Md. Abdullah Saeed Khan

সম্ভাব্যতা, ইচ্ছেশক্তি ও দোয়া

আমাদের খুব পরিচিত একটি খেলা হচ্ছে লুডু। লুডুতে একটা কিউব থাকে যার ছয়টি পৃষ্ঠতলে ১ থেকে ৬ পর্যন্ত ছয়টি অক্ষর লেখা থাকে। আমরা এটিকে আঞ্চলিক ভাষায় ছক্কা বলি।

লুডু খেলায় ছক্কাকে যখন কোর্টে ছুড়ে মারা হয়, তখন আমাদের উদ্দেশ্য থাকে ছক্কাটির যে কোন একটি পৃষ্ঠতল যেন দৈবচয়নে (randomly) পরে। অর্থাৎ, যে কোন একটি সংখ্যা যেন র‍্যানডমলি আসে। উদ্দেশ্য হলো উক্ত সংখ্যা অনুযায়ী আমাদের ঘুটি ছক ধরে আগাবে।

ধরুন, আপনি এই মূহুর্তে লুডু খেলছেন। আপনি ছক্কা ফেলার পড় র‍্যানডমলি ‘২’ সংখ্যাটি আসল। কিন্তু, ছক্কা ফেলার আগ পর্যন্ত উক্ত ছক্কার যে কোন একটি পৃষ্ঠতল পড়ার সম্ভাবনা ছিল ১/৬। সুতরাং, আপনি যখন ছক্কাটিকে নিজের মত র‍্যানডমলি পড়ার সুযোগ করে দিলেন ‘২’ পড়ার মাধ্যমে অন্য ৫টি সম্ভাবনাকে নাকচ করে দিলেন।

অর্থাৎ, এখানে আপনার ছক্কা ছুড়ে মারার পদ্ধতির কারণে যে কোন একটি সংখ্যা যখন পড়ছে তখন সে অন্য সম্ভাব্যতাকে নাকচ করে দিচ্ছে।

বিষয় যদি আবার গুছিয়ে বলি- ছক্কা কোর্টে পড়ার আগে ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬ থেকে যে কোন একটি সংখ্যা পড়ার সম্ভাবনা ছিলো ১/৬। যখন ছক্কাটি কোর্টে পড়ে গেল তখন একটি সংখ্যা দৈবচয়নে অন্য সংখ্যা পড়ার সম্ভাবনাকে নাকচ করে দিয়ে প্রকাশিত হল।

লক্ষনীয় এখানে ছ্ক্কাটি যদিও ‘আপাত’ র‍্যানডমলি পড়ছে বলে আপনার বাহ্য দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, আপনি যদি ছ্ক্কা ফেলার মূহুর্তের গতি, বল, শক্তি, জড়তা, বাতাসের বাঁধা প্রভৃতি পুঙ্খানুপূর্ণভাবে হিসেব করতে পারতেন তাহলে আপনি হয়ত ছক্কা লুডুর কোর্টে পড়ে কোন সংখ্যাটি উপরে থাকবে তা হিসেব করে বলে দিতে পারতেন। কিন্তু, বাস্তবে যেহেতু তা আপনার পক্ষে সম্ভব নয়, উক্ত অবস্থায় আপনার জন্য ছক্কা পড়ার বিষয়টি হচ্ছে র‍্যানডম। 


এখন ভেবে দেখুন, আপনি খেলার নিয়মের জন্য হয়ত ছ্ক্কাটি এমনভাবে ছুড়েছেন যেন তা র‍্যানডমলি কোর্টে পড়ে। কিছুক্ষনের জন্য ভুলে জান যে আপনি নিয়ম মেনে লুডু খেলছেন। ধরুন আপনি ছক্কাটিকে স্বেচ্ছায় কোর্টে বসিয়েছেন এবং আপনি ‘৩’ বসিয়েছেন। এখন, আপনি যখন তিন বসালেন তখন আসলে আপনি উক্ত ছয়টি সংখ্যা থেকে একটি বাছাই করলেন। যেহেতুর লুডু ঘুটিতে ছয়টি পৃষ্ঠতলই থাকে সেহেতু এখানে আপনার চয়েজ ছিল ছয়টি। এর বেশী নয়।


আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে আমাদের ইচ্ছেশক্তির ব্যবহার করে এভাবে প্রতিনিয়ত অনেকগুলো সম্ভাব্যতাকে নাকচ করি। আমাদের সামনে যে ঘটনাগুলোর আসতে থাকে তার মধ্যে- কিছু ক্ষেত্রে সীমিত চয়েজ থাকে এবং কিছু ক্ষেত্রে ঘটনাগুলোর একটিও আমাদের নিয়ন্ত্রনের থাকে না। সীমিত চয়েজ থাকে কারণ ঘটনার পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়াগুলো এমন যে তা লুডুর ঘুটির মত কয়েকটি নির্দিষ্ট অপশনই কেবল দেখাতে পারে। আবার আমরা লুডু খেলার নিয়মে প্রবেশের পর আমাদের যেমন ছক্কাটির সংখ্যা বাছাই করে বসিয়ে দেয়ার সুযোগ নেই তেমনি জীবনের কিছু ঘটনা স্বেচ্ছায় বাছাইয়ের পর অন্য কিছু ঘটনা আমাদের বাছাইয়ের বাইরে পুরোপুরি র‍্যানডম সম্ভাব্যতায় পরিণত হয়। বাস্তবতা হল এ ধরনের ঘটনার সংখ্যাই আমাদের জীবনে বেশী যা আমারেদ হাত নেই।



যেমন ধরুন রাস্তায় চলার পথে আপনি দূর্ঘটনার স্বীকার হবেন কি না তা পুরোপুরি আপনার হাতে নেই। করোনা আক্রান্ত হলে আপনি মৃত্যুবরণ করবেন কিনা তা পুরোপুরি আপনার জানা নেই।

কেননা আপনার বাস্তবতায় তা এখন একটি সম্ভ্যাব্যতা।



কিন্তু, সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাআলার জ্ঞানের সাপেক্ষে এ সবগুলোই তাঁর চয়েজ। আমরা যখন দোয়া করি আল্লাহ আমাদের সামনের সম্ভাব্য সকল ঘটনার মধ্য থেকে আমাদের দোয়ার অনুকূলের ঘটনাটি বাস্তব করে দেন।


ধরুন, আপনি ঢাকা থেকে ময়মনসিংহের পথে আপনার গাড়ি চালিয়ে করে যাত্রা শুরু করলেন। গাড়ি চালানোর সময় আপনি দ্রুত চালাতে পারেন আবার সাবধানে চালাতে পারেন। আপনি যাই বাছাই করেন না কেন বাছাই করার আগ পর্যন্ত আপনার সামনে ঘটিতব্য ঘটনাগুলো অনেক রকম হতে পারে। আপনি যদি সাবধানে চালানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং চালান, আপনি উক্ত ঘটিতব্য সম্ভাবনাময় ইভেন্টগুলো থেকে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নাকচ করে দিলেন। কিন্তু, তার মানে এই নয় যে আপনি নিশ্চিত ভাবেই দূর্ঘটনা থেকে বেঁচে যাবেন। বরং, আপনার সাবধানতা সত্যেও বিভিন্ন ইভেন্টের মিথস্ক্রিয়ার কারণে আপনার চয়েজের বাইরে কিছু সম্ভাব্যতা তৈরী হবে। যেগুলো সম্পর্কে আপনার কোন জ্ঞান নেই। আপনি এ অবস্থায় দোয়া করলে হয়ত মহান আল্লাহ আপনার অনুকূলে নিরাপদে ময়মনসিংহে পৌছার সাথে সংশ্লিষ্ট ঘটনাবলি বাস্তবায়িত করে দেবেন। দোয়া না করলেও হয়ত আপনাকে আল্লাহ নিরাপত্তা দিবেন যদি আপনার হায়াত থেকে থাকে। কিন্তু, দোয়া করলে অন্তত তা আপনার আমলনামায় ইবাদাত হিসেবে লিখা থাকবে।


সুতরাং আমরা যখন ইচ্ছেশক্তি প্রয়োগ করি তখন অনেকগুলোর সম্ভাব্যতার মধ্যে থেকে কিছু সম্ভাব্যতা কমিয়ে নিয়ে আসি। আর যখন দোয়া করি তখনও অজানা অনেক সম্ভাব্যতার থেকে আমাদের অনুকুলের কোন ঘটনা বাছাইয়ের জন্য মহান রবের কাছে চাই। কোন কোন সময় আমার রব যখন কোন দোয়া কবুল করেন তা বুঝতে পারি, কোন কোন সময় হয়ত বুঝতে পারি না।

আসুন বেশী বেশী মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করি। আল্লাহ তাআলা আমাদের ক্ষমা করে দিন এবং করোনা মহামারী থেকে মুক্তি দিন।    

#https://web.facebook.com/Md-Abdullah-Saeed-Khan-112254973825726/?modal=admin_todo_tour
https://web.facebook.com/permalink.php?story_fbid=112333143817909&id=112254973825726&__tn__=K-R

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top