নাস্তিক বিজ্ঞানীরা কি বিশ্বাসের বিপক্ষে বা অবিশ্বাসের পক্ষে যুক্তির কারণে নাস্তিক হয়?
…
যুক্তি ও বিপরীত যুক্তি সমান্তরালে চলে। মেডিকেলে পড়ার সময় আমার একজন সহপাঠীর সঙ্গে একদিন ক্লাস শেষে ফেরার পথে এ বিষয়ে কথা হচ্ছিল। সে একটি সুন্দর উপমা দিয়েছিলো যে যুক্তি ও বিপরীত যুক্তির উদাহরণ হচ্ছে রেললাইনের মত, সমান্তরালে চলে।
তবে, যুক্তিবিদ্যা সম্পর্কে পড়াশোনা থাকলে যুক্তি থেকে অ-যুক্তি ও কু-যুক্তি (logical fallacy) পার্থক্য করা যায়। অনেকে যুক্তিবিদ্যা নিয়ে সিস্টেম্যাটিক্যালী না পড়েও যথেষ্ঠ যুক্তিবোধ রাখেন। মানুষভেদে উক্ত যুক্তিবোধের একটা রেঞ্জ পাওয়া যায়।
এতদিন বাংলায় অবিশ্বাসীদের যুক্তিচর্চার ক্ষেত্র ছিল তুলনামূলক শূন্য। সে সুযোগে তারা বিশ্বাসের বিপক্ষে পশ্চিমাদের যুক্তি, অযুক্তি ও কুযুক্তিকে বিভিন্ন মোড়কে উপস্থাপন করেছেন। ফলে বিশ্বাসীদের পক্ষেও যে যুক্তির সম্ভার আছে তা অনুপস্থাপিত থেকে গেছে বহুদিন।
এরপর নাস্তিকদের ব্লগস্ফেয়ারেই মুসলিম ব্লগাররা বিশ্বাসের পক্ষের যুক্তি নিয়ে লিখালিখি করেছেন। এক সময় আলোচনা-সমালোচনা সীমাবদ্ধ ছিল অল্পকিছু মানুষের মধ্যে । ২০১৩ সালে পর বিভিন্ন কারণে উক্ত আলোচনা দ্রুত ছড়িয়ে পড়লো সবার মাঝে।
কিন্তু, সবার যুক্তিবোধ সমান নয়, আবার যুক্তি তর্কের ক্যাচক্যাচানি সবার ভালও লাগে না। এ কারণে গল্পের আকারে নাস্তিকদের যুক্তির খণ্ডন বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এই জনপ্রিয়তার মধ্য দিয়ে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, আমাদের ওয়ায়েজীনদের একটি বড় অংশ যখন জনসাধারনের মধ্যে সুরে-বেসুরে ইসলামের শিক্ষার রিমাইণ্ডার দিতে ব্যস্ত, তখন আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত তরুন মুসলিমদের একটি বড় অংশ আমলতো দূরের কথা বিশ্বাসের দিক দিয়েই সংশয়াপন্ন হয়ে গেছে। না হলে ‘প্রেম-রস-কাহিনী-উপাখ্যান’ বিহীন যুক্তি-তর্কের গল্পের বই এত জনপ্রিয় হয় কিভাবে?
যাই হোক মূল কথায় আসি। বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসী দুই পক্ষেরই যুক্তির অভাব নেই। এমনকি এ সংক্রান্ত পড়ালেখা করতে করতে একজনের জীবন পার করে দেয়া সম্ভব। ফলে, অধিকাংশই বিশ্বাসীদের পক্ষে বিপক্ষের যুক্তি নিয়ে গভীর পড়ার সময় বা যোগ্যতা রাখেন না। ফলে, তারা তাদের পারিবরিক বিশ্বাস বা পারিপার্শ্বিক অর্থডোক্স (প্রচলিত) বিশ্বাসের উপর আস্থা রাখেন অথবা এগনস্টিক অবস্থান নিয়ে নিজের কাজ চালিয়ে যান। এমনকি বিজ্ঞানী ও দার্শনিকদের ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য।
২০১৩ সালে David Bourget এবং David J. Chalmers একটি গবেষণা প্রকাশ করেন(1)। যার শিরোনাম ছিলো ‘দার্শনিকরা কি বিশ্বাস করেন?” (What Do Philosophers Believe?) উক্ত গবেষণায় তারা দর্শনের বিভিন্ন শাখার দার্শনিকদের কাছে দর্শনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করেন। এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূণ প্রশ্ন ছিল – স্রষ্টায় বিশ্বাস নিয়ে। তাদের গবেষণায় বেরিয়ে আসে যে যারা ‘ধর্মের দর্শন’ (Philosophy of Religion)-এ এক্সপার্ট তাদের মধ্যে মাত্র ২০.৮৭% অবিশ্বাসী এবং ৭৯.১৩% শতাংশ বিশ্বাসী। অন্যদিকে যারা ধর্মের দর্শন বিষয়ে এক্সপার্ট না (অর্থাৎ অন্যান্য দর্শন বিষয়ে এক্সপার্ট) তাদের মধ্যে ৮৬.৭৮% অবিশ্বাসী এবং ১৩.২২% বিশ্বাসী। অর্থাৎ, বলা যায় একজন দার্শনিকের স্রষ্টায় বিশ্বাসের যুক্তি গুলো নিয়ে গভীরভাবে পড়ালেখা করলে বিশ্বাসী হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় চারগুন বেশী।
কিন্তু, বিজ্ঞানের প্রতিটি শাখার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জ্ঞানের ব্যপ্তি এখন এত বেশী যে উক্ত যে কোন একটি বিষয় নিয়ে একজন গবেষকের জীবনের অধিকাংশ সময় পার করে দিতে হয় বা দিতে পারেন। ফলে, বিশ্বাসের দিক দিয়ে তার অবস্থান বিশ্বাস-অবিশ্বাসের যুক্তি নিয়ে পড়ালেখার উপর নির্ভর করে না বরং নির্ভর করে তার পারিবারিক বা সামাজিক ধর্মীয় শিক্ষা ও অবস্থা, পারিপার্শ্বিক পরিবেশ, একাডেমিক স্থানে সুবিধাজন পজিশনের থাকার প্রবণতা প্রভৃতি বিষয়ের উপর।
Ecklund এবং Scheitle যুক্তরাস্ট্রের ২১টি এলিট রিসার্চ ইউনিভার্সিটির বিভিন্ন বিজ্ঞানীদের উপর গবেষণা করে দেখেছেন বিভিন্ন শাখার বিজ্ঞানীদের ধার্মিক হওয়ার বিষয়টি তাদের নিজেদের ফিল্ড-এর এক্সপারটিজ-এর উপর নির্ভর করে না বরং নির্ভর করে তাদের বয়স, বৈবাহিক অবস্থা, সন্তান থাকা বা না থাকা, সে নিজে ছোট থাকাকালীন তার পরিবারের ধর্মীয় অবস্থা ইত্যাদির উপর(2)।
তারা আরও দেখিয়েছেন যে খুব কম বিজ্ঞানীই মনে করেন যে বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে বিবাদ আছে(3)। কিন্তু, নাস্তিকরা, বিশেষ করে নব্য-নাস্তিক (Neo-Atheist)-দের সঙ্গে কথা বললে মনে হয় যেন বিজ্ঞানীরা তাদের যুক্তিবোধের কারণে নাস্তিক হয়ে যায়। অথচ, উপরে আমরা দেখলাম বিশ্বাসের যুক্তি নিয়ে গভীরভাবে পড়লে বিশ্বাসী হবার সম্ভাবনা প্রায় চারগুন বেশী এবং বিজ্ঞানীদের মধ্যে অধিকাংশই শুধু যুক্তির কারণে নিধার্মিক বা নাস্তিক হয় না।
রেফারেন্স:
1. Bourget D, Chalmers DJ. Bourget, Chalmers, What Do Philosophers Believe. Philos Stud. 2014;130(3):465–500.
2. Ecklund EH, Scheitle CP. Religion among Academic Scientists: Distinctions, Disciplines, and Demographics. Soc Probl. 2007;54(2):289–307.
3. Ecklund EH, Park JZ, Sorrell KL. Scientists Negotiate Boundaries Between Religion and Science. J Sci Study Relig. 2011;50(3):552–69.
Majidul Mulhid:
আপনি প্রধানত দুটি পয়েন্ট তুলে ধরেছেন, উভয় নিয়েই আলোচনা করছি।
১. দর্শনের অন্যান্য ক্ষেত্রের তুলনায় ধর্মের দর্শনে বিশ্বাসীর সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে আপনি বলেছেন –
“বলা যায় একজন দার্শনিকের স্রষ্টায় বিশ্বাসের যুক্তি গুলো নিয়ে গভীরভাবে পড়ালেখা করলে বিশ্বাসী হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় চারগুন বেশী।”
এটিই কিন্তু একমাত্র হাইপোথিসিস নয়, এর আরও এক কারণ হতে পারে, সেটি হল –
“ধার্মিক বা আস্তিক হওয়ার কারণেই তারা ধর্মের দর্শন নিয়ে পড়ার সিধান্ত নিয়েছে এবং পূর্বধারণার (prejudice) কারণেই সে আস্তিক থাকে।”
কোন হাইপোথিসিস সঠিক?
এই গবেষণায় এই সিধান্তে আসার মতো পর্যাপ্ত পরিমাণে তথ্য নেই। তাই আমরা Helen De Cruz-এর একটি গবেষণার [১] উপর নির্ভর করব। এই গবেষণায় দেখা যাচ্ছে ধর্মের দর্শন বিষয়ে স্পেশালাইজেশন করার প্রধান উদ্দেশ্য হল – Faith seeking understanding অর্থাৎ, এটা তাদের বিশ্বাসকে গভীর করতে সাহায্য করে। দ্বিতীয় উদ্দেশ্য হল – Proselytism and witness, অনেকেই অন্য মানুষদের নিজ ধর্মে দীক্ষিত করানোর উদ্দেশ্যে এই বিষয়ে স্পেশালাইজেশন করে।
এছাড়া, আরও দেখা যায় যে এই ধর্মের দর্শন বিষয়ে পড়ার ফলে যতজন আস্তিক থেকে নাস্তিক হয় (৮.১%), তার তুলনায় নাস্তিক থেকে আস্তিক (১১.৮%) হওয়ার সংখ্যাও ৩.৭% বেশি।
এর ফলে দেখা যাচ্ছে আপনার হাইপোথিসিসটি ভুল বরং বেশিরভাগ ধর্মের দার্শনিকগণ আগে থেকেই ধার্মিক বা আস্তিক হওয়ার কারণেই ধর্মের দর্শন নিয়ে পড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে।
২. আপনার দ্বিতীয় দাবি হল –
“খুব কম বিজ্ঞানীই মনে করেন যে বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে বিবাদ আছে।”
এর প্রমাণ হিসেবে যেই আর্টিকেলটি দিয়েছেন সেখানে এমন কিছু লেখা নেই, সেখানে যা লেখা আছে সম্ভবত সেটি আপনি ভুল বুঝেছেন।
“only a minority of scientists see religion and science as always in conflict”- সম্ভবত এই বাক্যটি পড়ে আপনি এমন ধারনা করেছেন। ভালো করে দেখুন, এখানে ‘ always’ শব্দটি ব্যাবহার করা হয়েছে, অর্থাৎ এর বাংলা করলে দাঁড়ায়, “মাত্র স্বল্পসংখ্যক বিজ্ঞানী ধর্ম ও বিজ্ঞানের মধ্যে সর্বদাই বিরোধ দেখতে পান।”
এই গবেষণায় পাওয়া যায়, সাবজেক্টদের মধ্যে ১৫% বিজ্ঞানী মনে করে বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে সবসময় সংঘাত আছে, ১৫% বিজ্ঞানী মনে করে বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে কোনো সংঘাত নেই এবং ৭০% বিজ্ঞানী মনে করে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ধর্ম ও বিজ্ঞানের সংঘাত আছে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে মোট ৮৫% বিজ্ঞানী মনে করে ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের বিরোধ আছে। এবং এটাই যুক্তিযুক্ত অবস্থান, ধর্মে কাকতালীয়ভাবে কিছু জিনিস থাকতেই পারে যা বিজ্ঞানের সাথে সাংঘর্ষিক নয়। তাই বলে ধর্মের সব জিনিস বিজ্ঞানসম্মত তা তো নয়। যেমন বিবর্তনবাদ, এটা সম্পূর্ণরূপে ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক। আবার কুরআনে বলা আছে প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে, এটা আবার বিজ্ঞানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। কিন্তু, ধর্মগ্রন্থে একটি ভুল ধরা পড়লেই সেই গ্রন্থের ডিভাইন অরিজিন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে ওঠে।
আরও একটা পয়েন্ট হল, এখানে বিজ্ঞানীরা ধর্ম বলতে নির্দিষ্ট কোনো ধর্ম নেয়নি, অনেকেই আধ্যাত্মিকতাকেও ধর্ম ধরেছেন। বিজ্ঞানের কাজ ন্যাচারাল ওয়ার্ল্ড নিয়ে কাজ করা, তাই বিজ্ঞান আধ্যাত্মিকতা বিষয়ে কিছু বলতে পারেনা। কিন্তু, বিজ্ঞান ঠিকই বেদ, বাইবেল, গীতা, কুরআনের মধ্যে অনেক ভুল দেখাতে সক্ষম।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে, আপনি প্রথম গবেষণার ক্ষেত্রে ভুল হাইপোথিসিস দাঁড় করিয়েছেন এবং দ্বিতীয় গবেষণার ব্যাপারে শুধুমাত্র সারাংশ পড়ে ভুল বুঝেছেন।
বিজ্ঞানীদের ক্ষেত্রে কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করা কঠিন, তা জানতে এই ভিডিওটি দেখতে পারেন –
===========================
রেফারেন্সঃ
[১] My qualitative study of religious attitudes and motivations of philosophers of religion
https://www.newappsblog.com/…/results-of-my-qualitative…
উত্তর:
আপনি আমার বক্তব্য থেকে দুটি পয়েন্ট নিয়ে কথা বলেছেন। কিন্তু, এর বাইরেও একটি পয়েন্টে আমি কথা বলেছি। তা হল- নাস্তিক বিজ্ঞানীদের নাস্তিক হওয়া তাদের বয়স, বৈবাহিক অবস্থা, সন্তান থাকা বা না থাকা, সে নিজে ছোট থাকাকালীন তার পরিবারের ধর্মীয় অবস্থা ইত্যাদির উপর নির্ভর করে।
এবার আসুন অন্য দুটো পয়েন্ট নিয়ে কথা বলা যাক। আমি বলেছি “একজন দার্শনিকের স্রষ্টায় বিশ্বাসের যুক্তি গুলো নিয়ে গভীরভাবে পড়ালেখা করলে বিশ্বাসী হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় চারগুন বেশী”। এটা বলেছি মূলত মূল পোস্টের ১নং রেফারেন্স-এর পরিসংখ্যান এর আলোকে।
আপনার আলোচনার প্রেক্ষিতে আমি Helen De Cruz-এর ২০১৮ সালের প্রকাশিত মূল আর্টিকেলটা পড়ে দেখলাম(1)। সে প্রেক্ষিতে আমি আমার হিসেবটি রিভাইজ করতে চাই। লক্ষনীয় আমার হাইপোথিসিস-এর আলোকে একজন দার্শনিক ফিলোসফি অব রিলিজিওন নিয়ে পড়ার আগে নাস্তিকও হয়ে থাকতে পারেন এবং আস্তিকও হয়ে থাকতে পারেন। আবার ডি ক্রজের আর্টিকেল থেকে দেখা যায় তার গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ৮৫ জন আস্তিক ফিলোসফার এর মধ্যে ১১ জন পূর্বে নাস্তিক বা এগনস্টিক ছিল, ৩৩ জন নাস্তিক বা এগনস্টিক দার্শনিকের (২৫ জন নাস্তিক ও ৮ জন এগনস্টিক)-এর মধ্যে ১২ বিশ্বাসী ছিল। আমরা ম্যাকনেমার টেস্ট করলে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সংখ্যার মধ্যে স্ট্যাটিসটিক্যাল সিমিলারিটি দেখতে পাই (p=1.000)। (লক্ষ্যনীয় আর্টিকেলের এই জায়গায় ডি ক্রজ একটা ভুল করেছেন। এখানে ফিসারস এক্সাক্ট টেস্টে হবে না হবে ম্যাকনেমার টেস্ট হবে। কারণ যখন কোন ডাইকোটোমাস ভ্যারিয়েবলকে রিপিটেড মিজার করা হয় তখন ম্যাকনেমার ব্যবহার করতে হয়।(2))। উপরোক্ত হিসেবে অনুযায়ী পূর্বে ৮৬ জন আস্তিক ছিল এবং ৩২ জন নাস্তিক/এগনস্টিক ছিল।
আপনি একটি ভ্যালিড পয়েন্ট এনেছেন যে এখানে একজন ফিলোসফার অব রিলিজিওনের পূর্বের বিশ্বাসকেও আমলে নিতে হবে। সুতরাং আমরা ডি ক্রুজের ২০১৮ সালের আর্টিকেলের হিসেবেকে আমলে নিয়ে পাচ্ছি একজন দার্শনিকের ফিলোসফি অব রিলিজিওন বিভাগে ঢুকার পূর্বে আস্তিক থাকার সম্ভাবনা ৭২.৮৮% এবং নাস্তিক বা এগনস্টিক থাকার সম্ভাবনা ২৭.১১% এবং উক্ত ডিপার্টমেন্টে ঢুকার পরে আস্তিক হওয়ার সম্ভাবনা ৭২.০৩% এবং নাস্তিক বা এগনস্টিক হওয়ার সম্ভাবনা ২৭.৯৬%। এখন আমরা যদি পূর্ববর্তী বিশ্বাসকে আমলে নেয়ার জন্য বেইস থিওরেম এপ্লাই করি তাহলে দেখা যায় একজন দার্শনিকের ধর্মের দর্শনে এক্সপার্ট হওয়ার থিইস্ট হওয়ার সম্ভাবনা (Likelihood) ৬০.৩৮% এবং অবিশ্বাসী/এগনস্টিক হওয়ার সম্ভাবনা ৫০.৬৮%। অর্থাৎ পূববর্তী বিশ্বাসকে আমলে নিলেও একজন দার্শনিকের ধর্মের দর্শন পড়ে বিশ্বাসী হবার সম্ভাবনা প্রায় ৯.৭৩% বেশী। অর্থাৎ, আবার পূর্বের হিসেবের ৪ গুনের জায়গায় মূল হিসেব হবে ১.১৯ গুণ বেশী।
এছাড়া আপনি ডি ক্রুজের ব্লগ থেকে লিখেছেন- এই গবেষণায় দেখা যাচ্ছে ধর্মের দর্শন বিষয়ে স্পেশালাইজেশন করার প্রধান উদ্দেশ্য হল – Faith seeking understanding অর্থাৎ, এটা তাদের বিশ্বাসকে গভীর করতে সাহায্য করে। দ্বিতীয় উদ্দেশ্য হল – Proselytism and witness, অনেকেই অন্য মানুষদের নিজ ধর্মে দীক্ষিত করানোর উদ্দেশ্যে এই বিষয়ে স্পেশালাইজেশন করে।
এই তথ্য পুরোপুরি সঠিক নয়, কারণ Proselytism and witness অন্তত দ্বিতীয় কারণ নয়। মূল কারণগুলো হল – রিলিজিয়াস আইডেনটিটি (৩৬%), দার্শনিক আগ্রহ (৩৩.১%), দর্শক সংক্রান্ত শিক্ষা থেকে আগ্রহ ২০.১%, সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক বা সামাজিকভাবে ইন্টারেস্টিং মনে করার কারণে ১৪.৪%, ছোটবেলার কোন অভিজ্ঞতার কারণে ১০.৮%, অন্যান্য ৭.৯% এবং Proselytism and witness ৭.২%। এমনকি যারা রিলিজিয়াস আইডেনটিটি ক্লাসে আগ্রহী ছিল তাদের মধ্যে এই প্রবণতাও ছিল যে তারা তাদের বিশ্বাসকে যুক্তির আলোকে প্রশ্ন করে দেখতে চায়- “I am a catholic, and philosophy of religion helps me in deepening my faith by way of—paradoxically—putting the faith itself into question and even criticizing it. — male assistant professor, public university, Italy.”
দ্বিতীয় পয়েন্টে বলি – আমি আর্টিকেলটা ভুল পড়ি নি এবং “খুব কম বিজ্ঞানীই মনে করেন যে বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে বিবাদ আছে”-এ কথাটা ভ্যালিড। কেন? বুঝিয়ে বলছি-
আপনি লিখেছেন- “এই গবেষণায় পাওয়া যায়, সাবজেক্টদের মধ্যে ১৫% বিজ্ঞানী মনে করে বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে সবসময় সংঘাত আছে, ১৫% বিজ্ঞানী মনে করে বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে কোনো সংঘাত নেই এবং ৭০% বিজ্ঞানী মনে করে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ধর্ম ও বিজ্ঞানের সংঘাত আছে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে মোট ৮৫% বিজ্ঞানী মনে করে ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের বিরোধ আছে।“
আপনার শেষের “৭০% বিজ্ঞানী মনে করে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ধর্ম ও বিজ্ঞানের সংঘাত আছে” থেকে “মোট ৮৫% বিজ্ঞানী মনে করে ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের বিরোধ আছে” কথাটা কিভাবে আসল পরিস্কার নয়। কারণ “৭০% বিজ্ঞানী মনে করে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ধর্ম ও বিজ্ঞানের সংঘাত আছে” এর অর্থ হল “৭০% বিজ্ঞানী মনে করে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ধর্ম ও বিজ্ঞানের সংঘাত নেই”। সুতরাং হিসেবটা হওয়ার কথা “৮৫% বিজ্ঞানী মনে করে ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের নেই।“
ইন ফ্যাক্ট উক্ত হিসেবের আলোকে স্বয়ং অথররাই বলেছেন যে “only a minority of scientists see religion and science as always in conflict”। এখানে মাইনরিটি হচ্ছে ১৫%।
আমি অবশ্য স্বীকার করছি কথাটা এভাবে বললে ভাল হত “খুব কম বিজ্ঞানীই মনে করেন যে বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে সার্বক্ষনিক বিবাদ আছে।“
আপনার অন্যান্য কথার সাথে আমার কিছু জায়গায় মতের ঐক্য এবং কয়েক জায়গায় মতের মিল নেই। তবে সেই বিষয় নিয়ে আলোচনা বা তর্ক চালিয়ে যাওয়ার মত সময় আমার নেই। ধন্যবাদ।
রেফারেন্স:
1. De Cruz H. Religious Beliefs and Philosophical Views: A Qualitative Study. Res Philos [Internet]. 2018;95(3):477–504. Available from: https://www.pdcnet.org/resphilosophica/content/resphilosophica_2018_0095_0003_0477_0504
2. McNemar’s test in SPSS Statistics – Procedure, output and interpretation of the output using a relevant example | Laerd Statistics [Internet]. [cited 2019 Mar 8]. Available from: https://statistics.laerd.com/spss-tutorials/mcnemars-test-using-spss-statistics.php
Leave a Reply