Md. Abdullah Saeed Khan

The devil lies in the detail!

বিবর্তন হয় দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে প্রজাতির বংশধরদের মধ্যে বেঁচে থাকার জন্য অধিকতর যোগ্য প্রকরণের বংশবৃদ্ধির মাধ্যমে।

ফিঞ্চ পাখির কথাই চিন্তা করি। ধরি, একটি ফিঞ্চ প্রজাতির পরবর্তী প্রজন্মে এমন কিছু ফিঞ্চ জন্ম নিল, যেগুলোর পরিবর্তিত বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণে তার পূববর্তী বংশধরদের চেয়ে প্রাকৃতিক খাদ্য সরবরাহ থেকে বেশী খাদ্য গ্রহণ করতে পারে। যেমন গ্যালোপ্যাগাস আইল্যান্ডে যখন খরা আসে, তখন যেই ফিঞ্চ প্রজাতির ঠোঁটগুলো শক্ত ও খাটো তারা প্রকৃতিতে বিদ্যমান শক্ত বীজগুলোকে গ্রহণ করতে পারে। অন্যদিকে, খরার কারণে গাছের বীজগুলোর খোলস শক্ত হয়ে রেজিলিয়েন্স বাড়িয়ে ফেলে।

ফলে, এই বিশেষ প্রজাতির ফিঞ্জগুলো অন্যদের তুলনায় বেঁচে থাকার চেষ্টায় এগিয়ে যাবে, এবং তাদের বংশগুলোই পরবর্তীতে বিস্তার লাভ করবে।

সুতরাং, বোঝা যাচ্ছে প্রজাতির মাঝে যে ভ্যারিয়েশন আছে, তার মধ্যে সংশ্লিষ্ট পরিবেশে বেঁচে থাকার জন্য অধিকতর যোগ্য প্রজাতিই পরিবেশে টিকে যাবে।

এবার, চিন্তা করে দেখুন, এভাবে লক্ষ লক্ষ বছর চলতে থাকলে হয়ত এমন কিছু প্রজাতির আবির্ভাব হবে, যাদের বৈশিষ্ট্য অনেকটাই আলাদা এবং যাদেরকে হয়ত ভিন্ন প্রজাতিই বলার সুযোগ আছে।

এখন, কৌতুহলি মন হয়ত প্রশ্ন করতে পারে- “তাহলে, এই ভ্যারিয়েশনগুলো তৈরী হয় কিভাবে?”

উত্তর- ভ্যারিয়েশনগুলো আসে জেনেটিক পরিবর্তনের মাধ্যমে। অধিকাংশ জেনেটিক পরিবর্তন হয় ননর‍্যানডম প্রক্রিয়ায় এবং কিছু পরিবর্তন হয় র‍্যানডম প্রক্রিয়ায়।

যেমন, ডিম্বানু বা শুক্রানু তৈরী হবার সময় মিয়োসিস প্রক্রিয়ায় জেনেটিক রিকম্বিনেশন ঘটে। ফলে, দুটো ক্রোমোজমের মধ্যে জেনেটিক ম্যাটিরিয়ালের স্পেসিফিক আদান প্রদান হয়। এ ধরনের ভ্যারিয়েশনের ফলে সৃষ্ট বংশধরে মূল গঠন কখনও পরিবর্তন হয় না। শুধু কিছু বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন হয়। যেমন, মানুষের আইরিশের রং, বা ভালুকের পশমের রং বা পরিমাণ প্রভৃতি।

নতুন ড্র্যাস্টিক পরিবর্তনের জন্য (যেমন: চোখের ধরণ) দরকার জেনেটিক ম্যাটেরিয়াল বড় ধরনের পরিবর্তন। সমস্যা হলো এই ধরনের পরিবর্তন অটোমেটিক হঠাৎ আসার জন্য কোন মলিকিউলার ম্যাকানিজম নেই বা হয়ত সম্ভব নয়।

যা হতে পারে তা হল ছোট ছোট পরিবর্তনগুলোর একটি ওপর আরেকটি জমা হতে হতে একটি পূর্ণাঙ্গ গাঠনিক রূপান্তর। এ কারণে, বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন যে ছোট ছোট মিউটেশন লক্ষ লক্ষ বছরের ব্যবধানে জমা হয়ে তৈরী হয় সম্পূর্ণ নতুন প্রজাতির জীব। এ ধারণা থেকে ব্যাখ্যা করা হয় যে এভাবে যথেষ্ট সময় দিলে তৈরী হতে পারে নতুন কোন জেনাস (Genus) বা ফ্যামিলি (Family) থেকে পর্ব (Phylum) পর্যন্ত।

ছোট ছোট পরিবর্তন হবার জন্য জেনেটিক পর্যায়ের প্রক্রিয়ার সংখ্যা খুব সীমিত। তার মধ্যে সবচেয়ে কমন হচ্ছে মিউটেশন। যার মধ্যে আবার কমন হচ্ছে পয়েন্ট মিউটেশন। পয়েন্ট মিউটেশন প্রক্রিয়ায় একটি ডিএনএতে একটি নিউক্লিওটাইড পরিবর্তন হয়ে আরেক দ্বারা ভুল ভাবে প্রতিস্থাপিত হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই ভুলের মাশুল দিতে হয় সংশ্লিষ্ট জীবকে। হয় তার কোন কার্যক্রম নষ্ট হয়ে যায়, বা অঙ্গবিকৃতি ঘটে বা এক্সট্রিম ক্ষেত্রে মারা যায়।

কিন্তু, কিছু ক্ষেত্রে মিউটেশনের মাধ্যমে সৃষ্ট নতুন প্রোটিনের গঠন হয়ত এমন হতে পারে যা উক্ত প্রোটিন কোষের যে আভ্যন্তরীন গঠনের সাথে বা ফাংশনের সাথে সংশ্লিষ্ট, সে গঠন বা ফাংশনে একটি নতুন ভ্যারিয়েশন সৃষ্টি করতে পারে।

এই ভ্যারিয়েশনর ফলে হয়ত সে উক্ত কোষ ইমিডিয়েট মাইক্রোএনভায়রনমেন্টে নতুন একটি সুবিধা লাভ করে। যা তাকে বেঁচে থাকতে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরুপ, ব্যাকটেরিয়ার অ্যান্টিবায়োটিক রেজিসটেন্স, ই. কোলাই-এর গ্লুকোজের পরিবর্তে ল্যাকটোজ ব্যবহার ইত্যাদি ।

সমস্যা হল, এ ধরনের ক্ষুদ্র উপকার ব্যাকটেরিয়া জাতীয় এককোষী জীবের বেঁচে থাকার জন্য ঠিকাছে। কিন্তু, বহুকোষী জীবে এই ধরনের একটি দুটি পরিবর্তন খুব বেশী প্রভাব ফেলে না। কারণ, বহুকোষীর জীবের ফাংশনগুলো সাধিত হয় স্পেসিফিক টিস্যু তথা কোষসমষ্টির মাধ্যমে গঠিত অঙ্গের মাধ্যমে। সুতরাং, বুঝতেই পারছেন একটি টিস্যুর ছোট একটি কোষে যদি একটি ক্ষুদ্র পরিবর্তন হয়, তাতে উক্ত জীবের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোন ভিজিবল পরিবর্তন হয় না। বরং, এই ধরনের ক্ষুদ্র পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রতিটি প্রাণীতে যে ভিন্নতা তৈরী হয়, তাকে বলে সিঙ্গেল নিউক্লিওটাইড পলিমরফিজম (SNP)।

তবে হ্যা, পরিবর্তনটা যদি এমন জায়গায় হয় যে, একটা বাটারফ্লাই ইফেক্টের মাধ্যমে অঙ্গের মেজর রুপান্তর ঘটে তখন তা হতে পারে বিবর্তনের অনুঘটক। যেমন: এরকম একটি জায়গা হচ্ছে ডেভেলপমেন্টাল জিন রেগুলেটরী নেটওয়ার্ক (DGRN)। এটা কি?

একটি ডিম্বানু ও শুক্রানুর সমন্বয়ে তৈরি হয় জাইগোট। এরপর একটি জাইগোট থেকে বহুবার কোষ বিভাজনের সময় তৈরী হয় একটি পূর্ণাঙ্গ জীব। আমরা জানি, একটি কোষ বিভাজনের মাধ্যমে ঠিক একই রকম দুটি কোষ তৈরী হয়। তাহলে, এভাবে বহুবার কোষ বিভাজন হতে থাকলে তো শুধু কতগুলো কোষের লাম্প বা ব্লব তৈরী হওয়া কথা। কিন্তু, কেন হয় না? কারণ, প্রথম প্রথম DGRN সক্রীয় থাকায়, এটি নির্ধারণ করে যে কোন কোষগোষ্ঠী কোন স্থানে যাবে। এভাবে তৈরী হয় জার্ম লেয়ার, যেখান থেকে আবার বিভিন্ন অঙ্গের পারস্পরিক অবস্থান নির্ধারিত এবং নিয়ন্ত্রিত হয়। এরকম জিন নেটওয়ার্কের মধ্যে একটি অন্যতম জিন হল Probox বা Homeobox gene যা নির্ধারণ করে করে হাত সংশ্লিষ্ট জিন কোথায় যাবে, পাখা সংশ্লিষ্ট জিন কোন স্থানে প্রবেশন করবে।

এই জিনে যদি মিউটেশন হয়, তখন উপরোক্ত বাটারফ্লাই ইফেক্ট ঘটতে পারে। যেমন, ফ্রুট ফ্লাইতে এভাবে মিউটেশনের মাধ্যমে অ্যান্টেনার স্থানে পা চলে আসতে পারে, দুটোর জায়গায় চারটা উইং-এর উদ্ভব হতে পারে। কিন্তু, এই বিকৃত জীবগুলো সাধারনত বাঁচে না।

এ কারণে দেখা গেছে DGRN-এর কোন স্থানে মিউটেশন জীবের জন্য ধ্বংসাত্মক হয়।

জেনেটিক পরিবর্তনের একুমুলেট হবার ক্ষেত্রে আরেকটা বাঁধা হল, প্রতিটি ক্ষুদ্র পরিবর্তন পর্যায়ক্রমে উপকারী হতে হবে। কেননা, অপকারী পরিবর্তন জেনেটিক লোড বাড়িয়ে দেয়, যা পরবর্তী কয়েক জেনারেশনে সাধারণত ডিসকার্ড হয়ে যায়ে। লক্ষ্যনীয়, জেনেটিক লোড বৃদ্ধি পেলে তা সংরক্ষণ করতে অধিক এনার্জী প্রয়োজন হয়, যা কোষটির বা জীবটির বেঁচে থাকার জন্য কনডিউইসিভ না।

তাহলে প্রশ্ন হল কিভাবে কোন প্রজাতিতে বড় ধরনের উপকারী ভ্যারিয়েশন তৈরী হবে?

আমার জানা মতে এই ধরনের কোন ম্যাকনিজম নেই। জেনেটিক প্রক্রিয়ার আরও গভীরে গেলে একটা পটেনশিয়াল ম্যাকানিজম আছে, তা হল জিনডুপ্লিকেশন। জিনডুপ্লিকেশনের ফলে একটি জিনের কপি তৈরী হলে, সাধারণত এক্সট্রা কপিতে জীবের কোন ফাংশন নষ্ট না করেই পরিবর্তন আসতে পারে। পপুলেশন জেনেটিক প্রক্রিয়ায় উক্ত প্রজাতির বংশধরদের মধ্যে কতগুলো জীবে উক্ত পরিবর্তন থেকে যেতে পারে। কিন্তু, এভাবে একটি নতুন জিন পপুলেশনে ‘ফিক্স’ হতে, অনেক জটিলতা অতিক্রম করতে হয়।

যেমন, উক্ত জিনসমেত প্রাণীর প্রকৃত সংখ্যা অনেক হতে হবে এবং জেনারেশনের সংখ্যাও অনেক বেশী হতে হবে। একটু বুঝিয়ে বলি। আমরা প্রকৃতিতে যে জীব দেখি তাদের সবার জনসংখ্যা কিন্তু সমান না, মানুষের সংখ্যা বিলিয়ন হলে, পিপড়ের সংখ্যা ট্রিলিয়ন। আবার, তিমির সংখ্যা হাতে গোনা হলে, ব্যাকটেরিয়ার জনসংখ্যা অগনিত। আবার, সব জীবের জীবনকাল সমান না। ব্যাকটেরিয়া যদি কয়েক মিনিট থেকে কয়েক দিন বেঁচে থাকে, মানুষ বাঁচে গড়ে প্রায় ৭০ বছর। আবার, একটি কচ্ছপ দীর্ঘ দিন বেঁচে থাকে। ফলে, একটি জীব সংখ্যা অনেক হলে এবং তার জীবনকাল কম হলে, তার বংশ বৃদ্ধির সংখ্যা বেশী থাকে। আর যেহেতু একটি নতুন বৈশিষ্ট্য স্থিত হতে হলে অনেকগুলো পরিবর্তন একুমুলেট হতে হবে, ফলে যাদের বংশবৃদ্ধির সংখ্যা বেশী তাদের মধ্যে পরিবর্তন একুমুলেট হবার সম্ভবনা বেশী। তদুপরী, প্রশ্ন যদি একটি ব্যাকটেরিয়াকে আইডিয়েল ধরে নেই, এভাবে একটি পরিবর্তন পপুলেশনে স্থায়ী হতে কতদিন লাগতে পারে?

বিজ্ঞানীরা এই প্রশ্ন নিয়ে গবেষণা করেছেন। John Sanford ও তার দল একটি গবেষণায় দেখিয়েছেন যে দুটি নিউক্লিওটাইডের একটি সুতো ফিক্স হতে সময় লাগে ৮ কোটি ৪০ লক্ষ বছর। এরকম পাঁচটি ফিক্স হতে সময় লাগে ২00 কোটি বছর(1)। যেহেতু, মানুষকে নীরিক্ষা করে এ হিসেব কষা সম্ভব না। তারা এটি করেছে কম্পিউটার সিমুলেশনের মাধ্যমে।

প্রশ্ন হল, মাত্র পাঁচটি নিউক্লিওটাইডের পরিবর্তন ফিক্স হতে যদি এত দীর্ঘ সময় লাগে, তাহলে একটি পূর্ণ আঙ্গিক পরিবর্তনের জন্য যে সময় দরকার সে সময় টি কোথা থেকে আসবে? তুলনার জন্য বলছি পৃথিবীর বয়স ৪৫০ কোটি বছর। বহুকোষীর উদ্ভব হয়েছে কেবল ৩ কোটি ৫০ লক্ষ বছর আগে।

এ প্রশ্নগুলো নিয়ে, বিজ্ঞানীরা ভেবেছেন এবং একদল ক্লাসিকাল নব্যডারউইনবাদ থেকে বেরিয়ে এসেছেন। তারা বিকল্প ম্যাকানিজমের খোঁজে আছেন। যেমন, একটা ম্যাকানিজম হতে পারে যে মিউটেশনগুলো নিয়ন্ত্রিত ভাবে হয়। ফলে, যখন কোন জীব কোন প্রাকৃতিক বাঁধার মুখে পরে, সে নিয়ন্ত্রিত উপায়ে মিউটেশন সংগঠিত করার মাধ্যমে বিভিন্ন কম্বিনেশন পারমুটেশন করে, নিজের শারীরিক সীমাবদ্ধতার মধ্যে সম্ভাব্য সকল জেনেটিক নতুনত্ব খুঁজতে থাকে। জেমস শ্যাপিরো এর নাম দিয়েছেন ন্যাচারাল জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং(2)। কিন্তু, ব্যাকটেরিয়া জাতীয় ক্ষুদ্র জীবের মাইক্রো এনভায়রনমেন্টে এটি বেঁচে থাকতে উপকারী হলেও বৃহত্তর জীবে বেঁচে থাকতে তা কিভাবে উপকারী তা এখনও গবেষণার মাধ্যমে পরিস্কার হয়নি।

তবে একটু গভীরভাবে ভাবলে বুঝতে পারবেন, যে এ ধরনের কোন পরিকল্পিত বিবর্তন হতে হলে প্রথম কোষগুলো একটি প্রকিয়া তৈরী থাকতে হবে এবং যুগের সাথে সাথে সম্ভাব্য প্রাকৃতিক পরিবর্তনের বিষয়ে সম্মক অবগত থাকতে হবে, যেন আসন্ন পরিবর্তনের সময় উক্ত প্রক্রিয়া ব্যবহার করে একটি জীব নতুনত্ব খুঁজে নিতে পারে এবং তাদের বংশধরেরাও তা বজায় রাখতে পারে।

কিন্তু, এ ধরনের কোন প্রক্রিয়াও আবিস্কৃত বা প্রস্তাবিত হয়েছে বলে আমার জানা নেই।

এত দীর্ঘ আলোচনা কারণ হল, প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় বিবর্তন যে ঘটে তা প্রমাণ করার জন্য উপস্থাপিত উদাহরণগুলো খুব সুন্দরভাবেই ক্ষুদ্র বিবর্তনকে প্রমাণ করতে পারে। কিন্তু, সেই উদাহরণ থেকে সময়ের উপর ভর করে যে বিশাল লাফ দিয়ে বড় বিবর্তন হয়েছে বলে দাবী করা হয়, তার পক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ আছে বলে আমার মনে হয় না। কেন মনে হয়না বুঝাতে এতগুলো কথার অবতারণা।

কেননা, the devil lies in the details!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top