক এলিমেন্টারি পার্টিকেলের সংখ্যা এবং পার্টিকেলের মধ্যে বিক্রিয়া হতে ন্যূনতম প্রয়োজনীয় সময়কে একত্রে বিবেচনার পরও উপর্যুক্ত প্রোটিনটি তৈরি হওয়ার সম্ভাব্যতা ট্রিলিয়ন ভাগ পিছিয়ে পড়ে। সহজ কথায় উক্ত প্রোটিনটি তৈরি হতে এখন বিলিয়ন ট্রিলিয়ন সেকেন্ড (১০২৫[OM7]  বা ১০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০ বা দশ লক্ষ কোটি কোটি সেকেণ্ড বা একত্রিশ কোটি বিলিয়ন বছর) অতিবাহিত হতে হবে। [12] [13]

    কিন্তু নাস্তিকরা দেখবেন বলে উঠবে, ‘সম্ভাব্যতার বিষয়টা আপনি বোঝেনই নাই’।; তাদের এমন উত্তরের কারণ হলো তাদের বিশ্বাস। কারণ, নাস্তিকদের অন্ধবিশ্বাস অনুযায়ী যেকোনো অসম্ভব ঘটনা, যেটা ঘটানোর জন্য পুরো সুপরিকল্পিত কাঠামো, ডিজাইন ও জ্ঞান দরকার, তা কেবল  দুর্ঘটনাক্রমে (by chance) সম্ভব বলে তারা স্রেফ অন্ধভাবে বিশ্বাস করে নিয়েছে হয়। (!)

    একজন নাস্তিকের সাথে ফেসবুকে আমার আলাপ হচ্ছিলো বিবর্তনবাদ নিয়ে, শেষ পর্যায়ে এসে তার মন্তব্যটি এরকম :

    Abdullah Saeed Khan আপনি যতগুলো প্রাণীর নাম নিলেন, তাদের টিকে থাকার ইতিহাস খুঁজতে গেলে তো খবর আছে। আপনিই বরং নিয়েন, তবে আমার কাছে মনে হচ্ছে ‘survival the fittest’ নিয়ামকটাই হয়তো এদের টিকে থাকার পেছনে কারণ। আর আমি যা দেখছি, আপনি বিবর্তনের সমালোচনা করছেন, কিন্তু refuse অস্বীকার করতেছেন না। বিজ্ঞানের মূল মজা তো যোগ্য সমালোচনায়। যাই হোক আজ আলোচনা করে ভালো লাগলো। ভালো থাকবেন।[OM8] 

    সুতরাং, কাদের বিশ্বাসটি যে আসলে ‘অন্ধবিশ্বাস’, সেটা আর বলা লাগে না, স্পষ্টই বোঝা যায়। পরিশেষে নাস্তিকতা নামক দের অন্ধ বিশ্বাসের আরেকটা উদাহরণ টেনে লেখাটি শেষ করছি :

    In this philosophy (Determinist Materialist), observable matter is the only reality and everything, including thought, will, and feeling, can be explained only in terms of matter and the natural laws that govern matter. The eminent scientist Francis Crick (codiscoverer of the genetic molecular code) states this view elegantly (Crick and Koch, 1998): ‘You, your joys and your sorrows, your memories and your ambitions, your sense of personal identity and free will, are in fact no more than the behavior of a vast assembly of nerve cells and their associated molecules. As Lewis Carroll’s Alice might have phrased it: ‘You’re nothing but a pack of neurons (nerve cells).’’ According to this determinist view, your awareness of yourself and the world around you is simply the by-product or epiphenomenon of neuronal activities, with no independent ability to affect or control neuronal activities.

     Is this position a ‘proven’ scientific theory? I shall state, straight out, that this determinist materialist view is a ‘belief system’; it is not a scientific theory that has been verified by direct tests.  It is true that scientific discoveries have increasingly produced powerful evidence for the ways in which mental abilities, and even the nature of one’s personality, are dependent on, and can be controlled by, specific structures and functions of the brain. However, the nonphysical nature of subjective awareness including the feelings of spirituality, creativity, conscious will, and imagination, is not describable or explainable directly by the physical evidence alone. [15]

    ডিডেটারমিনিস্ট ম্যাটেরিয়ালিস্ট দর্শন অনুযায়ী, দৃশ্যমান বস্তুই একমাত্র বাস্তবতা; চিন্তা, ইচ্ছা, অনুভূতির মতো বিষয়গুলোর ব্যাখ্যা শুধু বস্তু এবং বস্তুর নিয়ন্ত্রক প্রাকৃতিক নিয়ম দিয়েইঅনুযায়ী প্রদান করতে হবে ব্যাখ্যা করা সম্ভব। বিখ্যাত বিজ্ঞানী ফ্রান্সিস ক্রিক (জেনেটিক আনবিক কোডের সহ-আবিস্কারক) এই বিষয়টিকে সুন্দরভাবে বলেছেন এইভাবে– ‘আপনি, আপনার আনন্দ ও বেদনা, আপনার স্মৃতি ও আকাঙ্ক্ষা, আপনার সত্তা নিয়ে অনুভূতি ও স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি- সব অসংখ্য স্নায়ুকোষের বিশাল সমাবেশ ও তৎসংশ্লিষ্ট অণুগুলোর কর্মযজ্ঞ ছাড়া আর কিছু নয়। লুলাউইস ক্যারোলের এলিস হয়তো এভাবে বলতো, ‘তুমি একটি স্নায়ুকোষের প্যাকেট ছাড়া কিছুই নও’। এই ডিডেটারমিনিস্ট দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী আপনার নিজ এবং চারপাশের জগৎ সম্পর্কে আপনার যে চেতনা, তা নিউরনের কার্যক্রমের ফল বা এপিফেনোমেনোন নিউরনের ওপর যার আপনার চেতনার নিজস্ব কোনো স্বাধীন নিয়ন্ত্রণ শক্তি বা ভূমিকা নেই।

    এটি কি প্রমাণিত কোনো বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব? আমি সরলভাবে বলব, এইআমার সরল উত্তর হলো, ডেডিটারমিনিস্ট ম্যাটেরিয়ালিস্টষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি এক ধরনের ‘বিশ্বাস ব্যবস্থা’রীতি’; এটি কোনো বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব নয়, যা সরাসরি পরীক্ষা করে প্রমাণ করা গেছে। এটি সত্য যে, নতুন নতুন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কাস্কারগুলো মস্তিস্কের সুনির্দিষ্ট গঠন এবং কার্যক্রম কীভাবে মানসিক সক্ষমতা ও পারসোনালিটি ব্যক্তিত্ব বাড়ায়, সেই বিষয়ে দিনে দিনে শক্ত প্রমাণ জড়ো করছে। [OM9] তবুও আধ্যাত্মিকতা, সৃজনশীলতা, সচেতন ইচ্ছা ও কল্পনাশক্তি জাতীয় অনুভূতি সংক্রান্ত যে ব্যক্তিক চেতনা তার অবস্তুগত প্রকৃতিকে কোনো সরাসরি শুধু বস্তুগত প্রমাণ দিয়ে ব্যাখ্যা বা বর্ণনা করা আসলেই যায় সম্ভব নয়া। 

    তথ্যসূত্র :

    [1] Benjamin Libet, Mind Time: The Temporal Factors in Consciousness; page: 3

    [3] Colin Patterson, ‘Cladistics’, Brian Leek ile Röportaj, Peter Franz, 4 Mart 1982, BBC;

    Lee M. Spetner, Not By Chance, Shattering the Modern Theory of Evolution, The Judaica Press Inc., 1997, s. 175 Retrieved

    আরো দেখুন :

    Divine Action and Natural Selection: Science, Faith, and Evolution bBy Joseph Seckbach

    https://is.gd/XjVuTf

    The Modern Creation Trilogy bBy Henry Madison Morris, John David Morris

    https://is.gd/LT7yrC

    [4] Stephen J. Gould, Evolution’s Erratic Pace, Natural History, Vol. 86, No. 5, May 1977, p. 14 [Emphasis added]

    [5]  Niles Eldredge, Reinventing Darwin: The Great Evolutionary Debate, [1995], phoenix: London, 1996, p. 9; Retrieved from: http://www.living-fossils.com/2_1.php

    [6]  http://textbookofbacteriology.net/growth_3.html

    [7]  http://myxo.css.msu.edu/ecoli/overview.html

    [8] William A. Dembski, Jonathan Wells, The Design in Life, Page: 44   

    [9] Gordon Rattray Taylor, The Great Evolution Mystery, Sphere Books Ltd., 1984, s. 4

    [10] Nicholas Comninellis, Creative Defense, Evidence Against Evolution, Master Books, 2001, s. 81

    [11]  আর্কিব্যাকটেরিয়া থেকে আর্কিঁয়া: বিবর্তনবাদীদের অস্বস্তি– ডা. আব্দুল্লাহ সাঈদ খান (সদালাপ ব্লগ)

    https://is.gd/GPdBeG

    [12] Stephen C. Meyer, Signature in The Cell;

    [13] পাভেল আহমেদ, বিবর্তনবাদ ও তার সমস্যা– ৭ : সম্ভাবনার অসম্ভাব্যতা ২ বিবর্তনবাদ ও তার সমস্যা– ৮ : সম্ভাবনার অসম্ভাব্যতা ৩ (ছক্কা বনাম প্রোটিন) (সদালাপ ব্লগ)

    https://is.gd/I1GLcE[15] Benjamin Libet, Mind Time: The Temporal Factors in Consciousness; page: 4,5 [Emphasis added]


    [1] প্রকৃতিতে চারটি মৌলিক শক্তি কার্যরত রয়েছে। যথা: শক্তিশালী পারমাণবিক শক্তি, তড়িৎ চৌম্বকীয় শক্তি, দুর্বল পারমাণবিক শক্তি, মহাকর্ষ বল। এগুলো সামান্যতম কম-বেশি হলেও এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি হত না। তাই এগুলো কোথা এলো এবং কেন ঠিক এমন অনুপাতেই হলো যা দ্বারা মহাবিশ্ব রূপ পেল সেটা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আরো জানতে দেখুন অ্যান আপিল টু কমনসেন্স’, জবাব-১, সমকালীন প্রকাশন।— সম্পাদক

    [2] এখানে শুধু প্রাকৃতিক বিজ্ঞান ব্যবহার করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা বোঝানো হচ্ছে। কারণ আলোচ্য শক্তিগুলো আল্লাহর পক্ষ থেকে সৃষ্টি দেখাতে হলে আগে আল্লাহর অস্তিত্ব থাকা আবশ্যক। কিন্তু এটা যাচাই করার মাধ্যম বিজ্ঞান নয়কারণ বিজ্ঞান পদ্ধতিগত প্রকৃতিবাদের দর্শনের উপর দাঁড়ানো। অর্থাৎ বস্তুজগতের ভিতরে তার ব্যাখ্যা সীমাবদ্ধ। এর বাইরের কোনোকিছু তার ক্ষেত্রের মধ্যে পড়ে না। বিজ্ঞান সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স থেকে জানা যায়, ‘বিজ্ঞান হলো প্রাকৃতিক জগৎ সম্পর্কে জ্ঞানার্জনের একটি উপায়। প্রাকৃতিক জগৎ সম্পর্কে জাগতিক ব্যাখ্যা প্রদানেই এটি সীমাবদ্ধ। অতিপ্রাকৃত কিছু আছে কি না, সে বিষয়ে বিজ্ঞান কিছুই বলতে পারে না। স্রষ্টা আছে কি নেই, এ প্রশ্নের ব্যাপারে বিজ্ঞান নীরব। আল্লাহর অস্তিত্ব যেহেতু বস্তুগত জগতের বাইরের বিষয় তাই এ ব্যাপারে বিজ্ঞানের পরীক্ষা-নিরীক্ষা কোনো মাধ্যম হিসেবে বিজ্ঞান নিজেই গণ্য করে না। তাই আস্তিক্যবাদ বা নাস্তিক্যবাদ কোনোটির পক্ষেই বিজ্ঞান রায় দেবে না। তাই কখনোই বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার দ্বারা আল্লাহর অস্তিত্ব বা অনস্তিত্ব প্রমাণ করা যাবে না। এরকম দাবিও অমূলক আলোচ্য ফোর্সগুলো মুসলিমদের জন্য যেহেতু আল্লাহর অস্তিত্বের উপর নির্ভরশীল, তাই তারা স্বাভাবিকভাবেই বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষাকে মানদণ্ড মনে করেনি।  কিন্তু এর বিপরীতে নাস্তিক্যবাদীদের অধিকাংশই নিজেদের বিশ্বাসের ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষাকে মানদণ্ড জ্ঞান করে  যা একেবারেই অমূলক; বিস্তারিত জানতে দেখুন- ‘বিজ্ঞান ও বিশ্বাস-যা আমাদের অজানা’, জবাব-১ সম্পাদক

    [3] সুরা আল-বাকারা, আয়াত : ২-৩

    [4] ব্যাকটেরিয়ার নির্দিষ্ট একটি কলোনি যে সময়ে সংখ্যায় দ্বিগুণ হয়ে যায়, তাকে বলে জেনারেশন টাইম।


     [OM1]বক্তব্য আরেকটু ভালোভাবে উপস্থাপন করা যায় কিনা?

     [OM2]ডিটারমিনিস্ট ম্যাটেরিয়ালিস্ট মতবাদের সংক্ষিপ্ত সংজ্ঞা টীকাকারে যুক্ত করতে হবে।

    বক্তব্য  [OM3]স্পষ্ট নয়। অনুবাদ আরো সাবলীল হলে ভালো হয়।

     [OM4]সংখ্যাটা সম্ভবত ঠিক নেই। পুনরায় যাচাই করতে হবে। 

     [OM5]বিগব্যাং থেকে এখন পর্যন্ত কীভাবে মাত্র ১০১৬ সেকেণ্ড পার হয়?

     [OM6] [OM6] [OM6]সংখ্যাটা সম্ভবত ঠিক নেই। পুনরায় যাচাই করতে হবে। 

     [OM7] [OM7] [OM7]সংখ্যাটা সম্ভবত ঠিক নেই। পুনরায় যাচাই করতে হবে। 

     [OM8]প্রেক্ষাপট না থাকায় বোঝা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রেক্ষাপট থাকলে বোঝা সহজ হত।

     [OM9]বক্তব্য স্পষ্ট নয়, অনুবাদেও অসম্পূর্ণতা আছে সম্ভবত।

  • অ্যান্টিডট-এর মন্তব্য

    তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্র অনুযায়ী পদার্থের এনট্রপি বাড়ে। লোহা ফেলে রাখলে ধীরে ধীরে মরিচা পড়ে ক্ষয় হতে থাকে।  ফেলে রাখলে স্রষ্টায় বিশ্বাসেও মরিচা পড়ে। অযুক্তি, কুযুক্তি এসে ক্ষত সৃষ্টি করে। মরিচা পড়া লোহা ঘষে মেজে পরিষ্কার করতে হয়। সন্দেহযুক্ত ঈমানও ঘষামাজা করলে দৃঢ় হয়। 

    সন্দেহ-সংশয় আত্মাকে অন্ধকারের কড়াল গ্রাসে বন্দি করতে চায়। কিন্তু, যার আত্মা নিভু নিভু হয়েও জ্বলছে তাকে কখনও বিভ্রান্ত করা যায় না। অন্ধকার কখনও আলোকে ঢেকে রাখতে পারে না। বরং, সামান্য প্রদীপের আলোই দূর করতে পারে বিস্তৃত আধার। আর, যখন একসাথে অনেকগুলো প্রদীপ জ্বলে উঠে?

    গতবছরটি ছিলো বিশ্বাসীদের জ্বলে উঠার বছর। তরুণ লেখক আশরাফুল আলম সাকিফ তেমনই এক প্রজ্জ্বলিত অগ্নি।  

    বিষাক্ত পদার্থ যখন শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়ে, অ্যান্টিডোট দিয়ে প্রশমিত করতে হয়। তাই চিকিৎসাবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী আশরাফুল আলম নিয়ে এসেছেন বিশ্বাসীদের ধমনীতে ছড়িয়ে পড়া অবিশ্বাসের অ্যান্টিডোট।

    বিবর্তন, মানবভ্রুন সম্পর্কিত কোরআনের ইঙ্গিত, মহামারীর ইসলামী সমাধান ইত্যাদি বৈচিত্রপূর্ণ বিষয়ে লেখক অনেক তথ্যপূর্ণ বিশ্লেষণ লিপিবদ্ধ করেছেন ফাতিমার জবানবন্দিতে। এই অ্যান্টিডোট হোক অসংখ্য অসুস্থ আত্মার সুস্থতার অন্যতম বাহন। এই প্রত্যাশায়…

    মো: আবদুল্লাহ সাঈদ খান
    চিকিৎসক

  • ধর্ম, দর্শন ও বিজ্ঞান (১)

    ‘God of the gaps’ ফ্যালাসী হল বিজ্ঞানের অমিমাংসিত প্রশ্নগুলোতে স্রষ্টার দোহাই দিয়ে চুপ থাকা।

    আপেলটা কেন মাটিতে পড়ল এই প্রশ্নটি নিয়ে চিন্তা করতে আপনি যদি এই বলে থেমে যান যে, আল্লাহর হুকুমে পড়েছে, তাহলে কিন্তু এই প্রশ্নটির উত্তর আর এগুবে না। এ কারণেই বিজ্ঞানের জগতে ‘Methodological naturalism’ অনুসরণ করা হয়। অর্থাৎ, যে কোন প্রাকৃতিক ঘটনার ব্যাখ্যা প্রাকৃতিক নিয়ম দিয়ে করতে হবে এ ধরনের একটি অঘোষিত নিয়ম বিজ্ঞানের জগতে মেনে চলা হয়।

    তবে তার মানে এই না যে, বিজ্ঞান একটা ঘটনাকে প্রাকৃতিক নিয়ম দিয়ে ব্যাখ্যা করতে পারলে সে স্রষ্টার অস্তিত্বকে অস্বীকার করলো।

    কারণ, বিজ্ঞানের শুরু হয় প্রশ্ন থেকে এবং প্রথম দিককার অধিকাংশ বিজ্ঞানীই তাদের অনুসন্ধানের পিছনে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে বলেছেন বা স্বীকার করেছেন যে স্রষ্টা কোন নিয়মে পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন সে বিষয়টিই অনুসন্ধান করার উদ্দেশ্যেই তাদের গবেষণা।

    বিষয়টি একটি উদাহরণ দিয়ে বুঝাই। ধরুন পৃথিবীতে কিভাবে এত প্রজাতি আসল সেটা নিয়ে আপনি চিন্তা করছেন। এখন আপনি যদি বলেন যে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন তা-ই এসেছে তাহলে কিন্তু ঠিক ব্যাখ্যাটা এসে থেমে যাবে। প্রশ্নটি যদি আপনি একটু প্যারাফ্রেজ করে এভাবে চিন্তা করেন যে, কোন নিয়মে আল্লাহ বিভিন্ন প্রজাতি তৈরী করে থাকতে পারেন? তখন উত্তরে যদি আপনাকে উপযুক্ত প্রমাণ সহকারে দেখানো হয় প্রথম কোষগুলোর মধ্যেই ভ্যারিয়েশন সৃষ্টি ও প্রাকৃতিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় উক্ত ভ্যারিয়েশনের সিলেকশনের মাধ্যমে বিবর্তিত হয়ে বিভিন্ন প্রজাতি তৈরী হওয়ার পদ্ধতি দেয়া ছিলো, তাহলে বরং স্রষ্টা সৃষ্টিকুশলতা দেখে আপনার বিশ্বাস আরও দৃঢ় হবে।

    ইন ফ্যাক্ট এই প্রেক্ষিতে আপনি যদি নিওডারউইনিজম প্রদত্ত পদ্ধতিতে আনস্যাটিসফাইড থাকেন তখন আপনি ‘বিশ্বাসী’ হয়েও বিকল্প হিসেবে অন্য কোন প্রাকৃতিক ব্যাখ্যা দাড় করাতে চেষ্টা করবেন। অর্থাৎ, তখন আপনি যদি নব্য-ডারউইনবাদের সমালোচনা করেন আপনার লক্ষ্য থাকবে নব্য-ডারউইনবাদের ‘পদ্ধতির’ সমালোচনা করে ‘বিকল্প’ প্রাকৃতিক পদ্ধতি উপস্থাপন করার চেষ্টা করা। সেক্ষেত্রে স্রষ্টার অস্তিত্ব ভুল প্রমানিত হয়ে যাবে না।

    তাহলে, বিশ্বাসীদের মধ্যে বিজ্ঞানের ভিতর স্রষ্টাকে খুজার এই প্রবণতা আসলো কোথা থেকে? এর একটা অংশ এসেছে মিলিট্যান্ট নাস্তিক ও বিজ্ঞানবাদীতার অনুসারী কতৃক বিজ্ঞানকে নাস্তিকতার পক্ষে প্রমাণ হিসেবে প্রচারণার প্রতিক্রিয়াস্বরূপ।

    যেমন: ডকিন্স বলছেন:

    “Although atheism might have been logically tenable before Darwin, Darwin made it possible to be an intellectually fulfilled atheist” (১)

    অর্থাৎ, ডকিন্স বিজ্ঞানকে পরোক্ষভাবে নাস্তিকতার পক্ষে প্রমাণ হিসেবে প্রচার করছেন। অথচ, উপরে আমরা দেখেছি যে বিবর্তনবাদ প্রমানিত হলেও স্রষ্টা অপ্রমানিত হয়ে যায় না।

    বিখ্যাত নাস্তিক জীবাশ্মবিদ স্টিফেন জে গোল্ড ধর্ম ও বিজ্ঞানকে বলছেন ‘Non Overlapping Magisteria (NOMA)’ (২). অর্থাৎ বিজ্ঞান ও ধর্মের গবেষণা, পড়াশোনা ও প্রয়োগের ক্ষেত্র আলাদা।

    কিন্তু, ডকিন্স, হ্যারিস, ডেনেট, হিচেন্সরা এমন একদল তরুন তৈরী করেছে যারা বিজ্ঞানবাদীতার অনুসারী। এদের মতে ধর্মের নিয়মনীতির জায়গাটুকুও (যেমন: মোরালিটি, অ্যারিস্টটালিয়ান ফাইনাল কজ সম্পর্কে প্রশ্ন ) বিজ্ঞান নির্ধারণ করে দিবে। যার মাধ্যমে সূক্ষ্ন ভাবে বিজ্ঞানীদের প্রতি এক ধরনের ঘৃণা বিশ্বাসীদের মন মগজে ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে।

    এছাড়াও, অন্যান্য অনেক নাস্তিক বিজ্ঞানীও তাদের বৈজ্ঞানিক গবেষণা তথা Methodological naturalism-এর সাথে তাদের বিশ্বাস তথা Philosophical naturalism-কে জুড়ে দিচ্ছে।

    অধিকাংশ বিশ্বাসীর ফিলোসফিকাল ডিসকোর্সের এই জটিল নিয়মাবলী (অর্থাৎ অ্যারিস্টটালিয়ান কজোলজীর ম্যাটেরিয়াল, ফর্মাল, ইফিসিয়েন্ট ও ফাইনাল কজ) সম্পর্কে মাথা ঘামানো সময় নেই বিধায় তাদেরকে ডকিন্স এণ্ড গং রা সহজেই ধোকায় ফেলতে পারছে।

    আস্তিকদের জানা দরকার যে, উক্ত ফাইনাল কজ অর্থাৎ ‘সবকিছুর সর্বশেষ কারণ কে?’ এই প্রশ্নের উত্তর আমাদেরকে দুটো বিভাগ দেয়: দর্শন ও ধর্ম।

    তবে দর্শন আপনাকে ফাইনাল কজ হিসেবে স্রষ্টার অস্তিত্বের নেসেসিটি, তার বৈশিষ্ট্য, ক্ষমতা, গুন সম্পর্কে ধারণা দিবে এবং ধর্ম আপনার উক্ত ধারণাকে তথা স্রষ্টার অস্তিত্বকে কনফার্ম করবে এবং স্রষ্টা আপনাকে কি উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন এবং কি করলে তার সন্তুষ্টি অর্জন করা যাবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত নিয়মাবলী জানাবে।

    সুতরাং বিশ্বাসীদের একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল বিজ্ঞানবাদীতা (Scientism)-এর আবরণ থেকে বিজ্ঞানকে উন্মুক্ত করে উপস্থাপন করা এবং দেখানো যে বিজ্ঞান আসলে নাস্তিক দর্শনের এনডর্সমেন্ট দেয় না।

    তবে একটা প্রশ্ন থেকে যায়, আল্লাহ কোরআনে যে বার বার বলেছেন সৃষ্টিতে তার নিদর্শন আছে। তাহলে সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করলে কি আমরা তার নিদর্শন পাবো না? আমার মনে হয়, বিজ্ঞানের মধ্য দিয়ে স্রষ্টাকে খুজার প্রবণতা তৈরী হওয়ার এটিও একটি কারণ।

    এবং, আমি মনে করি স্রষ্টার সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করলে তার নিদর্শন পাওয়া যায়। যেমন: মহাবিশ্বের ফাইন টিউনিং, বায়োলজিকাল বিইং-এর ডিজাইন ইনফারেন্স ও হিউম্যান ইনটেলেক্ট-এর ইউনিক ফিচারস থেকে স্রষ্টার অস্তিত্বের পক্ষে অ্যাবডাকটিভ বা ইনডাক্টিভ ইনফারেন্স আনা যায়।

    অর্থাৎ সায়েন্টিফিক ইনভেস্টিগেশন চূড়ান্ত পর্যায়ে দর্শনের দিকে স্বত:স্ফূর্তভাবেই নিয়ে যায়।


    রেফারেন্স:
    ১. Dawkins, Richard. 1986. The Blind Watchmaker. New York: Norton, p 6.
    ২. Stephen Jay Gould, “Non overlapping Magisteria”. Accessed 15 March 2018; Retrieved

  • নাস্তিক বিজ্ঞানীরা কি বিশ্বাসের বিপক্ষে বা অবিশ্বাসের পক্ষে যুক্তির কারণে নাস্তিক হয়? (একটি পোস্ট ও কথোপকথন)

    মূল পোস্ট:

    যুক্তি ও বিপরীত যুক্তি সমান্তরালে চলে। মেডিকেলে পড়ার সময় আমার একজন সহপাঠীর সঙ্গে একদিন ক্লাস শেষে ফেরার পথে এ বিষয়ে কথা হচ্ছিল। সে একটি সুন্দর উপমা দিয়েছিলো যে যুক্তি ও বিপরীত যুক্তির উদাহরণ হচ্ছে রেললাইনের মত, সমান্তরালে চলে।

    তবে, যুক্তিবিদ্যা সম্পর্কে পড়াশোনা থাকলে যুক্তি থেকে অ-যুক্তি ও কু-যুক্তি (logical fallacy) পার্থক্য করা যায়। অনেকে যুক্তিবিদ্যা নিয়ে সিস্টেম্যাটিক্যালী না পড়েও যথেষ্ঠ যুক্তিবোধ রাখেন। মানুষভেদে উক্ত যুক্তিবোধের একটা রেঞ্জ পাওয়া যায়।

    এতদিন বাংলায় অবিশ্বাসীদের যুক্তিচর্চার ক্ষেত্র ছিল তুলনামূলক শূন্য। সে সুযোগে তারা বিশ্বাসের বিপক্ষে পশ্চিমাদের যুক্তি, অযুক্তি ও কুযুক্তিকে বিভিন্ন মোড়কে উপস্থাপন করেছেন। ফলে বিশ্বাসীদের পক্ষেও যে যুক্তির সম্ভার আছে তা অনুপস্থাপিত থেকে গেছে বহুদিন।

    এরপর নাস্তিকদের ব্লগস্ফেয়ারেই মুসলিম ব্লগাররা বিশ্বাসের পক্ষের যুক্তি নিয়ে লিখালিখি করেছেন। এক সময় আলোচনা-সমালোচনা সীমাবদ্ধ ছিল অল্পকিছু মানুষের মধ্যে । ২০১৩ সালে পর বিভিন্ন কারণে উক্ত আলোচনা দ্রুত ছড়িয়ে পড়লো সবার মাঝে।

    কিন্তু, সবার যুক্তিবোধ সমান নয়, আবার যুক্তি তর্কের ক্যাচক্যাচানি সবার ভালও লাগে না। এ কারণে গল্পের আকারে নাস্তিকদের যুক্তির খণ্ডন বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এই জনপ্রিয়তার মধ্য দিয়ে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, আমাদের ওয়ায়েজীনদের একটি বড় অংশ যখন জনসাধারনের মধ্যে সুরে-বেসুরে ইসলামের শিক্ষার রিমাইণ্ডার দিতে ব্যস্ত, তখন আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত তরুন মুসলিমদের একটি বড় অংশ আমলতো দূরের কথা বিশ্বাসের দিক দিয়েই সংশয়াপন্ন হয়ে গেছে। না হলে ‘প্রেম-রস-কাহিনী-উপাখ্যান’ বিহীন যুক্তি-তর্কের গল্পের বই এত জনপ্রিয় হয় কিভাবে?

    যাই হোক মূল কথায় আসি। বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসী দুই পক্ষেরই যুক্তির অভাব নেই। এমনকি এ সংক্রান্ত পড়ালেখা করতে করতে একজনের জীবন পার করে দেয়া সম্ভব। ফলে, অধিকাংশই বিশ্বাসীদের পক্ষে বিপক্ষের যুক্তি নিয়ে গভীর পড়ার সময় বা যোগ্যতা রাখেন না। ফলে, তারা তাদের পারিবরিক বিশ্বাস বা পারিপার্শ্বিক অর্থডোক্স (প্রচলিত) বিশ্বাসের উপর আস্থা রাখেন অথবা এগনস্টিক অবস্থান নিয়ে নিজের কাজ চালিয়ে যান। এমনকি বিজ্ঞানী ও দার্শনিকদের ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য।

    ২০১৩ সালে David Bourget এবং David J. Chalmers একটি গবেষণা প্রকাশ করেন(1)। যার শিরোনাম ছিলো ‘দার্শনিকরা কি বিশ্বাস করেন?” (What Do Philosophers Believe?) উক্ত গবেষণায় তারা দর্শনের বিভিন্ন শাখার দার্শনিকদের কাছে দর্শনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করেন। এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূণ প্রশ্ন ছিল – স্রষ্টায় বিশ্বাস নিয়ে। তাদের গবেষণায় বেরিয়ে আসে যে যারা ‘ধর্মের দর্শন’ (Philosophy of Religion)-এ এক্সপার্ট তাদের মধ্যে মাত্র ২০.৮৭% অবিশ্বাসী এবং ৭৯.১৩% শতাংশ বিশ্বাসী। অন্যদিকে যারা ধর্মের দর্শন বিষয়ে এক্সপার্ট না (অর্থাৎ অন্যান্য দর্শন বিষয়ে এক্সপার্ট) তাদের মধ্যে ৮৬.৭৮% অবিশ্বাসী এবং ১৩.২২% বিশ্বাসী। অর্থাৎ, বলা যায় একজন দার্শনিকের স্রষ্টায় বিশ্বাসের যুক্তি গুলো নিয়ে গভীরভাবে পড়ালেখা করলে বিশ্বাসী হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় চারগুন বেশী।

    কিন্তু, বিজ্ঞানের প্রতিটি শাখার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জ্ঞানের ব্যপ্তি এখন এত বেশী যে উক্ত যে কোন একটি বিষয় নিয়ে একজন গবেষকের জীবনের অধিকাংশ সময় পার করে দিতে হয় বা দিতে পারেন। ফলে, বিশ্বাসের দিক দিয়ে তার অবস্থান বিশ্বাস-অবিশ্বাসের যুক্তি নিয়ে পড়ালেখার উপর নির্ভর করে না বরং নির্ভর করে তার পারিবারিক বা সামাজিক ধর্মীয় শিক্ষা ও অবস্থা, পারিপার্শ্বিক পরিবেশ, একাডেমিক স্থানে সুবিধাজন পজিশনের থাকার প্রবণতা প্রভৃতি বিষয়ের উপর।

    Ecklund এবং Scheitle যুক্তরাস্ট্রের ২১টি এলিট রিসার্চ ইউনিভার্সিটির বিভিন্ন বিজ্ঞানীদের উপর গবেষণা করে দেখেছেন বিভিন্ন শাখার বিজ্ঞানীদের ধার্মিক হওয়ার বিষয়টি তাদের নিজেদের ফিল্ড-এর এক্সপারটিজ-এর উপর নির্ভর করে না বরং নির্ভর করে তাদের বয়স, বৈবাহিক অবস্থা, সন্তান থাকা বা না থাকা, সে নিজে ছোট থাকাকালীন তার পরিবারের ধর্মীয় অবস্থা ইত্যাদির উপর(2)।

    তারা আরও দেখিয়েছেন যে খুব কম বিজ্ঞানীই মনে করেন যে বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে বিবাদ আছে(3)। কিন্তু, নাস্তিকরা, বিশেষ করে নব্য-নাস্তিক (Neo-Atheist)-দের সঙ্গে কথা বললে মনে হয় যেন বিজ্ঞানীরা তাদের যুক্তিবোধের কারণে নাস্তিক হয়ে যায়। অথচ, উপরে আমরা দেখলাম বিশ্বাসের যুক্তি নিয়ে গভীরভাবে পড়লে বিশ্বাসী হবার সম্ভাবনা প্রায় চারগুন বেশী এবং বিজ্ঞানীদের মধ্যে অধিকাংশই শুধু যুক্তির কারণে নিধার্মিক বা নাস্তিক হয় না।

    রেফারেন্স:

    1. Bourget D, Chalmers DJ. Bourget, Chalmers, What Do Philosophers Believe. Philos Stud. 2014;130(3):465–500.

    2. Ecklund EH, Scheitle CP. Religion among Academic Scientists: Distinctions, Disciplines, and Demographics. Soc Probl. 2007;54(2):289–307.

    3. Ecklund EH, Park JZ, Sorrell KL. Scientists Negotiate Boundaries Between Religion and Science. J Sci Study Relig. 2011;50(3):552–69.

    কথোপকথন

    মাজিদুল মুলহিদ-এর পোস্টের প্রেক্ষিতে বলেন:

    আপনি প্রধানত দুটি পয়েন্ট তুলে ধরেছেন, উভয় নিয়েই আলোচনা করছি।

    ১. দর্শনের অন্যান্য ক্ষেত্রের তুলনায় ধর্মের দর্শনে বিশ্বাসীর সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে আপনি বলেছেন –

    “বলা যায় একজন দার্শনিকের স্রষ্টায় বিশ্বাসের যুক্তি গুলো নিয়ে গভীরভাবে পড়ালেখা করলে বিশ্বাসী হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় চারগুন বেশী।”

    এটিই কিন্তু একমাত্র হাইপোথিসিস নয়, এর আরও এক কারণ হতে পারে, সেটি হল –

    “ধার্মিক বা আস্তিক হওয়ার কারণেই তারা ধর্মের দর্শন নিয়ে পড়ার সিধান্ত নিয়েছে এবং পূর্বধারণার (prejudice) কারণেই সে আস্তিক থাকে।”

    কোন হাইপোথিসিস সঠিক?

    এই গবেষণায় এই সিধান্তে আসার মতো পর্যাপ্ত পরিমাণে তথ্য নেই। তাই আমরা Helen De Cruz-এর একটি গবেষণার [১] উপর নির্ভর করব। এই গবেষণায় দেখা যাচ্ছে ধর্মের দর্শন বিষয়ে স্পেশালাইজেশন করার প্রধান উদ্দেশ্য হল – Faith seeking understanding অর্থাৎ, এটা তাদের বিশ্বাসকে গভীর করতে সাহায্য করে। দ্বিতীয় উদ্দেশ্য হল – Proselytism and witness, অনেকেই অন্য মানুষদের নিজ ধর্মে দীক্ষিত করানোর উদ্দেশ্যে এই বিষয়ে স্পেশালাইজেশন করে।

    এছাড়া, আরও দেখা যায় যে এই ধর্মের দর্শন বিষয়ে পড়ার ফলে যতজন আস্তিক থেকে নাস্তিক হয় (৮.১%), তার তুলনায় নাস্তিক থেকে আস্তিক (১১.৮%) হওয়ার সংখ্যাও ৩.৭% বেশি।

    এর ফলে দেখা যাচ্ছে আপনার হাইপোথিসিসটি ভুল বরং বেশিরভাগ ধর্মের দার্শনিকগণ আগে থেকেই ধার্মিক বা আস্তিক হওয়ার কারণেই ধর্মের দর্শন নিয়ে পড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে।

    ২. আপনার দ্বিতীয় দাবি হল –

    “খুব কম বিজ্ঞানীই মনে করেন যে বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে বিবাদ আছে।”

    এর প্রমাণ হিসেবে যেই আর্টিকেলটি দিয়েছেন সেখানে এমন কিছু লেখা নেই, সেখানে যা লেখা আছে সম্ভবত সেটি আপনি ভুল বুঝেছেন।

    “only a minority of scientists see religion and science as always in conflict”- সম্ভবত এই বাক্যটি পড়ে আপনি এমন ধারনা করেছেন। ভালো করে দেখুন, এখানে ‘ always’ শব্দটি ব্যাবহার করা হয়েছে, অর্থাৎ এর বাংলা করলে দাঁড়ায়, “মাত্র স্বল্পসংখ্যক বিজ্ঞানী ধর্ম ও বিজ্ঞানের মধ্যে সর্বদাই বিরোধ দেখতে পান।”

    এই গবেষণায় পাওয়া যায়, সাবজেক্টদের মধ্যে ১৫% বিজ্ঞানী মনে করে বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে সবসময় সংঘাত আছে, ১৫% বিজ্ঞানী মনে করে বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে কোনো সংঘাত নেই এবং ৭০% বিজ্ঞানী মনে করে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ধর্ম ও বিজ্ঞানের সংঘাত আছে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে মোট ৮৫% বিজ্ঞানী মনে করে ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের বিরোধ আছে। এবং এটাই যুক্তিযুক্ত অবস্থান, ধর্মে কাকতালীয়ভাবে কিছু জিনিস থাকতেই পারে যা বিজ্ঞানের সাথে সাংঘর্ষিক নয়। তাই বলে ধর্মের সব জিনিস বিজ্ঞানসম্মত তা তো নয়। যেমন বিবর্তনবাদ, এটা সম্পূর্ণরূপে ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক। আবার কুরআনে বলা আছে প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে, এটা আবার বিজ্ঞানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। কিন্তু, ধর্মগ্রন্থে একটি ভুল ধরা পড়লেই সেই গ্রন্থের ডিভাইন অরিজিন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে ওঠে।

    আরও একটা পয়েন্ট হল, এখানে বিজ্ঞানীরা ধর্ম বলতে নির্দিষ্ট কোনো ধর্ম নেয়নি, অনেকেই আধ্যাত্মিকতাকেও ধর্ম ধরেছেন। বিজ্ঞানের কাজ ন্যাচারাল ওয়ার্ল্ড নিয়ে কাজ করা, তাই বিজ্ঞান আধ্যাত্মিকতা বিষয়ে কিছু বলতে পারেনা। কিন্তু, বিজ্ঞান ঠিকই বেদ, বাইবেল, গীতা, কুরআনের মধ্যে অনেক ভুল দেখাতে সক্ষম।

    সুতরাং দেখা যাচ্ছে, আপনি প্রথম গবেষণার ক্ষেত্রে ভুল হাইপোথিসিস দাঁড় করিয়েছেন এবং দ্বিতীয় গবেষণার ব্যাপারে শুধুমাত্র সারাংশ পড়ে ভুল বুঝেছেন।

    বিজ্ঞানীদের ক্ষেত্রে কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করা কঠিন, তা জানতে এই ভিডিওটি দেখতে পারেন –

    ===========================

    রেফারেন্সঃ

    [১] My qualitative study of religious attitudes and motivations of philosophers of religion

    আমার উত্তর:

    আপনি আমার বক্তব্য থেকে দুটি পয়েন্ট নিয়ে কথা বলেছেন। কিন্তু, এর বাইরেও একটি পয়েন্টে আমি কথা বলেছি। তা হল- নাস্তিক বিজ্ঞানীদের নাস্তিক হওয়া তাদের বয়স, বৈবাহিক অবস্থা, সন্তান থাকা বা না থাকা, সে নিজে ছোট থাকাকালীন তার পরিবারের ধর্মীয় অবস্থা ইত্যাদির উপর নির্ভর করে।

    এবার আসুন অন্য দুটো পয়েন্ট নিয়ে কথা বলা যাক। আমি বলেছি “একজন দার্শনিকের স্রষ্টায় বিশ্বাসের যুক্তি গুলো নিয়ে গভীরভাবে পড়ালেখা করলে বিশ্বাসী হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় চারগুন বেশী”। এটা বলেছি মূলত মূল পোস্টের ১নং রেফারেন্স-এর পরিসংখ্যান এর আলোকে।

    আপনার আলোচনার প্রেক্ষিতে আমি Helen De Cruz-এর ২০১৮ সালের প্রকাশিত মূল আর্টিকেলটা পড়ে দেখলাম(1)। সে প্রেক্ষিতে আমি আমার হিসেবটি রিভাইজ করতে চাই। লক্ষনীয় আমার হাইপোথিসিস-এর আলোকে একজন দার্শনিক ফিলোসফি অব রিলিজিওন নিয়ে পড়ার আগে নাস্তিকও হয়ে থাকতে পারেন এবং আস্তিকও হয়ে থাকতে পারেন। আবার ডি ক্রজের আর্টিকেল থেকে দেখা যায় তার গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ৮৫ জন আস্তিক ফিলোসফার এর মধ্যে ১১ জন পূর্বে নাস্তিক বা এগনস্টিক ছিল, ৩৩ জন নাস্তিক বা এগনস্টিক দার্শনিকের (২৫ জন নাস্তিক ও ৮ জন এগনস্টিক)-এর মধ্যে ১২ বিশ্বাসী ছিল। আমরা ম্যাকনেমার টেস্ট করলে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সংখ্যার মধ্যে স্ট্যাটিসটিক্যাল সিমিলারিটি দেখতে পাই (p=1.000)। (লক্ষ্যনীয় আর্টিকেলের এই জায়গায় ডি ক্রজ একটা ভুল করেছেন। এখানে ফিসারস এক্সাক্ট টেস্টে হবে না হবে ম্যাকনেমার টেস্ট হবে। কারণ যখন কোন ডাইকোটোমাস ভ্যারিয়েবলকে রিপিটেড মিজার করা হয় তখন ম্যাকনেমার ব্যবহার করতে হয়।(2))। উপরোক্ত হিসেবে অনুযায়ী পূর্বে ৮৬ জন আস্তিক ছিল এবং ৩২ জন নাস্তিক/এগনস্টিক ছিল।

    আপনি একটি ভ্যালিড পয়েন্ট এনেছেন যে এখানে একজন ফিলোসফার অব রিলিজিওনের পূর্বের বিশ্বাসকেও আমলে নিতে হবে। সুতরাং আমরা ডি ক্রুজের ২০১৮ সালের আর্টিকেলের হিসেবেকে আমলে নিয়ে পাচ্ছি একজন দার্শনিকের ফিলোসফি অব রিলিজিওন বিভাগে ঢুকার পূর্বে আস্তিক থাকার সম্ভাবনা ৭২.৮৮% এবং নাস্তিক বা এগনস্টিক থাকার সম্ভাবনা ২৭.১১% এবং উক্ত ডিপার্টমেন্টে ঢুকার পরে আস্তিক হওয়ার সম্ভাবনা ৭২.০৩% এবং নাস্তিক বা এগনস্টিক হওয়ার সম্ভাবনা ২৭.৯৬%। এখন আমরা যদি পূর্ববর্তী বিশ্বাসকে আমলে নেয়ার জন্য বেইস থিওরেম এপ্লাই করি তাহলে দেখা যায় একজন দার্শনিকের ধর্মের দর্শনে এক্সপার্ট হওয়ার থিইস্ট হওয়ার সম্ভাবনা (Likelihood) ৬০.৩৮% এবং অবিশ্বাসী/এগনস্টিক হওয়ার সম্ভাবনা ৫০.৬৮%। অর্থাৎ পূববর্তী বিশ্বাসকে আমলে নিলেও একজন দার্শনিকের ধর্মের দর্শন পড়ে বিশ্বাসী হবার সম্ভাবনা প্রায় ৯.৭৩% বেশী। অর্থাৎ, আবার পূর্বের হিসেবের ৪ গুনের জায়গায় মূল হিসেব হবে ১.১৯ গুণ বেশী।  

    এছাড়া আপনি ডি ক্রুজের ব্লগ থেকে লিখেছেন- এই গবেষণায় দেখা যাচ্ছে ধর্মের দর্শন বিষয়ে স্পেশালাইজেশন করার প্রধান উদ্দেশ্য হল – Faith seeking understanding অর্থাৎ, এটা তাদের বিশ্বাসকে গভীর করতে সাহায্য করে। দ্বিতীয় উদ্দেশ্য হল – Proselytism and witness, অনেকেই অন্য মানুষদের নিজ ধর্মে দীক্ষিত করানোর উদ্দেশ্যে এই বিষয়ে স্পেশালাইজেশন করে।

    এই তথ্য পুরোপুরি সঠিক নয়, কারণ Proselytism and witness অন্তত দ্বিতীয় কারণ নয়। মূল কারণগুলো হল – রিলিজিয়াস আইডেনটিটি (৩৬%), দার্শনিক আগ্রহ (৩৩.১%), দর্শক সংক্রান্ত শিক্ষা থেকে আগ্রহ ২০.১%, সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক বা সামাজিকভাবে ইন্টারেস্টিং মনে করার কারণে ১৪.৪%, ছোটবেলার কোন অভিজ্ঞতার কারণে ১০.৮%, অন্যান্য ৭.৯% এবং  Proselytism and witness ৭.২%। এমনকি যারা রিলিজিয়াস আইডেনটিটি ক্লাসে আগ্রহী ছিল তাদের মধ্যে এই প্রবণতাও ছিল যে তারা তাদের বিশ্বাসকে যুক্তির আলোকে প্রশ্ন করে দেখতে চায়- “I am a catholic, and philosophy of religion helps me in deepening my faith by way of—paradoxically—putting the faith itself into question and even criticizing it. — male assistant professor, public university, Italy.”

    দ্বিতীয় পয়েন্টে বলি – আমি আর্টিকেলটা ভুল পড়ি নি এবং “খুব কম বিজ্ঞানীই মনে করেন যে বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে বিবাদ আছে”-এ কথাটা ভ্যালিড। কেন? বুঝিয়ে বলছি-

    আপনি লিখেছেন- “এই গবেষণায় পাওয়া যায়, সাবজেক্টদের মধ্যে ১৫% বিজ্ঞানী মনে করে বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে সবসময় সংঘাত আছে, ১৫% বিজ্ঞানী মনে করে বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে কোনো সংঘাত নেই এবং ৭০% বিজ্ঞানী মনে করে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ধর্ম ও বিজ্ঞানের সংঘাত আছে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে মোট ৮৫% বিজ্ঞানী মনে করে ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের বিরোধ আছে।“

    আপনার শেষের “৭০% বিজ্ঞানী মনে করে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ধর্ম ও বিজ্ঞানের সংঘাত আছে” থেকে “মোট ৮৫% বিজ্ঞানী মনে করে ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের বিরোধ আছে” কথাটা কিভাবে আসল পরিস্কার নয়। কারণ “৭০% বিজ্ঞানী মনে করে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ধর্ম ও বিজ্ঞানের সংঘাত আছে” এর অর্থ হল “৭০% বিজ্ঞানী মনে করে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই  ধর্ম ও বিজ্ঞানের সংঘাত নেই”। সুতরাং হিসেবটা হওয়ার কথা  “৮৫% বিজ্ঞানী মনে করে ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের নেই।“

    ইন ফ্যাক্ট উক্ত হিসেবের আলোকে স্বয়ং অথররাই বলেছেন যে “only a minority of scientists see religion and science as always in conflict”। এখানে মাইনরিটি হচ্ছে ১৫%।

    আমি অবশ্য স্বীকার করছি কথাটা এভাবে বললে ভাল হত “খুব কম বিজ্ঞানীই মনে করেন যে বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে সার্বক্ষনিক বিবাদ আছে।“

    রেফারেন্স:
    1.           De Cruz H. Religious Beliefs and Philosophical Views: A Qualitative Study. Res Philos [Internet]. 2018;95(3):477–504. Available from: https://www.pdcnet.org/resphilosophica/content/resphilosophica_2018_0095_0003_0477_0504

    2.        McNemar’s test in SPSS Statistics – Procedure, output and interpretation of the output using a relevant example | Laerd Statistics [Internet]. [cited 2019 Mar 8]. Available from: https://statistics.laerd.com/spss-tutorials/mcnemars-test-using-spss-statistics.php

  • স্রষ্টার অস্তিত্বের পক্ষে কালাম কসমোলজিক্যাল আর্গুমেন্ট

    ডিডাকটিভ ফর্ম:

    ১. যা কিছুর শুরু আছে তার শুরু হওয়ার পিছনের কোন কারণ আছে

    ২. এই মহাবিশ্বের শুরু আছে

    ৩. অতএব এই মহাবিশ্বের শুরু হওয়ার পিছনে কারণ আছে

    উক্ত কারণের বৈশিষ্ট্য- উক্ত কারণ হলেন এমন একজন স্বত্ত্বা যিনি সর্বশক্তিমান, সময়ের উর্দ্ধে, অপরিবর্তনীয়, অশরীরী, স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি সম্পন্ন ।

    ব্যাখ্যা:

    ১ নং- এর ব্যাখ্যা


    ক. শূণ্য থেকে কোন কিছু একা তৈরী হতে পারে না

    খ. যদি শূন্য থেকে কোন কিছু একা তৈরী হতে পারতো তাহলে প্রতি মূহুর্তে যে কোন কিছু কেন শূন্য থেকে তৈরী হয়ে যাচ্ছে না তা ব্যাখ্যা করা সম্ভব হত না

    গ. আমাদের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা এবং বৈজ্ঞানিক প্রমাণাদি বলে যে শূণ্য থেকে কোন কিছু তৈরী হয় না

    ২ নং-এর ব্যাখ্যা

    ক. দার্শনিক ব্যাখ্যা

    – যদি মহাবিশ্বের শুরু না থেকে থাকে তাহলে আমাদের মহাবিশ্বের অস্তিত্ব কিভাবে আসল ব্যাখ্যা করা যায় না

    – কারণ প্রকৃত অসীম (Actual infinity) সম্ভব নয়। কেন?

    – কারণ, কোন ঘটনা সংকলন যা একটার পর একটা যোগ করে তৈর হয় তা কখনও প্রকৃত অসীম হতে পারে না

    – সময়যুক্ত কোন ঘটনা পরম্পরা হল উক্ত ধরনের ঘটনা সংকলন

    – সুতরাং সময়যুক্ত ঘটনা পরম্পরা প্রকৃত অসীম হতে পারে না

    খ. বৈজ্ঞানিক প্রমান

    – হাবল টেলিস্কোপে আবিস্কৃত তারকারাজির রেড শিফট যা প্রমাণ করে যে নক্ষত্রগুলো একটি থেকে আরেকটি দূরে সরে যাচ্ছে

    – উইলসন ও পেনজিয়াস আবিস্কৃত কসমিক ব্যাকগ্রাউণ্ড রেডিয়েশন প্রমাণ করে আমাদের মহাবিশ্বে এক্সপ্লোসিভ অরিজিন

    – বোর্ড-গুথ-ভিলেনকিন থিওরেম প্রমাণ করে যে ক্লাসিকাল স্থান-কালকে অতীতে অসীম পর্যন্ত বর্ধিত করা যায় না

    – তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্র অনুযায়ী যে কোন এক মহাবিশ্ব বা চাক্রিক মহাবিশ্বের এনট্রপি বাড়তে থাকবে যতক্ষণ না তা ভারসাম্য পৌছায়

    ৩-নং এবং এর ব্যাখ্যা-

    এই মহাবিশ্বের শুরু হওয়ার কারণ-এর কেমন হতে হবে?

    – উক্ত কারণের অস্তিত্বের কোন কারণ থাকা যাবে না। কেননা, তার অস্তিত্বের কারণ থাকলে উক্ত কারণের কারণ থাকবে ও উক্ত কারণের কারনের কারণ থাকবে এবং এভাবে অসীম পর্যণ্ত যেতে হবে। কিন্তু আমরা দেখেছি প্রকৃতি অসীম সম্ভব নয়।

    – উক্ত অস্তিত্ব হতে হবে ব্যাক্তিগত স্বত্ত্বা (personal being)। কেননা, এছাড়া ব্যাখা করার উপায় নেই যে কিভাবে একটি অসীম (eternal) কারণ থেকে সসীম ঘটনা এল

    – উক্ত অস্তিত্বের স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি থাকতে হবে। কেননা, স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি ছাড়া ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয় যে কেন উক্ত স্বত্ত্বার সাথে মহাবিশ্ব সহউপস্থিত নয়।  

    – তার অস্তিত্ব হতে হবে অশরীরী

    – তার অস্তিত্ব হবে অপরিবর্তনীয়

    – তিনি হবেন সময়ের উর্দ্ধে

    – তিনি হবেন সর্বশক্তিমান

    ইসলাম অনুযায়ী উক্ত সর্বশক্তিমান, সময়ের উর্দ্ধে, অপরিবর্তনীয়, অশরীরী, স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি সম্পন্ন স্বত্ত্বার নাম হল আল্লাহ। 

    ……..

    রেফারেন্স রিডিং- https://www.reasonablefaith.org/writings/popular-writings/existence-nature-of-god/the-kalam-cosmological-argument/

  • স্রষ্টার অস্তিত্বের পক্ষে কন্টিনজেন্সি আর্গুমেন্ট

    -কোন সাপেক্ষ অস্তিত্ব (Contingent being), যার অস্তিত্ব থাকতে পারে বা নাও থাকতে পারে, তার অস্তিত্বশীল হওয়ার পিছনে কোন কারণ আছে

    -কোন সাপেক্ষ অস্তিত্ব স্ব-অস্তিত্বশীল হতে পারে না

    -সাপেক্ষ অস্তিত্ব-এর অস্তিত্বশীল হওয়ার কারণ হয় অন্য কোন সাপেক্ষ অস্তিত্ব বা আবশ্যকীয় অস্তিত্ব

    -কোন সাপেক্ষ অস্তিত্ব অন্য কোন সাপেক্ষ অস্তিত্বের অস্তিত্বশীল হওয়াকে পূর্ণভাবে ব্যাখ্যা করতে পারে না

    -কোন সাপেক্ষ অস্তিত্ব অস্তিত্বশীল হওয়ার ব্যাখ্যা চূড়ান্ত ভাবে কেবল আবশ্যকীয় অস্তিত্বই দিতে পারে

    -মহাবিশ্ব বা সকল সম্ভাব্য মহাবিশ্ব হল সাপেক্ষ অস্তিত্ব

    -অতএব মহাবিশ্বের অস্তিত্বশীল হওয়ার পিছনে কোন আবশ্যকীয় অস্তিত্ব আছে

    -অতএব আবশ্যকীয় অস্তিত্ব আছে

    আবশ্যকীয় অস্তিত্বের প্রয়োজনীয় বৈশিস্ট্য:

    ১. ইচ্ছা শক্তি

    ২. সময়ের উর্ধ্বে

    ৩. অপরিবর্তনশীল

    ৪. সর্বশক্তিমান

    ৫. সর্বজ্ঞানী

    ৬. একক

  • জীবজগতের ভাষা, বর্ণমালা ও তার উৎস

    [বি.দ্র.: এই লেখাতে মূলত জীবজগতের গাঠনিক ভাষা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।]

    ছোটবেলায় আমাদের অনেকের মা-বাবা আমাদের বর্ণমালা শেখানোর জন্য এক ধরণের খেলনা কিনে দিতেন। প্লাস্টিকের তৈরী চৌকা (বর্গক্ষেত্র) আকৃতির খেলনাগুলোতে বর্ণমালার বিভিন্ন অক্ষর লিখা থাকতো। উদ্দেশ্য, আমরা খেলাচ্ছলে বর্ণমালা শিখে নেবো। সাথে, বর্ণ ব্যবহার করে শব্দ গঠনও করতে পারবো।

    ধরুন, আপনাকে এ ধরণের কয়েক সেট বর্ণমালা দেয়া হয়েছে। বর্ণমালায় স্বরবর্ণ ও ব্যাঞ্জন বর্ণের পাশাপাশি ‘কার’ চিহ্নিত চৌকা আছে। এ অবস্থায় আপনি সবগুলো চৌকা হাতে নিয়ে যদি টেবিলে ফেলেন তাহলে কি অর্থপূর্ণ বাক্য গঠন হওয়ার কোন সম্ভাবনা আছে? অবশ্যই না। হ্যাঁ, হতে পারে অর্থপূর্ণ ছোট দু’একটি শব্দ হয়ে গেল। যেমন: বল, কলম ইত্যাদি। কিন্তু, শব্দে অক্ষরের এবং ‘কার’-এর সংখ্যা যতই বাড়বে ততই ‘বাই চান্স’ অর্থপূর্ণ শব্দ তৈরী হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে। যেমন: ‘আকাশ’ ও ‘হতবিহ্বল’ শব্দ দু’টিতে যথাক্রমে ৫টি ও ৭টি চৌকা লাগবে। অন্যদিকে, ‘বল’ ও ‘কলম’ শব্দ দু’টিতে যথাক্রমে ২টি ও ৩টি চৌকা লাগবে। ফলে, ‘আকাশ’ ও ‘হতবিহ্বল’ শব্দ দুটি বাই চান্স তথা র‍্যাণ্ডমলি হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।

    আবার, চৌকাগুলো র‍্যাণ্ডমলি ফেললে যদি কতগুলো অর্থপূর্ণ শব্দ তৈরী হয়েও যায়, তথাপি তা একটি অর্থপূর্ণ বাক্য গঠন করবে না। যেমন: মনে করি, টেবিলে দেখা গেলো ‘বল কলম আকাশ’, এটা কোন অর্থপূর্ণ বাক্য প্রকাশ করলো না। তবে, এক্ষেত্রেও ছোট ছোট অর্থপূর্ণ বাক্য প্রকাশ পেয়ে যেতে পারে। যেমন: আমি যাই। কিন্তু বাক্য যতই বড় হবে ততই র‍্যাণ্ডমলি তৈরী হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।

    Scrable Game

    উপরের চিত্রে দেখা যাচ্ছে যে চৌকাগুলো র‍্যাণ্ডমলি ফেলে রাখা হয়েছে তাতে দু’অক্ষরের একাধিক অর্থপূর্ণ শব্দ (যেমন: GO, TO) পাওয়া যাচ্ছে। ভালমত খুঁজলে দু-একটি তিন অক্ষরের অর্থপূর্ণ শব্দও পাওয়া যেতে পারে। তবে, চার অক্ষরের যে শব্দটি (LOVE) ওপরের দিকে আছে, তা দেখামাত্রই বলে দেয়া যায় যে কেউ একজন এগুলো এভাবে সাজিয়েছে, র‍্যাণ্ডমলি হয়নি। চার অক্ষরের দুটো শব্দ মিলে যে শব্দটি (HAND-MADE) তৈরী করেছে সেটি র‍্যাণ্ডমলি হওয়া যে প্রায় অসম্ভব, তা বলাই বাহুল্য।

    এবার মনে করুন, আপনার চৌকাগুলোতে এক বিশেষ ধরণের চুম্বক লাগানো আছে, যাতে আপনার চৌকাগুলোর একটি আরেকটির সাথে সুনির্দিষ্ট তথা স্পেসিফিক নিয়মে লেগে যাওয়ার প্রবণতা আছে। ধরি, ‘ক’ চিহ্নিত চৌকার প্রবণতা হলো ‘ল’ এর সাথে পাশাপাশি লেগে যাওয়া। তাহলে, এ ধরণের বর্ণমালা দিয়ে ‘বাই চান্স’ তো দূরে থাক, আপনি নিজে থেকে কি কোন শব্দ লিখতে পারবেন? উত্তর: না। কারণ, ‘ক’-এর পরে ‘স’ যুক্ত করতে প্রয়োজন হলেও আপনি আটকে যাবেন। কিন্তু, চৌকাগুলোর প্রবণতা যদি এমন হতো যে একটির সাথে আরেকটি স্পেসিফিক ভাবে না লেগে পাশাপাশি যেকোন বর্ণের সাথে হালকা ভাবে লাগে, তাহলে আপনার যেকোন শব্দ তৈরী করতে কোন সমস্যা হতো না এবং র‍্যাণ্ডমলি যে ছোট শব্দ বা বাক্যগুলো হতো সেগুলোও সাধারণ চৌকার মত বিচ্ছিন্ন না থেকে একটু লেগে থাকতো, অর্থাৎ স্থায়ী হতো। তবে এক্ষেত্রে ‘বাই চান্স’ হওয়া মানে আরেক সমস্যা। কারণ, দেখা যেত, যখনই ‘কলম’ লেখাটা তেরী হয়েছে পরক্ষণেই ‘ব’ এবং ‘শ’ বা অন্য যেকোন অক্ষর পাশে এসে ‘বকলমশ’ বানিয়ে ফেলেছে, তথা অর্থহীন করে ফেলেছে। অর্থাৎ, এমতাবস্থায় অর্থপূর্ণ শব্দগুলোকে পাশাপাশি রাখার জন্য একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তির সার্বক্ষণিক অবস্থান প্রয়োজন হয়ে পড়ত।

    উপরের আলোচনা থেকে আমরা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বুঝতে পারলাম তা হলো:

    ১. আমরা যদি কোন প্রক্রিয়ায় কোন তথ্য সংরক্ষণ করতে চাই, সেই প্রক্রিয়াটিতে এমন কতিপয় পৃথক পৃথক অংশ থাকবে যেগুলোকে যেকোন ভাবে সাজানো যায়।

    ২. উক্ত অংশগুলোর পরস্পরের মধ্যে আকর্ষণ থাকতে পারে, কিন্তু সুনির্দিষ্ট ‘আকর্ষণ’ থাকা যাবে না।

    ৩. এ ধরণের পৃথক পৃথক অংশগুলো র‍্যাণ্ডমলি যুক্ত হয়ে অর্থপূর্ণ কোন শব্দ এবং বাক্য গঠন করার একটি সীমা আছে। তবে, সেই সীমা খুবই সংকীর্ণ তথা ছোট।

    এবার আসুন এ ধরণের একটি তথ্যসংরক্ষণ ব্যবস্থা সম্পর্কে জানি যা প্রতিনিয়ত আমরা ব্যবহার করে চলেছি। তা হলো কম্পিউটার। হ্যাঁ, কম্পিউটারে ‘বাইনারী’ নাম্বার দিয়েই বিভিন্ন ধরণের তথ্য, যেমন: প্রোগ্রামের নির্দেশনা, ডকুমেন্ট, ইমেজ ইত্যাদি সংরক্ষণ করা হয়।

    আমরা জানি, আমরা যে অংক ব্যবহার করে হিসেব নিকেশ করি সেটি হলো ‘দশমিক’ বা ‘ডেসিমাল’ সংখ্যা। অর্থাৎ, ১ থেকে ১০ পর্যন্ত গিয়ে এরপর আবার ১,২,৩..  যোগ করে তথা ১১, ১২, ১৩… এভাবে সংখ্যা গননা করতে থাকি। কিন্তু সংখ্যা গননা ইচ্ছা করলে এভাবেও করা যায়, ১,১১,১১১,১১১১,…..,১১১১১১১১১১ (তথা ১,২,৩,৪,…….১০)। একে বলে ‘ইউনারী’ সংখ্যা। এভাবে একশ লিখতে গেলে পরপর একশটি ১ বসাতে হবে। অর্থাৎ এভাবে হিসেব করা সহজ হলেও স্থান অনেক বেশী দরকার হয়ে পড়ে। আবার, সংখ্যাকে ‘দ্বিমিক’ বা ‘বাইনারী’ আকারেও প্রকাশ করা যায়। অর্থাৎ, ০,১,১০,১১,১০০,….১০১০ (তথা, ০,১,২,৩,৪,….১০)। দেখা যাচ্ছে এভাবে সংখ্যা প্রকাশ করলে যায়গা তুলনামূলক কম লাগছে। ‘দশমিক’ সংখ্যাকে ‘দ্বিমিক’ সংখ্যায় রূপান্তর করা যায় আবার বিপরীতটাও করা যায়।

    লক্ষ্যণীয়, বিদ্যুতের উপস্থিতি অনুপস্থিতির উপর ভিত্তি করে আমরা ইচ্ছে করলে দ্বিমিক সংখ্যাকে সংরক্ষণ করতে পারি। সিলিকন ট্রানজিস্টরের মধ্যে এ ধরণের একটি পদ্ধতি তৈরী করা হয়। যেখানে বিদ্যুতের উপস্থিতি হচ্ছে ‘১’ এবং বিদ্যুতের অনুপস্থিতি ‘০’। এভাবে তৈরীকৃত অনেকগুলো ট্রানজিস্টরকে যদি একসাথে পাশাপাশি রাখা যায় তাহলে সেগুলোতে সংখ্যা সংরক্ষণ করা যাবে।

    কিন্তু কতগুলো ট্রানজিস্টরকে একসাথে রেখে আমরা একটি ‘একক’ ধরবো? কারণ, যদি একটি ট্রানজিস্টরকে একক ধরি তাহলে মাত্র দুটো সংখ্যা সংরক্ষণ করা যাচ্ছে ০ এবং ১। কিন্তু যদি ৮টি ট্রানজিস্টরকে একত্রে রাখা যায় তাহলে সর্বোচ্চ যে সংখ্যাটি রাখা যাবে তা হলো: ১১১১১১১১, দশমিকে যার মান ২৫৫। তুলনামূলক বড় সংখ্যা। আরও বেশী ট্রানজিস্টরকে একত্রে রাখা সম্ভব, কিন্তু সেক্ষেত্রে জায়গা বেশী লেগে যাবে। ফলে, সাধারণত ৮টি ট্রানজিস্টরকে একত্রে রাখা হয়। এর প্রতিটিকে এক ‘বিট’ বলে এবং পুরো ৮টি বিটকে একত্রে বলে ‘বাইট’।

    8 bit shift register

    চিত্রে একটি ৮ বিট শিফট রেজিস্টার দেখা যাচ্ছে। ৮ বিটের মেমোরী আইসিগুলোও (ইন্টেগ্রেটেড সার্কিট) অনেকটা এভাবেই সাজানো হয়।

    ৮টি বিট দিয়ে না হয় সংখ্যা সংরক্ষণ করা যায়। কিন্তু, আমি যদি অক্ষর সংরক্ষণ করতে চাই? তা-ও সম্ভব। কীভাবে? এটা বুঝা যায়, সাংকেতিক ভাষা ব্যবহারের উদাহরণ থেকে। আমরা অনেকেই ছোট বেলায় এরকম খেলেছি যে, আমি একটি শব্দ লিখব তবে সে শব্দে ‘খ’ বলতে ‘ক’ বুঝাবো এবং এভাবে বর্ণমালার অক্ষরগুলোকে এক অক্ষর করে পিছিয়ে দেবো। এভাবে কোন শব্দ লিখলে আমি কী ধরণের নিয়ম ব্যবহার করেছি সেটি যে জানবে তার পক্ষে শব্দটির অর্থ বুঝা সহজ হবে। অর্থাৎ, আমরা ইচ্ছে করলে ‘ক’ বর্ণটিকে অন্য কিছু দিয়ে প্রকাশ করতে পারি। ঠিক একইভাবে, একটি বাইটের মধ্যে যদি বিভিন্নভাবে বর্ণমালাকে জুড়ে দেয়া যায় তাহলেও লেখা সংরক্ষণ করা যাবে। American Standard Code for Information Interchange, সংক্ষেপে ASCII হচ্ছে এ ধরণের একটি নীতিমালা যেটি অনুযায়ী কম্পিউটারের বিভিন্ন ইন্সট্রাকশনগুলো, যেমন: ‘কী-বোর্ডের’ বিভিন্ন ‘কী’-গুলো  বাইনারী নাম্বারের সাথে চিহ্নায়িত করা থাকে। (http://www.ascii-code.com/) অর্থাৎ, আপনি যখন কী-বোর্ডে ‘A’ লিখেন,  র‍্যামে তা ‘০১০০০০০১’ হিসেবে সংরক্ষিত হয়।

    ASCII code

    আমেরিকান স্ট্যাণ্ডার্ড কোড ফর ইনফরমেশন ইন্টারচেঞ্জ। লক্ষ্যণীয়, A-এর কোড হচ্ছে ‘1000001’। এখানে ৭টি বিট আছে। প্রথম বিটটিকে (তথা অষ্টম) রাখা হয় অংকের মাইনাস বা প্লাস বুঝানোর জন্য।

    হার্ডডিস্কে কীভাবে সংরক্ষণ হয়? বিষয়টি খুবই মজার। আমরা জানি, চৌম্বক পদার্থগুলোর ভিতরে ডাইপোল থাকে। তড়িৎক্ষেত্র প্রবাহিত করে যেগুলোর পোলারিটি ঘুরিয়ে দেয়া যায়। এরকম ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঘনকাকৃতির চৌম্বক পদার্থ (যেমন: হার্ডডিস্কে ব্যবহৃত কোবাল্ট ভিত্তিক সংকর ধাতু)-কে যদি পাশাপাশি সাজানো যায় তাহলেও বাইনারী ডিজিট সংরক্ষণ করা যাবে। সেক্ষেত্রে ধরুন: ‘>’-কে ‘এক’ এবং ‘<’ কে ‘শূণ্য’ ধরা হলো। সেক্ষেত্রে, ‘A’ লিখলে হার্ডডিস্কে তা ‘<><<<<<>’ এভাবে সংরক্ষিত থাকবে।

    Hard disk Magnetic Recording and Reading overview

    চিত্রে হার্ডডিস্কের কোবাল্ট বেজ্‌ড্‌ ম্যাগনেটিক অ্যালয় দিয়ে কীভাবে বাইনারী তথ্য রেকর্ড করা এবং পড়া হয় তা দেখা যাচ্ছে।

    যাই হোক, এবার লক্ষ্য করুন, হার্ডডিস্কে কিংবা র‍্যামে আমরা ডাটা সংরক্ষণ করতে পারছি কারণ ডাটা সংরক্ষণের ক্ষুদ্র অংশগুলো পরস্পরের সাথে সুনিদিষ্ট আকর্ষণে আবদ্ধ নয়। স্পষ্টতই, হার্ডডিস্কের উপর দিয়ে যদি কোন র‍্যাণ্ডম ম্যাগনেটিক ঝড় বয়ে যায় সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য সংরক্ষণ হবে না। আবার, র‍্যাণ্ডম প্রক্রিয়ায় যদি একটি বিট পরিবর্তন হয়ে যায়, গুছানো তথ্য ধ্বংস হবে এবং একটি নির্দিষ্ট সংক্ষিপ্ত সীমার বাইরে অর্থবহ তথ্য যুক্ত হবে না।

    এবার চলুন আমরা এরকম আরও মজার একটি বর্ণমালা নিয়ে কথা বলি। হ্যাঁ, তা আর কিছু নয় জীবজগতের গাঠনিক ব্লুপ্রিন্ট সংরক্ষণকারী বর্ণমালা- ‘ডিএনএ’।

    ডিএনএ-র বর্ণমালায় বর্ণ মাত্র চারটি এবং কোন যতি চিহ্ন নেই। এডেনিন (A), থায়ামিন (T), গুয়ানিন (G) এবং সাইটোসিন (C)। এই চারটি অণু এমন যে, এগুলো পরস্পর পাশাপাশি ফসফেট বন্ধনে যুক্ত হয়। কিন্তু, এই বন্ধনে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে তাদের পারস্পরিক স্পেসিফিক এফিনিটি কাজ করে না। স্পেসিফিক এফিনিটি কাজ করলে ডাটা সংরক্ষণ করা যায় না, উপরে আমরা তা দেখেছি। লক্ষ্যণীয় যে, উপরোক্ত প্রতিটি অনুকে বলে নাইট্রোজেন বেজ। উক্ত নাইট্রোজেন বেজগুলো ডিঅক্সিজেনেটেড রাইবোজ-এর সাথে সংযুক্ত থাকে, যাদেরকে বলে নিউক্লিওসাইড। প্রতিটি নিউক্লিওসাইডের রাইবোজ সুগারে ফসফেট যুক্ত হলে গঠিত হয় নিউক্লিওটাইড। মূলত এই নিউক্লিওটাইড-ই হলো ডি-অক্সিরাইবো-নিউক্লিইক-এসিড তথা  ডিএনএ-র গাঠনিক একক। অর্থাৎ, এরকম একেকটি নিউক্লিওটাইড অণু পাশাপাশি যুক্ত হয়ে যে পলিনিউক্লিওটাইড চেইন গঠন করে তাকেই বলে ডিএনএ।

    Nucleotides and portion of a Double Helix

    আমরা চিত্রটির ডানদিকে ডিএনএ ডাবল হেলিক্স-এর অংশ দেখতে পাচ্ছি। বামদিকে দেখানো হয়েছে যে, ডিএনএ-তে কীভাবে নিউক্লিওটাইডগুলো পরস্পরের সাথে সংযুক্ত হয়। লক্ষ্যণীয়, ডাবল হেলিক্স গঠনের ক্ষেত্রে পাশাপাশি দুটো চেইনের একটির A অপরটির T এর সাথে এবং একটির C অপরটির G এর সাথে ও ভাইস ভারসা হাইড্রোজেন বন্ধন দিয়ে যুক্ত হয়।

    প্রশ্ন হলো, ATGC বর্ণগুলোকে তো বিভিন্ন ভাবে সাজানো যেতে পারে, সেক্ষেত্রে আমরা তথ্য সংরক্ষণের একক হিসেবে কোনটি ঠিক করবো? এটি নির্ভর করছে আমি কী ধরণের তথ্য সংরক্ষণ করতে চাই এবং কী ধরণের ‘সংকেত’ চিহ্নিত করতে চাই তার উপর। উপরের কম্পিউটারের উদাহরণে আমরা দেখেছি, বাইনারী ডিজিটে বর্ণ দুটি, ‘০’ এবং ‘১’। আমি যদি দুটি নিয়ে একক করি তাহলে সাজানো যাবে এইভাবে: ০০,০১,১০,১১; তিনটি করে নিলে: ০০০,০০১,০১০,০১১,১০০,১০১,১১০,১১১; অর্থাৎ খুব বেশী সংকেত চিহ্নিত করা যাবে না। অন্যদিকে, আমি যেহেতু অনেকগুলো পৃথক নির্দেশনা বা অক্ষর চিহ্নিত করতে চাচ্ছি, সেহেতু ‘একক’টি এমন হলে ভাল হয় যে বেশী বড়ও না আবার এমন ছোটও না যে সবগুলো সংকেত সংরক্ষণ করা যাবে না। এ হিসেবে কম্পিউটারের একক হলো ‘০০০০০০০০’ তথা ‘৮’ বিট।

    ডিএনএ-র ক্ষেত্রে আমার সংকেতগুলো হলো অ্যামাইনো এসিড। যদিও প্রকৃতিতে অনেক অ্যামাইনো এসিড আছে, আমি বিশটির বেশী ব্যবহার করবো না। এখন, ATGC থেকে যদি দুটো করে বর্ণ নিই, তাহলে মাত্র ষোল ভাবে সাজানো যায়: AA,AT,AG,AC,TA,TT,TG,TC,GA,GT,GG,GC,CA,CT,CG এবং CC। অর্থাৎ বিশটি অ্যামাইনো এসিডকে নির্দেশিত করতে পারছি না। চারটি করে নিলে সাজানো যাবে ২৫৬ ভাবে। এত বেশী একক আমার প্রয়োজন পড়ছে না। তদুপরি, চারটি করে সাজালে আমার জায়গা বেশী লেগে যাচ্ছে।  কিন্তু, তিনটি করে নিলে ৬৪ উপায়ে সাজানো যায়। এ প্রক্রিয়ায় ২০টি অ্যামাইনো এসিডকে খুব সহজেই চিহ্নায়িত করা যাচ্ছে। এছাড়াও, অনেকগুলো অ্যামাইনো এসিডকে আমি একাধিক ‘কোডন’ দিয়ে চিহ্নিত করতে পারছি। (লক্ষ্যণীয়, ডিএনএ-তে ৩টি অক্ষরের এই একককে কোডন বলে)।

    প্রশ্ন হলো, আমি একটি অ্যামাইনো এসিডের বিপরীতে কোন্ কোডনকে চিহ্নায়িত করবো? যেমন: GGG কোড করে গ্লাইসিনকে, GAG কোড করে গ্লুটামিক এসিডকে। কিন্তু, GGG এলানিনকে কোড না করে গ্লাইসিনকে কোড করবে এটা কেন নির্ধারণ করবো?  ওয়েল, এক্ষেত্রে আমার পরিকল্পনা হবে কোষ বিভাজন হওয়াকালীন ডিএনএ কপি করার সময় যদি র‍্যাণ্ডমলি একটি অক্ষর পরিবর্তন হয়ে যায় (মিউটেশন) সেক্ষেত্রে অ্যামাইনো এসিড যেন পরিবর্তন না হয় (সাইলেন্ট মিউটেশন)। আবার, বিশ ধরণের অ্যামাইনো এসিডে কতগুলো পোলার, কতগুলো নন-পোলার, কতগুলো এসিডিক এবং কতগুলো বেসিক, কতগুলোতে ‘রিং’ আকৃতির সাইড চেইন আছে কতগুলোতে নেই। প্রোটিনের ত্রিমাত্রিক গঠন নির্মাণ এবং ফাংশন নির্ধারণে এই বিভিন্ন ধরণের অ্যামাইনো এসিডগুলোর সুনির্দিষ্ট গাঠনিক ও রাসায়নিক ভূমিকা আছে। এ কারণে আমি চেষ্টা করবো কোডনগুলো এমনভাবে নির্ধারণ করতে যেন মিউটেশনের কারণে যদি অ্যামাইনো এসিড পরিবর্তন হয়েও যায়, তথাপি যেন একই ধরণের অন্য একটি এমাইনো এসিডে পরিবর্তন হয়। মজার বিষয় হলো, জীবজগতে যে কোডন পাওয়া গেছে তা এই ধরণের বৈশিষ্ট্যগুলোকে মাথায় রেখে নির্ধারণ করা হয়েছে। তদুপরি, জীবজগতের প্রায় সকল ক্ষেত্রেই এই কোডনের নীতিমালা সুনির্দিষ্ট অর্থাৎ ইউনিভার্সাল। কারণটা খুব সহজ- একাধিক ভাষা ব্যবহার করার চেয়ে একটি  ভাষা ব্যবহার করাই সুবিধাজনক।

    Universal Genetic Code Chart

    উপরে আমরা ইউনিভার্সাল জেনেটিক কোডের চার্ট দেখতে পাচ্ছি। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, কোডন সিস্টেমটি এমনভাবে সিলেক্ট করা হয়েছে যেন মিউটেশনের ইফেক্ট সর্বোচ্চ মিনিমাইজ করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, ফিনাইল এলানিনকে (Phe) কোড করে UUU এবং UUC। অর্থাৎ UUU মিউটেশন হয়ে UUC হয়ে গেলেও এমাইনো এসিড একই থাকবে। আবার, যদি UUU পরিবর্তন হয়ে UAU হয়ে যায় তাহলে ফিনাইল এলানিন পরিবর্তন হয়ে টাইরোসিন (Tyr) হবে, যা কাছাকাছি গঠনযুক্ত। কিংবা, যদি CUU হয়ে যায় সেক্ষেত্রে হচ্ছে লিউসিন (Leu)। এটিও ত্রিমাত্রিক গঠনের দিক দিয়ে ফিনাইল এলানিনের কাছাকাছি।

    এই যে একটি কোডনের সাথে একটি অ্যামাইনো এসিডকে আমি ‘অ্যাসাইন’ করছি, তা কি র‍্যাণ্ডমলি একা একা হতে পারবে? যে কোন সচেতন পাঠকের কাছে পরিস্কার যে তা সম্ভব নয়। প্রকৃতপক্ষে, একটি বিষয়ের সাথে আরেকটি বিষয়কে এসাইন বা সম্পর্কযুক্ত করার তথা একটি বিষয়ে আরেকটি বিষয়ের অর্থ নির্ধারণ করে দেয়া ‘বুদ্ধিমান’ স্বত্তার কাজ। কোন অন্ধ প্রক্রিয়ায় তা কখনও হয় না। এর মধ্যে আবার তা যদি হয় ‘অপটিমাম’ বা ‘বেস্ট’ কোডন নির্ণয় করা, তাহলে তো আরও সম্ভব নয়।

    এছাড়াও, এই বর্ণগুলো যদি পরস্পরের সাথে স্পেসিফিক এফিনিটি দেখাতো তাহলেও তথ্য সংরক্ষণ করা সম্ভব হতো না। অর্থাৎ, A কেবল G-এর পাশে বসতে পারবে, C কেবল T-এর পাশে বসতে পারবে, অণুগুলোর রাসায়নিক আসক্তি এমন হলে তা কোন অ্যামাইনো এসিডকে কোড করতে পারতো না।

    এবারে আসি প্রোটিনের কথায়। প্রোটিনকেও আরেক ধরণের ভাষা বলা যায় যার বর্ণমালায় বর্ণ আছে ২০টি। পোলারিটি, অম্ল-ক্ষার বৈশিষ্ট্য, বেনজিন রিং-এর উপস্থিতি ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যের আলোকে প্রতিটি অ্যামাইনো এসিড বর্ণ বিভিন্ন অর্থ ধারণ করে। আর এই বৈশিষ্ট্যকে কাজে লাগিয়ে তৈরী হয় একেকটি বাক্য তথা অ্যামাইনো এসিডের সরলরৈখিক সিকোয়েন্স। একে আবার প্রোটিনের প্রাইমারী স্ট্রাকচার বলা হয়। উক্ত সিকোয়েন্স, অ্যামাইনো এসিডের বিভিন্ন মাত্রার কেমিক্যাল এফিনিটির উপর ভিত্তি করে আলফা হেলিক্স, বিটা শিট ইত্যাদি বিশেষায়িত গঠন তৈরী করার মধ্য দিয়ে প্রোটিনের সেকেণ্ডারী স্ট্রাকচার তৈরী করে। এরপর, নির্দিষ্ট আকৃতিতে ভাঁজ (ফোল্ড) হয়ে তৈরী করে সুনির্দিষ্ট ত্রিমাত্রিক গঠন বা টারসিয়ারী স্ট্রাকচার। এ রকম দুটো বা ততোধিক প্রোটিন সমন্বয়ে তৈরী হয় কোয়ার্টারনারী স্ট্রাকচার। এনজাইমগুলো সাধারণত একটি প্রোটিন দিয়ে গঠিত হয়, আর বিভিন্ন গাঠনিক কাঠামো যেমন: আয়ন চ্যানেল তৈরী হয় একাধিক প্রোটিনের সমন্বয়ে।

    Amino acids found in living world

    ইলাস্ট্রেশনটিতে আমরা দেখতে পাচ্ছি জীবজগতে প্রাপ্ত ২১ ধরণের এমাইনো এসিড। তন্মধ্যে, সেলেনোসিস্টিন অল্প কিছু বিশেষায়িত প্রোটিনে পাওয়া যায় বিধায় সাধারণভাবে প্রোটিনের গাঠনিক একক পড়ার সময় এর উল্লেখ দেখা যায় না।

    লক্ষ্যণীয়, কম্পিউটারের ভাষার ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি বাইনারী ভাষা দিয়ে ইংরেজী ভাষা সংরক্ষণ করা হয়। অন্যকথায়, একটি ভাষা দিয়ে আরেকটি ভাষা সংরক্ষণ করা যায়। তেমনি প্রোটিনের ভাষাকে সংরক্ষণ করে ডিএনএ-র ভাষা। আরও লক্ষ্যনীয়, প্রোটিনের ভাষায় বর্ণ ২০টি হওয়ায় এবং উক্ত বর্ণগুলোর আণবিক বৈশিষ্ট্য বিভিন্ন হওয়ায় ভাব প্রকাশের সীমানা অনেক বেড়ে গেলো। অর্থাৎ প্রোটিনের ২০টি অণু দিয়ে অনেক বৈচিত্রপূর্ণ ত্রিমাত্রিক গঠন সম্ভব। ফলে, প্রোটিন এনজাইম থেকে শুরু করে কোষের বিভিন্ন গাঠনিক উপাদান তৈরীতে ভূমিকা রাখে। কিন্তু, ডিএনএ-র বর্ণমালার বর্ণের আণবিক বৈশিষ্ট্য ও সংখ্যা সীমিত হওয়ায় ডিএনএ বৈচিত্রপূর্ণ ত্রিমাত্রিক গঠন তৈরী করতে পারে না।

    Level of protein structures

    ছবিতে দেখা যাচ্ছে কীভাবে অ্যামাইনো এসিডগুলো একটার পাশে আরেকটা যুক্ত হয়ে চূড়ান্ত ত্রিমাত্রিক প্রোটিন তৈরী করে। বিষয়টি যত সহজ শুনতে ততটাই কঠিন বাস্তবে, কী বলেন?

    আমরা জানি, ডিএনএ-তে দুটি পলিনিউক্লিওটাইড চেইন পাশাপাশি থেকে প্যাঁচানো মই-এর মত গঠন তৈরী করে, যাকে ইংরেজীতে বলে ডাবল হেলিক্স। ডিএনএ থেকে প্রোটিন তৈরীর প্রক্রিয়ায় প্রথমে ডিএনএ থেকে সম্পূরক ম্যাসেঞ্জার আরএনএ তৈরী হয়। এ প্রক্রিয়ায় শুরুতে ডিএনএ ডাবল হেলিক্স এর মধ্যে বন্ধন খুলে একটি চেইনকে পড়ার জন্য উন্মুক্ত করতে হয়। এ প্রক্রিয়াটি করে একটি বিশেষায়িত প্রোটিন তথা এনজাইম। এরপর আরেকটি বিশেষায়িত এনজাইম এসে উক্ত চেইনকে পড়ে সম্পূরক আরএনএ চেইন তৈরী করে। অতঃপর, একটি এনজাইম লাগে উন্মুক্ত করা অংশ পুনরায় জোড়া লাগাতে, একটি এনজাইম লাগে প্রুফ রিড করতে, দুটি লাগে জোড়া লাগানোর সময় বেশী পেঁচিয়ে গেলে প্যাঁচ খুলতে। প্রসঙ্গত, আরএনএ-এর সাথে ডিএনএ-র পার্থক্য হল- আরএনএ-এর নিউক্লিওটাইডে তথা আরএনএ-র বর্ণমালার অক্ষরগুলোতে একটি অক্সিজেন অণু বেশী থাকে এবং আরএনএ-তে থাইমিনের (T) পরিবর্তে ইউরাসিল (U) থাকে। প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক যে, তথ্য পরিবহন করে নেয়ার জন্য ডিএনএ-র পরিবর্তে আরএনএ-কে কেন বাছাই করা দরকার হলো? একটি উত্তর হলো, যে পদ্ধতিটির মধ্যে আমি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রাখতে চাই স্বাভাবিক ভাবেই তাকে আমি আলাদাভাবে সংরক্ষণ করতে চাইব। তদুপরি, আরএনএ-র আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো এটি ডিএনএ-র চেয়ে একটু বেশী বৈচিত্রের গঠন তৈরী করতে পারে।

    Transcription and Translation

    এক নজরে ডিএনএ থেকে প্রোটিন সংশ্লেষ পদ্ধতি। ছবিটিতে সংশ্লেষের কাজে অংশগ্রহণকারী এনজাইমগুলোকে দেখানো হয়নি। 

    এরপর, ম্যাসেঞ্জার আরএনএ থেকে রাইবোজোম নামক আণবিক মেশিনের সহায়তায় প্রোটিন সংশ্লেষ হয়। রাইবোজোম নামক মেশিনটি তৈরী হয় রাইবোজোমাল আরএনএ ও অনেকগুলো প্রোটিনের সমন্বয়ে। প্রোটিন তৈরীর প্রক্রিয়ায় আর এক ধরণের আরএনএ সাহায্য করে- ট্রান্সফার আরএনএ বা টি-আরএনএ । এদের কাজ হলো রাইবোজোমের কাছে অ্যামাইনো এসিড বহন করে নিয়ে যাওয়া। বিশটি অ্যামাইনো এসিডের জন্য এরকম বিশ ধরণের সুনির্দিষ্ট ট্রান্সফার আরএনএ থাকে। আবার, প্রত্যেক ধরণের টি-আরএনএ-র সাথে তৎসংশ্লিষ্ট অ্যামাইনো এসিড সংযুক্ত করার জন্য বিশটি সুনির্দিষ্ট ও পৃথক এনজাইম (অ্যামাইনো এসাইল ট্রান্সফারেজ) থাকে। এছাড়াও, রাইবোজোমে দুটো পাশাপাশি অ্যামাইনো এসিডের  বন্ধন তৈরী করার জন্য কাজ করে আলাদা এনজাইম।

    উপরের বর্ণনা থেকে লক্ষ্যণীয়, ডিএনএ-তে প্রোটিন তৈরী তথ্য ধারণ করা থাকে। আবার, উক্ত তথ্যকে কাজে লাগিয়ে প্রোটিন তৈরী করার জন্য দরকার অনেকগুলো আরএনএ এবং সুনির্দিষ্ট প্রোটিন (এনজাইম)।  যদি প্রশ্ন করা হয়, কীভাবে আদিম পরিবেশে কোষের উদ্ভব হল? স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন চলে আসে, কোন্‌টা আগে আসলো- ডিএনএ নাকি প্রোটিন নাকি আরএনএ? আমরা দেখছি তিনটি জিনিস একসাথে ও পরস্পরজড়িতভাবে উদ্ভব না হলে এই সিস্টেমটি চালুই হচ্ছে না। ইনটুইটিভলি, কোন প্রকার র‍্যাণ্ডম অনিয়ন্ত্রিত প্রক্রিয়ায় তা সম্ভব নয়।

    প্রোটিন (তথা এনজাইম) আগে আসবে? রিডিং টেমপ্লেট (অর্থাৎ ডিএনএ) না থাকলে প্রোটিন কাজ করবে কার উপর? তদুপরী, ১৫০টি অ্যামাইনো এসিড দিয়ে নির্মিত একটি মাঝারি সাইজের সুনির্দিষ্ট প্রোটিন আসাও গাণিতিকভাবে অসম্ভব একটি ব্যাপার। ডগলাস এক্স-এর হিসেবে অনুযায়ী এর সম্ভাব্যতা ১০১৬৪। [১] অন্যদিকে, বিল ডেম্বস্কি দেখিয়েছেন বিশ্বজনীন সম্ভাব্যতার সীমা ১০১৫০। [২] অর্থাৎ, যে কোন র‍্যাণ্ডম ঘটনা এই সীমাকে ছাড়িয়ে গেলে আমাদের মহাবিশ্বে তা ঘটার সম্ভাবনা নেই। একটি মাঝারি সাইজের প্রোটিনের এই অবস্থা। অথচ, আরএনএ পলিমারেজ এনজাইম ১০০০-এর বেশী অ্যামাইনো এসিড যুক্ত তিনটি প্রোটিনের সমন্বয়ে গঠিত হয়।

    ডিএনএ আগে আসবে? ডিএনএ থেকে তথ্য পড়বে কে? যদি ডিএনএ অণু এমন কোন গঠন তৈরী করতে সক্ষম হত যা এনজাইমের মত কাজ করে তাহলেও চিন্তা করার সুযোগ থাকতো। কিন্তু, আমরা আগেই বলেছি ডিএনএ বৈচিত্রপূর্ণ গঠন তৈরী করতে পারে না। সুতরাং বাকী রইল আরএনএ। আরএনএ কি কেমিকেল এভল্যুশন তথা এবায়োজেনেসিসকে উদ্ধার করতে পারবে?

    বিজ্ঞানীরা ল্যাবরেটরীতে এমন এক ধরণের আরএনএ সংশ্লেষ করতে পেরেছেন যা নিয়ন্ত্রিত ও সুনির্দিষ্ট পরিবেশে এনজাইম হিসেবে কাজ কোরে আরএনএ পলিমারাইজেশনেকে প্রভাবিত করতে পারে। অর্থাৎ, একটি সম্পূরক আরএনএ টেমপ্লেট-এর বিপরীতে নিউক্লিওটাইড (A এর বিপরীতে U, U এর বিপরীতে A, G এর বিপরীতে C, এবং C এর বিপরীতে G) যোগ করার মাধ্যমে নিজের একটি কপি তৈরী করতে পারে। এই বিশেষ ধরণের আরএনএকে বলে রাইবোজাইম। এর মাধ্যমে তারা বলতে চাচ্ছেন যে, আদিম পরিবেশে এ ধরণের একটি রাইবোজাইম আসার মাধ্যমে সেল্ফ-রেপ্লিকেশনের সূচনা হয়েছে এবং পরবর্তীতে ‘কোন একটি উপায়ে’ কোষের উপরোক্ত বর্ণিত বিষয়গুলো আবির্ভাব হয়েছে! যেকেউ একটু মাথা খাটালেই বুঝবে এ ধরণের চিন্তা কতখানি অ্যাবসার্ড! কিন্তু কেন?

    এক, পৃথিবীর আদিম পরিবেশ ল্যাবরেটরীর মত নিয়ন্ত্রিত ছিলো না।

    দুই, ‘রাইবোজাইম নিজের একটি কপি তৈরী করতে পারে’ এই অবস্থা থেকে ‘আরএনএ প্রোটিনের তথ্য ধারণ করে এবং তা প্রোটিন সংশ্লেষ করে’ এই অবস্থায় যাওয়ার কোন পথ নেই। কারণ, উপরে আমরা ডিএনএ-র ক্ষেত্রে যে রকম বলেছি ঠিক তেমনি কোন্ কোডনটি কোন্ অ্যামাইনো এসিডের জন্য নির্ধারিত হবে সেটি নির্বাচন করা একটি বুদ্ধিমান ‘মাইণ্ড’-এর কাজ। তদুপরি, যদি অপটিমাম ইউনিভার্সাল কোডনের জন্য র‍্যাণ্ডম অনুসন্ধান করা সম্ভবও হতো, সেক্ষেত্রে প্রতি সেকেণ্ডে ১০৫৫টি অনুসন্ধান চালাতে হতো। কিন্তু, বায়োফিজিসিস্ট হার্বাট ইওকি হিসেব করে দেখিয়েছেন র‍্যাণ্ডম অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় ১.৪০ x ১০৭০টি সম্ভাব্য কোডনের মধ্যে উক্ত অপটিমাম কোডন সিস্টেমকে খুঁজে বের করতে হবে এবং হাতে সময় পাওয়া যাবে ৬.৩ x ১০১৫ সেকেণ্ড। [৩] এছাড়াও, রাইবোজোমে যে প্রোটিন সিনথেসিস হয় তাতে অনেকগুলো সুনির্দিষ্ট প্রোটিন ও আর-আরএনএ-র নির্দিষ্ট অবস্থানগত ও তড়িৎ-রাসায়নিক ভূমিকা আছে। অথচ, আরএনএ প্রোটিনগুলোর মত বিভিন্ন ধরণের স্ট্রাকচার গঠন করতে পারে না। কারণ, আরএনএ-র বর্ণ সংখ্যা সীমিত এবং বর্ণের কেমিক্যাল স্ট্রাকচারও অ্যামাইনো এসিডের ন্যায় বৈচিত্রপূর্ণ নয়।

    তিন, রাইবোজাইম নিজের কপি করতে পারে তখনই যখন তার সম্পূরক একটি টেমপ্লেট থাকে। অর্থাৎ, আদিম পরিবেশে সেল্ফ রেপ্লিকেটিং রাইবোজাইম আসতে হলে রাইবোজাইম ও তার সম্পূরক টেমপ্লেট দুটো অণুরই একসাথে আসতে হবে। জনসন ও তার সহকর্মীরা দেখিয়েছেন যে, আংশিকভাবে নিজের কপি তৈরী করতে পারে এরকম একটি রাইবোজাইমের নিউক্লিওটাইডের সংখ্যা ১৮৯। সুতরাং, উক্ত স্পেসিফিক রাইবোজাইম এবং তৎসংশ্লিষ্ট সম্পূরক ও সুনির্দিষ্ট টেমপ্লেট-এর একসাথে আসার সম্ভাব্যতা ৪১৮৯ x ৪১৮৯ তথা ৪(১৮৯+১৮৯=৩৭৮) তথা প্রায় ১০২৭৭, যা বিশ্বজনীন সম্ভাব্যতার সীমা ১০১৫০ কে ছাড়িয়ে যায় (অর্থাৎ, অসম্ভব)। অথচ, পুরোপুরি কপি করতে পারে এরকম একটি রাইবোজাইমে নিউক্লিওটাইড সংখ্যা লাগবে আরও বেশী।  অন্যদিকে, অর্গেল ও জয়েস দেখিয়েছেন যে, এরকম দুটি আরএনএ খুজে পাওয়ার জন্য ১০৪৮ টি অণু খুঁজতে হবে যা পৃথিবীর মোট ভরকে অতিক্রম করে যায়। [৪] অর্থাৎ, আমরা দেখতে পেলাম আরএনএ এবায়োজেনেসিসকে উদ্ধার করতে কোন অবস্থাতেই সক্ষম নয়।

    উপরের দীর্ঘ আলোচনার মধ্য দিয়ে আমরা তথ্য প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম ভাষার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানতে পারলাম। ভাষার ব্যবহারে ইন্টেলিজেন্স-এর গুরুত্ব সম্পর্কে অভহিত হলাম। জীবজগতের ভাষার সৌষ্ঠব, বৈচিত্র ও সৌন্দর্যকে উপলব্ধি করতে সক্ষম হলাম। পরিশেষে, এ সিদ্ধান্তে এসে উপনীত হলাম যে, কোন প্রকার অন্ধ, র‍্যাণ্ডম, অনিয়ন্ত্রিত, বস্তুগত ও প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় জীবজগতের ভাষার আগমন অসম্ভব এবং  জীবজগতের ভাষার আগমন ঘটাতে দরকার একজন বুদ্ধিমান স্বত্তার কার্যক্রম।

    রেফারেন্স:
    ১. Meyer SC. Signature in the Cell. HarperCollins Publisher Inc. 2009; Page: 172

    ২. Dembsky WA. The Design Inference. Cambridge University Press. 1998; Page: 209

    ৩. Rana F. The Cell’s Design. Baker Books. 2009; Page: 175

    ৪. Stephen C. Meyer. Signature in the Cell. HaperCollins Publisher Inc. 2009; Page: 250

  • নাস্তিকতা’ একটি অন্ধবিশ্বাস

    ফিলোসফার অব সায়েন্স কার্ল পপারের সুন্দর একটি কথা আছে-

    If a proposal or hypothesis cannot be tested in a way that could potentially falsify the proposal, then the proposer can offer any view without the possibility of its being contradicted. In that case, a proposal can offer any view without being disproved. [১]

    এ হিসেবে নাস্তিকদের ‘ডেটারমিনিস্ট ম্যাটেরিয়ালিস্ট’ মতবাদটি একটি ‘বিশ্বাস ব্যবস্থা’ তথা একটি ‘ধর্ম’, নাস্তিকরা এই ডেটারমিনিস্ট ম্যাটেরিয়ালিস্ট ব্যবস্থার উপর ‘বিশ্বাস’ স্থাপন করে আল্লাহকে অস্বীকার করছে। লক্ষ্য করবেন, এদের সঙ্গে কথায় মাঝে মাঝে বিষয়টি পরিস্কার হয়ে উঠে। যেমন: এদেরকে ফাণ্ডামেন্টাল ফোর্সেস অব ইউনিভার্সের উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন করলে বলবে তা এমনি এমনি উদ্ভব হয়েছে। তাদের এই উত্তরটি যেমন তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা দ্বারা প্রমাণ করতে পারবে না, তেমনি তাদের এই উত্তরটিকে ভুল প্রমাণও করা যাবে না। কারণ এটি একটি ‘বিশ্বাস’।

    প্রশ্ন হল ‘বিশ্বাস’ হলে অসুবিধে কী? অসুবিধে আছে। মুসলিমরা বিশ্বাস করে এই ফোর্সগুলো আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন এবং মুসলিমরা কখনও দাবী করেনি যে এটা পরীক্ষা করে প্রমাণ করা যাবে। বরং মুসলিমরা এটাই বলছে যে ‘এই ফোর্সগুলো আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন’ এই কথাটায় ‘বিশ্বাস’ করাটাই ইসলামের দাবী।

    “এটি আল্লাহর কিতাব, এর মধ্যে কোন সন্দেহ নেই ৷ এটি হিদায়াত সেই ‘মুত্তাকী’দের জন্যযারা অদৃশ্যে বিশ্বাস করে,  নামায কায়েম করে।” (সুরা বাকারা, আয়াত: ২-৩)

    কিন্তু তথাকথিত নাস্তিকরা তাদের ‘বিশ্বাস’কে একটি সায়েন্টিফিক ডিসগাইজ দিতে চাচ্ছে। তারা তাদের ‘বিশ্বাস’কে বৈধতা দিতে বিজ্ঞানকে অপব্যবহার করছে। তারা এমন ভাবে বিজ্ঞানের কথা বলছে যেন তাদের এই ‘বিশ্বাস’ প্রকৃতপক্ষে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত সত্য। অথচ পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে তাদের এই ‘বিশ্বাস’গুলোও প্রমাণযোগ্য নয়।

    ঈশ্বরকে মেনে নেয়ার দাবীটি বিশ্বাসের। সুতরাং যাদের মেনে নেয়া প্রমাণের উপর নির্ভরশীল, যেমন সৈকত চৌধুরী নামক একজন নাস্তিক রাহাত খানকে প্রতিমন্তব্য করতে গিয়ে বলেছিলেন:

    কিন্তু কেউ যদি ঈশ্বরকে এখানে নিয়ে আসেন তবে তিনি তা প্রমাণ করুক…

    তাদেরই বরং ‘ঈশ্বর নেই’ এটা প্রমাণ করা জরুরী। কেননা বিজ্ঞানের দাবী তারাই তুলছে।

    এই তথাকথিত নাস্তিকরা যে চরম পর্যায়ের অন্ধ বিশ্বাসী তার প্রমাণ বিভিন্ন ভাবে পাবেন। যেমন বিবর্তনের ব্যাপারে বলতে গিয়ে যদি বলেন যে ‘অসংখ্য’ মধ্যবর্তী প্রজাতির ফসিল কোথায়। তারা বলবে প্যালিওন্টোলজী এখনও শুরুর পর্যায়ে, ভবিষ্যতে আবিস্কার হবে। অথচ গত দেড়শ বছরে ১০০ মিলিয়নের উপর ফসিল আবিস্কৃত হয়েছে, যাতে একটিও মধ্যবর্তী প্রজাতি নেই। [২]

    সুপরিচিত ব্রিটিশ বিবর্তনবাদী ও জীবাশ্রমবিজ্ঞানী (প্যালেওন্টোলোজিস্ট) কলিন প্যাটারসন এই বিষয়ে স্বীকারোক্তি দেন-

    No one has ever produced a species by mechanisms of natural selection. No one has ever got near it and most of the current argument in neo-Darwinism is about this question.

    Natural selection is not a mechanism that produces anything new and thus causes species to change, nor does it work miracles such as causing a reptile to gradually turn into a bird. In the words of the well-known biologist D’Arcy Wentworth Thompson, “… we are entitled … to see in natural selection an inexorable force, whose function is not to create but to destroy—to weed, to prune, to cut down and to cast into the fire.” [৩]

    কেন ফসিল রেকর্ডে বিবর্তনের প্রমাণ নেই তা বিখ্যাত নিওডারউইনবাদী প্যালেওন্টোলজিস্ট স্টিভেন জে. গোল্ড এভাবে ব্যাখ্যা করেন-

    The history of most fossil species includes two features particularly inconsistent with gradualism: 1. Stasis. Most species exhibit no directional change during their tenure on earth. They appear in the fossil record looking much the same as when they disappear; morphological change is usually limited and directionless. 2. Sudden appearance. In any local area, a species does not arise gradually by the steady transformation of its ancestors; it appears all at once and ‘fully formed. [৪]

    অন্যদিকে প্যালিওন্টোলজিস্ট নাইল্স এলড্রেজ জীবাশ্ম রেকর্ড দেখে বিবর্তনবাদীদের হতাশা ব্যক্ত করেন এভাবে:

    No wonder paleontologists shied away from evolution for so long. It seems never to happen. Assiduous collecting up cliff faces yields zigzags, minor oscillations, and the very occasional slight accumulation of change over millions of years, at a rate too slow to really account for all the prodigious change that has occurred in evolutionary history. [৫]

    সুতরাং তাদের দাবীটির ভিত্তি হল ‘অন্ধবিশ্বাস’।

    তারা বলবে মিউটেশনের মধ্য দিয়ে বিবর্তন হচ্ছে। অথচ অসংখ্য পরীক্ষাগারে কোটি কোটি মিউটেশনের ঘটনা ঘটানো হয়েছে, এখন পর্যন্ত একটি উদাহরণও নেই যে মিউটেশনের মাধ্যমে একটি ব্যাকটেরিয়া প্রজাতি আরেকটি ব্যাকটেরিয়া প্রজাতিতে পরিণত হয়েছে। অপেক্ষাকৃত বড় প্রাণীদের ব্যাপারে তারা বলবে যেহেতু বিবর্তন হতে মিলিয়ন মিলিয়ন বছর পার হতে হয়, ফলে আমাদের পক্ষে এই বিবর্তন পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব নয়। (যে কথাটা লুকিয়ে আছে: ‘বিবর্তন’ বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব হলে কি হবে? আমরা ‘বিশ্বাস’ করে ধরেই নিয়েছি যে বিবর্তন হয়েছে) কিন্তু ব্যাকটেরিয়ার ব্যাপারটাতে তাদের গল্পটি কী? ব্যাকটেরিয়ার ‘জেনারেশন টাইম’ তো খুব দ্রুত। (ব্যাকটেরিয়ার একটি নির্দিষ্ট কলোনী যে সময়ে সংখ্যায় ঠিক দ্বিগুন হয়ে যায় তাকে বলে জেনারেশন টাইম) পরীক্ষাগারে বিজ্ঞান জগতে খুব পরিচিত ব্যাকটেরিয়া E. coli এর জেনারেশন টাইম মাত্র বিশ মিনিট। অর্থাৎ যদি E. coli এর একটি ১০০ ব্যাকটেরিয়ার কলোনী নেয়া হয় তবে বিশ মিনিটের মধ্যে সেটি ২০০ ব্যাকটেরিয়ার কলোনীতে পরিণত হবে। [৬]

    এখন পর্যন্ত ব্যাকটেরিয়া নিয়ে ডারউইনবাদী বিবর্তনের সবচেয়ে বড় পরীক্ষাটি করেছেন বিবর্তনবাদী বিজ্ঞানী রিচার্ড লেনস্কি। সেই ১৯৮৮ সাল থেকে পরীক্ষা শুরু হয়েছে, এখনও চলছে। ২০১২ সাল নাগাদ E. coli-র ৫০০০০ জেনারেশন পার হয়েছে। এগুলো নিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে, প্রতি ৫০০ জেনারেশন পর E. coli-র স্ট্রেইনগুলো নিয়ে সেগুলোর জেনেটিক স্টাডি করা হয়েছে। অথচ, এখনও পর্যন্ত E. coliE. coli-ই রয়ে গেছে! [৭]

    তারপরও এই পরীক্ষা অব্যাহত রাখা হয়েছে, এই ‘বিশ্বাস’-এ যে ডারউইনবাদ প্রমাণিত হবেই। অথচ মিউটেশনের মধ্য দিয়ে আদৌ কি কোন ডারউইনবাদী বিবর্তন সম্ভব? বিজ্ঞানীরা খুব ভালমতই জানেন যে প্রাণীকোষে কোন ‘জেনেটিক ইরর’ হয়ে গেলে সেটা সংশোধনের জন্য প্রাণীকোষেই অত্যন্ত পরিকল্পিত সিস্টেম তৈরী করা আছে। ফলে কোন মিউটেশন হয়ে তা পরবর্তী জেনারেশনে সঞ্চালিত হওয়ার সম্ভবনা নগন্য। প্রকৃতপক্ষে, অধিকাংশ জ্বিনের মিউটেশনের হার হল প্রতি ১,০০,০০০-এ একটা এবং যে মিউটেশনগুলো হয় তার অধিকাংশই ক্ষতিকারক। [৮]

    এরপরও যদি ধরে নেয়া হয় যে মিউটেশন উপকারী হতে পারে, তারপরও মিউটেশনের মাধ্যমে জ্বিন পরিবর্তন হয়ে একটি নতুন বৈশিষ্ট্য অভিযোজন হতে যে পরিমাণ সময় দরকার তা বিবর্তনবাদীদের কল্পনার জন্যও বেশী। অন্তত এম.আই.টি-র প্রফেসর মুরে এডেন এবং বিবর্তনবাদী জর্জ গেইলর্ড সিম্পসনের হিসেব থেকে সেটাই বোঝা যায়:

    In a paper titled “The Inadequacy of Neo-Darwinian Evolution As a Scientific Theory,” Professor Murray Eden from the MIT (Massachusetts Institute of Technology) Faculty of Electrical Engineering showed that if it required a mere six mutations to bring about an adaptive change, this would occur by chance only once in a billion years – while, if two dozen genes were involved, it would require 10,000,000,000 years, which is much longer than the age of the Earth. [৯]

    The evolutionist George G. Simpson has performed a calculation regarding the mutation claim in question. He admitted that in a community of 100 million individuals, which could hypothetically produce a new generation every day, a positive outcome from mutations would only take place once every 274 billion years. That number is many times greater than the age of the Earth, estimated to be at 4.5 billion years old. These, of course, are all calculations assuming that mutations have a positive effect on the generations which gave rise to them, and on subsequent generations; but no such assumption applies in the real world. [১০]

    তথাপি নাস্তিকরা কেন মিউটশনকে বিবর্তন সংঘটনের ‘প্রভু’ মনে করে? উত্তর ‘অন্ধবিশ্বাস’; এছাড়া, বিলিয়ন বছরের ব্যবধানে কোন জীব মিউটেশনের মধ্য দিয়ে অন্য একটি জীবে পরিবর্তিত হয়নি তার প্রমাণ হল ৩.৫ বিলিয়ন বছর পুরোনো আর্কিয়া (বা আর্কিব্যাকটেরিয়া); বিলিয়ন বছর আগেও যেমন তাদের উত্তপ্ত ঝরণায় পাওয়া যেত, আজও তাদের গ্র্যাণ্ড প্রিজমেটিক লেকের মত উত্তপ্ত জলাশয়ে পাওয়া যায়। [১১]

    বিবর্তনবাদীদের তথাকথিত প্রথম কোষটি কিভাবে উদ্ভব হল সে বিষয়ে তো এখনও প্রশ্ন করাই হয়নি। ‘কোষ’ বললে বিষয়টি অনেক জটিল হয়ে যায়, ১৫০ অ্যামাইনো এসিড সম্বলিত একটি মাঝারি আকৃতির প্রোটিন কিভাবে দৈবাৎ দূর্ঘটনার মধ্য দিয়ে এলো সেটাই না হয় ব্যাখ্যা করুক। অথচ,

    ডগলাস এক্স যে বিষয়গুলো সম্ভাব্যতা কমাতে পারে সেগুলোকে বিবেচনায় নিয়ে (অর্থাৎ বাদ দিয়ে) ১৫০টি অ্যামাইনো এসিডের একটি প্রোটিন তৈরী দূর্ঘটনাক্রমে হওয়ার সম্ভাব্যতা হিসেব করেছেন ১০ এর পরে ১৬৪টি শূন্য বসালে যে সংখ্যাটি হয় (তথা ১০১৬৪) এর মধ্যে ১ বার। বিল ডেম্ব্সকি হিসেব করে দেখিয়েছেন আমাদের দর্শনযোগ্য মহাবিশ্বে ১০৮০টি এলিমেন্টারি পার্টিকল আছে, বিগব্যাং থেকে এখন পর্যন্ত ১০১৬ সেকেণ্ড পার হয়েছে এবং দুটো বস্তুর মধ্যে যে কোন বিক্রিয়া প্ল্যাঙ্কটাইম ১০-৪৩ সেকেণ্ড এর চেয়ে কম সময়ে হতে পারে না। এ সবগুলো সংখ্যাকে একত্রিত করলে দাড়ায় ১০১৩৯; অর্থাৎ মহাবিশ্বের বয়স, মহাবিশ্বের গাঠনিক এলিমেন্টারি পার্টিকেলের সংখ্যা এবং পার্টিকেলের মধ্যে বিক্রিয়া হতে ন্যূনতম প্রয়োজনীয় সময়কে একত্রে বিবেচনার পরও উপর্যুক্ত প্রোটিনটি তৈরী হওয়ার সম্ভাব্যতা ট্রিলিয়ন ভাগ পিছিয়ে পড়ে। সহজ কথায় উক্ত প্রোটিনটি তৈরী হতে এখন বিলিয়ন ট্রিলিয়ন সেকেণ্ড (১০২৫বা ১০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০ বা দশ লক্ষ কোটি কোটি সেকেণ্ড বা একত্রিশ কোটি বিলিয়ন বছর) অতিবাহিত হতে হবে। [১২, ১৩]

    কিন্তু নাস্তিকরা বলে উঠবে ‘সম্ভাব্যতার বিষয়টা আপনি বুঝেননি’; কারণ, নাস্তিকদের অন্ধবিশ্বাস অনুযায়ী যে কোন অসম্ভব ঘটনা যা ঘটানোর জন্য সুপরিকল্পিত কাঠামো, ডিজাইন এবং জ্ঞান দরকার তা দূর্ঘটনাক্রমে (by chance) সম্ভব হয় (!)

    রেজওয়ান আহমেদের সাথে ফেসবুকে আমার একটি তর্ক হয়েছিল বিবর্তনবাদ নিয়ে, শেষ পর্যায়ে এসে তার মন্তব্যটি এরকম:

    Abdullah Saeed Khan: আপনি যতগুলো প্রানির নাম নিলেন, তাদের টিকে থাকার ইতিহাস খুজতে গেলে তো খবর আছে। আপনিয়েই বরং নিয়েন, তবে আমার কাছে মনে হচ্ছে “survival the fittest” নিয়ামকটাই হয়ত এদের টিকে থাকার কারণ। আর আমি যা দেখছি আপনি বিবর্তনের সমালোচনা করতেছেন কিন্তু refuse করতেছেন না। বিজ্ঞানের মুল মজা তো যোগ্য সমালচনায়। যাই হোক আজকে আলোচনা করে ভাল লাগল। ভাল থাকিয়েন। [১৪]

    সুতরাং কাদের বিশ্বাসটি যে ‘অন্ধবিশ্বাস’ সেটি স্পষ্ট বুঝা যায়। পরিশেষে নাস্তিকতা নামক অন্ধ বিশ্বাসের আরেকটি উদাহরণ দিয়ে পোস্টটি শেষ করছি:

    In this philosophy (Determinist Materialist), observable matter is the only reality and everything, including thought, will, and feeling, can be explained only in terms of matter and the natural laws that govern matter. The eminent scientist Francis Crick (codiscoverer of the genetic molecular code) states this view elegantly (Crick and Koch, 1998): “You, your joys and your sorrows, your memories and your ambitions, your sense of personal identity and free will, are in fact no more than the behavior of a vast assembly of nerve cells and their associated molecules. As Lewis Carroll’s Alice might have phrased it: ‘You’re nothing but a pack of neurons (nerve cells).’” According to this determinist view, your awareness of yourself and the world around you is simply the by-product or epiphenomenon of neuronal activities, with no independent ability to affect or control neuronal activities.

    Is this position a “proven” scientific theory? I shall state, straight out, that this determinist materialist view is a “belief system”; it is not a scientific theory that has been verified by direct tests. It is true that scientific discoveries have increasingly produced powerful evidence for the ways in which mental abilities, and even the nature of one’s personality, are dependent on, and can be controlled by, specific structures and functions of the brain. However, the nonphysical nature of subjective awareness including the feelings of spirituality, creativity, conscious will, and imagination, is not describable or explainable directly by the physical evidence alone. [১৫]

    তথ্যসূত্র:

    [১] Benjamin Libet, Mind Time: The Temporal Factors in Consciousness; page: 3
    [২] http://www.harunyahya.com/en/Brief-Explanations/4793/FOSSILS-HAVE-DISCREDITED-EVOLUTION

    [৩] Colin Patterson, “Cladistics”, Brian Leek ile Röportaj, Peter Franz, 4 Mart 1982, BBC;

    Lee M. Spetner, Not By Chance, Shattering the Modern Theory of Evolution, The Judaica Press Inc., 1997, s. 175
    Retrieved from: http://www.harunyahya.com/en/books/152365/Atlas-Of-Creation—Volume-4-/chapter/14297/Part-3—Darwinists-have-Deceived-the-Whole-World-with-Frauds—2
     

    [৪] Stephen J. Gould, “Evolution’s Erratic Pace,” Natural History, Vol. 86, No. 5, May 1977, p. 14 [Emphasis added]

    [৫] Niles Eldredge, Reinventing Darwin: The Great Evolutionary Debate, [1995], phoenix: London, 1996, p. 9; Retrieved from: http://www.living-fossils.com/2_1.php

    [৬] http://textbookofbacteriology.net/growth_3.html

    [৭] http://myxo.css.msu.edu/ecoli/overview.html

    [৮] William A. Dembski, Jonathan Wells, The Design in Life, Page: 44 

    [৯] Gordon Rattray Taylor, The Great Evolution Mystery, Sphere Books Ltd., 1984, s. 4; Retrieved from: http://www.harunyahya.com/en/books/152365/Atlas-Of-Creation—Volume-4-/chapter/14297/Part-3—Darwinists-have-Deceived-the-Whole-World-with-Frauds—2

    [১০] Nicholas Comninellis, Creative Defense, Evidence Against Evolution, Master Books, 2001, s. 81
    Retrieved from: http://www.harunyahya.com/en/books/152365/Atlas-Of-Creation—Volume-4-/chapter/14297/Part-3—Darwinists-have-Deceived-the-Whole-World-with-Frauds—2 [Emphasis added]

    [১১] আর্কিব্যাকটেরিয়া থেকে আর্কিঁয়া: বিবর্তনবাদীদের অস্বস্থি

    [১২] Stephen C. Meyer, Signature in The Cell;

    [১৩] পাভেল আহমেদ, বিবর্তনবাদ ও তার সমস্যা – ৭: সম্ভাবনার অসম্ভাব্যতা ২ বিবর্তনবাদ ও তার সমস্যা – ৮: সম্ভাবনার অসম্ভাব্যতা ৩ (ছক্কা বনাম প্রোটিন)

    [১৪] প্রোটিনের গঠনে আল্লাহর নিদর্শণ

    [১৫] Benjamin Libet, Mind Time: The Temporal Factors in Consciousness; page: 4,5 [Emphasis added]