আমার লেখার “স্বয়ংক্রিয় ও প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় বিবর্তনের বিষয়টি তখনই পুরোপুরি মানা যেতে পারে যখন আপনি মলিকিউলার লেভেলে ‘বড় আকারের’ জেনেটিক ইনফরমেশন যোগ হওয়ার প্রসেস দেখাতে পারবেন” কথাটির প্রেক্ষিতে একজন নিচের লিংকটি দিয়েছেন যার শিরোনাম: “Gene Genesis: Scientists Observe New Genes Evolving from Mutated Copies”
এবং বলেছেন যে, র্যানডম মিউটেশনের মাধ্যমে নাকি অহরহ নতুন জিন তৈরী হচ্ছে। তার দাবী কেন সঠিক নয় তার উত্তরটি আমি কমেন্টে দিলেও সবার জানার জন্য এখানে সংযোজন করা প্রয়োজন মনে করছি-
এই লিংকে জিন ডুপ্লিকেশন নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। জিন ডুপ্লিকেশনের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত সর্বচ্চো যেটা করা গিয়েছে তা হলো নিম্নরুপ- ধরুন, একটি ব্যাকটেরিয়াতে অলরেডি এক্সিসটিং এনজাইম, যার ডুয়েল ফাংশন আছে, এর মধ্যে একটি ফাংশন ‘ক’ শক্তিশালী এবং একটি ফাংশন ‘খ’ দুর্বল। উক্ত ব্যাকটেরিয়াতে ‘খ’ ফাংশন সম্পাদনকারী শক্তিশালী এনজাইমটি না থাকলে যেটা হবে (প্রয়োজনীয় প্রতিকূল পরিবেশে যেখানে উক্ত ‘খ’ এনজাইমটির ফাংশন খুবই জরুরী) প্রথম এনজাইমটির জিন ডুপ্লিকেটেড হবে এবং ডুপ্লিকেটেড কপিতে মিউটেশনের মাধ্যমে ‘খ’ ফাংশনটি এক পর্যায়ে শক্তিশালী হয়ে যাবে।
এখানে কয়েকটি বিষয় লক্ষণীয়-
এক, আগে মনে করা হতো এই প্রক্রিয়াটি পুরোপুির র্যানডম। কিন্তু, জেমন শ্যাপিরো দেখাচ্ছেন যে, ব্যাকটেরিয়ার ভিতর কঠিন পরিবেশে এডাপ্ট করার জন্য কতগুলো প্রক্রিয়া ইনবিল্ট আছে। ফলে ব্যাকটেরিয়া নতুন কোন পরিবেশে এলে তার ‘নির্দিষ্ট’ কিছু জেনেটিক রিজিওনে ‘র্যানডম মিউটেশন জেনারেটিং’ প্রক্রিয়া এক্টিভেট করে। যেন অভিনব পরিবেশে সে খাপ খাওয়াতে পারে। অর্থাৎ, আদতে এই প্রক্রিয়াটি র্যানডম না। বিষয়টার সাথে ভার্টিব্রেট জীবের ইমিউন সিস্টেমের পদ্ধতিগত মিল আছে।
দুই, জিন ডুপ্লিকেশনের মাধ্যমে যদি এমন কোন এডাপটেশনের প্রয়োজন হয় যেখানে দুই বা ততোধিক অ্যামাইনো এসিড দরকার হবে এবং ফলে একাধিক পয়েন্ট মিউটেশনের দরকার হবে, সেক্ষেত্রে উক্ত এডাপটেশনটি জিনোমে ফিক্স হতে যে পরিমাণ অর্গানিজম দরকার তার সংখ্যা অনেক বেশী ১০^৯। কার্যত, ব্যাকটেরিয়া জাতীয় এককোষী প্রাণী ছাড়া এ ধরনের মিউটেশন সম্ভব নয়। (১)
তৃতীয়ত, ক্লোরোকুইন রেজিসেন্ট-এর প্রাকটিকেল উদাহরণ হতে দেখা যায় যে যেখানে দুটো প্রোটিন প্রোটিন ইন্টারেকশন সাইটে সাইমুলটেনিয়াস মিউটেশন লাগে সেখানে মিনিমাম অর্গানিজম দরকার ১০^২০। (২)
চতুর্থত, একটি এনজাইমকে ভিন্ন ফাংশনের একটি এনজাইমে পরিণত করতে দরকার ৭ বা ততোধিক সাইমুলটেনিয়াস মিউটেশন। (৩)
অর্থাৎ, আপনার আর্টিকেল থেকে র্যানডম প্রক্রিয়ায় নতুন তথ্য যোগ অহরহ হয় বলে যে দাবী করলেন এটা এক্সাজারেশন। বরং, র্যানডম প্রক্রিয়ায় নতুন তথ্য যোগ হওয়া সম্ভব হলেও তার জন্য প্রয়োজনীয় অর্গানিজম আপনি পৃথিবীর ইতিহাসে খুজে পাবেন না। বস্তুত, চারটি সাইমুলটেনিয়াস মিউটেশনের জন্য দরকার ১০^৪০ টি ব্যাকটেরিয়া (অর্গানিজম)। যা পৃথিবীর ইতিহাসে যতগুলো ব্যাকটেরিয়া তৈরী হয়েছে তার সমান। (২)
We have an in-built propensity to search for an explanation of the phenomenon that we experience around us. So, we shall naturally look for a rational explanation of the events occurring in our surrounding. In that pursuit we shall discover that the universe and the beings within are governed by certain physical and chemical laws. Also, there are certain aspect which needs further non-physical and mental explanation, e.g., intellectual activity, mathematics and information.
With the latest development in sciences the search for explanation of events will lead to –
Origin of the universe
Origin of biological being
Origin of consciousness
One important point to note about the above phenomena is that although these are studied as isolated events, these are interlinked to each other. Now we shall discuss in short the above points.
Origin of universe
The universe is finely tuned. There are a lot of sets of parameters which were needed to be finely tuned to make this universe possible. There are broadly two alternative explanations for the origin of the universe:
Universe originating on its own from nothing (Multiverse)
Universe originated by a Supreme Non-material Existence, that is God.
Both of these explanations posit a cause which is unobservable by naturally available means. But supporters of these alternative theories have inclinations to certain philosophies. The multiverse proponents stick to materialist position and the latter proponents are Theists.
দুদিন আগে সার্বজনিন সম্ভাব্যতার সীমা নিয়ে লিখেছিলাম। বিজ্ঞানী David Abel-এর ভাষায় কোয়ন্টাম ওয়ার্ল্ডের কোন ইভেন্ট-এর ইউনিভার্সাল প্লসিবিলিটি ম্যাট্রিক্স (১) হল ১০^১৪০। অর্থাৎ, কোন ঘটনা ঘটার সম্ভাব্যতা যদি ১০^১৪০-এর মধ্যে একবার হয় এবং উক্ত ঘটনা ঘটার জন্য মহাবিশ্বের সকল পার্টিকেল ও সকল সময় ব্যবহার করার সুযোগ দেয়া হয়, তাহলে ঘটনাটি একবার হলেও ঘটবে। কিন্তু, কোন ঘটনা এই সীমাকে ছাড়িয়ে গেলে উক্ত ঘটনা ঘটবার সম্ভাব্যতা কার্যত শূন্য।
আমরা জানি, একটি স্বত:বিভাজনশীল কোষের ভেতর ডিএনএ, আরএনএ ও প্রোটিন কমপ্লেক্স থাকতে হবে। চিন্তার সুবিধার্তে ধরে নেই যে পৃথিবীর আদিম পরিবেশে প্রোটিন বা ডিএনএ বা আরএনএ-আগে এসেছে । এরপর ধাপে ধাপে কোষ তৈরী হয়েছে (যা আসলে সম্ভব কিনা আলোচনা সাপেক্ষ)।
এবার, উপরোক্ত সম্ভাবত্যার সীমার কথা মাথায় রেখে আসুন দেখি আদিম পরিবেশে প্রোটিন বা ডিএনএ বা আরএনএ তৈরী হওয়া সম্ভব কি না।
প্রোটিন (তথা এনজাইম) আগে আসবে?
ডিএনএ না থাকলে প্রোটিনের কোড থাকবে কোথায় বা প্রোটিন কাজ করবে কার উপর? এছাড়া, মাত্র ১৫০টি অ্যামাইনো এসিড দিয়ে নির্মিত একটি মাঝারি সাইজের সুনির্দিষ্ট প্রোটিন আসাও গাণিতিকভাবে অসম্ভব একটি ব্যাপার। ডগলাস এক্স-এর হিসেবে অনুযায়ী এর সম্ভাব্যতা ১০^১৬৪। [২] অর্থাৎ, যে কোন র্যাণ্ডম ঘটনা এই সীমাকে ছাড়িয়ে গেলে আমাদের মহাবিশ্বে তা ঘটার সম্ভাবনা নেই। একটি মাঝারি সাইজের প্রোটিনের এই অবস্থা। অথচ, আরএনএ পলিমারেজ এনজাইম ১০০০-এর বেশী অ্যামাইনো এসিড যুক্ত তিনটি প্রোটিনের সমন্বয়ে গঠিত হয়। উল্লেখ্য যে, আরএনএ-র কপি তৈরীর জন্য আরএনএ পলিমারেজ এনজাইম লাগবে এবং আরএনএ-র জন্য সুনির্দিষ্ট পরিমানে নিউক্লিউকিওটাইড-এর যোগান সুনির্দিষ্ট তরল মাধ্যমে থাকতে হবে।
ডিএনএ আগে আসবে?
ডিএনএ থেকে তথ্য পড়বে কে? যদি ডিএনএ অণু এমন কোন গঠন তৈরী করতে সক্ষম হত যা এনজাইমের মত কাজ করে তাহলেও চিন্তা করার সুযোগ থাকতো। কিন্তু, আমরা জানি, ডিএনএ বৈচিত্রপূর্ণ গঠন তৈরী করতে পারে না। অর্থাৎ ডিএনএ কোন ক্রিয়াশীল এনজাইম বা স্ট্রাকচারাল প্রোটিনের মত গাঠনিক বৈচিত্র তৈরী করতে অক্ষম। সুতরাং বাকী রইল আরএনএ। আরএনএ কি কেমিকেল এভল্যুশন তথা এবায়োজেনেসিসকে উদ্ধার করতে পারবে?
বিজ্ঞানীরা ল্যাবরেটরীতে এমন এক ধরণের আরএনএ সংশ্লেষ করতে পেরেছেন যা নিয়ন্ত্রিত ও সুনির্দিষ্ট পরিবেশে এনজাইম হিসেবে কাজ কোরে আরএনএ পলিমারাইজেশনেকে (অর্থাৎ আরএনএ থেকে আরএনএ তৈরী হওয়া-কে) প্রভাবিত করতে পারে। অর্থাৎ, একটি সম্পূরক আরএনএ টেমপ্লেট-এর বিপরীতে নিউক্লিওটাইড (A এর বিপরীতে U, U এর বিপরীতে A, G এর বিপরীতে C, এবং C এর বিপরীতে G) যোগ করার মাধ্যমে নিজের একটি কপি তৈরী করতে পারে। এই বিশেষ ধরণের আরএনএকে বলে রাইবোজাইম। এর মাধ্যমে তারা বলতে চাচ্ছেন যে, আদিম পরিবেশে এ ধরণের একটি রাইবোজাইম আসার মাধ্যমে সেল্ফ-রেপ্লিকেশনের সূচনা হয়েছে এবং পরবর্তীতে ‘কোন একটি উপায়ে’ কোষের অন্যান্য গঠনগুলোর (তথা ডিএনএ, ও বিভিন্ন প্রোটিন, ফসফোলিপিড, গ্লাইকোক্যালিক্স) আবির্ভাব হয়েছে! যে কোন ব্যক্তি একটু মাথা খাটালেই বুঝবে এ ধরণের চিন্তা কতখানি অ্যাবসার্ড!
কিন্তু কেন?
এক, পৃথিবীর আদিম পরিবেশ ল্যাবরেটরীর মত নিয়ন্ত্রিত ছিলো না।
দুই, ‘রাইবোজাইম নিজের একটি কপি তৈরী করতে পারে’ এই অবস্থা থেকে ‘আরএনএ প্রোটিনের তথ্য ধারণ করে এবং তা প্রোটিন সংশ্লেষ করে’ এই অবস্থায় যাওয়ার কোন পথ নেই। কারণ, উপরে আমরা ডিএনএ-র ক্ষেত্রে যে রকম বলেছি ঠিক তেমনি কোন্ কোডনটি কোন্ অ্যামাইনো এসিডের জন্য নির্ধারিত হবে সেটি নির্বাচন করা একটি বুদ্ধিমান ‘মাইণ্ড’-এর কাজ। তদুপরি, যদি অপটিমাম ইউনিভার্সাল কোডনের জন্য র্যাণ্ডম অনুসন্ধান করা সম্ভবও হতো, সেক্ষেত্রে প্রতি সেকেণ্ডে ১০^৫৫টি অনুসন্ধান চালাতে হতো। কিন্তু, বায়োফিজিসিস্ট হার্বাট ইওকি হিসেব করে দেখিয়েছেন র্যাণ্ডম অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় ১.৪০ x ১০^৭০টি সম্ভাব্য কোডনের মধ্যে উক্ত অপটিমাম কোডন সিস্টেমকে খুঁজে বের করতে হবে এবং হাতে সময় পাওয়া যাবে ৬.৩ x ১০^১৫ সেকেণ্ড। [৩] এছাড়াও, রাইবোজোমে যে প্রোটিন সিনথেসিস হয় তাতে অনেকগুলো সুনির্দিষ্ট প্রোটিন ও আর-আরএনএ-র নির্দিষ্ট অবস্থানগত ও তড়িৎ-রাসায়নিক ভূমিকা আছে। অথচ, আরএনএ প্রোটিনগুলোর মত বিভিন্ন ধরণের স্ট্রাকচার গঠন করতে পারে না। কারণ, আরএনএ-র নিওক্লিটাইডের ধরণ সংখ্যা সীমিত এবং তাদের কেমিক্যাল স্ট্রাকচারও অ্যামাইনো এসিডের ন্যায় বৈচিত্রপূর্ণ নয়।
তিন, রাইবোজাইম নিজের কপি করতে পারে তখনই যখন তার সম্পূরক একটি টেমপ্লেট থাকে। অর্থাৎ, আদিম পরিবেশে সেল্ফ রেপ্লিকেটিং রাইবোজাইম আসতে হলে রাইবোজাইম ও তার সম্পূরক টেমপ্লেট দুটো অণুরই একসাথে আসতে হবে। জনসন ও তার সহকর্মীরা দেখিয়েছেন যে, আংশিকভাবে নিজের কপি তৈরী করতে পারে এরকম একটি রাইবোজাইমের নিউক্লিওটাইডের সংখ্যা ১৮৯। সুতরাং, উক্ত স্পেসিফিক রাইবোজাইম এবং তৎসংশ্লিষ্ট সম্পূরক ও সুনির্দিষ্ট টেমপ্লেট-এর একসাথে আসার সম্ভাব্যতা ৪^১৮৯ x ৪^১৮৯ তথা ৪^(১৮৯+১৮৯=৩৭৮) তথা প্রায় ১০^২৭৭, যা বিশ্বজনীন সম্ভাব্যতার সীমা ১০^১৪০ কে ছাড়িয়ে যায় (অর্থাৎ, অসম্ভব)। অথচ, পুরোপুরি কপি করতে পারে এরকম একটি রাইবোজাইমে নিউক্লিওটাইড সংখ্যা লাগবে আরও বেশী। অন্যদিকে, অর্গেল ও জয়েস দেখিয়েছেন যে, এরকম দুটি আরএনএ খুজে পাওয়ার জন্য ১০^৪৮ টি অণু খুঁজতে হবে যা পৃথিবীর মোট ভরকে অতিক্রম করে যায়। [৪] অর্থাৎ, আমরা দেখতে পেলাম আরএনএ এবায়োজেনেসিসকে উদ্ধার করতে কোন অবস্থাতেই সক্ষম নয়।
শুধুমাত্র একটা প্রোটিন বা আরএনএ আসতে যদি এত হার্ডেল পার হতে হয়। আপনারা একবার অনুমান করে দেখুনতো অসংখ্য সুনির্দিষ্ট মাত্রা ও গঠনের ডিএনএ, আরএনএ, প্রোটিন, ফসফোলিপিড, কার্বহাইড্রেট, মিনারেল কম্পোজিশান সহ আন্ত:কোষ তরল সমেত কোষ দৈবাৎ আসা কি আদৌ সম্ভব?
রেফারেন্স:
১. Abel DL. The universal plausibility metric (UPM) & principle (UPP). Theor Biol Med Model. 2009;6(1):1–10.
২. Meyer SC. Signature in the Cell. HarperCollins Publisher Inc. 2009; Page: 172
৩. Rana F. The Cell’s Design. Baker Books. 2009; Page: 175
৪. Stephen C. Meyer. Signature in the Cell. HaperCollins Publisher Inc. 2009; Page: 250
একটা শহরের কথা। এই শহরে মানুষের কাছে অস্ত্র রাখার অনুমতি আছে। একদিন একটা লোক কিছু অস্ত্র নিয়ে বাইরে বেরিয়ে পড়ল। প্রথমে সে একটা গাড়ি ছিনতাই করলো এবং বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে একজন মানুষকে হত্যা করলো। তার বিরুদ্ধে এলাকার পুলিশ প্রথম স্তরের সতর্কতা জারি করলো। কিন্তু লোকটা সতর্কতা পরোয়া করে না। সে রাস্তায় বেরিয়ে প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে নিয়ে মানুষ মারতে শুরু করলো। তার বিরুদ্ধে সরাসরি তৃতীয় স্তরের সতর্কতা জারি করা হল। পুলিশ তাকে ধাওয়া করতে শুরু করলে সে গুলি করে পুলিশকে মেরে ফেললো। সাথে সাথে তার বিরুদ্ধে চার নম্বর স্তরের ইমারজেন্সি জারি হল এবং জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে দেশব্যাপী সতর্কতা জারি হল। তাকে ধরতে দেশের স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সকে দায়িত্ব দেয়া হল। এরপর উক্ত সন্ত্রাসী গ্রেনেড লাঞ্চার বের করে আক্রমণ শুরু করলে দেশের নিরাপত্তা সতর্কতা পাঁচ স্টার এ উন্নীত হল এবং তার বিরুদ্ধে আর্মি নামানো হল।
যারা ছোট বেলায় গ্র্যান্ড থেফট অটো (জিটিএ) খেলেছেন তাদের হয়তো ঘটনাটি পরিচিত মনে হতে পারে। জিটিএর ভার্চুয়াল জগতে এটা নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। কিন্তু, বিষয় সেটা না। বিষয়টি হল কোনও দেশে যখন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু হয় উক্ত দেশ কয়েক ধাপে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। প্রথমে লোকাল পুলিশ ঘটনা আমলে নেয়। তাতে কাজ না হলে স্পেশাল বাহিনী কাজে লেগে পরে। তাতেও কাজ না হলে আর্মিকেই নামিয়ে দেয়া হয়। অধিকন্তু, প্রতিটি বাহিনীর কিছু শাখা থাকে। কারও কাজ সরাসরি আক্রমণ, কারও কাজ তথ্য সংগ্রহ ও গোয়েন্দাগিরি এবং কারও কাজ গোপনে আক্রমণ।
তো আমাদের শরীরেও এরকম কয়েক ধরনের নিরাপত্তা বেষ্টনী আছে। শরীরে যখন কোনও জীবাণু প্রবেশ করে, প্রথম ধাপে এগিয়ে আসে প্রবেশপথের নিরাপত্তা প্রহরী জাতীয় কিছু কোষ। এদের মধ্যে আছে ম্যাক্রোফাজ, নিউট্রফিল ও ন্যাচারাল কিলার সেল। আবার, এই কোষগুলো যদি একা সামলাতে না পারে নেমে আসে ‘টি’ সেল নামক বিশেষ বাহিনী। ‘টি’ সেলের কয়েকটি শাখা আছে। কারও কাজ সরাসরি আক্রমণ, কারও কাজ শত্রুকে চিনতে সাহায্য করা ও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ম্যাসেজ পাঠানো এবং কারও কাজ হচ্ছে কোল্যাটারাল ড্যামেজ চেক দিয়ে রাখা।
সাহায্যকারী ‘টি’ সেল আবার হেডকোয়ার্টারে তথ্য প্রদানের মাধ্যমে বিশেষায়িত ‘বি’ সেল বাহিনীকে ডেকে পাঠাতে পারে। ‘বি’-সেল বাহিনীর কাজ হল শত্রুবাহিনীর দুর্বল জায়গা কে চিহ্নিত করে বিশেষ অস্ত্র তৈরি ও আক্রমণ। এছাড়াও বি-সেল বাহিনীর একদল কোষ উক্ত দুর্বল জায়গার তথ্য ধারণ করে রাখে যেন ভবিষ্যতে একই শত্রু আবার আক্রমণ করলে ক্ষতি হওয়ার আগেই মূলোৎপাটন করা যায়।
অপরাধী বিভিন্ন রকম হতে পারে। কারও শক্তি বেশী, কারও অর্থ বেশী, কারও আবার অস্ত্রের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ। কোন শত্রু শরীরে প্রবেশ করলে প্রথমে শরীরের বর্ডার-গার্ডরা তাকে ধরে এবং তার বিশেষ কোন চিহ্ন থাকলে খুঁজে বের করে । এরপর উক্ত চিহ্ন নিজস্ব কিছু চিহ্নের সাথে ট্যাগ করে উপরতলায় পৌঁছে দেয়। এরপর উপরতলার নিরাপত্তারক্ষীরা উক্ত চিহ্ন ও আভ্যন্তরীণ ট্যাগ দেখে শত্রুকে চিহ্নিত করে।
এই যে নিজস্ব ট্যাগ বা সাইনের কথা বললাম একে বলে MHC অণু। ‘টি’-সেল সাধারণত তার ঝিল্লীতে থাকা টি-সেল রিসেপ্টর (TCR) নামক এক রাডার দিয়ে MHC অণুকে চিনে নেয়। শরীরে যখন কোন জীবাণু ঢুকে, প্রথমে বর্ডার-গার্ড কোষেরা তাকে ধরে এবং তার যন্ত্রাংশ ভেঙ্গেচুরে তাকে চিহ্নিত করা যায় এরকম একটা অণু বের করে নিয়ে আসে এবং ঐ অণুটাকে MHC-নামক হাতের সাহায্যে টি-সেল-এর কাছে এগিয়ে দেয়। টি-সেলও হাত (TCR) বাড়িয়ে অণুটিকে চিনে নিয়ে বাহিনীর অন্যদের কাছে বিভিন্ন রকম সংকেত পাঠাতে থাকে যেন তারা একটিভ হয় এবং জীবাণুটিকে মারার ব্যবস্থা শুরু করে। কোষগুলো চোখ না থাকায় তাদের হাত দিয়ে স্পর্শ করে চিনে নিতে হয়। এ কারণে বর্ডারে কোষেরাও যেমন দুই হাত বাড়ায়, ঠিক তেমনি টি-সেলও দুই-হাত বাড়িয়ে দেয়। এক হাত দিয়ে স্পর্শ করে চিনে নেয় বর্ডারের হাতকে এবং আরেক হাতে চিনে নেয় শত্রুর পরিচায়ক অণুকে।
বুঝতেই পারছেন বিভিন্ন রকম শত্রুকে চিনতে বিভিন্ন রকম হাতের প্রয়োজন হয়। মানব শরীরের যে অসংখ্য ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, প্রোটোজোয়া, কৃমি প্রবেশ করে তাদেরকে শায়েস্তা করার জন্য সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিতে শরীরের নিরাপত্তা-কর্মীরা কাজ চালিয়ে যায়। প্রাথমিক নিরাপত্তা প্রহরী কোষ যখন বিভিন্ন ধরনের জীবাণুকে আভ্যন্তরীণ বাহিনীর কাছে উপস্থাপন করে তখন সাধারণত সংশ্লিষ্ট জীবাণুর বহিরাবরণের কিছু অণুকে পরিচায়ক হিসেবে নিয়ে আসে।
কিন্তু, শত্রু যদি দেশের ভিতর থেকে মাথা চারা দিয়ে উঠে তাকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়? বলছিলাম টিউমার বা ক্যান্সারের কথা। টিউমার বা ক্যান্সার হল শরীরের অবস্থিত কোষের অনিয়ন্ত্রিত বিভাজন। যখন কোথাও ক্যান্সার হয় ক্যান্সার কোষগুলো কিছু বিশেষ চিহ্ন প্রকাশ করে। আমাদের শরীরের প্রতিরক্ষা বাহিনী তখন চিহ্নগুলো চিনে নিয়ে আক্রমণ ঠেকানোর চেষ্টা করে। কিন্তু, প্রতিরক্ষা বাহিনীর লক্ষ্য রাখতে হয় যেন নিজের শরীরের নিরপরাধ কোষগুলো নিরাপদে থাকে। এই করতে গিয়ে একটা সমস্যা হয়ে যায়। টিউমার যেহেতু নিজের দেহের কোষ থেকেই হচ্ছে প্রতিরক্ষা বাহিনী অনেক সময় টিউমার কোষকে নিজের কোষ মনে করে এড়িয়ে যায়। ফলে টিউমার লুকিয়ে লুকিয়ে মহীরুহে পরিণত হয়।
সাধারণত টি-সেল বাহিনী নির্দিষ্ট চিহ্নের প্রেক্ষিতে নির্দিষ্ট টিউমারকে আক্রমণ করতে পারে। যেমন: স্তন ক্যান্সারের সময় নির্দিষ্ট কিছু চিহ্ন বা মার্কার ক্যান্সার কোষের বহিরাবরণে প্রকাশ পায়। স্তন ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধ করতে যে টি-সেল বাহিনী তৈরি হয় তা কেবল উক্ত ক্যান্সার কোষের বিপরীতেই কাজ করতে পারে। তবে সম্প্রতি একদল গবেষক ক্যান্সারের বিরুদ্ধে শরীরের নিরাপত্তা (ইমিউনিটি) নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আবিষ্কার করে ফেললেন ‘টি-সেল’-এর এমন কিছু হাত (TCR) যা সব ধরনের ক্যান্সার কোষকে চিনতে পারে। কিন্তু, কিভাবে? তারা আবিষ্কার করলেন যে প্রতিটি ক্যান্সার কোষ MR1 নামক MHC-জাতীয় এক প্রকার অণু তাদের বহিরাবরণে বাড়িয়ে দেয় যা MHC-এর মত ক্যান্সারের আভ্যন্তরীণ কোন অণুকে পরিচায়ক হিসেবে উপস্থাপন করে। এই MR1-সংশ্লিষ্ট অণুকে নতুন TCR নির্ণয় করতে পারে। আশার বিষয় হল এই কাজ করতে গিয়ে টি-সেলগুলো শরীরের সাধারণ কোষের কোন ক্ষতি সাধন করে না।
যদিও গবেষণাটি প্রাথমিক পর্যায়ে তথাপি আশার কথা হল এটি প্যান-ক্যান্সার চিকিৎসা আবিষ্কারের সম্ভাবনার খুলে দিয়েছে। প্যান-ক্যান্সার বলতে বুঝচ্ছি এমন একটি চিকিৎসা যা সব ধরনের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারবে, তা-ও আবার শরীরের অন্যান্য কোষের কোন প্রকার ক্ষতি না করেই। আমরা সবাই জানি, ক্যান্সারের চিকিৎসায় এখন যে কেমোথেরাপি ব্যবহার হয় তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনেক বেশী। সে হিসেবে এটি আমাদের জন্য বড়ই আশা জাগানিয়া সংবাদ।
কে জানে হয়ত খুব শীঘ্রই আমরা ‘ইনটেলিজেন্ট ডিজাইন’ ব্যবহার করে ক্যান্সারের যম আবিষ্কার করতে যাচ্ছি। ইন শা আল্লাহ।
বিবলিওগ্রাফি:
Crowther MD, Dolton G, Legut M, Caillaud ME, Lloyd A, Attaf M, et al. Genome-wide CRISPR-Cas9 screening reveals ubiquitous T cell cancer targeting via the monomorphic MHC class I-related protein MR1. Nat Immunol. 2020;
রিপন ও দীপন দুই ভাই। দু’জনই ঢাকা মেডিকেলে পড়ালেখা করেছে। দু’জনের চেহারা প্রায় একই রকম এবং তারা একই ধরনের পোশাক পড়ে। ফলে কেউ যদি ওদের কাউকে আলাদা ভাবে দেখে প্রথম দেখায় সে কি রিপন না দীপন পার্থক্য করা মুশকিল হয়ে যাবে। এ অবস্থায় ওদের চেনার একটি সহজ উপায় আছে, তা হল ওদের সাথে কথা বলা। হ্যাঁ, রিপন একটু দ্রুত কথা বলে এবং চঞ্চল। অন্যদিকে, দীপন ধীরে কথা বলে এবং শান্ত প্রকৃতির।
সমাজের প্রচলিত ধারণা হল- সদৃশ যমজ (Identical Twin) সন্তানেরা যেহেতু দেখতে একই রকম এবং তাদের জেনেটিক গঠনও প্রায় একই, সুতরাং তাদের আচার-আচরণও একই রকম হবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয় না। এর কারণ পরিবেশগত প্রভাবকগুলো আমাদের আচার আচরণের ধরণ নিয়ন্ত্রণ করে। অবিকল যমজ বাচ্চাদের অভিভাবকরা তাদেরকে ছোট বেলা থেকে একই ধাঁচে গড়ে তুললেও তারা যখন নিজেরা নিজেদের ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিতে শুরু করে তখন থেকে তাদের জীবনধারণের প্রকৃতিতে পরিবর্তন চলে আসে। [১]
তদুপরি, সব যমজ সন্তানেরা সদৃশ হয় না। বিজ্ঞানীরা যমজ হওয়ার প্রক্রিয়ার উপর ভিত্তি করে যমজ সন্তানদের শ্রেণীবদ্ধ করেন। দুটো সন্তান কি একটি জাইগোট থেকে হল নাকি দুটো জাইগোট থেকে হল তার উপর ভিত্তি করে যমজ সন্তানদেরকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়:
১. মনোজাইগোটিক টুইন
২. ডাইজাইগোটিক টুইন
নারী-পুরুষ মিলনের মধ্য দিয়ে নারীর জরায়ুতে যে শুক্রাণু স্খলিত হয় তার মধ্যে থেকে একটি শুক্রাণু একটি ডিম্বাণুর মিলনের ফলে তৈরি হয় জাইগোট। উক্ত জাইগোট প্রথম কয়েক দফা বিভাজিত হওয়ার পর যদি আলাদা হয়ে যায় এবং আলাদা ভাবে বাড়তে থাকে, তখন যে যমজ সন্তান হয় তারা হল মনোজাইগোটিক। মনোজাইগোটিক যমজরা যেহেতু একই জাইগোট থেকে হচ্ছে তাদের লিঙ্গ একই হয়, মুখাবয়ব প্রায় একই রকম হয়। তাদের ডিএনএ-তে প্রায় ৯৯ শতাংশ মিল থাকে, তবে হুবহু মিল থাকে না। [২] অন্যদিকে ডাইজাইগোটিক টুইন হয় যখন একটি শুক্রাণুর পরিবর্তে দুটো শুক্রাণু দুটো ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করে। এক্ষেত্রে দুটো জাইগোট তৈরি হয় এবং দুটো জাইগোট মায়ের গর্ভে পৃথকভাবে বড় হতে থাকে। ডাইজাইগোটিক যমজদের লিঙ্গ ভিন্ন হতে পারে, চেহারায় মিল না থাকার সম্ভাবনা বেশী। বছরে যতগুলো যমজ বাচ্চা জন্ম নেয় তার এক-তৃতীয়াংশ হয় মনোজাইগোটিক টু্ইন এবং বাকী দুই-তৃতীয়াংশ হয় ডাইজাইগোটিক টুইন।
মনোজাইগোটিক যমজ সন্তানদের জন্মগত ভাবে মিল থাকলেও যতই দিন যেতে থাকে তাদের আচার আচরণ, শখ-আহ্লাদ, পোশাকের ধরণ, জীবনের লক্ষ্য ইত্যাদির পার্থক্য স্পষ্ট হতে থাকে। এর প্রধান কারণ হল পরিবেশগত প্রভাবগুলোর প্রতি যমজ সন্তানদের পৃথক প্রতিক্রিয়া এবং এর অন্যতম প্রক্রিয়া হল এপিজেনেটিক প্রক্রিয়া। এপিজেনেটিক প্রক্রিয়ায় ডিএনএ এসিটাইলেশন ও হিস্টোন মিথাইলেশন নামক ঘটনার মধ্যে দিয়ে জিন সাইলেন্সিং হয়। ফলে যমজ সন্তান দ্বয়ে জিনের এক্সপ্রেশন বিভিন্ন হয়। ধূমপান, শারীরিক পরিশ্রম, খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদি প্রভাবকগুলো এপিজেনেটিক পরিবর্তনে ভূমিকা রাখে। [৩] অর্থাৎ ডিনএনতে যতই মিল থাকুক না কেন পরিবেশ আচরণের প্রকৃতিকে প্রভাবিত করে।
বিহেভিওরাল জেনেটিক্সের রিসার্চে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অন্যতম হল অবিকল যমজ ব্যক্তিরা। এই বিভাগের বিজ্ঞানীদের ধারণা হল যেহেতু অবিকল যমজদের (আইডেনটিক্যাল বা মনোজাইগোটিক টুইন) ডিএনএ প্রায় একই রকম এবং যেহেতু অবিকল যমজ ও বিসদৃশ যমজ (নন-আইডেনটিক্যাল বা ডাইজাইগোটিক টুইন) উভয় দলই একই পারিবারিক পরিবেশে বড় হয়, সেহেতু এদের মধ্যে স্টাডি করলে মানুষের আচরণগত বৈশিষ্ট্য নির্ধারণে জিনের ভূমিকা যাচাই করা সহজ হবে। যেমন: অবিকল যমজদের মধ্যে যদি এমন একটি আচরণ নিয়ে পরীক্ষা করা হয়, যেটা জিনের দ্বারা নির্ধারিত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে এবং সেক্ষেত্রে অবিকল যমজদের মধ্যে উক্ত আচরণের মাত্রা যদি যারা বিসদৃশ তাদের চেয়ে বেশী হয় তাহলে উক্ত জিনটি উক্ত আচরণে প্রভাব রাখছে বলে সিদ্ধান্ত আনা যাবে বা ধারণাকে দৃঢ় করা যাবে। কিন্তু টুইন স্টাডিগুলোতে মানুষের অধিকাংশ আচরণ নিয়ন্ত্রণে পরিবার ও পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিশ্চিত হওয়া গেছে, কারণ মনোজাইগোটিক যমজদের ক্ষেত্রে আচরণ ১০০ শতাংশ মিলে যায় না। [৪] লক্ষণীয়, যদি জিন আচরণকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতো তাহলে অবিকল যমজদের আচরণে ১০০ শতাংশ মিল পাওয়া যেতো।
সমকামিতার জিনগত উৎস নিয়ে যে পরীক্ষাগুলো হয়েছে তার মধ্যে সর্বপ্রথম পরীক্ষাটি করেছিলেন কালম্যান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে করা এই স্টাডিতে সাবজেক্ট হিসেবে যাদের নেয়া হয়েছিলো তারা সমকামী হওয়ার পাশাপাশি মানসিক রোগাক্রান্ত ছিল। কালম্যান তার স্টাডিতে দেখিয়েছিলেন যে ৩৭ জোড়া অবিকল যমজদের ৯৭ শতাংশ সমকামী অন্যদিকে ২৬ জোড়া বিসদৃশ যমজদের ১৫ শতাংশ সমকামী। [৫] তার স্টাডি যদি সঠিক হতো তাহলে বোঝা যেতো সমকামিতার পিছনে জিনের শক্ত ভূমিকা আছে। কিন্তু কালম্যানের স্টাডিতে অনেকগুলো পদ্ধতিগত সমস্যা ছিল (যেমন: মানসিক রোগীদের থেকে অংশগ্রহণকারী নেয়া যা সাধারণ জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না।) এবং পরবর্তী কোন স্টাডিতে তার ফলাফলের পুনরাবৃত্তি হয়নি। [৬]
প্রসঙ্গত, যারা জেনেটিক্যালী সদৃশ তাদের মধ্যে যদি পরীক্ষিত বৈশিষ্ট্যটি বেশী পাওয়া যাওয়া যায় বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় তাদেরকে বলা হয় জেনেটিক্যালী কনকর্ডেন্ট। ১৯৯১ সালে ও পরে বেইলী এট. এল. সমকামিতার উপর বংশগতিয় প্রভাব সম্পর্কিত কয়েকটি স্টাডি করেন। এ স্টাডিগুলোতে সদৃশ যমজদের মধ্যে সমকামিতার কনকর্ডেন্স বেশী পাওয়া গিয়েছিলো। যেমন: ১৯৯১ সালের ছেলে সমকামীদের নিয়ে কৃত স্টাডিতে সদৃশ যমজদের মধ্যে ৫২%, বিসদৃশ যমজদের মধ্যে ২২% এবং দত্তক রূপে গৃহীতদের (যমজ নয়) মধ্যে ১১% জেনেটিক কনকর্ডেন্স পাওয়া গেছে। অন্যদিকে ১৯৯৩ সালে মেয়ে সমকামীদের নিয়ে করা স্টাডিতে সদৃশ যমজদের মধ্যে ৪৮ শতাংশ, বিসদৃশ যমজদের মধ্যে ১৬ শতাংশ এবং দত্তক রূপে গৃহীতদের মধ্যে ৬ শতাংশে সমকামিতা পাওয়া গেছে। [৫]
এই স্টাডিগুলো থেকে সমকামিতার সাথে জেনেটিক্সের সম্পর্কের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণে কিছু মৌলিক সমস্যা আছে। প্রথমত, এই সমকামিতা যদি পুরোপুরি জিন দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হত আমরা ১০০ শতাংশ জেনেটিক কনকর্ডেন্স পেতাম। সুতরাং এই স্টাডিগুলো থেকে প্রথমেই স্পষ্ট হয়ে যায় সমকামিতা পুরোপুরি জেনেটিক বলার সুযোগ নেই, হয়ত বলা যেতে পারে জেনেটিক প্রভাব আছে। [৭] দ্বিতীয়ত, এই স্টাডিগুলোতে যেই পদ্ধতিতে অংশগ্রহণকারীদের সংগ্রহ করা হয়েছিলো সেই পদ্ধতিতেই সমস্যা পরিলক্ষিত হয়। অংশগ্রহণকারী নির্বাচনের ক্ষেত্রে গে বা লেসবিয়ানদের ম্যাগাজিনগুলোতে বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছিলো যে যাদের যমজ ভাই বা বোন আছে তারা যেন স্টাডির জন্য আসে। এ ধরনের অধিক বিজ্ঞাপিত স্টাডির ক্ষেত্রে পরীক্ষা করে দেখা গেছে যারা সদৃশ যমজ তারা বিসদৃশ যমজদের চেয়ে বেশী অংশগ্রহণ করে। ফলে প্রথমেই একটি ‘ভলান্টিয়ার ইরর’-এর কারণে ‘সিলেকশন বায়াস’ তৈরি হয়। [৬] ২০০০ সালের দিকে বেইলী এট.এল. পদ্ধতিগত ত্রুটি ঠিক করে অস্ট্রেলিয়ার টুইন রেজিস্ট্রি থেকে অংশগ্রহণকারী নিয়ে যখন একই পরীক্ষার পুনরাবৃত্তি করেন তখন তাদের ফলাফল যথেষ্ট কমে আসে। সদৃশ যমজদের ক্ষেত্রে ২৪ শতাংশ ও বিসদৃশ যমজদের ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ কনকর্ডেন্স পাওয়া যায়।[৫]
বেইলী এট. এল. ছাড়াও আরও অনেকে এ সংক্রান্ত টুইন স্টাডি করেছেন। ড. নেইল হোয়াইটহেড বিশেষত ২০০০ সাল পরবর্তী স্টাডিগুলো নিয়ে একটি বিস্তারিত রিভিউ চালিয়েছেন।[৬] সেখানে ছেলে সমকামীদের ক্ষেত্রে গড় কনকর্ডেন্স পাওয়া গেছে ২২ শতাংশ এবং মেয়ে সমকামীদের ক্ষেত্রে ৩৩ শতাংশ (স্ট্যান্ডার্ড ডেভিয়েশন অনেক বেশী যথাক্রমে ১৬ ও ২০ শতাংশ)। অর্থাৎ সমকামিতার ক্ষেত্রে দুর্বল জেনেটিক প্রভাব পাওয়া গেছে। প্রসঙ্গত, টুইন রিসার্চে ২৫, ৫০ ও ৭৫ শতাংশ প্রভাবকে যথাক্রমে দুর্বল, মধ্যম ও শক্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সে হিসেবে সমকামিতার উপর পরিবেশের প্রভাব অনেক শক্ত। কারণ, সমকামিতার উপর পরিবেশের প্রভাব নিয়ে করা যতগুলো স্টাডি আছে ড. হোয়াইটহেড উক্ত পেপারে সেগুলোকে রিভিউ করে দেখান যে, সমকামিতার উপর ‘নন-শেয়ার্ড’[৮] পরিবেশের প্রভাব ছেলে ও মেয়েদের ক্ষেত্রে যথাক্রমে ৬৪ ও ৬৩ শতাংশ (স্ট্যান্ডার্ড ডেভিয়েশনও কম যথাক্রমে ১৪ ও ১২ শতাংশ)। যদিও ড. হোয়াইটহেডের রিভিউতে সদৃশ যমজে সমকামিতার হার দুর্বল (২২ ও ৩৩ শতাংশ) হলেও আছে মনে হচ্ছে, তথাপি তিনি দেখিয়েছেন যে টুইন সংক্রান্ত স্টাডিগুলোতে যে নিয়মগুলো অনুসরণ করার কথা সেগুলো বিবেচনা করলে প্রত্যেকটি টুইন স্টাডিতে কোন না কোন দুর্বলতা (তথা নিয়মের লঙ্ঘন) পাওয়া যায় এবং তার ফলে স্টাডিগুলোর হিসেব শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। ড. হোয়াইটহেড পরবর্তী স্টাডিগুলোতে নন-শেয়ার্ড পরিবেশের প্রভাব আরও বেশী পাওয়া যাবে বলেও উল্লেখ করেন।[৬]
মজার বিষয় হল অস্ট্রেলিয়ার একটি রিসার্চ গ্রুপ যারা সমকামীদের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রাখে (তথা ‘হোমোফোব’) তাদের উপর পরিবেশ ও জেনেটিক্সের প্রভাব নিয়ে স্টাডি করে দেখেছেন, হোমোফোবিয়ার পিছনে জেনেটিক্সেরও ভূমিকা আছে। আরও বিস্ময়কর হল আমেরিকান এটি গ্রুপ উক্ত স্টাডির পুনরাবৃত্তি করে অনুরূপ ফলাফল পেয়েছেন।[৯] অর্থাৎ সমকামিতা বা সমকামিতার বিরোধিতা যেটা নিয়েই আপনি সদৃশ যমজদের উপর পরীক্ষা চালান না কেন জেনেটিক্সের অল্পবিস্তর প্রভাব পাওয়া যাবেই, যা এই অল্পবিস্তর প্রভাবের ন্যায্যতা নিয়ে প্রশ্ন করাকে সমর্থন করে।
আমরা প্রবন্ধটি থেকে দেখলাম সমকামিতার উপর জেনেটিক্সের প্রভাবের পক্ষে টুইন স্টাডিগুলোর কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেই। বরং অনেক সমকামী ব্যক্তি, যারা পরবর্তীতে তাদের সম-লিঙ্গ-ঝোঁককে পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছে, তাদের অভিজ্ঞতা থেকে এটা পরিষ্কার যে চেষ্টা করলে সেক্সুয়্যাল অরিয়েন্টেশন পরিবর্তন করা যায়।[১০] সুতরাং সমকামিতাকে জন্মগত বৈশিষ্ট্য বলে প্রচার করে মানুষদের সমকামিতার মত অপরাধের দিকে ঠেলে দেয়ার পক্ষে যে প্রতারণাপূর্ণ প্রচারণা রংধনু গংরা চালিয়ে যাচ্ছে, তা তাদের যুব সমাজকে নৈতিকভাবে ধ্বংস করার অসৎ উদ্দেশ্যে পরিচালিত মিশনের একটি অংশ মাত্র।
৪. Khytam Dawood, J. Michael Bailey, and Nicholas G. Martin. Genetic and environmental influences in sexual orientation. Handbook of Behavior Genetics. Page 270. Available at: genepi.qimr.edu.au/contents/p/staff/NGMHandbookBehGen_Chapter19.pdf
৫. Ibid. Page 271
৬. Neil E. Whithead. Neither Genes nor Choice: Same-Sex Attraction Is Mostly a Unique Reaction to Environmental Factors. Journal of Human Sexuality 2011[Cited 2014 April 14]; 3:81-114. Available at: http://www.mygenes.co.nz/whitehead_twinjhs.pdf
৭. What does science say about homosexuality.[Internet] 2006 April 4 [Cited 2014 April 14]; Available at: http://www.inqueery.com/html/science_and_homosexuality.html
৮. ‘নন-শেয়ার্ড’ পরিবেশ বলতে বুঝানো হচ্ছে মনোজাইগোটিক টুইনরা যখন একই পরিবেশে বড় না হয়ে ভিন্ন পরিবেশে বড় হয়।
১০. Neil E. Whitehead. Chapter Twelve: Can sexual orientation change?. My Genes Made Me do It. [Internet] Available at: http://www.mygenes.co.nz/PDFs/Ch12.pdf
বিবর্তনবাদীরা যখন আপনার কাছে বিবর্তনের পক্ষে কথা বলতে আসবে, আপনি প্রথমেই জেনে নিন সে বিবর্তন বলতে কি বুঝাতে চাচ্ছে? বিবর্তনের উদাহরণ দিতে গিয়ে যদি সে ব্যাকটেরিয়ার ড্রাগ রেজিস্টেন্স, ভাইরাসের নতুন নতুন স্ট্রেইনের ঘটনাকে নিয়ে আসে তাহলে বুঝবেন সে মাইক্রোইভুলিউশনের কথা বলছে, যেটা প্রকৃতিতে অহরহ ঘটছে। আপনি তার কাছে ম্যাক্রোইভুলিউশনের উদাহরণ জানতে চাইবেন।
যদি সে বলে মাইক্রোইভুলিউশন মিলিয়ন বছরের ব্যবধানে ম্যাক্রোইভুলিউশন করেছে। তখন বুঝবেন তার এই ‘ইনফারেন্স’ এক ধরনের বস্তুবাদী বিশ্বাস, বিজ্ঞান নয়। কেননা মাইক্রোইভুলিউশন একটি নির্দিষ্ট লিমিট পর্যন্ত হয়। এই লিমিট বা সীমাটি হলো যতক্ষণ পর্যন্ত উক্ত ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের বা ইউক্যারিয়টের ‘ভাইটাল’ গাঠনিক উপাদান প্রভাবিত না হয়। তাকে প্রশ্ন করুন ম্যাইক্রোইভুলিউশনের এমন কোন উদাহরণ দিতে পারবে কিনা যেখানে নতুন কোন গঠনগত ও কার্যকরী প্রোটিন বা প্রোটিন সমষ্টি তৈরী হয়েছে। কেননা, কোন গাঠনিক উপাদান ছাড়া একটি জীবকে আরেকটি ভিন্ন জীবে পরিণত করা অসম্ভব।
মজার ব্যপার হলো, সে আপনাকে ব্যাকটেরিয়ার বাইরে খুব কমই উদাহরণ দিতে পারবে। মাইক্রোইভল্যুশনের মাধ্যমে প্রোটিন তৈরীর সবচেয়ে প্রকৃষ্ট যে উদাহরণটা আনা যেতে পারে তা হল নাইলনেজ নামক নতুন একটি এনজাইম তৈরীর ঘটনা । নাইলন একটি কৃত্রিম বা সিনথেটিক পলিমার, যেখানে অনেকগুলো সিক্স এমাইনো ক্যাপ্রয়েট নামক যৌগের ডাইমার পর পর যুক্ত হয় বড় একটি চেইন তৈরী করে। নাইলনেজ-এর কাজ হলো এই ডাইমারকে ভেঙ্গে নাইলন পলিমারকে ভাঙ্গা। ফ্ল্যাভোব্যাকটেরিয়াম Arthrobacter sp. K17-এর ‘প্লাজমিড’-এ একটি ফ্রেমশিফট মিউটেশনের মাধ্যমে এই এনজাইমটি তৈরী হয়েছে বলে ধারণা করা হয় (১)।
এখানে কয়েকটি বিষয় লক্ষ্যণীয়। মিউটেশনটি ঘটেছে প্লাজমিডে, কোন স্ট্রাকচারাল প্রোটিনে নয় এবং ব্যাকটেরিয়ার মূল জিনোমিক এলিমেন্টে নয়। মূলত ফ্রেমশিফট মিউটেশন হলে পুরো প্রোটিন নষ্ট হয়ে অকার্যকর প্রোটিন তৈরী হয়। সুতরাং মূল জিনোমে হলে এবং স্ট্রাকচারাল প্রোটিনে হলে ব্যাকটেরিয়া টিকতে পারতো না। তদুপরী ব্যাকটেরিয়ার প্লাজমিড একটি চলাচলযোগ্য গোলাকার ডিএনএ খণ্ড, যা ব্যাকটেরিয়া পরস্পর আদান প্রদান করতে পারে। এটা ব্যাকেটেরিয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কিছু এনজাইম ও অতিরিক্ত স্ট্রাকচারের জেনেটিক তথ্য ধারণ করে। এটি ব্যাকটেরিয়ার ক্রোমোজমের সাহায্য ছাড়া একাই নিজের কপি তৈরী করতে পারে। ফলে প্লাজমিডে মিউটেশন হলে ব্যাকটেরিয়ার মূল স্ট্রাকচারে কোন পরিবর্তন আসে না।
ফ্ল্যাভোব্যাকটেরিয়ামে যে ফ্রেমশিফটের ঘটনাটি ঘটেছে সেটিও ‘ইউনিক’।[১] এটি বুঝতে আসুন জানি ফ্রেমশিফটে কি হয়। যারা জেনেটিক্সের প্রাথমিক ধারনা রাখেন তারা জানেন, ডিএনতে চারটি নিউক্লিউটাইড এডেনিন (A), গুয়ানিন (G), সাইটোসিন(C), থায়ামিন(T) বিভিন্ন কম্বিনেশনে পরস্পর যুক্ত থেকে প্রোটিন তৈরীর তথ্য ধারণ করে। প্রতি তিনটি নিউক্লিউটাইড একটি এমাইনোএসিডকে কোড করে। যেমন: GGU কোড করে গ্লাইসিন নামক একটি এমাইনো এসিডকে। ধরুন, CCUGGUUUG একটি ডিএনএ স্ট্রিং। এটি কোড করবে, প্রোলিন-গ্লাইসিন-লিউসিন (CCU-GGU-UUG)। এখন কোন কারণে যদি একটি ডিলেশন মিউটেশন হয় এবং প্রথম ‘C’টি বাদ হয়ে যায় তাহলে স্ট্রিংটি হবে-CUG-GUU-UG()। সুতরাং এ অবস্থায় প্রথম থেকে পড়লে, এমাইনো এসিডগুলো হবে- লিউসিন-ভ্যালিন-(বাস্তবে যেহেতু স্ট্রিং আরও বড় হয় একটি স্টপ কোডন (UGA, UAA, UAG) বা অন্য কোন এমাইনোএসিড)। অতএব, বুঝতেই পারছেন একটি ফ্রেমশিফট মিউটেশন প্রোটিনে কেমন ধ্বংসাত্মক পরিবর্তন আনতে পারে। অধিকাংশ ফ্রেমশিফট মিউটেশনে স্টপ কোডন তৈরী হয় বা অকার্যকরী প্রোটিন তৈরী হয়। কিন্তু ফ্ল্যাভোব্যাকটেরিয়ামে সৌভাগ্যক্রমে একটি ফাংশানাল প্রোটিন তৈরী হয়ে গিয়েছিল যেটি নাইলনকে ব্রেকডাউন করিয়ে ব্যাকটেরিয়াটিকে প্রতিকূল পরিবেশে বাঁচার সুবিধে করে দেয় (লক্ষ্যনীয় সংজ্ঞানুযায়ী প্লাজমিড এই ধরনের কাজই করে থাকে)।
মজার ব্যাপার হলো, এখানে ফ্রেমশিফট হয়েছে একটি রিপিটেটিভ ইউনিটের যেটা তিনের গুনিতক নয়। রিপিটেটিভ ইউনিটটি ১০টি নিউক্লিউটাইড বিশিষ্ট এবং এর স্টপ কোডন নেই। ফলে এর রিডিং একটি নিউক্লিউটাইড আগে বা পরে থেকে এমনিতেই পড়ার সুযোগ ছিল এবং এই ফ্রেম শিফটের কারণে কোন স্টপ কোডন তৈরী হয়নি। কিন্তু নাইলনেজ এনজাইম তৈরীর ঘটনায় একটি স্টার্ট কোডন তৈরী হয় ইনসারশন ইভেন্টের মধ্য দিয়ে। আর যেহেতু রিপিটিটিভ সিকোয়েন্সটিকে আগে থেকে ফ্রেম শিফট করে পড়ার উপায় ছিল (স্টপ কোডন না থাকায়), ফলে যখন নাইলনেজ এনজাইম ফ্রেম শিফট-এর মাধ্যমে তৈরী হয় এটি নাইলন যুক্ত পরিবেশে সিলেকটিভ এডভানটেজ দেয়ায় ন্যাচারালী সিলেকটেড হয়। (২)
প্রসঙ্গত, মোডিফিকেশন অব ফাংশন মিউটেশনের মধ্য দিয়ে কোন একটি এনজাইমে এমন পরিবর্তন আসতে পারে যাতে এনজাইমটি তার সাবস্ট্রেটের সাথে প্রায় একই গঠনযুক্ত সাবস্ট্রেট ব্যবহার করতে পারে। মিউটেশনের মধ্য দিয়ে এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটে। সুতরাং নাইলনেজ এনজাইমের পিছনেও এরকম একটি ঘটনা থাকা অসম্ভব না। নেগোরো এবং সহকর্মীরা এই বিষয়টিই বলতে চাচ্ছেন। (দেখুন, পরবর্তী প্যারা) উল্লেখ্য, মোডিফিকেশন অব ফাংশন মিউটেশনের মধ্য দিয়ে কিন্তু সম্পূর্ণ নতুন জেনেটিক তথ্য যুক্ত হয় না। অন্য কথায় যে এনজাইম গ্লুকোজকে ব্যবহার করছে, সে মোডিফিকেশন অব ফাংশন মিউটেশনের মধ্য দিয়ে হয়ত গ্লুকোজের আইসোমার গ্যালাকটোজকে ব্যবহার করতে পারবে, কিন্তু তার পক্ষে কোন এমাইনোএসিডকে ব্যবহার করা সম্ভব হবে না। আবার যে এনজাইমটি পরিবর্তন হলো সে যদি কোন গুরুত্বপূর্ণ মাল্টিপ্রোটিন কমপ্লেক্সের সদস্য হয়, সেক্ষেত্রে তার ফাংশনের মোডিফিকেশন ব্যাকটেরিয়া (তথা অর্গেনিজম)-র ফিটনেস কমিয়ে দেবে। আর মোডিফিকেশন যদি এমন ভাবে হয়, যে এনজাইম তার মূল কাজ একেবারেই করতে না পারে, তাহলে তো ব্যাকটেরিয়াটি সারভাইভ-ই করতে পারবে না। অর্থাৎ, দেখা যাচ্ছে ক্রমান্বয়ে কয়েকটি র্যানডম মিউটেশন দিয়ে নতুন স্ট্রাকচার তৈরী প্রাকৃতিক নির্বাচনের কারণেই সম্ভব নয়।
একটি এনজাইম যে সাবস্ট্রেট তথা উপাদানের উপর কাজ করে সেটির সাথে কাছাকছি গঠনের উপাদানের উপর কাজ করার যোগ্যতা রাখে। ফলে দেখা যায়, অনেক ‘মোডিফিকেশন অব ফাংশন’ মিউটেশনের মধ্যে দিয়ে একটি এনজাইম পরিবর্তিত হয়ে উক্ত কাছাকাছি গঠনের উপাদানকে শক্ত করে বাঁধতে পারলো (অর্থাৎ স্পেসিফিসিটি পরিবর্তন হলো) এবং বিক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে পারলো। এ ঘটনাকে মাইক্রোইভুলিউশনের মধ্য দিয়ে হোমোলোগাস সাবস্ট্রেটে স্পেসিফিসি পরিবর্তন বলা যায়। যেমন: যে এনজাইম রিবিটলকে (সাবস্ট্রেট) অক্সিডাইজ (বিক্রিয়া) করতো সে ডিলেশন অব ফাংশন মিউটেশনের ( রিবিটল ডিহাইড্রোজিনেজ এনজাইমের রিপ্রেসর লস) মধ্য দিয়ে রিবিটলের সাথে হোমোলোগাস জাইলিটল বা এরাবিটল ব্যবহার করতে জানে। Negoro et el. দেখিয়েছেন নাইলনেজ (যার মূল নাম: সিক্সএমাইনো ক্যাপ্রোয়েট ডাইমার হাইড্রোলেজ) এনজাইমটির কাছাকাছি গঠনের এনজাইম হলো হেক্সাকার্বক্সিলিক এসিড এস্টারেজ তথা কার্বক্সিলএসটারেজ এনজাইম (হোমোলোগাস)। সুতরাং অস্বাভাবিক না যে, পরের এনজাইমটি থেকে মোডিফিকেশন অব ফাংশন মিউটেশনের মধ্য দিয়ে নাইলনেজ তৈরী হতে পারে। (৩)
সিক্স অ্যামাইনো হেক্সানয়েট ডাইমার হাইড্রোলেজ, উৎস
ইন ফ্যাক্ট হয়েছেও তাই। যে জাপানী বিজ্ঞানীরা নাইলোনেজ এনজাইম প্রথম আবিস্কার করেন তাদের পরবতী গবেষণায় প্রমানিত হয় যে নাইলোনেজ এনজাইমে নতুন কোন প্রোটিন গঠন তৈরী হয়নি। বরং, যে প্রোটিন থেকে বিবর্তিত হয়ে নাইলোনেজ এসেছে তাতে পূর্ব থেকেই কার্বক্সিলএস্টারেজ এক্টিভিটি এবং সাথে অল্প মাত্রার নাইলোনেজ এক্টিভিটি ছিল । এমনকি, পরীক্ষা করে দেখা গেছে নতুন নাইলোনেজ এনজাইম কমপ্লেক্স-এর একই সাথে কার্বক্সিলএস্টারেজ ও নাইলোনেজ এক্টিভিটি আছে (৪)। সেক্ষেত্রে এটাকে একেবারে নতুন কার্যকরী প্রোটিন (new functional protein) তৈরীর সংজ্ঞায় ফেলা যাচ্ছে না।
সুতরাং বিবর্তনবাদীদের উপস্থাপিত এই একটি উদাহরণও প্রশ্নাতীত নয়। অথচ, এরুপ ব্যতিক্রম কিন্তু প্রশ্নবিদ্ধ উদাহরণ এনে তারা মাইক্রোইভুলিউশন থেকে ম্যাক্রোইভুলিউশনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত(!) তথা ইনফারেন্স টেনে ফেলেছে। রিসার্চ মেথোডোলজিতে নাল হাইপোথিসিস বলে একটি কথা আছে। অর্থাৎ কোন কিছুর সাথে কোন কিছুর সম্পর্ক আছে প্রমাণ করতে হলে আগে ধরে নিতে হয়ে সম্পর্ক নাই। তারপর ‘উপযুক্ত’ ও ‘যথেষ্ট’ প্রমাণাদি দিয়ে সেই সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে হয়। বিচারব্যবস্থাতেও অভিযুক্তকে নিরপরাধ ধরেই বিচার করতে হয়। বিজ্ঞানের সকল নিয়মই এভাবে প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। কিন্তু মজার ব্যপার হোলো, বিবর্তনবাদীরা আগে ধরে নেন যে বিবর্তন হয়েছে, তারপর পরীক্ষানিরীক্ষা শুরু করেন। কিন্তু কতগুলো দুর্বল যুক্তির উপর একটি বড় সিদ্ধান্ত দিয়ে দিলে তাকে বিজ্ঞান বলে না, অপবিজ্ঞান বলে।
নাস্তিক ডারউইনবাদীরা বিজ্ঞানের ভিতর নিজের অন্ধবিশ্বাস ঢুকিয়ে দিয়ে স্রষ্টায় বিশ্বাসকে বৈজ্ঞানিকভাবে খণ্ডিত করার মিথ্যাচার চালাচ্ছে। অতএব, তাদের এই প্রতারণা ধরিয়ে দেয়া যে কোন সচেতন বিজ্ঞানমনস্ক ব্যক্তির দায়িত্বের মধ্যে পরে।
৩. Negoro S. et el. X-ray crystallographic analysis of 6-aminohexanoate-dimer hydrolase: molecular basis for the birth of a nylon oligomer-degrading enzyme. J Biol Chem. 2005 Nov 25;280(47):39644-52. Epub 2005 Sep 14
গত ২৩ শে নভেম্বর সায়েন্স জার্নালে একটি রিপোর্ট পাবলিশ হয়েছে । ল্যামিচ্যানী এবং তার সহযোগী রিসার্চারগন গালাপোগোস দ্বীপপুঞ্জে নতুন স্পিসিস-এর আবির্ভাবটি পর্যবেক্ষণ এবং রিপোর্ট করেন(1) ।
এসপানোলা থেকে গালাপোগোসের ড্যাফনি মেজোরে আগত একটি ডারউইনের ফিঞ্চ পাখির প্রজাতি Geospiza conirostris গালাপোগোসের ন্যাটিভ প্রজাতি Geospiza fortis-এর সাথে ব্রিডিং করে। ফলে, একটি নতুন হাইব্রিড প্রজাতি জন্ম নেয় যা পূর্ববর্তী প্রজাতি থেকে বড়। এই হাইব্রিড প্রজাতিটি গালাপোগোস-এ ক্ষরার সময় প্রাপ্ত খাদ্য রিসোর্সকে অভিভাবক প্রজাতি থেকে বেশী ব্যবহার করতে সক্ষম হয় এবং প্রাকৃতিক ভাবে বেঁচে থাকার সুবিধে পেয়ে নির্বাচিত হয়।
সংঙ্গানুযায়ী একটি প্রজাতির পরবর্তী বংশধরকে নতুন প্রজাতিতে পরিণত হতে হলে প্রয়োজন ‘রিপ্রোডাক্টিভ আইসোলেশন’। ‘রিপ্রোডাক্টিভ আইসোলেশন’ হল প্রজাতির এমন একটি বৈশিষ্ট্য যার ফলে সে আরেকটি প্রজাতির সাথে মেটিং করে না (অর্থাৎ একটি প্রজাতির পুরুষ, আরেকটি প্রজাতির নারীর সাথে মিলিত হয় না এবং ভাইস ভারসা)।
ফিঞ্চ পাখির একটি বৈশিষ্ট্য হলো এটির মেটিং চয়েজ (অর্থাৎ কোন পাখির সাথে মিলিত হবে) তা নির্ভর করে পাখির গানের ধরন এবং গঠনের ওপর। যেহেতু নতুন প্রজাতিটি Geospiza fortis প্রজাতি থেকে বড় এবং ভিন্ন সুরে গান গেতে শুরু করেছে, ফলে এটি মা-এর প্রজাতি থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ, Geospiza fortis প্রজাতির অন্য কোন পাখির সাথে এটি মিলিত হয় না। সুতরাং, হাইব্রিড প্রজাতিটি স্পেসিয়েশনের সংঙ্গা অনুযায়ী নতুন একটি প্রজাতিতে পরিণত হয়েছে।
আপনি কি কখনও লক্ষ্য করেছেন, কেন আপনার সন্তানের গঠন, চেহারা, কণ্ঠ হুবুহু আপনার বা আপনার স্পাউজের মত হয় না? কারণ, জননকোষের ডিএনএতে ক্রসিং ওভারের মাধ্যমে জেনেটিক রিকম্বিনেশন হয়। অর্থাৎ, মা ও বাবা থেকে আগত ক্রোমোজোমদ্বয়ের নির্দিষ্ট স্থানে জেনেটিক তথ্যের আদান প্রদান হয়, যেন জেনেটিক ভ্যারিয়েশন তৈরী হতে পারে। এটি জননকোষের একটি ‘বিল্ট-ইন’ প্রক্রিয়া।
অন্যান্য প্রাণীর ক্ষেত্রে ধরুন এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরবর্তী বংশধরে এমন একটি পরিবর্তন এল যার ফলে পরবর্তী প্রাণীটি বিদ্যমান খাদ্যের উৎসকে বেশী ব্যবহার করতে পারে এবং একই সাথে যেই বৈশিষ্ট্যগুলো উক্ত প্রাণীর ক্ষেত্রে মেটিং চয়েজ নির্ধারণ করে (যেমন: ফিঞ্চ পাখির ক্ষেত্রে গানের সুর এবং শারীরিক গঠন) সেগুলোর একটিতে পরিবর্তন আসল। সেক্ষেত্রে উক্ত বংশধরটি পূর্ববর্তী প্রজাতি থেকে ধীরে ধীরে পৃথক প্রজাতিতে পরিণত হবে। এটির আরেকটি নাম আছে – সেক্সুয়েল সিলেকশন (2)।
বস্তুত, এই ভাবে প্রজাতি তৈরীর ঘটনা প্রকৃতিতে নতুন নয়। সালামান্দার প্রজাতি Ensatina eschschoitzi-এর ৭টি উপপ্রজাতি যুক্তরাস্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের প্রশান্ত মহাসাগর তীরবর্তী স্যান জাওকিন ভ্যালির আশেপাশে বাস করে (3)। উপ-প্রজাতিগুলোর মূল পার্থক্য তাদের গায়ের রঙ-এর নকশা (প্যাটার্ন) এবং (সম্ভবত) ফেরোমোন। সালামান্দারের গায়ের রং-এর নকশা পরিবর্তন হয় হোমোলোগাস রিকম্বিনেশন-এর মাধ্যমে। সহজ কথায়, শুক্রাণু ও ডিম্বাণু তৈরী হওয়ার এক পর্যায়ে এক জোড়া ক্রোমোজামের মধ্যে ক্রসিংওভার নামক একটি ঘটনা ঘটে। এ প্রক্রিয়ায় জিনোমের কিছু সুনির্দিষ্ট অংশের আদান প্রদান এবং পুনঃবিন্যাস হয়। যদিও রিকম্বিনেশন হচ্ছে র্যাণ্ডমভাবে, কিন্তু তা হচ্ছে একটি নিয়ন্ত্রিত সীমায় কিছু বিনিময় যোগ্য এলিলির (জিন) মধ্যে।
এভাবে সৃষ্ট ভ্যারিয়েশনের মাধ্যমে ভ্যালীর উত্তরে অবস্থিত Ensatina eschschoitzi picta উপ-প্রজাতিটি দক্ষিণ দিকে এসে এমন দুটো উপ-প্রজাতি Ensatina eschschoitzi klauberi এবং Ensatina eschschoitzi eschschoitzii–তে পরিণত হয়েছে, যারা পরস্পর যৌনক্রিয়ায় লিপ্ত হয় না। সালামান্দার প্রজাতি যৌনক্রিয়ার জন্য বিপরীত লিঙ্গ বাছাই করতে সাধারণত ফেরোমোন নামক শরীর থেকে নিঃসৃত বিশেষ গন্ধ উৎপাদনকারী পদার্থ ব্যবহার করে। (এছাড়া, কোন কোন প্রজাতি স্পর্শ এবং কোন কোন প্রজাতি দৃষ্টি-সম্বন্ধীয় সূত্র তথা ভিজুয়্যাল কিউ ব্যবহার করে থাকে)। সে হিসেবে Ensatina eschschoitzi klauberi এবং Ensatina eschschoitzi eschschoitzii উপ-প্রজাতি দুটোতে ক্রসিং ওভারের মধ্য দিয়ে রং এবং ফেরোমোনের যথেষ্ট পার্থক্য হয়ে যাওয়ায় তারা প্রজাতির সংজ্ঞানুযায়ী আলাদা প্রজাতিতে পরিণত হয়েছে।
গুগোলে রিং স্পিসিস লিখে সার্চ দিলে এরকম আরও কিছু উদাহরণ পাওয়া যাবে। মূল বিষয়টি হলো, এসব ক্ষেত্রেই এমন কিছু পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে নতুন প্রজাতি তৈরী হয়ে যাচ্ছে যা হওয়ার জন্য জিনোমে ইতোমধ্যে নিয়মতান্ত্রিক ব্যবস্থা করা আছে এবং প্রতিটি ক্ষেত্রেই ‘এলোপাতাড়ি মিউটেশনের’ কোন ভূমিকা নেই। স্পেসিয়েশন অর্থ হলো একটি নতুন প্রজাতি তৈরী হওয়া।
জেনেটিক্যালী স্পেসিয়েশনের গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে- – হাইব্রিড স্পেসিয়েশন –যেমন অদ্য আর্টিকেলে ফিঞ্চ পাখি। – পলিপ্লয়েড স্পেসিয়েশন- যেটা জবা ফুলে বেশ দেখা যায়। – ট্রান্সপজিশন- থিওডসিয়াস ডবঝানস্কি ফ্রুট ফ্লাইতে এই ধরনের স্পেসিয়েশন দেখিয়েছেন।
প্রতিটি ক্ষেত্রে কোষের ‘ইন-বিল্ট’ প্রক্রিয়ায় কিছু জেনেটিক ভ্যারিয়েশন তৈরী হয়। তবে রিপ্রোডাক্টিভ আইসোলেশনের ক্ষেত্রে যে সকল প্রক্রিয়া ভূমিকা রাখে সেগুলো হল ন্যাচারাল সিলেকশ (রি-ইনফোর্সমেন্ট ও ইকোলোজিকাল) এবং সেক্সুয়েল সিলেকশন। (২)
এ সবগুলো প্রক্রিয়াকে আপনি সহজেই ‘মাইক্রো-ইভল্যুশন’-এর কাতারে ফেলতে পারবেন। কারণ, প্রতিটি ক্ষেত্রেই কোন বড়-মাত্রার জেনেটিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় না। অর্থাৎ, আপনি চোখের সামন একটি জেনাসের অন্তর্গত একাধিক স্পিসিস তৈর হতে দেখবেন। কিন্তু, একটি ফ্যামিলির অধীনে নতুন কোন জেনাস তৈরীর ঘটনা চোখের সামনে দেখতে পারবেন না।
ডারউইনবাদীদের দাবী অনুযায়ী বড় মাত্রার জেনেটিক পরিবর্তন হয় অনেক সময় নিয়ে, ফলে এটি চোখের সামনে দেখা যায় না। জেনাসের আগমন আপনি কখনও সচক্ষে দেখতে পারবেন না। কারণ, এর জন্য যে মিলিয়ন বছর সময় দরকার সে পর্যন্ত আপনি বাঁচবেন না। নতুন জেনাস যে কমন ডিসেন্টের মাধ্যমে অন্য কোন কমন জেনাস থেকে এসেছে তার প্রমাণ হলো ফসিল এবং মলিকুলার হোমোলজি। যেমন: হোমো জেনাস (মানুষ জাতীয় দোপেয়ে প্রাণী) এবং প্যান জেনাস (শিম্পাঞ্জী)-এর একটি কমন এনসেস্টর ছিলো।
অস্ট্রালোপিথেকাস, আর্ডিপিথেকাস এদের গঠন পুরোপুরি শিম্পাঞ্জির মত না, কিছুটা মানুষের কাছাকাছি। অন্যদিকে নিয়েন্ডারথ্যাল, ডেনিসোভা হোমিনিন-এরা মানুষের মত গঠনযুক্ত ছিলো। কিন্তু, অস্ট্রালোপিথেকাস-কে আপনি শিম্পাঞ্জীর কাতারে ফেলবেন, নাকি নতুন একটি ফ্যামিলি হিসেবে নাম দিবেন সেটা কিন্তু পুরোপুরি আপনার ওপর নির্ভর করছে। এগুলোর ক্ষেত্রে জীবাশ্ম হাড় ছাড়া আমাদের কাছে অন্য কোন এভিডেন্স নেই। ঠিক তেমনি সংস্কৃতিমনা নিয়েন্ডারথেল বা ডেনিসোভাকে-যে আপনি মানুষ বলতে চাইছেন না তার-ই বা ভিত্তি কি?
অন্যদিকে, হোমোলজি, তা মলিকুলার হোক বা মরফোলজিকাল, কমন ডিজাইনের কারণেও হতে পারে। সুতরাং, প্রজাতির কমন ডিসেন্ট আর্গুমেন্ট তখনই গ্রহণযোগ্য হবে যখন আপনি ডিএনএ-তে নতুন কার্যকরী তথ্য যোগ হওয়ার স্পষ্ট উদাহরণ দিতে পারবেন। আপনি বিভিন্ন জিন নিয়ে ‘মলিকিউলার ফাইলোজেনী’ আঁকলে একেকটির জন্য একেকটি কমন এনসেস্ট্রির সময় পাওয়া যাবে (4)।
সুতরাং, স্বয়ংক্রিয় ও প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় বিবর্তনের বিষয়টি তখনই পুরোপুরি মানা যেতে পারে যখন আপনি মলিকিউলার লেভেলে ‘বড় আকারের’ জেনেটিক ইনফরমেশন যোগ হওয়ার প্রসেস দেখাতে পারবেন। নব্য-ডারউইনবাদের র্যানডম মিউটেশন যে এই বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে অক্ষম তা অনেক দার্শনিক ও বিজ্ঞানীরাও বুঝতে পারছেন। (৫)
এই ভ্যারিয়েশন আসার বিষয়টি কিভাবে সম্ভব সেটা নিয়ে ‘পদ্ধতিগত প্রকৃতিবাদ’-এর গণ্ডির মধ্যে থেকেই অনেক বিজ্ঞানী নতুন থিওরী দিচ্ছেন। জেমস শ্যাপিরোর ন্যাচারাল জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, লিন মার্গুলিসের সিমোবায়োসিস এবং সুসুম ওহনো-এর জিন ডুপ্লিকেশন- এর মধ্যে অন্যতম।
লক্ষ্যণীয় এই প্রতিটি প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রেই ‘এলোপাতারী’ শব্দটি পরিত্যাক্ত হয়েছে, কারণ এগুলো নিয়ণ্ত্রিত। এগুলো যদি দিন শেষে যথাযথ হিসেবে প্রমাণিতও হয় সবগুলোই একটা কমন এনসেস্টর থেকে শুরু হবে যার মধ্যে অসংখ্য সুনিয়ন্ত্রিত বিবর্তিত হওয়ার প্রক্রিয়া প্রথম থেকেই প্রথিত আছে। অর্থাৎ, আপনি ‘পদ্ধতিগত প্রকৃতিবাদ’ থেকে ‘দার্শনিক প্রকৃতিবাদ’-এ গিয়ে নিজের চূড়ান্ত প্রশ্নগুলোকে আটকে রাখবেন যেন একটি ‘বুদ্ধিমান’ সত্ত্বার অস্তিত্বকে অস্বীকার করা যায়, সেটি দিবাস্বপ্ন ছাড়া আর কিছু নয়।
রেফারেন্স: 1. Lamichhaney S, Han F, Webstar MT, Andersson L, Grand BR, Grant PR. Rapid hybrid speciation in Darwin’s finches. Science (80- ). 2017;(November). 2. Speciation. In: Wikipedia. 2017. 3. Rosa Rubicondior: Ring Species – Evolution in Progress [Internet]. [cited 2017 Nov 29]. Available from: http://rosarubicondior.blogspot.com/…/ring-species-evolutio… 4. Stephen Meyer, Darwin’s Doubt 2013 5. Thomas Nagel, Mind and Cosmos 2012
…………………..
“স্বয়ংক্রিয় ও প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় বিবর্তনের বিষয়টি তখনই পুরোপুরি মানা যেতে পারে যখন আপনি মলিকিউলার লেভেলে ‘বড় আকারের’ জেনেটিক ইনফরমেশন যোগ হওয়ার প্রসেস দেখাতে পারবেন” আমার লেখার এই অংশটির প্রেক্ষিতে একজন ফেসবুক ডারউইনবাদী নিচের লিংকটি দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন যে, র্যানডম মিউটেশনের মাধ্যমে অহরহ নতুন জিন তৈরী হচ্ছে!! তার দাবী কেন সঠিক নয় সেটা ব্যাখ্যা করতে আমি একটি বিস্তারিত মন্তব্য লিখি। সবার জানার জন্য এখানে সংযোজন করে দিচ্ছি।
লিংক: “Gene Genesis: Scientists Observe New Genes Evolving from Mutated Copies”
উত্তর: লিংকে জিন ডুপ্লিকেশন নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। জিন ডুপ্লিকেশনের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত সর্বচ্চো যেটা করা গিয়েছে তা হলো নিম্নরুপ- ধরুন, একটি ব্যাকটেরিয়াতে অলরেডি এক্সিসটিং এনজাইম, যার ডুয়েল ফাংশন আছে, এর মধ্যে একটি ফাংশন ‘ক’ শক্তিশালী এবং একটি ফাংশন ‘খ’ দুর্বল। উক্ত ব্যাকটেরিয়াতে ‘খ’ ফাংশন সম্পাদনকারী শক্তিশালী এনজাইমটি না থাকলে যেটা হবে (প্রয়োজনীয় প্রতিকূল পরিবেশে যেখানে উক্ত ‘খ’ এনজাইমটির ফাংশন খুবই জরুরী) প্রথম এনজাইমটির জিন ডুপ্লিকেটেড হবে এবং ডুপ্লিকেটেড কপিতে মিউটেশনের মাধ্যমে ‘খ’ ফাংশনটি এক পর্যায়ে শক্তিশালী হয়ে যাবে।
এখানে কয়েকটি বিষয় লক্ষণীয়- এক, আগে মনে করা হতো এই প্রক্রিয়াটি পুরোপুির র্যানডম। কিন্তু, জেমন শ্যাপিরো দেখাচ্ছেন যে, ব্যাকটেরিয়ার ভিতর কঠিন পরিবেশে এডাপ্ট করার জন্য কতগুলো প্রক্রিয়া ইনবিল্ট আছে। ফলে ব্যাকটেরিয়া নতুন কোন পরিবেশে এলে তার ‘নির্দিষ্ট’ কিছু জেনেটিক রিজিওনে ‘র্যানডম মিউটেশন জেনারেটিং’ প্রক্রিয়া এক্টিভেট করে। যেন অভিনব পরিবেশে সে খাপ খাওয়াতে পারে। অর্থাৎ, আদতে এই প্রক্রিয়াটি র্যানডম না। বিষয়টার সাথে ভার্টিব্রেট জীবের ইমিউন সিস্টেমের পদ্ধতিগত মিল আছে।
দুই, জিন ডুপ্লিকেশনের মাধ্যমে যদি এমন কোন এডাপটেশনের প্রয়োজন হয় যেখানে দুই বা ততোধিক অ্যামাইনো এসিড দরকার হবে এবং ফলে একাধিক পয়েন্ট মিউটেশনের দরকার হবে, সেক্ষেত্রে উক্ত এডাপটেশনটি জিনোমে ফিক্স হতে যে পরিমাণ অর্গানিজম দরকার তার সংখ্যা অনেক বেশী ১০^৯। কার্যত, ব্যাকটেরিয়া জাতীয় এককোষী প্রাণী ছাড়া এ ধরনের মিউটেশন সম্ভব নয়। (১)
তৃতীয়ত, ক্লোরোকুইন রেজিসেন্ট-এর প্রাকটিকেল উদাহরণ হতে দেখা যায় যে যেখানে দুটো প্রোটিন প্রোটিন ইন্টারেকশন সাইটে সাইমুলটেনিয়াস মিউটেশন লাগে সেখানে মিনিমাম অর্গানিজম দরকার ১০^২০। (২)
চতুর্থত, একটি এনজাইমকে ভিন্ন ফাংশনের একটি এনজাইমে পরিণত করতে দরকার ৭ বা ততোধিক সাইমুলটেনিয়াস মিউটেশন। (৩)
অর্থাৎ, আপনার আর্টিকেল থেকে র্যানডম প্রক্রিয়ায় নতুন তথ্য যোগ অহরহ হয় বলে যে দাবী করলেন এটা এক্সাজারেশন। বরং, র্যানডম প্রক্রিয়ায় নতুন তথ্য যোগ হওয়া সম্ভব হলেও তার জন্য প্রয়োজনীয় অর্গানিজম আপনি পৃথিবীর ইতিহাসে খুজে পাবেন না। বস্তুত, চারটি সাইমুলটেনিয়াস মিউটেশনের জন্য দরকার ১০^৪০ টি ব্যাকটেরিয়া (অর্গানিজম)। যা পৃথিবীর ইতিহাসে যতগুলো ব্যাকটেরিয়া তৈরী হয়েছে তার সমান। (২)
[বি.দ্র.: এই লেখাতে মূলত জীবজগতের গাঠনিক ভাষা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।]
ছোটবেলায় আমাদের অনেকের মা-বাবা আমাদের বর্ণমালা শেখানোর জন্য এক ধরণের খেলনা কিনে দিতেন। প্লাস্টিকের তৈরী চৌকা (বর্গক্ষেত্র) আকৃতির খেলনাগুলোতে বর্ণমালার বিভিন্ন অক্ষর লিখা থাকতো। উদ্দেশ্য, আমরা খেলাচ্ছলে বর্ণমালা শিখে নেবো। সাথে, বর্ণ ব্যবহার করে শব্দ গঠনও করতে পারবো।
ধরুন, আপনাকে এ ধরণের কয়েক সেট বর্ণমালা দেয়া হয়েছে। বর্ণমালায় স্বরবর্ণ ও ব্যাঞ্জন বর্ণের পাশাপাশি ‘কার’ চিহ্নিত চৌকা আছে। এ অবস্থায় আপনি সবগুলো চৌকা হাতে নিয়ে যদি টেবিলে ফেলেন তাহলে কি অর্থপূর্ণ বাক্য গঠন হওয়ার কোন সম্ভাবনা আছে? অবশ্যই না। হ্যাঁ, হতে পারে অর্থপূর্ণ ছোট দু’একটি শব্দ হয়ে গেল। যেমন: বল, কলম ইত্যাদি। কিন্তু, শব্দে অক্ষরের এবং ‘কার’-এর সংখ্যা যতই বাড়বে ততই ‘বাই চান্স’ অর্থপূর্ণ শব্দ তৈরী হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে। যেমন: ‘আকাশ’ ও ‘হতবিহ্বল’ শব্দ দু’টিতে যথাক্রমে ৫টি ও ৭টি চৌকা লাগবে। অন্যদিকে, ‘বল’ ও ‘কলম’ শব্দ দু’টিতে যথাক্রমে ২টি ও ৩টি চৌকা লাগবে। ফলে, ‘আকাশ’ ও ‘হতবিহ্বল’ শব্দ দুটি বাই চান্স তথা র্যাণ্ডমলি হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।
আবার, চৌকাগুলো র্যাণ্ডমলি ফেললে যদি কতগুলো অর্থপূর্ণ শব্দ তৈরী হয়েও যায়, তথাপি তা একটি অর্থপূর্ণ বাক্য গঠন করবে না। যেমন: মনে করি, টেবিলে দেখা গেলো ‘বল কলম আকাশ’, এটা কোন অর্থপূর্ণ বাক্য প্রকাশ করলো না। তবে, এক্ষেত্রেও ছোট ছোট অর্থপূর্ণ বাক্য প্রকাশ পেয়ে যেতে পারে। যেমন: আমি যাই। কিন্তু বাক্য যতই বড় হবে ততই র্যাণ্ডমলি তৈরী হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।
উপরের চিত্রে দেখা যাচ্ছে যে চৌকাগুলো র্যাণ্ডমলি ফেলে রাখা হয়েছে তাতে দু’অক্ষরের একাধিক অর্থপূর্ণ শব্দ (যেমন: GO, TO) পাওয়া যাচ্ছে। ভালমত খুঁজলে দু-একটি তিন অক্ষরের অর্থপূর্ণ শব্দও পাওয়া যেতে পারে। তবে, চার অক্ষরের যে শব্দটি (LOVE) ওপরের দিকে আছে, তা দেখামাত্রই বলে দেয়া যায় যে কেউ একজন এগুলো এভাবে সাজিয়েছে, র্যাণ্ডমলি হয়নি। চার অক্ষরের দুটো শব্দ মিলে যে শব্দটি (HAND-MADE) তৈরী করেছে সেটি র্যাণ্ডমলি হওয়া যে প্রায় অসম্ভব, তা বলাই বাহুল্য।
এবার মনে করুন, আপনার চৌকাগুলোতে এক বিশেষ ধরণের চুম্বক লাগানো আছে, যাতে আপনার চৌকাগুলোর একটি আরেকটির সাথে সুনির্দিষ্ট তথা স্পেসিফিক নিয়মে লেগে যাওয়ার প্রবণতা আছে। ধরি, ‘ক’ চিহ্নিত চৌকার প্রবণতা হলো ‘ল’ এর সাথে পাশাপাশি লেগে যাওয়া। তাহলে, এ ধরণের বর্ণমালা দিয়ে ‘বাই চান্স’ তো দূরে থাক, আপনি নিজে থেকে কি কোন শব্দ লিখতে পারবেন? উত্তর: না। কারণ, ‘ক’-এর পরে ‘স’ যুক্ত করতে প্রয়োজন হলেও আপনি আটকে যাবেন। কিন্তু, চৌকাগুলোর প্রবণতা যদি এমন হতো যে একটির সাথে আরেকটি স্পেসিফিক ভাবে না লেগে পাশাপাশি যেকোন বর্ণের সাথে হালকা ভাবে লাগে, তাহলে আপনার যেকোন শব্দ তৈরী করতে কোন সমস্যা হতো না এবং র্যাণ্ডমলি যে ছোট শব্দ বা বাক্যগুলো হতো সেগুলোও সাধারণ চৌকার মত বিচ্ছিন্ন না থেকে একটু লেগে থাকতো, অর্থাৎ স্থায়ী হতো। তবে এক্ষেত্রে ‘বাই চান্স’ হওয়া মানে আরেক সমস্যা। কারণ, দেখা যেত, যখনই ‘কলম’ লেখাটা তেরী হয়েছে পরক্ষণেই ‘ব’ এবং ‘শ’ বা অন্য যেকোন অক্ষর পাশে এসে ‘বকলমশ’ বানিয়ে ফেলেছে, তথা অর্থহীন করে ফেলেছে। অর্থাৎ, এমতাবস্থায় অর্থপূর্ণ শব্দগুলোকে পাশাপাশি রাখার জন্য একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তির সার্বক্ষণিক অবস্থান প্রয়োজন হয়ে পড়ত।
উপরের আলোচনা থেকে আমরা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বুঝতে পারলাম তা হলো:
১. আমরা যদি কোন প্রক্রিয়ায় কোন তথ্য সংরক্ষণ করতে চাই, সেই প্রক্রিয়াটিতে এমন কতিপয় পৃথক পৃথক অংশ থাকবে যেগুলোকে যেকোন ভাবে সাজানো যায়।
২. উক্ত অংশগুলোর পরস্পরের মধ্যে আকর্ষণ থাকতে পারে, কিন্তু সুনির্দিষ্ট ‘আকর্ষণ’ থাকা যাবে না।
৩. এ ধরণের পৃথক পৃথক অংশগুলো র্যাণ্ডমলি যুক্ত হয়ে অর্থপূর্ণ কোন শব্দ এবং বাক্য গঠন করার একটি সীমা আছে। তবে, সেই সীমা খুবই সংকীর্ণ তথা ছোট।
এবার আসুন এ ধরণের একটি তথ্যসংরক্ষণ ব্যবস্থা সম্পর্কে জানি যা প্রতিনিয়ত আমরা ব্যবহার করে চলেছি। তা হলো কম্পিউটার। হ্যাঁ, কম্পিউটারে ‘বাইনারী’ নাম্বার দিয়েই বিভিন্ন ধরণের তথ্য, যেমন: প্রোগ্রামের নির্দেশনা, ডকুমেন্ট, ইমেজ ইত্যাদি সংরক্ষণ করা হয়।
আমরা জানি, আমরা যে অংক ব্যবহার করে হিসেব নিকেশ করি সেটি হলো ‘দশমিক’ বা ‘ডেসিমাল’ সংখ্যা। অর্থাৎ, ১ থেকে ১০ পর্যন্ত গিয়ে এরপর আবার ১,২,৩.. যোগ করে তথা ১১, ১২, ১৩… এভাবে সংখ্যা গননা করতে থাকি। কিন্তু সংখ্যা গননা ইচ্ছা করলে এভাবেও করা যায়, ১,১১,১১১,১১১১,…..,১১১১১১১১১১ (তথা ১,২,৩,৪,…….১০)। একে বলে ‘ইউনারী’ সংখ্যা। এভাবে একশ লিখতে গেলে পরপর একশটি ১ বসাতে হবে। অর্থাৎ এভাবে হিসেব করা সহজ হলেও স্থান অনেক বেশী দরকার হয়ে পড়ে। আবার, সংখ্যাকে ‘দ্বিমিক’ বা ‘বাইনারী’ আকারেও প্রকাশ করা যায়। অর্থাৎ, ০,১,১০,১১,১০০,….১০১০ (তথা, ০,১,২,৩,৪,….১০)। দেখা যাচ্ছে এভাবে সংখ্যা প্রকাশ করলে যায়গা তুলনামূলক কম লাগছে। ‘দশমিক’ সংখ্যাকে ‘দ্বিমিক’ সংখ্যায় রূপান্তর করা যায় আবার বিপরীতটাও করা যায়।
লক্ষ্যণীয়, বিদ্যুতের উপস্থিতি অনুপস্থিতির উপর ভিত্তি করে আমরা ইচ্ছে করলে দ্বিমিক সংখ্যাকে সংরক্ষণ করতে পারি। সিলিকন ট্রানজিস্টরের মধ্যে এ ধরণের একটি পদ্ধতি তৈরী করা হয়। যেখানে বিদ্যুতের উপস্থিতি হচ্ছে ‘১’ এবং বিদ্যুতের অনুপস্থিতি ‘০’। এভাবে তৈরীকৃত অনেকগুলো ট্রানজিস্টরকে যদি একসাথে পাশাপাশি রাখা যায় তাহলে সেগুলোতে সংখ্যা সংরক্ষণ করা যাবে।
কিন্তু কতগুলো ট্রানজিস্টরকে একসাথে রেখে আমরা একটি ‘একক’ ধরবো? কারণ, যদি একটি ট্রানজিস্টরকে একক ধরি তাহলে মাত্র দুটো সংখ্যা সংরক্ষণ করা যাচ্ছে ০ এবং ১। কিন্তু যদি ৮টি ট্রানজিস্টরকে একত্রে রাখা যায় তাহলে সর্বোচ্চ যে সংখ্যাটি রাখা যাবে তা হলো: ১১১১১১১১, দশমিকে যার মান ২৫৫। তুলনামূলক বড় সংখ্যা। আরও বেশী ট্রানজিস্টরকে একত্রে রাখা সম্ভব, কিন্তু সেক্ষেত্রে জায়গা বেশী লেগে যাবে। ফলে, সাধারণত ৮টি ট্রানজিস্টরকে একত্রে রাখা হয়। এর প্রতিটিকে এক ‘বিট’ বলে এবং পুরো ৮টি বিটকে একত্রে বলে ‘বাইট’।
চিত্রে একটি ৮ বিট শিফট রেজিস্টার দেখা যাচ্ছে। ৮ বিটের মেমোরী আইসিগুলোও (ইন্টেগ্রেটেড সার্কিট) অনেকটা এভাবেই সাজানো হয়।
৮টি বিট দিয়ে না হয় সংখ্যা সংরক্ষণ করা যায়। কিন্তু, আমি যদি অক্ষর সংরক্ষণ করতে চাই? তা-ও সম্ভব। কীভাবে? এটা বুঝা যায়, সাংকেতিক ভাষা ব্যবহারের উদাহরণ থেকে। আমরা অনেকেই ছোট বেলায় এরকম খেলেছি যে, আমি একটি শব্দ লিখব তবে সে শব্দে ‘খ’ বলতে ‘ক’ বুঝাবো এবং এভাবে বর্ণমালার অক্ষরগুলোকে এক অক্ষর করে পিছিয়ে দেবো। এভাবে কোন শব্দ লিখলে আমি কী ধরণের নিয়ম ব্যবহার করেছি সেটি যে জানবে তার পক্ষে শব্দটির অর্থ বুঝা সহজ হবে। অর্থাৎ, আমরা ইচ্ছে করলে ‘ক’ বর্ণটিকে অন্য কিছু দিয়ে প্রকাশ করতে পারি। ঠিক একইভাবে, একটি বাইটের মধ্যে যদি বিভিন্নভাবে বর্ণমালাকে জুড়ে দেয়া যায় তাহলেও লেখা সংরক্ষণ করা যাবে। American Standard Code for Information Interchange, সংক্ষেপে ASCII হচ্ছে এ ধরণের একটি নীতিমালা যেটি অনুযায়ী কম্পিউটারের বিভিন্ন ইন্সট্রাকশনগুলো, যেমন: ‘কী-বোর্ডের’ বিভিন্ন ‘কী’-গুলো বাইনারী নাম্বারের সাথে চিহ্নায়িত করা থাকে। (http://www.ascii-code.com/) অর্থাৎ, আপনি যখন কী-বোর্ডে ‘A’ লিখেন, র্যামে তা ‘০১০০০০০১’ হিসেবে সংরক্ষিত হয়।
আমেরিকান স্ট্যাণ্ডার্ড কোড ফর ইনফরমেশন ইন্টারচেঞ্জ। লক্ষ্যণীয়, A-এর কোড হচ্ছে ‘1000001’। এখানে ৭টি বিট আছে। প্রথম বিটটিকে (তথা অষ্টম) রাখা হয় অংকের মাইনাস বা প্লাস বুঝানোর জন্য।
হার্ডডিস্কে কীভাবে সংরক্ষণ হয়? বিষয়টি খুবই মজার। আমরা জানি, চৌম্বক পদার্থগুলোর ভিতরে ডাইপোল থাকে। তড়িৎক্ষেত্র প্রবাহিত করে যেগুলোর পোলারিটি ঘুরিয়ে দেয়া যায়। এরকম ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঘনকাকৃতির চৌম্বক পদার্থ (যেমন: হার্ডডিস্কে ব্যবহৃত কোবাল্ট ভিত্তিক সংকর ধাতু)-কে যদি পাশাপাশি সাজানো যায় তাহলেও বাইনারী ডিজিট সংরক্ষণ করা যাবে। সেক্ষেত্রে ধরুন: ‘>’-কে ‘এক’ এবং ‘<’ কে ‘শূণ্য’ ধরা হলো। সেক্ষেত্রে, ‘A’ লিখলে হার্ডডিস্কে তা ‘<><<<<<>’ এভাবে সংরক্ষিত থাকবে।
চিত্রে হার্ডডিস্কের কোবাল্ট বেজ্ড্ ম্যাগনেটিক অ্যালয় দিয়ে কীভাবে বাইনারী তথ্য রেকর্ড করা এবং পড়া হয় তা দেখা যাচ্ছে।
যাই হোক, এবার লক্ষ্য করুন, হার্ডডিস্কে কিংবা র্যামে আমরা ডাটা সংরক্ষণ করতে পারছি কারণ ডাটা সংরক্ষণের ক্ষুদ্র অংশগুলো পরস্পরের সাথে সুনিদিষ্ট আকর্ষণে আবদ্ধ নয়। স্পষ্টতই, হার্ডডিস্কের উপর দিয়ে যদি কোন র্যাণ্ডম ম্যাগনেটিক ঝড় বয়ে যায় সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য সংরক্ষণ হবে না। আবার, র্যাণ্ডম প্রক্রিয়ায় যদি একটি বিট পরিবর্তন হয়ে যায়, গুছানো তথ্য ধ্বংস হবে এবং একটি নির্দিষ্ট সংক্ষিপ্ত সীমার বাইরে অর্থবহ তথ্য যুক্ত হবে না।
এবার চলুন আমরা এরকম আরও মজার একটি বর্ণমালা নিয়ে কথা বলি। হ্যাঁ, তা আর কিছু নয় জীবজগতের গাঠনিক ব্লুপ্রিন্ট সংরক্ষণকারী বর্ণমালা- ‘ডিএনএ’।
ডিএনএ-র বর্ণমালায় বর্ণ মাত্র চারটি এবং কোন যতি চিহ্ন নেই। এডেনিন (A), থায়ামিন (T), গুয়ানিন (G) এবং সাইটোসিন (C)। এই চারটি অণু এমন যে, এগুলো পরস্পর পাশাপাশি ফসফেট বন্ধনে যুক্ত হয়। কিন্তু, এই বন্ধনে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে তাদের পারস্পরিক স্পেসিফিক এফিনিটি কাজ করে না। স্পেসিফিক এফিনিটি কাজ করলে ডাটা সংরক্ষণ করা যায় না, উপরে আমরা তা দেখেছি। লক্ষ্যণীয় যে, উপরোক্ত প্রতিটি অনুকে বলে নাইট্রোজেন বেজ। উক্ত নাইট্রোজেন বেজগুলো ডিঅক্সিজেনেটেড রাইবোজ-এর সাথে সংযুক্ত থাকে, যাদেরকে বলে নিউক্লিওসাইড। প্রতিটি নিউক্লিওসাইডের রাইবোজ সুগারে ফসফেট যুক্ত হলে গঠিত হয় নিউক্লিওটাইড। মূলত এই নিউক্লিওটাইড-ই হলো ডি-অক্সিরাইবো-নিউক্লিইক-এসিড তথা ডিএনএ-র গাঠনিক একক। অর্থাৎ, এরকম একেকটি নিউক্লিওটাইড অণু পাশাপাশি যুক্ত হয়ে যে পলিনিউক্লিওটাইড চেইন গঠন করে তাকেই বলে ডিএনএ।
আমরা চিত্রটির ডানদিকে ডিএনএ ডাবল হেলিক্স-এর অংশ দেখতে পাচ্ছি। বামদিকে দেখানো হয়েছে যে, ডিএনএ-তে কীভাবে নিউক্লিওটাইডগুলো পরস্পরের সাথে সংযুক্ত হয়। লক্ষ্যণীয়, ডাবল হেলিক্স গঠনের ক্ষেত্রে পাশাপাশি দুটো চেইনের একটির A অপরটির T এর সাথে এবং একটির C অপরটির G এর সাথে ও ভাইস ভারসা হাইড্রোজেন বন্ধন দিয়ে যুক্ত হয়।
প্রশ্ন হলো, ATGC বর্ণগুলোকে তো বিভিন্ন ভাবে সাজানো যেতে পারে, সেক্ষেত্রে আমরা তথ্য সংরক্ষণের একক হিসেবে কোনটি ঠিক করবো? এটি নির্ভর করছে আমি কী ধরণের তথ্য সংরক্ষণ করতে চাই এবং কী ধরণের ‘সংকেত’ চিহ্নিত করতে চাই তার উপর। উপরের কম্পিউটারের উদাহরণে আমরা দেখেছি, বাইনারী ডিজিটে বর্ণ দুটি, ‘০’ এবং ‘১’। আমি যদি দুটি নিয়ে একক করি তাহলে সাজানো যাবে এইভাবে: ০০,০১,১০,১১; তিনটি করে নিলে: ০০০,০০১,০১০,০১১,১০০,১০১,১১০,১১১; অর্থাৎ খুব বেশী সংকেত চিহ্নিত করা যাবে না। অন্যদিকে, আমি যেহেতু অনেকগুলো পৃথক নির্দেশনা বা অক্ষর চিহ্নিত করতে চাচ্ছি, সেহেতু ‘একক’টি এমন হলে ভাল হয় যে বেশী বড়ও না আবার এমন ছোটও না যে সবগুলো সংকেত সংরক্ষণ করা যাবে না। এ হিসেবে কম্পিউটারের একক হলো ‘০০০০০০০০’ তথা ‘৮’ বিট।
ডিএনএ-র ক্ষেত্রে আমার সংকেতগুলো হলো অ্যামাইনো এসিড। যদিও প্রকৃতিতে অনেক অ্যামাইনো এসিড আছে, আমি বিশটির বেশী ব্যবহার করবো না। এখন, ATGC থেকে যদি দুটো করে বর্ণ নিই, তাহলে মাত্র ষোল ভাবে সাজানো যায়: AA,AT,AG,AC,TA,TT,TG,TC,GA,GT,GG,GC,CA,CT,CG এবং CC। অর্থাৎ বিশটি অ্যামাইনো এসিডকে নির্দেশিত করতে পারছি না। চারটি করে নিলে সাজানো যাবে ২৫৬ ভাবে। এত বেশী একক আমার প্রয়োজন পড়ছে না। তদুপরি, চারটি করে সাজালে আমার জায়গা বেশী লেগে যাচ্ছে। কিন্তু, তিনটি করে নিলে ৬৪ উপায়ে সাজানো যায়। এ প্রক্রিয়ায় ২০টি অ্যামাইনো এসিডকে খুব সহজেই চিহ্নায়িত করা যাচ্ছে। এছাড়াও, অনেকগুলো অ্যামাইনো এসিডকে আমি একাধিক ‘কোডন’ দিয়ে চিহ্নিত করতে পারছি। (লক্ষ্যণীয়, ডিএনএ-তে ৩টি অক্ষরের এই একককে কোডন বলে)।
প্রশ্ন হলো, আমি একটি অ্যামাইনো এসিডের বিপরীতে কোন্ কোডনকে চিহ্নায়িত করবো? যেমন: GGG কোড করে গ্লাইসিনকে, GAG কোড করে গ্লুটামিক এসিডকে। কিন্তু, GGG এলানিনকে কোড না করে গ্লাইসিনকে কোড করবে এটা কেন নির্ধারণ করবো? ওয়েল, এক্ষেত্রে আমার পরিকল্পনা হবে কোষ বিভাজন হওয়াকালীন ডিএনএ কপি করার সময় যদি র্যাণ্ডমলি একটি অক্ষর পরিবর্তন হয়ে যায় (মিউটেশন) সেক্ষেত্রে অ্যামাইনো এসিড যেন পরিবর্তন না হয় (সাইলেন্ট মিউটেশন)। আবার, বিশ ধরণের অ্যামাইনো এসিডে কতগুলো পোলার, কতগুলো নন-পোলার, কতগুলো এসিডিক এবং কতগুলো বেসিক, কতগুলোতে ‘রিং’ আকৃতির সাইড চেইন আছে কতগুলোতে নেই। প্রোটিনের ত্রিমাত্রিক গঠন নির্মাণ এবং ফাংশন নির্ধারণে এই বিভিন্ন ধরণের অ্যামাইনো এসিডগুলোর সুনির্দিষ্ট গাঠনিক ও রাসায়নিক ভূমিকা আছে। এ কারণে আমি চেষ্টা করবো কোডনগুলো এমনভাবে নির্ধারণ করতে যেন মিউটেশনের কারণে যদি অ্যামাইনো এসিড পরিবর্তন হয়েও যায়, তথাপি যেন একই ধরণের অন্য একটি এমাইনো এসিডে পরিবর্তন হয়। মজার বিষয় হলো, জীবজগতে যে কোডন পাওয়া গেছে তা এই ধরণের বৈশিষ্ট্যগুলোকে মাথায় রেখে নির্ধারণ করা হয়েছে। তদুপরি, জীবজগতের প্রায় সকল ক্ষেত্রেই এই কোডনের নীতিমালা সুনির্দিষ্ট অর্থাৎ ইউনিভার্সাল। কারণটা খুব সহজ- একাধিক ভাষা ব্যবহার করার চেয়ে একটি ভাষা ব্যবহার করাই সুবিধাজনক।
উপরে আমরা ইউনিভার্সাল জেনেটিক কোডের চার্ট দেখতে পাচ্ছি। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, কোডন সিস্টেমটি এমনভাবে সিলেক্ট করা হয়েছে যেন মিউটেশনের ইফেক্ট সর্বোচ্চ মিনিমাইজ করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, ফিনাইল এলানিনকে (Phe) কোড করে UUU এবং UUC। অর্থাৎ UUU মিউটেশন হয়ে UUC হয়ে গেলেও এমাইনো এসিড একই থাকবে। আবার, যদি UUU পরিবর্তন হয়ে UAU হয়ে যায় তাহলে ফিনাইল এলানিন পরিবর্তন হয়ে টাইরোসিন (Tyr) হবে, যা কাছাকাছি গঠনযুক্ত। কিংবা, যদি CUU হয়ে যায় সেক্ষেত্রে হচ্ছে লিউসিন (Leu)। এটিও ত্রিমাত্রিক গঠনের দিক দিয়ে ফিনাইল এলানিনের কাছাকাছি।
এই যে একটি কোডনের সাথে একটি অ্যামাইনো এসিডকে আমি ‘অ্যাসাইন’ করছি, তা কি র্যাণ্ডমলি একা একা হতে পারবে? যে কোন সচেতন পাঠকের কাছে পরিস্কার যে তা সম্ভব নয়। প্রকৃতপক্ষে, একটি বিষয়ের সাথে আরেকটি বিষয়কে এসাইন বা সম্পর্কযুক্ত করার তথা একটি বিষয়ে আরেকটি বিষয়ের অর্থ নির্ধারণ করে দেয়া ‘বুদ্ধিমান’ স্বত্তার কাজ। কোন অন্ধ প্রক্রিয়ায় তা কখনও হয় না। এর মধ্যে আবার তা যদি হয় ‘অপটিমাম’ বা ‘বেস্ট’ কোডন নির্ণয় করা, তাহলে তো আরও সম্ভব নয়।
এছাড়াও, এই বর্ণগুলো যদি পরস্পরের সাথে স্পেসিফিক এফিনিটি দেখাতো তাহলেও তথ্য সংরক্ষণ করা সম্ভব হতো না। অর্থাৎ, A কেবল G-এর পাশে বসতে পারবে, C কেবল T-এর পাশে বসতে পারবে, অণুগুলোর রাসায়নিক আসক্তি এমন হলে তা কোন অ্যামাইনো এসিডকে কোড করতে পারতো না।
এবারে আসি প্রোটিনের কথায়। প্রোটিনকেও আরেক ধরণের ভাষা বলা যায় যার বর্ণমালায় বর্ণ আছে ২০টি। পোলারিটি, অম্ল-ক্ষার বৈশিষ্ট্য, বেনজিন রিং-এর উপস্থিতি ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যের আলোকে প্রতিটি অ্যামাইনো এসিড বর্ণ বিভিন্ন অর্থ ধারণ করে। আর এই বৈশিষ্ট্যকে কাজে লাগিয়ে তৈরী হয় একেকটি বাক্য তথা অ্যামাইনো এসিডের সরলরৈখিক সিকোয়েন্স। একে আবার প্রোটিনের প্রাইমারী স্ট্রাকচার বলা হয়। উক্ত সিকোয়েন্স, অ্যামাইনো এসিডের বিভিন্ন মাত্রার কেমিক্যাল এফিনিটির উপর ভিত্তি করে আলফা হেলিক্স, বিটা শিট ইত্যাদি বিশেষায়িত গঠন তৈরী করার মধ্য দিয়ে প্রোটিনের সেকেণ্ডারী স্ট্রাকচার তৈরী করে। এরপর, নির্দিষ্ট আকৃতিতে ভাঁজ (ফোল্ড) হয়ে তৈরী করে সুনির্দিষ্ট ত্রিমাত্রিক গঠন বা টারসিয়ারী স্ট্রাকচার। এ রকম দুটো বা ততোধিক প্রোটিন সমন্বয়ে তৈরী হয় কোয়ার্টারনারী স্ট্রাকচার। এনজাইমগুলো সাধারণত একটি প্রোটিন দিয়ে গঠিত হয়, আর বিভিন্ন গাঠনিক কাঠামো যেমন: আয়ন চ্যানেল তৈরী হয় একাধিক প্রোটিনের সমন্বয়ে।
ইলাস্ট্রেশনটিতে আমরা দেখতে পাচ্ছি জীবজগতে প্রাপ্ত ২১ ধরণের এমাইনো এসিড। তন্মধ্যে, সেলেনোসিস্টিন অল্প কিছু বিশেষায়িত প্রোটিনে পাওয়া যায় বিধায় সাধারণভাবে প্রোটিনের গাঠনিক একক পড়ার সময় এর উল্লেখ দেখা যায় না।
লক্ষ্যণীয়, কম্পিউটারের ভাষার ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি বাইনারী ভাষা দিয়ে ইংরেজী ভাষা সংরক্ষণ করা হয়। অন্যকথায়, একটি ভাষা দিয়ে আরেকটি ভাষা সংরক্ষণ করা যায়। তেমনি প্রোটিনের ভাষাকে সংরক্ষণ করে ডিএনএ-র ভাষা। আরও লক্ষ্যনীয়, প্রোটিনের ভাষায় বর্ণ ২০টি হওয়ায় এবং উক্ত বর্ণগুলোর আণবিক বৈশিষ্ট্য বিভিন্ন হওয়ায় ভাব প্রকাশের সীমানা অনেক বেড়ে গেলো। অর্থাৎ প্রোটিনের ২০টি অণু দিয়ে অনেক বৈচিত্রপূর্ণ ত্রিমাত্রিক গঠন সম্ভব। ফলে, প্রোটিন এনজাইম থেকে শুরু করে কোষের বিভিন্ন গাঠনিক উপাদান তৈরীতে ভূমিকা রাখে। কিন্তু, ডিএনএ-র বর্ণমালার বর্ণের আণবিক বৈশিষ্ট্য ও সংখ্যা সীমিত হওয়ায় ডিএনএ বৈচিত্রপূর্ণ ত্রিমাত্রিক গঠন তৈরী করতে পারে না।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে কীভাবে অ্যামাইনো এসিডগুলো একটার পাশে আরেকটা যুক্ত হয়ে চূড়ান্ত ত্রিমাত্রিক প্রোটিন তৈরী করে। বিষয়টি যত সহজ শুনতে ততটাই কঠিন বাস্তবে, কী বলেন?
আমরা জানি, ডিএনএ-তে দুটি পলিনিউক্লিওটাইড চেইন পাশাপাশি থেকে প্যাঁচানো মই-এর মত গঠন তৈরী করে, যাকে ইংরেজীতে বলে ডাবল হেলিক্স। ডিএনএ থেকে প্রোটিন তৈরীর প্রক্রিয়ায় প্রথমে ডিএনএ থেকে সম্পূরক ম্যাসেঞ্জার আরএনএ তৈরী হয়। এ প্রক্রিয়ায় শুরুতে ডিএনএ ডাবল হেলিক্স এর মধ্যে বন্ধন খুলে একটি চেইনকে পড়ার জন্য উন্মুক্ত করতে হয়। এ প্রক্রিয়াটি করে একটি বিশেষায়িত প্রোটিন তথা এনজাইম। এরপর আরেকটি বিশেষায়িত এনজাইম এসে উক্ত চেইনকে পড়ে সম্পূরক আরএনএ চেইন তৈরী করে। অতঃপর, একটি এনজাইম লাগে উন্মুক্ত করা অংশ পুনরায় জোড়া লাগাতে, একটি এনজাইম লাগে প্রুফ রিড করতে, দুটি লাগে জোড়া লাগানোর সময় বেশী পেঁচিয়ে গেলে প্যাঁচ খুলতে। প্রসঙ্গত, আরএনএ-এর সাথে ডিএনএ-র পার্থক্য হল- আরএনএ-এর নিউক্লিওটাইডে তথা আরএনএ-র বর্ণমালার অক্ষরগুলোতে একটি অক্সিজেন অণু বেশী থাকে এবং আরএনএ-তে থাইমিনের (T) পরিবর্তে ইউরাসিল (U) থাকে। প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক যে, তথ্য পরিবহন করে নেয়ার জন্য ডিএনএ-র পরিবর্তে আরএনএ-কে কেন বাছাই করা দরকার হলো? একটি উত্তর হলো, যে পদ্ধতিটির মধ্যে আমি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রাখতে চাই স্বাভাবিক ভাবেই তাকে আমি আলাদাভাবে সংরক্ষণ করতে চাইব। তদুপরি, আরএনএ-র আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো এটি ডিএনএ-র চেয়ে একটু বেশী বৈচিত্রের গঠন তৈরী করতে পারে।
এক নজরে ডিএনএ থেকে প্রোটিন সংশ্লেষ পদ্ধতি। ছবিটিতে সংশ্লেষের কাজে অংশগ্রহণকারী এনজাইমগুলোকে দেখানো হয়নি।
এরপর, ম্যাসেঞ্জার আরএনএ থেকে রাইবোজোম নামক আণবিক মেশিনের সহায়তায় প্রোটিন সংশ্লেষ হয়। রাইবোজোম নামক মেশিনটি তৈরী হয় রাইবোজোমাল আরএনএ ও অনেকগুলো প্রোটিনের সমন্বয়ে। প্রোটিন তৈরীর প্রক্রিয়ায় আর এক ধরণের আরএনএ সাহায্য করে- ট্রান্সফার আরএনএ বা টি-আরএনএ । এদের কাজ হলো রাইবোজোমের কাছে অ্যামাইনো এসিড বহন করে নিয়ে যাওয়া। বিশটি অ্যামাইনো এসিডের জন্য এরকম বিশ ধরণের সুনির্দিষ্ট ট্রান্সফার আরএনএ থাকে। আবার, প্রত্যেক ধরণের টি-আরএনএ-র সাথে তৎসংশ্লিষ্ট অ্যামাইনো এসিড সংযুক্ত করার জন্য বিশটি সুনির্দিষ্ট ও পৃথক এনজাইম (অ্যামাইনো এসাইল ট্রান্সফারেজ) থাকে। এছাড়াও, রাইবোজোমে দুটো পাশাপাশি অ্যামাইনো এসিডের বন্ধন তৈরী করার জন্য কাজ করে আলাদা এনজাইম।
উপরের বর্ণনা থেকে লক্ষ্যণীয়, ডিএনএ-তে প্রোটিন তৈরী তথ্য ধারণ করা থাকে। আবার, উক্ত তথ্যকে কাজে লাগিয়ে প্রোটিন তৈরী করার জন্য দরকার অনেকগুলো আরএনএ এবং সুনির্দিষ্ট প্রোটিন (এনজাইম)। যদি প্রশ্ন করা হয়, কীভাবে আদিম পরিবেশে কোষের উদ্ভব হল? স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন চলে আসে, কোন্টা আগে আসলো- ডিএনএ নাকি প্রোটিন নাকি আরএনএ? আমরা দেখছি তিনটি জিনিস একসাথে ও পরস্পরজড়িতভাবে উদ্ভব না হলে এই সিস্টেমটি চালুই হচ্ছে না। ইনটুইটিভলি, কোন প্রকার র্যাণ্ডম অনিয়ন্ত্রিত প্রক্রিয়ায় তা সম্ভব নয়।
প্রোটিন (তথা এনজাইম) আগে আসবে? রিডিং টেমপ্লেট (অর্থাৎ ডিএনএ) না থাকলে প্রোটিন কাজ করবে কার উপর? তদুপরী, ১৫০টি অ্যামাইনো এসিড দিয়ে নির্মিত একটি মাঝারি সাইজের সুনির্দিষ্ট প্রোটিন আসাও গাণিতিকভাবে অসম্ভব একটি ব্যাপার। ডগলাস এক্স-এর হিসেবে অনুযায়ী এর সম্ভাব্যতা ১০১৬৪। [১] অন্যদিকে, বিল ডেম্বস্কি দেখিয়েছেন বিশ্বজনীন সম্ভাব্যতার সীমা ১০১৫০। [২] অর্থাৎ, যে কোন র্যাণ্ডম ঘটনা এই সীমাকে ছাড়িয়ে গেলে আমাদের মহাবিশ্বে তা ঘটার সম্ভাবনা নেই। একটি মাঝারি সাইজের প্রোটিনের এই অবস্থা। অথচ, আরএনএ পলিমারেজ এনজাইম ১০০০-এর বেশী অ্যামাইনো এসিড যুক্ত তিনটি প্রোটিনের সমন্বয়ে গঠিত হয়।
ডিএনএ আগে আসবে? ডিএনএ থেকে তথ্য পড়বে কে? যদি ডিএনএ অণু এমন কোন গঠন তৈরী করতে সক্ষম হত যা এনজাইমের মত কাজ করে তাহলেও চিন্তা করার সুযোগ থাকতো। কিন্তু, আমরা আগেই বলেছি ডিএনএ বৈচিত্রপূর্ণ গঠন তৈরী করতে পারে না। সুতরাং বাকী রইল আরএনএ। আরএনএ কি কেমিকেল এভল্যুশন তথা এবায়োজেনেসিসকে উদ্ধার করতে পারবে?
বিজ্ঞানীরা ল্যাবরেটরীতে এমন এক ধরণের আরএনএ সংশ্লেষ করতে পেরেছেন যা নিয়ন্ত্রিত ও সুনির্দিষ্ট পরিবেশে এনজাইম হিসেবে কাজ কোরে আরএনএ পলিমারাইজেশনেকে প্রভাবিত করতে পারে। অর্থাৎ, একটি সম্পূরক আরএনএ টেমপ্লেট-এর বিপরীতে নিউক্লিওটাইড (A এর বিপরীতে U, U এর বিপরীতে A, G এর বিপরীতে C, এবং C এর বিপরীতে G) যোগ করার মাধ্যমে নিজের একটি কপি তৈরী করতে পারে। এই বিশেষ ধরণের আরএনএকে বলে রাইবোজাইম। এর মাধ্যমে তারা বলতে চাচ্ছেন যে, আদিম পরিবেশে এ ধরণের একটি রাইবোজাইম আসার মাধ্যমে সেল্ফ-রেপ্লিকেশনের সূচনা হয়েছে এবং পরবর্তীতে ‘কোন একটি উপায়ে’ কোষের উপরোক্ত বর্ণিত বিষয়গুলো আবির্ভাব হয়েছে! যেকেউ একটু মাথা খাটালেই বুঝবে এ ধরণের চিন্তা কতখানি অ্যাবসার্ড! কিন্তু কেন?
এক, পৃথিবীর আদিম পরিবেশ ল্যাবরেটরীর মত নিয়ন্ত্রিত ছিলো না।
দুই, ‘রাইবোজাইম নিজের একটি কপি তৈরী করতে পারে’ এই অবস্থা থেকে ‘আরএনএ প্রোটিনের তথ্য ধারণ করে এবং তা প্রোটিন সংশ্লেষ করে’ এই অবস্থায় যাওয়ার কোন পথ নেই। কারণ, উপরে আমরা ডিএনএ-র ক্ষেত্রে যে রকম বলেছি ঠিক তেমনি কোন্ কোডনটি কোন্ অ্যামাইনো এসিডের জন্য নির্ধারিত হবে সেটি নির্বাচন করা একটি বুদ্ধিমান ‘মাইণ্ড’-এর কাজ। তদুপরি, যদি অপটিমাম ইউনিভার্সাল কোডনের জন্য র্যাণ্ডম অনুসন্ধান করা সম্ভবও হতো, সেক্ষেত্রে প্রতি সেকেণ্ডে ১০৫৫টি অনুসন্ধান চালাতে হতো। কিন্তু, বায়োফিজিসিস্ট হার্বাট ইওকি হিসেব করে দেখিয়েছেন র্যাণ্ডম অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় ১.৪০ x ১০৭০টি সম্ভাব্য কোডনের মধ্যে উক্ত অপটিমাম কোডন সিস্টেমকে খুঁজে বের করতে হবে এবং হাতে সময় পাওয়া যাবে ৬.৩ x ১০১৫ সেকেণ্ড। [৩] এছাড়াও, রাইবোজোমে যে প্রোটিন সিনথেসিস হয় তাতে অনেকগুলো সুনির্দিষ্ট প্রোটিন ও আর-আরএনএ-র নির্দিষ্ট অবস্থানগত ও তড়িৎ-রাসায়নিক ভূমিকা আছে। অথচ, আরএনএ প্রোটিনগুলোর মত বিভিন্ন ধরণের স্ট্রাকচার গঠন করতে পারে না। কারণ, আরএনএ-র বর্ণ সংখ্যা সীমিত এবং বর্ণের কেমিক্যাল স্ট্রাকচারও অ্যামাইনো এসিডের ন্যায় বৈচিত্রপূর্ণ নয়।
তিন, রাইবোজাইম নিজের কপি করতে পারে তখনই যখন তার সম্পূরক একটি টেমপ্লেট থাকে। অর্থাৎ, আদিম পরিবেশে সেল্ফ রেপ্লিকেটিং রাইবোজাইম আসতে হলে রাইবোজাইম ও তার সম্পূরক টেমপ্লেট দুটো অণুরই একসাথে আসতে হবে। জনসন ও তার সহকর্মীরা দেখিয়েছেন যে, আংশিকভাবে নিজের কপি তৈরী করতে পারে এরকম একটি রাইবোজাইমের নিউক্লিওটাইডের সংখ্যা ১৮৯। সুতরাং, উক্ত স্পেসিফিক রাইবোজাইম এবং তৎসংশ্লিষ্ট সম্পূরক ও সুনির্দিষ্ট টেমপ্লেট-এর একসাথে আসার সম্ভাব্যতা ৪১৮৯ x ৪১৮৯ তথা ৪(১৮৯+১৮৯=৩৭৮) তথা প্রায় ১০২৭৭, যা বিশ্বজনীন সম্ভাব্যতার সীমা ১০১৫০ কে ছাড়িয়ে যায় (অর্থাৎ, অসম্ভব)। অথচ, পুরোপুরি কপি করতে পারে এরকম একটি রাইবোজাইমে নিউক্লিওটাইড সংখ্যা লাগবে আরও বেশী। অন্যদিকে, অর্গেল ও জয়েস দেখিয়েছেন যে, এরকম দুটি আরএনএ খুজে পাওয়ার জন্য ১০৪৮ টি অণু খুঁজতে হবে যা পৃথিবীর মোট ভরকে অতিক্রম করে যায়। [৪] অর্থাৎ, আমরা দেখতে পেলাম আরএনএ এবায়োজেনেসিসকে উদ্ধার করতে কোন অবস্থাতেই সক্ষম নয়।
উপরের দীর্ঘ আলোচনার মধ্য দিয়ে আমরা তথ্য প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম ভাষার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানতে পারলাম। ভাষার ব্যবহারে ইন্টেলিজেন্স-এর গুরুত্ব সম্পর্কে অভহিত হলাম। জীবজগতের ভাষার সৌষ্ঠব, বৈচিত্র ও সৌন্দর্যকে উপলব্ধি করতে সক্ষম হলাম। পরিশেষে, এ সিদ্ধান্তে এসে উপনীত হলাম যে, কোন প্রকার অন্ধ, র্যাণ্ডম, অনিয়ন্ত্রিত, বস্তুগত ও প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় জীবজগতের ভাষার আগমন অসম্ভব এবং জীবজগতের ভাষার আগমন ঘটাতে দরকার একজন বুদ্ধিমান স্বত্তার কার্যক্রম।
রেফারেন্স: ১. Meyer SC. Signature in the Cell. HarperCollins Publisher Inc. 2009; Page: 172
২. Dembsky WA. The Design Inference. Cambridge University Press. 1998; Page: 209
৩. Rana F. The Cell’s Design. Baker Books. 2009; Page: 175
৪. Stephen C. Meyer. Signature in the Cell. HaperCollins Publisher Inc. 2009; Page: 250