Artificial Intelligence কি কখনও মানুষের বুদ্ধিমত্তার কাছাকাছি যেতে পারবে?

এই প্রশ্নের উত্তরের জন্য চলুন কিছুক্ষণ ব্রেইন স্টর্মিং করি।

মানুষের বুদ্ধিমত্তা ‘অনন্য’ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে মানুষ দুটো সম্পূর্ণ ভিন্ন সম্পর্কহীন বস্তুকে নিজের ইচ্ছে মত জুরে দিতে পারে।

একটি উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি বুঝাই। আমরা যখন কথা বলি তখন কতগুলো ধ্বনিসমষ্টি  উচ্চারণ করি। যার ক্ষুদ্র স্বাধীন অংশ হল স্বরধনি।

যেমন – অ, আ।

লক্ষ্যনীয় এখানে আমি যখন ‘অ’ বলছি তখন একটি নির্দিষ্ট ধরনের আওয়াজ করছি। কিন্তু, যখন আমি উক্ত আওয়াজকে লিখছি, তখন এক নির্দিষ্ট ধরনের ‘বক্ররেখা’ ব্যবহার করছি।

বক্ররেখা এজন্য বললাম- ‘অ’ তো আসলে কোন সরলরৈখিক চিত্র না। বরং, এক ধরনের বক্ররেখা বা বক্ররেখার সমষ্টি।

খেয়াল করুন- এখানে আমার ‘অ’-এর সাথে যে উচ্চারণ আমি সংশ্লিষ্টতা দিচ্ছি তা আসলে ‘আরবিট্রারী’, যদিও আমরা ছোটবেলা থেকে এভাবে শিখছি বলে লিখছি।

তবে একজন মানুষ ইচ্ছে করলে যে কোন বক্ররেখাকে ‘অ’ ধ্বনির সাথে জুরে দিতে পারে। ধরুন একজন সাংকেতিক ভাষায় একটি ম্যাসেজ দিতে চায়। যেখানে সে – ‘আ’ বর্ণটিকে ‘অ’ ধ্বনির সাথে সংশ্লিষ্ট করবে বলে ঠিক করেছে। তাহলে সে যখন ‘আ’ লিখবে, তার ‘কোড’ অনুযায়ী এর উচ্চারণ হবে ‘অ’।

 বস্তুত, এই যে মানুষ ইচ্ছে করলে সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস (একটি ধ্বনির সাথে একটি বক্ররেখা)-কে বিধিবহির্ভূতভাবে জুরে দিতে পারছে, মানুষের এই যোগ্যতাটি হচ্ছে তার ‘mind’ এর ইউনিক একটি বৈশিষ্ট্য।

কম্পিউটারের নিউরাল নেটওয়ার্কের একবারে ব্যাসিক কর্মপ্রক্রিয়ার সাথে তুলনা করলে এ বিষয়টি বুঝা আরও সহজ হয়।

 ‘একজন প্রোগ্রামার’ চিন্তা করল যে নিউরাল নেটওয়ার্ককে ‘অ’ অক্ষর দেখালে ‘অ’ উচ্চারণ করা শেখাবে। সে নিউরাল নেটওয়ার্কের ইনপুট এন্ডে বিভিন্ন ধরনের ইমেজ দিয়ে ট্রেইনিং দেয়াবে এবং আউটপুট এন্ডে ‘অ’ ধ্বনির উচ্চারনটা ‘সিলেক্ট’ করে দেবে। নিউরাল নেটওয়ার্ক কিন্তু, নিজে থেকে আগে জানে না যে ‘অ’ বর্ণ দেখলে ‘অ’ উচ্চারন করতে হয়।

কিন্তু ধরুন, আপনি এমন একটি রোবট তৈরী করলেন যেটি প্রাথমিকভাবে ‘শূণ্য স্লেটের’ মত এবং এটি এমনভাবে তৈরী করা যে যা শুনে সংরক্ষণ করতে পারে এবং উক্ত সাউণ্ডের সাথে ‘আপনি’ যদি কোন ‘বক্ররেখা’কে জুরে দেয়া শিখিয়ে দেন সে উক্ত ‘সম্পর্ক’টাও তার মেমরীতে সংরক্ষণ করতে পারে। তাহলে উক্ত রোবট আপনার শেখানো বর্ণমালা দিয়ে কিছু ধ্বনিসমষ্টি তৈরী করতে পারবে।

ধরি, উক্ত রোবটকে ‘কলম’ দেখে বলতে বলা হলো। সে  ‘কলম’ সঠিকভাবে উচ্চারণ করতে পারবে।

উক্ত রোবটকে যদি একটি মানব শিশুর সাথে তুলনা করা হয়, মনে প্রশ্ন জাগতে পারে তাহলে কি মানব মাইন্ড কোন উন্নতমানের ‘AI’? কারণ আমরা আমাদের শিশুকে যে ভাষায় শিখাই, যে বর্ণমালার সাথে যে ধ্বনিমালা ‘relate’ করতে শেখাই, সে সেই ভাষাতেই কথা বলে এবং তথ্য বিনিময় করে।

কিন্তু, একটি উন্নত ‘AI’ কি সম্পূর্ণ ‘আরবিট্রারী’ভাবে একটি ‘বক্ররেখার’ সাথে একটি ধ্বনিকে জুরে দিতে পারবে? হিউম্যান মাইন্ড কিন্তু এই কাজটি খুব ইফিসিয়েন্টলি করতে পারে এবং করে। শুধু তাই না, হিউম্যান মাইণ্ড কিছুক্ষন এই ধরনের হিডেন মিনিং যুক্ত সিম্বল নিয়ে ঘাটাঘাটি করলে তার ইনহ্যারেন্ট মিনিং বের করতে পারে। কোন উন্নত কম্পিউটার কি এটা করতে পারবে?

পাঠক, আপনার কি মনে হয়?

…….

আসলে এই প্রশ্নটার উত্তরের জন্যে আমাদের একটু গণিত এবং দর্শনের কাছেও ধর্না দিতে হবে। কারণ, কম্পিউটারের আন্ডারলাইং স্ট্রাকচার হচ্ছে ম্যাথমেটিকাল । কম্পিউটারের তার প্রসসরে সেট করা অ্যাসেম্বলি ল্যাঙ্গুয়েজ অনুযায়ী কাজ করে। একটি খুবই সরলিকৃত কম্পিউটারে ইন্সট্রাকশন দেয় হয় বাইনারী ফর্মে যা প্রসেসর অ্যাসেম্বলি ল্যাংগুয়েজ অনুযায়ী ইন্টারপ্রিট করে। 

কিন্তু, কম্পিউটার তার ইন্টস্ট্রাকশনের অর্থ না বুঝে জাস্ট অন্ধভাবে ফলো করে। (দেখুন- The Chinese Room Thought Experiment by John Searle)

কম্পিউটার কোন Consistent Formal Mathematical System-এ তৈরী হয়ে থাকলে এমন কিছু গানিতিক স্টেটমেন্ট আছে যা উক্ত Formal System এর রুল দিয়ে প্রুভ বা ডিসপ্রুভ করা যায় না, কিন্তু আমরা জানি যে সেগুলো সত্য। (দেখুন – Godel’s Incompleteness Theorem)

যদি সেটি কোন Inconsistent Formal Mathematical System-এ তৈরী হয়ে থাকে Lucas-Penrose Argument অনুযায়ী দেখানো যাবে উক্ত ইনকসটেন্স সিস্টেমেও গোডেলের আর্গুমেন্টকে এক্সটেণ্ড করা যায়।

…..

If you want to learn the criticisms of the hyperbolic claims of AI reaching human intelligence in no time you may follow this site- https://mindmatters.ai

Further reading-

1. Modern physics and ancient faith- Stephen Barr

2. Emperor’s New Mind – Sir Roger Penrose

3. Shadows of The Mind – Sir Roger Penrose

4. The Mystery of Consciousness – John Searle

মৌমাছি

মৌমাছি

মৌমাছি, মৌমাছি

কোথা যাও নাচি নাচি

দাঁড়াও না একবার ভাই।

ওই ফুল ফোটে বনে

যাই মধু আহরণে

দাঁড়াবার সময় তো নাই।

নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্য রচিত ‘কাজের লোক’ কবিতাটি মুখস্ত করে করে আমরা নব্বই-এর শিশুরা ছোট থেকে বড় হয়েছি। যখন কয়েক ক্লাস উপরে উঠেছি তখন জেনেছি যে মৌমাছি এক ফুল থেকে আরেক ফুলে মধু আহরণ করে বেরায়। আবার এই কাজ করতে গিয়ে তারা এক ফুলের রেণু আরেক ফুলে নিয়ে পরাগায়ন করে। যার পরিণতিতে আমরা পাই ফল, আর গাছ পায় বীজ ছড়িয়ে দেয়ার উপায়।

কখনও কি আমাদের মনে কৌতুহল জাগেনি যে মৌমাছি কিভাবে মৌচাক থেকে ছড়িয়ে পড়ে ফুলের খোঁজে? কিভাবে ফুল চিনে নেয়? কিভাবেই বা মৌচাকে ফিরে আসে দলবদ্ধ ভাবে? কেনই বা মৌচাকে মধু জমা করতে থাকে?

হয়ত আমরা এগুলো দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি তাই প্রশ্ন জাগে না। কিন্তু নিরিবিলি কিছুক্ষণ বিষয়টি নিয়ে ভাবলে আগ্রহ না জন্মে উপায় নেই।

Bee Movie নামে একটি চমৎকার এনিমেশন মুভি আছে। কাহিনীটা এরকম যে মৌমাছি জাতির একজন তরুণ পড়াশোনা শেষ করে মধু তৈরীর কারখানায় জয়েন করবে। কিন্তু সে যখন জানতে পারে যে মধু তৈরীর কারখানায় একজন কর্মচারীর সারাজীবন একই কাজ করতে হবে তখন তার বিষয়টি ভালো লাগে না। পাশাপাশি মৌমাছিদের একটি নিয়ম হল তারা মানব জাতির সাথে কথা বলতে পারবে না। কিন্তু, সে এই রুলটা ভেঙ্গে ফলে। সে সুবাদে তার একজন মানব সঙ্গীও জুটে যায়। এরপর দু’জনে মিলে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াতে থাকে। এক সময় আবিস্কার করে যে মানুষ তাদের আহরিত মধু কেড়ে নিয়ে খেয়ে ফেলছে। সে বিষয়টি মেনে নিতে না পেরে মামলা করে এবং মামলায় জিতে যায়। ফল স্বরুপ আহরিত মধু জমতে জমতে একসময় অতিরিক্ত হয়ে যায়। মৌমাছির কাজ কর্ম বন্ধ হয়ে যায়। এরপর প্রকৃতিতে যে ভারসাম্যহীনতা তৈরী হয় তার ফলে নেমে আসে খড়া। ধীরে ধীরে সব গাছ শুকিয়ে যেতে থাকে। সবুজ প্রকৃতি হয়ে পড়ে নিথর ও নির্জীব।

মুভিটি ২০০৭ সালে মুক্তি পেলেও মৌমাছির গুরুত্বের স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে এইতো বছর কয়েক আগে। মৌমাছিকে ঘোষণা দেয়া হয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জীবিত প্রজাতি হিসেবে। (১) কিন্তু কেন? কারণ পৃথিবীর কৃষিশিল্পের সত্তর শতাংশ ফসল আসে মৌমাছির সুবাদে। 

মৌমাছি রস আহরণ করতে ফুলে বসে । ফুলের মধ্যে পরাগরেণু এমনভাবে লেগে থাকে যেন রস আহরণের সময় পরাগরেণু মৌমাছির গায়ে লেগে যায়। উক্ত মৌমাছি আরেকটি ফুলে গিয়ে বসলে পরাগায়ন ঘটে। এরপর ফুল থেকে তৈরী হয় ফল। উক্ত ফল পুনরায় অন্য কোন প্রাণীর শক্তি যোগান দেয়ার পাশপাশি বীজটিকেও অন্য জায়গায় ছড়িয়ে দেয়। কি চমৎকার মিথস্ক্রিয়া?

মৌমাছি ফুলের রস সংগ্রহ করে মধু আকারে মৌচাকে জমা করতে থাকে। যতটুকু তাদের প্রয়োজন তার চেয়ে অনেক বেশী। ফলে উক্ত মধু আমরা সংগ্রহ করতে পারি। যাতে আছে নানাবিধ উপকারী খাদ্য উপাদান।

কতই না সুন্দর এই পারস্পরিক উপকারের জাল। ফুল কি জানত তাকে পরাগরেণু ছড়িয়ে দিতে মৌমাছির আশ্রয় নিতে হবে? পরাগরেণুর আঠালো গড়ন সংশ্লিষ্ট গাছের জেনেটিক গঠনে কিভাবে তৈরী হল? মৌমাছি কি নিজে জানে যে সে কিভাবে পুরো পৃথিবীর এত উপকার সাধন করছে? নাকি সকল জীবের স্রষ্টা আল্লাহ তাকে পথ দেখিয়ে দেন?-

“অতঃপর সর্বপ্রকার ফল থেকে আহার কর এবং আপন পালনকর্তার উম্মুক্ত পথ সমূহে চলমান হও। তার পেট থেকে বিভিন্ন রঙ এর পানীয় বের হয়। এতে মানুষের জন্য রয়েছে রোগের প্রতিকার। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শন রয়েছে।” সুরা আন নাহল, আয়াত- ৬৯।

    

রেফারেন্স:
১. Concio CJH. Bees Declared To Be The Most Important Living Being On Earth [Internet]. The Science Times. 2019 [cited 2020 May 19]. Available from: https://www.sciencetimes.com/articles/23245/20190709/bees-are-the-most-important-living-being-on-earth.htm

রিলেভেন্ট ভিডিও-

করোনা ভাইরাসের অ্যান্টিবডি টেস্ট কেমন হতে হবে- সেনসিটিভ না স্পেসিফিক?

কোন টেস্টের সেনসিটিভিটি কি?

ধরুন, আপনি জানেন ১০০ জন ব্যক্তির করোনা আছে। আপনি একটি নতুন টেস্ট ‘ক’ তৈরী করেছেন যার সেনসিটিভিটি আপনি দেখতে চান। আপনি উপরোক্ত ১০০ ব্যক্তির রক্ত নিয়ে আপনি নতুন পরীক্ষাটি করলেন এবং দেখলেন যে ৮০ জন ব্যক্তির করোনা পজিটিভ এবং ২০ জন ব্যক্তির করোনা নেগেটিভ।

তাহলে উক্ত ৮০ জন ব্যক্তির জন্য টেস্ট ‘ক’ ট্রু পজিটিভ এবং ২০ জন ব্যক্তির জন্য ফল্স নেগেটিভ। এখানে সেনসিটিভিটি হলো উক্ত ১০০ জন করোনা রোগীর মধ্যে কতজনকে কে সঠিকভাবে নির্ণয় করতে পারে। সে হিসেবে আমাদের টেস্ট ‘ক’ এর সেনসিটিভিটি হল ৮০%। কারণ, সে ৮০ জনের ক্ষেত্রে সঠিক ভাবে করোনা ধরতে পেরেছে।

করোনা ভাইরাসের অ্যান্টিবডি টেস্ট কেমন হতে হবে

কোন টেস্টের স্পেসিফিসিটি কি?

ধরুন, আপনি একই টেস্ট এমন ১০০ জন মানুষের মধ্যে করলেন যাদের ক্ষেত্রে আপনি rt-PCR করে নিশ্চিত হয়েছেন যে করোনা নেই। এদের মধ্যে আপনার টেস্টটি ৯০ জনের ক্ষেত্রে করোনা ভাইরাস নেগেটিভ বললো এবং ১০ জনের ক্ষেত্রে (ভুলভাবে) করোনা ভাইরাস পজিটিভ বললো।

তাহলে উক্ত ৯০ জন হল ট্রু নেগেটিভ এবং ১০ জন হল ফল্স পজিটিভ। এখানে স্পেসিফিসিটি হলো উক্ত ১০০ জন সুস্থ মানুষের মধ্যে কতজনকে সঠিকভাবে সুস্থ বলতে পারলো। অর্থাৎ, আমাদের টেস্ট ‘ক’ এর স্পেসিফিসিটি হল ৯০%।

এখন করোনা রোগ নির্ণয় করে এমন কোন টেস্ট যদি ৮০% সেনসিটিভ হয় তার অর্থ হল উক্ত টেস্ট একশ জনে ২০ জন রোগীর করোনা নির্ণয় করতে পারে না। অর্থাৎ, ২০ জনের ক্ষেত্রে ফলস নেগেটিভ আসে। এটা একটা সমস্যা। আমাদের টেস্ট যদি করোনা রোগী ধরতে না পারে, তার অর্থ অনেক রোগী করোনা নিয়ে ঘুরে বেড়াবে এবং ছড়াতে থাকবে।

সুতরাং, আমরা যদি করোনা ভাইরাস নির্ণয়ের কোন র‍্যাপিড টেস্ট ডেভেলোপ করি (খরচ ও সময় বাঁচানোর উদ্দেশ্যে) তাহলে ঐটার সেনসিটিভিটি যত ভালো হয় তত উত্তম। এ ধরনের একটি টেস্ট হল করোনা ভাইরাসে এন্টিজেন টেস্ট।

অ্যান্টিবডি টেস্ট-এর ক্ষেত্রে কোনটা বেশী গুরুত্বপূর্ণ?

প্রশ্ন হল, আমি যদি এমন একটি টেস্ট ডেভেলোপ করি যেটা আসলে করোনা ভাইরাসকে নির্ণয় না করে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে আমাদের শরীরের সৃষ্ট প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে নিণয় করে, তাহলেও কি তার সেনসিটিভিটি গুরুত্ব রাখে? চলুন একটু ভেবে দেখি।

এ ধরনের একটি টেস্ট হতে পারে করোনা ভাইরাসের বিপরীতে সৃষ্ট অ্যান্টিবডি নির্ণয়। উপরের উদাহরণটা চিন্তা করুন। ধরুন, আমাদের টেস্ট ‘ক’ ১০০ জনের মধ্যে ৮০ জনের রক্তে অ্যান্টিবডি নির্ণয় করতে পারে এবং ২০ জনের ক্ষেত্রে ভুল করে। এটার অর্থ দাড়াবে এই যে, আমাদের টেস্ট ৮০ জনের ক্ষেত্রে বলতে পারে যে অ্যান্টিবডি তৈরী হয়েছে। কিন্তু, ২০ জনের ক্ষেত্রে ভুলভাবে বলবে যে অ্যান্টিবডি তৈরী হয়নি। ভাল ব্যপার হল, ২০ জনের ক্ষেত্রে প্রকৃতপক্ষে অ্যান্টিবডি আছে। কিন্তু, আমার টেস্ট তাদের রক্তে নির্ণয় করতে ব্যর্থ হয়েছে।

লক্ষ্য করুন, আমরা চাই একজন ব্যক্তির অ্যান্টিবডি তৈরী হয়ে যাক। সুতরাং, আমার র‍্যাপিড অ্যান্টিবডি ডিটেক্টিং টেস্ট যদি ২০ জনের ক্ষেত্রে নাও নির্ণয় করে আমাদের সমস্যা নেই। কারণ, উক্ত ২০ জনের ক্ষেত্রে ইতমধ্যে অ্যান্টিবডি আছে, সুতরাং করোনা ভাইরাস নতুন করে আক্রমণ করলেও সে প্রোটেক্টেড থাকবে (আশা করা যায়)*।

কিন্তু, আমার অ্যান্টিবডি টেস্ট তখন ঝামেলা করবে যখন তার স্পেসিফিসিটি কম হবে। কারণ, যদি আমার টেস্ট ‘ক’-এর ৯০% স্পেসিফিসিটি থাকে এটি ১০ জন ব্যক্তিকে বলবে যে তাদের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরী হয়েছে আসলে যাদের শরীরের করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরী হয়নি (ফলস পজিটিভ)। সেক্ষেত্রে উক্ত ১০ জনের ক্ষেত্রে একটি মিথ্যা নিরাপত্তাবোধ তৈরী হবে। কিন্তু, আমি কোন ভাবেই চাইবো না কোন সুস্থ ব্যাক্তির করোনা ভাইরাসের বিপরীতে অ্যান্টিবডি না থাকলেও তাকে বলা যে তার অ্যান্টিবডি আছে। কেননা সেক্ষেত্রে সে প্রতিরোধের ব্যপারে শিথিল হয়ে করোনা ভাইরাস দিয়ে আক্রান্ত হয়ে যেতে পারে।

সুতরাং, যে কোন অ্যান্টিবডি ডিটেকশন টেস্ট-এর ক্ষেত্রে আমরা চাইবো তা যেন সর্বোচ্চ স্পেসিফিক হয়**।

অন্যদিকে যে কোন করোনা ভাইরাস ডিটেকশন টেস্টের ক্ষেত্রে আমরা চাইবো তা যেন সবোর্চ্চ সেনসিটিভ হয়।

*যদি ডেঙ্গুর মত (ভিন্ন স্ট্রেইন দিয়ে) অ্যান্টিবডি ডিপেনডেন্ট এনহেন্সমেন্ট নামক ঘটনা ঘটে তাহলে অবশ্য সমস্যা।

** তবে আমি যদি অ্যান্টিবডি টেস্ট দিয়ে পরোক্ষভাবে করোনা ভাইরাস জনিত রোগ কোভিড-১৯ নির্ণয় করতে চাই, অর্থাৎ একজন ব্যক্তির রক্তে অ্যান্টিবডির উপস্থিতি দেখে জানতে চাই যে তার করোনা ভাইরাস ইনফেকশন হয়েছিলো কি না, সেক্ষেত্রে আমার জন্য উক্ত টেস্টে সেনসিটিভিটি গুরুত্বপূর্ণ হবে।

……

কিছু টেকনিক্যাল কথা (যারা জানে তাদের জন্য)-

আমরা জানি কোন ইভেন্টের প্রিভ্যালেন্স বেশী হলে পজিটিভি প্রেডিক্টিভ ভ্যালু বেশী হয়। সুতরাং, করোনা ভাইরাসের এন্টিবডি যদি ওয়াইডস্প্রেড হয়ে থাকে (যা আমরা এই মূহুর্তে জানি না), তার অর্থ হল এন্টিবডি ডিটেকশন কিটের পজিটিভি প্রেডিক্টিভ ভ্যালু বেশী হবে। সুতরাং, ফলস পজিটিভ কম হবে । ফলস পজিটিভ কম হলে তার স্পেসিফিসিটি বেশী থাকবে। সুতরাং, আমাদের টেস্টের এন্টিবডি ডিটেকশন সেনসিটিভিটি কম্প্রোমাইজড হলেও এন্টিবডির প্রিভ্যালেন্স বেশী হয়ে থাকলে আমাদের এন্টিবডি ডিটেকশন কিট খুবই হেল্পফুল হবে।

মেটাঅ্যানালাইসিসে ওজন দান

মেটাঅ্যানালাইসিসে ওজন দান

মেটাঅ্যানালাইসিসকে বলা হয় স্বাস্থ্য গবেষণার সর্বচ্চো প্রমাণ। কারণ, কোন একটি নির্দিষ্ট প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে করা গবেষণাগুলোর প্রাপ্ত ফলাফলকে একত্র করে হিসেব প্রকাশ করাই হল মেটাঅ্যানালাইসিস।

কিন্তু, বিভিন্ন গবেষণায় প্রাপ্ত হিসেবকে একত্র করার বিষয়টি সরল অংকের মত সহজ নয়। অর্থাৎ, কিছু গবেষণাপত্র একত্র করে সংশ্লিষ্ট হিসেব নিকেষ শুধু যোগ করে ভাগ করলেই যে একটি একত্রিত হিসেব পাওয়া যাবে তা নয়। মেটাঅ্যানালাইসিসে কোন কোন গবেষণাকে অন্তর্ভূক্ত করা হবে তা নির্ভর করে অনেকগুলো প্রশ্নের উপর এবং কিছু পূর্ব নির্ধারিত যোগ্যতার আলোকে গবেষণাপত্র নির্বাচন করতে হয়। আলোচ্য প্রবন্ধে আমরা মেটাঅ্যানালাইসিসে যে প্রক্রিয়াসমূহের মাধ্যমে হিসেবগুলোকে একত্রিত করা হয় তার অন্যতম একটি প্রক্রিয়া সম্পর্কে সহজভাবে বোঝার চেষ্টা চালাবো। জানি না কি হয়! চলুন নেমে পড়ি।

একটি উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি বুঝার চেষ্টা করি। মনে করুন আপনি বাংলাদেশের প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের রক্তের সুগারের গড় হিসেব বের করতে চান। আমরা জানি প্রতিটি গবেষণায় কিছু স্যাম্পল নিয়ে কাজ করে। যেহেতু একটি স্থানে বিভিন্ন ধরনের মানুষ থাকে সেহেতু উক্ত স্থানে কৃত গবেষণায় আমরা রক্তের সুগারের একটি মিন (তথা গড়) এবং ভ্যারিয়েন্স (তথা ভেদমান) পাব। আবার বিভিন্ন স্থানেকৃত গবেষণায় বিভিন্ন মিন এবং ভ্যারিয়েন্স পাওয়া যাবে।

ধরি, আপনি একটি মেটাঅ্যানালাইসিস করছেন যেখানে আপনি ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহীতে করা পৃথক কিছু গবেষণাপত্র সিলেক্ট করেছেন। যেগুলোতে উক্ত স্থানে বসবাসরত মানুষের রক্তের সুগারের গড় দেয়া আছে। উক্ত গবেষণাপত্রে সংশ্লিষ্ট শহরের সব মানুষকে নিয়ে রক্তের সুগার মাপা হয়নি। বরং, প্রতিটি শহর থেকে কিছু স্যাম্পল মানুষ নিয়ে গবেষণা করা হয়েছে।

ফলে উক্ত চারটি গবেষণা পত্রে চার রকম মিন (গড়) এবং তদসংশ্লিষ্ট চার রকম ভ্যারিয়েন্স দেয়া আছে। বোঝার সুবিদার্থে ধরে নেই মিন এবং ভ্যারিয়েন্স যথাক্রমে –

মিন – ৪, ৫, ৬ ও ৭ …… (১)

ভ্যারিয়েন্স – ২.২৫, ৩.০৬, ৪.০০ ও ১.৫৬ ……. (২)

অর্থাৎ, দেখা যাচ্ছে চারটি জায়গার স্টাডিতে মিন ও ভ্যারিয়েন্স ভিন্ন।

পরবর্তী আলোচনায় যাবার আগে আসুন ভ্যারিয়েন্স সম্পর্কে একটি ইনটুইটিভ ফিল নেয়ার চেষ্টা করি। সহজ কথায় ভ্যারিয়েন্স হল একটি স্টাডিতে যে ‘স্যাম্পল’ ব্যক্তিদের নেয়া হয়েছে তাদের ব্লাডসুগার উক্ত স্যাম্পলের মিন থেকে কতটুকু দূরে অবস্থান করছে। একটু গভীর ভাবে ভাবলে বুঝা যাবে, যে একটি এলাকায় থেকে যতবেশী মানুষকে স্যাম্পল হিসেবে নেয়া যাবে ঐ স্যাম্পলের ভ্যারিয়েন্স তত কমে আসবে। এটা অবশ্য সমীকরণ থেকে সবচেয়ে ভাল বুঝা যায়-

population variance formul
Population variance formul

সমীকরণে স্যাম্পল সাইজ ‘N’ যেহেতু ভগ্নাংশের নিচে (ডিনোমিনেটরে) আছে সেহেতু এটি যত বড় হবে ভ্যারিয়েন্স তত ছোট হবে।

সুতরাং ভ্যারিয়েন্স থেকে আপনি একসাথে দুটো তথ্য পাবেন। এক, কোন স্টাডির স্যাম্পল সাইজ কত এবং, দুই, কোন স্টাডির সংশ্লিষ্ট ভ্যারিয়েবলের ভ্যারিয়েশন কেমন।

আরেকটি বিষয় হল, একটি স্টাডির স্যাম্পল সাইজ যত বড় হবে সে স্টাডি তত ভালভাবে পপুলেশনের প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে। ধরুন আপনি এক এলাকার ১০০০০ জনের মধ্যে গবেষণা করতে চান। তাহলে তাদের মধ্য থেকে ১০০ জনকে স্যাম্পল হিসেবে নিলে পপুলেশনের সত্যিকারের হিসেবে জানতে পারবেন নাকি ১০০০ জনকে নিলে? অবশ্যই ১০০০ জনকে নিলে। (অবশ্য খরচ বেশী হওয়ার কারণে হয়ত ১০০০ জনকে নিয়ে করা অনেক সময় অবাস্তব হতে পারে। সেটা ভিন্ন আলোচনা।)

এখন আপনি যেহেতু মেটাঅ্যানালাইসিস করছেন, আপনার রিসার্চের জন্য নির্বাচিত স্টাডিগুলোকে আপনি সমান গুরুত্ব দিবেন না। কারণ, যে স্টাডি অল্প স্যাম্পল সাইজ নিয়ে করা তাদের তুলনায় যেটি বেশী স্যাম্পল নিয়ে করা তাদের চেয়ে হিসেবের দিকে দিয়ে দুর্বল। কেন দুর্বল? উপরের প্যারাটি আবার পড়ুন। অধিকন্তু, যে স্টাডিতে ভ্যারিয়েন্স বেশী সে স্টাডির মানুষজনের মধ্যে বিভিন্নতা বেশী। তাই আপনার ইচ্ছে থাকবে প্রতিটি স্টাডি থেকে হিসেব কালেক্ট করার সময় স্টাডিগুলোকে আলাদাভাবে গুরুত্ব দেয়া। বিজ্ঞানের জার্গন-এ এটাকে বলে ‘ওয়েইট’ দেয়া।

কেমন হয় যদি যে স্টাডিকে আমি নির্বাচন করেছি সেটা থেকেই কোন হিসেব নিয়ে ওয়েইট দেয়া যায়? ইন ফ্যাক্ট স্টাটিস্টিক্যাল হিসেব নিকেশের জন্য এ পথের বিকল্পও নেই।

তো ওয়েইট দেয়ার জন্য গবেষকরা যেই পদ্ধতি বের করেছেন ঐটার নাম হল ‘ইনভার্স ভ্যারিয়েন্স’ মেথড। নাম থেকেই বুঝতে পারছেন এখানে সিম্পলি ভ্যারিয়েন্সকে উল্টে দেয়া হবে।

Weighting equation
Commonly used weighting formula

ভ্যারিয়েন্সকে উল্টে দিলে কি হবে? ওয়েল, ভ্যারিয়েন্স যত ছোট হবে ওয়েইট তত বড় হবে। আবার ভ্যারিয়েন্স যত বড় হবে ওয়েইট তত ছোট হবে। সুতরাং, যে স্টাডি বেশী মানুষ নিয়ে করেছে তাকে আমি বেশী গুরুত্ব দিলাম, আর যে স্টাডি কম মানুষ নিয়ে করেছে তাকে কম গুরুত্ব দিলাম।

মনে আছে তো আমরা সারাদেশের ব্লাড সুগারের একটা মিন (এসটিমেট) বের করতে চাই? এ কারণেই মেটাঅ্যানালাইসিস করছি। ওয়েইট বের করার পড় যে ফরমুলা দিয়ে আপনি (ওইয়েটেড মিন) বির করবেন সেটা হল-

Theta estimate
Equation for theta (weighted estimate)

সমীকরণ নিয়ে ভেবে মাথা গণ্ডগোল না করে আসুন প্র্যাকটিক্যাল দেখি এটার ফল কি হল। আমরা উপরে (১) নং-এ যে মিন গুলো পেয়েছি ঐ চারটি মানকে যদি যোগ করে এভারেজ করি আসবে,

এভারেজ = (৪+৫+৬+৭)/৪=৫.৫

এখন যদি ওয়েটেড এভারেজ বা থিটা (θ) বের করি আসবে,

θ = ৫.৬৫ (জটিলতা নিরসনে ক্যালকুলেশনের দর্শণ পরিহার করা হল)

সুতরাং, দেখতে পারছেন ওয়েইট দেয়ার ফলে একটা পার্থক্য পাওয়া গেল। এখন আমরা আমরা যদি ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট এবং রাজশাহীর সমস্ত মানুষকে (পপুলেশন) নিয়ে একটি স্টাডি করতে পারতাম তাহলে প্রকৃত এভারেজ ব্লাডসুগার-এর যে মানটি পেতাম আমাদের এই হিসেবকৃত (এস্টিমেটেড) এভারেজ ব্লাডসুগার হয়ত তার কাছাকাছি হবে।

ধরে নিন আমি আপনাকে এরকম একটা মেটাঅ্যানালাইসিস করে আপনার সামনে বললাম যে এভারেজ ব্লাড সুগার হল ৫.৬৫ মিলিমোল/ডেসিলিটার। কিন্তু, আপনি তো চালাক মানুষ। আপনি এই হিসেব মানতে নারাজ। আপনি অভিযোগ করলেন যে আমি প্রতিটা স্টাডি থেকে মিন ব্লাগ সুগারের হিসেব নেয়ার সময় ধরে নিয়েছি যে তারা সবাই পপুলেশনের ব্লাড সুগার ৫.৬৫ (ধরে নেই এটাই আসল পপুলেশন ব্লাড সুগার এভারেজ) মাপার চেষ্টা করেছে। কিন্তু, বাস্তবে তা নাও হতে পারে। হতে পারে যে রাজশাহীর সকল মানুষের এভারেজ ব্লাড সুগার সিলেটের সকল মানুষের তুলনায় আসলেই ভিন্ন।

আচ্ছা আরেকটু ভেঙ্গে বলি। একটু ভেবে দেখুন সবাই আসলে কি করার চেষ্টা করছে। রাজশাহীর গবেষকরা চেষ্টা করেছে যে রাজশাহী অঞ্চলের মানুষের প্রকৃত ব্লাগ সুগারের একটা ধারণা পাওয়ার জন্য, উক্ত অঞ্চলের ‘সকল’ মানুষ থেকে ‘কিছু’ মানুষকে স্যাম্পল হিসেবে নিয়ে, প্রকৃত ব্লাড সুগারের একটা কাছাকাছি হিসেবে দিতে (সাধারণত ৯৫% শতাংশ আত্মবিশ্বাসের সাথে)। একই কাজ করেছে সিলেট, চট্টগ্রাম ও ঢাকার গবেষকরা।

অথচ, আমি যখন সবার হিসেব একত্র করার জন্য নির্বাচন করেছি, তখন ধরে নিয়েছি (তথা এসাম্পশন করে নিয়েছি) যে সবাই আসলে এই চার এলাকার সকল মানুষের সত্যিকারের এভারেজ ব্লাড সুগারের কাছকাছি একটা হিসেব দেয়ার চেস্টা করেছে।

এইটাকে স্ট্যাটিস্টিক্সে-এর জার্গনে বলা হয় ‘ফিক্সড ইফেক্ট মডেল’।

কিন্তু, আপনি যে অভিযোগ করেছেন তা সত্য হওয়া সমূহ সম্ভাবনা আছে। তার মানে এই চার এলাকায় ‘আসল’ বা ‘প্রকৃত’ বা ‘পপুলেশন’ এভারেজ হয়ত ভিন্ন। ফলে তারা হয়ত সবাই ভিন্ন লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি হিসেব দিতে ব্যাস্ত। তাহলে তো আমাকে এই যে ভিন্নতা, হিসেব করার সময় সেটা আমলে নিতে হত, তাই না?

এই ভিন্নতা আমলে নেয়ার বিষয়কে বলে ‘র‍্যানডম ইফেক্ট মডেল’। র‍্যানডম ইফেক্ট মডেলে কিভাবে এই ভিন্নতাকে হিসেবের মধ্যে গনিতের ম্যাজিক দিয়ে ঢুকিয়ে দেয়া হয় সেটা আমরা অন্য কোন পোস্টে আলোচনা করব ইন শা আল্লাহ।

আজকে এই পর্যন্তই।

…….

পরিশিস্ট:

এই আলোচনা অবতারণার উদ্দেশ্য হল মেটাঅ্যানলাইসিসের ওয়েটিং-এর বিষয়টাকে একটা সহজাত অনুভূতিতে নিয়ে আসার চেষ্টা করা। এজন্য গনিত ও দুর্বোধ্য জারগনকে যতটা সম্ভব দূরে রাখার চেষ্টা করেছি।

আমরা যে ‘মিন ব্লাড সুগারের’ হিসেবগুলো ধার নিলাম। এগুলোকে একটি সরল কিন্তু জটিল নাম দেয়া হয়েছে। এটাকে বলে ‘ইফেক্ট সাইজ’। যেহেতু একেক স্টাডি একেক জিনিস হিসেব নিকেষ করে সেহেতু বিদ্যানরা হিসেবের লক্ষ্যবস্তুর নাম দিয়েছেন ‘ইফেক্ট সাইজ’। ফিক্সড ইফেক্ট ও র‍্যানডম ইফেক্ট মডেলের ‘ইফেক্ট’ শব্দটা এখান থেকেই এসেছে। (মাঝে মাঝে বিজ্ঞানকে দূর্বোধ্য করার জন্য বিদ্যানদের চেষ্টা দেখলে মাথার চুল ছিড়তে ইচ্ছে করে। হা হা! ডোন্টমাইণ্ড।)

আমি নিজেই যেহেতু শিক্ষানবিশ সেহেতু আমার আরেকটা উদ্দেশ্য হল আমার নিজের বোঝায় ভুল থাকলে শুধরে নেয়া। কেউ না কেউ তো তার মন্তব্য দিয়ে শুধরে দিবেন।
(হে! কারও সঙ্গে আলোচনা না করে লিখে শিখতে আসছে!)

আলোচনা কি বেশী সিলি হয়ে গেল? হলে জানাবেন প্লিজ।

সবশেষে, কষ্ট করে পড়ার জন্য একটা ধন্যবাদতো আপনি অবশ্যই পান। বুঝুন বা না বুঝুন। ধন্যবাদ!

প্যালিনড্রোম (০২.০২.২০২০)

……..

আজকের তারিখের প্রেক্ষিতে অনেকেই নতুন ভাবে Palindrome(প্যালিনড্রোম) শব্দটির সাথে পরিচিত হয়ে গেলেন। বাংলায় একে অর্থ করলে হয় ‘দ্বিমুখী শব্দ’। যেমন আজকের তারিখ-

‌০২০২২০২০ (০ – ২ – ০ – ২ – ২ – ০ – ২ – ০)

অর্থাৎ, দুই দিক থেকে পড়লে একই তারিখ পাচ্ছেন। এবার দেখুন নিচের শব্দগুলি-

নবজীবন (ন – ব – জী – ব – ন)

নিধুরাম রাধুনি (নি – ধু – রা – ম – রা – ধু – নি)

শব্দগুলো যেদিক থেকেই পড়ুন অর্থ এই থাকে। বাংলায় দ্বিমুখী শব্দ তৈরীতে দক্ষতা দেখিয়েছিলেন দাদাঠাকুর খ্যাত শরৎচন্দ্র পন্ডিত। তার লেখা একটি কবিতার লাইন এরকম-

‘রাধা নাচে অচেনা ধারা’

কি মজার বিষয় তাই না?

গনিতেও এরকম প্যালিনড্রোমের অসংখ্য উদাহরন আছে। যেমন – ১ দিয়ে তৈরি সমসংখ্যক অঙ্কের দুটি সংখ্যার গুণফল সবসময় প্যালিনড্রোমিক হবে (১)। উদাহরণ,
১১x১১=১২১
১১১x১১১=১২৩২১
১১১১x১১১১=১২৩৪৩২১
১১১১১x১১১১১=১২৩৪৫৪৩২১

এবার চলুন কিছু ইংরেজী প্যালিনড্রোমের উদাহরণ দেখি-

mom (m – o – m)

madam (m – a – d – a – m)

গিনেস বুক আব ওয়ার্ল্ড রেকর্ড অনুযায়ী ইংরেজীতে সবচেয়ে বড় প্যালিনড্রোমিক ওয়ার্ড (২) হচ্ছে –

DETARTRATED (D – E – T – A – R – T – R – A – T – E – D)

শব্দটির অর্থ হল জৈব যৌগ ‘tartrate’ অপসারণ করা হয়েছে ।

ইংরেজ কবি জেমস্ লিনডন-এর কবিতা ‘Doppelgänger’ হল সবচেয়ে বড় পরিচিত প্যালিনড্রোমিক কবিতা (৩)। এটি অবশ্য শব্দের গঠনের দিক দিয়ে দ্বিমুখী না। বরং, চরণের বিন্যাসের দিক দিয়ে দ্বিমুখী। যেমন কবিতাটির শুরু, মধ্য ও শেষের কিছু চরণ লক্ষ্য করুন-

Entering the lonely house with my wife
I saw him for the first time
………
………
I puzzled over it, hiding alone,
Watching the woman as she neared the gate.
He came, and I saw him crouching
Night after night.
Night after night
He came, and I saw him crouching,
Watching the woman as she neared the gate.
…….
…….
I saw him for the first time,
Entering the lonely house with my wife

কবিতাটি যে চরণ দিয়ে শুরু হয়েছে শেষও হয়েছে সেই চরণ দিয়ে। চরণগুলো ঠিক মাঝখানে এসে উল্টে গিয়েছে। যেন আয়নায় নিজের প্রতিফলন।

সুতরাং প্যালিনড্রোমের ব্যবহার যদি খুব বুদ্ধিমত্তার সাথে করা যায় এবং তাতে এক ধরনের সাহিত্যিক বোধ জুড়ে দেয়া যায় তা হয়ে ওঠে চমৎকার শিল্পকর্ম। কোন লেখক যদি তার লেখায় এমনভাবে প্যালিড্রোমের ব্যবহার করেন যে তিনি যেই প্রেক্ষাপট থেকে আলোচনা করছেন তা প্রকাশ্যে বা গোপনে ফুটে ওঠে, বিষয়টা কেমন হবে বলুনতো? একটা দ্বিমুখী শব্দ তৈরী করাই তো কঠিন। তার ওপর আবার এমন শব্দাবলী খুঁজে বের করা যা কোন গভীর অর্থ ধারণ করে এবং সে শব্দাবলীর বাক্যের অর্থপূর্ণ স্থানে সন্নিবেশ করা কতটা শিল্পাচাতুর্য্য হতে পারে চিন্তা করে দেখুনতো?

বুঝাতে পারিনি বোধ হয়। চলুন একটি উদাহরণ থেকে বুঝে নেই।

আল্লাহ আজ্জা ও জাল্লা কুরআনুল কারীম-এর সুরা ইয়াসীনে সায়ত্রিশ নং আয়াত থেকে চল্লিশ নং আয়াত পর্যন্ত দিন ও রাত্রীর আবর্তণ এবং সূর্য ও চাঁদের চলনপথ ও পরিণতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। চল্লিশ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ বলছেন –

“ সূর্যের জন্য সম্ভব নয় চাঁদের নাগাল পাওয়া, আর রাতের জন্য সম্ভব নয় দিনতে অতিক্রম করা, আর প্রত্যেকই (তার) কক্ষ পথে ভেসে বেড়ায়।“

এবার চলুন আয়াতটার আরবী দেখি-

لَا الشَّمْسُ يَنبَغِي لَهَا أَن تُدْرِكَ الْقَمَرَ وَلَا اللَّيْلُ سَابِقُ النَّهَارِ ۚ وَكُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ


কি? কিছু দেখতে পেলেন? চলুন এবার আরেকটু কাছে গিয়ে দেখি। আয়াতের শেষাংশে লক্ষ্য করুন-

وَكُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ

এবার নিচের অংশটুকু দেখুন।

كُلٌّ فِي فَلَكٍ

এই অংশটুকুর অর্থ হল- ‘প্রত্যেকেই কক্ষপথে’। ভাল মত দেখলে বুঝতে পারবেন ‘ইয়া’ অক্ষরকে কেন্দ্র করে ‘ক্বাফ, ‘লাম’ ও ‘ফা’ প্যালিনড্রোমে জড়িয়ে আছে-

كُ لٌّ فِ ي فَ لَ كٍ

এবং, এর ঠিক পর পরই যে শব্দটি আছে তা হল- ইয়াসবাহু’ন। যার অর্থ ‘ভেসে বেড়ানো বা সাতার কাটা বা ঘুরা’। মজার বিষয় হল শব্দটি শুরু হয়েছে ‘ইয়া’ দিয়ে। অর্থাৎ, শেষের শব্দটির ‘ইয়া’ থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে পূর্ব শব্দত্রয়ে ‘ইয়া’-কে কেন্দ্র করে যে প্যালিনড্রোম তৈরী হয়েছে তা একটি অর্থ বহন করে (নিচের ছবি)। অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলা যেন দেখিয়ে দিচ্ছেন নক্ষত্ররাজী কিভাবে তাদের কক্ষপথে ঘুরে বেড়ায়।

প্যালিনড্রোম

কু’রআন আসার আগে আরবী সাহিত্যের রথি মহারথীরা দ্বিমুখী শব্দ তৈরী করতো। সেগুলো হত অর্থহীন কিছু শব্দ বা বাক্য। কিন্তু, কোরআনের শব্দ গাঁথুনি লক্ষ্য করুন। কি সুন্দর! সুবহানাল্লাহ।
কু’রআনীক প্যালিনড্রোমের এরকম আরেকটি উদাহরণ হল সুরা মুদ্দাসসির-এর তৃতীয় আয়াত (দ্বিতীয় ছবি)।

quranic palindrome

নিশ্চয়ই এই কু’রআন আল্লাহর পক্ষ থেকেই এসেছে। সুতরাং, চলুন আমরা কু’রআন পড়ি এবং কু’রআনের আলোয় জীবনকে আলোকিত করি।


পরিশিষ্ট:
কু’রআনুল কারীমের এরকম আরও কিছু সাহিত্যিক মাধুর্য্য সম্পর্কে জানতে পড়ুন ভাই আবদুল্লাহ আল মাসুদের ‘কোরআন বোঝার মজা’ (৪)। এ বইটি এবার বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে।

এছাড়াও ‘Linguistic miracle of Quran’ লিখে Google বা YouTube-এ অনুসন্ধান করলে পেয়ে যাবেন এ রকম অনেক মজার তথ্য। যেমন দেখুন এখানে ()।

আর যারা ইংরেজীতে বই পড়ে মজা পান তারা পড়তে পারেন Nouman Ali Khan এবং Sharif Randhawa রচিত বই – Divine Speech (৭)। অথবা, Bassam Saeh রচিত The Miraculous Language of the Quran: Evidence of Divine Origin (৮)

….
রেফারেন্স:

১. https://bit.ly/2uZFIA4
২. https://bit.ly/38ZtR3y
৩. https://bit.ly/37McW4h
৪. https://bit.ly/3b6aMP9
৫. https://bit.ly/3aXFwBE
৬. https://bit.ly/2RSyK8R
৭. https://amzn.to/3b4Lukf
৮. https://amzn.to/391I1kA

ক্যান্সারের যম

ক্যান্সারের যম
একটি ক্যান্সার কোষ ও লিম্ফোসাইটের ত্রিমাত্রিক চিত্রায়ন

একটা শহরের কথা। এই শহরে মানুষের কাছে অস্ত্র রাখার অনুমতি আছে। একদিন একটা লোক কিছু অস্ত্র নিয়ে বাইরে বেরিয়ে পড়ল। প্রথমে সে একটা গাড়ি ছিনতাই করলো এবং বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে একজন মানুষকে হত্যা করলো। তার বিরুদ্ধে এলাকার পুলিশ প্রথম স্তরের সতর্কতা জারি করলো। কিন্তু লোকটা সতর্কতা পরোয়া করে না। সে রাস্তায় বেরিয়ে প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে নিয়ে মানুষ মারতে শুরু করলো। তার বিরুদ্ধে সরাসরি তৃতীয় স্তরের সতর্কতা জারি করা হল। পুলিশ তাকে ধাওয়া করতে শুরু করলে সে গুলি করে পুলিশকে মেরে ফেললো। সাথে সাথে তার বিরুদ্ধে চার নম্বর স্তরের ইমারজেন্সি জারি হল এবং জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে দেশব্যাপী সতর্কতা জারি হল। তাকে ধরতে দেশের স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সকে দায়িত্ব দেয়া হল। এরপর উক্ত সন্ত্রাসী গ্রেনেড লাঞ্চার বের করে আক্রমণ শুরু করলে দেশের নিরাপত্তা সতর্কতা পাঁচ স্টার এ উন্নীত হল এবং তার বিরুদ্ধে আর্মি নামানো হল।

যারা ছোট বেলায় গ্র্যান্ড থেফট অটো (জিটিএ) খেলেছেন তাদের হয়তো ঘটনাটি পরিচিত মনে হতে পারে। জিটিএর ভার্চুয়াল জগতে এটা নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। কিন্তু, বিষয় সেটা না। বিষয়টি হল কোনও দেশে যখন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু হয় উক্ত দেশ কয়েক ধাপে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। প্রথমে লোকাল পুলিশ ঘটনা আমলে নেয়। তাতে কাজ না হলে স্পেশাল বাহিনী কাজে লেগে পরে। তাতেও কাজ না হলে আর্মিকেই নামিয়ে দেয়া হয়। অধিকন্তু, প্রতিটি বাহিনীর কিছু শাখা থাকে। কারও কাজ সরাসরি আক্রমণ, কারও কাজ তথ্য সংগ্রহ ও গোয়েন্দাগিরি এবং কারও কাজ গোপনে আক্রমণ।

তো আমাদের শরীরেও এরকম কয়েক ধরনের নিরাপত্তা বেষ্টনী আছে। শরীরে যখন কোনও জীবাণু প্রবেশ করে, প্রথম ধাপে এগিয়ে আসে প্রবেশপথের নিরাপত্তা প্রহরী জাতীয় কিছু কোষ। এদের মধ্যে আছে ম্যাক্রোফাজ, নিউট্রফিল ও ন্যাচারাল কিলার সেল। আবার, এই কোষগুলো যদি একা সামলাতে না পারে নেমে আসে ‘টি’ সেল নামক বিশেষ বাহিনী। ‘টি’ সেলের কয়েকটি শাখা আছে। কারও কাজ সরাসরি আক্রমণ, কারও কাজ শত্রুকে চিনতে সাহায্য করা ও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ম্যাসেজ পাঠানো এবং কারও কাজ হচ্ছে কোল্যাটারাল ড্যামেজ চেক দিয়ে রাখা।

সাহায্যকারী ‘টি’ সেল আবার হেডকোয়ার্টারে তথ্য প্রদানের মাধ্যমে বিশেষায়িত ‘বি’ সেল বাহিনীকে ডেকে পাঠাতে পারে। ‘বি’-সেল বাহিনীর কাজ হল শত্রুবাহিনীর দুর্বল জায়গা কে চিহ্নিত করে বিশেষ অস্ত্র তৈরি ও আক্রমণ। এছাড়াও ‌বি-সেল বাহিনীর একদল কোষ উক্ত দুর্বল জায়গার তথ্য ধারণ করে রাখে যেন ভবিষ্যতে একই শত্রু আবার আক্রমণ করলে ক্ষতি হওয়ার আগেই মূলোৎপাটন করা যায়।  

অপরাধী বিভিন্ন রকম হতে পারে। কারও শক্তি বেশী, কারও অর্থ বেশী, কারও আবার অস্ত্রের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ। কোন শত্রু শরীরে প্রবেশ করলে প্রথমে শরীরের বর্ডার-গার্ডরা তাকে ধরে এবং তার বিশেষ কোন চিহ্ন থাকলে খুঁজে বের করে । এরপর উক্ত চিহ্ন নিজস্ব কিছু চিহ্নের সাথে ট্যাগ করে উপরতলায় পৌঁছে দেয়। এরপর উপরতলার নিরাপত্তারক্ষীরা উক্ত চিহ্ন ও আভ্যন্তরীণ ট্যাগ দেখে শত্রুকে চিহ্নিত করে।  

এই যে নিজস্ব ট্যাগ বা সাইনের কথা বললাম একে বলে MHC অণু। ‘টি’-সেল সাধারণত তার ঝিল্লীতে থাকা টি-সেল রিসেপ্টর (TCR) নামক এক রাডার দিয়ে MHC অণুকে চিনে নেয়। শরীরে যখন কোন জীবাণু ঢুকে,  প্রথমে বর্ডার-গার্ড কোষেরা তাকে ধরে এবং তার যন্ত্রাংশ ভেঙ্গেচুরে তাকে চিহ্নিত করা যায় এরকম একটা অণু বের করে নিয়ে আসে এবং ঐ অণুটাকে MHC-নামক হাতের সাহায্যে টি-সেল-এর কাছে এগিয়ে দেয়। টি-সেলও হাত (TCR) বাড়িয়ে অণুটিকে চিনে নিয়ে বাহিনীর অন্যদের কাছে বিভিন্ন রকম সংকেত পাঠাতে থাকে যেন তারা একটিভ হয় এবং জীবাণুটিকে মারার ব্যবস্থা শুরু করে।  কোষগুলো চোখ না থাকায় তাদের হাত দিয়ে স্পর্শ করে চিনে নিতে হয়। এ কারণে বর্ডারে কোষেরাও যেমন দুই হাত বাড়ায়, ঠিক তেমনি টি-সেলও দুই-হাত বাড়িয়ে দেয়। এক হাত দিয়ে স্পর্শ করে চিনে নেয় বর্ডারের হাতকে এবং আরেক হাতে চিনে নেয় শত্রুর পরিচায়ক অণুকে।

বুঝতেই পারছেন বিভিন্ন রকম শত্রুকে চিনতে বিভিন্ন রকম হাতের প্রয়োজন হয়। মানব শরীরের যে অসংখ্য ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, প্রোটোজোয়া, কৃমি প্রবেশ করে তাদেরকে শায়েস্তা করার জন্য সুনির্দিষ্ট  পদ্ধতিতে শরীরের নিরাপত্তা-কর্মীরা কাজ চালিয়ে যায়। প্রাথমিক নিরাপত্তা প্রহরী কোষ যখন বিভিন্ন ধরনের জীবাণুকে আভ্যন্তরীণ বাহিনীর কাছে উপস্থাপন করে তখন সাধারণত সংশ্লিষ্ট জীবাণুর বহিরাবরণের কিছু অণুকে পরিচায়ক হিসেবে নিয়ে আসে।

কিন্তু, শত্রু যদি দেশের ভিতর থেকে মাথা চারা দিয়ে উঠে তাকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়? বলছিলাম টিউমার বা ক্যান্সারের কথা। টিউমার বা ক্যান্সার হল শরীরের অবস্থিত কোষের অনিয়ন্ত্রিত বিভাজন। যখন কোথাও ক্যান্সার হয় ক্যান্সার কোষগুলো কিছু বিশেষ চিহ্ন প্রকাশ করে। আমাদের শরীরের প্রতিরক্ষা বাহিনী তখন চিহ্নগুলো চিনে নিয়ে আক্রমণ ঠেকানোর চেষ্টা করে। কিন্তু, প্রতিরক্ষা বাহিনীর লক্ষ্য রাখতে হয় যেন নিজের শরীরের নিরপরাধ কোষগুলো নিরাপদে থাকে। এই করতে গিয়ে একটা সমস্যা হয়ে যায়। টিউমার যেহেতু নিজের দেহের কোষ থেকেই হচ্ছে প্রতিরক্ষা বাহিনী অনেক সময় টিউমার কোষকে নিজের কোষ মনে করে এড়িয়ে যায়। ফলে টিউমার লুকিয়ে লুকিয়ে মহীরুহে পরিণত হয়।   

সাধারণত টি-সেল বাহিনী নির্দিষ্ট চিহ্নের প্রেক্ষিতে নির্দিষ্ট টিউমারকে আক্রমণ করতে পারে। যেমন: স্তন ক্যান্সারের সময় নির্দিষ্ট কিছু চিহ্ন বা মার্কার ক্যান্সার কোষের বহিরাবরণে প্রকাশ পায়। স্তন ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধ করতে যে টি-সেল বাহিনী তৈরি হয় তা কেবল উক্ত ক্যান্সার কোষের বিপরীতেই কাজ করতে পারে। তবে সম্প্রতি একদল গবেষক ক্যান্সারের বিরুদ্ধে শরীরের নিরাপত্তা (ইমিউনিটি) নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আবিষ্কার করে ফেললেন ‘টি-সেল’-এর এমন কিছু হাত (TCR) যা সব ধরনের ক্যান্সার কোষকে চিনতে পারে। কিন্তু, কিভাবে? তারা আবিষ্কার করলেন যে প্রতিটি ক্যান্সার কোষ MR1 নামক MHC-জাতীয় এক প্রকার অণু তাদের বহিরাবরণে বাড়িয়ে দেয় যা MHC-এর মত ক্যান্সারের আভ্যন্তরীণ কোন অণুকে পরিচায়ক হিসেবে উপস্থাপন করে।  এই MR1-সংশ্লিষ্ট অণুকে নতুন TCR নির্ণয় করতে পারে। আশার বিষয় হল এই কাজ করতে গিয়ে টি-সেলগুলো শরীরের সাধারণ কোষের কোন ক্ষতি সাধন করে না।

যদিও গবেষণাটি প্রাথমিক পর্যায়ে তথাপি আশার কথা হল এটি প্যান-ক্যান্সার চিকিৎসা আবিষ্কারের সম্ভাবনার খুলে দিয়েছে। প্যান-ক্যান্সার বলতে বুঝচ্ছি এমন একটি চিকিৎসা যা সব ধরনের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারবে, তা-ও আবার শরীরের অন্যান্য কোষের কোন প্রকার ক্ষতি না করেই। আমরা সবাই জানি, ক্যান্সারের চিকিৎসায় এখন যে কেমোথেরাপি ব্যবহার হয় তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনেক বেশী। সে হিসেবে এটি আমাদের জন্য বড়ই আশা জাগানিয়া সংবাদ।

কে জানে হয়ত খুব শীঘ্রই আমরা ‘ইনটেলিজেন্ট ডিজাইন’ ব্যবহার করে ক্যান্সারের যম আবিষ্কার করতে যাচ্ছি। ইন শা আল্লাহ।


বিবলিওগ্রাফি:

  • Crowther MD, Dolton G, Legut M, Caillaud ME, Lloyd A, Attaf M, et al. Genome-wide CRISPR-Cas9 screening reveals ubiquitous T cell cancer targeting via the monomorphic MHC class I-related protein MR1. Nat Immunol. 2020;

বিজ্ঞানের অন্তঃর্নিহিত সীমাবদ্ধতা

বিজ্ঞানের একটি অন্তঃর্নিহিত সীমাবদ্ধতা হল ‘Problem of Induction’। বিজ্ঞান কাজ করে অনুমিতি (Assumptions)-এর উপর ভিত্তি করে। কিন্তু, বিজ্ঞানবাদীরা বিজ্ঞান যে ‘অনুমিতি’ নির্ভর তা সুকৌশলে এড়িয়ে যায়।

একটু খুলে বলি। ধরুন, আপনি পরীক্ষা করে দেখতে চান কাকের রং কি। যেই ভাবা সেই কাজ। আপনি ১০০০ হাজার কাক র‍্যানডমলি বাছাই করে পর্যবেক্ষণ করলেন। আপনি দেখলেন কাকের রং কালো। আপনি সিদ্ধান্তে আসলেন যে কাকের রং কালো। কিন্তু, ‘কাকের রং কালো’ এই সিদ্ধান্তটি কি ১০০% সত্য (Fact)। উত্তর হচ্ছে: না। কারণ, আপনার বন্ধু যদি কয়েকবছর পর ঘটনাক্রমে একটি সাদা কাক আবিস্কার করে ফেলে তাহলে ‘কাকের রং কালো’ সিদ্ধান্তটি প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

বিজ্ঞানীদের কাজ হল পর্যবেক্ষনলব্ধ তথ্য উপাত্তের উপর ভিত্তি করে একটি তত্ত্ব (Theory) দাড় করানো। উক্ত তত্ত্বের কাজ দুটো: একটি হল বর্তমান তথ্য উপাত্তের একটি কার্যকরী ব্যাখ্যা দেয়া এবং দ্বিতীয়টি হল উক্ত তত্ত্বের আলোকে প্রেডিকশন করা যে মহাবিশ্বের অদেখা জায়গাগুলো ‘যদি একই রকমের নিয়ম মেনে থাকে’ তাহলে একই রকম তথ্য পাবার কথা।

উক্ত ‘একই রকমের নিয়ম মেনে থাকে” বাক্যটি হচ্ছে আমাদের অনুমিতি যা হয়ত পরবর্তী পর্যবেক্ষণে সত্য নাও হতে পারে।

সুতরাং মহাবিশ্বের (মানে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীবজগৎ সহ) কোন অংশ আমরা কিভাবে পর্যবেক্ষণ করছি এবং কতটুকু পর্যবেক্ষণ করতে পেরেছি, আমাদের প্রকল্প (Hypothesis) এবং তত্ত্ব তার উপর নির্ভর করে।

যেমন টলেমীর জিওসেন্ট্রিক মডেল (তথা পৃথিবীর চারপাশে সূর্য ঘুরে) ততক্ষণ পর্যন্ত কার্যকর ছিলো যতক্ষন পর্যবেক্ষণলব্ধ তথ্য উক্ত মডেল দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাচ্ছিল। কিন্তু, যখনই নতুন পর্যবেক্ষণলব্ধ তথ্য উক্ত মডেল দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাচ্ছিল না তখন কোপারনিকাসের হেলিওসেন্ট্রিক মডেল (তথা সূর্যের চারপাশে পৃথিবী ঘুরে) এসে জায়গা করে নিলো।

আরেকটা মজার বিষয় হল হাতে থাকা তথ্যকে অনেক সময় একাধিক মডেল বা প্রকল্প দিয়ে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। কিন্তু, এর মধ্যে কোন প্রকল্পটি গ্রহন করা হবে তা নির্ভর করছে উক্ত প্রকল্পটির ‘ব্যাখ্যা শক্তি’ (explanatory power) -এর উপর। যে প্রকল্পটি আহরিত তথ্যের সবচেয়ে ভাল ব্যাখ্যা দিতে পারবে এবং যেটি তুলনামূলক সহজ, রীতি হলো সেটি গৃহীত হবে।

বিজ্ঞানী মহলে Occam’s Razor বলে একটি কথা আছে। যার বক্তব্য হচ্ছে- যখন কোন পর্যবেক্ষণ ব্যাখ্যা করতে একাধিক প্রতিযোগী প্রকল্প দাড় করানো হয় তখন সে প্রকল্পটি গ্রহন করতে হবে যেটি সর্বনিম্ন সংখ্যক ‘অনুমিতি’ নির্ভর তথা ‘সহজ’। তার মানে এই নয় যে অন্যান্য প্রকল্প ভুল। বরং, সংশ্লিষ্ট প্রকল্পটি এজন্য গ্রহন করা হচ্ছে যে এটি বৈজ্ঞানিকভাব তুলনামূলক সহজে পরীক্ষা (test) করা যাবে।

সুতরাং, দেখা যাচ্ছে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি কখনও শতভাগ ও চূড়ান্ত সত্যের নিকটে পৌছতে পারে না। কারণ, বিজ্ঞান নির্ভর করে মানুষের ‘পর্যবেক্ষণ’ সীমার উপর।

‘বিবর্তনবাদ’ ফসিল এভিডেন্স ও স্পিসিস-এর জিওগ্রাফিক লোকেশনের একটা সুন্দর ব্যাখ্যা দেয়। কিন্তু, একটা ব্যাকটেরিয়ার ফ্ল্যাজেলা কিভাবে ‘বিবর্তনের’ মাধ্যমে তৈরী হল তা বিজ্ঞানমহলে প্রচলিত কোন বিবর্তনের ম্যাকানিজম দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না। সুতরাং, যারা বিবর্তনবাদকে শতভাগ সত্য (Fact) বলে দাবী করে, তারা তা করে বিশ্বাসের ভিত্তিতে। এই বিশ্বাস যে, বিজ্ঞান মানুষকে সবসময় শতভাগ ও চূড়ান্ত সত্যের দিকে নিয়ে যায়। আর, যারা বিবর্তনবাদকে শুধমাত্র একটি বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব হিসেবে বিবেচনা করে, তারা বিনয়ের সাথেই মেনে নেয় যে নতুন এমন অনেক পর্যবেক্ষন থাকতে পারে যা ‘বিবর্তনবাদ’ দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না।

লক্ষ্যণীয় ‘Observation’ তথা পর্যবেক্ষণ হচ্ছে জ্ঞান আহরনের একটি মাধ্যম মাত্র। মানুষের জ্ঞান অর্জনের আরও অনেক মাধ্যম আছে । ‘Epistemology’ তথা জ্ঞানতত্ত্ব হল দর্শনের একটি শাখা যা মানুষের জ্ঞান আহরনের মাধ্যম এবং মানুষের বিশ্বাস-এর ন্যায্যতা প্রতিপাদন (Justification) নিয়ে আলোচনা করে।

শেষ করছি একটি প্রশ্ন রেখে। পাঠক, ভেবে দেখুনতো মানুষের জ্ঞান আহরণের আর কি কি মাধ্যম থাকতে পারে?

Bibliography:

  1. https://www.forbes.com/sites/startswithabang/2017/11/22/scientific-proof-is-a-myth/#5c0abc0e2fb1
  2. https://en.wikipedia.org/wiki/Geocentric_model
  3. https://en.wikipedia.org/wiki/Heliocentrism
  4. https://en.wikipedia.org/wiki/Occam%27s_razor
  5. https://plato.stanford.edu/entries/epistemology/

ফ্রি উইল / ফ্রি ওন্ট

গতদিন ArcGIS দিয়ে স্প্যাটিয়াল ম্যাপিং শিখলাম। নতুন কিছু জানার মধ্যে অসম্ভব মজা। কিন্তু দীর্ঘদিন একই জিনিস নিয়ে পড়ে থাকলে পানসে হয়ে যায়।

মজার বিষয় হল আমাদের ব্রেইনও সবসময় নতুনত্ব খুঁজে নেয়ার জন্য টিউনড। আমাদের চোখের এক ধরনের মুভমেন্ট আছে যাকে বলে স্যাক্কাডস। মূল কথা হল চোখ কোন জায়গায় স্থির থাকলেও খুবই ক্ষুদ্র পরিসরে স্ক্যান করতে থাকে। অর্থাৎ সে এক জায়গায় স্থির থাকে না, সবসময় একটা অসিলেটরী মুভমেন্ট হয়।

এটা যে শুধুমাত্র চোখের ক্ষেত্রে হয় তা নায়। ইন্টারনেট এডিকশন বা পর্ণএডিকশন নামক উত্তরাধুনিক রোগেরও মূল উৎস হচ্ছে, নতুনত্বের প্রতি মস্তিস্কের অদম্য উৎসাহ। এই যে ফেসবুকে ঘন্টার পর ঘন্টা স্ক্রল করছেন সময় কোন দিক যাচ্ছে টের পাচ্ছেন না, তার একটা কারণও সম্ভবত ব্রেইনের উক্ত টিউনিং।

মজার বিষয় হল মানুষের নার্ভাস সিস্টেমের এই ধরনের আরও কিছু উদাহরণ পাওয়া যায়। যেমন মাংসপেশীর সংকোচন প্রসারণ নিয়ন্ত্রনের জন্য দুই ধরনের নিউরণ দিয়ে ব্রেইন ও পেশীতন্তু সংযুক্ত থাকে- আপার মোটর নিউরন এবং লওয়ার মোটর নিউরন। লওয়ার মোটর নিউরনের কাজ হল কন্টিনিউয়াস ইমপালস তৈরী করতে থাকা যেন পেশীগুলো সংকুচিত থাকে। আপার মোটর নিউরনের কাজ হলো লওয়ার মোটর নিউরনকে বিভিন্ন মাত্রায় ইনহিবিট করে মাংসপেশীর মুভমেন্ট নিয়ন্ত্রণ করা।

ফ্রি উইল / ফ্রি ওন্ট

Will Power

আমাদের স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি তথা ফ্রি-উইল-এর সাথে এর একটা সংযোগ চিন্তা করা যায়। ম্যাটেরিয়ালিস্টদের মতে সব কিছু ডেটারমিনিস্টিক। মানুষের কোন ফ্রি উইল নাই। তারা বেঞ্জামিন লিবেট-এর একটা এক্সপেরিমেন্টকে উদাহরণ হিসেবে টানে যেখানে তিনি দেখিয়েছেন যে, আমরা যখন আমাদের আঙ্গুল নাড়াতে যাই তখন আমাদের চিন্তার আগেই মোটরকর্টেক্স থেকে সংশ্লিষ্ট নিউরনাল সিগনাল তৈর হয়ে যায়। কিন্তু, বস্তুবাদীরা যেটি সঙ্গোপনে এরিয়ে যায় তা হল উক্ত বেঞ্জামিন লিবেট-ই দেখিয়েছেন যে সিগনাল তৈরী আমাদের সবাকনসাশে হলেও, উক্ত সিগনাল হাতে পৌছার আগে থামিয়ে দেয়ার কাজটা আমরা কনসাস উইল দিয়ে করতে পারি।

অর্থাৎ আমাদের ফ্রি-উইল (Free Will) আসলে ফি ফ্রি-ওন্ট (Free Wont’)।

গুনাহ করার ইমপালস মানুষের মধ্যে সহজাত। কিন্তু, উক্ত ইমপালসকে কন্ট্রোল করা হল মানুষের স্বাধীন ইচ্ছাশক্তির চর্চা। নইলে, গুনাহতে গা ভাসিয়ে দেয়া আমাদের ও পশুর মধ্যে পার্থক্য থাকল কোথায়?


Bibliography:

1. Purves, D. Neuroscience (Textbook)
2. Libet, B. Mind Time: The Temporal Factor in Consciousness

সার্বজনীন সম্ভাব্যতার সীমা

সম্ভাব্যতা বা প্রবেবিলিটি শব্দটির সাথে আমরা সবাই পরিচিত। সাধারনের ভাষায় সম্ভাব্যতা বলতে বুঝায়- আমি কোন একটি কাজ করব কি করব না, কোথাও যাবো কি যাবো না, এ ধরনের অনিশ্চয়তামূলক ভাব প্রকাশ। গানিতিক ভাষায় সম্ভাব্যতার অর্থ কাছাকাছি হলেও এটাকে সুনির্দিষ্ট সাংকেতিক ভাষায় প্রকাশ করা হয়। চলুন সম্ভাব্যতার একেবারে সরল কিছু উদাহরণ থেকে এ সম্পর্কে ধারণা নেই। 

সম্ভাব্যতা:

একটি লুডুর গুটি কোটে এলোপাতাড়ী ভাবে ফেললে যে কোন একটি সংখ্যা পড়ার সম্ভাবনা = ১/৬

দুটি গুটি লুডুর কোটে এলোপাতাড়ী ভাবে ফেললে যে কোন দুটি সংখ্যা একত্রে পড়ার সম্ভাবনা = ১/৬ * ১/৬ = ১/৩৬ = ১/৬^২

তিনটি গুটি কোটে এলোপাতাড়ী ভাবে ফেললে যে কোন তিনটি সংখ্যা একত্রে পড়ার সম্ভাবনা = ১/৬ * ১/৬ * ১/৬ = ১/৩৯৬ = ১/৬^৩

তিনটি গুটি ফেললে একটিতে ‘১’, দ্বিতীয়টিতে ‘২’ এবং তৃতীয়টিতে ‘৩’ পড়ার সম্ভাব্যতা = ১/৩৯৬ = ১/৬^৩

একইভাবে, তিনটি গুটি ফেললে একটিতে ‘২’, দ্বিতীয়টিতে ‘৩’ এবং তৃতীয়টিতে ‘৬’ পড়ার সম্ভাব্যতাও = ১/৩৯৬ = ১/৬^৩

অর্থাৎ, আপনি তিনটি ছক্কার সংখ্যাকে নির্দিষ্টভাবে বলে দিলেও সম্ভাব্না একই এবং তা ১/৩৯৬ তথা ১/৬^৩।

লক্ষ্যনীয় এখানে ‘^‌’ চিহ্ন দিয়ে ‘টু দি পাওয়ার’ বুঝানো হচ্ছে। এবং মজার বিষয় হল আপনি ছক্কার সংখ্যা এভাবে ‘n’ সংখ্যক বাড়াতে থাকেন, তাহলে যে কোন একটি সংখ্যার পড়ার সম্ভাব্যতা হবে ১/৬^n।  

লটারীর টিকিট:

ধরুন, ১০ জন ব্যক্তির একটি গ্রুপ তৈরী করার হয়েছে এবং ১ জনকে উক্ত গ্রুপের লিডার হিসেবে মনোনীত করা হবে। এ প্রেক্ষিতে প্রতিটি ব্যক্তিকে ১ থেকে ৯ পর্যন্ত ৯ টি অংক এবং একজনকে ‘০’ দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে, অর্থাৎ মোট দশটি অংক। এবার, ১০টি কাগজে নাম্বারগুলো লিখে লটারী করা হলো এবং একটি কাগজ উঠানো হল। তাহলে, যে কোন একটি সংখ্যা আসার সম্ভাবনা কত? উত্তর: ১/১০।

এরকম যদি ১০০ জন ব্যক্তির মধ্যে লটারী করা হয়, যে কোন একজনের ওঠার সম্ভাবনা = ১/১০ *১/১০ = ১/১০০। এক্ষেত্রে ‘০১’ চিহ্নিত ব্যক্তির কাগজটি ওঠার সম্ভাব্যতা যা ‘৫৬’ নম্বর ব্যক্তিটির কাগজ ওঠার সম্ভাব্যতাও তাই =১/১০০।

মনে করুন, আপনি গুলিস্তান থেকে একটি লটারীর টিকিট কিনেছেন এই আশায় যে আপনি ১,০০,০০,০০০ (এক কোটি) টাকা পাবেন। ধরুন, লটারীর মধ্যে অঙ্কিত সংখ্যাটিতে মোটি দশটি নাম্বার আছে। যেমন: ১৩৪৫৭৮৯৬০২ ।  প্রশ্ন হলো যদি লটারী সম্পন্ন করার দিন কোন কারচুপি না হয় এবং সম্পূর্ণ এলোপাতাড়ীভাবেই যে কোন একটি সংখ্যা তোলার সম্ভাবনা থাকে আপনার এই নাম্বারটি লটারীতে ওঠার সম্ভাবনা কত?

উত্তর: ১/১০ * ১/১০ * ১/১০* ১/১০* ১/১০* ১/১০* ১/১০* ১/১০* ১/১০* ১/১০ এর মধ্যে একবার

= অর্থাৎ, ১/১০০,০০,০০,০০০-এর মধ্যে একবার

= অর্থাৎ, ১০০ কোটি বারের মধ্যে একবার।

এই সংখ্যাটাকে যদি আমরা পাওয়ারে প্রকাশ করি= ১০^১০।  সুতরাং,আপনার লটারীতে জেতার সম্ভবনা ১০^১০-মধ্যে একবার।

মজার বিষয় হলো,আপনার সাথে অন্য যে কয়জন কিনেছে তাদেরও জেতার সম্ভবনা একই।

প্রোবেবিলিটি রিসোর্স:

উপকরণ

এখন, ধরুন, আপনি নাছোড় বান্দা আপনার লটারীতে জিততেই হবে, সেক্ষেত্রে আপনি কি করবেন? আপনাকে একাধিক লটারী কিনতে হবে। আপনি যদি একশটি লটারী সংগ্রহ করেন আপনার সম্ভব্যতা বেড়ে দাড়াবে-

= ১/১০^১০ + ১/১০^১০ +……+ ১/১০^১০ (এভাবে ১০০টি ১/১০^১০)

= ১০০/ ১০^১০

= ১/ ১০^৮

অর্থাৎ, আপনার জেতার সম্ভাবনা বেড়ে দাড়ালো ১ কোটি বাড়ে একবার। কিন্তু এখনও সংখ্যাটা অনেক বড়। তাই আপনি ভাবলেন যে আপনি আপনার যেতার সম্ভাবনা আরও বাড়াবেন। এরকম করতে করতে আপনি যদি নিশ্চিতভাবেই জয়ী হতে চান আপনাকে ১০০ কোটির লটারীর কপিই কিনতে হবে। কেননা সেক্ষেত্রে আপনার জেতার সম্ভাব্যতা দাড়াবে =  ১০^১০ / ১০^১০ = ১।

লটারীর দাম এক টাকা করে হলেও আপনার কিনতে খরচ পড়বে ১০০ কোটি টাকা। ১০০ কোটি টাকা খরচ করে ১ কোটি টাকা জিততে চেষ্টা করার কোন বোকা লোক কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না।

এবার চিত্রটি আপনি একটু ভিন্ন ভাবে চিন্তা করুন। ধরুন, আপনি অগাধ টাকার মালিক। আপনি ১ কোটি টাকা কাউকে লটারীর মাধ্যমে দিতে চান। আপনি ১০০ কোটি লটারীর টিকিট ছাপিয়েছেন বিলি করার ইচ্ছায়। আপনি নিশ্চিত হতে চান যে একজন ব্যক্তির কাছে টাকাটা পৌছুবেই। কিন্তু, কিভাবে নিশ্চিত হবেন? উত্তর: আপনাকে ১০০ কোটি মানুষের কাছেই টিকিট পৌছানো নিশ্চিত করতে হবে। কেননা সেক্ষেত্রে যে কোন একজনের হাতে প্রত্যাশিত টিকিটটি পৌছবেই। ধরুণ, আপনি সব টিকিট বিলি করেছেন কিন্তু একটি বাকি আছে। সেক্ষেত্রে-ও সম্ভবনা থেকে যাবে যে উক্ত বাকী টিকিটই বিজয়ী হবে।

এই যে একশ কোটি লটারীর টিকিট বা একশ কোটি টিকিট ক্রেতা এদেরকে গানিতিক পরিভাষায় বলা হয় ‘প্রোবেবিলিটি রিসোর্স’। অর্থাৎ, আপনি কোন একটি এলোপাতড়ী প্রক্রিয়ায় একটি ঘটনা ঘটার সম্ভবনা বাড়াতে পারবেন সংশ্লিস্ট প্রোবেবিলিটি রিসোর্স বাড়ানোর মাধ্যমে। যেমনটা আমরা উপরে দেখেছি।

সময়

কিন্তু, আপনার অনেক বয়স হয়ে গেছে। আপনার হাতে সময় খুব কম। ধরে নিলাম, আপনি চান একশ কোটি লটারী নিজ হাতে বিলি করতে এবং আপনি কম্পিউটারে বসে এটি করতে চাচ্ছেন। এখন আপনি কোন বিশ্রাম না নিয়ে যদি প্রতি মিনিটে একটি করে বিলি করেন সময় লাগবে,

= ১০০ কোটি মিনিট = প্রায় ১ কোটি ৬৬ লক্ষ ঘন্টা = প্রায় ৬ লক্ষ ৯৪ হাজার দিন = প্রায় ১ হাজার ৯০২ বছর।

আপনি প্রতি সেকেন্ডে একটি বিলি করলে সময় লাগবে,

= ১০০ কোটি সেকেন্ড = প্রায় ১ কোটি ৬৬ লক্ষ মিনিট  = প্রায় ২ লক্ষ ৭৭ হাজার ঘন্টা = প্রায় ১১ হাজার ৫৭৪ দিন  = ৩১ বছর

আপনি প্রতি সেকেণ্ড ১০০টি বিলি করলে সময় লাগবে,

= ১ কোটি সেকেন্ড =  প্রায় ১ লক্ষ ৬৬ হাজার মিনিট = প্রায় ২ হাজার ৭৭৭ ঘন্টা = প্রায় ১১৫ দিন = ০.৩১ বছর প্রায়

অর্থাৎ, সময়ও একটি প্রবেবিলিটি রিসোর্স।

সুতরাং, প্রোবেবিলিটি রিসোর্স তিন ধরনের: উপকরনের সংখ্যা, ঘটনাটি ঘটার জন্য প্রয়োজনীয় সময় (ইভেন্ট টাইম) এবং এভেইলেবল সময়।

সার্বজনিন সম্ভাব্যতার সীমা

এতক্ষণ আমরা দেখলাম সম্ভাব্যতার রিসোর্স কি কি ধরনের হতে পারে। এবার চলুন হিসেব করা যাক সার্বজনিন সম্ভাব্যতার সীমা।

প্রথমে জেনে নিই সার্বজনিন সম্ভাব্যতার সীমা বলতে কি বুঝায়? সার্বজনিন সম্ভাব্যতার সীমা বলতে বুঝায় কোন ঘটনা (যেমন: কোন রাসায়নিক বিক্রিয়া) ঘটার জন্য যে সকল প্রোবেবিলিটি রিসোর্স আছে গানিতিক ভাবে তা সর্বচ্চো কত পর্যন্ত হতে পারে। চলুন উপরের লুডুর গুটির বিষয়টি নিয়ে নিয়ে চিন্তা করি। মনে করুন আপনি একটি গেমস খেলছেন যেখানে আপনাকে বলা হল: আপনাকে লুডুর গুটি ফেলতে হবে এবং যদি ছয়টি ছয় একসাথে পড়ে অথবা একই ক্রমে পড়ে তাহলে আপনি একটি গিফট পাবেন। ধরি, আপনাকে লুডুর গুটির সংখ্যা বেঁধে দেয়া হয়নি এবং আপনাকে যত সময় ইচ্ছে গুটি ফেলার অধিকার দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে আপনি দুইভাবে ছয়টি ছয় এক সাথে বা এক ক্রমে ফেলতে পারবেন।

  • প্রথমত আপনি যদি ‌৬^৬ তথা ৪৬,৬৫৬-টি গুটি একসাথে ফেলেন তাহলে এর মধ্যে নিশ্চিত ভাবেই ছয়টি ছয় পাবেন।
  • আপনার যদি একবার ছয় ফেলতে ১ মিনিট সময় লাগে তাহলে আপনি ৪৬,৬৫৬ মিনিট চেষ্টা করলে একবার অবশ্যই ক্রমান্বয়ে ছয়টি ছয় ফেলতে পারবেন।

এখানে ৪৬,৬৫৬-টি গুটি বা ৪৬,৬৫৬ মিনিট হলো প্রবেবিলিটি রিসোর্স।

এখন ধরুন আপনি অতিআনবিক পর্যায়ে একটি ইন্টার‍্যাকশন ঘটার সম্ভাব্যতা হিসেব করছেন। মনে করি ইন্টার‍্যাকশনটি ঘটে সবচেয়ে কম সময়ে। ইন্টার‍্যাকশনটি হবে দুটো পার্টিকেলের (দুটো প্রোটোন বা দুটো নিউট্রন) মধ্যে। তাহলে উক্ত ঘটনাটি ঘটার জন্য প্রয়োজনীয় প্রোবেবিলিটি রিসোর্স কি? এক্ষেত্রে এটির প্রবেবিলিটি রিসোর্স হল-

  • কোন ঘটনা ঘটার সম্ভাব্য সর্বনিম্ন সময় তথা প্ল্যাংক সময় ১০^-৪৩ সেকেন্ড।
  • মহাবিশ্বের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত অতিবাহিত কাল – ১০^১৭ সেকেন্ড
  • দৃশ্যমান মহাবিশ্বের হিসেবকৃত পার্টিকেল সংখ্যা – ১০^৮০

সুতরাং সার্বজনিন সম্ভব্যতার সীমা = ১০^৪৩ * ১০^১৭ * ১০^৮০= ১০^(৪৩+১৭+৮০) = ১০^১৪০।

বিজ্ঞানী David Abel-এর ভাষায় এটি হলো কোয়ান্টাম ওয়ার্ল্ডের কোন ইভেন্ট-এর ইউনিভার্সাল প্লসিবিলিটি ম্যাট্রিক্স (১)। অর্থাৎ, কোন ঘটনা ঘটার সম্ভাব্যতা যদি  ১০^১৪০-এর মধ্যে একবার হয় এবং উক্ত ঘটনা ঘটার জন্য  মহাবিশ্বের সকল পার্টিকেল ও সকল সময় ব্যবহার করার সুযোগ দেয়া হয়, তাহলে ঘটনাটি একবার হলেও ঘটবে। কিন্তু, কোন ঘটনা ঘটার সম্ভাব্যতা যদি ১/ ১০^১৪১ হয়,  তাহলে মহাবিশ্বের সকল পার্টিকেল ও সকল সময় ব্যবহার করেও উক্ত ঘটনা এলোপাতাড়ি প্রক্রিয়ায় একবার ঘটবে না।

তাহলে পাঠক একবার চিন্তা করে বলুনতো, কোন ঘটনা যদি এলোপাতাড়ি ভাবে একবার হবার সম্ভাবনা ১০^১৬৪ হয় মহাবিশ্বের ইতিহাসে উক্ত ঘটনা এলোপাতাড়ি ভাবে ঘটার আদৌ কি কোন সম্ভাবনা আছে?

অথচ, এর চেয়ে অনেক বেশী অসম্ভাব্য ঘটনা আদিম পৃথিবীতে এলোপাতাড়ি প্রক্রিয়ায় ঘটেছে বলে দাবী করা হচ্ছে। সে সম্পর্কে আমরা জানবো আরেকটি পর্বে। ইন শা আল্লাহ।

রেফারেন্স:

১) Abel DL. The universal plausibility metric (UPM) & principle (UPP). Theor Biol Med Model. 2009;6(1):1–10.

সৃষ্টিতে স্রষ্টার নিদর্শন (৬): মশা যেভাবে মানুষের গন্ধ পায়

সৃষ্টিতে স্রষ্টার নিদর্শন (৬): মশা যেভাবে মানুষের গন্ধ পায়

হাও মাও খাও, মানুষের গন্ধ পাও।

বাচ্চাদের ভূতের গল্পে ভূত মানুষের গন্ধ দিয়ে মানুষকে চিনে নেয়। তবে, বাস্তবে ভূত না থাকলেও একটা ক্ষুদ্র প্রাণী মানুষকে খুঁজে বের করে তার গন্ধ দিয়ে। আর তা হল আমাদের অতি পরিচিত ‘মশা’।

আমাদের প্রতিদিনের সঙ্গী মশা সুযোগ পেলেই ত্বকে বসে শুঁড়টা প্রবেশ করিয়ে আরাম করে রক্ত সেবন করতে থাকে। কখনও কি ভেবে দেখেছেন মশা কিভাবে আমাদের খুঁজে পায়? কিভাবে সে বুঝে যে এই প্রাণীর ত্বকে বসতে হবে এবং ইঞ্জেকশনের মত শুঁড়টা গেঁথে দিতে হবে?

মশার মাথা ও সবুজ রঙ্গের গন্ধগ্রহনকারী স্নায়ু

মশার মাথা ও সবুজ রঙ্গের গন্ধগ্রহনকারী স্নায়ু, উৎস

মশা মূলত তার লক্ষ্যবস্তুকে খুঁজে বের করে উক্ত লক্ষ্যবস্তু নিঃসৃত গন্ধ শুঁকে। বাতাসে ভেসে বেড়ানো কার্বন ডাই-অক্সাইড, পরিবেশের তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা, মানুষের পায়ের গন্ধ, এবং ল্যাকটিক এসিড হল মশার মূল আকর্ষণ। মানুষ প্রতিদিন যে শত শত গন্ধকণা (odorous molecules) পরিবেশে ত্যাগ করে তার একটা অংশ মশা খুঁজে নেয়। মশা এই কাজটা করে তার অ্যান্টেনা ও মুখে অবস্থিত প্রায় ১০০ বা তার বেশী (প্রজাতিভেদে) রিসেপটর দিয়ে। এই রিসেপ্টরগুলোকে বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলে ওডোরেন্ট রিসেপ্টর (OR)। (১)

ওডোরেন্ট রিসেপ্টর কিভাবে কাজ করে? সহজ ভাষায় রিসেপটরগুলোর কাজ হল তালা ও চাবির মত। একটা তালা যেমন সুনির্দিষ্ট গঠনের চাবি ছাড়া খুলে না। ঠিক একইভাবে একটি নির্দিষ্ট ওডোরেন্ট রিসেপ্টর একটি সুনির্দিষ্ট রাসায়নিক পদার্থের সাথে বন্ধন তৈরী করলেই কেবল এক্টিভেট হয়। এই যেমন এডিস মশার কথা চিন্তা করুন। এডিস মশার বিশেষত্ব হল মানুষকে কামড় দেয়া। এটি মানুব নিঃসৃত গন্ধকণাগুলোর মধ্যে sulcaton নামক একটি গন্ধকণার প্রতি সুনির্দিষ্টভাবে আকৃষ্ট হয়। এই গন্ধকণাটি মানবদেহ থেকে অনেক বেশী পরিমানে বের হয় (২)। ফলে উক্ত গন্ধকণাকে চিনে নিয়ে এডিস মশা মানব ত্বকে এসে কামড় বসিয়ে দেয়।

মশার গন্ধ চেনার প্রক্রিয়া

মশার গন্ধ চেনার প্রক্রিয়া, উৎস

একটি রাসায়নিক কণা যখন ওডোরেন্ট রিসেপ্টরের সাথে পরিপূরকভাবে লেগে যায়, তখন তৎসংশ্লিষ্ট কোষে বিশেষ তড়িৎরাসায়নিক প্রক্রিয়া শুরু হয় যার মাধ্যমে প্রাণীটির স্নায়ুতন্ত্রে সিগন্যাল পৌছে (৩)। তবে ওডোরেন্ট রিসেপ্টরের ঠিক মত কাজ করার জন্য রিসেপ্টরের সাথে ওডোরেন্ট কো-রিসেপ্টর (Orco) নামক আর এক ধরনের সুনির্দিষ্ট প্রোটিন আছে যা মশার ‘নাক’-এ নির্দিষ্ট পরিমানে ও স্থানে থাকতে হয়। সিগন্যাল তৈরী হওয়ার মাধ্যমে মশা তার নিকটবর্তী পরিবেশ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে।

মজার বিষয় হল আমরা মশা তাড়াতে যে ওষুধগুলো ব্যবহার করি এগুলো কাজ করে মশার গন্ধ নেয়ার ক্ষমতাকে বন্ধ করে দেয়ার মাধ্যমে। এই প্রেক্ষিতে মশার কবল থেকে রক্ষা পেতে নতুন এবং আরও কার্যকরী উপায় বের করতে চলছে বিস্তর গবেষণা (৪)।

সম্মানিত পাঠক, একবার চিন্তা করে দেখুনতো মশার মধ্যে মানুষের গন্ধ নির্ণয় করার ক্ষমতা কিভাবে আসল? এটা কি কোন এলোপাতাড়ি প্রক্রিয়ায় (random process) একা একাই আসা সম্ভব? নাকি এটা কোন বুদ্ধিমান স্বত্তার কাজ যে জানে যে গন্ধে কি কি অণু আছে, যে জানে যে কিভাবে উক্ত অণুর পরিপূরক গঠনযুক্ত রিসেপ্টর তৈরী হতে হবে, যে জানে যে কিভাবে উক্ত রিসেপ্টরের মাধ্যমে স্নায়ুতন্ত্রে তড়িৎরাসায়নিক প্রক্রিয়ার সূচনা করতে হবে, যে জানে যে উক্ত স্নায়ুতন্ত্র কিভাবে কাজ করে?

“নিশ্চয় মানুষ তার রবের প্রতি বড়ই অকৃতজ্ঞ। আর সে নিজেই (নিজের কাজ-কর্মের মাধ্যমে) এ বিষয়ের সাক্ষী। আর ধন-সম্পদের প্রতি অবশ্যই সে খুবই আসক্ত।” [সূরা আদিয়াত ১০০, আয়াত ৬-৮]

রেফারেন্স:

১. Shen HH. How do mosquitoes smell us? The answers could help eradicate disease. Proc Natl Acad Sci U S A. 2017;114(9):2096–8.

২. McBride CS, Baier F, Omondi AB, Spitzer SA, Lutomiah J, Sang R, et al. Evolution of mosquito preference for humans linked to an odorant receptor. Nature. 2014;515(7526):222–7.

৩. Ha TS, Smith DP. Insect Odorant Receptors: Channeling Scent. Cell. 2008;133(5):761–3.

৪. Potter CJ. Stop the biting: Targeting a mosquito’s sense of smell. Cell . 2014;156(5):878–81.