করোনা ভাইরাসের অন্যতম লক্ষণ হচ্ছে নাকে ঘ্রাণ শক্তি লোপ এবং জিহবার স্বাদের অনুভূতি লোপ। এ অবস্থায় আপনি যা-ই খাবেন মনে হবে যেন একই জিনিস খাচ্ছেন। আপনি চোখ বন্ধ করলে বিষয়টি আরও বেশী উপলব্ধি করতে পারবেন।তাহলে ভেবে দেখুন খাবারের যে স্বাদ আমরা পাই বা যে গন্ধ আমরা পাই তা মূলত নির্ভর করছে আমাদের উক্ত ইন্দ্রিয়ের সক্রীয় থাকার উপর। আমাদের নাক বা জিহবা থেকে ঘ্রাণ বা স্বাদের তথ্য নিউরনের মাধ্যমে আমাদের ব্রেইনের সেনসরী কর্টেক্স নামক একটি জায়গায় পৌছে। উক্ত নিউরনের যে কোন জায়গায় সমস্যা হলে ইন্দ্রীয়লব্ধ তথ্য আমাদের সেন্সরী কর্টেক্সে পৌছায় না বিধায় আমরা তথ্য পাই না।সুতরাং, আমরা যে কোন ইন্দ্রিয়লব্ধ তথ্য উপলব্ধি করি মূলত সেরিব্রাল কর্টেক্স (ব্রেইন)-এর সেনসরী এরিয়াতে।
আপনাদের মাথায় হয়ত এই প্রশ্ন এসে থাকবে যে, তাহলে কি সেনসরী কর্টেক্স আঘাত প্রাপ্ত হলে সেনসেশন টোটালী লস হয়? মজার বিষয় হল, সেনসেশন টেম্পোরারী লস হয়। নিউরোপ্লাস্টিসিটি নামক একটি ফেনোমেনা আছে। যার মাধ্যমে ব্রেইনের যে অংশ বেঁচে আছে সেই অংশ অনেক সময় আঘাত প্রাপ্ত অংশের কাজ গ্রহন করে। ফলে উক্ত ব্যাক্তি সংশ্লিষ্ট সেন্স ফিরে পায়। যাদের জন্মের পর থেকে বিভিন্ন কারণে ব্রেইনের কটিকাল অংশ ছোট বা সরু তাদের উপর গবেষণায় দেখা গেছে যে তাদের ইন্দ্রিয়লব্ধ তথ্য পেতে কোন সমস্যা হয় না। স্বাভাবিক গঠনের অন্যান্য ব্রেইনের মতই তারা উপলব্ধি করে। অর্থাৎ, আপনার উপলব্ধি আপনার ব্রেইনের সাইজের উপর নির্ভর করে না।তাহলে কে উপলব্ধি করে?এর উত্তর দার্শনিক অবস্থানের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন-যারা কট্টর বস্তুবাদী, তাদের মতে আমাদের ব্রেইনই উপলব্ধি করে।
‘মাইন্ড’ হচ্ছে আমাদের ভাব প্রকাশের সুবিদার্থে ব্যবহৃত একটি পরিভাষা মাত্র।যারা এপিফেনোমেনালিস্ট, তাদের মতে আমাদের মাইন্ড নামক একটি এনটিটি আছে যা শুধু উপলব্ধি করে। কিন্তু, ব্রেইনের উপর তার কোন ইফেক্ট নেই।কার্তেসিয়ান ডুয়েলিস্টদের মতে আমাদের মাইন্ড একটি ইনডিপেন্ডেন্ট এনটিটি যা উপলব্ধি করে, ব্রেইনের উপর একশন রাখতে পারে এবং ব্রেইন থেকে ডিটাচেবল।থমিস্টিক ডুয়েলিস্টদের মতে আমাদের মাইন্ড একটি কনজয়েন্ট এনটিটি যা উপলব্ধি করে, ব্রেইনের উপর একশন রাখতে পারে, কিন্তু ব্রেইন থেকে ডিটাচেবল না।
হার্ড প্রবলেম অব কনসাসনেস, ননলোকাল কনসাসনেসস রিসার্চ, নোয়েটিক রিসার্চ, স্পিরিচুয়্যালী এনলাইটেনডদের এক্সপেরিয়েন্স, এবং ফিলোসফি অব রিলিজিওন প্রভৃতি সম্মিলিতভাবে ডুয়েলিজম-এর দিকে ধাবিত করে বলে আমি মনে করি।
করোনা ভাইরাস আমাদের সুস্থতার নিয়ামত বোঝার পাশাপাশি আমাদের অস্তিত্বের বাস্তবতা এবং ক্ষনস্থায়ীত্ব সম্পর্কে যেন নিয়মিত শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছে। অথচ, আমরা কি এখনও আল্লাহর দিকে ফিরে এসেছি?
Leave a Reply