Category: মাইণ্ড-বডি প্রবলেম/ আত্মা

  • মানুষের ইউনিক বৈশিষ্ট্য – অ্যাবস্ট্রাক্ট চিন্তা করার ক্ষমতা

    পোস্টটা একটু বড়। আমি চেষ্টা করেছি, মানুষের অ্যাবস্ট্রাক্ট চিন্তা করার ক্ষমতা কেন ইউনিক এবং নন-কমপিউটেবল তা সংক্ষেপে ও সহজবোধ্যভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য। এটি করতে গিয়ে প্রথমে ব্যাখ্যা করেছি পরিসংখ্যানে ‘ওয়েইট’ দেয়া মানে কি। তারপর, বলেছি কিভাবে প্রবাবিলিটি হিসেব কষা হয় এবং কিভাবে কোন ইভেন্টের প্রবেবিলিটি বাড়ানো যায়। চেষ্টা করেছি, নিউরাল নেটওয়ার্ক কিভাবে কাজ করে তার সংক্ষিপ্ত ধারণা দিয়ে চ্যাট জিপিটি আসলে কি করে তা আলোচনা করতে। সবশেষে চেষ্টা করেছি মানুষের অ্যবস্ট্রাক্ট চিন্তা করার ক্ষমতা কেন স্বতন্ত্র এবং অগণনযোগ্য বৈশিষ্ট্য, তা ব্যাখ্যা করতে ।

    ….

    আপনি যদি পুরোটা পড়ার আগ্রহ প্রকাশ করে থাকেন আপনাকে অগ্রীম ধন্যবাদ। সবসময় দোয়ায় রাখবেন!

    ….

    ধরুন, আপনার মাথায় প্রশ্ন আসল যে বাংলাদেশের সাধারণ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের গড় ব্লাড প্রেসার কত তা আপনি হিসেব করে দেখতে চান। এক্ষেত্রে কি করা যেতে পারে?

    এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভাল উপায় হচ্ছে, আপনি বাংলাদেশের সব প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের ব্লাড প্রেসার মেপে নিয়ে গড় হিসেব করবেন। কিন্তু, বাস্তবে আপনার পক্ষে তা সম্ভব নয়। কারণ, এর জন্য যে পরিমান রিসোর্স দরকার তা আপনার কাছে নেই।

    তাহলে আপনি কি করতে পারে? প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষদের মধ্যে র‍্যানডমলি কিছু মানুষ (স্যাম্পল) নিয়ে তাদের ব্লাড প্রেসার মাপতে পারেন। কিন্তু, আপনার এই স্যাম্পল থেকে আপনি বাংলাদেশের প্রাপ্তবয়স্ক মানুষদের প্রকৃত গড় রক্তচাপ সম্পর্কে বলতে পারবেন না। কেননা, হতে পারে আপনি র‍্যানডমলি কিছু মানুষকে নিতে গিয়ে যাদেরকে বাদ দিয়েছেন তাদের প্রেসার ভিন্ন।

    ফলে আপনি আপনার স্যাম্পল থেকে গড় রক্তচাপের ব্যাপারে একটা রেঞ্জ প্রকাশ করতে পারবেন, যার মধ্যে প্রকৃত গড়ের হিসেবটা থাকবে বলে আপনি একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় (সাধারণত ৯৫%) কনফিডেন্ট। এই যে গড়ের পাশে আমরা একটা ইন্টারভাল প্রকাশ করি তাকে বলে কনফিডেন্স ইন্টারভাল।

    মজার বিষয় হল, আপনার স্যাম্পল যত বড় হবে, রেঞ্জটা ততই ছোটই হবে। মনে করি, আপনি ৪০০ স্যাম্পল নিয়ে গড় সিসটোলিক ব্লাড প্রেসার পেলেন ১১০, এবং কনফিডেন্স ইন্টারভাল : ৭০ – ১৪০। এখন ধরি, আপনি ১০০০ স্যাম্পল নিয়ে হিসেব করে দেখলেন এভারেজ সিস্টোলিক প্রেসার ১১০ বা তার কাছকাছি আছে। আপনি দেখতে পাবেন যে আপনার কনফিডেন্স ইন্টারভাল কমে এসেছে: ৮০ – ১৩০। স্যাম্পল যদি আর বড় হয়, আপনার ইন্টারভাল আরও কমে আসবে।

    সুতরাং, স্যাম্পল বেশী হলে, আমাদের কনফিডেন্স ইন্টারভালে বিস্তৃতি কমে যাচ্ছে।

    ধরি, এরকম প্রায় ২০ টি রিসার্চ গ্রুপ বিভিন্ন সময় বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে বা পুরো বাংলাদেশে জুড়ে বিভিন্ন সংখ্যায় স্যাম্পল নিয়ে ব্লাড প্রেসার হিসেবে করেছেন। প্রতিটি রিসার্চে গড় পেসারের পরিমাপ ভিন্ন এবং স্বাভাবিক ভাবে বিস্তৃতির পরিমাপও ভিন্ন।

    এখন মনে করি, আপনি এই সবগুলো পাবলিকেশনকে একত্র করেছেন যে সবগুলোর এভারেজ প্রেসারের হিসেবটা নিয়ে একটা গড় করবেন। কারণ, আপনি জানেন যত বেশী স্যাম্পল সাইজ বাড়ানো যাবে ততই আপনি প্রকৃত হিসেবের কাছাকাছি পৌছুতে পারবেন। কিন্তু, সবার এভারেজ প্রেসার, বিস্তৃতি এবং স্যাম্পল সাইজ এর হিসেব একত্র করার পর আপনার মনে প্রশ্ন আসল, আমি কিভাবে এগুলোর এভারেজ করতে পারি? সবগুলো যোগ করে দিয়ে কি স্যাম্পল সংখ্যা দিয়ে ভাগ করে দিবো? না, তা তো হবে না! কারণ, আপনার কাছেতো প্রতিটি ব্যাক্তির ড্যাটা আলাদা ভাবে নেই।

    তাহলে কি করা যায়? আমরা ওপরে বলেছিলাম যে স্যাম্পল ছোট হলে বিস্তৃতি বেশী হয়। সুতরাং, বিস্তৃতির হিসেবটাকে যদি উল্টে দিতে দেই, তাহলে বড় বিস্তৃতির জন্য একটা ছোট সংখ্যা আসবে এবং ছোট বিস্তৃতির জন্য একটা বড় সংখ্যা আসবে। যাকে আমরা বলতে পারি weight (বা ওজন।)।

    সুতরাং, আপনি যদি স্টাডিগুলো থেকে সংগৃহিত হিসেবের সাথে ওজন হিসেবে নিয়ে আসতে পারেন, তাহলে ছোট স্যাম্পলের স্টাডিতে কম ওজন এবং বড় স্যাম্পলের স্টাডিতের বেশী ওজন দিতে পারবেন। এভাবে, আপনি যে সম্মিলিত গড় পেসারের হিসেবটা কষবেন তা হবে ‘প্রকৃত’ গড়ের কাছাকাছি।

    উপরের এতগুলো কথার অবতারণা করলাম হল পরিসংখ্যানে কিভাবে ‘ওজন’ বিষয়টাকে গানিতিক আকারে নিয়ে আসা যায় তা বোঝানোর জন্য।

    এবার আসুন একটু সম্ভাব্যতার হিসেবে যাই। আমরা জানি, একটি পয়সার একটি হেড অথবা টেইল আছে। আপনি টস করলে মাটিতে হেইড বা টেইল পড়ার সম্ভাব্যতা ০.৫ । একটি লুডুর ঘুটি টস করলে ১ থেকে ৬ এর মধ্যে যে কোন একটি পড়ার সম্ভাব্যতা ১/৬ = ০.১৭ । তাসের একটি বাক্স থেকে না দেখে একটি কার্ড টানলে, সেটি কিং অব হার্ট হবার সম্ভাব্যতা ১/৫২ = ০.০২ । এভাবে, আমরা পৃথিবীতে মৃত্যুবরণ করব তার সম্ভাব্যতা ১ (অর্থাৎ, নিশ্চিত ভাবেই হবে)। আবার, একটি ছেলের গর্ভে বাচ্চা হবার সম্ভাব্যতা ০ (কারণ, গর্ভই নেই)। সুতরাং, আমরা দেখতে পাচ্ছি সম্ভাব্যতার হিসেবে ০ থেকে ১ এর মধ্যে যে কোন সংখ্যায় হতে পারে।

    এখন, মনে করি আপনি লুডু খেলছেন। আপনার কাছে যদি একটি ছক্কা থাকে, আপনি টস করলে টসে ছয় সংখ্যা পড়ার সম্ভাবনা হবে ০.১৭। কিন্তু, আপনি যদি ছক্কার সংখ্যা বাড়িয়ে দুটো করেন, আপনার অন্তত একটি ছয় পড়ার সম্ভাবনা বেড়ে হবে ২/৬ = ০.৩৩। সুতরাং, আপনি যদি (প্রবাবিলিটি) রিসোর্স বাড়াতে পারেন, আপনার প্রত্যাশিত ফলের সম্ভাব্যনা বাড়বে। অর্থাৎ, রিসোর্স বাড়ানো কমানোর মাধ্যমে সম্ভাব্যতার কম বেশী করা যায়। এভাবে ছক্কার সংখ্যা বাড়াতে থাকতে পারলে, আপনি ছয় পড়ার সম্ভাবনাকে “১”-এর কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারবেন।

    এবার চলুন একটু কম্পিউটারের জগতে যাই। আমরা জানি, কম্পিউটার কাজ করে ট্রানজিস্টরের উপর ভিত্তি করে। যার দুটো স্টেট আছে- হয় “১” না হয় “০”। সুতরাং, এই ধরনের ট্রান্সজিস্টরের স্টেট সংরক্ষণ করতে চাইলে করতে হবে “১” বা “০” হিসেবে। ধরুন, আমরা চাচ্ছি ঠিক “১” এবং “০” সংরক্ষণ না করে একটি ট্রানজিস্টরে বিভিন্ন মাত্রার ওয়েইট সংরক্ষণ করতে। কারণ, শুধু “১” বা “০” সংরক্ষণ করার চেয়ে যদি ট্রানজিস্টর দিয়ে কি মাত্রায় বিদ্যুৎ প্রবাহিত হতে পারবে তা বিভিন্ন কানেকশন ওয়েইট দিয়ে নির্ধারণ করে দেয়া যায়, তাহলে আমাদের প্রত্যাশিত ফলাফল বিভিন্ন ধরনের হতে পারে।

    মজার বিষয় হল, ইলেকট্রিক ইঞ্জিনিয়ার ও কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে এ ধরনের একটি ‘মেমজিস্টর’ আবিস্কার করেছেন, যা কারেন্ট পাস করার জন্য বিভিন্ন মাত্রায় দরজা (weighted gate) খোলা রাখতে পারে এবং মনে রাখতে পারে। এটার সুবিধে কি? এটি ঠিক আগের বার কতটুকু ইলেকট্রিসি পাস করেছিলো তা মনে রাখতে পারে।

    এই মজার বৈশিষ্ট্য কাজে লাগিয়ে তৈরী করা হয়েছে আধুনিক নিউরাল নেটওয়ার্ক । নিউরাল নেটওয়ার্কে আমাদের ব্রেইনের মত অনেকগুলো সমান্তরাল সার্কিট থাকে। প্রথমবার যখন ইলেকট্রিসি পাস হয়, তখন সার্কিটের গেইটগুলো বিভিন্ন মাত্রায় ওয়েইট সংরক্ষণ করে। এই নেটওয়ার্কগুলোকে যখন ট্রেইন করা হয়ত, তখন বিভিন্ন সার্কিটে ওয়েইটের বিভিন্নতা তৈরী হয়। ফলে, একটি ট্রেইনড নেটওয়ার্কে যখন নতুন কোন তথ্যের ইনপুট দেয়া হয়, সে সঠিকের কাছাকাছি আউটপুট দিতে পারে। ফলে, যত নতুন তথ্য দিয়ে ট্রেইনিং হবে, উক্ত নেটওয়ার্কের ওভারওল সার্কিট ম্যাপের ওয়েইট, ততই সুন্দর কমবাইন্ড আউটপুট প্রেডিক্ট করতে পারবে। যেমন- জেনারেটিভ প্রি-ট্রেইনড ট্রান্সফর্মার (জিপিটি) বা চ্যাটজিপিটি জাতীয় নিউরাল নেটওয়ার্ক ইনপুটের ভিত্তিতে ততই সঠিক উত্তর করতে পারে, বিভিন্ন ধরনের লেখা দিয়ে যত বেশী তাকে ট্রেইন করা হয় । লক্ষ্যনীয়, তার উত্তর হয় সম্পূর্ণ প্রবাবিলিস্টিক। অর্থাৎ, কোন ওয়ার্ডের পরে কোন ওয়ার্ড আসবে সেই সম্ভাব্যতার হিসেব কষে। তবে, এগুলো কিন্তু সে শিখে নিয়েছে মানুষের লেখা থেকে।

    এবার আসুন মানুষের ব্রেইনের সাথে বিষয়টাকে তুলনা করে ভাবি। আমরা যত বড় হতে থাকি, ততই বিভিন্ন ধরনের তথ্য ব্রেইনে ইনপুট হয়। ফলে, আমাদের নিউরাল রিপ্রেজেন্টশনের ভেতর তা ওয়েইট হিসেবে সংরক্ষিত হতে থাকে। আপনি যত দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক কাজ করবেন, ততই তা আপনার ব্রেইনের সার্কিটকে ট্রেইন করতে থাকবে। সুতরাং, বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে আপনার চিন্তার ম্যাচুরিটি বাড়বে এবং সাবকনসাস দক্ষতা বাড়বে। আপনি যদি চিকিৎসক হন, আপনার অর্জিত দক্ষতা হবে সম্পূর্ণ আপনার নিজস্ব। যা ট্রান্সফারেবল না। অর্থাৎ, দক্ষতা আপনি কাউকে শিখিয়ে দিতে পারবেন না। বরং, আপনার ছাত্রের তা নিজে করে অর্জন হবে।

    আমার ধারণা, আমাদের চিন্তার চর্চার মাধ্যমেও আমাদের ব্রেইনের ওয়েইট রিপ্রেজেন্টেশনকে প্রভাবিত করতে পারি। লক্ষ্যনীয়, এবস্ট্রাক্ট চিন্তা করার ক্ষমতা মানুষের ইউনিক বৈশিষ্ট্য। এ বিষয়টি ঐচ্ছিক (volitional) এবং এটি নন কমপিউটেবল। কেননা, চ্যাট জিপিটি আউটপুট দেয় একটা ইনপুটের উপর ভিত্তি করে। কিন্তু, মানুষ কোন ইনপুট ছাড়াই শুধু অ্যাবস্ট্রাক্ট থটের মাধ্যমে আউটপুট তৈরী করতে পারে। একটা উদাহরণ দিয়ে বুঝাই- ধরুণ, আপনার একটি প্রশ্নের উত্তরে চ্যাট জিপিটি লিখেছে, “আমি ভাত খাই”। এখন, চ্যাট জিপিটিকে যদি, “আমি ভাত খাই” এই ধরনে তিনটি বাক্য এবং “আমি কলা খাই” এ ধরনের দুটি বাক্য দিয়ে ট্রেইন করা হয় এবং আপনি তাকে, আমি — খাই লিখে শুণ্যস্থান পূরণ করতে বলি, সে আমি ভাত খাই লেখার সম্ভাবনা বেশী থাকবে। এবার ধরে নেই, আমাদের ব্রেইনের নিউরাল নেটওয়ার্ক অনেকটাই এরকম। সুতরাং, আমি ছোটবেলা থেকে বড় হতে হতে এরকম অসংখ্য বাক্য দিয়ে ট্রেইন আপ হয়েছি। আমাকে যদি কেউ বলে “আমি … খাই” এ বাক্যটি পূরণ করতে, আমাদের টেন্ডেন্সি হওয়া উচিৎ সবচেয়ে বেশীবার যে বাক্যটা শুনেছি তা দিয়ে পূরণ করতে। কিন্তু, আমরা “ইচ্ছে” করলে অল্টারনেট খাবার চয়েজ করতে পারি। যেমন- বলতে পারি “আমি আইসক্রিম খাই” বা “আমি আম খাই”। এমন কি তা ট্রেইনেংর ফলে সৃষ্ট ওয়েইট রিপ্রেজেন্টশনের বিপরীতে গিয়ে।

    তদুপরি, হতে পারে আমি আমার শেখা শব্দাবলী বাদ দিয়ে সম্পূর্ণ নতুন একটি শব্দ তৈরী করলাম। যেমন- আমি “টাম” খাই এবং “টাম” অর্থ কি শুধু আমার মাথায় রেখে দিলাম। হয়ত, আমি এটিকে কাঠালের নাম হিসেবে চিন্তা করেছি। অথবা, সম্পূর্ণ কাল্পনিক কোন ফল হিসেবে চিন্তা করছি। অর্থাৎ, আমি চাইলে সর্ম্পূন unrelated দুটো বিষয় relate করে একটা মিনিং তৈরী করে রাখতে পারি। কিন্তু, আমি যতক্ষণ পর্যন্ত এই মিনিংটা প্রশ্নকারীকে না বলব, সে শব্দটি অর্থহীন মনে করতে থাকবে। যখন আমি মিনিংটা বুঝিয়ে বলব, তখন হয়ত প্রশ্নকারী বুঝতে পারবে। এমন কি আমার যদি যথেষ্ট সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা থাকে একটি নতুন শব্দ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়ে যাবে। যেমন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মত আর্টিস্টটা কিছু নতুন শব্দ সংযোজন করেছেন বাংলা অভিধানে সংযুক্ত করেছেন। একই ভাবে, পাবলো পিকাসো নতুন প্রকারের আর্টফর্ম নিয়ে এসেছেন, বিথোভেন নতুন ধরনের মিউজিক রচনা করেছেন। জিপিটি, ডাল-ই, কিংবা সোরা শুধু মানুষের বানানো তথ্য থেকে শিখে নিয়ে লেখা, ছবি বা ভিডিও জেনারেট করতে পারছে। কিন্তু, মিনিং আপনাকে দিয়ে দিতে হচ্ছে। অন্যকথায়, আপনি কোন বস্তুর সাথে বস্তুকে সম্পূর্ণ আব্রিটারীলি রিলেট করবেন, তা আপনাকে টেক্সট-এর মাধ্যমে শুধু এই মডেলগুলোকে বলে দিতে হচ্ছে।

    এজন্যই আমার যেদিন প্রথম রিয়েলাইজেশন হয়েছিল যে, “The unique feature of human intellect is associating two completely unrelated objects with purpose” তথা “মানুষের বুদ্ধিমত্তার স্বতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে দুটো সম্পূর্ণ অসম্পর্কিত বস্তুকে পরস্পর একটি উদ্দেশ্য সহকারে জুড়ে দেয়া”, সেদিন থেকে বাক্যটি আমি আমার ফেসবুকের প্রোফালের ইনট্রোতে দিয়ে দেখেছি।

  • মাইন্ড ব্রেইনের সাথে কিভাবে ইন্টারেকশন করে

    মাইন্ড ব্রেইনের সাথে কিভাবে ইন্টারেকশন করে? এই প্রশ্নটা মাইন্ড-বডি ডুয়েলিজম-এর বিপরীতে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। কারণ, মাইন্ড ব্রেইনের সাথে ইন্টারেকশন করতে হলে মাইন্ড কর্তৃক এনার্জি ইনফিউজ করতে হবে। অর্থাৎ, শক্তির আদান প্রদান ছাড়া সাধারনত কোন কজাল রিলেশনশিপ সম্ভব নয়। অধিকন্তু, শক্তির নিত্যতা সূত্র অনুযায়ী আমরা জানি মহাবিশ্বের সর্বমোট এনার্জির কম বেশী হয় না। শক্তির কেবল রূপান্তর হয়। সে হিসেবে মাইন্ড কিভাবে ব্রেইনে শক্তি প্রবাহ করতে পারে সেটা নিয়ে নন-ডুয়্যালিস্টদের অবজেকশন আছে।

    মজার বিষয় আধুনিক কোয়ান্টাম মেকানিক্সের আবিস্কারের মাধ্যমে এই অবজেকশন টিকে না। কারণ, কোয়ান্টাম মেকানিক্স অনুযায়ী দুটি এনট্যাঙ্গেলড পার্টিকেলের মধ্যে কোন প্রকার শক্তি প্রবাহ ছাড়াই ‘নন-লোকাল’ ইন্টারেকশন হতে পারে।

    ধরুন, নাইট্রোজেনের দুটো পরমানু এনট্যাঙ্গেলড অবস্থায় আছে। আরও মনে করুন আপনি একটি পরমানুকে স্পেসশিপ দিয়ে মঙ্গল গ্রহে পাঠিয়ে দিয়েছেন। যদি পৃথিবীর পরমানু হয় Ne এবং মঙ্গল গ্রহের পরমানু হয় Nm, তাহলে দুটো পার্টিকেল বিপরীতমুখী স্পিনে ঘুরতে থাকবে (১/২ এবং -১/২).। ধরুন আপনি পৃথিবীতে বসে Ne এর স্পিন মাপলেন ১/২ তাহলে আপনি নিশ্চিত যে মঙ্গলগ্রহে যে আছে তার পরিমাপকৃত স্পিন হবে -১/২। মজার বিষয় হল আপনি যদি কোন ভাবে পৃথিবীর পার্টিকেলটার স্পিনি ঘুরিয়ে দিতে পারেন, মঙ্গল গ্রহের পরমানুটাও কোন প্রকার শক্তির আদান প্রদান ছাড়াই সম্পূর্ণ বিপরীত দিকে ঘুরে যাবে। একে বলা হয় নন-লোকাল ইন্টারেকশন।

    সুতরাং, যদি স্বয়ং আধুনিক পদার্থবিদ্যা অনুযায়ী ননলোকাল কজেশন পসিবল হয় তাহলে মাইন্ড কেন ব্রেইনের সাথে শক্তি ছাড়া ইন্টার‍্যাকশন করতে পারবে না।।

    (Further reading: The Soul Hypothesis, Mark Baker and Stuart Goetz, ed.) এবার একটু ভাবনার খোরাক। মজার বিষয় হল আমরা জানি পাটির্কেল গুলো অবজারভেশনের আগ পর্যণ্ত সুপারপজিশনে থাকে। যখন অবজারভেশন করা হয় তখনই কেবল কো্ল্যাপস করে। এখন আমাদের অবজারভেশনের অ্যাপারেটাস তথা আমাদের ইন্দ্রীয়সমূহ নিজেরাইতো এক ধরনের কোয়ান্টাম ম্যাকানিকাল এনসেম্বল। তাহলে একটা এনসেম্বল তথা আমাদের ব্রেইন কিভাবে আরেকটি এনসেম্বল তথা এক্সিপেরমেন্টাল এপারেটাসকে রিডাকশন করে। অর্থাৎ, ফিজিক্যাল সিস্টেম ছাড়াও আরও কিছু এখানে ফাংশন করছে। উক্ত কিছু হলো আমাদের মাইন্ড যার আলাদা একটি স্বত্ত্বা আছে। হতে পারে আমাদের ব্রেইনে আমাদের মাইন্ড নিয়মিত ফিজিক্যাল সিস্টেমের পরিবর্তন আনছে। যেমন: আপনি যখন কোন পাটিকুলার মুভমেন্ট করছেন তখন উক্ত মুভমেন্টের জন্য সংশ্লিষ্ট নিউরনাল সিগন্যাল মোটর কর্টেক্স-এ তৈরী হচ্ছে। হতে পারে যারা উক্ত মাইন্ডকে সুতীক্ষ্ণভাবে ব্যবহার করতে শিখেছে তারা ব্রেইনের বাইরের সিস্টেমকে অল্পমাত্রায় নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ পায়। থাক আর এগুচ্ছি না। এভাবে এগুতে থাকলে আলোচনা অন্যদিকে টার্ন করতে পারে।


    সর্বপোরী আল্লাহই ভাল জানেন।

  • Brainstorming about Mind #1

    What is creativity?

    What is intelligence?

    What is non-computable or non-algorithmic about intelligence?

    The Turning halting problem has shown us that there is no program, which could decide whether any arbitrary computer program would halt or loop forever.

    Godel’s Incompleteness theorem has shown us that deriving all mathematics from a group of axioms is not possible.

    This means, there’s surely something non-computable about the mind that exists.

    So, what is non-computable about our minds.

    Let us think about the issue.

    We know, whenever we face a complex problem, it is easy to deal with it by breaking it into simpler parts.

    So when we think, imagine, or get creative about something, what does our mind actually do?

    It processes sensory information from vision, hearing, smelling, tasting, and touch. In the sensory cortices of our brain, we process the electrochemical signals coming from sensory organs and perceive them in our own unique ways. This perception, dubbed ‘qualia’, is subjective and can’t be reached objectively.

    Now, let’s think of our childhood brain as an empty slate with certain programs installed in it on how to process information. From infancy, we are exposed to a lot of information about relationships between different types of sensory information. For example, a child sees its surroundings and learns how to reproduce them. It sees our gestures during our talk, including facial and bodily movements, and the sounds we produce. It then reproduces this information using its motor apparatus. While processing this information, it learns the relationship between different types of information we have ascribed, knowingly or unknowingly, e.g., the relationship between sounds we produce and the hand movements we do, the minute facial muscle movements, and the sound units produced through this process, etc.

    A child while getting acquainted with the ‘letters’ and their corresponding sound units- ‘phonemes’ during learning how to read and write, learns about our ascribed ‘relationship’ between a ‘curved line (e.g., letter ‘p’)’ and the sound (e.g., ‘p’ sound). The child then writes the ‘p’ and uses this information learned from experience.

    It seems like a highly sophisticated computer using neural networks or parallel connections could do the same if trained through all the information in its surrounding environment over years (like a child learns through experience over time).

    However, what is unique about us is that we can produce a completely ‘arbitrary’ relationship between two types of sensory information. For example, you can, just for fun, ascribe the sound ‘A’ to the letter ‘B’, the sound ‘B’ to the letter ‘C’, and write down cryptic sentences using your new symbolic language. However, a computer, running on algorithms, can’t produce a completely “novel” arbitrary relationship (i.e., ascribe arbitrary meaning between two types of sensory units).

    Interestingly, we can also retrieve any arbitrary relationships by getting enough information about a new cryptic symbolic system.

    When we do abstract thinking we actually manipulate and examine different types of arbitrary relationships between different sensory information and do logical or intuitive deduction.

    If we think about this deeply, we can realize that- “The unique feature of human intellect is the ability to associate two unrelated objects with purpose.”

    I came across this realization when I got a deeper understanding of our neuronal structure through several texts and other books. Interestingly, I got a similar insight from Dale Purves’ textbook ‘Neuroscience’ and pediatric neurosurgeon Michael Egnor’s talks.

    Long ago, realizing this significant feature of the human mind, I put it in my Facebook profile intro. It now seems this understanding is being confirmed day by day.

    Alhamdulillah! Allah is the Greatest.

  • ফ্রি উইল / ফ্রি ওন্ট

    গতদিন ArcGIS দিয়ে স্প্যাটিয়াল ম্যাপিং শিখলাম। নতুন কিছু জানার মধ্যে অসম্ভব মজা। কিন্তু দীর্ঘদিন একই জিনিস নিয়ে পড়ে থাকলে পানসে হয়ে যায়।

    মজার বিষয় হল আমাদের ব্রেইনও সবসময় নতুনত্ব খুঁজে নেয়ার জন্য টিউনড। আমাদের চোখের এক ধরনের মুভমেন্ট আছে যাকে বলে স্যাক্কাডস। মূল কথা হল চোখ কোন জায়গায় স্থির থাকলেও খুবই ক্ষুদ্র পরিসরে স্ক্যান করতে থাকে। অর্থাৎ সে এক জায়গায় স্থির থাকে না, সবসময় একটা অসিলেটরী মুভমেন্ট হয়।

    এটা যে শুধুমাত্র চোখের ক্ষেত্রে হয় তা নায়। ইন্টারনেট এডিকশন বা পর্ণএডিকশন নামক উত্তরাধুনিক রোগেরও মূল উৎস হচ্ছে, নতুনত্বের প্রতি মস্তিস্কের অদম্য উৎসাহ। এই যে ফেসবুকে ঘন্টার পর ঘন্টা স্ক্রল করছেন সময় কোন দিক যাচ্ছে টের পাচ্ছেন না, তার একটা কারণও সম্ভবত ব্রেইনের উক্ত টিউনিং।

    মজার বিষয় হল মানুষের নার্ভাস সিস্টেমের এই ধরনের আরও কিছু উদাহরণ পাওয়া যায়। যেমন মাংসপেশীর সংকোচন প্রসারণ নিয়ন্ত্রনের জন্য দুই ধরনের নিউরণ দিয়ে ব্রেইন ও পেশীতন্তু সংযুক্ত থাকে- আপার মোটর নিউরন এবং লওয়ার মোটর নিউরন। লওয়ার মোটর নিউরনের কাজ হল কন্টিনিউয়াস ইমপালস তৈরী করতে থাকা যেন পেশীগুলো সংকুচিত থাকে। আপার মোটর নিউরনের কাজ হলো লওয়ার মোটর নিউরনকে বিভিন্ন মাত্রায় ইনহিবিট করে মাংসপেশীর মুভমেন্ট নিয়ন্ত্রণ করা।

    ফ্রি উইল / ফ্রি ওন্ট

    Will Power

    আমাদের স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি তথা ফ্রি-উইল-এর সাথে এর একটা সংযোগ চিন্তা করা যায়। ম্যাটেরিয়ালিস্টদের মতে সব কিছু ডেটারমিনিস্টিক। মানুষের কোন ফ্রি উইল নাই। তারা বেঞ্জামিন লিবেট-এর একটা এক্সপেরিমেন্টকে উদাহরণ হিসেবে টানে যেখানে তিনি দেখিয়েছেন যে, আমরা যখন আমাদের আঙ্গুল নাড়াতে যাই তখন আমাদের চিন্তার আগেই মোটরকর্টেক্স থেকে সংশ্লিষ্ট নিউরনাল সিগনাল তৈর হয়ে যায়। কিন্তু, বস্তুবাদীরা যেটি সঙ্গোপনে এরিয়ে যায় তা হল উক্ত বেঞ্জামিন লিবেট-ই দেখিয়েছেন যে সিগনাল তৈরী আমাদের সবাকনসাশে হলেও, উক্ত সিগনাল হাতে পৌছার আগে থামিয়ে দেয়ার কাজটা আমরা কনসাস উইল দিয়ে করতে পারি।

    অর্থাৎ আমাদের ফ্রি-উইল (Free Will) আসলে ফি ফ্রি-ওন্ট (Free Wont’)।

    গুনাহ করার ইমপালস মানুষের মধ্যে সহজাত। কিন্তু, উক্ত ইমপালসকে কন্ট্রোল করা হল মানুষের স্বাধীন ইচ্ছাশক্তির চর্চা। নইলে, গুনাহতে গা ভাসিয়ে দেয়া আমাদের ও পশুর মধ্যে পার্থক্য থাকল কোথায়?


    Bibliography:

    1. Purves, D. Neuroscience (Textbook)
    2. Libet, B. Mind Time: The Temporal Factor in Consciousness

  • মাইন্ড কিভাবে ব্রেইনের সাথে ইন্টারেকশন করে?

    এই প্রশ্নটা মাইন্ড-বডি ডুয়েলিজম-এর বিপরীতে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। কারণ, মাইন্ড ব্রেইনের সাথে ইন্টারেকশন করতে হলে মাইন্ড কর্তৃক এনার্জি ইনফিউজ করতে হবে। অর্থাৎ, শক্তির আদান প্রদান ছাড়া সাধারনত কোন কজাল রিলেশনশিপ সম্ভব নয়। অধিকন্তু, শক্তির নিত্যতা সূত্র অনুযায়ী আমরা জানি মহাবিশ্বের সর্বমোট এনার্জির কম বেশী হয় না। শক্তির কেবল রূপান্তর হয়। সে হিসেবে মাইন্ড কিভাবে ব্রেইনে শক্তি প্রবাহ করতে পারে সেটা নিয়ে নন-ডুয়্যালিস্টদের অবজেকশন আছে।

    মজার বিষয় আধুনিক কোয়ান্টাম মেকানিক্সের আবিস্কারের মাধ্যমে এই অবজেকশন টিকে না। কারণ, কোয়ান্টাম মেকানিক্স অনুযায়ী দুটি এনট্যাঙ্গেলড পার্টিকেলের মধ্যে কোন প্রকার শক্তি প্রবাহ ছাড়াই ‘নন-লোকাল’ ইন্টারেকশন হতে পারে।

    ধরুন, নাইট্রোজেনের দুটো পরমানু এনট্যাঙ্গেলড অবস্থায় আছে। আরও মনে করুন আপনি একটি পরমানুকে স্পেসশিপ দিয়ে মঙ্গল গ্রহে পাঠিয়ে দিয়েছেন। যদি পৃথিবীর পরমানু হয় Ne এবং মঙ্গল গ্রহের পরমানু হয় Nm, তাহলে দুটো পার্টিকেল বিপরীতমুখী স্পিনে ঘুরতে থাকবে (১/২ এবং -১/২).। ধরুন আপনি পৃথিবীতে বসে Ne এর স্পিন মাপলেন ১/২ তাহলে আপনি নিশ্চিত যে মঙ্গলগ্রহে যে আছে তার জন্য Nm-এর পরিমাপকৃত স্পিন হবে -১/২। মজার বিষয় হল আপনি যদি কোন ভাবে পৃথিবীর পার্টিকেলটার স্পিন ঘুরিয়ে দিতে পারেন, মঙ্গল গ্রহের পরমানুটাও কোন প্রকার শক্তির আদান প্রদান ছাড়াই সম্পূর্ণ বিপরীত দিকে ঘুরে যাবে। একে বলা হয় নন-লোকাল ইন্টারেকশন।

    স্বয়ং আধুনিক পদার্থবিদ্যা অনুযায়ী যদি ননলোকাল কজেশন পসিবল হয় তাহলে মাইন্ড কেন ব্রেইনের সাথে শক্তি ছাড়া ইন্টার‍্যাকশন করতে পারবে না?
    ….
    এবার একটু ভাবনার খোরাক।

    মজার বিষয় হল আমরা জানি পাটির্কেল গুলো অবজারভেশনের আগ পর্যন্ত সুপারপজিশনে থাকে। যখন অবজারভেশন করা হয় তখনই কেবল কোল্যাপ্স করে। এখন আমাদের অবজারভেশনের অ্যাপারেটাস তথা আমাদের ইন্দ্রীয়সমূহ নিজেরাইতো এক ধরনের কোয়ান্টাম ম্যাকানিকাল এনসেম্বল। তাহলে একটা এনসেম্বল তথা আমাদের ব্রেইন কিভাবে আরেকটি এনসেম্বল তথা এক্সিপেরমেন্টাল এপারেটাসকে রিডাকশন করে।

    অর্থাৎ, ফিজিক্যাল সিস্টেম ছাড়াও আরও কিছু এখানে ফাংশন করছে। উক্ত কিছু হলো আমাদের মাইন্ড যার আলাদা একটি স্বত্ত্বা আছে। হতে পারে আমাদের ব্রেইনে আমাদের মাইন্ড নিয়মিত ফিজিক্যাল সিস্টেমের পরিবর্তন আনছে। যেমন: আপনি যখন কোন পাটিকুলার মুভমেন্ট করছেন তখন উক্ত মুভমেন্টের জন্য সংশ্লিষ্ট নিউরনাল সিগন্যাল মোটর কর্টেক্স-এ তৈরী হচ্ছে। হতে পারে যারা উক্ত মাইন্ডকে সুতীক্ষ্ণভাবে ব্যবহার করতে শিখেছে তারা ব্রেইনের বাইরের সিস্টেমকে অল্পমাত্রায় নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ পায়।

    থাক আজ আর এগোচ্ছি না। এ বিষয়ে আরেকদিন।

    সর্বপরী আল্লাহই ভাল জানেন।

    ….
    (Further reading: The Soul Hypothesis, Mark Baker and Stuart Goetz, ed.)

  • মাইণ্ড-বডি প্রবলেম: কিছু ভাবনা (২)

    মানুষের ইন্টেলিজেন্সের অন্যতম একটি প্রমাণ হলো বিভিন্ন বিষয়কে পরস্পর ‘এসোসিয়েট’ করতে পারার যোগ্যতা। যেমন: মানুষ তার মুখ দিয়ে উচ্চারিত কতগুলো শব্দ (Sound)-কে বিভিন্ন ব্যাক্তি, বস্তু, ক্রিয়া, বিশেষণ ইত্যাদির সাথে এসোসিয়েট করতে পারে (ধ্বনি)। আবার এই শব্দগুলোকে বিভিন্ন বক্ররেখার তথা প্রতীকের(symbol)-এর সাথে এসোসিয়েট করতে পারে (বর্ণ)। মানুষ এই এসোসিয়েশনগুলো ব্যবহার করে কোন একটি ঘটনাকে বর্ণনা করতে পারে।কোন একটি ঘটনাকে বুঝতে গেলেও মানুষের এই এসোসিয়েশনগুলো তথা ধ্বনি ও বর্ণ ব্যবহার করে। অর্থাৎ মানুষের বুদ্ধিমত্তার অংশ হলো তার ভাষা ব্যবহারের যোগ্যতা। 

    কিন্তু প্রশ্ন হলো একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম কি এসোসিয়েট করার বিষয়টি করতে পারবে? এসোসিয়েট করার যোগ্যতাটি কি গণনাযোগ্য (Calculable)? আরও সাধারণভাবে বললে কম্পিউটারের কি মন(Mind) থাকতে পারে? আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের প্রবক্তাদের অন্যতম কাজ এ বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করা। মাইণ্ড যদি একটি উচ্চমার্গীয় প্রোগ্রাম হয় তাহলে মেন্টাল এক্টিভিটি হলো উক্ত প্রোগ্রামের এক্সিকিউশন। কম্পিউটেশনাল থিওরী অব মাইণ্ড এর প্রবক্তা জেরী ফোডোর ও হিলারী পুটনামদের মতে আমাদের মস্তিষ্কের এলগোরিদমগুলোই হলো মাইণ্ড। (হিলারী পুটনাম অবশ্য পরবর্তীতে নিজেই এর যথেষ্ট সমালোচনা করেছেন)। [১]

    মাইণ্ডের কাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ‘Understanding’ বা ‘বোঝা’। Strong Artificial Intelligence(Strong AI)- এর প্রবক্তাদের মতে কম্পিউটারের মন থাকা সম্ভব। সুতরাং কম্পিউটার ‘বুঝে’। কম্পিউটারের বোঝার বিষয়টি পরীক্ষা করার জন্য অ্যামেরিকান ফিলোসোফার জন সার্ল-এর একটি সুন্দর থট এক্সপেরিমেন্ট আছে যাকে বলে সার্ল-এর চাইনিজ রুম। অর্থাৎ সার্লকে যদি একটি আবদ্ধ ঘরে রেখে কতগুলো চাইনিজ লেখা ইনপুট দেয়া হয় এবং চাইনিজ অক্ষরগুলোকে ব্যবহার করার জন্য কিছু ইন্সট্রাকশন দেয়া হয় এবং সে অনুযায়ী একটি ‘আউটপুট’ বাইরে দিতে বলা হয়- সার্ল সেটি করতে পারবেন। কিন্তু চাইনিজ ভাষা সম্পর্কে কোন প্রকার ধারণা না থাকায় তিনি পুরো প্রক্রিয়াটিতে চাইনিজ লেখাগুলোর কিছুই বুঝতে পারবেন না। কম্পিউটারও ইনস্ট্রাকশনগুলোকে এভাবে ‘ম্যানিপুলেট’ করতে পারবে এবং একটি আউটপুট দিতে পারবে, কিন্তু কিছু বুঝতে পারবে না। 

    স্ট্রংএআই-এর প্রবক্তারা অবশ্য বলছেন এখানে ‘বোঝা’ শব্দটিকে ‘আলাদা’ করে ফেলা হচ্ছে। হতে পারে আমাদের ব্রেইনে লেখার প্যাটার্নগুলোকে নিয়ে আলগারিদমের কাজ করাটাই হচ্ছে বোঝা। তবে জন সার্ল বলছেন এটাও একধরনের কার্টেসিয়ান ডুয়ালিজম। যেখানে আলগরিদমটাই ‘মাইণ্ড স্টাফ’ এর মত কাজ করছে, যা ‘ম্যাটার’-এর সাথে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত না। [২]

    তবে আমি ভাবছিলাম আমার ব্রেইন যদি একটি কম্পিউটার ধরে নেই এবং এতে যে কোন প্যাটার্নের এসোসিয়েশনকে শেখার প্রোগ্রামিং করা থাকে এবং আমি যদি উক্ত প্যাটার্ণ সম্পর্কে জেনে থাকি (তথা শিখে থাকি) তাহলে সেই এসোসিয়েশনের আলোকে উক্ত প্যাটার্ন বা সিম্বল ব্যবহার করে দেয়া কোন লেখার অর্থ ‘আমি বুঝতে পারবো’। কিন্তু, এই যে এসোসিয়েশন করার কাজটা, এটা কি স্ট্রংএআই হিসেবে আমি করতে পারবো?

    আমি মাতৃভাষা বাংলা দিয়ে ‘চিন্তা’-র কাজটি করি। আমি এখন মনের ভাব প্রকাশ করতে চাইলে বাংলা অক্ষর ব্যবহার করছি। কিন্ত ইচ্ছে করলে আমি অন্য কিছু সিম্বল তৈরী করার ক্ষমতা রাখি এবং সেগুলোতে কিছু অর্থ Attribute করার (তথা এসোসিয়েট করার) যোগ্যতা রাখি। কিন্তু স্ট্রংএআই কি সেটা পারবে?

    আত্মা ও মন নিয়ে পড়তে গিয়ে বিষয়গুলো নিয়ে ভাবছি, পড়ছি এবং আরো পড়বো ইনশাল্লাহ। এ বিষয়ে আপনাদের কোন চিন্তা আছে?

    রেফারেন্স:

    ১. http://en.wikipedia.org/wiki/Computational_theory_of_mind

    ২. Roger Penrose, The emperor’s New Mind, Oxford University Press, Oxford, p-24-25.

  • মাইণ্ড-বডি প্রবলেম: কিছু ভাবনা

    মাইণ্ড-বডি প্রবলেম: কিছু ভাবনা

    পাঁচ বছরের বয়সের আগে একটি শিশুর বাম অথবা ডান দিকের সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ার এপিলেপসির কারণে যদি অপারেশন করে ফেলে দেয়া হয় কি হতে পারে বলুনতো?

    আপনারা হয়তো ভাবছেন বাচ্চাটির একদিক পঙ্গু হয়ে পড়বে, একদিকের দৃষ্টি বাঁধাগ্রস্থ হবে, এক কানে শুনতে পারবে না, বাম দিক ফেলে দিলে কথা বলতে পারবে না ইত্যাদি। কিন্তু বাস্তবতা হল এ ধরনের সমস্যাগুলো সাধারণত হয় না। এর কারণ হলো নিউরোপ্লাস্টিসিটি।

    ডেভোলপমেন্টের সময় আমাদের মস্তিস্কের এক বিলিয়ন নিউরনের এক ট্রিলিয়ন কানেকশন যদি একটার পর একটা করে তৈরী হত তাহলে ব্রেইন তৈরী হতে হতে আমাদের হায়াত শেষ হয়ে যেত। কিন্তু মায়ের গর্ভে থাকাকালীন সময়টাতে আমাদের নিউরনের কোষগুলো তৈরী হলেও কানেকশনগুলো তথা ডেনড্রাইট ও এক্সনগুলো তাদের জায়গা খুঁজে নেয় জন্মের পরে।

    যে সদ্যজাত শিশুটির কোমলতা ও মায়া আমাদের আচ্ছন্ন করে রাখে, সেই শিশুটির মস্তিস্কে ঘটে যেতে থাকে বিস্ময়কর রকমের জটিল ঘটনা। আমাদের কান, চোখ, নাক, স্বাদ, স্পর্শ ইত্যাদি অনুভূতি বহনকারী নার্ভের এক্সনগুলো এ সময়ে ব্রেইনের কর্টেক্সে তাদের জায়গা করে নিতে থাকে। অন্যদিকে ব্রেইনের কোষগুলোর প্রতিটির প্রায় ১০০ থেকে ১০০০টি ডেনড্রাইট এই সাথে একই সময় তৈরী হয়ে ছড়িয়ে পড়ে এবং পার্শ্ববর্তী নিউরনের সাথে যোগাযোগ তৈরী করে। তবে যে ড্রেনড্রাইট এবং এক্সনগুলো ব্যবহার হয় না সেগুলো নিয়ন্ত্রিত প্রক্রিয়ায় নষ্ট হয়ে যায়। যে নিউরণগুলো ব্রেইন থেকে শরীরের অন্যান্য অংশকে যুক্ত করে তাদের সাথেও একই ঘটনা হয়।

    মজার বিষয় হলো, যে শিশুটি জন্মগত অন্ধ হয়ে জন্মায় তার স্পর্শানুভূতি পোস্ট সেন্ট্রাল জাইরাসের পাশাপাশি, দেখার জন্য নিয়োজিত ব্রেইনের অক্সিপিটাল কর্টেক্সেও জায়গা করে নেয়। ফলে ব্রেইল ব্যবহার করে পড়ালেখা করার মতো কাজটি জন্মান্ধ ব্যাক্তিরা অত্যন্ত দক্ষতার সাথে করতে পারে। তাদের কানের নার্ভগুলোর এক্সন সুপিরিওর টেম্পোরাল লোবের পাশাপাশি ব্রেইনের পিছনের অংশেও পৌছায়। ফলে এদের শ্রবণ শক্তিও হয় তুখোর।  

    কিন্তু একবার যখন এক্সনগুলো নিজেদের জায়গা করে নেয় তখন যদি তার জায়গা থেকে তাকে বিচ্ছিন্ন করা হয় কিংবা জায়গাটাকেই নষ্ট করে দেয়া হয়, সেক্ষেত্রে কি হবে? প্রকৃত পক্ষে এই ক্ষেত্রে এক্সনগুলো ব্রেইনের অন্য জায়গায় ভাগ বসায় এবং ব্রেইনের অন্য অংশগুলোও স্বাচ্ছন্দে তাদের জায়গার ভাগ দেয়। এ ঘটনাকেই বলে নিউরোপ্লাস্টিসিটি। 

    পাঁচ বছরের শিশুদের ব্রেইন সবচেয়ে প্লাস্টিক থাকে। ফলে এ সময়ে একটি হেমিস্ফিয়ার কেঁটে ফেলে দিলেও অন্য হেমিস্ফিয়ারটিতে ব্রেইনের রিঅর্গ্যানাইজেশন হয়। শিশুটি বড় হলে কথাও বলতে পারে, ঠিকমত দেখতে সমস্যা হয় না এবং কোন পাশ পঙ্গুও হয়ে পড়ে না।

    কিন্তু বড়দের ক্ষেত্রে কি এ ধরনের ঘটনা হয়? উত্তর: হয়। আগে মনে করা হত এডাল্ট ব্রেইনে রিঅর্গ্যানাইজেশন হয় না। কিন্তু নিউরোসায়েন্সের নতুন গবেষনা সমূহ এই নোশনকে ভুল প্রমাণিত করেছে। এ কারণেই দেখা যায় ঠিকমত ফিজিওথেরাপী নিতে পারলে স্ট্রোক রোগীরা আগের মতই চলতে পারছে। তবে এ বিষয়টি এত সহজ নয়। স্ট্রোক হয়ে যাওয়া পর যে হাতটি কার্যত নড়ছে না তাকে নড়ানোর চেষ্টা করাটা অনেক ধৈর্য্যের ব্যপার। প্রচণ্ড মানসিক শক্তির ব্যপার।

    হ্যাঁ, মানসিক শক্তির ব্যবহারেই ব্রেইনে সুনির্দিষ্ট পর্যবেক্ষনযোগ্য পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। ওয়েট এ মিনিট! মানসিক শক্তির ব্যবহারে ফিজিক্যাল পরিবর্তন? ইয়েপ, অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজঅর্ডারের রোগীদের ‘কনস্ট্রেইন ইনডিউসড থেরাপী’ প্রয়োগ করলে তাদের এই সমস্যা সমাধান হয়ে যায়। কারণ এই বিশেষ ধরনের বিহেভিওরাল থেরাপী ব্যবহার করে দেখা গেছে  পর্যাপ্ত মেন্টাল প্রশিক্ষন ব্রেইনের দায়ী সার্কিটগুলোকে রিঅর্গানাইজ করতে পারে। ডিজটোনিয়ার রোগীদের এ ধরনের প্রশিক্ষন দিয়ে চিকিৎসা করা গেছে।

    সুতরাং পর্যবেক্ষন বলছে, মানসিক শক্তি ব্রেইনের উপর সামহাউ অনির্ভরশীলভাবে প্রভাব বিস্তার করতে পারে। সুবহানআল্লাহ, মাইণ্ডবডি প্রবলেমের এই বিষয়গুলো আমাদের আত্মা সম্পর্কে এবডাক্টিভ ইনফারেন্স নিতে নি:সন্দেহে  উৎসাহিত করে।

    রেফারেন্স রিডিং:

    The Mind and the Brain: Neuroplasticity and the Power of Mental Force by

    Jeffrey M. Schwartz, M.D., and Sharon Begley

  • কে উপলব্ধি করে?

    আপনি একটি লাল গোলাপকে লাল বলছেন, আমিও লাল বলছি। কিন্তু আপনি কিভাবে নিশ্চিত হলেন যে আপনি ও আমি লাল বলতে একই রং বুঝছি? হতে পারে আপনি যেটাকে লাল বলছেন, আমি সেটাকে নীল দেখছি কিন্তু যেহেতু আমি নীলকেই ছোট থেকে লাল বলতে শিখেছি সেহেতু আমি আপনার দেখা লালটাকে লাল-ই বলছি, যদিও তা প্রকৃতপক্ষে আমার সাপেক্ষে নীল এবং আপনার সাপেক্ষে লাল।

    অন্য কথায়, আপনি রঙটাকে যেভাবে উপলব্ধি করছেন আমি হয়ত ঠিক সেভাবে উপলব্ধি করছি না। কিন্তু যেহেতু ছোট থেকে আমরা একটি নির্দিষ্টভাবেই বিষয়টাকে উপলব্ধি করতে শিখেছি সেহেতু আমাদের Interpretation কার্যত Same থাকছে।

    আমাদের উপলব্ধি যে একই নয় তা আমাদের চোখের সামনেই স্পষ্ট। রবীন্দ্রনাথ বা নজরুল যেভাবে সাহিত্যকে উপলব্ধি করেছেন, লাডউইক ভ্যান বেথোভেন বা ওলফ্যাঙ এমাদিওস মোজার্ট যেভাবে মিউজিককে উপলব্ধি করেছেন, লিউনার্দো দ্য ভিনসি বা ভিনসেন্ট ভ্যান গগ যেভাবে আর্টকে উপলব্ধি করেছেন তাদের মত আমরা কি উপলব্ধি করতে পারি?

    প্রশ্ন হল, উপলব্ধি কি জিনিস?

    উপরের থেকে আমরা দেখলাম উপলব্ধি একটি আপেক্ষিক বিষয়। এটা ব্যাক্তি সাপেক্ষ।

    আপনি একজন জন্মান্ধের কথা চিন্তা করুন। আপনি কি কখনও বলতে পারবেন সে কিভাবে পৃথিবীকে উপলব্ধি করে??? এমনকি আপনি এখন অন্ধ হয়ে গেলেও পারবেন না। কেননা আপনি প্রত্যেকটি বস্তুর একটি ভিসুয়্যাল ইমেজ অলরেডি উপলব্ধি করেছেন।

    এবার ধরি আপনি দাড়িয়ে চোখ দুটি বন্ধ করে আছেন। আপনি যদি এ অবস্থায় হাটতে চেষ্টা করেন আপনি হাটতে পারবেন। কারণ আপনার পায়ের তলার কিছু সেন্সরি নার্ভ আছে যা আপনার পজিশনের সেন্স আপনার ব্রেইনে পাঠাচ্ছে। ধরুন আপনার সেই সেন্সরি নার্ভ ইন্ডিং গুলো নষ্ট হয়ে গেছে। এবার ভাবুনতো, আপনি যদি চোখ বন্ধ করে এ অবস্থায় হাটতে চান আপনার কাছে কি মনে হবে? ইন ফ্যাক্ট আপনি হাতরে বেড়াবেন। যদি আপনার আশে পাশে কোন বাঁধা যেমন চেয়ার টেবিল না থাকে তাহলে আপনার কাছে মনে হবে আপনি বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছেন।

    ধরি আপনি হঠাৎ একটি দেয়ালে বাধা প্রাপ্ত হলেন। (আপনি চোখ বন্ধ করেই আছেন) কিন্তু আপনি কিভাবে বুঝলেন যে আপনি দেয়ালে বাধা প্রাপ্ত হয়েছেন? আপনি বুঝলেন কারণ আপনার স্কিনে, Pressure এবং Touch সেন্স করার জন্য প্যাসিনিয়ান করপাসল ও ফ্রি নার্ভ ইন্ডিং আছে। ধরুণ অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের কারণে আপনার এই নার্ভইন্ডিংগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। এবার আবার সেই সিনারিওতে ফিরে যান। এবার চিন্তা করে দেখুনতো আপনি হাটছেন চোখ বন্ধ করে।

    কি ভাই? কি মনে হল? হ্যা, এবার আপনার মনে হবে আপনি শূণ্যে আছেন। এ অবস্থায় আপনি যদি আঘাত পান বা দেয়ালে আটকেও যান আপনি কিছুই বুঝতে পারবেন না। ইন ফ্যাক্ট, আপনি যে হাটছেন সেটাই মনে হবে না। যদিও আরেকজনের সাপেক্ষে আপনি অবস্থান পরিবর্তন করছেন। কারণ সে সেটাকে ওভাবেই উপলব্ধি করছে।

    এবার আপনি চোখ খুলে বসুন। এক চোখ বন্ধ করে সামনে দেখুন। আপনার কি মনে হয় আপনি থ্রি ডাইমেনশনাল কিছু দেখছেন? মনে হতে পারে, কারণ আপনি অলরেডি দুচোখ দিয়ে সেটি দেখেছেন। কিন্তু বাস্তবতা হল এক চোখ দিয়ে আপনি টু ডাইমেনশন দেখতে পান। থ্রি ডাইমেনশন তখনই হয় যখন দুচোখে দেখা ছবিদুটো ব্রেনের অভ্যন্তরে ওভারল্যাপ হয়। ইনফ্যাক্ট দূরত্বের যে উপলব্ধি আপনি করেন তা এ দুটো চোখ দিয়ে দেখার কারণে। একটি চোখ দিয়ে দেখলে, ক্যামেরার মত আপনার পৃথিবীটাও দ্বিমাত্রিক হয়ে পড়ত। (মানুষের চোখের এই বৈশিষ্ট্যকে কেন্দ্র করেই কিন্তু ত্রিমাত্রিক চশমার সৃষ্টি)

    এবার আরেকটু কঠিন বিষয়ে যাই। আপনার কি মনে হয়? ‘সময়’ কি জিনিস? আপনার ধারণা সময় সামনে এগোচ্ছে। অথচ, এর কারণ হল পরপর দুটো ইমেজের মধ্যে প্রসেসিং হতে ব্রেইনে সৃষ্ট গ্যাপ থেকেই আপনার মাঝে ‘সময়’ এর ধারণার সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ সময় সামনে এগোয় বলে আপনি পরপর দুটো ঘটনা দেখেন না বা বরং আপনার সামনে পরপর দুটো ঘটনা হয় বলেই আপনি মনে করেন সময় এগোচ্ছে। এটাবোঝা সহজ হল মুভির উদাহরণ দিয়ে। মুভিতে আপনার চোখের সামনে ০.১ সেকেন্ডের ব্যাবধানে দুটো ইমেজ প্রবাহিত করা হচ্ছে ফলে আপনার মনে হচ্ছে সময় সামনে এগোচ্ছে।

    এবার আসি আসল প্রশ্নে। আপনি মুভিটাকে বলছেন স্থির কিছু ইমেজের সমষ্টি। যা একটির পর একটি প্রবাহিত হয়ে আপনার সামনে সামনে সময়ের একটি অবাস্তব ধারণা সৃষ্টি করছে। কিন্তু আপনি বলছেন বাস্তবে আপনি যে পৃথিবীকে দেখছেন সেটা ‘বাস্তব’।

    কিন্তু এটা যে আপেক্ষিক নয় তা আপনি কিভাবে নিশ্চিত হলেন?

    আপনি যে রঙ দেখছেন, যে দূরত্ব উপলব্ধি করছেন, যে শব্দ শুনছেন, যে গন্ধ, স্বাদ, ব্যাথা, স্পর্শ, চাপ, কম্পাঙ্ক অনুভব করছেন, এমনকি যে সময় উপলব্ধি করছেন তার সবইতো আপনার ব্রেইনে সৃষ্ট অনুভূতি। বস্তুত ব্রেইনে এগুলো ইলেকট্রোকেমিক্যাল গ্র্যাডিয়েন্টরুপে প্রবাহিত হয়ে উপলব্ধির সর্বশেষ কেন্দ্রগুলোতে যাচ্ছে। অন্য কথায় এগুলো আপনার ব্রেইনে সৃষ্ট ‘Illusion’। আপনি বলছেন চলার সময় আপনি সামনে এগোচ্ছেন। অথচ হয়ত আপনি স্থিরই আছেন, বরং সবকিছু আপনাকে ছেড়ে পিছনে যাচ্ছে। আর আপনি চলবেনই বা কিভাবে? যে ত্রিমাত্রিক জগৎ আপনি আছেন, তাতো আপনার দুচোখের কারণে। ‘Space’ ও ‘time’ তো আপনার ব্রেইনে সৃষ্ট ধারণা মাত্র।

    যদি তাই না হয় তাহলে ঘুমের সময় আপনি স্বপ্নে এত কিছু উপলব্ধি করেন কিভাবে? অথচ এ সময় আপনার শরীর বিছানায় ঠিকই স্থির হয়ে আছে। উপরন্তু আপনি স্বপ্ন দেখছেন পৃথিবীর পর্যবেক্ষকের সাপেক্ষে খুবই অল্প সময়, কিন্তু স্বপ্নে আপনি বিশাল সময় পার করে দিচ্ছেন। কার্যত আপনার ব্রেইনের নির্দিষ্ট সেন্টারগুলোতে যদি কম্পিউটার জেনারেটেড নির্দিষ্ট মাত্রার ইলেকট্রোকেমিক্যাল সিগন্যাল তৈরী করা যায়, আপনার মনে হবে আপনি বাস্তব জগতেই আছেন। (ম্যাট্রেক্স মুভিটার কথা মনে পড়ছে কি?)

    অনেকে চিন্তিত যে মৃত্যুর পর কবরের জীবন আবার কিভাবে হয়? কবর খুড়ে তো আমরা কঙ্কাল দেখি। তাহলে কবরে শাস্তি বা পুরস্কার কিভাবে সম্ভব? (এরা আসলে ‘এক চোখ’ দিয়ে দেখে।) অথচ আমার মৃত্যুর সাথে সাথেই আমার জন্য সৃষ্ট পৃথিবীর স্থায়িত্ব শেষ হয়ে যায়। কার্যত এর পর পরই হয়ত আমি ‘Reboot’ হই বারযাখের জীবনে। (আল্লাহই ভাল জানেন)

    আমিই সময়ের অধীন কারণ আমার সামনে আমার জগতকে প্রবাহিত করা হয়। আল্লাহ সময়ের অধীন নন, কারণ তার সামনে সম্ভাব্য সকল জগত তৈরী আছে একই সাথে। (আল্লাহই ভাল জানেন)

    কে এই উপলব্ধি করে? হ্যা, উপলব্ধি করে আমাদের অন্তর্গত একটি সত্ত্বা যাকে বস্তুগত মাপকাঠি দিয়ে পরিমাপ করা যায় না, গনিত দিয়ে প্রকাশ করা যায় না এবং জৈবিক চোখ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা যায় না। আমাদের ভাষায় একে আমরা বলি ‘আত্মা’।   

    আমার ব্রেইনের ভেতরের যে ‘আমি’ উপলব্ধি করছে সে আমার আত্মা বই কিছু নয়। অথচ, বস্তুবাদীরা আত্মাকে ম্যাটেরিয়াল টার্মে এক্সপ্লেইন করতে না পেরে তা অস্বীকার করার জন্য নানাবিধ বিভ্রান্তিকর ও স্ববিরোধী তত্ত্ব দাড় করাতে থাকে।  

    ‘আত্মা’ হল আল্লাহর আদেশ। এর বেশী কিছু আল্লাহ আমাদের জানার তৌফিক দেন নি।

    “এরা তোমাকে রূহ সম্পর্কে প্রশ্ন করছে৷ বলে দাও, “এ রূহ আমার রবের হুকুমে আসে কিন্তু তোমরা সামান্য জ্ঞানই লাভ করেছো৷” (সুরা বনী ইসরাইল, আয়াত ৮৫)

    তাহলে এবার বলুন আপনার আমার সকল প্রচেষ্টা যদি শুধুমাত্র এই ইলিউসরি টেস্টিং প্লেসে টেম্পোরারি সুখানুভূতির জন্য হয়, আমরা হাশরের ময়দানে দাড়িয়ে আল্লাহর কাছে কি জবাব দেব????