আলোকিত প্রভাত

একাকী দাড়িয়ে কি দেখছ আকাশে?

চাঁদের কোমল আলো?

অজস্র তাঁরা?

অবিমিশ্র অনুভূতি প্রতিটি নি:শ্বাসে

যাচ্ছ কি হারিয়ে কোথাও?

স্মৃতির গহীন কোণে-

আলতো আলিঙ্গন,

মিষ্টি দু-তিনটে কথা

কিংবা চায়ের টেবিলে আড্ডায় জমে যাওয়া।

যে বন্ধু তোমায় ফেলে চলে গেছে বহুদূর,

নিষ্ঠুর, উন্মাদ;

কেন তার দিকে ফিরে চাও?

পৃথিবীর প্রতিটি পথে অজস্র গোলাপের কাঁটা

তা-ই কেটে চলতে হবে পথ।

তোমার রক্তে রঞ্জিত,

তোমার শ্রমে সঞ্চিত ভোর হবে-

নতুনের আলোকিত প্রভাত।

সিদ্ধান্ত

সবুজে শ্যামলে সোনালী ফসলে                নব ঘন মেঘে বৃষ্টির জলে
নীলাভ গগনে গোলাপে কমলে                 সুমিষ্ট স্বাদ নানা রঙ ফলে
                            তোমাকে পেয়েছি খুঁজে,

খুঁজে যে পেয়েছি হারানো ছন্দ                কাটিয়ে ধকল কাটিয়ে দ্বন্দ্ব
কাটিয়ে দ্রোহ হটায়ে মন্দ                      হর্ষিত মন কি যে আনন্দ!
                           চিনেছি তোমাকে- বুঝে।

তোমাকে পেয়েছি গহীন কাননে              ঊষার আলোতে গোধূলি লগনে
কল কল জলে ঢেউয়ে কলতানে             কিচির মিচির পাখিদের গানে
                           জেনেছি তোমাকে আজি

তাইতো জীবনে করেছি লক্ষ্য                তোমার পথের হইতে রক্ষ
যা-ই ভাল তাই- খুলে এ বক্ষ                শিখিয়ে নিজেকে করব দক্ষ
                             জীবন রাখব বাজি।

আসুক শতধা বিদ্রূপ তীর
যুক্তির বানে হবে অস্থির
বিশ্বাসে পাবে মুক্তি পথিক
জিঞ্জির ভেঙ্গে মিথ্যা রাহি’র।

শীর্ণ বস্ত্রে জীর্ণ গাত্রে হুতাশন-সম দীপ্ত নেত্রে
উর্ধ্ধে উঠিয়ে প্রজ্ঞার শির-
নাস্তিকতার দেয়াল উপড়ে
শঠধূর্তের চোয়াল চাপড়ে
গ্রেনেডে বুলেটে বুক পেতে হব শহীদ অথবা গাজী,
তবু ধরণীর বুকে ‘ভণ্ড-বাঁদর’ দেখতে নই আজ রাজী।

………………………..
রক্ষ: রক্ষক
হুতাশন : আগুন
রাহি : অভাব
গ্রেনেডে বুলেটে: যুক্তিতে ব্যর্থ অবিশ্বাসীদের গালাগালি, মিথ্যাচার, ষড়যন্ত্র, জোর প্রয়োগ এবং পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে অস্ত্রের প্রয়োগ
ভণ্ড-বাদঁর : মুক্তমনা নামধারী ভন্ড যারা নিজেদের বাঁদর জাতীয় প্রাণীর বংশধর মনে করে
……………………..

সময় ফুরিয়ে এলো

বছর পেরিয়ে গেল।

আনন্দ আর ফুর্তি করেই কাটিয়ে দিয়েছ বেলা,

জীবন নামের আমানত তুমি ভেবেছ শুধুই খেলা?

স্রষ্টার প্রিয় সৃষ্টি হয়েও সব দায়িত্ব ভুলে

পৃথিবী নামক ধাঁধাঁর পিছনে ছুটেছ বাউণ্ডুলে।

সময় পেরিয়ে গেলো,

তোমার হাশর দিনের খাতায় কতটা পুণ্য হল?

মনোযোগ দিয়ে শোনো,

নিজের স্বার্থে বিকানো সময়- কাজে আসবে না কোন-

যদি না সে কাজে বিচার দিনের প্রস্তুতি তব থাকে।

আরশের ছায়া’ তালিকায় তব নাম যদি নাই রাখে, 

তীব্র রোদের খরতাপে তব ক্লান্ত দগ্ধ দেহ,

তৃষ্ণা মেটাতে কাউছার’ জল দেবে না সেদিন কেহ-

নবীজির প্রেম ছাড়া,

কোথায় তোমার প্রমোদ বন্ধু কোথায় আজকে তারা?

কাজে আসবে না কেউ,

বহতা নদীর জলরাশি ন্যায় চলছে সময় ঢেউ।

সময় ফুরিয়ে এলো

অথচ তোমার জীবন এখনো অগোছালো এলোমেলো।

ক্ষণিক সময় আছে,

ফিরে এসো, ফিরে এসো তুমি তোমার রবের কাছে।

তাঁর স্মরণেই মুখরিত হোক তোমার প্রতিটি ক্ষণ,

তাঁর পানে তব ফিরে চল নিয়ে শীতল শান্ত মন।    

-৩১/১২/২০১৯

প্রত্যাবর্তন

এ শহর,
চক্ষু থেকেও অন্ধ ছিল
দ্বার খোলা তাও বন্ধ ছিল
জীবন ছেড়ে মৃত্যুমুখী ধন্দে ছিল।

সে সময় আকাশ ফুঁড়ে আলোক এসে পড়ল ভেঙ্গে।
এ গ্রামের,
কিশোর-তরুণ-যুবকরা সব মিথ্যা ফেলে
ছুটছে দেখ প্রভুর তরে পাখা মেলে
এ যেন নতুন প্রাণের রঙিন আলো জ্বলছে রেঙ্গে।

এ সাগর,
উথাল-পাথাল ধ্বংসে মাতাল আছাড় হানে
গর্জে উঠে ঝড়-তুফানে মৃত্যু পানে।
এ নাবিক,
ঝঞ্ঝা-মুখর সিন্ধু-বুকে দাঁড় টেনে যায়
অন্ধকারের পর্দা চিড়ে আলোর পানে।

এ দেশের,
তরুণরা আজ নিঝুম রাতে সেজদা করে
জায়নামাজে অশ্রু ছেড়ে স্রষ্টা তরে।

এ দেশের,
ঘরে ঘরে আছে আলোর মশাল
অনন্তকাল জ্বলছে,
ইসলাম যার দীপ্তি রেখা
আঁধার রাতের প্রলয় শিখা,
মিথ্যা ফুঁড়ে চলছে।

….
সাঈদ
১৩/০১/২০২০

ভূমিকম্প

বার বার ফিরে আসে,

রক্ত শিহরী শংকিতকারী ধ্বংসকারীর বেশে,

প্রলয়ঙ্কর কম্পন হানে প্রশ্বাসে নি:শ্বাসে

প্রাণনাশ করে বিনাশ করে সে ফেটে পরে উল্লাসে

গুপ্ত কেন্দ্রে সুপ্ত থেকে সে প্রাপ্তির হাসি হাসে

বার বার ফিরে আসে।

জাপান তুরস্ক, গুজরাট-ইরান, হানা দেয় দেশে দেশে,

চমকে উঠি, হঠাৎ এসে সে শেষ করে এক গ্রাসে,

ধ্বংসাবশেষ স্তূপীকৃত, মৃত্তিকা ভরা- লাশে,

আকাশ বাতাস পৃথিবীব্যাপী লাশের গন্ধ ভাসে

বার বার ফিরে আসে।

কম্পে প্রকম্পে হাসি হাসে মহাত্রাসে

বিশৃঙ্খল পিশাচ ইতর মানবগোষ্ঠী নাশে

সৎ সাচ্চা মানুষেরে হানে সৃষ্টির বিন্যাসে

চৌচির মাটি, শয়তান ঘাটি, উপরে সে উচ্ছ্বাসে

বার বার ফিরে আসে।

মূর্খ মানব তবু কেন জানি অন্যায় ভালবাসে,

শিক্ষা না নিয়ে প্রকৃতির কাছে, ফিরে যায় অবশেষে,

অশ্লীলতার পাতাল মর্ত্যে, ফুর্তির হাসি হাসে

শাস্তির রূপে, ধ্বংস সাধনে বিনাশকারীর বেশে

তাই, বার বার ফিরে আসে

সে যে বার বার ফিরে আসে।

সাঈদ
০৪/০৪/২০১৪

রহস্যময় পৃথিবী

বসে আছি একা ভাবছি কেন যে

পৃথিবীটা এত মায়াময় এত গূঢ় রহস্যে ঘেরা?

চাঁদের পিঠের কালো দাগ যেন,

সবুজ পাতায় লাল ফুল যেন,

কোমল গালের কালো তিল মত,

মানুষ সৃষ্টি সেরা।

বিশাল সাগরে একলা দ্বীপটি যেমনি দিচ্ছে ভাঁড়,

ধরার সুষমা রূপসী গলেতে পর্বত হয়ে হার,

নিকষ আধারে তারারা জ্বালিয়ে দুষ্টু মিষ্টি বাতি

হলদে প্রভাত রক্তিম ঊষা গড়ছে দিবস রাতি,

তেমনি ভুবনে সবুজ শ্যামল শান্ত ধীর স্থির

রকমারি রঙে অযুত গল্প নিয়ত করছে ভিড়।

সাজিয়ে তুলছে ধ্রুব ক্যানভাস স্রষ্টার রঙ-তুলি,

মরুতে সাগরে গিরিতে শূন্যে তরঙ্গ অঞ্জলি।

পরতে পরতে অজানা শিল্প

অণুতে অণুতে অদেখা কল্প’,

মুগ্ধ নয়নে শিখছি নিত্য

গ্রহ উপগ্রহ শশী আদিত্য

বিজ্ঞানে চলাফেরা,

জানছি কেন যে পৃথিবীটা এত গূঢ় রহস্য ঘেরা।

চোখ ও চোখের পাপড়িতে যেই অনুপম সংযোগ

খাদ্যের সাথে ক্ষুধার তেমনি তৃপ্তিতে যোগাযোগ।

তৃষ্ণা আর্ত মরুপথবাহী পথিকের তরে বারি,

শ্রম-ক্লান্ত শ্রমিকে নিদ্রা প্রশান্তি সঞ্চারী।

উর্বর জমি ক্ষর তপ্ত বৃষ্টিতে প্রাণ তার,

দু:খ-শোকের মিলন লগ্নে সুখ যেন উপহার।

ক্লান্তির সাথে বিশ্রাম করে সর্বদা কোলাকুলি

বিপদের সাথে বিপদমুক্তি সাফাইয়ের সাথে ধূলি

কষ্টের সাথে কেষ্টের যোগ

সুস্থতা সাথে চির-সাথী রোগ

প্রেমের সঙ্গে বিরহের খেলা

জন্মের সাথে মৃত্যর চলা

মাটি হয়ে মাটি ফেরা

বুঝছি কেন যে পৃথিবীটা এত গূঢ় রহস্যে ঘেরা।

কপোলের তিলে, চাঁদে’ কলঙ্কে,  

গোলাপের কাঁটা নিখুঁত অঙ্কে

একে অপরের অংশ হয়েছে মায়াময় বন্ধনে,

গূঢ় রহস্য সঞ্চিত করে

অপরূপ রূপে মোহনীয় স্মরে

নন্দিত স্পন্দনে,

সুমধুর সুরে অবারিত গানে

বর্ণালী রঙে অবিচল প্রাণে

পৃথিবী মমতা ঘেরা,

বুঝেছি মর্মে-

মাটি আলো বারি

বায়ু পশু পাখি

তরুলতা সারি

সবকিছু মাঝে মানুষ কেন যে স্রষ্টা সৃষ্টি সেরা। 

আবদুল্লাহ সাঈদ খান
১৪/০১/২০১৩, ঢাকা 

লেখক

আকাশে উড়ন্ত পাখির মত নই,

নই, পড়ন্ত বিকেলে সোনালী আলো,

পূর্ণিমা রাতের রুপালী পৃথিবী নই।

তবে,

ঘুমিয়ে থাকা শিশুটির মত

ফুলের কোমল কলিটির মত

শুভ্র নূতন ক্যানভাসের ন্যায় বিস্তৃত এ হৃদয়।

জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডে,

অযাচিত রক্ত স্রোতে প্রবেশের আকাঙ্ক্ষা নেই-

জ্ঞানের পিয়াসী এ মন হাতে অস্ত্র চায় না।

এ ক্যানভাস আলফা সেঞ্চুরিকে অতিক্রম করে গেছে-

যেখানে লিখা হবে পুরনো সত্য,

নতুন রূপে।

পৃথিবীর সব স্থূল বুদ্ধির মৃত্যু হবে সে লিখায়,

আত্মা পাবে সত্ত্বার পরিচয়।

সাঈদ
২১/০৩/২০১৪

মেধাবী নই

বইছে জ্ঞানের ঝড়!

উড়ে গেল আমাদের মস্তিষ্ক,

শুষ্ক প্রাণ ভেসে গেল আলোর বন্যায়,

অনন্য আকাঙ্ক্ষার নোঙ্গর ফেলে

অজানার সাগরে,

অতৃপ্ত পরিসরে,

অপেক্ষায় আছি।

উথাল পাতাল জ্ঞানের ঢেউয়ে

প্রবল মেধার বাতাসে,

হারিয়ে যাচ্ছি তলিয়ে যাচ্ছি

অজ্ঞতার অতল গহ্বরে।

সংকিত প্রাণ পুড়ে হল ছাই

দাউ দাউ করে জ্বলা তথ্যের প্রলয় শিখায়।

আমার অনূর্বর মস্তিষ্ক জ্ঞানের দৌড়ে পরাজিত,

সে সামনে থাকা গর্বিত একজন হতে চায় না।

কারণ, সে পিছনে পড়ে যাওয়া নিরানব্বই মস্তিষ্কের

দু:খ দুর্দশায় অংশীদার হতে চায়,

চায়, ছোট ছোট বিচ্যুতি-অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে,

রচনা করতে-

জ্ঞানের মহাবিশ্ব।

আবদুল্লাহ সাঈদ খান

১৪/০১/১৩;

জীবন তরঙ্গ

স্নিগ্ধ সকাল, শুভ্র তমাল, পক্ষী সকল গাচ্ছে,

পুষ্প নবীন, শব্দ বিহীন, মুগ্ধ আখি আঁকছে

কল্পনাতে স্বপ্ন বিলাস, বসন্তের এই লগ্ন,

জীর্ণ অতীত ছিন্ন করে নতুন গড়ায় মগ্ন-

বৃক্ষরাজি, ঊষার আকাশ, জোয়ার ভাটার সিন্ধু,

ষষ্ঠ ঋতু, বিস্তৃত ভূ, মহাকালের বিন্দু,

মানব জগত, তরঙ্গবৎ, উথাল পাথাল থাকবে,

পুরোনো জং আগল ভেঙে, নতুন সময় জাগবে।

চিরন্তন এই নীতি মেনেই চলছে সকল সৃষ্টি,

স্রষ্টা পানে তৃপ্ত মনে করছি নত দৃষ্টি।

ধৈর্য্য শিখে ভরসা রেখে তাঁর পথে গন্তব্য

করছে যারা, সফল তারা- জান্নাহ ভবিতব্য।

১৯.০৩.২০২২

পবন

পাহাড় ছেড়ে জমিন ফেরে’ ঘুরছি বনান্তর,

সাগর পানে গানে গানে ছুটছি অনন্তর,

নদীর সাথে দিনে রাতে আঁকছি ভাবের ছবি,

বৃক্ষ কোলে পাতা দোলে বলছি প্রভাত কবি।

তৃষ্ণা মিটে গ্রীষ্মে, শীতে চলতি উষ্ণ বাহে,

সব প্রজাতি প্রাণের বাতি শক্তি পূর্ণ রাহে

লব্ধ করে, রাত্রি ভোরে, পংক্তি সঞ্চয়ন

উচ্চ তানে বাঁধছে গানে ভক্তি প্রত্যয়ন।

সৃষ্টি সূচি, দুঃখ ঘুচি, ধ্বংস রচি,

ঝঞ্চা আমি, কোমল আমি-

বটের ছায়ায় মুক্ত শীতল উদার সমীরণ,

আমি দখিনা পবন।

২০.০৩.২০২২