উহান করোনা ভাইরাস

নতুন করোনা ভাইরাস ও আমাদের করনীয়
..

২০০৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারী। বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থার কাছে একটি ফোন আসল। কে ফোন করেছে? গনচীনের স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় থেকে ফোন। তারা ২০০২ সালের শেষের দিকে চীনের গুয়াংডং প্রদেশে অন্যরকম কিছু নিউমোনিয়ার (Atypical Pneumonia) কেস পেয়েছে যাদেরকে সাধারণ চিকিৎসা দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা যাচ্ছে না। ফেব্রুয়ারী গড়িয়ে মার্চ যেতে না যেতেই এ ধরনের আরো কেস আবিস্কার হতে লাগলো ভিয়েতনাম, হংকং, কানাডা ও সিঙ্গাপুরে।

দেখা গেল এটি শ্বাসযন্ত্রের নতুন একটি রোগ যা খুবই ভয়াবহ আক্রমন করে মানুষকে মৃত্যুর দিকে ধাবিত করে। নতুন রোগের নাম দেয়া হল Severe Acute Respiratory Syndrome (SARS) । রোগটা দ্রুত আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ থেকে অন্যদের শ্বাসনালীতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অবস্থার ভয়াবহতা আঁচ করতে পারল। ২০০৩ সালের ১২ই মার্চ এক সংবাদ সম্মেলন করে বিশ্বব্যাপী সতর্কতা জারি করা হল।

কয়েকদিনের মধ্যেই সার্সের কারণ হিসেবে আবিস্কার হল একটি ভাইরাস। যাকে বলা হয় সার্স করোনা ভাইরাস। গুয়াংডং প্রদেশের কোন একটি গবাদীপশুর বাজার থেকে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে বলে ধারণা করা হয়।

সেইবার পুরোবিশ্বে ২৯টি দেশে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছিল যা প্রায় ৮০৯৮জনকে আক্রমন করে ৭৭৪ জনের মৃত্যু ঘটায় (৯.৪%)।

ভাইরাস মানুষের শ্বাসনালীতে অহরহই আক্রমন করে। প্রতি বছরই আমরা অনেকেই কমন কোল্ড-এ ভুগি। কিন্তু, করোনা ভাইরাসের মত দ্রুত মৃত্যূ খুব কম ভাইরাসই ডেকে আনে। গতবছর আমাদের দেশে যে ডেঙ্গু ভাইরাস আক্রমন হয় তাতে সঠিক সময় চিকিৎসা করায় মৃত্যু হার ০.২%-এরও নিচে ছিলো।

এরপর ২০১২ সালে সৌদি আরবে আবার একই ধরনের একটা ভাইরাস ধরা পরলো প্রায় ২২ জনের মধ্যে। এবারও কালপ্রিট একটি করোনা ভাইরাস। এই ভাইরাসের নাম দেয়া হল মিডল ইস্ট রেসপিরেটরী সিনড্রোম তথা মার্স করোনা ভাইরাস। এটি ছড়িয়ে পড়েছে সম্ভবত উট থেকে। ২০১৪ সাল পর্যন্ত এটি সৌদিতে ৬৮৮ জনকে আক্রান্ত করেছে। তার মধ্যে প্রায় ২৮২ জন মারা গেছে।
সেবার বাংলাদেশের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান IEDCR খুবই দক্ষতার সাথে মধ্যপ্রাচ্য থেকে ফেরত আসা সন্দেহজনক মার্স কেসকে নিবিড় পর্যবেক্ষনে রাখায় তা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়েনি।

এবার ২০১৯ সালে ডিসেম্বরের শেষে আবার একটি নতুন করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। সন্দেহ করা হচ্ছে এটি চীনের হুবাই প্রদেশের উহান শহরের একটি প্রাণীবাজারে সাপ থেকে ছড়িয়ে পড়েছে। আজকে পর্যন্ত চিনে ৪১ জন ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তবে চিনের বাইরে কোন মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। সারা পৃথিবীতে ১২/১৪টি দেশে প্রায় ১৩০০টি কেস নিশ্চিত হয়েছে। সম্প্রতি আমাদের নিকটবর্তী ভারতে এগারটি এবং নেপালে একটি কেস পাওয়া গেছে।

সুতরাং করোনা ভাইরাস আমাদের দেশেও ছড়িয়ে পরতে পারে। তবে আমাদের ভীত না হয়ে সতর্ক হতে হবে। লক্ষ্যনীয়, করোনা ভাইরাস যাদের আক্রান্ত করে তাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম হলে সাধারনত মারাত্মক রোগ করতে পারে। কিন্তু, কিভাবে আমরা করোনা ভাইরাস থেকে নিজেকে বাঁচাবো? (বিস্তারিত ডানের ছবিতে)

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে নিচের ব্যবস্থাগুলো নেয়া জরুরী-
– সাবান ও পানি দিয়ে অন্তত বিশ সেকেন্ড হাত ধোয়া
– নিজের চোখ, নাক ও মুখ আধোয়া হাতে না ধরা
– যারা করোনা ভাইরাস আক্রান্ত তাদের নিকটে না যাওয়া

যদি আসেপাশে কারও জ্বর, গলাব্যাথা, কাশি বা শ্বাসকষ্ট থাকে তাকে ডাক্তার দেখান এবং
– বাসায় থাকতে বলুন
– অন্যদের স্পর্শ এরিয়ে চলতে বলুন
– কাশির সময় মুখ ও নাক টিস্যু দিয়ে ঢেকে রাখতে বলুন, টিস্যুটি ময়লার ড্রামে ফেলে হাত ধুয়ে ফেলতে বলুন

এছাড়া যেসব দেশে (বিশেষ করে চীন) করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে সেগুলো থেকে কেউ আসার পর যদি ১৪ দিনের মধ্যে জ্বর (১০০ ফারেনহাইট বা তার বেশী), গলাব্যাথা, কাশি ও শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় দ্রুত হাসপাতালে যোগাযোগ করুন এবং ছবিতে দেয়া IEDCR-এর ফোন নাম্বারে ফোন করে জানান।

যেসব দেশে এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী সন্দেহ করা হচ্ছে বা নিশ্চিত হওয়া গেছে তার নাম ও আজকে পর্যন্ত কেস সংখ্যা নিম্নরুপ-
১. চীন – ১৩০০জন
২. ফ্রান্স – ৩জন
৩. জাপান – ৩জন
৪. অস্ট্রেলিয়া – ১জন
৫. মালয়েশিয়া – ১জন
৬. নেপাল – ১জন
৭. সিঙ্গাপুর – ৩জন
৮. দক্ষিণ কোরিয়া- ২জন
৯. তাইওয়ান – ৩জন
১০. থাইল্যান্ড- ২জন
১১. ইউএসএ- ২জন
১২. ভিয়েতনাম – ২জন
১৩. ভারত-১১ জন

আসুন আমরা সতর্ক হই এবং আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি যেন আল্লাহ আমাদের এই এপিডেমিক থেকে রক্ষা করেন এবং সুস্থ রাখেন। …
লাস্ট আপডেট: ২৫/০১/২০২০, রাত ১০.২৬

Noble prize given to intelligent design

Dr. Frances Arnold got the noble for directing evolution (read ‘micro-evolution’) to generate new enzymes. This is a precious example of design in chemistry and what intelligent design can do.

No natural and random process had produced the new enzymes. It was produced by meticulously planning and directing the process of micro-evolution. She and her colleagues were directing the ‘copying error’ to improve sub-function of an existing enzyme which usually engage in different chemical reaction.

But, why they had to take a tedious route to invent new enzymes? That is because, we do not yet know how a particular chain and sequence of amino acids would function assuming a particular shape. If we could have gathered all that information at that tiny level we could have produced new enzyme de-novo.


In fact Dr. Arnold explains precisely that in one of her articles:

“Unfortunately, our understanding of the link between sequence and function lags well behind our desire for new enzymes. Given that our ability to predict protein sequences–or even just changes to a sequence–that reliably give rise to whole new, finely tuned catalytic activities is rudimentary at best, creating new enzymes capable of improving on current synthetic processes is a pretty tall order. We also dream of going beyond known chemistry to create enzymes that catalyze reactions or make products that are simply not possible with any known method, synthetic or otherwise. Requiring that these new enzymes assemble and function in cells, where they can be made at low cost and incorporated into synthetic metabolic pathways to generate a broader array of products, represents an even greater set of engineering constraints and challenges.(1)”    

She also writes:

“Directed evolution achieves these desirable functional outcomes while circumventing our deep ignorance of how sequence encodes them”

The new function the enzyme achieved was not completely new. Usually they chose the enzymes from the natural world which were doing other important function but also had the desired catalytic capacity in a minimal level. By directing the copying error process Dr. Arnold’s team tried to improvise that desired function. On her own words:


“We start with existing proteins (sourced from Nature or engineered), introduce mutations, and then screen for the progeny proteins with enhanced activity (or another desirable trait). We use the improved enzymes as parents for the next round of mutation and screening, recombining beneficial mutations as needed and continuing until we reach the target level of performance.(1)”

I am not speaking of ‘copying error’ out of ignorance. Read her own comments on the issue:

“Engineering enzymes in the 1980s and 1990s, I learned the hard way that there was no reliable method to predict performance-enhancing mutations. Turning instead to random mutagenesis and screening, I quickly realized that such mutations were easy to find and accumulate with the right evolutionary optimization strategy(1).” I wanted to go deep. But let’s stop it here. Given the circumstances we can conclude that this year the noble prize was given to intelligent design(2,3).

1.          Arnold FH. Directed Evolution: Bringing New Chemistry to Life. Angew Chemie – Int Ed. 2018;57(16):4143–8.

2.          Douglas Axe. Nobel Prize in Chemistry for Intelligent Design? | Evolution News [Internet]. [cited 2018 Oct 19]. Available from: https://evolutionnews.org/2018/10/nobel-prize-in-chemistry-for-intelligent-design/

3.          Michael Egnor. Intelligent Design Wins Another Nobel Prize | Evolution News [Internet]. 2018 [cited 2018 Oct 19]. Available from: https://evolutionnews.org/2018/10/intelligent-design-wins-another-nobel-prize/

শেষ বিচার

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার অশেষ করুনা যে হিসেবের দিনে সবার বিচার হবে পৃথক ভাবে।

আমি যদি মুসলিম পরিবারে জন্ম নিয়ে থাকি, আমি জেনে বুঝে ইসলামকে শেখা ও মানার চেষ্টা করেছি কি না? আমাকে তিনি যে বুদ্ধিমত্তা, সময় এবং কর্মব্যস্ততা দিয়েছেন তার সাপেক্ষে আমার যতটুুকু জানার সুযোগ ছিলো তা জেনেছি কি না এবং তার সাপেক্ষে আমার যতটুকু মানার সুযোগ ছিলো মেনেছি কি না?

একজন রিকশা চালকের জামাতে নামাজ পড়তে না পারার বিচার একজন ব্যাবসায়ীর মত হবে না। একজন ঠেলাগাড়ি চালকের রমজানের রোজা একজন এসিতে বসে থাকা অফিস কর্মকর্তার মত হবে না।

যে অমুসলিম পরিবারে জন্ম নিয়েছে সর্বজ্ঞানী আল্লাহ তার সম্ভাব্য সকল ঘটনাক্রম (All possible world) এর সকল শাখাপ্রশাখা সহ জানেন। ফলে তিনি জানেন যে মুসলিম পরিবারে জন্ম নিলে সে কিভাবে জীবন যাপন করত এবং মুসলিম পরিবারে জন্ম নিলে তাকে তার স্বাধীন ইচ্ছের মাধ্যমে কতটুকু পরীক্ষা করা যেত। আবার অমুসলিম পরিবারে জন্ম নিলে তাকে তার স্বাধীন ইচ্ছেশক্তি, বুদ্ধিমত্তা, সময় এবং কর্মব্যস্ততার মধ্যে কতটুকু পরীক্ষা করার সুযোগ আছে তা-ও মহান আল্লাহ জানেন। সুতরাং, আমরা বিশ্বাস করি আল্লাহ তাআলাকে উক্ত ব্যাক্তিতে তার best possible world-এ তৈরী করেছেন। হয়ত পুরো জীবনে তাকে আল্লাহ অনেকবার মুসলিম হয়ে যাবার সুযোগ দিবেন? হয়ত সে আমার-আপনার চেয়েও পরহেজগার মুসলিম হয়ে মৃত্যুবরনের সম্ভাব্য অপশন রাখে।

আবার, আমার জীবনে হয়ত ইমান রক্ষার এমন পরীক্ষা আসতে পারে যেখানে উত্তীর্ণ না হলে আখিরাত বরবাদ হয়ে যাবে (আল্লাহ ক্ষমা করুন।)।

আল্লাহ আমাকে আমার পুরো জীবনের কনটেক্সট, বুদ্ধিমত্তা, ও সময়ের আলোকে বিচার করবেন। আপনাকেও আপনার কনটেক্স, বুদ্ধিমত্তা, ও সময়ের আলোকে বিচার করবেন।

এজন্য কোন ‘সুনির্দিষ্ট’ ব্যক্তির ব্যপারে জাজমেন্টাল না হই। নিজে ইসলাম শিখি, পালন করি এবং মানুষের কাছে দাওয়াত পৌছে দেই যে- ‘আল্লাহ এক, অদ্বিতীয়, এবং মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার প্রেরিত শেষ নবী’। এরপর উক্ত ব্যাক্তির হেদায়াতের ভার আল্লাহর কাছে ছেড়ে দেই এবং দোয়া করতে থাকি।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে ক্ষমা করে দিন এবং মুসলিম বানিয়ে তার কাছে ডেকে নিন।

মেটামরফসিস

অসুস্থ অবস্থা থেকে সুস্থতার দিকে প্রত্যাগমনের সময় নতুনত্বের অনুভূতি বিরাজ করতে থাকে।

এই অনুভূতির বর্ণনায় প্রকাশ করা কঠিন।

তবে, শুয়োপোকা যখন গুটি বেঁধে প্রজাপতিতে রূপান্তরিত হয়, তখন যদি তার কোন অনুভূতি থেকে থাকত তা বোধ হয় এ রকম।

সূর্য যখন অন্ধকার ভেদে করে নতুন ভোরের আলো নিয়ে আসে, সে সময় প্রকৃতি যদি কিছু বুঝত তা অনেকটাই হত সেই অনুভূতির ন্যায়।

ঝড়ের পরের নতুন সকালে যে মৃদু হিমেল বাতাস বইতে থাকে তার সাথে হয়ত তুলনা করা যায় একে।

কিংবা যেন শুষ্ক মাটি থেকে নতুন সবুজ ধানের শীষের সমারোহে বয়ে যাওয়া বাতাসের ঝাপটা।

অসুস্থতার পর সুস্থতায় ফিরে এলে মনে হয় যেন মহান রব আপনাকে নতুন জীবন দান করলেন। নতুন করে আরেকবার সুযোগ দিলেন তাকে ডাকার, তার দিকে ফিরে আসার।

মনের ব্যপারটাও কি ঠিক এ রকম?

বান্দাহ প্রকৃত তাওবা করলে আল্লাহ হয়ত তার মনকে সকল বিক্ষিপ্ত অবস্থা থেকে মৌলিক ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় ফিরিয়ে দেন এবং সুযোগ দেন ভালর দিকে নিজেকে সঞ্চালিত করার। মৃত মন যেন নতুন জীবন পায়।

কখনও কি দেখেছেন, রাতের শেষ প্রহরে, সিজদায় মাথাবনত করে, দু চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে, নিজের সকল অহংকারকে ধুলায় লুটিয়ে, বিনয়ের সাথে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার পর কি অনুভূতি হয়?

করোনা ভাইরাসের শিক্ষা

করোনা ভাইরাসের অন্যতম লক্ষণ হচ্ছে নাকে ঘ্রাণ শক্তি লোপ এবং জিহবার স্বাদের অনুভূতি লোপ। এ অবস্থায় আপনি যা-ই খাবেন মনে হবে যেন একই জিনিস খাচ্ছেন। আপনি চোখ বন্ধ করলে বিষয়টি আরও বেশী উপলব্ধি করতে পারবেন।তাহলে ভেবে দেখুন খাবারের যে স্বাদ আমরা পাই বা যে গন্ধ আমরা পাই তা মূলত নির্ভর করছে আমাদের উক্ত ইন্দ্রিয়ের সক্রীয় থাকার উপর। আমাদের নাক বা জিহবা থেকে ঘ্রাণ বা স্বাদের তথ্য নিউরনের মাধ্যমে আমাদের ব্রেইনের সেনসরী কর্টেক্স নামক একটি জায়গায় পৌছে। উক্ত নিউরনের যে কোন জায়গায় সমস্যা হলে ইন্দ্রীয়লব্ধ তথ্য আমাদের সেন্সরী কর্টেক্সে পৌছায় না বিধায় আমরা তথ্য পাই না।সুতরাং, আমরা যে কোন ইন্দ্রিয়লব্ধ তথ্য উপলব্ধি করি মূলত সেরিব্রাল কর্টেক্স (ব্রেইন)-এর সেনসরী এরিয়াতে।

আপনাদের মাথায় হয়ত এই প্রশ্ন এসে থাকবে যে, তাহলে কি সেনসরী কর্টেক্স আঘাত প্রাপ্ত হলে সেনসেশন টোটালী লস হয়? মজার বিষয় হল, সেনসেশন টেম্পোরারী লস হয়। নিউরোপ্লাস্টিসিটি নামক একটি ফেনোমেনা আছে। যার মাধ্যমে ব্রেইনের যে অংশ বেঁচে আছে সেই অংশ অনেক সময় আঘাত প্রাপ্ত অংশের কাজ গ্রহন করে। ফলে উক্ত ব্যাক্তি সংশ্লিষ্ট সেন্স ফিরে পায়। যাদের জন্মের পর থেকে বিভিন্ন কারণে ব্রেইনের কটিকাল অংশ ছোট বা সরু তাদের উপর গবেষণায় দেখা গেছে যে তাদের ইন্দ্রিয়লব্ধ তথ্য পেতে কোন সমস্যা হয় না। স্বাভাবিক গঠনের অন্যান্য ব্রেইনের মতই তারা উপলব্ধি করে। অর্থাৎ, আপনার উপলব্ধি আপনার ব্রেইনের সাইজের উপর নির্ভর করে না।তাহলে কে উপলব্ধি করে?এর উত্তর দার্শনিক অবস্থানের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন-যারা কট্টর বস্তুবাদী, তাদের মতে আমাদের ব্রেইনই উপলব্ধি করে।

‘মাইন্ড’ হচ্ছে আমাদের ভাব প্রকাশের সুবিদার্থে ব্যবহৃত একটি পরিভাষা মাত্র।যারা এপিফেনোমেনালিস্ট, তাদের মতে আমাদের মাইন্ড নামক একটি এনটিটি আছে যা শুধু উপলব্ধি করে। কিন্তু, ব্রেইনের উপর তার কোন ইফেক্ট নেই।কার্তেসিয়ান ডুয়েলিস্টদের মতে আমাদের মাইন্ড একটি ইনডিপেন্ডেন্ট এনটিটি যা উপলব্ধি করে, ব্রেইনের উপর একশন রাখতে পারে এবং ব্রেইন থেকে ডিটাচেবল।থমিস্টিক ডুয়েলিস্টদের মতে আমাদের মাইন্ড একটি কনজয়েন্ট এনটিটি যা উপলব্ধি করে, ব্রেইনের উপর একশন রাখতে পারে, কিন্তু ব্রেইন থেকে ডিটাচেবল না।

হার্ড প্রবলেম অব কনসাসনেস, ননলোকাল কনসাসনেসস রিসার্চ, নোয়েটিক রিসার্চ, স্পিরিচুয়্যালী এনলাইটেনডদের এক্সপেরিয়েন্স, এবং ফিলোসফি অব রিলিজিওন প্রভৃতি সম্মিলিতভাবে ডুয়েলিজম-এর দিকে ধাবিত করে বলে আমি মনে করি।

করোনা ভাইরাস আমাদের সুস্থতার নিয়ামত বোঝার পাশাপাশি আমাদের অস্তিত্বের বাস্তবতা এবং ক্ষনস্থায়ীত্ব সম্পর্কে যেন নিয়মিত শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছে। অথচ, আমরা কি এখনও আল্লাহর দিকে ফিরে এসেছি?

শ্রোডিঞ্জারের বিড়াল, চাঁদের অবস্থান এবং হাতের ইশারায় চাঁদের দুই ভাগ হওয়া

শ্রোডিঞ্জারের বিড়াল বক্সের ভিতর বেঁচে আছে না কি রেডিয়েশনের কারণে মরে গেছে তা ‘না দেখার’ আগ পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া সম্ভব না। কারণ, এলিমেন্টারী পার্টিকেলগুলো অবজার্ভ করার আগ পর্যন্ত কোয়ান্টাম সুপারপজিশনে থাকে। যখন অবজার্ভ করা হয় তখনই কেবল তাদের সুপারপজিশনের ডিকোহারেন্স হয়।

অর্থাৎ, তাকানোর আগ পর্যন্ত বিড়াল হয়ত একই সাথে মৃত এবং জীবিত অবস্থায় আছে।

ঠিক একই ভাবে আকাশে যখন চাঁদ ওঠে, চাঁদে তাকানোর আগ পর্যন্ত আমরা নিশ্চিত নই যে চাঁদ আকাশের ওই অবস্থানেই আছে কি না। যদি ধরে নেই, আমি না তাকানো পর্যন্ত চাঁদ কোয়ান্টাম সুপারপজিশনে থাকে, তার অর্থ হলো আমি না তাকানো পর্যন্ত চাঁদ একক, দ্বিখন্তিত, চূর্ণবিচূর্ণ যে কোন অবস্থায় থাকতে পারে।

কিন্তু, আমি তাকানোর পড়ে চাঁদ কেন সব সময় একটাই দেখায়? এইখানে এসে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের ইন্টারপ্রিটেশনের অসংখ্য বিভিন্নতা তৈরী হয়েছে। এই সকল ইন্টারপ্রিটেশন বিভিন্ন দিক থেকে করা হয়েছে। প্রতিটি ইন্টারপ্রিটেশন যে আবার মিউচুয়্যালী এক্সক্লুসিভ তাও না। এর মধ্যে বোর ও হাইজেনবার্গের কোপেনহেগেন ইন্টারপ্রিটেশনকে ধরা হয় ‘স্ট্যান্ডার্ড’ ইন্টারপ্রিটেশন।

একটি ইন্টারেস্টিং ইন্টারপ্রিটেশন হল ভন নিউম্যান ইন্টারপ্রিটেশন। এটা অনুযায়ী ‘কনসাসনেস’ কোয়ান্টাম কোল্যাপস–এ ভূমিকা রাখে। এমনকি, জন আর্চিবাল্ড হিলার-এর মতে ইউনিভার্স-এর এক্সিসটেন্স-এর পেছনে কনসাসনেস-এর ভূমিকা আছে।

মোদ্দাকথা, কোয়ান্টাম ডাবল-স্লিট এক্সপেরিমেন্ট বারবার দেখিয়েছে যে কনাগুলো দেখার আগ পর্যন্ত কোয়ান্টাম সুপারপজিশনে থাকে। এমনকি কয়েকদিন আগে ২০০০ পরমানুর অনুতেও এটা পরীক্ষা করে পাওয়া গেছে।

এখানে যদি আমরা ইমাম গাজ্জালির ওকেশনালিজম (পূর্ণ রূপে বা আংশিক ভাবেও) নিয়ে আসি তাহলে এভাবে বলা যায় যে মহাবিশ্বের সকল ঘটনা একটা হবার সম্ভাব্যতার মধ্যে থাকে এবং যেগুলো ঘটে সম্পূর্ণ আল্লাহ আজ্জা ওয়া জল্লার ইচ্ছেতেই ঘটে। একটা ইভেন্ট-এর সাথে আরেকটা ইভেন্ট-এর ডাইরেক্ত কজাল রিলেশনশিপ নাই, যা আছে তা হলো কোরিলেশনাল।

সহজ বাংলায় আল্লাহ তাআলা আমাদের যেভাবে দেখান আমরা সেভাবেই দেখি। সুতরাং, আল্লাহ তাআলা যদি এক মূহুর্তের জন্য নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সহ উপস্থিত সাহাবাদের চাঁদ দ্বিখন্ডিত করে দেখিয়ে থাকেন তা বর্তমান বিজ্ঞানের গবেষণালব্ধ জ্ঞান অনুসারেও কনক্লুসিভলি ভুল ভাবার কোন কারণ নাই।

মেমোরী, প্রোডিজি এবং ইচ্ছাশক্তি

মেমোরী তথা স্মরণশক্তি দু ধরনের। ডিক্ল্যারেটিভ ও ননডিক্ল্যারিটিভ। প্রথমটি হল সে ধরনের মেমোরী যা আমরা কথার মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারি। যেমন: কোন কিছুর নাম, সংখ্যা, কোন ঘটনার স্মৃতি ইত্যাদি।  দ্বিতীয়টি হল সে ধরনের যেগুলো কথার মাধ্যমে প্রকাশ করা যায় না। যেমন: যে কোন ধরনের কাজ- সাইকেল চালানো, ড্রাইভিং, কিবোর্ড টেপা ইত্যাদি। দ্বিতীয় ধরনের মেমোরী আমাদের ‘সাবকনসাস’-এ প্রোথিত হয়। এমনকি এই ধরনের মেমোরী স্মরণ করতে গিয়ে সেটা সম্পর্কে ‘কনসাস’ হতে গেলে কাজটির ব্যাঘাত ঘটে। যেমন: একজন টেনিস খেলোয়ার বলে ব্যাট লাগাতে গেলে তার মন ‘সাবকনসাসলি’ মাপাঝোকা করে দেয়, এ সময় প্রতিপক্ষের মারা বলের দিকে মোনযোগ দিতে গেলে শট মিস হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।।

ডিক্ল্যারেটিভ ও ননডিক্ল্যারেটিভ দুধরনের মেমোরীই বৃদ্ধি করা যায়, পুন:পুন: চর্চার মাধ্যমে। তবে মনে রাখার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল যা শিখছি তার প্রতি গভীর আগ্রহ।  

আলেকজান্ডার অ্যাটকিন তেরো বছর বয়সে মনে মনে অঙ্ক কষার বিষয়টিতে গভীর আগ্রহ অনুভব করেন। তিনি ‘পাই’ এর মান দশমিকের পড়ে ১০০০ ঘর পর্যন্তু মুখস্ত করেছিলেন। পরবর্তীতে এই ব্যাক্তি এডিনবার্গ-এ ম্যাথমেটিক্সের প্রফেসর হয়েছিলেন। তবে বর্তমানে পাইয়ের মান দশমিকের পড়ে মনে রাখতে পারার ‘ওয়ার্ল্ড রেকর্ড’ টি গড়েছেন চিনের চাউ লু। এই ব্যাক্তি পাই এর- মান দশমিকের পর ৬৭৮৯০ ঘর পর্যন্ত বলতে পেড়েছেন, মুখস্ত! 

ওলফগ্যাঙ এমাদেওস মোজার্ট চার বছর বয়সে পিয়ানো শেখেন এবং আট বছর বয়সে তার প্রথম সিমফোনী রচনা করেন। তাকে অন্যতম প্রধান মিউজিক প্রোডিজি বিবেচনা করা হয়। লাডউইগ ভ্যান বেথোভেন তার শেষ জীবনে বধির হয়ে গিয়েছিলেন। এ সময় তিনি কিছু সোনাটা ও কোয়ার্ট্রেট রচনা করেন। সমসাময়িক মিউজিসিয়ানদের অবোধ্য হওয়ায় সমালোচিত হলেও পরবর্তীতে এই মিউজিকগুলোকেই তার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ রচনা হিসেবে বিবেচিত হয়।

পাবলো পিকাসোকে পূর্ণাঙ্গ আর্টিস্ট হিসেবে বিবেচনা করা হত যখন তার বয়স বারো। লিউনার্দো দ্যা ভিঞ্চি ছিলেন একজন পলিম্যাথ(অর্থাৎ বিভিন্ন বিষয়ের বিজ্ঞানী)।  বিশ বছর বয়সে তিনি আর্টিস্টদের গাইড, ‘গাইড অব সেন্টলুকের’ মাস্টার নির্বাচিত হয়েছিলেন।

দাবার ওয়ার্ল্ড রেটিং এ বর্তমানে এক নাম্বার খেলোয়ার ম্যাগনাস কার্লসেন। মাত্র বাইশ বছর বয়সে গত জানয়ারী মাসে সে চেজ লিজেন্ড গ্যারী ক্যাসপারভের FIDE Rating 2851 কে অতিক্রম করে এবং এখন পর্যন্ত তার সর্বোচ্চ রেটিং 2872। তেরো বছর বয়সে এই ‘মোজার্ট অব চেজ’ একটি খেলায় ক্যাসপারভকে হারাতেও বসেছিল।

শ্রিনিভাস রামানুজনের বয়স যখন তেরো তিনি নাম্বার থিওরী এবং বার্ণোলী নাম্বার এ নিজস্ব থিওরী দাড়া করান। ক্লডে শ্যানন যখন দেখান যে বুলিয়ান লজিক যে কোন লজিকাল, নিউমেরিকাল রিলেশনশিপ-এ ব্যবহার করা যায় তখন তার বয়স ছিল একুশ। জেমস ওয়াটসন ডিএনএ’র গঠন আবিস্কার করছিলেন তেইশ বছর বয়সে। এনরিকো ফার্মি একটি ভাইব্রেটিং রডের পার্সিয়াল ডিফারেনশিয়াল ইকুয়েশন সমাধান করতে ফরিয়ার এনালাইসিস ব্যবহার করেন সতের বছর বয়সে। মার্ক জুকারবার্গ স্কুল লাইফে গেমস প্রোগ্রাম করে দিতেন আর তার বন্ধুরা সেই গেমস খেলত। 

কম বয়সে স্কিল্ড এডাল্টদের মত দক্ষতা প্রদর্শন করলে তাদের প্রোডিজি বলা হয়। উপরে যাদের উদাহরণ দেয়া হল তাদের কেউ চাইল্ড প্রোডিজি, কেউ এডাল্ট। তবে সবার ক্ষেত্রে একটা সাধারণ ব্যাপার হল আগ্রহ, প্রচেষ্টা এবং সবার উপরে অবশ্যই আল্লাহ তাআলার ইচ্ছা।

আগ্রহ ও প্রচেষ্টার বাইরেও আল্লাহর রহমত থাকা জরুরী। আর এ কারনেই একটি বিস্ময়কর উদাহরণ হল মুসলিম বিশ্বের হাজার হাজার হাফেজী মাদ্রাসার হাজার হাজার বালক বালিকা। ৪ থেকে ১২ বছর বয়সী কোরআনের অসংখ্য হাফেজ আছে সাড়া পৃথিবীতে। কোন প্রকার অর্থ না বুঝে পুরো কোরআন মুখস্ত করতে পারাটা আল্লাহর অশেষ রহমতের একটি উদাহরণ মাত্র। কোরআনের বিস্ময়কর ভাষাশৈলী, ছন্দবদ্ধতা ও সাহিত্যপ্রকরণ হল একে মনে প্রোথিত করতে পারার মূল কারণ।  

অন্যদিকে, বেনজামিন লিবেট তার কনসাসনেস সম্পর্কিত এক্সপেরিমেন্টে দেখিয়েছেন যে মানুষ যখন কোন কিছু অনুভব করে সেটা কনসাসলি অনুভব করার ০.৫ সেকেন্ড আগেই তার অনুভব সম্পর্কিত নির্দিষ্ট ব্রেইন এরিয়াতে ইলেকট্রিক্যাল স্টিমুলেশন পৌছে যায়। আবার যখন সে কোন কিছু করতে ইচ্ছে করে যেমন: হাত আগানো, তখন তার ব্রেইনের ‘মোটর’ এরিয়াতে হাত আগানোর কনসাস ফিলিং (অনুভব) হওয়ার ০.৫ সেকেণ্ড আগেই ইলেকট্রিক্যাল এক্টিভিটি শুরু হয়ে যায়। তবে মানুষ সর্বচ্চো সেই এক্টিভিটিকে একটি ভেটো দিয়ে থামিয়ে দিতে পারে। এটাকি তাহলে এক্সপ্লেইন করে, মানুষের প্রচেষ্টায় আল্লাহর সাহায্য কিভাবে আসে এবং কেন মানুষের স্বাধীন ইচ্ছা শক্তি নির্দিষ্ট মাত্রায় আবদ্ধ?  

Bibliography:

1. Neuroscience; D. Purves et el.

2. Mind Time: Temporal factors in consciousness; Benjamin Libet     

3. The 100: A Ranking Of The Most Influential Persons In History; Michael H. Hart

4. en.wikipedia.org/wiki/List_of_child_prodigies

5. cracked.com/article_16266_8-child-prodigies-so-amazing-theyll-ruin-your-day_p2.html

6. pi-world-ranking-list.com/lists/details/luchao.html

7. en.wikipedia.org/wiki/Ludwig_van_Beethoven

8. en.wikipedia.org/wiki/Mark_Zuckerberg

9. en.wikipedia.org/wiki/Wolfgang_Amadeus_Mozart

10. en.wikipedia.org/wiki/Da_vinci

11. en.wikipedia.org/wiki/Magnus_Carlsen

12. en.wikipedia.org/wiki/James_Watson

13. en.wikipedia.org/wiki/Claude_Shannon

মানুষের আদি পিতা-মাতা ও বিজ্ঞান সাংবাদিকতা

সাংবাদিকরা যখন বিজ্ঞান নিয়ে কথা বলেন তখন যে বিজ্ঞানের ‘ছেড়ে দে মা কেন্দে বাঁচি’ অবস্থা হয় তার সবচেয়ে উদাহরণ হল বাংলাদেশের চিকিৎসা বা চিকিৎসকদের নিয়ে করা প্রতিবেদন। ধরে নিলাম অধিকাংশ বাংলাদেশী সাংবাদিকদের নিয়ে এত বড় আশা কঠিন যে তারা কোন বিষয় সম্পর্কে বিস্তর জেনে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ দিবে। কিন্তু পাশ্চাত্যের সংবাদমাধ্যমগুলোর কি অবস্থা? বিজ্ঞানের কোন বিষয়ে তাদের কোন প্রতিবেদনে কি বিশ্বাস করা যায়?

ব্যক্তিগতভাবে আমার এই ধরনের সকল ‘পপুলার সায়েন্স নিউজ’-এ এক সময় ভালই আস্থা ছিল। কিন্তু, এখন আর তা করতে পারি না। কারণ, বিবর্তনবাদ, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রভৃতি নিয়ে সায়েন্স নিউজ রাইটারদের চটকদার নিউজ পড়ার পর যতবারই একটু গভীরে ঘেটে দেখেছি ততই তাদের তথা সায়েন্স (নিউজ) রাইটারদের প্রতি আমার বিশ্বাস হালকা হয়ে গেছে। সায়েন্স রাইটাররা দুই ধরনের হয়- হয় তারা ভাল জানে এবং জেনে ইচ্ছেকৃত স্পেসিফিক এজেন্ডা (সায়েন্টিজম-এর প্রসার) এর জন্য লিখে, অথবা, তারা জিনিসটা সম্পর্কে না জেনে বা না বুঝে লিখে। সব সায়েন্স নিউজ পোর্টাল এরকম হয় তাও বলছি না। তবু, সায়েন্স নিয়ে কোন ‘নিউজ’ দেখলে চেষ্টা করি মূল রিসার্চটা কি বলেছে একটু ঘেটে দেখার। বিশেষ করে, যদি সময় পাই, যে বিষয়টির টেকনিকাল দিকগুলো সম্পর্কে পড়েছি, অন্তত সে বিষয়গুলো একটু দেখে নেই।   


যাই হোক, ফেসবুকে ডেইলী মেইলের একটি নিউজ সবাই শেয়ার করছে যাতে বলা হচ্ছে যে, মার্ক স্টিকল ও ডেভিস থেলার নামক দু জন বিজ্ঞানী তাদের ২০১৮ সালের একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখিয়েছেন সমস্ত মানুষ এক জোড়া মানুষ থেকে এসেছে এবং এক লক্ষ বছর আগে একটি সর্বব্যপী দূর্ঘটনায় পৃথিবীর সব স্পিসিস প্রায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।(1)

এই নিউজ যারা পড়েছেন এবং শেয়ার করেছেন তাদের মধ্যে দু’ধরনের রিসপন্স দেখলাম-
১. যারা ডারউইনবাদকে বিতর্কিত তত্ত্ব বলে মনে করেন তারা এই গবেষণাটিকে বিবর্তনের বিপরীতে এভিডেন্স হিসেবে দেখছেন এবং তারা ইমপ্লিসিট ভাবে মনে করছেন যে এই আবিস্কার মেজর রিলিজিওন বর্ণিত ‘আদম-হাওয়া’ থেকে মানুষের আবির্ভাবকে এনডর্স করে।
২. যারা ডারউইনবাদকে প্রশ্নাতীতভাবে সত্য মনে করেন, তারা হয় চুপ আছেন বা এই রিসার্চ বিবর্তনতত্ত্বকে এনডর্স করে বলে মনে করছেন।

আগে থেকে এই ধরনের রিসপন্স সম্পর্কে পরিচিতি থাকায় আমি ভাবলাম মূল রিসার্চটা একটু পড়ে দেখা দরকার। যেই ভাবা সেই কাজ। আর্টিকেলটা পড়লাম। মলিকিউলার ইভল্যুশন সম্পর্কে আইডিয়া না থাকলে আর্টিকেল থেকে মূল বক্তব্য বের করাটা একটু কঠিন। তবে আমি যতটুকু বুঝেছি সেখান থেকে পাঠকদের জন্য আমার দুই পয়সা-
  
মূল রিসার্চটার টাইটেল হল “Why should mitochondria define species?” এটি প্রকাশিত হয়েছে হিউম্যান ইভল্যুশন জার্নালে ২০১৮ সালের মে মাসে(2)। নিচে আর্টিকেলে মূল বিষয়গুলো নিজের ভাষায় বলার চেষ্টা করছি।

১. আমরা জানি, প্রতিটি বহুকোষী জীব-এ মাইটোকন্ড্রিয়া নামক অঙ্গানু থাকে যা এটিপি হিসেবে শক্তি সঞ্চিত রাখে।

২. কোষে নিউক্লিয়ার ডিএনএ ছাড়াও মাইটোকন্ড্রিয়ার নিজস্ব ডিএনএ আছে।

৩. নিউক্লিয়ার ডিএনএ-তে মিউটেশনের ফলে জীবের ফিনোটাইপে (অর্থাৎ বাহ্যিক আকার আকৃতি ও বৈশিষ্ট্য) পরিবর্তন হয়।

৪. কিছু কিছু মিউটেশন আছে যাকে বলে ‘নিউট্রাল মিউটেশন’। কারণ, এই ধরনের মিউটেশনের ফলে প্রোটিনের অ্যামাইনো এসিড সিকোয়েন্সে কোন পরিবর্তন হয় না।

৫. কিন্তু, নিউক্লিয়ার ডিএনএ-তে এই ধরনের মিউটেশনের ফলেও ফেনোটাইপে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন  লক্ষ্য করা যায়।   

৬. প্রায় সব মিউটেশনই প্রোটিনের মূল ফাংশনের ব্যঘাত ঘটায়- হয় তার কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয় বা বিকল করে ফেলে। ফেনোটাইপে এ ধরনের পরিবর্তন হলে, উক্ত প্রানীটি রিপ্রোডাক্টিভ ক্ষমতা কমে যায়। কারণ, তার এক বা একাধিক ফাংশনে ত্রুটি থাকায় সে বেঁচে থাকার লড়াই-এ হেরে যায়। এ কারণে এই ধরনের মিউটেশনগুলো পরবর্তি জেনারেশনের প্রবাহিত হতে পারে না। অর্থাৎ, নিউক্লিওটাইড চেঞ্জযুক্ত প্রাণীগুলো অন্য প্রাণীর সাথে প্রতিযোগিতায় পরাজিত হয়। (এভাবে, মিউটেশনযুক্ত প্রাণীর মারা যাওয়া ও অরিজিনাল ফাংশনাল  সিকোয়েন্সযুক্ত প্রাণীর বেঁচে থাকার প্রক্রিয়াকে বলে পিউরিফাইং সিলেকশন।)

৭. এর ফলে ‘মা’ প্রানী ও ‘সন্তান’ প্রাণীর নিউক্লিয়ার ডিএনএ-তে খুব বেশী পরিবর্তন পাওয়া যায় না।

৮. কিন্তু, মাইটোকন্ড্রিয়ার ডিএনএ-এর ক্ষেত্রে ‘নিউট্রাল মিউটেশন’ কোন গুরুত্বপূর্ণ ফাংশনাল পরিবর্তন (ফেনোটাইপিক পরিবর্তন) আনে না। অর্থাৎ, মাইটোকন্ড্রিয়ার ডিএনএতে এই নিউট্রাল মিউটেশনগুলো থেকে যায়। অর্থাৎ ‘মা’ থেকে ‘সন্তানে’ জননকোষ বিভাজনের সময় সংঘটিত মাইটোকন্ড্রিয়াল মিউটেশনগুলো থেকে যায়।

৯. মাইটোকন্ড্রিয়ার ডিএনএতে এই নিউট্রাল মিউটেশনগুলো থেকে যাওয়া উপকারিতা কি?

১০. উপকারিতা হল- এর ফলে ‘মা’ এর তুলনায় ‘সন্তানদের’ মাইটোকন্ড্রিয়াতে যথেষ্ট জেনেটিক ডাইভারসিটি তৈরী হয়।

১১.  এখন, আপনি যদি ধরে নেন যে মাইটোকন্ড্রিয়ার ডিএনএ-তে প্রতিবার রিপ্রোডাকশনের সময় সংঘটিত পরিবর্তনগুলো একটি স্থির হারে হয় এবং আপনার যদি কোন স্পিসিস-এর প্রতি রিপ্রোডাকশনে মিউটেশনের হার জানা থাকে, তাহলে আপনি কোন প্রজাতির আভ্যন্তরিন জেনেটিক ডাইভারসিটি থেকে উক্ত প্রজাতি ও তার কমন এনসেস্টর-এর মর্ধবর্তী সময় বের করতে পারবেন(3)। (এই সময়কে বলা হয় কোলেসেন্স টাইম)

১২. বিজ্ঞানী স্টিকেল ও থেলার কোষের মাইটোকন্ড্রিয়ার এই বৈশিষ্ট্যটি ব্যবহার করে মানুষের কমন এনসেস্টর কত পূর্বে ছিলো এবং একই সাথে অন্যান্য প্রাণীদের কমন এনসেস্টর কতপূর্বে ছিলো তার একটি এস্টিমেট বের করেন।

১৩. তারা মাইটোকন্ড্রিয়ার COI barcode ডাটাবেজ BOLD-এর ডাটা ব্যবহার করেন। লক্ষ্যনীয় যে, GenBank এবং BOLD ডাটাবেজ মিলে প্রায় ৫০ লক্ষ প্রানীর COI barcode ডাটা সংরক্ষিত আছে।

১৩. তাদের হিসেব অনুযায়ী মানুষের কমন এনসেস্টর ছিলো প্রায় ১ লক্ষ বছর আগে। অর্থাৎ, প্রায় ১ লক্ষ বছর আগে একজন পুরুষ ও নারী থেকে বর্তমান মানব জাতি এসেছে। 

১৪. মজার বিষয় হলো, একই সাথে তারা অন্যান্য প্রাণীর বারকোড থেকে হিসেব করেন যে প্রাণী জগতের বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৯০%-এর কমন এনসেস্টর-এর বয়সও প্রায় ১ লক্ষ থেকে ২ লক্ষ বছর। অর্থাৎ, মানুষের মত অন্যান্য প্রাণীও ১ থেকে ২ লক্ষ বছর পূর্বের এক জোড়া কমন এনসেস্টর থেকে এসেছে।

১৫. এর অর্থ কি? সহজ বাংলায়, স্টিকেল ও থেলারের গবেষণা অনুযায়ী বর্তমানে প্রাণীজগতের প্রায় ৯০% প্রায় ১ লক্ষ থেকে ২ লক্ষ বছর আগের সংশ্লিষ্ট প্রজাতির এক জোড়া থেকে এসেছে। উদাহরণস্বরুপ, মানুষের ক্ষেত্রে এক জোড়া নারী-পুরুষ, বাঘের ক্ষেত্রে একজোড়া বাঘ ও বাঘিনী, ইত্যাদি। যারা প্রায় ১ লক্ষ থেকে ২ লক্ষ বছর আগে প্রায় কাছাকাছি সময় জীবিত ছিলো ।

১৬.  মানুষের ক্ষেত্রে এ ধরনের হিসেব (Estimate) আগেও করা হয়েছে।

১৭. লক্ষ্যনীয়, মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ শুধুমাত্র নারীদের জনন কোষ থেকে সন্তানের জাইগোটে প্রবাহিত হয়। ফলে, কেউ মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ থেকে মানুষের এনসেস্ট্রি অ্যানালাইজ করলে মানুষের সর্বশেষ কমন ‘মা’-কে ট্রেস করতে পারবে। ঠিক একই ভাবে শুধুমাত্র ‘Y’ ক্রোমোজোম নিয়ে এনসেস্টি অ্যানালাইজ করলে মানুষের সর্বশেষ কমন ‘বাবা’ কে ট্রেস করা যাবে।

১৮. মাইটোকন্ড্রিয়ার ভিত্তিতে প্রথম কমন ‘মাইটোকনড্রিয়াল ইভ’ এর বয়স বের করেন বিজ্ঞানী কেন, স্টোনকিং এবং উইলসন। তাদের হিসেবে অনুযায়ী মানুষের কমন ‘মাইটোকনড্রিয়াল ইভ’-এর বয়ষ প্রায় ২ লক্ষ বছর। অর্থাৎ ২ লক্ষ বছর আগে আমাদের কমন ‘মা’ পৃথিবীতে বিচরণ করেছিলেন। (4)


১৯.  ‘Y’ ক্রোমোজোম-এর ভিত্তিতে মানুষের কমন বাবা তথা ‘Y ক্রোমোজোমাল অ্যাডাম’-এর বয়স হিসেব ২০০০ সালের দিকে হিসেব করা হয়েছিলো প্রায় ৫০০০০ বছর(5)। যা ‘মাইটোকনড্রিয়াল ইভ’ থেকে প্রায় দেড় লক্ষ বছর ছোট।

২০. কিন্তু, পরবর্তীতে আরও রাইগোরাসটিল গবেষণা করে ‘মাইটোকনড্রিয়াল ইভ’ এবং ‘Y ক্রোমোজোমাল অ্যাডাম’-এর বয়স হিসেব করা হয় যথাক্রমে ৯৯ থেকে ১লক্ষ ৪৮ হাজার বছর এবং ১লক্ষ ২০ হাজার থেকে ১লক্ষ ৫৬ হাজার বছর(6)।

২১. বৈজ্ঞানিক গবেষণা অনুযয়ী, ‘মাইটোকনড্রিয়াল ইভ’ এবং ‘Y ক্রোমোজোমাল অ্যাডাম’ প্রায় কাছাকাছি সময় বাস করেছিলেন।


২২. তবে আমাদের মনে রাখা দরকার, এগুলো আসলে কিছু Provisional Estimate. কোন কনফার্মড হিসেবে নয়(7)।

২৩. যাই হোক, এখন আমরা যদি ১৫ নম্বর পয়েন্ট আবার পড়ি- স্টিকেল ও থেলারের গবেষণা অনুযায়ী বর্তমানে প্রাণীজগতের প্রায় ৯০% প্রায় ১ লক্ষ থেকে ২ লক্ষ বছর আগের সংশ্লিষ্ট প্রজাতির এক জোড়া থেকে এসেছে। উদাহরণস্বরুপ, মানুষের ক্ষেত্রে এক জোড়া নারী-পুরুষ, বাঘের ক্ষেত্রে একজোড়া বাঘ ও বাঘিনী, ইত্যাদি। যারা প্রায় ১ লক্ষ থেকে ২ লক্ষ বছর আগে প্রায় কাছাকাছি সময় জীবিত ছিলো।

২৪. এই রিসার্চ থেকে দুটি সিদ্ধান্তে আসা যেতে পারে।

২৫. এক, ১ থেকে ২ লক্ষ বছর আগে কোন এক বড় ধরনের  ক্যাটাস্ট্রফিক ইভেন্ট-এর কারণে তখনকার প্রায় অনেক প্রজাতির ‘ভিন্ন নিউক্লাওটাইড সিকোয়েন্স’ যুক্ত ভাই-বোনেরা মারা যায়। ফলে, যে একজোড়া পুরুষ-নারী থেকে পরবর্তী জেনারেশন-এর ডাইভারসিফিকেশন হয়। (একে বলা হয় পপুশেন বোটল নেক)


২৬. দুই,  ১ থেকে ২ লক্ষ বছর আগে পৃথকভাবে একজোড়া করে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী পৃথিবীতে পাঠানো হয় এবং তা থেকে পরবর্তী জেনারেশন-এর ডাইভারসিফিকেশন হয়।

২৭. মজার বিষয়, ‘ম্যাটেরিয়ালিস্ট’-দের জন্য ২৫ ও ২৬ দুইটাই প্রবলেমেটিক। কারণ, ২৫ ঠিক হলে নূহ (আ)-এর প্লাবণ-এর মত একটি ক্যাটাস্ট্রফের ইঙ্গিত পাওয়া, যার সম্পর্কে প্রায় সকল ধর্মগ্রন্থে বিভিন্নভাবে বর্ণনা এসেছে। আর, ২৬-কে তারা outright রিজেক্ট করে।

২৮. এজন্য আলোচ্য রিসার্চের দুইজন অথারকে বলতে শুনা যায়-

“This conclusion is very surprising,” co-author David Thaler of the University of Basel is quoted as saying, “and I fought against it as hard as I could.” His co-author is fellow geneticist Mark Stoeckle of Rockefeller University in New York (3)

২৯. মজার বিষয় হলো এরা আগে ২০০৪ সালের একটি পেপারে একই অথাররা পাখির দুটো লিনিয়েজ পরীক্ষা করে বলেছিলেন-
“The ad hoc modifications to neutral theory commonly proposed to account for low variation in individual cases, namely, recurrent bottlenecks or selective sweeps, struggle as general mechanisms. If bottlenecks limit variation, then a universal low ceiling implies recent population crashes for all species. This appears unlikely– almost a Noah’s Ark hypothesis–although perhaps long-term climate cycles might cause widespread periodic bottlenecks.” (8)

৩০. সবার শেষে Evolution News-এর এন্ড্রু জোনস-এর একটি কথা কোট করে শেষ করছি –

“In any case, one thing is clear: reconstructing the past is a complicated business and it is still full of surprises. There may be even bigger surprises in store.”

রেফারেন্স:

1.      McManus L. Every person was spawned from single pair of adults living up to 200,000 years ago, scientists claim | Daily Mail Online [Internet]. Daily Mail. 2018 [cited 2018 Nov 26]. Available from: https://www.dailymail.co.uk/news/article-6424407/Every-person-spawned-single-pair-adults-living-200-000-years-ago-scientists-claim.html?fbclid=IwAR25ZFBERNCQqdzNrdMfrQkVIFS8CSbBvJlRXTv8seHsngm-W8DR39Ke_HA

2.      Stoeckle MY, Thaler DS. Why should mitochondria define species? Hum Evol. 2018;33:1–30.

3.      Jones A. New Paper in Evolution Journal: Humans and Animals Are (Mostly) the Same Age? Evolution News. 2018.

4.      Cann RL, Stoneking M, Wilson AC. Mitochondrial DNA and human evolution. Nature [Internet]. 325(6099):31–6. Available from: http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/3025745

5.      Thomson R, Pritchard JK, Shen P, Oefner PJ, Feldman MW. Recent common ancestry of human Y chromosomes: Evidence from DNA sequence data. Proc Natl Acad Sci U S A [Internet]. 2000;97(13):7360–5. Available from: http://www.pnas.org/content/97/13/7360.abstract%5Cnhttp://www.pnas.org/content/97/13/7360.full.pdf

6.      Poznik GD, Henn BM, Yee MC, Sliwerska E, Euskirchen GM, Lin AA, et al. Sequencing Y chromosomes resolves discrepancy in time to common ancestor of males versus females. Science (80- ). 2013;341(6145):562–5.

7.      Klinghoffer D. About “Y Chromosome Adam” and & “Mitochondrial Eve” [Internet]. Evolution News. 2013 [cited 2018 Nov 26]. Available from: https://evolutionnews.org/2013/08/about_y_chromos/

8.      Stoeckle MY, Thaler DS. DNA barcoding works in practice but not in (neutral) theory. PLoS One. 2014;9(7):3–9.