Category: অন্যান্য

  • স্বাস্থ্য উপদেশ

    আকাশটা যদি নীল হত!

    শিরোনাম পড়ে আপনার মনে হতে পারে আমি কোন সাহিত্য লিখতে বসেছি। কিন্তু না, আমি আসলেই আক্ষেপ করে বলছি। এই দূষিত নগরীর একজন নাগরিক হিসেবে আপনিও হয়ত একমত হবেন।

    আপনি যদি ঢাকা শহরের বাইরে, বিশেষ করে পদ্মার ওপারে, নিয়মিত যাতায়াত করে থাকেন তাহলে হয়ত বুঝতে পারবেন কেন আমি এ কথা বলছি। দক্ষিণাঞ্চলে যারা নিজেদের গ্রামের বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত করেন, তারা হয়ত লক্ষ্য করে থাকবেন যে পদ্মা পার হবার সাথে সাথেই আকাশটা কেমন পরিস্কার হয়ে যায়। আবার, উল্টোপথে ঢাকায় আসার সময় আকাশের দিকে তাকালে দেখা যায় যেন নীল আসমান ঘোলাটে ধূসর হয়ে গিয়েছে। আমার চাকুরীর সুবাদে আমি দুই বছরের অধিক টুঙ্গিপাড়া থেকেছি। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি।

    আমরা দৈনন্দিন ব্যস্ততায় এতটায় অভ্যস্থ হয়ে পড়েছি, যে ঢাকা শহরের দূষিত বাতাস আমাদের চিন্তার উদ্রেক করে না। কিন্তু, আপনি চাইলেই চট করে IQ Air-এর ওয়েবসাইট (১) থেকে ঢাকায় বাতাসে দূষণের পরিমাপটা দেখে নিতে পারেন। বাতাসে দূষণ পরিমাপ করা হয় Air Quality Index (AQI)-ব্যবহার করে। অন্যদিকে AQI-পরিমাপ করা হয় বায়ুদূষনের জন্য দায়ী কিছু অণুর ওপর ভিত্তি করে।

    যে সকল পদার্থের অতিরিক্ত উপস্থিতি বাতাসকে দূষিত করে, যুক্তরাস্ট্র ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান United States Environmental Protection Agency (২) তার মধ্যে ছয়টি পদার্থকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এগুলো হল- কার্বন মনোক্সাইড (CO), সালফার ডাই অক্সাইড (SO2), নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড (NO2), লেড (Pb), পার্টিকুলেট ম্যাটার (PM2.5 & PM10), এবং ভূস্তরের ওজন (O3)। এই প্রতিটি পদার্থই মাত্রাতিরিক্ত পরিমানে থাকলে নানাবিধ স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরী হতে পারে। এই সমস্যাগুলোর মধ্যে আছে হাঁচি, কাশি, বুকে চাপ অনুভব করা, শ্বাস কষ্ট, হার্ট ও ফুসফুসে সমস্যা, হার্ট এটাকের ঝুঁকি বৃদ্ধি, ত্বক ও স্কিনের ক্যানসার। বায়ুদূষণ যে শুধুমাত্র মানুষের শারীরিক ক্ষতি করছে তা নয়, এটি পুরো ইকোসিস্টেমের ভারসাম্য নষ্ট করছে। এটি জীবজগতের অন্যান্য প্রাণীর, ফসল ও বনজঙ্গলের ক্ষতি, এসিড রেইন, আবহাওয়া পরিবর্তন প্রভৃতির জন্য দায়ী।   

    বাংলাদেশে লেড বাদে বাকি পাঁচটি পলিউট্যান্ট-এর ওপর নির্ভর করে AQI হিসেব করা হয়। AQI এর উপর ভিত্তি করে বাতাসের অবস্থাকে ছয়টি ভাগে ভাগ করা হয় (৩)। এগুলো হচ্ছে-

    ১. ০ – ৫০: ভালো

    ২. ৫১ – ১০০ : মোটামুটি

    ৩. ১০১ – ১৫০ : সতর্কতামূলক

    ৪. ১৫১ – ২০০ : অস্বাস্থ্যকর

    ৫. ২০১ – ৩০০ : খুব অস্বাস্থ্যকর

    ৬. ৩০১ – ৫০০ : অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর

    ঢাকার বাতাসের কোয়ালিটি প্রায় সবসময়ই ১০০-এর ওপরে থাকে, এমনকি প্রায়ই অস্বাস্থ্যকর হয়ে পড়ে। AQI ১০০-এর বেশী ও ১৫০-এর নিচে থাকলে অধিকাংশ ব্যক্তির জন্য বাতাস হয়ত নিরাপদ। কিন্তু, বয়স্ক ব্যাক্তি এবং শিশুদের জন্য এটি স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে (৪)।   বাতাসের এই অস্বাস্থ্যকর পরিণতির মূল কারণগুলো হচ্ছে – কলকারখানার দূষিত বায়ু নিঃসরণ, মোটরযানের ধোঁয়া এবং বিভিন্ন অবকাঠামোর নির্মাণ কাজ।

    তাহলে, আমাদের উপায় কি? ব্যক্তিগত পর্যায়ে আমরা বায়ু দূষণের ক্ষতি থেকে বাঁচতে মাস্ক পরে চলাচল করতে পারি। মাস্ক আমাদের সব ধরনের পলুটেন্ট থেকে নিরাপদ রাখতে না পারলেও, PM2.5 এবং PM10 প্রতিরোধ করতে পারে। থাইল্যান্ডের একটি গবেষণা (৫) অনুযায়ী সবচেয়ে ভাল প্রটেকশন দিতে পারে N95 মাস্ক, যা PM2.5 থেকে প্রায় ৯৭.২% প্রটেকশন দেয়। সার্জিকাল মাস্ক PM2.5 থেকে প্রায় ৫৬.৩ – ৮৩.২% প্রটেকশন দেয়। PM10 সাইজে বড় হওয়ায় সার্জিকাল মাস্ক অনেকখানিই প্রতিরোধ করতে সক্ষম।  

    বাতাসের AQI ৩০০-এর বেশী হলে Air Quality Alert দেয়ার কথা। সেক্ষেত্রে দরজা, জানালা বন্ধ করে ঘরে অবস্থান করতে হবে। যাদের সামর্থ আছে ঘরে ভাল এয়ার পিউরিফাইয়ার ইউজ করতে পারেন। ঘরের ভেতর কোন কিছু পোড়ানো থেকে বিরত থাকতে হবে। 

    বায়ুদূষণ রোধে পলিসি মেকার পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। স্বাস্থ্যকর ট্রাফিক ব্যবস্থপনা, কলকারখানার ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণ, বিল্ডিং ও অবকাঠামো নির্মানের সময় দূষণ নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করা দরকার। উন্নত বিশ্বের অনেক দেশেই এখন ব্যাক্তিগত মোটর যানের পরিবর্তে সাইকেল ও ম্যাস ট্রান্সপোর্টকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন মোটরের ধোঁয়া কমছে, অন্যদিকে শরীর চর্চারও অনুশীলন হয়ে যাচ্ছে।   

    নিজেদের জীবদ্দশায় ঢাকা শহরের সেই সর্বদা পরিচ্ছন্ন নীল আকাশটা কি আবার দেখতে পারব?

    রেফারেন্স:

    ১. https://www.iqair.com/bangladesh/dhaka

    ২. https://www.epa.gov/criteria-air-pollutants

    ৩. Rana, Masud & Biswas, Swapan. (2019). Ambient air quality in Bangladesh 2012 – 2018. 10.13140/RG.2.2.14741.17128.

    ৪. https://www.nytimes.com/article/air-quality-index.html ৫. Arunnart M. Efficiency of Commercial Face Masks in PM2.5 Prevention. Ramathibodi Med J. 2021;44: 11–17. doi:10.33165/rmj.2021.44.2.243402

  • সার্বজনিন সম্ভাব্যতার সীমা

    সম্ভাব্যতা বা প্রবেবিলিটি শব্দটির সাথে আমরা সবাই পরিচিত। সাধারনের ভাষায় সম্ভাব্যতা বলতে বুঝায়- আমি কোন একটি কাজ করব কি করব না? কোথাও যাবো কি যাবো না? এ ধরনের অনিশ্চয়তামূলক ভাব প্রকাশ। গানিতিক ভাষায় সম্ভাব্যতার অর্থ কাছাকাছি হলেও এটাকে সুনির্দিষ্ট সাংকেতিক ভাষায় প্রকাশ করা হয়। চলুন সম্ভাব্যতার একেবারে সরল কিছু উদাহরণ থেকে এ সম্পর্কে ধারণা নেই।
    সম্ভাব্যতা:
    একটি ছক্কা লুডুর কোটে এলোপাতাড়ী ভাবে ফেললে যে কোন একটি সংখ্যা পড়ার সম্ভাবনা = ১/৬
    দুটি ছক্কা লুডুর কোটে এলোপাতাড়ী ভাবে ফেললে যে কোন দুটি সংখ্যা একত্রে পড়ার সম্ভাবনা = ১/৬ * ১/৬ = ১/৩৬ = ১/৬^২
    তিনটি ছক্কা লুডুর কোটে এলোপাতাড়ী ভাবে ফেললে যে কোন তিনটি সংখ্যা একত্রে পড়ার সম্ভাবনা = ১/৬ * ১/৬ * ১/৬ = ১/৩৯৬ = ১/৬^৩
    তিনটি ছক্কা লুডুর কোটে ফেললে একটিতে ‘১’, দ্বিতীয়টিতে ‘২’ এবং তৃতীয়টিতে ‘৩’ পড়ার সম্ভাব্যতা = ১/৩৯৬ = ১/৬^৩
    আবার, তিনটি ছক্কা লুডুর কোটে ফেললে একটিতে ‘২’, দ্বিতীয়টিতে ‘৩’ এবং তৃতীয়টিতে ‘৬’ পড়ার সম্ভাব্যতাও = ১/৩৯৬ = ১/৬^৩
    অর্থাৎ, আপনি তিনটি ছক্কার সংখ্যাকে নির্দিষ্টভাবে বলে দিলেও সম্ভাব্না একই এবং তা ১/৩৯৬ তথা ১/৬^৩।
    লক্ষ্যনীয় এখানে ‘^‌’ চিহ্ন দিয়ে ‘টু দি পাওয়ার’ বুঝানো হচ্ছে। এবং মজার বিষয় হল আপনি ছক্কার সংখ্যা এভাবে ‘n’ সংখ্যক বাড়াতে থাকেন, তাহলে যে কোন একটি সংখ্যার পড়ার সম্ভাব্যতা হবে ১/৬^n।

    লটারীর টিকিট:
    ধরুন, ১০ জন ব্যক্তির একটি গ্রুপ তৈরী করার হয়েছে এবং ১ জনকে উক্ত গ্রুপের লিডার হিসেবে মনোনীত করা হবে। এ প্রেক্ষিতে প্রতিটি ব্যক্তিকে ১ থেকে ৯ পর্যন্ত ৯ টি অংক এবং একজনকে ‘০’ দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে, অর্থাৎ মোট দশটি অংক। এবার, ১০টি কাগজে নাম্বারগুলো লিখে লটারী করা হলো এবং একটি কাগজ উঠানো হল। তাহলে, যে কোন একটি সংখ্যা আসার সম্ভাবনা কত? উত্তর: ১/১০।
    এরকম যদি ১০০ জন ব্যক্তির মধ্যে লটারী করা হয়, যে কোন একজনের ওঠার সম্ভাবনা = ১/১০ *১/১০ = ১/১০০। এক্ষেত্রে ‘০১’ চিহ্নিত ব্যক্তির কাগজটি ওঠার সম্ভাব্যতা যা ‘৫৬’ নম্বর ব্যক্তিটির কাগজ ওঠার সম্ভাব্যতাও তাই =১/১০০।
    মনে করুন, আপনি গুলিস্তান থেকে একটি লটারীর টিকিট কিনেছেন এই আশায় যে আপনি ১,০০,০০,০০০ (এক কোটি) টাকা পাবেন। ধরুন, লটারীর মধ্যে অঙ্কিত সংখ্যাটিতে মোটি দশটি নাম্বার আছে। যেমন: ১৩৪৫৭৮৯৬০২ । প্রশ্ন হলো যদি লটারী সম্পন্ন করার দিন কোন কারচুপি না হয় এবং সম্পূর্ণ এলোপাতাড়ীভাবেই যে কোন একটি সংখ্যা তোলার সম্ভাবনা থাকে আপনার এই নাম্বারটি লটারীতে ওঠার সম্ভাবনা কত?
    উত্তর: ১/১০ * ১/১০ * ১/১০* ১/১০* ১/১০* ১/১০* ১/১০* ১/১০* ১/১০* ১/১০ এর মধ্যে একবার
    = অর্থাৎ, ১/১০০,০০,০০,০০০-এর মধ্যে একবার
    = অর্থাৎ, ১০০ কোটি বারের মধ্যে একবার।
    এই সংখ্যাটাকে যদি আমরা পাওয়ারে প্রকাশ করি= ১০^১০। সুতরাং,আপনার লটারীতে জেতার সম্ভবনা ১০^১০-মধ্যে একবার।
    মজার বিষয় হলো,আপনার সাথে অন্য যে কয়জন কিনেছে তাদেরও জেতার সম্ভবনা একই।

    প্রোবেবিলিটি রিসোর্স:
    উপকরন
    এখন, ধরুন, আপনি নাছোড় বান্দা আপনার লটারীতে জিততেই হবে, সেক্ষেত্রে আপনি কি করবেন? আপনাকে একাধিক লটারী কিনতে হবে। আপনি যদি একশটি লটারী সংগ্রহ করেন আপনার সম্ভব্যতা বেড়ে দাড়াবে
    = ১/১০^১০ + ১/১০^১০ +……+ ১/১০^১০ (এভাবে ১০০টি ১/১০^১০)
    = ১০০/ ১০^১০
    = ১/ ১০^৮
    অর্থাৎ, আপনার জেতার সম্ভাবনা বেড়ে দাড়ালো ১ কোটি বাড়ে একবার। কিন্তু এখনও সংখ্যাটা অনেক বড়। তাই আপনি ভাবলেন যে আপনি আপনার যেতার সম্ভাবনা আরও বাড়াবেন। এরকম করতে করতে আপনি যদি নিশ্চিতভাবেই জয়ী হতে চান আপনাকে ১০০ কোটির লটারীর কপিই কিনতে হবে। কেননা সেক্ষেত্রে আপনার জেতার সম্ভাব্যতা দাড়াবে = ১০^১০ / ১০^১০ = ১।
    লটারীর দাম এক টাকা করে হলেও আপনার কিনতে খরচ পড়বে ১০০ কোটি টাকা। ১০০ কোটি টাকা খরচ করে ১ কোটি টাকা জিততে চেষ্টা করার মত কোন বোকা লোক এই ইহজগতে খুঁজে পাওয়া যাবে না।
    এবার চিত্রটি আপনি একটু ভিন্ন ভাবে চিন্তাভাবনা করুন। ধরুন, আপনি অগাধ টাকার মালিক। আপনি ১ কোটি টাকা কাউকে লটারীর মাধ্যমে দিতে চান। আপনি ১০০ কোটি লটারীর টিকিট ছাপিয়েছেন বিলি করার ইচ্ছায়। আপনি নিশ্চিত হতে চান যে একজন ব্যক্তির কাছে টাকাটা পৌছুবেই। কিন্তু, কিভাবে নিশ্চিত হবেন? উত্তর: আপনাকে ১০০ কোটি মানুষের কাছেই টিকিট পৌছানো নিশ্চিত করতে হবে। কেননা সেক্ষেত্রে যে কোন একজনের হাতে প্রত্যাশিত টিকিটটি পৌছবেই। ধরুণ, আপনি সব টিকিট বিলি করেছেন কিন্তু একটি বাকি আছে। সেক্ষেত্রে্ও সম্ভবনা থেকে যাবে যে উক্ত বাকী টিকিটই বিজয়ী টিকিট হবে।
    এই যে একশ কোটি লটারীর টিকিট বা একশ কোটি টিকিট ক্রেতা এদেরকে গানিতিক পরিভাষায় বলা হয় ‘প্রোবেবিলিটি রিসোর্স’। অর্থাৎ, আপনি কোন একটি এলোপাতড়ী প্রক্রিয়ায় একটি ঘটনা ঘটার সম্ভবনা বাড়াতে পারবেন সংশ্লিস্ট প্রোবেবিলিটি রিসোর্স বাড়ানোর মাধ্যমে। যেমনটা আমরা উপরে দেখেছি।
    সময়
    কিন্তু, আপনার অনেক বয়স হয়ে গেছে। আপনার হাতে সময় খুব কম। ধরে নিলাম, আপনি চান একশ কোটি লটারী নিজ হাতে বিলি করতে এবং আপনি কম্পিউটারে বসে এটি করতে চাচ্ছেন। এখন আপনি কোন বিশ্রাম না নিয়ে যদি প্রতি মিনিটে একটি করে বিলি করেন সময় লাগবে,
    = ১০০ কোটি মিনিট = প্রায় ১ কোটি ৬৬ লক্ষ ঘন্টা = প্রায় ৬ লক্ষ ৯৪ হাজার দিন = প্রায় ১ হাজার ৯০২ বছর।
    আপনি প্রতি সেকেন্ডে একটি বিলি করলে সময় লাগবে,
    = ১০০ কোটি সেকেন্ড = প্রায় ১ কোটি ৬৬ লক্ষ মিনিট = প্রায় ২ লক্ষ ৭৭ হাজার ঘন্টা = প্রায় ১১ হাজার ৫৭৪ দিন = ৩১ বছর
    আপনি প্রতি সেকেণ্ড ১০০টি বিলি করলে সময় লাগবে,
    = ১ কোটি সেকেন্ড = প্রায় ১ লক্ষ ৬৬ হাজার মিনিট = প্রায় ২ হাজার ৭৭৭ ঘন্টা = প্রায় ১১৫ দিন = ০.৩১ বছর প্রায়
    অর্থাৎ, সময়ও একটি প্রবেবিলিটি রিসোর্স।
    সুতরাং, প্রোবেবিলিটি রিসোর্স তিন ধরনের: উপকরনের সংখ্যা, ঘটনাটি ঘটার জন্য প্রয়োজনীয় সময় (ইভেন্ট টাইম) এবং এভেইলেবল সময়।

    সার্বজনিন সম্ভাব্যতার সীমা
    এতক্ষণ আমরা দেখলাম সম্ভাব্যতার রিসোর্স কি কি ধরনের হতে পারে। এবার চলুন হিসেব করা যাক সার্বজনিন সম্ভাব্যতার সীমা কোনটি। প্রথমে জেনে নিই সার্বজনিন সম্ভাব্যতার সীমা বলতে কি বুঝায়? সার্বজনিন সম্ভাব্যতার সীমা বলতে বুঝায় কোন ঘটনা (যেমন: কোন রাসায়নিক বিক্রিয়া) ঘটার জন্য যে সকল প্রোবেবিলিটি রিসোর্স আছে গানিতিক ভাবে তা সর্বচ্চ কত পর্যন্ত হতে পারে। চলুন উপরের লুডুর ঘুটির বিষয়টি নিয়ে নিয়ে চিন্তা করি। মনে করুন আপনি একটি খেলা খেলছেন যেখানে আপনাকে বলা হল: আপনাকে লুডুর ছক্কা ফেলতে হবে যদি ছয়টি ‘৬’ একসাথে পড়ে বা একই ক্রমে পড়ে তাহলে আপনি একটি গিফট পাবেন। আপনাকে লুডুর গুটির সংখ্যা বেঁধে দেয়া হল না এবং আপনাকে যত সময় ইচ্ছে গুটি ফেলার অধিকার দেয়া হল। এক্ষেত্রে আপনি কয়েকভাবে ছয়টি ‘৬’ এক সাথে বা এক ক্রমে ফেলতে পারবেন।

    • প্রথমত আপনি যদি ‌৬^৬ তথা ৪৬,৬৫৬ টি গুটি একসাথে ফেলেন তাহলে এর মধ্যে নিশ্চিত ভাবেই ছয়টি ছয় পাবেন।
    • আপনার যদি একবার ছয় ফেলতে ১ মিনিট সময় লাগে তাহলে আপনি ৪৬,৬৫৬ মিনিট চেষ্টা করলে একবার অবশ্যই ক্রমান্বয়ে ছয়টি ছয় ফেলতে পারবেন।
      এখানে ৪৬,৬৫৬ টি গুটি বা ৪৬,৬৫৬ মিনিট হলো প্রবেবিলিটি রিসোর্স।
      এখন ধরুন আপনি অতিআনবিক পর্যায়ে একটি ইন্টার‍্যাকশন ঘটার সম্ভাব্যতা হিসেব করছেন। মনে করি ইন্টার‍্যাকশনটি ঘটে সবচেয়ে কম সময়ে। ইন্টার‍্যাকশনটি হবে দুটো পার্টিকেলের (দুটো প্রোটোন বা দুটো নিউট্রন) মধ্যে। তাহলে উক্ত ঘটনাটি ঘটার জন্য প্রয়োজনীয় প্রোবেবিলিটি রিসোর্স কি? এক্ষেত্রে এটির প্রবেবিলিটি রিসোর্স হল-
    • সবনিম্ন সময়: প্ল্যাংক সময় ১০^-৪৩ সেকেন্ড।
    • মহাবিশ্বের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত অতিবাহিত কাল – ১০^১৭ সেকেন্ড
    • দৃশ্যমান মহাবিশ্বের হিসেবকৃত পার্টিকেল সংখ্যা – ১০^৮০
      সুতরাং সার্বজনিন সম্ভব্যতার সীমা = ১০^৪৩ x ১০^১৭ x ১০^৮০ = ১০^(৪৩+১৭+৮০) = ১০^১৪০।
      বিজ্ঞানী David Abel-এর ভাষায় এটি হলো কোয়ন্টাম ওয়াল্ডের কোন ইভেন্ট-এর ইউনিভার্সাল প্লসিবিলিটি ম্যাট্রিক্স (১)। অর্থাৎ, কোন ঘটনা ঘটার সম্ভাব্যতা যদি ১০^১৪০-এর মধ্যে একবার হয় এবং উক্ত ঘটনা ঘটার জন্য মহাবিশ্বের সকল পার্টিকেল ও সকল সময় ব্যবহার করার সুযোগ দেয়া হয়, তাহলে ঘটনাটি একবার হলেও ঘটবে। কিন্তু, কোন ঘটনা ঘটার সম্ভাব্যতা যদি ১/ ১০^১৪১ হয়, তাহলে মহাবিশ্বের সকল পার্টিকেল ও সকল সময় ব্যবহার করেও উক্ত ঘটনা সুনিশ্চিতভাবে একবার ঘটবে না।
      তাহলে পাঠক একবার চিন্তা করে বলুনতো, কোন ঘটনা যদি এলোপাতাড়ি ভাবে একবার হবার সম্ভাবনা ১০^১৬৭ হয় মহাবিশ্বের ইতিহাসে উক্ত ঘটনা ঘটার কি আদৌ ঘটার কোন সম্ভাবনা আছে?

    রেফারেন্স:
    ১) Abel DL. The universal plausibility metric (UPM) & principle (UPP). Theor Biol Med Model. 2009;6(1):1–10.

  • সম্ভাব্যতা, ইচ্ছেশক্তি ও দোয়া

    আমাদের খুব পরিচিত একটি খেলা হচ্ছে লুডু। লুডুতে একটা কিউব থাকে যার ছয়টি পৃষ্ঠতলে ১ থেকে ৬ পর্যন্ত ছয়টি অক্ষর লেখা থাকে। আমরা এটিকে আঞ্চলিক ভাষায় ছক্কা বলি।

    লুডু খেলায় ছক্কাকে যখন কোর্টে ছুড়ে মারা হয়, তখন আমাদের উদ্দেশ্য থাকে ছক্কাটির যে কোন একটি পৃষ্ঠতল যেন দৈবচয়নে (randomly) পরে। অর্থাৎ, যে কোন একটি সংখ্যা যেন র‍্যানডমলি আসে। উদ্দেশ্য হলো উক্ত সংখ্যা অনুযায়ী আমাদের ঘুটি ছক ধরে আগাবে।

    ধরুন, আপনি এই মূহুর্তে লুডু খেলছেন। আপনি ছক্কা ফেলার পড় র‍্যানডমলি ‘২’ সংখ্যাটি আসল। কিন্তু, ছক্কা ফেলার আগ পর্যন্ত উক্ত ছক্কার যে কোন একটি পৃষ্ঠতল পড়ার সম্ভাবনা ছিল ১/৬। সুতরাং, আপনি যখন ছক্কাটিকে নিজের মত র‍্যানডমলি পড়ার সুযোগ করে দিলেন ‘২’ পড়ার মাধ্যমে অন্য ৫টি সম্ভাবনাকে নাকচ করে দিলেন।

    অর্থাৎ, এখানে আপনার ছক্কা ছুড়ে মারার পদ্ধতির কারণে যে কোন একটি সংখ্যা যখন পড়ছে তখন সে অন্য সম্ভাব্যতাকে নাকচ করে দিচ্ছে।

    বিষয় যদি আবার গুছিয়ে বলি- ছক্কা কোর্টে পড়ার আগে ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬ থেকে যে কোন একটি সংখ্যা পড়ার সম্ভাবনা ছিলো ১/৬। যখন ছক্কাটি কোর্টে পড়ে গেল তখন একটি সংখ্যা দৈবচয়নে অন্য সংখ্যা পড়ার সম্ভাবনাকে নাকচ করে দিয়ে প্রকাশিত হল।

    লক্ষনীয় এখানে ছ্ক্কাটি যদিও ‘আপাত’ র‍্যানডমলি পড়ছে বলে আপনার বাহ্য দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, আপনি যদি ছ্ক্কা ফেলার মূহুর্তের গতি, বল, শক্তি, জড়তা, বাতাসের বাঁধা প্রভৃতি পুঙ্খানুপূর্ণভাবে হিসেব করতে পারতেন তাহলে আপনি হয়ত ছক্কা লুডুর কোর্টে পড়ে কোন সংখ্যাটি উপরে থাকবে তা হিসেব করে বলে দিতে পারতেন। কিন্তু, বাস্তবে যেহেতু তা আপনার পক্ষে সম্ভব নয়, উক্ত অবস্থায় আপনার জন্য ছক্কা পড়ার বিষয়টি হচ্ছে র‍্যানডম। 


    এখন ভেবে দেখুন, আপনি খেলার নিয়মের জন্য হয়ত ছ্ক্কাটি এমনভাবে ছুড়েছেন যেন তা র‍্যানডমলি কোর্টে পড়ে। কিছুক্ষনের জন্য ভুলে জান যে আপনি নিয়ম মেনে লুডু খেলছেন। ধরুন আপনি ছক্কাটিকে স্বেচ্ছায় কোর্টে বসিয়েছেন এবং আপনি ‘৩’ বসিয়েছেন। এখন, আপনি যখন তিন বসালেন তখন আসলে আপনি উক্ত ছয়টি সংখ্যা থেকে একটি বাছাই করলেন। যেহেতুর লুডু ঘুটিতে ছয়টি পৃষ্ঠতলই থাকে সেহেতু এখানে আপনার চয়েজ ছিল ছয়টি। এর বেশী নয়।


    আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে আমাদের ইচ্ছেশক্তির ব্যবহার করে এভাবে প্রতিনিয়ত অনেকগুলো সম্ভাব্যতাকে নাকচ করি। আমাদের সামনে যে ঘটনাগুলোর আসতে থাকে তার মধ্যে- কিছু ক্ষেত্রে সীমিত চয়েজ থাকে এবং কিছু ক্ষেত্রে ঘটনাগুলোর একটিও আমাদের নিয়ন্ত্রনের থাকে না। সীমিত চয়েজ থাকে কারণ ঘটনার পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়াগুলো এমন যে তা লুডুর ঘুটির মত কয়েকটি নির্দিষ্ট অপশনই কেবল দেখাতে পারে। আবার আমরা লুডু খেলার নিয়মে প্রবেশের পর আমাদের যেমন ছক্কাটির সংখ্যা বাছাই করে বসিয়ে দেয়ার সুযোগ নেই তেমনি জীবনের কিছু ঘটনা স্বেচ্ছায় বাছাইয়ের পর অন্য কিছু ঘটনা আমাদের বাছাইয়ের বাইরে পুরোপুরি র‍্যানডম সম্ভাব্যতায় পরিণত হয়। বাস্তবতা হল এ ধরনের ঘটনার সংখ্যাই আমাদের জীবনে বেশী যা আমারেদ হাত নেই।



    যেমন ধরুন রাস্তায় চলার পথে আপনি দূর্ঘটনার স্বীকার হবেন কি না তা পুরোপুরি আপনার হাতে নেই। করোনা আক্রান্ত হলে আপনি মৃত্যুবরণ করবেন কিনা তা পুরোপুরি আপনার জানা নেই।

    কেননা আপনার বাস্তবতায় তা এখন একটি সম্ভ্যাব্যতা।



    কিন্তু, সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাআলার জ্ঞানের সাপেক্ষে এ সবগুলোই তাঁর চয়েজ। আমরা যখন দোয়া করি আল্লাহ আমাদের সামনের সম্ভাব্য সকল ঘটনার মধ্য থেকে আমাদের দোয়ার অনুকূলের ঘটনাটি বাস্তব করে দেন।


    ধরুন, আপনি ঢাকা থেকে ময়মনসিংহের পথে আপনার গাড়ি চালিয়ে করে যাত্রা শুরু করলেন। গাড়ি চালানোর সময় আপনি দ্রুত চালাতে পারেন আবার সাবধানে চালাতে পারেন। আপনি যাই বাছাই করেন না কেন বাছাই করার আগ পর্যন্ত আপনার সামনে ঘটিতব্য ঘটনাগুলো অনেক রকম হতে পারে। আপনি যদি সাবধানে চালানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং চালান, আপনি উক্ত ঘটিতব্য সম্ভাবনাময় ইভেন্টগুলো থেকে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নাকচ করে দিলেন। কিন্তু, তার মানে এই নয় যে আপনি নিশ্চিত ভাবেই দূর্ঘটনা থেকে বেঁচে যাবেন। বরং, আপনার সাবধানতা সত্যেও বিভিন্ন ইভেন্টের মিথস্ক্রিয়ার কারণে আপনার চয়েজের বাইরে কিছু সম্ভাব্যতা তৈরী হবে। যেগুলো সম্পর্কে আপনার কোন জ্ঞান নেই। আপনি এ অবস্থায় দোয়া করলে হয়ত মহান আল্লাহ আপনার অনুকূলে নিরাপদে ময়মনসিংহে পৌছার সাথে সংশ্লিষ্ট ঘটনাবলি বাস্তবায়িত করে দেবেন। দোয়া না করলেও হয়ত আপনাকে আল্লাহ নিরাপত্তা দিবেন যদি আপনার হায়াত থেকে থাকে। কিন্তু, দোয়া করলে অন্তত তা আপনার আমলনামায় ইবাদাত হিসেবে লিখা থাকবে।


    সুতরাং আমরা যখন ইচ্ছেশক্তি প্রয়োগ করি তখন অনেকগুলোর সম্ভাব্যতার মধ্যে থেকে কিছু সম্ভাব্যতা কমিয়ে নিয়ে আসি। আর যখন দোয়া করি তখনও অজানা অনেক সম্ভাব্যতার থেকে আমাদের অনুকুলের কোন ঘটনা বাছাইয়ের জন্য মহান রবের কাছে চাই। কোন কোন সময় আমার রব যখন কোন দোয়া কবুল করেন তা বুঝতে পারি, কোন কোন সময় হয়ত বুঝতে পারি না।

    আসুন বেশী বেশী মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করি। আল্লাহ তাআলা আমাদের ক্ষমা করে দিন এবং করোনা মহামারী থেকে মুক্তি দিন।    

    #https://web.facebook.com/Md-Abdullah-Saeed-Khan-112254973825726/?modal=admin_todo_tour
    https://web.facebook.com/permalink.php?story_fbid=112333143817909&id=112254973825726&__tn__=K-R

  • মানুষের সাথে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের পার্থক্য – কিছু ভাবনা

    চলুন, একটা মজার বিষয় চিন্তা করি- নিজেকে চ্যাট জিপিটির স্থানে রেখে কল্পনা করি।

    ধরি, আপনি এমন ক্ষমতা পেয়ে গেলেন যে পৃথিবীর সমস্ত মানুষের সমস্ত লেখা আপনি পড়েছেন এবং মনে রাখতে পারছেন, ঐ লেখাগুলোতে ব্যবহৃত প্রতিটি শব্দ কতবার ব্যবহার হয়েছে এবং কোন শব্দ বা শব্দাবলীর আগে বা পরে ব্যবহার হয়েছে তা মনে রাখতে পারছেন, এবং সেই শব্দগুচ্ছের পারস্পরিক সম্পর্কের আলোকে আপনি লিখতে পারছেন।

    কিন্তু, এই অস্বাভাবিক ক্ষমতার বিনিময়ে আপনার মধ্যে থেকে বোঝার ক্ষমতা নিয়ে নেয়া হয়েছে। অর্থাৎ, আপনি সব ভাষা শিখেছেন, সব তথ্য জানেন। কিন্তু, তার অর্থ জানেন না।

    কি হবে একবার ভেবে দেখুন তো।


    আপনাকে যে প্রশ্ন করা হবে, আপনি উত্তর করতে গিয়ে আপনার শেখা শব্দাবলীর মধ্যে সবচেয়ে সম্ভাব্য শব্দাবলির কম্বিনেশন ব্যবহার করবেন। কিন্তু, প্রথম দিকে আপনার এই শব্দাবলির কম্বিনেশন অনেক ক্ষেত্রেই অর্থহীন হবে। কিন্তু, ধরি আপনাকে শত শত মানুষের একটি দল, যারা অর্থ বোঝে তারা ভুল করলে ধরিয়ে দিয়েছেন। এভাবে আপনি সঠিক শব্দাবলির কম্বিনেশন সম্পর্কে একটা জেনে নিয়েছেন। সেক্ষেত্রে, আপনি যত বেশী জানবেন ততই হিউম্যান লাইক রিসপন্স দিতে পারবেন। কিন্তু, আপনি নিজে তার কিছুই বুঝবেন না।

    অর্থাৎ, আপনি কোন কিছু না বুঝে নকল করছেন। কিন্তু, নকল করার ক্ষেত্রে অসংখ্য মানুষের ব্যবহৃত বাক্যের প্যাটার্ন থেকে সবচেয়ে সম্ভাব্য প্যাটার্ণকে মিমিক করছেন।

    এমতাবস্থায়, আপনাকে একটি অধিক উন্নত মানের দ্রুত কার্যক্ষম সম্পন্ন নকলযন্ত্র ছাড়া আর কিছু কি বলা যাবে?

    না, তাই না?

    এবার চলুন একটু অন্যভাবে চিন্তা করি। আসলে ‘বুঝা’ (understanding) বলতে কি বুঝায়? হতে পারে আমাদের ব্রেইনের ভিতর এ ধরনেরই কোন ঘটনা ঘটছে। অর্থাৎ, আমরা ছোট বেলা থেকে যত ধরনের তথ্য দেখা, শোনা, গন্ধ নেয়া, স্বাদ পাওয়া এবং অনুভব করার বিভিন্ন অঙ্গের মাধমে পেয়ে এসেছি, আমাদের যখন কোন কিছু সম্পর্কে বলা হয়, আমাদের ব্রেইন উক্ত তথ্যগুলোর মধ্যে সম্ভাব্য স্ট্যাটিসটিক্যাল রিলেশনগুলো চেক করে, এবং তার ভিত্তিতে উত্তর দেয়।


    আপনি হয়ত ভাবছেন- না। আমাদের ব্রেইন শুধু এরকম না। আমাদের মধ্যে মৌলিকভাবে মেশিন থেকে পার্থক্য আছে।


    ওয়েল আপনি ঠিকই চিন্তা করেছেন। কিন্তু, পার্থক্যটা আসলে কোথায়?


    এটি বুঝতে আপনাকে আরেকটু গভীরভাবে ভাবতে হবে।


    যখন আমরা বিভিন্ন তথ্য বিভিন্ন সেন্সের মাধ্যমে জানছি, তখন আমাদের ব্রেইন আসলে বিভিন্ন ধরনের তথ্যের ফ্রিকোয়েন্সী ক্যালকুলেট করছে এবং তার ভিত্তিতে একটি সম্ভব্যতা হিসেব করছে।


    আমি যখন একটি কালো পাখি দেখে, কা কা শব্দ শুনে কাক বলছি। তখন, আমি তাকে কাক হিসেবে চিনতে পারছি, কাক সম্পর্কে আমার পূর্বের নলেজ এর কারণে। এই নলেজ-এর মধ্যে আছে কাকের ভিজুয়েল, অডিটরী এবং লিঙ্গুয়িস্টিক তথ্য।


    খেয়াল করে দেখুন, এখানে আমার ব্রেইন দু’ধরনের রিজনিং ব্যবহার করছে। একটি হচ্ছে ইনডাকটিভ। অর্থাৎ, আমার পূর্বের দেখা সব কাক কালো এবং কা কা শব্দ করে।


    সুতরাং, একই ধরনের ইমেজ, সাউন্ডযুক্ত কোন পাখি সদৃশ দৃশ্য আমার চোখে পড়লে তাকে আমি কাক বলি। তবে এক্ষেত্রে, আমি ডিডাকটিভ রিজনিংও ব্যবহার করছি। কিভাবে? আমার জ্ঞানের সাপেক্ষে, যেহেতু হুবুহু কাক সদৃশ, কা কা শব্দ তৈরীকারী, কালো রঙ্গের সব পাখিই কাক- সেহেতু আমি এখন যে পাখিটা দেখছি তা কাক।


    মজার বিষয় হলো, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স খুব এফিসিয়েন্টলি এই কাজটা করতে পারে।

    তাহলে, মানুষের ইন্টেলিজেন্সের সাথে এ.আই.-এর পার্থক্যটা কোথায়?



    পার্থক্যটা বুঝতে চলুন কিছুক্ষণ আগের উদাহরণটাতে আবার যাওয়া যাক। আমি, কাক সদৃশ পাখিটাকে জানালার শেইডে বসে থাকতে দেখে কাক বলছি, তখন আমি আসলে আরও কিছু সম্ভাবনাকে নাকচ করছি। এই সম্ভাবনাগুলো অবশ্য আমি কখনও শিখিনি। বরং, আমার ‘সেন্স’ আমার অজান্তেই কিছু ‘কাউন্টার ফ্যাকচুয়েল’কে নাকচ করছে। অর্থাৎ, এই যে কালো কাক সদৃশ কা কা শব্দকারী প্রাণীটি আমি দেখছি, তা যদি কাক না হয়ে অন্য কিছু হত তাহলে তার আওয়াজ, আকৃতি, বা রং কেমন হতে পারতো? এখন, এই ধরনের বিকল্প সম্ভব্যতা বা ব্যাখ্যাতো বিলিয়ন ট্রিলিয়ন বা অসংখ্য অগনিত হতে পারে। কিন্তু, আমরা সম্ভাব্য সবচেয়ে সঠিক ধারণাকে বেছে নিতে পারি। কিভাবে?


    ‘কমন সেন্স’ ব্যবহার করে। আমরা এই যে কমন সেন্স ব্যবহার করে সম্ভাব্য অসংখ্য ব্যাখ্যা থেকে একটি বেছে নেই, এটা হচ্ছে অ্যাবডাকটিভ রিজনিং।


    ইন্টট্রেস্টিং বিষয় হচ্ছে, সকল প্রকার আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইনডাকটিভ এবং ডিডাকটিভ রিজনিং ব্যাবহার করে। কারণ, এগুলো প্রোগ্রাম করা যায়। কিন্তু, এখন পর্যন্ত অ্যাবডাকটিভ রিজনিং-প্রোগ্রাম করার করার কোন পদ্ধতি আবিস্কৃত হয়নি।


    এমনকি বিভিন্ন সাইডওয়েস দিয়ে যদি অ্যবডাকশন প্রোগ্রামও করা যেত ‘কমন সেন্স’ কিভাবে প্রোগ্রাম করবে?


    আরেকটু গভীরে ভাবলে বুঝা যায় যে, কমন সেন্সের বিষয়টি আমাদের উপলব্ধি করার ক্ষমতার সাথে অতপ্রতভাবে জড়িত। আমাদের ব্রেইনে ভিজুয়েল, অডিটরি, অলফ্যাকটরি, গাসটেটরি এবং প্রোপ্রিউসেপটিভ ইনফরমেশন যাওয়ার পর আমরা যে পারসিভ তথা উপলব্ধি করি, সেটাকে বলা হয় কোয়ালিয়া। আমাদের ইমোশোন আমাাদের অনন্য একটি বৈশিষ্ট্য।


    কোয়ালিয়া, ইমোশন, কমন সেন্স, ফ্রি-উইল হচ্ছে মানুষের ইন্টেলিজেন্স-এর ইউনিক বৈশিষ্ট্য। হ্যা আমাদের স্বাধীন ইচ্ছেশক্তি ব্যবহার করে আমরা ‘না’ বলতে পারি। স্বাধীন ইচ্ছেশক্তি এবং কমন সেন্স-এর কারণেই আমাদের ব্রেইন অগনিত অল্টারনেটিভ থেকে সর্বত্তোম বেছে নিতে জানে। অসীম সময়ে হাতড়ে না বেড়িয়ে থামতে জানে।


    আমাদের এই বৈশিষ্ট্যগুলো নন-কম্পিউটেবল। এগুলোর কারণে, আমরা তথা মানুষরা বুঝতে পারি যে কোন প্রোগ্রাম হাল্ট করবে এবং কোনটি হাল্ট না কররে চলতেই থাকবে। কিন্তু, কম্পিউটার অ্যালগরিদম তা নির্ধারণ করতে পারে না। 


    আর, আমাদের আছে একটি সমন্বিত সেন্স বা self-awareness। আমাদের নিজেদের সম্পর্কে। যাকে আমরা নাম দিয়েছি কনসাসনেস। আর হ্যা, আমাদের কনসাসনেস আছে, কারণ আমাদের আছে আরও মৌলিক একটি সত্ত্বা। আর তা হল আমাদের আত্মা (soul), যা আমাদের মেশিন থেকে আলাদা করেছে।


    সকল প্রশংসা আল্লাহর!            
    ..

  • মানুষের আদি পিতা মাতা দুই জন

    সাংবাদিকরা যখন বিজ্ঞান নিয়ে কথা বলেন তখন যে বিজ্ঞানের ‘ছেড়ে দে মা কেন্দে বাঁচি’ অবস্থা হয় তার সবচেয়ে উদাহরণ হল বাংলাদেশের চিকিৎসা বা চিকিৎসকদের নিয়ে করা প্রতিবেদন। ধরে নিলাম অধিকাংশ বাংলাদেশী সাংবাদিকদের নিয়ে এত বড় আশা কঠিন যে তারা কোন বিষয় সম্পর্কে বিস্তর জেনে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ দিবে। কিন্তু পাশ্চাত্যের সংবাদমাধ্যমগুলোর কি অবস্থা? বিজ্ঞানের কোন বিষয়ে তাদের কোন প্রতিবেদনে কি বিশ্বাস করা যায়?

    ব্যক্তিগতভাবে আমার এই ধরনের সকল ‘পপুলার সায়েন্স নিউজ’-এ এক সময় ভালই আস্থা ছিল। কিন্তু, এখন আর তা করতে পারি না। কারণ, বিবর্তনবাদ, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রভৃতি নিয়ে সায়েন্স নিউজ রাইটারদের চটকদার নিউজ পড়ার পর যতবারই একটু গভীরে ঘেটে দেখেছি ততই তাদের তথা সায়েন্স (নিউজ) রাইটারদের প্রতি আমার বিশ্বাস হালকা হয়ে গেছে। সায়েন্স রাইটাররা দুই ধরনের হয়- হয় তারা ভাল জানে এবং জেনে ইচ্ছেকৃত স্পেসিফিক এজেন্ডা (সায়েন্টিজম-এর প্রসার) এর জন্য লিখে, অথবা, তারা জিনিসটা সম্পর্কে না জেনে বা না বুঝে লিখে। সব সায়েন্স নিউজ পোর্টাল এরকম হয় তাও বলছি না। তবু, সায়েন্স নিয়ে কোন ‘নিউজ’ দেখলে চেষ্টা করি মূল রিসার্চটা কি বলেছে একটু ঘেটে দেখার। বিশেষ করে, যদি সময় পাই, যে বিষয়টির টেকনিকাল দিকগুলো সম্পর্কে পড়েছি, অন্তত সে বিষয়গুলো একটু দেখে নেই।   



    যাই হোক, ফেসবুকে দেখলাম ডেইলী মেইলের একটি নিউজ সবাই শেয়ার করছে যাতে বলা হচ্ছে যে, মার্ক স্টিকল ও ডেভিস থেলার নামক দু জন বিজ্ঞানী তাদের ২০১৮ সালের একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখিয়েছেন সমস্ত মানুষ এক জোড়া মানুষ থেকে এসেছে এবং এক লক্ষ বছর আগে একটি সর্বব্যপী দূর্ঘটনায় পৃথিবীর সব স্পিসিস প্রায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।(1)

    এই নিউজ যারা পড়েছেন এবং শেয়ার করেছেন তাদের মধ্যে দু’ধরনের রিসপন্স দেখলাম-


    ১. যারা ডারউইনবাদকে বিতর্কিত তত্ত্ব বলে মনে করেন তারা এই গবেষণাটিকে বিবর্তনের বিপরীতে এভিডেন্স হিসেবে দেখছেন এবং তারা ইমপ্লিসিট ভাবে মনে করছেন যে এই আবিস্কার মেজর রিলিজিওন বর্ণিত ‘আদম-হাওয়া’ থেকে মানুষের আবির্ভাবকে এনডর্স করে।
     


    ২. যারা ডারউইনবাদকে প্রশ্নাতীতভাবে সত্য মনে করেন, তারা হয় চুপ আছেন বা এই রিসার্চ বিবর্তনতত্ত্বকে এনডর্স করে বলে মনে করছেন।

    আগে থেকে এই ধরনের রিসপন্স সম্পর্কে পরিচিতি থাকায় আমি ভাবলাম মূল রিসার্চটা একটু পড়ে দেখা দরকার। যেই ভাবা সেই কাজ। আর্টিকেলটা পড়লাম। মলিকিউলার ইভল্যুশন সম্পর্কে আইডিয়া না থাকলে আর্টিকেল থেকে মূল বক্তব্য বের করাটা একটু কঠিন। তবে আমি যতটুকু বুঝেছি সেখান থেকে পাঠকদের জন্য আমার দুই পয়সা-
      

    মূল রিসার্চটার টাইটেল হল “Why should mitochondria define species?” এটি প্রকাশিত হয়েছে হিউম্যান ইভল্যুশন জার্নালে ২০১৮ সালের মে মাসে(2)। নিচে আর্টিকেলে মূল বিষয়গুলো নিজের ভাষায় বলার চেষ্টা করছি।



    ১. আমরা জানি, প্রতিটি বহুকোষী জীব-এ মাইটোকন্ড্রিয়া নামক অঙ্গানু থাকে যা এটিপি হিসেবে শক্তি সঞ্চিত রাখে।

    ২. কোষে নিউক্লিয়ার ডিএনএ ছাড়াও মাইটোকন্ড্রিয়ার নিজস্ব ডিএনএ আছে।

    ৩. নিউক্লিয়ার ডিএনএ-তে মিউটেশনের ফলে জীবের ফিনোটাইপে (অর্থাৎ বাহ্যিক আকার আকৃতি ও বৈশিষ্ট্য) পরিবর্তন হয়।

    ৪. কিছু কিছু মিউটেশন আছে যাকে বলে ‘নিউট্রাল মিউটেশন’। কারণ, এই ধরনের মিউটেশনের ফলে প্রোটিনের অ্যামাইনো এসিড সিকোয়েন্সে কোন পরিবর্তন হয় না।

    ৫. কিন্তু, নিউক্লিয়ার ডিএনএ-তে এই ধরনের মিউটেশনের ফলেও ফেনোটাইপে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন  লক্ষ্য করা যায়।   

    ৬. প্রায় সব মিউটেশনই প্রোটিনের মূল ফাংশনের ব্যঘাত ঘটায়- হয় তার কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয় বা বিকল করে ফেলে। ফেনোটাইপে এ ধরনের পরিবর্তন হলে, উক্ত প্রানীটি রিপ্রোডাক্টিভ ক্ষমতা কমে যায়। কারণ, তার এক বা একাধিক ফাংশনে ত্রুটি থাকায় সে বেঁচে থাকার লড়াই-এ হেরে যায়। এ কারণে এই ধরনের মিউটেশনগুলো পরবর্তি জেনারেশনের প্রবাহিত হতে পারে না। অর্থাৎ, নিউক্লিওটাইড চেঞ্জযুক্ত প্রাণীগুলো অন্য প্রাণীর সাথে প্রতিযোগিতায় পরাজিত হয়। (এভাবে, মিউটেশনযুক্ত প্রাণীর মারা যাওয়া ও অরিজিনাল ফাংশনাল  সিকোয়েন্সযুক্ত প্রাণীর বেঁচে থাকার প্রক্রিয়াকে বলে পিউরিফাইং সিলেকশন।)

    ৭. এর ফলে ‘মা’ প্রানী ও ‘সন্তান’ প্রাণীর নিউক্লিয়ার ডিএনএ-তে খুব বেশী পরিবর্তন পাওয়া যায় না।

    ৮. কিন্তু, মাইটোকন্ড্রিয়ার ডিএনএ-এর ক্ষেত্রে ‘নিউট্রাল মিউটেশন’ কোন গুরুত্বপূর্ণ ফাংশনাল পরিবর্তন (ফেনোটাইপিক পরিবর্তন) আনে না। অর্থাৎ, মাইটোকন্ড্রিয়ার ডিএনএতে এই নিউট্রাল মিউটেশনগুলো থেকে যায়। অর্থাৎ ‘মা’ থেকে ‘সন্তানে’ জননকোষ বিভাজনের সময় সংঘটিত মাইটোকন্ড্রিয়াল মিউটেশনগুলো থেকে যায়।

    ৯. মাইটোকন্ড্রিয়ার ডিএনএতে এই নিউট্রাল মিউটেশনগুলো থেকে যাওয়া উপকারিতা কি?

    ১০. উপকারিতা হল- এর ফলে ‘মা’ এর তুলনায় ‘সন্তানদের’ মাইটোকন্ড্রিয়াতে যথেষ্ট জেনেটিক ডাইভারসিটি তৈরী হয়।

    ১১.  এখন, আপনি যদি ধরে নেন যে মাইটোকন্ড্রিয়ার ডিএনএ-তে প্রতিবার রিপ্রোডাকশনের সময় সংঘটিত পরিবর্তনগুলো একটি স্থির হারে হয় এবং আপনার যদি কোন স্পিসিস-এর প্রতি রিপ্রোডাকশনে মিউটেশনের হার জানা থাকে, তাহলে আপনি কোন প্রজাতির আভ্যন্তরিন জেনেটিক ডাইভারসিটি থেকে উক্ত প্রজাতি ও তার কমন এনসেস্টর-এর মর্ধবর্তী সময় বের করতে পারবেন(3)। (এই সময়কে বলা হয় কোলেসেন্স টাইম)

    ১২. বিজ্ঞানী স্টিকেল ও থেলার কোষের মাইটোকন্ড্রিয়ার এই বৈশিষ্ট্যটি ব্যবহার করে মানুষের কমন এনসেস্টর কত পূর্বে ছিলো এবং একই সাথে অন্যান্য প্রাণীদের কমন এনসেস্টর কতপূর্বে ছিলো তার একটি এস্টিমেট বের করেন।

    ১৩. তারা মাইটোকন্ড্রিয়ার COI barcode ডাটাবেজ BOLD-এর ডাটা ব্যবহার করেন। লক্ষ্যনীয় যে, GenBank এবং BOLD ডাটাবেজ মিলে প্রায় ৫০ লক্ষ প্রানীর COI barcode ডাটা সংরক্ষিত আছে।

    ১৩. তাদের হিসেব অনুযায়ী মানুষের কমন এনসেস্টর ছিলো প্রায় ১ লক্ষ বছর আগে। অর্থাৎ, প্রায় ১ লক্ষ বছর আগে একজন পুরুষ ও নারী থেকে বর্তমান মানব জাতি এসেছে। 

    ১৪. মজার বিষয় হলো, একই সাথে তারা অন্যান্য প্রাণীর বারকোড থেকে হিসেব করেন যে প্রাণী জগতের বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৯০%-এর কমন এনসেস্টর-এর বয়সও প্রায় ১ লক্ষ থেকে ২ লক্ষ বছর। অর্থাৎ, মানুষের মত অন্যান্য প্রাণীও ১ থেকে ২ লক্ষ বছর পূর্বের এক জোড়া কমন এনসেস্টর থেকে এসেছে।

    ১৫. এর অর্থ কি? সহজ বাংলায়, স্টিকেল ও থেলারের গবেষণা অনুযায়ী বর্তমানে প্রাণীজগতের প্রায় ৯০% প্রায় ১ লক্ষ থেকে ২ লক্ষ বছর আগের সংশ্লিষ্ট প্রজাতির এক জোড়া থেকে এসেছে। উদাহরণস্বরুপ, মানুষের ক্ষেত্রে এক জোড়া নারী-পুরুষ, বাঘের ক্ষেত্রে একজোড়া বাঘ ও বাঘিনী, ইত্যাদি। যারা প্রায় ১ লক্ষ থেকে ২ লক্ষ বছর আগে প্রায় কাছাকাছি সময় জীবিত ছিলো ।


    ১৬.  মানুষের ক্ষেত্রে এ ধরনের হিসেব (Estimate) আগেও করা হয়েছে।

    ১৭. লক্ষ্যনীয়, মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ শুধুমাত্র নারীদের জনন কোষ থেকে সন্তানের জাইগোটে প্রবাহিত হয়। ফলে, কেউ মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ থেকে মানুষের এনসেস্ট্রি অ্যানালাইজ করলে মানুষের সর্বশেষ কমন ‘মা’-কে ট্রেস করতে পারবে। ঠিক একই ভাবে শুধুমাত্র ‘Y’ ক্রোমোজোম নিয়ে এনসেস্টি অ্যানালাইজ করলে মানুষের সর্বশেষ কমন ‘বাবা’ কে ট্রেস করা যাবে।

    ১৮. মাইটোকন্ড্রিয়ার ভিত্তিতে প্রথম কমন ‘মাইটোকনড্রিয়াল ইভ’ এর বয়স বের করেন বিজ্ঞানী কেন, স্টোনকিং এবং উইলসন। তাদের হিসেবে অনুযায়ী মানুষের কমন ‘মাইটোকনড্রিয়াল ইভ’-এর বয়ষ প্রায় ২ লক্ষ বছর। অর্থাৎ ২ লক্ষ বছর আগে আমাদের কমন ‘মা’ পৃথিবীতে বিচরণ করেছিলেন। (4)


    ১৯.  ‘Y’ ক্রোমোজোম-এর ভিত্তিতে মানুষের কমন বাবা তথা ‘Y ক্রোমোজোমাল অ্যাডাম’-এর বয়স হিসেব ২০০০ সালের দিকে হিসেব করা হয়েছিলো প্রায় ৫০০০০ বছর(5)। যা ‘মাইটোকনড্রিয়াল ইভ’ থেকে প্রায় দেড় লক্ষ বছর ছোট।

    ২০. কিন্তু, পরবর্তীতে আরও রাইগোরাসটিল গবেষণা করে ‘মাইটোকনড্রিয়াল ইভ’ এবং ‘Y ক্রোমোজোমাল অ্যাডাম’-এর বয়স হিসেব করা হয় যথাক্রমে ৯৯ থেকে ১লক্ষ ৪৮ হাজার বছর এবং ১লক্ষ ২০ হাজার থেকে ১লক্ষ ৫৬ হাজার বছর(6)।

    ২১. বৈজ্ঞানিক গবেষণা অনুযয়ী, ‘মাইটোকনড্রিয়াল ইভ’ এবং ‘Y ক্রোমোজোমাল অ্যাডাম’ প্রায় কাছাকাছি সময় বাস করেছিলেন।


    ২২. তবে আমাদের মনে রাখা দরকার, এগুলো আসলে কিছু Provisional Estimate. কোন কনফার্মড হিসেবে নয়(7)।

    ২৩. যাই হোক, এখন আমরা যদি ১৫ নম্বর পয়েন্ট আবার পড়ি- স্টিকেল ও থেলারের গবেষণা অনুযায়ী বর্তমানে প্রাণীজগতের প্রায় ৯০% প্রায় ১ লক্ষ থেকে ২ লক্ষ বছর আগের সংশ্লিষ্ট প্রজাতির এক জোড়া থেকে এসেছে। উদাহরণস্বরুপ, মানুষের ক্ষেত্রে এক জোড়া নারী-পুরুষ, বাঘের ক্ষেত্রে একজোড়া বাঘ ও বাঘিনী, ইত্যাদি। যারা প্রায় ১ লক্ষ থেকে ২ লক্ষ বছর আগে প্রায় কাছাকাছি সময় জীবিত ছিলো।

    ২৪. এই রিসার্চ থেকে দুটি সিদ্ধান্তে আসা যেতে পারে।

    ২৫. এক, ১ থেকে ২ লক্ষ বছর আগে কোন এক বড় ধরনের  ক্যাটাস্ট্রফিক ইভেন্ট-এর কারণে তখনকার প্রায় অনেক প্রজাতির ‘ভিন্ন নিউক্লাওটাইড সিকোয়েন্স’ যুক্ত ভাই-বোনেরা মারা যায়। ফলে, যে একজোড়া পুরুষ-নারী থেকে পরবর্তী জেনারেশন-এর ডাইভারসিফিকেশন হয়। (একে বলা হয় পপুশেন বোটল নেক)


    ২৬. দুই,  ১ থেকে ২ লক্ষ বছর আগে পৃথকভাবে একজোড়া করে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী পৃথিবীতে পাঠানো হয় এবং তা থেকে পরবর্তী জেনারেশন-এর ডাইভারসিফিকেশন হয়।

    ২৭. মজার বিষয়, ‘ম্যাটেরিয়ালিস্ট’-দের জন্য ২৫ ও ২৬ দুইটাই প্রবলেমেটিক। কারণ, ২৫ ঠিক হলে নূহ (আ)-এর প্লাবণ-এর মত একটি ক্যাটাস্ট্রফের ইঙ্গিত পাওয়া, যার সম্পর্কে প্রায় সকল ধর্মগ্রন্থে বিভিন্নভাবে বর্ণনা এসেছে। আর, ২৬-কে তারা outright রিজেক্ট করে।


    ২৮. এজন্য আলোচ্য রিসার্চের দুইজন অথারকে বলতে শুনা যায়-

    “This conclusion is very surprising,” co-author David Thaler of the University of Basel is quoted as saying, “and I fought against it as hard as I could.” His co-author is fellow geneticist Mark Stoeckle of Rockefeller University in New York (3)

    ২৯. মজার বিষয় হলো এরা আগে ২০০৪ সালের একটি পেপারে একই অথাররা পাখির দুটো লিনিয়েজ পরীক্ষা করে বলেছিলেন-
    “The ad hoc modifications to neutral theory commonly proposed to account for low variation in individual cases, namely, recurrent bottlenecks or selective sweeps, struggle as general mechanisms. If bottlenecks limit variation, then a universal low ceiling implies recent population crashes for all species. This appears unlikely– almost a Noah’s Ark hypothesis–although perhaps long-term climate cycles might cause widespread periodic bottlenecks.” (8)

    ৩০. সবার শেষে Evolution News-এর এন্ড্রু জোনস-এর একটি কথা কোট করে শেষ করছি –

    “In any case, one thing is clear: reconstructing the past is a complicated business and it is still full of surprises. There may be even bigger surprises in store.”

    রেফারেন্স:

    1.      McManus L. Every person was spawned from single pair of adults living up to 200,000 years ago, scientists claim | Daily Mail Online [Internet]. Daily Mail. 2018 [cited 2018 Nov 26]. Available from: https://www.dailymail.co.uk/news/article-6424407/Every-person-spawned-single-pair-adults-living-200-000-years-ago-scientists-claim.html?fbclid=IwAR25ZFBERNCQqdzNrdMfrQkVIFS8CSbBvJlRXTv8seHsngm-W8DR39Ke_HA

    2.      Stoeckle MY, Thaler DS. Why should mitochondria define species? Hum Evol. 2018;33:1–30.

    3.      Jones A. New Paper in Evolution Journal: Humans and Animals Are (Mostly) the Same Age? Evolution News. 2018.

    4.      Cann RL, Stoneking M, Wilson AC. Mitochondrial DNA and human evolution. Nature [Internet]. 325(6099):31–6. Available from: http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/3025745

    5.      Thomson R, Pritchard JK, Shen P, Oefner PJ, Feldman MW. Recent common ancestry of human Y chromosomes: Evidence from DNA sequence data. Proc Natl Acad Sci U S A [Internet]. 2000;97(13):7360–5. Available from: http://www.pnas.org/content/97/13/7360.abstract%5Cnhttp://www.pnas.org/content/97/13/7360.full.pdf

    6.      Poznik GD, Henn BM, Yee MC, Sliwerska E, Euskirchen GM, Lin AA, et al. Sequencing Y chromosomes resolves discrepancy in time to common ancestor of males versus females. Science (80- ). 2013;341(6145):562–5.

    7.      Klinghoffer D. About “Y Chromosome Adam” and & “Mitochondrial Eve” [Internet]. Evolution News. 2013 [cited 2018 Nov 26]. Available from: https://evolutionnews.org/2013/08/about_y_chromos/

    8.      Stoeckle MY, Thaler DS. DNA barcoding works in practice but not in (neutral) theory. PLoS One. 2014;9(7):3–9.

  • মাতৃদুগ্ধের উপকারিতা

    হিউম্যান মিল্ক নিয়ে ফেসবুক ঝড় উঠার আগে এর উপকারিতা নিয়ে বিস্তর পড়া হয়নি । এখন খুঁজতে গিয়ে অনেক মজার বিষয় পেয়ে যাচ্ছি। যেমন-


    – মাতৃদুগ্ধের মাধ্যমে মায়ের জিন মাতৃদুগ্ধসেবী বাচ্চার শরীরের প্রবেশ করে এবং বাচ্চার ডিএনএ-তে একীভূত হয়ে যায়। অর্থাৎ, মায়ের দুধ সেবনের মাধ্যমে বাচ্চা তার মায়ের জিনও নিজের শরীরের নিয়ে নেয়(1)।

    • ইঁদুরের উপর গবেষণা করে দেখা গেছে যে মায়ের দুধের মাধ্যমে স্টেম সেলও বাচ্চার শরীরের প্রবেশ করে। শুধু প্রবেশ করেই চুপ থাকে না, দুগ্ধ সেবনকারীর বাচ্চার ব্রেইনে গিয়ে বাসা বাঁধে এবং নিউরন ও গ্লাইয়াল কোষ তৈরী করে(2)।
    • মায়ের দুধ বাচ্চার এপিজেনেটিক মোডিফিকেশন করে। অর্থাৎ কিছু জিন সুইচ অন করে এবং কিছু জিন সুইচ অফ করে । দেখা গেছে যে সকল বাচ্চা দীর্ঘদীন গরুর দুধ খায় তাদের এমন কিছু জিন এপিজেনেটিক্যালী অ্যাক্টিভেট হয় যার ফলে বড় হলে তাদের ডায়াবেটিস, অবেসিটি, নিউরোডিজেনারেটিভ ডিজিজ ও ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়(3)।
    • মায়ের দুধে আছে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার এক বিশাল জগত ও ইকোসিস্টেম যা শিশুর অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়াজাল তৈর করতে ভূমিকা রাখে(4)।

       

    রেফারেন্স:

    1.        Irmak MK, Oztas Y, Oztas E. Integration of maternal genome into the neonate genome through breast milk mRNA transcripts and reverse transcriptase. Theor Biol Med Model [Internet]. 2012;9(1):1. Available from: ???

    2.        Aydın MŞ, Yiğit EN, Vatandaşlar E, Erdoğan E, Öztürk G. Transfer and Integration of Breast Milk Stem Cells to the Brain of Suckling Pups. Sci Rep. 2018;8(1):1–9.

    3.        Melnik B, Schmitz G. Milk’s Role as an Epigenetic Regulator in Health and Disease. Diseases. 2017;5(1):12.

    4.        Ruiz L, García-Carral C, Rodriguez JM. Unfolding the human milk microbiome landscape in the omicsera. Front Microbiol. 2019;10(JUN):1–11.

  • মস্তিষ্ক প্রতিস্থাপন

    আমি ভেবেছিলাম শুধু বাংলাদেশের নাস্তিকরাই বুঝি কলা বিভাগ থেকে বিজ্ঞান চর্চা করে। কিন্তু, সমগ্র পৃথিবীতেই যে এই ধরনের নাস্তিকের অভাব নেই, তার প্রমাণ পেলাম গত পরশু এক ফেসবুক পেইজ থেকে। ল্যাডবাইবেল নামক পেইজে একটা নিউজ শেয়ার করে যে এক চাইনিজ সার্জন Dr. Xiaoping Ren এবং ইতালিয়ান নিউরোসার্জন Dr. Sargio Canavero তাদের টিম সহ প্রথম সফলভাবে মানুষের মাথা ট্রান্সপ্ল্যান্ট করেছেন। লিংকের নিচে কমেন্ট বক্সে দেখি আস্তিকতা নাস্তিকতার ঝড় উঠেছে।

    যাই হোক, আমার কাছে মনে হল ‘There is something fishy’. কারণ, আপনি হেড ট্রান্সপ্ল্যান্ট করবেন, অথচ ওটা নিয়ে সায়েন্টিফিক জার্নালে কোন আর্টিকেল না ছাপিয়ে আগে সাংবাদিকদের ডেকে সম্মেলন করবেন, এটা অন্তত পশ্চিমা বিশ্বে সম্ভব না।

    নিউজের ভিতরে ঢুকে দেখি ব্যপারটা আসলেই তাই। এক সার্জন একটা মৃত মানুষের মাথার সাথে আরেকটি মৃত মানুষের শরীর জাস্ট স্টিচ করেছে মাত্র, এর চেয়ে বেশী কিছু না। হ্যা, তাদের পরিকল্পনা আছে জীবিত মানুষকে নিয়ে করার। কিন্তু, আগে করুন। আর্টিকেল ছাপুন। আপনার ফেলো সায়েন্টিস্টদের বলুন এটা নিয়ে সমালোচনা করতে। তাদের সমালোচনার সফল উত্তর দিন। তারপর, দাবী করুন যে আপনি সফল ভাবে হেড ট্রান্সপ্ল্যান্ট (নাকি ‘বডি ট্রান্সপ্ল্যান্ট’ কোনটা বলবেন?) করেছেন । অথচ, পত্রিকা ইতোমধ্যে প্রচার করছে সফল হেড ট্রান্সপ্ল্যান্ট। ‘সফলতার’ সংঙ্গা কোথায় গিয়ে নেমেছে?

    আমি একটি মৃত হাতের সাথে আরেকটি মৃত হাতের কবজি লাগিয়ে যদি বলি সফল হাতের অপারেশন হয়েছে তাহলে কি আপনার আমার স্যানিটি নিয়ে প্রশ্ন রাখবেন না? যদি না রাখেন তাহলে আপনাদের চিন্তার সীমাবদ্ধতা নিয়েই আমার প্রশ্ন রাখতে হবে।

    আরও বিস্ময়কর হল নাস্তিকদের এই তথাকথিক হাস্যকর সফলতার নিউজ নিয়ে উল্লম্ফন। স্টুপিডিটি ও মিথ্যাচারের লিমিটকেও ক্রস করে যাচ্ছে মিডিয়া এবং নাস্তিকরা।

    অধিকন্তু, আপনি কেন মাথা ট্রান্সপ্ল্যান্ট বলছেন? আসলে তো বলার কথা বডি ট্রান্সপ্ল্যান্ট। কারণ, এখানে একজন জীবিত কিন্তু ঘাড় থেকে নিচ পর্যন্ত অকেজো মানুষের মাথার নিয়ে একজন ব্রেইন ডেড মানুষের ঘাড় থেকে নিচ পর্যন্ত শরীরটা লাগানো পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

    প্রসঙ্গত, জীবিত শরীরে ‘মাথা প্রতিস্থাপন’ কোন সহজ বিষয় না। সামান্য একটি কিডনী ট্রান্সপ্ল্যান্ট করতে গেলেও এইচ-এল-এ টাইপিং ম্যাচ করতে হয়। নাহলে শরীর উক্ত কিডনীকে রিজেক্ট করে। এমনকি এক ব্যাগ রক্ত দিতে গেলেও গ্রুপ মিলিয়ে নিতে হয়। আর, মাথা আসলে একটি অঙ্গ না, অনেকগুলো অঙ্গের সমষ্টি। ফলে একটি শরীর একটি মাথাকে রিজেক্ট করার সম্ভাবনা অনেক বেশী।

    একজন মানুষের পা নষ্ট হয়ে গেলে যদি তার পা কেটে (অ্যাম্পিউট) করে ফেলা হয় তখনও তার কেটে ফেলা পায়ের মধ্যে সে ব্যাথা অনুভব করতে থাকে। একে ‘ফ্যানটম লিম্ব পেইন’ বলে। অনুরুপ একজন মানুষের মাথার সাথে পুরো নতুন শরীর যুক্ত করলেও তার ব্রেইন উক্ত শরীরকে নিজের হিসেবে রেজিস্ট্রার করবে না, ফলে সে পুরো শরীরে এক্সক্রুসিয়েটিং পেইন অনুভব করবে এবং সে একসময় উক্ত বডিকে কেটে ফেলতে বলতে পারে।

    ধরুন, আপনি আপনার সমস্ত ঘরের তার যেখানে একত্রিত হয়েছে ওগুলো কেটে দিয়ে আরেকটি ঘরে পাওয়ার সাপ্লাইয়ের সাথে জাস্ট যুক্ত করে দিলেন, তাহলেই কি আপনার ঘরে ঠিকঠাক বিদ্যুৎ পাবেন? না, পাবেন না। কারণ, আপনার সুনির্দিষ্ট ভাবে সংযোগগুলো লাগাতে হবে। ঠিক একই ব্যাপার মস্তিষ্ক প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রেও। স্পাইনাল কর্ডকে আপনি এরকম বিলিয়নের অধিক তারের সমষ্টি হিসেবে চিন্তা করতে পারেন। মস্তিষ্ক প্রতিস্থাপনের সময় শুধুমাত্র একজনের স্পাইনাল কর্ডের সাথে আরেকজনেরটা বাইরে লাগিয়ে দেয়া হবে এবং অপেক্ষা করতে হবে যেন সুনির্দিষ্ট ভাবে ও একা একাই প্রতিটি তার একটি আরেকটির সাথে লেগে যায়।

    অথচ, অন্যান্য প্রাণীতে যে সকল তথাকথিত সফল হেড ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা হয়েছিলো তাতে সর্বচ্চো সফলতা বলতে যেটা দেখা গেছে তা হল মাথাটা হয়তো শরীরের সাথে লেগে কয়েকদিন ( সর্বচ্চো বিশ দিন) বেঁচে ছিলো, কিন্তু স্পাইনাল কর্ড ঠিক মত জোড়া লাগেনি। ফলে, উক্ত প্রানী নড়াচড়াহীন অবস্থায়ই বেঁচে ছিলো অল্প কয়েকদিন।

    সফল শরীর প্রতিস্থাপন আপনি তখনই বলতে পারেন যখন আপনি একজন স্পাইনাল এট্রফির মানুষের মাথা আরেকজনের বডির সাথে যুক্ত করার পর সে আরেকজনের বডিতে গিয়ে পুরোপুরি নাড়াচাড়া করতে পারবে এবং মাত্র ‘বিশ দিন’ বা ‘এক বছর’ বেঁচে থাকবে না, বরং অনেকদিন বেঁচে থাকবে কোন প্রকার কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস যন্ত্র বা অন্যান্য সাপোর্ট ছাড়াই। আপনি যে স্পাইনাল এট্রফির মানুষটাকে মাথা কেটে অপারেশন করবেন, সে যদি বিশদিনের বেশী না বাঁচে, অথচ তাকে হয়ত কৃত্রিমভাবে স্টিফেন হকিং-এর মত অনেক দিন বাঁচানোর সুযোগ আছে, তাহলে যে ‘ইথিকাল’ ইমপ্লিকেশন তৈরী হয় সেদিকে কি লক্ষ্য রাখছেন? নাকি চাইনিজ মানুষের জন্য ইথিক্স নাই (যার ওপর সার্জারী করার চিন্তা করা হচ্ছে সে একজন চাইনিজ)।

    চিকিৎসাবিজ্ঞানকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আপনি এমন কিছু আবিস্কার করুন যাতে উক্ত স্পাইনাল এট্রফির-ব্যাক্তির স্পাইনাল কর্ড পুনরায় সচল হয়ে যায়। সেটা না করে ‘নাম-করার’ জন্য আপনি ‘কলা বিজ্ঞান’ করছেন বা ‘সাংবাদিক বিজ্ঞানী’ হয়ে যাচ্ছেন, এটাকে বিজ্ঞান বলে না, বলে অপ-বিজ্ঞান।

  • ‘ক্লোজ-আপ’ জাহান্নামের কাছে আসার গল্প

    “শয়তান তোমাদেরকে অভাব অনটনের ভীতি প্রদর্শন করে এবং অশ্লীলতার আদেশ দেয়। পক্ষান্তরে আল্লাহ তোমাদেরকে নিজের পক্ষ থেকে ক্ষমা ও বেশী অনুগ্রহের ওয়াদা করেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সুবিজ্ঞ”।–সূরা বাক্বারা: ২৬৮

    কোন জাতিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে আসার জন্য শয়তান ধীরে ধীরে উক্ত জাতির মধ্যে অশ্লীলতার বিস্তৃতি ঘটায়। শয়তার এই কাজটা করে ধীরে ধীরে। একটু মনোযোগ দিয়ে চিন্তা করলেই দেখা যাবে, মুসলিম জাতিতে অশ্লীলতা ছড়িয়ে দেয়ার জন্য শয়তান কি পদ্ধতি অবলম্বন করেছে। শয়তান প্রথমে নারী ও পুরুষকে পর্দার বাইরে নিয়ে এসেছে। এটা ছিলো বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে। এরপর, রেডিও ও টেলিভিশন জমানার আগে অসংখ্য গল্প, উপন্যাস, নাটক, সাহিত্যে ছেলে ও মেয়েদের মধ্যবর্তী কথাবার্তা ও হাত ধরাধরি না করে গল্প করাকে (তথা প্রেম) স্বাভাবিক হিসেবে সাবকনসাস মাইন্ডে ঢুকিয়ে দিয়েছে।

    রেডিও ও টেলিভিশন আসার পরে প্রথম উপরোক্ত ধরনের বিষয়গুলোকে ‘শোনা’ ও ‘দেখা’ এ দুটো পদ্ধতিতে মগজে প্রথিত করেছে। তার ফলে আমাদের বিংশ শতাব্দীর শেষের দশ ও একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকে এমন একদল তরুণ তৈরী হয়েছে যারা উপরোক্ত ধরনের প্রেমকে ‘হারাম’ মনে করত না (আল্লাহ আমাকে এ ধরনের নিকৃষ্ট ধারণা থেকে হেফাজত করুন)।

    প্রথম প্রথম শয়তানের স্ট্র্যাটেজি ছিলো আকারে ইঙ্গিতে অশ্লীলতার বীজ মন-মগজে রোপন করা। কিন্তু কিন্তু, সময়ের সাথে যখন শয়তানের ধোকায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেড়েছে শয়তান অশ্লীলতা ছড়ানোর স্ট্র্যাটেজিকে আরও বেশী প্রকাশ্যে নিয়ে এসেছে।

    টেলিভিশন কেন্দ্রিক মিডিয়া ইন্ড্রাস্ট্রিতেও প্রথম প্রথম সরাসরি অশ্লীলতা প্রবেশ করানো হয় নি। ধীরে ধীরে মননকে কলুষিত করে অশ্লীলতা ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রথম প্রথম প্রেমের নামে আপাতদৃষ্টিতে অশ্লীল নয় এমন দৃশ্য থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে বিভিন্ন সিনেমা নাটকে একটা দুটো স্ন্যাপশট হলেও নগ্নতা ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে পর্ণের দিকে ধাবিত করার প্রথম সুড়সুড়ি। এভাবে প্রথমে তৈরী হয়েছে এমন একদল তরুণ যারা বিনোদনের নামে পর্ণ দেখাকে প্রথমে গোপনে এবং পরে প্রকাশ্যে স্বাভাবিক বানিয়ে ফেলেছে। এছাড়াও তৈরী হয়েছে কিছু পর্ণ এডিক্ট। 

    এখন চলছে শয়তানের দাবার শেষ চাল। যৌনতাকে ছড়িয়ে দেয়ার কাজে শয়তানের দোসররা এখন অনেকটাই প্রকাশ্য। ‘ক্লোজআপ কাছে আসার গল্প’ এবং ‘দেখিয়ে দাও অদেখা তোমায়’ অশ্লীলতাকে প্রকাশ্যে জনসম্মুখে ছড়িয়ে দেয়ার প্রথম ধাপ।

    একটা গুনাহ যতক্ষণ গোপন থাকে ক্ষমা চেয়ে আল্লাহর ফিরে আসার সুযোগ থাকে। কিন্তু, গুনাহটি যখন প্রকাশ্যে স্বাভাবিকভাবে প্রচলিত হয়ে পরে তখন সেটি উক্ত আক্রান্ত জাতিতে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এনে উপস্থিত করে।

    যারা আল্লাহর কৃপায় যারা এখনও ‘জাহান্নামের কাছে আসার গল্পের’ সম্পর্কে সচেতন, উক্ত সচেতনতা মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করা তাদের কর্তব্য।


    দাঁত মাজার জন্য ইউলিভারের ক্লোজ-আপ বা অন্য টুথপেস্ট ব্যবহার করতেই হবে, এমন কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আপনি পাবেন না। তাহলে কেন তাদের পণ্য কিনছেন। 

    তারা প্রকাশ্যে ‘অশ্লীলতার’ আদেশ দিচ্ছে দেখেও কি আপনাদের কাছে বিষয়টি ক্লিয়ার নয় যে এরা কার দাসত্ব করছে। আপনি কি টাকা দিয়ে শয়তানের কাছ থেকে পণ্য কিনবেন?  প্রশ্নই উঠে না।

    এছাড়া আর কি করতে পারেন? হ্যা, ‘কাছের আসার গল্প’ ও ‘দেখিয়ে দাও অদেখা তোমায়’ জাতীয় ইঙ্গিতপূর্ণ অশ্লীলতার আহবানের বিভ্রান্তি নিয়ে ফেসবুকের নিউজফিডকে ‘অনেকদিন’ সরব রাখতে পারেন। আবার বলছি, ‘অনেকদিন’ এবং ‘অনেকে’ মিলে সরব থাকতে পারেন। আল্লাহ আমাদের শয়তানের ফিৎনা থেকে রক্ষা করুন।

  • ওভার ফিটিং

    যে কোন তরল বা গ্যাসীয় পদার্থে দুটি অনু যখন পরস্পর মিথ:স্ক্রিয়া করে তখন নিউটনের সূত্রগুলো মেনে চলে। কিন্তু, তরল বা গ্যাসীয় পদার্থে অসংখ্য অনুর নড়াচারা আপনি শুধু এই সুত্র থেকে প্রেডিক্ট করতে পারবেন না। যেহেতু অসংখ্য অনুর প্রতিটির গতি প্রকৃতি ও আনুসঙ্গিক প্রভাবক আলাদা ভাবে মাপা সম্ভব নয়, সেহেতু আপনি সুনির্দিষ্টভাবে একদল অনুর গতিবিধি প্রেডিক্ট করতে পারবেন না। তবে পূর্ববর্তি গতিবিধির উপর ভিত্তি করে পরবর্তী গতি বিধির একটি সম্ভাব্যতা হিসেব করতে পারবেন। এটি স্ট্যাটিসটিক্যাল মেকানিক্স-এর কাজ।

    অনুরুপভাবে, ধরি একজন মানুষ নিয়মিত ধুমপান করেন এবং কয়েক বছর পর তার ফুসফুসের ক্যান্সার হলো। কিন্তু, শুধু মাত্র এই একজনের তথ্য থেকে আপনি বলতে পারবেন না ধুমপানের সাথে ক্যান্সারের সম্পর্ক আছে কি না। কারণ, মানুষ ভেদে ধুমপানের প্রভাবে পার্থক্য হয়।   আপনি যা করতে পারবেন তা হলো ক্যান্সার আক্রান্ত অনেক রোগী এবং ক্যান্সার নেই এরকম অনেক ব্যাক্তি নিয়ে ধূমপানের কারণে ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা হিসেব করতে পারবেন। এক্ষেত্রে বায়স্ট্যাটিসটিক্স এর সাহায্য লাগবে।

    স্ট্যাটিস্টিসিয়ানগণ কোনো বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের তথ্য এর উপর ভিত্তি করে গানিতিক সমীকরণ (ম্যাথমেটিকেল মডেল) দাড় করান। এই মডেলগুলো উদ্দেশ্য হচ্ছে বিভিন্ন প্রভাবককে বিবেচনায় নিয়ে একটি ঘটনার সম্ভাব্যতা হিসেব করা। কোন কোন ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীদের উদ্দেশ্য হচ্ছে নমুনা তথ্যের উপর ভিত্তি করে এমন একটি মডেল দাড় করানো, যেটি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সঠিকভাবে প্রত্যাশিত ঘটনাটি সম্পর্কে প্রেডিক্ট করতে পারে।

    ওভার ফিটিং

     তবে আপনি যদি আপনার নমুনা ডেটা দিয়ে প্রায় শতভাগ ক্ষেত্রে সঠিক প্রেডিকশন দেয় এমন একটি মডেল দাড় করান, সেটি প্রকৃতপক্ষে আপনি যে সকল নমুনা নিয়ে কাজ করেছেন সেগুলোর ব্যাপারেই সঠিক প্রেডিকশন দিতে পারে। অর্থাৎ, ভবিষ্যতে সংগৃহীত নমুনার ক্ষেত্রে এটি শতভাগ প্রেডিকশন দিতে পারবে না।

    এর কারণ, আপনি তখনই কোন স্ট্যাটিসটিক্যাল মডেলিং করেন, যখন আপনার লক্ষ্যবস্তুতে অন্ত:র্নিহিত র‍্যানডমনেস থাকে। এই র‍্যানডমনেস আসে প্রকৃত পক্ষে অনেক জানা এবং অজানা প্রভাবক (ফ্যাক্টর)-এর মিথস্ক্রিয়ার কারণে।

    প্রায় শতভাগ প্রেডিকশন দিতে পারার এই বিষয়টিকে বলা হয় ওভার ফিটিং। ওভার ফিটিং কেন গ্রহনযোগ্য নয়? কারণ, ওভারফিটেড মডেল আমার স্যাম্পলের ভিতর যে ত্রুটি আছে তা সহ ফিট করে। ফলে, নতুন পর্যবেক্ষনের ক্ষেত্রে তা সাধারনীকরণ করা যায় না।  

    নিউরাল নেটওয়ার্ককে যখন ট্রেইনিং দেয়া হয় তখনও একধরনের নন-লিনিয়ার ম্যাথমেটিকাল মডেলিং কর হয়। নিউরাল নেটওয়ার্কের সুবিধে হল আপনি প্রাথমিক মডেলের আউটপুট সঠিক হয়েছে কিনা এই ফিডব্যাক (ট্রেইনিং) দিতে পারেন। উক্ত ফিডব্যাকের আলোকে নেটওয়ার্কের ভিতর ব্যাকপ্রপাগেশনের মাধ্যমে সিগনাল ভ্যারিয়েশন (Weight variation) তৈরী হয়। ফলে পরবর্তীবার ইনপুট হিসেবে উক্ত ভ্যারিয়েশন সহ ডাটা মডেলে প্রবেশ করে। এভাবে প্রতিটি ইটারেশনের সময় মডেলটির প্রেডিকটিভ ক্ষমতা বাড়তে থাকে। কিন্তু, একই সাথে তৈরী হয় ওভার ফিটিং প্রবলেম।

    লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলগুলো ওভারফিটিং হলে অনেক সময় এমন কিছু বাক্য তৈরী করে যার কোন সিনটেক্স ও সিমেনটিক্স অনুযায়ী হয়ত ঠিক আছে। কিন্তু, বাক্যগুলোর অর্থহীন এবং কোন সুনির্দিষ্ট প্যাটার্ণকে অনুসরণ করে না। এই ঘটনাকে মেশিন লার্নিং-এর ভাষায় বলা হয় হ্যালুসিনেশন। তবে মজার বিষয় হল ইমেজ বিল্ডিং বা এ ধরনের কাজে এই হ্যালুসিনেশকে কাজে লাগানোর সুযোগ আছে। তবে হেল্দ ডেটারর প্রেডিকটিভ মডেলিং আমাদের টার্গেট থাকতে হবে আন্ডার ফিট বা অভার ফিট পরিহার করা।

  • ওজন হ্রাসের উপায়

    ——————–

    সকল প্রশংসা আল্লাহর! মানুষ এখন বুঝতে পারছে যে অতিরিক্ত ওজন শরীরের জন্য ক্ষতিকর। অডিওভিজুয়্যাল ও সোশাল মিডিয়ার কল্যাণে এখন ওজন কমানোর বিষয়ে আমরা অনেকটাই সচেতন। যদিও ডা. জাহাঙ্গির কবিরের কিটো পদ্ধতি সর্বসাধারনের জন্য সঠিক উপায় নয়। স্বীকার না করে উপায় নেই, তার ভাইরাল হবার প্রেক্ষিতে অনেকেই ওজন হ্রাসের চর্চায় প্রবেশ করেছেন।

    ওজন হ্রাসের জন্য ভাল উপায় কি?

    এর আসলে সাধারণ কোন উত্তর নেই। অর্থাৎ, সবার জন্য ওজন হ্রাসের একটি সাধারণ নিয়ম বেঁধে দেয়া যায় না।

    তবে, ওজন হ্রাসের মূলনীতি প্রায় সবার জন্য এক। (‘প্রায়’ বললাম এই জন্য যে কিছু রোগে শরীরের ওজন অসাভাবিক বৃদ্ধি পায়, যা উক্ত রোগের চিকিৎসা ছাড়া নিরাময় করা কঠিন।)

    মূলনীতিটি হচ্ছে, আপনি দৈনন্দিন যে পরিমাণ শক্তি ব্যয় করেন তার চেয়ে কম গ্রহণ করতে হবে, এবং অবশ্যই নিয়মিত, আমি আবারো বলছি ‘নিয়মিত’ এই কাজটি করতে হবে। কনসিসটেন্সিটাই বরং সবচেয়ে বেশী জরুরী।

    আপনি দৈনন্দিন যে শক্তি ব্যয় করেন তা হিসেব করবেন কিভাবে? এটি হিসেব করতে হলে প্রথমে আপনার Basal Metabolic Rate (BMR) হিসেব করতে হবে। সবচেয়ে নিখুঁত ভাবে BMR বের করার উপায় হচ্ছে মেশিন দিয়ে হিসেব করা। অন্যদিকে, কিছু অনলাইন ক্যালকুলেটর আছে, যেখানে বহুল ব্যবহৃত কিছু গানিতিক ফর্মুলা দিয়ে আপনাকে BMR হিসেব করে দিবে। তন্মধ্যে একটি হচ্ছে মোডিফাইড হ্যারিস বেনেডিক্ট ফর্মুলা। উক্ত ফর্মুলা অনুযায়ী BMR ক্যালকুলেট করতে আপনার ওজন, উচ্চতা, বয়স এবং লিঙ্গ সম্পর্কে তথ্য দিতে হবে। ফর্মুলাটা অনেকটা এরকম-

    পুরুষ হলে, বিএমআর = ৬৬.৪৭৩০ + (১৩.৭৫১৬ x ওজন কেজিতে) + (৫.০০৩ x উচ্চতা সেন্টিমিটারে) – (৬.৭৭৫০ x বয়স বছর-এ)

    নারী হলে, বিএমআর = ৬৫৫.০৯৫৫ + (৯.৫৬৩৪ x ওজন কেজিতে) + (১.৮৪৯৬ x উচ্চতা সেন্টিমিটারে) – (৪.৬৭৫৬ x বয়স বছর-এ)

    (অ্যাথলেট হলে এই ফর্মুলা আপনার জন্য প্রযোজ্য হবে না)

    লক্ষ্যনীয়, BMR হচ্ছে আপনি দৈনন্দিন স্বাভাবিক কাজকর্ম করলে যে পরিমান শক্তি খরচ হয় তার একটি হিসেব। সুতরাং, বুঝতেই পারছেন এটি সবার জন্য প্রযোজ্য নয়। যে ব্যাক্তি রিকশা চালায়, আর যে ব্যাক্তি ডেস্কে বসে জব করে তাদের শক্তি ব্যয় এক রকম নয়। এজন্য BMR বের করার পর আপনার দৈনিক সর্বমোট শক্তি ব্যায় (Total Daily Energy Expenditure [TDEE]) হিসেব করতে হবে।

    নিম্নোক্ত উপায়ে আপনি TDEE হিসেব করতে পারেন।

    ১. কোন পরিশ্রম না করলে বা খুবই হালকা পরিশ্রম হলে (Sedentary),

    ক্যালরি = বিএমআর x ১.২

    ২. হালকা পরিশ্রম করলে বা সপ্তাহে এক থেকে তিন দিন খেলাধুলা করলে (Lightly active),

    ক্যালরি = বিএমআর x ১.৩৭৫

    ৩. মাঝারী পরিশ্রম করলে বা সপ্তাহে তিন থেকে পাঁচ দিন খেলাধুলা করলে (Moderately active),

    ক্যালরি = বিএমআর x ১.৫৫

    ৪. ভারি পরিশ্রম করলে বা সপ্তাহে ছয় থেকে সাত দিন খেলাধুলা করলে (Very active),

    ক্যালরি = বিএমআর x ১.৭২৫

    ৫. খুবই ভারি পরিশ্রম করলে বা সপ্তাহে প্রতিদিন খেলাধুলা করলে ও শারীরিক পরিশ্রম করতে হয় এ রকম চাকুরী করলে (Extra active),

    ক্যালরি = বিএমআর x ১.৯

    এভাবে আপনার দৈনন্দিন শক্তি ব্যয়ের হিসেব পেয়ে যাবেন।

    মনে করি আপনি একজন পুরুষ, ওজন ৭০ কেজি, উচ্চতা ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি এবং একজন সিডেনটারী ওয়ার্কার (অর্থাৎ, অফিসে ডেস্ক জব করাই আপনার কাজ)। তাহলে আপনার TDEE আসবে ১৮৬৩ ক্যালরী।

    অর্থাৎ, আপনার বর্তমান ওজন মেইনটেইন করতে আপনাকে প্রায় ১৮৬৩ ক্যালরী গ্রহণ করতে হবে। এখন, আপনি যদি প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৫০০ ক্যালরী কম খান তাহলে ধীরে ধীরে ওজন হ্রাস করতে পারবেন। অথবা, আপনি যদি পরিশ্রমের পরিমান ব্যয়ামের মাধ্যমে বাড়িয়ে দেন, তাহলেও ওজন হ্রাস হবে। খাবার কমানোর চেয়ে শরীরচর্চা জরুরী বেশী এই জন্য যে শরীরচর্চা শুধু যে আপনার শারীরিক উন্নতি ঘটায় তা না, আপনার ব্রেইনে এনডরফিন নি:সরণ করার মাধ্যমে আপনার মানসিক অবস্থারও উন্নতি ঘটায়।

    তবে যে উপায়ই অবলম্বন করুন না কেন আপনাকে কনসিসটেন্ট হতে হবে। অর্থাৎ, নিয়মিত এই কাজটি করে যেতে হবে।

    অতএব, আসুন আমরা ওজনকে স্বাভাবিক রেইঞ্জ (বিএমআই ১৮.৫ থেকে ২২.৯)-এ রাখা চেষ্টা করি এবং সুস্বাস্থ বজায় রাখার চেষ্টা করি।