তাকদীরের ধারণা পাওয়ার জন্য সময়ের আপেক্ষিতার ধারণাটা বোঝা দরকার। সময় একটি আপেক্ষিক বিষয়। যেমন ধরুন আমরা এক সেকেন্ড বলতে যে সময়টুকু বুঝি সে সময়টা আপেক্ষিক। কীভাবে?
মনে করুন আমি আপনার থেকে আলোর বেগের কাছাকাছি বেগে দূরে সরে যাচ্ছি। সেক্ষেত্রে আপেক্ষিতা তত্ত্ব অনুসারে আমি যে টাইম ফ্রেমে থাকব সেটির সময় প্রসারিত হয়ে যাবে। অর্থাৎ আমার এক সেকেন্ডের পরিমাণ আপনার এক সেকেন্ডের পরিমান থেকে বেশী হবে। সুতরাং সময় বিষয়টা অবজারভার এর কন্ডিশনের উপর নির্ভর করে।
এখন মনে করুন আপনি একটি ভিডিও দেখছেন। ভিডিওটি যদি আপনি স্বাভাবিক গতিতে দেখতে থাকেন, সেক্ষেত্রে আপনার কাছে মনে হবে ভিডিওর ভিতরের গতি আপনার পারিপার্শ্বের জীবনের গতির মতই স্বাভাবিক। কিন্তু আপনি যদি ফাস্ট ফরোয়ার্ড করেন তাহলে দেখবেন ভিডিওটির ভিতরের জীবনের গতি দ্রুত হয়ে গেছে। খেয়াল করুন ভিডিওতে কী হয়? ভিডিওতে আসলে অনেকগুলো স্থির চিত্রকে আপনার সামনে দ্রুত সঞ্চালিত করা হয়। ফলে আপনার মনে হয় যেন ভিডিওটা জীবন্ত।
এবার আরেকটু গভীর ভাবে চিন্তা করুন। আমাদের এই বাস্তব জীবনটাকে যদি একটি রিয়েলটাইম থ্রি ডাইমেনশনাল ভিডিও ধরা হয়, তাহলে যেটা মনে হবে যে আমাদের জীবন কতগুলো থ্রিডি স্থির চিত্রের সমষ্টি। যেখানে আল্লাহ তাআলা একটির পর একটি ইমেজকে এমন একটি ইন্টারভেলে আমাদের আত্মার সামনে উপস্থাপন করছেন যেন আমাদের কাছে তা চলন্ত মনে হয়।
যদি এভাবে ধরা হয় তাহলে দেখবেন যে, আল্লাহ তাআলা কীভাবে সবকিছু আগে থেকেই জানেন বা লিখে রেখেছেন তা বুঝা কিছুটা সহজ হয়। কেননা তিনি তাঁর অগ্রীম জ্ঞানের ভিত্তিতে আমাদের জীবনের জন্য প্রযোজ্য সবগুলো ইমেজ সৃষ্টি করলেন এবং একটার পর একটা আমাদের সামনে উপস্থাপন করছেন। এ কারণে আমরা সময়ের গণ্ডিতে আবধ্য। (আল্লাহই ভাল জানেন)
এখানে লক্ষ্যণীয় যেহেতু তিনি তার অগ্রীম জ্ঞানের ভিত্তিতে জানেন যে আমরা কীভাবে জীবন যাপন করব, তার মানে এই না যে তিনি আমাকে যে স্বাধীনতা দিয়েছেন (পরীক্ষা করার জন্য) সেটা ভঙ্গ হল। কেননা তিনি আমাকে স্বাধীনতা দিলে পরে আমি যে পথ অবলম্বন করব সেটা তাঁর জানা। এবং যেহেতু আমাকে অস্তিত্বশীল করতে হবে সেহেতু সেই আলোকে সবগুলো ইমেজ তৈরী করে আমাদের সামনে উপস্থিত করছেন। (আল্লাহই ভাল জানেন)
এ বিষয়টি থেকে এটাও বুঝা সহজ হয় যে কীভাবে আল্লাহ সময়ের অধীন নন। আমি উপরে যখন বললাম যে তিনি অগ্রীম জ্ঞানের ভিত্তিতে তৈরী করছেন তখন বুঝতে হবে যে সেটি আমার আপনার সাপেক্ষে অগ্রীম। আল্লাহর সাপেক্ষে অতীত বা ভবিষ্যত বলে কিছু নেই। তিনি সময়ের স্রষ্টা, সময়ের অধীন নন। বর্তমান মহাবিশ্বের অথবা সম্ভাব্য সকল নিয়মের সকল প্রকার মহাবিশ্বের সকল ঘটনাবলী তার সাপেক্ষে ঘটে গেছে। সুতরাং তিনি যখন কোন কিছু সৃষ্টি করতে ইচ্ছে করেন তখন ঐ সৃষ্টিগুলো নিজস্ব সীমাবদ্ধতা ও গণ্ডি সহ তৈরী হয়ে যায় তথা আত্মপ্রকাশ করে। যেমন আমাদের অন্যতম একটি গণ্ডি হচ্ছে সময়।
যেহেতু মহাবিশ্বের সৃষ্টির শুরুর সাথে সাথে সময়ের শুরু হয়েছে সেহেতু বিষয়টি আপনি অনেকটা এভাবে চিন্তা করতে পারেন যে, সময়ের ডাইমেনশন সহ মহাবিশ্ব সৃষ্টির প্রাথমিক পর্যায়ে একটি বিন্দু ছিল। এখানে কল্পনা করুন একটি ত্রিভুজ যার চূড়া C উপরের দিকে। ভূমি AB নিচে। ভূমির সমান্তরালে ঠিক মাঝ বরাবর একটি রেখা xy. মনে করি মহাবিশ্বের শুরুর বিন্দুটি হল ত্রিভুজটির চূড়ার বিন্দু। এই বিন্দুতেই তাহলে বর্তমানে মহাবিশ্বের সকল ঘটনাবলি পুঞ্জিভূত আছে। সুতরাং এখানে সময় হবে স্থির। ত্রিভুজের যতই নিচের দিকে যাবেন দেখবেন সকল ঘটনাবলির ‘পরিমাণটা’ ফিক্সড থাকলো, কিন্তু সময়ের তৈরী হল।( কেননা এখন প্রতিটি ইমেজের মধ্যবর্তী একটা স্থান পার্থক্য তৈরী হল, যেগুলো মূল C বিন্দুতে পুঞ্জিভূত ছিল।) হতে পারে যে আমরা সময়ের এই এক্সপ্যানডিং ইউনিভার্স এর ঠিক মধ্য রেখায় আছি। অন্য কথায় এই xy লাইনটি বরাবর যখন সময় আসলো তখন আল্লাহ সেই লাইন বরাবর আমাদের জন্য সৃষ্ট থ্রিডি ইমেজ গুলো আমাদের আত্মার সামনে দিচ্ছেন। অন্য কথায় রিয়েলটাইম ঘটনাচক্রের এই ক্ষেত্রের সাথে আমাদের আত্মাকে সংযুক্ত করে দিয়েছেন। অথবা হয়ত AB লাইন বরাবর আমরা আছি। দেখুন এখান থেকে কিন্ত এ বিষয়টা পরিষ্কার যে আল্লাহ তাআলা এই টাইম ফ্রেমের বাইরে। একই সাথে তিনি এই ফ্রেমের সকল ঘটনাবলীর স্রষ্টা।
আবার এটাও পরিষ্কার যে কেন তিনি যখন ‘হও’ বলেন, তা হয়ে যায়। কেননা সকল ঘটনা তার সামনে ঘটে গেছে। তিনি টাইম ফ্রেমের বাইরে। তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী যে কোন একটি টাইম ও ঘটনা ফ্রেমে অস্তিত্বশীল হতে পারে। (আল্লাহর এই ‘হও’ বলাটা নি:সন্দেহে মানুষের হও বলার মত নয়) আবার আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা যেহেতু কোন কিছু দিয়েই সীমাবদ্ধ নন, সুতরাং তিনি যা সৃষ্টি করেন তা স্বভাবতই তাঁর মুখাপেক্ষী হয়েই জন্মায়। সবকিছুই স্বভাবজাত ভাবেই তার প্রভুর পবিত্রতা ঘোষণা দিতে থাকে। (অর্থাৎ সৃষ্টির সীমাবদ্ধতাই প্রকাশ করতে থাকে যে স্রষ্টা অসীম)
সুবহানআল্লাহ। আল্লাহ যতটুকু জ্ঞান আমাদের দিয়েছেন তার বাইরে আমাদের কিছুই জানা নাই। আল্লাহই সবকিছু ভাল জানেন।
“আল্লাহ এমন এক চিরঞ্জীব ও চিরন্তন সত্তা যিনি সমগ্র বিশ্ব-জাহানের দায়িত্বভার বহন করছেন, তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই ৷ তিনি ঘুমান না এবং তন্দ্রাও তাঁকে স্পর্শ করে না ৷ পৃথিবী ও আকাশে যা কিছু আছে সবই তাঁর ৷ কে আছে তাঁর অনুমতি ছাড়া তাঁর কাছে সুপারিশ করবে? যা কিছু মানুষের সামনে আছে তা তিনি জানেন এবং যা কিছু তাদের অগোচরে আছে সে সম্পর্কে তিনি অবগত ৷ তিনি নিজে যে জিনিসের জ্ঞান মানুষকে দিতে চান সেটুকু ছাড়া তাঁর জ্ঞানের কিছুই তারা আয়ত্ব করতে পারে না ৷ তাঁর কর্তৃত্ব আকাশ ও পৃথিবী ব্যাপী ৷ এগুলোর রক্ষণাবেক্ষন তাঁকে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত করে না ৷ মূলত তিনিই এক মহান ও শ্রেষ্ঠ সত্তা ৷” (সুরা বাকারা: আয়াত ২৫৫)
কেউ কি কখনও চিন্তা করেছেন কেন আপনার টাকার নোটে লিখা থাকে চাহিবামাত্র ইহার বাহককে ২০/৫০/১০০/৫০০/১০০০ টাকা দিতে বাধ্য থাকিবে?
এর মানে কি? ধরি, আপনার কাছে ২০ টাকার নোট আছে। আপনি বলছেন এটা ২০ টাকা। কিন্তু আপনার নোটে লিখা যে চাহিবা মাত্র ইহার বাহককে ২০ টাকা দিতে বাধ্য থাকবেন। যারা পেপার মানি নিয়ে একটু পড়ালেখা করেছেন তারা ব্যাপারটি জানেন।
আসলে আপনি আপনার হাতে যে নোটটি ধরে আছেন সেটির নিজস্ব কোন মূল্য নেই, সেটি একটি রিপ্রেজেন্টর মাত্র। ব্যাপারটা এরকম যে মনে করুন আপনি এক ভরি স্বর্ণ একজন স্বর্ণকারের কাছে আমানত রাখলেন। সে আপনাকে এর পরিবর্তে একটি কাগজে লিখে দিল। এখন আপনার কাগজটি ঐ স্বর্ণমূল্যের সমান মূল্য ধারণ করে। আপনি কেবল ঐ কাগজটি ফেরত দিলেই এ স্বর্ণটি ফেরত পাবেন। আপনি কি করলেন আপনার বন্ধুকে স্বর্ণ সরাসরি না দিয়ে নোটটা দিলেন। এরপর আপনার বন্ধু মুদি দোকানে গিয়ে সদাই করে স্বর্ণ না দিয়ে দিল ঐ নোটটা। এভাবে স্বর্ণ স্বর্ণকারের কাছেই থেকে গেল পরিচালিত হতে থাকল এই নোটটা। কোন এক সময় এক ব্যাক্তি যদি উক্ত নোটটা স্বর্ণকারের কাছে নিয়ে যায় তাহলে সে স্বর্ণ ফেরত দিতে বাধ্য থাকবে।
এখন আপনি বলুন আপনার এই নোটের পরিবর্তে আপনি যদি আপনার ব্যাংকে গিয়ে আপনার প্রকৃত মূল্য ফেরত চান তাহলে কি পাবেন? হ্যা আপনি পেতে পারতেন যদি ঐ একটি নোটের পরিবর্তে গচ্ছিত স্বর্ণখন্ডটি তার কাছে থাকত। কিন্তু, ব্যাপারটিতো এখন আর সে রকম নেই। কারণ উক্ত স্বর্ণকার যখন দেখল যে কেউ তার নিকট আর স্বর্ণ ফেরত নিতে আসছে না সে একটা চালাকি করল। সে তার কাছে গচ্ছিত ঐ স্বর্ণটির পরিবর্তে একাধিক একই নোট বের করল এবং বাজারে ছেড়ে দিল। কি ধরতে পেরেছেন ব্যাপারটা? (এভাবেই একসময়ের স্বর্ণ বন্ধক রাখার লোকেরা টাকার উদ্ভব করে)
হ্যা। আসলে এই নোটের পরিবর্তে ব্যাংকে থাকার কথা সমমূল্যের স্বর্ণ। কিন্তু আপনি কি জানেন যে ব্যাপারটি এখন আর তা নেই। কারণ আপনার টাকার মূল্য নির্ধারণ হচ্ছে আপনার ব্যাংকে রক্ষিত মার্কিন ডলার দিয়ে।
আপনি মনে করছেন তাহলে উক্ত মার্কিন ডলারের পরিবর্তে নিশ্চয়ই সমমূল্যের স্বর্ণ রক্ষিত আছে, মার্কিন ব্যাংকে। দু:খিত, সে সময় অনেক আগে পার হয়ে গেছে। মার্কিন ডলার এখন নিজস্ব সরকার কর্তৃক ঘোষিত অর্থমান বহন করে।
কি, আপনি ভাবছেন তার মানে মার্কিন সরকার চাইলে যে কোন সময় Out of thin air অর্থ তৈরী করতে পারে। অবশ্যই পারে। আপনার কি মনে হয়? ওবামা ঘোষিত বেইলিং মানি কিভাবে আসল????
যাই হোক আপনি হয়ত অন্তুত এই ভেবে সন্তুষ্ট যে মার্কিন সরকার এই অর্থমান জারি করে। দু:খিত, আপনি আবারও ভুল করছেন। এই অর্থ আসে Federal Reserve System থেকে, যেটি কার্যত একটি Private প্রতিষ্ঠান।
কি বললেন???
হ্যা তাই। মার্কিন সরকারের যখন টাকার প্রয়োজন সে কার্যত ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম থেকে টাকা ধার নেয়। আর এভাবে শুরু হয় পারপেচুয়াল ডেট(Perpetual Debt) । কারণ আপনি এই ধার কখনই পরিশোধ করতে পারবেন না?? হে হে। পরিশোধ করতে হলে এই ফেডারেল রিজার্ভ থেকেই আবার ধার নিতে হবে।
(তবে, মার্কিন ডলারের এই নিজস্ব মূল্যমান আগে ছিল না। এর পরিবর্তে বরং সমমূল্যের স্বর্ণমুদ্রা জমা থাকত ব্যাংকে। পরে কিভাবে এটা পরিবর্তন হয় জানতে নিচে প্রদত্ত ৪ নম্বর লিংকটি দেখুন)
কি ভাই?? তাহলে এখন বুঝতে পারছেন কারা প্রকৃতপক্ষে পৃথিবী পরিচালনা করছে?? এরা আরও অনেক সিনিস্টার প্ল্যান করে রেখেছে । শুধু অপেক্ষা করুন।
Archaea, previously named Archaebacteria, is a superkingdom consisting of bacteria like single cellular organisms which are found in extreme environments like harsh spring, salts lakes as well as normal environment.
Before their molecular structure was studied they were kept under bacteria as a subgroup.
Now, when it was found that they are made of different structural molecules, they are not put inside eukaryotes or prokaryotes, a complete different domain had to create for the group.
Let us see what was found:
In single cellular organisms like prokaryote and eukaryote, the cell membrane consists of phospholipid bilayer. This phospholipid molecules are made of saturated and unsaturated long chain fatty acids bound to phosphatidic acid by ester bonds, ie, by -COO-
But, molecular analysis revealed that phospholipid of Archea contains phospholipids made of isoprenyl alephatic side chains bound to phosphatidic acid by ether bonds, ie, by -O-; giving much resilience to the membrane making it capable of living in harsh environments as it was mentioned above.
Now, scientists realized it would require a completely different set of enzymes to build such membrane. They analyzed and found so. The enzymes are nor like that of bacteria’s neither that of eukaryots’.
So, finally, Archaebacteria consisting of a whole lot of species was grouped under a different Domain named Archaea.
Presently, there are three domains in cellular organisms, namely, Archea, Prokaryot and Eukaryote.
What is interesting to note here is, Archaebacteria was previously thought to be evolved from Bacteria; but now they have to find another common ancestor from which the Bacteria, Archaea and Protozoa has come.
And you see, this process will go on. If a new domain is discovered in future, they will also put that domain aside the previous three and try to find a common ancestor. Because the goal of the Evolutionists is to find a common ancestor, even if possible to find it in their IMAGINATION.
মেমোরী তথা স্মরণশক্তি দু ধরনের। ডিক্ল্যারেটিভ ও ননডিক্ল্যারিটিভ। প্রথমটি হল সে ধরনের মেমোরী যা আমরা কথার মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারি। যেমন: কোন কিছুর নাম, সংখ্যা, কোন ঘটনার স্মৃতি ইত্যাদি। দ্বিতীয়টি হল সে ধরনের যেগুলো কথার মাধ্যমে প্রকাশ করা যায় না। যেমন: যে কোন ধরনের কাজ- সাইকেল চালানো, ড্রাইভিং, কিবোর্ড টেপা ইত্যাদি। দ্বিতীয় ধরনের মেমোরী আমাদের ‘সাবকনসাস’-এ প্রোথিত হয়। এমনকি এই ধরনের মেমোরী স্মরণ করতে গিয়ে সেটা সম্পর্কে ‘কনসাস’ হতে গেলে কাজটির ব্যাঘাত ঘটে। যেমন: একজন টেনিস খেলোয়ার বলে ব্যাট লাগাতে গেলে তার মন ‘সাবকনসাসলি’ মাপাঝোকা করে দেয়, এ সময় প্রতিপক্ষের মারা বলের দিকে মোনযোগ দিতে গেলে শট মিস হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।।
ডিক্ল্যারেটিভ ও ননডিক্ল্যারেটিভ দুধরনের মেমোরীই বৃদ্ধি করা যায়, পুন:পুন: চর্চার মাধ্যমে। তবে মনে রাখার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল যা শিখছি তার প্রতি গভীর আগ্রহ।
আলেকজান্ডার অ্যাটকিন তেরো বছর বয়সে মনে মনে অঙ্ক কষার বিষয়টিতে গভীর আগ্রহ অনুভব করেন। তিনি ‘পাই’ এর মান দশমিকের পড়ে ১০০০ ঘর পর্যন্তু মুখস্ত করেছিলেন। পরবর্তীতে এই ব্যাক্তি এডিনবার্গ-এ ম্যাথমেটিক্সের প্রফেসর হয়েছিলেন। তবে বর্তমানে পাইয়ের মান দশমিকের পড়ে মনে রাখতে পারার ‘ওয়ার্ল্ড রেকর্ড’ টি গড়েছেন চিনের চাউ লু। এই ব্যাক্তি পাই এর- মান দশমিকের পর ৬৭৮৯০ ঘর পর্যন্ত বলতে পেড়েছেন, মুখস্ত!
ওলফগ্যাঙ এমাদেওস মোজার্ট চার বছর বয়সে পিয়ানো শেখেন এবং আট বছর বয়সে তার প্রথম সিমফোনী রচনা করেন। তাকে অন্যতম প্রধান মিউজিক প্রোডিজি বিবেচনা করা হয়। লাডউইগ ভ্যান বেথোভেন তার শেষ জীবনে বধির হয়ে গিয়েছিলেন। এ সময় তিনি কিছু সোনাটা ও কোয়ার্ট্রেট রচনা করেন। সমসাময়িক মিউজিসিয়ানদের অবোধ্য হওয়ায় সমালোচিত হলেও পরবর্তীতে এই মিউজিকগুলোকেই তার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ রচনা হিসেবে বিবেচিত হয়।
পাবলো পিকাসোকে পূর্ণাঙ্গ আর্টিস্ট হিসেবে বিবেচনা করা হত যখন তার বয়স বারো। লিউনার্দো দ্যা ভিঞ্চি ছিলেন একজন পলিম্যাথ(অর্থাৎ বিভিন্ন বিষয়ের বিজ্ঞানী)। বিশ বছর বয়সে তিনি আর্টিস্টদের গাইড, ‘গাইড অব সেন্টলুকের’ মাস্টার নির্বাচিত হয়েছিলেন।
দাবার ওয়ার্ল্ড রেটিং এ বর্তমানে এক নাম্বার খেলোয়ার ম্যাগনাস কার্লসেন। মাত্র বাইশ বছর বয়সে গত জানয়ারী মাসে সে চেজ লিজেন্ড গ্যারী ক্যাসপারভের FIDE Rating 2851 কে অতিক্রম করে এবং এখন পর্যন্ত তার সর্বোচ্চ রেটিং 2872। তেরো বছর বয়সে এই ‘মোজার্ট অব চেজ’ একটি খেলায় ক্যাসপারভকে হারাতেও বসেছিল।
শ্রিনিভাস রামানুজনের বয়স যখন তেরো তিনি নাম্বার থিওরী এবং বার্ণোলী নাম্বার এ নিজস্ব থিওরী দাড়া করান। ক্লডে শ্যানন যখন দেখান যে বুলিয়ান লজিক যে কোন লজিকাল, নিউমেরিকাল রিলেশনশিপ-এ ব্যবহার করা যায় তখন তার বয়স ছিল একুশ। জেমস ওয়াটসন ডিএনএ’র গঠন আবিস্কার করছিলেন তেইশ বছর বয়সে। এনরিকো ফার্মি একটি ভাইব্রেটিং রডের পার্সিয়াল ডিফারেনশিয়াল ইকুয়েশন সমাধান করতে ফরিয়ার এনালাইসিস ব্যবহার করেন সতের বছর বয়সে। মার্ক জুকারবার্গ স্কুল লাইফে গেমস প্রোগ্রাম করে দিতেন আর তার বন্ধুরা সেই গেমস খেলত।
কম বয়সে স্কিল্ড এডাল্টদের মত দক্ষতা প্রদর্শন করলে তাদের প্রোডিজি বলা হয়। উপরে যাদের উদাহরণ দেয়া হল তাদের কেউ চাইল্ড প্রোডিজি, কেউ এডাল্ট। তবে সবার ক্ষেত্রে একটা সাধারণ ব্যাপার হল আগ্রহ, প্রচেষ্টা এবং সবার উপরে অবশ্যই আল্লাহ তাআলার ইচ্ছা।
আগ্রহ ও প্রচেষ্টার বাইরেও আল্লাহর রহমত থাকা জরুরী। আর এ কারনেই একটি বিস্ময়কর উদাহরণ হল মুসলিম বিশ্বের হাজার হাজার হাফেজী মাদ্রাসার হাজার হাজার বালক বালিকা। ৪ থেকে ১২ বছর বয়সী কোরআনের অসংখ্য হাফেজ আছে সাড়া পৃথিবীতে। কোন প্রকার অর্থ না বুঝে পুরো কোরআন মুখস্ত করতে পারাটা আল্লাহর অশেষ রহমতের একটি উদাহরণ মাত্র। কোরআনের বিস্ময়কর ভাষাশৈলী, ছন্দবদ্ধতা ও সাহিত্যপ্রকরণ হল একে মনে প্রোথিত করতে পারার মূল কারণ।
অন্যদিকে, বেনজামিন লিবেট তার কনসাসনেস সম্পর্কিত এক্সপেরিমেন্টে দেখিয়েছেন যে মানুষ যখন কোন কিছু অনুভব করে সেটা কনসাসলি অনুভব করার ০.৫ সেকেন্ড আগেই তার অনুভব সম্পর্কিত নির্দিষ্ট ব্রেইন এরিয়াতে ইলেকট্রিক্যাল স্টিমুলেশন পৌছে যায়। আবার যখন সে কোন কিছু করতে ইচ্ছে করে যেমন: হাত আগানো, তখন তার ব্রেইনের ‘মোটর’ এরিয়াতে হাত আগানোর কনসাস ফিলিং (অনুভব) হওয়ার ০.৫ সেকেণ্ড আগেই ইলেকট্রিক্যাল এক্টিভিটি শুরু হয়ে যায়। তবে মানুষ সর্বচ্চো সেই এক্টিভিটিকে একটি ভেটো দিয়ে থামিয়ে দিতে পারে। এটাকি তাহলে এক্সপ্লেইন করে, মানুষের প্রচেষ্টায় আল্লাহর সাহায্য কিভাবে আসে এবং কেন মানুষের স্বাধীন ইচ্ছা শক্তি নির্দিষ্ট মাত্রায় আবদ্ধ?
Bibliography:
1. Neuroscience; D. Purves et el.
2. Mind Time: Temporal factors in consciousness; Benjamin Libet
3. The 100: A Ranking Of The Most Influential Persons In History; Michael H. Hart
বিলুপ্ত হোমিনিন প্রজাতির জিনোম এবং হিউম্যান ইভল্যুশন সংক্রান্ত আবিস্কারের জন্য ভ্যান্তে পাবো ২০২২ নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন। তিনি নিয়ানডার্থাল জিনোমের সিকোয়েন্সিং করেছেন।
এই সংবাদটির আলোকে স্রষ্টায় অবিশ্বাসীদের দাবী হলো, এই আবিস্কার মানুষের বিবর্তন প্রমাণ করেছে, সুতরাং আব্রাহামিক ধর্মগুলোর আদম-হাওয়া তত্ত্বের কোন ভিত্তি নেই।
মনে হয় যেন,নিয়ানডার্থাল জিনোম সিকোয়েন্সিং এবং হিউম্যান জিনোমের সাথে তুলনা করতে পারা মানেই মানুষের বিবর্তন প্রমাণিত হওয়া।
সায়েন্টিজমের অনুসারী এবং নিও-এথিস্টদের স্ট্র্যাটেজি হচ্ছে বিজ্ঞানের মধ্যে তাদের ফিলোসফি ঢুকিয়ে ধর্মবিরোধী মতবাদের পক্ষে প্রচার চালানো। সেই হিসেবে এ ধরনের হাইপ কোন অস্বাভাবিক বিষয় না।
তাই তাদের এই হাইপকে একপাশে রেখে আমাদের তিনটি প্রশ্নের আলোকে বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করা দরকার।
১. বিবর্তন তত্ত্ব বৈজ্ঞানিক ভাবে সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত কি না?
২. বিবর্তন তত্ত্ব স্রষ্টায় বিশ্বাসের সাথে সাংঘার্ষিক কিনা?
৩. বিবর্তনতত্ত্ব ইসলামের সাথে সাংঘার্ষিক কিনা?
প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর অনেক বিস্তৃত এবং বড় কলেবরে এক বা একাধিক খণ্ডের বই-এর দাবী রাখে। তবে, এই পোস্টে খুব সংক্ষেপে ১ ও ২ নং প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আলোচনা থাকবে।
প্রথমেই, ২নং প্রশ্ন। এই প্রশ্নের উত্তরটি সবচেয়ে সহজে দেয়া যায়-
স্রষ্টার বিশ্বাসের সাথে বিবর্তনবাদ কোনভাবেই সাংঘার্ষিক নয়। কারণ, স্রষ্টা চাইলে সরাসরি জৈব প্রজাতিকে তাদের আকৃতিতে সৃষ্টি করতে পারেন অথবা ধারাবাহিক বিবর্তনের মাধ্যমে তৈরী করতে পারেন। এটি মেটাফিজিক্যালী ইমপসিবল কোন বিষয় নয়, কারণ এটি লজিক্যালী পসিবল।
এখন, প্রথম প্রশ্নের উত্তর নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা থাকবে। কিন্তু, উক্ত আলোচনায় যাবার আগে চলুন হালকা জেনে নেই বিজ্ঞান কিভাবে কাজ করে।
বিজ্ঞান যে কোন তত্ত্ব প্রমাণের জন্য পরীক্ষা নিরীক্ষামূলক তথ্য ও প্রমাণের ওপর নির্ভর করে। তবে, বর্তমান বৈজ্ঞানিক জগৎ কোন ঘটনার অতিপ্রাকৃতিক ব্যাখ্যার অনুমতি দেয় না। অর্থাৎ, বিজ্ঞানের শর্ত হচ্ছে কোন তত্ত্বের প্রমাণে কেবল প্রাকৃতিকভাবে পর্যবেক্ষণযোগ্য ব্যাখ্যা এবং উপাত্ত দিতে হবে।
দেখা যাচ্ছে, বিজ্ঞানে যে কোন তত্ত্বের প্রমাণের প্রশ্নে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় জ্ঞানতত্ব এবং দর্শন চলে আসে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, প্রাকৃতিক নিয়ম দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে না এরকম ঘটনার প্রাকৃতিক কারণ খোঁজা যেন বন্ধ হয়ে না যায়।
যেমন- পাখি কিভাবে উড়ছে? এই প্রশ্নে উত্তরে আমি যদি এটুকু বলে থেমে যাই যে আল্লাহ তাদের ওড়ার ক্ষমতা দিয়েছেন তাই উড়ছে, তাহলে পাখির উড়তে পারার যে এ্যারোডাইন্যামিক পদ্ধতি সে সম্পর্কে গবেষণা থেমে যাবে।
এ কারণে, বিজ্ঞানীরা, হোক সে বিশ্বাসী বা অবিশ্বাসী, বৈজ্ঞানিক গবেষণার সময় পদ্ধতিগত প্রকৃতিবাদ (Methodological naturalism)- এর আশ্রয় নেন।
কিন্তু, নব্য-নাস্তিকরা (Neo-atheist)-রা মানুষের মাঝে বিজ্ঞানের বড়ত্ব প্রচার করতে গিয়ে দর্শনগত প্রকৃতিবাদ (Philosophical naturalism) কে জুড়ে দেন। ফলে, বিষয়গুলোকে অনভ্যস্তরা সহজেই বিভ্রান্ত হয়ে পরে। আস্তিক বিজ্ঞানীরা প্রাকৃতিক ঘটনার বিষয়টিকে দুভাবে বিবেচনা করেন। একদল, বিজ্ঞান এবং ধর্মীয় (স্রষ্টায়) বিশ্বাসকে দুটো সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয় হিসেবে বিবেচনা করে আলাদা রাখতে চান। আরেকদল মনে করেন, স্রষ্টা সবকিছুই বৈজ্ঞানিক নিয়মের মধ্যে করেন, সুতরাং বৈজ্ঞানিক নিয়ম আবিস্কার স্রষ্টাকে জানারই একটি পদ্ধতি। তদুপরি, বিজ্ঞান যেহেতু কিছু দার্শনিক অনুমান ধরে নিয়ে কাজ করে বিজ্ঞান সংজ্ঞানুযায়ীই সীমাবদ্ধ। যাই হোক, এটি সম্পূর্ণ আলাদা একটি আলোচনার বিষয়।
এখন চলুন দেখি, বিজ্ঞান প্রাকৃতিক কোন পর্যবেক্ষণ ব্যাখ্যায় কিভাবে কাজ করে? বিজ্ঞানীরা কোন পর্যবেক্ষণের কার্যকারণ ( causual inference ) ব্যাখ্যার জন্য “ থিওরী – হাইপোথিসিস- রিসার্চ-অবজারভেশন- থিওরী” এই চাক্রিক প্রক্রিয়াটির মধ্য দিয়ে যান।
বিজ্ঞানের ইতিহাসে প্রথমদিকে অবশ্য বিষয়টি এরকম ছিল না। তখন, বিজ্ঞানীরা কজাল ইনফারেন্সের জন্য শুধু মাত্র যৌক্তিক সিদ্ধান্ত (Rational Inference)-এর ওপর নির্ভর করতেন। সপ্তদশ শতাব্দীর সায়েন্টিফিক রিভলুশন থেকে শুরু করে বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত এজন্য পরীক্ষা নিরীক্ষালব্ধ জ্ঞান (Empiricism)-এর ওপর জোড় দেয়া হয়। উদাহরণস্বরূপ, আমার পর্যবেক্ষণলব্ধ ‘ হাঁস’ গুলো যদি সবসময় ‘কালো’ হয়, আমি সিদ্ধান্ত দিতে পারবো যে ‘হাঁস কালো’।
এই পদ্ধতির একটি সমস্যা হল আপনি যদি একটি সাদা হাস দেখে ফেলেন, আমার থিওরী ভেঙ্গে যাবে। (Problem of Induction)
পরর্বতীতে কার্ল পপার এই আরোহ পদ্ধতি (Inductive approach)কে প্রশ্ন করে বলেন যে, বিজ্ঞান মূলত কাজ করে অবরোহ পদ্ধতিতে (Deductive Approach)। অর্থাৎ, কোন ঘটনার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা চিন্তাভাবনা করে এক বা একাধিক থিওরী তৈরী করেন, এরপর তার পক্ষে পরীক্ষা নিরীক্ষালব্ধ প্রমাণ যোগার করার চেষ্টা করেন। এ প্রক্রিয়া কয়েকটি প্রতিযোগিতামূলক তত্ত্বের মধ্যে একটি বা আরেকটির প্রমাণ পোক্ত হয়।
বর্তমানে বিজ্ঞানীরা এই দুটি পদ্ধতির সমন্বয়ে কাজ করেন। তারা অবজারভেশন থেকে একটি থিওরী ভাবেন এবং তা থেকে বিভিন্ন হাইপোথিসিস দাড় করান। অত:পর, উক্ত হাইপোথিসিসকে প্রমাণ বা অপ্রমাণের জন্য রিসার্চ প্রসেসের মধ্য দিয়ে তথ্য যোগাড় করেন। এই প্রক্রিয়া হাইপোথিসিস ভুল হলে থিওরীর পরিবর্তন বা পরিমার্জন করা হয়। এভাবে, কোন কজাল ইনফারেন্সের জন্য যথেষ্ট তথ্য উপাত্ত যোগাড় হলে একটি কজাল থিওরী আপাত প্রমাণ হয়।
এখন, বিবর্তনতত্ত্ব হচ্ছে এমন একটি তত্ত্ব যা একটি কোষ থেকে প্রাকৃতিক উপায়ে বর্তমান পৃথিবীর অসংখ্য জৈব প্রজাতির আগমনকে ব্যাখ্যার চেষ্টা করে। বিজ্ঞানী ডারউইন তার প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ (যেমন: ফিঞ্চ পাখির ঠোট, কৃত্রিম সংকরায়ণ, বিভিন্ন প্রাণীর কাছাকাছি গঠন [Homology], ফসিল এভিডেন্স) প্রভৃতির আলোকে বি
এখন, বিবর্তনতত্ত্ব হচ্ছে এমন একটি তত্ত্ব যা একটি কোষ থেকে প্রাকৃতিক উপায়ে বর্তমান পৃথিবীর অসংখ্য জৈব প্রজাতির আগমনকে ব্যাখ্যার চেষ্টা করে। বিজ্ঞানী ডারউইন তার প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ (যেমন: ফিঞ্চ পাখির ঠোট, কৃত্রিম সংকরায়ণ, বিভিন্ন প্রাণীর কাছাকাছি গঠন [Homology], ফসিল এভিডেন্স) প্রভৃতির আলোকে বিবর্তনতত্ত্ব প্রদান করেন। এরপর এই তত্ত্ব সত্য হলে কি কি ধরনের পর্যবেক্ষণ লব্ধ উপাত্ত পাওয়া যাবার কথা এই ধরনের হাইপোথিসিস দেন এবং তার সপক্ষে কিছু যৌক্তিক প্রমাণ উপস্থাপনের চেষ্টা করেন।
যেমন একটি হাইপোথিসিস হল, বিবর্তনতত্ত্ব সত্য হলে ফসিল বেডে ক্রমান্বয়িক (Gradual) জটিল প্রজাতি পাওয়া যাবে (Common Descent)। এর প্রমাণস্বরুপ, জীবাশ্মবিদ্যার বিজ্ঞানীদের প্রচেষ্টা দেয়া দেখা গেছে যে যতই পুরোনো ফসিল বেডে যাওয়া যায় ততই তুলনামূলক সরল জীবাশ্ম পাওয়া যায়। প্রসঙ্গত, ফসিল বেডে যত গভীরে যাওয়া যায়, তা সাধারনত ততই আগের জিওলজিকাল এইজকে রিপ্রেজেন্ট করে।
কিন্তু, পরিক্ষানীরিক্ষা লব্ধ তথ্য প্রমাণ সব সময় যে হুবহু থিওরীর পক্ষে যাবে তা নয়। যেমন, ফসিল এভিডেন্স-এর বিষয়টিতেই আসা যাক। ডারউইনের বিবর্তনতত্ত্ব অনুযায়ী, ফসিল বেডে দুটি বিষয় ঘটতে হবে। এক, ধাপে ধাপে সরল থেকে জটিল প্রজাতি পাওয়া যাবে (Common Descent)। দুই, প্রজাতিগুলোর ফসিলের মধ্যে একটি ক্রমান্বয়িক ধারাবাহিকতা (Gradualism) থাকবে। কিন্তু, প্যালেন্টোলজিস্ট নাইলস এলড্রেজ এবং স্টিফেন জে. গোল্ড দেখিয়েছেন যে ফসিলে Common Descent থাকলেও Gradualism নেই। বরং, আছে Sudden appearance এবং Stasis। যাই হোক, বিষয়টি নিয়ে বিজ্ঞানীরা এখন দ্বিধাবিভক্ত। তবে, Common descent-এর ব্যাপারে সবাই একমত।
বিবর্তনতত্ত্বের আরেকটি প্রস্তাবনা হলো, প্রজাতির প্রজন্মান্তরে সৃষ্ট বৈচিত্র (Variation) এবং প্রাকৃতিক নির্বাচন। যেমন, কৃত্রিম সংকরায়নের মধ্য দিয়ে অধিক দুগ্ধদানকারী গাভীর জাত তৈরী করা হলে, খামারীরা উক্ত জাতটিকে কৃত্রিম ভাবে চয়ন করেন (Artificial selection)। ঠিক একই ভাবে, অধিক লোমযুক্ত ভাল্লুক বরফের দেশে প্রাকৃতিক ভাব সিলেক্টেড হয় (Natural selection)।
কিন্তু, প্রজাতিতে প্রজন্মান্তরে এই ভ্যারিয়েশন কিভাবে আসে? জেনেটিক্স আবিস্কারের আগ পর্যন্ত ভ্যারিয়েশন আসার বিষয়টি শক্ত কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিলো না। জেনেটিক্স আসার পর দেখা গেল যে মিউটেশনসহ বিভিন্ন ধরনের পপুলেশন জেনেটিক প্রক্রিয়ায় প্রজাতির বৈচিত্র তৈরী এবং প্রাকৃতিক নির্বাচন হতে পারে। এর প্রেক্ষিতে ডারউইনের মূল তত্ত্ব মোডিফাই হয়ে, বিভিন্ন বিজ্ঞানীর হাত ধরে ইভল্যুশনারী সিনথেসিস (তথা সিনথেসিস থিওরী)-তে রূপান্তরিত হয়।
এই পরিবর্তীত তত্ত্বের প্রমাণ হিসেবে মলিকিউলার হোমোলজী থেকে ফাইলোজেনেটিক্স (জেনেটিক ট্রি তৈরী)-এর বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষা চালানো হয়। তবে মজার বিষয় হল মলিকিউলার হোমোলজি থেকে প্রাপ্ত প্রজাতি বিন্যাস এবং বয়স, ফসিল ডেটিং এবং এনাটমিক হোমোলজি থেকে প্রাপ্ত বিন্যাস এবং বয়সের সাথে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ম্যাচ করে না। আবার দেখা যায়, হরাইজন্টাল জিন ট্রান্সফারের কারণে প্রজাতির জন্য সুনির্দিষ্ট জেনেটিক গঠন অনেকটাই অস্বচ্ছ হয়ে যায়। ফলে, মলিকিউলার হোমোলজীর মাধ্যমে প্রজাতির বিবর্তনীয় ধারা বের করার গবেষণা অনেক ধরনের জটিলতায় আক্রান্ত।
বর্তমানে সিনথেটিক থিওরীর প্রসেসগুলোর (অর্থাৎ, মিউটেশন ও অন্যান্য পপুলেশন জেনেটিক প্রসেস) সীমাবদ্ধতা বিবেচনা করে একদল বিজ্ঞানী বিভিন্ন বিকল্প প্রসেসের কথা বলছেন। যেমন: ন্যাচারাল জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, সিমবায়োসিস, নিও-লামার্কিজম প্রভৃতি। এই সকল বিজ্ঞানীদের থিওরীকে একত্রে বলা হচ্ছে The Third Way of Evolution. যাই হোক, থার্ড ওয়ের প্রবক্তারাও মূল বিবর্তনতত্ত্বের গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা Common Descent এর ব্যাপারে সর্বসম্মতভাবে একমত। উপরন্তু, তারাও ফিলোসফিক্যাল ন্যাচারালিজম-এর বাইরে কোন প্রস্তাবনা দিতে রাজি নন।
কিন্তু, অনেক সময় একই পর্যবেক্ষণের একাধিক ব্যাখ্যা থাকতে পারে। তখন, তুলনামূলক প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে কোনটি গৃহীত হবে, তা নির্ধারিত হয় অন্যান্য সম্পূরক তথ্য প্রমাণ এবং তাত্ত্বিক চিন্তা গবেষণার আলোকে।
জীবজগতের পর্যবেক্ষণে ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইনের প্রবক্তারা একটি ভিন্ন প্রস্তাবনা এনেছেন। তাদের মতে প্রজাতির উৎপত্তি ও বিভিন্ন ধাপে আগমন ইন্টেলিজেন্ট এজেন্সির ইন্টারভেনশন ছাড়া ব্যাখ্যা করা সম্ভব না। তাদের মতে ‘কমন ডিজাইন’ প্রজাতির সাদৃশ্যের একটি বিকল্প প্রস্তাবনা হতে পারে। তারা হোমোলজিকে বিবর্তনবাদের প্রমাণ হিসেবে দেখানোকে চাক্রিক যুক্তি মনে করেন। কারণ, আমি দুই বা ততোধিক প্রজাতির গাঠনিক সাদৃশ্য দেখে যদি কোন তত্ত্ব দাড় করাই যে ‘গাঠনিক সাদৃশ্য থাকলে দুটো প্রজাতি পূর্ববর্তী কোন কমন প্রজাতি থেকে এসে থাকবে’ এবং তার প্রমাণ হিসেবে ‘দুই বা ততোধিক প্রজাতির গাঠনিক সাদৃশ্য’-কেই উপস্থাপন করি তা চাক্রিকই মনে হবে।
অন্যদিকে, তারা দেখিয়েছেন যে, জীবজগতের কিছু কিছু গঠন Irreducibly Complex এবং বিবর্তনবাদীদের প্রস্তাবিত প্রক্রিয়াগুলোতে একটি নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত পরিবর্তিত জিন পপুলেশনে সেট হতে পারে তথা একটি নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত প্রজাতির পরিবর্তন আসতে পারে, যা প্রজাতির ক্লাসিফিকেশন হাইয়ারারকিতে (Kingdom-Phylum-Class-Order-Family-Genus-Species) জেনাস পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। উক্ত প্রক্রিয়াতে ম্যাক্রো পরিবর্তন আসার জন্য প্রয়োজনীয় সময় এবং পপুলেশন সাইজ মহাবিশ্বের ইতিহাসে নেই।
প্রসঙ্গত, ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির কোন পর্যবেক্ষণযোগ্য ইনডাকটিভ প্রমান না থাকায়, তারা এবডাকটিভ ইনফারেন্স একটি পদ্ধতি ব্যবহার করেন। তাদের মতে মানুষকে যেমন ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে জটিল কাঠামো নির্মান করতে দেখা যায়, তথা জটিল কাঠামো দেখে যেমন এর পেছনে মানুষের মত কোন ইন্টেলিজেন্স ইনফার করা যায়। তেমনি, জীবজগতের জটিলতা দেখেও এর পেছনে ইন্টেলিজেন্ট এজেন্টকে ইনফার করা যায়।
কিন্তু, ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইনতত্ত্ব ‘ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইনার’ নামক ‘অপ্রাকৃতিক’ এজেন্সিকে ইনফার করে বিধায়, ডমিনেন্ট সায়েন্টিফিক সার্কেল-এর তাদের তত্ত্বের কোন গ্রহনযোগ্যতা নেই। একদিকে, যারা অবিশ্বাসী তারা দর্শনগত কারনেই এই তত্ত্বর্কে কোন সুযোগ দিতে রাজী নন। অন্যদিকে, যারা বিশ্বাসী তারা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে Methodological Naturalism বজায় রাখতে গিয়ে উক্ত তত্ত্বের সুযোগ দিতে রাজী নন। এই দ্বিতীয় দলটির আরেকটি আশংকা হচ্ছে, ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন God of the gaps ফ্যালাসীর আশ্রয়ে দাড়িয়ে আছে। প্রসঙ্গত, God of the gaps হচ্ছে বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় বর্তমান সময়ে বোঝার সীমাবদ্ধতা থাকলে, তাকে স্রষ্টা করেছেন বলে চালিয়ে দেয়া। তবে একজন সতর্ক পাঠক বুঝতে পারবেন যে ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন তত্ত্বের ফর্মুলেশনটি ঠিক এরকম নয়।
সুতরাং, ১ নং প্রশ্নের উত্তরে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, ডারউইনের বিবর্তনতত্ত্বের পক্ষে তথ্য প্রমাণ এমন নয় যে তা সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত হয়েছে। সর্বচ্চো এটুকু বলা যায় যে, বিভিন্ন ভাবে তথ্য প্রমাণ একত্র করার প্রচেষ্টা অব্যহত আছে। মজার বিষয় হলো, Methodological Naturalism-এর সীমায় প্রজাতির উৎপত্তি ব্যাখ্যায় বিবর্তনতত্ত্বের বিকল্প কোন তত্ত্বের প্রবেশাধিকারই নেই। অর্থাৎ, বিবর্তনতত্ত্বের পক্ষে সাপোর্ট যতটানা Empirical তার চেয়ে বেশী Philosophical.
এজন্য অধিকাংশ সময়ই বিবর্তনতত্ত্বের আলোচনা তত্ত্ব থেকে ‘বিবর্তনবাদ’-এ চলে যায়। এ আলোচনায় অটোমেটিক ভাবেই দর্শন চলে আসে। ফলে, আর্নস্ট মেয়ার, আলফ্রেড রাসেল ওয়ালেস, রোনাল্ড ফিসার বা ডগলাস ফুতুয়ামা থেকে আমরা রিচার্ড ডকিন্স বা ইউভাল নোয়া হারারীদের বেশী চিনি।
তিন নাম্বার প্রশ্নের উত্তরটি নিয়ে ড. শোয়েব আল মালিক তার বই Islam and Evolution: Al-Ghazālī and the Modern Evolutionary Paradigm -এ বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। অধিক আগ্রহীরা এই ফ্রি বইটি ডাউনলোড করতে পারবেন এখান থেকে- https://library.oapen.org/handle/20.500.12657/48443
তবে আরেকটি পর্বে এই বিষয়টির একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা রাখার চেষ্টা করবো, ইন শা আল্লাহ। ..
বিবর্তনবাদীরা যখন আপনার কাছে বিবর্তনের পক্ষে কথা বলতে আসবে, আপনি প্রথমেই জেনে নিন সে বিবর্তন বলতে কি বুঝাতে চাচ্ছে? বিবর্তনের উদাহরণ দিতে গিয়ে যদি সে ব্যাকটেরিয়ার ড্রাগ রেজিস্টেন্স, ভাইরাসের নতুন নতুন স্ট্রেইনের ঘটনাকে নিয়ে আসে তাহলে বুঝবেন সে মাইক্রোইভুলিউশনের কথা বলছে, যেটা প্রকৃতিতে অহরহ ঘটছে। আপনি তার কাছে ম্যাক্রোইভুলিউশনের উদাহরণ জানতে চাইবেন।
যদি সে বলে মাইক্রোইভুলিউশন মিলিয়ন বছরের ব্যবধানে ম্যাক্রোইভুলিউশন করেছে। তখন বুঝবেন তার এই ‘ইনফারেন্স’ এক ধরনের বস্তুবাদী বিশ্বাস, বিজ্ঞান নয়। কেননা মাইক্রোইভুলিউশন একটি নির্দিষ্ট লিমিট পর্যন্ত হয়। এই লিমিট বা সীমাটি হলো যতক্ষণ পর্যন্ত উক্ত ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের বা ইউক্যারিয়টের ‘ভাইটাল’ গাঠনিক উপাদান প্রভাবিত না হয়। তাকে প্রশ্ন করুন ম্যাইক্রোইভুলিউশনের এমন কোন উদাহরণ দিতে পারবে কিনা যেখানে নতুন কোন গঠনগত ও কার্যকরী প্রোটিন বা প্রোটিন সমষ্টি তৈরী হয়েছে। কেননা, কোন গাঠনিক উপাদান ছাড়া একটি জীবকে আরেকটি ভিন্ন জীবে পরিণত করা অসম্ভব।
মজার ব্যপার হলো, সে আপনাকে ব্যাকটেরিয়ার বাইরে খুব কমই উদাহরণ দিতে পারবে। মাইক্রোইভল্যুশনের মাধ্যমে প্রোটিন তৈরীর সবচেয়ে প্রকৃষ্ট যে উদাহরণটা আনা যেতে পারে তা হল নাইলনেজ নামক নতুন একটি এনজাইম তৈরীর ঘটনা । নাইলন একটি কৃত্রিম বা সিনথেটিক পলিমার, যেখানে অনেকগুলো সিক্স এমাইনো ক্যাপ্রয়েট নামক যৌগের ডাইমার পর পর যুক্ত হয় বড় একটি চেইন তৈরী করে। নাইলনেজ-এর কাজ হলো এই ডাইমারকে ভেঙ্গে নাইলন পলিমারকে ভাঙ্গা। ফ্ল্যাভোব্যাকটেরিয়াম Arthrobacter sp. K17-এর ‘প্লাজমিড’-এ একটি ফ্রেমশিফট মিউটেশনের মাধ্যমে এই এনজাইমটি তৈরী হয়েছে বলে ধারণা করা হয় (১)।
এখানে কয়েকটি বিষয় লক্ষ্যণীয়। মিউটেশনটি ঘটেছে প্লাজমিডে, কোন স্ট্রাকচারাল প্রোটিনে নয় এবং ব্যাকটেরিয়ার মূল জিনোমিক এলিমেন্টে নয়। মূলত ফ্রেমশিফট মিউটেশন হলে পুরো প্রোটিন নষ্ট হয়ে অকার্যকর প্রোটিন তৈরী হয়। সুতরাং মূল জিনোমে হলে এবং স্ট্রাকচারাল প্রোটিনে হলে ব্যাকটেরিয়া টিকতে পারতো না। তদুপরী ব্যাকটেরিয়ার প্লাজমিড একটি চলাচলযোগ্য গোলাকার ডিএনএ খণ্ড, যা ব্যাকটেরিয়া পরস্পর আদান প্রদান করতে পারে। এটা ব্যাকেটেরিয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কিছু এনজাইম ও অতিরিক্ত স্ট্রাকচারের জেনেটিক তথ্য ধারণ করে। এটি ব্যাকটেরিয়ার ক্রোমোজমের সাহায্য ছাড়া একাই নিজের কপি তৈরী করতে পারে। ফলে প্লাজমিডে মিউটেশন হলে ব্যাকটেরিয়ার মূল স্ট্রাকচারে কোন পরিবর্তন আসে না।
ফ্ল্যাভোব্যাকটেরিয়ামে যে ফ্রেমশিফটের ঘটনাটি ঘটেছে সেটিও ‘ইউনিক’।[১] এটি বুঝতে আসুন জানি ফ্রেমশিফটে কি হয়। যারা জেনেটিক্সের প্রাথমিক ধারনা রাখেন তারা জানেন, ডিএনতে চারটি নিউক্লিউটাইড এডেনিন (A), গুয়ানিন (G), সাইটোসিন(C), থায়ামিন(T) বিভিন্ন কম্বিনেশনে পরস্পর যুক্ত থেকে প্রোটিন তৈরীর তথ্য ধারণ করে। প্রতি তিনটি নিউক্লিউটাইড একটি এমাইনোএসিডকে কোড করে। যেমন: GGU কোড করে গ্লাইসিন নামক একটি এমাইনো এসিডকে। ধরুন, CCUGGUUUG একটি ডিএনএ স্ট্রিং। এটি কোড করবে, প্রোলিন-গ্লাইসিন-লিউসিন (CCU-GGU-UUG)। এখন কোন কারণে যদি একটি ডিলেশন মিউটেশন হয় এবং প্রথম ‘C’টি বাদ হয়ে যায় তাহলে স্ট্রিংটি হবে-CUG-GUU-UG()। সুতরাং এ অবস্থায় প্রথম থেকে পড়লে, এমাইনো এসিডগুলো হবে- লিউসিন-ভ্যালিন-(বাস্তবে যেহেতু স্ট্রিং আরও বড় হয় একটি স্টপ কোডন (UGA, UAA, UAG) বা অন্য কোন এমাইনোএসিড)। অতএব, বুঝতেই পারছেন একটি ফ্রেমশিফট মিউটেশন প্রোটিনে কেমন ধ্বংসাত্মক পরিবর্তন আনতে পারে। অধিকাংশ ফ্রেমশিফট মিউটেশনে স্টপ কোডন তৈরী হয় বা অকার্যকরী প্রোটিন তৈরী হয়। কিন্তু ফ্ল্যাভোব্যাকটেরিয়ামে সৌভাগ্যক্রমে একটি ফাংশানাল প্রোটিন তৈরী হয়ে গিয়েছিল যেটি নাইলনকে ব্রেকডাউন করিয়ে ব্যাকটেরিয়াটিকে প্রতিকূল পরিবেশে বাঁচার সুবিধে করে দেয় (লক্ষ্যনীয় সংজ্ঞানুযায়ী প্লাজমিড এই ধরনের কাজই করে থাকে)।
মজার ব্যাপার হলো, এখানে ফ্রেমশিফট হয়েছে একটি রিপিটেটিভ ইউনিটের যেটা তিনের গুনিতক নয়। রিপিটেটিভ ইউনিটটি ১০টি নিউক্লিউটাইড বিশিষ্ট এবং এর স্টপ কোডন নেই। ফলে এর রিডিং একটি নিউক্লিউটাইড আগে বা পরে থেকে এমনিতেই পড়ার সুযোগ ছিল এবং এই ফ্রেম শিফটের কারণে কোন স্টপ কোডন তৈরী হয়নি। কিন্তু নাইলনেজ এনজাইম তৈরীর ঘটনায় একটি স্টার্ট কোডন তৈরী হয় ইনসারশন ইভেন্টের মধ্য দিয়ে। আর যেহেতু রিপিটিটিভ সিকোয়েন্সটিকে আগে থেকে ফ্রেম শিফট করে পড়ার উপায় ছিল (স্টপ কোডন না থাকায়), ফলে যখন নাইলনেজ এনজাইম ফ্রেম শিফট-এর মাধ্যমে তৈরী হয় এটি নাইলন যুক্ত পরিবেশে সিলেকটিভ এডভানটেজ দেয়ায় ন্যাচারালী সিলেকটেড হয়। (২)
প্রসঙ্গত, মোডিফিকেশন অব ফাংশন মিউটেশনের মধ্য দিয়ে কোন একটি এনজাইমে এমন পরিবর্তন আসতে পারে যাতে এনজাইমটি তার সাবস্ট্রেটের সাথে প্রায় একই গঠনযুক্ত সাবস্ট্রেট ব্যবহার করতে পারে। মিউটেশনের মধ্য দিয়ে এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটে। সুতরাং নাইলনেজ এনজাইমের পিছনেও এরকম একটি ঘটনা থাকা অসম্ভব না। নেগোরো এবং সহকর্মীরা এই বিষয়টিই বলতে চাচ্ছেন। (দেখুন, পরবর্তী প্যারা) উল্লেখ্য, মোডিফিকেশন অব ফাংশন মিউটেশনের মধ্য দিয়ে কিন্তু সম্পূর্ণ নতুন জেনেটিক তথ্য যুক্ত হয় না। অন্য কথায় যে এনজাইম গ্লুকোজকে ব্যবহার করছে, সে মোডিফিকেশন অব ফাংশন মিউটেশনের মধ্য দিয়ে হয়ত গ্লুকোজের আইসোমার গ্যালাকটোজকে ব্যবহার করতে পারবে, কিন্তু তার পক্ষে কোন এমাইনোএসিডকে ব্যবহার করা সম্ভব হবে না। আবার যে এনজাইমটি পরিবর্তন হলো সে যদি কোন গুরুত্বপূর্ণ মাল্টিপ্রোটিন কমপ্লেক্সের সদস্য হয়, সেক্ষেত্রে তার ফাংশনের মোডিফিকেশন ব্যাকটেরিয়া (তথা অর্গেনিজম)-র ফিটনেস কমিয়ে দেবে। আর মোডিফিকেশন যদি এমন ভাবে হয়, যে এনজাইম তার মূল কাজ একেবারেই করতে না পারে, তাহলে তো ব্যাকটেরিয়াটি সারভাইভ-ই করতে পারবে না। অর্থাৎ, দেখা যাচ্ছে ক্রমান্বয়ে কয়েকটি র্যানডম মিউটেশন দিয়ে নতুন স্ট্রাকচার তৈরী প্রাকৃতিক নির্বাচনের কারণেই সম্ভব নয়।
একটি এনজাইম যে সাবস্ট্রেট তথা উপাদানের উপর কাজ করে সেটির সাথে কাছাকছি গঠনের উপাদানের উপর কাজ করার যোগ্যতা রাখে। ফলে দেখা যায়, অনেক ‘মোডিফিকেশন অব ফাংশন’ মিউটেশনের মধ্যে দিয়ে একটি এনজাইম পরিবর্তিত হয়ে উক্ত কাছাকাছি গঠনের উপাদানকে শক্ত করে বাঁধতে পারলো (অর্থাৎ স্পেসিফিসিটি পরিবর্তন হলো) এবং বিক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে পারলো। এ ঘটনাকে মাইক্রোইভুলিউশনের মধ্য দিয়ে হোমোলোগাস সাবস্ট্রেটে স্পেসিফিসি পরিবর্তন বলা যায়। যেমন: যে এনজাইম রিবিটলকে (সাবস্ট্রেট) অক্সিডাইজ (বিক্রিয়া) করতো সে ডিলেশন অব ফাংশন মিউটেশনের ( রিবিটল ডিহাইড্রোজিনেজ এনজাইমের রিপ্রেসর লস) মধ্য দিয়ে রিবিটলের সাথে হোমোলোগাস জাইলিটল বা এরাবিটল ব্যবহার করতে জানে। Negoro et el. দেখিয়েছেন নাইলনেজ (যার মূল নাম: সিক্সএমাইনো ক্যাপ্রোয়েট ডাইমার হাইড্রোলেজ) এনজাইমটির কাছাকাছি গঠনের এনজাইম হলো হেক্সাকার্বক্সিলিক এসিড এস্টারেজ তথা কার্বক্সিলএসটারেজ এনজাইম (হোমোলোগাস)। সুতরাং অস্বাভাবিক না যে, পরের এনজাইমটি থেকে মোডিফিকেশন অব ফাংশন মিউটেশনের মধ্য দিয়ে নাইলনেজ তৈরী হতে পারে। (৩)
সিক্স অ্যামাইনো হেক্সানয়েট ডাইমার হাইড্রোলেজ, উৎস
ইন ফ্যাক্ট হয়েছেও তাই। যে জাপানী বিজ্ঞানীরা নাইলোনেজ এনজাইম প্রথম আবিস্কার করেন তাদের পরবতী গবেষণায় প্রমানিত হয় যে নাইলোনেজ এনজাইমে নতুন কোন প্রোটিন গঠন তৈরী হয়নি। বরং, যে প্রোটিন থেকে বিবর্তিত হয়ে নাইলোনেজ এসেছে তাতে পূর্ব থেকেই কার্বক্সিলএস্টারেজ এক্টিভিটি এবং সাথে অল্প মাত্রার নাইলোনেজ এক্টিভিটি ছিল । এমনকি, পরীক্ষা করে দেখা গেছে নতুন নাইলোনেজ এনজাইম কমপ্লেক্স-এর একই সাথে কার্বক্সিলএস্টারেজ ও নাইলোনেজ এক্টিভিটি আছে (৪)। সেক্ষেত্রে এটাকে একেবারে নতুন কার্যকরী প্রোটিন (new functional protein) তৈরীর সংজ্ঞায় ফেলা যাচ্ছে না।
সুতরাং বিবর্তনবাদীদের উপস্থাপিত এই একটি উদাহরণও প্রশ্নাতীত নয়। অথচ, এরুপ ব্যতিক্রম কিন্তু প্রশ্নবিদ্ধ উদাহরণ এনে তারা মাইক্রোইভুলিউশন থেকে ম্যাক্রোইভুলিউশনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত(!) তথা ইনফারেন্স টেনে ফেলেছে। রিসার্চ মেথোডোলজিতে নাল হাইপোথিসিস বলে একটি কথা আছে। অর্থাৎ কোন কিছুর সাথে কোন কিছুর সম্পর্ক আছে প্রমাণ করতে হলে আগে ধরে নিতে হয়ে সম্পর্ক নাই। তারপর ‘উপযুক্ত’ ও ‘যথেষ্ট’ প্রমাণাদি দিয়ে সেই সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে হয়। বিচারব্যবস্থাতেও অভিযুক্তকে নিরপরাধ ধরেই বিচার করতে হয়। বিজ্ঞানের সকল নিয়মই এভাবে প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। কিন্তু মজার ব্যপার হোলো, বিবর্তনবাদীরা আগে ধরে নেন যে বিবর্তন হয়েছে, তারপর পরীক্ষানিরীক্ষা শুরু করেন। কিন্তু কতগুলো দুর্বল যুক্তির উপর একটি বড় সিদ্ধান্ত দিয়ে দিলে তাকে বিজ্ঞান বলে না, অপবিজ্ঞান বলে।
নাস্তিক ডারউইনবাদীরা বিজ্ঞানের ভিতর নিজের অন্ধবিশ্বাস ঢুকিয়ে দিয়ে স্রষ্টায় বিশ্বাসকে বৈজ্ঞানিকভাবে খণ্ডিত করার মিথ্যাচার চালাচ্ছে। অতএব, তাদের এই প্রতারণা ধরিয়ে দেয়া যে কোন সচেতন বিজ্ঞানমনস্ক ব্যক্তির দায়িত্বের মধ্যে পরে।
৩. Negoro S. et el. X-ray crystallographic analysis of 6-aminohexanoate-dimer hydrolase: molecular basis for the birth of a nylon oligomer-degrading enzyme. J Biol Chem. 2005 Nov 25;280(47):39644-52. Epub 2005 Sep 14
সাংবাদিকরা যখন বিজ্ঞান নিয়ে কথা বলেন তখন যে বিজ্ঞানের ‘ছেড়ে দে মা কেন্দে বাঁচি’ অবস্থা হয় তার সবচেয়ে উদাহরণ হল বাংলাদেশের চিকিৎসা বা চিকিৎসকদের নিয়ে করা প্রতিবেদন। ধরে নিলাম অধিকাংশ বাংলাদেশী সাংবাদিকদের নিয়ে এত বড় আশা কঠিন যে তারা কোন বিষয় সম্পর্কে বিস্তর জেনে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ দিবে। কিন্তু পাশ্চাত্যের সংবাদমাধ্যমগুলোর কি অবস্থা? বিজ্ঞানের কোন বিষয়ে তাদের কোন প্রতিবেদনে কি বিশ্বাস করা যায়?
ব্যক্তিগতভাবে আমার এই ধরনের সকল ‘পপুলার সায়েন্স নিউজ’-এ এক সময় ভালই আস্থা ছিল। কিন্তু, এখন আর তা করতে পারি না। কারণ, বিবর্তনবাদ, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রভৃতি নিয়ে সায়েন্স নিউজ রাইটারদের চটকদার নিউজ পড়ার পর যতবারই একটু গভীরে ঘেটে দেখেছি ততই তাদের তথা সায়েন্স (নিউজ) রাইটারদের প্রতি আমার বিশ্বাস হালকা হয়ে গেছে। সায়েন্স রাইটাররা দুই ধরনের হয়- হয় তারা ভাল জানে এবং জেনে ইচ্ছেকৃত স্পেসিফিক এজেন্ডা (সায়েন্টিজম-এর প্রসার) এর জন্য লিখে, অথবা, তারা জিনিসটা সম্পর্কে না জেনে বা না বুঝে লিখে। সব সায়েন্স নিউজ পোর্টাল এরকম হয় তাও বলছি না। তবু, সায়েন্স নিয়ে কোন ‘নিউজ’ দেখলে চেষ্টা করি মূল রিসার্চটা কি বলেছে একটু ঘেটে দেখার। বিশেষ করে, যদি সময় পাই, যে বিষয়টির টেকনিকাল দিকগুলো সম্পর্কে পড়েছি, অন্তত সে বিষয়গুলো একটু দেখে নেই।
যাই হোক, ফেসবুকে ডেইলী মেইলের একটি নিউজ সবাই শেয়ার করছে যাতে বলা হচ্ছে যে, মার্ক স্টিকল ও ডেভিস থেলার নামক দু জন বিজ্ঞানী তাদের ২০১৮ সালের একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখিয়েছেন সমস্ত মানুষ এক জোড়া মানুষ থেকে এসেছে এবং এক লক্ষ বছর আগে একটি সর্বব্যপী দূর্ঘটনায় পৃথিবীর সব স্পিসিস প্রায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।(1)
এই নিউজ যারা পড়েছেন এবং শেয়ার করেছেন তাদের মধ্যে দু’ধরনের রিসপন্স দেখলাম- ১. যারা ডারউইনবাদকে বিতর্কিত তত্ত্ব বলে মনে করেন তারা এই গবেষণাটিকে বিবর্তনের বিপরীতে এভিডেন্স হিসেবে দেখছেন এবং তারা ইমপ্লিসিট ভাবে মনে করছেন যে এই আবিস্কার মেজর রিলিজিওন বর্ণিত ‘আদম-হাওয়া’ থেকে মানুষের আবির্ভাবকে এনডর্স করে। ২. যারা ডারউইনবাদকে প্রশ্নাতীতভাবে সত্য মনে করেন, তারা হয় চুপ আছেন বা এই রিসার্চ বিবর্তনতত্ত্বকে এনডর্স করে বলে মনে করছেন।
আগে থেকে এই ধরনের রিসপন্স সম্পর্কে পরিচিতি থাকায় আমি ভাবলাম মূল রিসার্চটা একটু পড়ে দেখা দরকার। যেই ভাবা সেই কাজ। আর্টিকেলটা পড়লাম। মলিকিউলার ইভল্যুশন সম্পর্কে আইডিয়া না থাকলে আর্টিকেল থেকে মূল বক্তব্য বের করাটা একটু কঠিন। তবে আমি যতটুকু বুঝেছি সেখান থেকে পাঠকদের জন্য আমার দুই পয়সা-
মূল রিসার্চটার টাইটেল হল “Why should mitochondria define species?” এটি প্রকাশিত হয়েছে হিউম্যান ইভল্যুশন জার্নালে ২০১৮ সালের মে মাসে(2)। নিচে আর্টিকেলে মূল বিষয়গুলো নিজের ভাষায় বলার চেষ্টা করছি।
১. আমরা জানি, প্রতিটি বহুকোষী জীব-এ মাইটোকন্ড্রিয়া নামক অঙ্গানু থাকে যা এটিপি হিসেবে শক্তি সঞ্চিত রাখে।
২. কোষে নিউক্লিয়ার ডিএনএ ছাড়াও মাইটোকন্ড্রিয়ার নিজস্ব ডিএনএ আছে।
৩. নিউক্লিয়ার ডিএনএ-তে মিউটেশনের ফলে জীবের ফিনোটাইপে (অর্থাৎ বাহ্যিক আকার আকৃতি ও বৈশিষ্ট্য) পরিবর্তন হয়।
৪. কিছু কিছু মিউটেশন আছে যাকে বলে ‘নিউট্রাল মিউটেশন’। কারণ, এই ধরনের মিউটেশনের ফলে প্রোটিনের অ্যামাইনো এসিড সিকোয়েন্সে কোন পরিবর্তন হয় না।
৫. কিন্তু, নিউক্লিয়ার ডিএনএ-তে এই ধরনের মিউটেশনের ফলেও ফেনোটাইপে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।
৬. প্রায় সব মিউটেশনই প্রোটিনের মূল ফাংশনের ব্যঘাত ঘটায়- হয় তার কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয় বা বিকল করে ফেলে। ফেনোটাইপে এ ধরনের পরিবর্তন হলে, উক্ত প্রানীটি রিপ্রোডাক্টিভ ক্ষমতা কমে যায়। কারণ, তার এক বা একাধিক ফাংশনে ত্রুটি থাকায় সে বেঁচে থাকার লড়াই-এ হেরে যায়। এ কারণে এই ধরনের মিউটেশনগুলো পরবর্তি জেনারেশনের প্রবাহিত হতে পারে না। অর্থাৎ, নিউক্লিওটাইড চেঞ্জযুক্ত প্রাণীগুলো অন্য প্রাণীর সাথে প্রতিযোগিতায় পরাজিত হয়। (এভাবে, মিউটেশনযুক্ত প্রাণীর মারা যাওয়া ও অরিজিনাল ফাংশনাল সিকোয়েন্সযুক্ত প্রাণীর বেঁচে থাকার প্রক্রিয়াকে বলে পিউরিফাইং সিলেকশন।)
৭. এর ফলে ‘মা’ প্রানী ও ‘সন্তান’ প্রাণীর নিউক্লিয়ার ডিএনএ-তে খুব বেশী পরিবর্তন পাওয়া যায় না।
৮. কিন্তু, মাইটোকন্ড্রিয়ার ডিএনএ-এর ক্ষেত্রে ‘নিউট্রাল মিউটেশন’ কোন গুরুত্বপূর্ণ ফাংশনাল পরিবর্তন (ফেনোটাইপিক পরিবর্তন) আনে না। অর্থাৎ, মাইটোকন্ড্রিয়ার ডিএনএতে এই নিউট্রাল মিউটেশনগুলো থেকে যায়। অর্থাৎ ‘মা’ থেকে ‘সন্তানে’ জননকোষ বিভাজনের সময় সংঘটিত মাইটোকন্ড্রিয়াল মিউটেশনগুলো থেকে যায়।
৯. মাইটোকন্ড্রিয়ার ডিএনএতে এই নিউট্রাল মিউটেশনগুলো থেকে যাওয়া উপকারিতা কি?
১০. উপকারিতা হল- এর ফলে ‘মা’ এর তুলনায় ‘সন্তানদের’ মাইটোকন্ড্রিয়াতে যথেষ্ট জেনেটিক ডাইভারসিটি তৈরী হয়।
১১. এখন, আপনি যদি ধরে নেন যে মাইটোকন্ড্রিয়ার ডিএনএ-তে প্রতিবার রিপ্রোডাকশনের সময় সংঘটিত পরিবর্তনগুলো একটি স্থির হারে হয় এবং আপনার যদি কোন স্পিসিস-এর প্রতি রিপ্রোডাকশনে মিউটেশনের হার জানা থাকে, তাহলে আপনি কোন প্রজাতির আভ্যন্তরিন জেনেটিক ডাইভারসিটি থেকে উক্ত প্রজাতি ও তার কমন এনসেস্টর-এর মর্ধবর্তী সময় বের করতে পারবেন(3)। (এই সময়কে বলা হয় কোলেসেন্স টাইম)
১২. বিজ্ঞানী স্টিকেল ও থেলার কোষের মাইটোকন্ড্রিয়ার এই বৈশিষ্ট্যটি ব্যবহার করে মানুষের কমন এনসেস্টর কত পূর্বে ছিলো এবং একই সাথে অন্যান্য প্রাণীদের কমন এনসেস্টর কতপূর্বে ছিলো তার একটি এস্টিমেট বের করেন।
১৩. তারা মাইটোকন্ড্রিয়ার COI barcode ডাটাবেজ BOLD-এর ডাটা ব্যবহার করেন। লক্ষ্যনীয় যে, GenBank এবং BOLD ডাটাবেজ মিলে প্রায় ৫০ লক্ষ প্রানীর COI barcode ডাটা সংরক্ষিত আছে।
১৩. তাদের হিসেব অনুযায়ী মানুষের কমন এনসেস্টর ছিলো প্রায় ১ লক্ষ বছর আগে। অর্থাৎ, প্রায় ১ লক্ষ বছর আগে একজন পুরুষ ও নারী থেকে বর্তমান মানব জাতি এসেছে।
১৪. মজার বিষয় হলো, একই সাথে তারা অন্যান্য প্রাণীর বারকোড থেকে হিসেব করেন যে প্রাণী জগতের বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৯০%-এর কমন এনসেস্টর-এর বয়সও প্রায় ১ লক্ষ থেকে ২ লক্ষ বছর। অর্থাৎ, মানুষের মত অন্যান্য প্রাণীও ১ থেকে ২ লক্ষ বছর পূর্বের এক জোড়া কমন এনসেস্টর থেকে এসেছে।
১৫. এর অর্থ কি? সহজ বাংলায়, স্টিকেল ও থেলারের গবেষণা অনুযায়ী বর্তমানে প্রাণীজগতের প্রায় ৯০% প্রায় ১ লক্ষ থেকে ২ লক্ষ বছর আগের সংশ্লিষ্ট প্রজাতির এক জোড়া থেকে এসেছে। উদাহরণস্বরুপ, মানুষের ক্ষেত্রে এক জোড়া নারী-পুরুষ, বাঘের ক্ষেত্রে একজোড়া বাঘ ও বাঘিনী, ইত্যাদি। যারা প্রায় ১ লক্ষ থেকে ২ লক্ষ বছর আগে প্রায় কাছাকাছি সময় জীবিত ছিলো ।
১৬. মানুষের ক্ষেত্রে এ ধরনের হিসেব (Estimate) আগেও করা হয়েছে।
১৭. লক্ষ্যনীয়, মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ শুধুমাত্র নারীদের জনন কোষ থেকে সন্তানের জাইগোটে প্রবাহিত হয়। ফলে, কেউ মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ থেকে মানুষের এনসেস্ট্রি অ্যানালাইজ করলে মানুষের সর্বশেষ কমন ‘মা’-কে ট্রেস করতে পারবে। ঠিক একই ভাবে শুধুমাত্র ‘Y’ ক্রোমোজোম নিয়ে এনসেস্টি অ্যানালাইজ করলে মানুষের সর্বশেষ কমন ‘বাবা’ কে ট্রেস করা যাবে।
১৮. মাইটোকন্ড্রিয়ার ভিত্তিতে প্রথম কমন ‘মাইটোকনড্রিয়াল ইভ’ এর বয়স বের করেন বিজ্ঞানী কেন, স্টোনকিং এবং উইলসন। তাদের হিসেবে অনুযায়ী মানুষের কমন ‘মাইটোকনড্রিয়াল ইভ’-এর বয়ষ প্রায় ২ লক্ষ বছর। অর্থাৎ ২ লক্ষ বছর আগে আমাদের কমন ‘মা’ পৃথিবীতে বিচরণ করেছিলেন। (4)
১৯. ‘Y’ ক্রোমোজোম-এর ভিত্তিতে মানুষের কমন বাবা তথা ‘Y ক্রোমোজোমাল অ্যাডাম’-এর বয়স হিসেব ২০০০ সালের দিকে হিসেব করা হয়েছিলো প্রায় ৫০০০০ বছর(5)। যা ‘মাইটোকনড্রিয়াল ইভ’ থেকে প্রায় দেড় লক্ষ বছর ছোট।
২০. কিন্তু, পরবর্তীতে আরও রাইগোরাসটিল গবেষণা করে ‘মাইটোকনড্রিয়াল ইভ’ এবং ‘Y ক্রোমোজোমাল অ্যাডাম’-এর বয়স হিসেব করা হয় যথাক্রমে ৯৯ থেকে ১লক্ষ ৪৮ হাজার বছর এবং ১লক্ষ ২০ হাজার থেকে ১লক্ষ ৫৬ হাজার বছর(6)।
২১. বৈজ্ঞানিক গবেষণা অনুযয়ী, ‘মাইটোকনড্রিয়াল ইভ’ এবং ‘Y ক্রোমোজোমাল অ্যাডাম’ প্রায় কাছাকাছি সময় বাস করেছিলেন।
২২. তবে আমাদের মনে রাখা দরকার, এগুলো আসলে কিছু Provisional Estimate. কোন কনফার্মড হিসেবে নয়(7)।
২৩. যাই হোক, এখন আমরা যদি ১৫ নম্বর পয়েন্ট আবার পড়ি- স্টিকেল ও থেলারের গবেষণা অনুযায়ী বর্তমানে প্রাণীজগতের প্রায় ৯০% প্রায় ১ লক্ষ থেকে ২ লক্ষ বছর আগের সংশ্লিষ্ট প্রজাতির এক জোড়া থেকে এসেছে। উদাহরণস্বরুপ, মানুষের ক্ষেত্রে এক জোড়া নারী-পুরুষ, বাঘের ক্ষেত্রে একজোড়া বাঘ ও বাঘিনী, ইত্যাদি। যারা প্রায় ১ লক্ষ থেকে ২ লক্ষ বছর আগে প্রায় কাছাকাছি সময় জীবিত ছিলো।
২৪. এই রিসার্চ থেকে দুটি সিদ্ধান্তে আসা যেতে পারে।
২৫. এক, ১ থেকে ২ লক্ষ বছর আগে কোন এক বড় ধরনের ক্যাটাস্ট্রফিক ইভেন্ট-এর কারণে তখনকার প্রায় অনেক প্রজাতির ‘ভিন্ন নিউক্লাওটাইড সিকোয়েন্স’ যুক্ত ভাই-বোনেরা মারা যায়। ফলে, যে একজোড়া পুরুষ-নারী থেকে পরবর্তী জেনারেশন-এর ডাইভারসিফিকেশন হয়। (একে বলা হয় পপুশেন বোটল নেক)
২৬. দুই, ১ থেকে ২ লক্ষ বছর আগে পৃথকভাবে একজোড়া করে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী পৃথিবীতে পাঠানো হয় এবং তা থেকে পরবর্তী জেনারেশন-এর ডাইভারসিফিকেশন হয়।
২৭. মজার বিষয়, ‘ম্যাটেরিয়ালিস্ট’-দের জন্য ২৫ ও ২৬ দুইটাই প্রবলেমেটিক। কারণ, ২৫ ঠিক হলে নূহ (আ)-এর প্লাবণ-এর মত একটি ক্যাটাস্ট্রফের ইঙ্গিত পাওয়া, যার সম্পর্কে প্রায় সকল ধর্মগ্রন্থে বিভিন্নভাবে বর্ণনা এসেছে। আর, ২৬-কে তারা outright রিজেক্ট করে।
২৮. এজন্য আলোচ্য রিসার্চের দুইজন অথারকে বলতে শুনা যায়-
“This conclusion is very surprising,” co-author David Thaler of the University of Basel is quoted as saying, “and I fought against it as hard as I could.” His co-author is fellow geneticist Mark Stoeckle of Rockefeller University in New York (3)
২৯. মজার বিষয় হলো এরা আগে ২০০৪ সালের একটি পেপারে একই অথাররা পাখির দুটো লিনিয়েজ পরীক্ষা করে বলেছিলেন- “The ad hoc modifications to neutral theory commonly proposed to account for low variation in individual cases, namely, recurrent bottlenecks or selective sweeps, struggle as general mechanisms. If bottlenecks limit variation, then a universal low ceiling implies recent population crashes for all species. This appears unlikely– almost a Noah’s Ark hypothesis–although perhaps long-term climate cycles might cause widespread periodic bottlenecks.” (8)
৩০. সবার শেষে Evolution News-এর এন্ড্রু জোনস-এর একটি কথা কোট করে শেষ করছি –
“In any case, one thing is clear: reconstructing the past is a complicated business and it is still full of surprises. There may be even bigger surprises in store.”
2. Stoeckle MY, Thaler DS. Why should mitochondria define species? Hum Evol. 2018;33:1–30.
3. Jones A. New Paper in Evolution Journal: Humans and Animals Are (Mostly) the Same Age? Evolution News. 2018.
4. Cann RL, Stoneking M, Wilson AC. Mitochondrial DNA and human evolution. Nature [Internet]. 325(6099):31–6. Available from: http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/3025745
6. Poznik GD, Henn BM, Yee MC, Sliwerska E, Euskirchen GM, Lin AA, et al. Sequencing Y chromosomes resolves discrepancy in time to common ancestor of males versus females. Science (80- ). 2013;341(6145):562–5.
গত ২৩ শে নভেম্বর সায়েন্স জার্নালে একটি রিপোর্ট পাবলিশ হয়েছে । ল্যামিচ্যানী এবং তার সহযোগী রিসার্চারগন গালাপোগোস দ্বীপপুঞ্জে নতুন স্পিসিস-এর আবির্ভাবটি পর্যবেক্ষণ এবং রিপোর্ট করেন(1) ।
এসপানোলা থেকে গালাপোগোসের ড্যাফনি মেজোরে আগত একটি ডারউইনের ফিঞ্চ পাখির প্রজাতি Geospiza conirostris গালাপোগোসের ন্যাটিভ প্রজাতি Geospiza fortis-এর সাথে ব্রিডিং করে। ফলে, একটি নতুন হাইব্রিড প্রজাতি জন্ম নেয় যা পূর্ববর্তী প্রজাতি থেকে বড়। এই হাইব্রিড প্রজাতিটি গালাপোগোস-এ ক্ষরার সময় প্রাপ্ত খাদ্য রিসোর্সকে অভিভাবক প্রজাতি থেকে বেশী ব্যবহার করতে সক্ষম হয় এবং প্রাকৃতিক ভাবে বেঁচে থাকার সুবিধে পেয়ে নির্বাচিত হয়।
সংঙ্গানুযায়ী একটি প্রজাতির পরবর্তী বংশধরকে নতুন প্রজাতিতে পরিণত হতে হলে প্রয়োজন ‘রিপ্রোডাক্টিভ আইসোলেশন’। ‘রিপ্রোডাক্টিভ আইসোলেশন’ হল প্রজাতির এমন একটি বৈশিষ্ট্য যার ফলে সে আরেকটি প্রজাতির সাথে মেটিং করে না (অর্থাৎ একটি প্রজাতির পুরুষ, আরেকটি প্রজাতির নারীর সাথে মিলিত হয় না এবং ভাইস ভারসা)।
ফিঞ্চ পাখির একটি বৈশিষ্ট্য হলো এটির মেটিং চয়েজ (অর্থাৎ কোন পাখির সাথে মিলিত হবে) তা নির্ভর করে পাখির গানের ধরন এবং গঠনের ওপর। যেহেতু নতুন প্রজাতিটি Geospiza fortis প্রজাতি থেকে বড় এবং ভিন্ন সুরে গান গেতে শুরু করেছে, ফলে এটি মা-এর প্রজাতি থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ, Geospiza fortis প্রজাতির অন্য কোন পাখির সাথে এটি মিলিত হয় না। সুতরাং, হাইব্রিড প্রজাতিটি স্পেসিয়েশনের সংঙ্গা অনুযায়ী নতুন একটি প্রজাতিতে পরিণত হয়েছে।
আপনি কি কখনও লক্ষ্য করেছেন, কেন আপনার সন্তানের গঠন, চেহারা, কণ্ঠ হুবুহু আপনার বা আপনার স্পাউজের মত হয় না? কারণ, জননকোষের ডিএনএতে ক্রসিং ওভারের মাধ্যমে জেনেটিক রিকম্বিনেশন হয়। অর্থাৎ, মা ও বাবা থেকে আগত ক্রোমোজোমদ্বয়ের নির্দিষ্ট স্থানে জেনেটিক তথ্যের আদান প্রদান হয়, যেন জেনেটিক ভ্যারিয়েশন তৈরী হতে পারে। এটি জননকোষের একটি ‘বিল্ট-ইন’ প্রক্রিয়া।
অন্যান্য প্রাণীর ক্ষেত্রে ধরুন এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরবর্তী বংশধরে এমন একটি পরিবর্তন এল যার ফলে পরবর্তী প্রাণীটি বিদ্যমান খাদ্যের উৎসকে বেশী ব্যবহার করতে পারে এবং একই সাথে যেই বৈশিষ্ট্যগুলো উক্ত প্রাণীর ক্ষেত্রে মেটিং চয়েজ নির্ধারণ করে (যেমন: ফিঞ্চ পাখির ক্ষেত্রে গানের সুর এবং শারীরিক গঠন) সেগুলোর একটিতে পরিবর্তন আসল। সেক্ষেত্রে উক্ত বংশধরটি পূর্ববর্তী প্রজাতি থেকে ধীরে ধীরে পৃথক প্রজাতিতে পরিণত হবে। এটির আরেকটি নাম আছে – সেক্সুয়েল সিলেকশন (2)।
বস্তুত, এই ভাবে প্রজাতি তৈরীর ঘটনা প্রকৃতিতে নতুন নয়। সালামান্দার প্রজাতি Ensatina eschschoitzi-এর ৭টি উপপ্রজাতি যুক্তরাস্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের প্রশান্ত মহাসাগর তীরবর্তী স্যান জাওকিন ভ্যালির আশেপাশে বাস করে (3)। উপ-প্রজাতিগুলোর মূল পার্থক্য তাদের গায়ের রঙ-এর নকশা (প্যাটার্ন) এবং (সম্ভবত) ফেরোমোন। সালামান্দারের গায়ের রং-এর নকশা পরিবর্তন হয় হোমোলোগাস রিকম্বিনেশন-এর মাধ্যমে। সহজ কথায়, শুক্রাণু ও ডিম্বাণু তৈরী হওয়ার এক পর্যায়ে এক জোড়া ক্রোমোজামের মধ্যে ক্রসিংওভার নামক একটি ঘটনা ঘটে। এ প্রক্রিয়ায় জিনোমের কিছু সুনির্দিষ্ট অংশের আদান প্রদান এবং পুনঃবিন্যাস হয়। যদিও রিকম্বিনেশন হচ্ছে র্যাণ্ডমভাবে, কিন্তু তা হচ্ছে একটি নিয়ন্ত্রিত সীমায় কিছু বিনিময় যোগ্য এলিলির (জিন) মধ্যে।
এভাবে সৃষ্ট ভ্যারিয়েশনের মাধ্যমে ভ্যালীর উত্তরে অবস্থিত Ensatina eschschoitzi picta উপ-প্রজাতিটি দক্ষিণ দিকে এসে এমন দুটো উপ-প্রজাতি Ensatina eschschoitzi klauberi এবং Ensatina eschschoitzi eschschoitzii–তে পরিণত হয়েছে, যারা পরস্পর যৌনক্রিয়ায় লিপ্ত হয় না। সালামান্দার প্রজাতি যৌনক্রিয়ার জন্য বিপরীত লিঙ্গ বাছাই করতে সাধারণত ফেরোমোন নামক শরীর থেকে নিঃসৃত বিশেষ গন্ধ উৎপাদনকারী পদার্থ ব্যবহার করে। (এছাড়া, কোন কোন প্রজাতি স্পর্শ এবং কোন কোন প্রজাতি দৃষ্টি-সম্বন্ধীয় সূত্র তথা ভিজুয়্যাল কিউ ব্যবহার করে থাকে)। সে হিসেবে Ensatina eschschoitzi klauberi এবং Ensatina eschschoitzi eschschoitzii উপ-প্রজাতি দুটোতে ক্রসিং ওভারের মধ্য দিয়ে রং এবং ফেরোমোনের যথেষ্ট পার্থক্য হয়ে যাওয়ায় তারা প্রজাতির সংজ্ঞানুযায়ী আলাদা প্রজাতিতে পরিণত হয়েছে।
গুগোলে রিং স্পিসিস লিখে সার্চ দিলে এরকম আরও কিছু উদাহরণ পাওয়া যাবে। মূল বিষয়টি হলো, এসব ক্ষেত্রেই এমন কিছু পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে নতুন প্রজাতি তৈরী হয়ে যাচ্ছে যা হওয়ার জন্য জিনোমে ইতোমধ্যে নিয়মতান্ত্রিক ব্যবস্থা করা আছে এবং প্রতিটি ক্ষেত্রেই ‘এলোপাতাড়ি মিউটেশনের’ কোন ভূমিকা নেই। স্পেসিয়েশন অর্থ হলো একটি নতুন প্রজাতি তৈরী হওয়া।
জেনেটিক্যালী স্পেসিয়েশনের গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে- – হাইব্রিড স্পেসিয়েশন –যেমন অদ্য আর্টিকেলে ফিঞ্চ পাখি। – পলিপ্লয়েড স্পেসিয়েশন- যেটা জবা ফুলে বেশ দেখা যায়। – ট্রান্সপজিশন- থিওডসিয়াস ডবঝানস্কি ফ্রুট ফ্লাইতে এই ধরনের স্পেসিয়েশন দেখিয়েছেন।
প্রতিটি ক্ষেত্রে কোষের ‘ইন-বিল্ট’ প্রক্রিয়ায় কিছু জেনেটিক ভ্যারিয়েশন তৈরী হয়। তবে রিপ্রোডাক্টিভ আইসোলেশনের ক্ষেত্রে যে সকল প্রক্রিয়া ভূমিকা রাখে সেগুলো হল ন্যাচারাল সিলেকশ (রি-ইনফোর্সমেন্ট ও ইকোলোজিকাল) এবং সেক্সুয়েল সিলেকশন। (২)
এ সবগুলো প্রক্রিয়াকে আপনি সহজেই ‘মাইক্রো-ইভল্যুশন’-এর কাতারে ফেলতে পারবেন। কারণ, প্রতিটি ক্ষেত্রেই কোন বড়-মাত্রার জেনেটিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় না। অর্থাৎ, আপনি চোখের সামন একটি জেনাসের অন্তর্গত একাধিক স্পিসিস তৈর হতে দেখবেন। কিন্তু, একটি ফ্যামিলির অধীনে নতুন কোন জেনাস তৈরীর ঘটনা চোখের সামনে দেখতে পারবেন না।
ডারউইনবাদীদের দাবী অনুযায়ী বড় মাত্রার জেনেটিক পরিবর্তন হয় অনেক সময় নিয়ে, ফলে এটি চোখের সামনে দেখা যায় না। জেনাসের আগমন আপনি কখনও সচক্ষে দেখতে পারবেন না। কারণ, এর জন্য যে মিলিয়ন বছর সময় দরকার সে পর্যন্ত আপনি বাঁচবেন না। নতুন জেনাস যে কমন ডিসেন্টের মাধ্যমে অন্য কোন কমন জেনাস থেকে এসেছে তার প্রমাণ হলো ফসিল এবং মলিকুলার হোমোলজি। যেমন: হোমো জেনাস (মানুষ জাতীয় দোপেয়ে প্রাণী) এবং প্যান জেনাস (শিম্পাঞ্জী)-এর একটি কমন এনসেস্টর ছিলো।
অস্ট্রালোপিথেকাস, আর্ডিপিথেকাস এদের গঠন পুরোপুরি শিম্পাঞ্জির মত না, কিছুটা মানুষের কাছাকাছি। অন্যদিকে নিয়েন্ডারথ্যাল, ডেনিসোভা হোমিনিন-এরা মানুষের মত গঠনযুক্ত ছিলো। কিন্তু, অস্ট্রালোপিথেকাস-কে আপনি শিম্পাঞ্জীর কাতারে ফেলবেন, নাকি নতুন একটি ফ্যামিলি হিসেবে নাম দিবেন সেটা কিন্তু পুরোপুরি আপনার ওপর নির্ভর করছে। এগুলোর ক্ষেত্রে জীবাশ্ম হাড় ছাড়া আমাদের কাছে অন্য কোন এভিডেন্স নেই। ঠিক তেমনি সংস্কৃতিমনা নিয়েন্ডারথেল বা ডেনিসোভাকে-যে আপনি মানুষ বলতে চাইছেন না তার-ই বা ভিত্তি কি?
অন্যদিকে, হোমোলজি, তা মলিকুলার হোক বা মরফোলজিকাল, কমন ডিজাইনের কারণেও হতে পারে। সুতরাং, প্রজাতির কমন ডিসেন্ট আর্গুমেন্ট তখনই গ্রহণযোগ্য হবে যখন আপনি ডিএনএ-তে নতুন কার্যকরী তথ্য যোগ হওয়ার স্পষ্ট উদাহরণ দিতে পারবেন। আপনি বিভিন্ন জিন নিয়ে ‘মলিকিউলার ফাইলোজেনী’ আঁকলে একেকটির জন্য একেকটি কমন এনসেস্ট্রির সময় পাওয়া যাবে (4)।
সুতরাং, স্বয়ংক্রিয় ও প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় বিবর্তনের বিষয়টি তখনই পুরোপুরি মানা যেতে পারে যখন আপনি মলিকিউলার লেভেলে ‘বড় আকারের’ জেনেটিক ইনফরমেশন যোগ হওয়ার প্রসেস দেখাতে পারবেন। নব্য-ডারউইনবাদের র্যানডম মিউটেশন যে এই বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে অক্ষম তা অনেক দার্শনিক ও বিজ্ঞানীরাও বুঝতে পারছেন। (৫)
এই ভ্যারিয়েশন আসার বিষয়টি কিভাবে সম্ভব সেটা নিয়ে ‘পদ্ধতিগত প্রকৃতিবাদ’-এর গণ্ডির মধ্যে থেকেই অনেক বিজ্ঞানী নতুন থিওরী দিচ্ছেন। জেমস শ্যাপিরোর ন্যাচারাল জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, লিন মার্গুলিসের সিমোবায়োসিস এবং সুসুম ওহনো-এর জিন ডুপ্লিকেশন- এর মধ্যে অন্যতম।
লক্ষ্যণীয় এই প্রতিটি প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রেই ‘এলোপাতারী’ শব্দটি পরিত্যাক্ত হয়েছে, কারণ এগুলো নিয়ণ্ত্রিত। এগুলো যদি দিন শেষে যথাযথ হিসেবে প্রমাণিতও হয় সবগুলোই একটা কমন এনসেস্টর থেকে শুরু হবে যার মধ্যে অসংখ্য সুনিয়ন্ত্রিত বিবর্তিত হওয়ার প্রক্রিয়া প্রথম থেকেই প্রথিত আছে। অর্থাৎ, আপনি ‘পদ্ধতিগত প্রকৃতিবাদ’ থেকে ‘দার্শনিক প্রকৃতিবাদ’-এ গিয়ে নিজের চূড়ান্ত প্রশ্নগুলোকে আটকে রাখবেন যেন একটি ‘বুদ্ধিমান’ সত্ত্বার অস্তিত্বকে অস্বীকার করা যায়, সেটি দিবাস্বপ্ন ছাড়া আর কিছু নয়।
রেফারেন্স: 1. Lamichhaney S, Han F, Webstar MT, Andersson L, Grand BR, Grant PR. Rapid hybrid speciation in Darwin’s finches. Science (80- ). 2017;(November). 2. Speciation. In: Wikipedia. 2017. 3. Rosa Rubicondior: Ring Species – Evolution in Progress [Internet]. [cited 2017 Nov 29]. Available from: http://rosarubicondior.blogspot.com/…/ring-species-evolutio… 4. Stephen Meyer, Darwin’s Doubt 2013 5. Thomas Nagel, Mind and Cosmos 2012
…………………..
“স্বয়ংক্রিয় ও প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় বিবর্তনের বিষয়টি তখনই পুরোপুরি মানা যেতে পারে যখন আপনি মলিকিউলার লেভেলে ‘বড় আকারের’ জেনেটিক ইনফরমেশন যোগ হওয়ার প্রসেস দেখাতে পারবেন” আমার লেখার এই অংশটির প্রেক্ষিতে একজন ফেসবুক ডারউইনবাদী নিচের লিংকটি দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন যে, র্যানডম মিউটেশনের মাধ্যমে অহরহ নতুন জিন তৈরী হচ্ছে!! তার দাবী কেন সঠিক নয় সেটা ব্যাখ্যা করতে আমি একটি বিস্তারিত মন্তব্য লিখি। সবার জানার জন্য এখানে সংযোজন করে দিচ্ছি।
লিংক: “Gene Genesis: Scientists Observe New Genes Evolving from Mutated Copies”
উত্তর: লিংকে জিন ডুপ্লিকেশন নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। জিন ডুপ্লিকেশনের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত সর্বচ্চো যেটা করা গিয়েছে তা হলো নিম্নরুপ- ধরুন, একটি ব্যাকটেরিয়াতে অলরেডি এক্সিসটিং এনজাইম, যার ডুয়েল ফাংশন আছে, এর মধ্যে একটি ফাংশন ‘ক’ শক্তিশালী এবং একটি ফাংশন ‘খ’ দুর্বল। উক্ত ব্যাকটেরিয়াতে ‘খ’ ফাংশন সম্পাদনকারী শক্তিশালী এনজাইমটি না থাকলে যেটা হবে (প্রয়োজনীয় প্রতিকূল পরিবেশে যেখানে উক্ত ‘খ’ এনজাইমটির ফাংশন খুবই জরুরী) প্রথম এনজাইমটির জিন ডুপ্লিকেটেড হবে এবং ডুপ্লিকেটেড কপিতে মিউটেশনের মাধ্যমে ‘খ’ ফাংশনটি এক পর্যায়ে শক্তিশালী হয়ে যাবে।
এখানে কয়েকটি বিষয় লক্ষণীয়- এক, আগে মনে করা হতো এই প্রক্রিয়াটি পুরোপুির র্যানডম। কিন্তু, জেমন শ্যাপিরো দেখাচ্ছেন যে, ব্যাকটেরিয়ার ভিতর কঠিন পরিবেশে এডাপ্ট করার জন্য কতগুলো প্রক্রিয়া ইনবিল্ট আছে। ফলে ব্যাকটেরিয়া নতুন কোন পরিবেশে এলে তার ‘নির্দিষ্ট’ কিছু জেনেটিক রিজিওনে ‘র্যানডম মিউটেশন জেনারেটিং’ প্রক্রিয়া এক্টিভেট করে। যেন অভিনব পরিবেশে সে খাপ খাওয়াতে পারে। অর্থাৎ, আদতে এই প্রক্রিয়াটি র্যানডম না। বিষয়টার সাথে ভার্টিব্রেট জীবের ইমিউন সিস্টেমের পদ্ধতিগত মিল আছে।
দুই, জিন ডুপ্লিকেশনের মাধ্যমে যদি এমন কোন এডাপটেশনের প্রয়োজন হয় যেখানে দুই বা ততোধিক অ্যামাইনো এসিড দরকার হবে এবং ফলে একাধিক পয়েন্ট মিউটেশনের দরকার হবে, সেক্ষেত্রে উক্ত এডাপটেশনটি জিনোমে ফিক্স হতে যে পরিমাণ অর্গানিজম দরকার তার সংখ্যা অনেক বেশী ১০^৯। কার্যত, ব্যাকটেরিয়া জাতীয় এককোষী প্রাণী ছাড়া এ ধরনের মিউটেশন সম্ভব নয়। (১)
তৃতীয়ত, ক্লোরোকুইন রেজিসেন্ট-এর প্রাকটিকেল উদাহরণ হতে দেখা যায় যে যেখানে দুটো প্রোটিন প্রোটিন ইন্টারেকশন সাইটে সাইমুলটেনিয়াস মিউটেশন লাগে সেখানে মিনিমাম অর্গানিজম দরকার ১০^২০। (২)
চতুর্থত, একটি এনজাইমকে ভিন্ন ফাংশনের একটি এনজাইমে পরিণত করতে দরকার ৭ বা ততোধিক সাইমুলটেনিয়াস মিউটেশন। (৩)
অর্থাৎ, আপনার আর্টিকেল থেকে র্যানডম প্রক্রিয়ায় নতুন তথ্য যোগ অহরহ হয় বলে যে দাবী করলেন এটা এক্সাজারেশন। বরং, র্যানডম প্রক্রিয়ায় নতুন তথ্য যোগ হওয়া সম্ভব হলেও তার জন্য প্রয়োজনীয় অর্গানিজম আপনি পৃথিবীর ইতিহাসে খুজে পাবেন না। বস্তুত, চারটি সাইমুলটেনিয়াস মিউটেশনের জন্য দরকার ১০^৪০ টি ব্যাকটেরিয়া (অর্গানিজম)। যা পৃথিবীর ইতিহাসে যতগুলো ব্যাকটেরিয়া তৈরী হয়েছে তার সমান। (২)
মলিকুলার বায়োলজির নতুন নতুন গবেষণা ও আবিস্কারের মধ্য দিয়ে পরিস্কার হয়ে গেছে যে ডিএনএ হচ্ছে তথ্য ধারণ করার একটি মাধ্যম যা জীবজগতের গঠনের তথ্য ধারণ করে। কোন ধরনের ‘র্যানডম’ প্রক্রিয়ায় যে ডিএনএ-তে ‘নতুন কার্যকরী’ তথ্য যোগ হয় না সেটিও পানির মত পরিস্কার। কিন্তু, তারপরও বিবর্তনবাদীরা কেন এই আবিস্কারগুলোকে সহজ ভাবে মেনে নিয়ে তাদের চিন্তাচেতনার আড়ষ্টতা থেকে বের হয়ে আসতে পারছে না?
প্রশ্নটির উত্তর পাওয়া যাবে ‘সেমেলওয়াইস রিফ্লেক্স’-এ। সেমেলওয়াইস রিফ্লেক্স হল বিজ্ঞানের জগতে প্রচলিত বিশ্বাস বা প্যারাডাইম-কে প্রশ্নবিদ্ধকারী নতুন জ্ঞানকে মেনে নিতে অস্বীকৃতি।
১৮৪৬ সালের কথা। তখনও জীবাণু সংক্রমনের মাধ্যমে ইনফেকশন ছড়ানোর বিষয়টি অজ্ঞাত ছিলো। ভিয়েনা হাসপাতালের প্রসূতি মহিলাদের দুটো ক্লিনিক ছিলো। একটি ক্লিনিকে ‘চাইল্ডবেড ফিভার’-এর কারণে মাতৃমৃত্যু বেশী হচ্ছিল। অন্য ক্লিনিকে মাতৃমৃত্যু হার কম ছিলো।
ডা: ইগনাজ সেমেলওয়াইস উক্ত ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে বের হয়ে পড়লেন। তিনি গবেষণা করতে গিয়ে আবিস্কার করলেন যে, যে ক্লিনিকে মা’দের মৃত্যু বেশী হচ্ছিল ঐ ক্লিনিকের পাশেই মৃত লাশের ডিসেকশন করা হত এবং ঐ মৃত লাশ থেকেই ‘কিছু একটা’ চিকিৎসাসেবা প্রদানকারীদের হাতকে অপরিস্কার করে দিচ্ছে যা থেকে মায়ের শরীরে ‘চাইল্ডবেড ফিভার’ ছড়িয়ে পড়ছে।
তিনি তার ছাত্র ও নার্সদের বলে দিলেন যেন তারা কাজ করার আগে তার আবিস্কৃত এন্টিসেপ্টিকদিয়ে হাত পরিস্কার করে ধুয়ে যায়। ফলে ১৮৪৮ সালে উক্ত ক্লিনিকে মাতৃমৃত্যুর হার ১১.৪ শতাংশ থেকে নেমে ১.২৭ শতাংশে চলে আসে। এরপরও তার কলিগ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং বৈজ্ঞানিক কমিউনিটি এই তত্ত্বটিকে মেনে নেয়নি। তাকে হাসপাতাল থেকে বহিস্কার করা হয়েছিলো। কিন্তু, ২০ বছর পর বিজ্ঞানী লুই পাস্তুর যখন ‘জীবাণু তত্ত্ব’ আবিস্কার করেন তখন বিজ্ঞানজগত বুঝতে পারে যে ডা: সেমেলওয়াইসি-এর আবিস্কার ঠিক ছিলো। (১)
ঠিক একই ঘটনা ঘটেছিলো যখন আলফ্রেড ভেগনার ১৯১২ সালে প্রথম ‘কন্টিনেন্টাল ড্রিফট’ থিওরীর অবতারণা করেন। কন্টিডেন্টাল ড্রিফটতত্ত্ব মতে পৃথিবীর মহাদেশগুলো কতগুলো প্লেটের মত চলমান আছে। মহাদেশগুলোর ম্যাপ পাশাপাশি রাখলে সীমানাগুলো খাপে খাপে মিলে যায়। ভেগনার এটি লক্ষ্য করে তত্ত্বটি দেন, তবে এর বিস্তারিত প্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি প্রথম কোন ধারণা দিতে পারেননি। ফলে, প্রথমদিকের ভুগোলবিদরা তার এই তত্ত্বকে রিজেক্ট করেন। কিন্ত, পরবর্তীতে আরও তথ্য উপাত্ত পাওয়া গেলে তার এই তত্ত্ব সর্বসাধারনের (বিজ্ঞানী) মাঝে গৃহীত হয় এবং ‘প্লেট টেকটনিক’ নামক বিভাগের জন্ম হয়। (২) উইকিপিডিয়া বলছে:
“[W]ithout detailed evidence and a force sufficient to drive the movement, [Wegener’s] theory was not generally accepted: the Earth might have a solid crust and mantle and a liquid core, but there seemed to be no way that portions of the crust could move around. Distinguished scientists, such as Harold Jeffreys and Charles Schuchert, were outspoken critics of continental drift.” (৩)
বারবারা ম্যাকক্লিনটক ছিলেন একজন অত্যন্ত মেধাবী, প্ররিশ্রমী এবং ঠান্ডা মাথার বিজ্ঞানী। ভূট্টার বিভিন্ন প্রকরণ এবং ক্রোমোজোমের গঠন সম্পর্কে তার এত বেশী জ্ঞান ছিল যে ভূট্টার বিভিন্ন দানার রঙ্গের প্যাটার্ণের ভিত্তি করে তিনি বলে দিতে পারতেন যে ক্রোমোজমের ভিতর কি ধরনের জেনেটিক পুনর্গঠন হয়েছে। লক্ষ্যণীয় যে, তিনি ভূট্টার ক্রোমোজমের উপর গবেষণা করছিলেন ১৯৪০ সালে এবং ডিএনএ আবিস্কার হয় আরও পরে ১৯৫৩ সালে।
ম্যাকক্লিনটক ট্রান্সপজিশন নামক একটি কোষীয় প্রক্রিয়া আবিস্কার করেন এবং এর জন্য নোবেল পুরস্কার পান। ট্রান্সপজিশন হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কোষ নিজে তার ডিএনএ-এর ক্ষতিগ্রস্থ অংশ পুনঃপ্রকৌশলের মাধ্যমে মেরামত করে। ম্যাকক্লিনটক ১৯৫১ সালে যখন কোল্ড স্প্রিং হারবর-এর একটি সিম্পোজিয়ামে এই অসাধারণ আবিস্কারটি বর্ণনা করছিলেন তখন বিজ্ঞানীদের প্রতিক্রিয়া ছিলো সেমেলওয়াইস রিফ্লেক্স-এর ন্যায়। অর্থাৎ, তারা তাদের সময়ের চেয়ে অনেক বেশী এগিয়ে থাকা এই তত্ত্বটিকে গুরুত্ব দিয়ে গ্রহণ করেনি। পরবর্তীতে ম্যাকক্লিনটকের কলিগ জেমস স্যাপিরো যখন ব্যাকটেরিয়াতেও একই প্রক্রিয়া আবিস্কার করেন তখন ‘ট্রান্সপজিশন’ তত্ত্বটি জনপ্রিয়তা পায়। (১)
খুবই সম্প্রতি একই ধরনের ঘটনা ঘটছে ‘বুদ্ধিদীপ্ত প্রকল্প তথা ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন’ তত্ত্ব ও ‘তৃতীয় পথ তথা দ্য থার্ড ওয়ে’-এর প্রবক্তাদের বেলায়। ডারউইনবাদী বিজ্ঞানী এবং তার সাগরেদরা মাটি কামড়ে পড়ে আছে তাদের পুরোনো হয়ে যাওয়া ‘ডারউইনতত্ত্বে’ যার মূল বক্তব্য হল এলোপাতাড়ি (র্যানডম) মিউটিশনের মাধ্যমে ডিএনএ-তে নতুন তথ্য যোগ হচ্ছে এবং এর ফলে সৃষ্টি বৈচিত্রের কারণে বিবর্তন হচ্ছে। অথচ, অনিয়ন্ত্রিত এলোপাতাড়ি মিউটেশন সংক্রান্ত অসংখ্য পরিক্ষনিরীক্ষা এখন পর্যন্ত ডিএনএ-র ক্ষতি বৈ উপকার করতে পারেনি।
আমরা দেখলাম যে ডারউইনবাদী কর্তৃক তাদের তত্ত্বকে প্রশ্নবৃদ্ধকারী নতুন সত্যকে গ্রহণ করতে অনিচ্ছা অভিনব কিছু নয়। একটি নতুন সত্য কখনও আগের তত্ত্বকে আকড়ে ধরে থাকা বিজ্ঞানীদের চিন্তাচেতনার পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় না, প্রতিষ্ঠিত হয় তরুণ বিজ্ঞানীদের উক্ত তত্ত্ব গ্রহণ করা এবং পুরোনো বিজ্ঞানীদের প্রয়াণের মধ্য দিয়ে। এটিকে বলে প্ল্যাঙ্ক’স প্রিন্সিপাল। আধুনিক কোয়ান্টাম তত্ত্বের জনক ম্যাক্স প্ল্যাংক বলছেন:
“A new scientific truth does not triumph by convincing its opponents and making them see the light, but rather because its opponents eventually die and a new generation grows up that is familiar with it” — Max Planck, Scientific autobiography, 1950, p. 33 (৪)
যখন পুরোনোকে ঝেড়ে ফেলে জ্ঞানের জগতে একটি নতুন বৈজ্ঞানিক দৃষ্টান্ত স্থানান্তর (প্যারাডাইম শিফট) হয় তখন তাকে বিজ্ঞানের ইতিহাসবিদ থমাস কুন-এর ভাষায় বলা হয় ‘বৈজ্ঞানিক বিপ্লব (Scientific revolution)’ । (৫)
মলিকুলার বায়োলজি, জেনেটিক্স, ইনফরমেশন থিওরী প্রভৃতি বৈজ্ঞানিক শাখাগুলোর নতুন নতুন আবিস্কারের মধ্যদিয়ে এটি স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে জীবজগত ডারউইনের সময়ে ধারণাকৃত কতগুলো ‘সরল’ কোষের সমন্বয়ে গঠিত নয়। এক একটি কোষ এক একটি বিস্ময় এবং তার ভিতরের জগৎটা আরো ‘প্রকৌশলী’ বিস্ময়ে ভরপুর। পৃথিবীর ইতিহাসে কখনও কোন এলোপাতাড়ি প্রক্রিয়ায় কোন ‘কোড’ তৈরী হয়ে যায়নি।
সেদিন খুব দূরে নয় যেদিন, মানুষের ডিএনএ-এর ‘৯৮%’-কে আবর্জনা (জাংক) আখ্যাদানকারী (৬) বিবর্তনবাদীরা তাদের জরজীর্ণ চিন্তাচেতনা নিয়ে উটপাখির ন্যায় মাটির নিচে মাথা গুঁজে পড়ে থাকবে এবং তরুণ সতেজ মস্তিস্কের বিজ্ঞানীরা ‘ডিএনএ’-এর কোডের পিছনের কোডারকে সচেতনভাবে মেনে নিয়ে এগিয়ে যাবে, যেদিন ডারউইনের বস্তবাদী প্যারডাইমকে শিফট করে ডিজাইনভিত্তিক ‘তৃতীয়’ প্যারাডাইম বৈজ্ঞানিক বিপ্লব ঘটিয়ে দিবে। ইনশা আল্লাহ।
সেদিনের অপেক্ষায়…
রেফারেন্স:
১. Perry Marshall, Blade#1: Transposition-The 70-Year-Old Nobel prize-winning discovery, in ‘Evolution 2.0’ ২. David Klinghoffer, ‘How to Think About Minority Science Views — The Case of Plate Tectonics’. [Accessed: 01.11.2017] Available from:https://evolutionnews.org/…/how-to-think-about-minority-sc…/ ৩. ‘Development of the theory’ in ‘Plate tectonics’. [Accessed: 01.11.2017] Available from https://en.wikipedia.org/wiki/Plate_tectonics… ৪. ‘Planck’s principle’. [Accessed: 01.11.2017] Available from:https://en.wikipedia.org/wiki/Planck%27s_principle ৫. Thomas S. Kuhn, (1962) “The structure of scientific revolutions” ৬. Ohno S (1972) ‘So much “junk” DNA in our genome.’ In: Smith HH, editor. Evolution of Genetic Systems. New York: Gordon and Breach. pp. 366–370.
[বি.দ্র.: এই লেখাতে মূলত জীবজগতের গাঠনিক ভাষা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।]
ছোটবেলায় আমাদের অনেকের মা-বাবা আমাদের বর্ণমালা শেখানোর জন্য এক ধরণের খেলনা কিনে দিতেন। প্লাস্টিকের তৈরী চৌকা (বর্গক্ষেত্র) আকৃতির খেলনাগুলোতে বর্ণমালার বিভিন্ন অক্ষর লিখা থাকতো। উদ্দেশ্য, আমরা খেলাচ্ছলে বর্ণমালা শিখে নেবো। সাথে, বর্ণ ব্যবহার করে শব্দ গঠনও করতে পারবো।
ধরুন, আপনাকে এ ধরণের কয়েক সেট বর্ণমালা দেয়া হয়েছে। বর্ণমালায় স্বরবর্ণ ও ব্যাঞ্জন বর্ণের পাশাপাশি ‘কার’ চিহ্নিত চৌকা আছে। এ অবস্থায় আপনি সবগুলো চৌকা হাতে নিয়ে যদি টেবিলে ফেলেন তাহলে কি অর্থপূর্ণ বাক্য গঠন হওয়ার কোন সম্ভাবনা আছে? অবশ্যই না। হ্যাঁ, হতে পারে অর্থপূর্ণ ছোট দু’একটি শব্দ হয়ে গেল। যেমন: বল, কলম ইত্যাদি। কিন্তু, শব্দে অক্ষরের এবং ‘কার’-এর সংখ্যা যতই বাড়বে ততই ‘বাই চান্স’ অর্থপূর্ণ শব্দ তৈরী হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে। যেমন: ‘আকাশ’ ও ‘হতবিহ্বল’ শব্দ দু’টিতে যথাক্রমে ৫টি ও ৭টি চৌকা লাগবে। অন্যদিকে, ‘বল’ ও ‘কলম’ শব্দ দু’টিতে যথাক্রমে ২টি ও ৩টি চৌকা লাগবে। ফলে, ‘আকাশ’ ও ‘হতবিহ্বল’ শব্দ দুটি বাই চান্স তথা র্যাণ্ডমলি হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।
আবার, চৌকাগুলো র্যাণ্ডমলি ফেললে যদি কতগুলো অর্থপূর্ণ শব্দ তৈরী হয়েও যায়, তথাপি তা একটি অর্থপূর্ণ বাক্য গঠন করবে না। যেমন: মনে করি, টেবিলে দেখা গেলো ‘বল কলম আকাশ’, এটা কোন অর্থপূর্ণ বাক্য প্রকাশ করলো না। তবে, এক্ষেত্রেও ছোট ছোট অর্থপূর্ণ বাক্য প্রকাশ পেয়ে যেতে পারে। যেমন: আমি যাই। কিন্তু বাক্য যতই বড় হবে ততই র্যাণ্ডমলি তৈরী হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।
উপরের চিত্রে দেখা যাচ্ছে যে চৌকাগুলো র্যাণ্ডমলি ফেলে রাখা হয়েছে তাতে দু’অক্ষরের একাধিক অর্থপূর্ণ শব্দ (যেমন: GO, TO) পাওয়া যাচ্ছে। ভালমত খুঁজলে দু-একটি তিন অক্ষরের অর্থপূর্ণ শব্দও পাওয়া যেতে পারে। তবে, চার অক্ষরের যে শব্দটি (LOVE) ওপরের দিকে আছে, তা দেখামাত্রই বলে দেয়া যায় যে কেউ একজন এগুলো এভাবে সাজিয়েছে, র্যাণ্ডমলি হয়নি। চার অক্ষরের দুটো শব্দ মিলে যে শব্দটি (HAND-MADE) তৈরী করেছে সেটি র্যাণ্ডমলি হওয়া যে প্রায় অসম্ভব, তা বলাই বাহুল্য।
এবার মনে করুন, আপনার চৌকাগুলোতে এক বিশেষ ধরণের চুম্বক লাগানো আছে, যাতে আপনার চৌকাগুলোর একটি আরেকটির সাথে সুনির্দিষ্ট তথা স্পেসিফিক নিয়মে লেগে যাওয়ার প্রবণতা আছে। ধরি, ‘ক’ চিহ্নিত চৌকার প্রবণতা হলো ‘ল’ এর সাথে পাশাপাশি লেগে যাওয়া। তাহলে, এ ধরণের বর্ণমালা দিয়ে ‘বাই চান্স’ তো দূরে থাক, আপনি নিজে থেকে কি কোন শব্দ লিখতে পারবেন? উত্তর: না। কারণ, ‘ক’-এর পরে ‘স’ যুক্ত করতে প্রয়োজন হলেও আপনি আটকে যাবেন। কিন্তু, চৌকাগুলোর প্রবণতা যদি এমন হতো যে একটির সাথে আরেকটি স্পেসিফিক ভাবে না লেগে পাশাপাশি যেকোন বর্ণের সাথে হালকা ভাবে লাগে, তাহলে আপনার যেকোন শব্দ তৈরী করতে কোন সমস্যা হতো না এবং র্যাণ্ডমলি যে ছোট শব্দ বা বাক্যগুলো হতো সেগুলোও সাধারণ চৌকার মত বিচ্ছিন্ন না থেকে একটু লেগে থাকতো, অর্থাৎ স্থায়ী হতো। তবে এক্ষেত্রে ‘বাই চান্স’ হওয়া মানে আরেক সমস্যা। কারণ, দেখা যেত, যখনই ‘কলম’ লেখাটা তেরী হয়েছে পরক্ষণেই ‘ব’ এবং ‘শ’ বা অন্য যেকোন অক্ষর পাশে এসে ‘বকলমশ’ বানিয়ে ফেলেছে, তথা অর্থহীন করে ফেলেছে। অর্থাৎ, এমতাবস্থায় অর্থপূর্ণ শব্দগুলোকে পাশাপাশি রাখার জন্য একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তির সার্বক্ষণিক অবস্থান প্রয়োজন হয়ে পড়ত।
উপরের আলোচনা থেকে আমরা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বুঝতে পারলাম তা হলো:
১. আমরা যদি কোন প্রক্রিয়ায় কোন তথ্য সংরক্ষণ করতে চাই, সেই প্রক্রিয়াটিতে এমন কতিপয় পৃথক পৃথক অংশ থাকবে যেগুলোকে যেকোন ভাবে সাজানো যায়।
২. উক্ত অংশগুলোর পরস্পরের মধ্যে আকর্ষণ থাকতে পারে, কিন্তু সুনির্দিষ্ট ‘আকর্ষণ’ থাকা যাবে না।
৩. এ ধরণের পৃথক পৃথক অংশগুলো র্যাণ্ডমলি যুক্ত হয়ে অর্থপূর্ণ কোন শব্দ এবং বাক্য গঠন করার একটি সীমা আছে। তবে, সেই সীমা খুবই সংকীর্ণ তথা ছোট।
এবার আসুন এ ধরণের একটি তথ্যসংরক্ষণ ব্যবস্থা সম্পর্কে জানি যা প্রতিনিয়ত আমরা ব্যবহার করে চলেছি। তা হলো কম্পিউটার। হ্যাঁ, কম্পিউটারে ‘বাইনারী’ নাম্বার দিয়েই বিভিন্ন ধরণের তথ্য, যেমন: প্রোগ্রামের নির্দেশনা, ডকুমেন্ট, ইমেজ ইত্যাদি সংরক্ষণ করা হয়।
আমরা জানি, আমরা যে অংক ব্যবহার করে হিসেব নিকেশ করি সেটি হলো ‘দশমিক’ বা ‘ডেসিমাল’ সংখ্যা। অর্থাৎ, ১ থেকে ১০ পর্যন্ত গিয়ে এরপর আবার ১,২,৩.. যোগ করে তথা ১১, ১২, ১৩… এভাবে সংখ্যা গননা করতে থাকি। কিন্তু সংখ্যা গননা ইচ্ছা করলে এভাবেও করা যায়, ১,১১,১১১,১১১১,…..,১১১১১১১১১১ (তথা ১,২,৩,৪,…….১০)। একে বলে ‘ইউনারী’ সংখ্যা। এভাবে একশ লিখতে গেলে পরপর একশটি ১ বসাতে হবে। অর্থাৎ এভাবে হিসেব করা সহজ হলেও স্থান অনেক বেশী দরকার হয়ে পড়ে। আবার, সংখ্যাকে ‘দ্বিমিক’ বা ‘বাইনারী’ আকারেও প্রকাশ করা যায়। অর্থাৎ, ০,১,১০,১১,১০০,….১০১০ (তথা, ০,১,২,৩,৪,….১০)। দেখা যাচ্ছে এভাবে সংখ্যা প্রকাশ করলে যায়গা তুলনামূলক কম লাগছে। ‘দশমিক’ সংখ্যাকে ‘দ্বিমিক’ সংখ্যায় রূপান্তর করা যায় আবার বিপরীতটাও করা যায়।
লক্ষ্যণীয়, বিদ্যুতের উপস্থিতি অনুপস্থিতির উপর ভিত্তি করে আমরা ইচ্ছে করলে দ্বিমিক সংখ্যাকে সংরক্ষণ করতে পারি। সিলিকন ট্রানজিস্টরের মধ্যে এ ধরণের একটি পদ্ধতি তৈরী করা হয়। যেখানে বিদ্যুতের উপস্থিতি হচ্ছে ‘১’ এবং বিদ্যুতের অনুপস্থিতি ‘০’। এভাবে তৈরীকৃত অনেকগুলো ট্রানজিস্টরকে যদি একসাথে পাশাপাশি রাখা যায় তাহলে সেগুলোতে সংখ্যা সংরক্ষণ করা যাবে।
কিন্তু কতগুলো ট্রানজিস্টরকে একসাথে রেখে আমরা একটি ‘একক’ ধরবো? কারণ, যদি একটি ট্রানজিস্টরকে একক ধরি তাহলে মাত্র দুটো সংখ্যা সংরক্ষণ করা যাচ্ছে ০ এবং ১। কিন্তু যদি ৮টি ট্রানজিস্টরকে একত্রে রাখা যায় তাহলে সর্বোচ্চ যে সংখ্যাটি রাখা যাবে তা হলো: ১১১১১১১১, দশমিকে যার মান ২৫৫। তুলনামূলক বড় সংখ্যা। আরও বেশী ট্রানজিস্টরকে একত্রে রাখা সম্ভব, কিন্তু সেক্ষেত্রে জায়গা বেশী লেগে যাবে। ফলে, সাধারণত ৮টি ট্রানজিস্টরকে একত্রে রাখা হয়। এর প্রতিটিকে এক ‘বিট’ বলে এবং পুরো ৮টি বিটকে একত্রে বলে ‘বাইট’।
চিত্রে একটি ৮ বিট শিফট রেজিস্টার দেখা যাচ্ছে। ৮ বিটের মেমোরী আইসিগুলোও (ইন্টেগ্রেটেড সার্কিট) অনেকটা এভাবেই সাজানো হয়।
৮টি বিট দিয়ে না হয় সংখ্যা সংরক্ষণ করা যায়। কিন্তু, আমি যদি অক্ষর সংরক্ষণ করতে চাই? তা-ও সম্ভব। কীভাবে? এটা বুঝা যায়, সাংকেতিক ভাষা ব্যবহারের উদাহরণ থেকে। আমরা অনেকেই ছোট বেলায় এরকম খেলেছি যে, আমি একটি শব্দ লিখব তবে সে শব্দে ‘খ’ বলতে ‘ক’ বুঝাবো এবং এভাবে বর্ণমালার অক্ষরগুলোকে এক অক্ষর করে পিছিয়ে দেবো। এভাবে কোন শব্দ লিখলে আমি কী ধরণের নিয়ম ব্যবহার করেছি সেটি যে জানবে তার পক্ষে শব্দটির অর্থ বুঝা সহজ হবে। অর্থাৎ, আমরা ইচ্ছে করলে ‘ক’ বর্ণটিকে অন্য কিছু দিয়ে প্রকাশ করতে পারি। ঠিক একইভাবে, একটি বাইটের মধ্যে যদি বিভিন্নভাবে বর্ণমালাকে জুড়ে দেয়া যায় তাহলেও লেখা সংরক্ষণ করা যাবে। American Standard Code for Information Interchange, সংক্ষেপে ASCII হচ্ছে এ ধরণের একটি নীতিমালা যেটি অনুযায়ী কম্পিউটারের বিভিন্ন ইন্সট্রাকশনগুলো, যেমন: ‘কী-বোর্ডের’ বিভিন্ন ‘কী’-গুলো বাইনারী নাম্বারের সাথে চিহ্নায়িত করা থাকে। (http://www.ascii-code.com/) অর্থাৎ, আপনি যখন কী-বোর্ডে ‘A’ লিখেন, র্যামে তা ‘০১০০০০০১’ হিসেবে সংরক্ষিত হয়।
আমেরিকান স্ট্যাণ্ডার্ড কোড ফর ইনফরমেশন ইন্টারচেঞ্জ। লক্ষ্যণীয়, A-এর কোড হচ্ছে ‘1000001’। এখানে ৭টি বিট আছে। প্রথম বিটটিকে (তথা অষ্টম) রাখা হয় অংকের মাইনাস বা প্লাস বুঝানোর জন্য।
হার্ডডিস্কে কীভাবে সংরক্ষণ হয়? বিষয়টি খুবই মজার। আমরা জানি, চৌম্বক পদার্থগুলোর ভিতরে ডাইপোল থাকে। তড়িৎক্ষেত্র প্রবাহিত করে যেগুলোর পোলারিটি ঘুরিয়ে দেয়া যায়। এরকম ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঘনকাকৃতির চৌম্বক পদার্থ (যেমন: হার্ডডিস্কে ব্যবহৃত কোবাল্ট ভিত্তিক সংকর ধাতু)-কে যদি পাশাপাশি সাজানো যায় তাহলেও বাইনারী ডিজিট সংরক্ষণ করা যাবে। সেক্ষেত্রে ধরুন: ‘>’-কে ‘এক’ এবং ‘<’ কে ‘শূণ্য’ ধরা হলো। সেক্ষেত্রে, ‘A’ লিখলে হার্ডডিস্কে তা ‘<><<<<<>’ এভাবে সংরক্ষিত থাকবে।
চিত্রে হার্ডডিস্কের কোবাল্ট বেজ্ড্ ম্যাগনেটিক অ্যালয় দিয়ে কীভাবে বাইনারী তথ্য রেকর্ড করা এবং পড়া হয় তা দেখা যাচ্ছে।
যাই হোক, এবার লক্ষ্য করুন, হার্ডডিস্কে কিংবা র্যামে আমরা ডাটা সংরক্ষণ করতে পারছি কারণ ডাটা সংরক্ষণের ক্ষুদ্র অংশগুলো পরস্পরের সাথে সুনিদিষ্ট আকর্ষণে আবদ্ধ নয়। স্পষ্টতই, হার্ডডিস্কের উপর দিয়ে যদি কোন র্যাণ্ডম ম্যাগনেটিক ঝড় বয়ে যায় সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য সংরক্ষণ হবে না। আবার, র্যাণ্ডম প্রক্রিয়ায় যদি একটি বিট পরিবর্তন হয়ে যায়, গুছানো তথ্য ধ্বংস হবে এবং একটি নির্দিষ্ট সংক্ষিপ্ত সীমার বাইরে অর্থবহ তথ্য যুক্ত হবে না।
এবার চলুন আমরা এরকম আরও মজার একটি বর্ণমালা নিয়ে কথা বলি। হ্যাঁ, তা আর কিছু নয় জীবজগতের গাঠনিক ব্লুপ্রিন্ট সংরক্ষণকারী বর্ণমালা- ‘ডিএনএ’।
ডিএনএ-র বর্ণমালায় বর্ণ মাত্র চারটি এবং কোন যতি চিহ্ন নেই। এডেনিন (A), থায়ামিন (T), গুয়ানিন (G) এবং সাইটোসিন (C)। এই চারটি অণু এমন যে, এগুলো পরস্পর পাশাপাশি ফসফেট বন্ধনে যুক্ত হয়। কিন্তু, এই বন্ধনে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে তাদের পারস্পরিক স্পেসিফিক এফিনিটি কাজ করে না। স্পেসিফিক এফিনিটি কাজ করলে ডাটা সংরক্ষণ করা যায় না, উপরে আমরা তা দেখেছি। লক্ষ্যণীয় যে, উপরোক্ত প্রতিটি অনুকে বলে নাইট্রোজেন বেজ। উক্ত নাইট্রোজেন বেজগুলো ডিঅক্সিজেনেটেড রাইবোজ-এর সাথে সংযুক্ত থাকে, যাদেরকে বলে নিউক্লিওসাইড। প্রতিটি নিউক্লিওসাইডের রাইবোজ সুগারে ফসফেট যুক্ত হলে গঠিত হয় নিউক্লিওটাইড। মূলত এই নিউক্লিওটাইড-ই হলো ডি-অক্সিরাইবো-নিউক্লিইক-এসিড তথা ডিএনএ-র গাঠনিক একক। অর্থাৎ, এরকম একেকটি নিউক্লিওটাইড অণু পাশাপাশি যুক্ত হয়ে যে পলিনিউক্লিওটাইড চেইন গঠন করে তাকেই বলে ডিএনএ।
আমরা চিত্রটির ডানদিকে ডিএনএ ডাবল হেলিক্স-এর অংশ দেখতে পাচ্ছি। বামদিকে দেখানো হয়েছে যে, ডিএনএ-তে কীভাবে নিউক্লিওটাইডগুলো পরস্পরের সাথে সংযুক্ত হয়। লক্ষ্যণীয়, ডাবল হেলিক্স গঠনের ক্ষেত্রে পাশাপাশি দুটো চেইনের একটির A অপরটির T এর সাথে এবং একটির C অপরটির G এর সাথে ও ভাইস ভারসা হাইড্রোজেন বন্ধন দিয়ে যুক্ত হয়।
প্রশ্ন হলো, ATGC বর্ণগুলোকে তো বিভিন্ন ভাবে সাজানো যেতে পারে, সেক্ষেত্রে আমরা তথ্য সংরক্ষণের একক হিসেবে কোনটি ঠিক করবো? এটি নির্ভর করছে আমি কী ধরণের তথ্য সংরক্ষণ করতে চাই এবং কী ধরণের ‘সংকেত’ চিহ্নিত করতে চাই তার উপর। উপরের কম্পিউটারের উদাহরণে আমরা দেখেছি, বাইনারী ডিজিটে বর্ণ দুটি, ‘০’ এবং ‘১’। আমি যদি দুটি নিয়ে একক করি তাহলে সাজানো যাবে এইভাবে: ০০,০১,১০,১১; তিনটি করে নিলে: ০০০,০০১,০১০,০১১,১০০,১০১,১১০,১১১; অর্থাৎ খুব বেশী সংকেত চিহ্নিত করা যাবে না। অন্যদিকে, আমি যেহেতু অনেকগুলো পৃথক নির্দেশনা বা অক্ষর চিহ্নিত করতে চাচ্ছি, সেহেতু ‘একক’টি এমন হলে ভাল হয় যে বেশী বড়ও না আবার এমন ছোটও না যে সবগুলো সংকেত সংরক্ষণ করা যাবে না। এ হিসেবে কম্পিউটারের একক হলো ‘০০০০০০০০’ তথা ‘৮’ বিট।
ডিএনএ-র ক্ষেত্রে আমার সংকেতগুলো হলো অ্যামাইনো এসিড। যদিও প্রকৃতিতে অনেক অ্যামাইনো এসিড আছে, আমি বিশটির বেশী ব্যবহার করবো না। এখন, ATGC থেকে যদি দুটো করে বর্ণ নিই, তাহলে মাত্র ষোল ভাবে সাজানো যায়: AA,AT,AG,AC,TA,TT,TG,TC,GA,GT,GG,GC,CA,CT,CG এবং CC। অর্থাৎ বিশটি অ্যামাইনো এসিডকে নির্দেশিত করতে পারছি না। চারটি করে নিলে সাজানো যাবে ২৫৬ ভাবে। এত বেশী একক আমার প্রয়োজন পড়ছে না। তদুপরি, চারটি করে সাজালে আমার জায়গা বেশী লেগে যাচ্ছে। কিন্তু, তিনটি করে নিলে ৬৪ উপায়ে সাজানো যায়। এ প্রক্রিয়ায় ২০টি অ্যামাইনো এসিডকে খুব সহজেই চিহ্নায়িত করা যাচ্ছে। এছাড়াও, অনেকগুলো অ্যামাইনো এসিডকে আমি একাধিক ‘কোডন’ দিয়ে চিহ্নিত করতে পারছি। (লক্ষ্যণীয়, ডিএনএ-তে ৩টি অক্ষরের এই একককে কোডন বলে)।
প্রশ্ন হলো, আমি একটি অ্যামাইনো এসিডের বিপরীতে কোন্ কোডনকে চিহ্নায়িত করবো? যেমন: GGG কোড করে গ্লাইসিনকে, GAG কোড করে গ্লুটামিক এসিডকে। কিন্তু, GGG এলানিনকে কোড না করে গ্লাইসিনকে কোড করবে এটা কেন নির্ধারণ করবো? ওয়েল, এক্ষেত্রে আমার পরিকল্পনা হবে কোষ বিভাজন হওয়াকালীন ডিএনএ কপি করার সময় যদি র্যাণ্ডমলি একটি অক্ষর পরিবর্তন হয়ে যায় (মিউটেশন) সেক্ষেত্রে অ্যামাইনো এসিড যেন পরিবর্তন না হয় (সাইলেন্ট মিউটেশন)। আবার, বিশ ধরণের অ্যামাইনো এসিডে কতগুলো পোলার, কতগুলো নন-পোলার, কতগুলো এসিডিক এবং কতগুলো বেসিক, কতগুলোতে ‘রিং’ আকৃতির সাইড চেইন আছে কতগুলোতে নেই। প্রোটিনের ত্রিমাত্রিক গঠন নির্মাণ এবং ফাংশন নির্ধারণে এই বিভিন্ন ধরণের অ্যামাইনো এসিডগুলোর সুনির্দিষ্ট গাঠনিক ও রাসায়নিক ভূমিকা আছে। এ কারণে আমি চেষ্টা করবো কোডনগুলো এমনভাবে নির্ধারণ করতে যেন মিউটেশনের কারণে যদি অ্যামাইনো এসিড পরিবর্তন হয়েও যায়, তথাপি যেন একই ধরণের অন্য একটি এমাইনো এসিডে পরিবর্তন হয়। মজার বিষয় হলো, জীবজগতে যে কোডন পাওয়া গেছে তা এই ধরণের বৈশিষ্ট্যগুলোকে মাথায় রেখে নির্ধারণ করা হয়েছে। তদুপরি, জীবজগতের প্রায় সকল ক্ষেত্রেই এই কোডনের নীতিমালা সুনির্দিষ্ট অর্থাৎ ইউনিভার্সাল। কারণটা খুব সহজ- একাধিক ভাষা ব্যবহার করার চেয়ে একটি ভাষা ব্যবহার করাই সুবিধাজনক।
উপরে আমরা ইউনিভার্সাল জেনেটিক কোডের চার্ট দেখতে পাচ্ছি। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, কোডন সিস্টেমটি এমনভাবে সিলেক্ট করা হয়েছে যেন মিউটেশনের ইফেক্ট সর্বোচ্চ মিনিমাইজ করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, ফিনাইল এলানিনকে (Phe) কোড করে UUU এবং UUC। অর্থাৎ UUU মিউটেশন হয়ে UUC হয়ে গেলেও এমাইনো এসিড একই থাকবে। আবার, যদি UUU পরিবর্তন হয়ে UAU হয়ে যায় তাহলে ফিনাইল এলানিন পরিবর্তন হয়ে টাইরোসিন (Tyr) হবে, যা কাছাকাছি গঠনযুক্ত। কিংবা, যদি CUU হয়ে যায় সেক্ষেত্রে হচ্ছে লিউসিন (Leu)। এটিও ত্রিমাত্রিক গঠনের দিক দিয়ে ফিনাইল এলানিনের কাছাকাছি।
এই যে একটি কোডনের সাথে একটি অ্যামাইনো এসিডকে আমি ‘অ্যাসাইন’ করছি, তা কি র্যাণ্ডমলি একা একা হতে পারবে? যে কোন সচেতন পাঠকের কাছে পরিস্কার যে তা সম্ভব নয়। প্রকৃতপক্ষে, একটি বিষয়ের সাথে আরেকটি বিষয়কে এসাইন বা সম্পর্কযুক্ত করার তথা একটি বিষয়ে আরেকটি বিষয়ের অর্থ নির্ধারণ করে দেয়া ‘বুদ্ধিমান’ স্বত্তার কাজ। কোন অন্ধ প্রক্রিয়ায় তা কখনও হয় না। এর মধ্যে আবার তা যদি হয় ‘অপটিমাম’ বা ‘বেস্ট’ কোডন নির্ণয় করা, তাহলে তো আরও সম্ভব নয়।
এছাড়াও, এই বর্ণগুলো যদি পরস্পরের সাথে স্পেসিফিক এফিনিটি দেখাতো তাহলেও তথ্য সংরক্ষণ করা সম্ভব হতো না। অর্থাৎ, A কেবল G-এর পাশে বসতে পারবে, C কেবল T-এর পাশে বসতে পারবে, অণুগুলোর রাসায়নিক আসক্তি এমন হলে তা কোন অ্যামাইনো এসিডকে কোড করতে পারতো না।
এবারে আসি প্রোটিনের কথায়। প্রোটিনকেও আরেক ধরণের ভাষা বলা যায় যার বর্ণমালায় বর্ণ আছে ২০টি। পোলারিটি, অম্ল-ক্ষার বৈশিষ্ট্য, বেনজিন রিং-এর উপস্থিতি ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যের আলোকে প্রতিটি অ্যামাইনো এসিড বর্ণ বিভিন্ন অর্থ ধারণ করে। আর এই বৈশিষ্ট্যকে কাজে লাগিয়ে তৈরী হয় একেকটি বাক্য তথা অ্যামাইনো এসিডের সরলরৈখিক সিকোয়েন্স। একে আবার প্রোটিনের প্রাইমারী স্ট্রাকচার বলা হয়। উক্ত সিকোয়েন্স, অ্যামাইনো এসিডের বিভিন্ন মাত্রার কেমিক্যাল এফিনিটির উপর ভিত্তি করে আলফা হেলিক্স, বিটা শিট ইত্যাদি বিশেষায়িত গঠন তৈরী করার মধ্য দিয়ে প্রোটিনের সেকেণ্ডারী স্ট্রাকচার তৈরী করে। এরপর, নির্দিষ্ট আকৃতিতে ভাঁজ (ফোল্ড) হয়ে তৈরী করে সুনির্দিষ্ট ত্রিমাত্রিক গঠন বা টারসিয়ারী স্ট্রাকচার। এ রকম দুটো বা ততোধিক প্রোটিন সমন্বয়ে তৈরী হয় কোয়ার্টারনারী স্ট্রাকচার। এনজাইমগুলো সাধারণত একটি প্রোটিন দিয়ে গঠিত হয়, আর বিভিন্ন গাঠনিক কাঠামো যেমন: আয়ন চ্যানেল তৈরী হয় একাধিক প্রোটিনের সমন্বয়ে।
ইলাস্ট্রেশনটিতে আমরা দেখতে পাচ্ছি জীবজগতে প্রাপ্ত ২১ ধরণের এমাইনো এসিড। তন্মধ্যে, সেলেনোসিস্টিন অল্প কিছু বিশেষায়িত প্রোটিনে পাওয়া যায় বিধায় সাধারণভাবে প্রোটিনের গাঠনিক একক পড়ার সময় এর উল্লেখ দেখা যায় না।
লক্ষ্যণীয়, কম্পিউটারের ভাষার ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি বাইনারী ভাষা দিয়ে ইংরেজী ভাষা সংরক্ষণ করা হয়। অন্যকথায়, একটি ভাষা দিয়ে আরেকটি ভাষা সংরক্ষণ করা যায়। তেমনি প্রোটিনের ভাষাকে সংরক্ষণ করে ডিএনএ-র ভাষা। আরও লক্ষ্যনীয়, প্রোটিনের ভাষায় বর্ণ ২০টি হওয়ায় এবং উক্ত বর্ণগুলোর আণবিক বৈশিষ্ট্য বিভিন্ন হওয়ায় ভাব প্রকাশের সীমানা অনেক বেড়ে গেলো। অর্থাৎ প্রোটিনের ২০টি অণু দিয়ে অনেক বৈচিত্রপূর্ণ ত্রিমাত্রিক গঠন সম্ভব। ফলে, প্রোটিন এনজাইম থেকে শুরু করে কোষের বিভিন্ন গাঠনিক উপাদান তৈরীতে ভূমিকা রাখে। কিন্তু, ডিএনএ-র বর্ণমালার বর্ণের আণবিক বৈশিষ্ট্য ও সংখ্যা সীমিত হওয়ায় ডিএনএ বৈচিত্রপূর্ণ ত্রিমাত্রিক গঠন তৈরী করতে পারে না।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে কীভাবে অ্যামাইনো এসিডগুলো একটার পাশে আরেকটা যুক্ত হয়ে চূড়ান্ত ত্রিমাত্রিক প্রোটিন তৈরী করে। বিষয়টি যত সহজ শুনতে ততটাই কঠিন বাস্তবে, কী বলেন?
আমরা জানি, ডিএনএ-তে দুটি পলিনিউক্লিওটাইড চেইন পাশাপাশি থেকে প্যাঁচানো মই-এর মত গঠন তৈরী করে, যাকে ইংরেজীতে বলে ডাবল হেলিক্স। ডিএনএ থেকে প্রোটিন তৈরীর প্রক্রিয়ায় প্রথমে ডিএনএ থেকে সম্পূরক ম্যাসেঞ্জার আরএনএ তৈরী হয়। এ প্রক্রিয়ায় শুরুতে ডিএনএ ডাবল হেলিক্স এর মধ্যে বন্ধন খুলে একটি চেইনকে পড়ার জন্য উন্মুক্ত করতে হয়। এ প্রক্রিয়াটি করে একটি বিশেষায়িত প্রোটিন তথা এনজাইম। এরপর আরেকটি বিশেষায়িত এনজাইম এসে উক্ত চেইনকে পড়ে সম্পূরক আরএনএ চেইন তৈরী করে। অতঃপর, একটি এনজাইম লাগে উন্মুক্ত করা অংশ পুনরায় জোড়া লাগাতে, একটি এনজাইম লাগে প্রুফ রিড করতে, দুটি লাগে জোড়া লাগানোর সময় বেশী পেঁচিয়ে গেলে প্যাঁচ খুলতে। প্রসঙ্গত, আরএনএ-এর সাথে ডিএনএ-র পার্থক্য হল- আরএনএ-এর নিউক্লিওটাইডে তথা আরএনএ-র বর্ণমালার অক্ষরগুলোতে একটি অক্সিজেন অণু বেশী থাকে এবং আরএনএ-তে থাইমিনের (T) পরিবর্তে ইউরাসিল (U) থাকে। প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক যে, তথ্য পরিবহন করে নেয়ার জন্য ডিএনএ-র পরিবর্তে আরএনএ-কে কেন বাছাই করা দরকার হলো? একটি উত্তর হলো, যে পদ্ধতিটির মধ্যে আমি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রাখতে চাই স্বাভাবিক ভাবেই তাকে আমি আলাদাভাবে সংরক্ষণ করতে চাইব। তদুপরি, আরএনএ-র আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো এটি ডিএনএ-র চেয়ে একটু বেশী বৈচিত্রের গঠন তৈরী করতে পারে।
এক নজরে ডিএনএ থেকে প্রোটিন সংশ্লেষ পদ্ধতি। ছবিটিতে সংশ্লেষের কাজে অংশগ্রহণকারী এনজাইমগুলোকে দেখানো হয়নি।
এরপর, ম্যাসেঞ্জার আরএনএ থেকে রাইবোজোম নামক আণবিক মেশিনের সহায়তায় প্রোটিন সংশ্লেষ হয়। রাইবোজোম নামক মেশিনটি তৈরী হয় রাইবোজোমাল আরএনএ ও অনেকগুলো প্রোটিনের সমন্বয়ে। প্রোটিন তৈরীর প্রক্রিয়ায় আর এক ধরণের আরএনএ সাহায্য করে- ট্রান্সফার আরএনএ বা টি-আরএনএ । এদের কাজ হলো রাইবোজোমের কাছে অ্যামাইনো এসিড বহন করে নিয়ে যাওয়া। বিশটি অ্যামাইনো এসিডের জন্য এরকম বিশ ধরণের সুনির্দিষ্ট ট্রান্সফার আরএনএ থাকে। আবার, প্রত্যেক ধরণের টি-আরএনএ-র সাথে তৎসংশ্লিষ্ট অ্যামাইনো এসিড সংযুক্ত করার জন্য বিশটি সুনির্দিষ্ট ও পৃথক এনজাইম (অ্যামাইনো এসাইল ট্রান্সফারেজ) থাকে। এছাড়াও, রাইবোজোমে দুটো পাশাপাশি অ্যামাইনো এসিডের বন্ধন তৈরী করার জন্য কাজ করে আলাদা এনজাইম।
উপরের বর্ণনা থেকে লক্ষ্যণীয়, ডিএনএ-তে প্রোটিন তৈরী তথ্য ধারণ করা থাকে। আবার, উক্ত তথ্যকে কাজে লাগিয়ে প্রোটিন তৈরী করার জন্য দরকার অনেকগুলো আরএনএ এবং সুনির্দিষ্ট প্রোটিন (এনজাইম)। যদি প্রশ্ন করা হয়, কীভাবে আদিম পরিবেশে কোষের উদ্ভব হল? স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন চলে আসে, কোন্টা আগে আসলো- ডিএনএ নাকি প্রোটিন নাকি আরএনএ? আমরা দেখছি তিনটি জিনিস একসাথে ও পরস্পরজড়িতভাবে উদ্ভব না হলে এই সিস্টেমটি চালুই হচ্ছে না। ইনটুইটিভলি, কোন প্রকার র্যাণ্ডম অনিয়ন্ত্রিত প্রক্রিয়ায় তা সম্ভব নয়।
প্রোটিন (তথা এনজাইম) আগে আসবে? রিডিং টেমপ্লেট (অর্থাৎ ডিএনএ) না থাকলে প্রোটিন কাজ করবে কার উপর? তদুপরী, ১৫০টি অ্যামাইনো এসিড দিয়ে নির্মিত একটি মাঝারি সাইজের সুনির্দিষ্ট প্রোটিন আসাও গাণিতিকভাবে অসম্ভব একটি ব্যাপার। ডগলাস এক্স-এর হিসেবে অনুযায়ী এর সম্ভাব্যতা ১০১৬৪। [১] অন্যদিকে, বিল ডেম্বস্কি দেখিয়েছেন বিশ্বজনীন সম্ভাব্যতার সীমা ১০১৫০। [২] অর্থাৎ, যে কোন র্যাণ্ডম ঘটনা এই সীমাকে ছাড়িয়ে গেলে আমাদের মহাবিশ্বে তা ঘটার সম্ভাবনা নেই। একটি মাঝারি সাইজের প্রোটিনের এই অবস্থা। অথচ, আরএনএ পলিমারেজ এনজাইম ১০০০-এর বেশী অ্যামাইনো এসিড যুক্ত তিনটি প্রোটিনের সমন্বয়ে গঠিত হয়।
ডিএনএ আগে আসবে? ডিএনএ থেকে তথ্য পড়বে কে? যদি ডিএনএ অণু এমন কোন গঠন তৈরী করতে সক্ষম হত যা এনজাইমের মত কাজ করে তাহলেও চিন্তা করার সুযোগ থাকতো। কিন্তু, আমরা আগেই বলেছি ডিএনএ বৈচিত্রপূর্ণ গঠন তৈরী করতে পারে না। সুতরাং বাকী রইল আরএনএ। আরএনএ কি কেমিকেল এভল্যুশন তথা এবায়োজেনেসিসকে উদ্ধার করতে পারবে?
বিজ্ঞানীরা ল্যাবরেটরীতে এমন এক ধরণের আরএনএ সংশ্লেষ করতে পেরেছেন যা নিয়ন্ত্রিত ও সুনির্দিষ্ট পরিবেশে এনজাইম হিসেবে কাজ কোরে আরএনএ পলিমারাইজেশনেকে প্রভাবিত করতে পারে। অর্থাৎ, একটি সম্পূরক আরএনএ টেমপ্লেট-এর বিপরীতে নিউক্লিওটাইড (A এর বিপরীতে U, U এর বিপরীতে A, G এর বিপরীতে C, এবং C এর বিপরীতে G) যোগ করার মাধ্যমে নিজের একটি কপি তৈরী করতে পারে। এই বিশেষ ধরণের আরএনএকে বলে রাইবোজাইম। এর মাধ্যমে তারা বলতে চাচ্ছেন যে, আদিম পরিবেশে এ ধরণের একটি রাইবোজাইম আসার মাধ্যমে সেল্ফ-রেপ্লিকেশনের সূচনা হয়েছে এবং পরবর্তীতে ‘কোন একটি উপায়ে’ কোষের উপরোক্ত বর্ণিত বিষয়গুলো আবির্ভাব হয়েছে! যেকেউ একটু মাথা খাটালেই বুঝবে এ ধরণের চিন্তা কতখানি অ্যাবসার্ড! কিন্তু কেন?
এক, পৃথিবীর আদিম পরিবেশ ল্যাবরেটরীর মত নিয়ন্ত্রিত ছিলো না।
দুই, ‘রাইবোজাইম নিজের একটি কপি তৈরী করতে পারে’ এই অবস্থা থেকে ‘আরএনএ প্রোটিনের তথ্য ধারণ করে এবং তা প্রোটিন সংশ্লেষ করে’ এই অবস্থায় যাওয়ার কোন পথ নেই। কারণ, উপরে আমরা ডিএনএ-র ক্ষেত্রে যে রকম বলেছি ঠিক তেমনি কোন্ কোডনটি কোন্ অ্যামাইনো এসিডের জন্য নির্ধারিত হবে সেটি নির্বাচন করা একটি বুদ্ধিমান ‘মাইণ্ড’-এর কাজ। তদুপরি, যদি অপটিমাম ইউনিভার্সাল কোডনের জন্য র্যাণ্ডম অনুসন্ধান করা সম্ভবও হতো, সেক্ষেত্রে প্রতি সেকেণ্ডে ১০৫৫টি অনুসন্ধান চালাতে হতো। কিন্তু, বায়োফিজিসিস্ট হার্বাট ইওকি হিসেব করে দেখিয়েছেন র্যাণ্ডম অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় ১.৪০ x ১০৭০টি সম্ভাব্য কোডনের মধ্যে উক্ত অপটিমাম কোডন সিস্টেমকে খুঁজে বের করতে হবে এবং হাতে সময় পাওয়া যাবে ৬.৩ x ১০১৫ সেকেণ্ড। [৩] এছাড়াও, রাইবোজোমে যে প্রোটিন সিনথেসিস হয় তাতে অনেকগুলো সুনির্দিষ্ট প্রোটিন ও আর-আরএনএ-র নির্দিষ্ট অবস্থানগত ও তড়িৎ-রাসায়নিক ভূমিকা আছে। অথচ, আরএনএ প্রোটিনগুলোর মত বিভিন্ন ধরণের স্ট্রাকচার গঠন করতে পারে না। কারণ, আরএনএ-র বর্ণ সংখ্যা সীমিত এবং বর্ণের কেমিক্যাল স্ট্রাকচারও অ্যামাইনো এসিডের ন্যায় বৈচিত্রপূর্ণ নয়।
তিন, রাইবোজাইম নিজের কপি করতে পারে তখনই যখন তার সম্পূরক একটি টেমপ্লেট থাকে। অর্থাৎ, আদিম পরিবেশে সেল্ফ রেপ্লিকেটিং রাইবোজাইম আসতে হলে রাইবোজাইম ও তার সম্পূরক টেমপ্লেট দুটো অণুরই একসাথে আসতে হবে। জনসন ও তার সহকর্মীরা দেখিয়েছেন যে, আংশিকভাবে নিজের কপি তৈরী করতে পারে এরকম একটি রাইবোজাইমের নিউক্লিওটাইডের সংখ্যা ১৮৯। সুতরাং, উক্ত স্পেসিফিক রাইবোজাইম এবং তৎসংশ্লিষ্ট সম্পূরক ও সুনির্দিষ্ট টেমপ্লেট-এর একসাথে আসার সম্ভাব্যতা ৪১৮৯ x ৪১৮৯ তথা ৪(১৮৯+১৮৯=৩৭৮) তথা প্রায় ১০২৭৭, যা বিশ্বজনীন সম্ভাব্যতার সীমা ১০১৫০ কে ছাড়িয়ে যায় (অর্থাৎ, অসম্ভব)। অথচ, পুরোপুরি কপি করতে পারে এরকম একটি রাইবোজাইমে নিউক্লিওটাইড সংখ্যা লাগবে আরও বেশী। অন্যদিকে, অর্গেল ও জয়েস দেখিয়েছেন যে, এরকম দুটি আরএনএ খুজে পাওয়ার জন্য ১০৪৮ টি অণু খুঁজতে হবে যা পৃথিবীর মোট ভরকে অতিক্রম করে যায়। [৪] অর্থাৎ, আমরা দেখতে পেলাম আরএনএ এবায়োজেনেসিসকে উদ্ধার করতে কোন অবস্থাতেই সক্ষম নয়।
উপরের দীর্ঘ আলোচনার মধ্য দিয়ে আমরা তথ্য প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম ভাষার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানতে পারলাম। ভাষার ব্যবহারে ইন্টেলিজেন্স-এর গুরুত্ব সম্পর্কে অভহিত হলাম। জীবজগতের ভাষার সৌষ্ঠব, বৈচিত্র ও সৌন্দর্যকে উপলব্ধি করতে সক্ষম হলাম। পরিশেষে, এ সিদ্ধান্তে এসে উপনীত হলাম যে, কোন প্রকার অন্ধ, র্যাণ্ডম, অনিয়ন্ত্রিত, বস্তুগত ও প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় জীবজগতের ভাষার আগমন অসম্ভব এবং জীবজগতের ভাষার আগমন ঘটাতে দরকার একজন বুদ্ধিমান স্বত্তার কার্যক্রম।
রেফারেন্স: ১. Meyer SC. Signature in the Cell. HarperCollins Publisher Inc. 2009; Page: 172
২. Dembsky WA. The Design Inference. Cambridge University Press. 1998; Page: 209
৩. Rana F. The Cell’s Design. Baker Books. 2009; Page: 175
৪. Stephen C. Meyer. Signature in the Cell. HaperCollins Publisher Inc. 2009; Page: 250