গতদিন ArcGIS দিয়ে স্প্যাটিয়াল ম্যাপিং শিখলাম। নতুন কিছু জানার মধ্যে অসম্ভব মজা। কিন্তু দীর্ঘদিন একই জিনিস নিয়ে পড়ে থাকলে পানসে হয়ে যায়।
মজার বিষয় হল আমাদের ব্রেইনও সবসময় নতুনত্ব খুঁজে নেয়ার জন্য টিউনড। আমাদের চোখের এক ধরনের মুভমেন্ট আছে যাকে বলে স্যাক্কাডস। মূল কথা হল চোখ কোন জায়গায় স্থির থাকলেও খুবই ক্ষুদ্র পরিসরে স্ক্যান করতে থাকে। অর্থাৎ সে এক জায়গায় স্থির থাকে না, সবসময় একটা অসিলেটরী মুভমেন্ট হয়।
এটা যে শুধুমাত্র চোখের ক্ষেত্রে হয় তা নায়। ইন্টারনেট এডিকশন বা পর্ণএডিকশন নামক উত্তরাধুনিক রোগেরও মূল উৎস হচ্ছে, নতুনত্বের প্রতি মস্তিস্কের অদম্য উৎসাহ। এই যে ফেসবুকে ঘন্টার পর ঘন্টা স্ক্রল করছেন সময় কোন দিক যাচ্ছে টের পাচ্ছেন না, তার একটা কারণও সম্ভবত ব্রেইনের উক্ত টিউনিং।
মজার বিষয় হল মানুষের নার্ভাস সিস্টেমের এই ধরনের আরও কিছু উদাহরণ পাওয়া যায়। যেমন মাংসপেশীর সংকোচন প্রসারণ নিয়ন্ত্রনের জন্য দুই ধরনের নিউরণ দিয়ে ব্রেইন ও পেশীতন্তু সংযুক্ত থাকে- আপার মোটর নিউরন এবং লওয়ার মোটর নিউরন। লওয়ার মোটর নিউরনের কাজ হল কন্টিনিউয়াস ইমপালস তৈরী করতে থাকা যেন পেশীগুলো সংকুচিত থাকে। আপার মোটর নিউরনের কাজ হলো লওয়ার মোটর নিউরনকে বিভিন্ন মাত্রায় ইনহিবিট করে মাংসপেশীর মুভমেন্ট নিয়ন্ত্রণ করা।
Will Power
আমাদের স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি তথা ফ্রি-উইল-এর সাথে এর একটা সংযোগ চিন্তা করা যায়। ম্যাটেরিয়ালিস্টদের মতে সব কিছু ডেটারমিনিস্টিক। মানুষের কোন ফ্রি উইল নাই। তারা বেঞ্জামিন লিবেট-এর একটা এক্সপেরিমেন্টকে উদাহরণ হিসেবে টানে যেখানে তিনি দেখিয়েছেন যে, আমরা যখন আমাদের আঙ্গুল নাড়াতে যাই তখন আমাদের চিন্তার আগেই মোটরকর্টেক্স থেকে সংশ্লিষ্ট নিউরনাল সিগনাল তৈর হয়ে যায়। কিন্তু, বস্তুবাদীরা যেটি সঙ্গোপনে এরিয়ে যায় তা হল উক্ত বেঞ্জামিন লিবেট-ই দেখিয়েছেন যে সিগনাল তৈরী আমাদের সবাকনসাশে হলেও, উক্ত সিগনাল হাতে পৌছার আগে থামিয়ে দেয়ার কাজটা আমরা কনসাস উইল দিয়ে করতে পারি।
অর্থাৎ আমাদের ফ্রি-উইল (Free Will) আসলে ফি ফ্রি-ওন্ট (Free Wont’)।
গুনাহ করার ইমপালস মানুষের মধ্যে সহজাত। কিন্তু, উক্ত ইমপালসকে কন্ট্রোল করা হল মানুষের স্বাধীন ইচ্ছাশক্তির চর্চা। নইলে, গুনাহতে গা ভাসিয়ে দেয়া আমাদের ও পশুর মধ্যে পার্থক্য থাকল কোথায়?
… Bibliography:
1. Purves, D. Neuroscience (Textbook) 2. Libet, B. Mind Time: The Temporal Factor in Consciousness
তাকদীরের ধারণা পাওয়ার জন্য সময়ের আপেক্ষিতার ধারণাটা বোঝা দরকার। সময় একটি আপেক্ষিক বিষয়। যেমন ধরুন আমরা এক সেকেন্ড বলতে যে সময়টুকু বুঝি সে সময়টা আপেক্ষিক। কীভাবে?
মনে করুন আমি আপনার থেকে আলোর বেগের কাছাকাছি বেগে দূরে সরে যাচ্ছি। সেক্ষেত্রে আপেক্ষিতা তত্ত্ব অনুসারে আমি যে টাইম ফ্রেমে থাকব সেটির সময় প্রসারিত হয়ে যাবে। অর্থাৎ আমার এক সেকেন্ডের পরিমাণ আপনার এক সেকেন্ডের পরিমান থেকে বেশী হবে। সুতরাং সময় বিষয়টা অবজারভার এর কন্ডিশনের উপর নির্ভর করে।
এখন মনে করুন আপনি একটি ভিডিও দেখছেন। ভিডিওটি যদি আপনি স্বাভাবিক গতিতে দেখতে থাকেন, সেক্ষেত্রে আপনার কাছে মনে হবে ভিডিওর ভিতরের গতি আপনার পারিপার্শ্বের জীবনের গতির মতই স্বাভাবিক। কিন্তু আপনি যদি ফাস্ট ফরোয়ার্ড করেন তাহলে দেখবেন ভিডিওটির ভিতরের জীবনের গতি দ্রুত হয়ে গেছে। খেয়াল করুন ভিডিওতে কী হয়? ভিডিওতে আসলে অনেকগুলো স্থির চিত্রকে আপনার সামনে দ্রুত সঞ্চালিত করা হয়। ফলে আপনার মনে হয় যেন ভিডিওটা জীবন্ত।
এবার আরেকটু গভীর ভাবে চিন্তা করুন। আমাদের এই বাস্তব জীবনটাকে যদি একটি রিয়েলটাইম থ্রি ডাইমেনশনাল ভিডিও ধরা হয়, তাহলে যেটা মনে হবে যে আমাদের জীবন কতগুলো থ্রিডি স্থির চিত্রের সমষ্টি। যেখানে আল্লাহ তাআলা একটির পর একটি ইমেজকে এমন একটি ইন্টারভেলে আমাদের আত্মার সামনে উপস্থাপন করছেন যেন আমাদের কাছে তা চলন্ত মনে হয়।
যদি এভাবে ধরা হয় তাহলে দেখবেন যে, আল্লাহ তাআলা কীভাবে সবকিছু আগে থেকেই জানেন বা লিখে রেখেছেন তা বুঝা কিছুটা সহজ হয়। কেননা তিনি তাঁর অগ্রীম জ্ঞানের ভিত্তিতে আমাদের জীবনের জন্য প্রযোজ্য সবগুলো ইমেজ সৃষ্টি করলেন এবং একটার পর একটা আমাদের সামনে উপস্থাপন করছেন। এ কারণে আমরা সময়ের গণ্ডিতে আবধ্য। (আল্লাহই ভাল জানেন)
এখানে লক্ষ্যণীয় যেহেতু তিনি তার অগ্রীম জ্ঞানের ভিত্তিতে জানেন যে আমরা কীভাবে জীবন যাপন করব, তার মানে এই না যে তিনি আমাকে যে স্বাধীনতা দিয়েছেন (পরীক্ষা করার জন্য) সেটা ভঙ্গ হল। কেননা তিনি আমাকে স্বাধীনতা দিলে পরে আমি যে পথ অবলম্বন করব সেটা তাঁর জানা। এবং যেহেতু আমাকে অস্তিত্বশীল করতে হবে সেহেতু সেই আলোকে সবগুলো ইমেজ তৈরী করে আমাদের সামনে উপস্থিত করছেন। (আল্লাহই ভাল জানেন)
এ বিষয়টি থেকে এটাও বুঝা সহজ হয় যে কীভাবে আল্লাহ সময়ের অধীন নন। আমি উপরে যখন বললাম যে তিনি অগ্রীম জ্ঞানের ভিত্তিতে তৈরী করছেন তখন বুঝতে হবে যে সেটি আমার আপনার সাপেক্ষে অগ্রীম। আল্লাহর সাপেক্ষে অতীত বা ভবিষ্যত বলে কিছু নেই। তিনি সময়ের স্রষ্টা, সময়ের অধীন নন। বর্তমান মহাবিশ্বের অথবা সম্ভাব্য সকল নিয়মের সকল প্রকার মহাবিশ্বের সকল ঘটনাবলী তার সাপেক্ষে ঘটে গেছে। সুতরাং তিনি যখন কোন কিছু সৃষ্টি করতে ইচ্ছে করেন তখন ঐ সৃষ্টিগুলো নিজস্ব সীমাবদ্ধতা ও গণ্ডি সহ তৈরী হয়ে যায় তথা আত্মপ্রকাশ করে। যেমন আমাদের অন্যতম একটি গণ্ডি হচ্ছে সময়।
যেহেতু মহাবিশ্বের সৃষ্টির শুরুর সাথে সাথে সময়ের শুরু হয়েছে সেহেতু বিষয়টি আপনি অনেকটা এভাবে চিন্তা করতে পারেন যে, সময়ের ডাইমেনশন সহ মহাবিশ্ব সৃষ্টির প্রাথমিক পর্যায়ে একটি বিন্দু ছিল। এখানে কল্পনা করুন একটি ত্রিভুজ যার চূড়া C উপরের দিকে। ভূমি AB নিচে। ভূমির সমান্তরালে ঠিক মাঝ বরাবর একটি রেখা xy. মনে করি মহাবিশ্বের শুরুর বিন্দুটি হল ত্রিভুজটির চূড়ার বিন্দু। এই বিন্দুতেই তাহলে বর্তমানে মহাবিশ্বের সকল ঘটনাবলি পুঞ্জিভূত আছে। সুতরাং এখানে সময় হবে স্থির। ত্রিভুজের যতই নিচের দিকে যাবেন দেখবেন সকল ঘটনাবলির ‘পরিমাণটা’ ফিক্সড থাকলো, কিন্তু সময়ের তৈরী হল।( কেননা এখন প্রতিটি ইমেজের মধ্যবর্তী একটা স্থান পার্থক্য তৈরী হল, যেগুলো মূল C বিন্দুতে পুঞ্জিভূত ছিল।) হতে পারে যে আমরা সময়ের এই এক্সপ্যানডিং ইউনিভার্স এর ঠিক মধ্য রেখায় আছি। অন্য কথায় এই xy লাইনটি বরাবর যখন সময় আসলো তখন আল্লাহ সেই লাইন বরাবর আমাদের জন্য সৃষ্ট থ্রিডি ইমেজ গুলো আমাদের আত্মার সামনে দিচ্ছেন। অন্য কথায় রিয়েলটাইম ঘটনাচক্রের এই ক্ষেত্রের সাথে আমাদের আত্মাকে সংযুক্ত করে দিয়েছেন। অথবা হয়ত AB লাইন বরাবর আমরা আছি। দেখুন এখান থেকে কিন্ত এ বিষয়টা পরিষ্কার যে আল্লাহ তাআলা এই টাইম ফ্রেমের বাইরে। একই সাথে তিনি এই ফ্রেমের সকল ঘটনাবলীর স্রষ্টা।
আবার এটাও পরিষ্কার যে কেন তিনি যখন ‘হও’ বলেন, তা হয়ে যায়। কেননা সকল ঘটনা তার সামনে ঘটে গেছে। তিনি টাইম ফ্রেমের বাইরে। তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী যে কোন একটি টাইম ও ঘটনা ফ্রেমে অস্তিত্বশীল হতে পারে। (আল্লাহর এই ‘হও’ বলাটা নি:সন্দেহে মানুষের হও বলার মত নয়) আবার আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা যেহেতু কোন কিছু দিয়েই সীমাবদ্ধ নন, সুতরাং তিনি যা সৃষ্টি করেন তা স্বভাবতই তাঁর মুখাপেক্ষী হয়েই জন্মায়। সবকিছুই স্বভাবজাত ভাবেই তার প্রভুর পবিত্রতা ঘোষণা দিতে থাকে। (অর্থাৎ সৃষ্টির সীমাবদ্ধতাই প্রকাশ করতে থাকে যে স্রষ্টা অসীম)
সুবহানআল্লাহ। আল্লাহ যতটুকু জ্ঞান আমাদের দিয়েছেন তার বাইরে আমাদের কিছুই জানা নাই। আল্লাহই সবকিছু ভাল জানেন।
“আল্লাহ এমন এক চিরঞ্জীব ও চিরন্তন সত্তা যিনি সমগ্র বিশ্ব-জাহানের দায়িত্বভার বহন করছেন, তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই ৷ তিনি ঘুমান না এবং তন্দ্রাও তাঁকে স্পর্শ করে না ৷ পৃথিবী ও আকাশে যা কিছু আছে সবই তাঁর ৷ কে আছে তাঁর অনুমতি ছাড়া তাঁর কাছে সুপারিশ করবে? যা কিছু মানুষের সামনে আছে তা তিনি জানেন এবং যা কিছু তাদের অগোচরে আছে সে সম্পর্কে তিনি অবগত ৷ তিনি নিজে যে জিনিসের জ্ঞান মানুষকে দিতে চান সেটুকু ছাড়া তাঁর জ্ঞানের কিছুই তারা আয়ত্ব করতে পারে না ৷ তাঁর কর্তৃত্ব আকাশ ও পৃথিবী ব্যাপী ৷ এগুলোর রক্ষণাবেক্ষন তাঁকে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত করে না ৷ মূলত তিনিই এক মহান ও শ্রেষ্ঠ সত্তা ৷” (সুরা বাকারা: আয়াত ২৫৫)