Category: প্রবন্ধ/Article

  • বোনদের প্রতি একটি আহবান

    বোন আমার,

    যখন কোন প্রকৃত মুসলিম ছেলে আপনার দিকে তাকায় না তখন ভাববেন না যে আপনাকে সুন্দর দেখাচ্ছে না বলে তাকাচ্ছে না, সে তাকাচ্ছে না কারন সে আল্লাহকে ভয় পায়।

    হয়ত কখনও আপনার দিকে চোখ পড়ে যায়, সে চেষ্টা করে নিজেকে বিরত রাখতে, চোখকে ফিরিয়ে নিতে। কারণ সে আল্লাহ কে ভয় পায়।

    কিন্তু আপনি হয়ত জানেনা না যে একজন সুন্দরী মেয়ের দিক থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়াটা তার জন্য কতটা কষ্টসাধ্য। সে তো ফেরেশতা নয় যে শুধু ভাল কাজই করতে পারবে। আল্লাহ তাকে আপনার চেয়ে অনেকগুন বেশী টেস্টোস্টেরণ দিয়েছেন, তাকে টেস্টোস্টেরণ তৈরীর অঙ্গই দিয়ে দিয়েছেন,  যা এই ইমোশনাল ড্রাইভকে প্রভাবিত করে। এ কারণে আল্লাহর এই হুকুম পালন করতে গিয়ে সে একটা মানসিক যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। একজন নারীর অসমতল দেহ চোখে পড়লে, তার মস্তিস্কের অবচেতন অংশ চেষ্টা করে তার সচেতন মস্তিস্কের উপর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিতে। মনের অজান্তেই চোখ তার (নারীর) দিকে চলে যেতে চায়। তবু সে (প্রকৃত মুসলিম ছেলে) অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যায় যেন তার চোখকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং মনে মনে আশা পোষণ করতে থাকে যে একদিন আল্লাহ মনোনীত পন্থা বিয়ের মাধ্যমেই সে তার চোখকে শীতল করতে পারবে, তার অবচেতন মনকে সচেতন কিন্তু নিয়ন্ত্রিত ভাবে প্রশমিত করতে দিতে পারবে।

    বোন আমার,

    আপনি হয়ত ভাবছেন আপনি কি পোষাক পড়বেন, আপনি পর্দা করবেন কি করবেন না সেটা নিয়ে ছেলেদের এত মাথা ব্যাথা কেন? উপরে আমি যে বললাম উক্ত মুসলিম ছেলেটি একটি মানসিক যুদ্ধে থাকে। এই যুদ্ধে তাকে অবিরাম জয় পরাজয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। জয়ী হলে সে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে, পরাজিত হলে অনুশোচনা তাকে কুরে খায়। (লক্ষ্যনীয়, আপনার টেস্টোস্টেরণ কম থাকায় আপনার কিন্তু এরুপ কোন যুদ্ধের মধ্য দিয়ে যেতে হয় না) অধিকন্তু এদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা বিয়ে করার মাধ্যমে তার মনকে প্রশমিত করার পদ্ধতি গ্রহন করেনি। অথচ আপনি যদি এমন পোষাক পরিধান করেন যা আপনার অসমতল শরীরকে  সমতল ও অনাকর্ষণীয় করে দেয় তখন তার জন্য এই মানসিক যুদ্ধের মধ্য দিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন কমে যায়। (আর আল্লাহ নির্ধারিত পদ্ধতিতে পোষাক পরিধান করে আল্লাহর সন্তষ্টি অর্জনের ব্যাপারটাতো আছেই)। আপনি লক্ষ্য করে দেখবেন, সেই সকল ছেলেরাই আপনার পর্দার ব্যপারে সচেতন করতে চায় যারা সবসময় আল্লাহর হুকুম মেনে চলতে চেষ্টা করে। যারা আপনার দিকে তাকিয়ে নিজের মনের আকাঙ্খা নিবৃত্ত করে তারা কিন্তু আপনাকে এই ব্যাপারে বলে না।

    বোন আমার,

    একজন মুসলিম ছেলে যদি নিজের ও তার বোনের কল্যানের জন্য পর্দার কথা বলে তার বোনকে কষ্ট দিয়ে থাকে তবে সেই সকল ভাইদের পক্ষ থেকে আমরা ক্ষমাপ্রার্থী। অথচ এই ছেলেদেরকেই আপনার প্রয়োজনের সময় দেখবেন আপনার সঙ্গে কথা বলছে সম্মান রেখে। এই ছেলেটিকেই আপনার নিরাপত্তার জন্য সবার আগে স্বর উচ্চৈ: করতে দেখবেন।

    বোন আমার,

    ফেসবুকে বসে অবৈধ কথোপকথন, আড্ডায় বসে অপ্রয়োজনীয় হাসাহাসি, প্রেমের নামে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন থেকে বিরত থাকতে এই যুবকেরা আপনাদের সহযোগিতা কামনা করছে। আপনাদের সুন্দর সৌষ্ঠব নয়, আপনাদের ব্যাক্তিত্বকে সাথে নিয়ে তারা আল্লাহর সন্তুষ্টির দিকে মার্চ করতে চাইছে। আপনারা কি পারবেন না আপনাদের এই বিশ্বাসী বন্ধুদের কে আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে সহযোগিতা করতে?  

    “বিশ্বাসী পুরুষ ও বিশ্বাসী নারী একে অপরের বন্ধু। তারা ভাল কাজের নির্দেশ দেয় এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে, তারা সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আনুগত্য করে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের। এদেরই উপর আল্লাহ রহমত বর্ষণ করবেন।” (আত-তওবা ৯:৭১)

  • কোষ সৃষ্টির ‘মুক্তমনা’ পদ্ধতি

    গাছ থেকে একা একা কাঠ হয়ে নৌকা হয়ে যাওয়ার উদাহরণ অথবা লোহার স্তুপের মধ্যে দিয়ে টর্ণেডো যাওয়ার ফলে বোয়িং বিমান হয়ে যাওয়ার উদাহরণ দেয়া হলেই মুক্ত(!)মনারা বলতে শুরু করেন যে এই উদাহরণ জীবিত কোষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

    লক্ষ্যণীয়, এখানে তারা ভাষার খেলা খেলছে। জীবিত কোষ বলতে তারা তাহলে কী বুঝায়? তাহলে কি তারা কোষের মধ্যে কোন আত্মার অস্তিত্ব স্বীকার করছে? অথচ এ ব্যাপারটি তারা কখনই স্বীকার করবে না। তারা বলবে কোষ একটি মলিকিউলার ফ্যাক্টরি আর প্রাণ হল কেমিকাল প্রসেস। এটাই হল ভাষার খেলা কিংবা পিছলানো স্বভাব, যা-ই বলেন। অর্থাৎ একদিকে বলছে বোয়িং ফ্যালাসি অন্যদিকে জীবিত কোষ বলতে তারা কী বুঝায় সে সম্পর্কে একটা ধাঁধার মধ্যে রাখার চেষ্টা করছে।

    অথচ, যদি কোষকে একটি মলিকিওলার ফ্যাক্টরি বিবেচনা করা হয় সেক্ষেত্রেতো সমস্যাটি আরও প্রকট হয়ে পড়ছে। কারণ, একটি ব্যাকটেরিয়া কোষকেও যদি উদাহরণ হিসেবে নিই, কোষের মধ্যে আছে DNA যা কোষের এনজাইম সমুহের Blue Print ধারণ করে। আছে RNA, যা DNA থেকে তথ্য উদ্ধার করে তাকে নিয়ে রাইবোজমের মাধ্যমে এনজাইম সংশ্লেষ করে। আছে অক্সিডেটিভ ফসফরাইলেশন(সাইটোক্রোম সিস্টেম) যা কেমিকেল প্রসেস বজায় রাখার শক্তি সরবরাহ করে ATP তৈরীর মাধ্যমে। এখানে আমি এই যে বললাম DNA করে, RNA করে, সাইটোক্রোম করে, তাহলে কি এদের বুদ্ধিমত্তা আছে? না, বরং এই পুরো প্রসেসটাই অটোমেটেড। আর DNA হল এমন একটা জায়গা যেখানে এনজাইম এর তথ্য প্রোগ্রামিং করে রাখা হয়েছে তথা পরোক্ষভাবে কেমিকেল প্রসেসগুলোকে প্রোগ্রাম করে রাখা হয়েছে। তথাপি তাদের মতে এই কোষ তথা হাইলি প্রোগ্রামড মলিকিউলার মেশিন নাকি প্রিবায়োটিক স্যুপ-এ বাই চান্স তৈরী হয়ে গেছে। আজব ব্যাপার?

    তাদের যুক্তিটা অনেকটা এরকম যে, গাছ থেকে বাই চান্স নৌকা তৈরী হওয়া সম্ভব না কারণ এটা জড়; তবে সিলিকন গুড়া থেকে বাই চান্স মোবাইল তৈরী হওয়া সম্ভব কারণ এটা জীবিত। যদিও মোবাইলের analogy দিয়ে কোষকে একটু বেশী সরলিকৃত করে ফেললাম। তবুও উদাহরণটা দিলাম এই জন্য যে মোবাইলে একটা হার্ডওয়ার আছে এবং এটার মধ্যে কিছু প্রোগ্রামিংও করা আছে। মোবাইলে কমান্ড দিলে যেমন সে ফলো করে (অর্থাৎ এক অর্থে জীবিত ধরে নিলাম!) ঠিক তেমনি ব্যাকটেরিয়া খাদ্য পেলে তাকে সুনির্দিষ্ট কেমিকেল প্রসেসে মেটাবলাইজ করে শক্তি সংগ্রহ করে।

    অর্থাৎ নৌকা বানানোর জন্য বুদ্ধিমান নির্মাতা লাগলেও, কোষের মত একটি অটোমেটেড সফটওয়্যার-বেজড মলিকিওলার মেশিন তৈরী হওয়ার জন্য দরকার ‘মেশিনের মৌলিক উপাদান, সময় এবং চান্স’!!

    এবার, আপনিই বলুন এদের লজিক(?) দেখে হাসব না কাঁদব?

  • তাকদীরের একটি ভিন্ন ধরণের ব্যাখ্যা

    তাকদীরের ধারণা পাওয়ার জন্য সময়ের আপেক্ষিতার ধারণাটা বোঝা দরকার। সময় একটি আপেক্ষিক বিষয়। যেমন ধরুন আমরা এক সেকেন্ড বলতে যে সময়টুকু বুঝি সে সময়টা আপেক্ষিক। কীভাবে?

    মনে করুন আমি আপনার থেকে আলোর বেগের কাছাকাছি বেগে দূরে সরে যাচ্ছি। সেক্ষেত্রে আপেক্ষিতা তত্ত্ব অনুসারে আমি যে টাইম ফ্রেমে থাকব সেটির সময় প্রসারিত হয়ে যাবে। অর্থাৎ আমার এক সেকেন্ডের পরিমাণ আপনার এক সেকেন্ডের পরিমান থেকে বেশী হবে। সুতরাং সময় বিষয়টা অবজারভার এর কন্ডিশনের উপর নির্ভর করে।

    এখন মনে করুন আপনি একটি ভিডিও দেখছেন। ভিডিওটি যদি আপনি স্বাভাবিক গতিতে দেখতে থাকেন, সেক্ষেত্রে আপনার কাছে মনে হবে ভিডিওর ভিতরের গতি আপনার পারিপার্শ্বের জীবনের গতির মতই স্বাভাবিক। কিন্তু আপনি যদি ফাস্ট ফরোয়ার্ড করেন তাহলে দেখবেন ভিডিওটির ভিতরের জীবনের গতি দ্রুত হয়ে গেছে। খেয়াল করুন ভিডিওতে কী হয়? ভিডিওতে আসলে অনেকগুলো স্থির চিত্রকে আপনার সামনে দ্রুত সঞ্চালিত করা হয়। ফলে আপনার মনে হয় যেন ভিডিওটা জীবন্ত।

    এবার আরেকটু গভীর ভাবে চিন্তা করুন। আমাদের এই বাস্তব জীবনটাকে যদি একটি রিয়েলটাইম থ্রি ডাইমেনশনাল ভিডিও ধরা হয়, তাহলে যেটা মনে হবে যে আমাদের জীবন কতগুলো থ্রিডি স্থির চিত্রের সমষ্টি। যেখানে আল্লাহ তাআলা একটির পর একটি ইমেজকে এমন একটি ইন্টারভেলে আমাদের আত্মার সামনে উপস্থাপন করছেন যেন আমাদের কাছে তা চলন্ত মনে হয়।

    যদি এভাবে ধরা হয় তাহলে দেখবেন যে, আল্লাহ তাআলা কীভাবে সবকিছু আগে থেকেই জানেন বা লিখে রেখেছেন তা বুঝা কিছুটা সহজ হয়। কেননা তিনি তাঁর অগ্রীম জ্ঞানের ভিত্তিতে আমাদের জীবনের জন্য প্রযোজ্য সবগুলো ইমেজ সৃষ্টি করলেন এবং একটার পর একটা আমাদের সামনে উপস্থাপন করছেন। এ কারণে আমরা সময়ের গণ্ডিতে আবধ্য। (আল্লাহই ভাল জানেন)

    এখানে লক্ষ্যণীয় যেহেতু তিনি তার অগ্রীম জ্ঞানের ভিত্তিতে জানেন যে আমরা কীভাবে জীবন যাপন করব, তার মানে এই না যে তিনি আমাকে যে স্বাধীনতা দিয়েছেন (পরীক্ষা করার জন্য) সেটা ভঙ্গ হল। কেননা তিনি আমাকে স্বাধীনতা দিলে পরে আমি যে পথ অবলম্বন করব সেটা তাঁর জানা। এবং যেহেতু আমাকে অস্তিত্বশীল করতে হবে সেহেতু সেই আলোকে সবগুলো ইমেজ তৈরী করে আমাদের সামনে উপস্থিত করছেন। (আল্লাহই ভাল জানেন)

    এ বিষয়টি থেকে এটাও বুঝা সহজ হয় যে কীভাবে আল্লাহ সময়ের অধীন নন। আমি উপরে যখন বললাম যে তিনি অগ্রীম জ্ঞানের ভিত্তিতে তৈরী করছেন তখন বুঝতে হবে যে সেটি আমার আপনার সাপেক্ষে অগ্রীম। আল্লাহর সাপেক্ষে অতীত বা ভবিষ্যত বলে কিছু নেই। তিনি সময়ের স্রষ্টা, সময়ের অধীন নন। বর্তমান মহাবিশ্বের অথবা সম্ভাব্য সকল নিয়মের সকল প্রকার মহাবিশ্বের সকল ঘটনাবলী তার সাপেক্ষে ঘটে গেছে। সুতরাং তিনি যখন কোন কিছু সৃষ্টি করতে ইচ্ছে করেন তখন ঐ সৃষ্টিগুলো নিজস্ব সীমাবদ্ধতা ও গণ্ডি সহ তৈরী হয়ে যায় তথা আত্মপ্রকাশ করে। যেমন আমাদের অন্যতম একটি গণ্ডি হচ্ছে সময়।

    তাকদীরের একটি ভিন্ন ধরণের ব্যাখ্যা

    যেহেতু মহাবিশ্বের সৃষ্টির শুরুর সাথে সাথে সময়ের শুরু হয়েছে সেহেতু বিষয়টি আপনি অনেকটা এভাবে চিন্তা করতে পারেন যে, সময়ের ডাইমেনশন সহ মহাবিশ্ব সৃষ্টির প্রাথমিক পর্যায়ে একটি বিন্দু ছিল। এখানে কল্পনা করুন একটি ত্রিভুজ যার চূড়া C উপরের দিকে। ভূমি AB নিচে। ভূমির সমান্তরালে ঠিক মাঝ বরাবর একটি রেখা xy. মনে করি মহাবিশ্বের শুরুর বিন্দুটি হল ত্রিভুজটির চূড়ার বিন্দু। এই বিন্দুতেই তাহলে বর্তমানে মহাবিশ্বের সকল ঘটনাবলি পুঞ্জিভূত আছে। সুতরাং এখানে সময় হবে স্থির। ত্রিভুজের যতই নিচের দিকে যাবেন দেখবেন সকল ঘটনাবলির ‘পরিমাণটা’ ফিক্সড থাকলো, কিন্তু সময়ের তৈরী  হল।( কেননা এখন প্রতিটি ইমেজের মধ্যবর্তী একটা স্থান পার্থক্য তৈরী হল, যেগুলো মূল C বিন্দুতে পুঞ্জিভূত ছিল।)  হতে পারে যে আমরা সময়ের এই এক্সপ্যানডিং ইউনিভার্স এর ঠিক মধ্য রেখায় আছি। অন্য কথায় এই xy লাইনটি বরাবর যখন সময় আসলো তখন আল্লাহ সেই লাইন বরাবর আমাদের জন্য সৃষ্ট থ্রিডি ইমেজ গুলো আমাদের আত্মার সামনে দিচ্ছেন। অন্য কথায় রিয়েলটাইম ঘটনাচক্রের এই ক্ষেত্রের সাথে আমাদের আত্মাকে সংযুক্ত করে দিয়েছেন। অথবা হয়ত AB লাইন বরাবর আমরা আছি। দেখুন এখান থেকে কিন্ত এ বিষয়টা পরিষ্কার যে আল্লাহ তাআলা এই টাইম ফ্রেমের বাইরে। একই সাথে তিনি এই ফ্রেমের সকল ঘটনাবলীর স্রষ্টা।

    আবার এটাও পরিষ্কার যে কেন তিনি যখন ‘হও’ বলেন, তা হয়ে যায়। কেননা সকল ঘটনা তার সামনে ঘটে গেছে। তিনি টাইম ফ্রেমের বাইরে। তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী যে কোন একটি টাইম ও ঘটনা ফ্রেমে অস্তিত্বশীল হতে পারে। (আল্লাহর এই ‘হও’ বলাটা নি:সন্দেহে মানুষের হও বলার মত নয়) আবার আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা যেহেতু কোন কিছু দিয়েই সীমাবদ্ধ নন, সুতরাং তিনি যা সৃষ্টি করেন তা স্বভাবতই তাঁর মুখাপেক্ষী হয়েই জন্মায়। সবকিছুই স্বভাবজাত ভাবেই তার প্রভুর পবিত্রতা ঘোষণা দিতে থাকে। (অর্থাৎ সৃষ্টির সীমাবদ্ধতাই প্রকাশ করতে থাকে যে স্রষ্টা অসীম)

    সুবহানআল্লাহ। আল্লাহ যতটুকু জ্ঞান আমাদের দিয়েছেন তার বাইরে আমাদের কিছুই জানা নাই। আল্লাহই সবকিছু ভাল জানেন।

    “আল্লাহ এমন এক চিরঞ্জীব ও চিরন্তন সত্তা যিনি সমগ্র বিশ্ব-জাহানের দায়িত্বভার বহন করছেন, তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই ৷ তিনি ঘুমান না এবং তন্দ্রাও তাঁকে স্পর্শ করে না ৷ পৃথিবী ও আকাশে যা কিছু আছে সবই তাঁর ৷ কে আছে তাঁর অনুমতি ছাড়া তাঁর কাছে সুপারিশ করবে? যা কিছু মানুষের সামনে আছে তা তিনি জানেন এবং যা কিছু তাদের অগোচরে আছে সে সম্পর্কে তিনি অবগত ৷ তিনি নিজে যে জিনিসের জ্ঞান মানুষকে দিতে চান সেটুকু ছাড়া তাঁর জ্ঞানের কিছুই তারা আয়ত্ব করতে পারে না ৷ তাঁর কর্তৃত্ব আকাশ ও পৃথিবী ব্যাপী ৷ এগুলোর রক্ষণাবেক্ষন তাঁকে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত করে না ৷ মূলত তিনিই এক মহান ও শ্রেষ্ঠ সত্তা ৷” (সুরা বাকারা: আয়াত ২৫৫)

    Reference reading:

    1. Matter: Other name for Illusion by Harun Yahya

    2. Timelessness and reality of fate by Harun Yahya

    3. Tafhim Ebook

  • টাকার রহস্য

    টাকার রহস্য

    কেউ কি কখনও চিন্তা করেছেন কেন আপনার টাকার নোটে লিখা থাকে চাহিবামাত্র ইহার বাহককে ২০/৫০/১০০/৫০০/১০০০ টাকা দিতে বাধ্য থাকিবে?

    এর মানে কি? ধরি, আপনার কাছে ২০ টাকার নোট আছে। আপনি বলছেন এটা ২০ টাকা। কিন্তু আপনার নোটে লিখা যে চাহিবা মাত্র ইহার বাহককে ২০ টাকা দিতে বাধ্য থাকবেন। যারা পেপার মানি নিয়ে একটু পড়ালেখা করেছেন তারা ব্যাপারটি জানেন।

    আসলে আপনি আপনার হাতে যে নোটটি ধরে আছেন সেটির নিজস্ব কোন মূল্য নেই, সেটি একটি রিপ্রেজেন্টর মাত্র। ব্যাপারটা এরকম যে মনে করুন আপনি এক ভরি স্বর্ণ একজন স্বর্ণকারের কাছে আমানত রাখলেন। সে আপনাকে এর পরিবর্তে একটি কাগজে লিখে দিল। এখন আপনার কাগজটি ঐ স্বর্ণমূল্যের সমান মূল্য ধারণ করে। আপনি কেবল ঐ কাগজটি ফেরত দিলেই এ স্বর্ণটি ফেরত পাবেন। আপনি কি করলেন আপনার বন্ধুকে স্বর্ণ সরাসরি না দিয়ে নোটটা দিলেন। এরপর আপনার বন্ধু মুদি দোকানে গিয়ে সদাই করে স্বর্ণ না দিয়ে দিল ঐ নোটটা। এভাবে স্বর্ণ স্বর্ণকারের কাছেই থেকে গেল পরিচালিত হতে থাকল এই নোটটা। কোন এক সময় এক ব্যাক্তি যদি উক্ত নোটটা স্বর্ণকারের কাছে নিয়ে যায় তাহলে সে স্বর্ণ ফেরত দিতে বাধ্য থাকবে।

    এখন আপনি বলুন আপনার এই নোটের পরিবর্তে আপনি যদি আপনার ব্যাংকে গিয়ে আপনার প্রকৃত মূল্য ফেরত চান তাহলে কি পাবেন? হ্যা আপনি পেতে পারতেন যদি ঐ একটি নোটের পরিবর্তে গচ্ছিত স্বর্ণখন্ডটি তার কাছে থাকত। কিন্তু, ব্যাপারটিতো এখন আর সে রকম নেই। কারণ উক্ত স্বর্ণকার যখন দেখল যে কেউ তার নিকট আর স্বর্ণ ফেরত নিতে আসছে না সে একটা চালাকি করল। সে তার কাছে গচ্ছিত ঐ স্বর্ণটির পরিবর্তে একাধিক একই নোট বের করল এবং বাজারে ছেড়ে দিল। কি ধরতে পেরেছেন ব্যাপারটা? (এভাবেই একসময়ের স্বর্ণ বন্ধক রাখার লোকেরা টাকার উদ্ভব করে)

    হ্যা। আসলে এই নোটের পরিবর্তে ব্যাংকে থাকার কথা সমমূল্যের স্বর্ণ। কিন্তু আপনি কি জানেন যে ব্যাপারটি এখন আর তা নেই। কারণ আপনার টাকার মূল্য নির্ধারণ হচ্ছে আপনার ব্যাংকে রক্ষিত মার্কিন ডলার দিয়ে।

    আপনি মনে করছেন তাহলে উক্ত মার্কিন ডলারের পরিবর্তে নিশ্চয়ই সমমূল্যের স্বর্ণ রক্ষিত আছে, মার্কিন ব্যাংকে। দু:খিত, সে সময় অনেক আগে পার হয়ে গেছে। মার্কিন ডলার এখন নিজস্ব সরকার কর্তৃক ঘোষিত অর্থমান বহন করে।

    কি, আপনি ভাবছেন তার মানে মার্কিন সরকার চাইলে যে কোন সময় Out of thin air অর্থ তৈরী করতে পারে। অবশ্যই পারে। আপনার কি মনে হয়? ওবামা ঘোষিত বেইলিং মানি কিভাবে আসল????

    যাই হোক আপনি হয়ত অন্তুত এই ভেবে সন্তুষ্ট যে মার্কিন সরকার এই অর্থমান জারি করে। দু:খিত, আপনি আবারও ভুল করছেন। এই অর্থ আসে Federal Reserve System থেকে, যেটি কার্যত একটি Private প্রতিষ্ঠান।

    কি বললেন???

    হ্যা তাই। মার্কিন সরকারের যখন টাকার প্রয়োজন সে কার্যত ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম থেকে টাকা ধার নেয়। আর এভাবে শুরু হয় পারপেচুয়াল ডেট(Perpetual Debt) । কারণ আপনি এই ধার কখনই পরিশোধ করতে পারবেন না?? হে হে। পরিশোধ করতে হলে এই ফেডারেল রিজার্ভ থেকেই আবার ধার নিতে হবে।

    (তবে, মার্কিন ডলারের এই নিজস্ব মূল্যমান আগে ছিল না। এর পরিবর্তে বরং সমমূল্যের স্বর্ণমুদ্রা জমা থাকত ব্যাংকে। পরে কিভাবে এটা পরিবর্তন হয় জানতে নিচে প্রদত্ত ৪ নম্বর লিংকটি দেখুন)

    কি ভাই?? তাহলে এখন বুঝতে পারছেন কারা প্রকৃতপক্ষে পৃথিবী পরিচালনা করছে?? এরা আরও অনেক সিনিস্টার প্ল্যান করে রেখেছে । শুধু অপেক্ষা করুন।

    এ বিষয়ে আরও জানতে:

    ১. http://www.youtube.com/watch?v=VAWZTUBy1x0

    ২. http://sonarbangladesh.com/blog/lucky13/112883

    ৩. http://www.sonarbangladesh.com/blog/shamim/40153

    ৪. http://www.youtube.com/watch?v=sODUGGH__Fc

  • Why Archaebacteria was put into a different superkingdom giving the name Archaea?

    Archaea, previously named Archaebacteria, is a superkingdom consisting of bacteria like single cellular organisms which are found in extreme environments like harsh spring, salts lakes as well as normal environment.

    Before their molecular structure was studied they were kept under bacteria as a subgroup.

    Now, when it was found that they are made of different structural molecules, they are not put inside eukaryotes or prokaryotes, a complete different domain had to create for the group.

    Let us see what was found:

    In single cellular organisms like prokaryote and eukaryote, the cell membrane consists of phospholipid bilayer. This phospholipid molecules are made of saturated and unsaturated long chain fatty acids bound to phosphatidic acid by ester bonds, ie, by -COO-

    But, molecular analysis revealed that phospholipid of Archea contains phospholipids made of isoprenyl alephatic side chains bound to phosphatidic acid by ether bonds, ie, by -O-; giving much resilience to the membrane making it capable of living in harsh environments as it was mentioned above.

    Now, scientists realized it would require a completely different set of enzymes to build such membrane. They analyzed and found so. The enzymes are nor like that of bacteria’s neither that of eukaryots’.

    So, finally, Archaebacteria consisting of a whole lot of species was grouped under a different Domain named Archaea.

    Presently, there are three domains in cellular organisms, namely, Archea, Prokaryot and Eukaryote.

    What is interesting to note here is, Archaebacteria was previously thought to be evolved from Bacteria; but now they have to find another common ancestor from which the Bacteria, Archaea and Protozoa has come.

    And you see, this process will go on. If a new domain is discovered in future, they will also put that domain aside the previous three and try to find a common ancestor. Because the goal of the Evolutionists is to find a common ancestor, even if possible to find it in their IMAGINATION.

    [The article was previously posted here: http://www.sonarbangladesh.com/blog/abdullahdmc/68030]

  • মেমোরী, প্রোডিজি এবং ইচ্ছাশক্তি

    মেমোরী তথা স্মরণশক্তি দু ধরনের। ডিক্ল্যারেটিভ ও ননডিক্ল্যারিটিভ। প্রথমটি হল সে ধরনের মেমোরী যা আমরা কথার মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারি। যেমন: কোন কিছুর নাম, সংখ্যা, কোন ঘটনার স্মৃতি ইত্যাদি।  দ্বিতীয়টি হল সে ধরনের যেগুলো কথার মাধ্যমে প্রকাশ করা যায় না। যেমন: যে কোন ধরনের কাজ- সাইকেল চালানো, ড্রাইভিং, কিবোর্ড টেপা ইত্যাদি। দ্বিতীয় ধরনের মেমোরী আমাদের ‘সাবকনসাস’-এ প্রোথিত হয়। এমনকি এই ধরনের মেমোরী স্মরণ করতে গিয়ে সেটা সম্পর্কে ‘কনসাস’ হতে গেলে কাজটির ব্যাঘাত ঘটে। যেমন: একজন টেনিস খেলোয়ার বলে ব্যাট লাগাতে গেলে তার মন ‘সাবকনসাসলি’ মাপাঝোকা করে দেয়, এ সময় প্রতিপক্ষের মারা বলের দিকে মোনযোগ দিতে গেলে শট মিস হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।।

    ডিক্ল্যারেটিভ ও ননডিক্ল্যারেটিভ দুধরনের মেমোরীই বৃদ্ধি করা যায়, পুন:পুন: চর্চার মাধ্যমে। তবে মনে রাখার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল যা শিখছি তার প্রতি গভীর আগ্রহ।  

    আলেকজান্ডার অ্যাটকিন তেরো বছর বয়সে মনে মনে অঙ্ক কষার বিষয়টিতে গভীর আগ্রহ অনুভব করেন। তিনি ‘পাই’ এর মান দশমিকের পড়ে ১০০০ ঘর পর্যন্তু মুখস্ত করেছিলেন। পরবর্তীতে এই ব্যাক্তি এডিনবার্গ-এ ম্যাথমেটিক্সের প্রফেসর হয়েছিলেন। তবে বর্তমানে পাইয়ের মান দশমিকের পড়ে মনে রাখতে পারার ‘ওয়ার্ল্ড রেকর্ড’ টি গড়েছেন চিনের চাউ লু। এই ব্যাক্তি পাই এর- মান দশমিকের পর ৬৭৮৯০ ঘর পর্যন্ত বলতে পেড়েছেন, মুখস্ত! 

    ওলফগ্যাঙ এমাদেওস মোজার্ট চার বছর বয়সে পিয়ানো শেখেন এবং আট বছর বয়সে তার প্রথম সিমফোনী রচনা করেন। তাকে অন্যতম প্রধান মিউজিক প্রোডিজি বিবেচনা করা হয়। লাডউইগ ভ্যান বেথোভেন তার শেষ জীবনে বধির হয়ে গিয়েছিলেন। এ সময় তিনি কিছু সোনাটা ও কোয়ার্ট্রেট রচনা করেন। সমসাময়িক মিউজিসিয়ানদের অবোধ্য হওয়ায় সমালোচিত হলেও পরবর্তীতে এই মিউজিকগুলোকেই তার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ রচনা হিসেবে বিবেচিত হয়।

    পাবলো পিকাসোকে পূর্ণাঙ্গ আর্টিস্ট হিসেবে বিবেচনা করা হত যখন তার বয়স বারো। লিউনার্দো দ্যা ভিঞ্চি ছিলেন একজন পলিম্যাথ(অর্থাৎ বিভিন্ন বিষয়ের বিজ্ঞানী)।  বিশ বছর বয়সে তিনি আর্টিস্টদের গাইড, ‘গাইড অব সেন্টলুকের’ মাস্টার নির্বাচিত হয়েছিলেন।

    দাবার ওয়ার্ল্ড রেটিং এ বর্তমানে এক নাম্বার খেলোয়ার ম্যাগনাস কার্লসেন। মাত্র বাইশ বছর বয়সে গত জানয়ারী মাসে সে চেজ লিজেন্ড গ্যারী ক্যাসপারভের FIDE Rating 2851 কে অতিক্রম করে এবং এখন পর্যন্ত তার সর্বোচ্চ রেটিং 2872। তেরো বছর বয়সে এই ‘মোজার্ট অব চেজ’ একটি খেলায় ক্যাসপারভকে হারাতেও বসেছিল।

    শ্রিনিভাস রামানুজনের বয়স যখন তেরো তিনি নাম্বার থিওরী এবং বার্ণোলী নাম্বার এ নিজস্ব থিওরী দাড়া করান। ক্লডে শ্যানন যখন দেখান যে বুলিয়ান লজিক যে কোন লজিকাল, নিউমেরিকাল রিলেশনশিপ-এ ব্যবহার করা যায় তখন তার বয়স ছিল একুশ। জেমস ওয়াটসন ডিএনএ’র গঠন আবিস্কার করছিলেন তেইশ বছর বয়সে। এনরিকো ফার্মি একটি ভাইব্রেটিং রডের পার্সিয়াল ডিফারেনশিয়াল ইকুয়েশন সমাধান করতে ফরিয়ার এনালাইসিস ব্যবহার করেন সতের বছর বয়সে। মার্ক জুকারবার্গ স্কুল লাইফে গেমস প্রোগ্রাম করে দিতেন আর তার বন্ধুরা সেই গেমস খেলত। 

    কম বয়সে স্কিল্ড এডাল্টদের মত দক্ষতা প্রদর্শন করলে তাদের প্রোডিজি বলা হয়। উপরে যাদের উদাহরণ দেয়া হল তাদের কেউ চাইল্ড প্রোডিজি, কেউ এডাল্ট। তবে সবার ক্ষেত্রে একটা সাধারণ ব্যাপার হল আগ্রহ, প্রচেষ্টা এবং সবার উপরে অবশ্যই আল্লাহ তাআলার ইচ্ছা।

    আগ্রহ ও প্রচেষ্টার বাইরেও আল্লাহর রহমত থাকা জরুরী। আর এ কারনেই একটি বিস্ময়কর উদাহরণ হল মুসলিম বিশ্বের হাজার হাজার হাফেজী মাদ্রাসার হাজার হাজার বালক বালিকা। ৪ থেকে ১২ বছর বয়সী কোরআনের অসংখ্য হাফেজ আছে সাড়া পৃথিবীতে। কোন প্রকার অর্থ না বুঝে পুরো কোরআন মুখস্ত করতে পারাটা আল্লাহর অশেষ রহমতের একটি উদাহরণ মাত্র। কোরআনের বিস্ময়কর ভাষাশৈলী, ছন্দবদ্ধতা ও সাহিত্যপ্রকরণ হল একে মনে প্রোথিত করতে পারার মূল কারণ।  

    অন্যদিকে, বেনজামিন লিবেট তার কনসাসনেস সম্পর্কিত এক্সপেরিমেন্টে দেখিয়েছেন যে মানুষ যখন কোন কিছু অনুভব করে সেটা কনসাসলি অনুভব করার ০.৫ সেকেন্ড আগেই তার অনুভব সম্পর্কিত নির্দিষ্ট ব্রেইন এরিয়াতে ইলেকট্রিক্যাল স্টিমুলেশন পৌছে যায়। আবার যখন সে কোন কিছু করতে ইচ্ছে করে যেমন: হাত আগানো, তখন তার ব্রেইনের ‘মোটর’ এরিয়াতে হাত আগানোর কনসাস ফিলিং (অনুভব) হওয়ার ০.৫ সেকেণ্ড আগেই ইলেকট্রিক্যাল এক্টিভিটি শুরু হয়ে যায়। তবে মানুষ সর্বচ্চো সেই এক্টিভিটিকে একটি ভেটো দিয়ে থামিয়ে দিতে পারে। এটাকি তাহলে এক্সপ্লেইন করে, মানুষের প্রচেষ্টায় আল্লাহর সাহায্য কিভাবে আসে এবং কেন মানুষের স্বাধীন ইচ্ছা শক্তি নির্দিষ্ট মাত্রায় আবদ্ধ?  

    Bibliography:

    1. Neuroscience; D. Purves et el.

    2. Mind Time: Temporal factors in consciousness; Benjamin Libet     

    3. The 100: A Ranking Of The Most Influential Persons In History; Michael H. Hart

    4. en.wikipedia.org/wiki/List_of_child_prodigies

    5. cracked.com/article_16266_8-child-prodigies-so-amazing-theyll-ruin-your-day_p2.html

    6. pi-world-ranking-list.com/lists/details/luchao.html

    7. en.wikipedia.org/wiki/Ludwig_van_Beethoven

    8. en.wikipedia.org/wiki/Mark_Zuckerberg

    9. en.wikipedia.org/wiki/Wolfgang_Amadeus_Mozart

    10. en.wikipedia.org/wiki/Da_vinci

    11. en.wikipedia.org/wiki/Magnus_Carlsen

    12. en.wikipedia.org/wiki/James_Watson

    13. en.wikipedia.org/wiki/Claude_Shannon

  • বিবর্তনতত্ত্ব, বিজ্ঞান এবং বিশ্বাস

    বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম

    বিলুপ্ত হোমিনিন প্রজাতির জিনোম এবং হিউম্যান ইভল্যুশন সংক্রান্ত আবিস্কারের জন্য ভ্যান্তে পাবো ২০২২ নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন। তিনি নিয়ানডার্থাল জিনোমের সিকোয়েন্সিং করেছেন।

    এই সংবাদটির আলোকে স্রষ্টায় অবিশ্বাসীদের দাবী হলো, এই আবিস্কার মানুষের বিবর্তন প্রমাণ করেছে, সুতরাং আব্রাহামিক ধর্মগুলোর আদম-হাওয়া তত্ত্বের কোন ভিত্তি নেই।

    মনে হয় যেন,নিয়ানডার্থাল জিনোম সিকোয়েন্সিং এবং হিউম্যান জিনোমের সাথে তুলনা করতে পারা মানেই মানুষের বিবর্তন প্রমাণিত হওয়া।

    সায়েন্টিজমের অনুসারী এবং নিও-এথিস্টদের স্ট্র্যাটেজি হচ্ছে বিজ্ঞানের মধ্যে তাদের ফিলোসফি ঢুকিয়ে ধর্মবিরোধী মতবাদের পক্ষে প্রচার চালানো। সেই হিসেবে এ ধরনের হাইপ কোন অস্বাভাবিক বিষয় না।

    তাই তাদের এই হাইপকে একপাশে রেখে আমাদের তিনটি প্রশ্নের আলোকে বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করা দরকার।

    ১. বিবর্তন তত্ত্ব বৈজ্ঞানিক ভাবে সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত কি না?

    ২. বিবর্তন তত্ত্ব স্রষ্টায় বিশ্বাসের সাথে সাংঘার্ষিক কিনা?

    ৩. বিবর্তনতত্ত্ব ইসলামের সাথে সাংঘার্ষিক কিনা?

    প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর অনেক বিস্তৃত এবং বড় কলেবরে এক বা একাধিক খণ্ডের বই-এর দাবী রাখে। তবে, এই পোস্টে খুব সংক্ষেপে ১ ও ২ নং প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আলোচনা থাকবে।

    প্রথমেই, ২নং প্রশ্ন। এই প্রশ্নের উত্তরটি সবচেয়ে সহজে দেয়া যায়-

    স্রষ্টার বিশ্বাসের সাথে বিবর্তনবাদ কোনভাবেই সাংঘার্ষিক নয়। কারণ, স্রষ্টা চাইলে সরাসরি জৈব প্রজাতিকে তাদের আকৃতিতে সৃষ্টি করতে পারেন অথবা ধারাবাহিক বিবর্তনের মাধ্যমে তৈরী করতে পারেন। এটি মেটাফিজিক্যালী ইমপসিবল কোন বিষয় নয়, কারণ এটি লজিক্যালী পসিবল।

    এখন, প্রথম প্রশ্নের উত্তর নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা থাকবে। কিন্তু, উক্ত আলোচনায় যাবার আগে চলুন হালকা জেনে নেই বিজ্ঞান কিভাবে কাজ করে।

    বিজ্ঞান যে কোন তত্ত্ব প্রমাণের জন্য পরীক্ষা নিরীক্ষামূলক তথ্য ও প্রমাণের ওপর নির্ভর করে। তবে, বর্তমান বৈজ্ঞানিক জগৎ কোন ঘটনার অতিপ্রাকৃতিক ব্যাখ্যার অনুমতি দেয় না। অর্থাৎ, বিজ্ঞানের শর্ত হচ্ছে কোন তত্ত্বের প্রমাণে কেবল প্রাকৃতিকভাবে পর্যবেক্ষণযোগ্য ব্যাখ্যা এবং উপাত্ত দিতে হবে।

    দেখা যাচ্ছে, বিজ্ঞানে যে কোন তত্ত্বের প্রমাণের প্রশ্নে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় জ্ঞানতত্ব এবং দর্শন চলে আসে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, প্রাকৃতিক নিয়ম দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে না এরকম ঘটনার প্রাকৃতিক কারণ খোঁজা যেন বন্ধ হয়ে না যায়।

    যেমন- পাখি কিভাবে উড়ছে? এই প্রশ্নে উত্তরে আমি যদি এটুকু বলে থেমে যাই যে আল্লাহ তাদের ওড়ার ক্ষমতা দিয়েছেন তাই উড়ছে, তাহলে পাখির উড়তে পারার যে এ্যারোডাইন্যামিক পদ্ধতি সে সম্পর্কে গবেষণা থেমে যাবে।

    এ কারণে, বিজ্ঞানীরা, হোক সে বিশ্বাসী বা অবিশ্বাসী, বৈজ্ঞানিক গবেষণার সময় পদ্ধতিগত প্রকৃতিবাদ (Methodological naturalism)- এর আশ্রয় নেন।

    কিন্তু, নব্য-নাস্তিকরা (Neo-atheist)-রা মানুষের মাঝে বিজ্ঞানের বড়ত্ব প্রচার করতে গিয়ে দর্শনগত প্রকৃতিবাদ (Philosophical naturalism) কে জুড়ে দেন। ফলে, বিষয়গুলোকে অনভ্যস্তরা সহজেই বিভ্রান্ত হয়ে পরে। আস্তিক বিজ্ঞানীরা প্রাকৃতিক ঘটনার বিষয়টিকে দুভাবে বিবেচনা করেন। একদল, বিজ্ঞান এবং ধর্মীয় (স্রষ্টায়) বিশ্বাসকে দুটো সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয় হিসেবে বিবেচনা করে আলাদা রাখতে চান। আরেকদল মনে করেন, স্রষ্টা সবকিছুই বৈজ্ঞানিক নিয়মের মধ্যে করেন, সুতরাং বৈজ্ঞানিক নিয়ম আবিস্কার স্রষ্টাকে জানারই একটি পদ্ধতি। তদুপরি, বিজ্ঞান যেহেতু কিছু দার্শনিক অনুমান ধরে নিয়ে কাজ করে বিজ্ঞান সংজ্ঞানুযায়ীই সীমাবদ্ধ। যাই হোক, এটি সম্পূর্ণ আলাদা একটি আলোচনার বিষয়।

    এখন চলুন দেখি, বিজ্ঞান প্রাকৃতিক কোন পর্যবেক্ষণ ব্যাখ্যায় কিভাবে কাজ করে? বিজ্ঞানীরা কোন পর্যবেক্ষণের কার্যকারণ ( causual inference ) ব্যাখ্যার জন্য “ থিওরী – হাইপোথিসিস- রিসার্চ-অবজারভেশন- থিওরী” এই চাক্রিক প্রক্রিয়াটির মধ্য দিয়ে যান।

    বিজ্ঞানের ইতিহাসে প্রথমদিকে অবশ্য বিষয়টি এরকম ছিল না। তখন, বিজ্ঞানীরা কজাল ইনফারেন্সের জন্য শুধু মাত্র যৌক্তিক সিদ্ধান্ত (Rational Inference)-এর ওপর নির্ভর করতেন। সপ্তদশ শতাব্দীর সায়েন্টিফিক রিভলুশন থেকে শুরু করে বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত এজন্য পরীক্ষা নিরীক্ষালব্ধ জ্ঞান (Empiricism)-এর ওপর জোড় দেয়া হয়। উদাহরণস্বরূপ, আমার পর্যবেক্ষণলব্ধ ‘ হাঁস’ গুলো যদি সবসময় ‘কালো’ হয়, আমি সিদ্ধান্ত দিতে পারবো যে ‘হাঁস কালো’।

    এই পদ্ধতির একটি সমস্যা হল আপনি যদি একটি সাদা হাস দেখে ফেলেন, আমার থিওরী ভেঙ্গে যাবে। (Problem of Induction)

    পরর্বতীতে কার্ল পপার এই আরোহ পদ্ধতি (Inductive approach)কে প্রশ্ন করে বলেন যে, বিজ্ঞান মূলত কাজ করে অবরোহ পদ্ধতিতে (Deductive Approach)। অর্থাৎ, কোন ঘটনার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা চিন্তাভাবনা করে এক বা একাধিক থিওরী তৈরী করেন, এরপর তার পক্ষে পরীক্ষা নিরীক্ষালব্ধ প্রমাণ যোগার করার চেষ্টা করেন। এ প্রক্রিয়া কয়েকটি প্রতিযোগিতামূলক তত্ত্বের মধ্যে একটি বা আরেকটির প্রমাণ পোক্ত হয়।

    বর্তমানে বিজ্ঞানীরা এই দুটি পদ্ধতির সমন্বয়ে কাজ করেন। তারা অবজারভেশন থেকে একটি থিওরী ভাবেন এবং তা থেকে বিভিন্ন হাইপোথিসিস দাড় করান। অত:পর, উক্ত হাইপোথিসিসকে প্রমাণ বা অপ্রমাণের জন্য রিসার্চ প্রসেসের মধ্য দিয়ে তথ্য যোগাড় করেন। এই প্রক্রিয়া হাইপোথিসিস ভুল হলে থিওরীর পরিবর্তন বা পরিমার্জন করা হয়। এভাবে, কোন কজাল ইনফারেন্সের জন্য যথেষ্ট তথ্য উপাত্ত যোগাড় হলে একটি কজাল থিওরী আপাত প্রমাণ হয়।

    এখন, বিবর্তনতত্ত্ব হচ্ছে এমন একটি তত্ত্ব যা একটি কোষ থেকে প্রাকৃতিক উপায়ে বর্তমান পৃথিবীর অসংখ্য জৈব প্রজাতির আগমনকে ব্যাখ্যার চেষ্টা করে। বিজ্ঞানী ডারউইন তার প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ (যেমন: ফিঞ্চ পাখির ঠোট, কৃত্রিম সংকরায়ণ, বিভিন্ন প্রাণীর কাছাকাছি গঠন [Homology], ফসিল এভিডেন্স) প্রভৃতির আলোকে বি

    এখন, বিবর্তনতত্ত্ব হচ্ছে এমন একটি তত্ত্ব যা একটি কোষ থেকে প্রাকৃতিক উপায়ে বর্তমান পৃথিবীর অসংখ্য জৈব প্রজাতির আগমনকে ব্যাখ্যার চেষ্টা করে। বিজ্ঞানী ডারউইন তার প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ (যেমন: ফিঞ্চ পাখির ঠোট, কৃত্রিম সংকরায়ণ, বিভিন্ন প্রাণীর কাছাকাছি গঠন [Homology], ফসিল এভিডেন্স) প্রভৃতির আলোকে বিবর্তনতত্ত্ব প্রদান করেন। এরপর এই তত্ত্ব সত্য হলে কি কি ধরনের পর্যবেক্ষণ লব্ধ উপাত্ত পাওয়া যাবার কথা এই ধরনের হাইপোথিসিস দেন এবং তার সপক্ষে কিছু যৌক্তিক প্রমাণ উপস্থাপনের চেষ্টা করেন।

    যেমন একটি হাইপোথিসিস হল, বিবর্তনতত্ত্ব সত্য হলে ফসিল বেডে ক্রমান্বয়িক (Gradual) জটিল প্রজাতি পাওয়া যাবে (Common Descent)। এর প্রমাণস্বরুপ, জীবাশ্মবিদ্যার বিজ্ঞানীদের প্রচেষ্টা দেয়া দেখা গেছে যে যতই পুরোনো ফসিল বেডে যাওয়া যায় ততই তুলনামূলক সরল জীবাশ্ম পাওয়া যায়। প্রসঙ্গত, ফসিল বেডে যত গভীরে যাওয়া যায়, তা সাধারনত ততই আগের জিওলজিকাল এইজকে রিপ্রেজেন্ট করে।

    কিন্তু, পরিক্ষানীরিক্ষা লব্ধ তথ্য প্রমাণ সব সময় যে হুবহু থিওরীর পক্ষে যাবে তা নয়। যেমন, ফসিল এভিডেন্স-এর বিষয়টিতেই আসা যাক। ডারউইনের বিবর্তনতত্ত্ব অনুযায়ী, ফসিল বেডে দুটি বিষয় ঘটতে হবে। এক, ধাপে ধাপে সরল থেকে জটিল প্রজাতি পাওয়া যাবে (Common Descent)। দুই, প্রজাতিগুলোর ফসিলের মধ্যে একটি ক্রমান্বয়িক ধারাবাহিকতা (Gradualism) থাকবে। কিন্তু, প্যালেন্টোলজিস্ট নাইলস এলড্রেজ এবং স্টিফেন জে. গোল্ড দেখিয়েছেন যে ফসিলে Common Descent থাকলেও Gradualism নেই। বরং, আছে Sudden appearance এবং Stasis। যাই হোক, বিষয়টি নিয়ে বিজ্ঞানীরা এখন দ্বিধাবিভক্ত। তবে, Common descent-এর ব্যাপারে সবাই একমত।

    বিবর্তনতত্ত্বের আরেকটি প্রস্তাবনা হলো, প্রজাতির প্রজন্মান্তরে সৃষ্ট বৈচিত্র (Variation) এবং প্রাকৃতিক নির্বাচন। যেমন, কৃত্রিম সংকরায়নের মধ্য দিয়ে অধিক দুগ্ধদানকারী গাভীর জাত তৈরী করা হলে, খামারীরা উক্ত জাতটিকে কৃত্রিম ভাবে চয়ন করেন (Artificial selection)। ঠিক একই ভাবে, অধিক লোমযুক্ত ভাল্লুক বরফের দেশে প্রাকৃতিক ভাব সিলেক্টেড হয় (Natural selection)।

    কিন্তু, প্রজাতিতে প্রজন্মান্তরে এই ভ্যারিয়েশন কিভাবে আসে? জেনেটিক্স আবিস্কারের আগ পর্যন্ত ভ্যারিয়েশন আসার বিষয়টি শক্ত কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিলো না। জেনেটিক্স আসার পর দেখা গেল যে মিউটেশনসহ বিভিন্ন ধরনের পপুলেশন জেনেটিক প্রক্রিয়ায় প্রজাতির বৈচিত্র তৈরী এবং প্রাকৃতিক নির্বাচন হতে পারে। এর প্রেক্ষিতে ডারউইনের মূল তত্ত্ব মোডিফাই হয়ে, বিভিন্ন বিজ্ঞানীর হাত ধরে ইভল্যুশনারী সিনথেসিস (তথা সিনথেসিস থিওরী)-তে রূপান্তরিত হয়।

    এই পরিবর্তীত তত্ত্বের প্রমাণ হিসেবে মলিকিউলার হোমোলজী থেকে ফাইলোজেনেটিক্স (জেনেটিক ট্রি তৈরী)-এর বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষা চালানো হয়। তবে মজার বিষয় হল মলিকিউলার হোমোলজি থেকে প্রাপ্ত প্রজাতি বিন্যাস এবং বয়স, ফসিল ডেটিং এবং এনাটমিক হোমোলজি থেকে প্রাপ্ত বিন্যাস এবং বয়সের সাথে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ম্যাচ করে না। আবার দেখা যায়, হরাইজন্টাল জিন ট্রান্সফারের কারণে প্রজাতির জন্য সুনির্দিষ্ট জেনেটিক গঠন অনেকটাই অস্বচ্ছ হয়ে যায়। ফলে, মলিকিউলার হোমোলজীর মাধ্যমে প্রজাতির বিবর্তনীয় ধারা বের করার গবেষণা অনেক ধরনের জটিলতায় আক্রান্ত।

    বর্তমানে সিনথেটিক থিওরীর প্রসেসগুলোর (অর্থাৎ, মিউটেশন ও অন্যান্য পপুলেশন জেনেটিক প্রসেস) সীমাবদ্ধতা বিবেচনা করে একদল বিজ্ঞানী বিভিন্ন বিকল্প প্রসেসের কথা বলছেন। যেমন: ন্যাচারাল জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, সিমবায়োসিস, নিও-লামার্কিজম প্রভৃতি। এই সকল বিজ্ঞানীদের থিওরীকে একত্রে বলা হচ্ছে The Third Way of Evolution. যাই হোক, থার্ড ওয়ের প্রবক্তারাও মূল বিবর্তনতত্ত্বের গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা Common Descent এর ব্যাপারে সর্বসম্মতভাবে একমত। উপরন্তু, তারাও ফিলোসফিক্যাল ন্যাচারালিজম-এর বাইরে কোন প্রস্তাবনা দিতে রাজি নন।

    কিন্তু, অনেক সময় একই পর্যবেক্ষণের একাধিক ব্যাখ্যা থাকতে পারে। তখন, তুলনামূলক প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে কোনটি গৃহীত হবে, তা নির্ধারিত হয় অন্যান্য সম্পূরক তথ্য প্রমাণ এবং তাত্ত্বিক চিন্তা গবেষণার আলোকে।

    জীবজগতের পর্যবেক্ষণে ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইনের প্রবক্তারা একটি ভিন্ন প্রস্তাবনা এনেছেন। তাদের মতে প্রজাতির উৎপত্তি ও বিভিন্ন ধাপে আগমন ইন্টেলিজেন্ট এজেন্সির ইন্টারভেনশন ছাড়া ব্যাখ্যা করা সম্ভব না। তাদের মতে ‘কমন ডিজাইন’ প্রজাতির সাদৃশ্যের একটি বিকল্প প্রস্তাবনা হতে পারে। তারা হোমোলজিকে বিবর্তনবাদের প্রমাণ হিসেবে দেখানোকে চাক্রিক যুক্তি মনে করেন। কারণ, আমি দুই বা ততোধিক প্রজাতির গাঠনিক সাদৃশ্য দেখে যদি কোন তত্ত্ব দাড় করাই যে ‘গাঠনিক সাদৃশ্য থাকলে দুটো প্রজাতি পূর্ববর্তী কোন কমন প্রজাতি থেকে এসে থাকবে’ এবং তার প্রমাণ হিসেবে ‘দুই বা ততোধিক প্রজাতির গাঠনিক সাদৃশ্য’-কেই উপস্থাপন করি তা চাক্রিকই মনে হবে।

    অন্যদিকে, তারা দেখিয়েছেন যে, জীবজগতের কিছু কিছু গঠন Irreducibly Complex এবং বিবর্তনবাদীদের প্রস্তাবিত প্রক্রিয়াগুলোতে একটি নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত পরিবর্তিত জিন পপুলেশনে সেট হতে পারে তথা একটি নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত প্রজাতির পরিবর্তন আসতে পারে, যা প্রজাতির ক্লাসিফিকেশন হাইয়ারারকিতে (Kingdom-Phylum-Class-Order-Family-Genus-Species) জেনাস পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। উক্ত প্রক্রিয়াতে ম্যাক্রো পরিবর্তন আসার জন্য প্রয়োজনীয় সময় এবং পপুলেশন সাইজ মহাবিশ্বের ইতিহাসে নেই।

    প্রসঙ্গত, ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির কোন পর্যবেক্ষণযোগ্য ইনডাকটিভ প্রমান না থাকায়, তারা এবডাকটিভ ইনফারেন্স একটি পদ্ধতি ব্যবহার করেন। তাদের মতে মানুষকে যেমন ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে জটিল কাঠামো নির্মান করতে দেখা যায়, তথা জটিল কাঠামো দেখে যেমন এর পেছনে মানুষের মত কোন ইন্টেলিজেন্স ইনফার করা যায়। তেমনি, জীবজগতের জটিলতা দেখেও এর পেছনে ইন্টেলিজেন্ট এজেন্টকে ইনফার করা যায়।

    কিন্তু, ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইনতত্ত্ব ‘ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইনার’ নামক ‘অপ্রাকৃতিক’ এজেন্সিকে ইনফার করে বিধায়, ডমিনেন্ট সায়েন্টিফিক সার্কেল-এর তাদের তত্ত্বের কোন গ্রহনযোগ্যতা নেই। একদিকে, যারা অবিশ্বাসী তারা দর্শনগত কারনেই এই তত্ত্বর্কে কোন সুযোগ দিতে রাজী নন। অন্যদিকে, যারা বিশ্বাসী তারা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে Methodological Naturalism বজায় রাখতে গিয়ে উক্ত তত্ত্বের সুযোগ দিতে রাজী নন। এই দ্বিতীয় দলটির আরেকটি আশংকা হচ্ছে, ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন God of the gaps ফ্যালাসীর আশ্রয়ে দাড়িয়ে আছে। প্রসঙ্গত, God of the gaps হচ্ছে বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় বর্তমান সময়ে বোঝার সীমাবদ্ধতা থাকলে, তাকে স্রষ্টা করেছেন বলে চালিয়ে দেয়া। তবে একজন সতর্ক পাঠক বুঝতে পারবেন যে ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন তত্ত্বের ফর্মুলেশনটি ঠিক এরকম নয়।

    সুতরাং, ১ নং প্রশ্নের উত্তরে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, ডারউইনের বিবর্তনতত্ত্বের পক্ষে তথ্য প্রমাণ এমন নয় যে তা সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত হয়েছে। সর্বচ্চো এটুকু বলা যায় যে, বিভিন্ন ভাবে তথ্য প্রমাণ একত্র করার প্রচেষ্টা অব্যহত আছে। মজার বিষয় হলো, Methodological Naturalism-এর সীমায় প্রজাতির উৎপত্তি ব্যাখ্যায় বিবর্তনতত্ত্বের বিকল্প কোন তত্ত্বের প্রবেশাধিকারই নেই। অর্থাৎ, বিবর্তনতত্ত্বের পক্ষে সাপোর্ট যতটানা Empirical তার চেয়ে বেশী Philosophical.

    এজন্য অধিকাংশ সময়ই বিবর্তনতত্ত্বের আলোচনা তত্ত্ব থেকে ‘বিবর্তনবাদ’-এ চলে যায়। এ আলোচনায় অটোমেটিক ভাবেই দর্শন চলে আসে। ফলে, আর্নস্ট মেয়ার, আলফ্রেড রাসেল ওয়ালেস, রোনাল্ড ফিসার বা ডগলাস ফুতুয়ামা থেকে আমরা রিচার্ড ডকিন্স বা ইউভাল নোয়া হারারীদের বেশী চিনি।

    তিন নাম্বার প্রশ্নের উত্তরটি নিয়ে ড. শোয়েব আল মালিক তার বই Islam and Evolution: Al-Ghazālī and the Modern Evolutionary Paradigm -এ বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। অধিক আগ্রহীরা এই ফ্রি বইটি ডাউনলোড করতে পারবেন এখান থেকে- https://library.oapen.org/handle/20.500.12657/48443

    তবে আরেকটি পর্বে এই বিষয়টির একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা রাখার চেষ্টা করবো, ইন শা আল্লাহ।
    ..

    ০৬.১০.২০২২

    বানান সম্পাদনা: তাওহিদ হাসান

  • নাইলনেজ এনজাইম কি বিবর্তনের উদাহরণ?

    বিবর্তনবাদীরা যখন আপনার কাছে বিবর্তনের পক্ষে কথা বলতে আসবে, আপনি প্রথমেই জেনে নিন সে বিবর্তন বলতে কি বুঝাতে চাচ্ছে? বিবর্তনের উদাহরণ দিতে গিয়ে যদি সে ব্যাকটেরিয়ার ড্রাগ রেজিস্টেন্স, ভাইরাসের নতুন নতুন স্ট্রেইনের ঘটনাকে নিয়ে আসে তাহলে বুঝবেন সে মাইক্রোইভুলিউশনের কথা বলছে, যেটা প্রকৃতিতে অহরহ ঘটছে। আপনি তার কাছে ম্যাক্রোইভুলিউশনের উদাহরণ জানতে চাইবেন।

    যদি সে বলে মাইক্রোইভুলিউশন মিলিয়ন বছরের ব্যবধানে ম্যাক্রোইভুলিউশন করেছে। তখন বুঝবেন তার এই ‘ইনফারেন্স’ এক ধরনের বস্তুবাদী বিশ্বাস, বিজ্ঞান নয়। কেননা মাইক্রোইভুলিউশন একটি নির্দিষ্ট লিমিট পর্যন্ত হয়। এই লিমিট বা সীমাটি হলো যতক্ষণ পর্যন্ত উক্ত ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের বা ইউক্যারিয়টের ‘ভাইটাল’ গাঠনিক উপাদান প্রভাবিত না হয়।  তাকে প্রশ্ন করুন ম্যাইক্রোইভুলিউশনের এমন কোন উদাহরণ দিতে পারবে কিনা যেখানে নতুন কোন গঠনগত ও কার্যকরী প্রোটিন বা প্রোটিন সমষ্টি তৈরী হয়েছে। কেননা, কোন গাঠনিক উপাদান ছাড়া একটি জীবকে আরেকটি ভিন্ন জীবে পরিণত করা অসম্ভব।

    মজার ব্যপার হলো, সে আপনাকে ব্যাকটেরিয়ার বাইরে খুব কমই উদাহরণ দিতে পারবে। মাইক্রোইভল্যুশনের মাধ্যমে প্রোটিন তৈরীর সবচেয়ে প্রকৃষ্ট যে উদাহরণটা আনা যেতে পারে তা হল নাইলনেজ নামক নতুন একটি এনজাইম তৈরীর ঘটনা । নাইলন একটি কৃত্রিম বা সিনথেটিক পলিমার, যেখানে অনেকগুলো সিক্স এমাইনো ক্যাপ্রয়েট নামক যৌগের ডাইমার পর পর যুক্ত হয় বড় একটি চেইন তৈরী করে। নাইলনেজ-এর কাজ হলো এই ডাইমারকে ভেঙ্গে নাইলন পলিমারকে ভাঙ্গা। ফ্ল্যাভোব্যাকটেরিয়াম Arthrobacter sp. K17-এর ‘প্লাজমিড’-এ একটি ফ্রেমশিফট মিউটেশনের মাধ্যমে এই এনজাইমটি তৈরী হয়েছে বলে ধারণা করা হয় (১)।

    নাইলনেজ এনজাইম কি বিবর্তনের উদাহরণ?

    নাইলনেজ এনজাইমের ত্রিমাত্রিক গঠন, উৎস

    এখানে কয়েকটি বিষয় লক্ষ্যণীয়। মিউটেশনটি ঘটেছে প্লাজমিডে, কোন স্ট্রাকচারাল প্রোটিনে নয় এবং ব্যাকটেরিয়ার মূল জিনোমিক এলিমেন্টে নয়। মূলত ফ্রেমশিফট মিউটেশন হলে পুরো প্রোটিন নষ্ট হয়ে অকার্যকর প্রোটিন তৈরী হয়। সুতরাং মূল জিনোমে হলে এবং স্ট্রাকচারাল প্রোটিনে হলে ব্যাকটেরিয়া টিকতে পারতো না। তদুপরী ব্যাকটেরিয়ার প্লাজমিড একটি চলাচলযোগ্য গোলাকার ডিএনএ খণ্ড, যা ব্যাকটেরিয়া পরস্পর আদান প্রদান করতে পারে। এটা ব্যাকেটেরিয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কিছু এনজাইম ও অতিরিক্ত স্ট্রাকচারের জেনেটিক তথ্য ধারণ করে। এটি ব্যাকটেরিয়ার ক্রোমোজমের সাহায্য ছাড়া একাই নিজের কপি তৈরী করতে পারে। ফলে প্লাজমিডে মিউটেশন হলে ব্যাকটেরিয়ার মূল স্ট্রাকচারে কোন পরিবর্তন আসে না।

    ফ্ল্যাভোব্যাকটেরিয়ামে যে ফ্রেমশিফটের ঘটনাটি ঘটেছে সেটিও ‘ইউনিক’।[১] এটি বুঝতে আসুন জানি ফ্রেমশিফটে কি হয়। যারা জেনেটিক্সের প্রাথমিক ধারনা রাখেন তারা জানেন, ডিএনতে চারটি নিউক্লিউটাইড এডেনিন (A), গুয়ানিন (G), সাইটোসিন(C), থায়ামিন(T) বিভিন্ন কম্বিনেশনে পরস্পর যুক্ত থেকে প্রোটিন তৈরীর তথ্য ধারণ করে। প্রতি তিনটি নিউক্লিউটাইড একটি এমাইনোএসিডকে কোড করে। যেমন: GGU কোড করে গ্লাইসিন নামক একটি এমাইনো এসিডকে। ধরুন, CCUGGUUUG একটি ডিএনএ স্ট্রিং। এটি কোড করবে, প্রোলিন-গ্লাইসিন-লিউসিন (CCU-GGU-UUG)। এখন কোন কারণে যদি একটি ডিলেশন মিউটেশন হয় এবং প্রথম ‘C’টি বাদ হয়ে যায় তাহলে স্ট্রিংটি হবে-CUG-GUU-UG()। সুতরাং এ অবস্থায় প্রথম থেকে পড়লে, এমাইনো এসিডগুলো হবে- লিউসিন-ভ্যালিন-(বাস্তবে যেহেতু স্ট্রিং আরও বড় হয় একটি স্টপ কোডন (UGA, UAA, UAG) বা অন্য কোন এমাইনোএসিড)। অতএব, বুঝতেই পারছেন একটি ফ্রেমশিফট মিউটেশন প্রোটিনে কেমন ধ্বংসাত্মক পরিবর্তন আনতে পারে। অধিকাংশ ফ্রেমশিফট মিউটেশনে স্টপ কোডন তৈরী হয় বা অকার্যকরী প্রোটিন তৈরী হয়। কিন্তু ফ্ল্যাভোব্যাকটেরিয়ামে সৌভাগ্যক্রমে একটি ফাংশানাল প্রোটিন তৈরী হয়ে গিয়েছিল যেটি নাইলনকে ব্রেকডাউন করিয়ে ব্যাকটেরিয়াটিকে প্রতিকূল পরিবেশে বাঁচার সুবিধে করে দেয় (লক্ষ্যনীয় সংজ্ঞানুযায়ী প্লাজমিড এই ধরনের কাজই করে থাকে)।

    মজার ব্যাপার হলো, এখানে ফ্রেমশিফট হয়েছে একটি রিপিটেটিভ ইউনিটের যেটা তিনের গুনিতক নয়। রিপিটেটিভ ইউনিটটি ১০টি নিউক্লিউটাইড বিশিষ্ট এবং এর স্টপ কোডন নেই। ফলে এর রিডিং একটি নিউক্লিউটাইড আগে বা পরে থেকে এমনিতেই পড়ার সুযোগ ছিল এবং এই ফ্রেম শিফটের কারণে কোন স্টপ কোডন তৈরী হয়নি। কিন্তু নাইলনেজ এনজাইম তৈরীর ঘটনায় একটি স্টার্ট কোডন তৈরী হয় ইনসারশন ইভেন্টের মধ্য দিয়ে। আর যেহেতু রিপিটিটিভ সিকোয়েন্সটিকে আগে থেকে ফ্রেম শিফট করে পড়ার উপায় ছিল (স্টপ কোডন না থাকায়), ফলে যখন নাইলনেজ এনজাইম ফ্রেম শিফট-এর মাধ্যমে তৈরী হয় এটি নাইলন যুক্ত পরিবেশে সিলেকটিভ এডভানটেজ দেয়ায় ন্যাচারালী সিলেকটেড হয়। (২)

    প্রসঙ্গত, মোডিফিকেশন অব ফাংশন মিউটেশনের মধ্য দিয়ে কোন একটি এনজাইমে এমন পরিবর্তন আসতে পারে যাতে এনজাইমটি তার সাবস্ট্রেটের সাথে প্রায় একই গঠনযুক্ত সাবস্ট্রেট ব্যবহার করতে পারে। মিউটেশনের মধ্য দিয়ে এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটে। সুতরাং নাইলনেজ এনজাইমের পিছনেও এরকম একটি ঘটনা থাকা অসম্ভব না। নেগোরো এবং সহকর্মীরা এই বিষয়টিই বলতে চাচ্ছেন। (দেখুন, পরবর্তী প্যারা) উল্লেখ্য, মোডিফিকেশন অব ফাংশন মিউটেশনের মধ্য দিয়ে কিন্তু সম্পূর্ণ নতুন জেনেটিক তথ্য যুক্ত হয় না। অন্য কথায় যে এনজাইম গ্লুকোজকে ব্যবহার করছে, সে মোডিফিকেশন অব ফাংশন মিউটেশনের মধ্য দিয়ে হয়ত গ্লুকোজের আইসোমার গ্যালাকটোজকে ব্যবহার করতে পারবে, কিন্তু তার পক্ষে কোন এমাইনোএসিডকে ব্যবহার করা সম্ভব হবে না। আবার যে এনজাইমটি পরিবর্তন হলো সে যদি কোন গুরুত্বপূর্ণ মাল্টিপ্রোটিন কমপ্লেক্সের সদস্য হয়, সেক্ষেত্রে তার ফাংশনের মোডিফিকেশন ব্যাকটেরিয়া (তথা অর্গেনিজম)-র ফিটনেস কমিয়ে দেবে। আর মোডিফিকেশন যদি এমন ভাবে হয়, যে এনজাইম তার মূল কাজ একেবারেই করতে না পারে, তাহলে তো ব্যাকটেরিয়াটি সারভাইভ-ই করতে পারবে না। অর্থাৎ, দেখা যাচ্ছে ক্রমান্বয়ে কয়েকটি র‍্যানডম মিউটেশন দিয়ে নতুন স্ট্রাকচার তৈরী প্রাকৃতিক নির্বাচনের কারণেই সম্ভব নয়।  

    একটি এনজাইম যে সাবস্ট্রেট তথা উপাদানের উপর কাজ করে সেটির সাথে কাছাকছি গঠনের উপাদানের উপর কাজ করার যোগ্যতা রাখে। ফলে দেখা যায়, অনেক ‘মোডিফিকেশন অব ফাংশন’ মিউটেশনের মধ্যে দিয়ে একটি এনজাইম পরিবর্তিত হয়ে উক্ত কাছাকাছি গঠনের উপাদানকে শক্ত করে বাঁধতে পারলো (অর্থাৎ স্পেসিফিসিটি পরিবর্তন হলো) এবং বিক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে পারলো। এ ঘটনাকে মাইক্রোইভুলিউশনের মধ্য দিয়ে হোমোলোগাস সাবস্ট্রেটে স্পেসিফিসি পরিবর্তন বলা যায়। যেমন: যে এনজাইম রিবিটলকে (সাবস্ট্রেট)  অক্সিডাইজ (বিক্রিয়া) করতো সে ডিলেশন অব ফাংশন মিউটেশনের ( রিবিটল ডিহাইড্রোজিনেজ এনজাইমের রিপ্রেসর লস) মধ্য দিয়ে রিবিটলের সাথে হোমোলোগাস জাইলিটল বা এরাবিটল ব্যবহার করতে জানে।  Negoro et el.  দেখিয়েছেন নাইলনেজ (যার মূল নাম: সিক্সএমাইনো ক্যাপ্রোয়েট ডাইমার হাইড্রোলেজ) এনজাইমটির কাছাকাছি গঠনের এনজাইম হলো হেক্সাকার্বক্সিলিক এসিড এস্টারেজ তথা কার্বক্সিলএসটারেজ এনজাইম (হোমোলোগাস)। সুতরাং অস্বাভাবিক না যে, পরের এনজাইমটি থেকে মোডিফিকেশন অব ফাংশন মিউটেশনের মধ্য দিয়ে নাইলনেজ তৈরী হতে পারে। (৩)

    নাইলনেজ এনজাইম কি বিবর্তনের উদাহরণ?

    সিক্স অ্যামাইনো হেক্সানয়েট ডাইমার হাইড্রোলেজ, উৎস

    ইন ফ্যাক্ট হয়েছেও তাই। যে জাপানী বিজ্ঞানীরা নাইলোনেজ এনজাইম প্রথম আবিস্কার করেন তাদের পরবতী গবেষণায় প্রমানিত হয় যে নাইলোনেজ এনজাইমে নতুন কোন প্রোটিন গঠন তৈরী হয়নি। বরং, যে প্রোটিন থেকে বিবর্তিত হয়ে নাইলোনেজ এসেছে তাতে পূর্ব থেকেই কার্বক্সিলএস্টারেজ এক্টিভিটি এবং সাথে অল্প মাত্রার নাইলোনেজ এক্টিভিটি ছিল । এমনকি, পরীক্ষা করে দেখা গেছে নতুন নাইলোনেজ এনজাইম কমপ্লেক্স-এর একই সাথে কার্বক্সিলএস্টারেজ ও নাইলোনেজ এক্টিভিটি আছে (৪)। সেক্ষেত্রে এটাকে একেবারে নতুন কার্যকরী প্রোটিন (new functional protein) তৈরীর সংজ্ঞায় ফেলা যাচ্ছে না।

    সুতরাং বিবর্তনবাদীদের উপস্থাপিত এই একটি উদাহরণও প্রশ্নাতীত নয়। অথচ, এরুপ ব্যতিক্রম কিন্তু প্রশ্নবিদ্ধ উদাহরণ এনে তারা মাইক্রোইভুলিউশন থেকে ম্যাক্রোইভুলিউশনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত(!) তথা ইনফারেন্স টেনে ফেলেছে। রিসার্চ মেথোডোলজিতে নাল হাইপোথিসিস বলে একটি কথা আছে। অর্থাৎ কোন কিছুর সাথে কোন কিছুর সম্পর্ক আছে প্রমাণ করতে হলে আগে ধরে নিতে হয়ে সম্পর্ক নাই। তারপর ‘উপযুক্ত’ ও ‘যথেষ্ট’ প্রমাণাদি দিয়ে সেই সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে হয়। বিচারব্যবস্থাতেও অভিযুক্তকে নিরপরাধ ধরেই বিচার করতে হয়। বিজ্ঞানের সকল নিয়মই এভাবে প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। কিন্তু মজার ব্যপার হোলো, বিবর্তনবাদীরা আগে ধরে নেন যে বিবর্তন হয়েছে, তারপর পরীক্ষানিরীক্ষা শুরু করেন। কিন্তু কতগুলো দুর্বল যুক্তির উপর একটি বড় সিদ্ধান্ত দিয়ে দিলে তাকে বিজ্ঞান বলে না, অপবিজ্ঞান বলে।  

    নাস্তিক ডারউইনবাদীরা বিজ্ঞানের ভিতর নিজের অন্ধবিশ্বাস ঢুকিয়ে দিয়ে স্রষ্টায় বিশ্বাসকে বৈজ্ঞানিকভাবে খণ্ডিত করার মিথ্যাচার চালাচ্ছে। অতএব, তাদের এই প্রতারণা ধরিয়ে দেয়া যে কোন সচেতন বিজ্ঞানমনস্ক ব্যক্তির দায়িত্বের মধ্যে পরে।

    রেফারেন্স:

    ১. Venema D. Intelligent Design and Nylon-Eating Bacteria [Internet]. Biologos. 2016. Available from: https://biologos.org/articles/intelligent-design-and-nylon-eating-bacteria

    ২.Dembski W. Why Scientists Should NOT Dismiss Intelligent Design [Internet]. Uncommondescent. 2005. Available from: https://uncommondescent.com/evolution/why-scientists-should-not-dismiss-intelligent-design/

    ৩. Negoro S. et el. X-ray crystallographic analysis of 6-aminohexanoate-dimer hydrolase: molecular basis for the birth of a nylon oligomer-degrading enzyme. J Biol Chem. 2005 Nov 25;280(47):39644-52. Epub 2005 Sep 14

    ৪. Guager A. The Nylonase Story: When Imagination and Facts Collide [Internet]. Evolutionnews. 2017 [cited 2019 Nov 18]. Available from: https://evolutionnews.org/2017/05/the-nylonase-story-when-imagination-and-facts-collide/

    লাস্ট আপডেট: ১৮/১১/২০১৯

  • মানুষের আদি পিতা-মাতা ও বিজ্ঞান সাংবাদিকতা

    সাংবাদিকরা যখন বিজ্ঞান নিয়ে কথা বলেন তখন যে বিজ্ঞানের ‘ছেড়ে দে মা কেন্দে বাঁচি’ অবস্থা হয় তার সবচেয়ে উদাহরণ হল বাংলাদেশের চিকিৎসা বা চিকিৎসকদের নিয়ে করা প্রতিবেদন। ধরে নিলাম অধিকাংশ বাংলাদেশী সাংবাদিকদের নিয়ে এত বড় আশা কঠিন যে তারা কোন বিষয় সম্পর্কে বিস্তর জেনে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ দিবে। কিন্তু পাশ্চাত্যের সংবাদমাধ্যমগুলোর কি অবস্থা? বিজ্ঞানের কোন বিষয়ে তাদের কোন প্রতিবেদনে কি বিশ্বাস করা যায়?

    ব্যক্তিগতভাবে আমার এই ধরনের সকল ‘পপুলার সায়েন্স নিউজ’-এ এক সময় ভালই আস্থা ছিল। কিন্তু, এখন আর তা করতে পারি না। কারণ, বিবর্তনবাদ, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রভৃতি নিয়ে সায়েন্স নিউজ রাইটারদের চটকদার নিউজ পড়ার পর যতবারই একটু গভীরে ঘেটে দেখেছি ততই তাদের তথা সায়েন্স (নিউজ) রাইটারদের প্রতি আমার বিশ্বাস হালকা হয়ে গেছে। সায়েন্স রাইটাররা দুই ধরনের হয়- হয় তারা ভাল জানে এবং জেনে ইচ্ছেকৃত স্পেসিফিক এজেন্ডা (সায়েন্টিজম-এর প্রসার) এর জন্য লিখে, অথবা, তারা জিনিসটা সম্পর্কে না জেনে বা না বুঝে লিখে। সব সায়েন্স নিউজ পোর্টাল এরকম হয় তাও বলছি না। তবু, সায়েন্স নিয়ে কোন ‘নিউজ’ দেখলে চেষ্টা করি মূল রিসার্চটা কি বলেছে একটু ঘেটে দেখার। বিশেষ করে, যদি সময় পাই, যে বিষয়টির টেকনিকাল দিকগুলো সম্পর্কে পড়েছি, অন্তত সে বিষয়গুলো একটু দেখে নেই।   


    যাই হোক, ফেসবুকে ডেইলী মেইলের একটি নিউজ সবাই শেয়ার করছে যাতে বলা হচ্ছে যে, মার্ক স্টিকল ও ডেভিস থেলার নামক দু জন বিজ্ঞানী তাদের ২০১৮ সালের একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখিয়েছেন সমস্ত মানুষ এক জোড়া মানুষ থেকে এসেছে এবং এক লক্ষ বছর আগে একটি সর্বব্যপী দূর্ঘটনায় পৃথিবীর সব স্পিসিস প্রায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।(1)

    এই নিউজ যারা পড়েছেন এবং শেয়ার করেছেন তাদের মধ্যে দু’ধরনের রিসপন্স দেখলাম-
    ১. যারা ডারউইনবাদকে বিতর্কিত তত্ত্ব বলে মনে করেন তারা এই গবেষণাটিকে বিবর্তনের বিপরীতে এভিডেন্স হিসেবে দেখছেন এবং তারা ইমপ্লিসিট ভাবে মনে করছেন যে এই আবিস্কার মেজর রিলিজিওন বর্ণিত ‘আদম-হাওয়া’ থেকে মানুষের আবির্ভাবকে এনডর্স করে।
    ২. যারা ডারউইনবাদকে প্রশ্নাতীতভাবে সত্য মনে করেন, তারা হয় চুপ আছেন বা এই রিসার্চ বিবর্তনতত্ত্বকে এনডর্স করে বলে মনে করছেন।

    আগে থেকে এই ধরনের রিসপন্স সম্পর্কে পরিচিতি থাকায় আমি ভাবলাম মূল রিসার্চটা একটু পড়ে দেখা দরকার। যেই ভাবা সেই কাজ। আর্টিকেলটা পড়লাম। মলিকিউলার ইভল্যুশন সম্পর্কে আইডিয়া না থাকলে আর্টিকেল থেকে মূল বক্তব্য বের করাটা একটু কঠিন। তবে আমি যতটুকু বুঝেছি সেখান থেকে পাঠকদের জন্য আমার দুই পয়সা-
      
    মূল রিসার্চটার টাইটেল হল “Why should mitochondria define species?” এটি প্রকাশিত হয়েছে হিউম্যান ইভল্যুশন জার্নালে ২০১৮ সালের মে মাসে(2)। নিচে আর্টিকেলে মূল বিষয়গুলো নিজের ভাষায় বলার চেষ্টা করছি।

    ১. আমরা জানি, প্রতিটি বহুকোষী জীব-এ মাইটোকন্ড্রিয়া নামক অঙ্গানু থাকে যা এটিপি হিসেবে শক্তি সঞ্চিত রাখে।

    ২. কোষে নিউক্লিয়ার ডিএনএ ছাড়াও মাইটোকন্ড্রিয়ার নিজস্ব ডিএনএ আছে।

    ৩. নিউক্লিয়ার ডিএনএ-তে মিউটেশনের ফলে জীবের ফিনোটাইপে (অর্থাৎ বাহ্যিক আকার আকৃতি ও বৈশিষ্ট্য) পরিবর্তন হয়।

    ৪. কিছু কিছু মিউটেশন আছে যাকে বলে ‘নিউট্রাল মিউটেশন’। কারণ, এই ধরনের মিউটেশনের ফলে প্রোটিনের অ্যামাইনো এসিড সিকোয়েন্সে কোন পরিবর্তন হয় না।

    ৫. কিন্তু, নিউক্লিয়ার ডিএনএ-তে এই ধরনের মিউটেশনের ফলেও ফেনোটাইপে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন  লক্ষ্য করা যায়।   

    ৬. প্রায় সব মিউটেশনই প্রোটিনের মূল ফাংশনের ব্যঘাত ঘটায়- হয় তার কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয় বা বিকল করে ফেলে। ফেনোটাইপে এ ধরনের পরিবর্তন হলে, উক্ত প্রানীটি রিপ্রোডাক্টিভ ক্ষমতা কমে যায়। কারণ, তার এক বা একাধিক ফাংশনে ত্রুটি থাকায় সে বেঁচে থাকার লড়াই-এ হেরে যায়। এ কারণে এই ধরনের মিউটেশনগুলো পরবর্তি জেনারেশনের প্রবাহিত হতে পারে না। অর্থাৎ, নিউক্লিওটাইড চেঞ্জযুক্ত প্রাণীগুলো অন্য প্রাণীর সাথে প্রতিযোগিতায় পরাজিত হয়। (এভাবে, মিউটেশনযুক্ত প্রাণীর মারা যাওয়া ও অরিজিনাল ফাংশনাল  সিকোয়েন্সযুক্ত প্রাণীর বেঁচে থাকার প্রক্রিয়াকে বলে পিউরিফাইং সিলেকশন।)

    ৭. এর ফলে ‘মা’ প্রানী ও ‘সন্তান’ প্রাণীর নিউক্লিয়ার ডিএনএ-তে খুব বেশী পরিবর্তন পাওয়া যায় না।

    ৮. কিন্তু, মাইটোকন্ড্রিয়ার ডিএনএ-এর ক্ষেত্রে ‘নিউট্রাল মিউটেশন’ কোন গুরুত্বপূর্ণ ফাংশনাল পরিবর্তন (ফেনোটাইপিক পরিবর্তন) আনে না। অর্থাৎ, মাইটোকন্ড্রিয়ার ডিএনএতে এই নিউট্রাল মিউটেশনগুলো থেকে যায়। অর্থাৎ ‘মা’ থেকে ‘সন্তানে’ জননকোষ বিভাজনের সময় সংঘটিত মাইটোকন্ড্রিয়াল মিউটেশনগুলো থেকে যায়।

    ৯. মাইটোকন্ড্রিয়ার ডিএনএতে এই নিউট্রাল মিউটেশনগুলো থেকে যাওয়া উপকারিতা কি?

    ১০. উপকারিতা হল- এর ফলে ‘মা’ এর তুলনায় ‘সন্তানদের’ মাইটোকন্ড্রিয়াতে যথেষ্ট জেনেটিক ডাইভারসিটি তৈরী হয়।

    ১১.  এখন, আপনি যদি ধরে নেন যে মাইটোকন্ড্রিয়ার ডিএনএ-তে প্রতিবার রিপ্রোডাকশনের সময় সংঘটিত পরিবর্তনগুলো একটি স্থির হারে হয় এবং আপনার যদি কোন স্পিসিস-এর প্রতি রিপ্রোডাকশনে মিউটেশনের হার জানা থাকে, তাহলে আপনি কোন প্রজাতির আভ্যন্তরিন জেনেটিক ডাইভারসিটি থেকে উক্ত প্রজাতি ও তার কমন এনসেস্টর-এর মর্ধবর্তী সময় বের করতে পারবেন(3)। (এই সময়কে বলা হয় কোলেসেন্স টাইম)

    ১২. বিজ্ঞানী স্টিকেল ও থেলার কোষের মাইটোকন্ড্রিয়ার এই বৈশিষ্ট্যটি ব্যবহার করে মানুষের কমন এনসেস্টর কত পূর্বে ছিলো এবং একই সাথে অন্যান্য প্রাণীদের কমন এনসেস্টর কতপূর্বে ছিলো তার একটি এস্টিমেট বের করেন।

    ১৩. তারা মাইটোকন্ড্রিয়ার COI barcode ডাটাবেজ BOLD-এর ডাটা ব্যবহার করেন। লক্ষ্যনীয় যে, GenBank এবং BOLD ডাটাবেজ মিলে প্রায় ৫০ লক্ষ প্রানীর COI barcode ডাটা সংরক্ষিত আছে।

    ১৩. তাদের হিসেব অনুযায়ী মানুষের কমন এনসেস্টর ছিলো প্রায় ১ লক্ষ বছর আগে। অর্থাৎ, প্রায় ১ লক্ষ বছর আগে একজন পুরুষ ও নারী থেকে বর্তমান মানব জাতি এসেছে। 

    ১৪. মজার বিষয় হলো, একই সাথে তারা অন্যান্য প্রাণীর বারকোড থেকে হিসেব করেন যে প্রাণী জগতের বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৯০%-এর কমন এনসেস্টর-এর বয়সও প্রায় ১ লক্ষ থেকে ২ লক্ষ বছর। অর্থাৎ, মানুষের মত অন্যান্য প্রাণীও ১ থেকে ২ লক্ষ বছর পূর্বের এক জোড়া কমন এনসেস্টর থেকে এসেছে।

    ১৫. এর অর্থ কি? সহজ বাংলায়, স্টিকেল ও থেলারের গবেষণা অনুযায়ী বর্তমানে প্রাণীজগতের প্রায় ৯০% প্রায় ১ লক্ষ থেকে ২ লক্ষ বছর আগের সংশ্লিষ্ট প্রজাতির এক জোড়া থেকে এসেছে। উদাহরণস্বরুপ, মানুষের ক্ষেত্রে এক জোড়া নারী-পুরুষ, বাঘের ক্ষেত্রে একজোড়া বাঘ ও বাঘিনী, ইত্যাদি। যারা প্রায় ১ লক্ষ থেকে ২ লক্ষ বছর আগে প্রায় কাছাকাছি সময় জীবিত ছিলো ।

    ১৬.  মানুষের ক্ষেত্রে এ ধরনের হিসেব (Estimate) আগেও করা হয়েছে।

    ১৭. লক্ষ্যনীয়, মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ শুধুমাত্র নারীদের জনন কোষ থেকে সন্তানের জাইগোটে প্রবাহিত হয়। ফলে, কেউ মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ থেকে মানুষের এনসেস্ট্রি অ্যানালাইজ করলে মানুষের সর্বশেষ কমন ‘মা’-কে ট্রেস করতে পারবে। ঠিক একই ভাবে শুধুমাত্র ‘Y’ ক্রোমোজোম নিয়ে এনসেস্টি অ্যানালাইজ করলে মানুষের সর্বশেষ কমন ‘বাবা’ কে ট্রেস করা যাবে।

    ১৮. মাইটোকন্ড্রিয়ার ভিত্তিতে প্রথম কমন ‘মাইটোকনড্রিয়াল ইভ’ এর বয়স বের করেন বিজ্ঞানী কেন, স্টোনকিং এবং উইলসন। তাদের হিসেবে অনুযায়ী মানুষের কমন ‘মাইটোকনড্রিয়াল ইভ’-এর বয়ষ প্রায় ২ লক্ষ বছর। অর্থাৎ ২ লক্ষ বছর আগে আমাদের কমন ‘মা’ পৃথিবীতে বিচরণ করেছিলেন। (4)


    ১৯.  ‘Y’ ক্রোমোজোম-এর ভিত্তিতে মানুষের কমন বাবা তথা ‘Y ক্রোমোজোমাল অ্যাডাম’-এর বয়স হিসেব ২০০০ সালের দিকে হিসেব করা হয়েছিলো প্রায় ৫০০০০ বছর(5)। যা ‘মাইটোকনড্রিয়াল ইভ’ থেকে প্রায় দেড় লক্ষ বছর ছোট।

    ২০. কিন্তু, পরবর্তীতে আরও রাইগোরাসটিল গবেষণা করে ‘মাইটোকনড্রিয়াল ইভ’ এবং ‘Y ক্রোমোজোমাল অ্যাডাম’-এর বয়স হিসেব করা হয় যথাক্রমে ৯৯ থেকে ১লক্ষ ৪৮ হাজার বছর এবং ১লক্ষ ২০ হাজার থেকে ১লক্ষ ৫৬ হাজার বছর(6)।

    ২১. বৈজ্ঞানিক গবেষণা অনুযয়ী, ‘মাইটোকনড্রিয়াল ইভ’ এবং ‘Y ক্রোমোজোমাল অ্যাডাম’ প্রায় কাছাকাছি সময় বাস করেছিলেন।


    ২২. তবে আমাদের মনে রাখা দরকার, এগুলো আসলে কিছু Provisional Estimate. কোন কনফার্মড হিসেবে নয়(7)।

    ২৩. যাই হোক, এখন আমরা যদি ১৫ নম্বর পয়েন্ট আবার পড়ি- স্টিকেল ও থেলারের গবেষণা অনুযায়ী বর্তমানে প্রাণীজগতের প্রায় ৯০% প্রায় ১ লক্ষ থেকে ২ লক্ষ বছর আগের সংশ্লিষ্ট প্রজাতির এক জোড়া থেকে এসেছে। উদাহরণস্বরুপ, মানুষের ক্ষেত্রে এক জোড়া নারী-পুরুষ, বাঘের ক্ষেত্রে একজোড়া বাঘ ও বাঘিনী, ইত্যাদি। যারা প্রায় ১ লক্ষ থেকে ২ লক্ষ বছর আগে প্রায় কাছাকাছি সময় জীবিত ছিলো।

    ২৪. এই রিসার্চ থেকে দুটি সিদ্ধান্তে আসা যেতে পারে।

    ২৫. এক, ১ থেকে ২ লক্ষ বছর আগে কোন এক বড় ধরনের  ক্যাটাস্ট্রফিক ইভেন্ট-এর কারণে তখনকার প্রায় অনেক প্রজাতির ‘ভিন্ন নিউক্লাওটাইড সিকোয়েন্স’ যুক্ত ভাই-বোনেরা মারা যায়। ফলে, যে একজোড়া পুরুষ-নারী থেকে পরবর্তী জেনারেশন-এর ডাইভারসিফিকেশন হয়। (একে বলা হয় পপুশেন বোটল নেক)


    ২৬. দুই,  ১ থেকে ২ লক্ষ বছর আগে পৃথকভাবে একজোড়া করে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী পৃথিবীতে পাঠানো হয় এবং তা থেকে পরবর্তী জেনারেশন-এর ডাইভারসিফিকেশন হয়।

    ২৭. মজার বিষয়, ‘ম্যাটেরিয়ালিস্ট’-দের জন্য ২৫ ও ২৬ দুইটাই প্রবলেমেটিক। কারণ, ২৫ ঠিক হলে নূহ (আ)-এর প্লাবণ-এর মত একটি ক্যাটাস্ট্রফের ইঙ্গিত পাওয়া, যার সম্পর্কে প্রায় সকল ধর্মগ্রন্থে বিভিন্নভাবে বর্ণনা এসেছে। আর, ২৬-কে তারা outright রিজেক্ট করে।

    ২৮. এজন্য আলোচ্য রিসার্চের দুইজন অথারকে বলতে শুনা যায়-

    “This conclusion is very surprising,” co-author David Thaler of the University of Basel is quoted as saying, “and I fought against it as hard as I could.” His co-author is fellow geneticist Mark Stoeckle of Rockefeller University in New York (3)

    ২৯. মজার বিষয় হলো এরা আগে ২০০৪ সালের একটি পেপারে একই অথাররা পাখির দুটো লিনিয়েজ পরীক্ষা করে বলেছিলেন-
    “The ad hoc modifications to neutral theory commonly proposed to account for low variation in individual cases, namely, recurrent bottlenecks or selective sweeps, struggle as general mechanisms. If bottlenecks limit variation, then a universal low ceiling implies recent population crashes for all species. This appears unlikely– almost a Noah’s Ark hypothesis–although perhaps long-term climate cycles might cause widespread periodic bottlenecks.” (8)

    ৩০. সবার শেষে Evolution News-এর এন্ড্রু জোনস-এর একটি কথা কোট করে শেষ করছি –

    “In any case, one thing is clear: reconstructing the past is a complicated business and it is still full of surprises. There may be even bigger surprises in store.”

    রেফারেন্স:

    1.      McManus L. Every person was spawned from single pair of adults living up to 200,000 years ago, scientists claim | Daily Mail Online [Internet]. Daily Mail. 2018 [cited 2018 Nov 26]. Available from: https://www.dailymail.co.uk/news/article-6424407/Every-person-spawned-single-pair-adults-living-200-000-years-ago-scientists-claim.html?fbclid=IwAR25ZFBERNCQqdzNrdMfrQkVIFS8CSbBvJlRXTv8seHsngm-W8DR39Ke_HA

    2.      Stoeckle MY, Thaler DS. Why should mitochondria define species? Hum Evol. 2018;33:1–30.

    3.      Jones A. New Paper in Evolution Journal: Humans and Animals Are (Mostly) the Same Age? Evolution News. 2018.

    4.      Cann RL, Stoneking M, Wilson AC. Mitochondrial DNA and human evolution. Nature [Internet]. 325(6099):31–6. Available from: http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/3025745

    5.      Thomson R, Pritchard JK, Shen P, Oefner PJ, Feldman MW. Recent common ancestry of human Y chromosomes: Evidence from DNA sequence data. Proc Natl Acad Sci U S A [Internet]. 2000;97(13):7360–5. Available from: http://www.pnas.org/content/97/13/7360.abstract%5Cnhttp://www.pnas.org/content/97/13/7360.full.pdf

    6.      Poznik GD, Henn BM, Yee MC, Sliwerska E, Euskirchen GM, Lin AA, et al. Sequencing Y chromosomes resolves discrepancy in time to common ancestor of males versus females. Science (80- ). 2013;341(6145):562–5.

    7.      Klinghoffer D. About “Y Chromosome Adam” and & “Mitochondrial Eve” [Internet]. Evolution News. 2013 [cited 2018 Nov 26]. Available from: https://evolutionnews.org/2013/08/about_y_chromos/

    8.      Stoeckle MY, Thaler DS. DNA barcoding works in practice but not in (neutral) theory. PLoS One. 2014;9(7):3–9.

  • চোখের সামনে ফিঞ্চ পাখির নতুন স্পিসিস-এর ‘ম্যাক্রো’ নয় ‘মাইক্রো’ বিবর্তন হতে দেখা গেল

    গত ২৩ শে নভেম্বর সায়েন্স জার্নালে একটি রিপোর্ট পাবলিশ হয়েছে । ল্যামিচ্যানী এবং তার সহযোগী রিসার্চারগন গালাপোগোস দ্বীপপুঞ্জে নতুন স্পিসিস-এর আবির্ভাবটি পর্যবেক্ষণ এবং রিপোর্ট করেন(1) ।

    এসপানোলা থেকে গালাপোগোসের ড্যাফনি মেজোরে আগত একটি ডারউইনের ফিঞ্চ পাখির প্রজাতি Geospiza conirostris গালাপোগোসের ন্যাটিভ প্রজাতি Geospiza fortis-এর সাথে ব্রিডিং করে। ফলে, একটি নতুন হাইব্রিড প্রজাতি জন্ম নেয় যা পূর্ববর্তী প্রজাতি থেকে বড়। এই হাইব্রিড প্রজাতিটি গালাপোগোস-এ ক্ষরার সময় প্রাপ্ত খাদ্য রিসোর্সকে অভিভাবক প্রজাতি থেকে বেশী ব্যবহার করতে সক্ষম হয় এবং প্রাকৃতিক ভাবে বেঁচে থাকার সুবিধে পেয়ে নির্বাচিত হয়।

    সংঙ্গানুযায়ী একটি প্রজাতির পরবর্তী বংশধরকে নতুন প্রজাতিতে পরিণত হতে হলে প্রয়োজন ‘রিপ্রোডাক্টিভ আইসোলেশন’। ‘রিপ্রোডাক্টিভ আইসোলেশন’ হল প্রজাতির এমন একটি বৈশিষ্ট্য যার ফলে সে আরেকটি প্রজাতির সাথে মেটিং করে না (অর্থাৎ একটি প্রজাতির পুরুষ, আরেকটি প্রজাতির নারীর সাথে মিলিত হয় না এবং ভাইস ভারসা)।

    ফিঞ্চ পাখির একটি বৈশিষ্ট্য হলো এটির মেটিং চয়েজ (অর্থাৎ কোন পাখির সাথে মিলিত হবে) তা নির্ভর করে পাখির গানের ধরন এবং গঠনের ওপর। যেহেতু নতুন প্রজাতিটি Geospiza fortis প্রজাতি থেকে বড় এবং ভিন্ন সুরে গান গেতে শুরু করেছে, ফলে এটি মা-এর প্রজাতি থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ, Geospiza fortis প্রজাতির অন্য কোন পাখির সাথে এটি মিলিত হয় না। সুতরাং, হাইব্রিড প্রজাতিটি স্পেসিয়েশনের সংঙ্গা অনুযায়ী নতুন একটি প্রজাতিতে পরিণত হয়েছে।

    আপনি কি কখনও লক্ষ্য করেছেন, কেন আপনার সন্তানের গঠন, চেহারা, কণ্ঠ হুবুহু আপনার বা আপনার স্পাউজের মত হয় না? কারণ, জননকোষের ডিএনএতে ক্রসিং ওভারের মাধ্যমে জেনেটিক রিকম্বিনেশন হয়। অর্থাৎ, মা ও বাবা থেকে আগত ক্রোমোজোমদ্বয়ের নির্দিষ্ট স্থানে জেনেটিক তথ্যের আদান প্রদান হয়, যেন জেনেটিক ভ্যারিয়েশন তৈরী হতে পারে। এটি জননকোষের একটি ‘বিল্ট-ইন’ প্রক্রিয়া।

    অন্যান্য প্রাণীর ক্ষেত্রে ধরুন এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরবর্তী বংশধরে এমন একটি পরিবর্তন এল যার ফলে পরবর্তী প্রাণীটি বিদ্যমান খাদ্যের উৎসকে বেশী ব্যবহার করতে পারে এবং একই সাথে যেই বৈশিষ্ট্যগুলো উক্ত প্রাণীর ক্ষেত্রে মেটিং চয়েজ নির্ধারণ করে (যেমন: ফিঞ্চ পাখির ক্ষেত্রে গানের সুর এবং শারীরিক গঠন) সেগুলোর একটিতে পরিবর্তন আসল। সেক্ষেত্রে উক্ত বংশধরটি পূর্ববর্তী প্রজাতি থেকে ধীরে ধীরে পৃথক প্রজাতিতে পরিণত হবে। এটির আরেকটি নাম আছে – সেক্সুয়েল সিলেকশন (2)।

    বস্তুত, এই ভাবে প্রজাতি তৈরীর ঘটনা প্রকৃতিতে নতুন নয়। সালামান্দার প্রজাতি Ensatina eschschoitzi-এর ৭টি উপপ্রজাতি যুক্তরাস্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের প্রশান্ত মহাসাগর তীরবর্তী স্যান জাওকিন ভ্যালির আশেপাশে বাস করে (3)। উপ-প্রজাতিগুলোর মূল পার্থক্য তাদের গায়ের রঙ-এর নকশা (প্যাটার্ন) এবং (সম্ভবত) ফেরোমোন। সালামান্দারের গায়ের রং-এর নকশা পরিবর্তন হয় হোমোলোগাস রিকম্বিনেশন-এর মাধ্যমে। সহজ কথায়, শুক্রাণু ও ডিম্বাণু তৈরী হওয়ার এক পর্যায়ে এক জোড়া ক্রোমোজামের মধ্যে ক্রসিংওভার নামক একটি ঘটনা ঘটে। এ প্রক্রিয়ায় জিনোমের কিছু সুনির্দিষ্ট অংশের আদান প্রদান এবং পুনঃবিন্যাস হয়। যদিও রিকম্বিনেশন হচ্ছে র‍্যাণ্ডমভাবে, কিন্তু তা হচ্ছে একটি নিয়ন্ত্রিত সীমায় কিছু বিনিময় যোগ্য এলিলির (জিন) মধ্যে।

    এভাবে সৃষ্ট ভ্যারিয়েশনের মাধ্যমে ভ্যালীর উত্তরে অবস্থিত Ensatina eschschoitzi picta উপ-প্রজাতিটি দক্ষিণ দিকে এসে এমন দুটো উপ-প্রজাতি Ensatina eschschoitzi klauberi এবং Ensatina eschschoitzi eschschoitzii–তে পরিণত হয়েছে, যারা পরস্পর যৌনক্রিয়ায় লিপ্ত হয় না। সালামান্দার প্রজাতি যৌনক্রিয়ার জন্য বিপরীত লিঙ্গ বাছাই করতে সাধারণত ফেরোমোন নামক শরীর থেকে নিঃসৃত বিশেষ গন্ধ উৎপাদনকারী পদার্থ ব্যবহার করে। (এছাড়া, কোন কোন প্রজাতি স্পর্শ এবং কোন কোন প্রজাতি দৃষ্টি-সম্বন্ধীয় সূত্র তথা ভিজুয়্যাল কিউ ব্যবহার করে থাকে)। সে হিসেবে  Ensatina eschschoitzi klauberi এবং Ensatina eschschoitzi eschschoitzii উপ-প্রজাতি দুটোতে ক্রসিং ওভারের মধ্য দিয়ে রং এবং ফেরোমোনের যথেষ্ট পার্থক্য হয়ে যাওয়ায় তারা প্রজাতির সংজ্ঞানুযায়ী আলাদা প্রজাতিতে পরিণত হয়েছে।

    গুগোলে রিং স্পিসিস লিখে সার্চ দিলে এরকম আরও কিছু উদাহরণ পাওয়া যাবে। মূল বিষয়টি হলো, এসব ক্ষেত্রেই এমন কিছু পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে নতুন প্রজাতি তৈরী হয়ে যাচ্ছে যা হওয়ার জন্য জিনোমে ইতোমধ্যে নিয়মতান্ত্রিক ব্যবস্থা করা আছে এবং প্রতিটি ক্ষেত্রেই ‘এলোপাতাড়ি মিউটেশনের’ কোন ভূমিকা নেই।
    স্পেসিয়েশন অর্থ হলো একটি নতুন প্রজাতি তৈরী হওয়া।

    জেনেটিক্যালী স্পেসিয়েশনের গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে-
    – হাইব্রিড স্পেসিয়েশন –যেমন অদ্য আর্টিকেলে ফিঞ্চ পাখি।
    – পলিপ্লয়েড স্পেসিয়েশন- যেটা জবা ফুলে বেশ দেখা যায়।
    – ট্রান্সপজিশন- থিওডসিয়াস ডবঝানস্কি ফ্রুট ফ্লাইতে এই ধরনের স্পেসিয়েশন দেখিয়েছেন।

    প্রতিটি ক্ষেত্রে কোষের ‘ইন-বিল্ট’ প্রক্রিয়ায় কিছু জেনেটিক ভ্যারিয়েশন তৈরী হয়। তবে রিপ্রোডাক্টিভ আইসোলেশনের ক্ষেত্রে যে সকল প্রক্রিয়া ভূমিকা রাখে সেগুলো হল ন্যাচারাল সিলেকশ (রি-ইনফোর্সমেন্ট ও ইকোলোজিকাল) এবং সেক্সুয়েল সিলেকশন। (২)

    এ সবগুলো প্রক্রিয়াকে আপনি সহজেই ‘মাইক্রো-ইভল্যুশন’-এর কাতারে ফেলতে পারবেন। কারণ, প্রতিটি ক্ষেত্রেই কোন বড়-মাত্রার জেনেটিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় না। অর্থাৎ, আপনি চোখের সামন একটি জেনাসের অন্তর্গত একাধিক স্পিসিস তৈর হতে দেখবেন। কিন্তু, একটি ফ্যামিলির অধীনে নতুন কোন জেনাস তৈরীর ঘটনা চোখের সামনে দেখতে পারবেন না।

    ডারউইনবাদীদের দাবী অনুযায়ী বড় মাত্রার জেনেটিক পরিবর্তন হয় অনেক সময় নিয়ে, ফলে এটি চোখের সামনে দেখা যায় না। জেনাসের আগমন আপনি কখনও সচক্ষে দেখতে পারবেন না। কারণ, এর জন্য যে মিলিয়ন বছর সময় দরকার সে পর্যন্ত আপনি বাঁচবেন না। নতুন জেনাস যে কমন ডিসেন্টের মাধ্যমে অন্য কোন কমন জেনাস থেকে এসেছে তার প্রমাণ হলো ফসিল এবং মলিকুলার হোমোলজি। যেমন: হোমো জেনাস (মানুষ জাতীয় দোপেয়ে প্রাণী) এবং প্যান জেনাস (শিম্পাঞ্জী)-এর একটি কমন এনসেস্টর ছিলো।

    অস্ট্রালোপিথেকাস, আর্ডিপিথেকাস এদের গঠন পুরোপুরি শিম্পাঞ্জির মত না, কিছুটা মানুষের কাছাকাছি। অন্যদিকে নিয়েন্ডারথ্যাল, ডেনিসোভা হোমিনিন-এরা মানুষের মত গঠনযুক্ত ছিলো। কিন্তু, অস্ট্রালোপিথেকাস-কে আপনি শিম্পাঞ্জীর কাতারে ফেলবেন, নাকি নতুন একটি ফ্যামিলি হিসেবে নাম দিবেন সেটা কিন্তু পুরোপুরি আপনার ওপর নির্ভর করছে। এগুলোর ক্ষেত্রে জীবাশ্ম হাড় ছাড়া আমাদের কাছে অন্য কোন এভিডেন্স নেই। ঠিক তেমনি সংস্কৃতিমনা নিয়েন্ডারথেল বা ডেনিসোভাকে-যে আপনি মানুষ বলতে চাইছেন না তার-ই বা ভিত্তি কি?

    অন্যদিকে, হোমোলজি, তা মলিকুলার হোক বা মরফোলজিকাল, কমন ডিজাইনের কারণেও হতে পারে। সুতরাং, প্রজাতির কমন ডিসেন্ট আর্গুমেন্ট তখনই গ্রহণযোগ্য হবে যখন আপনি ডিএনএ-তে নতুন কার্যকরী তথ্য যোগ হওয়ার স্পষ্ট উদাহরণ দিতে পারবেন। আপনি বিভিন্ন জিন নিয়ে ‘মলিকিউলার ফাইলোজেনী’ আঁকলে একেকটির জন্য একেকটি কমন এনসেস্ট্রির সময় পাওয়া যাবে (4)।

    সুতরাং, স্বয়ংক্রিয় ও প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় বিবর্তনের বিষয়টি তখনই পুরোপুরি মানা যেতে পারে যখন আপনি মলিকিউলার লেভেলে ‘বড় আকারের’ জেনেটিক ইনফরমেশন যোগ হওয়ার প্রসেস দেখাতে পারবেন। নব্য-ডারউইনবাদের র‍্যানডম মিউটেশন যে এই বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে অক্ষম তা অনেক দার্শনিক ও বিজ্ঞানীরাও বুঝতে পারছেন। (৫)

    এই ভ্যারিয়েশন আসার বিষয়টি কিভাবে সম্ভব সেটা নিয়ে ‘পদ্ধতিগত প্রকৃতিবাদ’-এর গণ্ডির মধ্যে থেকেই অনেক বিজ্ঞানী নতুন থিওরী দিচ্ছেন। জেমস শ্যাপিরোর ন্যাচারাল জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, লিন মার্গুলিসের সিমোবায়োসিস এবং সুসুম ওহনো-এর জিন ডুপ্লিকেশন- এর মধ্যে অন্যতম।

    লক্ষ্যণীয় এই প্রতিটি প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রেই ‘এলোপাতারী’ শব্দটি পরিত্যাক্ত হয়েছে, কারণ এগুলো নিয়ণ্ত্রিত। এগুলো যদি দিন শেষে যথাযথ হিসেবে প্রমাণিতও হয় সবগুলোই একটা কমন এনসেস্টর থেকে শুরু হবে যার মধ্যে অসংখ্য সুনিয়ন্ত্রিত বিবর্তিত হওয়ার প্রক্রিয়া প্রথম থেকেই প্রথিত আছে। অর্থাৎ, আপনি ‘পদ্ধতিগত প্রকৃতিবাদ’ থেকে ‘দার্শনিক প্রকৃতিবাদ’-এ গিয়ে নিজের চূড়ান্ত প্রশ্নগুলোকে আটকে রাখবেন যেন একটি ‘বুদ্ধিমান’ সত্ত্বার অস্তিত্বকে অস্বীকার করা যায়, সেটি দিবাস্বপ্ন ছাড়া আর কিছু নয়।

    রেফারেন্স:
    1. Lamichhaney S, Han F, Webstar MT, Andersson L, Grand BR, Grant PR. Rapid hybrid speciation in Darwin’s finches. Science (80- ). 2017;(November).
    2. Speciation. In: Wikipedia. 2017.
    3. Rosa Rubicondior: Ring Species – Evolution in Progress [Internet]. [cited 2017 Nov 29]. Available from: http://rosarubicondior.blogspot.com/…/ring-species-evolutio…
    4. Stephen Meyer, Darwin’s Doubt 2013
    5. Thomas Nagel, Mind and Cosmos 2012

    …………………..

    “স্বয়ংক্রিয় ও প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় বিবর্তনের বিষয়টি তখনই পুরোপুরি মানা যেতে পারে যখন আপনি মলিকিউলার লেভেলে ‘বড় আকারের’ জেনেটিক ইনফরমেশন যোগ হওয়ার প্রসেস দেখাতে পারবেন”  আমার লেখার এই অংশটির প্রেক্ষিতে একজন ফেসবুক ডারউইনবাদী নিচের লিংকটি দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন যে, র‍্যানডম মিউটেশনের মাধ্যমে অহরহ নতুন জিন তৈরী হচ্ছে!! তার দাবী কেন সঠিক নয় সেটা ব্যাখ্যা করতে আমি একটি বিস্তারিত মন্তব্য লিখি। সবার জানার জন্য এখানে সংযোজন করে দিচ্ছি।

    লিংক: “Gene Genesis: Scientists Observe New Genes Evolving from Mutated Copies”

    – https://www.scientificamerican.com/…/gene-genesis-scientis…/

    উত্তর:  লিংকে জিন ডুপ্লিকেশন নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। জিন ডুপ্লিকেশনের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত সর্বচ্চো যেটা করা গিয়েছে তা হলো নিম্নরুপ- ধরুন, একটি ব্যাকটেরিয়াতে অলরেডি এক্সিসটিং এনজাইম, যার ডুয়েল ফাংশন আছে, এর মধ্যে একটি ফাংশন ‘ক’ শক্তিশালী এবং একটি ফাংশন ‘খ’ দুর্বল। উক্ত ব্যাকটেরিয়াতে ‘খ’ ফাংশন সম্পাদনকারী শক্তিশালী এনজাইমটি না থাকলে যেটা হবে (প্রয়োজনীয় প্রতিকূল পরিবেশে যেখানে উক্ত ‘খ’ এনজাইমটির ফাংশন খুবই জরুরী) প্রথম এনজাইমটির জিন ডুপ্লিকেটেড হবে এবং ডুপ্লিকেটেড কপিতে মিউটেশনের মাধ্যমে ‘খ’ ফাংশনটি এক পর্যায়ে শক্তিশালী হয়ে যাবে।

    এখানে কয়েকটি বিষয় লক্ষণীয়-
    এক, আগে মনে করা হতো এই প্রক্রিয়াটি পুরোপুির র‍্যানডম। কিন্তু, জেমন শ্যাপিরো দেখাচ্ছেন যে, ব্যাকটেরিয়ার ভিতর কঠিন পরিবেশে এডাপ্ট করার জন্য কতগুলো প্রক্রিয়া ইনবিল্ট আছে। ফলে ব্যাকটেরিয়া নতুন কোন পরিবেশে এলে তার ‘নির্দিষ্ট’ কিছু জেনেটিক রিজিওনে ‘র‍্যানডম মিউটেশন জেনারেটিং’ প্রক্রিয়া এক্টিভেট করে। যেন অভিনব পরিবেশে সে খাপ খাওয়াতে পারে। অর্থাৎ, আদতে এই প্রক্রিয়াটি র‍্যানডম না। বিষয়টার সাথে ভার্টিব্রেট জীবের ইমিউন সিস্টেমের পদ্ধতিগত মিল আছে।

    দুই, জিন ডুপ্লিকেশনের মাধ্যমে যদি এমন কোন এডাপটেশনের প্রয়োজন হয় যেখানে দুই বা ততোধিক অ্যামাইনো এসিড দরকার হবে এবং ফলে একাধিক পয়েন্ট মিউটেশনের দরকার হবে, সেক্ষেত্রে উক্ত এডাপটেশনটি জিনোমে ফিক্স হতে যে পরিমাণ অর্গানিজম দরকার তার সংখ্যা অনেক বেশী ১০^৯। কার্যত, ব্যাকটেরিয়া জাতীয় এককোষী প্রাণী ছাড়া এ ধরনের মিউটেশন সম্ভব নয়। (১)

    তৃতীয়ত, ক্লোরোকুইন রেজিসেন্ট-এর প্রাকটিকেল উদাহরণ হতে দেখা যায় যে যেখানে দুটো প্রোটিন প্রোটিন ইন্টারেকশন সাইটে সাইমুলটেনিয়াস মিউটেশন লাগে সেখানে মিনিমাম অর্গানিজম দরকার ১০^২০। (২)

    চতুর্থত, একটি এনজাইমকে ভিন্ন ফাংশনের একটি এনজাইমে পরিণত করতে দরকার ৭ বা ততোধিক সাইমুলটেনিয়াস মিউটেশন। (৩)

    অর্থাৎ, আপনার আর্টিকেল থেকে র‍্যানডম প্রক্রিয়ায় নতুন তথ্য যোগ অহরহ হয় বলে যে দাবী করলেন এটা এক্সাজারেশন। বরং, র‍্যানডম প্রক্রিয়ায় নতুন তথ্য যোগ হওয়া সম্ভব হলেও তার জন্য প্রয়োজনীয় অর্গানিজম আপনি পৃথিবীর ইতিহাসে খুজে পাবেন না। বস্তুত, চারটি সাইমুলটেনিয়াস মিউটেশনের জন্য দরকার ১০^৪০ টি ব্যাকটেরিয়া (অর্গানিজম)। যা পৃথিবীর ইতিহাসে যতগুলো ব্যাকটেরিয়া তৈরী হয়েছে তার সমান। (২)

    1. http://onlinelibrary.wiley.com/doi/10.1110/ps.04802904/full
    2. Michael Behe, Edge of evolution
    3. http://bio-complexity.org/…/view/BIO-C.2011.1/BIO-C.2011.1