Category: বিবর্তনতত্ত্ব

  • The devil lies in the detail!

    বিবর্তন হয় দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে প্রজাতির বংশধরদের মধ্যে বেঁচে থাকার জন্য অধিকতর যোগ্য প্রকরণের বংশবৃদ্ধির মাধ্যমে।

    ফিঞ্চ পাখির কথাই চিন্তা করি। ধরি, একটি ফিঞ্চ প্রজাতির পরবর্তী প্রজন্মে এমন কিছু ফিঞ্চ জন্ম নিল, যেগুলোর পরিবর্তিত বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণে তার পূববর্তী বংশধরদের চেয়ে প্রাকৃতিক খাদ্য সরবরাহ থেকে বেশী খাদ্য গ্রহণ করতে পারে। যেমন গ্যালোপ্যাগাস আইল্যান্ডে যখন খরা আসে, তখন যেই ফিঞ্চ প্রজাতির ঠোঁটগুলো শক্ত ও খাটো তারা প্রকৃতিতে বিদ্যমান শক্ত বীজগুলোকে গ্রহণ করতে পারে। অন্যদিকে, খরার কারণে গাছের বীজগুলোর খোলস শক্ত হয়ে রেজিলিয়েন্স বাড়িয়ে ফেলে।

    ফলে, এই বিশেষ প্রজাতির ফিঞ্জগুলো অন্যদের তুলনায় বেঁচে থাকার চেষ্টায় এগিয়ে যাবে, এবং তাদের বংশগুলোই পরবর্তীতে বিস্তার লাভ করবে।

    সুতরাং, বোঝা যাচ্ছে প্রজাতির মাঝে যে ভ্যারিয়েশন আছে, তার মধ্যে সংশ্লিষ্ট পরিবেশে বেঁচে থাকার জন্য অধিকতর যোগ্য প্রজাতিই পরিবেশে টিকে যাবে।

    এবার, চিন্তা করে দেখুন, এভাবে লক্ষ লক্ষ বছর চলতে থাকলে হয়ত এমন কিছু প্রজাতির আবির্ভাব হবে, যাদের বৈশিষ্ট্য অনেকটাই আলাদা এবং যাদেরকে হয়ত ভিন্ন প্রজাতিই বলার সুযোগ আছে।

    এখন, কৌতুহলি মন হয়ত প্রশ্ন করতে পারে- “তাহলে, এই ভ্যারিয়েশনগুলো তৈরী হয় কিভাবে?”

    উত্তর- ভ্যারিয়েশনগুলো আসে জেনেটিক পরিবর্তনের মাধ্যমে। অধিকাংশ জেনেটিক পরিবর্তন হয় ননর‍্যানডম প্রক্রিয়ায় এবং কিছু পরিবর্তন হয় র‍্যানডম প্রক্রিয়ায়।

    যেমন, ডিম্বানু বা শুক্রানু তৈরী হবার সময় মিয়োসিস প্রক্রিয়ায় জেনেটিক রিকম্বিনেশন ঘটে। ফলে, দুটো ক্রোমোজমের মধ্যে জেনেটিক ম্যাটিরিয়ালের স্পেসিফিক আদান প্রদান হয়। এ ধরনের ভ্যারিয়েশনের ফলে সৃষ্ট বংশধরে মূল গঠন কখনও পরিবর্তন হয় না। শুধু কিছু বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন হয়। যেমন, মানুষের আইরিশের রং, বা ভালুকের পশমের রং বা পরিমাণ প্রভৃতি।

    নতুন ড্র্যাস্টিক পরিবর্তনের জন্য (যেমন: চোখের ধরণ) দরকার জেনেটিক ম্যাটেরিয়াল বড় ধরনের পরিবর্তন। সমস্যা হলো এই ধরনের পরিবর্তন অটোমেটিক হঠাৎ আসার জন্য কোন মলিকিউলার ম্যাকানিজম নেই বা হয়ত সম্ভব নয়।

    যা হতে পারে তা হল ছোট ছোট পরিবর্তনগুলোর একটি ওপর আরেকটি জমা হতে হতে একটি পূর্ণাঙ্গ গাঠনিক রূপান্তর। এ কারণে, বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন যে ছোট ছোট মিউটেশন লক্ষ লক্ষ বছরের ব্যবধানে জমা হয়ে তৈরী হয় সম্পূর্ণ নতুন প্রজাতির জীব। এ ধারণা থেকে ব্যাখ্যা করা হয় যে এভাবে যথেষ্ট সময় দিলে তৈরী হতে পারে নতুন কোন জেনাস (Genus) বা ফ্যামিলি (Family) থেকে পর্ব (Phylum) পর্যন্ত।

    ছোট ছোট পরিবর্তন হবার জন্য জেনেটিক পর্যায়ের প্রক্রিয়ার সংখ্যা খুব সীমিত। তার মধ্যে সবচেয়ে কমন হচ্ছে মিউটেশন। যার মধ্যে আবার কমন হচ্ছে পয়েন্ট মিউটেশন। পয়েন্ট মিউটেশন প্রক্রিয়ায় একটি ডিএনএতে একটি নিউক্লিওটাইড পরিবর্তন হয়ে আরেক দ্বারা ভুল ভাবে প্রতিস্থাপিত হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই ভুলের মাশুল দিতে হয় সংশ্লিষ্ট জীবকে। হয় তার কোন কার্যক্রম নষ্ট হয়ে যায়, বা অঙ্গবিকৃতি ঘটে বা এক্সট্রিম ক্ষেত্রে মারা যায়।

    কিন্তু, কিছু ক্ষেত্রে মিউটেশনের মাধ্যমে সৃষ্ট নতুন প্রোটিনের গঠন হয়ত এমন হতে পারে যা উক্ত প্রোটিন কোষের যে আভ্যন্তরীন গঠনের সাথে বা ফাংশনের সাথে সংশ্লিষ্ট, সে গঠন বা ফাংশনে একটি নতুন ভ্যারিয়েশন সৃষ্টি করতে পারে।

    এই ভ্যারিয়েশনর ফলে হয়ত সে উক্ত কোষ ইমিডিয়েট মাইক্রোএনভায়রনমেন্টে নতুন একটি সুবিধা লাভ করে। যা তাকে বেঁচে থাকতে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরুপ, ব্যাকটেরিয়ার অ্যান্টিবায়োটিক রেজিসটেন্স, ই. কোলাই-এর গ্লুকোজের পরিবর্তে ল্যাকটোজ ব্যবহার ইত্যাদি ।

    সমস্যা হল, এ ধরনের ক্ষুদ্র উপকার ব্যাকটেরিয়া জাতীয় এককোষী জীবের বেঁচে থাকার জন্য ঠিকাছে। কিন্তু, বহুকোষী জীবে এই ধরনের একটি দুটি পরিবর্তন খুব বেশী প্রভাব ফেলে না। কারণ, বহুকোষীর জীবের ফাংশনগুলো সাধিত হয় স্পেসিফিক টিস্যু তথা কোষসমষ্টির মাধ্যমে গঠিত অঙ্গের মাধ্যমে। সুতরাং, বুঝতেই পারছেন একটি টিস্যুর ছোট একটি কোষে যদি একটি ক্ষুদ্র পরিবর্তন হয়, তাতে উক্ত জীবের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোন ভিজিবল পরিবর্তন হয় না। বরং, এই ধরনের ক্ষুদ্র পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রতিটি প্রাণীতে যে ভিন্নতা তৈরী হয়, তাকে বলে সিঙ্গেল নিউক্লিওটাইড পলিমরফিজম (SNP)।

    তবে হ্যা, পরিবর্তনটা যদি এমন জায়গায় হয় যে, একটা বাটারফ্লাই ইফেক্টের মাধ্যমে অঙ্গের মেজর রুপান্তর ঘটে তখন তা হতে পারে বিবর্তনের অনুঘটক। যেমন: এরকম একটি জায়গা হচ্ছে ডেভেলপমেন্টাল জিন রেগুলেটরী নেটওয়ার্ক (DGRN)। এটা কি?

    একটি ডিম্বানু ও শুক্রানুর সমন্বয়ে তৈরি হয় জাইগোট। এরপর একটি জাইগোট থেকে বহুবার কোষ বিভাজনের সময় তৈরী হয় একটি পূর্ণাঙ্গ জীব। আমরা জানি, একটি কোষ বিভাজনের মাধ্যমে ঠিক একই রকম দুটি কোষ তৈরী হয়। তাহলে, এভাবে বহুবার কোষ বিভাজন হতে থাকলে তো শুধু কতগুলো কোষের লাম্প বা ব্লব তৈরী হওয়া কথা। কিন্তু, কেন হয় না? কারণ, প্রথম প্রথম DGRN সক্রীয় থাকায়, এটি নির্ধারণ করে যে কোন কোষগোষ্ঠী কোন স্থানে যাবে। এভাবে তৈরী হয় জার্ম লেয়ার, যেখান থেকে আবার বিভিন্ন অঙ্গের পারস্পরিক অবস্থান নির্ধারিত এবং নিয়ন্ত্রিত হয়। এরকম জিন নেটওয়ার্কের মধ্যে একটি অন্যতম জিন হল Probox বা Homeobox gene যা নির্ধারণ করে করে হাত সংশ্লিষ্ট জিন কোথায় যাবে, পাখা সংশ্লিষ্ট জিন কোন স্থানে প্রবেশন করবে।

    এই জিনে যদি মিউটেশন হয়, তখন উপরোক্ত বাটারফ্লাই ইফেক্ট ঘটতে পারে। যেমন, ফ্রুট ফ্লাইতে এভাবে মিউটেশনের মাধ্যমে অ্যান্টেনার স্থানে পা চলে আসতে পারে, দুটোর জায়গায় চারটা উইং-এর উদ্ভব হতে পারে। কিন্তু, এই বিকৃত জীবগুলো সাধারনত বাঁচে না।

    এ কারণে দেখা গেছে DGRN-এর কোন স্থানে মিউটেশন জীবের জন্য ধ্বংসাত্মক হয়।

    জেনেটিক পরিবর্তনের একুমুলেট হবার ক্ষেত্রে আরেকটা বাঁধা হল, প্রতিটি ক্ষুদ্র পরিবর্তন পর্যায়ক্রমে উপকারী হতে হবে। কেননা, অপকারী পরিবর্তন জেনেটিক লোড বাড়িয়ে দেয়, যা পরবর্তী কয়েক জেনারেশনে সাধারণত ডিসকার্ড হয়ে যায়ে। লক্ষ্যনীয়, জেনেটিক লোড বৃদ্ধি পেলে তা সংরক্ষণ করতে অধিক এনার্জী প্রয়োজন হয়, যা কোষটির বা জীবটির বেঁচে থাকার জন্য কনডিউইসিভ না।

    তাহলে প্রশ্ন হল কিভাবে কোন প্রজাতিতে বড় ধরনের উপকারী ভ্যারিয়েশন তৈরী হবে?

    আমার জানা মতে এই ধরনের কোন ম্যাকনিজম নেই। জেনেটিক প্রক্রিয়ার আরও গভীরে গেলে একটা পটেনশিয়াল ম্যাকানিজম আছে, তা হল জিনডুপ্লিকেশন। জিনডুপ্লিকেশনের ফলে একটি জিনের কপি তৈরী হলে, সাধারণত এক্সট্রা কপিতে জীবের কোন ফাংশন নষ্ট না করেই পরিবর্তন আসতে পারে। পপুলেশন জেনেটিক প্রক্রিয়ায় উক্ত প্রজাতির বংশধরদের মধ্যে কতগুলো জীবে উক্ত পরিবর্তন থেকে যেতে পারে। কিন্তু, এভাবে একটি নতুন জিন পপুলেশনে ‘ফিক্স’ হতে, অনেক জটিলতা অতিক্রম করতে হয়।

    যেমন, উক্ত জিনসমেত প্রাণীর প্রকৃত সংখ্যা অনেক হতে হবে এবং জেনারেশনের সংখ্যাও অনেক বেশী হতে হবে। একটু বুঝিয়ে বলি। আমরা প্রকৃতিতে যে জীব দেখি তাদের সবার জনসংখ্যা কিন্তু সমান না, মানুষের সংখ্যা বিলিয়ন হলে, পিপড়ের সংখ্যা ট্রিলিয়ন। আবার, তিমির সংখ্যা হাতে গোনা হলে, ব্যাকটেরিয়ার জনসংখ্যা অগনিত। আবার, সব জীবের জীবনকাল সমান না। ব্যাকটেরিয়া যদি কয়েক মিনিট থেকে কয়েক দিন বেঁচে থাকে, মানুষ বাঁচে গড়ে প্রায় ৭০ বছর। আবার, একটি কচ্ছপ দীর্ঘ দিন বেঁচে থাকে। ফলে, একটি জীব সংখ্যা অনেক হলে এবং তার জীবনকাল কম হলে, তার বংশ বৃদ্ধির সংখ্যা বেশী থাকে। আর যেহেতু একটি নতুন বৈশিষ্ট্য স্থিত হতে হলে অনেকগুলো পরিবর্তন একুমুলেট হতে হবে, ফলে যাদের বংশবৃদ্ধির সংখ্যা বেশী তাদের মধ্যে পরিবর্তন একুমুলেট হবার সম্ভবনা বেশী। তদুপরী, প্রশ্ন যদি একটি ব্যাকটেরিয়াকে আইডিয়েল ধরে নেই, এভাবে একটি পরিবর্তন পপুলেশনে স্থায়ী হতে কতদিন লাগতে পারে?

    বিজ্ঞানীরা এই প্রশ্ন নিয়ে গবেষণা করেছেন। John Sanford ও তার দল একটি গবেষণায় দেখিয়েছেন যে দুটি নিউক্লিওটাইডের একটি সুতো ফিক্স হতে সময় লাগে ৮ কোটি ৪০ লক্ষ বছর। এরকম পাঁচটি ফিক্স হতে সময় লাগে ২00 কোটি বছর(1)। যেহেতু, মানুষকে নীরিক্ষা করে এ হিসেব কষা সম্ভব না। তারা এটি করেছে কম্পিউটার সিমুলেশনের মাধ্যমে।

    প্রশ্ন হল, মাত্র পাঁচটি নিউক্লিওটাইডের পরিবর্তন ফিক্স হতে যদি এত দীর্ঘ সময় লাগে, তাহলে একটি পূর্ণ আঙ্গিক পরিবর্তনের জন্য যে সময় দরকার সে সময় টি কোথা থেকে আসবে? তুলনার জন্য বলছি পৃথিবীর বয়স ৪৫০ কোটি বছর। বহুকোষীর উদ্ভব হয়েছে কেবল ৩ কোটি ৫০ লক্ষ বছর আগে।

    এ প্রশ্নগুলো নিয়ে, বিজ্ঞানীরা ভেবেছেন এবং একদল ক্লাসিকাল নব্যডারউইনবাদ থেকে বেরিয়ে এসেছেন। তারা বিকল্প ম্যাকানিজমের খোঁজে আছেন। যেমন, একটা ম্যাকানিজম হতে পারে যে মিউটেশনগুলো নিয়ন্ত্রিত ভাবে হয়। ফলে, যখন কোন জীব কোন প্রাকৃতিক বাঁধার মুখে পরে, সে নিয়ন্ত্রিত উপায়ে মিউটেশন সংগঠিত করার মাধ্যমে বিভিন্ন কম্বিনেশন পারমুটেশন করে, নিজের শারীরিক সীমাবদ্ধতার মধ্যে সম্ভাব্য সকল জেনেটিক নতুনত্ব খুঁজতে থাকে। জেমস শ্যাপিরো এর নাম দিয়েছেন ন্যাচারাল জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং(2)। কিন্তু, ব্যাকটেরিয়া জাতীয় ক্ষুদ্র জীবের মাইক্রো এনভায়রনমেন্টে এটি বেঁচে থাকতে উপকারী হলেও বৃহত্তর জীবে বেঁচে থাকতে তা কিভাবে উপকারী তা এখনও গবেষণার মাধ্যমে পরিস্কার হয়নি।

    তবে একটু গভীরভাবে ভাবলে বুঝতে পারবেন, যে এ ধরনের কোন পরিকল্পিত বিবর্তন হতে হলে প্রথম কোষগুলো একটি প্রকিয়া তৈরী থাকতে হবে এবং যুগের সাথে সাথে সম্ভাব্য প্রাকৃতিক পরিবর্তনের বিষয়ে সম্মক অবগত থাকতে হবে, যেন আসন্ন পরিবর্তনের সময় উক্ত প্রক্রিয়া ব্যবহার করে একটি জীব নতুনত্ব খুঁজে নিতে পারে এবং তাদের বংশধরেরাও তা বজায় রাখতে পারে।

    কিন্তু, এ ধরনের কোন প্রক্রিয়াও আবিস্কৃত বা প্রস্তাবিত হয়েছে বলে আমার জানা নেই।

    এত দীর্ঘ আলোচনা কারণ হল, প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় বিবর্তন যে ঘটে তা প্রমাণ করার জন্য উপস্থাপিত উদাহরণগুলো খুব সুন্দরভাবেই ক্ষুদ্র বিবর্তনকে প্রমাণ করতে পারে। কিন্তু, সেই উদাহরণ থেকে সময়ের উপর ভর করে যে বিশাল লাফ দিয়ে বড় বিবর্তন হয়েছে বলে দাবী করা হয়, তার পক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ আছে বলে আমার মনে হয় না। কেন মনে হয়না বুঝাতে এতগুলো কথার অবতারণা।

    কেননা, the devil lies in the details!

  • #বিবর্তনকথন ৬: বিবর্তনতত্ত্বের সুন্দর একটি পরিচিতি

    বায়োটেকনলজিস্ট মাতি লাইজোলা ছিলেন এক সময়ের কড়া ডারউইনবাদী। জীবের আণবিক লেভেলে গবেষণা করা এই বিজ্ঞানী এক সময় ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন তত্ত্ব নিয়ে পড়া শুরু করেন এবং ডিজাইনতত্ত্বে আশ্বস্ত হয়ে ডারউইনবাদ ছেড়ে ডিজাইনতত্ত্বের দিকে ধাবিত হন। তার এই ব্যক্তিগত পড়াশুনা, অভিজ্ঞতা ও চিন্তাভাবনাকে গুছিয়ে তিনি একটি বই লিখেছেন। বইটির নাম: Heretic: One Scientist’s Journey from Darwin to Design।

    অ্যামাজনে বইটির রিভিউয়ারদের মধ্যে একজন বইটির শেষের দিক থেকে একটি প্যারা তুলে দিয়েছেন। প্যারাটিতে লেখক (মাতি লাইজোলা) বিবর্তনতত্ত্বের বিশাল পরিচিতিকে খুব অল্প কথায় চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন। নিচে আপনাদের জন্য প্যারাটিকে কোনরকম অনুবাদ করে দিচ্ছি।

    বিবর্তন খুব ধীরে হয়, তবে তারাতারিও হয়।  বিবর্তন গতিশীল এবং সময়ের সাথে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে পারে, শুধু সেই ক্ষেত্র ব্যতীত যখন মিলিয়ন বছরের ব্যবধানে কোন জীবকে একই রকম রাখে। এটি জীবের চূড়ান্ত জটিলতাকেও ব্যাখ্যা করে, আবার মার্জিত সরলতাকেও বুঝিয়ে দেয়। এটি আমাদের শেখায় কিভাবে পাখি উড়তে শিখেছে এবং একই সাথে কিভাবে উড়ার যোগ্যতা হাড়িয়েছে। বিবর্তন চিতা বাঘকে বানিয়েছে দ্রুতগতিসম্পন্ন এবং কচ্ছপকে বানিয়েছে ধীরগতির। এটি কোন কোন প্রাণীকে বানিয়েছে বড় এবং কোন কোনটাকে ছোট, কাউকে বানিয়েছে চোখ ধাঁধানো সুন্দর ও কাউকে বানিয়েছে বিরক্তিকর ধূসর। এটি মাছকে জোড়পূর্বক হাটতে শিখিয়েছে এবং হাটতে পারা প্রাণীকে পুনরায় সমুদ্রে পাঠিয়ে দিয়েছে। এটি একটি গঠন থেকে অন্যান্য গঠনের বিস্তার ঘটায়, একই সাথে ভিন্ন গঠনকে একই গঠনে এনে মিলিত করে। এটি সূক্ষাতিসূক্ষ ডিজাইনকেও ব্যাখ্যা করে, আবার দীর্ঘ সময় ধরে ‘জাঙ্ক’ তৈরী করে। বিবর্তন কিছু সময় এলোপাতাড়ি ও দিক নির্দেশনাহী এবং অন্য সময় একটি লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে আগায়। বিবর্তনের অধীনে জীবন হল একটি দয়ামায়াহীন স্বার্থপর যুদ্ধক্ষেত্র, তবে সেই সময় বাদে যখন এটি পরার্থপরতা শেখায়। এবং বিবর্তন এসব করে নতুন নতুন গজিয়ে ওঠা হাইপোথিসিসের মাধ্যমে। আধুনিক বিবর্তনতত্ত্ব হল সকল তত্ত্বের ‘রুব গোল্ডবার্গ’ মেশিন। এবং এতসব অভিনব কল্পনাবিলাসের ফলাফল কি? ‘ফ্লগিস্টন’ নামক অকার্যকর তত্ত্বের ন্যায়, এটি কোন কিছু ব্যাখ্যা না করেও সবকিছুই ব্যাখ্যা করে।

    …..


    বি.দ্র.:
    ১. মূল ইংলিশ প্যারাটুকু খুব সাবলিলভাবে লেখা। যার মর্যাদা আমি অনুবাদে রাখতে পারিনি। যাদের আগ্রহ আছে বইটির নাম ধরে সার্চ দিয়ে অ্যামজনে ঢুকে Michael A. Johnson-এর রিভিউটা পড়বেন।
    ২. বইটি পড়ার সৌভাগ্য এখনও হয়নি। তবে উক্ত প্যারাটি পড়ে বইটি পড়ার আগ্রহ লক্ষগুনে বেড়ে গিয়েছে।

  • #বিবর্তনকথন_৫.১

    ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন (আইডি)-এর প্রবক্তাদের একটি বড় বৈশিষ্ট্য হলো তারা জীববিজ্ঞানের অত্যন্ত জটিল বিষয়গুলো সাবলিল ভাবে উপস্থাপন করতে পারে। মলিকিউলার বায়োলজিস্ট, আইকনস অব ইভল্যুশন ও জম্বি সায়েন্স বই দুটির লেখক ড. জোনাথান ওয়েলস তাদের মধ্যে একজন। বরাবরের মতই তার চমৎকার আরেকটি লেখা আজকে পড়লাম তাদের মুখপাত্র সাইট www.evolutionnews.org-এ। (কমেন্টে পোস্টটির লিংক শেয়ার করলাম)

    প্রকৃতিতে Complex Specified Information (CSI) শুধুমাত্র বুদ্ধিমান সত্তার মানসিক কার্যক্রম (Mental activity) থেকে আসতে দেখা যায়। কোষের ডিএনএ-তে আছে CSI।  প্রোটিনের গঠন নির্ধারণকারী এই তথ্য আছে সরলরৈখিক ফর্মে।  এর বাইরেও কোষের ডিএনতে আরও কিছু কোড আছে: ডিএনএ-র কোন অংশ চালু হবে আর কোনটা চুপ থাকবে তার জন্য এপিজেনেটিক কোড, ডিএনএ-তে থেকে আরএনএ তৈরী হওয়া পর স্প্লাইসিং-এর জন্য স্প্লাইসিং কোড, ডিএনএ-থেকে ম্যাসেঞ্জার আরএনএ-তৈরী হয়ে কোথায় যাবে তার জন্য প্রয়োজনীয় জিপ কোড ইত্যাদি। এগুলো এক ধরনের সরলরৈখিক কোড যা একমাত্রিক।

    এর বাইরের কোষের গঠন এবং এক কোষ (জাইগোট) থেকে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রাণী হওয়ার জন্য আরও কিছু স্থানিক (Spatial) কোড আছে- বায়োইলেকট্রিক কোড এবং সুগার কোড। যেগুলো দ্বিমাত্রিক এবং ত্রিমাত্রিক কোড।

    বায়োইলেকট্রিক কোড-এর উপর নির্ভর করে এমব্রায়োর গঠন। অর্থাৎ, একটি কোষ থেকে বিভাজিত হতে হতে বহুকোষী প্রাণীতে পরিণত হওয়া সময়, কোষের ঝিল্লীতে তৈরী হওয়া আয়ন চ্যানেল গুলো এক ধরনের বায়োইলেকট্রিক ফিল্ড গঠন করে, যার উপর নির্ভর করছে এমব্রায়োর মাথা থেকে পা পর্যন্ত গঠনের সঠিক অবস্থান। অর্থাৎ, কোথায় মাথা হবে, কোথায় হাত-পা হবে, এগুলোর স্থানিক তথ্য ধারন করে এই বায়োইলেকট্রিক কোড।


    সুগার কোড নির্ধারণ হয় কোষঝিল্লীতে অবস্থিত গ্লাইকেন দ্বারা। সুগার কোডের কাজ হলো কোষ ঝিল্লীর ‘পোস্ট অফিস’ তৈরী এবং তার পোস্ট কোড নির্ধারণ করা। ঐ যে ডিএনএ থেকে বের হওয়ার আরএনএ যার মধ্যে জিপকোড ট্যাগ করা আছে, সে উক্ত পোস্ট কোডের উপর ভিত্তি করে কোষ ঝিল্লীর নির্দিষ্ট স্থানে যাবে। সুগার কোডের তথ্য বহনকারী কণার বৈশিষ্ট্যের কারণে সুগার কোড ডিএনএ-র জেনেটিক কোড অনেক বেশী জটিল।

    ফলে, সুগার কোড এবং বায়োইলেকট্রিক কোড জেনেটিক কোডের চেয়েও বেশী CSI ধারণ করে।


    যেখানে বিতর্কিত নিওডারউইনিয়ান প্রক্রিয়ায় জেনেটিক কোডের CSI ব্যাখ্যা করা সম্ভব না, সেখানে একটি কোষের অবস্থিত কয়েক লেয়ারের CSI কিভাবে এলোপাতাড়ি প্রক্রিয়ায় আসবে বলে দাবী করা যেতে পারে তা যে কোন ‘Sane’ ব্যক্তির জন্য বোঝাটা কঠিন।


    উল্লেখ্য, যে জেনেটিক কোড আবিস্কারের পর থেকে নিওডারউইনিজমের আধিপত্যের কারণে সেন্ট্রাল ডগমা নামক একটি দৃষ্টিভঙ্গি জীববিজ্ঞানের জগতে প্রচলিত ছিল। যেটি হল DNA থেকে RNA থেকে প্রোটিন (থেকে জীব)। ফলে ডিএনএ-র বাইরেও যে জটিল কোড থাকতে পারে এই প্রশ্নগুলো অনেক মুখ থুবড়ে পড়ে ছিলো। কিন্তু, নতুন নতুন আবিস্কারের মধ্য দিয়ে ডারউইনিয়ান প্যারাডাইম তার অন্তিম যাত্রাপথে ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটে থাকায় উক্ত প্রশ্নগুলো আলোর মুখ দেখছে।    

  • #বিবর্তনকথন_৫: নাল হাইপোথিসিস, অল্টারনেট হাইপোথিসিস ও ডারউইনিয় বিজ্ঞান

    বৈজ্ঞানিক গবেষণা পদ্ধতি তথা রিসার্চ মেথডলজির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম হল- আপনি যখন নতুন বিষয় নিয়ে গবেষণা করতে চান আপনাকে একটি ‘গবেষণা প্রশ্ন’ তথা রিসার্চ কোয়েশ্চেন দাড় করাতে হবে। এরপর উক্ত প্রশ্নের আলোকে আপনি একটি ‘প্রকল্প’ তথা ‘হাইপোথিসিস’ তৈরী করবেন। কিন্তু, রিসার্চ শুরু করার আগেই আপনি উক্ত প্রকল্পকে সত্য ধরে নিয়ে এগুবেন না। বরং, আপনার ডিফল্ট হাইপোথিসিস হবে ‘নাল হাইপোথিসিস’ এবং  আপনার হাইপোথিসিসকে বলবেন- ‘বিকল্প তথা অল্টারনেট হাইপোথিসিস’। অত:পর, আপনার অনুসন্ধান লব্ধ উপাত্তের পরিসংখ্যান থেকে যদি দেখেন যে যে ‘নাল হাইপোথিসিস’-কে বাতিল করা যায় ‘অল্টারনেট হাইপোথিসিস’ গ্রহণ করবেন।

    কি? জার্গন বেশী হয়ে গেল? চলুন কয়েকটি উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করি।

    ধরুন, আপনি গবেষণা করে দেখতে চান যে ধুমপানের সাথে ফুসফুস ক্যান্সারের কোন সম্পর্ক আছে কি না? কারণ, আপনি লক্ষ্য করেছেন যে ধুমপায়ী ও অধুমপায়ী নির্বিশেষে সবারই ফুসফুসের ক্যান্সার হচ্ছে। এজন্য আপনি একটি রিসার্চ কোয়েশ্চেন দাড় করালেন- ধুমপান কি ফুসফুসের ক্যান্সারের জন্য দায়ী? এই প্রশ্নের আলোকে আপনার হাইপোথিসিস হল-

    (ক)  ধুমপান ফুসফুসের ক্যান্সারের জন্য দায়ী।

    এই হাইপোথিসিসকে পরীক্ষা করতে আপনাকে ধরে নিতে হবে যে-

    (খ) ধুমপান ফুসফুসের ক্যান্সারের জন্য দায়ী নয়।

    বিজ্ঞানের পরিভাষায় (খ) হল নাল হাইপোথিসিস এবং (ক) হল অল্টারনেট হাইপোথিসিস।  এবার আপনি একদল ক্যান্সোরের রোগী  এবং সমবয়সী ও সমলিঙ্গের আরেকদল সাধারণ মানুষ নিয়ে তাদের মধ্যে ধুমপানের অনুপাত পরীক্ষা করবেন এবং পরিসংখ্যানের অংক কষে দেখবেন যে নাল হাইপোথিসিস  (খ)-কে বাতিল করা যায় কিনা। যদি করা যায়, তাহলে আপনার অল্টারনেট হাইপোথিসিস (ক) গৃহিত হবে। অর্থাৎ, আপনি উপসংহার টানতে পারবেন যে ধুমপানের সাথে ফুসফুসের ক্যান্সারের সম্পর্ক আছে কি নেই।

    (এই নাল হাইপোথিসিস বাতিল করার পদ্ধতিটিতে সম্ভাব্যতার ব্যবহার আছে,যার সাথে আবার বিবর্তনবাদ ও এবায়োজেনেসিসের সম্পর্ক আছে- যে বিষয় অন্য সময় লিখব ইন শা আল্লাহ)  

    কিন্তু, প্রশ্ন হল আমি গবেষণায় ‘অল্টারনেট হাইপোথিসিস’ ধরে নিলে সমস্যা কি?

    উত্তর: সমস্যা আছে। সমস্যা হল এটি গবেষণাকে বায়াসড করে দিবে।

    কিভাবে?

    কিভাবে ‘বায়াস’ করে তার উত্তর জানতে চলুন আমরা একটি মসজিদ থেকে ঘুরে আসি। মনে করুন আপনি ‘গ’ মসজিদে গিয়ে ওযু খানায় ভুল করে মানিব্যাগ ফেলে এসেছেন। একজন সহৃদয় ব্যক্তি আপনার মানিব্যাগটি পেয়ে মসজিদের ইমামকে দিয়েছেন। জামাত শেষ হলে ইমাম মাইকে ঘোষণা দিলেন যে ওযুখানায় একটি মানিব্যাগ পাওয়া গিয়েছে, যারা মানিব্যাগ সে যেন উপযুক্ত প্রমান দিয়ে নিয়ে যায়। নামাজ শেষে ইমাম সাহেবের কাছে গিয়ে আপনি দেখলেন যে তার কাছে আপনি ছাড়াও আর একজন পরিপাটি ও সুদর্শন ব্যক্তি ‘ঘ’ মানিব্যাগটির দাবী করছে। এমতবস্থায় ইমামের ‘হাইপোথিসিস’ কি হবে? ইমাম যদি ‘ঘ’ সাহবের বেশভূষা থেকে ধরে নেন যে মানিব্যাগটা ‘ঘ’ সাহেবের, তাহলে উনি বায়াসড হয়ে গেলেন। ঠিক একই ভাবে যদি তিনি ধরে নেন মানিব্যাগটি আপনার তাহলেও উনি বায়াসড হয়ে গেলেন। এমতাবস্থায় তিনি মনে মনে ধরে নেবেন যে মানিব্যাগটি ‘গ’ বা ‘ঘ’ কাররই নয়, অর্থাৎ ‘নাল হাইপোথিসিস’। কিন্তু, তার মনে দুটি অল্টারনেট হাইপোথিসিস থাকবে- এক,  মানিব্যাগটি ‘গ’-এর এবং দুই, মানিব্যাগটি ‘ঘ’-এর।   এরপর যে ব্যক্তি মানিব্যগটির বৈশিষ্ট্যগুলোর সর্বচ্চো সঠিক বর্ণনা দিতে পারবেন, (যেমন: ওযু খানায় কোন দিকটাতে বসেছিলেন, মানিব্যাগের রং কি, কয়টি পকেট আছে, কি কি জিনিস ছিল, কত টাকা ছিল ইত্যাদি)  তাকে তিনি মানিব্যাগটি ফেরত দিবেন।

    চলুন আরেকটি উদাহরণ দেখে আসি কোর্ট থেকে। একজন ‘ব্যক্তিকে’ চুরির অপরাধে বিচার করা হচ্ছে। এমতাবস্থায় জাজ যদি উক্ত ব্যক্তিই চোর ধরে নেন তাহলে সম্ভাবনা থাকে যে তিনি একজন নিরাপরাধ ব্যক্তিকে শাস্তি দিয়ে দিবেন। কিন্তু, তিনি যদি ধরে নেন যে উক্ত ব্যক্তি চোর নয় (নাল হাইপোথিসিস) একজন নিরাপরাধ ব্যক্তি শাস্তি থেকে মুক্তি পেতে পারে। জাজ যদি উপযুক্ত তথ্য-প্রমানের আলোকে দেখেন যে এই ব্যক্তি চোর না হয়ে পারে না, তাহলে তিনি নাল হাইপোথিসিস বাতিল করে সিদ্ধান্ত নিবেন যে উক্ত ব্যক্তি চোর (অল্টারনেট হাইপোথিসিস) এবং শাস্তি দিবেন।

    আশা করি, উপরোক্ত উদাহরণগুলো থেকে পাঠক ‘নাল হাইপোথিসিস’ ও ‘অল্টারনেট হাইপোথিসস’ এর গুরুত্ব বুঝতে পেরেছেন।

    একটি কার্যকারণের পিছনে যদি একাধিক অল্টারনেট হাইপোথিসিস থাকে। তখন আমি কোন্ অল্টারনেট হাইপোথিসসটি গ্রহণ করবো তা নির্ভর করছে সংশ্লিষ্ট হাইপোথিসিসটির পক্ষে উপস্থাপিত প্রমানের সংখ্যা ও কোয়ালিটির উপর।

    একটি বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের পিছনে প্রমাণ প্রধানত  দুই ধরনের হয়- এক্সপেরিমেন্টাল ও অবজারভেশনাল। একটি করে উদাহরণ দিয়ে বোঝাই।

    বিজ্ঞানী রিচার্ড লেনস্কি ও তার দল ব্যাকটেরিয়াতে বিবর্তনের প্রমাণ দেখার জন্য একটি ‘লং টার্ম ইভল্যুশন এক্সপেরিমেন্ট’ চালাচ্ছেন।

    এবার চলুন আমরা দেখি বিজ্ঞানী ডারউইন কিভাবে তার বই-এ ‘বিবর্তনবাদ’-কে প্রজাতির আবির্ভাবে প্রমানিত তথা ডিফল্ট হাইপোথিসিস হিসেবে উপস্থাপন করছেন।          ডারউইন তার বই-এর প্রথমে আর্টিফিসিয়াল সিলেকশন, জিওগ্রাফীক ডিস্ট্রিবিউশন, হোমোলজি এবং ভেস্টিজিয়াল অর্গান নামক কিছু প্রমাণ উপস্থাপন করে প্রজাতির উৎপত্তি ব্যাখ্যাতে তার হাইপোথিসিস ‘বিবর্তনবাদ’-কে প্রমানিত হিসেবে উপস্থাপন করেছেন।

  • ডারউইনবাদ যেভাবে টিকে আছে

    কয়েকদিন আগে লিখেছিলাম যে ডারউইনবাদী প্যারাডাইম সমাপ্তির পথে। ডারউইনবাদী বিজ্ঞানীরা বিবর্তনের ডারউইনবাদী ব্যাখ্যার বিকল্প পথগুলোর ব্যাপারে ‘সেমেলওয়াইজ রিফ্লেক্স’-এ আছে। অর্থাৎ যেহেতু বিকল্পগুলো ডারউইনবাদী প্যারাডাইম-কে প্রশ্নবিদ্ধ করছে, ফলে এর অনুসারীরা ওগুলো মেনে নিতে পারছে না।

    ডারউইনবাদীতার ক্ষেত্রটি অন্যান্য বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব থেকে একটু ভিন্ন। কারণ, এটি জৈবজগতের একটি বস্তুবাদী ব্যাখ্যা দাড় করানোর চেষ্টা করে। ফলে, এর উপর দাড়িয়ে আছে বস্তুবাদ, ধর্মনিরপেক্ষ মানবতাবাদ এবং নাস্তিকতাবাদ-এর ভিত্তি। যে তত্ত্বটির ওপর এতগুলো ‘ইজম’ তথা ‘মতবাদ’-এর ভিত্তি দাড়িয়ে আছে, সেটির বিরুদ্ধে যখন কোন প্রমাণ আসে তখন শুধু তত্ত্বটি আক্রান্ত হয় না সাথে অন্যান্য মতবাদগুলোও দুর্বল হয়ে যায়। এ কারণে আপনি পাশ্চাত্যের বৈজ্ঞানিক মহলে ডারউইনবাদের বিপরীত কোন ব্যাখ্যা গ্রহণ করলে আপনাকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে অপদস্থ করা হবে। বিজ্ঞানের মহলে আপনার অবদান যা-ই হোক না কেন। এমনকি আপনার নামে যদি অনেকগুলো প্রজাতির নামকরণও হয়ে থাকে, আপনাকে তারা নিয়মতান্ত্রিকভাবে অপমান করবে- প্রথমে কোন সুনির্দিষ্ট কারণ না দেখিয়ে আপনার গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে অপসারিত করবে এবং তারপর আপনার অবদানকে অপপ্রচার এবং তথ্য লুকানোর মাধ্যমে অস্বীকার করবে।       

  • Noble prize given to intelligent design

    Dr. Frances Arnold got the noble for directing evolution (read ‘micro-evolution’) to generate new enzymes. This is a precious example of design in chemistry and what intelligent design can do.

    No natural and random process had produced the new enzymes. It was produced by meticulously planning and directing the process of micro-evolution. She and her colleagues were directing the ‘copying error’ to improve sub-function of an existing enzyme which usually engage in different chemical reaction.

    But, why they had to take a tedious route to invent new enzymes? That is because, we do not yet know how a particular chain and sequence of amino acids would function assuming a particular shape. If we could have gathered all that information at that tiny level we could have produced new enzyme de-novo.


    In fact Dr. Arnold explains precisely that in one of her articles:

    “Unfortunately, our understanding of the link between sequence and function lags well behind our desire for new enzymes. Given that our ability to predict protein sequences–or even just changes to a sequence–that reliably give rise to whole new, finely tuned catalytic activities is rudimentary at best, creating new enzymes capable of improving on current synthetic processes is a pretty tall order. We also dream of going beyond known chemistry to create enzymes that catalyze reactions or make products that are simply not possible with any known method, synthetic or otherwise. Requiring that these new enzymes assemble and function in cells, where they can be made at low cost and incorporated into synthetic metabolic pathways to generate a broader array of products, represents an even greater set of engineering constraints and challenges.(1)”    

    She also writes:

    “Directed evolution achieves these desirable functional outcomes while circumventing our deep ignorance of how sequence encodes them”

    The new function the enzyme achieved was not completely new. Usually they chose the enzymes from the natural world which were doing other important function but also had the desired catalytic capacity in a minimal level. By directing the copying error process Dr. Arnold’s team tried to improvise that desired function. On her own words:


    “We start with existing proteins (sourced from Nature or engineered), introduce mutations, and then screen for the progeny proteins with enhanced activity (or another desirable trait). We use the improved enzymes as parents for the next round of mutation and screening, recombining beneficial mutations as needed and continuing until we reach the target level of performance.(1)”

    I am not speaking of ‘copying error’ out of ignorance. Read her own comments on the issue:

    “Engineering enzymes in the 1980s and 1990s, I learned the hard way that there was no reliable method to predict performance-enhancing mutations. Turning instead to random mutagenesis and screening, I quickly realized that such mutations were easy to find and accumulate with the right evolutionary optimization strategy(1).” I wanted to go deep. But let’s stop it here. Given the circumstances we can conclude that this year the noble prize was given to intelligent design(2,3).

    1.          Arnold FH. Directed Evolution: Bringing New Chemistry to Life. Angew Chemie – Int Ed. 2018;57(16):4143–8.

    2.          Douglas Axe. Nobel Prize in Chemistry for Intelligent Design? | Evolution News [Internet]. [cited 2018 Oct 19]. Available from: https://evolutionnews.org/2018/10/nobel-prize-in-chemistry-for-intelligent-design/

    3.          Michael Egnor. Intelligent Design Wins Another Nobel Prize | Evolution News [Internet]. 2018 [cited 2018 Oct 19]. Available from: https://evolutionnews.org/2018/10/intelligent-design-wins-another-nobel-prize/

  • Is the theory of evolution a fact?

    The answer is yes and no.

    Microevolution is a fact, and

    Macroevolution is a theory.

    There is a difference between fact and theory. Fact in science is considered established when numerous scientists, in many different ways, have repeatedly observed a cause-event relationship. In addition, when based on that observation, similar future events could be accurately predicted in the presence of that cause. Newton’s law of gravity is such a fact. (However, one might argue that even the law of gravity couldn’t be a fact for a possible universe where the law of gravity doesn’t work. But, let us keep the discussion in our universe.)

    Check, for example, the definition of fact given by Naitonal Center of Science Education (NCSE) (1):

    Fact: In science, an observation that has been repeatedly confirmed and for all practical purposes is accepted as “true.” Truth in science, however, is never final and what is accepted as a fact today may be modified or even discarded tomorrow.

    A theory, on the other hand, is defined by NSCE as follows-

    Theory: In science, a well-substantiated explanation of some aspect of the natural world that can incorporate facts, laws, inferences, and tested hypotheses.


    Hence, microevolutionary events and, therefore, microevolution are facts. Because, this can be observed and had been repeatedly observed by numerous scientists by different scientific methods.

    On the other hand, macroevolutionary events are, by definition unobservable. Because you can’t observe these events over millions of years of time. All the evidence for macroevolution is indirect inferences from different disciplines. The majority of these evidences is based on homology, either anatomic, developmental, or molecular. Unfortunately, most often, phylogenetic trees based on molecular and anatomic (fossil) similarities DO NOT converge (i.e., do not point to a single unequivocal origin for different species). Hence, macroevolution is not a fact. At best, it can be claimed as a theory with lots of indirect (speculative) evidence.

    Also, we can not predict any macroevolutionary event based on the current evidence. Even if we could predict, we would not be able to observe macroevolutionary changes. Because, that would require at least thousands of years. However, macroevolutionary changes could be easily observed in the bacteria. If you can observe a bacteria change to a different bacteria over tens of years, you could easily prove macroevolution. Because in the case of bacteria, where the reproductive rate is much higher, even small number of microevolutionary changes could change the bacteria’s structure to produce new bacterial species over a relatively shorter period. However, even the long-term evolution experiment of Richard Lenski’s team (2) was unable to produce a new ‘bacteria’ from the existing one. At best, they were able to activate a silent gene in a relatively constrained environmental (evolutionary) pressure, which could be easily assumed to have happened due to natural genetic engineering, a theory explained by James Shapiro (3).

    Ref:

    1. https://ncse.ngo/definitions-fact-theory-and-law-scientific-work
    2. https://www.nature.com/articles/d41586-022-01620-3
    3. https://www.sciencedirect.com/science/article/abs/pii/0959437X93900038
  • মাইক্রো থেকে ম্যাক্রো ইভলুশন: আদৌ কি সম্ভব? (পর্ব ২)

    বিবর্তনতত্ত্বের পপুলারাইজারদের মতে মাইক্রো থেকে ম্যাক্রো ইভলুশন হবার ব্যাপারে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। কেননা ম্যাক্রোইভলুশন না হলে আমরা আজ এখানে বসে আলোচনা করছি কিভাবে? ম্যাক্রোইভলুশনের কারণেই তো মানুষ এসেছে, তাই না?

    কিন্ত, একাডেমিয়াতে এটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। যারা বিবর্তনের ম্যাকানিজমের সমালোচনা করেন, তাদের সকল একাডেমিক ডিবেটগুলো মূলত এই জায়গাটাতেই।

    বস্তুত, The Third Way  গ্রুপটি তৈরী হয়েছে এমন একদল বিজ্ঞানী নিয়ে যারা ইভুলশনারী সিনথেসিস (নিও-ডারউইনিজম)-এর বর্ণীত ম্যাকানিজম (র‍্যানডম মিউটেশন, ন্যাচারাল সিলেকশন, জেনেটিক ড্রিফট, জিন ফ্লো, হিচহাইকিং, ননর‍্যানডম মেটিংপ্রভৃতি)-কে অপর্যাপ্ত মনে করেন।

    ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন প্রবক্তা এবং কয়েকজন ইনডিভিজুয়াল রিসার্চারদের গবেষণা অনুযায়ী এখন পর্যন্ত প্রস্তাবিত কোন ম্যাকানিজমই মাইক্রো থেকে ম্যাক্রো ইভলুশন ঘটাতে পারে না। (এজন্য এরা মেইনস্ট্রিমে ঘৃণীত বা ক্রিয়েশনিস্ট হিসেবে ধীকৃত হন বা এড হোমিনেম এর শিকার হন।)

    আসলে মাইক্রো থেকে ম্যাক্রো ইভলুশনের অনেকগুলো হার্ডল আছে। যা দীর্ঘ আলোচনার বিষয়। এর আগে এ বিষয়ে একটি দীর্ঘ পোস্ট লিখেছিলাম।

    মাইক্রো থেকে ম্যাক্রো ইভলুশন: আদৌ কি সম্ভব?

    আগের প্রবন্ধে অল্প কিছু বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। অদ্য প্রবন্ধে আরও কিছু বিষয় সন্নিবেশিত হল।
    পপুলেশন জেনেটিক্সের পর্যায়ে কিছু গবেষণা আছে যা মাইক্রোইভলুশন থেকে ম্যাক্রোইভলুশন হওয়ার হার্ডলগুলোকে প্রকাশ করেছে। যেমন, ওয়েটিং টাইম প্রবলেম। একটি  গবেষণা (1) দেখিয়েছে যে মাত্র ৫টি নতুন নিউক্লিওটাইড হোমিনিন ম্যাক্রোইভলুশনের মধ্য দিয়ে হোমিনিন পপুলেশনে যোগ হতে প্রায় ২ বিলিয়ন বছর লাগে। অথচ, ফসিল রেকর্ড অনুযায়ী সবচেয়ে পুরোনো হোমিনিন এসেছে মাত্র ৪.৫ মিলিয়ন বছর আগে।

    আগে মনে করা হতো মিউটেশন প্রক্রিয়াটি পুরোপুরি র‍্যানডম। কিন্তু, জেমন শ্যাপিরো(2) দেখিয়েছেন যে, ব্যাকটেরিয়ার ভিতর কঠিন পরিবেশে এডাপ্ট করার জন্য কতগুলো প্রক্রিয়া ইনবিল্ট আছে। ফলে ব্যাকটেরিয়া নতুন কোন পরিবেশে এলে তার ‘নির্দিষ্ট’ কিছু জেনেটিক রিজিওনে ‘র‍্যানডম মিউটেশন জেনারেটিং’ প্রক্রিয়া এক্টিভেট করে। যেন অভিনব পরিবেশে সে খাপ খাওয়াতে পারে। অর্থাৎ, আদতে এই প্রক্রিয়াটি র‍্যানডম না। বিষয়টার সাথে ভার্টিব্রেট জীবের ইমিউন সিস্টেমের পদ্ধতিগত মিল আছে।

    জিন ডুপ্লিকেশন হল নতুন ফাংশন যুক্ত জিন তৈরীর একটি কার্যকর উপায়। কিন্তু, জিন ডুপ্লিকেশনের মাধ্যমে যদি এমন কোন এডাপটেশনের প্রয়োজন হয় যেখানে দুই বা ততোধিক অ্যামাইনো এসিড দরকার হবে। অর্থাৎ, একাধিক পয়েন্ট মিউটেশনের দরকার হবে। সেক্ষেত্রে উক্ত এডাপটেশনটি জিনোমে ফিক্স হতে যে পরিমাণ অর্গানিজম দরকার তার সংখ্যা অনেক বেশী ১০ (3)। অর্থাৎ, ব্যাকটেরিয়া জাতীয় এককোষী প্রাণী ছাড়া অন্য কোন প্রাণীতে এই ধরনের পরিবর্তন আসা প্রায় অসম্ভব।

    ম্যালেরিয়া জীবানু Plasmodium-এ ক্লোরোকুইন রেজিসেন্ট হতে প্রোটিন-প্রোটিন ইন্টারেকশন সাইটে মিউটেশন লাগে। মাইকেল বিহে তার বাই Edge of Evolution (4)-এ হিসেব করে দেখিয়েছেন যে, একটি প্রোটিন প্রোটিন ইন্টারেকশন সাইটে সাইমুলটেনিয়াস মিউটেশন (দুটি মিউটেশন একই সাথে) হতে মিনিমাম অর্গানিজম দরকার ১০২০। ফলে, চারটি সাইমুলটেনিয়াস মিউটেশনের জন্য দরকার ১০৪০ টি ব্যাকটেরিয়া (অর্গানিজম)। যা পৃথিবীর ইতিহাসে যতগুলো ব্যাকটেরিয়া তৈরী হয়েছে তার সমান। অর্থাৎ, র‍্যানডম প্রক্রিয়ায় নতুন তথ্য যোগ হওয়া সম্ভব হলেও তার জন্য প্রয়োজনীয় অর্গানিজম পৃথিবীর ইতিহাসে খুজে পাওয়া যাবে না।

    এন গজার এবং ডগলাস এক্স, পরীক্ষা করে দেখেছেন একটি এনজাইমকে ভিন্ন ফাংশনের একটি এনজাইমে পরিণত করতে দরকার কমপেক্ষে সাতটি বা ততোধিক একই সাথে সংঘটিত মিউটেশন (5)। সুতরাং, উপরের প্যারায় বর্ণিত পয়েন্টের সাপেক্ষে বিবেচনা করলে এই ধরনের পরিবর্তন আনার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক পপুলেশন পৃথিবীর ইতিহাসে পাওয়া কঠিন।   

    কিন্তু, মাইক্রো থেকে ম্যাক্রো ইভলুশনের পথে আরও বড় বাধা হচ্ছে এই আবিস্কার যে একটি জীবের গঠন শুধুমাত্র তার ডিএনএ-তে সন্নিবেশিত তথ্যের উপর নির্ভর করে না। কারণ, ডিএনএ-তে প্রোটিনের গঠন নির্ধারণকারী তথ্য আছে সরলরৈখিক ফর্মে। কিন্তু, এর বাইরে কোষের ডিএনতে আরও কিছু কোড আছে। যেমন: ডিএনএ-র কোন অংশ চালু হবে আর কোনটা চুপ থাকবে তার জন্য এপিজেনেটিক কোড, ডিএনএ-তে থেকে আরএনএ তৈরী হওয়া পর স্প্লাইসিং-এর জন্য স্প্লাইসিং কোড, ডিএনএ-থেকে ম্যাসেঞ্জার আরএনএ-তৈরী হয়ে কোথায় যাবে তার জন্য প্রয়োজনীয় জিপ কোড ইত্যাদি। এগুলো এক ধরনের সরলরৈখিক কোড যা একমাত্রিক। এর বাইরের কোষের গঠন এবং এক কোষ (জাইগোট) থেকে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রাণী হওয়ার জন্য আরও কিছু স্থানিক (Spatial) কোড আছে- বায়োইলেকট্রিক কোড এবং সুগার কোড। যেগুলো দ্বিমাত্রিক এবং ত্রিমাত্রিক কোড।

    বায়োইলেকট্রিক কোড-এর উপর নির্ভর করে এমব্রায়োর গঠন। অর্থাৎ, একটি কোষ থেকে বিভাজিত হতে হতে বহুকোষী প্রাণীতে পরিণত হওয়া সময়, কোষের ঝিল্লীতে তৈরী হওয়া আয়ন চ্যানেল গুলো এক ধরনের বায়োইলেকট্রিক ফিল্ড গঠন করে, যার উপর নির্ভর করছে এমব্রায়োর মাথা থেকে পা পর্যন্ত গঠনের সঠিক অবস্থান। অর্থাৎ, কোথায় মাথা হবে, কোথায় হাত-পা হবে, এগুলোর স্থানিক তথ্য ধারন করে এই বায়োইলেকট্রিক কোড।

    সুগার কোড নির্ধারণ হয় কোষঝিল্লীতে অবস্থিত গ্লাইকেন দ্বারা। সুগার কোডের কাজ হলো কোষ ঝিল্লীর ‘পোস্ট অফিস’ তৈরী এবং তার পোস্ট কোড নির্ধারণ করা। ঐ যে ডিএনএ থেকে বের হওয়ার আরএনএ যার মধ্যে জিপকোড ট্যাগ করা আছে, সে উক্ত পোস্ট কোডের উপর ভিত্তি করে কোষ ঝিল্লীর নির্দিষ্ট স্থানে যাবে। সুগার কোডের তথ্য বহনকারী কণার বৈশিষ্ট্যের কারণে সুগার কোড ডিএনএ-র জেনেটিক কোড অনেক বেশী জটিল।

    এ কারণে শুধু জেনেটিক লেভেলে পরিবর্তন এবং এভাবে সৃষ্ট উপকারী ভ্যারিয়েশনের প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে মাইক্রো থেকে ম্যাক্রোইভলুশন হবার দাবীর সাথে ‘দ্য থার্ড ওয়ে’-সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা একমত হতে নারাজ। এজন্য, তারা অন্যান্য ম্যাকানিজম, যেমন- symbiogenesis, horizontal gene transfer, mobile DNA action এবং epigenetic modification কে আমলে নিয়ে Extended synthesis of Evolution-এর প্রস্তাবনা করেছেন (6)। কিন্তু, এ সব ম্যাকানিজমের সমন্বয়ে একটি Holistic প্রস্তাবনা তারা দিতে চাইছেন। যদি এই প্রস্তাবনা বিবর্তনের একটি সমন্বিত পথপরিক্রমা দেখাতে সক্ষম হয়, তখনই কেবল মাইক্রো থেকে ম্যাক্রোইভলুশন প্রাকৃতিক নিয়মেই সম্ভব বলা যাবে।

    বাস্তবে ম্যাইক্রো থেকে ম্যাক্রো ইভলুশনের গবেষণা কঠিন বিধায় কম্পিউটারের সিমুলেশনের মাধ্যমে এর পক্ষে প্রমাণ খোঁজার অনেক চেষ্টা হয়েছে। গবেষকরা বিভিন্ন ইভলুশনারী আলগরিদম তৈর করে দেখাতে চেয়েছেন যে সিম্পল থেকে কমপ্লেক্স অর্গানিজম কিভাবে আসে। এ সম্পর্কিত প্রোগ্রামগুলোর সীমাবদ্ধতা ও সুযোগ নিয়ে অনেক তর্কবিতর্ক আছে। তবে মূল বিষয় হচ্ছে, এই প্রোগ্রামগুলোকে যদি প্রথমেই টিউন করে দেয়া হয়, তারা জটিলতার টার্গেট অর্জন করতে সক্ষম হয়। কিন্তু, এদের মধ্যে যদি প্রকৃত অনিশ্চয়তা (True randomness) সেট করা হয়, দেখা যায় যে উক্ত প্রোগ্রামগুলোর কোন কার্যকর বিবর্তন হয় না (7)।  

    পরিশেষে বলব, মাইক্রো থেকে ম্যাক্রো ইভলুশনের বিষয়টি অমিমাংসীত। বরং, আদৌ কি মাইক্রো থেকে ম্যাক্রো ইভলুশন প্রাকৃতিক উপায়ে হওয়া সম্ভব কিনা তা নিয়ে সন্দেহ করার অবকাশ আছে। তবে হ্যা যদি বিষয়টিকে এভাবে ভাবেন যে, Last Universal Common Ancestor অথবা Common Ancestor কোষগুলোতে ইন বিল্ট নিয়ন্ত্রিত এবং সুসংঘটিত বিবর্তন ম্যাকানিজম তৈরী করা ছিল তাহলে হয়ত সময়ে সাথে সাথে মাইক্রো থেকে ম্যাক্রো বিবর্তন ঘটতে পারে। তবে এ ধরনের Complete এবং Hollistic Mechanism-কেউ দিতে পেরেছে বলে আমার জানা নেই।

    তথ্যসূত্র:

    1. https://tbiomed.biomedcentral.com/…/s12976-015-0016-z
    2. https://www.sciencedirect.com/…/abs/pii/0959437X93900038
    3. http://onlinelibrary.wiley.com/doi/10.1110/ps.04802904/full
    4. Behe, Michael. The Edge of Evolution; pp. 143
    5. https://bio-complexity.org/ojs/index.php/main/article/viewArticle/BIO-C.2011.1
    6. https://www.thethirdwayofevolution.com/
    7. এ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে এই বইটিতে- Introduction to evolutionary informatics. আর জানা যাবে এই সাইট থেকে – https://evoinfo.org/
  • বিবর্তনতত্ত্ব, বিজ্ঞান এবং বিশ্বাস

    বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম

    বিলুপ্ত হোমিনিন প্রজাতির জিনোম এবং হিউম্যান ইভল্যুশন সংক্রান্ত আবিস্কারের জন্য ভ্যান্তে পাবো ২০২২ নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন। তিনি নিয়ানডার্থাল জিনোমের সিকোয়েন্সিং করেছেন।

    এই সংবাদটির আলোকে স্রষ্টায় অবিশ্বাসীদের দাবী হলো, এই আবিস্কার মানুষের বিবর্তন প্রমাণ করেছে, সুতরাং আব্রাহামিক ধর্মগুলোর আদম-হাওয়া তত্ত্বের কোন ভিত্তি নেই।

    মনে হয় যেন,নিয়ানডার্থাল জিনোম সিকোয়েন্সিং এবং হিউম্যান জিনোমের সাথে তুলনা করতে পারা মানেই মানুষের বিবর্তন প্রমাণিত হওয়া।

    সায়েন্টিজমের অনুসারী এবং নিও-এথিস্টদের স্ট্র্যাটেজি হচ্ছে বিজ্ঞানের মধ্যে তাদের ফিলোসফি ঢুকিয়ে ধর্মবিরোধী মতবাদের পক্ষে প্রচার চালানো। সেই হিসেবে এ ধরনের হাইপ কোন অস্বাভাবিক বিষয় না।

    তাই তাদের এই হাইপকে একপাশে রেখে আমাদের তিনটি প্রশ্নের আলোকে বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করা দরকার।

    ১. বিবর্তন তত্ত্ব বৈজ্ঞানিক ভাবে সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত কি না?

    ২. বিবর্তন তত্ত্ব স্রষ্টায় বিশ্বাসের সাথে সাংঘার্ষিক কিনা?

    ৩. বিবর্তনতত্ত্ব ইসলামের সাথে সাংঘার্ষিক কিনা?

    প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর অনেক বিস্তৃত এবং বড় কলেবরে এক বা একাধিক খণ্ডের বই-এর দাবী রাখে। তবে, এই পোস্টে খুব সংক্ষেপে ১ ও ২ নং প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আলোচনা থাকবে।

    প্রথমেই, ২নং প্রশ্ন। এই প্রশ্নের উত্তরটি সবচেয়ে সহজে দেয়া যায়-

    স্রষ্টার বিশ্বাসের সাথে বিবর্তনবাদ কোনভাবেই সাংঘার্ষিক নয়। কারণ, স্রষ্টা চাইলে সরাসরি জৈব প্রজাতিকে তাদের আকৃতিতে সৃষ্টি করতে পারেন অথবা ধারাবাহিক বিবর্তনের মাধ্যমে তৈরী করতে পারেন। এটি মেটাফিজিক্যালী ইমপসিবল কোন বিষয় নয়, কারণ এটি লজিক্যালী পসিবল।

    এখন, প্রথম প্রশ্নের উত্তর নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা থাকবে। কিন্তু, উক্ত আলোচনায় যাবার আগে চলুন হালকা জেনে নেই বিজ্ঞান কিভাবে কাজ করে।

    বিজ্ঞান যে কোন তত্ত্ব প্রমাণের জন্য পরীক্ষা নিরীক্ষামূলক তথ্য ও প্রমাণের ওপর নির্ভর করে। তবে, বর্তমান বৈজ্ঞানিক জগৎ কোন ঘটনার অতিপ্রাকৃতিক ব্যাখ্যার অনুমতি দেয় না। অর্থাৎ, বিজ্ঞানের শর্ত হচ্ছে কোন তত্ত্বের প্রমাণে কেবল প্রাকৃতিকভাবে পর্যবেক্ষণযোগ্য ব্যাখ্যা এবং উপাত্ত দিতে হবে।

    দেখা যাচ্ছে, বিজ্ঞানে যে কোন তত্ত্বের প্রমাণের প্রশ্নে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় জ্ঞানতত্ব এবং দর্শন চলে আসে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, প্রাকৃতিক নিয়ম দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে না এরকম ঘটনার প্রাকৃতিক কারণ খোঁজা যেন বন্ধ হয়ে না যায়।

    যেমন- পাখি কিভাবে উড়ছে? এই প্রশ্নে উত্তরে আমি যদি এটুকু বলে থেমে যাই যে আল্লাহ তাদের ওড়ার ক্ষমতা দিয়েছেন তাই উড়ছে, তাহলে পাখির উড়তে পারার যে এ্যারোডাইন্যামিক পদ্ধতি সে সম্পর্কে গবেষণা থেমে যাবে।

    এ কারণে, বিজ্ঞানীরা, হোক সে বিশ্বাসী বা অবিশ্বাসী, বৈজ্ঞানিক গবেষণার সময় পদ্ধতিগত প্রকৃতিবাদ (Methodological naturalism)- এর আশ্রয় নেন।

    কিন্তু, নব্য-নাস্তিকরা (Neo-atheist)-রা মানুষের মাঝে বিজ্ঞানের বড়ত্ব প্রচার করতে গিয়ে দর্শনগত প্রকৃতিবাদ (Philosophical naturalism) কে জুড়ে দেন। ফলে, বিষয়গুলোকে অনভ্যস্তরা সহজেই বিভ্রান্ত হয়ে পরে। আস্তিক বিজ্ঞানীরা প্রাকৃতিক ঘটনার বিষয়টিকে দুভাবে বিবেচনা করেন। একদল, বিজ্ঞান এবং ধর্মীয় (স্রষ্টায়) বিশ্বাসকে দুটো সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয় হিসেবে বিবেচনা করে আলাদা রাখতে চান। আরেকদল মনে করেন, স্রষ্টা সবকিছুই বৈজ্ঞানিক নিয়মের মধ্যে করেন, সুতরাং বৈজ্ঞানিক নিয়ম আবিস্কার স্রষ্টাকে জানারই একটি পদ্ধতি। তদুপরি, বিজ্ঞান যেহেতু কিছু দার্শনিক অনুমান ধরে নিয়ে কাজ করে বিজ্ঞান সংজ্ঞানুযায়ীই সীমাবদ্ধ। যাই হোক, এটি সম্পূর্ণ আলাদা একটি আলোচনার বিষয়।

    এখন চলুন দেখি, বিজ্ঞান প্রাকৃতিক কোন পর্যবেক্ষণ ব্যাখ্যায় কিভাবে কাজ করে? বিজ্ঞানীরা কোন পর্যবেক্ষণের কার্যকারণ ( causual inference ) ব্যাখ্যার জন্য “ থিওরী – হাইপোথিসিস- রিসার্চ-অবজারভেশন- থিওরী” এই চাক্রিক প্রক্রিয়াটির মধ্য দিয়ে যান।

    বিজ্ঞানের ইতিহাসে প্রথমদিকে অবশ্য বিষয়টি এরকম ছিল না। তখন, বিজ্ঞানীরা কজাল ইনফারেন্সের জন্য শুধু মাত্র যৌক্তিক সিদ্ধান্ত (Rational Inference)-এর ওপর নির্ভর করতেন। সপ্তদশ শতাব্দীর সায়েন্টিফিক রিভলুশন থেকে শুরু করে বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত এজন্য পরীক্ষা নিরীক্ষালব্ধ জ্ঞান (Empiricism)-এর ওপর জোড় দেয়া হয়। উদাহরণস্বরূপ, আমার পর্যবেক্ষণলব্ধ ‘ হাঁস’ গুলো যদি সবসময় ‘কালো’ হয়, আমি সিদ্ধান্ত দিতে পারবো যে ‘হাঁস কালো’।

    এই পদ্ধতির একটি সমস্যা হল আপনি যদি একটি সাদা হাস দেখে ফেলেন, আমার থিওরী ভেঙ্গে যাবে। (Problem of Induction)

    পরর্বতীতে কার্ল পপার এই আরোহ পদ্ধতি (Inductive approach)কে প্রশ্ন করে বলেন যে, বিজ্ঞান মূলত কাজ করে অবরোহ পদ্ধতিতে (Deductive Approach)। অর্থাৎ, কোন ঘটনার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা চিন্তাভাবনা করে এক বা একাধিক থিওরী তৈরী করেন, এরপর তার পক্ষে পরীক্ষা নিরীক্ষালব্ধ প্রমাণ যোগার করার চেষ্টা করেন। এ প্রক্রিয়া কয়েকটি প্রতিযোগিতামূলক তত্ত্বের মধ্যে একটি বা আরেকটির প্রমাণ পোক্ত হয়।

    বর্তমানে বিজ্ঞানীরা এই দুটি পদ্ধতির সমন্বয়ে কাজ করেন। তারা অবজারভেশন থেকে একটি থিওরী ভাবেন এবং তা থেকে বিভিন্ন হাইপোথিসিস দাড় করান। অত:পর, উক্ত হাইপোথিসিসকে প্রমাণ বা অপ্রমাণের জন্য রিসার্চ প্রসেসের মধ্য দিয়ে তথ্য যোগাড় করেন। এই প্রক্রিয়া হাইপোথিসিস ভুল হলে থিওরীর পরিবর্তন বা পরিমার্জন করা হয়। এভাবে, কোন কজাল ইনফারেন্সের জন্য যথেষ্ট তথ্য উপাত্ত যোগাড় হলে একটি কজাল থিওরী আপাত প্রমাণ হয়।

    এখন, বিবর্তনতত্ত্ব হচ্ছে এমন একটি তত্ত্ব যা একটি কোষ থেকে প্রাকৃতিক উপায়ে বর্তমান পৃথিবীর অসংখ্য জৈব প্রজাতির আগমনকে ব্যাখ্যার চেষ্টা করে। বিজ্ঞানী ডারউইন তার প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ (যেমন: ফিঞ্চ পাখির ঠোট, কৃত্রিম সংকরায়ণ, বিভিন্ন প্রাণীর কাছাকাছি গঠন [Homology], ফসিল এভিডেন্স) প্রভৃতির আলোকে বি

    এখন, বিবর্তনতত্ত্ব হচ্ছে এমন একটি তত্ত্ব যা একটি কোষ থেকে প্রাকৃতিক উপায়ে বর্তমান পৃথিবীর অসংখ্য জৈব প্রজাতির আগমনকে ব্যাখ্যার চেষ্টা করে। বিজ্ঞানী ডারউইন তার প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ (যেমন: ফিঞ্চ পাখির ঠোট, কৃত্রিম সংকরায়ণ, বিভিন্ন প্রাণীর কাছাকাছি গঠন [Homology], ফসিল এভিডেন্স) প্রভৃতির আলোকে বিবর্তনতত্ত্ব প্রদান করেন। এরপর এই তত্ত্ব সত্য হলে কি কি ধরনের পর্যবেক্ষণ লব্ধ উপাত্ত পাওয়া যাবার কথা এই ধরনের হাইপোথিসিস দেন এবং তার সপক্ষে কিছু যৌক্তিক প্রমাণ উপস্থাপনের চেষ্টা করেন।

    যেমন একটি হাইপোথিসিস হল, বিবর্তনতত্ত্ব সত্য হলে ফসিল বেডে ক্রমান্বয়িক (Gradual) জটিল প্রজাতি পাওয়া যাবে (Common Descent)। এর প্রমাণস্বরুপ, জীবাশ্মবিদ্যার বিজ্ঞানীদের প্রচেষ্টা দেয়া দেখা গেছে যে যতই পুরোনো ফসিল বেডে যাওয়া যায় ততই তুলনামূলক সরল জীবাশ্ম পাওয়া যায়। প্রসঙ্গত, ফসিল বেডে যত গভীরে যাওয়া যায়, তা সাধারনত ততই আগের জিওলজিকাল এইজকে রিপ্রেজেন্ট করে।

    কিন্তু, পরিক্ষানীরিক্ষা লব্ধ তথ্য প্রমাণ সব সময় যে হুবহু থিওরীর পক্ষে যাবে তা নয়। যেমন, ফসিল এভিডেন্স-এর বিষয়টিতেই আসা যাক। ডারউইনের বিবর্তনতত্ত্ব অনুযায়ী, ফসিল বেডে দুটি বিষয় ঘটতে হবে। এক, ধাপে ধাপে সরল থেকে জটিল প্রজাতি পাওয়া যাবে (Common Descent)। দুই, প্রজাতিগুলোর ফসিলের মধ্যে একটি ক্রমান্বয়িক ধারাবাহিকতা (Gradualism) থাকবে। কিন্তু, প্যালেন্টোলজিস্ট নাইলস এলড্রেজ এবং স্টিফেন জে. গোল্ড দেখিয়েছেন যে ফসিলে Common Descent থাকলেও Gradualism নেই। বরং, আছে Sudden appearance এবং Stasis। যাই হোক, বিষয়টি নিয়ে বিজ্ঞানীরা এখন দ্বিধাবিভক্ত। তবে, Common descent-এর ব্যাপারে সবাই একমত।

    বিবর্তনতত্ত্বের আরেকটি প্রস্তাবনা হলো, প্রজাতির প্রজন্মান্তরে সৃষ্ট বৈচিত্র (Variation) এবং প্রাকৃতিক নির্বাচন। যেমন, কৃত্রিম সংকরায়নের মধ্য দিয়ে অধিক দুগ্ধদানকারী গাভীর জাত তৈরী করা হলে, খামারীরা উক্ত জাতটিকে কৃত্রিম ভাবে চয়ন করেন (Artificial selection)। ঠিক একই ভাবে, অধিক লোমযুক্ত ভাল্লুক বরফের দেশে প্রাকৃতিক ভাব সিলেক্টেড হয় (Natural selection)।

    কিন্তু, প্রজাতিতে প্রজন্মান্তরে এই ভ্যারিয়েশন কিভাবে আসে? জেনেটিক্স আবিস্কারের আগ পর্যন্ত ভ্যারিয়েশন আসার বিষয়টি শক্ত কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিলো না। জেনেটিক্স আসার পর দেখা গেল যে মিউটেশনসহ বিভিন্ন ধরনের পপুলেশন জেনেটিক প্রক্রিয়ায় প্রজাতির বৈচিত্র তৈরী এবং প্রাকৃতিক নির্বাচন হতে পারে। এর প্রেক্ষিতে ডারউইনের মূল তত্ত্ব মোডিফাই হয়ে, বিভিন্ন বিজ্ঞানীর হাত ধরে ইভল্যুশনারী সিনথেসিস (তথা সিনথেসিস থিওরী)-তে রূপান্তরিত হয়।

    এই পরিবর্তীত তত্ত্বের প্রমাণ হিসেবে মলিকিউলার হোমোলজী থেকে ফাইলোজেনেটিক্স (জেনেটিক ট্রি তৈরী)-এর বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষা চালানো হয়। তবে মজার বিষয় হল মলিকিউলার হোমোলজি থেকে প্রাপ্ত প্রজাতি বিন্যাস এবং বয়স, ফসিল ডেটিং এবং এনাটমিক হোমোলজি থেকে প্রাপ্ত বিন্যাস এবং বয়সের সাথে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ম্যাচ করে না। আবার দেখা যায়, হরাইজন্টাল জিন ট্রান্সফারের কারণে প্রজাতির জন্য সুনির্দিষ্ট জেনেটিক গঠন অনেকটাই অস্বচ্ছ হয়ে যায়। ফলে, মলিকিউলার হোমোলজীর মাধ্যমে প্রজাতির বিবর্তনীয় ধারা বের করার গবেষণা অনেক ধরনের জটিলতায় আক্রান্ত।

    বর্তমানে সিনথেটিক থিওরীর প্রসেসগুলোর (অর্থাৎ, মিউটেশন ও অন্যান্য পপুলেশন জেনেটিক প্রসেস) সীমাবদ্ধতা বিবেচনা করে একদল বিজ্ঞানী বিভিন্ন বিকল্প প্রসেসের কথা বলছেন। যেমন: ন্যাচারাল জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, সিমবায়োসিস, নিও-লামার্কিজম প্রভৃতি। এই সকল বিজ্ঞানীদের থিওরীকে একত্রে বলা হচ্ছে The Third Way of Evolution. যাই হোক, থার্ড ওয়ের প্রবক্তারাও মূল বিবর্তনতত্ত্বের গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা Common Descent এর ব্যাপারে সর্বসম্মতভাবে একমত। উপরন্তু, তারাও ফিলোসফিক্যাল ন্যাচারালিজম-এর বাইরে কোন প্রস্তাবনা দিতে রাজি নন।

    কিন্তু, অনেক সময় একই পর্যবেক্ষণের একাধিক ব্যাখ্যা থাকতে পারে। তখন, তুলনামূলক প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে কোনটি গৃহীত হবে, তা নির্ধারিত হয় অন্যান্য সম্পূরক তথ্য প্রমাণ এবং তাত্ত্বিক চিন্তা গবেষণার আলোকে।

    জীবজগতের পর্যবেক্ষণে ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইনের প্রবক্তারা একটি ভিন্ন প্রস্তাবনা এনেছেন। তাদের মতে প্রজাতির উৎপত্তি ও বিভিন্ন ধাপে আগমন ইন্টেলিজেন্ট এজেন্সির ইন্টারভেনশন ছাড়া ব্যাখ্যা করা সম্ভব না। তাদের মতে ‘কমন ডিজাইন’ প্রজাতির সাদৃশ্যের একটি বিকল্প প্রস্তাবনা হতে পারে। তারা হোমোলজিকে বিবর্তনবাদের প্রমাণ হিসেবে দেখানোকে চাক্রিক যুক্তি মনে করেন। কারণ, আমি দুই বা ততোধিক প্রজাতির গাঠনিক সাদৃশ্য দেখে যদি কোন তত্ত্ব দাড় করাই যে ‘গাঠনিক সাদৃশ্য থাকলে দুটো প্রজাতি পূর্ববর্তী কোন কমন প্রজাতি থেকে এসে থাকবে’ এবং তার প্রমাণ হিসেবে ‘দুই বা ততোধিক প্রজাতির গাঠনিক সাদৃশ্য’-কেই উপস্থাপন করি তা চাক্রিকই মনে হবে।

    অন্যদিকে, তারা দেখিয়েছেন যে, জীবজগতের কিছু কিছু গঠন Irreducibly Complex এবং বিবর্তনবাদীদের প্রস্তাবিত প্রক্রিয়াগুলোতে একটি নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত পরিবর্তিত জিন পপুলেশনে সেট হতে পারে তথা একটি নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত প্রজাতির পরিবর্তন আসতে পারে, যা প্রজাতির ক্লাসিফিকেশন হাইয়ারারকিতে (Kingdom-Phylum-Class-Order-Family-Genus-Species) জেনাস পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। উক্ত প্রক্রিয়াতে ম্যাক্রো পরিবর্তন আসার জন্য প্রয়োজনীয় সময় এবং পপুলেশন সাইজ মহাবিশ্বের ইতিহাসে নেই।

    প্রসঙ্গত, ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির কোন পর্যবেক্ষণযোগ্য ইনডাকটিভ প্রমান না থাকায়, তারা এবডাকটিভ ইনফারেন্স একটি পদ্ধতি ব্যবহার করেন। তাদের মতে মানুষকে যেমন ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে জটিল কাঠামো নির্মান করতে দেখা যায়, তথা জটিল কাঠামো দেখে যেমন এর পেছনে মানুষের মত কোন ইন্টেলিজেন্স ইনফার করা যায়। তেমনি, জীবজগতের জটিলতা দেখেও এর পেছনে ইন্টেলিজেন্ট এজেন্টকে ইনফার করা যায়।

    কিন্তু, ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইনতত্ত্ব ‘ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইনার’ নামক ‘অপ্রাকৃতিক’ এজেন্সিকে ইনফার করে বিধায়, ডমিনেন্ট সায়েন্টিফিক সার্কেল-এর তাদের তত্ত্বের কোন গ্রহনযোগ্যতা নেই। একদিকে, যারা অবিশ্বাসী তারা দর্শনগত কারনেই এই তত্ত্বর্কে কোন সুযোগ দিতে রাজী নন। অন্যদিকে, যারা বিশ্বাসী তারা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে Methodological Naturalism বজায় রাখতে গিয়ে উক্ত তত্ত্বের সুযোগ দিতে রাজী নন। এই দ্বিতীয় দলটির আরেকটি আশংকা হচ্ছে, ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন God of the gaps ফ্যালাসীর আশ্রয়ে দাড়িয়ে আছে। প্রসঙ্গত, God of the gaps হচ্ছে বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় বর্তমান সময়ে বোঝার সীমাবদ্ধতা থাকলে, তাকে স্রষ্টা করেছেন বলে চালিয়ে দেয়া। তবে একজন সতর্ক পাঠক বুঝতে পারবেন যে ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন তত্ত্বের ফর্মুলেশনটি ঠিক এরকম নয়।

    সুতরাং, ১ নং প্রশ্নের উত্তরে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, ডারউইনের বিবর্তনতত্ত্বের পক্ষে তথ্য প্রমাণ এমন নয় যে তা সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত হয়েছে। সর্বচ্চো এটুকু বলা যায় যে, বিভিন্ন ভাবে তথ্য প্রমাণ একত্র করার প্রচেষ্টা অব্যহত আছে। মজার বিষয় হলো, Methodological Naturalism-এর সীমায় প্রজাতির উৎপত্তি ব্যাখ্যায় বিবর্তনতত্ত্বের বিকল্প কোন তত্ত্বের প্রবেশাধিকারই নেই। অর্থাৎ, বিবর্তনতত্ত্বের পক্ষে সাপোর্ট যতটানা Empirical তার চেয়ে বেশী Philosophical.

    এজন্য অধিকাংশ সময়ই বিবর্তনতত্ত্বের আলোচনা তত্ত্ব থেকে ‘বিবর্তনবাদ’-এ চলে যায়। এ আলোচনায় অটোমেটিক ভাবেই দর্শন চলে আসে। ফলে, আর্নস্ট মেয়ার, আলফ্রেড রাসেল ওয়ালেস, রোনাল্ড ফিসার বা ডগলাস ফুতুয়ামা থেকে আমরা রিচার্ড ডকিন্স বা ইউভাল নোয়া হারারীদের বেশী চিনি।

    তিন নাম্বার প্রশ্নের উত্তরটি নিয়ে ড. শোয়েব আল মালিক তার বই Islam and Evolution: Al-Ghazālī and the Modern Evolutionary Paradigm -এ বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। অধিক আগ্রহীরা এই ফ্রি বইটি ডাউনলোড করতে পারবেন এখান থেকে- https://library.oapen.org/handle/20.500.12657/48443

    তবে আরেকটি পর্বে এই বিষয়টির একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা রাখার চেষ্টা করবো, ইন শা আল্লাহ।
    ..

    ০৬.১০.২০২২

    বানান সম্পাদনা: তাওহিদ হাসান

  • বিবর্তন নিয়ে মুসলিম চিন্তকদের অবস্থান কি?

    গত বছর আমি আল বালাগ একাডেমি, লন্ডনের একটি অনলাইন উইকলি কোর্সে এনরোল করি- এথেইজম এবং ইসলাম। সেখানে ইসলাম এবং বিবর্তনবাদ নিয়ে একটি ক্লাস ছিল। ক্লাসটি নিয়েছিলেন ড. শোয়েব আহমেদ মালিক। ক্লাসটিতে তিনি সংক্ষেপে বিবর্তন নিয়ে মুসলিম চিন্তকদের অবস্থান সম্পর্কে সুন্দর আলোচনা করেছিলেন। আমার আজকের এই পোস্ট-এ সেই ক্লাসে নেয়া আমার কিছু নোটের ভিত্তিকে আলোচনা করতে চাই।

    চলুন প্রথমে একটু ড. মালিক সম্পর্কে জেনে নেই। ড. মালিক University of Nottingham থেকে কেমিক্যাল ইঞ্জিরিয়াং-এ পিএইচডি করার পর যায়েদ ইউনিভার্সিটিতে নাচারাল সায়েন্স বিভাগে এসিসটেন্ট প্রফেসর হিসেবে কর্মরত আছেন। সম্প্রতি উনার ইন্টারেস্ট ফিলোসফী অব সায়েন্স এণ্ড রিলিজিয়ন-এর দিকে ডাইভার্ট হয়। রিসেন্টলি তিনি ইউনিভার্সিটি অব এডিনবার্গ থেকে ফিলোসফি অব সায়েন্স-এ আরেকটি মাস্টার্স শেষ করেছেন এবং পিএইচডি-র জন্য এনরোলড হয়েছেন। এ বছর ইসলাম ও বিবর্তনবাদের উপর একটি বিশদ বই – Islam and Evolution: Al-Ghazali and the Modern Evolutionary Paradigm-এর ম্যানুস্ক্রিপ্ট লিখে শেষ করেছেন যা আগামী বছর রোলেজ থেকে পাবলিশ হবে ইন শা আল্লাহ।

    (https://www.facebook.com/shoaib.a.malik.18)

    এখন মূল আলোচনায় আসি। ড. মালিক তার ক্লাসে বলেছিলেন বিবর্তনবাদ নিয়ে মুসলিম চিন্তকদের প্রায় ২৭টি ভিন্ন রকম অবস্থান আছে। তবে, ব্রডলি মুসলিম চিন্তকদের অবস্থানকে তিনটি মূল ভাগে ভাগ করা যায়- রিজেকশন, এক্সেপটেন্স, এবং পার্সিয়াল এক্সেপটেন্স। সাধারণ হিসেবে প্রায় ৩৫% বিবর্তনবাদকে রিজেক্ট করেন, ৩৫% এক্সেপ্ট করেন এবং ৩০% -এর অবস্থান মর্ধবর্তী।

    তবে, এই তিন দলের অবস্থান নির্ভর করে মূলত দুটি বিষয়ের উপর-

    (১) বিবর্তনবাদের বৈজ্ঞানিক প্রমাণ সম্পর্কে চিন্তকের পড়াশোনা এবং কনভিকশন

    (২) জীবজগত সম্পর্কে ইসলামী নলেজ সোর্স -কোরআন এবং হাদিসের বক্তব্য সম্পর্কে জ্ঞান এবং চিন্তক তা কিভাবে নিচ্ছেন

    তবে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল (৩) ‘মানুষের বিবর্তন’।

    বস্তুত, এই প্রশ্নে এসেই বিবর্তনবাদের পার্সিয়াল এক্সেপটেন্স গ্রুপটি তৈরী হয়েছে। কারণ, কোরআন ও হাদীসে অন্যান্য জীবের সৃষ্টি সম্পর্কে ‘explicit’ বক্তব্য না থাকলেও আদম (আ)-এর সৃষ্টির ব্যাপারে ‘explicit’ বক্তব্য আছে। তবে ভ্যারিয়েশন তৈরী হয়েছে উক্ত বক্তব্যের ইন্টারপ্রিটেশনের উপরে।

    যারা বিবর্তনবাদকে পুরোপুরি গ্রহন করে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য চিন্তক হল –

    ১. ড. রানা দেজানী,

    ২. ড. নিধাল আহমেদ, এবং

    ৩. ড. ইসরার আহমেদ।

    এদের মতে বিবর্তনবাদের সত্যতা সন্দেহ করার সুযোগ নেই, এবং সবাই একমত যে মানুষ ব্যতীত অন্যান্য সৃষ্টির ব্যপারে ইসলামের বক্তব্যও বিবর্তনবাদ গ্রহনে কোন বাধা দেয় না।

    তবে কোরআনের মানব সৃষ্টি সম্পকির্ত কথার ব্যপারে তাদের চিন্তা বিভিন্ন। ড. দেজানীর মতে, এই বক্তব্য গুলো ‘রূপক’ তথা Matephorical। ড. আহমেদের মতে কোরআনে আয়াতগুলো বিভিন্ন ভাবে অর্থ করা এবং ব্যাখ্যা করার সুযোগ আছে। ড. ইসরার আহমেদের মতে দুনিয়াকে দুটি ভাগে পৃথক করা যায়- খালক এবং আমর। কোরআনে মানুষকে একবার ইনসান এবং একবার বাশার হিসেবে সন্মোধন করা হয়েছে। অর্থাৎ, মানবজাতির দুটোর স্বত্ত্বা আছে। একটি দৈহিক এবং আরেকটি স্পিরিচুয়েল। মানবদেহ বিবর্তনের মাধ্যমেই এসেছে, তবে তাদের মধ্যে রূহ ইনস্টল করে দেয়া হয়েছে। সুতরাং, বিবর্তনবাদের সাথে ইসলামের বাহ্যত কোন কনফ্লিক্ট নেই।

    যারা বিবর্তনবাদকে সোজাসুজি (outright) রিজেক্ট করেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য চিন্তক হলেন-

    ১. ড. সায়্যেদ হুসাইন নাসর

    ২. শায়েখ নুহ কেলার

    ৩. হারুন ইয়াহিয়া (গং)

    এদের মধ্যে বিবর্তন রিজেক্ট করার ধরন এবং কারণে ভিন্নতা আছে। ড. নাসর বিবর্তনকে অস্বীকার করেন purely metaphysical কারণে। তার মতে প্রতিটি সৃষ্টি জীবের স্বত্ত্বা সুনির্দিষ্ট এবং এগুলোকে এই ফর্মেই পৃথিবীতে সৃষ্টি করা হয়েছে। সুতরাং, বিবর্তন হবার সুযোগ নেই।

    শায়েখ কেলার অন্যান্য জীবের বিবর্তনের ব্যপারে সন্দেহে থাকলেও মানুষের বিবর্তনকে পুরোপুরি অস্বীকার করেন। কারণ, তার মতে কোরআনের সৃষ্টি সম্পর্কিত বর্ণনাগুলো আক্ষরিক, স্পষ্ট এবং এগুলোকে রূপক ভাবার সুযোগ নেই। তিনি আরও মনে করেন আদম (আ)-কে আক্ষরিকভাবেই বেহেশতে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং পৃথিবীতে প্রেরণ করা হয়েছে।

    হারুন ইয়াহিয়া (এবং মূলত তার অধীনে কাজ করা চিন্তকরা) বিবর্তনের উপস্থাপিত প্রমানকে মিথ্যা মনে করেন নতুবা প্রমানের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করেন। তবে তাদের অধিকাংশ সন্দেহের ভিত ক্রিশ্চিয়ান অ্যান্টাই-ইভুলিউশনিস্টদের দ্বারা প্রভাবিত।

    যারা বিবর্তনকে আংশিকভাবে গ্রহণ করে তাদের মধ্যে আছেন-

    ১. শায়েখ ইয়াসির কাদি

    ২. ডেভিড সলোমোন জালাজেল

    ৩. হুসাইন আল জিসর

    এদের মধ্যে মধ্যে প্রথম দু’জন বিবর্তনবাদের এর উপস্থাপিত প্রমানের বিষয়ে কনভিন্সড। তন্মধ্যে শায়েখ কাদি’র মতে কোরআনের মানুষ ব্যতীত অন্যান্য সৃষ্টির ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোন বক্তব্য নেই। তবে, আদম(আ) হচ্ছে মিরাকুলাসলি ক্রিয়েটেড। তবে আদমের আগ পর্যন্ত হোমিনিন গোত্র বিবর্তনের মাধ্যমেই এসেছে। আদম (আ)-এর মাধ্যমে আধুনিক হোম স্যাপিয়েন্স সূচনা হয়েছে।

    সলোমোন জালাজেলের মতে হোমো স্যাপিয়েন্স তথা মানুষের বিবর্তনের ব্যাপারে কোন সন্দেহের অবকাশ নাই। কারণ প্রমাণ অনেক কনভিন্সিং। আবার কোরআনের বর্ণনা অনুযায়ী আদম (আ)-কে মিরাকুলাসলি সৃষ্টি করা হয়েছে। অন্য কথায় তার full form-এ সৃষ্টি করা হয়েছে। কিন্তু, কিভাবে আদম (আ) এবং হোম স্যাপিয়েন্স একইভূত হয়ে গেল সে বিষয়ে কোরআন এবং হাদীস থেকে কিছু জানা যায় না, অতএব এ ব্যাপারে ‘তাওয়াক্কুফ’ অবলম্বন করতে হবে। অর্থাৎ, এ বিষয়ে ডেভিল সলোমোন তার পড়াশোনার আলোকে কোন ‘মন্তব্য না করার’ অবস্থান নিয়েছেন।

    হুসাইন আল জিসর উনবিংশ শতাব্দীর একজন মুসলিম চিন্তক। তার চিন্তাটা একটু ভিন্ন ধরনের। বিবর্তনবাদীদের উপস্থাপিত প্রমাণ এবং উপস্থাপনের ধরনের বিষয়ে তার প্রশ্ন আছে। তার কাছে প্রমাণ সমূহ ‘inadequate’। তদুপরী বিবর্তনবাদকে যে বস্তুবাদের মোড়কে পরিবেশন করা সেই বস্তুবাদকে তিনি রিজেক্ট করেন। তবে তিনি এই ব্যাপারে নমনীয় যে বিবর্তনবাদ যদি যথেষ্ট প্রমাণাদি দ্বারা স্থিত হয় তাহলে বিবর্তনবাদ গ্রহন করা যেতে পারে। অন্যথা বিবর্তনবাদ ততদিন পর্যন্ত গ্রহণ করার প্রয়োজন নেই। বস্তুত, হুসাইন আল জিসর-ও মনে করতেন যে কোরআনে সৃষ্টি সম্পর্কিত বর্ণনা সরাসরি ‘as it is’ সৃষ্টির ব্যাপারে কোন স্পষ্ট বক্তব্য দেয় না।

    এই ছিলো মোটামুটি আমার গৃহীত নোটের সারসংক্ষেপ।

    এখন এই পজিশনগুলোর মধ্যে আমি নিজেকে কোন গ্রুপে মনে করি? আমি মনে করি আমার পজিশন অনেকটাই হুসাইন আল জিসর-এর চিন্তার কাছাকাছি। বিবর্তনবাদের ম্যাক্রোইভল্যুশনের পক্ষে উপস্থাপিত প্রমাণাদি আমি যতটুকু নিজে পড়েছি তাতে কনভিন্সড নই।

    তবে আমি এখনও পড়ছি। যদি কখনও দেখি ‘ম্যাক্রো’ বিবর্তনবাদের উপস্থাপিত প্রমাণ যথেষ্ট কনভিন্সিং আমারও বিবর্তন মেনে নিতে সমস্যা নেই। বস্তুত, এটা আমার আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসেও কোন বাধাও সৃষ্টি করবে না। কারণটা, লেখক আরিফ আজাদের বিবর্তন সম্পর্কিত রিসেন্ট পোস্টটের একটা কথাকে কোট করে বলতে চাই। আরিফ লিখেছেন –

    “আল্লাহ গোটা মহাবিশ্ব ক্রমান্বয়ে সৃষ্টি করেছেন। ধাপে ধাপে। একইভাবে তিনি যদি প্রাণীজগতকেও ধাপে ধাপে সৃষ্টি করে থাকেন, যা বিবর্তনে বলা হয়ে থাকে, তা মেনে নিতেও আমাদের অসুবিধে থাকার কথা নয়।“

    অর্থাৎ, দার্শনিক বিবেচনায় আল্লাহ তার সৃষ্টিকে যে কোন উপায়ে সৃষ্টি করতে পারেন। তিনি চাইলে প্রথম কোষের মধ্যেই বিবর্তিত হবার ম্যাকানিজম তৈরী করে দিতে পারেন। তিনি চাইলে হোমো স্যাপিয়েন্স পর্যন্ত বিবর্তন ঘটিয়ে এর মধ্যে একজনকে উন্নত বুদ্ধিমত্তা, এবং চেতনা ইনস্টল করে দিতে পারেন। আবার তিনি চাইলে প্রতিটি জীবকে নির্দিষ্ট গণ্ডিতে ভ্যারী করার বৈশিষ্ট্য সহ- সুনির্দিষ্ট ‘এসেন্স বা আর্কিটাইপাল ফর্ম’-এ সৃষ্টি করতে পারেন।

    ……

    হে মুসলিম পাঠক, আপনি নিজেকে কোন দলের মনে করেন?

    ….

    পুনশ্চ‍ঃ ইসলামের ব্যাপারে অবিশ্বাসীদের জন্য এই পোস্ট না। কারণ, উপরের আলোচনা থেকে দেখলাম একজন ব্যাক্তি শুধুমাত্র বিবর্তনতত্ত্বের কারণে ইসলামে অবিশ্বাস করবে না। বরং, ইসলামে অবিশ্বাসী হলে সমূহ সম্ভাবনা আছে যে বিবর্তনকে বস্তুবাদের মোড়কে উপস্থাপন করে বিশ্বাসীদের বিভ্রান্ত করতে চাইবে।