Category: বিবর্তনতত্ত্ব

  • নাইলনেজ এনজাইম কি বিবর্তনের উদাহরণ?

    বিবর্তনবাদীরা যখন আপনার কাছে বিবর্তনের পক্ষে কথা বলতে আসবে, আপনি প্রথমেই জেনে নিন সে বিবর্তন বলতে কি বুঝাতে চাচ্ছে? বিবর্তনের উদাহরণ দিতে গিয়ে যদি সে ব্যাকটেরিয়ার ড্রাগ রেজিস্টেন্স, ভাইরাসের নতুন নতুন স্ট্রেইনের ঘটনাকে নিয়ে আসে তাহলে বুঝবেন সে মাইক্রোইভুলিউশনের কথা বলছে, যেটা প্রকৃতিতে অহরহ ঘটছে। আপনি তার কাছে ম্যাক্রোইভুলিউশনের উদাহরণ জানতে চাইবেন।

    যদি সে বলে মাইক্রোইভুলিউশন মিলিয়ন বছরের ব্যবধানে ম্যাক্রোইভুলিউশন করেছে। তখন বুঝবেন তার এই ‘ইনফারেন্স’ এক ধরনের বস্তুবাদী বিশ্বাস, বিজ্ঞান নয়। কেননা মাইক্রোইভুলিউশন একটি নির্দিষ্ট লিমিট পর্যন্ত হয়। এই লিমিট বা সীমাটি হলো যতক্ষণ পর্যন্ত উক্ত ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের বা ইউক্যারিয়টের ‘ভাইটাল’ গাঠনিক উপাদান প্রভাবিত না হয়।  তাকে প্রশ্ন করুন ম্যাইক্রোইভুলিউশনের এমন কোন উদাহরণ দিতে পারবে কিনা যেখানে নতুন কোন গঠনগত ও কার্যকরী প্রোটিন বা প্রোটিন সমষ্টি তৈরী হয়েছে। কেননা, কোন গাঠনিক উপাদান ছাড়া একটি জীবকে আরেকটি ভিন্ন জীবে পরিণত করা অসম্ভব।

    মজার ব্যপার হলো, সে আপনাকে ব্যাকটেরিয়ার বাইরে খুব কমই উদাহরণ দিতে পারবে। মাইক্রোইভল্যুশনের মাধ্যমে প্রোটিন তৈরীর সবচেয়ে প্রকৃষ্ট যে উদাহরণটা আনা যেতে পারে তা হল নাইলনেজ নামক নতুন একটি এনজাইম তৈরীর ঘটনা । নাইলন একটি কৃত্রিম বা সিনথেটিক পলিমার, যেখানে অনেকগুলো সিক্স এমাইনো ক্যাপ্রয়েট নামক যৌগের ডাইমার পর পর যুক্ত হয় বড় একটি চেইন তৈরী করে। নাইলনেজ-এর কাজ হলো এই ডাইমারকে ভেঙ্গে নাইলন পলিমারকে ভাঙ্গা। ফ্ল্যাভোব্যাকটেরিয়াম Arthrobacter sp. K17-এর ‘প্লাজমিড’-এ একটি ফ্রেমশিফট মিউটেশনের মাধ্যমে এই এনজাইমটি তৈরী হয়েছে বলে ধারণা করা হয় (১)।

    নাইলনেজ এনজাইম কি বিবর্তনের উদাহরণ?

    নাইলনেজ এনজাইমের ত্রিমাত্রিক গঠন, উৎস

    এখানে কয়েকটি বিষয় লক্ষ্যণীয়। মিউটেশনটি ঘটেছে প্লাজমিডে, কোন স্ট্রাকচারাল প্রোটিনে নয় এবং ব্যাকটেরিয়ার মূল জিনোমিক এলিমেন্টে নয়। মূলত ফ্রেমশিফট মিউটেশন হলে পুরো প্রোটিন নষ্ট হয়ে অকার্যকর প্রোটিন তৈরী হয়। সুতরাং মূল জিনোমে হলে এবং স্ট্রাকচারাল প্রোটিনে হলে ব্যাকটেরিয়া টিকতে পারতো না। তদুপরী ব্যাকটেরিয়ার প্লাজমিড একটি চলাচলযোগ্য গোলাকার ডিএনএ খণ্ড, যা ব্যাকটেরিয়া পরস্পর আদান প্রদান করতে পারে। এটা ব্যাকেটেরিয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কিছু এনজাইম ও অতিরিক্ত স্ট্রাকচারের জেনেটিক তথ্য ধারণ করে। এটি ব্যাকটেরিয়ার ক্রোমোজমের সাহায্য ছাড়া একাই নিজের কপি তৈরী করতে পারে। ফলে প্লাজমিডে মিউটেশন হলে ব্যাকটেরিয়ার মূল স্ট্রাকচারে কোন পরিবর্তন আসে না।

    ফ্ল্যাভোব্যাকটেরিয়ামে যে ফ্রেমশিফটের ঘটনাটি ঘটেছে সেটিও ‘ইউনিক’।[১] এটি বুঝতে আসুন জানি ফ্রেমশিফটে কি হয়। যারা জেনেটিক্সের প্রাথমিক ধারনা রাখেন তারা জানেন, ডিএনতে চারটি নিউক্লিউটাইড এডেনিন (A), গুয়ানিন (G), সাইটোসিন(C), থায়ামিন(T) বিভিন্ন কম্বিনেশনে পরস্পর যুক্ত থেকে প্রোটিন তৈরীর তথ্য ধারণ করে। প্রতি তিনটি নিউক্লিউটাইড একটি এমাইনোএসিডকে কোড করে। যেমন: GGU কোড করে গ্লাইসিন নামক একটি এমাইনো এসিডকে। ধরুন, CCUGGUUUG একটি ডিএনএ স্ট্রিং। এটি কোড করবে, প্রোলিন-গ্লাইসিন-লিউসিন (CCU-GGU-UUG)। এখন কোন কারণে যদি একটি ডিলেশন মিউটেশন হয় এবং প্রথম ‘C’টি বাদ হয়ে যায় তাহলে স্ট্রিংটি হবে-CUG-GUU-UG()। সুতরাং এ অবস্থায় প্রথম থেকে পড়লে, এমাইনো এসিডগুলো হবে- লিউসিন-ভ্যালিন-(বাস্তবে যেহেতু স্ট্রিং আরও বড় হয় একটি স্টপ কোডন (UGA, UAA, UAG) বা অন্য কোন এমাইনোএসিড)। অতএব, বুঝতেই পারছেন একটি ফ্রেমশিফট মিউটেশন প্রোটিনে কেমন ধ্বংসাত্মক পরিবর্তন আনতে পারে। অধিকাংশ ফ্রেমশিফট মিউটেশনে স্টপ কোডন তৈরী হয় বা অকার্যকরী প্রোটিন তৈরী হয়। কিন্তু ফ্ল্যাভোব্যাকটেরিয়ামে সৌভাগ্যক্রমে একটি ফাংশানাল প্রোটিন তৈরী হয়ে গিয়েছিল যেটি নাইলনকে ব্রেকডাউন করিয়ে ব্যাকটেরিয়াটিকে প্রতিকূল পরিবেশে বাঁচার সুবিধে করে দেয় (লক্ষ্যনীয় সংজ্ঞানুযায়ী প্লাজমিড এই ধরনের কাজই করে থাকে)।

    মজার ব্যাপার হলো, এখানে ফ্রেমশিফট হয়েছে একটি রিপিটেটিভ ইউনিটের যেটা তিনের গুনিতক নয়। রিপিটেটিভ ইউনিটটি ১০টি নিউক্লিউটাইড বিশিষ্ট এবং এর স্টপ কোডন নেই। ফলে এর রিডিং একটি নিউক্লিউটাইড আগে বা পরে থেকে এমনিতেই পড়ার সুযোগ ছিল এবং এই ফ্রেম শিফটের কারণে কোন স্টপ কোডন তৈরী হয়নি। কিন্তু নাইলনেজ এনজাইম তৈরীর ঘটনায় একটি স্টার্ট কোডন তৈরী হয় ইনসারশন ইভেন্টের মধ্য দিয়ে। আর যেহেতু রিপিটিটিভ সিকোয়েন্সটিকে আগে থেকে ফ্রেম শিফট করে পড়ার উপায় ছিল (স্টপ কোডন না থাকায়), ফলে যখন নাইলনেজ এনজাইম ফ্রেম শিফট-এর মাধ্যমে তৈরী হয় এটি নাইলন যুক্ত পরিবেশে সিলেকটিভ এডভানটেজ দেয়ায় ন্যাচারালী সিলেকটেড হয়। (২)

    প্রসঙ্গত, মোডিফিকেশন অব ফাংশন মিউটেশনের মধ্য দিয়ে কোন একটি এনজাইমে এমন পরিবর্তন আসতে পারে যাতে এনজাইমটি তার সাবস্ট্রেটের সাথে প্রায় একই গঠনযুক্ত সাবস্ট্রেট ব্যবহার করতে পারে। মিউটেশনের মধ্য দিয়ে এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটে। সুতরাং নাইলনেজ এনজাইমের পিছনেও এরকম একটি ঘটনা থাকা অসম্ভব না। নেগোরো এবং সহকর্মীরা এই বিষয়টিই বলতে চাচ্ছেন। (দেখুন, পরবর্তী প্যারা) উল্লেখ্য, মোডিফিকেশন অব ফাংশন মিউটেশনের মধ্য দিয়ে কিন্তু সম্পূর্ণ নতুন জেনেটিক তথ্য যুক্ত হয় না। অন্য কথায় যে এনজাইম গ্লুকোজকে ব্যবহার করছে, সে মোডিফিকেশন অব ফাংশন মিউটেশনের মধ্য দিয়ে হয়ত গ্লুকোজের আইসোমার গ্যালাকটোজকে ব্যবহার করতে পারবে, কিন্তু তার পক্ষে কোন এমাইনোএসিডকে ব্যবহার করা সম্ভব হবে না। আবার যে এনজাইমটি পরিবর্তন হলো সে যদি কোন গুরুত্বপূর্ণ মাল্টিপ্রোটিন কমপ্লেক্সের সদস্য হয়, সেক্ষেত্রে তার ফাংশনের মোডিফিকেশন ব্যাকটেরিয়া (তথা অর্গেনিজম)-র ফিটনেস কমিয়ে দেবে। আর মোডিফিকেশন যদি এমন ভাবে হয়, যে এনজাইম তার মূল কাজ একেবারেই করতে না পারে, তাহলে তো ব্যাকটেরিয়াটি সারভাইভ-ই করতে পারবে না। অর্থাৎ, দেখা যাচ্ছে ক্রমান্বয়ে কয়েকটি র‍্যানডম মিউটেশন দিয়ে নতুন স্ট্রাকচার তৈরী প্রাকৃতিক নির্বাচনের কারণেই সম্ভব নয়।  

    একটি এনজাইম যে সাবস্ট্রেট তথা উপাদানের উপর কাজ করে সেটির সাথে কাছাকছি গঠনের উপাদানের উপর কাজ করার যোগ্যতা রাখে। ফলে দেখা যায়, অনেক ‘মোডিফিকেশন অব ফাংশন’ মিউটেশনের মধ্যে দিয়ে একটি এনজাইম পরিবর্তিত হয়ে উক্ত কাছাকাছি গঠনের উপাদানকে শক্ত করে বাঁধতে পারলো (অর্থাৎ স্পেসিফিসিটি পরিবর্তন হলো) এবং বিক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে পারলো। এ ঘটনাকে মাইক্রোইভুলিউশনের মধ্য দিয়ে হোমোলোগাস সাবস্ট্রেটে স্পেসিফিসি পরিবর্তন বলা যায়। যেমন: যে এনজাইম রিবিটলকে (সাবস্ট্রেট)  অক্সিডাইজ (বিক্রিয়া) করতো সে ডিলেশন অব ফাংশন মিউটেশনের ( রিবিটল ডিহাইড্রোজিনেজ এনজাইমের রিপ্রেসর লস) মধ্য দিয়ে রিবিটলের সাথে হোমোলোগাস জাইলিটল বা এরাবিটল ব্যবহার করতে জানে।  Negoro et el.  দেখিয়েছেন নাইলনেজ (যার মূল নাম: সিক্সএমাইনো ক্যাপ্রোয়েট ডাইমার হাইড্রোলেজ) এনজাইমটির কাছাকাছি গঠনের এনজাইম হলো হেক্সাকার্বক্সিলিক এসিড এস্টারেজ তথা কার্বক্সিলএসটারেজ এনজাইম (হোমোলোগাস)। সুতরাং অস্বাভাবিক না যে, পরের এনজাইমটি থেকে মোডিফিকেশন অব ফাংশন মিউটেশনের মধ্য দিয়ে নাইলনেজ তৈরী হতে পারে। (৩)

    নাইলনেজ এনজাইম কি বিবর্তনের উদাহরণ?

    সিক্স অ্যামাইনো হেক্সানয়েট ডাইমার হাইড্রোলেজ, উৎস

    ইন ফ্যাক্ট হয়েছেও তাই। যে জাপানী বিজ্ঞানীরা নাইলোনেজ এনজাইম প্রথম আবিস্কার করেন তাদের পরবতী গবেষণায় প্রমানিত হয় যে নাইলোনেজ এনজাইমে নতুন কোন প্রোটিন গঠন তৈরী হয়নি। বরং, যে প্রোটিন থেকে বিবর্তিত হয়ে নাইলোনেজ এসেছে তাতে পূর্ব থেকেই কার্বক্সিলএস্টারেজ এক্টিভিটি এবং সাথে অল্প মাত্রার নাইলোনেজ এক্টিভিটি ছিল । এমনকি, পরীক্ষা করে দেখা গেছে নতুন নাইলোনেজ এনজাইম কমপ্লেক্স-এর একই সাথে কার্বক্সিলএস্টারেজ ও নাইলোনেজ এক্টিভিটি আছে (৪)। সেক্ষেত্রে এটাকে একেবারে নতুন কার্যকরী প্রোটিন (new functional protein) তৈরীর সংজ্ঞায় ফেলা যাচ্ছে না।

    সুতরাং বিবর্তনবাদীদের উপস্থাপিত এই একটি উদাহরণও প্রশ্নাতীত নয়। অথচ, এরুপ ব্যতিক্রম কিন্তু প্রশ্নবিদ্ধ উদাহরণ এনে তারা মাইক্রোইভুলিউশন থেকে ম্যাক্রোইভুলিউশনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত(!) তথা ইনফারেন্স টেনে ফেলেছে। রিসার্চ মেথোডোলজিতে নাল হাইপোথিসিস বলে একটি কথা আছে। অর্থাৎ কোন কিছুর সাথে কোন কিছুর সম্পর্ক আছে প্রমাণ করতে হলে আগে ধরে নিতে হয়ে সম্পর্ক নাই। তারপর ‘উপযুক্ত’ ও ‘যথেষ্ট’ প্রমাণাদি দিয়ে সেই সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে হয়। বিচারব্যবস্থাতেও অভিযুক্তকে নিরপরাধ ধরেই বিচার করতে হয়। বিজ্ঞানের সকল নিয়মই এভাবে প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। কিন্তু মজার ব্যপার হোলো, বিবর্তনবাদীরা আগে ধরে নেন যে বিবর্তন হয়েছে, তারপর পরীক্ষানিরীক্ষা শুরু করেন। কিন্তু কতগুলো দুর্বল যুক্তির উপর একটি বড় সিদ্ধান্ত দিয়ে দিলে তাকে বিজ্ঞান বলে না, অপবিজ্ঞান বলে।  

    নাস্তিক ডারউইনবাদীরা বিজ্ঞানের ভিতর নিজের অন্ধবিশ্বাস ঢুকিয়ে দিয়ে স্রষ্টায় বিশ্বাসকে বৈজ্ঞানিকভাবে খণ্ডিত করার মিথ্যাচার চালাচ্ছে। অতএব, তাদের এই প্রতারণা ধরিয়ে দেয়া যে কোন সচেতন বিজ্ঞানমনস্ক ব্যক্তির দায়িত্বের মধ্যে পরে।

    রেফারেন্স:

    ১. Venema D. Intelligent Design and Nylon-Eating Bacteria [Internet]. Biologos. 2016. Available from: https://biologos.org/articles/intelligent-design-and-nylon-eating-bacteria

    ২.Dembski W. Why Scientists Should NOT Dismiss Intelligent Design [Internet]. Uncommondescent. 2005. Available from: https://uncommondescent.com/evolution/why-scientists-should-not-dismiss-intelligent-design/

    ৩. Negoro S. et el. X-ray crystallographic analysis of 6-aminohexanoate-dimer hydrolase: molecular basis for the birth of a nylon oligomer-degrading enzyme. J Biol Chem. 2005 Nov 25;280(47):39644-52. Epub 2005 Sep 14

    ৪. Guager A. The Nylonase Story: When Imagination and Facts Collide [Internet]. Evolutionnews. 2017 [cited 2019 Nov 18]. Available from: https://evolutionnews.org/2017/05/the-nylonase-story-when-imagination-and-facts-collide/

    লাস্ট আপডেট: ১৮/১১/২০১৯

  • মানুষের আদি পিতা-মাতা ও বিজ্ঞান সাংবাদিকতা

    সাংবাদিকরা যখন বিজ্ঞান নিয়ে কথা বলেন তখন যে বিজ্ঞানের ‘ছেড়ে দে মা কেন্দে বাঁচি’ অবস্থা হয় তার সবচেয়ে উদাহরণ হল বাংলাদেশের চিকিৎসা বা চিকিৎসকদের নিয়ে করা প্রতিবেদন। ধরে নিলাম অধিকাংশ বাংলাদেশী সাংবাদিকদের নিয়ে এত বড় আশা কঠিন যে তারা কোন বিষয় সম্পর্কে বিস্তর জেনে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ দিবে। কিন্তু পাশ্চাত্যের সংবাদমাধ্যমগুলোর কি অবস্থা? বিজ্ঞানের কোন বিষয়ে তাদের কোন প্রতিবেদনে কি বিশ্বাস করা যায়?

    ব্যক্তিগতভাবে আমার এই ধরনের সকল ‘পপুলার সায়েন্স নিউজ’-এ এক সময় ভালই আস্থা ছিল। কিন্তু, এখন আর তা করতে পারি না। কারণ, বিবর্তনবাদ, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রভৃতি নিয়ে সায়েন্স নিউজ রাইটারদের চটকদার নিউজ পড়ার পর যতবারই একটু গভীরে ঘেটে দেখেছি ততই তাদের তথা সায়েন্স (নিউজ) রাইটারদের প্রতি আমার বিশ্বাস হালকা হয়ে গেছে। সায়েন্স রাইটাররা দুই ধরনের হয়- হয় তারা ভাল জানে এবং জেনে ইচ্ছেকৃত স্পেসিফিক এজেন্ডা (সায়েন্টিজম-এর প্রসার) এর জন্য লিখে, অথবা, তারা জিনিসটা সম্পর্কে না জেনে বা না বুঝে লিখে। সব সায়েন্স নিউজ পোর্টাল এরকম হয় তাও বলছি না। তবু, সায়েন্স নিয়ে কোন ‘নিউজ’ দেখলে চেষ্টা করি মূল রিসার্চটা কি বলেছে একটু ঘেটে দেখার। বিশেষ করে, যদি সময় পাই, যে বিষয়টির টেকনিকাল দিকগুলো সম্পর্কে পড়েছি, অন্তত সে বিষয়গুলো একটু দেখে নেই।   


    যাই হোক, ফেসবুকে ডেইলী মেইলের একটি নিউজ সবাই শেয়ার করছে যাতে বলা হচ্ছে যে, মার্ক স্টিকল ও ডেভিস থেলার নামক দু জন বিজ্ঞানী তাদের ২০১৮ সালের একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখিয়েছেন সমস্ত মানুষ এক জোড়া মানুষ থেকে এসেছে এবং এক লক্ষ বছর আগে একটি সর্বব্যপী দূর্ঘটনায় পৃথিবীর সব স্পিসিস প্রায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।(1)

    এই নিউজ যারা পড়েছেন এবং শেয়ার করেছেন তাদের মধ্যে দু’ধরনের রিসপন্স দেখলাম-
    ১. যারা ডারউইনবাদকে বিতর্কিত তত্ত্ব বলে মনে করেন তারা এই গবেষণাটিকে বিবর্তনের বিপরীতে এভিডেন্স হিসেবে দেখছেন এবং তারা ইমপ্লিসিট ভাবে মনে করছেন যে এই আবিস্কার মেজর রিলিজিওন বর্ণিত ‘আদম-হাওয়া’ থেকে মানুষের আবির্ভাবকে এনডর্স করে।
    ২. যারা ডারউইনবাদকে প্রশ্নাতীতভাবে সত্য মনে করেন, তারা হয় চুপ আছেন বা এই রিসার্চ বিবর্তনতত্ত্বকে এনডর্স করে বলে মনে করছেন।

    আগে থেকে এই ধরনের রিসপন্স সম্পর্কে পরিচিতি থাকায় আমি ভাবলাম মূল রিসার্চটা একটু পড়ে দেখা দরকার। যেই ভাবা সেই কাজ। আর্টিকেলটা পড়লাম। মলিকিউলার ইভল্যুশন সম্পর্কে আইডিয়া না থাকলে আর্টিকেল থেকে মূল বক্তব্য বের করাটা একটু কঠিন। তবে আমি যতটুকু বুঝেছি সেখান থেকে পাঠকদের জন্য আমার দুই পয়সা-
      
    মূল রিসার্চটার টাইটেল হল “Why should mitochondria define species?” এটি প্রকাশিত হয়েছে হিউম্যান ইভল্যুশন জার্নালে ২০১৮ সালের মে মাসে(2)। নিচে আর্টিকেলে মূল বিষয়গুলো নিজের ভাষায় বলার চেষ্টা করছি।

    ১. আমরা জানি, প্রতিটি বহুকোষী জীব-এ মাইটোকন্ড্রিয়া নামক অঙ্গানু থাকে যা এটিপি হিসেবে শক্তি সঞ্চিত রাখে।

    ২. কোষে নিউক্লিয়ার ডিএনএ ছাড়াও মাইটোকন্ড্রিয়ার নিজস্ব ডিএনএ আছে।

    ৩. নিউক্লিয়ার ডিএনএ-তে মিউটেশনের ফলে জীবের ফিনোটাইপে (অর্থাৎ বাহ্যিক আকার আকৃতি ও বৈশিষ্ট্য) পরিবর্তন হয়।

    ৪. কিছু কিছু মিউটেশন আছে যাকে বলে ‘নিউট্রাল মিউটেশন’। কারণ, এই ধরনের মিউটেশনের ফলে প্রোটিনের অ্যামাইনো এসিড সিকোয়েন্সে কোন পরিবর্তন হয় না।

    ৫. কিন্তু, নিউক্লিয়ার ডিএনএ-তে এই ধরনের মিউটেশনের ফলেও ফেনোটাইপে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন  লক্ষ্য করা যায়।   

    ৬. প্রায় সব মিউটেশনই প্রোটিনের মূল ফাংশনের ব্যঘাত ঘটায়- হয় তার কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয় বা বিকল করে ফেলে। ফেনোটাইপে এ ধরনের পরিবর্তন হলে, উক্ত প্রানীটি রিপ্রোডাক্টিভ ক্ষমতা কমে যায়। কারণ, তার এক বা একাধিক ফাংশনে ত্রুটি থাকায় সে বেঁচে থাকার লড়াই-এ হেরে যায়। এ কারণে এই ধরনের মিউটেশনগুলো পরবর্তি জেনারেশনের প্রবাহিত হতে পারে না। অর্থাৎ, নিউক্লিওটাইড চেঞ্জযুক্ত প্রাণীগুলো অন্য প্রাণীর সাথে প্রতিযোগিতায় পরাজিত হয়। (এভাবে, মিউটেশনযুক্ত প্রাণীর মারা যাওয়া ও অরিজিনাল ফাংশনাল  সিকোয়েন্সযুক্ত প্রাণীর বেঁচে থাকার প্রক্রিয়াকে বলে পিউরিফাইং সিলেকশন।)

    ৭. এর ফলে ‘মা’ প্রানী ও ‘সন্তান’ প্রাণীর নিউক্লিয়ার ডিএনএ-তে খুব বেশী পরিবর্তন পাওয়া যায় না।

    ৮. কিন্তু, মাইটোকন্ড্রিয়ার ডিএনএ-এর ক্ষেত্রে ‘নিউট্রাল মিউটেশন’ কোন গুরুত্বপূর্ণ ফাংশনাল পরিবর্তন (ফেনোটাইপিক পরিবর্তন) আনে না। অর্থাৎ, মাইটোকন্ড্রিয়ার ডিএনএতে এই নিউট্রাল মিউটেশনগুলো থেকে যায়। অর্থাৎ ‘মা’ থেকে ‘সন্তানে’ জননকোষ বিভাজনের সময় সংঘটিত মাইটোকন্ড্রিয়াল মিউটেশনগুলো থেকে যায়।

    ৯. মাইটোকন্ড্রিয়ার ডিএনএতে এই নিউট্রাল মিউটেশনগুলো থেকে যাওয়া উপকারিতা কি?

    ১০. উপকারিতা হল- এর ফলে ‘মা’ এর তুলনায় ‘সন্তানদের’ মাইটোকন্ড্রিয়াতে যথেষ্ট জেনেটিক ডাইভারসিটি তৈরী হয়।

    ১১.  এখন, আপনি যদি ধরে নেন যে মাইটোকন্ড্রিয়ার ডিএনএ-তে প্রতিবার রিপ্রোডাকশনের সময় সংঘটিত পরিবর্তনগুলো একটি স্থির হারে হয় এবং আপনার যদি কোন স্পিসিস-এর প্রতি রিপ্রোডাকশনে মিউটেশনের হার জানা থাকে, তাহলে আপনি কোন প্রজাতির আভ্যন্তরিন জেনেটিক ডাইভারসিটি থেকে উক্ত প্রজাতি ও তার কমন এনসেস্টর-এর মর্ধবর্তী সময় বের করতে পারবেন(3)। (এই সময়কে বলা হয় কোলেসেন্স টাইম)

    ১২. বিজ্ঞানী স্টিকেল ও থেলার কোষের মাইটোকন্ড্রিয়ার এই বৈশিষ্ট্যটি ব্যবহার করে মানুষের কমন এনসেস্টর কত পূর্বে ছিলো এবং একই সাথে অন্যান্য প্রাণীদের কমন এনসেস্টর কতপূর্বে ছিলো তার একটি এস্টিমেট বের করেন।

    ১৩. তারা মাইটোকন্ড্রিয়ার COI barcode ডাটাবেজ BOLD-এর ডাটা ব্যবহার করেন। লক্ষ্যনীয় যে, GenBank এবং BOLD ডাটাবেজ মিলে প্রায় ৫০ লক্ষ প্রানীর COI barcode ডাটা সংরক্ষিত আছে।

    ১৩. তাদের হিসেব অনুযায়ী মানুষের কমন এনসেস্টর ছিলো প্রায় ১ লক্ষ বছর আগে। অর্থাৎ, প্রায় ১ লক্ষ বছর আগে একজন পুরুষ ও নারী থেকে বর্তমান মানব জাতি এসেছে। 

    ১৪. মজার বিষয় হলো, একই সাথে তারা অন্যান্য প্রাণীর বারকোড থেকে হিসেব করেন যে প্রাণী জগতের বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৯০%-এর কমন এনসেস্টর-এর বয়সও প্রায় ১ লক্ষ থেকে ২ লক্ষ বছর। অর্থাৎ, মানুষের মত অন্যান্য প্রাণীও ১ থেকে ২ লক্ষ বছর পূর্বের এক জোড়া কমন এনসেস্টর থেকে এসেছে।

    ১৫. এর অর্থ কি? সহজ বাংলায়, স্টিকেল ও থেলারের গবেষণা অনুযায়ী বর্তমানে প্রাণীজগতের প্রায় ৯০% প্রায় ১ লক্ষ থেকে ২ লক্ষ বছর আগের সংশ্লিষ্ট প্রজাতির এক জোড়া থেকে এসেছে। উদাহরণস্বরুপ, মানুষের ক্ষেত্রে এক জোড়া নারী-পুরুষ, বাঘের ক্ষেত্রে একজোড়া বাঘ ও বাঘিনী, ইত্যাদি। যারা প্রায় ১ লক্ষ থেকে ২ লক্ষ বছর আগে প্রায় কাছাকাছি সময় জীবিত ছিলো ।

    ১৬.  মানুষের ক্ষেত্রে এ ধরনের হিসেব (Estimate) আগেও করা হয়েছে।

    ১৭. লক্ষ্যনীয়, মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ শুধুমাত্র নারীদের জনন কোষ থেকে সন্তানের জাইগোটে প্রবাহিত হয়। ফলে, কেউ মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ থেকে মানুষের এনসেস্ট্রি অ্যানালাইজ করলে মানুষের সর্বশেষ কমন ‘মা’-কে ট্রেস করতে পারবে। ঠিক একই ভাবে শুধুমাত্র ‘Y’ ক্রোমোজোম নিয়ে এনসেস্টি অ্যানালাইজ করলে মানুষের সর্বশেষ কমন ‘বাবা’ কে ট্রেস করা যাবে।

    ১৮. মাইটোকন্ড্রিয়ার ভিত্তিতে প্রথম কমন ‘মাইটোকনড্রিয়াল ইভ’ এর বয়স বের করেন বিজ্ঞানী কেন, স্টোনকিং এবং উইলসন। তাদের হিসেবে অনুযায়ী মানুষের কমন ‘মাইটোকনড্রিয়াল ইভ’-এর বয়ষ প্রায় ২ লক্ষ বছর। অর্থাৎ ২ লক্ষ বছর আগে আমাদের কমন ‘মা’ পৃথিবীতে বিচরণ করেছিলেন। (4)


    ১৯.  ‘Y’ ক্রোমোজোম-এর ভিত্তিতে মানুষের কমন বাবা তথা ‘Y ক্রোমোজোমাল অ্যাডাম’-এর বয়স হিসেব ২০০০ সালের দিকে হিসেব করা হয়েছিলো প্রায় ৫০০০০ বছর(5)। যা ‘মাইটোকনড্রিয়াল ইভ’ থেকে প্রায় দেড় লক্ষ বছর ছোট।

    ২০. কিন্তু, পরবর্তীতে আরও রাইগোরাসটিল গবেষণা করে ‘মাইটোকনড্রিয়াল ইভ’ এবং ‘Y ক্রোমোজোমাল অ্যাডাম’-এর বয়স হিসেব করা হয় যথাক্রমে ৯৯ থেকে ১লক্ষ ৪৮ হাজার বছর এবং ১লক্ষ ২০ হাজার থেকে ১লক্ষ ৫৬ হাজার বছর(6)।

    ২১. বৈজ্ঞানিক গবেষণা অনুযয়ী, ‘মাইটোকনড্রিয়াল ইভ’ এবং ‘Y ক্রোমোজোমাল অ্যাডাম’ প্রায় কাছাকাছি সময় বাস করেছিলেন।


    ২২. তবে আমাদের মনে রাখা দরকার, এগুলো আসলে কিছু Provisional Estimate. কোন কনফার্মড হিসেবে নয়(7)।

    ২৩. যাই হোক, এখন আমরা যদি ১৫ নম্বর পয়েন্ট আবার পড়ি- স্টিকেল ও থেলারের গবেষণা অনুযায়ী বর্তমানে প্রাণীজগতের প্রায় ৯০% প্রায় ১ লক্ষ থেকে ২ লক্ষ বছর আগের সংশ্লিষ্ট প্রজাতির এক জোড়া থেকে এসেছে। উদাহরণস্বরুপ, মানুষের ক্ষেত্রে এক জোড়া নারী-পুরুষ, বাঘের ক্ষেত্রে একজোড়া বাঘ ও বাঘিনী, ইত্যাদি। যারা প্রায় ১ লক্ষ থেকে ২ লক্ষ বছর আগে প্রায় কাছাকাছি সময় জীবিত ছিলো।

    ২৪. এই রিসার্চ থেকে দুটি সিদ্ধান্তে আসা যেতে পারে।

    ২৫. এক, ১ থেকে ২ লক্ষ বছর আগে কোন এক বড় ধরনের  ক্যাটাস্ট্রফিক ইভেন্ট-এর কারণে তখনকার প্রায় অনেক প্রজাতির ‘ভিন্ন নিউক্লাওটাইড সিকোয়েন্স’ যুক্ত ভাই-বোনেরা মারা যায়। ফলে, যে একজোড়া পুরুষ-নারী থেকে পরবর্তী জেনারেশন-এর ডাইভারসিফিকেশন হয়। (একে বলা হয় পপুশেন বোটল নেক)


    ২৬. দুই,  ১ থেকে ২ লক্ষ বছর আগে পৃথকভাবে একজোড়া করে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী পৃথিবীতে পাঠানো হয় এবং তা থেকে পরবর্তী জেনারেশন-এর ডাইভারসিফিকেশন হয়।

    ২৭. মজার বিষয়, ‘ম্যাটেরিয়ালিস্ট’-দের জন্য ২৫ ও ২৬ দুইটাই প্রবলেমেটিক। কারণ, ২৫ ঠিক হলে নূহ (আ)-এর প্লাবণ-এর মত একটি ক্যাটাস্ট্রফের ইঙ্গিত পাওয়া, যার সম্পর্কে প্রায় সকল ধর্মগ্রন্থে বিভিন্নভাবে বর্ণনা এসেছে। আর, ২৬-কে তারা outright রিজেক্ট করে।

    ২৮. এজন্য আলোচ্য রিসার্চের দুইজন অথারকে বলতে শুনা যায়-

    “This conclusion is very surprising,” co-author David Thaler of the University of Basel is quoted as saying, “and I fought against it as hard as I could.” His co-author is fellow geneticist Mark Stoeckle of Rockefeller University in New York (3)

    ২৯. মজার বিষয় হলো এরা আগে ২০০৪ সালের একটি পেপারে একই অথাররা পাখির দুটো লিনিয়েজ পরীক্ষা করে বলেছিলেন-
    “The ad hoc modifications to neutral theory commonly proposed to account for low variation in individual cases, namely, recurrent bottlenecks or selective sweeps, struggle as general mechanisms. If bottlenecks limit variation, then a universal low ceiling implies recent population crashes for all species. This appears unlikely– almost a Noah’s Ark hypothesis–although perhaps long-term climate cycles might cause widespread periodic bottlenecks.” (8)

    ৩০. সবার শেষে Evolution News-এর এন্ড্রু জোনস-এর একটি কথা কোট করে শেষ করছি –

    “In any case, one thing is clear: reconstructing the past is a complicated business and it is still full of surprises. There may be even bigger surprises in store.”

    রেফারেন্স:

    1.      McManus L. Every person was spawned from single pair of adults living up to 200,000 years ago, scientists claim | Daily Mail Online [Internet]. Daily Mail. 2018 [cited 2018 Nov 26]. Available from: https://www.dailymail.co.uk/news/article-6424407/Every-person-spawned-single-pair-adults-living-200-000-years-ago-scientists-claim.html?fbclid=IwAR25ZFBERNCQqdzNrdMfrQkVIFS8CSbBvJlRXTv8seHsngm-W8DR39Ke_HA

    2.      Stoeckle MY, Thaler DS. Why should mitochondria define species? Hum Evol. 2018;33:1–30.

    3.      Jones A. New Paper in Evolution Journal: Humans and Animals Are (Mostly) the Same Age? Evolution News. 2018.

    4.      Cann RL, Stoneking M, Wilson AC. Mitochondrial DNA and human evolution. Nature [Internet]. 325(6099):31–6. Available from: http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/3025745

    5.      Thomson R, Pritchard JK, Shen P, Oefner PJ, Feldman MW. Recent common ancestry of human Y chromosomes: Evidence from DNA sequence data. Proc Natl Acad Sci U S A [Internet]. 2000;97(13):7360–5. Available from: http://www.pnas.org/content/97/13/7360.abstract%5Cnhttp://www.pnas.org/content/97/13/7360.full.pdf

    6.      Poznik GD, Henn BM, Yee MC, Sliwerska E, Euskirchen GM, Lin AA, et al. Sequencing Y chromosomes resolves discrepancy in time to common ancestor of males versus females. Science (80- ). 2013;341(6145):562–5.

    7.      Klinghoffer D. About “Y Chromosome Adam” and & “Mitochondrial Eve” [Internet]. Evolution News. 2013 [cited 2018 Nov 26]. Available from: https://evolutionnews.org/2013/08/about_y_chromos/

    8.      Stoeckle MY, Thaler DS. DNA barcoding works in practice but not in (neutral) theory. PLoS One. 2014;9(7):3–9.

  • #বিবর্তনকথন ৪: তিমির বিবর্তন নিয়ে প্রতারণা

    কয়েক মাস আগে আগে নীল তিমির বিবর্তন নিয়ে রোর বাংলায় একটা পোস্ট দেয়া হয়েছিলো। পোস্টটি রোর বাংলার জনপ্রিয়তার কারণে অনেক পাঠকের কাছে পৌছে যায়। রোর যদি তার জনপ্রিয়তাকে কেন্দ্র করে জনশিক্ষা ও সমাজকল্যানমূলক আলোচনাগুলো মানুষের কাছে পৌছে দেয় তাতে তারা প্রশংসিত হবে সন্দেহ নেই, কিন্তু একটি অপ্রমানিত তত্ত্বকে যদি প্রমানিত হিসেবে প্রচার করে তাহলে দু:খ থেকে যায়।

    রোর উক্ত আর্টিকেলে তিমির বিবর্তনের যে সরলরৈখিক চিত্র উপস্থাপন করেছিলো বিষয়টা এতটা সরল না।

    রোরের উপস্থাপিত ছবিটা অনেকটা এরকম:

    প্যাকাইসিটাস-অ্যাম্বুলোসিটাস-ব্যাসিলোসরাস-ডরুডন থেকে আজকের অডোনটয়েড তিমি এবং মিস্টিসিটি তিমি ।

    কিন্তু, প্যাকাইসিটাস এবং অ্যাম্বুলোসিটাস ছিলো মেসোনাইকিড প্রাণী। মেসোনাইকিড এক ধরনের মাংসাশী ‘খুরযুক্ত’ প্রাণী যারা সময়ের আবর্তনের বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বর্তমান যত ‘খুরযুক্ত’ প্রাণী আছে এরা সবাই তৃণ‌ভোজী এবং এদেরকে বলা হয় আর্টিওড্যাকটাইল।

    মজার বিষয় হলো বিবর্তনবাদীদের জগতে তিমির বিবর্তন-এর উপরে উল্লিখিত চিত্রের ডেফিনিটিভ বা ইরিফিউটেবল প্রমাণ নেই। কারণ?

    প্যাকাইসিটাস এবং অ্যাম্বুলোসিটাস থেকে তিমি আসার বিষয়টা নির্ধারন হয়েছে অ্যানাটমিকাল (জীবাশ্ম হাড়ের অ্যানাটমি) ফাইলোজেনী দিয়ে। অন্যদিকে, মলিকুলার ফাইলোজেনেটিক অ্যানালাইসিস থেকে দেখা যায় যে তিমি (সিটাসিয়া গোত্র) আসলে আর্টিওড্যাকটাইল গোত্রের কাছাকাছি, মেসোনাইকিড গোত্রের কাছাকাছি নয়।

    অর্থাৎ, মলিকুলার বিবর্তনবাদীদের হিসেবে তিমি এসেছে জলহস্তি, গরু, ছাগল, হরিণের গোত্রের (আর্টিওড্যাকটাইল) কমন পূর্বপুরুষ থেকে। আর, মরফোলজিকাল (অ্যানাটমিকাল) বিবর্তনাবাদীদের মতে তিমি এসেছে বিলুপ্ত প্যাকাইসিটি ও অ্যাম্বুলোসিটি গোত্রের কমন পূর্বপুরুষ থেকে।

    এমনকি প্যাকাইসিটাস ও অ্যাম্বুলোসিটাসের (মেসোনাইকিড)-এর মত আর্টিওড্যাকটাইলি গোত্র থেকে আর্টিওসিটাস ও রোডোসিটাসকে (ফসিল হাড়ের হিসেবে অনুযায়ী) তিমির সরলরৈখিক পূর্বপুরষ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

    আরও মজার বিষয় হলো আর্টিওড্যাকটাইলি থেকে তিমি আসার বিষয়টিকে যারা গবেষণায় প্রচার করছেন তারা বলতে চাচ্ছেন যে প্যাকাইসিটাস ও অ্যাম্বুলোসিটাস হয়ত ‘কনভারজেন্ট ইভল্যুশন’ হয়ে তিমি হতে যাচ্ছিল কিন্তু এর পরে আর অগ্রসর হতে পারে নি।

    ..

    বিবর্তনবাদীরা যেভাবে ‘বিবর্তনবাদকে’ ধর্মগ্রন্থের মত সত্য ধরে নিয়ে জীবজগতের ভিতর বিবর্তন ঢুকিয়ে দিচ্ছেন এবং এজন্য যে সব বৈজ্ঞানিক টুল (যেমন : কনভারজেন্ট ইভল্যুশন ও ডাইভারজেন্ট ইভল্যুশন) আবিস্কার করেছেন আপনি সে প্রক্রিয়া এবং উক্ত টুল ব্যবহার করে যে কোন প্রাণীকে অন্য প্রাণীর ‘কমন এনসেস্টর’ থেকে বিবর্তিত হিসেবে (কমন ডিসেন্ট) প্রমাণ করতে পারবেন।

    এই প্রেক্ষিতে এতদিন ভাবছিলাম মৎসকন্যার সবচেয়ে নিকটবর্তী গোত্র (Extant Sister Group) কোনটা হতে পারে? হঠাৎ সেদিন আবিস্কার করলাম ‘সিন্ধুঘোটক (Sea cow)’ বা ‘সিল (seal)’ হতে পারে মৎসকণ্যার সবচেয়ে নিকটবর্তী বিবর্তনীয় আত্মীয় (evolutionary relative)।

    …..

    রেফারেন্স রিডিং:

    1. Thewissen JGM, Williams EM, Roe LJ, Hussain ST. Skeletons of terrestrial cetacean and the relationship of whales to ariodactyls. Nature. 2001;413(September):277–81.
    2. Gingerich PD, Ul Haq H, Zalmout IS, Khan IH, Malkani MS. Origin of whales from early Artiodactyls: Hands and feet of eocene protocetidae from Pakistan. Science (80- ). 2001;293(5538):2239–42.
    3. Wong, K. ‘The Mammals That Conquered the Seas’ in ‘Evolution: A Scientific American Reader’. The University of Chicago Press (2006), p. 182-192

  • #বিবর্তনকথন ৩: বিবর্তনবাদ কেন বস্তুবাদী বিজ্ঞানীদের সংজ্ঞানুযায়ী-ই বিজ্ঞান নয়

    পদ্ধতিগত প্রকৃতিবাদ (Mathodological naturalism)-এর শর্ত অনুযায়ী কোন তত্ত্বকে বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব বলার জন্য অন্যতম শর্ত হল তত্ত্বটি ‘falsifiable’ হতে হবে। যেহেতু পদ্ধতিগত প্রকৃতিবাদ বস্তুজগত পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে লব্ধ উপাত্তের ভিত্তিতে কাজ করে, সেহেতু তত্ত্বটির গঠন এমন হতে হবে যেন পরীক্ষানিরীক্ষার মাধ্যমে তাকে ভুল প্রমাণ করার সুযোগ থাকে। জরুরী নয় যে, তত্ত্বটি ভুল প্রমানিত হবেই। বরং, বার বার পরীক্ষার মধ্য দিয়ে তত্ত্বটির সত্যতা বলিষ্ঠ হতে পারে। কিন্তু, তত্ত্বটির গঠন যদি এমন হয় যে তা কোন পদ্ধতি অনুসরণ করে পরীক্ষা নিরীক্ষা করার সুযোগ না থাকে তাহলে তাকে বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব না বলে ‘বিশ্বাস’ বলাই ভাল।

    বিষয়টি একটি উদাহরণ দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করি- ধরি, আপনি একটি দাবী করলেন যে, পৃথিবীর সব কাক কালো। আপনার দাবীর পিছনের আপনি আপনার পর্যবেক্ষণ লব্ধ এক হাজার কাকের একটি তথ্য উপস্থাপন করলেন। কিন্তু, আপনার তত্ত্বটি ফলসিফাইবেল। কারণ, একজন ব্যক্তিও যদি একটি সাদা কাক আপনার সামনে উপস্থিত করতে পারে, আপনার তত্ত্বটি মিথ্যা প্রমাণিত হবে। কিন্তু, আপনি যদি দাবী করেন যে, আপনার বাসার ছাদে একটি ফিনিক্স নামক পাখি আছে, যা মৃত্যুর সময় ছাই হয়ে যায় এবং ছাই থেকে পুনঃর্জন্ম নিতে পারে এবং যা কেবল আপনি-ই দেখতে পারেন- কোন বস্তুগত পদ্ধতি দিয়ে এটিকে মিথ্যা প্রমানিত করা যাবে না। ফলে, আপনার তত্ত্বটি বৈজ্ঞানিক হবে না, হবে ‘বিশ্বাস’।

    আপনার তত্ত্বটিকে হয়ত গুরুত্বের সাথে নিয়ে দর্শনের আলোকে মিথ্যা প্রমাণ করার চেষ্টা করা যাবে। সেক্ষেত্রে, এটি সর্বচ্চো একটি দার্শনিক দাবীতে পরিণত হবে। কিন্তু, পদ্ধতিগত প্রকৃতিবাদের অধীনে এটিকে কোন বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের মর্যাদা দেয়া যাবে না।

    এবার আসুন দেখি ‘বিবর্তনবাদ’ কি ফলসিফাইবল কিনা?

    বিবর্তনবাদী জে. বি. এস. হেলডেনকে একবার জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, কোন্ প্রমাণ হলে তিনি বিশ্বাস করবেন যে বিবর্তনবাদ মিথ্যা? তিনি বলেছিলেন, কেউ যদি ‘প্রি-ক্যামব্রিয়ান পাথর’-এ একটি খরগোশের ফসিল আবিস্কার করতে পারে, তাহলে তিনি বিশ্বাস করবেন যে বিবর্তনবাদ ভুল।

    উল্লেখ্য, ক্যামব্রিয়ান এরা হচ্ছে ৫৩০ মিলিয়ন বছর পূর্বের একটি ভূতাত্ত্বিক সময় যখন প্রায়টি ২০টি নতুন পর্ব অতি অল্প সময়ে আবির্ভূত হয়।

    লক্ষ্য করুন, কেউ যদি একটি খরগোশের ফসিল আনতে সক্ষমও হয়, সেক্ষেত্রে ফসিলের বর্তমান ইতিহাসটি পরিবর্তিত হয়ে যাবে, কিন্তু বিবর্তনবাদ মিথ্যা প্রমাণিত হবে না। কারণ, বিবর্তনবাদীরা তখন দাবী করতে পারবেন যে, এটি ‘কনভারজেন্ট বিবর্তন’-এর উদাহরণ। সহজ কথায় তারা বলবেন, পৃথিবীর ইতিহাসে খরগোশ দু’বার বিবর্তিত হয়ে আবির্ভাব হয়েছে, একবার ক্যামব্রিয়ান এরা আগে এবং আরেকবার পরে।

    যেমনটা চোখের বিবর্তনের ক্ষেত্রে তারা দাবী করে। অক্টোপাস ও মানুষের চোখ একই রকম। কিন্তু, দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন পর্বের প্রাণী। ফলে, তাদের দাবী হচ্ছে এটি কনভারজেন্ট বিবর্তনের ফসল।

    অর্থাৎ, বিবর্তনবাদকে কার্যত কোন অবজারভেশন দিয়েই আপনি মিথ্যা প্রমাণ করতে পারবেন না।

    মজার বিষয় হল, ‘বিবর্তনবাদ’-তত্ত্বকে কার্যত অপ্রমাণযোগ্য করে গেছেন স্বয়ং ডারউইন। তিনি জটিল অঙ্গ তথা কমপ্লেক্স অর্গ্যান (যেমন: চোখ) কিভাবে বিবর্তিত হল- সে ব্যাপারে একটি প্রকল্প দিয়েছেন যে- “অসংখ্য, ক্ষুদ্র, একটার পর একটা (ক্রমান্বয়ে) পরিবর্তন ”-এর মধ্য দিয়ে কমপ্লেক্স অর্গ্যান বিবর্তিত হয়েছে। কিন্তু, কোনো অঙ্গের ব্যাপারেই সেই অসংখ্য, ক্ষুদ্র, ক্রমান্বয়ে পরিবর্তনের ধাপ তিনি দেখাননি। অথচ, তার বই-এ তিনি লিখছেন-

    “যদি এটা দেখানো যায় যে, এমন কোন জটিল অঙ্গ বিদ্যমান যেগুলো অসংখ্য, ক্রমান্বিত, ক্ষুদ্র পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে তৈরী হয়নি, আমার তত্ত্ব নিশ্চিতভাবেই ভেঙ্গে পড়বে। কিন্ত, আমি এ ধরনের কোন অঙ্গ দেখছি না”। (1)

    কথার ধরণ থেকে মনে হচ্ছে যেন, তিনি ইতোমধ্যে এ ধরনের অসংখ্য প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন যে বিভিন্ন জটিল অঙ্গ অসংখ্য, ক্রমান্বিত, ক্ষুদ্র পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে আবির্ভুত হয়েছে।

    টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের দার্শনিক রবার্ট কুনস এ প্রসঙ্গে বলছেন-
    “এটা কিভাবে প্রমাণ করা যাবে যে কোন কিছু এমন একটি পদ্ধতি দ্বারা তৈরী হয়েছে যে পদ্ধতি সম্পর্কে ‘অসংখ্য, ক্ষুদ্র, ক্রমান্বিত পরিবর্তন’- (শব্দগুলোর) চেয়ে বেশী কিছু বলা হয়নি? এবং কেনই বা (বিবর্তনবাদের) সমালোচকদের এ ধরণের কিছু প্রমাণ করতে হবে? প্রকৃতিতে প্রাপ্ত অন্তত একটি অঙ্গ যে বাস্তবেই উক্ত প্রক্রিয়ায় তথা সুনিদির্ষ্ট সম্পূর্ণ নিয়মতান্ত্রিক ক্ষুদ্র ক্রমান্বিত পরিবর্তনের প্রক্রিয়ায় আসা সম্ভব- তা দেখানোর দায়িত্বতো ডারউইন ও তার অনুসারীদের”। (2)

    উপরিল্লিখিত, আপনার ফিনিক্স তত্ত্বটি বিশ্বাস করে আপনার অসংখ্য ফলোয়ার তৈরী হতে পারে। সেক্ষেত্রে এটি একটি ‘বিলিফ সিস্টেম’-এ পরিণত হবে। ঠিক তেমনি, ‘বিবর্তনবাদ’ বিজ্ঞান ছাড়িয়ে একটি ‘বিলিফ সিস্টেম’ তথা ‘বস্তুবাদী দর্শনে’ পরিণত হয়েছে।


    রেফারেন্স:
    (1) Darwin C. Difficulties on theory. In: The Origin of Species on the Origin of Species by means of Natural Selection or the Preservation of Favoured Races in the Struggle for Life. 1859. p. 166.
    (2) Dembski BWA. Five Questions Evolutionists Would Rather Dodge [Internet]. [cited 2018 Jan 24]. Available from: https://sites.google.com/…/oldshepherd1…/fiveevolutiondodges

  • #বিবর্তনকথন ২: যেভা‌বে করা হয় বিবর্তনবাদী গবেষণা

    য‌ে কোন বৈজ্ঞানিক গ‌বেষণার একটি বৈ‌শিষ্ট্য হচ্ছ‌ে তা কিছু মৌলিক ধারণাক‌ে ( Basic Assumption) ভি‌ত্তি কর‌ে অাগায়। বিবর্তনবাদী গ‌বেষণার ক্ষে‌ত্রে য‌ে মৌলিক ধারণার ভি‌ত্তি‌তে পরীক্ষা নি‌রিক্ষা এ‌গি‌য়ে চ‌লে তার ম‌ধ্যে অন্যতম প্রধান হল: ‘হো‌মোল‌জি’ অর্থাৎ প্রজা‌তি‌তে একই ধর‌ণের অঙ্গ থাকাটাই প্রমাণ ক‌রে যে তারা একই পূর্বপুরুষ (common ancestor) থে‌কে এসে‌ছে।

    লক্ষ্য করুন, ধারণাট‌ি নি‌জে কিন্তু সন্দেহাতীতভাব‌ে প্রমাণিত হয়নি। সুতরাং, হো‌মোল‌জির উপর ভি‌ত্তি ক‌রে কমন এন‌সে‌স্ট্রি দাবি করাটা এক ধর‌ণের চা‌ক্রিক যু‌ক্তি।

    কেননা, দুট‌ি সম্পূর্ণ ভিন্ন শারিরীক গঠন সম্পন্ন প্রাণী‌তেও হুবুহু একই ধরণের অঙ্গ থাক‌তে পা‌রে। যেমন: মানুষ ও অ‌ক্টোপাস-এর চোখ একই রকম। অথচ, দুটো যথাক্র‌মে মেরুদণ্ডী ও মলাস্ক প‌র্বের অন্তর্গত।

    তাহল‌ে দু‌টি সম্পূর্ণ ভিন্ন শা‌রিরীক পরিকল্পনা (Body Plan)-এর প্রাণীর ম‌ধ্যে একই ধরনের বৈ‌শিষ্ট অাসল কিভা‌বে?

    মজার বিষয় হল এ সমস্যাটি এড়ি‌য়ে যাবার জন্য তারা অভিনব একট‌ি টার্ম ব্যবহার করে, যার নাম ‘কনভারজেন্ট’ বিবর্তন। অর্থাৎ মানব চো‌খের মত সব‌চেয়‌ে জ‌টিল গঠন বি‌শিষ্ট চোখ দুবার পৃথকভাবে বিব‌র্তিত হ‌য়ে‌ছে! একবার অক্ট‌েপোস‌ে, আ‌রেকবার মানুষ‌ে।

    বিবর্তনবাদী‌দের জি‌গ্যেস করেন, কিভা‌বে? তাদের ঘুরান‌ো প্যাঁচা‌নো উত্তরটার মূল কথা হ‌বে: এল‌োপাতার‌ি মিউ‌টেশ‌নের ফ‌লে সৃষ্ট প্রজা‌তির বৈ‌চি‌ত্রের (Variation) প্রাকৃ‌তিক নির্বাচনের মাধ্য‌মে!

    যেখান‌ে এ‌লো‌মে‌লো মিউ‌টেশ‌নের মাধ্য‌মে একট‌ি ভিন্ন কাজের প্রো‌টিন তৈর‌ি হওয়া সম্ভব না, সেখান‌ে জ‌টিল চোখ দুবার এসে‌ছে? (ওহে কলা‌বিজ্ঞান‌ী) অাপ‌নি কি আমাদের পাগল পেয়েছেন যে আপ‌নি ই‌চ্ছেমত রুপকথার গল্প ফেঁ‌দে বিজ্ঞানে‌র আবরণ‌ে পর‌ি‌বেশন করবেন আর আমরা তা ঢকঢক কর‌ে গলা দিয়‌ে না‌মিয়ে দিব?

    তারা য‌ে শুধু কনভার‌জেন্ট বিবর্তন ব‌লে থে‌মে গেছ‌ে তাই নয়, তারা দুটো ভিন্ন পর্বের প্রাণীতে একই ধর‌নের অঙ্গ থাকার ব্যপারট‌ি‌কে বল‌ছে হ‌ো‌মোপ্লাস‌ি।

    অর্থাৎ বিবর্তনবাদ হল পা‌নির মত, য‌ে পাত্র‌ে নি‌বেন সেই পাত্রের আকার ধারণ করব‌ে, এমনক‌ি যে ক‌োন গ্যাপ‌ে রাখ‌লে গ্যাপ পূরণ কর‌ে দিব‌ে। এক‌ে ব‌লে ‘Evolution of the gaps’ যু‌ক্তি। অর্থাৎ, ক‌োন প্রজাতির বৈ‌শিষ্ট্য বিবর্তনীয় প্র‌ক্রিয়ায় ব্যাখ্যা করত‌ে না পার‌লে উক্ত গ্যাপ‌ে বিবর্তনকে বসায় দেন, ব্যস, আপন‌ি অ‌নেক বিজ্ঞান কর‌ে ফেললেন। অার, হয়‌ে গেলেন পু‌রোদস্তুর কলা‌বিগ্যানী!!

    এবার আপনাক‌ে নোবেল দেয়া হোক!

  • #বিবর্তনকথন ১ : বিবর্তনীয় কৌতুক

    আস্তিক: শিম্পাঞ্জি ও মানুষ যে একই পূর্বপুরুষ থেকে আগত হয়েছে তার প্রমাণ কি?

    নাস্তিক: হোমোলজি।

    আস্তিক: হোমোলজির সংজ্ঞা কি?

    নাস্তিক: হোমোলোজি হল একই পূর্বপুরুষ থেকে আগত দুটো প্রজাতির মধ্যে একই ধরণের গঠনের উপস্থিতি। যেমন: শিম্পাঞ্জি ও মানুষের করোটির গঠন একই ধরণের অতএব তারা একই পূর্বপুরুষ থেকে এসেছে।

    আস্তিক: কিন্তু, শিম্পাঞ্জি ও মানুষের করোটি যে একই পূর্বপুরুষ থেকে এসেছে তার প্রমাণ কি?

    নাস্তিক: কেন? শিম্পাঞ্জি ও মানুষের একই ধরণের করোটি থাকাইতো প্রমাণ যে তারা একই পূর্বপুরুষ থেকে এসেছে।

    আস্তিক: তার মানে আপনি বলতে চাচ্ছেন দুটো প্রজাতি যে একই পূর্বপুরুষ থেকে এসেছে তার প্রমাণ হল- তাদের একই ধরণের গঠন যা একই পূর্বপুরুষ থেকে এসেছে।

    নাস্তিক: হ্যা, তাই। হোমোলগাস স্ট্রাকচার মানেই-তো তারা একই পূর্বপুরুষ থেকে এসেছে। সুতরাং, দুটো প্রজাতির হোমোলোগাস স্ট্রাকচার থাকার অর্থ হল তারা একই পূর্বপুরুষ থেকে এসেছে।

    আস্তিক: তার মানে আপনি বলতে চাচ্ছেন একই পূর্বপুরুষের প্রমাণ হলো একই ধরনের গঠন যা একই পূর্বপুরুষ থেকে এসেছে। অর্থাৎ, আপনি নিজে হোমোলগাস গঠনকে কোন প্রমাণ ছাড়া একই পূর্বপুরুষ থেকে আগত বলে নিজের মত সংজ্ঞায়িত করে উক্ত সংজ্ঞাকেই একই পূর্বপুরুষ থেকে আগত হওয়ার প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করছেন।

    নাস্তিক: না, না, আপনি বুঝেননি, হোমোলাগাস গঠনই তো কমন এনসেস্ট্রি তথা একই পূর্বপুরুষ থেকে আগত হওয়ার ঘটনার প্রমাণ, না হলে তাদের গঠন হোমোলগাস হল কিভাবে?

    পাশে দাড়ানো তৃতীয় ব্যক্তি যিনি এতক্ষণ মনোযোগ দিয়ে দু’জনের কথা শুনছিলেন বলে উঠলেন: ভাই আমার মাথা চরকির মত ঘুরাচ্ছে, আমি প্রস্থান করলাম।

    …..

    বিবর্তনবাদীরা প্রথমে একই ধরনের গঠন থাকাকে একই পূর্বপুরুষ থেকে আসার প্রমাণ হিসেবে ‘ধরে নেয়’। তারপর, দুটো প্রজাতির মধ্যে যখন একই ধরনের গঠন আবিস্কার করে তখন সেটাকেই একই পূর্বপুরুষ থেকে আসার প্রমাণ হিসেবে ‘উপস্থাপন করে’। আরেকটু সহজভাবে বিষয়টা ব্যাখ্যা করি- ধরুন, আমি আপনাকে জিজ্ঞাসা করলাম আরিফ ও শরীফ যে একই পিতার সন্তান তার প্রমাণ কি? আপনি বললেন, যেহেতু তারা একই রকম ড্রেস পড়ে অতএব তারা একই পিতার সন্তান। এরপর আমি জিজ্ঞাসা করলাম, একই রকম ড্রেস পড়লেই যে ওরা একই পিতার সন্তান হবে তার প্রমাণ কি? আপনি বললেন, একই পিতার সন্তান বলেই তো ওরা একই রকম ড্রেস পড়ে।

    ওয়েল, লজিকের ভাষায় এ ধরনের যুক্তি দেখানোকে বলে Circular Reasoning তথা চক্রাকার যুক্তি।

    Phylogenetics এবং Cladistics নামক দুটো Evolutionary Discipline-এর ভিত্তি দাড়িয়ে আছে এই সার্কুলার রিজনিং-এর ওপর।

  • চোখের সামনে ফিঞ্চ পাখির নতুন স্পিসিস-এর ‘ম্যাক্রো’ নয় ‘মাইক্রো’ বিবর্তন হতে দেখা গেল

    গত ২৩ শে নভেম্বর সায়েন্স জার্নালে একটি রিপোর্ট পাবলিশ হয়েছে । ল্যামিচ্যানী এবং তার সহযোগী রিসার্চারগন গালাপোগোস দ্বীপপুঞ্জে নতুন স্পিসিস-এর আবির্ভাবটি পর্যবেক্ষণ এবং রিপোর্ট করেন(1) ।

    এসপানোলা থেকে গালাপোগোসের ড্যাফনি মেজোরে আগত একটি ডারউইনের ফিঞ্চ পাখির প্রজাতি Geospiza conirostris গালাপোগোসের ন্যাটিভ প্রজাতি Geospiza fortis-এর সাথে ব্রিডিং করে। ফলে, একটি নতুন হাইব্রিড প্রজাতি জন্ম নেয় যা পূর্ববর্তী প্রজাতি থেকে বড়। এই হাইব্রিড প্রজাতিটি গালাপোগোস-এ ক্ষরার সময় প্রাপ্ত খাদ্য রিসোর্সকে অভিভাবক প্রজাতি থেকে বেশী ব্যবহার করতে সক্ষম হয় এবং প্রাকৃতিক ভাবে বেঁচে থাকার সুবিধে পেয়ে নির্বাচিত হয়।

    সংঙ্গানুযায়ী একটি প্রজাতির পরবর্তী বংশধরকে নতুন প্রজাতিতে পরিণত হতে হলে প্রয়োজন ‘রিপ্রোডাক্টিভ আইসোলেশন’। ‘রিপ্রোডাক্টিভ আইসোলেশন’ হল প্রজাতির এমন একটি বৈশিষ্ট্য যার ফলে সে আরেকটি প্রজাতির সাথে মেটিং করে না (অর্থাৎ একটি প্রজাতির পুরুষ, আরেকটি প্রজাতির নারীর সাথে মিলিত হয় না এবং ভাইস ভারসা)।

    ফিঞ্চ পাখির একটি বৈশিষ্ট্য হলো এটির মেটিং চয়েজ (অর্থাৎ কোন পাখির সাথে মিলিত হবে) তা নির্ভর করে পাখির গানের ধরন এবং গঠনের ওপর। যেহেতু নতুন প্রজাতিটি Geospiza fortis প্রজাতি থেকে বড় এবং ভিন্ন সুরে গান গেতে শুরু করেছে, ফলে এটি মা-এর প্রজাতি থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ, Geospiza fortis প্রজাতির অন্য কোন পাখির সাথে এটি মিলিত হয় না। সুতরাং, হাইব্রিড প্রজাতিটি স্পেসিয়েশনের সংঙ্গা অনুযায়ী নতুন একটি প্রজাতিতে পরিণত হয়েছে।

    আপনি কি কখনও লক্ষ্য করেছেন, কেন আপনার সন্তানের গঠন, চেহারা, কণ্ঠ হুবুহু আপনার বা আপনার স্পাউজের মত হয় না? কারণ, জননকোষের ডিএনএতে ক্রসিং ওভারের মাধ্যমে জেনেটিক রিকম্বিনেশন হয়। অর্থাৎ, মা ও বাবা থেকে আগত ক্রোমোজোমদ্বয়ের নির্দিষ্ট স্থানে জেনেটিক তথ্যের আদান প্রদান হয়, যেন জেনেটিক ভ্যারিয়েশন তৈরী হতে পারে। এটি জননকোষের একটি ‘বিল্ট-ইন’ প্রক্রিয়া।

    অন্যান্য প্রাণীর ক্ষেত্রে ধরুন এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরবর্তী বংশধরে এমন একটি পরিবর্তন এল যার ফলে পরবর্তী প্রাণীটি বিদ্যমান খাদ্যের উৎসকে বেশী ব্যবহার করতে পারে এবং একই সাথে যেই বৈশিষ্ট্যগুলো উক্ত প্রাণীর ক্ষেত্রে মেটিং চয়েজ নির্ধারণ করে (যেমন: ফিঞ্চ পাখির ক্ষেত্রে গানের সুর এবং শারীরিক গঠন) সেগুলোর একটিতে পরিবর্তন আসল। সেক্ষেত্রে উক্ত বংশধরটি পূর্ববর্তী প্রজাতি থেকে ধীরে ধীরে পৃথক প্রজাতিতে পরিণত হবে। এটির আরেকটি নাম আছে – সেক্সুয়েল সিলেকশন (2)।

    বস্তুত, এই ভাবে প্রজাতি তৈরীর ঘটনা প্রকৃতিতে নতুন নয়। সালামান্দার প্রজাতি Ensatina eschschoitzi-এর ৭টি উপপ্রজাতি যুক্তরাস্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের প্রশান্ত মহাসাগর তীরবর্তী স্যান জাওকিন ভ্যালির আশেপাশে বাস করে (3)। উপ-প্রজাতিগুলোর মূল পার্থক্য তাদের গায়ের রঙ-এর নকশা (প্যাটার্ন) এবং (সম্ভবত) ফেরোমোন। সালামান্দারের গায়ের রং-এর নকশা পরিবর্তন হয় হোমোলোগাস রিকম্বিনেশন-এর মাধ্যমে। সহজ কথায়, শুক্রাণু ও ডিম্বাণু তৈরী হওয়ার এক পর্যায়ে এক জোড়া ক্রোমোজামের মধ্যে ক্রসিংওভার নামক একটি ঘটনা ঘটে। এ প্রক্রিয়ায় জিনোমের কিছু সুনির্দিষ্ট অংশের আদান প্রদান এবং পুনঃবিন্যাস হয়। যদিও রিকম্বিনেশন হচ্ছে র‍্যাণ্ডমভাবে, কিন্তু তা হচ্ছে একটি নিয়ন্ত্রিত সীমায় কিছু বিনিময় যোগ্য এলিলির (জিন) মধ্যে।

    এভাবে সৃষ্ট ভ্যারিয়েশনের মাধ্যমে ভ্যালীর উত্তরে অবস্থিত Ensatina eschschoitzi picta উপ-প্রজাতিটি দক্ষিণ দিকে এসে এমন দুটো উপ-প্রজাতি Ensatina eschschoitzi klauberi এবং Ensatina eschschoitzi eschschoitzii–তে পরিণত হয়েছে, যারা পরস্পর যৌনক্রিয়ায় লিপ্ত হয় না। সালামান্দার প্রজাতি যৌনক্রিয়ার জন্য বিপরীত লিঙ্গ বাছাই করতে সাধারণত ফেরোমোন নামক শরীর থেকে নিঃসৃত বিশেষ গন্ধ উৎপাদনকারী পদার্থ ব্যবহার করে। (এছাড়া, কোন কোন প্রজাতি স্পর্শ এবং কোন কোন প্রজাতি দৃষ্টি-সম্বন্ধীয় সূত্র তথা ভিজুয়্যাল কিউ ব্যবহার করে থাকে)। সে হিসেবে  Ensatina eschschoitzi klauberi এবং Ensatina eschschoitzi eschschoitzii উপ-প্রজাতি দুটোতে ক্রসিং ওভারের মধ্য দিয়ে রং এবং ফেরোমোনের যথেষ্ট পার্থক্য হয়ে যাওয়ায় তারা প্রজাতির সংজ্ঞানুযায়ী আলাদা প্রজাতিতে পরিণত হয়েছে।

    গুগোলে রিং স্পিসিস লিখে সার্চ দিলে এরকম আরও কিছু উদাহরণ পাওয়া যাবে। মূল বিষয়টি হলো, এসব ক্ষেত্রেই এমন কিছু পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে নতুন প্রজাতি তৈরী হয়ে যাচ্ছে যা হওয়ার জন্য জিনোমে ইতোমধ্যে নিয়মতান্ত্রিক ব্যবস্থা করা আছে এবং প্রতিটি ক্ষেত্রেই ‘এলোপাতাড়ি মিউটেশনের’ কোন ভূমিকা নেই।
    স্পেসিয়েশন অর্থ হলো একটি নতুন প্রজাতি তৈরী হওয়া।

    জেনেটিক্যালী স্পেসিয়েশনের গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে-
    – হাইব্রিড স্পেসিয়েশন –যেমন অদ্য আর্টিকেলে ফিঞ্চ পাখি।
    – পলিপ্লয়েড স্পেসিয়েশন- যেটা জবা ফুলে বেশ দেখা যায়।
    – ট্রান্সপজিশন- থিওডসিয়াস ডবঝানস্কি ফ্রুট ফ্লাইতে এই ধরনের স্পেসিয়েশন দেখিয়েছেন।

    প্রতিটি ক্ষেত্রে কোষের ‘ইন-বিল্ট’ প্রক্রিয়ায় কিছু জেনেটিক ভ্যারিয়েশন তৈরী হয়। তবে রিপ্রোডাক্টিভ আইসোলেশনের ক্ষেত্রে যে সকল প্রক্রিয়া ভূমিকা রাখে সেগুলো হল ন্যাচারাল সিলেকশ (রি-ইনফোর্সমেন্ট ও ইকোলোজিকাল) এবং সেক্সুয়েল সিলেকশন। (২)

    এ সবগুলো প্রক্রিয়াকে আপনি সহজেই ‘মাইক্রো-ইভল্যুশন’-এর কাতারে ফেলতে পারবেন। কারণ, প্রতিটি ক্ষেত্রেই কোন বড়-মাত্রার জেনেটিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় না। অর্থাৎ, আপনি চোখের সামন একটি জেনাসের অন্তর্গত একাধিক স্পিসিস তৈর হতে দেখবেন। কিন্তু, একটি ফ্যামিলির অধীনে নতুন কোন জেনাস তৈরীর ঘটনা চোখের সামনে দেখতে পারবেন না।

    ডারউইনবাদীদের দাবী অনুযায়ী বড় মাত্রার জেনেটিক পরিবর্তন হয় অনেক সময় নিয়ে, ফলে এটি চোখের সামনে দেখা যায় না। জেনাসের আগমন আপনি কখনও সচক্ষে দেখতে পারবেন না। কারণ, এর জন্য যে মিলিয়ন বছর সময় দরকার সে পর্যন্ত আপনি বাঁচবেন না। নতুন জেনাস যে কমন ডিসেন্টের মাধ্যমে অন্য কোন কমন জেনাস থেকে এসেছে তার প্রমাণ হলো ফসিল এবং মলিকুলার হোমোলজি। যেমন: হোমো জেনাস (মানুষ জাতীয় দোপেয়ে প্রাণী) এবং প্যান জেনাস (শিম্পাঞ্জী)-এর একটি কমন এনসেস্টর ছিলো।

    অস্ট্রালোপিথেকাস, আর্ডিপিথেকাস এদের গঠন পুরোপুরি শিম্পাঞ্জির মত না, কিছুটা মানুষের কাছাকাছি। অন্যদিকে নিয়েন্ডারথ্যাল, ডেনিসোভা হোমিনিন-এরা মানুষের মত গঠনযুক্ত ছিলো। কিন্তু, অস্ট্রালোপিথেকাস-কে আপনি শিম্পাঞ্জীর কাতারে ফেলবেন, নাকি নতুন একটি ফ্যামিলি হিসেবে নাম দিবেন সেটা কিন্তু পুরোপুরি আপনার ওপর নির্ভর করছে। এগুলোর ক্ষেত্রে জীবাশ্ম হাড় ছাড়া আমাদের কাছে অন্য কোন এভিডেন্স নেই। ঠিক তেমনি সংস্কৃতিমনা নিয়েন্ডারথেল বা ডেনিসোভাকে-যে আপনি মানুষ বলতে চাইছেন না তার-ই বা ভিত্তি কি?

    অন্যদিকে, হোমোলজি, তা মলিকুলার হোক বা মরফোলজিকাল, কমন ডিজাইনের কারণেও হতে পারে। সুতরাং, প্রজাতির কমন ডিসেন্ট আর্গুমেন্ট তখনই গ্রহণযোগ্য হবে যখন আপনি ডিএনএ-তে নতুন কার্যকরী তথ্য যোগ হওয়ার স্পষ্ট উদাহরণ দিতে পারবেন। আপনি বিভিন্ন জিন নিয়ে ‘মলিকিউলার ফাইলোজেনী’ আঁকলে একেকটির জন্য একেকটি কমন এনসেস্ট্রির সময় পাওয়া যাবে (4)।

    সুতরাং, স্বয়ংক্রিয় ও প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় বিবর্তনের বিষয়টি তখনই পুরোপুরি মানা যেতে পারে যখন আপনি মলিকিউলার লেভেলে ‘বড় আকারের’ জেনেটিক ইনফরমেশন যোগ হওয়ার প্রসেস দেখাতে পারবেন। নব্য-ডারউইনবাদের র‍্যানডম মিউটেশন যে এই বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে অক্ষম তা অনেক দার্শনিক ও বিজ্ঞানীরাও বুঝতে পারছেন। (৫)

    এই ভ্যারিয়েশন আসার বিষয়টি কিভাবে সম্ভব সেটা নিয়ে ‘পদ্ধতিগত প্রকৃতিবাদ’-এর গণ্ডির মধ্যে থেকেই অনেক বিজ্ঞানী নতুন থিওরী দিচ্ছেন। জেমস শ্যাপিরোর ন্যাচারাল জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, লিন মার্গুলিসের সিমোবায়োসিস এবং সুসুম ওহনো-এর জিন ডুপ্লিকেশন- এর মধ্যে অন্যতম।

    লক্ষ্যণীয় এই প্রতিটি প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রেই ‘এলোপাতারী’ শব্দটি পরিত্যাক্ত হয়েছে, কারণ এগুলো নিয়ণ্ত্রিত। এগুলো যদি দিন শেষে যথাযথ হিসেবে প্রমাণিতও হয় সবগুলোই একটা কমন এনসেস্টর থেকে শুরু হবে যার মধ্যে অসংখ্য সুনিয়ন্ত্রিত বিবর্তিত হওয়ার প্রক্রিয়া প্রথম থেকেই প্রথিত আছে। অর্থাৎ, আপনি ‘পদ্ধতিগত প্রকৃতিবাদ’ থেকে ‘দার্শনিক প্রকৃতিবাদ’-এ গিয়ে নিজের চূড়ান্ত প্রশ্নগুলোকে আটকে রাখবেন যেন একটি ‘বুদ্ধিমান’ সত্ত্বার অস্তিত্বকে অস্বীকার করা যায়, সেটি দিবাস্বপ্ন ছাড়া আর কিছু নয়।

    রেফারেন্স:
    1. Lamichhaney S, Han F, Webstar MT, Andersson L, Grand BR, Grant PR. Rapid hybrid speciation in Darwin’s finches. Science (80- ). 2017;(November).
    2. Speciation. In: Wikipedia. 2017.
    3. Rosa Rubicondior: Ring Species – Evolution in Progress [Internet]. [cited 2017 Nov 29]. Available from: http://rosarubicondior.blogspot.com/…/ring-species-evolutio…
    4. Stephen Meyer, Darwin’s Doubt 2013
    5. Thomas Nagel, Mind and Cosmos 2012

    …………………..

    “স্বয়ংক্রিয় ও প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় বিবর্তনের বিষয়টি তখনই পুরোপুরি মানা যেতে পারে যখন আপনি মলিকিউলার লেভেলে ‘বড় আকারের’ জেনেটিক ইনফরমেশন যোগ হওয়ার প্রসেস দেখাতে পারবেন”  আমার লেখার এই অংশটির প্রেক্ষিতে একজন ফেসবুক ডারউইনবাদী নিচের লিংকটি দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন যে, র‍্যানডম মিউটেশনের মাধ্যমে অহরহ নতুন জিন তৈরী হচ্ছে!! তার দাবী কেন সঠিক নয় সেটা ব্যাখ্যা করতে আমি একটি বিস্তারিত মন্তব্য লিখি। সবার জানার জন্য এখানে সংযোজন করে দিচ্ছি।

    লিংক: “Gene Genesis: Scientists Observe New Genes Evolving from Mutated Copies”

    – https://www.scientificamerican.com/…/gene-genesis-scientis…/

    উত্তর:  লিংকে জিন ডুপ্লিকেশন নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। জিন ডুপ্লিকেশনের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত সর্বচ্চো যেটা করা গিয়েছে তা হলো নিম্নরুপ- ধরুন, একটি ব্যাকটেরিয়াতে অলরেডি এক্সিসটিং এনজাইম, যার ডুয়েল ফাংশন আছে, এর মধ্যে একটি ফাংশন ‘ক’ শক্তিশালী এবং একটি ফাংশন ‘খ’ দুর্বল। উক্ত ব্যাকটেরিয়াতে ‘খ’ ফাংশন সম্পাদনকারী শক্তিশালী এনজাইমটি না থাকলে যেটা হবে (প্রয়োজনীয় প্রতিকূল পরিবেশে যেখানে উক্ত ‘খ’ এনজাইমটির ফাংশন খুবই জরুরী) প্রথম এনজাইমটির জিন ডুপ্লিকেটেড হবে এবং ডুপ্লিকেটেড কপিতে মিউটেশনের মাধ্যমে ‘খ’ ফাংশনটি এক পর্যায়ে শক্তিশালী হয়ে যাবে।

    এখানে কয়েকটি বিষয় লক্ষণীয়-
    এক, আগে মনে করা হতো এই প্রক্রিয়াটি পুরোপুির র‍্যানডম। কিন্তু, জেমন শ্যাপিরো দেখাচ্ছেন যে, ব্যাকটেরিয়ার ভিতর কঠিন পরিবেশে এডাপ্ট করার জন্য কতগুলো প্রক্রিয়া ইনবিল্ট আছে। ফলে ব্যাকটেরিয়া নতুন কোন পরিবেশে এলে তার ‘নির্দিষ্ট’ কিছু জেনেটিক রিজিওনে ‘র‍্যানডম মিউটেশন জেনারেটিং’ প্রক্রিয়া এক্টিভেট করে। যেন অভিনব পরিবেশে সে খাপ খাওয়াতে পারে। অর্থাৎ, আদতে এই প্রক্রিয়াটি র‍্যানডম না। বিষয়টার সাথে ভার্টিব্রেট জীবের ইমিউন সিস্টেমের পদ্ধতিগত মিল আছে।

    দুই, জিন ডুপ্লিকেশনের মাধ্যমে যদি এমন কোন এডাপটেশনের প্রয়োজন হয় যেখানে দুই বা ততোধিক অ্যামাইনো এসিড দরকার হবে এবং ফলে একাধিক পয়েন্ট মিউটেশনের দরকার হবে, সেক্ষেত্রে উক্ত এডাপটেশনটি জিনোমে ফিক্স হতে যে পরিমাণ অর্গানিজম দরকার তার সংখ্যা অনেক বেশী ১০^৯। কার্যত, ব্যাকটেরিয়া জাতীয় এককোষী প্রাণী ছাড়া এ ধরনের মিউটেশন সম্ভব নয়। (১)

    তৃতীয়ত, ক্লোরোকুইন রেজিসেন্ট-এর প্রাকটিকেল উদাহরণ হতে দেখা যায় যে যেখানে দুটো প্রোটিন প্রোটিন ইন্টারেকশন সাইটে সাইমুলটেনিয়াস মিউটেশন লাগে সেখানে মিনিমাম অর্গানিজম দরকার ১০^২০। (২)

    চতুর্থত, একটি এনজাইমকে ভিন্ন ফাংশনের একটি এনজাইমে পরিণত করতে দরকার ৭ বা ততোধিক সাইমুলটেনিয়াস মিউটেশন। (৩)

    অর্থাৎ, আপনার আর্টিকেল থেকে র‍্যানডম প্রক্রিয়ায় নতুন তথ্য যোগ অহরহ হয় বলে যে দাবী করলেন এটা এক্সাজারেশন। বরং, র‍্যানডম প্রক্রিয়ায় নতুন তথ্য যোগ হওয়া সম্ভব হলেও তার জন্য প্রয়োজনীয় অর্গানিজম আপনি পৃথিবীর ইতিহাসে খুজে পাবেন না। বস্তুত, চারটি সাইমুলটেনিয়াস মিউটেশনের জন্য দরকার ১০^৪০ টি ব্যাকটেরিয়া (অর্গানিজম)। যা পৃথিবীর ইতিহাসে যতগুলো ব্যাকটেরিয়া তৈরী হয়েছে তার সমান। (২)

    1. http://onlinelibrary.wiley.com/doi/10.1110/ps.04802904/full
    2. Michael Behe, Edge of evolution
    3. http://bio-complexity.org/…/view/BIO-C.2011.1/BIO-C.2011.1

  • ডারউইনবাদী প্যারাডাইমের সমাপ্তি

    মলিকুলার বায়োলজির নতুন নতুন গবেষণা ও আবিস্কারের মধ্য দিয়ে পরিস্কার হয়ে গেছে যে ডিএনএ হচ্ছে তথ্য ধারণ করার একটি মাধ্যম যা জীবজগতের গঠনের তথ্য ধারণ করে। কোন ধরনের ‘র‍্যানডম’ প্রক্রিয়ায় যে ডিএনএ-তে ‘নতুন কার্যকরী’ তথ্য যোগ হয় না সেটিও পানির মত পরিস্কার। কিন্তু, তারপরও বিবর্তনবাদীরা কেন এই আবিস্কারগুলোকে সহজ ভাবে মেনে নিয়ে তাদের চিন্তাচেতনার আড়ষ্টতা থেকে বের হয়ে আসতে পারছে না?

    প্রশ্নটির উত্তর পাওয়া যাবে ‘সেমেলওয়াইস রিফ্লেক্স’-এ। সেমেলওয়াইস রিফ্লেক্স হল বিজ্ঞানের জগতে প্রচলিত বিশ্বাস বা প্যারাডাইম-কে প্রশ্নবিদ্ধকারী নতুন জ্ঞানকে মেনে নিতে অস্বীকৃতি।

    ১৮৪৬ সালের কথা। তখনও জীবাণু সংক্রমনের মাধ্যমে ইনফেকশন ছড়ানোর বিষয়টি অজ্ঞাত ছিলো। ভিয়েনা হাসপাতালের প্রসূতি মহিলাদের দুটো ক্লিনিক ছিলো। একটি ক্লিনিকে ‘চাইল্ডবেড ফিভার’-এর কারণে মাতৃমৃত্যু বেশী হচ্ছিল। অন্য ক্লিনিকে মাতৃমৃত্যু হার কম ছিলো।

    ডা: ইগনাজ সেমেলওয়াইস উক্ত ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে বের হয়ে পড়লেন। তিনি গবেষণা করতে গিয়ে আবিস্কার করলেন যে, যে ক্লিনিকে মা’দের মৃত্যু বেশী হচ্ছিল ঐ ক্লিনিকের পাশেই মৃত লাশের ডিসেকশন করা হত এবং ঐ মৃত লাশ থেকেই ‘কিছু একটা’ চিকিৎসাসেবা প্রদানকারীদের হাতকে অপরিস্কার করে দিচ্ছে যা থেকে মায়ের শরীরে ‘চাইল্ডবেড ফিভার’ ছড়িয়ে পড়ছে।

    তিনি তার ছাত্র ও নার্সদের বলে দিলেন যেন তারা কাজ করার আগে তার আবিস্কৃত এন্টিসেপ্টিকদিয়ে হাত পরিস্কার করে ধুয়ে যায়। ফলে ১৮৪৮ সালে উক্ত ক্লিনিকে মাতৃমৃত্যুর হার ১১.৪ শতাংশ থেকে নেমে ১.২৭ শতাংশে চলে আসে। এরপরও তার কলিগ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং বৈজ্ঞানিক কমিউনিটি এই তত্ত্বটিকে মেনে নেয়নি। তাকে হাসপাতাল থেকে বহিস্কার করা হয়েছিলো। কিন্তু, ২০ বছর পর বিজ্ঞানী লুই পাস্তুর যখন ‘জীবাণু তত্ত্ব’ আবিস্কার করেন তখন বিজ্ঞানজগত বুঝতে পারে যে ডা: সেমেলওয়াইসি-এর আবিস্কার ঠিক ছিলো। (১)

    ঠিক একই ঘটনা ঘটেছিলো যখন আলফ্রেড ভেগনার ১৯১২ সালে প্রথম ‘কন্টিনেন্টাল ড্রিফট’ থিওরীর অবতারণা করেন। কন্টিডেন্টাল ড্রিফটতত্ত্ব মতে পৃথিবীর মহাদেশগুলো কতগুলো প্লেটের মত চলমান আছে। মহাদেশগুলোর ম্যাপ পাশাপাশি রাখলে সীমানাগুলো খাপে খাপে মিলে যায়। ভেগনার এটি লক্ষ্য করে তত্ত্বটি দেন, তবে এর বিস্তারিত প্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি প্রথম কোন ধারণা দিতে পারেননি। ফলে, প্রথমদিকের ভুগোলবিদরা তার এই তত্ত্বকে রিজেক্ট করেন। কিন্ত, পরবর্তীতে আরও তথ্য উপাত্ত পাওয়া গেলে তার এই তত্ত্ব সর্বসাধারনের (বিজ্ঞানী) মাঝে গৃহীত হয় এবং ‘প্লেট টেকটনিক’ নামক বিভাগের জন্ম হয়। (২) উইকিপিডিয়া বলছে:

    “[W]ithout detailed evidence and a force sufficient to drive the movement, [Wegener’s] theory was not generally accepted: the Earth might have a solid crust and mantle and a liquid core, but there seemed to be no way that portions of the crust could move around. Distinguished scientists, such as Harold Jeffreys and Charles Schuchert, were outspoken critics of continental drift.” (৩)

    বারবারা ম্যাকক্লিনটক ছিলেন একজন অত্যন্ত মেধাবী, প্ররিশ্রমী এবং ঠান্ডা মাথার বিজ্ঞানী। ভূট্টার বিভিন্ন প্রকরণ এবং ক্রোমোজোমের গঠন সম্পর্কে তার এত বেশী জ্ঞান ছিল যে ভূট্টার বিভিন্ন দানার রঙ্গের প্যাটার্ণের ভিত্তি করে তিনি বলে দিতে পারতেন যে ক্রোমোজমের ভিতর কি ধরনের জেনেটিক পুনর্গঠন হয়েছে। লক্ষ্যণীয় যে, তিনি ভূট্টার ক্রোমোজমের উপর গবেষণা করছিলেন ১৯৪০ সালে এবং ডিএনএ আবিস্কার হয় আরও পরে ১৯৫৩ সালে।

    ম্যাকক্লিনটক ট্রান্সপজিশন নামক একটি কোষীয় প্রক্রিয়া আবিস্কার করেন এবং এর জন্য নোবেল পুরস্কার পান। ট্রান্সপজিশন হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কোষ নিজে তার ডিএনএ-এর ক্ষতিগ্রস্থ অংশ পুনঃপ্রকৌশলের মাধ্যমে মেরামত করে। ম্যাকক্লিনটক ১৯৫১ সালে যখন কোল্ড স্প্রিং হারবর-এর একটি সিম্পোজিয়ামে এই অসাধারণ আবিস্কারটি বর্ণনা করছিলেন তখন বিজ্ঞানীদের প্রতিক্রিয়া ছিলো সেমেলওয়াইস রিফ্লেক্স-এর ন্যায়। অর্থাৎ, তারা তাদের সময়ের চেয়ে অনেক বেশী এগিয়ে থাকা এই তত্ত্বটিকে গুরুত্ব দিয়ে গ্রহণ করেনি। পরবর্তীতে ম্যাকক্লিনটকের কলিগ জেমস স্যাপিরো যখন ব্যাকটেরিয়াতেও একই প্রক্রিয়া আবিস্কার করেন তখন ‘ট্রান্সপজিশন’ তত্ত্বটি জনপ্রিয়তা পায়। (১)

    খুবই সম্প্রতি একই ধরনের ঘটনা ঘটছে ‘বুদ্ধিদীপ্ত প্রকল্প তথা ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন’ তত্ত্ব ও ‘তৃতীয় পথ তথা দ্য থার্ড ওয়ে’-এর প্রবক্তাদের বেলায়। ডারউইনবাদী বিজ্ঞানী এবং তার সাগরেদরা মাটি কামড়ে পড়ে আছে তাদের পুরোনো হয়ে যাওয়া ‘ডারউইনতত্ত্বে’ যার মূল বক্তব্য হল এলোপাতাড়ি (র‍্যানডম) মিউটিশনের মাধ্যমে ডিএনএ-তে নতুন তথ্য যোগ হচ্ছে এবং এর ফলে সৃষ্টি বৈচিত্রের কারণে বিবর্তন হচ্ছে। অথচ, অনিয়ন্ত্রিত এলোপাতাড়ি মিউটেশন সংক্রান্ত অসংখ্য পরিক্ষনিরীক্ষা এখন পর্যন্ত ডিএনএ-র ক্ষতি বৈ উপকার করতে পারেনি।

    আমরা দেখলাম যে ডারউইনবাদী কর্তৃক তাদের তত্ত্বকে প্রশ্নবৃদ্ধকারী নতুন সত্যকে গ্রহণ করতে অনিচ্ছা অভিনব কিছু নয়। একটি নতুন সত্য কখনও আগের তত্ত্বকে আকড়ে ধরে থাকা বিজ্ঞানীদের চিন্তাচেতনার পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় না, প্রতিষ্ঠিত হয় তরুণ বিজ্ঞানীদের উক্ত তত্ত্ব গ্রহণ করা এবং পুরোনো বিজ্ঞানীদের প্রয়াণের মধ্য দিয়ে। এটিকে বলে প্ল্যাঙ্ক’স প্রিন্সিপাল। আধুনিক কোয়ান্টাম তত্ত্বের জনক ম্যাক্স প্ল্যাংক বলছেন:

    “A new scientific truth does not triumph by convincing its opponents and making them see the light, but rather because its opponents eventually die and a new generation grows up that is familiar with it” — Max Planck, Scientific autobiography, 1950, p. 33 (৪)

    যখন পুরোনোকে ঝেড়ে ফেলে জ্ঞানের জগতে একটি নতুন বৈজ্ঞানিক দৃষ্টান্ত স্থানান্তর (প্যারাডাইম শিফট) হয় তখন তাকে বিজ্ঞানের ইতিহাসবিদ থমাস কুন-এর ভাষায় বলা হয় ‘বৈজ্ঞানিক বিপ্লব (Scientific revolution)’ । (৫)

    মলিকুলার বায়োলজি, জেনেটিক্স, ইনফরমেশন থিওরী প্রভৃতি বৈজ্ঞানিক শাখাগুলোর নতুন নতুন আবিস্কারের মধ্যদিয়ে এটি স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে জীবজগত ডারউইনের সময়ে ধারণাকৃত কতগুলো ‘সরল’ কোষের সমন্বয়ে গঠিত নয়। এক একটি কোষ এক একটি বিস্ময় এবং তার ভিতরের জগৎটা আরো ‘প্রকৌশলী’ বিস্ময়ে ভরপুর। পৃথিবীর ইতিহাসে কখনও কোন এলোপাতাড়ি প্রক্রিয়ায় কোন ‘কোড’ তৈরী হয়ে যায়নি।

    সেদিন খুব দূরে নয় যেদিন, মানুষের ডিএনএ-এর ‘৯৮%’-কে আবর্জনা (জাংক) আখ্যাদানকারী (৬) বিবর্তনবাদীরা তাদের জরজীর্ণ চিন্তাচেতনা নিয়ে উটপাখির ন্যায় মাটির নিচে মাথা গুঁজে পড়ে থাকবে এবং তরুণ সতেজ মস্তিস্কের বিজ্ঞানীরা ‘ডিএনএ’-এর কোডের পিছনের কোডারকে সচেতনভাবে মেনে নিয়ে এগিয়ে যাবে, যেদিন ডারউইনের বস্তবাদী প্যারডাইমকে শিফট করে ডিজাইনভিত্তিক ‘তৃতীয়’ প্যারাডাইম বৈজ্ঞানিক বিপ্লব ঘটিয়ে দিবে। ইনশা আল্লাহ।

    সেদিনের অপেক্ষায়…

    রেফারেন্স:

    ১. Perry Marshall, Blade#1: Transposition-The 70-Year-Old Nobel prize-winning discovery, in ‘Evolution 2.0’
    ২. David Klinghoffer, ‘How to Think About Minority Science Views — The Case of Plate Tectonics’. [Accessed: 01.11.2017] Available from:https://evolutionnews.org/…/how-to-think-about-minority-sc…/
    ৩. ‘Development of the theory’ in ‘Plate tectonics’. [Accessed: 01.11.2017] Available from https://en.wikipedia.org/wiki/Plate_tectonics…
    ৪. ‘Planck’s principle’. [Accessed: 01.11.2017] Available from:https://en.wikipedia.org/wiki/Planck%27s_principle
    ৫. Thomas S. Kuhn, (1962) “The structure of scientific revolutions”
    ৬. Ohno S (1972) ‘So much “junk” DNA in our genome.’ In: Smith HH, editor. Evolution of Genetic Systems. New York: Gordon and Breach. pp. 366–370.

  • জীবজগতের ভাষা, বর্ণমালা ও তার উৎস

    [বি.দ্র.: এই লেখাতে মূলত জীবজগতের গাঠনিক ভাষা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।]

    ছোটবেলায় আমাদের অনেকের মা-বাবা আমাদের বর্ণমালা শেখানোর জন্য এক ধরণের খেলনা কিনে দিতেন। প্লাস্টিকের তৈরী চৌকা (বর্গক্ষেত্র) আকৃতির খেলনাগুলোতে বর্ণমালার বিভিন্ন অক্ষর লিখা থাকতো। উদ্দেশ্য, আমরা খেলাচ্ছলে বর্ণমালা শিখে নেবো। সাথে, বর্ণ ব্যবহার করে শব্দ গঠনও করতে পারবো।

    ধরুন, আপনাকে এ ধরণের কয়েক সেট বর্ণমালা দেয়া হয়েছে। বর্ণমালায় স্বরবর্ণ ও ব্যাঞ্জন বর্ণের পাশাপাশি ‘কার’ চিহ্নিত চৌকা আছে। এ অবস্থায় আপনি সবগুলো চৌকা হাতে নিয়ে যদি টেবিলে ফেলেন তাহলে কি অর্থপূর্ণ বাক্য গঠন হওয়ার কোন সম্ভাবনা আছে? অবশ্যই না। হ্যাঁ, হতে পারে অর্থপূর্ণ ছোট দু’একটি শব্দ হয়ে গেল। যেমন: বল, কলম ইত্যাদি। কিন্তু, শব্দে অক্ষরের এবং ‘কার’-এর সংখ্যা যতই বাড়বে ততই ‘বাই চান্স’ অর্থপূর্ণ শব্দ তৈরী হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে। যেমন: ‘আকাশ’ ও ‘হতবিহ্বল’ শব্দ দু’টিতে যথাক্রমে ৫টি ও ৭টি চৌকা লাগবে। অন্যদিকে, ‘বল’ ও ‘কলম’ শব্দ দু’টিতে যথাক্রমে ২টি ও ৩টি চৌকা লাগবে। ফলে, ‘আকাশ’ ও ‘হতবিহ্বল’ শব্দ দুটি বাই চান্স তথা র‍্যাণ্ডমলি হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।

    আবার, চৌকাগুলো র‍্যাণ্ডমলি ফেললে যদি কতগুলো অর্থপূর্ণ শব্দ তৈরী হয়েও যায়, তথাপি তা একটি অর্থপূর্ণ বাক্য গঠন করবে না। যেমন: মনে করি, টেবিলে দেখা গেলো ‘বল কলম আকাশ’, এটা কোন অর্থপূর্ণ বাক্য প্রকাশ করলো না। তবে, এক্ষেত্রেও ছোট ছোট অর্থপূর্ণ বাক্য প্রকাশ পেয়ে যেতে পারে। যেমন: আমি যাই। কিন্তু বাক্য যতই বড় হবে ততই র‍্যাণ্ডমলি তৈরী হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।

    Scrable Game

    উপরের চিত্রে দেখা যাচ্ছে যে চৌকাগুলো র‍্যাণ্ডমলি ফেলে রাখা হয়েছে তাতে দু’অক্ষরের একাধিক অর্থপূর্ণ শব্দ (যেমন: GO, TO) পাওয়া যাচ্ছে। ভালমত খুঁজলে দু-একটি তিন অক্ষরের অর্থপূর্ণ শব্দও পাওয়া যেতে পারে। তবে, চার অক্ষরের যে শব্দটি (LOVE) ওপরের দিকে আছে, তা দেখামাত্রই বলে দেয়া যায় যে কেউ একজন এগুলো এভাবে সাজিয়েছে, র‍্যাণ্ডমলি হয়নি। চার অক্ষরের দুটো শব্দ মিলে যে শব্দটি (HAND-MADE) তৈরী করেছে সেটি র‍্যাণ্ডমলি হওয়া যে প্রায় অসম্ভব, তা বলাই বাহুল্য।

    এবার মনে করুন, আপনার চৌকাগুলোতে এক বিশেষ ধরণের চুম্বক লাগানো আছে, যাতে আপনার চৌকাগুলোর একটি আরেকটির সাথে সুনির্দিষ্ট তথা স্পেসিফিক নিয়মে লেগে যাওয়ার প্রবণতা আছে। ধরি, ‘ক’ চিহ্নিত চৌকার প্রবণতা হলো ‘ল’ এর সাথে পাশাপাশি লেগে যাওয়া। তাহলে, এ ধরণের বর্ণমালা দিয়ে ‘বাই চান্স’ তো দূরে থাক, আপনি নিজে থেকে কি কোন শব্দ লিখতে পারবেন? উত্তর: না। কারণ, ‘ক’-এর পরে ‘স’ যুক্ত করতে প্রয়োজন হলেও আপনি আটকে যাবেন। কিন্তু, চৌকাগুলোর প্রবণতা যদি এমন হতো যে একটির সাথে আরেকটি স্পেসিফিক ভাবে না লেগে পাশাপাশি যেকোন বর্ণের সাথে হালকা ভাবে লাগে, তাহলে আপনার যেকোন শব্দ তৈরী করতে কোন সমস্যা হতো না এবং র‍্যাণ্ডমলি যে ছোট শব্দ বা বাক্যগুলো হতো সেগুলোও সাধারণ চৌকার মত বিচ্ছিন্ন না থেকে একটু লেগে থাকতো, অর্থাৎ স্থায়ী হতো। তবে এক্ষেত্রে ‘বাই চান্স’ হওয়া মানে আরেক সমস্যা। কারণ, দেখা যেত, যখনই ‘কলম’ লেখাটা তেরী হয়েছে পরক্ষণেই ‘ব’ এবং ‘শ’ বা অন্য যেকোন অক্ষর পাশে এসে ‘বকলমশ’ বানিয়ে ফেলেছে, তথা অর্থহীন করে ফেলেছে। অর্থাৎ, এমতাবস্থায় অর্থপূর্ণ শব্দগুলোকে পাশাপাশি রাখার জন্য একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তির সার্বক্ষণিক অবস্থান প্রয়োজন হয়ে পড়ত।

    উপরের আলোচনা থেকে আমরা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বুঝতে পারলাম তা হলো:

    ১. আমরা যদি কোন প্রক্রিয়ায় কোন তথ্য সংরক্ষণ করতে চাই, সেই প্রক্রিয়াটিতে এমন কতিপয় পৃথক পৃথক অংশ থাকবে যেগুলোকে যেকোন ভাবে সাজানো যায়।

    ২. উক্ত অংশগুলোর পরস্পরের মধ্যে আকর্ষণ থাকতে পারে, কিন্তু সুনির্দিষ্ট ‘আকর্ষণ’ থাকা যাবে না।

    ৩. এ ধরণের পৃথক পৃথক অংশগুলো র‍্যাণ্ডমলি যুক্ত হয়ে অর্থপূর্ণ কোন শব্দ এবং বাক্য গঠন করার একটি সীমা আছে। তবে, সেই সীমা খুবই সংকীর্ণ তথা ছোট।

    এবার আসুন এ ধরণের একটি তথ্যসংরক্ষণ ব্যবস্থা সম্পর্কে জানি যা প্রতিনিয়ত আমরা ব্যবহার করে চলেছি। তা হলো কম্পিউটার। হ্যাঁ, কম্পিউটারে ‘বাইনারী’ নাম্বার দিয়েই বিভিন্ন ধরণের তথ্য, যেমন: প্রোগ্রামের নির্দেশনা, ডকুমেন্ট, ইমেজ ইত্যাদি সংরক্ষণ করা হয়।

    আমরা জানি, আমরা যে অংক ব্যবহার করে হিসেব নিকেশ করি সেটি হলো ‘দশমিক’ বা ‘ডেসিমাল’ সংখ্যা। অর্থাৎ, ১ থেকে ১০ পর্যন্ত গিয়ে এরপর আবার ১,২,৩..  যোগ করে তথা ১১, ১২, ১৩… এভাবে সংখ্যা গননা করতে থাকি। কিন্তু সংখ্যা গননা ইচ্ছা করলে এভাবেও করা যায়, ১,১১,১১১,১১১১,…..,১১১১১১১১১১ (তথা ১,২,৩,৪,…….১০)। একে বলে ‘ইউনারী’ সংখ্যা। এভাবে একশ লিখতে গেলে পরপর একশটি ১ বসাতে হবে। অর্থাৎ এভাবে হিসেব করা সহজ হলেও স্থান অনেক বেশী দরকার হয়ে পড়ে। আবার, সংখ্যাকে ‘দ্বিমিক’ বা ‘বাইনারী’ আকারেও প্রকাশ করা যায়। অর্থাৎ, ০,১,১০,১১,১০০,….১০১০ (তথা, ০,১,২,৩,৪,….১০)। দেখা যাচ্ছে এভাবে সংখ্যা প্রকাশ করলে যায়গা তুলনামূলক কম লাগছে। ‘দশমিক’ সংখ্যাকে ‘দ্বিমিক’ সংখ্যায় রূপান্তর করা যায় আবার বিপরীতটাও করা যায়।

    লক্ষ্যণীয়, বিদ্যুতের উপস্থিতি অনুপস্থিতির উপর ভিত্তি করে আমরা ইচ্ছে করলে দ্বিমিক সংখ্যাকে সংরক্ষণ করতে পারি। সিলিকন ট্রানজিস্টরের মধ্যে এ ধরণের একটি পদ্ধতি তৈরী করা হয়। যেখানে বিদ্যুতের উপস্থিতি হচ্ছে ‘১’ এবং বিদ্যুতের অনুপস্থিতি ‘০’। এভাবে তৈরীকৃত অনেকগুলো ট্রানজিস্টরকে যদি একসাথে পাশাপাশি রাখা যায় তাহলে সেগুলোতে সংখ্যা সংরক্ষণ করা যাবে।

    কিন্তু কতগুলো ট্রানজিস্টরকে একসাথে রেখে আমরা একটি ‘একক’ ধরবো? কারণ, যদি একটি ট্রানজিস্টরকে একক ধরি তাহলে মাত্র দুটো সংখ্যা সংরক্ষণ করা যাচ্ছে ০ এবং ১। কিন্তু যদি ৮টি ট্রানজিস্টরকে একত্রে রাখা যায় তাহলে সর্বোচ্চ যে সংখ্যাটি রাখা যাবে তা হলো: ১১১১১১১১, দশমিকে যার মান ২৫৫। তুলনামূলক বড় সংখ্যা। আরও বেশী ট্রানজিস্টরকে একত্রে রাখা সম্ভব, কিন্তু সেক্ষেত্রে জায়গা বেশী লেগে যাবে। ফলে, সাধারণত ৮টি ট্রানজিস্টরকে একত্রে রাখা হয়। এর প্রতিটিকে এক ‘বিট’ বলে এবং পুরো ৮টি বিটকে একত্রে বলে ‘বাইট’।

    8 bit shift register

    চিত্রে একটি ৮ বিট শিফট রেজিস্টার দেখা যাচ্ছে। ৮ বিটের মেমোরী আইসিগুলোও (ইন্টেগ্রেটেড সার্কিট) অনেকটা এভাবেই সাজানো হয়।

    ৮টি বিট দিয়ে না হয় সংখ্যা সংরক্ষণ করা যায়। কিন্তু, আমি যদি অক্ষর সংরক্ষণ করতে চাই? তা-ও সম্ভব। কীভাবে? এটা বুঝা যায়, সাংকেতিক ভাষা ব্যবহারের উদাহরণ থেকে। আমরা অনেকেই ছোট বেলায় এরকম খেলেছি যে, আমি একটি শব্দ লিখব তবে সে শব্দে ‘খ’ বলতে ‘ক’ বুঝাবো এবং এভাবে বর্ণমালার অক্ষরগুলোকে এক অক্ষর করে পিছিয়ে দেবো। এভাবে কোন শব্দ লিখলে আমি কী ধরণের নিয়ম ব্যবহার করেছি সেটি যে জানবে তার পক্ষে শব্দটির অর্থ বুঝা সহজ হবে। অর্থাৎ, আমরা ইচ্ছে করলে ‘ক’ বর্ণটিকে অন্য কিছু দিয়ে প্রকাশ করতে পারি। ঠিক একইভাবে, একটি বাইটের মধ্যে যদি বিভিন্নভাবে বর্ণমালাকে জুড়ে দেয়া যায় তাহলেও লেখা সংরক্ষণ করা যাবে। American Standard Code for Information Interchange, সংক্ষেপে ASCII হচ্ছে এ ধরণের একটি নীতিমালা যেটি অনুযায়ী কম্পিউটারের বিভিন্ন ইন্সট্রাকশনগুলো, যেমন: ‘কী-বোর্ডের’ বিভিন্ন ‘কী’-গুলো  বাইনারী নাম্বারের সাথে চিহ্নায়িত করা থাকে। (http://www.ascii-code.com/) অর্থাৎ, আপনি যখন কী-বোর্ডে ‘A’ লিখেন,  র‍্যামে তা ‘০১০০০০০১’ হিসেবে সংরক্ষিত হয়।

    ASCII code

    আমেরিকান স্ট্যাণ্ডার্ড কোড ফর ইনফরমেশন ইন্টারচেঞ্জ। লক্ষ্যণীয়, A-এর কোড হচ্ছে ‘1000001’। এখানে ৭টি বিট আছে। প্রথম বিটটিকে (তথা অষ্টম) রাখা হয় অংকের মাইনাস বা প্লাস বুঝানোর জন্য।

    হার্ডডিস্কে কীভাবে সংরক্ষণ হয়? বিষয়টি খুবই মজার। আমরা জানি, চৌম্বক পদার্থগুলোর ভিতরে ডাইপোল থাকে। তড়িৎক্ষেত্র প্রবাহিত করে যেগুলোর পোলারিটি ঘুরিয়ে দেয়া যায়। এরকম ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঘনকাকৃতির চৌম্বক পদার্থ (যেমন: হার্ডডিস্কে ব্যবহৃত কোবাল্ট ভিত্তিক সংকর ধাতু)-কে যদি পাশাপাশি সাজানো যায় তাহলেও বাইনারী ডিজিট সংরক্ষণ করা যাবে। সেক্ষেত্রে ধরুন: ‘>’-কে ‘এক’ এবং ‘<’ কে ‘শূণ্য’ ধরা হলো। সেক্ষেত্রে, ‘A’ লিখলে হার্ডডিস্কে তা ‘<><<<<<>’ এভাবে সংরক্ষিত থাকবে।

    Hard disk Magnetic Recording and Reading overview

    চিত্রে হার্ডডিস্কের কোবাল্ট বেজ্‌ড্‌ ম্যাগনেটিক অ্যালয় দিয়ে কীভাবে বাইনারী তথ্য রেকর্ড করা এবং পড়া হয় তা দেখা যাচ্ছে।

    যাই হোক, এবার লক্ষ্য করুন, হার্ডডিস্কে কিংবা র‍্যামে আমরা ডাটা সংরক্ষণ করতে পারছি কারণ ডাটা সংরক্ষণের ক্ষুদ্র অংশগুলো পরস্পরের সাথে সুনিদিষ্ট আকর্ষণে আবদ্ধ নয়। স্পষ্টতই, হার্ডডিস্কের উপর দিয়ে যদি কোন র‍্যাণ্ডম ম্যাগনেটিক ঝড় বয়ে যায় সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য সংরক্ষণ হবে না। আবার, র‍্যাণ্ডম প্রক্রিয়ায় যদি একটি বিট পরিবর্তন হয়ে যায়, গুছানো তথ্য ধ্বংস হবে এবং একটি নির্দিষ্ট সংক্ষিপ্ত সীমার বাইরে অর্থবহ তথ্য যুক্ত হবে না।

    এবার চলুন আমরা এরকম আরও মজার একটি বর্ণমালা নিয়ে কথা বলি। হ্যাঁ, তা আর কিছু নয় জীবজগতের গাঠনিক ব্লুপ্রিন্ট সংরক্ষণকারী বর্ণমালা- ‘ডিএনএ’।

    ডিএনএ-র বর্ণমালায় বর্ণ মাত্র চারটি এবং কোন যতি চিহ্ন নেই। এডেনিন (A), থায়ামিন (T), গুয়ানিন (G) এবং সাইটোসিন (C)। এই চারটি অণু এমন যে, এগুলো পরস্পর পাশাপাশি ফসফেট বন্ধনে যুক্ত হয়। কিন্তু, এই বন্ধনে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে তাদের পারস্পরিক স্পেসিফিক এফিনিটি কাজ করে না। স্পেসিফিক এফিনিটি কাজ করলে ডাটা সংরক্ষণ করা যায় না, উপরে আমরা তা দেখেছি। লক্ষ্যণীয় যে, উপরোক্ত প্রতিটি অনুকে বলে নাইট্রোজেন বেজ। উক্ত নাইট্রোজেন বেজগুলো ডিঅক্সিজেনেটেড রাইবোজ-এর সাথে সংযুক্ত থাকে, যাদেরকে বলে নিউক্লিওসাইড। প্রতিটি নিউক্লিওসাইডের রাইবোজ সুগারে ফসফেট যুক্ত হলে গঠিত হয় নিউক্লিওটাইড। মূলত এই নিউক্লিওটাইড-ই হলো ডি-অক্সিরাইবো-নিউক্লিইক-এসিড তথা  ডিএনএ-র গাঠনিক একক। অর্থাৎ, এরকম একেকটি নিউক্লিওটাইড অণু পাশাপাশি যুক্ত হয়ে যে পলিনিউক্লিওটাইড চেইন গঠন করে তাকেই বলে ডিএনএ।

    Nucleotides and portion of a Double Helix

    আমরা চিত্রটির ডানদিকে ডিএনএ ডাবল হেলিক্স-এর অংশ দেখতে পাচ্ছি। বামদিকে দেখানো হয়েছে যে, ডিএনএ-তে কীভাবে নিউক্লিওটাইডগুলো পরস্পরের সাথে সংযুক্ত হয়। লক্ষ্যণীয়, ডাবল হেলিক্স গঠনের ক্ষেত্রে পাশাপাশি দুটো চেইনের একটির A অপরটির T এর সাথে এবং একটির C অপরটির G এর সাথে ও ভাইস ভারসা হাইড্রোজেন বন্ধন দিয়ে যুক্ত হয়।

    প্রশ্ন হলো, ATGC বর্ণগুলোকে তো বিভিন্ন ভাবে সাজানো যেতে পারে, সেক্ষেত্রে আমরা তথ্য সংরক্ষণের একক হিসেবে কোনটি ঠিক করবো? এটি নির্ভর করছে আমি কী ধরণের তথ্য সংরক্ষণ করতে চাই এবং কী ধরণের ‘সংকেত’ চিহ্নিত করতে চাই তার উপর। উপরের কম্পিউটারের উদাহরণে আমরা দেখেছি, বাইনারী ডিজিটে বর্ণ দুটি, ‘০’ এবং ‘১’। আমি যদি দুটি নিয়ে একক করি তাহলে সাজানো যাবে এইভাবে: ০০,০১,১০,১১; তিনটি করে নিলে: ০০০,০০১,০১০,০১১,১০০,১০১,১১০,১১১; অর্থাৎ খুব বেশী সংকেত চিহ্নিত করা যাবে না। অন্যদিকে, আমি যেহেতু অনেকগুলো পৃথক নির্দেশনা বা অক্ষর চিহ্নিত করতে চাচ্ছি, সেহেতু ‘একক’টি এমন হলে ভাল হয় যে বেশী বড়ও না আবার এমন ছোটও না যে সবগুলো সংকেত সংরক্ষণ করা যাবে না। এ হিসেবে কম্পিউটারের একক হলো ‘০০০০০০০০’ তথা ‘৮’ বিট।

    ডিএনএ-র ক্ষেত্রে আমার সংকেতগুলো হলো অ্যামাইনো এসিড। যদিও প্রকৃতিতে অনেক অ্যামাইনো এসিড আছে, আমি বিশটির বেশী ব্যবহার করবো না। এখন, ATGC থেকে যদি দুটো করে বর্ণ নিই, তাহলে মাত্র ষোল ভাবে সাজানো যায়: AA,AT,AG,AC,TA,TT,TG,TC,GA,GT,GG,GC,CA,CT,CG এবং CC। অর্থাৎ বিশটি অ্যামাইনো এসিডকে নির্দেশিত করতে পারছি না। চারটি করে নিলে সাজানো যাবে ২৫৬ ভাবে। এত বেশী একক আমার প্রয়োজন পড়ছে না। তদুপরি, চারটি করে সাজালে আমার জায়গা বেশী লেগে যাচ্ছে।  কিন্তু, তিনটি করে নিলে ৬৪ উপায়ে সাজানো যায়। এ প্রক্রিয়ায় ২০টি অ্যামাইনো এসিডকে খুব সহজেই চিহ্নায়িত করা যাচ্ছে। এছাড়াও, অনেকগুলো অ্যামাইনো এসিডকে আমি একাধিক ‘কোডন’ দিয়ে চিহ্নিত করতে পারছি। (লক্ষ্যণীয়, ডিএনএ-তে ৩টি অক্ষরের এই একককে কোডন বলে)।

    প্রশ্ন হলো, আমি একটি অ্যামাইনো এসিডের বিপরীতে কোন্ কোডনকে চিহ্নায়িত করবো? যেমন: GGG কোড করে গ্লাইসিনকে, GAG কোড করে গ্লুটামিক এসিডকে। কিন্তু, GGG এলানিনকে কোড না করে গ্লাইসিনকে কোড করবে এটা কেন নির্ধারণ করবো?  ওয়েল, এক্ষেত্রে আমার পরিকল্পনা হবে কোষ বিভাজন হওয়াকালীন ডিএনএ কপি করার সময় যদি র‍্যাণ্ডমলি একটি অক্ষর পরিবর্তন হয়ে যায় (মিউটেশন) সেক্ষেত্রে অ্যামাইনো এসিড যেন পরিবর্তন না হয় (সাইলেন্ট মিউটেশন)। আবার, বিশ ধরণের অ্যামাইনো এসিডে কতগুলো পোলার, কতগুলো নন-পোলার, কতগুলো এসিডিক এবং কতগুলো বেসিক, কতগুলোতে ‘রিং’ আকৃতির সাইড চেইন আছে কতগুলোতে নেই। প্রোটিনের ত্রিমাত্রিক গঠন নির্মাণ এবং ফাংশন নির্ধারণে এই বিভিন্ন ধরণের অ্যামাইনো এসিডগুলোর সুনির্দিষ্ট গাঠনিক ও রাসায়নিক ভূমিকা আছে। এ কারণে আমি চেষ্টা করবো কোডনগুলো এমনভাবে নির্ধারণ করতে যেন মিউটেশনের কারণে যদি অ্যামাইনো এসিড পরিবর্তন হয়েও যায়, তথাপি যেন একই ধরণের অন্য একটি এমাইনো এসিডে পরিবর্তন হয়। মজার বিষয় হলো, জীবজগতে যে কোডন পাওয়া গেছে তা এই ধরণের বৈশিষ্ট্যগুলোকে মাথায় রেখে নির্ধারণ করা হয়েছে। তদুপরি, জীবজগতের প্রায় সকল ক্ষেত্রেই এই কোডনের নীতিমালা সুনির্দিষ্ট অর্থাৎ ইউনিভার্সাল। কারণটা খুব সহজ- একাধিক ভাষা ব্যবহার করার চেয়ে একটি  ভাষা ব্যবহার করাই সুবিধাজনক।

    Universal Genetic Code Chart

    উপরে আমরা ইউনিভার্সাল জেনেটিক কোডের চার্ট দেখতে পাচ্ছি। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, কোডন সিস্টেমটি এমনভাবে সিলেক্ট করা হয়েছে যেন মিউটেশনের ইফেক্ট সর্বোচ্চ মিনিমাইজ করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, ফিনাইল এলানিনকে (Phe) কোড করে UUU এবং UUC। অর্থাৎ UUU মিউটেশন হয়ে UUC হয়ে গেলেও এমাইনো এসিড একই থাকবে। আবার, যদি UUU পরিবর্তন হয়ে UAU হয়ে যায় তাহলে ফিনাইল এলানিন পরিবর্তন হয়ে টাইরোসিন (Tyr) হবে, যা কাছাকাছি গঠনযুক্ত। কিংবা, যদি CUU হয়ে যায় সেক্ষেত্রে হচ্ছে লিউসিন (Leu)। এটিও ত্রিমাত্রিক গঠনের দিক দিয়ে ফিনাইল এলানিনের কাছাকাছি।

    এই যে একটি কোডনের সাথে একটি অ্যামাইনো এসিডকে আমি ‘অ্যাসাইন’ করছি, তা কি র‍্যাণ্ডমলি একা একা হতে পারবে? যে কোন সচেতন পাঠকের কাছে পরিস্কার যে তা সম্ভব নয়। প্রকৃতপক্ষে, একটি বিষয়ের সাথে আরেকটি বিষয়কে এসাইন বা সম্পর্কযুক্ত করার তথা একটি বিষয়ে আরেকটি বিষয়ের অর্থ নির্ধারণ করে দেয়া ‘বুদ্ধিমান’ স্বত্তার কাজ। কোন অন্ধ প্রক্রিয়ায় তা কখনও হয় না। এর মধ্যে আবার তা যদি হয় ‘অপটিমাম’ বা ‘বেস্ট’ কোডন নির্ণয় করা, তাহলে তো আরও সম্ভব নয়।

    এছাড়াও, এই বর্ণগুলো যদি পরস্পরের সাথে স্পেসিফিক এফিনিটি দেখাতো তাহলেও তথ্য সংরক্ষণ করা সম্ভব হতো না। অর্থাৎ, A কেবল G-এর পাশে বসতে পারবে, C কেবল T-এর পাশে বসতে পারবে, অণুগুলোর রাসায়নিক আসক্তি এমন হলে তা কোন অ্যামাইনো এসিডকে কোড করতে পারতো না।

    এবারে আসি প্রোটিনের কথায়। প্রোটিনকেও আরেক ধরণের ভাষা বলা যায় যার বর্ণমালায় বর্ণ আছে ২০টি। পোলারিটি, অম্ল-ক্ষার বৈশিষ্ট্য, বেনজিন রিং-এর উপস্থিতি ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যের আলোকে প্রতিটি অ্যামাইনো এসিড বর্ণ বিভিন্ন অর্থ ধারণ করে। আর এই বৈশিষ্ট্যকে কাজে লাগিয়ে তৈরী হয় একেকটি বাক্য তথা অ্যামাইনো এসিডের সরলরৈখিক সিকোয়েন্স। একে আবার প্রোটিনের প্রাইমারী স্ট্রাকচার বলা হয়। উক্ত সিকোয়েন্স, অ্যামাইনো এসিডের বিভিন্ন মাত্রার কেমিক্যাল এফিনিটির উপর ভিত্তি করে আলফা হেলিক্স, বিটা শিট ইত্যাদি বিশেষায়িত গঠন তৈরী করার মধ্য দিয়ে প্রোটিনের সেকেণ্ডারী স্ট্রাকচার তৈরী করে। এরপর, নির্দিষ্ট আকৃতিতে ভাঁজ (ফোল্ড) হয়ে তৈরী করে সুনির্দিষ্ট ত্রিমাত্রিক গঠন বা টারসিয়ারী স্ট্রাকচার। এ রকম দুটো বা ততোধিক প্রোটিন সমন্বয়ে তৈরী হয় কোয়ার্টারনারী স্ট্রাকচার। এনজাইমগুলো সাধারণত একটি প্রোটিন দিয়ে গঠিত হয়, আর বিভিন্ন গাঠনিক কাঠামো যেমন: আয়ন চ্যানেল তৈরী হয় একাধিক প্রোটিনের সমন্বয়ে।

    Amino acids found in living world

    ইলাস্ট্রেশনটিতে আমরা দেখতে পাচ্ছি জীবজগতে প্রাপ্ত ২১ ধরণের এমাইনো এসিড। তন্মধ্যে, সেলেনোসিস্টিন অল্প কিছু বিশেষায়িত প্রোটিনে পাওয়া যায় বিধায় সাধারণভাবে প্রোটিনের গাঠনিক একক পড়ার সময় এর উল্লেখ দেখা যায় না।

    লক্ষ্যণীয়, কম্পিউটারের ভাষার ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি বাইনারী ভাষা দিয়ে ইংরেজী ভাষা সংরক্ষণ করা হয়। অন্যকথায়, একটি ভাষা দিয়ে আরেকটি ভাষা সংরক্ষণ করা যায়। তেমনি প্রোটিনের ভাষাকে সংরক্ষণ করে ডিএনএ-র ভাষা। আরও লক্ষ্যনীয়, প্রোটিনের ভাষায় বর্ণ ২০টি হওয়ায় এবং উক্ত বর্ণগুলোর আণবিক বৈশিষ্ট্য বিভিন্ন হওয়ায় ভাব প্রকাশের সীমানা অনেক বেড়ে গেলো। অর্থাৎ প্রোটিনের ২০টি অণু দিয়ে অনেক বৈচিত্রপূর্ণ ত্রিমাত্রিক গঠন সম্ভব। ফলে, প্রোটিন এনজাইম থেকে শুরু করে কোষের বিভিন্ন গাঠনিক উপাদান তৈরীতে ভূমিকা রাখে। কিন্তু, ডিএনএ-র বর্ণমালার বর্ণের আণবিক বৈশিষ্ট্য ও সংখ্যা সীমিত হওয়ায় ডিএনএ বৈচিত্রপূর্ণ ত্রিমাত্রিক গঠন তৈরী করতে পারে না।

    Level of protein structures

    ছবিতে দেখা যাচ্ছে কীভাবে অ্যামাইনো এসিডগুলো একটার পাশে আরেকটা যুক্ত হয়ে চূড়ান্ত ত্রিমাত্রিক প্রোটিন তৈরী করে। বিষয়টি যত সহজ শুনতে ততটাই কঠিন বাস্তবে, কী বলেন?

    আমরা জানি, ডিএনএ-তে দুটি পলিনিউক্লিওটাইড চেইন পাশাপাশি থেকে প্যাঁচানো মই-এর মত গঠন তৈরী করে, যাকে ইংরেজীতে বলে ডাবল হেলিক্স। ডিএনএ থেকে প্রোটিন তৈরীর প্রক্রিয়ায় প্রথমে ডিএনএ থেকে সম্পূরক ম্যাসেঞ্জার আরএনএ তৈরী হয়। এ প্রক্রিয়ায় শুরুতে ডিএনএ ডাবল হেলিক্স এর মধ্যে বন্ধন খুলে একটি চেইনকে পড়ার জন্য উন্মুক্ত করতে হয়। এ প্রক্রিয়াটি করে একটি বিশেষায়িত প্রোটিন তথা এনজাইম। এরপর আরেকটি বিশেষায়িত এনজাইম এসে উক্ত চেইনকে পড়ে সম্পূরক আরএনএ চেইন তৈরী করে। অতঃপর, একটি এনজাইম লাগে উন্মুক্ত করা অংশ পুনরায় জোড়া লাগাতে, একটি এনজাইম লাগে প্রুফ রিড করতে, দুটি লাগে জোড়া লাগানোর সময় বেশী পেঁচিয়ে গেলে প্যাঁচ খুলতে। প্রসঙ্গত, আরএনএ-এর সাথে ডিএনএ-র পার্থক্য হল- আরএনএ-এর নিউক্লিওটাইডে তথা আরএনএ-র বর্ণমালার অক্ষরগুলোতে একটি অক্সিজেন অণু বেশী থাকে এবং আরএনএ-তে থাইমিনের (T) পরিবর্তে ইউরাসিল (U) থাকে। প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক যে, তথ্য পরিবহন করে নেয়ার জন্য ডিএনএ-র পরিবর্তে আরএনএ-কে কেন বাছাই করা দরকার হলো? একটি উত্তর হলো, যে পদ্ধতিটির মধ্যে আমি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রাখতে চাই স্বাভাবিক ভাবেই তাকে আমি আলাদাভাবে সংরক্ষণ করতে চাইব। তদুপরি, আরএনএ-র আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো এটি ডিএনএ-র চেয়ে একটু বেশী বৈচিত্রের গঠন তৈরী করতে পারে।

    Transcription and Translation

    এক নজরে ডিএনএ থেকে প্রোটিন সংশ্লেষ পদ্ধতি। ছবিটিতে সংশ্লেষের কাজে অংশগ্রহণকারী এনজাইমগুলোকে দেখানো হয়নি। 

    এরপর, ম্যাসেঞ্জার আরএনএ থেকে রাইবোজোম নামক আণবিক মেশিনের সহায়তায় প্রোটিন সংশ্লেষ হয়। রাইবোজোম নামক মেশিনটি তৈরী হয় রাইবোজোমাল আরএনএ ও অনেকগুলো প্রোটিনের সমন্বয়ে। প্রোটিন তৈরীর প্রক্রিয়ায় আর এক ধরণের আরএনএ সাহায্য করে- ট্রান্সফার আরএনএ বা টি-আরএনএ । এদের কাজ হলো রাইবোজোমের কাছে অ্যামাইনো এসিড বহন করে নিয়ে যাওয়া। বিশটি অ্যামাইনো এসিডের জন্য এরকম বিশ ধরণের সুনির্দিষ্ট ট্রান্সফার আরএনএ থাকে। আবার, প্রত্যেক ধরণের টি-আরএনএ-র সাথে তৎসংশ্লিষ্ট অ্যামাইনো এসিড সংযুক্ত করার জন্য বিশটি সুনির্দিষ্ট ও পৃথক এনজাইম (অ্যামাইনো এসাইল ট্রান্সফারেজ) থাকে। এছাড়াও, রাইবোজোমে দুটো পাশাপাশি অ্যামাইনো এসিডের  বন্ধন তৈরী করার জন্য কাজ করে আলাদা এনজাইম।

    উপরের বর্ণনা থেকে লক্ষ্যণীয়, ডিএনএ-তে প্রোটিন তৈরী তথ্য ধারণ করা থাকে। আবার, উক্ত তথ্যকে কাজে লাগিয়ে প্রোটিন তৈরী করার জন্য দরকার অনেকগুলো আরএনএ এবং সুনির্দিষ্ট প্রোটিন (এনজাইম)।  যদি প্রশ্ন করা হয়, কীভাবে আদিম পরিবেশে কোষের উদ্ভব হল? স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন চলে আসে, কোন্‌টা আগে আসলো- ডিএনএ নাকি প্রোটিন নাকি আরএনএ? আমরা দেখছি তিনটি জিনিস একসাথে ও পরস্পরজড়িতভাবে উদ্ভব না হলে এই সিস্টেমটি চালুই হচ্ছে না। ইনটুইটিভলি, কোন প্রকার র‍্যাণ্ডম অনিয়ন্ত্রিত প্রক্রিয়ায় তা সম্ভব নয়।

    প্রোটিন (তথা এনজাইম) আগে আসবে? রিডিং টেমপ্লেট (অর্থাৎ ডিএনএ) না থাকলে প্রোটিন কাজ করবে কার উপর? তদুপরী, ১৫০টি অ্যামাইনো এসিড দিয়ে নির্মিত একটি মাঝারি সাইজের সুনির্দিষ্ট প্রোটিন আসাও গাণিতিকভাবে অসম্ভব একটি ব্যাপার। ডগলাস এক্স-এর হিসেবে অনুযায়ী এর সম্ভাব্যতা ১০১৬৪। [১] অন্যদিকে, বিল ডেম্বস্কি দেখিয়েছেন বিশ্বজনীন সম্ভাব্যতার সীমা ১০১৫০। [২] অর্থাৎ, যে কোন র‍্যাণ্ডম ঘটনা এই সীমাকে ছাড়িয়ে গেলে আমাদের মহাবিশ্বে তা ঘটার সম্ভাবনা নেই। একটি মাঝারি সাইজের প্রোটিনের এই অবস্থা। অথচ, আরএনএ পলিমারেজ এনজাইম ১০০০-এর বেশী অ্যামাইনো এসিড যুক্ত তিনটি প্রোটিনের সমন্বয়ে গঠিত হয়।

    ডিএনএ আগে আসবে? ডিএনএ থেকে তথ্য পড়বে কে? যদি ডিএনএ অণু এমন কোন গঠন তৈরী করতে সক্ষম হত যা এনজাইমের মত কাজ করে তাহলেও চিন্তা করার সুযোগ থাকতো। কিন্তু, আমরা আগেই বলেছি ডিএনএ বৈচিত্রপূর্ণ গঠন তৈরী করতে পারে না। সুতরাং বাকী রইল আরএনএ। আরএনএ কি কেমিকেল এভল্যুশন তথা এবায়োজেনেসিসকে উদ্ধার করতে পারবে?

    বিজ্ঞানীরা ল্যাবরেটরীতে এমন এক ধরণের আরএনএ সংশ্লেষ করতে পেরেছেন যা নিয়ন্ত্রিত ও সুনির্দিষ্ট পরিবেশে এনজাইম হিসেবে কাজ কোরে আরএনএ পলিমারাইজেশনেকে প্রভাবিত করতে পারে। অর্থাৎ, একটি সম্পূরক আরএনএ টেমপ্লেট-এর বিপরীতে নিউক্লিওটাইড (A এর বিপরীতে U, U এর বিপরীতে A, G এর বিপরীতে C, এবং C এর বিপরীতে G) যোগ করার মাধ্যমে নিজের একটি কপি তৈরী করতে পারে। এই বিশেষ ধরণের আরএনএকে বলে রাইবোজাইম। এর মাধ্যমে তারা বলতে চাচ্ছেন যে, আদিম পরিবেশে এ ধরণের একটি রাইবোজাইম আসার মাধ্যমে সেল্ফ-রেপ্লিকেশনের সূচনা হয়েছে এবং পরবর্তীতে ‘কোন একটি উপায়ে’ কোষের উপরোক্ত বর্ণিত বিষয়গুলো আবির্ভাব হয়েছে! যেকেউ একটু মাথা খাটালেই বুঝবে এ ধরণের চিন্তা কতখানি অ্যাবসার্ড! কিন্তু কেন?

    এক, পৃথিবীর আদিম পরিবেশ ল্যাবরেটরীর মত নিয়ন্ত্রিত ছিলো না।

    দুই, ‘রাইবোজাইম নিজের একটি কপি তৈরী করতে পারে’ এই অবস্থা থেকে ‘আরএনএ প্রোটিনের তথ্য ধারণ করে এবং তা প্রোটিন সংশ্লেষ করে’ এই অবস্থায় যাওয়ার কোন পথ নেই। কারণ, উপরে আমরা ডিএনএ-র ক্ষেত্রে যে রকম বলেছি ঠিক তেমনি কোন্ কোডনটি কোন্ অ্যামাইনো এসিডের জন্য নির্ধারিত হবে সেটি নির্বাচন করা একটি বুদ্ধিমান ‘মাইণ্ড’-এর কাজ। তদুপরি, যদি অপটিমাম ইউনিভার্সাল কোডনের জন্য র‍্যাণ্ডম অনুসন্ধান করা সম্ভবও হতো, সেক্ষেত্রে প্রতি সেকেণ্ডে ১০৫৫টি অনুসন্ধান চালাতে হতো। কিন্তু, বায়োফিজিসিস্ট হার্বাট ইওকি হিসেব করে দেখিয়েছেন র‍্যাণ্ডম অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় ১.৪০ x ১০৭০টি সম্ভাব্য কোডনের মধ্যে উক্ত অপটিমাম কোডন সিস্টেমকে খুঁজে বের করতে হবে এবং হাতে সময় পাওয়া যাবে ৬.৩ x ১০১৫ সেকেণ্ড। [৩] এছাড়াও, রাইবোজোমে যে প্রোটিন সিনথেসিস হয় তাতে অনেকগুলো সুনির্দিষ্ট প্রোটিন ও আর-আরএনএ-র নির্দিষ্ট অবস্থানগত ও তড়িৎ-রাসায়নিক ভূমিকা আছে। অথচ, আরএনএ প্রোটিনগুলোর মত বিভিন্ন ধরণের স্ট্রাকচার গঠন করতে পারে না। কারণ, আরএনএ-র বর্ণ সংখ্যা সীমিত এবং বর্ণের কেমিক্যাল স্ট্রাকচারও অ্যামাইনো এসিডের ন্যায় বৈচিত্রপূর্ণ নয়।

    তিন, রাইবোজাইম নিজের কপি করতে পারে তখনই যখন তার সম্পূরক একটি টেমপ্লেট থাকে। অর্থাৎ, আদিম পরিবেশে সেল্ফ রেপ্লিকেটিং রাইবোজাইম আসতে হলে রাইবোজাইম ও তার সম্পূরক টেমপ্লেট দুটো অণুরই একসাথে আসতে হবে। জনসন ও তার সহকর্মীরা দেখিয়েছেন যে, আংশিকভাবে নিজের কপি তৈরী করতে পারে এরকম একটি রাইবোজাইমের নিউক্লিওটাইডের সংখ্যা ১৮৯। সুতরাং, উক্ত স্পেসিফিক রাইবোজাইম এবং তৎসংশ্লিষ্ট সম্পূরক ও সুনির্দিষ্ট টেমপ্লেট-এর একসাথে আসার সম্ভাব্যতা ৪১৮৯ x ৪১৮৯ তথা ৪(১৮৯+১৮৯=৩৭৮) তথা প্রায় ১০২৭৭, যা বিশ্বজনীন সম্ভাব্যতার সীমা ১০১৫০ কে ছাড়িয়ে যায় (অর্থাৎ, অসম্ভব)। অথচ, পুরোপুরি কপি করতে পারে এরকম একটি রাইবোজাইমে নিউক্লিওটাইড সংখ্যা লাগবে আরও বেশী।  অন্যদিকে, অর্গেল ও জয়েস দেখিয়েছেন যে, এরকম দুটি আরএনএ খুজে পাওয়ার জন্য ১০৪৮ টি অণু খুঁজতে হবে যা পৃথিবীর মোট ভরকে অতিক্রম করে যায়। [৪] অর্থাৎ, আমরা দেখতে পেলাম আরএনএ এবায়োজেনেসিসকে উদ্ধার করতে কোন অবস্থাতেই সক্ষম নয়।

    উপরের দীর্ঘ আলোচনার মধ্য দিয়ে আমরা তথ্য প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম ভাষার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানতে পারলাম। ভাষার ব্যবহারে ইন্টেলিজেন্স-এর গুরুত্ব সম্পর্কে অভহিত হলাম। জীবজগতের ভাষার সৌষ্ঠব, বৈচিত্র ও সৌন্দর্যকে উপলব্ধি করতে সক্ষম হলাম। পরিশেষে, এ সিদ্ধান্তে এসে উপনীত হলাম যে, কোন প্রকার অন্ধ, র‍্যাণ্ডম, অনিয়ন্ত্রিত, বস্তুগত ও প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় জীবজগতের ভাষার আগমন অসম্ভব এবং  জীবজগতের ভাষার আগমন ঘটাতে দরকার একজন বুদ্ধিমান স্বত্তার কার্যক্রম।

    রেফারেন্স:
    ১. Meyer SC. Signature in the Cell. HarperCollins Publisher Inc. 2009; Page: 172

    ২. Dembsky WA. The Design Inference. Cambridge University Press. 1998; Page: 209

    ৩. Rana F. The Cell’s Design. Baker Books. 2009; Page: 175

    ৪. Stephen C. Meyer. Signature in the Cell. HaperCollins Publisher Inc. 2009; Page: 250

  • মাইক্রো থেকে ম্যাক্রো ইভলুশন: আদৌ কি সম্ভব?

    বিবর্তনবাদীরা বিবর্তনের উদাহরণ দিতে গিয়ে এমন কিছু উদাহরণ উপস্থাপন করেন যেগুলোকে মাইক্রোইভলুশন বলা যায়। কোন সন্দেহ নেই যে, ন্যাচারাল সিলেকশন এবং মিউটেশনের মধ্য দিয়ে মাইক্রোইভলুশন হয়। কিন্তু প্রশ্ন হল, এই দৃশ্যমান উদাহরণগুলো থেকে মাইক্রোইভলুশন ক্রমে ক্রমে দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে ম্যাক্রোইভলুশন করে- এই সিদ্ধান্তে আসা যাবে কি-না? চলুন, কয়েকটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি দেখার চেষ্টা করি।

    প্রথমেই জেনে নিই মাইক্রোইভলুশন এবং ম্যাক্রোইভলুশন কী? নাম থেকেই বোঝা যাচ্ছে আগেরটি ছোট ছোট পরিবর্তনকে বুঝায় এবং পরেরটি বড় পরিবর্তনকে বোঝায়। (সে হিসেবে আমরা এ প্রবন্ধে মাইক্রোইভলুশনকে ছোট-বিবর্তন এবং ম্যাক্রোইভলুশনকে বড়-বিবর্তন হিসেবে উল্লেখ করব।)

    এককোষী ও বহুকোষী জীবের সাপেক্ষে এ দু’টো প্রক্রিয়ার উদাহরণে পার্থক্য আছে। এককোষী জীব যেমন ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসের ক্ষেত্রে ছোট-বিবর্তনের উদাহরণ হল: ব্যাকটেরিয়ায় ড্রাগ রেজিস্টেন্স তৈরী, এইচআইভি কিংবা ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের নতুন স্ট্রেইন-এর আগমন। অন্যদিকে, এককোষী জীবে বড়-বিবর্তনের উদাহরণ হবে, ফ্ল্যাজেলামবিহীন ব্যাকটেরিয়াতে ফ্ল্যাজেলার আগমন, কিংবা একটি ব্যাকটেরিয়া থেকে আরেকটি প্রজাতির (তথা ভিন্ন বাহ্যিক গঠনের) ব্যাকটেরিয়া তৈরী।

    প্রসঙ্গত, ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের তথা এককোষেী জীব ও বহুকোষী জীব যাদের যৌন প্রজনন হয় না তাদের ক্ষেত্রে ‘প্রজাতি’ চেনা হয় গাঠনিক আকার, আকৃতি, কোষপ্রাচীরের আনবিক উপাদানের সাদৃশ্য ও গ্লাইকোক্যালিক্স এবং ফ্ল্যাজেলামের উপস্থিতি (ব্যাকটেরিয়ার ক্ষেত্রে) ইত্যাদি উপায়ে। বহুকোষী জীবের মধ্যে যাদের যৌন প্রজনন হয় তাদের ক্ষেত্রে ‘প্রজাতি’ চেনা হয় ‘যৌন প্রজনন’ করতে পারার যোগ্যতার ভিত্তিতে, অর্থাৎ উক্ত জীব সমগোত্রীয় যে জীবগুলোর সাথে যৌন প্রজনন করতে পারে তাদের নিয়ে তৈরী করে একটি ‘প্রজাতি’।

    কিন্তু, বহুকোষী প্রাণীর ক্ষেত্রে ছোট-বিবর্তনের উদাহরণ হল: বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যে ক্ষুদ্র পরিবর্তন। যেমন: গায়ের রং এবং ডিজাইন, পশমের পরিমাণ, চোখের মনির রঙ, উচ্চতা, মাংসপেশীর তারতম্য, কণ্ঠ ও সুরের ধরণ ইত্যাদি। অন্যদিকে, বহুকোষী প্রাণীর ক্ষেত্রে বড়-বিবর্তনের উদাহরণ হল: স্পঞ্জ-এর ক্ষেত্রে নিডোসাইট নামক কোষের আগমন, সরিসৃপে পাখার আগমন, মাছের পাখনা থেকে পা-এর আগমন ইত্যাদি।

    মজার ব্যপার হল, এককোষী জীব, যেমন: ব্যাকেটিরিয়ার ক্ষেত্রে মাইক্রোইভলুশন প্রজাতির পরিবর্তন করছে না, বরং নতুন স্ট্রেইন তৈরী করছে। অন্যদিকে, যৌন প্রজননের ভিত্তিতে প্রজাতির সংজ্ঞার ক্ষেত্রে ছোট-বিবর্তন দিয়েই প্রজাতি বা উপপ্রজাতি তৈরী হয়ে যাচ্ছে। কীভাবে? এই প্রশ্নের উত্তর দেয়া যায় বিবর্তনবাদীদের উপস্থাপিত প্রজাতি (তাদের মতে, আসলে হবে উপ-প্রজাতি) তৈরীর (যাকে স্পেশিয়েশন বলে) সবচেয়ে বড় উদাহরণ দিয়ে। ক্যালিফোর্নিয়ার সালামান্দার সার্কেল দিয়ে প্রজাতির (উপ-প্রজাতি) উদ্ভব ব্যাখ্যা দেয়া হয়।

    সালামান্দার সার্কেল

    ছবিসূত্র: http://rosarubicondior.blogspot.com/2012/01/ring-species-evolution-in-progress.html

    উপরের ছবিটিতে আপনারা দেখতে পাচ্ছেন সালামান্দার প্রজাতি Ensatina eschschoitzi-এর ৭টি উপপ্রজাতি যুক্তরাস্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের প্রশান্ত মহাসাগর তীরবর্তী স্যান জাওকিন ভ্যালির আশেপাশে বাস করে। উপ-প্রজাতিগুলোর মূল পার্থক্য তাদের গায়ের রঙ-এর নকশা (প্যাটার্ন) এবং সম্ভবত ফেরোমোন। সালামান্দারের গায়ের রং-এর নকশা পরিবর্তন হয় হোমোলোগাস রিকম্বিনেশন-এর মাধ্যমে। সহজ কথায়, শুক্রাণু ও ডিম্বাণু তৈরী হওয়ার এক পর্যায়ে এক জোড়া ক্রোমোজামের মধ্যে ক্রসিংওভার নামক একটি ঘটনা ঘটে। এ প্রক্রিয়ায় জিনোমের কিছু সুনির্দিষ্ট অংশের আদান প্রদান এবং পুনঃবিন্যাস হয়। মনে রাখা দরকার, এ প্রক্রিয়াটি কিছু বৈশিষ্ট্যে ভ্যারিয়েশন তৈরী করতে প্রাণীর কোষে নির্মিত সুনিয়ন্ত্রিত একটি প্রক্রিয়া। যদিও রিকম্বিনেশন হচ্ছে র‍্যাণ্ডমভাবে, কিন্তু তা হচ্ছে একটি নিয়ন্ত্রিত সীমার মধ্যে।

    বিবর্তনবাদীদের ইন্টারপ্রিটেশন অনুযায়ী, এভাবে সৃষ্ট ভ্যারিয়েশনের মাধ্যমে ভ্যালীর উত্তরে অবস্থিত Ensatina eschschoitzi picta উপ-প্রজাতিটি দক্ষিণ দিকে এসে এমন দুটো উপ-প্রজাতি Ensatina eschschoitzi klauberi এবং Ensatina eschschoitzi eschschoitzii–তে পরিণত হয়েছে, যারা পরস্পর যৌনক্রিয়ায় লিপ্ত হয় না। সালামান্দার প্রজাতি যৌনক্রিয়ার জন্য বিপরীত লিঙ্গ বাছাই করতে সাধারণত ফেরোমোন নামক শরীর থেকে নিঃসৃত বিশেষ গন্ধ উৎপাদনকারী পদার্থ ব্যবহার করে। (এছাড়া, কোন কোন প্রজাতি স্পর্শ এবং কোন কোন প্রজাতি দৃষ্টি-সম্বন্ধীয় সূত্র তথা ভিজুয়্যাল কিউ ব্যবহার করে থাকে)। সে হিসেবে Eschschoitzi klauberi এবং Ensatina eschschoitzi eschschoitzii উপ-প্রজাতি দুটোতে ক্রসিং ওভারের মধ্য দিয়ে রং এবং ফেরোমোনের যথেষ্ট পার্থক্য হয়ে যাওয়ায় তারা প্রজাতির সংজ্ঞানুযায়ী আলাদা প্রজাতিতে পরিণত হয়েছে। (আবার, এ-ও হতে পারে যে তাদের রিপ্রোডাকশন না করার কারণ আচরণগত।)

    পাঠক, লক্ষ্য করে দেখুন, এখানে কার্যত ছোট-বিবর্তন সংঘটিত হল এবং ছোট বিবর্তনের মধ্য দিয়ে একটি প্রজাতি (উপ-প্রজাতি) দুটো প্রজাতিতে (উপ-প্রজাতিতে) পরিণত হল। অন্যদিকে, এককোষী জীবে নতুন প্রজাতি আসতে হলে এর মূল গঠনের মধ্যে পরিবর্তন আসতে হবে।

    বিবর্তনবাদীরা ছোট-বিবর্তনের উপরোক্ত উদাহরণগুলো থেকে বলতে চাচ্ছে যে, মিলিয়ন বছরের ব্যবধানে এই ধরণের ছোট ছোট পরিবর্তনগুলো একত্রিত হয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন গঠনের বড়-বিবর্তন ঘটিয়েছে। কিন্তু আসলেই কি তা সম্ভব? আমরা উপরোক্ত আলোচনা থেকে দেখলাম, এককোষী জীব এবং বহুকোষী জীবের ক্ষেত্রে প্রজাতির সংজ্ঞা ভিন্ন হওয়ায় বিষয়টি পৃথকভাবে বিবেচনা করতে হবে। (আলোচনার সুবিধার্তে ধরে নিচ্ছি বহুকোষী জীব মাত্রই যৌন প্রজনন করে এবং ভাইরাস এককোষী জীবের মত আচরণ করে)।

    পরবর্তী আলোচনায় যাওয়ার আগে পাঠকের জন্য একটি চিন্তার খোড়াক দেয়া যাক। ধরুন, আপনি সমুদ্রতীরে আছেন। তীরে হাটার সময় আপনি লক্ষ্য করলেন দূরে বালুর একটি স্তুপ তৈরী হয়েছে। আপনি স্বাভাবিকভাবেই চিন্তা করবেন ওখানে কেউ একজন বালুর স্তুপ জমা করে রেখেছে অথবা হঠাৎ কোন ঘূর্ণায়মান বায়ুর প্রবাহ ওদিকে দিয়ে যাওয়ায় স্তুপ তৈরী হয়েছে। আপনি ইচ্ছে করলে ভাবতে পারতেন যে, সমুদ্রের ঢেউ ধীরে ধীরে বালু জমা করতে করতে স্তুপ তৈরী করেছে। কিন্তু আপনি তা ভাবলেন না। কেন? কারণ, আপনি দেখছেন সমুদ্রের ঢেউ অনেকটা জায়গা জুড়ে আসছে। অতএব, ঢেউয়ের কারণে বালুর বিন্যাস হলে তীরে ঘেষে অনেকখানি জায়গা জুরে হতো। অতঃপর, আপনি যখন বালুর স্তুপটির আরও কাছে গেলেন, আপনি দেখতে পেলেন ওখানে বালুর স্তুপ নয় বরং বালু দিয়ে ঘরের মত তৈরী করা হয়েছে। এ অবস্থায় আপনার সিদ্ধান্ত পাকাপোক্ত হবে যে, এটি একজন দক্ষ মানুষ নির্মান করেছে, ঘুর্ণায়মান বায়ুর কারণে এটি তৈরী হয়নি। আপনাকে কেউ যদি জোড় করেও বলে যে কোটি কোটি বছরের ব্যবধানে আস্তে আস্তে এই ঘর তৈরী হয়েছে, তারপরও আপনি বিশ্বাস করবেন না। এমনকি, এর পক্ষে যদি পৃথিবীর সমস্ত বিজ্ঞানী এক হয়ে যায় তারপরও আপনি তার বিপরীতে একা থাকবেন। কারণ, বালুর ঘরটির বৈশিষ্ট্য হলো এটি অনিয়মিত (ইরেগুলার) আকৃতিসম্পন্ন এবং এই ইরেগুলারিটি এলোমেলো তথা র‍্যাণ্ডম নয়, সুনির্দিষ্ট ও সুশৃংখল। অর্থাৎ, সমুদ্রের ঢেউ এবং এ জাতীয় যে কোন জিনিস যা কতগুলো নির্দিষ্ট নিয়ম বা সূত্র মেনে চলে সেগুলো ক্রমে ক্রমে একটি নিয়মিত গঠন (Order) তৈরী করতে পারে, কিন্তু অনিয়মিত সুশৃংখল গঠন (Organization) তৈরী করতে পারে না। আবার, র‍্যাণ্ডম প্রক্রিয়া হয়ত এলোমেলো জটিল গঠন (Complexity) তৈরী করতে পারে, কিন্তু অনিয়মিত সুশৃংখল ও জটিল গঠন (Organized Complexity) তৈরী করতে পারে না। যত সময়ই দেয়া হোক না কেন, সমুদ্র তীরে বালু জমে একা একা ঘর তৈরী হবে না। শীতলস্থানে পানি একা একা ঠাণ্ডা হয়ে বরফ হলেও কোটি বছরেও বরফের ভাস্কর্য তৈরী হবে না। ঠিক একই ভাবে, র‍্যাণ্ডম মিউটেশন ও ন্যাচারাল সিলেকশনের কাজ করার পদ্ধতি সম্পর্কে জানলেও স্পষ্ট হয়ে যায় যে, যত সময়ই অতিবাহিত হোক না কেন তা বড়-বিবর্তন ঘটাতে পারে না।

    আমরা জানি, AIDS রোগের জন্য দায়ী HIV ভাইরাস এবং Flu রোগের জন্য দায়ী Influenza ভাইরাস এন্টিভাইরাল ঔষধ এবং মানুষের শরীরের প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে অতিক্রম করতে পারে এ ধরণের স্ট্রেইন দ্রুত তৈরী করে। বিবর্তনবাদীরা এ ঘটনাকে বিবর্তনের উদাহরণ হিসেবে প্রচার করেন। দুটি ভাইরাসের ক্ষেত্রেই মিউটেশনের মধ্য দিয়ে এ ধরণের পরিবর্তন আসে। কিন্তু লক্ষ্যণীয়, মিউটেশন হয় মূলত জিনোমের এমন একটি জায়গায় যা সংশ্লিষ্ট অনুটির গাঠনিক অখণ্ডতাকে নষ্ট করে না। এ ধরণের জায়গাকে বলে ‘হাইপার ভ্যারিয়েবল’ রিজিওন। যেমন: ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের বেলায় এ ধরণের মিউটেশন হয় হিমাগ্লুটিনিন নামক অণুর হাইপারভ্যারিয়েবল রিজিওনে। কিন্তু একই অণুর অন্যান্য রিজিওনে মিউটেশন হলে গাঠনিক অখণ্ডতা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ভাইরাস আক্রমন করতে পারে না, তথা অকার্যকর হয়ে পড়ে। Jewetz, Melnick ও Adelberg তাদের Medical Microbiology বইয়ে হিমাগ্লুটিনিন (HA)-এর গঠন সম্পর্কে বলছেন:

    The HA molecule is folded into a complex structure. Each linked HA 1 and HA 2 dimer forms an elongated stalk capped by a large globule. The base of the stalk anchors it is the membrane. Five antigenic sites on the HA molecule exhibit extensive mutations. These sites occur at regions exposed on the surface of the structure, are apparently not essential to the moleule’s stability, and are involved in viral neutralization. Other regions of the HA molecule are conserved in all isolates, presumably because they are necessary for the molecules to retain its structure and function. [১]

    অর্থাৎ, মিউটেশন যদি গঠনের এমন জায়গায় হয় যেখানে মিউটেশন হলে ভাইরাস তার ইনফেকটিভিটি তথা আক্রমণ করার ক্ষমতা না হারিয়েও টিকে থাকতে পারে তখনই কেবল ভাইরাস উক্ত মিউটেশনের মধ্য দিয়ে রেজিসটেন্ট স্ট্রেইন তৈরী করতে পারবে। অথচ, আমরা উপরে জেনেছি ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়ার ক্ষেত্রে প্রজাতি সংজ্ঞায়িত হয় আকার, আকৃতি, গাঠনিক উপাদানের সাদৃশ্য দ্বারা। অর্থাৎ, ভাইরাসকে ভিন্ন প্রজাতিতে পরিণত করতে হলে তাকে ত্রিমাত্রিক গঠন পরিবর্তন করতে হবে। অন্যদিকে, যে মিউটেশনগুলো গঠনকে পরিবর্তন করে দেয় সেগুলো ভাইরাসকে অকেজো করে ফেলে। ফলে, ভাইরাস ভিন্ন আকৃতি তৈরী করার জন্য বাঁচতে পারবে না।

    এইডস ভাইরাসের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে। এইডস ভাইরাসের জিনোমে পাঁচটি হাইপারভ্যারিয়েবল রিজিওন আছে। এ কারণেই দেখা যায়- র‍্যাণ্ডম মিউটেশন সব জায়গায় টোলারেট করতে পারলে, ভাইরাসে রিপ্রোডাকশন রেট বেশী হওয়ায় এইডস ভাইরাস এতদিনে পরিবর্তন হয়ে অন্য ভাইরাস হয়ে যেত, কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। বরং এর গাঠনিক অখণ্ডতা রক্ষা করে উচ্চমাত্রার ভিন্নতা তৈরীর ক্ষমতা (স্ট্রাকচারাল প্লাস্টিসিটি) থাকায় একটার পর একটা ড্রাগ রেজিসটেন্ট স্ট্রেইন তৈরী করে যাচ্ছে।

    এইচআইভি গ্লাইকোপ্রোটিন-১২০

    উপরোক্ত ছবিতে দেখা যাচ্ছে এইচআইভি ভাইরাসের গ্লাইকোপ্রোটিন-১২০ প্রোটিনের পাঁচটি হাইভ্যারিয়েবল রিজিওন (V দিয়ে চিহ্নিত) এবং ৫টি অপরিবর্তনশীল তথা কনস্টেন্ট রিজিওন (C দিয়ে চিহ্নিত)। ছবিসূত্র: http://jvi.asm.org/content/78/7/3279.full

    এই উদাহরণ দুটো থেকে আমরা বুঝতে পারলাম, মিলিয়ন বছর সময় দিলেও ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস বা এইডস ভাইরাস অন্য ভাইরাসে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আমাদের সিদ্ধান্তকে আরো পোক্ত করে এমন ভাইরাসের উদাহরণ যেগুলোকে বৈশ্বিকভাবে নিশ্চিহ্ন ঘোষণা করা হয়েছে। ৮-ই মে ১৯৮০ সালে ওয়ার্ল্ড হেল্‌থ অর্গ্যানাইজেশন স্মল পক্সকে নিশ্চিহ্ন ঘোষণা করেছে। কিন্তু কিভাবে তা সম্ভব হল? উত্তর: স্মল পক্সের জিনোমে হাইপারভ্যারিবেল রিজিওন নামে কোন স্থান ছিল না। ফলে স্মল পক্সের বিপরীতে ভ্যাক্সিন প্রয়োগ করে একে বিলুপ্ত করে দেয়া গেছে। বিবর্তন একে রক্ষা করতে পারেনি। ঠিক একইভাবে ইয়েলো ফিবার, পোলিও, মিজেলস ইত্যাদি ভাইরাসের বিপরীতে একবার ভ্যাক্সিনেশন করলে পুরো জীবন তা প্রোটেকশন দিতে পারে। কারণ, এই ভাইরাসগুলোর জিনোমেও এমন কোন রিজিওন নেই, যা গাঠনিক একাগ্রতা ঠিক রেখে ইনফেকভিটি মেইনেটেইন করতে পারবে।

    রেজিস্টেন্স ম্যাকানিজমসমূহ

    ছবিসূত্র: http://textbookofbacteriology.net/resantimicrobial_3.html

    ব্যাকেটেরিয়া বিভিন্নভাবে ড্রাগ রেজিসটেন্ট স্ট্রেইন তৈরী করতে পারে। সংক্ষেপে এগুলোকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়: ১. ড্রাগটিকে কোষ থেকে বের করে দেয়া, ২. ড্রাগটিকে এনজাইমের মাধ্যমে নিষ্ক্রিয় করে দেয়া এবং ৩. ড্রাগটি কোষের যে স্থানে (তথা টার্গেটে) বন্ধন তৈরীর মাধ্যমে কাজ করে সে স্থানটিতে আকৃতির পরিবর্তন সাধন করা। প্রথম দুটি পদ্ধতি সংঘটিত করার জন্য যে এনজাইমগুলো কাজ করে, সেগুলোর প্রয়োজনীয় জেনেটিক তথ্য থাকে প্লাজমিডে। লক্ষ্যণীয়, প্লাজমিড ব্যাকটেরিয়ার মূল জেনেটিক এলিমেন্ট থেকে পৃথক এবং ব্যাকটেরিয়া গঠনে কোন প্রভাব না ফেলে কাজ করতে পারে। তৃতীয় পদ্ধতিটি সংঘটিত হয় মিউটেশনের মাধ্যমে। যদি মিউটেশনের ফলে টার্গেট এনজাইমে এমন ধরণের পরিবর্তন আসে যা এনজাইমের মূল কাজকে অক্ষত রেখে ওষুধের সুনির্দিষ্ট আনবিক লক্ষ্যস্থলে সামান্য পরিবর্তন আনে তাহলে ওষুধটি আর কাজ করতে পারে না। কিন্তু, মিউটেশন যদি মূল এনজাইমের গঠন ও কর্মক্ষমতাকে পুরোপুরি নষ্ট করে দেয় তাহলে ব্যাকটেরিয়াটি ধ্বংস হবে এবং ড্রাগ রেজিস্টেন্ট স্ট্রেইন তৈরী হবে না। ব্যাকটেরিয়াতে যেকোন এনজাইমের ফাংশন মূলত ‘অপটিমাম’ হয়। অর্থাৎ, এনজাইমটি খুব বেশী কাজও করে না আবার একেবারেই কম কাজও করে না। মিউটেশনের মাধ্যমে যে এনজাইমটি তৈরী হচ্ছে তা মূল এনজাইমটির মত কাজে দক্ষ হয় না। ফলে, ব্যাকটেরিয়ার ড্রাগ রেজিস্টেন্স স্ট্রেইন ওয়াইল্ড টাইপ স্ট্রেইন থেকে দুর্বল তথা কম ফিটনেস ফাংশন যুক্ত হয়।

    প্রথম দুটো প্রক্রিয়ায় ব্যাকটেরিয়া যে রেজিসটেন্ট জিন ব্যবহার করছে তা মূলত এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ শুরু হওয়ার আগে থেকেই ছিল। ব্যাকটেরিয়ার একটি বিস্ময়কর বৈশিষ্ট্য হরাইজন্টাল জিন ট্রান্সফার। এ প্রক্রিয়ায় একটি ব্যাকটেরিয়া অন্য ব্যাকটেরিয়া থেকে জিনোম সংগ্রহ করতে পারে। এভাবেই মূলত উপরোক্ত দু’ধরণের রেজিসটেন্ট জিন এক ব্যাকটেরিয়া থেকে আরেক ব্যাকটেরিয়াতে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু উক্ত জিনগুলো কীভাবে উদ্ভব হল, তা এই প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করতে পারে না। অন্যদিকে, তৃতীয় প্রক্রিয়াটিকে প্রকৃত নিও-ডারউইনিয়ান প্রক্রিয়া বলা যায়। কারণ, মিউটেশনের মধ্য দিয়ে যে স্ট্রেইন তৈরী হচ্ছে, ওষুধ-যুক্ত পরিবেশে তা প্রাকৃতিকভাবে নির্বাচিত হয়। কিন্তু প্রশ্ন হল, বিবর্তনের এই উদাহরণ থেকে কি ব্যাকটেরিয়ার আকার, আকৃতি ও আনবিক গঠনে কোন পরিবর্তন ব্যাখ্যা করা যায়? উত্তর: না। কারণ, গাঠনিক আকৃতি পরিবর্তন হয়ে গেলে ব্যাকটেরিয়া তার গাঠনিক একাগ্রতা হারিয়ে ধ্বংস হয়ে যাবে। আর রিপ্রোডাকশন যদি না করতে পারে সে পরবর্তী প্রজন্মে পরিবর্তিত গঠন প্রবাহ করবে কীভাবে? নতুন প্রজাতি-ই বা গঠন করবে কীভাবে?

    অর্থাৎ, ছোট-বিবর্তনের এই উদাহরণ থেকে বড়-বিবর্তনকে ইনফার করা যাচ্ছে না। তদুপরি, আমরা যদি ব্যাকটেরিয়া ফ্ল্যাজেলামের কথা চিন্তা করি, ফ্ল্যাজেলামে প্রায় চল্লিশটি ভিন্ন ধরণের প্রোটিন থাকে, তাহলে উপরোক্ত চল্লিশটি প্রোটিনের জিন সুনির্দিষ্টভাবে জিনোমে বিন্যস্ত হতে হবে। এই পারস্পরিক আন্তঃক্রিয়াশীল প্রোটিনযুক্ত গঠনটির একটি প্রোটিনের অবর্তমানে সে তার কাজ সঠিকভাবে করতে পারবে না। অর্থাৎ ফ্ল্যাজেলামকে কাজ করতে হলে পুরোপুরি একসাথে আসতে হবে। কিন্তু, উপরের মিউটেশনের উদাহরণ থেকে আমরা দেখেছি, মিউটেশন শুধু ইতোমধ্যে বিদ্যমান জেনেটিক তথ্যকে কিছুটা ওলটপালট করতে পারে। কিন্তু, নতুন জেনেটিক তথ্য যোগ করতে পারে না।

    এছাড়াও, ব্যাকটেরিয়া যেহেতু খুব দ্রুত রিপ্রোডাকশন করতে পারে, সেহেতু ব্যাকটেরিয়াতে মিউটেশনের মধ্য দিয়ে পরিবর্তনগুলোও দ্রুত হবে। যদি প্রতি এক ঘন্টায় একটি রিপ্রোডাকশন হয়েছে ধরা হয়, এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫ লক্ষ ব্যাকটেরিয়ার জেনারেশন তৈরী হয়েছে। মানুষের রিপ্রোডাকটিভ স্কেলে যা প্রায় ১০ মিলিয়ন বছরের ইকুইভ্যালেন্ট। অথচ, এই দীর্ঘ সময়ে ব্যাকটেরিয়াগুলোর প্রজাতি পরিবর্তন হয়নি। অর্থাৎ, নতুন প্রজাতি আসেনি। [২] রিচার্ড লেনস্কি ই. কোলাই ব্যাকটেরিয়া নিয়ে সবচেয়ে দীর্ঘ ইভলুশন এক্সপেরিমেন্ট চালিয়েছেন। ১৯৮৮ সাল থেকে পরীক্ষা শুরু হয়েছে। ২০১২ সাল পর্যন্ত ৫০০০০ জেনারেশন পার হয়েছে। ই. কোলাই-এর বিভিন্ন স্ট্রেইন তৈরী হয়েছে কিন্তু ই. কোলাই প্রজাতি পরিবর্তিত হয়ে অন্য প্রজাতিতে পরিণত হয়নি। [৩]

    সিকল সেল

    ছবিসূত্র: http://geneed.nlm.nih.gov/topic_subtopic.php?tid=142&sid=149

    বহুকোষী জীবের ক্ষেত্রে আমরা উপরে দেখেছি যে, প্রজাতির সংজ্ঞা গঠনের উপর নির্ভর করে না। ফলে, ছোট পরিবর্তনও প্রজাতি সৃষ্টি করতে পারে। একই সাথে আমরা এও দেখেছি যে, প্রজাতির জিনোমে যে ভ্যারিয়েশনগুলো হয়, তা ইতোমধ্যে বিদ্যমান তথ্যের সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিতে জেনেটিক রিকম্বিনেশনের মধ্য দিয়ে। এছাড়াও মিউটেশনের মধ্য দিয়ে ভ্যারিয়েশন তৈরী হতে পারে। তবে সেটি হয় কোন একটি বৈশিষ্ট্য নষ্ট হওয়ার মাধ্যমে। যেমন: একটি নির্দিষ্ট অ্যামাইনো এসিড পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে মানুষের সাধারণ হিমোগ্লোবিন পরিবর্তন হয়ে হিমোগ্লোবিন এস তৈরী হয়। হিমোগ্লোবিন এস-এর বৈশিষ্ট্য হল এটি সুনির্দিষ্ট ট্রিগার পেলে কাঁচির মত আকৃতি ধারণ করে পাতিত হয় এবং সাথে উক্ত হিমোগ্লোবিনযুক্ত লোহিত রক্ত কণিকাগুলোর আকৃতিও কাঁচির মত হয়ে যায়। ফলে লোহিত রক্ত কণিকাগুলো অকেজো হয়ে পড়ে। মানবদেহের স্প্লিনের কাজ হল অকেজো রক্ত কণিকাকে গ্রহণ করে নষ্ট করে ফেলা। অন্যদিকে, ম্যালেরিয়া জীবাণু তার জীবনচক্রের একটি পর্যায় অতিক্রম করে লোহিত রক্ত কণিকায়। এমতাবস্থায় লোহিত রক্তকণিকাগুলো মারা যাওয়া অর্থ হলো ম্যালেরিয়ার জীবাণু মারা যাওয়া। এভাবে, যে সকল সিকল সেল এনেমিয়া ট্রেইটের রুগীদের জিনোমে হিমোগ্লোবিন এস-এর একটি অ্যালিলি থাকে তারা ম্যালেরিয়ার জীবাণুর বিরুদ্ধে এক ধরণের প্রাকৃতিক রেজিসটেন্স তৈরী করে এবং সাধারণ মানুষদের তুলনায় বেশী বেঁচে থাকে এবং রিপ্রোডাকশন করতে পারে। কিন্তু, স্পষ্টতই সিকল সেল এনেমিয়া পরিবর্তিত পরিবেশে রুগীদের সামান্য উপকার করতে পারলেও, সাধারণ মানুষদের তুলনায় এরা প্রকৃতপক্ষে কম যোগ্য (ফিট)।

    ম্যালেরিয়ার জীবন চক্র

    ছবিসূত্র: http://www.cddep.org/sites/cddep.org/files/malaria-life-cycle.jpg

    তবে বহুকোষী জীবের ক্ষেত্রে বড়-বিবর্তন হতে হলে ব্যাখ্যা করতে হবে সম্পূর্ণ নতুন একটি বৈশিষ্ট্যের আগমন। যেমন: পাখির ডানা। পাখির ডানা আসতে গেলে আসতে হবে পাখির ডানার সুনির্দিষ্ট গঠন, যেমন: পালক; ডানার সাথে সংশ্লিষ্ট মাংসপেশী, রক্তসংবাহী নালী, নার্ভের জাল ও তার সাথে মস্তিষ্কের সুনির্দিষ্ট পরিবর্তন এবং পাখার গতি ও দিক নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় অ্যালগরিদম। স্বাভাবিকভাবেই, এগুলো আসার অর্থ হল জিনোমে সুনির্দিষ্ট ও সুশংখলভাবে নতুন জেনেটিক তথ্য আসা। সুতরাং, বহুকোষী জীবের ক্ষেত্রে ছোট-বিবর্তনের যে উদাহরণ আনা হচ্ছে, যত সময়ই অতিবাহিত হোক না কেন তা উপরোক্ত সুনির্দিষ্ট জেনেটিক তথ্যের সমাগম ব্যাখ্যা করতে পারে না। অর্থাৎ এই ধরণের ছোট-বিবর্তন কোটি বছর ধরে হলেও বড়-বিবর্তনকে ব্যাখ্যা করতে অক্ষম।

    পাঠক, আমরা উপরের দীর্ঘ আলোচনার মধ্য দিয়ে কয়েকটি জিনিস বুঝতে পারলাম। এক, প্রজাতির সংজ্ঞা এককোষী জীব এবং বহুকোষী জীব যা যৌন প্রজনন করে তা-র ক্ষেত্রে ভিন্ন। দুই, ছোট-বিবর্তন এককোষী জীবে প্রজাতি তৈরী করে না বরং একই প্রজাতির বিভিন্ন স্ট্রেইন তৈরী করে, অন্যদিকে বহুকোষী জীবে উপ-প্রজাতি তৈরী করে। সে হিসেবে একজন বিবর্তনবাদী যদি বলে বিবর্তন প্রজাতি তৈরী করছে তাহলে তার বক্তব্য মিথ্যা হবে না, তবে অস্পষ্ট হবে। তিন, ছোট-বিবর্তন প্রকৃতপক্ষে বড়-বিবর্তনের পক্ষে কোন প্রমাণ উপস্থাপন করে না। ছোট-বিবর্তন শারীরিক গঠনের উপাদানে না হলে বড় পরিবর্তন আসার মাধ্যমে নতুন প্রজাতি আসার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু, ছোট-বিবর্তন শারীরিক উপাদানে হলে প্রজাতির মারা যাওয়ার সম্ভাবনা বা কম-কর্মক্ষম প্রজাতি তৈরী হওয়ার সম্ভাবনা বেশী। অথচ, প্রাকৃতিক নির্বাচন শুধু অধিকতর যোগ্য প্রজাতিকে নির্বাচিত করে। সে হিসেবে কম-কর্মক্ষম প্রজাতি প্রতিকূল পরিবেশে আপাত সুবিধে দিলেও পুরো পপুলেশনের সাপেক্ষে কোন উত্তম ভ্যারিয়েশন প্রবাহ করতে পারছে না। এ কারণে, কোটি কোটি বছর পার হলেও এগুলো সম্পূর্ণ ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের আগমন ঘটাতে সক্ষম নয়।

    সর্বশেষ কথা হল, বিবর্তনবাদী বিজ্ঞানীরা ছোট-বিবর্তনের উদাহরণ এনে ‘কোটি বছরের’ ধোঁয়াটে আবেদন দিয়ে বড়-বিবর্তনকে সত্য ধরে নিচ্ছেন এবং প্রচার করছেন। কিন্তু আদৌ এ ধরণের সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ আছে কি না সেই বিশ্লেষণে গেলে তারা ব্যাখ্যাকে স্পষ্ট করছেন না। বরং, বিবর্তনবাদকে সত্য ধরে নিয়ে করা রিসার্চ দেখিয়ে তারা তত্ত্বটিকে বৈজ্ঞানিক সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত রাখতে চাচ্ছেন। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে, এর পেছনের উদ্দেশ্যটি কি বৈজ্ঞানিক? না-কি আদর্শিক?

    রেফারেন্স:

    [১] Jewetz, Melnick, Adelberg; Medical Microbiology, 23rd edition, Chapter 39, Orthomyxoviruses; Page 540 [Emphasis Added]

    [২] http://www.truthinscience.org.uk/tis2/index.php/evidence-for-evolution-mainmenu-65/175-development-of-biological-resistance.html

    [৩] http://myxo.css.msu.edu/ecoli/overview.html