Category: জীবনের উৎপত্তি

  • আদিম পৃথিবীতে আদি কোষ বা তার উপাদান প্রোটিন, ডিনএনএ বা আরএনএ দৈবাৎ (Randomly) তৈরী হওয়া আদৌ কি সম্ভব?

    দুদিন আগে সার্বজনিন সম্ভাব্যতার সীমা নিয়ে লিখেছিলাম। বিজ্ঞানী David Abel-এর ভাষায় কোয়ন্টাম ওয়ার্ল্ডের কোন ইভেন্ট-এর ইউনিভার্সাল প্লসিবিলিটি ম্যাট্রিক্স (১) হল ১০^১৪০। অর্থাৎ, কোন ঘটনা ঘটার সম্ভাব্যতা যদি ১০^১৪০-এর মধ্যে একবার হয় এবং উক্ত ঘটনা ঘটার জন্য মহাবিশ্বের সকল পার্টিকেল ও সকল সময় ব্যবহার করার সুযোগ দেয়া হয়, তাহলে ঘটনাটি একবার হলেও ঘটবে। কিন্তু, কোন ঘটনা এই সীমাকে ছাড়িয়ে গেলে উক্ত ঘটনা ঘটবার সম্ভাব্যতা কার্যত শূন্য।

    আমরা জানি, একটি স্বত:বিভাজনশীল কোষের ভেতর ডিএনএ, আরএনএ ও প্রোটিন কমপ্লেক্স থাকতে হবে। চিন্তার সুবিধার্তে ধরে নেই যে পৃথিবীর আদিম পরিবেশে প্রোটিন বা ডিএনএ বা আরএনএ-আগে এসেছে । এরপর ধাপে ধাপে কোষ তৈরী হয়েছে (যা আসলে সম্ভব কিনা আলোচনা সাপেক্ষ)।

    এবার, উপরোক্ত সম্ভাবত্যার সীমার কথা মাথায় রেখে আসুন দেখি আদিম পরিবেশে প্রোটিন বা ডিএনএ বা আরএনএ তৈরী হওয়া সম্ভব কি না।

    প্রোটিন (তথা এনজাইম) আগে আসবে?

    ডিএনএ না থাকলে প্রোটিনের কোড থাকবে কোথায় বা প্রোটিন কাজ করবে কার উপর? এছাড়া, মাত্র ১৫০টি অ্যামাইনো এসিড দিয়ে নির্মিত একটি মাঝারি সাইজের সুনির্দিষ্ট প্রোটিন আসাও গাণিতিকভাবে অসম্ভব একটি ব্যাপার। ডগলাস এক্স-এর হিসেবে অনুযায়ী এর সম্ভাব্যতা ১০^১৬৪। [২] অর্থাৎ, যে কোন র‍্যাণ্ডম ঘটনা এই সীমাকে ছাড়িয়ে গেলে আমাদের মহাবিশ্বে তা ঘটার সম্ভাবনা নেই। একটি মাঝারি সাইজের প্রোটিনের এই অবস্থা। অথচ, আরএনএ পলিমারেজ এনজাইম ১০০০-এর বেশী অ্যামাইনো এসিড যুক্ত তিনটি প্রোটিনের সমন্বয়ে গঠিত হয়। উল্লেখ্য যে, আরএনএ-র কপি তৈরীর জন্য আরএনএ পলিমারেজ এনজাইম লাগবে এবং আরএনএ-র জন্য সুনির্দিষ্ট পরিমানে নিউক্লিউকিওটাইড-এর যোগান সুনির্দিষ্ট তরল মাধ্যমে থাকতে হবে।

    ডিএনএ আগে আসবে?

    ডিএনএ থেকে তথ্য পড়বে কে? যদি ডিএনএ অণু এমন কোন গঠন তৈরী করতে সক্ষম হত যা এনজাইমের মত কাজ করে তাহলেও চিন্তা করার সুযোগ থাকতো। কিন্তু, আমরা জানি, ডিএনএ বৈচিত্রপূর্ণ গঠন তৈরী করতে পারে না। অর্থাৎ ডিএনএ কোন ক্রিয়াশীল এনজাইম বা স্ট্রাকচারাল প্রোটিনের মত গাঠনিক বৈচিত্র তৈরী করতে অক্ষম। সুতরাং বাকী রইল আরএনএ। আরএনএ কি কেমিকেল এভল্যুশন তথা এবায়োজেনেসিসকে উদ্ধার করতে পারবে?

    বিজ্ঞানীরা ল্যাবরেটরীতে এমন এক ধরণের আরএনএ সংশ্লেষ করতে পেরেছেন যা নিয়ন্ত্রিত ও সুনির্দিষ্ট পরিবেশে এনজাইম হিসেবে কাজ কোরে আরএনএ পলিমারাইজেশনেকে (অর্থাৎ আরএনএ থেকে আরএনএ তৈরী হওয়া-কে) প্রভাবিত করতে পারে। অর্থাৎ, একটি সম্পূরক আরএনএ টেমপ্লেট-এর বিপরীতে নিউক্লিওটাইড (A এর বিপরীতে U, U এর বিপরীতে A, G এর বিপরীতে C, এবং C এর বিপরীতে G) যোগ করার মাধ্যমে নিজের একটি কপি তৈরী করতে পারে। এই বিশেষ ধরণের আরএনএকে বলে রাইবোজাইম। এর মাধ্যমে তারা বলতে চাচ্ছেন যে, আদিম পরিবেশে এ ধরণের একটি রাইবোজাইম আসার মাধ্যমে সেল্ফ-রেপ্লিকেশনের সূচনা হয়েছে এবং পরবর্তীতে ‘কোন একটি উপায়ে’ কোষের অন্যান্য গঠনগুলোর (তথা ডিএনএ, ও বিভিন্ন প্রোটিন, ফসফোলিপিড, গ্লাইকোক্যালিক্স) আবির্ভাব হয়েছে! যে কোন ব্যক্তি একটু মাথা খাটালেই বুঝবে এ ধরণের চিন্তা কতখানি অ্যাবসার্ড!

    কিন্তু কেন?

    এক, পৃথিবীর আদিম পরিবেশ ল্যাবরেটরীর মত নিয়ন্ত্রিত ছিলো না।

    দুই, ‘রাইবোজাইম নিজের একটি কপি তৈরী করতে পারে’ এই অবস্থা থেকে ‘আরএনএ প্রোটিনের তথ্য ধারণ করে এবং তা প্রোটিন সংশ্লেষ করে’ এই অবস্থায় যাওয়ার কোন পথ নেই। কারণ, উপরে আমরা ডিএনএ-র ক্ষেত্রে যে রকম বলেছি ঠিক তেমনি কোন্ কোডনটি কোন্ অ্যামাইনো এসিডের জন্য নির্ধারিত হবে সেটি নির্বাচন করা একটি বুদ্ধিমান ‘মাইণ্ড’-এর কাজ। তদুপরি, যদি অপটিমাম ইউনিভার্সাল কোডনের জন্য র‍্যাণ্ডম অনুসন্ধান করা সম্ভবও হতো, সেক্ষেত্রে প্রতি সেকেণ্ডে ১০^৫৫টি অনুসন্ধান চালাতে হতো। কিন্তু, বায়োফিজিসিস্ট হার্বাট ইওকি হিসেব করে দেখিয়েছেন র‍্যাণ্ডম অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় ১.৪০ x ১০^৭০টি সম্ভাব্য কোডনের মধ্যে উক্ত অপটিমাম কোডন সিস্টেমকে খুঁজে বের করতে হবে এবং হাতে সময় পাওয়া যাবে ৬.৩ x ১০^১৫ সেকেণ্ড। [৩] এছাড়াও, রাইবোজোমে যে প্রোটিন সিনথেসিস হয় তাতে অনেকগুলো সুনির্দিষ্ট প্রোটিন ও আর-আরএনএ-র নির্দিষ্ট অবস্থানগত ও তড়িৎ-রাসায়নিক ভূমিকা আছে। অথচ, আরএনএ প্রোটিনগুলোর মত বিভিন্ন ধরণের স্ট্রাকচার গঠন করতে পারে না। কারণ, আরএনএ-র নিওক্লিটাইডের ধরণ সংখ্যা সীমিত এবং তাদের কেমিক্যাল স্ট্রাকচারও অ্যামাইনো এসিডের ন্যায় বৈচিত্রপূর্ণ নয়।

    তিন, রাইবোজাইম নিজের কপি করতে পারে তখনই যখন তার সম্পূরক একটি টেমপ্লেট থাকে। অর্থাৎ, আদিম পরিবেশে সেল্ফ রেপ্লিকেটিং রাইবোজাইম আসতে হলে রাইবোজাইম ও তার সম্পূরক টেমপ্লেট দুটো অণুরই একসাথে আসতে হবে। জনসন ও তার সহকর্মীরা দেখিয়েছেন যে, আংশিকভাবে নিজের কপি তৈরী করতে পারে এরকম একটি রাইবোজাইমের নিউক্লিওটাইডের সংখ্যা ১৮৯। সুতরাং, উক্ত স্পেসিফিক রাইবোজাইম এবং তৎসংশ্লিষ্ট সম্পূরক ও সুনির্দিষ্ট টেমপ্লেট-এর একসাথে আসার সম্ভাব্যতা ৪^১৮৯ x ৪^১৮৯ তথা ৪^(১৮৯+১৮৯=৩৭৮) তথা প্রায় ১০^২৭৭, যা বিশ্বজনীন সম্ভাব্যতার সীমা ১০^১৪০ কে ছাড়িয়ে যায় (অর্থাৎ, অসম্ভব)। অথচ, পুরোপুরি কপি করতে পারে এরকম একটি রাইবোজাইমে নিউক্লিওটাইড সংখ্যা লাগবে আরও বেশী। অন্যদিকে, অর্গেল ও জয়েস দেখিয়েছেন যে, এরকম দুটি আরএনএ খুজে পাওয়ার জন্য ১০^৪৮ টি অণু খুঁজতে হবে যা পৃথিবীর মোট ভরকে অতিক্রম করে যায়। [৪] অর্থাৎ, আমরা দেখতে পেলাম আরএনএ এবায়োজেনেসিসকে উদ্ধার করতে কোন অবস্থাতেই সক্ষম নয়।

    শুধুমাত্র একটা প্রোটিন বা আরএনএ আসতে যদি এত হার্ডেল পার হতে হয়। আপনারা একবার অনুমান করে দেখুনতো অসংখ্য সুনির্দিষ্ট মাত্রা ও গঠনের ডিএনএ, আরএনএ, প্রোটিন, ফসফোলিপিড, কার্বহাইড্রেট, মিনারেল কম্পোজিশান সহ আন্ত:কোষ তরল সমেত কোষ দৈবাৎ আসা কি আদৌ সম্ভব?

    রেফারেন্স:

    ১. Abel DL. The universal plausibility metric (UPM) & principle (UPP). Theor Biol Med Model. 2009;6(1):1–10.

    ২. Meyer SC. Signature in the Cell. HarperCollins Publisher Inc. 2009; Page: 172

    ৩. Rana F. The Cell’s Design. Baker Books. 2009; Page: 175

    ৪. Stephen C. Meyer. Signature in the Cell. HaperCollins Publisher Inc. 2009; Page: 250

  • সার্বজনীন সম্ভাব্যতার সীমা

    সম্ভাব্যতা বা প্রবেবিলিটি শব্দটির সাথে আমরা সবাই পরিচিত। সাধারনের ভাষায় সম্ভাব্যতা বলতে বুঝায়- আমি কোন একটি কাজ করব কি করব না, কোথাও যাবো কি যাবো না, এ ধরনের অনিশ্চয়তামূলক ভাব প্রকাশ। গানিতিক ভাষায় সম্ভাব্যতার অর্থ কাছাকাছি হলেও এটাকে সুনির্দিষ্ট সাংকেতিক ভাষায় প্রকাশ করা হয়। চলুন সম্ভাব্যতার একেবারে সরল কিছু উদাহরণ থেকে এ সম্পর্কে ধারণা নেই। 

    সার্বজনীন সম্ভাব্যতার সীমা
    লুডুর গুটি

    সম্ভাব্যতা:

    একটি লুডুর গুটি কোটে এলোপাতাড়ী ভাবে ফেললে যে কোন একটি সংখ্যা পড়ার সম্ভাবনা = ১/৬

    দুটি গুটি লুডুর কোটে এলোপাতাড়ী ভাবে ফেললে যে কোন দুটি সংখ্যা একত্রে পড়ার সম্ভাবনা = ১/৬ * ১/৬ = ১/৩৬ = ১/৬^২

    তিনটি গুটি কোটে এলোপাতাড়ী ভাবে ফেললে যে কোন তিনটি সংখ্যা একত্রে পড়ার সম্ভাবনা = ১/৬ * ১/৬ * ১/৬ = ১/৩৯৬ = ১/৬^৩

    তিনটি গুটি ফেললে একটিতে ‘১’, দ্বিতীয়টিতে ‘২’ এবং তৃতীয়টিতে ‘৩’ পড়ার সম্ভাব্যতা = ১/৩৯৬ = ১/৬^৩

    একইভাবে, তিনটি গুটি ফেললে একটিতে ‘২’, দ্বিতীয়টিতে ‘৩’ এবং তৃতীয়টিতে ‘৬’ পড়ার সম্ভাব্যতাও = ১/৩৯৬ = ১/৬^৩

    অর্থাৎ, আপনি তিনটি ছক্কার সংখ্যাকে নির্দিষ্টভাবে বলে দিলেও সম্ভাব্না একই এবং তা ১/৩৯৬ তথা ১/৬^৩।

    লক্ষ্যনীয় এখানে ‘^‌’ চিহ্ন দিয়ে ‘টু দি পাওয়ার’ বুঝানো হচ্ছে। এবং মজার বিষয় হল আপনি ছক্কার সংখ্যা এভাবে ‘n’ সংখ্যক বাড়াতে থাকেন, তাহলে যে কোন একটি সংখ্যার পড়ার সম্ভাব্যতা হবে ১/৬^n।  

    লটারীর টিকিট:

    ধরুন, ১০ জন ব্যক্তির একটি গ্রুপ তৈরী করার হয়েছে এবং ১ জনকে উক্ত গ্রুপের লিডার হিসেবে মনোনীত করা হবে। এ প্রেক্ষিতে প্রতিটি ব্যক্তিকে ১ থেকে ৯ পর্যন্ত ৯ টি অংক এবং একজনকে ‘০’ দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে, অর্থাৎ মোট দশটি অংক। এবার, ১০টি কাগজে নাম্বারগুলো লিখে লটারী করা হলো এবং একটি কাগজ উঠানো হল। তাহলে, যে কোন একটি সংখ্যা আসার সম্ভাবনা কত? উত্তর: ১/১০।

    এরকম যদি ১০০ জন ব্যক্তির মধ্যে লটারী করা হয়, যে কোন একজনের ওঠার সম্ভাবনা = ১/১০ *১/১০ = ১/১০০। এক্ষেত্রে ‘০১’ চিহ্নিত ব্যক্তির কাগজটি ওঠার সম্ভাব্যতা যা ‘৫৬’ নম্বর ব্যক্তিটির কাগজ ওঠার সম্ভাব্যতাও তাই =১/১০০।

    মনে করুন, আপনি গুলিস্তান থেকে একটি লটারীর টিকিট কিনেছেন এই আশায় যে আপনি ১,০০,০০,০০০ (এক কোটি) টাকা পাবেন। ধরুন, লটারীর মধ্যে অঙ্কিত সংখ্যাটিতে মোটি দশটি নাম্বার আছে। যেমন: ১৩৪৫৭৮৯৬০২ ।  প্রশ্ন হলো যদি লটারী সম্পন্ন করার দিন কোন কারচুপি না হয় এবং সম্পূর্ণ এলোপাতাড়ীভাবেই যে কোন একটি সংখ্যা তোলার সম্ভাবনা থাকে আপনার এই নাম্বারটি লটারীতে ওঠার সম্ভাবনা কত?

    উত্তর: ১/১০ * ১/১০ * ১/১০* ১/১০* ১/১০* ১/১০* ১/১০* ১/১০* ১/১০* ১/১০ এর মধ্যে একবার

    = অর্থাৎ, ১/১০০,০০,০০,০০০-এর মধ্যে একবার

    = অর্থাৎ, ১০০ কোটি বারের মধ্যে একবার।

    এই সংখ্যাটাকে যদি আমরা পাওয়ারে প্রকাশ করি= ১০^১০।  সুতরাং,আপনার লটারীতে জেতার সম্ভবনা ১০^১০-মধ্যে একবার।

    মজার বিষয় হলো,আপনার সাথে অন্য যে কয়জন কিনেছে তাদেরও জেতার সম্ভবনা একই।

    প্রোবেবিলিটি রিসোর্স:

    উপকরণ

    এখন, ধরুন, আপনি নাছোড় বান্দা আপনার লটারীতে জিততেই হবে, সেক্ষেত্রে আপনি কি করবেন? আপনাকে একাধিক লটারী কিনতে হবে। আপনি যদি একশটি লটারী সংগ্রহ করেন আপনার সম্ভব্যতা বেড়ে দাড়াবে-

    = ১/১০^১০ + ১/১০^১০ +……+ ১/১০^১০ (এভাবে ১০০টি ১/১০^১০)

    = ১০০/ ১০^১০

    = ১/ ১০^৮

    অর্থাৎ, আপনার জেতার সম্ভাবনা বেড়ে দাড়ালো ১ কোটি বাড়ে একবার। কিন্তু এখনও সংখ্যাটা অনেক বড়। তাই আপনি ভাবলেন যে আপনি আপনার যেতার সম্ভাবনা আরও বাড়াবেন। এরকম করতে করতে আপনি যদি নিশ্চিতভাবেই জয়ী হতে চান আপনাকে ১০০ কোটির লটারীর কপিই কিনতে হবে। কেননা সেক্ষেত্রে আপনার জেতার সম্ভাব্যতা দাড়াবে =  ১০^১০ / ১০^১০ = ১।

    লটারীর দাম এক টাকা করে হলেও আপনার কিনতে খরচ পড়বে ১০০ কোটি টাকা। ১০০ কোটি টাকা খরচ করে ১ কোটি টাকা জিততে চেষ্টা করার কোন বোকা লোক কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না।

    এবার চিত্রটি আপনি একটু ভিন্ন ভাবে চিন্তা করুন। ধরুন, আপনি অগাধ টাকার মালিক। আপনি ১ কোটি টাকা কাউকে লটারীর মাধ্যমে দিতে চান। আপনি ১০০ কোটি লটারীর টিকিট ছাপিয়েছেন বিলি করার ইচ্ছায়। আপনি নিশ্চিত হতে চান যে একজন ব্যক্তির কাছে টাকাটা পৌছুবেই। কিন্তু, কিভাবে নিশ্চিত হবেন? উত্তর: আপনাকে ১০০ কোটি মানুষের কাছেই টিকিট পৌছানো নিশ্চিত করতে হবে। কেননা সেক্ষেত্রে যে কোন একজনের হাতে প্রত্যাশিত টিকিটটি পৌছবেই। ধরুণ, আপনি সব টিকিট বিলি করেছেন কিন্তু একটি বাকি আছে। সেক্ষেত্রে-ও সম্ভবনা থেকে যাবে যে উক্ত বাকী টিকিটই বিজয়ী হবে।

    এই যে একশ কোটি লটারীর টিকিট বা একশ কোটি টিকিট ক্রেতা এদেরকে গানিতিক পরিভাষায় বলা হয় ‘প্রোবেবিলিটি রিসোর্স’। অর্থাৎ, আপনি কোন একটি এলোপাতড়ী প্রক্রিয়ায় একটি ঘটনা ঘটার সম্ভবনা বাড়াতে পারবেন সংশ্লিস্ট প্রোবেবিলিটি রিসোর্স বাড়ানোর মাধ্যমে। যেমনটা আমরা উপরে দেখেছি।

    সময়

    কিন্তু, আপনার অনেক বয়স হয়ে গেছে। আপনার হাতে সময় খুব কম। ধরে নিলাম, আপনি চান একশ কোটি লটারী নিজ হাতে বিলি করতে এবং আপনি কম্পিউটারে বসে এটি করতে চাচ্ছেন। এখন আপনি কোন বিশ্রাম না নিয়ে যদি প্রতি মিনিটে একটি করে বিলি করেন সময় লাগবে,

    = ১০০ কোটি মিনিট = প্রায় ১ কোটি ৬৬ লক্ষ ঘন্টা = প্রায় ৬ লক্ষ ৯৪ হাজার দিন = প্রায় ১ হাজার ৯০২ বছর।

    আপনি প্রতি সেকেন্ডে একটি বিলি করলে সময় লাগবে,

    = ১০০ কোটি সেকেন্ড = প্রায় ১ কোটি ৬৬ লক্ষ মিনিট  = প্রায় ২ লক্ষ ৭৭ হাজার ঘন্টা = প্রায় ১১ হাজার ৫৭৪ দিন  = ৩১ বছর

    আপনি প্রতি সেকেণ্ড ১০০টি বিলি করলে সময় লাগবে,

    = ১ কোটি সেকেন্ড =  প্রায় ১ লক্ষ ৬৬ হাজার মিনিট = প্রায় ২ হাজার ৭৭৭ ঘন্টা = প্রায় ১১৫ দিন = ০.৩১ বছর প্রায়

    অর্থাৎ, সময়ও একটি প্রবেবিলিটি রিসোর্স।

    সুতরাং, প্রোবেবিলিটি রিসোর্স তিন ধরনের: উপকরনের সংখ্যা, ঘটনাটি ঘটার জন্য প্রয়োজনীয় সময় (ইভেন্ট টাইম) এবং এভেইলেবল সময়।

    মহাবিশ্বের অংশবিশেষ
    মহাবিশ্বের অংশবিশেষ

    সার্বজনিন সম্ভাব্যতার সীমা

    এতক্ষণ আমরা দেখলাম সম্ভাব্যতার রিসোর্স কি কি ধরনের হতে পারে। এবার চলুন হিসেব করা যাক সার্বজনিন সম্ভাব্যতার সীমা।

    প্রথমে জেনে নিই সার্বজনিন সম্ভাব্যতার সীমা বলতে কি বুঝায়? সার্বজনিন সম্ভাব্যতার সীমা বলতে বুঝায় কোন ঘটনা (যেমন: কোন রাসায়নিক বিক্রিয়া) ঘটার জন্য যে সকল প্রোবেবিলিটি রিসোর্স আছে গানিতিক ভাবে তা সর্বচ্চো কত পর্যন্ত হতে পারে। চলুন উপরের লুডুর গুটির বিষয়টি নিয়ে নিয়ে চিন্তা করি। মনে করুন আপনি একটি গেমস খেলছেন যেখানে আপনাকে বলা হল: আপনাকে লুডুর গুটি ফেলতে হবে এবং যদি ছয়টি ছয় একসাথে পড়ে অথবা একই ক্রমে পড়ে তাহলে আপনি একটি গিফট পাবেন। ধরি, আপনাকে লুডুর গুটির সংখ্যা বেঁধে দেয়া হয়নি এবং আপনাকে যত সময় ইচ্ছে গুটি ফেলার অধিকার দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে আপনি দুইভাবে ছয়টি ছয় এক সাথে বা এক ক্রমে ফেলতে পারবেন।

    • প্রথমত আপনি যদি ‌৬^৬ তথা ৪৬,৬৫৬-টি গুটি একসাথে ফেলেন তাহলে এর মধ্যে নিশ্চিত ভাবেই ছয়টি ছয় পাবেন।
    • আপনার যদি একবার ছয় ফেলতে ১ মিনিট সময় লাগে তাহলে আপনি ৪৬,৬৫৬ মিনিট চেষ্টা করলে একবার অবশ্যই ক্রমান্বয়ে ছয়টি ছয় ফেলতে পারবেন।

    এখানে ৪৬,৬৫৬-টি গুটি বা ৪৬,৬৫৬ মিনিট হলো প্রবেবিলিটি রিসোর্স।

    এখন ধরুন আপনি অতিআনবিক পর্যায়ে একটি ইন্টার‍্যাকশন ঘটার সম্ভাব্যতা হিসেব করছেন। মনে করি ইন্টার‍্যাকশনটি ঘটে সবচেয়ে কম সময়ে। ইন্টার‍্যাকশনটি হবে দুটো পার্টিকেলের (দুটো প্রোটোন বা দুটো নিউট্রন) মধ্যে। তাহলে উক্ত ঘটনাটি ঘটার জন্য প্রয়োজনীয় প্রোবেবিলিটি রিসোর্স কি? এক্ষেত্রে এটির প্রবেবিলিটি রিসোর্স হল-

    • কোন ঘটনা ঘটার সম্ভাব্য সর্বনিম্ন সময় তথা প্ল্যাংক সময় ১০^-৪৩ সেকেন্ড।
    • মহাবিশ্বের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত অতিবাহিত কাল – ১০^১৭ সেকেন্ড
    • দৃশ্যমান মহাবিশ্বের হিসেবকৃত পার্টিকেল সংখ্যা – ১০^৮০

    সুতরাং সার্বজনিন সম্ভব্যতার সীমা = ১০^৪৩ * ১০^১৭ * ১০^৮০= ১০^(৪৩+১৭+৮০) = ১০^১৪০।

    বিজ্ঞানী David Abel-এর ভাষায় এটি হলো কোয়ান্টাম ওয়ার্ল্ডের কোন ইভেন্ট-এর ইউনিভার্সাল প্লসিবিলিটি ম্যাট্রিক্স (১)। অর্থাৎ, কোন ঘটনা ঘটার সম্ভাব্যতা যদি  ১০^১৪০-এর মধ্যে একবার হয় এবং উক্ত ঘটনা ঘটার জন্য  মহাবিশ্বের সকল পার্টিকেল ও সকল সময় ব্যবহার করার সুযোগ দেয়া হয়, তাহলে ঘটনাটি একবার হলেও ঘটবে। কিন্তু, কোন ঘটনা ঘটার সম্ভাব্যতা যদি ১/ ১০^১৪১ হয়,  তাহলে মহাবিশ্বের সকল পার্টিকেল ও সকল সময় ব্যবহার করেও উক্ত ঘটনা এলোপাতাড়ি প্রক্রিয়ায় একবার ঘটবে না।

    তাহলে পাঠক একবার চিন্তা করে বলুনতো, কোন ঘটনা যদি এলোপাতাড়ি ভাবে একবার হবার সম্ভাবনা ১০^১৬৪ হয় মহাবিশ্বের ইতিহাসে উক্ত ঘটনা এলোপাতাড়ি ভাবে ঘটার আদৌ কি কোন সম্ভাবনা আছে?

    অথচ, এর চেয়ে অনেক বেশী অসম্ভাব্য ঘটনা আদিম পৃথিবীতে এলোপাতাড়ি প্রক্রিয়ায় ঘটেছে বলে দাবী করা হচ্ছে। সে সম্পর্কে আমরা জানবো আরেকটি পর্বে। ইন শা আল্লাহ।

    রেফারেন্স:

    ১) Abel DL. The universal plausibility metric (UPM) & principle (UPP). Theor Biol Med Model. 2009;6(1):1–10.

  • জীবনের উৎপত্তি ১: জীবনের উৎপত্তি সম্পর্কে চূড়ান্ত প্রশ্ন

    জীবনের উৎপত্তি নিয়ে পড়ালেখা করলে দেখবেন বিজ্ঞানীরা পদ্ধতিগত বস্তুবাদের (Methodological Naturalism)-এর আলোকে জীবনের বস্তুগত উৎপত্তি ব্যাখ্যার করার জন্য ‘অ্যাবায়োজেনেসিস’ নামক একটি শাখা খুলেছে। এই শাখার মূল উৎস হল জীবনের বস্তুগত উৎপত্তি ব্যাখা করা। অর্থাৎ, কিভাবে আদিম পৃথিবীতে বিদ্যমান রাসায়নিক ও ভৌত নিয়মাবলীর মাধ্যমেই প্রথম কোষ উৎপন্ন হল।

    যদিও বিজ্ঞানী ডারউইনের মতবাদকে এখন অ্যাবায়োজেনেসিস থেকে পৃথক ভাবে উপস্থাপন করা হয় কিন্তু জীবনের উৎপত্তি সম্পর্কে তিনি তার (বস্তুবাদী) মত ব্যক্ত করতে পিছপা হন নাই। তিনি জোসেফ ডাল্টন হুকারকে লেখা একটি পত্রে জীবনের উৎপত্তির সম্পর্কে যা বলছেন তা অনেকটা এরকম: পৃথিবীর আদিম পরিবেশে যদি একটি ‘ইশত গরম ছোট পুকুর’ কল্পনা করা যায় যেখানে সবধরনের অ্যামোনিয়া ও ফসফরাস যৌগ আছে এবং সাথে আছে আলো, উত্তাপ ও বিদ্যুত তাহলে সেখানে হয়ত প্রোটিন তৈরী হয়ে থাকবে যা জীবনের উৎপত্তির কারণ হতে পারে। (১)

    তবে, জীবনের উৎপত্তি সংক্রান্ত ‘প্রিমর্ডিয়াল সোপ’ তত্ত্বের প্রথম প্রবক্তা হচ্ছেন অপারিন ও হেলডেন। এই তত্ত্বানুসারে ‘প্রিমর্ডিয়াল সোপ’ হচ্ছে এমন একটি রাসায়নিক পরিবেশ যেখানে বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির প্রভাবে বিভিন্ন জৈব যৌগ এলোপাতাড়ি ভাবে তৈরী ‘হয়ে থাকবে’, যেখান থেকে প্রাণের উৎপত্তির সূচনা হয়েছে।

    কিন্তু, ‘প্রিমর্ডিয়াল সোপ’ তত্ত্ব যখন দেয়া হয় তখনও ডিএনএ, আরএনএ, প্রোটিন-এর মত কোষের মৌলিক গাঠনিক উপাদান-এর আনবিক গঠন সম্পর্কে কোন ধারণাই ছিল না। কোষের ভিতর যে আরেকটি ‘স্বয়ংক্রিয়’ ও বিশাল ‘রাজ্য’ আছে এ সম্পর্কেও সে সময় কোন ধারণা ছিলো না।

    প্রোটিনের গাঠনিক একক অ্যামাইনো এসিড সম্পর্কে বিজ্ঞানজগত যখন জানলো তখন বিজ্ঞানী মিলার ও ইউরে পৃথিবীর আদিম পরিবেশের একটি ‘ধারণাকৃত’ মডেল তৈরী করে পরীক্ষা চালালেন যে কোন অ্যামাইনো এসিড একা একাই তৈরী হয় কিনা? তাদের পরীক্ষায় প্রোটিন গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ২০টি অ্যামাইনোএসিড-এর মধ্যে সরল কিছু অ্যামাইনো এসিড তৈরী হয়েও ছিলো। কিন্তু, তা এলোপাতাড়ি ভাবে একটি প্রোটিনের গঠন ব্যাখ্যা করতেই সক্ষম নয় একটি কোষের গঠন ব্যাখ্যা করাতো অনেক পরের ব্যপার।
    (এ বিষয়ে আরেকটু বিস্তারিত জানতে পারবেন ২ নং রেফারেন্সে প্রদত্ত লিংক-এ)

    এরপর যত দিন পার হচ্ছে কোষের অভ্যন্তরীন জগতের ডিজাইনের জটিলতা সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানার সুযোগ হচ্ছে এবং উক্ত ডিজাইন-এর পিছনের ডিজাইনারের প্রয়োজনীয়তা আরও প্রকট হচ্ছে।

    তবে, ‘দর্শনগত’ বস্তুবাদের অনুসারীরা তাদের প্রচেষ্টাতে থেমে নেই। তারা চায় যে করেই হোক জীবের উৎপত্তির একটি বস্তুবাদী ব্যাখ্যা দাড় করিয়ে তাদের দর্শনের ভিত্তি হিসেবে তা প্রচার করতে। (৩)

    যাই হোক, বর্তমান পৃথিবীর অন্যতম দামী ‘অনলাইন মার্কেটিং কনসালটেন্ট’ পেরি মার্শাল-এর (৪) বিবর্তনবাদ ও ডিজাইন ইস্যু নিয়ে পড়াশোনা অনেক দিন থেকে। সব ধরনের বায়াসকে একপাশে রেখে তিনি ডারউইন-ডিজাইন ডিবেট ফলো করছেন এবং পড়ছেন। তার পড়াশোনার আলোকে তিনি অনেকদিন ধরে www.cosmicfingerprints.com সাইটটিতে লিখছেন। এই সাইট-এ এবং নাস্তিকদের সবচেয়ে বড় সাইটগুলোতে বাঘা বাঘা নাস্তিকদের সাথে তার ডারউইন-ভার্সাস-ডিজাইন নিয়ে তর্ক হয়েছে। ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাকগ্রাউণ্ড থেকে পড়াশোনা করায় তিনি যখন ডিএনএ-এর গঠন নিয়ে পড়েছেন তখন ইনটুশন থেকে অনুভব করেছেন যে কোন ডিজাইন ছাড়া ডিএনএ স্বয়ংক্রিয়ভাবে আসা সম্ভব না। তিনি তার ডারউইন থেকে ডিজাইনে থিতু হওয়ার গল্প লিখেছেন Evolution 2.0: Breaking the Deadlock Between Darwin and Design-বইতে। তার চেষ্টা হচ্ছে কিভাবে ডারউইন ও ডিজাইনের মধ্যে সমোঝোতা করা যায়। সে প্রেক্ষিতে তার বক্তব্য অনেকটা এরকম যে প্রথম কোষকে ডিজাইন করা হয়েছে যার মধ্যে হয়ত বিবর্তিত হওয়ার ইন-বিল্ট ম্যাকানিজম দেয়া ছিলো।

    তিনি যখন ডারউইবাদী নাস্তিকদের সাথে বিতর্ক করতেন তখন আবিস্কার করলেন যে নাস্তিকরা সবচেয়ে মৌলিক যে প্রশ্নটিতে কোন ভাবেই ব্যাখ্যা দিতে পারছে না তা হল- ডিএনএ-তে ‘জেনেটিক কোড’ কিভাবে এলোপাতাড়ি প্রক্রিয়ায় আসলো? কোড তৈরীর প্রক্রিয়াটি করে মানুষ, যাদের ‘মাইন্ড’ আছে। ‘মাইন্ড’-এর একটি বৈশিষ্ট্য হলো সে রুল তৈরী করতে পারে এবং ভাঙ্গতে পারে। অন্যদিকে কম্পিউটার শুধু নিয়ম ফলো করে। সুতরাং জেনেটিক কোড স্বয়ংক্রিয়াভাবে তৈরী হওয়ার বিষয়টি যদি পরীক্ষা নিরীক্ষা দ্বারা আবিস্কার ও নিশ্চিত করা যায় তা জীবনের উৎপত্তিতো ব্যাখ্যা করবেই সাথে রোবটিক্স থেকে শুরু ইনফরমেশন টেকনোলজির জগতে একটি বিপ্লব ঘটিয়ে দিবে। সে প্রেক্ষিতে তিনি সকলের জন্য উন্মুক্ত একটি চ্যালেঞ্জ দিয়ে রেখেছেন:

    যে কেউ স্বয়ংক্রিয়ভাবে এবং কোন প্রকার বুদ্ধিমত্তা ছাড়া ‘জেনেটিক কোড’ তৈরীর পরীক্ষনিরীক্ষালব্ধ প্রমাণ (Experimental Proof) হাজির করতে পারবে তাকে ৫ মিলিয়ন ইউএস ডলার পুরস্কার দেয়া হবে। তার এই চ্যালেঞ্জটি এখনও কেউ গ্রহণ করতে সক্ষম হয়নি। চ্যালেঞ্জটি নিচের লিংক-এ পাবেন:

    “Artificial Intelligence + Origin of Life Prize, $5 Million USD”
    https://www.herox.com/evolution2.0

    অতএব, জীবনের উৎপত্তি সংক্রান্ত চূড়ান্ত প্রশ্ন হল ‘কিভাবে জেনেটিক কোড’ এল?

    ….
    যারা জার্মানীর ভিসা লাগানোর জন্য নিজের বিশ্বাসকে জলাঞ্জলি দিয়েছেন তারা কেন এই পুরস্কার পাওয়ার চেষ্টা করছেন না। পুরস্কার দেখেছেন? পুরো পাঁচ মিলিয়ন ডলার? তদুপরি আপনার এই আবিস্কার যখন প্যাটেন্ট হবে, চিন্তা করেছেন কি হতে পারে? এটি বিক্রি হবে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারে, আপনি হবেন দুনিয়ার সবচেয়ে বড় ধনী। গুড লাক।

    …..
    ফুট‌নোটস:

    ১. Darwin, C. “To J. D. Hooker 1 February [1871]”. University of Cambridge. Available at: https://www.darwinproject.ac.uk/letter/DCP-LETT-7471.xml
    ২. এ বিষয়ে আরেকটু বিস্তারিত লিখেছিলাম এই লিংক-এ:
    http://shodalap.org/saeeddmc/26145/
    ৩. জীবের উৎপত্তি সংক্রান্ত অনেকগুলো মতবাদ আছে এখন। যেগুলোর একেকটি কোষের একেকটি বিষয়ের উৎপত্তির ব্যাখ্যা দেয়া চেষ্টা করে। উক্ত তত্ত্ব গুলোর কোনটাই সম্পূর্ণ নয়। সব অনুমান নির্ভর ও ত্রুটিপূর্ণ।
    ৪. https://www.perrymarshall.com

  • কোষ সৃষ্টির ‘মুক্তমনা’ পদ্ধতি

    গাছ থেকে একা একা কাঠ হয়ে নৌকা হয়ে যাওয়ার উদাহরণ অথবা লোহার স্তুপের মধ্যে দিয়ে টর্ণেডো যাওয়ার ফলে বোয়িং বিমান হয়ে যাওয়ার উদাহরণ দেয়া হলেই মুক্ত(!)মনারা বলতে শুরু করেন যে এই উদাহরণ জীবিত কোষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

    লক্ষ্যণীয়, এখানে তারা ভাষার খেলা খেলছে। জীবিত কোষ বলতে তারা তাহলে কী বুঝায়? তাহলে কি তারা কোষের মধ্যে কোন আত্মার অস্তিত্ব স্বীকার করছে? অথচ এ ব্যাপারটি তারা কখনই স্বীকার করবে না। তারা বলবে কোষ একটি মলিকিউলার ফ্যাক্টরি আর প্রাণ হল কেমিকাল প্রসেস। এটাই হল ভাষার খেলা কিংবা পিছলানো স্বভাব, যা-ই বলেন। অর্থাৎ একদিকে বলছে বোয়িং ফ্যালাসি অন্যদিকে জীবিত কোষ বলতে তারা কী বুঝায় সে সম্পর্কে একটা ধাঁধার মধ্যে রাখার চেষ্টা করছে।

    অথচ, যদি কোষকে একটি মলিকিওলার ফ্যাক্টরি বিবেচনা করা হয় সেক্ষেত্রেতো সমস্যাটি আরও প্রকট হয়ে পড়ছে। কারণ, একটি ব্যাকটেরিয়া কোষকেও যদি উদাহরণ হিসেবে নিই, কোষের মধ্যে আছে DNA যা কোষের এনজাইম সমুহের Blue Print ধারণ করে। আছে RNA, যা DNA থেকে তথ্য উদ্ধার করে তাকে নিয়ে রাইবোজমের মাধ্যমে এনজাইম সংশ্লেষ করে। আছে অক্সিডেটিভ ফসফরাইলেশন(সাইটোক্রোম সিস্টেম) যা কেমিকেল প্রসেস বজায় রাখার শক্তি সরবরাহ করে ATP তৈরীর মাধ্যমে। এখানে আমি এই যে বললাম DNA করে, RNA করে, সাইটোক্রোম করে, তাহলে কি এদের বুদ্ধিমত্তা আছে? না, বরং এই পুরো প্রসেসটাই অটোমেটেড। আর DNA হল এমন একটা জায়গা যেখানে এনজাইম এর তথ্য প্রোগ্রামিং করে রাখা হয়েছে তথা পরোক্ষভাবে কেমিকেল প্রসেসগুলোকে প্রোগ্রাম করে রাখা হয়েছে। তথাপি তাদের মতে এই কোষ তথা হাইলি প্রোগ্রামড মলিকিউলার মেশিন নাকি প্রিবায়োটিক স্যুপ-এ বাই চান্স তৈরী হয়ে গেছে। আজব ব্যাপার?

    তাদের যুক্তিটা অনেকটা এরকম যে, গাছ থেকে বাই চান্স নৌকা তৈরী হওয়া সম্ভব না কারণ এটা জড়; তবে সিলিকন গুড়া থেকে বাই চান্স মোবাইল তৈরী হওয়া সম্ভব কারণ এটা জীবিত। যদিও মোবাইলের analogy দিয়ে কোষকে একটু বেশী সরলিকৃত করে ফেললাম। তবুও উদাহরণটা দিলাম এই জন্য যে মোবাইলে একটা হার্ডওয়ার আছে এবং এটার মধ্যে কিছু প্রোগ্রামিংও করা আছে। মোবাইলে কমান্ড দিলে যেমন সে ফলো করে (অর্থাৎ এক অর্থে জীবিত ধরে নিলাম!) ঠিক তেমনি ব্যাকটেরিয়া খাদ্য পেলে তাকে সুনির্দিষ্ট কেমিকেল প্রসেসে মেটাবলাইজ করে শক্তি সংগ্রহ করে।

    অর্থাৎ নৌকা বানানোর জন্য বুদ্ধিমান নির্মাতা লাগলেও, কোষের মত একটি অটোমেটেড সফটওয়্যার-বেজড মলিকিওলার মেশিন তৈরী হওয়ার জন্য দরকার ‘মেশিনের মৌলিক উপাদান, সময় এবং চান্স’!!

    এবার, আপনিই বলুন এদের লজিক(?) দেখে হাসব না কাঁদব?