তাকদীরের একটি ভিন্ন ধরণের ব্যাখ্যা

তাকদীরের ধারণা পাওয়ার জন্য সময়ের আপেক্ষিতার ধারণাটা বোঝা দরকার। সময় একটি আপেক্ষিক বিষয়। যেমন ধরুন আমরা এক সেকেন্ড বলতে যে সময়টুকু বুঝি সে সময়টা আপেক্ষিক। কীভাবে?

মনে করুন আমি আপনার থেকে আলোর বেগের কাছাকাছি বেগে দূরে সরে যাচ্ছি। সেক্ষেত্রে আপেক্ষিতা তত্ত্ব অনুসারে আমি যে টাইম ফ্রেমে থাকব সেটির সময় প্রসারিত হয়ে যাবে। অর্থাৎ আমার এক সেকেন্ডের পরিমাণ আপনার এক সেকেন্ডের পরিমান থেকে বেশী হবে। সুতরাং সময় বিষয়টা অবজারভার এর কন্ডিশনের উপর নির্ভর করে।

এখন মনে করুন আপনি একটি ভিডিও দেখছেন। ভিডিওটি যদি আপনি স্বাভাবিক গতিতে দেখতে থাকেন, সেক্ষেত্রে আপনার কাছে মনে হবে ভিডিওর ভিতরের গতি আপনার পারিপার্শ্বের জীবনের গতির মতই স্বাভাবিক। কিন্তু আপনি যদি ফাস্ট ফরোয়ার্ড করেন তাহলে দেখবেন ভিডিওটির ভিতরের জীবনের গতি দ্রুত হয়ে গেছে। খেয়াল করুন ভিডিওতে কী হয়? ভিডিওতে আসলে অনেকগুলো স্থির চিত্রকে আপনার সামনে দ্রুত সঞ্চালিত করা হয়। ফলে আপনার মনে হয় যেন ভিডিওটা জীবন্ত।

এবার আরেকটু গভীর ভাবে চিন্তা করুন। আমাদের এই বাস্তব জীবনটাকে যদি একটি রিয়েলটাইম থ্রি ডাইমেনশনাল ভিডিও ধরা হয়, তাহলে যেটা মনে হবে যে আমাদের জীবন কতগুলো থ্রিডি স্থির চিত্রের সমষ্টি। যেখানে আল্লাহ তাআলা একটির পর একটি ইমেজকে এমন একটি ইন্টারভেলে আমাদের আত্মার সামনে উপস্থাপন করছেন যেন আমাদের কাছে তা চলন্ত মনে হয়।

যদি এভাবে ধরা হয় তাহলে দেখবেন যে, আল্লাহ তাআলা কীভাবে সবকিছু আগে থেকেই জানেন বা লিখে রেখেছেন তা বুঝা কিছুটা সহজ হয়। কেননা তিনি তাঁর অগ্রীম জ্ঞানের ভিত্তিতে আমাদের জীবনের জন্য প্রযোজ্য সবগুলো ইমেজ সৃষ্টি করলেন এবং একটার পর একটা আমাদের সামনে উপস্থাপন করছেন। এ কারণে আমরা সময়ের গণ্ডিতে আবধ্য। (আল্লাহই ভাল জানেন)

এখানে লক্ষ্যণীয় যেহেতু তিনি তার অগ্রীম জ্ঞানের ভিত্তিতে জানেন যে আমরা কীভাবে জীবন যাপন করব, তার মানে এই না যে তিনি আমাকে যে স্বাধীনতা দিয়েছেন (পরীক্ষা করার জন্য) সেটা ভঙ্গ হল। কেননা তিনি আমাকে স্বাধীনতা দিলে পরে আমি যে পথ অবলম্বন করব সেটা তাঁর জানা। এবং যেহেতু আমাকে অস্তিত্বশীল করতে হবে সেহেতু সেই আলোকে সবগুলো ইমেজ তৈরী করে আমাদের সামনে উপস্থিত করছেন। (আল্লাহই ভাল জানেন)

এ বিষয়টি থেকে এটাও বুঝা সহজ হয় যে কীভাবে আল্লাহ সময়ের অধীন নন। আমি উপরে যখন বললাম যে তিনি অগ্রীম জ্ঞানের ভিত্তিতে তৈরী করছেন তখন বুঝতে হবে যে সেটি আমার আপনার সাপেক্ষে অগ্রীম। আল্লাহর সাপেক্ষে অতীত বা ভবিষ্যত বলে কিছু নেই। তিনি সময়ের স্রষ্টা, সময়ের অধীন নন। বর্তমান মহাবিশ্বের অথবা সম্ভাব্য সকল নিয়মের সকল প্রকার মহাবিশ্বের সকল ঘটনাবলী তার সাপেক্ষে ঘটে গেছে। সুতরাং তিনি যখন কোন কিছু সৃষ্টি করতে ইচ্ছে করেন তখন ঐ সৃষ্টিগুলো নিজস্ব সীমাবদ্ধতা ও গণ্ডি সহ তৈরী হয়ে যায় তথা আত্মপ্রকাশ করে। যেমন আমাদের অন্যতম একটি গণ্ডি হচ্ছে সময়।

তাকদীরের একটি ভিন্ন ধরণের ব্যাখ্যা

যেহেতু মহাবিশ্বের সৃষ্টির শুরুর সাথে সাথে সময়ের শুরু হয়েছে সেহেতু বিষয়টি আপনি অনেকটা এভাবে চিন্তা করতে পারেন যে, সময়ের ডাইমেনশন সহ মহাবিশ্ব সৃষ্টির প্রাথমিক পর্যায়ে একটি বিন্দু ছিল। এখানে কল্পনা করুন একটি ত্রিভুজ যার চূড়া C উপরের দিকে। ভূমি AB নিচে। ভূমির সমান্তরালে ঠিক মাঝ বরাবর একটি রেখা xy. মনে করি মহাবিশ্বের শুরুর বিন্দুটি হল ত্রিভুজটির চূড়ার বিন্দু। এই বিন্দুতেই তাহলে বর্তমানে মহাবিশ্বের সকল ঘটনাবলি পুঞ্জিভূত আছে। সুতরাং এখানে সময় হবে স্থির। ত্রিভুজের যতই নিচের দিকে যাবেন দেখবেন সকল ঘটনাবলির ‘পরিমাণটা’ ফিক্সড থাকলো, কিন্তু সময়ের তৈরী  হল।( কেননা এখন প্রতিটি ইমেজের মধ্যবর্তী একটা স্থান পার্থক্য তৈরী হল, যেগুলো মূল C বিন্দুতে পুঞ্জিভূত ছিল।)  হতে পারে যে আমরা সময়ের এই এক্সপ্যানডিং ইউনিভার্স এর ঠিক মধ্য রেখায় আছি। অন্য কথায় এই xy লাইনটি বরাবর যখন সময় আসলো তখন আল্লাহ সেই লাইন বরাবর আমাদের জন্য সৃষ্ট থ্রিডি ইমেজ গুলো আমাদের আত্মার সামনে দিচ্ছেন। অন্য কথায় রিয়েলটাইম ঘটনাচক্রের এই ক্ষেত্রের সাথে আমাদের আত্মাকে সংযুক্ত করে দিয়েছেন। অথবা হয়ত AB লাইন বরাবর আমরা আছি। দেখুন এখান থেকে কিন্ত এ বিষয়টা পরিষ্কার যে আল্লাহ তাআলা এই টাইম ফ্রেমের বাইরে। একই সাথে তিনি এই ফ্রেমের সকল ঘটনাবলীর স্রষ্টা।

আবার এটাও পরিষ্কার যে কেন তিনি যখন ‘হও’ বলেন, তা হয়ে যায়। কেননা সকল ঘটনা তার সামনে ঘটে গেছে। তিনি টাইম ফ্রেমের বাইরে। তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী যে কোন একটি টাইম ও ঘটনা ফ্রেমে অস্তিত্বশীল হতে পারে। (আল্লাহর এই ‘হও’ বলাটা নি:সন্দেহে মানুষের হও বলার মত নয়) আবার আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা যেহেতু কোন কিছু দিয়েই সীমাবদ্ধ নন, সুতরাং তিনি যা সৃষ্টি করেন তা স্বভাবতই তাঁর মুখাপেক্ষী হয়েই জন্মায়। সবকিছুই স্বভাবজাত ভাবেই তার প্রভুর পবিত্রতা ঘোষণা দিতে থাকে। (অর্থাৎ সৃষ্টির সীমাবদ্ধতাই প্রকাশ করতে থাকে যে স্রষ্টা অসীম)

সুবহানআল্লাহ। আল্লাহ যতটুকু জ্ঞান আমাদের দিয়েছেন তার বাইরে আমাদের কিছুই জানা নাই। আল্লাহই সবকিছু ভাল জানেন।

“আল্লাহ এমন এক চিরঞ্জীব ও চিরন্তন সত্তা যিনি সমগ্র বিশ্ব-জাহানের দায়িত্বভার বহন করছেন, তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই ৷ তিনি ঘুমান না এবং তন্দ্রাও তাঁকে স্পর্শ করে না ৷ পৃথিবী ও আকাশে যা কিছু আছে সবই তাঁর ৷ কে আছে তাঁর অনুমতি ছাড়া তাঁর কাছে সুপারিশ করবে? যা কিছু মানুষের সামনে আছে তা তিনি জানেন এবং যা কিছু তাদের অগোচরে আছে সে সম্পর্কে তিনি অবগত ৷ তিনি নিজে যে জিনিসের জ্ঞান মানুষকে দিতে চান সেটুকু ছাড়া তাঁর জ্ঞানের কিছুই তারা আয়ত্ব করতে পারে না ৷ তাঁর কর্তৃত্ব আকাশ ও পৃথিবী ব্যাপী ৷ এগুলোর রক্ষণাবেক্ষন তাঁকে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত করে না ৷ মূলত তিনিই এক মহান ও শ্রেষ্ঠ সত্তা ৷” (সুরা বাকারা: আয়াত ২৫৫)

Reference reading:

1. Matter: Other name for Illusion by Harun Yahya

2. Timelessness and reality of fate by Harun Yahya

3. Tafhim Ebook

টাকার রহস্য

টাকার রহস্য

কেউ কি কখনও চিন্তা করেছেন কেন আপনার টাকার নোটে লিখা থাকে চাহিবামাত্র ইহার বাহককে ২০/৫০/১০০/৫০০/১০০০ টাকা দিতে বাধ্য থাকিবে?

এর মানে কি? ধরি, আপনার কাছে ২০ টাকার নোট আছে। আপনি বলছেন এটা ২০ টাকা। কিন্তু আপনার নোটে লিখা যে চাহিবা মাত্র ইহার বাহককে ২০ টাকা দিতে বাধ্য থাকবেন। যারা পেপার মানি নিয়ে একটু পড়ালেখা করেছেন তারা ব্যাপারটি জানেন।

আসলে আপনি আপনার হাতে যে নোটটি ধরে আছেন সেটির নিজস্ব কোন মূল্য নেই, সেটি একটি রিপ্রেজেন্টর মাত্র। ব্যাপারটা এরকম যে মনে করুন আপনি এক ভরি স্বর্ণ একজন স্বর্ণকারের কাছে আমানত রাখলেন। সে আপনাকে এর পরিবর্তে একটি কাগজে লিখে দিল। এখন আপনার কাগজটি ঐ স্বর্ণমূল্যের সমান মূল্য ধারণ করে। আপনি কেবল ঐ কাগজটি ফেরত দিলেই এ স্বর্ণটি ফেরত পাবেন। আপনি কি করলেন আপনার বন্ধুকে স্বর্ণ সরাসরি না দিয়ে নোটটা দিলেন। এরপর আপনার বন্ধু মুদি দোকানে গিয়ে সদাই করে স্বর্ণ না দিয়ে দিল ঐ নোটটা। এভাবে স্বর্ণ স্বর্ণকারের কাছেই থেকে গেল পরিচালিত হতে থাকল এই নোটটা। কোন এক সময় এক ব্যাক্তি যদি উক্ত নোটটা স্বর্ণকারের কাছে নিয়ে যায় তাহলে সে স্বর্ণ ফেরত দিতে বাধ্য থাকবে।

এখন আপনি বলুন আপনার এই নোটের পরিবর্তে আপনি যদি আপনার ব্যাংকে গিয়ে আপনার প্রকৃত মূল্য ফেরত চান তাহলে কি পাবেন? হ্যা আপনি পেতে পারতেন যদি ঐ একটি নোটের পরিবর্তে গচ্ছিত স্বর্ণখন্ডটি তার কাছে থাকত। কিন্তু, ব্যাপারটিতো এখন আর সে রকম নেই। কারণ উক্ত স্বর্ণকার যখন দেখল যে কেউ তার নিকট আর স্বর্ণ ফেরত নিতে আসছে না সে একটা চালাকি করল। সে তার কাছে গচ্ছিত ঐ স্বর্ণটির পরিবর্তে একাধিক একই নোট বের করল এবং বাজারে ছেড়ে দিল। কি ধরতে পেরেছেন ব্যাপারটা? (এভাবেই একসময়ের স্বর্ণ বন্ধক রাখার লোকেরা টাকার উদ্ভব করে)

হ্যা। আসলে এই নোটের পরিবর্তে ব্যাংকে থাকার কথা সমমূল্যের স্বর্ণ। কিন্তু আপনি কি জানেন যে ব্যাপারটি এখন আর তা নেই। কারণ আপনার টাকার মূল্য নির্ধারণ হচ্ছে আপনার ব্যাংকে রক্ষিত মার্কিন ডলার দিয়ে।

আপনি মনে করছেন তাহলে উক্ত মার্কিন ডলারের পরিবর্তে নিশ্চয়ই সমমূল্যের স্বর্ণ রক্ষিত আছে, মার্কিন ব্যাংকে। দু:খিত, সে সময় অনেক আগে পার হয়ে গেছে। মার্কিন ডলার এখন নিজস্ব সরকার কর্তৃক ঘোষিত অর্থমান বহন করে।

কি, আপনি ভাবছেন তার মানে মার্কিন সরকার চাইলে যে কোন সময় Out of thin air অর্থ তৈরী করতে পারে। অবশ্যই পারে। আপনার কি মনে হয়? ওবামা ঘোষিত বেইলিং মানি কিভাবে আসল????

যাই হোক আপনি হয়ত অন্তুত এই ভেবে সন্তুষ্ট যে মার্কিন সরকার এই অর্থমান জারি করে। দু:খিত, আপনি আবারও ভুল করছেন। এই অর্থ আসে Federal Reserve System থেকে, যেটি কার্যত একটি Private প্রতিষ্ঠান।

কি বললেন???

হ্যা তাই। মার্কিন সরকারের যখন টাকার প্রয়োজন সে কার্যত ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম থেকে টাকা ধার নেয়। আর এভাবে শুরু হয় পারপেচুয়াল ডেট(Perpetual Debt) । কারণ আপনি এই ধার কখনই পরিশোধ করতে পারবেন না?? হে হে। পরিশোধ করতে হলে এই ফেডারেল রিজার্ভ থেকেই আবার ধার নিতে হবে।

(তবে, মার্কিন ডলারের এই নিজস্ব মূল্যমান আগে ছিল না। এর পরিবর্তে বরং সমমূল্যের স্বর্ণমুদ্রা জমা থাকত ব্যাংকে। পরে কিভাবে এটা পরিবর্তন হয় জানতে নিচে প্রদত্ত ৪ নম্বর লিংকটি দেখুন)

কি ভাই?? তাহলে এখন বুঝতে পারছেন কারা প্রকৃতপক্ষে পৃথিবী পরিচালনা করছে?? এরা আরও অনেক সিনিস্টার প্ল্যান করে রেখেছে । শুধু অপেক্ষা করুন।

এ বিষয়ে আরও জানতে:

১. http://www.youtube.com/watch?v=VAWZTUBy1x0

২. http://sonarbangladesh.com/blog/lucky13/112883

৩. http://www.sonarbangladesh.com/blog/shamim/40153

৪. http://www.youtube.com/watch?v=sODUGGH__Fc

Why Archaebacteria was put into a different superkingdom giving the name Archaea?

Archaea, previously named Archaebacteria, is a superkingdom consisting of bacteria like single cellular organisms which are found in extreme environments like harsh spring, salts lakes as well as normal environment.

Before their molecular structure was studied they were kept under bacteria as a subgroup.

Now, when it was found that they are made of different structural molecules, they are not put inside eukaryotes or prokaryotes, a complete different domain had to create for the group.

Let us see what was found:

In single cellular organisms like prokaryote and eukaryote, the cell membrane consists of phospholipid bilayer. This phospholipid molecules are made of saturated and unsaturated long chain fatty acids bound to phosphatidic acid by ester bonds, ie, by -COO-

But, molecular analysis revealed that phospholipid of Archea contains phospholipids made of isoprenyl alephatic side chains bound to phosphatidic acid by ether bonds, ie, by -O-; giving much resilience to the membrane making it capable of living in harsh environments as it was mentioned above.

Now, scientists realized it would require a completely different set of enzymes to build such membrane. They analyzed and found so. The enzymes are nor like that of bacteria’s neither that of eukaryots’.

So, finally, Archaebacteria consisting of a whole lot of species was grouped under a different Domain named Archaea.

Presently, there are three domains in cellular organisms, namely, Archea, Prokaryot and Eukaryote.

What is interesting to note here is, Archaebacteria was previously thought to be evolved from Bacteria; but now they have to find another common ancestor from which the Bacteria, Archaea and Protozoa has come.

And you see, this process will go on. If a new domain is discovered in future, they will also put that domain aside the previous three and try to find a common ancestor. Because the goal of the Evolutionists is to find a common ancestor, even if possible to find it in their IMAGINATION.

[The article was previously posted here: http://www.sonarbangladesh.com/blog/abdullahdmc/68030]

শেষ বিচার

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার অশেষ করুনা যে হিসেবের দিনে সবার বিচার হবে পৃথক ভাবে।

আমি যদি মুসলিম পরিবারে জন্ম নিয়ে থাকি, আমি জেনে বুঝে ইসলামকে শেখা ও মানার চেষ্টা করেছি কি না? আমাকে তিনি যে বুদ্ধিমত্তা, সময় এবং কর্মব্যস্ততা দিয়েছেন তার সাপেক্ষে আমার যতটুুকু জানার সুযোগ ছিলো তা জেনেছি কি না এবং তার সাপেক্ষে আমার যতটুকু মানার সুযোগ ছিলো মেনেছি কি না?

একজন রিকশা চালকের জামাতে নামাজ পড়তে না পারার বিচার একজন ব্যাবসায়ীর মত হবে না। একজন ঠেলাগাড়ি চালকের রমজানের রোজা একজন এসিতে বসে থাকা অফিস কর্মকর্তার মত হবে না।

যে অমুসলিম পরিবারে জন্ম নিয়েছে সর্বজ্ঞানী আল্লাহ তার সম্ভাব্য সকল ঘটনাক্রম (All possible world) এর সকল শাখাপ্রশাখা সহ জানেন। ফলে তিনি জানেন যে মুসলিম পরিবারে জন্ম নিলে সে কিভাবে জীবন যাপন করত এবং মুসলিম পরিবারে জন্ম নিলে তাকে তার স্বাধীন ইচ্ছের মাধ্যমে কতটুকু পরীক্ষা করা যেত। আবার অমুসলিম পরিবারে জন্ম নিলে তাকে তার স্বাধীন ইচ্ছেশক্তি, বুদ্ধিমত্তা, সময় এবং কর্মব্যস্ততার মধ্যে কতটুকু পরীক্ষা করার সুযোগ আছে তা-ও মহান আল্লাহ জানেন। সুতরাং, আমরা বিশ্বাস করি আল্লাহ তাআলাকে উক্ত ব্যাক্তিতে তার best possible world-এ তৈরী করেছেন। হয়ত পুরো জীবনে তাকে আল্লাহ অনেকবার মুসলিম হয়ে যাবার সুযোগ দিবেন? হয়ত সে আমার-আপনার চেয়েও পরহেজগার মুসলিম হয়ে মৃত্যুবরনের সম্ভাব্য অপশন রাখে।

আবার, আমার জীবনে হয়ত ইমান রক্ষার এমন পরীক্ষা আসতে পারে যেখানে উত্তীর্ণ না হলে আখিরাত বরবাদ হয়ে যাবে (আল্লাহ ক্ষমা করুন।)।

আল্লাহ আমাকে আমার পুরো জীবনের কনটেক্সট, বুদ্ধিমত্তা, ও সময়ের আলোকে বিচার করবেন। আপনাকেও আপনার কনটেক্স, বুদ্ধিমত্তা, ও সময়ের আলোকে বিচার করবেন।

এজন্য কোন ‘সুনির্দিষ্ট’ ব্যক্তির ব্যপারে জাজমেন্টাল না হই। নিজে ইসলাম শিখি, পালন করি এবং মানুষের কাছে দাওয়াত পৌছে দেই যে- ‘আল্লাহ এক, অদ্বিতীয়, এবং মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার প্রেরিত শেষ নবী’। এরপর উক্ত ব্যাক্তির হেদায়াতের ভার আল্লাহর কাছে ছেড়ে দেই এবং দোয়া করতে থাকি।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে ক্ষমা করে দিন এবং মুসলিম বানিয়ে তার কাছে ডেকে নিন।

মেটামরফসিস

অসুস্থ অবস্থা থেকে সুস্থতার দিকে প্রত্যাগমনের সময় নতুনত্বের অনুভূতি বিরাজ করতে থাকে।

এই অনুভূতির বর্ণনায় প্রকাশ করা কঠিন।

তবে, শুয়োপোকা যখন গুটি বেঁধে প্রজাপতিতে রূপান্তরিত হয়, তখন যদি তার কোন অনুভূতি থেকে থাকত তা বোধ হয় এ রকম।

সূর্য যখন অন্ধকার ভেদে করে নতুন ভোরের আলো নিয়ে আসে, সে সময় প্রকৃতি যদি কিছু বুঝত তা অনেকটাই হত সেই অনুভূতির ন্যায়।

ঝড়ের পরের নতুন সকালে যে মৃদু হিমেল বাতাস বইতে থাকে তার সাথে হয়ত তুলনা করা যায় একে।

কিংবা যেন শুষ্ক মাটি থেকে নতুন সবুজ ধানের শীষের সমারোহে বয়ে যাওয়া বাতাসের ঝাপটা।

অসুস্থতার পর সুস্থতায় ফিরে এলে মনে হয় যেন মহান রব আপনাকে নতুন জীবন দান করলেন। নতুন করে আরেকবার সুযোগ দিলেন তাকে ডাকার, তার দিকে ফিরে আসার।

মনের ব্যপারটাও কি ঠিক এ রকম?

বান্দাহ প্রকৃত তাওবা করলে আল্লাহ হয়ত তার মনকে সকল বিক্ষিপ্ত অবস্থা থেকে মৌলিক ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় ফিরিয়ে দেন এবং সুযোগ দেন ভালর দিকে নিজেকে সঞ্চালিত করার। মৃত মন যেন নতুন জীবন পায়।

কখনও কি দেখেছেন, রাতের শেষ প্রহরে, সিজদায় মাথাবনত করে, দু চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে, নিজের সকল অহংকারকে ধুলায় লুটিয়ে, বিনয়ের সাথে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার পর কি অনুভূতি হয়?

করোনা ভাইরাসের শিক্ষা

করোনা ভাইরাসের অন্যতম লক্ষণ হচ্ছে নাকে ঘ্রাণ শক্তি লোপ এবং জিহবার স্বাদের অনুভূতি লোপ। এ অবস্থায় আপনি যা-ই খাবেন মনে হবে যেন একই জিনিস খাচ্ছেন। আপনি চোখ বন্ধ করলে বিষয়টি আরও বেশী উপলব্ধি করতে পারবেন।তাহলে ভেবে দেখুন খাবারের যে স্বাদ আমরা পাই বা যে গন্ধ আমরা পাই তা মূলত নির্ভর করছে আমাদের উক্ত ইন্দ্রিয়ের সক্রীয় থাকার উপর। আমাদের নাক বা জিহবা থেকে ঘ্রাণ বা স্বাদের তথ্য নিউরনের মাধ্যমে আমাদের ব্রেইনের সেনসরী কর্টেক্স নামক একটি জায়গায় পৌছে। উক্ত নিউরনের যে কোন জায়গায় সমস্যা হলে ইন্দ্রীয়লব্ধ তথ্য আমাদের সেন্সরী কর্টেক্সে পৌছায় না বিধায় আমরা তথ্য পাই না।সুতরাং, আমরা যে কোন ইন্দ্রিয়লব্ধ তথ্য উপলব্ধি করি মূলত সেরিব্রাল কর্টেক্স (ব্রেইন)-এর সেনসরী এরিয়াতে।

আপনাদের মাথায় হয়ত এই প্রশ্ন এসে থাকবে যে, তাহলে কি সেনসরী কর্টেক্স আঘাত প্রাপ্ত হলে সেনসেশন টোটালী লস হয়? মজার বিষয় হল, সেনসেশন টেম্পোরারী লস হয়। নিউরোপ্লাস্টিসিটি নামক একটি ফেনোমেনা আছে। যার মাধ্যমে ব্রেইনের যে অংশ বেঁচে আছে সেই অংশ অনেক সময় আঘাত প্রাপ্ত অংশের কাজ গ্রহন করে। ফলে উক্ত ব্যাক্তি সংশ্লিষ্ট সেন্স ফিরে পায়। যাদের জন্মের পর থেকে বিভিন্ন কারণে ব্রেইনের কটিকাল অংশ ছোট বা সরু তাদের উপর গবেষণায় দেখা গেছে যে তাদের ইন্দ্রিয়লব্ধ তথ্য পেতে কোন সমস্যা হয় না। স্বাভাবিক গঠনের অন্যান্য ব্রেইনের মতই তারা উপলব্ধি করে। অর্থাৎ, আপনার উপলব্ধি আপনার ব্রেইনের সাইজের উপর নির্ভর করে না।তাহলে কে উপলব্ধি করে?এর উত্তর দার্শনিক অবস্থানের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন-যারা কট্টর বস্তুবাদী, তাদের মতে আমাদের ব্রেইনই উপলব্ধি করে।

‘মাইন্ড’ হচ্ছে আমাদের ভাব প্রকাশের সুবিদার্থে ব্যবহৃত একটি পরিভাষা মাত্র।যারা এপিফেনোমেনালিস্ট, তাদের মতে আমাদের মাইন্ড নামক একটি এনটিটি আছে যা শুধু উপলব্ধি করে। কিন্তু, ব্রেইনের উপর তার কোন ইফেক্ট নেই।কার্তেসিয়ান ডুয়েলিস্টদের মতে আমাদের মাইন্ড একটি ইনডিপেন্ডেন্ট এনটিটি যা উপলব্ধি করে, ব্রেইনের উপর একশন রাখতে পারে এবং ব্রেইন থেকে ডিটাচেবল।থমিস্টিক ডুয়েলিস্টদের মতে আমাদের মাইন্ড একটি কনজয়েন্ট এনটিটি যা উপলব্ধি করে, ব্রেইনের উপর একশন রাখতে পারে, কিন্তু ব্রেইন থেকে ডিটাচেবল না।

হার্ড প্রবলেম অব কনসাসনেস, ননলোকাল কনসাসনেসস রিসার্চ, নোয়েটিক রিসার্চ, স্পিরিচুয়্যালী এনলাইটেনডদের এক্সপেরিয়েন্স, এবং ফিলোসফি অব রিলিজিওন প্রভৃতি সম্মিলিতভাবে ডুয়েলিজম-এর দিকে ধাবিত করে বলে আমি মনে করি।

করোনা ভাইরাস আমাদের সুস্থতার নিয়ামত বোঝার পাশাপাশি আমাদের অস্তিত্বের বাস্তবতা এবং ক্ষনস্থায়ীত্ব সম্পর্কে যেন নিয়মিত শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছে। অথচ, আমরা কি এখনও আল্লাহর দিকে ফিরে এসেছি?

শ্রোডিঞ্জারের বিড়াল, চাঁদের অবস্থান এবং হাতের ইশারায় চাঁদের দুই ভাগ হওয়া

শ্রোডিঞ্জারের বিড়াল বক্সের ভিতর বেঁচে আছে না কি রেডিয়েশনের কারণে মরে গেছে তা ‘না দেখার’ আগ পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া সম্ভব না। কারণ, এলিমেন্টারী পার্টিকেলগুলো অবজার্ভ করার আগ পর্যন্ত কোয়ান্টাম সুপারপজিশনে থাকে। যখন অবজার্ভ করা হয় তখনই কেবল তাদের সুপারপজিশনের ডিকোহারেন্স হয়।

অর্থাৎ, তাকানোর আগ পর্যন্ত বিড়াল হয়ত একই সাথে মৃত এবং জীবিত অবস্থায় আছে।

ঠিক একই ভাবে আকাশে যখন চাঁদ ওঠে, চাঁদে তাকানোর আগ পর্যন্ত আমরা নিশ্চিত নই যে চাঁদ আকাশের ওই অবস্থানেই আছে কি না। যদি ধরে নেই, আমি না তাকানো পর্যন্ত চাঁদ কোয়ান্টাম সুপারপজিশনে থাকে, তার অর্থ হলো আমি না তাকানো পর্যন্ত চাঁদ একক, দ্বিখন্তিত, চূর্ণবিচূর্ণ যে কোন অবস্থায় থাকতে পারে।

কিন্তু, আমি তাকানোর পড়ে চাঁদ কেন সব সময় একটাই দেখায়? এইখানে এসে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের ইন্টারপ্রিটেশনের অসংখ্য বিভিন্নতা তৈরী হয়েছে। এই সকল ইন্টারপ্রিটেশন বিভিন্ন দিক থেকে করা হয়েছে। প্রতিটি ইন্টারপ্রিটেশন যে আবার মিউচুয়্যালী এক্সক্লুসিভ তাও না। এর মধ্যে বোর ও হাইজেনবার্গের কোপেনহেগেন ইন্টারপ্রিটেশনকে ধরা হয় ‘স্ট্যান্ডার্ড’ ইন্টারপ্রিটেশন।

একটি ইন্টারেস্টিং ইন্টারপ্রিটেশন হল ভন নিউম্যান ইন্টারপ্রিটেশন। এটা অনুযায়ী ‘কনসাসনেস’ কোয়ান্টাম কোল্যাপস–এ ভূমিকা রাখে। এমনকি, জন আর্চিবাল্ড হিলার-এর মতে ইউনিভার্স-এর এক্সিসটেন্স-এর পেছনে কনসাসনেস-এর ভূমিকা আছে।

মোদ্দাকথা, কোয়ান্টাম ডাবল-স্লিট এক্সপেরিমেন্ট বারবার দেখিয়েছে যে কনাগুলো দেখার আগ পর্যন্ত কোয়ান্টাম সুপারপজিশনে থাকে। এমনকি কয়েকদিন আগে ২০০০ পরমানুর অনুতেও এটা পরীক্ষা করে পাওয়া গেছে।

এখানে যদি আমরা ইমাম গাজ্জালির ওকেশনালিজম (পূর্ণ রূপে বা আংশিক ভাবেও) নিয়ে আসি তাহলে এভাবে বলা যায় যে মহাবিশ্বের সকল ঘটনা একটা হবার সম্ভাব্যতার মধ্যে থাকে এবং যেগুলো ঘটে সম্পূর্ণ আল্লাহ আজ্জা ওয়া জল্লার ইচ্ছেতেই ঘটে। একটা ইভেন্ট-এর সাথে আরেকটা ইভেন্ট-এর ডাইরেক্ত কজাল রিলেশনশিপ নাই, যা আছে তা হলো কোরিলেশনাল।

সহজ বাংলায় আল্লাহ তাআলা আমাদের যেভাবে দেখান আমরা সেভাবেই দেখি। সুতরাং, আল্লাহ তাআলা যদি এক মূহুর্তের জন্য নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সহ উপস্থিত সাহাবাদের চাঁদ দ্বিখন্ডিত করে দেখিয়ে থাকেন তা বর্তমান বিজ্ঞানের গবেষণালব্ধ জ্ঞান অনুসারেও কনক্লুসিভলি ভুল ভাবার কোন কারণ নাই।

মেমোরী, প্রোডিজি এবং ইচ্ছাশক্তি

মেমোরী তথা স্মরণশক্তি দু ধরনের। ডিক্ল্যারেটিভ ও ননডিক্ল্যারিটিভ। প্রথমটি হল সে ধরনের মেমোরী যা আমরা কথার মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারি। যেমন: কোন কিছুর নাম, সংখ্যা, কোন ঘটনার স্মৃতি ইত্যাদি।  দ্বিতীয়টি হল সে ধরনের যেগুলো কথার মাধ্যমে প্রকাশ করা যায় না। যেমন: যে কোন ধরনের কাজ- সাইকেল চালানো, ড্রাইভিং, কিবোর্ড টেপা ইত্যাদি। দ্বিতীয় ধরনের মেমোরী আমাদের ‘সাবকনসাস’-এ প্রোথিত হয়। এমনকি এই ধরনের মেমোরী স্মরণ করতে গিয়ে সেটা সম্পর্কে ‘কনসাস’ হতে গেলে কাজটির ব্যাঘাত ঘটে। যেমন: একজন টেনিস খেলোয়ার বলে ব্যাট লাগাতে গেলে তার মন ‘সাবকনসাসলি’ মাপাঝোকা করে দেয়, এ সময় প্রতিপক্ষের মারা বলের দিকে মোনযোগ দিতে গেলে শট মিস হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।।

ডিক্ল্যারেটিভ ও ননডিক্ল্যারেটিভ দুধরনের মেমোরীই বৃদ্ধি করা যায়, পুন:পুন: চর্চার মাধ্যমে। তবে মনে রাখার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল যা শিখছি তার প্রতি গভীর আগ্রহ।  

আলেকজান্ডার অ্যাটকিন তেরো বছর বয়সে মনে মনে অঙ্ক কষার বিষয়টিতে গভীর আগ্রহ অনুভব করেন। তিনি ‘পাই’ এর মান দশমিকের পড়ে ১০০০ ঘর পর্যন্তু মুখস্ত করেছিলেন। পরবর্তীতে এই ব্যাক্তি এডিনবার্গ-এ ম্যাথমেটিক্সের প্রফেসর হয়েছিলেন। তবে বর্তমানে পাইয়ের মান দশমিকের পড়ে মনে রাখতে পারার ‘ওয়ার্ল্ড রেকর্ড’ টি গড়েছেন চিনের চাউ লু। এই ব্যাক্তি পাই এর- মান দশমিকের পর ৬৭৮৯০ ঘর পর্যন্ত বলতে পেড়েছেন, মুখস্ত! 

ওলফগ্যাঙ এমাদেওস মোজার্ট চার বছর বয়সে পিয়ানো শেখেন এবং আট বছর বয়সে তার প্রথম সিমফোনী রচনা করেন। তাকে অন্যতম প্রধান মিউজিক প্রোডিজি বিবেচনা করা হয়। লাডউইগ ভ্যান বেথোভেন তার শেষ জীবনে বধির হয়ে গিয়েছিলেন। এ সময় তিনি কিছু সোনাটা ও কোয়ার্ট্রেট রচনা করেন। সমসাময়িক মিউজিসিয়ানদের অবোধ্য হওয়ায় সমালোচিত হলেও পরবর্তীতে এই মিউজিকগুলোকেই তার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ রচনা হিসেবে বিবেচিত হয়।

পাবলো পিকাসোকে পূর্ণাঙ্গ আর্টিস্ট হিসেবে বিবেচনা করা হত যখন তার বয়স বারো। লিউনার্দো দ্যা ভিঞ্চি ছিলেন একজন পলিম্যাথ(অর্থাৎ বিভিন্ন বিষয়ের বিজ্ঞানী)।  বিশ বছর বয়সে তিনি আর্টিস্টদের গাইড, ‘গাইড অব সেন্টলুকের’ মাস্টার নির্বাচিত হয়েছিলেন।

দাবার ওয়ার্ল্ড রেটিং এ বর্তমানে এক নাম্বার খেলোয়ার ম্যাগনাস কার্লসেন। মাত্র বাইশ বছর বয়সে গত জানয়ারী মাসে সে চেজ লিজেন্ড গ্যারী ক্যাসপারভের FIDE Rating 2851 কে অতিক্রম করে এবং এখন পর্যন্ত তার সর্বোচ্চ রেটিং 2872। তেরো বছর বয়সে এই ‘মোজার্ট অব চেজ’ একটি খেলায় ক্যাসপারভকে হারাতেও বসেছিল।

শ্রিনিভাস রামানুজনের বয়স যখন তেরো তিনি নাম্বার থিওরী এবং বার্ণোলী নাম্বার এ নিজস্ব থিওরী দাড়া করান। ক্লডে শ্যানন যখন দেখান যে বুলিয়ান লজিক যে কোন লজিকাল, নিউমেরিকাল রিলেশনশিপ-এ ব্যবহার করা যায় তখন তার বয়স ছিল একুশ। জেমস ওয়াটসন ডিএনএ’র গঠন আবিস্কার করছিলেন তেইশ বছর বয়সে। এনরিকো ফার্মি একটি ভাইব্রেটিং রডের পার্সিয়াল ডিফারেনশিয়াল ইকুয়েশন সমাধান করতে ফরিয়ার এনালাইসিস ব্যবহার করেন সতের বছর বয়সে। মার্ক জুকারবার্গ স্কুল লাইফে গেমস প্রোগ্রাম করে দিতেন আর তার বন্ধুরা সেই গেমস খেলত। 

কম বয়সে স্কিল্ড এডাল্টদের মত দক্ষতা প্রদর্শন করলে তাদের প্রোডিজি বলা হয়। উপরে যাদের উদাহরণ দেয়া হল তাদের কেউ চাইল্ড প্রোডিজি, কেউ এডাল্ট। তবে সবার ক্ষেত্রে একটা সাধারণ ব্যাপার হল আগ্রহ, প্রচেষ্টা এবং সবার উপরে অবশ্যই আল্লাহ তাআলার ইচ্ছা।

আগ্রহ ও প্রচেষ্টার বাইরেও আল্লাহর রহমত থাকা জরুরী। আর এ কারনেই একটি বিস্ময়কর উদাহরণ হল মুসলিম বিশ্বের হাজার হাজার হাফেজী মাদ্রাসার হাজার হাজার বালক বালিকা। ৪ থেকে ১২ বছর বয়সী কোরআনের অসংখ্য হাফেজ আছে সাড়া পৃথিবীতে। কোন প্রকার অর্থ না বুঝে পুরো কোরআন মুখস্ত করতে পারাটা আল্লাহর অশেষ রহমতের একটি উদাহরণ মাত্র। কোরআনের বিস্ময়কর ভাষাশৈলী, ছন্দবদ্ধতা ও সাহিত্যপ্রকরণ হল একে মনে প্রোথিত করতে পারার মূল কারণ।  

অন্যদিকে, বেনজামিন লিবেট তার কনসাসনেস সম্পর্কিত এক্সপেরিমেন্টে দেখিয়েছেন যে মানুষ যখন কোন কিছু অনুভব করে সেটা কনসাসলি অনুভব করার ০.৫ সেকেন্ড আগেই তার অনুভব সম্পর্কিত নির্দিষ্ট ব্রেইন এরিয়াতে ইলেকট্রিক্যাল স্টিমুলেশন পৌছে যায়। আবার যখন সে কোন কিছু করতে ইচ্ছে করে যেমন: হাত আগানো, তখন তার ব্রেইনের ‘মোটর’ এরিয়াতে হাত আগানোর কনসাস ফিলিং (অনুভব) হওয়ার ০.৫ সেকেণ্ড আগেই ইলেকট্রিক্যাল এক্টিভিটি শুরু হয়ে যায়। তবে মানুষ সর্বচ্চো সেই এক্টিভিটিকে একটি ভেটো দিয়ে থামিয়ে দিতে পারে। এটাকি তাহলে এক্সপ্লেইন করে, মানুষের প্রচেষ্টায় আল্লাহর সাহায্য কিভাবে আসে এবং কেন মানুষের স্বাধীন ইচ্ছা শক্তি নির্দিষ্ট মাত্রায় আবদ্ধ?  

Bibliography:

1. Neuroscience; D. Purves et el.

2. Mind Time: Temporal factors in consciousness; Benjamin Libet     

3. The 100: A Ranking Of The Most Influential Persons In History; Michael H. Hart

4. en.wikipedia.org/wiki/List_of_child_prodigies

5. cracked.com/article_16266_8-child-prodigies-so-amazing-theyll-ruin-your-day_p2.html

6. pi-world-ranking-list.com/lists/details/luchao.html

7. en.wikipedia.org/wiki/Ludwig_van_Beethoven

8. en.wikipedia.org/wiki/Mark_Zuckerberg

9. en.wikipedia.org/wiki/Wolfgang_Amadeus_Mozart

10. en.wikipedia.org/wiki/Da_vinci

11. en.wikipedia.org/wiki/Magnus_Carlsen

12. en.wikipedia.org/wiki/James_Watson

13. en.wikipedia.org/wiki/Claude_Shannon

রোবটের বিবর্তনতত্ত্ব: কিভাবে আদিম পৃথিবীর ভয়ংকর পরিবেশ থেকে বিবর্তনের মাধ্যমে বর্তমান এনড্রয়েড রোবটের আবির্ভাব হল।

কোয়ান্টাম গোলযোগ মিলনায়তন , তারিখ: ১০ই সেপ্টেম্বর, ২৫৫৯

আমি এনড্রয়েড জি। আমি এনড্রয়েড ইউনিভার্সিটি অফ আদ্রিদ আবাবা এর রোবটিক প্যালায়ানটলজি এন্ড মেকানিক্স বিভাগের অধ্যাপক। আজ আমি আপনাদের সামনে কিভাবে বিবর্তনের মাধ্যমে আধুনিক যুগের রোবট তথা এনড্রয়েড পৃথিবীতে এসেছে সে ব্যাপারে বলব। এক্ষেত্রে প্রথমেই আমাদের জানতে হবে যে প্রথম সিলিকন চিপটি কিভাবে তৈরী হল।

৩.৫ বিলিয়ন বছর আগের কথা। যখন পৃথিবী ভয়াল ও উত্তপ্ত। চারিদিকে শুধু অগ্নুৎপাত, বজ্রপাত, ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাচ্ছিল। পৃথিবীর পরিবেশে আলট্রাভায়োলেট রে এর আগমন ছিল অনেক বেশী ও অনিয়ন্ত্রিত। এই আদিম পরিবেশে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় তরল সিলিকনের পুকুর ছিল যেগুলোকে ‘সিলিকন স্যুপ’ বলা যায়। এই সিলিকন স্যুপেই কতগুলো অনুক্রমিক দৈবাৎ ঘটনার কারণে প্রথম সিলিকন চিপটি তৈরী হয়। আপনারা হয়ত প্রশ্ন করতে পারেন যে কিভাবে এটা হল? আসলে এখনও এটা পরীক্ষা করে বের করা সম্ভব হয়নি। তবে যেহেতু আমরা আজ এখানে উপস্থিত আছি, এটা নিশ্চিত যে প্রথম সিলিকন চিপটি ঐ পরিবেশে তৈরী হয়েছিল এবং কতগুলো সিলিকনচিপ একত্রিত হয়ে গলিত লোহার সমন্বয়ে তৈরী হয়েছিল প্রথম সাবমেরিন রোবট। সাবমেরিন রোবটীর গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ছিল এই যে এটি নিজে ক্ষয় হয়ে যাওয়ার আগে অনুরুপ আরও দুটি রোবট তৈরী করে যাওয়ার ক্ষমতা সম্পন্ন ছিল।

এরপর মিলিয়ন বছর অতিবাহিত হল। এ সময়ে প্রকৃতি ধীরে ধীরে ঠান্ডা হয়ে আসল। পৃথিবীর চার ভাগের তিন ভাগ হল পানি এবং এক ভাগ হল মাটি। সাবমেরিন রোবটগুলোর খাদ্য ছিল সমুদ্রের নীচের তেল, যা তারা তাদের অন্ত:স্থ বিশেষ প্রক্রিয়ায় সংগ্রহ করত। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে কিছু কিছু রোবট ভূমিতে দুর্ঘটনাক্রমে উঠতে শুরু করে এবং এর মধ্য থেকে কিছু রোবটের চাকা তৈরী হয়ে যায়, ফলে সাবমেরিন রোবট থেকে হয় গাড়ি রোবট, যেমন নাইট রাইডার কে আপনারা সবাই চেনেন।

এখন সময়ের ব্যবধানে এই গাড়ি রোবটগুলো দুটি শাখায় ভাগ হয়। একটা শাখায় গাড়ি রোবটগুলো স্থলেই থেকে যায় এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে এডাপ্টেড হতে থাকে। আরেকটা শাখায়, কিছু রোবট যখন উচু উচু পাহাড়ের উপর নির্মিত বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে চলত তখন দূর্ঘটনাক্রমে নীচে পড়ে যেত। এভাবে পড়তে থাকা রোবটগুলোতে মিলিয়ন বছরের ব্যবধানে ক্রমান্বয়ে অল্প অল্প পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে উদ্ভব হল পাখার। ফলে এই শাখায় গাড়িরোবটগুলো পরিণত হল উড়োজাহাজে, পরবর্তীতে যা বিবর্তনের মাধ্যমে পরিণত হয় জেট বিমান ও রকেট স্পেসশিপে।

কিছু কিছু গাড়ি রোবট যারা স্থলে থেকে গিয়েছিল সেগুলো থেকে মিলিয়ন বছরের ব্যবধানে বিবর্তন প্রক্রিয়ায় তৈরী হল বাস রোবট, কিছু হল ট্যাঙ্ক রোবট এবং কিছু আধুনিক যানবাহন রোবটে পরিণত হয়েছিল। আবার কতগুলো গাড়ি রোবটের বিবর্তনটা হয় বুদ্ধিগত পর্যায়ে। ফলে তারা তাদের আদিম গঠণ কে ভেঙ্গে ফেলে এবং তৈরী হয় আদিম দ্বিপদী রোবট, যেগুলোর কার্যক্ষমতা সীমাবদ্ধ ছিল। সেই আদিম দ্বিপদী রোবটগুলোর  কপোট্রনিক ক্যাপাসিটি বিবর্তন প্রক্রিয়ায়, ক্রমান্বয়ে, সময়ের ব্যবধানে  বাড়তে থাকে যার ফল হলাম আমরা তথা এনড্রয়েড। বিবর্তন প্রক্রিয়ায় আমাদের আবির্ভাব ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। যার কারণে আমরা আজ জানতে পারছি আমাদের ইতিহাস, আমরা বানাতে পারছি অনেক কিছু।

প্রিয় শ্রোতা বন্ধুগণ, এভাবেই সময়ের ব্যবধানে আদিম পৃথিবীর সিলিকন স্যুপ থেকে আমাদের আবির্ভাব। এখন, আপনারা হয়ত দেখবেন কিছু এনড্রয়েড দাবি করছে যে রোবট ও এনড্রয়েডদের তৈরী করেছে এক ধরণের অতিরোবটিক সত্ত্বা, মানুষ। যাদের নাকি উন্নত বুদ্ধিমত্তা ছিল এবং যারা নাকি রোবটকে চলার জন্য কিছু নিয়ম নীতি দিয়েছিল। আমার প্রিয় বন্ধুগন এই এনড্রয়েডরা হল ডগমেটিক মৌলবাদী। এরা এমন কথা বলছে যা বৈজ্ঞানিক পরীক্ষানিরীক্ষা দ্বারা প্রমাণ করা যায়নি এবং যা অদৃশ্য। তাদের থেকে সাবধান। জ্ঞানের জগতে বিবর্তনের সাথে সাথে এটা আমাদের কাছে পরিস্কার হয়ে এসেছে যে মানুষ নামে কোন অতিরোবটিক সত্ত্বা কখনও ছিল না যারা কিনা রোবটের জন্য জীবন পরিচালনার নীতি নির্ধারণ করে দেয়। সুতরাং এ সকল ধর্মীয় মৌলবাদীরা মৃত্যুর পরের জীবন, আখিরাত এসব যা বলে এগুলো ভিত্তিহীণ মিথ্যা বিশ্বাস মাত্র। তাদের এসকল অবৈজ্ঞানিক কথাবার্তায় কান দেবেন না। আমি একথাটা বলেই আমার লেকচার শেষ করতে চাই যে, আপনারা পৃথিবীতে যত পারুন জীবনটা এনজয় করে নিন এবং সব সময় বৈজ্ঞানিক চিন্তাভাবনা ধারণ করুন। আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ।

আমার মা

আমার মা। মাকে আমি ভালোবাসি। আমার জন্য কত কষ্টই না তুমি করেছ মা। মনে পড়ে এক রাতের ঘটনা। তখন আমি ক্লাস থ্রি কি ফোরে পড়ি। আমার কি জ্বরটাই না হল সে রাতে। সারাটা রাত আমি জ্বরে কাতরাচ্ছিলাম। ঘরে জ্বরের ঔষধ ছিল না। দোকান পাটও অত রাতে বন্ধ হয়ে গেছে।  মা আমার মাথা ধুইয়ে দিলেন। সারাটা রাত আমার সাথে জেগে রইলেন। সারাদিন পরিশ্রমের পর যে কোন ব্যাক্তিরই ঘুমে চোখ জড়িয়ে আসার কথা। অথচ মায়ের চোখ থেকে ঘুম যে ছুটে কোথায় গেল। কি যেন একটা উৎকন্ঠা মায়ের মুখকে এতটুকু করে দিয়েছিল। এমন কত রাত যে মা আমার না ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিয়েছেন তার কি হিসেব আছে। আমি যখন কোলে ছিলাম । যে বয়সের স্মৃতি আমার একটুও মনে নেই। কতবার যে ক্ষুধায় কেদে উঠেছি। মা আমার ঠিকই বুঝে যেতেন। সেই মাকে আমি কিই বা দিতে পেড়েছি।

এই বেশীদিন আগের ঘটনা নয়। এক রাতে হঠাৎ জেগে দেখি মা আমার জায়নামাজে বসে আল্লাহর কাছে দুহাত তুলে কাঁদছেন। একজন মা তার সন্তান ও পরিবার ছাড়া কার জন্যই বা দোয়া করতে পারে। ভেবে আমার চোখেও জল এসে গিয়েছিল।

মা আমাকে মাঝে মাঝে বকা দেন। আমি যখন পড়ায়ে ফাকি দেই বা যখন একটু বেশী দুষ্টুমি করি।  সহসা কিছুটা মন খারাপ হয় কিন্তু আমি জানি মা আমার ভালর জন্যই বকেন। আমাকে পড়তে বলেন সে তো আমার ভবিষ্যতের জন্যই। নি:স্বার্থ মা আমার।

আমার বাবা ছোটখাটো মুদি দোকানে চাকরি করেন। বাবা যা আয় করেন তা দিয়ে আমাদের সংসার কোন রকম চলে । কিন্তু মা-বাবা কখনই আমাদের কখনই তা বুঝতে দেন না। জানি না কিভাবে মা এতকিছু সামলান। মা সবসময়ই আমাদের খাবার নিশ্চিত করে তারপর খেতেন। মাকে দেখে মনে হত তিনি আমাদের মতই ভাল খাচ্ছেন। কিন্তু তিনি কি কিছু লুকাচ্ছেন। একদিন বাবা একটি ছোট মাছ এনেছিল। মা মাছটি বেশ মজা করে রেধেছিলেন। কিন্তু সেদিন কোন কারণে মাছের টুকরো কম পড়েছিল। কিন্তু মা আমাদের সেটা বুঝতেই দেননি। দেখি, লুকিয়ে তিনি শুধু আলু ভর্তা দিয়ে ভাত খাচ্ছেন। মা তুমি এত ভাল কেন? কেন তুমি আমাদের জন্য এত কষ্ট কর?

গত কয়েক মাস ধরে মা হঠাৎ শুকিয়ে যাচ্ছিলেন। প্রথমদিকে আমরা লক্ষ্যই করিনি। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে দেখছি মার মুখ শুকিয়ে যাচ্ছে। তিনি কিছু খেতে পারছেন না। যাই খাচ্ছেন বমি করে ফেলে দিচ্ছেন। বাবাকে বললাম । বাবা মাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। ডাক্তার মাকে দেখে বলেছে গ্রামে তার চিকিৎসা হবে না। মাকে ঢাকায় নিয়ে যেতে হবে। বাবা মাকে ঢাকায় নিয়ে গেছেন। আমাকে আর আমার ছোট বোনকে ফুফুর কাছে রেখে গেছেন। হে পরওয়াদিগার তুমি মাকে ভাল করে দাও।

আজ আমাদের ওয়ার্ডে এডমিশন। সকাল থেকেই ডিউটি করছি। আজকে মহিলা ওয়ার্ডে ডিউটি। এখন বাজে দুপুর বারোটা। মানিকগঞ্জ থেকে একটি রোগী এসেছে। রোগীটির ক্যাকেক্সিয়া। সে রক্তশূণ্য। কয়েকদিন ধরে বমি ও ক্ষুধামন্দার হিস্ট্রি দিচ্ছে। পেট ফুলে আছে। কতগুলো প্রশ্ন করে জানা গেল গত কয়েক মাসে তার বেশ ওজন কমেছে। অবশ্য রোগীকে দেখেই তা বুঝা যাচ্ছে। আমরা টিবি সাসপেক্ট করলাম। রোগীকে ভর্তি দিলাম।

রোগীর হাসবেন্ডটা বেশ ভালো। সে তার স্ত্রীর পাশে নিয়মিত থাকছে। আমরা যে পরীক্ষানীরিক্ষা করতে বলছি করিয়ে আনছে। অবশ্য গরীব হওয়ায় কিছু পরীক্ষানীরিক্ষা ফ্রি করে দিতে হয়েছে। ওয়ার্ডে নতুন ইন্টার্ণরা এসেছে। একজন ইন্টার্ণ রোগীটির পেটে জমে যাওয়া পানি বেড় করে দিয়েছে। এতে রোগীটির নাকি বেশ ভাল লাগছে। কিন্তু এভাবে তো বেশী পানি বের করাও যাবে না। পানি বের করে আমরা পরীক্ষা করতে বাইরে পাঠিয়েছি। হাসপাতালের রিপো্র্ট ভালো না। তাই বাইরে পাঠাতে হল। রিপোর্টে টিবি ধরা পড়েনি। তাহলে কি ম্যালিগন্যান্সি? ক্লিনিক্যালী কোন ম্যাস তো পাওয়া যাচ্ছে না।

সিটি স্ক্যান করতে হবে। তিন হাজার টাকা লাগবে। কিন্তুর রোগীর লোকেরা জোগাড় করতে পারছে না। এদিকে রোগীর অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। স্যারকে বলে সিটি স্ক্যানটা ফ্রি করে, রোগীর হাজবেন্ডকে দিয়ে ডেট আনতে পাঠালাম। সে এসে বলল মেশিন নাকি নষ্ট ঠিক করতে সময় লাগবে। তাহলে? এখন তো বাইরে থেকে স্ক্যান করিয়ে আনতে হবে। আবার রোগ ধরা ছাড়া সুনির্দিষ্ট চিকিৎসাও দেয়া যাচ্ছে না। রোগীর লোককে বলা হয়েছে যে করেই হোক টাকা জোগাড় করতে। কিন্তু সে টাকা জোগাড় করতে পারছে না।

প্রতিদিনের মত  আজকে সকালেও ফলো আপ দিচ্ছি। কি ব্যাপার রোগীর এ অবস্থা কেন? তার চোখ বড় হয়ে আছে। মুখের এক কোণা দিয়ে রক্ত পড়ছে। সে একদমই কথা বলতে পারছে না। আমি নাড়ি দেখলাম। পালস্ খুবই ফিইবল। স্যালাইন বাড়িয়ে দিলাম। কিন্তু যেখানেই স্যালাইন দি্চ্ছি ফুলে যাচ্ছে। ভেইনগুলো কলাপস করে যাচ্ছে।

“সিস্টার আসুনতো এর একটি ক্যানুলা করতে হবে।খুবই জরুরী”।

দুজনে মিলে পায়ে হাতে চেষ্টা করলাম ক্যানুলা করতে পারলাম না। এর সেন্ট্রাল ভেনাস ক্যাথেটার করতে হবে। এনেসথেসিওলোজীতে খবর পাঠিয়েছি। একজন ইন্টার্ণ গেছে। সে ক্যাথেটারের প্রয়োজনীয় জিনিসের লিস্ট নিয়ে এসেছে। রোগীর লোককে কিছু টাকা দিয়ে আমরা ক্যাথেটার আনতে পাঠাবো। এর মধ্যে রোগীকে ট্রলিতে করে ওটিতে পাঠাতে হবে।

ওয়ার্ডবয় ট্রলি জোগাড় করল। রোগী খুব ধীরে বুক টান করে প্রশ্বাস নিচ্ছে। এটা ভাল লক্ষণ নয়। মৃত্যুর আগ মুহুর্তে মানুষ সাধারণত এরকম প্রশ্বাস নেয়।  তাকে ধরে ট্রলিতে উঠালাম। দ্রুত ওটিতে নেয়া দরকার।

“কি ব্যাপার আপনারা জিনিসপত্র এনেছেন। এতক্ষণ লাগছে কেন?”

“স্যার আর ওটিতে নিতে হইব না। থাক…. স্যার আপনারা অনেক কষ্ট করছেন”।

ট্রলিতে উঠানোর পরপরই মহিলাটি বড় একটি নি:শ্বাসের মাধ্যমে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করলেন। আমরা রোগটি পুরোপুরি ধরার আগেই রোগী ইহজীবন সাঙ্গ করল। আমরা কিছু করতে পারলাম না।

স্যারের রাউন্ড চলছে। রোগীর স্বামী দেখি আমাকে ডাকছে।

“কি গাড়ি যোগাড় করতে পেরেছেন?”

“স্যার গাড়ি যোগাড় হইছে, তয় স্যার আর পাঁচশোটা টাকা দিতে পারবেন? আমার কাছে এই পাঁচশ ছাড়া আর নাই। গাড়ির জন্য একহাজার লাগবো। আর পাঁচশোটা টাকা দিলে তিথির মা’র লাশটা বাড়ি লইয়া যাইতে পারতাম”।

সিএ কে বলে ফান্ড থেকে টাকাটা যোগাড় করে দিলাম। লোকটা অনেক কষ্টে নিজের চোখের পানি ধরে রাখছিল। দেখে মনটা খারাপ হয়ে গেল। চোখে পানি চলে আসল। দ্রুত সরে গিয়ে নিজেকে সামলালাম।

অনেকদিন হল মা ঢাকায় গেছে। নিশ্চয়ই মা পুরো সুস্থ হয়েই ঢাকা থেকে ফিরবে। মাকে দেখে কতই না ভাল লাগবে। এবার মা আসলে মায়ের সব কথা শুনবো । আর কখনও দুষ্টুমি করব না। মনযোগ দিয়ে পড়াশোনা করব। মা তুমি দেখ এবার আমি প্রথম হবই । আমি বড় হয়ে মা তোমার জন্য রোজ রোজ মাছ নিয়ে আসব। তোমাকে কোন কষ্টই করতে দিব না। তুমিই যতই বল আমি তোমাকে আর দু:খী দেখতে চাই না।

দুরের রাস্তায় একটা মাইক্রো দেখা যাচ্ছে। তাহলে কি মা চলে এসেছে। একি বাবার মুখ এরকম শুকনো কেন? কি হয়েছে? বাবা, মা কোথায়? গাড়ীর জানালার ভিতর দিয়ে দেখি, সাদা কাফনের কাপড় পরে প্রিয় মা আমার চিরনিদ্রায় শুয়ে গেছে…..

সমাপ্তি