Category: প্রবন্ধ/Article

  • সার্বজনীন সম্ভাব্যতার সীমা

    সম্ভাব্যতা বা প্রবেবিলিটি শব্দটির সাথে আমরা সবাই পরিচিত। সাধারনের ভাষায় সম্ভাব্যতা বলতে বুঝায়- আমি কোন একটি কাজ করব কি করব না, কোথাও যাবো কি যাবো না, এ ধরনের অনিশ্চয়তামূলক ভাব প্রকাশ। গানিতিক ভাষায় সম্ভাব্যতার অর্থ কাছাকাছি হলেও এটাকে সুনির্দিষ্ট সাংকেতিক ভাষায় প্রকাশ করা হয়। চলুন সম্ভাব্যতার একেবারে সরল কিছু উদাহরণ থেকে এ সম্পর্কে ধারণা নেই। 

    সার্বজনীন সম্ভাব্যতার সীমা
    লুডুর গুটি

    সম্ভাব্যতা:

    একটি লুডুর গুটি কোটে এলোপাতাড়ী ভাবে ফেললে যে কোন একটি সংখ্যা পড়ার সম্ভাবনা = ১/৬

    দুটি গুটি লুডুর কোটে এলোপাতাড়ী ভাবে ফেললে যে কোন দুটি সংখ্যা একত্রে পড়ার সম্ভাবনা = ১/৬ * ১/৬ = ১/৩৬ = ১/৬^২

    তিনটি গুটি কোটে এলোপাতাড়ী ভাবে ফেললে যে কোন তিনটি সংখ্যা একত্রে পড়ার সম্ভাবনা = ১/৬ * ১/৬ * ১/৬ = ১/৩৯৬ = ১/৬^৩

    তিনটি গুটি ফেললে একটিতে ‘১’, দ্বিতীয়টিতে ‘২’ এবং তৃতীয়টিতে ‘৩’ পড়ার সম্ভাব্যতা = ১/৩৯৬ = ১/৬^৩

    একইভাবে, তিনটি গুটি ফেললে একটিতে ‘২’, দ্বিতীয়টিতে ‘৩’ এবং তৃতীয়টিতে ‘৬’ পড়ার সম্ভাব্যতাও = ১/৩৯৬ = ১/৬^৩

    অর্থাৎ, আপনি তিনটি ছক্কার সংখ্যাকে নির্দিষ্টভাবে বলে দিলেও সম্ভাব্না একই এবং তা ১/৩৯৬ তথা ১/৬^৩।

    লক্ষ্যনীয় এখানে ‘^‌’ চিহ্ন দিয়ে ‘টু দি পাওয়ার’ বুঝানো হচ্ছে। এবং মজার বিষয় হল আপনি ছক্কার সংখ্যা এভাবে ‘n’ সংখ্যক বাড়াতে থাকেন, তাহলে যে কোন একটি সংখ্যার পড়ার সম্ভাব্যতা হবে ১/৬^n।  

    লটারীর টিকিট:

    ধরুন, ১০ জন ব্যক্তির একটি গ্রুপ তৈরী করার হয়েছে এবং ১ জনকে উক্ত গ্রুপের লিডার হিসেবে মনোনীত করা হবে। এ প্রেক্ষিতে প্রতিটি ব্যক্তিকে ১ থেকে ৯ পর্যন্ত ৯ টি অংক এবং একজনকে ‘০’ দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে, অর্থাৎ মোট দশটি অংক। এবার, ১০টি কাগজে নাম্বারগুলো লিখে লটারী করা হলো এবং একটি কাগজ উঠানো হল। তাহলে, যে কোন একটি সংখ্যা আসার সম্ভাবনা কত? উত্তর: ১/১০।

    এরকম যদি ১০০ জন ব্যক্তির মধ্যে লটারী করা হয়, যে কোন একজনের ওঠার সম্ভাবনা = ১/১০ *১/১০ = ১/১০০। এক্ষেত্রে ‘০১’ চিহ্নিত ব্যক্তির কাগজটি ওঠার সম্ভাব্যতা যা ‘৫৬’ নম্বর ব্যক্তিটির কাগজ ওঠার সম্ভাব্যতাও তাই =১/১০০।

    মনে করুন, আপনি গুলিস্তান থেকে একটি লটারীর টিকিট কিনেছেন এই আশায় যে আপনি ১,০০,০০,০০০ (এক কোটি) টাকা পাবেন। ধরুন, লটারীর মধ্যে অঙ্কিত সংখ্যাটিতে মোটি দশটি নাম্বার আছে। যেমন: ১৩৪৫৭৮৯৬০২ ।  প্রশ্ন হলো যদি লটারী সম্পন্ন করার দিন কোন কারচুপি না হয় এবং সম্পূর্ণ এলোপাতাড়ীভাবেই যে কোন একটি সংখ্যা তোলার সম্ভাবনা থাকে আপনার এই নাম্বারটি লটারীতে ওঠার সম্ভাবনা কত?

    উত্তর: ১/১০ * ১/১০ * ১/১০* ১/১০* ১/১০* ১/১০* ১/১০* ১/১০* ১/১০* ১/১০ এর মধ্যে একবার

    = অর্থাৎ, ১/১০০,০০,০০,০০০-এর মধ্যে একবার

    = অর্থাৎ, ১০০ কোটি বারের মধ্যে একবার।

    এই সংখ্যাটাকে যদি আমরা পাওয়ারে প্রকাশ করি= ১০^১০।  সুতরাং,আপনার লটারীতে জেতার সম্ভবনা ১০^১০-মধ্যে একবার।

    মজার বিষয় হলো,আপনার সাথে অন্য যে কয়জন কিনেছে তাদেরও জেতার সম্ভবনা একই।

    প্রোবেবিলিটি রিসোর্স:

    উপকরণ

    এখন, ধরুন, আপনি নাছোড় বান্দা আপনার লটারীতে জিততেই হবে, সেক্ষেত্রে আপনি কি করবেন? আপনাকে একাধিক লটারী কিনতে হবে। আপনি যদি একশটি লটারী সংগ্রহ করেন আপনার সম্ভব্যতা বেড়ে দাড়াবে-

    = ১/১০^১০ + ১/১০^১০ +……+ ১/১০^১০ (এভাবে ১০০টি ১/১০^১০)

    = ১০০/ ১০^১০

    = ১/ ১০^৮

    অর্থাৎ, আপনার জেতার সম্ভাবনা বেড়ে দাড়ালো ১ কোটি বাড়ে একবার। কিন্তু এখনও সংখ্যাটা অনেক বড়। তাই আপনি ভাবলেন যে আপনি আপনার যেতার সম্ভাবনা আরও বাড়াবেন। এরকম করতে করতে আপনি যদি নিশ্চিতভাবেই জয়ী হতে চান আপনাকে ১০০ কোটির লটারীর কপিই কিনতে হবে। কেননা সেক্ষেত্রে আপনার জেতার সম্ভাব্যতা দাড়াবে =  ১০^১০ / ১০^১০ = ১।

    লটারীর দাম এক টাকা করে হলেও আপনার কিনতে খরচ পড়বে ১০০ কোটি টাকা। ১০০ কোটি টাকা খরচ করে ১ কোটি টাকা জিততে চেষ্টা করার কোন বোকা লোক কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না।

    এবার চিত্রটি আপনি একটু ভিন্ন ভাবে চিন্তা করুন। ধরুন, আপনি অগাধ টাকার মালিক। আপনি ১ কোটি টাকা কাউকে লটারীর মাধ্যমে দিতে চান। আপনি ১০০ কোটি লটারীর টিকিট ছাপিয়েছেন বিলি করার ইচ্ছায়। আপনি নিশ্চিত হতে চান যে একজন ব্যক্তির কাছে টাকাটা পৌছুবেই। কিন্তু, কিভাবে নিশ্চিত হবেন? উত্তর: আপনাকে ১০০ কোটি মানুষের কাছেই টিকিট পৌছানো নিশ্চিত করতে হবে। কেননা সেক্ষেত্রে যে কোন একজনের হাতে প্রত্যাশিত টিকিটটি পৌছবেই। ধরুণ, আপনি সব টিকিট বিলি করেছেন কিন্তু একটি বাকি আছে। সেক্ষেত্রে-ও সম্ভবনা থেকে যাবে যে উক্ত বাকী টিকিটই বিজয়ী হবে।

    এই যে একশ কোটি লটারীর টিকিট বা একশ কোটি টিকিট ক্রেতা এদেরকে গানিতিক পরিভাষায় বলা হয় ‘প্রোবেবিলিটি রিসোর্স’। অর্থাৎ, আপনি কোন একটি এলোপাতড়ী প্রক্রিয়ায় একটি ঘটনা ঘটার সম্ভবনা বাড়াতে পারবেন সংশ্লিস্ট প্রোবেবিলিটি রিসোর্স বাড়ানোর মাধ্যমে। যেমনটা আমরা উপরে দেখেছি।

    সময়

    কিন্তু, আপনার অনেক বয়স হয়ে গেছে। আপনার হাতে সময় খুব কম। ধরে নিলাম, আপনি চান একশ কোটি লটারী নিজ হাতে বিলি করতে এবং আপনি কম্পিউটারে বসে এটি করতে চাচ্ছেন। এখন আপনি কোন বিশ্রাম না নিয়ে যদি প্রতি মিনিটে একটি করে বিলি করেন সময় লাগবে,

    = ১০০ কোটি মিনিট = প্রায় ১ কোটি ৬৬ লক্ষ ঘন্টা = প্রায় ৬ লক্ষ ৯৪ হাজার দিন = প্রায় ১ হাজার ৯০২ বছর।

    আপনি প্রতি সেকেন্ডে একটি বিলি করলে সময় লাগবে,

    = ১০০ কোটি সেকেন্ড = প্রায় ১ কোটি ৬৬ লক্ষ মিনিট  = প্রায় ২ লক্ষ ৭৭ হাজার ঘন্টা = প্রায় ১১ হাজার ৫৭৪ দিন  = ৩১ বছর

    আপনি প্রতি সেকেণ্ড ১০০টি বিলি করলে সময় লাগবে,

    = ১ কোটি সেকেন্ড =  প্রায় ১ লক্ষ ৬৬ হাজার মিনিট = প্রায় ২ হাজার ৭৭৭ ঘন্টা = প্রায় ১১৫ দিন = ০.৩১ বছর প্রায়

    অর্থাৎ, সময়ও একটি প্রবেবিলিটি রিসোর্স।

    সুতরাং, প্রোবেবিলিটি রিসোর্স তিন ধরনের: উপকরনের সংখ্যা, ঘটনাটি ঘটার জন্য প্রয়োজনীয় সময় (ইভেন্ট টাইম) এবং এভেইলেবল সময়।

    মহাবিশ্বের অংশবিশেষ
    মহাবিশ্বের অংশবিশেষ

    সার্বজনিন সম্ভাব্যতার সীমা

    এতক্ষণ আমরা দেখলাম সম্ভাব্যতার রিসোর্স কি কি ধরনের হতে পারে। এবার চলুন হিসেব করা যাক সার্বজনিন সম্ভাব্যতার সীমা।

    প্রথমে জেনে নিই সার্বজনিন সম্ভাব্যতার সীমা বলতে কি বুঝায়? সার্বজনিন সম্ভাব্যতার সীমা বলতে বুঝায় কোন ঘটনা (যেমন: কোন রাসায়নিক বিক্রিয়া) ঘটার জন্য যে সকল প্রোবেবিলিটি রিসোর্স আছে গানিতিক ভাবে তা সর্বচ্চো কত পর্যন্ত হতে পারে। চলুন উপরের লুডুর গুটির বিষয়টি নিয়ে নিয়ে চিন্তা করি। মনে করুন আপনি একটি গেমস খেলছেন যেখানে আপনাকে বলা হল: আপনাকে লুডুর গুটি ফেলতে হবে এবং যদি ছয়টি ছয় একসাথে পড়ে অথবা একই ক্রমে পড়ে তাহলে আপনি একটি গিফট পাবেন। ধরি, আপনাকে লুডুর গুটির সংখ্যা বেঁধে দেয়া হয়নি এবং আপনাকে যত সময় ইচ্ছে গুটি ফেলার অধিকার দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে আপনি দুইভাবে ছয়টি ছয় এক সাথে বা এক ক্রমে ফেলতে পারবেন।

    • প্রথমত আপনি যদি ‌৬^৬ তথা ৪৬,৬৫৬-টি গুটি একসাথে ফেলেন তাহলে এর মধ্যে নিশ্চিত ভাবেই ছয়টি ছয় পাবেন।
    • আপনার যদি একবার ছয় ফেলতে ১ মিনিট সময় লাগে তাহলে আপনি ৪৬,৬৫৬ মিনিট চেষ্টা করলে একবার অবশ্যই ক্রমান্বয়ে ছয়টি ছয় ফেলতে পারবেন।

    এখানে ৪৬,৬৫৬-টি গুটি বা ৪৬,৬৫৬ মিনিট হলো প্রবেবিলিটি রিসোর্স।

    এখন ধরুন আপনি অতিআনবিক পর্যায়ে একটি ইন্টার‍্যাকশন ঘটার সম্ভাব্যতা হিসেব করছেন। মনে করি ইন্টার‍্যাকশনটি ঘটে সবচেয়ে কম সময়ে। ইন্টার‍্যাকশনটি হবে দুটো পার্টিকেলের (দুটো প্রোটোন বা দুটো নিউট্রন) মধ্যে। তাহলে উক্ত ঘটনাটি ঘটার জন্য প্রয়োজনীয় প্রোবেবিলিটি রিসোর্স কি? এক্ষেত্রে এটির প্রবেবিলিটি রিসোর্স হল-

    • কোন ঘটনা ঘটার সম্ভাব্য সর্বনিম্ন সময় তথা প্ল্যাংক সময় ১০^-৪৩ সেকেন্ড।
    • মহাবিশ্বের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত অতিবাহিত কাল – ১০^১৭ সেকেন্ড
    • দৃশ্যমান মহাবিশ্বের হিসেবকৃত পার্টিকেল সংখ্যা – ১০^৮০

    সুতরাং সার্বজনিন সম্ভব্যতার সীমা = ১০^৪৩ * ১০^১৭ * ১০^৮০= ১০^(৪৩+১৭+৮০) = ১০^১৪০।

    বিজ্ঞানী David Abel-এর ভাষায় এটি হলো কোয়ান্টাম ওয়ার্ল্ডের কোন ইভেন্ট-এর ইউনিভার্সাল প্লসিবিলিটি ম্যাট্রিক্স (১)। অর্থাৎ, কোন ঘটনা ঘটার সম্ভাব্যতা যদি  ১০^১৪০-এর মধ্যে একবার হয় এবং উক্ত ঘটনা ঘটার জন্য  মহাবিশ্বের সকল পার্টিকেল ও সকল সময় ব্যবহার করার সুযোগ দেয়া হয়, তাহলে ঘটনাটি একবার হলেও ঘটবে। কিন্তু, কোন ঘটনা ঘটার সম্ভাব্যতা যদি ১/ ১০^১৪১ হয়,  তাহলে মহাবিশ্বের সকল পার্টিকেল ও সকল সময় ব্যবহার করেও উক্ত ঘটনা এলোপাতাড়ি প্রক্রিয়ায় একবার ঘটবে না।

    তাহলে পাঠক একবার চিন্তা করে বলুনতো, কোন ঘটনা যদি এলোপাতাড়ি ভাবে একবার হবার সম্ভাবনা ১০^১৬৪ হয় মহাবিশ্বের ইতিহাসে উক্ত ঘটনা এলোপাতাড়ি ভাবে ঘটার আদৌ কি কোন সম্ভাবনা আছে?

    অথচ, এর চেয়ে অনেক বেশী অসম্ভাব্য ঘটনা আদিম পৃথিবীতে এলোপাতাড়ি প্রক্রিয়ায় ঘটেছে বলে দাবী করা হচ্ছে। সে সম্পর্কে আমরা জানবো আরেকটি পর্বে। ইন শা আল্লাহ।

    রেফারেন্স:

    ১) Abel DL. The universal plausibility metric (UPM) & principle (UPP). Theor Biol Med Model. 2009;6(1):1–10.

  • সৃষ্টিতে স্রষ্টার নিদর্শন (৬): মশা যেভাবে মানুষের গন্ধ পায়

    সৃষ্টিতে স্রষ্টার নিদর্শন (৬): মশা যেভাবে মানুষের গন্ধ পায়

    হাও মাও খাও, মানুষের গন্ধ পাও।

    বাচ্চাদের ভূতের গল্পে ভূত মানুষের গন্ধ দিয়ে মানুষকে চিনে নেয়। তবে, বাস্তবে ভূত না থাকলেও একটা ক্ষুদ্র প্রাণী মানুষকে খুঁজে বের করে তার গন্ধ দিয়ে। আর তা হল আমাদের অতি পরিচিত ‘মশা’।

    আমাদের প্রতিদিনের সঙ্গী মশা সুযোগ পেলেই ত্বকে বসে শুঁড়টা প্রবেশ করিয়ে আরাম করে রক্ত সেবন করতে থাকে। কখনও কি ভেবে দেখেছেন মশা কিভাবে আমাদের খুঁজে পায়? কিভাবে সে বুঝে যে এই প্রাণীর ত্বকে বসতে হবে এবং ইঞ্জেকশনের মত শুঁড়টা গেঁথে দিতে হবে?

    মশার মাথা ও সবুজ রঙ্গের গন্ধগ্রহনকারী স্নায়ু

    মশার মাথা ও সবুজ রঙ্গের গন্ধগ্রহনকারী স্নায়ু, উৎস

    মশা মূলত তার লক্ষ্যবস্তুকে খুঁজে বের করে উক্ত লক্ষ্যবস্তু নিঃসৃত গন্ধ শুঁকে। বাতাসে ভেসে বেড়ানো কার্বন ডাই-অক্সাইড, পরিবেশের তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা, মানুষের পায়ের গন্ধ, এবং ল্যাকটিক এসিড হল মশার মূল আকর্ষণ। মানুষ প্রতিদিন যে শত শত গন্ধকণা (odorous molecules) পরিবেশে ত্যাগ করে তার একটা অংশ মশা খুঁজে নেয়। মশা এই কাজটা করে তার অ্যান্টেনা ও মুখে অবস্থিত প্রায় ১০০ বা তার বেশী (প্রজাতিভেদে) রিসেপটর দিয়ে। এই রিসেপ্টরগুলোকে বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলে ওডোরেন্ট রিসেপ্টর (OR)। (১)

    ওডোরেন্ট রিসেপ্টর কিভাবে কাজ করে? সহজ ভাষায় রিসেপটরগুলোর কাজ হল তালা ও চাবির মত। একটা তালা যেমন সুনির্দিষ্ট গঠনের চাবি ছাড়া খুলে না। ঠিক একইভাবে একটি নির্দিষ্ট ওডোরেন্ট রিসেপ্টর একটি সুনির্দিষ্ট রাসায়নিক পদার্থের সাথে বন্ধন তৈরী করলেই কেবল এক্টিভেট হয়। এই যেমন এডিস মশার কথা চিন্তা করুন। এডিস মশার বিশেষত্ব হল মানুষকে কামড় দেয়া। এটি মানুব নিঃসৃত গন্ধকণাগুলোর মধ্যে sulcaton নামক একটি গন্ধকণার প্রতি সুনির্দিষ্টভাবে আকৃষ্ট হয়। এই গন্ধকণাটি মানবদেহ থেকে অনেক বেশী পরিমানে বের হয় (২)। ফলে উক্ত গন্ধকণাকে চিনে নিয়ে এডিস মশা মানব ত্বকে এসে কামড় বসিয়ে দেয়।

    মশার গন্ধ চেনার প্রক্রিয়া

    মশার গন্ধ চেনার প্রক্রিয়া, উৎস

    একটি রাসায়নিক কণা যখন ওডোরেন্ট রিসেপ্টরের সাথে পরিপূরকভাবে লেগে যায়, তখন তৎসংশ্লিষ্ট কোষে বিশেষ তড়িৎরাসায়নিক প্রক্রিয়া শুরু হয় যার মাধ্যমে প্রাণীটির স্নায়ুতন্ত্রে সিগন্যাল পৌছে (৩)। তবে ওডোরেন্ট রিসেপ্টরের ঠিক মত কাজ করার জন্য রিসেপ্টরের সাথে ওডোরেন্ট কো-রিসেপ্টর (Orco) নামক আর এক ধরনের সুনির্দিষ্ট প্রোটিন আছে যা মশার ‘নাক’-এ নির্দিষ্ট পরিমানে ও স্থানে থাকতে হয়। সিগন্যাল তৈরী হওয়ার মাধ্যমে মশা তার নিকটবর্তী পরিবেশ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে।

    মজার বিষয় হল আমরা মশা তাড়াতে যে ওষুধগুলো ব্যবহার করি এগুলো কাজ করে মশার গন্ধ নেয়ার ক্ষমতাকে বন্ধ করে দেয়ার মাধ্যমে। এই প্রেক্ষিতে মশার কবল থেকে রক্ষা পেতে নতুন এবং আরও কার্যকরী উপায় বের করতে চলছে বিস্তর গবেষণা (৪)।

    সম্মানিত পাঠক, একবার চিন্তা করে দেখুনতো মশার মধ্যে মানুষের গন্ধ নির্ণয় করার ক্ষমতা কিভাবে আসল? এটা কি কোন এলোপাতাড়ি প্রক্রিয়ায় (random process) একা একাই আসা সম্ভব? নাকি এটা কোন বুদ্ধিমান স্বত্তার কাজ যে জানে যে গন্ধে কি কি অণু আছে, যে জানে যে কিভাবে উক্ত অণুর পরিপূরক গঠনযুক্ত রিসেপ্টর তৈরী হতে হবে, যে জানে যে কিভাবে উক্ত রিসেপ্টরের মাধ্যমে স্নায়ুতন্ত্রে তড়িৎরাসায়নিক প্রক্রিয়ার সূচনা করতে হবে, যে জানে যে উক্ত স্নায়ুতন্ত্র কিভাবে কাজ করে?

    “নিশ্চয় মানুষ তার রবের প্রতি বড়ই অকৃতজ্ঞ। আর সে নিজেই (নিজের কাজ-কর্মের মাধ্যমে) এ বিষয়ের সাক্ষী। আর ধন-সম্পদের প্রতি অবশ্যই সে খুবই আসক্ত।” [সূরা আদিয়াত ১০০, আয়াত ৬-৮]

    রেফারেন্স:

    ১. Shen HH. How do mosquitoes smell us? The answers could help eradicate disease. Proc Natl Acad Sci U S A. 2017;114(9):2096–8.

    ২. McBride CS, Baier F, Omondi AB, Spitzer SA, Lutomiah J, Sang R, et al. Evolution of mosquito preference for humans linked to an odorant receptor. Nature. 2014;515(7526):222–7.

    ৩. Ha TS, Smith DP. Insect Odorant Receptors: Channeling Scent. Cell. 2008;133(5):761–3.

    ৪. Potter CJ. Stop the biting: Targeting a mosquito’s sense of smell. Cell . 2014;156(5):878–81.

  • সৃষ্টিতে স্রষ্টার নিদর্শন (৫): মশা

    সৃষ্টিতে স্রষ্টার নিদর্শন (৫): মশা
    Mosquito feeding on blood. Computer illustration of a mosquito with its proboscis inserted into a person’s skin to feed on blood in a blood vessel (red). Mosquitoes (family Culicidae) are a vector for several human diseases, such as malaria and yellow fever. Only the females of the species suck blood.

    আপনি কি কখনও আপনার ত্বকের গঠন সম্পর্কে চিন্তা করেছেন? আপনার ত্বক হচ্ছে বাইরের অসংখ্য জীবানু ও ক্ষতিকর প্রভাবক থেকে সুরক্ষাদানকারী প্রাথমিক অঙ্গ। ত্বকের সুশৃংখল গঠনের কারণে আপনার শরীরে সহজে কোন জীবানু প্রবেশ করতে পারে না। আমাদের ত্বক প্রধানত দুই ধরনের লেয়ার নিয়ে গঠিত। বাইরের দিকের লেয়ারকে বলে এপিডার্মিস এবং ভিতরের দিকে লেয়ারকে বলা হয় ডার্মিস। আমাদের ত্বকের যত স্নায়ু ও রক্তনালী আছে তা থাকে ডার্মিস লেয়ারে। সুতরাং, একটা মশা যখন আমাদের ত্বকে বসে তার মুখটা ঢুকিয়ে দেয়, তখন তাকে রক্তপানের জন্য ডার্মিস লেয়ারে মুখ প্রবেশ করাতে হয়।

    মানব ত্বকের গঠন

    কিন্তু, ডার্মিস পর্যন্ত প্রবেশ করতে হলেতো মশাকে এপিডার্মিস লেয়ার অতিক্রম করে যেতে হবে। এপিডার্মিস লেয়ার মূলত চার ভাগে (বা পাঁচ ভাগে) বিভক্ত। এর মধ্যে সবচেয়ে বাইরের লেয়ারকে বলা হয় স্ট্র্যাটাম কর্নিয়াম। স্ট্র্যাটাম কর্নিয়াম এক ধরনের কোষ দিয়ে গঠিত যাকে বলে কেরাটিনাইজড কোষ। কেরাটিনাইজড কোষের বিশেষত্ব হল এতে কেরাটিন নামক এক বিশেষায়িত প্রোটিন অনেক বেশী পরিমানে থাকে। কোষগুলো একটার ওপর আরেকটা এমন ভাবে লেপ্টে থাকে এবং পাশাপাশি এত শক্ত ভাবে যুক্ত থাকে যে এই লেয়ারকে সহজে ভেদ করা যায় না।

    মানব ত্বকের গঠন

    আপনাকে যদি বলা হয় যে, আপনি একটি সুতা নিন এবং আপনার ত্বকের ভেতর প্রবেশ করান। আপনি কি প্রবেশ করাতে পারবেন? পারবেন না, তাই না? কিন্তু, একটা মশা কিভাবে সুতার চেয়েও হালকা শুঁড়টাকে আপনার ত্বকে ঢুকিয়ে দিচ্ছে? কখনও ভেবে দেখেছেন। এই অতিক্ষুদ্র শুঁড়টাকে প্রবেশ করানোর সময় তো বেঁকে যাবার কথা? এবং আসলে হয়ও তাই। কিন্তু, মশা তার শুঁড়ের অতি বিশেষায়িত গঠনের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করে।

    হাইপোডার্মিক নিডল

    চলুন একটু দেখে নেই কেমন সেই শুঁড়ের গঠন। মশার শুঁড়ের ভিতরে থাকে ধারালো সূচের মত একটি গঠন । এটি মূলত ছয়টি প্রায় একই রকম দেখতে সূচের সমন্বয়ে গঠিত। একে তুলনা দেয়া যায় হাইপোডার্মিক নিড্ল-এর সাথে। আপনারা নিশ্চয়ই সিরিঞ্জ দেখেছেন। সিরিঞ্জের সূচটা যেরকম ধারালো, মশার শুঁড়ের ভিতরের সূচটা দেখতে হুবুহু একই রকম। খালি চোখে অবশ্য আপনি তা দেখতে পারবেন না। মশার শুঁড়ের এই সূচের মত ধারালো গঠন দেখতে আপনাকে অত্যন্ত শক্তিশালী অতিআণুবীক্ষনীক মাইক্রোস্কোপ ব্যবহার করতে হবে।

    হাইপোডার্মিক নিডল

    তো মশা যখন আপনার ত্বকে বসে তার শুঁড়টা ঢুকাতে শুরু করে অধিকাংশ সময় তার শুঁড়টা বেকে যায়। বাঁকা হয়ে মশা উড়ে গিয়ে আরেকটা স্পট খুঁজে বের করে যেখানে সে শুঁড়টাকে সোজাভাবে ত্বকে প্রবেশ করাতে পারবে। শুঁড় প্রবেশ করারনোর সময় ভিতরে অবস্থিত সূচের দুটো অংশ ত্বকে প্রবেশ করাতে সাহায্য করে। এরপর শুঁড়টা ত্বকের উপরের লেয়ারে হালকা প্রবেশ হয়ে স্থির হলে পরে মশা রক্তশোষনকারী ফ্যাসিকলটাকে ধীরে ধীরে প্রবেশ করাতে শুরু করে। এরপর সূচটা যখন রক্তের সন্ধান পায় তখন মশা স্থির হয়ে রক্ত পান করতে থাকে (১)। শুঁড় প্রবেশ করার পর সূচের অন্য দুটো অন্য দুটো অংশ কোষগুলোকে সরিয়ে ধরে রাখে যাতে রক্ত শোষনে কোন বাঁধা সৃষ্টি না হয়। এই সময় অন্য আরেকটি সূচের মাধ্যমে মশার এক ধরনের কেমিক্যাল নি:সৃত করতে থাকে যার ফলে রক্ত প্রবাহ অব্যহত থাকে।

    মশার শুঁড় ও সূচ (প্রবোসিস ও ফ্যাসিকল)

    বিস্ময়ের বিষয় হল মশা ত্বকে সূঁচ প্রবেশ করানোর প্রক্রিয়াতে অত্যন্ত কম বল (Little Force) ব্যবহার করে । এটা সম্ভব হয় সূঁচটির অত্যন্ত ক্ষুদ্র, সূক্ষ্ণ ও সুনির্দিষ্ট গঠন এবং মশার সূঁচ প্রবেশ করানো দক্ষতার কারণে (২)।

    পাঠক চিন্তা করে দেখুন মশাকে তার শুঁড় মানুষের ত্বকে প্রবেশ করাতে হলে কি কি করতে হবে? প্রথমত, ত্বকের গঠন সম্পর্কে জানতে হবে। কারণ কৈশিকরক্তনালীগুলো কোন লেয়ারে থাকে তা জানতে হবে। এপিডার্মিস লেয়ারে প্রবেশ করাতে হলে তাকে কতটুকু ফোর্স দিতে হবে তা জানতে হবে। কতটুকু গভীরে প্রবেশ করতে হবে তার উপর নির্ভর করবে তার সূঁচের দৈর্ঘ্য। সূঁচের মত ধারালো সাকশন মেশিন দরকার সেটা জানতে হবে এবং এভাবে লিস্ট করতে থাকলে হয়ত কয়েক পৃষ্ঠা লিখে ফেলা যাবে।

    আপনাদের কি ধারণা মশা একা একা এটা চিন্তা করে বের করে এই গঠন বানিয়ে নিয়েছে। নাকি ‘অন্ধ’ প্রকৃতি (blind nature)-র এলোপাতাড়ি প্রক্রিয়ায় এই গঠন একা একা তৈরী হয়েছে? নাকি এই গঠনের পিছনের আছেন অতি বুদ্ধিমান কোন স্বত্ত্বা যিনি একই সাথে উভয়েরই সৃষ্টিকর্তা?

    তবুও কি আমরা স্রষ্টার অনুগত হব না?

    রেফারেন্স:

    ১. Ramasubramanian MK, Barham OM, Swaminathan V. Mechanics of a mosquito bite with applications to microneedle design. Bioinspiration and Biomimetics. 2008;3(4).

    ২. Kong XQ, Wu CW. Mosquito proboscis: An elegant biomicroelectromechanical system. Phys Rev E – Stat Nonlinear, Soft Matter Phys. 2010;82(1):1–5.

  • Zombie Science: More Icons of Evolution (বুক রিভিউ ২)

    বই: Zombie Science: More Icons of Evolution

    লেখক: Jonathan Wells

    পৃষ্ঠা: ২৩৮

    প্রকাশিত: মার্চ ২০১৭

    ২০০২ সালে প্রকাশিত Icons of Evolution-এর পর এটি লেখকের দ্বিতীয় বই।

    কয়েকবছর হল আমাদের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক জীববিজ্ঞান বই-এ বিবর্তনবাদ সংযোজন করা হয়েছে। বিবর্তনবাদের অধ্যায়ে বিবর্তনের প্রমাণ হিসেবে কি দেয়া আছে? আপনারা এ বিষয়ে নাড়াচাড়া করে থাকলে দেখবেন:

    -ডারউইনের ফিঞ্চ পাখি

    – শিম্পাঞ্জী থেকে মানুষের ক্রমাগত আগমনের ছবি যেটা প্রতারণাপূর্ণ

    – হেকেলে এমব্রায়ো ড্রয়িং যেটা ফেইক

    – আর্কিওপটেরিক্স নামক পাখি যাকে ট্রান্জিশনাল ফর্ম বলে চালানো হয়

    – মানুষের এপেনডিক্স যাকে ভেসটিজিয়াল বলে চালিয়ে দেয়া হয়

    ডারউইনবাদীরা তাদের তত্ত্বকে বাঁচিয়ে রাখতে এবং তরুণদের ব্রেইনওয়াশ করতে এ রকম কিছু উদাহরণ ব্যবহার করে থাকে। আমাদের দেশের জন্য এটি নতুন হলেও কয়েক দশক ধরে পশ্চিমা বিশ্বের আন্ডারগ্রাড থেকে শুরু করে বিবর্তনবাদের পাঠ্য বইয়ে এই তথাকথিত বিবর্তনের প্রমাণগুলোই প্রচার করা হয়।

    যার মধ্যে উপরিল্লিখিত উদাহরণ ছাড়াও আছে:

    – পিপারড মথ

    – চার পাখা বিশিষ্ট ফ্রুট ফ্লাই

    – ঘোড়ার বিবর্তন

    ঠিক এ ধরনের দশটি ‘পপুলার’ প্রমাণের ভিত্তিহীনতার উপর বিস্তারিত আলোচনা করে জোনাথন ওয়েলস রচনা করেছিলেন তার প্রথম বই Icons of Evolution.

    এবারের বই Zombie Science অনুরুপ আরও নতুন ছয়টি উদাহরণ যোগ করে সেগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন লেখক। তিনি এবারও দেখিয়েছেন কেন এগুলো বিবর্তনের উদাহরণ হিসেবে প্রমাণিত না হওয়া সত্যেও পাঠ্যবইগুলোতে জোড় পূর্বক মগজধোলাই-এর জন্য মিথ্যা দাবী সহকারে পড়ানো হচ্ছে।

    এবারের বইয়ে অন্য ছয়টি আইকনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:

    -তিমির বিবর্তন

    – ভেস্টিজিয়াল অর্গেন

    – এন্টিবায়োটিক রেজিসটেন্স যাকে ম্যাক্রো বিবর্তনের প্রমাণের পক্ষে প্রাথমিক প্রমাণ হিসেবে মিথ্যা প্রচারণা চালানো হয়

    – ‘জাংক ডিএনএ’

    লেখকের ভাষায়: “জম্বি হচ্ছে হেটে চলা মৃত মানুষ। আর বিজ্ঞানে, একটি তত্ত্ব বা ছবির পক্ষে কোন প্রমাণ না থাকলে তা মৃত বলে ঘোষিত হয়।” বিবর্তনতত্বের তথাকথিত প্রমাণগুলো মৃত হওয়া সত্যে পাঠ্যবইয়ে হেটে বেড়াচ্ছে জম্বির মত। লেখক একে ‘বিজ্ঞান’ না বলে বলছেন ‘জম্বি বিজ্ঞান’।

    বইদুটো সহজ ইংরেজী ভাষায় লিখিত। আগ্রহী পাঠকদের জন্য মাস্ট রিড।

  • নাস্তিক বিজ্ঞানীরা কি বিশ্বাসের বিপক্ষে বা অবিশ্বাসের পক্ষে যুক্তির কারণে নাস্তিক হয়? (একটি পোস্ট ও কথোপকথন)

    মূল পোস্ট:

    যুক্তি ও বিপরীত যুক্তি সমান্তরালে চলে। মেডিকেলে পড়ার সময় আমার একজন সহপাঠীর সঙ্গে একদিন ক্লাস শেষে ফেরার পথে এ বিষয়ে কথা হচ্ছিল। সে একটি সুন্দর উপমা দিয়েছিলো যে যুক্তি ও বিপরীত যুক্তির উদাহরণ হচ্ছে রেললাইনের মত, সমান্তরালে চলে।

    তবে, যুক্তিবিদ্যা সম্পর্কে পড়াশোনা থাকলে যুক্তি থেকে অ-যুক্তি ও কু-যুক্তি (logical fallacy) পার্থক্য করা যায়। অনেকে যুক্তিবিদ্যা নিয়ে সিস্টেম্যাটিক্যালী না পড়েও যথেষ্ঠ যুক্তিবোধ রাখেন। মানুষভেদে উক্ত যুক্তিবোধের একটা রেঞ্জ পাওয়া যায়।

    এতদিন বাংলায় অবিশ্বাসীদের যুক্তিচর্চার ক্ষেত্র ছিল তুলনামূলক শূন্য। সে সুযোগে তারা বিশ্বাসের বিপক্ষে পশ্চিমাদের যুক্তি, অযুক্তি ও কুযুক্তিকে বিভিন্ন মোড়কে উপস্থাপন করেছেন। ফলে বিশ্বাসীদের পক্ষেও যে যুক্তির সম্ভার আছে তা অনুপস্থাপিত থেকে গেছে বহুদিন।

    এরপর নাস্তিকদের ব্লগস্ফেয়ারেই মুসলিম ব্লগাররা বিশ্বাসের পক্ষের যুক্তি নিয়ে লিখালিখি করেছেন। এক সময় আলোচনা-সমালোচনা সীমাবদ্ধ ছিল অল্পকিছু মানুষের মধ্যে । ২০১৩ সালে পর বিভিন্ন কারণে উক্ত আলোচনা দ্রুত ছড়িয়ে পড়লো সবার মাঝে।

    কিন্তু, সবার যুক্তিবোধ সমান নয়, আবার যুক্তি তর্কের ক্যাচক্যাচানি সবার ভালও লাগে না। এ কারণে গল্পের আকারে নাস্তিকদের যুক্তির খণ্ডন বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এই জনপ্রিয়তার মধ্য দিয়ে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, আমাদের ওয়ায়েজীনদের একটি বড় অংশ যখন জনসাধারনের মধ্যে সুরে-বেসুরে ইসলামের শিক্ষার রিমাইণ্ডার দিতে ব্যস্ত, তখন আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত তরুন মুসলিমদের একটি বড় অংশ আমলতো দূরের কথা বিশ্বাসের দিক দিয়েই সংশয়াপন্ন হয়ে গেছে। না হলে ‘প্রেম-রস-কাহিনী-উপাখ্যান’ বিহীন যুক্তি-তর্কের গল্পের বই এত জনপ্রিয় হয় কিভাবে?

    যাই হোক মূল কথায় আসি। বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসী দুই পক্ষেরই যুক্তির অভাব নেই। এমনকি এ সংক্রান্ত পড়ালেখা করতে করতে একজনের জীবন পার করে দেয়া সম্ভব। ফলে, অধিকাংশই বিশ্বাসীদের পক্ষে বিপক্ষের যুক্তি নিয়ে গভীর পড়ার সময় বা যোগ্যতা রাখেন না। ফলে, তারা তাদের পারিবরিক বিশ্বাস বা পারিপার্শ্বিক অর্থডোক্স (প্রচলিত) বিশ্বাসের উপর আস্থা রাখেন অথবা এগনস্টিক অবস্থান নিয়ে নিজের কাজ চালিয়ে যান। এমনকি বিজ্ঞানী ও দার্শনিকদের ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য।

    ২০১৩ সালে David Bourget এবং David J. Chalmers একটি গবেষণা প্রকাশ করেন(1)। যার শিরোনাম ছিলো ‘দার্শনিকরা কি বিশ্বাস করেন?” (What Do Philosophers Believe?) উক্ত গবেষণায় তারা দর্শনের বিভিন্ন শাখার দার্শনিকদের কাছে দর্শনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করেন। এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূণ প্রশ্ন ছিল – স্রষ্টায় বিশ্বাস নিয়ে। তাদের গবেষণায় বেরিয়ে আসে যে যারা ‘ধর্মের দর্শন’ (Philosophy of Religion)-এ এক্সপার্ট তাদের মধ্যে মাত্র ২০.৮৭% অবিশ্বাসী এবং ৭৯.১৩% শতাংশ বিশ্বাসী। অন্যদিকে যারা ধর্মের দর্শন বিষয়ে এক্সপার্ট না (অর্থাৎ অন্যান্য দর্শন বিষয়ে এক্সপার্ট) তাদের মধ্যে ৮৬.৭৮% অবিশ্বাসী এবং ১৩.২২% বিশ্বাসী। অর্থাৎ, বলা যায় একজন দার্শনিকের স্রষ্টায় বিশ্বাসের যুক্তি গুলো নিয়ে গভীরভাবে পড়ালেখা করলে বিশ্বাসী হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় চারগুন বেশী।

    কিন্তু, বিজ্ঞানের প্রতিটি শাখার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জ্ঞানের ব্যপ্তি এখন এত বেশী যে উক্ত যে কোন একটি বিষয় নিয়ে একজন গবেষকের জীবনের অধিকাংশ সময় পার করে দিতে হয় বা দিতে পারেন। ফলে, বিশ্বাসের দিক দিয়ে তার অবস্থান বিশ্বাস-অবিশ্বাসের যুক্তি নিয়ে পড়ালেখার উপর নির্ভর করে না বরং নির্ভর করে তার পারিবারিক বা সামাজিক ধর্মীয় শিক্ষা ও অবস্থা, পারিপার্শ্বিক পরিবেশ, একাডেমিক স্থানে সুবিধাজন পজিশনের থাকার প্রবণতা প্রভৃতি বিষয়ের উপর।

    Ecklund এবং Scheitle যুক্তরাস্ট্রের ২১টি এলিট রিসার্চ ইউনিভার্সিটির বিভিন্ন বিজ্ঞানীদের উপর গবেষণা করে দেখেছেন বিভিন্ন শাখার বিজ্ঞানীদের ধার্মিক হওয়ার বিষয়টি তাদের নিজেদের ফিল্ড-এর এক্সপারটিজ-এর উপর নির্ভর করে না বরং নির্ভর করে তাদের বয়স, বৈবাহিক অবস্থা, সন্তান থাকা বা না থাকা, সে নিজে ছোট থাকাকালীন তার পরিবারের ধর্মীয় অবস্থা ইত্যাদির উপর(2)।

    তারা আরও দেখিয়েছেন যে খুব কম বিজ্ঞানীই মনে করেন যে বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে বিবাদ আছে(3)। কিন্তু, নাস্তিকরা, বিশেষ করে নব্য-নাস্তিক (Neo-Atheist)-দের সঙ্গে কথা বললে মনে হয় যেন বিজ্ঞানীরা তাদের যুক্তিবোধের কারণে নাস্তিক হয়ে যায়। অথচ, উপরে আমরা দেখলাম বিশ্বাসের যুক্তি নিয়ে গভীরভাবে পড়লে বিশ্বাসী হবার সম্ভাবনা প্রায় চারগুন বেশী এবং বিজ্ঞানীদের মধ্যে অধিকাংশই শুধু যুক্তির কারণে নিধার্মিক বা নাস্তিক হয় না।

    রেফারেন্স:

    1. Bourget D, Chalmers DJ. Bourget, Chalmers, What Do Philosophers Believe. Philos Stud. 2014;130(3):465–500.

    2. Ecklund EH, Scheitle CP. Religion among Academic Scientists: Distinctions, Disciplines, and Demographics. Soc Probl. 2007;54(2):289–307.

    3. Ecklund EH, Park JZ, Sorrell KL. Scientists Negotiate Boundaries Between Religion and Science. J Sci Study Relig. 2011;50(3):552–69.

    কথোপকথন

    মাজিদুল মুলহিদ-এর পোস্টের প্রেক্ষিতে বলেন:

    আপনি প্রধানত দুটি পয়েন্ট তুলে ধরেছেন, উভয় নিয়েই আলোচনা করছি।

    ১. দর্শনের অন্যান্য ক্ষেত্রের তুলনায় ধর্মের দর্শনে বিশ্বাসীর সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে আপনি বলেছেন –

    “বলা যায় একজন দার্শনিকের স্রষ্টায় বিশ্বাসের যুক্তি গুলো নিয়ে গভীরভাবে পড়ালেখা করলে বিশ্বাসী হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় চারগুন বেশী।”

    এটিই কিন্তু একমাত্র হাইপোথিসিস নয়, এর আরও এক কারণ হতে পারে, সেটি হল –

    “ধার্মিক বা আস্তিক হওয়ার কারণেই তারা ধর্মের দর্শন নিয়ে পড়ার সিধান্ত নিয়েছে এবং পূর্বধারণার (prejudice) কারণেই সে আস্তিক থাকে।”

    কোন হাইপোথিসিস সঠিক?

    এই গবেষণায় এই সিধান্তে আসার মতো পর্যাপ্ত পরিমাণে তথ্য নেই। তাই আমরা Helen De Cruz-এর একটি গবেষণার [১] উপর নির্ভর করব। এই গবেষণায় দেখা যাচ্ছে ধর্মের দর্শন বিষয়ে স্পেশালাইজেশন করার প্রধান উদ্দেশ্য হল – Faith seeking understanding অর্থাৎ, এটা তাদের বিশ্বাসকে গভীর করতে সাহায্য করে। দ্বিতীয় উদ্দেশ্য হল – Proselytism and witness, অনেকেই অন্য মানুষদের নিজ ধর্মে দীক্ষিত করানোর উদ্দেশ্যে এই বিষয়ে স্পেশালাইজেশন করে।

    এছাড়া, আরও দেখা যায় যে এই ধর্মের দর্শন বিষয়ে পড়ার ফলে যতজন আস্তিক থেকে নাস্তিক হয় (৮.১%), তার তুলনায় নাস্তিক থেকে আস্তিক (১১.৮%) হওয়ার সংখ্যাও ৩.৭% বেশি।

    এর ফলে দেখা যাচ্ছে আপনার হাইপোথিসিসটি ভুল বরং বেশিরভাগ ধর্মের দার্শনিকগণ আগে থেকেই ধার্মিক বা আস্তিক হওয়ার কারণেই ধর্মের দর্শন নিয়ে পড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে।

    ২. আপনার দ্বিতীয় দাবি হল –

    “খুব কম বিজ্ঞানীই মনে করেন যে বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে বিবাদ আছে।”

    এর প্রমাণ হিসেবে যেই আর্টিকেলটি দিয়েছেন সেখানে এমন কিছু লেখা নেই, সেখানে যা লেখা আছে সম্ভবত সেটি আপনি ভুল বুঝেছেন।

    “only a minority of scientists see religion and science as always in conflict”- সম্ভবত এই বাক্যটি পড়ে আপনি এমন ধারনা করেছেন। ভালো করে দেখুন, এখানে ‘ always’ শব্দটি ব্যাবহার করা হয়েছে, অর্থাৎ এর বাংলা করলে দাঁড়ায়, “মাত্র স্বল্পসংখ্যক বিজ্ঞানী ধর্ম ও বিজ্ঞানের মধ্যে সর্বদাই বিরোধ দেখতে পান।”

    এই গবেষণায় পাওয়া যায়, সাবজেক্টদের মধ্যে ১৫% বিজ্ঞানী মনে করে বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে সবসময় সংঘাত আছে, ১৫% বিজ্ঞানী মনে করে বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে কোনো সংঘাত নেই এবং ৭০% বিজ্ঞানী মনে করে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ধর্ম ও বিজ্ঞানের সংঘাত আছে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে মোট ৮৫% বিজ্ঞানী মনে করে ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের বিরোধ আছে। এবং এটাই যুক্তিযুক্ত অবস্থান, ধর্মে কাকতালীয়ভাবে কিছু জিনিস থাকতেই পারে যা বিজ্ঞানের সাথে সাংঘর্ষিক নয়। তাই বলে ধর্মের সব জিনিস বিজ্ঞানসম্মত তা তো নয়। যেমন বিবর্তনবাদ, এটা সম্পূর্ণরূপে ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক। আবার কুরআনে বলা আছে প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে, এটা আবার বিজ্ঞানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। কিন্তু, ধর্মগ্রন্থে একটি ভুল ধরা পড়লেই সেই গ্রন্থের ডিভাইন অরিজিন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে ওঠে।

    আরও একটা পয়েন্ট হল, এখানে বিজ্ঞানীরা ধর্ম বলতে নির্দিষ্ট কোনো ধর্ম নেয়নি, অনেকেই আধ্যাত্মিকতাকেও ধর্ম ধরেছেন। বিজ্ঞানের কাজ ন্যাচারাল ওয়ার্ল্ড নিয়ে কাজ করা, তাই বিজ্ঞান আধ্যাত্মিকতা বিষয়ে কিছু বলতে পারেনা। কিন্তু, বিজ্ঞান ঠিকই বেদ, বাইবেল, গীতা, কুরআনের মধ্যে অনেক ভুল দেখাতে সক্ষম।

    সুতরাং দেখা যাচ্ছে, আপনি প্রথম গবেষণার ক্ষেত্রে ভুল হাইপোথিসিস দাঁড় করিয়েছেন এবং দ্বিতীয় গবেষণার ব্যাপারে শুধুমাত্র সারাংশ পড়ে ভুল বুঝেছেন।

    বিজ্ঞানীদের ক্ষেত্রে কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করা কঠিন, তা জানতে এই ভিডিওটি দেখতে পারেন –

    ===========================

    রেফারেন্সঃ

    [১] My qualitative study of religious attitudes and motivations of philosophers of religion

    আমার উত্তর:

    আপনি আমার বক্তব্য থেকে দুটি পয়েন্ট নিয়ে কথা বলেছেন। কিন্তু, এর বাইরেও একটি পয়েন্টে আমি কথা বলেছি। তা হল- নাস্তিক বিজ্ঞানীদের নাস্তিক হওয়া তাদের বয়স, বৈবাহিক অবস্থা, সন্তান থাকা বা না থাকা, সে নিজে ছোট থাকাকালীন তার পরিবারের ধর্মীয় অবস্থা ইত্যাদির উপর নির্ভর করে।

    এবার আসুন অন্য দুটো পয়েন্ট নিয়ে কথা বলা যাক। আমি বলেছি “একজন দার্শনিকের স্রষ্টায় বিশ্বাসের যুক্তি গুলো নিয়ে গভীরভাবে পড়ালেখা করলে বিশ্বাসী হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় চারগুন বেশী”। এটা বলেছি মূলত মূল পোস্টের ১নং রেফারেন্স-এর পরিসংখ্যান এর আলোকে।

    আপনার আলোচনার প্রেক্ষিতে আমি Helen De Cruz-এর ২০১৮ সালের প্রকাশিত মূল আর্টিকেলটা পড়ে দেখলাম(1)। সে প্রেক্ষিতে আমি আমার হিসেবটি রিভাইজ করতে চাই। লক্ষনীয় আমার হাইপোথিসিস-এর আলোকে একজন দার্শনিক ফিলোসফি অব রিলিজিওন নিয়ে পড়ার আগে নাস্তিকও হয়ে থাকতে পারেন এবং আস্তিকও হয়ে থাকতে পারেন। আবার ডি ক্রজের আর্টিকেল থেকে দেখা যায় তার গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ৮৫ জন আস্তিক ফিলোসফার এর মধ্যে ১১ জন পূর্বে নাস্তিক বা এগনস্টিক ছিল, ৩৩ জন নাস্তিক বা এগনস্টিক দার্শনিকের (২৫ জন নাস্তিক ও ৮ জন এগনস্টিক)-এর মধ্যে ১২ বিশ্বাসী ছিল। আমরা ম্যাকনেমার টেস্ট করলে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সংখ্যার মধ্যে স্ট্যাটিসটিক্যাল সিমিলারিটি দেখতে পাই (p=1.000)। (লক্ষ্যনীয় আর্টিকেলের এই জায়গায় ডি ক্রজ একটা ভুল করেছেন। এখানে ফিসারস এক্সাক্ট টেস্টে হবে না হবে ম্যাকনেমার টেস্ট হবে। কারণ যখন কোন ডাইকোটোমাস ভ্যারিয়েবলকে রিপিটেড মিজার করা হয় তখন ম্যাকনেমার ব্যবহার করতে হয়।(2))। উপরোক্ত হিসেবে অনুযায়ী পূর্বে ৮৬ জন আস্তিক ছিল এবং ৩২ জন নাস্তিক/এগনস্টিক ছিল।

    আপনি একটি ভ্যালিড পয়েন্ট এনেছেন যে এখানে একজন ফিলোসফার অব রিলিজিওনের পূর্বের বিশ্বাসকেও আমলে নিতে হবে। সুতরাং আমরা ডি ক্রুজের ২০১৮ সালের আর্টিকেলের হিসেবেকে আমলে নিয়ে পাচ্ছি একজন দার্শনিকের ফিলোসফি অব রিলিজিওন বিভাগে ঢুকার পূর্বে আস্তিক থাকার সম্ভাবনা ৭২.৮৮% এবং নাস্তিক বা এগনস্টিক থাকার সম্ভাবনা ২৭.১১% এবং উক্ত ডিপার্টমেন্টে ঢুকার পরে আস্তিক হওয়ার সম্ভাবনা ৭২.০৩% এবং নাস্তিক বা এগনস্টিক হওয়ার সম্ভাবনা ২৭.৯৬%। এখন আমরা যদি পূর্ববর্তী বিশ্বাসকে আমলে নেয়ার জন্য বেইস থিওরেম এপ্লাই করি তাহলে দেখা যায় একজন দার্শনিকের ধর্মের দর্শনে এক্সপার্ট হওয়ার থিইস্ট হওয়ার সম্ভাবনা (Likelihood) ৬০.৩৮% এবং অবিশ্বাসী/এগনস্টিক হওয়ার সম্ভাবনা ৫০.৬৮%। অর্থাৎ পূববর্তী বিশ্বাসকে আমলে নিলেও একজন দার্শনিকের ধর্মের দর্শন পড়ে বিশ্বাসী হবার সম্ভাবনা প্রায় ৯.৭৩% বেশী। অর্থাৎ, আবার পূর্বের হিসেবের ৪ গুনের জায়গায় মূল হিসেব হবে ১.১৯ গুণ বেশী।  

    এছাড়া আপনি ডি ক্রুজের ব্লগ থেকে লিখেছেন- এই গবেষণায় দেখা যাচ্ছে ধর্মের দর্শন বিষয়ে স্পেশালাইজেশন করার প্রধান উদ্দেশ্য হল – Faith seeking understanding অর্থাৎ, এটা তাদের বিশ্বাসকে গভীর করতে সাহায্য করে। দ্বিতীয় উদ্দেশ্য হল – Proselytism and witness, অনেকেই অন্য মানুষদের নিজ ধর্মে দীক্ষিত করানোর উদ্দেশ্যে এই বিষয়ে স্পেশালাইজেশন করে।

    এই তথ্য পুরোপুরি সঠিক নয়, কারণ Proselytism and witness অন্তত দ্বিতীয় কারণ নয়। মূল কারণগুলো হল – রিলিজিয়াস আইডেনটিটি (৩৬%), দার্শনিক আগ্রহ (৩৩.১%), দর্শক সংক্রান্ত শিক্ষা থেকে আগ্রহ ২০.১%, সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক বা সামাজিকভাবে ইন্টারেস্টিং মনে করার কারণে ১৪.৪%, ছোটবেলার কোন অভিজ্ঞতার কারণে ১০.৮%, অন্যান্য ৭.৯% এবং  Proselytism and witness ৭.২%। এমনকি যারা রিলিজিয়াস আইডেনটিটি ক্লাসে আগ্রহী ছিল তাদের মধ্যে এই প্রবণতাও ছিল যে তারা তাদের বিশ্বাসকে যুক্তির আলোকে প্রশ্ন করে দেখতে চায়- “I am a catholic, and philosophy of religion helps me in deepening my faith by way of—paradoxically—putting the faith itself into question and even criticizing it. — male assistant professor, public university, Italy.”

    দ্বিতীয় পয়েন্টে বলি – আমি আর্টিকেলটা ভুল পড়ি নি এবং “খুব কম বিজ্ঞানীই মনে করেন যে বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে বিবাদ আছে”-এ কথাটা ভ্যালিড। কেন? বুঝিয়ে বলছি-

    আপনি লিখেছেন- “এই গবেষণায় পাওয়া যায়, সাবজেক্টদের মধ্যে ১৫% বিজ্ঞানী মনে করে বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে সবসময় সংঘাত আছে, ১৫% বিজ্ঞানী মনে করে বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে কোনো সংঘাত নেই এবং ৭০% বিজ্ঞানী মনে করে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ধর্ম ও বিজ্ঞানের সংঘাত আছে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে মোট ৮৫% বিজ্ঞানী মনে করে ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের বিরোধ আছে।“

    আপনার শেষের “৭০% বিজ্ঞানী মনে করে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ধর্ম ও বিজ্ঞানের সংঘাত আছে” থেকে “মোট ৮৫% বিজ্ঞানী মনে করে ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের বিরোধ আছে” কথাটা কিভাবে আসল পরিস্কার নয়। কারণ “৭০% বিজ্ঞানী মনে করে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ধর্ম ও বিজ্ঞানের সংঘাত আছে” এর অর্থ হল “৭০% বিজ্ঞানী মনে করে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই  ধর্ম ও বিজ্ঞানের সংঘাত নেই”। সুতরাং হিসেবটা হওয়ার কথা  “৮৫% বিজ্ঞানী মনে করে ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের নেই।“

    ইন ফ্যাক্ট উক্ত হিসেবের আলোকে স্বয়ং অথররাই বলেছেন যে “only a minority of scientists see religion and science as always in conflict”। এখানে মাইনরিটি হচ্ছে ১৫%।

    আমি অবশ্য স্বীকার করছি কথাটা এভাবে বললে ভাল হত “খুব কম বিজ্ঞানীই মনে করেন যে বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে সার্বক্ষনিক বিবাদ আছে।“

    রেফারেন্স:
    1.           De Cruz H. Religious Beliefs and Philosophical Views: A Qualitative Study. Res Philos [Internet]. 2018;95(3):477–504. Available from: https://www.pdcnet.org/resphilosophica/content/resphilosophica_2018_0095_0003_0477_0504

    2.        McNemar’s test in SPSS Statistics – Procedure, output and interpretation of the output using a relevant example | Laerd Statistics [Internet]. [cited 2019 Mar 8]. Available from: https://statistics.laerd.com/spss-tutorials/mcnemars-test-using-spss-statistics.php

  • সৃষ্টিতে স্রষ্টার নিদর্শন (৪): মশা

    সৃষ্টিতে স্রষ্টার নিদর্শন (৪): মশা

    পবিত্র কোরআনে আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা মানুষকে তার বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের ব্যপারে বার বার তাকিদ দিয়েছেন। একই সাথে তিনি মানুষের অন্তরে স্রষ্টা সম্পর্কে ফিতরাহ দিয়েছেন। বুদ্ভিমত্তা ও ফিতরাহ ব্যবহার করে একজন মানুষ তার স্রষ্টাকে সহজেই চিনতে পারে।  এ কারণে তিনি কোন কোন জায়গায় মহাবিশ্বের সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করতে বলেছেন। কোথাও মানুষের নিজের গঠনের ব্যপারে চিন্তা করতে বলেছেন। আবার কোন জায়গায় ছোট-বড় বিভিন্ন প্রানীর উপমা টেনে উক্ত প্রাণীর সৃষ্টিশৈলী নিয়ে গবেষণা করে সত্য সম্পর্কে সিদ্ধান্তে উপনিত হতে উৎসাহিত করেছেন। কোরআনের শুরুর দিকে সুরা বাকার ২৬ নং আয়াতে আল্লাহ এরকম একটি দৃষ্টান্ত নিয়ে বলছেন-

    “অবশ্য আল্লাহ লজ্জা করেন না মশা বা তার চেয়ে তুচ্ছ কোন জিনিসের দৃষ্টান্ত দিতে ৷ যারা সত্য গ্রহণকারী তারা এ দৃষ্টান্ত –উপমাগুলো দেখে জানতে পারে এগুলো সত্য, এগুলো এসেছে তাদের রবেরই পক্ষ থেকে, আর যারা (সত্যকে) গ্রহণ করতে প্রস্তুত নয় তারা এগুলো শুনে বলতে থাকে , এ ধরনের দৃষ্টান্ত –উপমার সাথে আল্লাহর কী সম্পর্ক ?” (১)

    সৃষ্টিতে স্রষ্টার নিদর্শন (৪): মশা

    চলুন মশার গঠন নিয়ে ভেবে দেখি এতে আমাদের জন্য কি চিন্তার উপাদান আছে।

    দৈনন্দিন জীবনকে দূর্বিষহ করার জন্য মশার মত ছোট প্রাণীই যথেষ্ট। আর্থোপোডা গোত্রের এই ক্ষুদ্র প্রাণীটি ডেংগু, চিকুনগুনিয়া, জিকা, ম্যালেরিয়া প্রভৃতি প্রাণঘাতী রোগের বাহক হিসেবে কাজ করে। ফলে আমাদের প্রতি সন্ধ্যার রূটিন হয় মশা থেকে নিস্তার পাওয়ার উপায় উপকরণ ব্যবহার করা। অধিকন্তু, প্রতিদিনের অসংখ্য অগুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোকে আমাদের সাবকনসাশ ব্রেইন চমৎকারভাবে ইগনোর করতে পারে। এ কারণে আমরা মনে করি মশা নিয়ে আলাদা ভাবে ভাববার কি আছে?

    কিন্তু, বিজ্ঞানীরা সবকিছু ভিন্নভাবে চিন্তা করেন। তারা মশার গঠন ও জীবনপ্রণালী থেকে শুরু করে মশা কিভাবে রক্তচুষে এবং কিভাবে উড়ে বেড়ায় তা নিয়েও বিস্তর গবেষণা করেছেন।

    যে কোন উড্ডয়নশীল প্রাণীর জন্য একটা বড় বিষয় হল তার এরোডাইন্যামিক্স। অর্থাৎ কিভাবে সে মাটিতে বসা থেকে উড়তে শুরু করে, কিভাবে সে বাতাসে উড়ে বেড়ায় এবং কিভাবে সে উড়ন্ত অবস্থা থেকে অবতরণ করে। আমরা জানি পাখিদের উড়ার কৌশল নিয়ে গবেষণা করতে করতেই উড়োজাহাজের আবিস্কার হয়েছে।

    পাখির তুলনায় কিটপতঙ্গের উড্ডয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল কিটপতঙ্গ পাখা ঝাপটে বাতাসে এক জায়গায় স্থির থাকতে পারে। এ ধরনের উড়াকে বলে হোভারিং। এর বাইরেও সামনের দিকে অগ্রসর হওয়া, পাশে যাওয়া ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের উড্ডয়ন আছে যা আমরা প্রতিদিনই দেখি।

    আমাদের হাত পা নাড়াচারা করতে যেমন অনেকগুলো সুনির্দিষ্ট মাংসপেশী লাগে। কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রেও উড়ার জন্য মাংসপেশী প্রয়োজন। কিছু কিছু কীটের পাখার জন্য আলাদা মাংসপেশী আছে এবং কিছু কীটের ক্ষেত্রে উক্ত মাংসপেশী থাকে বুকে। এদের ক্ষেত্রে পাখাদ্বয় পিঠে লাগানো থাকে। মাংসপেশীর সংকোচন ও প্রসারনের মাধ্যমে বক্ষপিঞ্জরের সংকোচন ও প্রসারন হয়। ফলে সংযুক্ত পাখাদ্বয় ঝাপটাতে থাকে। (২) আমাদের আলোচ্য মশা শেষের উল্লিখিত পদ্ধতিতে উড়ে বেড়ায়।

    Mosquito wings

    মশার প্রায় স্বচ্ছ ও ক্ষুদ্র দুটো পাখা আছে, যা সুনির্দিষ্ট ব্যাসাল গঠন দিয়ে থোরাক্সের সাথে লাগানো থাকে। সুনির্দিষ্ট বললাম এই জন্য যে অন্যান্য কীটপতঙ্গের তুলনায় মশার পাখার বেজ এ গঠনের পার্থক্য আছে (৩)।

    কীট পতঙ্গ উড়ার সময় পাখা সামনে পিছনে এবং উপরে নিচে এমনভাবে ঝাপটায় যাতে পাখার সামনের দিকের এজ (Edge) বাতাসে এক ধরনের ভর্টেক্স তৈরী করে। যাকে বলা হয় লিডিং এজ ভর্টেক্স। এই ভর্টেক্স পাখা ও শরীরের নিচে গিয়ে কীটের শরীরকে বাতাসে ভাসিয়ে রাখে। কিন্তু, মশা পাখা এমনভাবে ঝাপটায় যে পাখার সামনে লিডিং এজ ভর্টেক্স এর পাশাপাশি তৈরী হয় পাখার পিছনের দিকে ট্রেইলিং এজ ভর্টেক্স (৪)।

    মশাকে ভেসে থাকতে অনেক দ্রুত পাখা ঝাপটাতে হয়। একটা মশা প্রতি সেকেন্ডে ১৬৫ থেকে ৫৮৭ বার পাখা ঝাপটাতে পারে (৩)। এই কারণেই মশা কানের কাছে ঘুরতে থাকলে আমরা ভো ভো শব্দ পাই ও বিরক্ত হই। মশার পাখার শব্দ আমাদের কাছে বিরক্তিকর লাগলেও মশার নিজের কোর্টশিপের (যৌনমিলন) জন্য এটি জরুরী। এমনকি কোর্টশিপের সময় মশার তার পাখার ঝাপটানোর ফ্রিকোয়েন্সী নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে শব্দের টোন পরিবর্তন করে (৫)।

    প্রিয় পাঠক এবার চিন্তা করে দেখুন একটা মশাকে শুধুমাত্র উড়ার সক্ষমতা দেয়ার জন্য কতগুলো জিনিস জানতে হবে- বাতাসের ফিজিক্স, মশার পাখার বিস্তৃতি কতটুকু হওয়া যাবে, পাখা ঝাপটানোর স্পিড কতটুকু হতে হবে, পাখার ঝাপটানোর দিক কেমন হওয়া চাই, পাখার ঝাপটানোর জন্য থোরাক্সের মাংসপেশী কতটুকু হতে হবে, প্রতিটা ঝাপটার সময় পাখায় অক্সিজেন সরবারহ নিশ্চিত করতে হবে, ঝাপটানো ফ্রিকোয়েন্সী নিয়ন্ত্রনে নিউরোনাল সিগন্যাল কত ফ্রিকোয়েন্সীতে জেনারেট করতে হবে, ইত্যাদি।  এই ভাবে যেতে থাকলে লিস্টটা অনেক বড় হবে। এখানে লক্ষ্যনীয় বিষয় হল সবগুলো গঠন ও ফাংশন একটার সাথে আরেকটা অতপ্রত ভাবে জড়িত হয়ে একটি কমপ্লেক্স সিস্টেম দাড় করিয়েছে।

    পরিস্কারভাবেই বোঝা যাচ্ছে যে এই গঠনের পিছনের সুনির্দিষ্ট ডিজাইন ও পরিকল্পনা আছে। কোন এলপাতাড়ি ও অন্ধ প্রক্রিয়ায় মশার উড্ডয়ন ক্ষমতা উদ্ভব হয়নি।

    একটা মশা মানুষকে কুপোকাত করে দিতে পারে। অথচ, আমরা নিজেরা আল্লাহর দেয়া জ্ঞান অর্জনের যোগ্যতা ব্যবহার করে আমাদের স্রষ্টার নিয়মাতকে অস্বীকার করি। নিজেদের সীমাবদ্ধতাকে ভুলে যাই।

    আমাদের কি একটু বোধোদয় হবে না।  

    রেফারেন্স:

     ১. আল কোরআন, সুরা বাকারা, আয়াত-২৬

    ২. Wikipedia. Insect Flight [Internet]. 2019 [cited 2019 Nov 6]. Available from: https://en.wikipedia.org/wiki/Insect_flight

    ৩. Snodgrass RE. The Anatomical Life of The Mosquito. Smithson Misc Collect. 1959;139(8):65–6.

    ৪. Bomphrey RJ, Nakata T, Phillips N, Walker SM. Smart wing rotation and trailing-edge vortices enable high frequency mosquito flight. Nature [Internet]. 2017 Mar 29 [cited 2019 Jun 11];544(7648):92–5. Available from: http://www.nature.com/doifinder/10.1038/nature21727

    ৫. Arthur BJ, Emr KS, Wyttenbach RA, Hoy RR. Mosquito ( Aedes aegypti ) flight tones: Frequency, harmonicity, spherical spreading, and phase relationships . J Acoust Soc Am. 2014;135(2):933–41.

  • মাইন্ড কিভাবে ব্রেইনের সাথে ইন্টারেকশন করে?

    এই প্রশ্নটা মাইন্ড-বডি ডুয়েলিজম-এর বিপরীতে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। কারণ, মাইন্ড ব্রেইনের সাথে ইন্টারেকশন করতে হলে মাইন্ড কর্তৃক এনার্জি ইনফিউজ করতে হবে। অর্থাৎ, শক্তির আদান প্রদান ছাড়া সাধারনত কোন কজাল রিলেশনশিপ সম্ভব নয়। অধিকন্তু, শক্তির নিত্যতা সূত্র অনুযায়ী আমরা জানি মহাবিশ্বের সর্বমোট এনার্জির কম বেশী হয় না। শক্তির কেবল রূপান্তর হয়। সে হিসেবে মাইন্ড কিভাবে ব্রেইনে শক্তি প্রবাহ করতে পারে সেটা নিয়ে নন-ডুয়্যালিস্টদের অবজেকশন আছে।

    মজার বিষয় আধুনিক কোয়ান্টাম মেকানিক্সের আবিস্কারের মাধ্যমে এই অবজেকশন টিকে না। কারণ, কোয়ান্টাম মেকানিক্স অনুযায়ী দুটি এনট্যাঙ্গেলড পার্টিকেলের মধ্যে কোন প্রকার শক্তি প্রবাহ ছাড়াই ‘নন-লোকাল’ ইন্টারেকশন হতে পারে।

    ধরুন, নাইট্রোজেনের দুটো পরমানু এনট্যাঙ্গেলড অবস্থায় আছে। আরও মনে করুন আপনি একটি পরমানুকে স্পেসশিপ দিয়ে মঙ্গল গ্রহে পাঠিয়ে দিয়েছেন। যদি পৃথিবীর পরমানু হয় Ne এবং মঙ্গল গ্রহের পরমানু হয় Nm, তাহলে দুটো পার্টিকেল বিপরীতমুখী স্পিনে ঘুরতে থাকবে (১/২ এবং -১/২).। ধরুন আপনি পৃথিবীতে বসে Ne এর স্পিন মাপলেন ১/২ তাহলে আপনি নিশ্চিত যে মঙ্গলগ্রহে যে আছে তার জন্য Nm-এর পরিমাপকৃত স্পিন হবে -১/২। মজার বিষয় হল আপনি যদি কোন ভাবে পৃথিবীর পার্টিকেলটার স্পিন ঘুরিয়ে দিতে পারেন, মঙ্গল গ্রহের পরমানুটাও কোন প্রকার শক্তির আদান প্রদান ছাড়াই সম্পূর্ণ বিপরীত দিকে ঘুরে যাবে। একে বলা হয় নন-লোকাল ইন্টারেকশন।

    স্বয়ং আধুনিক পদার্থবিদ্যা অনুযায়ী যদি ননলোকাল কজেশন পসিবল হয় তাহলে মাইন্ড কেন ব্রেইনের সাথে শক্তি ছাড়া ইন্টার‍্যাকশন করতে পারবে না?
    ….
    এবার একটু ভাবনার খোরাক।

    মজার বিষয় হল আমরা জানি পাটির্কেল গুলো অবজারভেশনের আগ পর্যন্ত সুপারপজিশনে থাকে। যখন অবজারভেশন করা হয় তখনই কেবল কোল্যাপ্স করে। এখন আমাদের অবজারভেশনের অ্যাপারেটাস তথা আমাদের ইন্দ্রীয়সমূহ নিজেরাইতো এক ধরনের কোয়ান্টাম ম্যাকানিকাল এনসেম্বল। তাহলে একটা এনসেম্বল তথা আমাদের ব্রেইন কিভাবে আরেকটি এনসেম্বল তথা এক্সিপেরমেন্টাল এপারেটাসকে রিডাকশন করে।

    অর্থাৎ, ফিজিক্যাল সিস্টেম ছাড়াও আরও কিছু এখানে ফাংশন করছে। উক্ত কিছু হলো আমাদের মাইন্ড যার আলাদা একটি স্বত্ত্বা আছে। হতে পারে আমাদের ব্রেইনে আমাদের মাইন্ড নিয়মিত ফিজিক্যাল সিস্টেমের পরিবর্তন আনছে। যেমন: আপনি যখন কোন পাটিকুলার মুভমেন্ট করছেন তখন উক্ত মুভমেন্টের জন্য সংশ্লিষ্ট নিউরনাল সিগন্যাল মোটর কর্টেক্স-এ তৈরী হচ্ছে। হতে পারে যারা উক্ত মাইন্ডকে সুতীক্ষ্ণভাবে ব্যবহার করতে শিখেছে তারা ব্রেইনের বাইরের সিস্টেমকে অল্পমাত্রায় নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ পায়।

    থাক আজ আর এগোচ্ছি না। এ বিষয়ে আরেকদিন।

    সর্বপরী আল্লাহই ভাল জানেন।

    ….
    (Further reading: The Soul Hypothesis, Mark Baker and Stuart Goetz, ed.)

  • স্রষ্টার অস্তিত্বের পক্ষে কালাম কসমোলজিক্যাল আর্গুমেন্ট

    ডিডাকটিভ ফর্ম:

    ১. যা কিছুর শুরু আছে তার শুরু হওয়ার পিছনের কোন কারণ আছে

    ২. এই মহাবিশ্বের শুরু আছে

    ৩. অতএব এই মহাবিশ্বের শুরু হওয়ার পিছনে কারণ আছে

    উক্ত কারণের বৈশিষ্ট্য- উক্ত কারণ হলেন এমন একজন স্বত্ত্বা যিনি সর্বশক্তিমান, সময়ের উর্দ্ধে, অপরিবর্তনীয়, অশরীরী, স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি সম্পন্ন ।

    ব্যাখ্যা:

    ১ নং- এর ব্যাখ্যা


    ক. শূণ্য থেকে কোন কিছু একা তৈরী হতে পারে না

    খ. যদি শূন্য থেকে কোন কিছু একা তৈরী হতে পারতো তাহলে প্রতি মূহুর্তে যে কোন কিছু কেন শূন্য থেকে তৈরী হয়ে যাচ্ছে না তা ব্যাখ্যা করা সম্ভব হত না

    গ. আমাদের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা এবং বৈজ্ঞানিক প্রমাণাদি বলে যে শূণ্য থেকে কোন কিছু তৈরী হয় না

    ২ নং-এর ব্যাখ্যা

    ক. দার্শনিক ব্যাখ্যা

    – যদি মহাবিশ্বের শুরু না থেকে থাকে তাহলে আমাদের মহাবিশ্বের অস্তিত্ব কিভাবে আসল ব্যাখ্যা করা যায় না

    – কারণ প্রকৃত অসীম (Actual infinity) সম্ভব নয়। কেন?

    – কারণ, কোন ঘটনা সংকলন যা একটার পর একটা যোগ করে তৈর হয় তা কখনও প্রকৃত অসীম হতে পারে না

    – সময়যুক্ত কোন ঘটনা পরম্পরা হল উক্ত ধরনের ঘটনা সংকলন

    – সুতরাং সময়যুক্ত ঘটনা পরম্পরা প্রকৃত অসীম হতে পারে না

    খ. বৈজ্ঞানিক প্রমান

    – হাবল টেলিস্কোপে আবিস্কৃত তারকারাজির রেড শিফট যা প্রমাণ করে যে নক্ষত্রগুলো একটি থেকে আরেকটি দূরে সরে যাচ্ছে

    – উইলসন ও পেনজিয়াস আবিস্কৃত কসমিক ব্যাকগ্রাউণ্ড রেডিয়েশন প্রমাণ করে আমাদের মহাবিশ্বে এক্সপ্লোসিভ অরিজিন

    – বোর্ড-গুথ-ভিলেনকিন থিওরেম প্রমাণ করে যে ক্লাসিকাল স্থান-কালকে অতীতে অসীম পর্যন্ত বর্ধিত করা যায় না

    – তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্র অনুযায়ী যে কোন এক মহাবিশ্ব বা চাক্রিক মহাবিশ্বের এনট্রপি বাড়তে থাকবে যতক্ষণ না তা ভারসাম্য পৌছায়

    ৩-নং এবং এর ব্যাখ্যা-

    এই মহাবিশ্বের শুরু হওয়ার কারণ-এর কেমন হতে হবে?

    – উক্ত কারণের অস্তিত্বের কোন কারণ থাকা যাবে না। কেননা, তার অস্তিত্বের কারণ থাকলে উক্ত কারণের কারণ থাকবে ও উক্ত কারণের কারনের কারণ থাকবে এবং এভাবে অসীম পর্যণ্ত যেতে হবে। কিন্তু আমরা দেখেছি প্রকৃতি অসীম সম্ভব নয়।

    – উক্ত অস্তিত্ব হতে হবে ব্যাক্তিগত স্বত্ত্বা (personal being)। কেননা, এছাড়া ব্যাখা করার উপায় নেই যে কিভাবে একটি অসীম (eternal) কারণ থেকে সসীম ঘটনা এল

    – উক্ত অস্তিত্বের স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি থাকতে হবে। কেননা, স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি ছাড়া ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয় যে কেন উক্ত স্বত্ত্বার সাথে মহাবিশ্ব সহউপস্থিত নয়।  

    – তার অস্তিত্ব হতে হবে অশরীরী

    – তার অস্তিত্ব হবে অপরিবর্তনীয়

    – তিনি হবেন সময়ের উর্দ্ধে

    – তিনি হবেন সর্বশক্তিমান

    ইসলাম অনুযায়ী উক্ত সর্বশক্তিমান, সময়ের উর্দ্ধে, অপরিবর্তনীয়, অশরীরী, স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি সম্পন্ন স্বত্ত্বার নাম হল আল্লাহ। 

    ……..

    রেফারেন্স রিডিং- https://www.reasonablefaith.org/writings/popular-writings/existence-nature-of-god/the-kalam-cosmological-argument/

  • স্রষ্টার অস্তিত্বের পক্ষে কন্টিনজেন্সি আর্গুমেন্ট

    -কোন সাপেক্ষ অস্তিত্ব (Contingent being), যার অস্তিত্ব থাকতে পারে বা নাও থাকতে পারে, তার অস্তিত্বশীল হওয়ার পিছনে কোন কারণ আছে

    -কোন সাপেক্ষ অস্তিত্ব স্ব-অস্তিত্বশীল হতে পারে না

    -সাপেক্ষ অস্তিত্ব-এর অস্তিত্বশীল হওয়ার কারণ হয় অন্য কোন সাপেক্ষ অস্তিত্ব বা আবশ্যকীয় অস্তিত্ব

    -কোন সাপেক্ষ অস্তিত্ব অন্য কোন সাপেক্ষ অস্তিত্বের অস্তিত্বশীল হওয়াকে পূর্ণভাবে ব্যাখ্যা করতে পারে না

    -কোন সাপেক্ষ অস্তিত্ব অস্তিত্বশীল হওয়ার ব্যাখ্যা চূড়ান্ত ভাবে কেবল আবশ্যকীয় অস্তিত্বই দিতে পারে

    -মহাবিশ্ব বা সকল সম্ভাব্য মহাবিশ্ব হল সাপেক্ষ অস্তিত্ব

    -অতএব মহাবিশ্বের অস্তিত্বশীল হওয়ার পিছনে কোন আবশ্যকীয় অস্তিত্ব আছে

    -অতএব আবশ্যকীয় অস্তিত্ব আছে

    আবশ্যকীয় অস্তিত্বের প্রয়োজনীয় বৈশিস্ট্য:

    ১. ইচ্ছা শক্তি

    ২. সময়ের উর্ধ্বে

    ৩. অপরিবর্তনশীল

    ৪. সর্বশক্তিমান

    ৫. সর্বজ্ঞানী

    ৬. একক

  • জীবনের উৎপত্তি ১: জীবনের উৎপত্তি সম্পর্কে চূড়ান্ত প্রশ্ন

    জীবনের উৎপত্তি নিয়ে পড়ালেখা করলে দেখবেন বিজ্ঞানীরা পদ্ধতিগত বস্তুবাদের (Methodological Naturalism)-এর আলোকে জীবনের বস্তুগত উৎপত্তি ব্যাখ্যার করার জন্য ‘অ্যাবায়োজেনেসিস’ নামক একটি শাখা খুলেছে। এই শাখার মূল উৎস হল জীবনের বস্তুগত উৎপত্তি ব্যাখা করা। অর্থাৎ, কিভাবে আদিম পৃথিবীতে বিদ্যমান রাসায়নিক ও ভৌত নিয়মাবলীর মাধ্যমেই প্রথম কোষ উৎপন্ন হল।

    যদিও বিজ্ঞানী ডারউইনের মতবাদকে এখন অ্যাবায়োজেনেসিস থেকে পৃথক ভাবে উপস্থাপন করা হয় কিন্তু জীবনের উৎপত্তি সম্পর্কে তিনি তার (বস্তুবাদী) মত ব্যক্ত করতে পিছপা হন নাই। তিনি জোসেফ ডাল্টন হুকারকে লেখা একটি পত্রে জীবনের উৎপত্তির সম্পর্কে যা বলছেন তা অনেকটা এরকম: পৃথিবীর আদিম পরিবেশে যদি একটি ‘ইশত গরম ছোট পুকুর’ কল্পনা করা যায় যেখানে সবধরনের অ্যামোনিয়া ও ফসফরাস যৌগ আছে এবং সাথে আছে আলো, উত্তাপ ও বিদ্যুত তাহলে সেখানে হয়ত প্রোটিন তৈরী হয়ে থাকবে যা জীবনের উৎপত্তির কারণ হতে পারে। (১)

    তবে, জীবনের উৎপত্তি সংক্রান্ত ‘প্রিমর্ডিয়াল সোপ’ তত্ত্বের প্রথম প্রবক্তা হচ্ছেন অপারিন ও হেলডেন। এই তত্ত্বানুসারে ‘প্রিমর্ডিয়াল সোপ’ হচ্ছে এমন একটি রাসায়নিক পরিবেশ যেখানে বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির প্রভাবে বিভিন্ন জৈব যৌগ এলোপাতাড়ি ভাবে তৈরী ‘হয়ে থাকবে’, যেখান থেকে প্রাণের উৎপত্তির সূচনা হয়েছে।

    কিন্তু, ‘প্রিমর্ডিয়াল সোপ’ তত্ত্ব যখন দেয়া হয় তখনও ডিএনএ, আরএনএ, প্রোটিন-এর মত কোষের মৌলিক গাঠনিক উপাদান-এর আনবিক গঠন সম্পর্কে কোন ধারণাই ছিল না। কোষের ভিতর যে আরেকটি ‘স্বয়ংক্রিয়’ ও বিশাল ‘রাজ্য’ আছে এ সম্পর্কেও সে সময় কোন ধারণা ছিলো না।

    প্রোটিনের গাঠনিক একক অ্যামাইনো এসিড সম্পর্কে বিজ্ঞানজগত যখন জানলো তখন বিজ্ঞানী মিলার ও ইউরে পৃথিবীর আদিম পরিবেশের একটি ‘ধারণাকৃত’ মডেল তৈরী করে পরীক্ষা চালালেন যে কোন অ্যামাইনো এসিড একা একাই তৈরী হয় কিনা? তাদের পরীক্ষায় প্রোটিন গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ২০টি অ্যামাইনোএসিড-এর মধ্যে সরল কিছু অ্যামাইনো এসিড তৈরী হয়েও ছিলো। কিন্তু, তা এলোপাতাড়ি ভাবে একটি প্রোটিনের গঠন ব্যাখ্যা করতেই সক্ষম নয় একটি কোষের গঠন ব্যাখ্যা করাতো অনেক পরের ব্যপার।
    (এ বিষয়ে আরেকটু বিস্তারিত জানতে পারবেন ২ নং রেফারেন্সে প্রদত্ত লিংক-এ)

    এরপর যত দিন পার হচ্ছে কোষের অভ্যন্তরীন জগতের ডিজাইনের জটিলতা সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানার সুযোগ হচ্ছে এবং উক্ত ডিজাইন-এর পিছনের ডিজাইনারের প্রয়োজনীয়তা আরও প্রকট হচ্ছে।

    তবে, ‘দর্শনগত’ বস্তুবাদের অনুসারীরা তাদের প্রচেষ্টাতে থেমে নেই। তারা চায় যে করেই হোক জীবের উৎপত্তির একটি বস্তুবাদী ব্যাখ্যা দাড় করিয়ে তাদের দর্শনের ভিত্তি হিসেবে তা প্রচার করতে। (৩)

    যাই হোক, বর্তমান পৃথিবীর অন্যতম দামী ‘অনলাইন মার্কেটিং কনসালটেন্ট’ পেরি মার্শাল-এর (৪) বিবর্তনবাদ ও ডিজাইন ইস্যু নিয়ে পড়াশোনা অনেক দিন থেকে। সব ধরনের বায়াসকে একপাশে রেখে তিনি ডারউইন-ডিজাইন ডিবেট ফলো করছেন এবং পড়ছেন। তার পড়াশোনার আলোকে তিনি অনেকদিন ধরে www.cosmicfingerprints.com সাইটটিতে লিখছেন। এই সাইট-এ এবং নাস্তিকদের সবচেয়ে বড় সাইটগুলোতে বাঘা বাঘা নাস্তিকদের সাথে তার ডারউইন-ভার্সাস-ডিজাইন নিয়ে তর্ক হয়েছে। ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাকগ্রাউণ্ড থেকে পড়াশোনা করায় তিনি যখন ডিএনএ-এর গঠন নিয়ে পড়েছেন তখন ইনটুশন থেকে অনুভব করেছেন যে কোন ডিজাইন ছাড়া ডিএনএ স্বয়ংক্রিয়ভাবে আসা সম্ভব না। তিনি তার ডারউইন থেকে ডিজাইনে থিতু হওয়ার গল্প লিখেছেন Evolution 2.0: Breaking the Deadlock Between Darwin and Design-বইতে। তার চেষ্টা হচ্ছে কিভাবে ডারউইন ও ডিজাইনের মধ্যে সমোঝোতা করা যায়। সে প্রেক্ষিতে তার বক্তব্য অনেকটা এরকম যে প্রথম কোষকে ডিজাইন করা হয়েছে যার মধ্যে হয়ত বিবর্তিত হওয়ার ইন-বিল্ট ম্যাকানিজম দেয়া ছিলো।

    তিনি যখন ডারউইবাদী নাস্তিকদের সাথে বিতর্ক করতেন তখন আবিস্কার করলেন যে নাস্তিকরা সবচেয়ে মৌলিক যে প্রশ্নটিতে কোন ভাবেই ব্যাখ্যা দিতে পারছে না তা হল- ডিএনএ-তে ‘জেনেটিক কোড’ কিভাবে এলোপাতাড়ি প্রক্রিয়ায় আসলো? কোড তৈরীর প্রক্রিয়াটি করে মানুষ, যাদের ‘মাইন্ড’ আছে। ‘মাইন্ড’-এর একটি বৈশিষ্ট্য হলো সে রুল তৈরী করতে পারে এবং ভাঙ্গতে পারে। অন্যদিকে কম্পিউটার শুধু নিয়ম ফলো করে। সুতরাং জেনেটিক কোড স্বয়ংক্রিয়াভাবে তৈরী হওয়ার বিষয়টি যদি পরীক্ষা নিরীক্ষা দ্বারা আবিস্কার ও নিশ্চিত করা যায় তা জীবনের উৎপত্তিতো ব্যাখ্যা করবেই সাথে রোবটিক্স থেকে শুরু ইনফরমেশন টেকনোলজির জগতে একটি বিপ্লব ঘটিয়ে দিবে। সে প্রেক্ষিতে তিনি সকলের জন্য উন্মুক্ত একটি চ্যালেঞ্জ দিয়ে রেখেছেন:

    যে কেউ স্বয়ংক্রিয়ভাবে এবং কোন প্রকার বুদ্ধিমত্তা ছাড়া ‘জেনেটিক কোড’ তৈরীর পরীক্ষনিরীক্ষালব্ধ প্রমাণ (Experimental Proof) হাজির করতে পারবে তাকে ৫ মিলিয়ন ইউএস ডলার পুরস্কার দেয়া হবে। তার এই চ্যালেঞ্জটি এখনও কেউ গ্রহণ করতে সক্ষম হয়নি। চ্যালেঞ্জটি নিচের লিংক-এ পাবেন:

    “Artificial Intelligence + Origin of Life Prize, $5 Million USD”
    https://www.herox.com/evolution2.0

    অতএব, জীবনের উৎপত্তি সংক্রান্ত চূড়ান্ত প্রশ্ন হল ‘কিভাবে জেনেটিক কোড’ এল?

    ….
    যারা জার্মানীর ভিসা লাগানোর জন্য নিজের বিশ্বাসকে জলাঞ্জলি দিয়েছেন তারা কেন এই পুরস্কার পাওয়ার চেষ্টা করছেন না। পুরস্কার দেখেছেন? পুরো পাঁচ মিলিয়ন ডলার? তদুপরি আপনার এই আবিস্কার যখন প্যাটেন্ট হবে, চিন্তা করেছেন কি হতে পারে? এটি বিক্রি হবে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারে, আপনি হবেন দুনিয়ার সবচেয়ে বড় ধনী। গুড লাক।

    …..
    ফুট‌নোটস:

    ১. Darwin, C. “To J. D. Hooker 1 February [1871]”. University of Cambridge. Available at: https://www.darwinproject.ac.uk/letter/DCP-LETT-7471.xml
    ২. এ বিষয়ে আরেকটু বিস্তারিত লিখেছিলাম এই লিংক-এ:
    http://shodalap.org/saeeddmc/26145/
    ৩. জীবের উৎপত্তি সংক্রান্ত অনেকগুলো মতবাদ আছে এখন। যেগুলোর একেকটি কোষের একেকটি বিষয়ের উৎপত্তির ব্যাখ্যা দেয়া চেষ্টা করে। উক্ত তত্ত্ব গুলোর কোনটাই সম্পূর্ণ নয়। সব অনুমান নির্ভর ও ত্রুটিপূর্ণ।
    ৪. https://www.perrymarshall.com