Category: প্রবন্ধ/Article

  • ডাক্তারদের পড়ালেখা, প্রেক্ষাপট: যুক্তরাস্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য এবং অস্ট্রেলিয়া

    আপনি কি জানেন- যুক্তরাস্ট্রে এম,বি,বি,এস বলে কোন ডিগ্রী নেই? যুক্তরাজ্যে জেনারেল প্র্যাকটিস করতে হলে আপনাকে ৫ বছরের স্নাতকত্তোর ট্রেইনিং শেষ করতে হবে? কানাডায় মেডিকেল স্টাডিস-এ প্রবেশ করতে হলে আপনাকে ইউনিভার্সিটি থেকে গ্রাজুয়েশন করতে হবে-  এই তথ্য কি আপনার জানা ছিল?

    আমাদের মাঝে পাশ্চাত্যের মেডিকেল পড়াশোনা নিয়ে কৌতুহল থাকলেও বিষয়টি নিয়ে কখনও ঘাঁটাঘাঁটি করা হয়নি। তাই ভাবলাম, বিষয়টি একটু পড়ি। পড়ে অনেক কিছুই জানা হল। চলুন দেখি, পাশ্চাত্যের ডাক্তারি পড়ালেখার ধরণ কেমন-

    এই প্রবন্ধে মূলত যুক্তরাস্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য এবং অস্ট্রেলিয়ার মেডিকেল এডুকেশন নিয়ে আলোচনা থাকবে। সাথে, বাংলাদেশ থেকে যে চিকিৎসকরা এসব দেশে যেতে আগ্রহী সংশ্লিষ্ট দেশে তাদের পথপরিক্রমা সম্পর্কেও সংক্ষিপ্ত আলোচনা থাকবে। আমাদের দেশের মেডিকেল গ্রাজুয়েটদের মধ্যে থেকে যারা দেশের বাইরে যেতে আগ্রহী, তারা সাধারাণত এই ইংলিশ স্পিকিং দেশগুলোতেই যাওয়ার চেষ্টা করেন। চিকিৎসাবিদ্যা যেহেতু মানুষের সাথে সম্পর্কিত সেহেতু বিভিন্ন দেশের শিক্ষা সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকরা তাদের দেশের প্রেক্ষাপটে মেডিকেলে এডুকেশনকে সাজানোর চেষ্টা করেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে দেশভেদে মেডিকেলে পড়াশোনার নিয়মের কিছুটা পার্থক্য আছে।

    যুক্তরাস্ট্র

    যুক্তরাস্ট্রে মেডিকেল আণ্ডারগ্রাজুয়েট প্রোগ্রাম চার বছরের। এটি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল স্কুল দ্বারা পরিচালিত হয়। এ প্রোগ্রামে ঢোকার শর্ত হল- অন্য যে কোন বিষয়ে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করতে হবে। তবে, একজন মেডিকেল ভর্তিচ্ছু ছাত্রকে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় বসতে হলে উক্ত বিষয়ে গ্রাজুয়েশন করাকালীন এসোসিয়েশন অব অ্যামেরিকান মেডিকেল কলেজেস কতৃক নির্ধারিত কিছু কোর্স অবশ্যই সম্পন্ন করতে হবে। এর মধ্যে আছে- রসায়ন দুই বছর (যার এক বছর জৈব রসায়ন), এক বছরের জীববিজ্ঞান এবং এক বছরের ফিজিক্স। রসায়ন ও জীববিজ্ঞান কোর্সে সেলুলার বায়োলজী, ফিজিক্যাল কেমিস্ট্রি, বায়োকেমিস্ট্রি, মলিকিউলার বায়োলজি এবং জেনেটিক্স রাখার উপদেশ দেয়া হয়। এছাড়া স্কুল ভেদে সুনির্দিষ্ট ‘বিষয়ের’ শর্তাবলীর পার্থক্য আছে।

    একজন ছাত্র এই প্রি-মেডিকেল শর্তাবলী পূরণ করলে মেডিকেল কলেজ এডমিশন টেস্ট (এম,সি,এ,টি) দিতে পারে। মেডিকেল স্কুলে চান্স পাওয়া নির্ভর করে ছাত্রের প্রি-মেডিকেল কোর্সের একাডেমিক রেকর্ড, এম,সি,এ,টি-র ফলাফল, অন্যান্য প্রি-মেডিকেল এক্সট্রা-কারিকুলার এক্টিভিটি(যা ছাত্রের মেডিসিন-এর প্রতি আগ্রহকে স্পষ্ট করে), বিশ্বাবিদ্যালয় থেকে রিকমেন্ডেশন লেটার এবং ইন্টারভিউ-এর ফলাফল ইত্যাদির উপর।

    মেডিকেল স্কুল থেকে যে ডিগ্রী দেয়া হয় তার নাম ডক্টর অব মেডিসিন (এম,ডি) অথবা ডক্টর অব অস্টিওপ্যাথিক মেডিসিন (ডি,ও)। মেডিকেল স্টাডিকে স্কুলভেদে  চার থেকে পাঁচ বছরের পড়াশোনায় ভাগ করা হয়। প্রথম দু’বছর বেসিক সায়েন্স এবং পরের তিন বছর ক্লিনিক্যাল ক্লার্কশিপ। প্রথম দুই থেকে তিন বছর যে বিষয়গুলো কাভার করতে হয় সেগুলো হল- এনাটমি, ফিজিওলজি, বায়োকেমিস্ট্রি, হিস্টোলজি, এমব্রায়োলজি, মাইক্রোবায়োলজি, প্যাথোলজি, প্যাথোফিজিওলজি, নিউরোসায়েন্স ইত্যাদি। তবে, কারিকুলাম আমাদের দেশের মত সাবজেক্টভিত্তিক সাজানো হয় না বরং সিস্টেম ভিত্তিক (যেমন: ব্রেইন এণ্ড বিহেভিওর, কার্ডিওভাস্কুলার সিস্টেম প্রভৃতি)সাজানো হয়। ফলে, একজন ছাত্রের প্রথম থেকেই রোগী ও রোগ ভিত্তিক প্রশিক্ষণ হয়। এগুলো পড়া শেষ হলে একজন ছাত্র ইউনাইটেড স্টেটস মেডিকেল লাইসেন্সিং এক্সাম তথা ইউ,এস,এম,এল,ই পার্ট ওয়ান দিতে পারে। এরপর কোন একটি টিচিং হসপিটালে তিন বছরের ক্লার্কশিপে প্রবেশ করতে হয়। এ সময় মেডিসিন, সার্জারী, পেডিয়াট্রিক্স, ফ্যামিলি মেডিসিন, গাইনোকোলজি ও অবস্টেট্রিক্স, নিউরোলজি এবং সাইকিয়েট্রি ওয়ার্ডে রোটেশন হয়। এর পাশাপাশি কিছু ইলেকটিভ সাব-স্পেশালিটিতেও ক্লার্কশিপ সম্পন্ন করতে হয়। (কোনো কোনো স্কুল জয়েন্ট পোগ্রাম পরিচালনা করে, যেখানে মেডিকেল সায়েন্সের পাশাপাশি রিলেটেড বিষয়ে পিএইচডি, মাস্টার্স ইত্যাদি করার সুযোগ থাকে) পড়াশোনার চতুর্থ বছরের শেষে মেডিকেল ছাত্ররা সাধারণত ইউ,এস,এম,এল,ই পার্ট টু পরীক্ষা দেয়।

    ক্লিনিক্যাল ক্লার্কশিপ শেষে একজন ছাত্র এম,ডি বা ডি,ও ডিগ্রী অর্জন করেন, কিন্তু প্র্যাকটিস করতে পারেন না। প্র্যাকটিস করার লাইসেন্স পেতে হলে তাকে কমপক্ষে এক বছরের ইন্টার্ণশিপ এবং নির্দিষ্ট স্পেশালিটিতে (তথা বিষয়ে) রেসিডেন্সি শেষ করে ইউ,এস,এম,এল,ই পার্ট ত্রি তথা লাইসেন্সিং পরীক্ষা দিতে হয়। এরপরই কেবল একজন প্র্যাকটিস করার যোগ্যতা অর্জন করেন।(প্রসঙ্গত, যুক্তরাস্ট্রের অল্প কিছু প্রদেশে এক বছরের ইন্টার্ণশিপ শেষে মেডিসিন প্র্যাকটিস করার সুযোগ আছে।)

    রেসিডেন্সি ট্রেইনিং-এ চান্স পাওয়া নির্ভর করে ন্যাশনাল রেসিডেন্সি ম্যাচিং প্রোগ্রামের উপর। এটি একটি কম্পিউটার চালিত প্রোগ্রাম যেখানে ইউ,এস,এম,এল,ই পার্ট টু পাশ করা ডাক্তারদের রেসিডেন্সিতে ঢুকার আবেদন ও টিচিং হাসপাতালের বিভিন্ন স্পেশালিটিতে শূণ্য রেসিডেন্সি পদের প্রাপ্যতার উপর নির্ভর করে ডাক্তারদের ইন্টারভিউ নেয়ার জন্য নির্বাচন করা হয়। যেহেতু রেসিডেন্সি পদ কম এবং আবেদন অনেক বেশী থাকে, ফলে এই ম্যাচিং প্রোগ্রামটি অনেক শক্ত হয়। অনেক আবেদনকারীকেই তাদের ইচ্ছেকৃত স্পেশালিটিতে সুযোগ পাওয়ার জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। আবার, অনেককে তাদের ইচ্ছে পরিবর্তন করতে হয়। রেসিডেন্সির ম্যাচিং-এর সময় যে প্রভাবকগুলো কাজ করে তা হল: আবেদনকারী ক্রমানুসারে যে প্রতিষ্ঠানে ঢুকতে ইচ্ছুক তার লিস্ট, আবেদনকারীর ইউ,এস,এম,এল,ই পরীক্ষার নম্বর, আলফা-ওমেগা-আলফা (সংক্ষেপে এ,ও,এ) মেম্বারশিপ, ক্লিনিকাল ক্লার্কশিপের গ্রেড, রিকমেণ্ডেশন লেটার, ক্লাসে মেধাক্রম, রিসার্চের অভিজ্ঞতা, কোন স্কুল থেকে এম,ডি পাশ করেছে, আলাদা কোন যোগ্যতা (যেমন রিলেটেড বিষয়ে মাস্টার্স করা থাকলে তা) ইত্যাদি।

    বিষয়ভেদে রেসিডেন্সি ট্রেইনিং-এর ডিউরেশন তিন বছর থেকে শুরু করে দশ বছর পর্যন্ত হতে পারে। সংক্ষেপে বললে, ইন্টারনাল মেডিসিন-এ তিন বছর এবং জেনারেল সার্জারীতে পাঁচ বছর ট্রেইনিং করতে হয়। কেউ যদি মেডিসিনের সাবস্পেশালিটি এবং সার্জারীর সাবস্পেশালিটিতে ডিগ্রী করতে চান, তার সংশ্লিষ্ট বিভাগে অতিরিক্ত ৩ থেকে ৫ বছর ফেলোশিপ টেইনিং করতে হয়। ট্রেইনিং শেষে একজন ডাক্তার তার স্পেশালিটিতে বোর্ড সার্টিফিকেশন-এর জন্য আবেদন করতে পারেন। এরপর তাকে উক্ত বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হয়।(একে ইউ,এস,এম,এল,ই পার্ট ত্রি-ও বলা যায়) পরীক্ষা পাশ করলে উক্ত স্পেশালিটির বোর্ড সার্টিফিকেট পাওয়া যায়।

    যারা জেনারেল ফিজিশিয়ান হতে চান তারা কি করবেন? প্রদেশভেদে এই বিষয়টিতে পার্থক্য আছে। কোন কোন প্রদেশে একবছর ইন্টার্ণশিপ ট্রেইনিং-এর পর প্র্যাকটিস-এর সার্টিফিকেট পাওয়া যায়।  তবে অধিকাংশ প্রদেশেই এখন জেনারেল প্র্যাকটিস করতে হলে ফ্যামিলি মেডিসিন বিভাগে তিন বছর রেসিডেন্সি ট্রেইনিং করতে হয়। উল্লেখ্য, যুক্তরাস্ট্রে জেনারেল প্র্যাকটিশনার শব্দটি উঠে গেছে। তার পরিবর্তে এদেরকে বলা হচ্ছে ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান।

    যে সকল ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল গ্রাজুয়েট যুক্তরাস্ট্রে স্যাটল হতে চান, তাদেরকে ইউ,এস,এম,এল,ই পার্ট ওয়ান এবং পার্ট টু(সি,কে ও সি,এস) পাশ করে রেসিডেন্সির জন্য এপ্লাই করতে হয়। সে হিসেবে, বাংলাদেশ থেকে যে সকল মেডিকেলে স্টুডেন্ট যুক্তরাস্ট্রে যেতে আগ্রহী তাদেরকেও একই পথে চলতে হবে। পার্ট ওয়ান পরীক্ষা মেডিকেলের চতুর্থ বছর শেষেই দেয়ার সুযোগ আছে। পার্ট ওয়ান এবং টু সি,কে দু’টো পরীক্ষাই বাংলাদেশে আমেরিকান এম্বেসিতে দেয়া যায়। পার্ট টু সি,এস যুক্তরাস্ট্রে গিয়ে দিতে হয়। পার্ট টু সি,এস পাশ করার পর রেসিডেন্সির জন্য এপ্লাই করার পর শুরু হয় ন্যাশনাল রেসিডেন্সি ম্যাচিং প্রোগ্রাম-এ নাম আসার জন্য অপেক্ষা করার পালা। নাম আসলে পড়ে ইন্টারভিউ দিতে হয়। এরপরই একজন ক্যানডিডেট রেসিডেন্সিতে ঢুকতে পারে। রেসিডেন্সিতে চান্স পাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশী ছাত্রদের ই,ইউ,এস,এম,এলই-তে অনেক ভাল করা (অর্থাৎ প্রায় ৯৯ পারসেন্টাইলে থাকা) জরুরী । নইলে সাধারণত রেসিডেন্সি পাওয়া যায় না। কারণ, এটি অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক প্রোগ্রাম। তবে পরীক্ষার রেজাল্ট পারসেন্টাইলের দিকে দিয়ে সামান্য কম হলেও, যদি যুক্তরাস্ট্রের সিটিজেনশিপ থাকে(অথবা পারমানেন্ট রেসিডেন্ট হয়) অথবা কোন সিটিজেন তাকে স্পন্সর করে(তথা অভিভাবক হওয়ার দায়িত্ব নেয়), তাহলে রেসিডেন্সি ম্যাচ করার সম্ভাবনা বাড়ে।

    প্রসঙ্গত, রেসিডেন্সি ট্রেইনিং-এ সাপ্তাহিক কর্মঘন্টা সাধারণত ৮০ ঘন্টা বা তার বেশী। প্রত্যেক সপ্তাহে টানা ষোল ঘন্টার একটা ডিউটি থাকবেই (আগে প্রতি সপ্তাহে টানা ৩৬ ঘন্টা পর্যন্ত একটা ডিউটি থাকতো। কিন্তু তা ডাক্তারদের শরীরে প্রভাব ফেলে বলে নিয়ম পরিবর্তন করা হয়েছে)। বছরে তিন সপ্তাহের একটি ভ্যাকেশন বাদে পার্সনাল ছুটি ছয় দিন পর্যন্ত নেয়া যায় (ইন্সটিটিউশন ভেদে পার্থক্য থাকতে পারে)। প্রতিষ্ঠানভেদে বাৎসরিক স্যালারী ন্যূনতম ৪০০০০ ডলার থেকে শুরু। প্রতি বছর পর স্যালারী কিছুটা বাড়ে।

    এশিয়ান ডাক্তাররা শুধু এশিয়ান রুগীদের চিকিৎসা দিতে পারে।

    কানাডা

    কানাডার মেডিকেল এডুকেশন প্রায় যুক্তরাস্ট্রের মেডিকেল এডুকেশন সিস্টেমের মত। কানাডার লাইসেন্সিং পরীক্ষার নাম মেডিকেল কাউন্সিল অব কানাডা কোয়ালিফাইং এক্সামিনেশন (এম,সি,সি,কিউ,ই)। পার্ট দু’টো। ইউ,এস,এম,এল,ই-র মত দ্বিতীয় পার্টের ক্লিনিকাল নলেজ(সি,কে) অংশটি নেই। কানাডাতেও মেডিকেল স্কুলে ঢোকার শর্ত হল একটি বিষয়ে গ্রাজুয়েশন শেষ করতে হবে। মেডিকেল কারিকুলাম চার বছরের। প্রথম দুই বছর প্রি-ক্লিনিকাল এবং পরের দুই বছর ক্লিনিকাল ক্লার্কশিপ। প্রি-ক্লিনিকাল শেষে পার্ট ওয়ান পরীক্ষা দিতে হয়। ক্লার্কশিপ শেষে এক বছর ইন্টার্ণশিপ করার পর পার্ট টু পরীক্ষা দেয়া যায়। পার্ট টু পাশ করলে ডক্টর অব মেডিসিন (কানাডায় ডি,ও নেই) সার্টিফিকেশন দেয়া হয়। কিন্তু প্র্যাকটিস করার যোগ্যতা অর্জন করতে হলে যুক্তরাস্ট্রের মতই রেসিডেন্সি ট্রেইনিং শেষে বোর্ড সার্টিফিকেশন এক্সাম দিতে হয়। এমনকি ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান হতে হলেও দুই বছরের উক্ত বিভাগে রেসিডেন্সি ট্রেইনিং করতে হয়। অন্যান্য বিষয়ে রেসিডেন্সির সময়সীমা বিষয়ভেদে যুক্তরাস্ট্রের বিভিন্ন ভার্সিটির মতই।

    একজন ছাত্র ইচ্ছে করলে রেসিডেন্সি প্লাস পিএইচডি প্রোগ্রামের জন্য আবেদন করতে পারে। সেক্ষেত্রে, তাকে কিছু অতিরিক্ত শর্ত পূরণ করতে হয় (যেমন: রিসার্চ-এ অংশগ্রহন করার অভিজ্ঞতা)।

    কানাডার ডাক্তারদের ৫ বছর পর পর রিসার্টিফিকেশন করতে হয়। এটি পরিচালিত হয় মেইনটেনেন্স অব সার্টিফিকেশন প্রোগ্রাম দ্বারা, যা কন্টিনিউইং মেডিকেল এডুকেশন প্রক্রিয়ার অন্তর্ভূক্ত। রিসার্টিফিকেশনের জন্য একজন ফিজিশিয়ানের কার্যাবলী আপডেট রাখতে হয় এবং একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক ক্রেডিট অর্জন করতে হয়। (উল্লেখ্য, এই প্রবন্ধে উল্লিখিত সবগুলো দেশেই এই নিয়ম বিভিন্ন মাত্রায় চালু আছে।)

    যুক্তরাস্ট্র বাদে অন্যান্য দেশের ডাক্তারদের কানাডায় চিকিৎসক হতে হলে প্রথম শর্ত হল, কানাডার সিটিজেনশিপ থাকা বা পারমানেন্ট রেসিডেন্ট হওয়া বা ওয়ার্ল্ড হেল্দ অর্গানাইজেশন রেফুজি হিসেবে কানাডায় থাকা। দ্বিতীয় শর্ত হল, যে দেশ থেকে মেডিকেল সায়েন্সে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেছে সে দেশে প্র্রাইমারী ল্যাঙ্গুয়েজ ইংলিশ হওয়া অথবা সেটা না হলে আইইএলটিএস-এর চারটি ধাপের প্রত্যেকটিতে স্কোর কমপক্ষে ৭ থাকা। এই শর্তগুলো পূরণ হলে একজন মেডিকেল গ্রাজুয়েট এম,সি,সি,ই,ই (তথা মেডিকেলে কলেজ অব কানাডা ইভ্যালুয়েটিং এক্সাম) পরীক্ষায় অংশগ্রহন করতে পারবে। পরীক্ষাটির সেন্টার ইণ্ডিয়ায় আছে, বাংলাদেশে কানাডা এমবেসি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পরীক্ষার সেন্টারও বন্ধ হয়ে গেছে। এই পরীক্ষায় পাশ করলে ন্যাশনাল এসেসমেন্ট কোলেবোরেশন অবজেক্টিভ স্ট্রাকচারড ক্লিনিক্যাল এক্সামিনেশন (সংক্ষেপে এন,এ,সি-ও,এস,সি,ই)পরীক্ষা দিতে হয়। এই পরীক্ষাটি ইন্টারন্যাশনাল গ্রাজুয়েটদের এসেস করার জন্যই আয়োজন করা হয়। এই পরীক্ষাটি দিতে হয় কানাডায়।

    এরপর আসে রেসিডেন্সি ম্যাচিং-এর পালা। রেসিডেন্সি ম্যাচিং-এ আবেদন করার আগে ক্লিনিক্যাল এসেসমেন্ট প্রোগ্রাম-এ অংশ নিলে, ম্যাচ করার সম্ভাবনা বাড়ে। এই প্রোগ্রামে একজন ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল গ্রাজুয়েট (আইএমজি)-কে হাসপাতালে একজন চিকিৎসকের তত্বাবধানে আট সপ্তাহের জন্য নিয়োগ দেয়া হয় এবং তার কাজের উপর স্কোরিং করা হয়। অত:পর রেসিডেন্সির জন্য এপ্লাই করতে হয়। রেসিডেন্সি ম্যাচ হলেই কেবল রেসিডেন্সি ট্রেইনিং-এ প্রবেশ করা যায়।

    যুক্তরাজ্য

    যুক্তরাজ্যে মেডিকেল সায়েন্সের ডিগ্রী মূলত এম,বি,বি,এস । তবে ইনস্টিটিউট ভেদে এই ডিগ্রী বিভিন্ন নাম ধারণ করতে পারে, যেমন: এম,বি,সিএইচ,এস; এম,বি,বি,সিএইচ ইত্যাদি । এম,বি,বি,এস পাঁচ বছরের কোর্স। তবে কোন কোন মেডিকেল স্কুল এখন চার বছরের এম,ডি ডিগ্রীও দিয়ে থাকে। মান এবং কারিকুলাম একই। তবে চার বছরের কোর্সে স্বাভাবিকভাবেই চাপ বেশী। আমেরিকা-কানাডার মত মেডিকেলে ভর্তির জন্য গ্র্যাজুয়েশন থাকা জরুরী নয়। বরং, হাইয়ার সেকেণ্ডারী এডুকেশন পার করার পর পরই মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা (ইউনাইটেড কিংডম ক্লিনিক্যাল এপটিচুড টেস্ট অথবা বায়োমেডিকেল এডমিশন টেস্ট)দেয়া যায়। এম,বি,বি,এস-এর পাঁচ বছর সময়কালকে আগে প্রি-ক্লিনিক্যাল এবং ক্লিনিক্যাল এই দু’ভাগে ভাগ করা হত। প্রি-ক্লিনিক্যাল ছিলো পুরোপুরি লেকচারভিত্তিক এবং সাবজেক্টভিত্তিক(অর্থাৎ এনাটমি, ফিজিওলজি.. এভাবে)। ক্লিনিক্যাল-এর সময় ছাত্রদের লেকচারভিত্তিক এবং রোগীভিত্তিক শিক্ষা দেয়া হতো। তবে, এখন প্রায় প্রতিটি স্কুলে এই পদ্ধতি পরিবর্তন করে, শরীরের বিভিন্ন তন্ত্র(সিস্টেম)-ভিত্তিক কারিকুলাম সেট করা হচ্ছে এবং সেই সাথে ‘প্রবলেম বেজড লার্নিং’ পদ্ধতি চালু করা হচ্ছে। এ কারণে বিভিন্ন ভার্সিটিতে পাঁচ বছর সময়কালকে বিভিন্নভাবে ভাগ করা হয়েছে। কোন স্কুলে এক-তিন-এক বছর, কোন স্কুলে দুই-দুই-এক বছর ইত্যাদি।

    এম,বি,বি,এস শেষ করার পর একজন ছাত্রকে দুই বছর মেয়াদী ‘ফাউণ্ডেশন ইয়ার’-এ প্রবেশ করতে হয়। এক বছর ইন্টার্ণশিপ (যাকে পোস্ট গ্রাজুয়েশন ইয়ার এক বলে) এবং এক বছর রেসিডেন্সি (যাকে পোস্ট গ্রাজুয়েশন ইয়ার দুই বলে)। রেসিডেন্সি শেষ করার পর একজন যদি জেনারেল প্র্যাকটিশনার(জি,পি)হতে চায়, তাকে জেনারেল প্র্যাকটিস-এ আরও তিন বছরের পোস্টগ্রাজুয়েশন ট্রেইনিং নিতে হয়। আর যারা অন্য কোন স্পেশালিটিতে যাবে তাদের বিষয়ভেদে কমপক্ষে পাঁচ বছরের মত অতিরিক্ত ট্রেইনিং নিতে হয়। ট্রেইনিং প্রক্রিয়াটি সুনির্দিষ্ট নিরিক্ষাপদ্ধতির মধ্য দিয়ে যায়। ট্রেইনিং শেষে একজন কনসালটেন্ট হিসেবে গন্য হয় এবং তারপরেই কেবল স্বাধীনভাবে প্র্যাকটিস করার জন্য সার্টিফিকেট পেতে পারে।

    ইউরোপিয়ান ওয়ার্কিং টাইম ডাইরেকটিভ (ই,ডাব্লিউ,টি,ডি) ইউরোপে একজন জুনিয়র ডাক্তারের কর্মঘন্টা নির্ধারণ করে দিয়েছে সপ্তাহে ৪৮ ঘন্টা। কিন্তু এটি নিয়ে হাসপাতাল কতৃপক্ষের আপত্তি আছে। পূর্বে জেনারেল মেডিকেল কাউন্সিল (জি,এম,সি) কর্তৃক নির্ধারিত ওয়ার্কিং আওয়ার ছিল ৫৬ ঘন্টা, কিন্তু কোন কোন ক্ষেত্রে ইণ্টার্ণদের ডিউটি আওয়ার সপ্তাহে ১০০ ঘন্টাও ছাড়িয়ে যেত। ই,ডাব্লিউ,টি,ডি নির্ধারণের পরে জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মঘন্টা কমিয়ে ৪৮ ঘন্টা করা হয়।

    ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল গ্রাজুয়েটদের যুক্তরাজ্যে লাইসেন্স পেতে হলে প্রথম ধাপ হল- প্রফেসনাল এণ্ড লিঙ্গুইস্টিক এসেসমেন্ট বোর্ড (সংক্ষেপে পি,এল,এ,বি বা প্ল্যাব) পরীক্ষা দিতে হবে। প্ল্যাব পরীক্ষার প্রথম পত্র বাংলাদেশ থেকে দেয়া যায় এবং দ্বিতীয় পত্রটি (প্র্যাকটিকেল এসেসমেন্ট)ইংল্যাণ্ডে গিয়ে দিতে হয়। ২০১৪ থেকে প্ল্যাব পরীক্ষায় বসার শর্ত হিসেবে  আই,ই,এল,টি,এস এর প্রতিটি ধাপে ৭ এবং মোট ৭.৫ থাকার শর্ত সংযুক্ত করা হয়েছে। প্ল্যাব-এ পরিবর্তে একজন যুক্তরাজ্যের সুনির্দিষ্ট কিছু পোস্টগ্রাজুয়েট ডিগ্রী অর্জন করলেও এপ্লাই করতে পারবে, যেমন:  এম. আর. সি. পি. (মেম্বার অব রয়েল কলেজ অব ফিজিশিয়ান)। তবে শর্ত হল, পাশ করার তিন বছরের মধ্যে লাইসেন্স এর জন্য এপ্লাই করতে হবে। এছাড়া, যুক্তরাজ্যের কিছু প্রতিষ্ঠান ডাক্তারদের স্পনসর করে তাদের চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দিতে পারে। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানে কেউ চাকুরী করলে, সেও লাইসেন্স-এর জন্য আবেদন করতে পারে। (বিস্তারিত নিচের ১০ নম্বর লিংক-এ)

    প্ল্যাব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে একজন ট্রেইনিং-এর জন্য আবেদন করতে পারে। যুক্তরাজ্যে ম্যাচিং প্রোগ্রাম জাতীয় কোন প্রক্রিয়া নেই। স্বাভাবিক ভাবেই অতিরিক্ত যোগ্যতা থাকলে ট্রেইনিং-এ চান্স পাওয়া সহজ হয় (যেমন: যুক্তরাজ্যের পরিচিত ডাক্তার থেকে রিকমেণ্ডেশেন লেটার)।

    অস্ট্রেলিয়া

    অস্ট্রেলিয়ার মেডিকেল ডিগ্রী প্রধানত এম,বি,বি,এস। তবে, কোন কোন মেডিকেল স্কুল এম,ডি ডিগ্রীও দেয়। স্কুল ভেদে মেয়াদকাল চার থেকে ছয় বছর। মেডিকেল স্কুলে চান্স পেতে হলে দুটো পথ আছে। কলেজ (অর্থাৎ সেকেণ্ডারী স্কুল) পেরিয়ে ঢুকতে হলে আন্ডারগ্রাজুয়েট মেডিকেল এডমিশন টেস্ট (ইউ,জি,এম,টি) এবং গ্রাজুয়েট হয়ে ঢুকতে গ্রাজুয়েট মেডিকেল এডমিশন টেস্ট (জি,এম,এ,টি) দিয়ে প্রবেশ করতে হবে। মেডিকেল কারিকুলাম যুক্তরাজ্যের মতই। তবে অস্ট্রেলিয়ায় একটি সুবিধে হল অন্যান্য দেশের মত জেনারেল প্র্যাকটিশনার হতে হলে রেসিডেন্সি ট্রেইনিং জরুরী নয়। বরং এক বছর ইন্টার্ণশিপ শেষে স্বাধীনভাবে জেনারেল প্র্যাকটিস করার সুযোগ পাওয়া যায়। কেউ যদি স্পেশালিটিতে ক্যারিয়ার করতে আগ্রহী হয়, তাকে রেসিডেন্সি ট্রেইনিং-এর জন্য এপ্লাই করতে হবে। উল্লেখ্য যে, যুক্তরাজ্যের মত এখানেও কোন রেসিডেন্সি ম্যাচিং প্রোগ্রাম নেই।    

    বাংলাদেশের তরুণ ডাক্তারদের মধ্য থেকে যারা অস্ট্রেলিয়া যেতে আগ্রহী তাদেরকে প্রথমেই এ,এম,সি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করতে হবে।(উল্লেখ্য, অস্ট্রেলিয়ায় রেজিস্ট্রেশন পেতে কয়েকটি পাথওয়ে আছে। তন্মধ্যে, বাংলাদেশী তরুণ ডাক্তারদের জন্য কেবল স্ট্যাণ্ডার্ড পাথওয়ে প্রযোজ্য। এজন্য এখানে স্ট্যাণ্ডার্ড পাথওয়েটাই সংক্ষেপে বলা হল।)  এ,এম,সি তথা অস্ট্রেলিয়ান মেডিকেল কাউন্সিল দু’টো ভাগে পরীক্ষাটি নেয়। প্রথমটি মাল্টিপল চয়েজ কোয়েশ্চেন যার নাম সি,এ,টি এম,সি,কিউ এক্সামিনেশন। এটি পাশ করলে পরের পার্টটি দুই ভাবে দেয়া যায়- ‘এ,এম,সি ক্লিনিক্যাল এক্সামিনেশন’ অথবা ‘ওয়ার্কপ্লেস বেজড এসেসমেন্ট’। প্রথম পার্টের সেন্টার ইণ্ডিয়ায় আছে (কোলকাতায় নেই)। দ্বিতীয় পার্ট অস্ট্রেলিয়ায় গিয়েই দিতে হয়। যারা ক্লিনিক্যাল এক্সামিনেশন দিবেন তাদের পরীক্ষা এক দিনে সম্পন্ন হয়। আর, যারা ওয়ার্কপ্লেস বেজড এসেসমেন্ট-এ অংশ নেবেন তাদেরকে এএমসি পার্ট ওয়ান পাশ করার পর মেডিকেল বোর্ড অব অস্ট্রেলিয়া থেকে লিমিটেড রেজিস্ট্রেসন অর্জন করতে হবে। এরপর নিজ দায়িত্বে (অর্থাৎ সিভি সাবমিট করে, সরাসরি যোগাযোগ করে বা অন্য কোন উপায়ে) অস্ট্রেলিয়ান মেডিকেল কাউন্সিল অনুমোদিত কোন হাসপাতালে জব নিতে পারলে, কাউন্সিল বরাবর এপ্লিকেশন করে ওয়ার্কপ্লেস বেজড এসেসমেন্টের সুযোগ পাওয়া যেতে পারে।  

    এএমসি পাশ করার পর টিচিং হাসপাতালে ইণ্টার্ণশিপের জন্য আবেদন করতে হবে। লক্ষ্যনীয় যে, বাইরের মেডিকেল গ্রাজুয়েটদের জন্য অস্ট্রেলিয়ার ইণ্টার্ণশিপের পজিশন আগের চেয়ে অনেক কমিয়ে দেয়া হয়েছে। ফলে, পজিশনের জন্য প্রতিযোগীতা বেড়ে গেছে। ইণ্টার্ণশিপ শেষ হলে প্র্যাকটিস-এর লাইসেন্স পেতে আবেদন করতে হয়ে। কিন্তু, লাইসেন্স পাওয়ার অন্যতম আরেকটি শর্ত হল- পারমানেন্ট রেসিডেন্সি থাকা। অস্ট্রেলিয়ার স্কিলড ওয়ার্কার ভিসার লিস্টে চিকিৎসক না থাকায়, রেসিডেন্সির পাওয়ার একমাত্র উপায় হল ইন্টার্ণশিপ শেষে আবেদন করা। লক্ষ্যনীয়, রেসিডেন্সির আবেদনের ক্ষেত্রে ভিসার রকমভেদে অতিরিক্ত শর্তাবলী আছে। সুতরাং, অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক বিয়ে করার চেয়ে সহজ কোন উপায় এ পথে নেই।

    নিউজিল্যাণ্ডে আই,এম,জি-দের রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া অস্ট্রেলিয়ার মতই। 

    পরিশেষে

    এ লেখার মধ্য দিয়ে যুক্তরাস্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার মেডিকেল পড়াশোনা সম্পর্কে আমরা সংক্ষেপে জানতে পারলাম। তবে বেশ কিছু জিনিস এই আর্টিকেলে ওঠে আসেনি,  যেমন: মেডিকেল স্কুলে পড়ার বিশাল খরচ, ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল গ্রাজুয়েটদের প্রয়োজনীয় ধাপগুলোতে খরচ, ভিসা নিয়ে আলোচনা ইত্যাদি। তারপরও, প্রবন্ধটি পাশ্চাত্যের মেডিকেল পড়ালেখা সম্পর্কে অনেকের কৌতুহল কিছুটা হলেও মেটাতে পারবে বলে আশা রাখছি।

    লেখাটি তৈরী করতে যে ওয়েবসাইটগুলোর সাহায্য নেয়া হয়েছে:

    ১. http://en.wikipedia.org/wiki/Medical_education_in_the_United_States

    ২. http://en.wikipedia.org/wiki/Medical_school_in_Canada

    ৩. http://en.wikipedia.org/wiki/Medical_education_in_the_United_Kingdom

    ৪. http://en.wikipedia.org/wiki/Medical_education_in_Australia

    ৫. http://en.wikipedia.org/wiki/Medical_school_in_the_United_States

    ৬. http://en.wikipedia.org/wiki/Medical_school_in_the_United_Kingdom

    ৭. http://en.wikipedia.org/wiki/Residency_(medicine)

    ৮. http://www.usmle.org/

    ৯. http://imgbc.med.ubc.ca/path-to-residency/

    ১০. http://www.gmc-uk.org/

    ১১. http://www.amc.org.au/

    ১২. http://people.howstuffworks.com/becoming-a-doctor12.htm)

    ১৩. http://www.telegraph.co.uk/health/healthnews/10741905/EU-rules-on-doctors-working-hours-puts-patients-at-risk-report-finds.html

    সর্বশেষ আপডেট: ০২/০৬/২০১৪ (সকাল ১০ টা ২৫ মিনিট)

  • ডিসেকটিং দ্য মিথ অফ ‘কসাই’ ডাক্তার

    বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের একটি সাধারণ অভিযোগ হল: ডাক্তাররা কসাইয়ের মত টাকা নেন। বিষয়টি নিয়ে ভাবলাম। মনে হল এই মিথটার ব্যবচ্ছেদ করা দরকার।

    আমরা যারা তরুণ ‘সিম্পল এম.বি.বি.এস’ ডাক্তার তারা এ অভিযোগ শুনে অবাক হই। কারণ, ঢাকায় (মূল শহর থেকে একটু দূরে) আমরা প্রাইভেট চেম্বার দিয়ে বসলে প্রতি দুই দিনে গড়ে এক থেকে দুই জন এবং মাসে গড়ে বিশ থেকে পয়ত্রিশ জন রূগী পেতে পারি। ভিজিট দুশ, এলাকা ভেদে সর্বচ্চো তিনশ। আমাদের রূগী দেখার হারে কোন সাধারণ মানুষও কসাই বলবে না। তাহলে সাধারণ মানুষরা কিসের উপর ভিত্তি করে তাদের অভিযোগের জেনারালাইজেশন করছে?

    চলুন একটু ঘেঁটে দেখি। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় একটি সমস্যা হলো ‘রেফারেল সিস্টেম’-এর বালাই নেই। রেফারেল সিস্টেম অনুযায়ী একজন ব্যক্তি অসুস্থ হলে তাকে প্রথমে দেখবে একজন ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান অথবা জেনারেল প্র্যাকটিশনার। তিনি রোগটির সমাধান করতে না পারলে পাঠাবেন একজন বিশেষজ্ঞের কাছে। কিন্তু বাংলাদেশে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের দেখানোর জন্য কোন ডাক্তারের রেফারেন্স প্রয়োজন নেই। শুধুমাত্র ফোন দিয়ে একটি সিরিয়াল নিয়ে নেয়া। আর ‘যেহেতু যে বিশেষজ্ঞ ইচ্ছে তার কাছেই যাওয়া যাচ্ছে সেহেতু প্রফেসরকেই দেখাই’-এই মানসিকতায় প্রফেসরদের কাছে রোগী যাওয়ার হিড়িক পড়ে যায়। ফলে কোন কোন প্রফেসর গড়ে একশ রোগী দেখেন।

    যেই প্রফেসর গড়ে একশ রোগী দেখেন তার পক্ষে কি প্রত্যেক রোগীকে ৫ মিনিট করেও দেয়া সম্ভব? ৫০০ মিনিটে হয় ৮ ঘন্টা ২০ মিনিট। ফলে উক্ত প্রফেসর সর্বোচ্চ এক থেকে তিন মিনিট সময় দিতে পারেন। এই এক থেকে তিন মিনিটে তার ভিজিট পাঁচশ থেকে একহাজার (ডাক্তার ভেদে)। এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষের অভিযোগ ডাক্তাররা কসাই-এর মত টাকা নেয়।

    কিন্তু কয়েকটা ব্যপার লক্ষ্যনীয়। উপরের চিত্রটি মেডিসিন প্রফেসরদের (অল্পকিছু)। বিশেষজ্ঞ ও প্রফেসর সার্জনরা হয়ত দু তিন মিনিটে রূগী দেখেন না, কিন্তু তারা সার্জারী করে মেডিসিন ডাক্তারদের চেয়েও বেশী আয় করেন। কিন্তু তাদের কথা সাধারণ লোকের মুখে সাধারণত আসে না। আবার মেডিসিন প্রফেসরদের উপরোক্ত চিত্রটি কিন্তু হাতে গোনা কয়েকজন চিকিৎসকের। অনেকটা ব্যবসায়ীদের মধ্যে শিল্পপতিদের সংখ্যাটা যেমন, ঠিক তেমন।এই যে শিল্পপতিরা এত টাকা আয় করছেন, রাজণীতিবিদরা দূর্ণীতি করে মানুষের কষ্টার্জিত টাকা মেরে খাচ্ছেন তাদের মানুষ ‘কসাই’ বলছে না কেন?

    আমার ধারণা এর কারণ হল ‘Visibility’। মানুষের হাত থেকে যখন নগদ টাকা বেরিয়ে যায় তখন চোখে লাগে। বিশেষ করে তা যদি হয় দু-তিন মিনিটের এডভাইজের বিনিময়ে। প্রশ্ন হতে পারে, পণ্য কিনতে গিয়েও তো মানুষের হাত থেকে নগদ টাকা বেরোয়? পণ্য কিনলে মানুষ একটা ভিজিবল জিনিস কিনছে। কিন্তু ডাক্তারদের সেবাটা ভিজিবল না। আবার অন্য দিক দিয়ে, প্রফেসর ডাক্তারদের দু-তিন মিনিটে পাঁচশ টাকা ভিজিট নিয়ে নেয়াটাও মানুষের চোখে বেশ লাগে। অথচ, এই গুটি কয়েক প্রফেসরদের তাদের অবস্থানে যেতে কি পরিমাণ কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে তা তারা বিবেচনায় আনতে পারেন না। তদুপরি, প্রফেসরকে দেখাতে হবে এমন কোন কথা আছে কি? এসোসিয়েট প্রফেসর, এসিসটেন্ট প্রফেসর, কনসালটেন্ট যার কাছেই যান না কেন তারা এত বেশী অযোগ্য না যে আপনার সমস্যা বুঝতে পারবে না। বরং তাদের রূগী কম হওয়ায় তারা আপনাকে সময় বেশী দিতে পারবেন। আপনার কথা ধৈর্য্য ধরে শুনতে পারবেন। অর্থাৎ, এখানে সমস্যাটা জানার সীমাবদ্ধতার, বিশ্বাসহীনতার, অসচেতনতার।

    একজন প্রফেসর হওয়া কি এতই সহজ? যে কয়জন প্রফেসরকে আমরা দৈনিক গড়ে ৫০-এর উপরে রূগী দেখতে দেখী তাদের সংখ্যা প্রফেসরদের মধ্যেও সীমিত এবং এরা প্রায় সবাই সরকারী ডাক্তার। কিন্তু প্রফেসর হওয়াটাই সময়সাপেক্ষ ব্যপার, দীর্ঘসূত্রিতার ব্যপার। আমি গত দিনের পোস্টে বলেছিলাম যে একজন সরকারী ডাক্তারের এমডি, এমএস বা এফসিপিএস ডিগ্রী অর্জন করতে ন্যূনতম ১৪ বছর লেগে যায়(এটি একটি হিসেব, বাস্তবে নানাবিধ জটিলতার কারণে সময় লাগে আরও বেশী)। অথচ, এই ডিগ্রী অর্জন ছাড়া একজন ডাক্তার কনসালটেন্ট পদে প্রমোশন পায় না। এমনকি, কতবছর ধরে সরকারী চাকুরী করছে তার উপর ভিত্তি করে, অনেক স্নাতোকত্তোর ডিগ্রীধারী ডাক্তাররাও প্রমোশন পায় না। উদাহরণস্বরূপ, সাতাশ বিসিএস ক্যাডাররা জয়েন করেছেন ২০০৮-এ। আজ ছয় বছর পেরিয়ে গেছে, এখনো অনেকেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-এ আটকে আছেন। ৫০% ক্যাডারের ডিগ্রী শেষ হলেও প্রমোশন হচ্ছে না জুনিয়র বিসিএস হওয়ার। এ ধরনের ঘটনা ডাক্তারদের জন্য বেশ ডিমোরালাইজিং। কনসালটেন্ট হওয়ার পর চাকুরীর অভিজ্ঞতার আলোকে এসিসটেন্ট প্রফেসর, এসোসিয়েট প্রফেসর ইত্যাদি পথ পেরিয়ে তারপর প্রফেসর হতে হয়। ফলে, প্রফেসর চিকিৎসক হতে গিয়ে বয়স কমপক্ষে ৫০ পেড়িয়ে যায়। তবে, অনেক ডাক্তার এত দূর যেতে পারেন না। তারপরও যে ডাক্তার এত পথ পাড়ি দিয়ে প্রফেসর হলেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তিনি তার যোগ্যতার বলেই হন। যোগ্যতা এবং মেধার বিনিময় নেয়ার অধিকার তার আছে।

    সাধারণ মানুষদের আরেকটি অভিযোগ হল অনেক ডাক্তারের মনোভাব ব্যবসায়ী হয়ে পড়ে। আমার ধারণা এটা মনে হওয়ার অন্যতম কারণ অল্প সময়ে রূগী দেখা, রূগীর কথা না শোনা। কিন্তু ডাক্তারদের এই সময় সংকোচনের পেছনে মানুষেরও-তো দায় আছে। তাদের কি শুধু প্রফেসরদের কাছেই যেতে হবে। হ্যাঁ, কিছু ডাক্তার আক্ষরিক অর্থেই ‘পুরোপুরি ব্যবসায়ী’ হয়ে যায়, যেটা কখনই কাম্য নয়। এটাকে আমি জাস্টিফাই করছি না তবে এর কারণ হিসেবে ডাক্তারদের দীর্ঘ অপ্রাপ্তি, ফ্রাস্টেশনের দায় আছে বলে মনে করছি।

    আরও কিছু অভিযোগ আছে ‘ক্লিনিক’, ‘কমিশন’ ইত্যাদি বিষয়ে। ক্লিনিকের সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন করার সম্পূর্ণ সুযোগ আছে। কিন্তু অধিকাংশ ক্লিনিক ডাক্তারদের দেয়া না, এটা মাথায় রাখা দরকার। বরং ক্লিনিকে যেই ডিউটি ডাক্তাররা কাজ করেন তারা ক্লিনিক কতৃপক্ষের কাছে জিম্মী থাকেন। ক্লিনিকে রূগী পাঠান ‘গ্রাম্য ডাক্তাররা’, তারা এর বিনিময়ে ক্লিনিকের কাছ থেকে কমিশন পান। ক্লিনিকের মালিক মুনাফার জন্য ডাক্তারদের অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষানিরীক্ষা দিতে বাধ্য করেন। ডাক্তাররাও জিম্মী। কারণ এখানে যাচ্ছে অবৈতনিক প্রশিক্ষনার্থী ডাক্তাররা তাদের জীবিকার জন্য। ক্লিনিক কতৃপক্ষের সাথে বাকবিতণ্ডায় গেলে তারা চাকুরী হারাবেন। আর কেউ একবার চাকুরী পেলে ছাড়তে চান না। কারণ অনেক তরুণ ডাক্তার এই অল্প বেতনের চাকুরীতে প্রবেশের জন্য উন্মুখ হয়ে থাকেন।

    ‘কমিশন’ বিষয়টা চালুর পিছনে দায়ী প্রতিযোগীতামূলক ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবসায় এবং কিছু ডাক্তারদের লোভ ও ক্ষোভ। এ বিষয়টি এখন এত বেশী স্বাভাবিক হয়ে পড়েছে তথা হেল্দ-সিস্টেমের সাথে মিশে গেছে যে, যারা কমিশন নিতে আগ্রহী নন তারাও অনেক সময় বাধ্য হয়ে পড়েন। তবে এর পেছনে একদল ডাক্তারের পুঁজিবাদী মন মানসিকতা, লোভ ও স্বার্থপরতা দায়ী তা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে এটাতো সব মানুষের ক্ষেত্রেই সাধারণ সমস্যা। কিছু মানুষের অতিরিক্ত লোভ পুঁজিবাদী অর্থণীতিতে অনেক মানুষকে ভোগায়। এই কিছুর মধ্যে ডাক্তারদের একটি অংশ আছে। ‘কমিশন’ সিস্টেম দূর করতে হলে লাগবে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যনীতি নির্ধারকদের সদিচ্ছা। ডাক্তারদের উপযুক্ত সম্মানী দেয়া, উপজেলা পর্যায়ে ডাক্তারদের পেশাগত মর্যাদার উপযুক্ত স্বীকৃতি দেয়া, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ইত্যাদি উপায়ে। আর লোভ, স্বার্থপরতা দূর করে মানবিকতা তৈরী করতে হলে মূল্যবোধের শিক্ষা কতটা গুরুত্বপূর্ণ বলা বাহুল্য।

    সুতরাং, ডাক্তারদের ‘কসাই’ উপাধীর ব্যবচ্ছেদ করে আমরা কয়েকটি পরস্পরজড়িত সমস্যা পেলাম। লক্ষ্যণীয়, স্বাস্থ্যনীতিতে শক্তিশালী রেফারেল সিস্টেম চালু থাকলে ডাক্তার-রূগী দু’দিক থেকেই অপ্রাপ্তি কমে আসতো। তারপরও একজন ডাক্তার হিসেবে সাধারণ মানুষদের কাছে অনুরোধ থাকবে, আপনারা ডাক্তার বলতে শুধ প্রফেসরদের বুঝবেন না এবং ডাক্তারদের মেধা ও পরিশ্রমের মূল্যায়ন করবেন, তাহলে দেখবেন তাদের ‘কসাই’ বলে উপাধি দেয়ার আগে আপনার জিহবাটা বেঁধে আসছে।

  • ডাক্তারের পড়ালেখা, প্রেক্ষাপট: বাংলাদেশ

    মেডিকেলের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রীগুলো কেমন ধরনের? অধিকাংশ নন-মেডিকেল ব্যক্তিদের এ ব্যপারে কোন ধারনাই নেই। বিশেষ করে পরিবারে বা আত্মীয়দের মধ্যে একজন ডাক্তার না থাকলে ডাক্তারদের পড়াশোনা সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষই জানেন না। অনেকেই জানে ডাক্তারদের পড়তে হয়, সারাজীবন পড়তে হয়। কিন্তু সেই পড়ালেখার এক্সটেন্ট কতটুকু। তাদের ডিগ্রী কখন শুরু হয়, কখন শেষ হয় সে সম্পর্কে জানা নেই।

    তাই ভাবলাম এ বিষয়ে একটু লিখি। এ প্রসঙ্গে প্রথমেই বলে নেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ডাক্তারদের পড়ালেখা পদ্ধতির একটু ভিন্নতা আছে। বাংলাদেশে আমরা কিভাবে পড়ি? আমরা সকলেই জানি ডাক্তারদের স্নাতক ডিগ্রী পাঁচ বছরের। পাঁচ বছর পর একজন মেডিকেল ছাত্র নামের শেষে ডাক্তার শব্দটি লাগানোর যোগ্যতা অর্জন করেন। এই পাঁচটি বছরকে তিনটি প্রোফেশনাল পরীক্ষায় ভাগ করা হয়। প্রথম ও দ্বিতীয় প্রফেশনাল পরীক্ষায় বেসিক সাবজেক্টগুলো পড়তে হয়। যে-সে পড়া না, বিস্তারিত পড়া। প্রথম প্রফেশনাল পরীক্ষায় এনাটমি, ফিজিওলজি, বায়োকেমিস্ট্রি পড়তে হয়। দ্বিতীয় প্রফেশনাল পরীক্ষায় প্যাথোলজি, মাইক্রোবায়োলজি, ফার্মাকোলোজি, ফরেনসিক মেডিসিন এবং কমিউনিটি মেডিসিন পড়তে হয়। এরপর তৃতীয় প্রফেশনাল পরীক্ষায় পড়তে হয় মেডিসিন, সার্জারী এবং গাইনি ও অবস্টেট্রিকস (এই তিনটি সাবজেক্টের যতটুকু একজন জেনারেল ফিজিশিয়ানের জানা প্রয়োজন ততটুকু)।

    এম.বি.বি.এস. পরীক্ষায় পাশ করলেই একজন ছাত্র পৃথকভাবে চিকিৎসা দেয়ার লাইসেন্স পেয়ে যায় না। তাকে এক বছর ইন্টার্ণশিপ শেষ করতে হয় (মেডিসিনে, সার্জারি ও গাইনি প্রত্যেকটিতে চারমাস করে)। ইন্টার্ণশিপ শেষ করলে মূলত আসল পড়া শুরু হয়। অর্থাৎ স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জনের প্রতিযোগিতায় নেমে পড়তে হয়। একজন ইচ্ছে করলে এম.বি.বি.এস ডিগ্রী নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে পারে। বর্তমানে ‘সিম্পল’ এম.বি.বি.এস বলে যে জনমুখে একটি ‘টার্ম’ চলে এসেছে। সেটি কি তা করতে দিবে? পাঠক লক্ষ্য করুন, একজন অনার্সের ছাত্রের চারবছরে স্নাতক শেষ হচ্ছে। আর একজন ডাক্তারের চিকিৎসা দেয়া লাইসেন্স পেতেই সময় লাগছে ছয় বছর।

    যাই হোক, বাংলাদেশে ডাক্তাররা প্রধানত দুধরনের পোস্ট-গ্র্যাড ডিগ্রী নিতে পারেন। Fellow of College of Physicians and Surgeons (সংক্ষেপে এফসিপিএস), আরেকটি হলো Doctor of Medicine(এমডি) অথবা Master of Surgeon (এমএস)। তবে এর বাইরে কিছু কিছু বিষয়ে ডিপ্লোমা করার সুযোগ আছে এবং বেসিক সাবজেক্টগুলোতে এমফিল করার ও এপিডেমিওলজিতে এমপিএইচ করার সুযোগ আছে। স্নাতোকত্তোর পর্যায়ে এসেই একজন ডাক্তার কোন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হবেন সেটি ঠিক করতে হয়।

    এমডি বা এমএস ডিগ্রীদুটোর সময়সীমা পাঁচ বছর। তবে এই ডিগ্রীগুলোর সিট সংখ্যা সীমিত, সবগুলো মেডিকেল কলেজে হয় না। তাই ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে চান্স পেতে হয়। তবে ভর্তি পরীক্ষায় বসার শর্ত হলো ইন্টার্ণশিপের পর একবছর অতিবাহিত করতে হবে। যদিও ডিগ্রীগুলো করাকালীন একজন বেসরকারী ডাক্তারের হাসপাতালে সেবা দিতে হয়, সে এর বিনিময়ে কোন সম্মানী পায় না। বরং ভর্তির সময় ও পরীক্ষার সময় মোটা অংকের টাকা তাকেই দিতে হয়। সরকারী ডাক্তার এ সেবার বিনিময়ে বেতন পায়- যে বেতন সে একজন প্রথমশ্রেনীর কর্মচারী হিসেবে পেয়ে থাকে (প্রায় বিশ হাজার টাকা মাসে)। তবে সরকারী ডাক্তারদের উক্ত ভর্তি পরীক্ষাগুলোতে বসতে পারে দুবছর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স-এ কাটানোর পর। সুতরাং সে হিসেবে একবারে পাশ করতে পারলে একজন ডাক্তারের স্নাতক ও স্নাতকত্তোর ডিগ্রী অর্জন করতে লাগছে ১২ বছর(বেসরকারী) এবং ১৪ বছর (সরকারী)।এটা হলো ন্যূনতম হিসেব। (উল্লেখ্য এই ডিগ্রীতে ভর্তির আগে এবং ডিগ্রী করাকালীন একজন ডাক্তারকে তার এমবিবিএস-এর বেসিক সাবজেক্টগুলোর ছয়টি পুনরায় পড়তে হয়।)

    এফসিপিএস ডিগ্রীর সময়সীমা চার বছর। কিন্তু এই ডিগ্রীটিতে এতই কঠিন পরীক্ষা হয় যে এক-দুবারে পাশ না করা্টাই নিয়ম। ফলে এই ডিগ্রী শেষ করতে পাঁচ থেকে দশ বছর লেগে যায়। ডিগ্রিটি দেয় বিসিপিএস নামক একটি প্রতিষ্ঠান। শর্ত হলো এফসিপিএস ফার্স্ট পার্ট করে ডিগ্রীতে প্রবেশ করতে হবে। এ সময় তাকে ফার্স্ট পার্ট করার জন্য বেসিক সাবজেক্ট এবং সে যে সাবজেক্টে এফসিপিএস করতে সেটি পড়তে হয়। তিন বছর একজন এফসিপিএস ডিগ্রীধারী ডাক্তারের সুপারভিশনে ট্রেইনিং করতে হবে, এক বছর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ক্লাস করতে হবে এবং সম্পূর্ণ নিজ খরচে ও নিজ দায়িত্বে একজন সুপারভাইজার বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের অধীনে একটি ডেসারটেশন করে সাবমিট করতে হবে। একবছর ক্লাসের স্থলে কেউ এক বছর একটি ‘পেইড’ পোস্টে ট্রেনিং করতে পারে। হ্যা, একজন এমবিবিএস ডাক্তার তার ইন্টার্ণশিপ শেষে মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে ট্রেনিং-এ ঢুকতে পারবে। এই যে ট্রেনিং যারা করছে, এরাই সেই নটোরিয়াস ‘অনারারী’ মেডিকেল অফিসার তথা অবৈতনিক মেডিকেল অফিসার। ‘বৈতনিক’ ট্রেনিং তারাই করতে পারে যারা সরকারী চাকুরী করছে এবং উপজেলায় দু-বছর পার করে এসেছে। তবে এ ধরনের বৈতনিক বা পেইড পোস্টগুলোর সংখ্যা কম। ফলে ঘুষ দেয়ার যোগ্যতা, মামুর জোড় বা রাজনৈতিক পরিচয় ছাড়া এ পোস্ট পাওয়া মুশকিল। বিশেষ করে পোস্টগুলো যদি হয় ঢাকার কোন মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে, তাহলেতো কথাই নেই। যাই হোক, একজন এফসিপিএস পার্ট দুই পরীক্ষায় বসতে পারবে উপরোক্ত শর্তগুলো পূরণে। সুতরাং, এভাবে একজন ডাক্তারের ভাগ্য ভালো থাকলে জীবনের ন্যূনতম ১০ বছর(বেসরকারী) অথবা ১২ বছর(সরকারী) পার হচ্ছে।

    ডিপ্লোমা ডিগ্রীগুলোর ভ্যালুয়েশন কম।(তার মানে এই না যে ডিপ্লোমা ডিগ্রীধারীরা একেবারে কম দক্ষ) এগুলো করতে সময় লাগে দুই বছর। ইন্টার্ণশিপের এক বছর পর পরীক্ষা দিয়ে চান্স পেতে হয়। এম ফিল ডিগ্রীগুলো তিন বছর। ডিগ্রী শেষে মেডিকেল কলেজের ডাক্তাররা মেডিকেল কলেজের টিচার হতে পারে। তবে বায়োকেমিস্ট, প্যাথোলজিস্ট ও মাইক্রোবায়োলজিস্টরা ল্যাবে কাজ করতে পারে।লক্ষ্যনীয় বাংলাদেশে পারতপক্ষে কোন রিসার্চ এক্টিভিটি নেই বিধায়, ডক্টরেট(পিএইচডি) ডিগ্রী করার সুযোগ নেই বললেই চলে। সুতরাং এমফিল বা ডিপ্লোমা করলেও লাগছে যথাক্রমে ১০ বছর বা ৯ বছর (বেসরকারী) এবং ১২ বছর  বা ১১ বছর (সরকারী)।

    শুধুমাত্র মাস্টার ইন পাবলিক হেল্দ বা এমপিএইচ ডিগ্রীর সময় দেড় থেকে দুই বছর। ইন্টার্ণশিপের পরে একবছর পার করে পরীক্ষা দিয়ে চান্স পেতে হয়। এ ডাক্তাররাও সাধারনত সরাসরি চিকিৎসা সেবা দেন না। বরং নিপসম বা বিভিন্ন মেডিকেলে কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের টিচার হন। অথবা বিভিন্ন এনজিও-তে রিসার্চ ওয়ার্কার হিসেবে কাজ করেন। এদেরও সময় লাগছে ৯ বছর (বেসরকারী) বা ১০ বছর (সরকারী)।

    সুতরাং এই যে একজন ব্যক্তি যাকে অনেকে কসাই বলে উপাধি দিচ্ছেন, স্নাতক-লেভেলে প্রবেশের পর থেকে (আনুমানিক বিশ বছর বয়স)প্রায় ৯ থেকে ১৪ বছর ধরে তার শুধুমাত্র কর্মজীবনের জন্য নিজেকে যোগ্য করে তুলতে হয়। স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জনের সময় একজন বেসরকারী ডাক্তারকে (মনে রাখা দরকার অধিকাংশ ডাক্তারই বেসরকারী) ৩ থেকে ৬ বছর বিনা বেতনে খাঁটতে হয়। কিন্তু নিজের জীবনতো চালাতে হবে। সবার পারিবারিক ব্যকগ্রাউণ্ডতো তাকে এ সময়টিতে অর্থনৈতিক সাপোর্ট দিতে পারে না। কারো আবার নিজের পরিবারকেই সাপোর্ট দিতে হয়। এ সময়ে অনেকেই হাসপাতালে সপ্তাহে ন্যূনতম ৩৬ থেকে ৪৮ ঘন্টা সময় দেবার পাশাপাশি বাইরে কোন ক্লিনিকে বা হাসপাতালে ৪৮ ঘন্টা সময় দেন। অর্থাৎ এ সময় তার সপ্তাহে প্রায় ৯৬ ঘন্টা ঘরের বাইরে সেবা দিয়ে যেতে হয়। অথচ এ সময় তার বেতন সর্বনিম্ন ১২ হাজার থেকে সর্বচ্চো ৩০ হাজার (হাসপাতাল ও যোগ্যতা ভেদে)। গড়ে ২০ হাজার ধরলে তার বেতন ঘন্টা প্রতি ৫০ টাকার মত। সাথে যাচ্ছে প্রচণ্ড মানসিক ও শারিরীক পরিশ্রম।

    লক্ষ্য করে দেখুন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একজন অনার্স বা মাস্টার্স করে বেরিয়ে বেসরকারী ইউনিভার্সিটিতে লেকচারার হিসেবে জয়েন করলে বেতন ৩৫০০০ থেকে ৪০০০০ হাজার টাকায় শুরু হয়।(আমি যতটুকু দেখেছি)অথচ একজন ডাক্তার অনার্স করে বেরিয়ে বেসরকারী মেডিকেলে গড়ে ২৫০০০ টাকার মত বেতনে টিচার হিসেবে জয়েন করতে পারে। এটাকি বৈষম্য নয়?

    যাইহোক ডিগ্রীর কথা বলতে গিয়ে বেতনের কথা চলে এলো। হাজার হোক ডাক্তাররা হোমো সেপিয়েন্স প্রজাতির অন্তর্ভূক্ত। তাদেরও বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করতে হয়। উদ্ভিদের মত তাদের খাদ্য শরীরে সংশ্লেষ হয় না।

    সর্বশেষ আপডেট: ২২/০৫/২০১৪

  • সমকামিতা ও টুইন স্টাডি

    রিপন ও দীপন দুই ভাই। দু’জনই ঢাকা মেডিকেলে পড়ালেখা করেছে।  দু’জনের চেহারা প্রায় একই রকম এবং তারা একই ধরনের পোশাক পড়ে। ফলে কেউ যদি ওদের কাউকে আলাদা ভাবে দেখে প্রথম দেখায় সে কি রিপন না দীপন পার্থক্য করা মুশকিল হয়ে যাবে।  এ অবস্থায় ওদের চেনার একটি সহজ উপায় আছে, তা হল ওদের সাথে কথা বলা। হ্যাঁ, রিপন একটু দ্রুত কথা বলে এবং চঞ্চল। অন্যদিকে, দীপন ধীরে কথা বলে এবং শান্ত প্রকৃতির।

    সমাজের প্রচলিত ধারণা হল- সদৃশ যমজ (Identical Twin) সন্তানেরা যেহেতু দেখতে একই রকম এবং তাদের জেনেটিক গঠনও প্রায় একই, সুতরাং তাদের আচার-আচরণও একই রকম হবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয় না। এর কারণ পরিবেশগত প্রভাবকগুলো আমাদের আচার আচরণের ধরণ নিয়ন্ত্রণ করে। অবিকল যমজ বাচ্চাদের অভিভাবকরা তাদেরকে ছোট বেলা থেকে একই ধাঁচে গড়ে তুললেও তারা যখন নিজেরা নিজেদের ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিতে শুরু করে তখন থেকে তাদের জীবনধারণের প্রকৃতিতে পরিবর্তন চলে আসে। [১]

    তদুপরি, সব যমজ সন্তানেরা সদৃশ হয় না।  বিজ্ঞানীরা যমজ হওয়ার প্রক্রিয়ার উপর ভিত্তি করে যমজ  সন্তানদের শ্রেণীবদ্ধ করেন। দুটো সন্তান কি একটি জাইগোট থেকে হল নাকি দুটো জাইগোট থেকে হল তার উপর ভিত্তি করে যমজ সন্তানদেরকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়:

    ১. মনোজাইগোটিক টুইন

    ২. ডাইজাইগোটিক টুইন

    নারী-পুরুষ মিলনের মধ্য দিয়ে নারীর জরায়ুতে যে শুক্রাণু স্খলিত হয় তার মধ্যে থেকে একটি শুক্রাণু একটি ডিম্বাণুর মিলনের ফলে তৈরি হয় জাইগোট। উক্ত জাইগোট প্রথম কয়েক দফা বিভাজিত হওয়ার পর যদি আলাদা হয়ে যায় এবং আলাদা ভাবে বাড়তে থাকে, তখন যে যমজ সন্তান হয় তারা হল মনোজাইগোটিক। মনোজাইগোটিক যমজরা যেহেতু একই জাইগোট থেকে হচ্ছে তাদের লিঙ্গ একই হয়, মুখাবয়ব প্রায় একই রকম হয়। তাদের ডিএনএ-তে প্রায় ৯৯ শতাংশ মিল থাকে, তবে হুবহু মিল থাকে না। [২] অন্যদিকে ডাইজাইগোটিক টুইন হয় যখন একটি শুক্রাণুর পরিবর্তে দুটো শুক্রাণু দুটো ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করে। এক্ষেত্রে দুটো জাইগোট তৈরি হয় এবং দুটো জাইগোট মায়ের গর্ভে পৃথকভাবে বড় হতে থাকে। ডাইজাইগোটিক যমজদের লিঙ্গ ভিন্ন হতে পারে, চেহারায় মিল না থাকার সম্ভাবনা বেশী। বছরে যতগুলো যমজ বাচ্চা জন্ম নেয় তার এক-তৃতীয়াংশ হয় মনোজাইগোটিক টু্‌ইন এবং বাকী দুই-তৃতীয়াংশ হয় ডাইজাইগোটিক টুইন।       

    মনোজাইগোটিক যমজ সন্তানদের জন্মগত ভাবে মিল থাকলেও যতই দিন যেতে থাকে তাদের আচার আচরণ, শখ-আহ্লাদ, পোশাকের ধরণ, জীবনের লক্ষ্য ইত্যাদির পার্থক্য স্পষ্ট হতে থাকে। এর প্রধান কারণ হল পরিবেশগত প্রভাবগুলোর প্রতি যমজ সন্তানদের পৃথক প্রতিক্রিয়া এবং এর অন্যতম প্রক্রিয়া হল এপিজেনেটিক প্রক্রিয়া। এপিজেনেটিক প্রক্রিয়ায় ডিএনএ এসিটাইলেশন ও হিস্টোন মিথাইলেশন নামক ঘটনার মধ্যে দিয়ে জিন সাইলেন্সিং হয়। ফলে যমজ সন্তান দ্বয়ে জিনের এক্সপ্রেশন বিভিন্ন হয়। ধূমপান, শারীরিক পরিশ্রম, খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদি প্রভাবকগুলো এপিজেনেটিক পরিবর্তনে ভূমিকা রাখে। [৩] অর্থাৎ ডিনএনতে যতই মিল থাকুক না কেন পরিবেশ আচরণের প্রকৃতিকে প্রভাবিত করে।

    বিহেভিওরাল জেনেটিক্সের রিসার্চে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অন্যতম হল অবিকল যমজ ব্যক্তিরা। এই বিভাগের বিজ্ঞানীদের ধারণা হল যেহেতু অবিকল যমজদের (আইডেনটিক্যাল বা মনোজাইগোটিক টুইন) ডিএনএ প্রায় একই রকম এবং যেহেতু অবিকল যমজ ও বিসদৃশ যমজ (নন-আইডেনটিক্যাল বা ডাইজাইগোটিক টুইন) উভয় দলই একই পারিবারিক পরিবেশে বড় হয়,  সেহেতু এদের মধ্যে স্টাডি করলে মানুষের আচরণগত বৈশিষ্ট্য নির্ধারণে জিনের ভূমিকা যাচাই করা সহজ হবে। যেমন: অবিকল যমজদের মধ্যে যদি এমন একটি আচরণ নিয়ে পরীক্ষা করা হয়, যেটা জিনের দ্বারা নির্ধারিত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে এবং সেক্ষেত্রে অবিকল যমজদের মধ্যে উক্ত আচরণের মাত্রা যদি যারা বিসদৃশ তাদের চেয়ে বেশী হয় তাহলে উক্ত জিনটি উক্ত আচরণে প্রভাব রাখছে বলে সিদ্ধান্ত আনা যাবে বা ধারণাকে দৃঢ় করা যাবে। কিন্তু টুইন স্টাডিগুলোতে মানুষের অধিকাংশ আচরণ নিয়ন্ত্রণে পরিবার ও পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিশ্চিত হওয়া গেছে, কারণ মনোজাইগোটিক যমজদের ক্ষেত্রে আচরণ ১০০ শতাংশ মিলে যায় না। [৪] লক্ষণীয়, যদি জিন আচরণকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতো তাহলে অবিকল যমজদের আচরণে ১০০ শতাংশ মিল পাওয়া যেতো।      

    সমকামিতার জিনগত উৎস নিয়ে যে পরীক্ষাগুলো হয়েছে তার মধ্যে সর্বপ্রথম পরীক্ষাটি করেছিলেন কালম্যান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে করা এই স্টাডিতে সাবজেক্ট হিসেবে যাদের নেয়া হয়েছিলো তারা সমকামী হওয়ার পাশাপাশি মানসিক রোগাক্রান্ত ছিল। কালম্যান  তার স্টাডিতে দেখিয়েছিলেন যে ৩৭ জোড়া অবিকল যমজদের ৯৭ শতাংশ সমকামী অন্যদিকে ২৬ জোড়া বিসদৃশ যমজদের ১৫ শতাংশ সমকামী। [৫] তার স্টাডি যদি সঠিক হতো তাহলে বোঝা যেতো সমকামিতার পিছনে জিনের শক্ত ভূমিকা আছে। কিন্তু কালম্যানের স্টাডিতে অনেকগুলো পদ্ধতিগত সমস্যা ছিল (যেমন: মানসিক রোগীদের থেকে অংশগ্রহণকারী নেয়া যা সাধারণ জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না।) এবং পরবর্তী কোন স্টাডিতে তার ফলাফলের পুনরাবৃত্তি হয়নি। [৬]   

    প্রসঙ্গত, যারা জেনেটিক্যালী সদৃশ তাদের মধ্যে যদি পরীক্ষিত বৈশিষ্ট্যটি বেশী পাওয়া যাওয়া যায় বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় তাদেরকে বলা হয় জেনেটিক্যালী কনকর্ডেন্ট। ১৯৯১ সালে ও পরে বেইলী এট. এল.  সমকামিতার উপর বংশগতিয় প্রভাব সম্পর্কিত কয়েকটি স্টাডি করেন। এ স্টাডিগুলোতে সদৃশ যমজদের মধ্যে সমকামিতার কনকর্ডেন্স বেশী পাওয়া গিয়েছিলো। যেমন: ১৯৯১ সালের ছেলে সমকামীদের নিয়ে কৃত স্টাডিতে সদৃশ যমজদের মধ্যে ৫২%, বিসদৃশ যমজদের মধ্যে ২২% এবং দত্তক রূপে গৃহীতদের (যমজ নয়) মধ্যে ১১% জেনেটিক কনকর্ডেন্স পাওয়া গেছে। অন্যদিকে ১৯৯৩ সালে মেয়ে সমকামীদের নিয়ে করা স্টাডিতে সদৃশ যমজদের মধ্যে ৪৮ শতাংশ, বিসদৃশ যমজদের মধ্যে ১৬ শতাংশ এবং দত্তক রূপে গৃহীতদের মধ্যে ৬ শতাংশে সমকামিতা পাওয়া গেছে। [৫]

    এই স্টাডিগুলো থেকে সমকামিতার সাথে জেনেটিক্সের সম্পর্কের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণে কিছু মৌলিক সমস্যা আছে। প্রথমত, এই সমকামিতা যদি পুরোপুরি জিন দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হত আমরা ১০০ শতাংশ জেনেটিক কনকর্ডেন্স পেতাম। সুতরাং এই স্টাডিগুলো থেকে প্রথমেই স্পষ্ট হয়ে যায় সমকামিতা পুরোপুরি জেনেটিক বলার সুযোগ নেই, হয়ত বলা যেতে পারে জেনেটিক প্রভাব আছে। [৭]  দ্বিতীয়ত, এই স্টাডিগুলোতে যেই পদ্ধতিতে অংশগ্রহণকারীদের সংগ্রহ করা হয়েছিলো সেই পদ্ধতিতেই সমস্যা পরিলক্ষিত হয়। অংশগ্রহণকারী নির্বাচনের ক্ষেত্রে গে বা লেসবিয়ানদের ম্যাগাজিনগুলোতে বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছিলো যে যাদের যমজ ভাই বা বোন আছে তারা যেন স্টাডির জন্য আসে। এ ধরনের অধিক বিজ্ঞাপিত স্টাডির ক্ষেত্রে পরীক্ষা করে দেখা গেছে যারা সদৃশ যমজ তারা বিসদৃশ যমজদের চেয়ে বেশী অংশগ্রহণ করে। ফলে প্রথমেই একটি ‘ভলান্টিয়ার ইরর’-এর কারণে ‘সিলেকশন বায়াস’ তৈরি হয়। [৬] ২০০০ সালের দিকে বেইলী এট.এল.  পদ্ধতিগত ত্রুটি ঠিক করে অস্ট্রেলিয়ার টুইন রেজিস্ট্রি থেকে অংশগ্রহণকারী নিয়ে যখন একই পরীক্ষার পুনরাবৃত্তি করেন তখন তাদের ফলাফল যথেষ্ট কমে আসে। সদৃশ যমজদের ক্ষেত্রে ২৪ শতাংশ ও বিসদৃশ যমজদের ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ কনকর্ডেন্স পাওয়া যায়।[৫]

    বেইলী এট. এল. ছাড়াও আরও অনেকে এ সংক্রান্ত টুইন স্টাডি করেছেন। ড. নেইল হোয়াইটহেড বিশেষত ২০০০ সাল পরবর্তী স্টাডিগুলো নিয়ে একটি বিস্তারিত রিভিউ চালিয়েছেন।[৬]  সেখানে ছেলে সমকামীদের ক্ষেত্রে গড় কনকর্ডেন্স পাওয়া গেছে ২২ শতাংশ এবং মেয়ে সমকামীদের ক্ষেত্রে ৩৩ শতাংশ (স্ট্যান্ডার্ড ডেভিয়েশন অনেক বেশী যথাক্রমে ১৬ ও ২০ শতাংশ)। অর্থাৎ সমকামিতার ক্ষেত্রে দুর্বল জেনেটিক প্রভাব পাওয়া গেছে। প্রসঙ্গত, টুইন রিসার্চে ২৫, ৫০ ও ৭৫ শতাংশ প্রভাবকে যথাক্রমে দুর্বল, মধ্যম ও শক্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সে হিসেবে সমকামিতার উপর পরিবেশের প্রভাব অনেক শক্ত। কারণ, সমকামিতার উপর পরিবেশের প্রভাব নিয়ে করা যতগুলো স্টাডি আছে ড. হোয়াইটহেড উক্ত পেপারে সেগুলোকে রিভিউ করে দেখান যে, সমকামিতার উপর ‘নন-শেয়ার্ড’[৮] পরিবেশের প্রভাব ছেলে ও মেয়েদের ক্ষেত্রে যথাক্রমে ৬৪ ও ৬৩ শতাংশ (স্ট্যান্ডার্ড ডেভিয়েশনও কম যথাক্রমে ১৪ ও ১২ শতাংশ)।  যদিও ড. হোয়াইটহেডের রিভিউতে সদৃশ যমজে সমকামিতার হার দুর্বল (২২ ও ৩৩ শতাংশ) হলেও আছে মনে হচ্ছে, তথাপি তিনি দেখিয়েছেন যে টুইন সংক্রান্ত স্টাডিগুলোতে যে নিয়মগুলো অনুসরণ করার কথা সেগুলো বিবেচনা করলে প্রত্যেকটি টুইন স্টাডিতে কোন না কোন দুর্বলতা (তথা নিয়মের লঙ্ঘন) পাওয়া যায় এবং তার ফলে স্টাডিগুলোর হিসেব শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। ড. হোয়াইটহেড পরবর্তী স্টাডিগুলোতে নন-শেয়ার্ড পরিবেশের প্রভাব আরও বেশী পাওয়া যাবে বলেও উল্লেখ করেন।[৬]

    মজার বিষয় হল অস্ট্রেলিয়ার একটি রিসার্চ গ্রুপ যারা সমকামীদের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রাখে (তথা ‘হোমোফোব’) তাদের উপর পরিবেশ ও জেনেটিক্সের প্রভাব নিয়ে স্টাডি করে দেখেছেন, হোমোফোবিয়ার পিছনে জেনেটিক্সেরও ভূমিকা আছে। আরও বিস্ময়কর হল আমেরিকান এটি গ্রুপ উক্ত স্টাডির পুনরাবৃত্তি করে অনুরূপ ফলাফল পেয়েছেন।[৯] অর্থাৎ সমকামিতা বা সমকামিতার বিরোধিতা যেটা নিয়েই আপনি সদৃশ যমজদের উপর পরীক্ষা চালান না কেন জেনেটিক্সের অল্পবিস্তর প্রভাব পাওয়া যাবেই, যা এই অল্পবিস্তর প্রভাবের ন্যায্যতা নিয়ে প্রশ্ন করাকে সমর্থন করে।

    আমরা প্রবন্ধটি থেকে দেখলাম সমকামিতার উপর জেনেটিক্সের প্রভাবের পক্ষে টুইন স্টাডিগুলোর কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেই। বরং অনেক সমকামী ব্যক্তি, যারা পরবর্তীতে তাদের সম-লিঙ্গ-ঝোঁককে পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছে, তাদের অভিজ্ঞতা থেকে এটা পরিষ্কার যে চেষ্টা করলে সেক্সুয়্যাল অরিয়েন্টেশন পরিবর্তন করা যায়।[১০] সুতরাং সমকামিতাকে জন্মগত বৈশিষ্ট্য বলে প্রচার করে মানুষদের সমকামিতার মত অপরাধের দিকে ঠেলে দেয়ার পক্ষে যে প্রতারণাপূর্ণ প্রচারণা রংধনু গংরা চালিয়ে যাচ্ছে, তা তাদের যুব সমাজকে নৈতিকভাবে ধ্বংস করার অসৎ উদ্দেশ্যে পরিচালিত মিশনের একটি অংশ মাত্র।     

    তথ্যসূত্র:

    ১. Robin Mckie. Why do identical twins end up having such different lives?. The Observer. [Internet] 2013 June 2 [Cited 2014 April 13]; Available at: http://www.theguardian.com/science/2013/jun/02/twins-identical-genes-different-health-study   

    ২. Anahad O’Connor. The Claim: Identical Twins Have Identical DNA. New York Times. [Internet] 2008 March 11 [Cited 2014 April 14]; Available at: http://www.nytimes.com/2008/03/11/health/11real.html?_r=0

    ৩. Sarah Graham. Identical Twins Exhibit Differences in Gene Expression. Scientific American. [Internet] 2005 July 5 [Cited 2014 April 14]; Available at: http://www.scientificamercian.com/articles/identicial-twins-exhibit-d/

    ৪. Khytam Dawood, J. Michael Bailey, and Nicholas G. Martin. Genetic and environmental influences in sexual orientation. Handbook of Behavior Genetics. Page 270. Available at: genepi.qimr.edu.au/contents/p/staff/NGMHandbookBehGen_Chapter19.pdf 

    ৫. Ibid. Page 271

    ৬. Neil E. Whithead. Neither Genes nor Choice: Same-Sex Attraction Is Mostly a Unique Reaction to Environmental Factors. Journal of Human Sexuality 2011[Cited 2014 April 14]; 3:81-114. Available at: http://www.mygenes.co.nz/whitehead_twinjhs.pdf

    ৭. What does science say about homosexuality.[Internet] 2006 April 4 [Cited 2014 April 14]; Available at: http://www.inqueery.com/html/science_and_homosexuality.html

    ৮. ‘নন-শেয়ার্ড’ পরিবেশ বলতে বুঝানো হচ্ছে মনোজাইগোটিক টুইনরা যখন একই পরিবেশে বড় না হয়ে ভিন্ন পরিবেশে বড় হয়।

    ৯. Rich Deem. Genetics and Homosexuality: Are People Born Gay? The Biological Basis for Sexual Orientation. Evidence For God. [Internet] Last Updated 2013 November 25 [Cited 2014 April 14]; Available at: http://www.godandscience.org/evolution/genetics_of_homosexuality.html#n22

    ১০. Neil E. Whitehead. Chapter Twelve: Can sexual orientation change?. My Genes Made Me do It. [Internet] Available at: http://www.mygenes.co.nz/PDFs/Ch12.pdf 

  • সমকামিতা ও মানুষের মস্তিষ্ক

    নিউরোপ্লাস্টিসিটি সম্পর্কে আমরা কমবেশী জানি। সহজ কথায় মানুষের ব্রেইনের কানেকশনে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা যায় চর্চার মধ্য দিয়ে। লণ্ডনের বাস ও ট্যাক্সি ড্রাইভার দিয়ে নিয়ে একটি নিউরোইমেজিং স্টাডি আছে, সেখানে দেখা গেছে যারা অনেকদিন ধরে শহরের আঁকাবাঁকা পথে অলিতে-গলিতে গাড়ি চালিয়ে অভ্যস্ত তাদের হিপ্পোক্যাম্পাসের পিছনের দিকের অংশ বেশ বড় হয়ে গেছে।[১] কারণ, স্থানসংক্রান্ত স্মৃতি ধারণে এই অংশটার ভূমিকা আছে।

    ঠিক তেমনি মস্তিষ্কের যেই অংশটা মানুষের যৌনতা সংক্রান্ত বিষয়ে ভূমিকা রাখে সেই অংশটা বেশী ব্যবহার করলে বা সেই অংশ স্বাভাবিক উপায়ে ব্যবহৃত না হয়ে অন্য উপায়ে ব্যবহৃত হলে সেই অংশে পরিবর্তন আশা করাটাই স্বাভাবিক।

    এখন ধরুন, আপনি কিছু সেক্স ওয়ার্কারদের নিয়ে ইমেজিং স্টাডি করলেন। আপনি এদের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অংশটা অন্যদের চেয়ে বড় পেতে পারেন। বাংলাদেশে যারা Male who sex with Male (MSM) বা সহজ ভাষায় হোমোসেক্সুয়েল (গে বা সমকামী)-দের নিয়ে ঘাটাঘাটি করেছেন তারা জানেন, এরা অধিকাংশই হয় সেক্স-ওয়ার্কার। সুতরাং, এদের স্টাডিতে ব্রেইনের নির্দিষ্ট অংশ বড় পাওয়াটা অস্বাভাবিক না। এ অবস্থায় আপনার অনুসিদ্ধান্ত নিচের কোনটি হওয়া স্বাভাবিক:

    ১. হোমোসেক্সুয়্যালিটির কারণে উক্ত অংশ বড় পাওয়া গিয়েছে

    ২. উক্ত অংশ বড় হওয়ার কারণে তারা হোমোসেক্সুয়েল

    যারা দ্বিতীয়টির ব্যাপারে মত দিবে, তাদের দুটো অবস্থা হতে পারে:

    ১. তারা বিজ্ঞানের ইনফারেন্স কিভাবে টানতে হয় জানেনা

    ২. তারা হোমোসেক্সুয়েলীটিকে জন্মগত বোঝাতে চাচ্ছে

    প্রসঙ্গত ইঁদুরের ব্রেইনে এই অংশটি তথা নিউক্লিয়াস গ্রুপের নাম Sexually Dimorphic Neucleas (SDN), যা হাইপোথ্যালামাসের অংশ।

    ১৯৯১ সালে সাইমন লিভে নারী ও পুরুষের মরদেহের মগজ নিয়ে একটি স্টাডি করেন। পুরুষদের মধ্যে ১৯ জনকে হোমোসেক্সুয়েল ও ১৬ জন হেটারোসেক্সুয়েল বলে তিনি ধরে নেন( Presumed !)। [২],[৩] তার স্টাডি অনুযায়ী হাইপোথ্যালামাসের সামনের দিকের অংশে ‘ইন্টারস্টিসিয়াল নিউক্লিয়াস অব হাইপোথ্যালামাস’-এর নিউক্লিয়াসের চারটি গ্রুপের মধ্যে ৩নং গ্রুপটি মেয়ে হেটারোসেক্সুয়েলদের চেয়ে ছেলে হেটারোসেক্সুয়েলদের এবং ছেলে হেটারোসেক্সুয়েলদের চেয়ে ছেলে হোমোসেক্সুয়েলদের প্রায় দ্বিগুণ বড় থাকে। [৩] তিনি এর থেকে সিদ্ধান্ত দেন যে সেক্সুয়েল অরিয়েন্টেশনের পার্থক্য হওয়ার একটি বায়োলজিক্যাল কারণ আছে: সহজ কথায় গ্রুপ ৩ বড় বলেই ‘হোমো’রা হোমো।

    পাঠক এবার চিন্তা করে দেখুন, আপনার কাছে নিউরোপ্লাস্টিসিটি ও হোমোসেক্সুয়েলদের সেক্সুয়েল প্র্যাকটিস সম্পর্কে যে জ্ঞান আছে তাতে কি আপনি এরকম সিদ্ধান্তে হঠাৎ চলে যাবেন?

    মজার বিষয় হল, ইউনিভার্সিটি অব আমস্টারডাম-এর নিউরো-বায়োলজির প্রফেসর সোয়াব, ট্রান্সসেক্সুয়েলিটির প্রফেসর গোরেন এবং  হফম্যান  ১৯৯৫ সালে দেখান যে, জন্মের সময় SDN-এর নিউক্লিয়াস সংখ্যা, ২ থেকে ৪ বছর বয়সে SDN-এর নিউক্লিয়াস সংখ্যার ২০ শতাংশ থাকে। অত:পর ২ থেকে ৪ বছর বয়স পর্যন্ত একই হারে এই সংখ্যা বাড়তে থাকে। ৪ বছরের পরে গিয়ে মেয়েদের ক্ষেত্রে এই অংশটি ছোট হয়ে যেতে থাকে। তারা আরও বলেন: “No difference in SDN cell number was observed between homosexual and heterosexual men.” অর্থাৎ হোমো এবং হেটারোদের কোষ সংখ্যায় কোন পার্থক্য পাওয়া যায়নি। তাদের মতে সেক্সুয়েল অরিয়েন্টেশন নিয়ন্ত্রণে জেনেটিক্সের সাথে পারিপার্শ্বিক এবং মন-সামাজিক প্রভাবকগুলোও ভূমিকা রাখে। [৪]

    সুতরাং নিউরোপ্লাস্টিসিটি বিষয়টি যে এখানে ভূমিকা রাখছে সেই দিকেইতো সিদ্ধান্ত যাওয়ার কথা।  ড. কেনেথ ক্লিভিনটনও একই কথা বলছেন:

    “There is a body of evidence that shows the brain’s neural networks reconfigure themselves in response to certain experiences. Therefore, the difference in homosexual brain structure may be a result of behavior and environmental conditions.” [৫]

    অন্যদিকে সাইমন লিভে তার রিসার্চ প্রকাশ করার সাথে সাথে নিউজ মিডিয়া (নিউইয়র্ক টাইমস) তার স্টাডি নিয়ে যেভাবে রিপোর্ট করেছে [৬] তিনি যখন পরিষ্কার করেছেন যে তার রিসার্চ হোমোসেক্সুয়েলিটিকে জেনেটিক প্রমাণ করেনি তখন কিন্তু মিডিয়ায় সেভাবে কভারেজ পায়নি। তিনি বলেন:

     “It’s important to stress what I didn’t find. I did not prove that homosexuality is genetic, or find a genetic cause for being gay. I didn’t show that gay men are born that way, the most common mistake people make in interpreting my work.” [৭]

    সাইমন লিভের আর্টিকেলটির আরও কিছু দুর্বলতা নিয়ে রবার্ট নাইট আলোচনা করেছেন।[৮] তিনি দেখান যে লিভের স্টাডিতে ৬ জন সমকামী এইডস-এর মারা যায়। অন্যদিকে ড. বাইন দেখিয়েছেন যে এইডস আক্রান্ত রোগীর সাইড ইফেক্ট হিসেবে উক্ত গ্রুপ থ্রি নিউক্লিয়াস বড় হতে পারে। এছাড়াও, সাইমন লিভের এ বিষয়ে কোন ফলোআপ স্টাডি নেই। [৯]

    তদুপরি, সাইমন লিভে নিজে ছিলেন প্রকাশ্য হোমোসেক্সুয়েল এবং তার এই রিসার্চের পিছনে স্পষ্ট এজেণ্ডা ছিল হোমোসেক্সুয়েলিটিকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা। তিনি বলেন:

     “It’s important to educate society, I think this issue does affect religious and legal attitudes.” [৫]

    সুতরাং পুরো বিশ্বে অস্বাভাবিক যৌনাচারকে স্বাভাবিক করার যে প্রচেষ্টা চলছে, অপেক্ষাকৃত রেজিস্টান্ট মুসলিম দেশগুলোতেও ঠিক একই এজেণ্ডা নিয়ে নেমেছে অভিজিৎ গং। বিভ্রান্তিকর, দুর্বল রিসার্চ ও মিথ্যাচারের উপর ভিত্তি করে তারা হোমোসেক্সুয়েলীটির মত মানসিক রোগের চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করছে অনেক মানুষকে, তাদেরকে ঠেলে দিচ্ছে এইডস এর মত ভয়াবহ রোগের দিকে। [১০]

    [হোমোসেক্সুয়েলিটির আরও দুটো তথাকথিত এভিডেন্স ‘টুইন স্টাডি’ এবং ‘হোমোসেক্সুয়াল জিন’ নিয়ে পরবর্তীতে লিখা থাকবে]

    তথ্যসূত্র:

    ১. Maguire EA1, Woollett K, Spiers HJ. London taxi drivers and bus drivers: a structural MRI and neuropsychological analysis. Hippocampus 2006[cited 2014 March 24];16(12):1091-101. Available at: PubMed

    ২. What does science say about homosexuality.[Internet] 2006 April 4 [Cited 2014 March 24]; Available at: http://www.inqueery.com/html/science_and_homosexuality.html

    ৩. Simon L. A Difference in hypothalamic structure between heterosexual and homosexual men. Science. 1991 Aug 30 [cited 2014 March 24];253(5023):1034-7. Available at: Pubmed

    ৪. Swaab DF1, Gooren LJ, Hofman MA. Brain research, gender and sexual orientation. J Homosex. 1995[cited 2014 march 24];28(3-4):283-301. Available at: Pubmed

    ৫. D. Gelman, D. Foote, T. Barrett, M. Talbot, “Born or Bred,” Newsweek, 24 February 1992, 46-53.

    ৬. Natalie Angier. Zone of brain linked to men’s sexual orientation. New York Times;. [Internet]. 1991 Aug 30 [cited 2014 March 24 ]; Available at: http://www.nytimes.com/1991/08/30/us/zone-of-brain-linked-to-men-s-sexual-orientation.html

    ৭. Sex and the Brain. Discover, March 1994, Vol. 15, No. 3, p. 64.

    ৮. Robert Knight. BORN OR BRED? Science Does Not Support the Claim That Homosexuality Is Genetic. [Internet] [Cited 2014 March 24]; Available at: http://www.cwfa.org/images/content/bornorbred.pdf

    ৯. Jonathan Marks. What it means to be 98% Chimpanzee. London: University of California Press; 2002; p 114.

    ১০. “Gay, bisexual, and other men who have sex with men (MSMa), particularly young black/African American MSM, are most seriously affected by HIV.” Fast Facts;[Cited 2014 March 24] Available at: http://www.cdc.gov/hiv/statistics/basics/ataglance.html

  • মাইণ্ড-বডি প্রবলেম: কিছু ভাবনা (২)

    মানুষের ইন্টেলিজেন্সের অন্যতম একটি প্রমাণ হলো বিভিন্ন বিষয়কে পরস্পর ‘এসোসিয়েট’ করতে পারার যোগ্যতা। যেমন: মানুষ তার মুখ দিয়ে উচ্চারিত কতগুলো শব্দ (Sound)-কে বিভিন্ন ব্যাক্তি, বস্তু, ক্রিয়া, বিশেষণ ইত্যাদির সাথে এসোসিয়েট করতে পারে (ধ্বনি)। আবার এই শব্দগুলোকে বিভিন্ন বক্ররেখার তথা প্রতীকের(symbol)-এর সাথে এসোসিয়েট করতে পারে (বর্ণ)। মানুষ এই এসোসিয়েশনগুলো ব্যবহার করে কোন একটি ঘটনাকে বর্ণনা করতে পারে।কোন একটি ঘটনাকে বুঝতে গেলেও মানুষের এই এসোসিয়েশনগুলো তথা ধ্বনি ও বর্ণ ব্যবহার করে। অর্থাৎ মানুষের বুদ্ধিমত্তার অংশ হলো তার ভাষা ব্যবহারের যোগ্যতা। 

    কিন্তু প্রশ্ন হলো একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম কি এসোসিয়েট করার বিষয়টি করতে পারবে? এসোসিয়েট করার যোগ্যতাটি কি গণনাযোগ্য (Calculable)? আরও সাধারণভাবে বললে কম্পিউটারের কি মন(Mind) থাকতে পারে? আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের প্রবক্তাদের অন্যতম কাজ এ বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করা। মাইণ্ড যদি একটি উচ্চমার্গীয় প্রোগ্রাম হয় তাহলে মেন্টাল এক্টিভিটি হলো উক্ত প্রোগ্রামের এক্সিকিউশন। কম্পিউটেশনাল থিওরী অব মাইণ্ড এর প্রবক্তা জেরী ফোডোর ও হিলারী পুটনামদের মতে আমাদের মস্তিষ্কের এলগোরিদমগুলোই হলো মাইণ্ড। (হিলারী পুটনাম অবশ্য পরবর্তীতে নিজেই এর যথেষ্ট সমালোচনা করেছেন)। [১]

    মাইণ্ডের কাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ‘Understanding’ বা ‘বোঝা’। Strong Artificial Intelligence(Strong AI)- এর প্রবক্তাদের মতে কম্পিউটারের মন থাকা সম্ভব। সুতরাং কম্পিউটার ‘বুঝে’। কম্পিউটারের বোঝার বিষয়টি পরীক্ষা করার জন্য অ্যামেরিকান ফিলোসোফার জন সার্ল-এর একটি সুন্দর থট এক্সপেরিমেন্ট আছে যাকে বলে সার্ল-এর চাইনিজ রুম। অর্থাৎ সার্লকে যদি একটি আবদ্ধ ঘরে রেখে কতগুলো চাইনিজ লেখা ইনপুট দেয়া হয় এবং চাইনিজ অক্ষরগুলোকে ব্যবহার করার জন্য কিছু ইন্সট্রাকশন দেয়া হয় এবং সে অনুযায়ী একটি ‘আউটপুট’ বাইরে দিতে বলা হয়- সার্ল সেটি করতে পারবেন। কিন্তু চাইনিজ ভাষা সম্পর্কে কোন প্রকার ধারণা না থাকায় তিনি পুরো প্রক্রিয়াটিতে চাইনিজ লেখাগুলোর কিছুই বুঝতে পারবেন না। কম্পিউটারও ইনস্ট্রাকশনগুলোকে এভাবে ‘ম্যানিপুলেট’ করতে পারবে এবং একটি আউটপুট দিতে পারবে, কিন্তু কিছু বুঝতে পারবে না। 

    স্ট্রংএআই-এর প্রবক্তারা অবশ্য বলছেন এখানে ‘বোঝা’ শব্দটিকে ‘আলাদা’ করে ফেলা হচ্ছে। হতে পারে আমাদের ব্রেইনে লেখার প্যাটার্নগুলোকে নিয়ে আলগারিদমের কাজ করাটাই হচ্ছে বোঝা। তবে জন সার্ল বলছেন এটাও একধরনের কার্টেসিয়ান ডুয়ালিজম। যেখানে আলগরিদমটাই ‘মাইণ্ড স্টাফ’ এর মত কাজ করছে, যা ‘ম্যাটার’-এর সাথে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত না। [২]

    তবে আমি ভাবছিলাম আমার ব্রেইন যদি একটি কম্পিউটার ধরে নেই এবং এতে যে কোন প্যাটার্নের এসোসিয়েশনকে শেখার প্রোগ্রামিং করা থাকে এবং আমি যদি উক্ত প্যাটার্ণ সম্পর্কে জেনে থাকি (তথা শিখে থাকি) তাহলে সেই এসোসিয়েশনের আলোকে উক্ত প্যাটার্ন বা সিম্বল ব্যবহার করে দেয়া কোন লেখার অর্থ ‘আমি বুঝতে পারবো’। কিন্তু, এই যে এসোসিয়েশন করার কাজটা, এটা কি স্ট্রংএআই হিসেবে আমি করতে পারবো?

    আমি মাতৃভাষা বাংলা দিয়ে ‘চিন্তা’-র কাজটি করি। আমি এখন মনের ভাব প্রকাশ করতে চাইলে বাংলা অক্ষর ব্যবহার করছি। কিন্ত ইচ্ছে করলে আমি অন্য কিছু সিম্বল তৈরী করার ক্ষমতা রাখি এবং সেগুলোতে কিছু অর্থ Attribute করার (তথা এসোসিয়েট করার) যোগ্যতা রাখি। কিন্তু স্ট্রংএআই কি সেটা পারবে?

    আত্মা ও মন নিয়ে পড়তে গিয়ে বিষয়গুলো নিয়ে ভাবছি, পড়ছি এবং আরো পড়বো ইনশাল্লাহ। এ বিষয়ে আপনাদের কোন চিন্তা আছে?

    রেফারেন্স:

    ১. http://en.wikipedia.org/wiki/Computational_theory_of_mind

    ২. Roger Penrose, The emperor’s New Mind, Oxford University Press, Oxford, p-24-25.

  • মাইণ্ড-বডি প্রবলেম: কিছু ভাবনা

    মাইণ্ড-বডি প্রবলেম: কিছু ভাবনা

    পাঁচ বছরের বয়সের আগে একটি শিশুর বাম অথবা ডান দিকের সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ার এপিলেপসির কারণে যদি অপারেশন করে ফেলে দেয়া হয় কি হতে পারে বলুনতো?

    আপনারা হয়তো ভাবছেন বাচ্চাটির একদিক পঙ্গু হয়ে পড়বে, একদিকের দৃষ্টি বাঁধাগ্রস্থ হবে, এক কানে শুনতে পারবে না, বাম দিক ফেলে দিলে কথা বলতে পারবে না ইত্যাদি। কিন্তু বাস্তবতা হল এ ধরনের সমস্যাগুলো সাধারণত হয় না। এর কারণ হলো নিউরোপ্লাস্টিসিটি।

    ডেভোলপমেন্টের সময় আমাদের মস্তিস্কের এক বিলিয়ন নিউরনের এক ট্রিলিয়ন কানেকশন যদি একটার পর একটা করে তৈরী হত তাহলে ব্রেইন তৈরী হতে হতে আমাদের হায়াত শেষ হয়ে যেত। কিন্তু মায়ের গর্ভে থাকাকালীন সময়টাতে আমাদের নিউরনের কোষগুলো তৈরী হলেও কানেকশনগুলো তথা ডেনড্রাইট ও এক্সনগুলো তাদের জায়গা খুঁজে নেয় জন্মের পরে।

    যে সদ্যজাত শিশুটির কোমলতা ও মায়া আমাদের আচ্ছন্ন করে রাখে, সেই শিশুটির মস্তিস্কে ঘটে যেতে থাকে বিস্ময়কর রকমের জটিল ঘটনা। আমাদের কান, চোখ, নাক, স্বাদ, স্পর্শ ইত্যাদি অনুভূতি বহনকারী নার্ভের এক্সনগুলো এ সময়ে ব্রেইনের কর্টেক্সে তাদের জায়গা করে নিতে থাকে। অন্যদিকে ব্রেইনের কোষগুলোর প্রতিটির প্রায় ১০০ থেকে ১০০০টি ডেনড্রাইট এই সাথে একই সময় তৈরী হয়ে ছড়িয়ে পড়ে এবং পার্শ্ববর্তী নিউরনের সাথে যোগাযোগ তৈরী করে। তবে যে ড্রেনড্রাইট এবং এক্সনগুলো ব্যবহার হয় না সেগুলো নিয়ন্ত্রিত প্রক্রিয়ায় নষ্ট হয়ে যায়। যে নিউরণগুলো ব্রেইন থেকে শরীরের অন্যান্য অংশকে যুক্ত করে তাদের সাথেও একই ঘটনা হয়।

    মজার বিষয় হলো, যে শিশুটি জন্মগত অন্ধ হয়ে জন্মায় তার স্পর্শানুভূতি পোস্ট সেন্ট্রাল জাইরাসের পাশাপাশি, দেখার জন্য নিয়োজিত ব্রেইনের অক্সিপিটাল কর্টেক্সেও জায়গা করে নেয়। ফলে ব্রেইল ব্যবহার করে পড়ালেখা করার মতো কাজটি জন্মান্ধ ব্যাক্তিরা অত্যন্ত দক্ষতার সাথে করতে পারে। তাদের কানের নার্ভগুলোর এক্সন সুপিরিওর টেম্পোরাল লোবের পাশাপাশি ব্রেইনের পিছনের অংশেও পৌছায়। ফলে এদের শ্রবণ শক্তিও হয় তুখোর।  

    কিন্তু একবার যখন এক্সনগুলো নিজেদের জায়গা করে নেয় তখন যদি তার জায়গা থেকে তাকে বিচ্ছিন্ন করা হয় কিংবা জায়গাটাকেই নষ্ট করে দেয়া হয়, সেক্ষেত্রে কি হবে? প্রকৃত পক্ষে এই ক্ষেত্রে এক্সনগুলো ব্রেইনের অন্য জায়গায় ভাগ বসায় এবং ব্রেইনের অন্য অংশগুলোও স্বাচ্ছন্দে তাদের জায়গার ভাগ দেয়। এ ঘটনাকেই বলে নিউরোপ্লাস্টিসিটি। 

    পাঁচ বছরের শিশুদের ব্রেইন সবচেয়ে প্লাস্টিক থাকে। ফলে এ সময়ে একটি হেমিস্ফিয়ার কেঁটে ফেলে দিলেও অন্য হেমিস্ফিয়ারটিতে ব্রেইনের রিঅর্গ্যানাইজেশন হয়। শিশুটি বড় হলে কথাও বলতে পারে, ঠিকমত দেখতে সমস্যা হয় না এবং কোন পাশ পঙ্গুও হয়ে পড়ে না।

    কিন্তু বড়দের ক্ষেত্রে কি এ ধরনের ঘটনা হয়? উত্তর: হয়। আগে মনে করা হত এডাল্ট ব্রেইনে রিঅর্গ্যানাইজেশন হয় না। কিন্তু নিউরোসায়েন্সের নতুন গবেষনা সমূহ এই নোশনকে ভুল প্রমাণিত করেছে। এ কারণেই দেখা যায় ঠিকমত ফিজিওথেরাপী নিতে পারলে স্ট্রোক রোগীরা আগের মতই চলতে পারছে। তবে এ বিষয়টি এত সহজ নয়। স্ট্রোক হয়ে যাওয়া পর যে হাতটি কার্যত নড়ছে না তাকে নড়ানোর চেষ্টা করাটা অনেক ধৈর্য্যের ব্যপার। প্রচণ্ড মানসিক শক্তির ব্যপার।

    হ্যাঁ, মানসিক শক্তির ব্যবহারেই ব্রেইনে সুনির্দিষ্ট পর্যবেক্ষনযোগ্য পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। ওয়েট এ মিনিট! মানসিক শক্তির ব্যবহারে ফিজিক্যাল পরিবর্তন? ইয়েপ, অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজঅর্ডারের রোগীদের ‘কনস্ট্রেইন ইনডিউসড থেরাপী’ প্রয়োগ করলে তাদের এই সমস্যা সমাধান হয়ে যায়। কারণ এই বিশেষ ধরনের বিহেভিওরাল থেরাপী ব্যবহার করে দেখা গেছে  পর্যাপ্ত মেন্টাল প্রশিক্ষন ব্রেইনের দায়ী সার্কিটগুলোকে রিঅর্গানাইজ করতে পারে। ডিজটোনিয়ার রোগীদের এ ধরনের প্রশিক্ষন দিয়ে চিকিৎসা করা গেছে।

    সুতরাং পর্যবেক্ষন বলছে, মানসিক শক্তি ব্রেইনের উপর সামহাউ অনির্ভরশীলভাবে প্রভাব বিস্তার করতে পারে। সুবহানআল্লাহ, মাইণ্ডবডি প্রবলেমের এই বিষয়গুলো আমাদের আত্মা সম্পর্কে এবডাক্টিভ ইনফারেন্স নিতে নি:সন্দেহে  উৎসাহিত করে।

    রেফারেন্স রিডিং:

    The Mind and the Brain: Neuroplasticity and the Power of Mental Force by

    Jeffrey M. Schwartz, M.D., and Sharon Begley

  • কে উপলব্ধি করে?

    আপনি একটি লাল গোলাপকে লাল বলছেন, আমিও লাল বলছি। কিন্তু আপনি কিভাবে নিশ্চিত হলেন যে আপনি ও আমি লাল বলতে একই রং বুঝছি? হতে পারে আপনি যেটাকে লাল বলছেন, আমি সেটাকে নীল দেখছি কিন্তু যেহেতু আমি নীলকেই ছোট থেকে লাল বলতে শিখেছি সেহেতু আমি আপনার দেখা লালটাকে লাল-ই বলছি, যদিও তা প্রকৃতপক্ষে আমার সাপেক্ষে নীল এবং আপনার সাপেক্ষে লাল।

    অন্য কথায়, আপনি রঙটাকে যেভাবে উপলব্ধি করছেন আমি হয়ত ঠিক সেভাবে উপলব্ধি করছি না। কিন্তু যেহেতু ছোট থেকে আমরা একটি নির্দিষ্টভাবেই বিষয়টাকে উপলব্ধি করতে শিখেছি সেহেতু আমাদের Interpretation কার্যত Same থাকছে।

    আমাদের উপলব্ধি যে একই নয় তা আমাদের চোখের সামনেই স্পষ্ট। রবীন্দ্রনাথ বা নজরুল যেভাবে সাহিত্যকে উপলব্ধি করেছেন, লাডউইক ভ্যান বেথোভেন বা ওলফ্যাঙ এমাদিওস মোজার্ট যেভাবে মিউজিককে উপলব্ধি করেছেন, লিউনার্দো দ্য ভিনসি বা ভিনসেন্ট ভ্যান গগ যেভাবে আর্টকে উপলব্ধি করেছেন তাদের মত আমরা কি উপলব্ধি করতে পারি?

    প্রশ্ন হল, উপলব্ধি কি জিনিস?

    উপরের থেকে আমরা দেখলাম উপলব্ধি একটি আপেক্ষিক বিষয়। এটা ব্যাক্তি সাপেক্ষ।

    আপনি একজন জন্মান্ধের কথা চিন্তা করুন। আপনি কি কখনও বলতে পারবেন সে কিভাবে পৃথিবীকে উপলব্ধি করে??? এমনকি আপনি এখন অন্ধ হয়ে গেলেও পারবেন না। কেননা আপনি প্রত্যেকটি বস্তুর একটি ভিসুয়্যাল ইমেজ অলরেডি উপলব্ধি করেছেন।

    এবার ধরি আপনি দাড়িয়ে চোখ দুটি বন্ধ করে আছেন। আপনি যদি এ অবস্থায় হাটতে চেষ্টা করেন আপনি হাটতে পারবেন। কারণ আপনার পায়ের তলার কিছু সেন্সরি নার্ভ আছে যা আপনার পজিশনের সেন্স আপনার ব্রেইনে পাঠাচ্ছে। ধরুন আপনার সেই সেন্সরি নার্ভ ইন্ডিং গুলো নষ্ট হয়ে গেছে। এবার ভাবুনতো, আপনি যদি চোখ বন্ধ করে এ অবস্থায় হাটতে চান আপনার কাছে কি মনে হবে? ইন ফ্যাক্ট আপনি হাতরে বেড়াবেন। যদি আপনার আশে পাশে কোন বাঁধা যেমন চেয়ার টেবিল না থাকে তাহলে আপনার কাছে মনে হবে আপনি বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছেন।

    ধরি আপনি হঠাৎ একটি দেয়ালে বাধা প্রাপ্ত হলেন। (আপনি চোখ বন্ধ করেই আছেন) কিন্তু আপনি কিভাবে বুঝলেন যে আপনি দেয়ালে বাধা প্রাপ্ত হয়েছেন? আপনি বুঝলেন কারণ আপনার স্কিনে, Pressure এবং Touch সেন্স করার জন্য প্যাসিনিয়ান করপাসল ও ফ্রি নার্ভ ইন্ডিং আছে। ধরুণ অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের কারণে আপনার এই নার্ভইন্ডিংগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। এবার আবার সেই সিনারিওতে ফিরে যান। এবার চিন্তা করে দেখুনতো আপনি হাটছেন চোখ বন্ধ করে।

    কি ভাই? কি মনে হল? হ্যা, এবার আপনার মনে হবে আপনি শূণ্যে আছেন। এ অবস্থায় আপনি যদি আঘাত পান বা দেয়ালে আটকেও যান আপনি কিছুই বুঝতে পারবেন না। ইন ফ্যাক্ট, আপনি যে হাটছেন সেটাই মনে হবে না। যদিও আরেকজনের সাপেক্ষে আপনি অবস্থান পরিবর্তন করছেন। কারণ সে সেটাকে ওভাবেই উপলব্ধি করছে।

    এবার আপনি চোখ খুলে বসুন। এক চোখ বন্ধ করে সামনে দেখুন। আপনার কি মনে হয় আপনি থ্রি ডাইমেনশনাল কিছু দেখছেন? মনে হতে পারে, কারণ আপনি অলরেডি দুচোখ দিয়ে সেটি দেখেছেন। কিন্তু বাস্তবতা হল এক চোখ দিয়ে আপনি টু ডাইমেনশন দেখতে পান। থ্রি ডাইমেনশন তখনই হয় যখন দুচোখে দেখা ছবিদুটো ব্রেনের অভ্যন্তরে ওভারল্যাপ হয়। ইনফ্যাক্ট দূরত্বের যে উপলব্ধি আপনি করেন তা এ দুটো চোখ দিয়ে দেখার কারণে। একটি চোখ দিয়ে দেখলে, ক্যামেরার মত আপনার পৃথিবীটাও দ্বিমাত্রিক হয়ে পড়ত। (মানুষের চোখের এই বৈশিষ্ট্যকে কেন্দ্র করেই কিন্তু ত্রিমাত্রিক চশমার সৃষ্টি)

    এবার আরেকটু কঠিন বিষয়ে যাই। আপনার কি মনে হয়? ‘সময়’ কি জিনিস? আপনার ধারণা সময় সামনে এগোচ্ছে। অথচ, এর কারণ হল পরপর দুটো ইমেজের মধ্যে প্রসেসিং হতে ব্রেইনে সৃষ্ট গ্যাপ থেকেই আপনার মাঝে ‘সময়’ এর ধারণার সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ সময় সামনে এগোয় বলে আপনি পরপর দুটো ঘটনা দেখেন না বা বরং আপনার সামনে পরপর দুটো ঘটনা হয় বলেই আপনি মনে করেন সময় এগোচ্ছে। এটাবোঝা সহজ হল মুভির উদাহরণ দিয়ে। মুভিতে আপনার চোখের সামনে ০.১ সেকেন্ডের ব্যাবধানে দুটো ইমেজ প্রবাহিত করা হচ্ছে ফলে আপনার মনে হচ্ছে সময় সামনে এগোচ্ছে।

    এবার আসি আসল প্রশ্নে। আপনি মুভিটাকে বলছেন স্থির কিছু ইমেজের সমষ্টি। যা একটির পর একটি প্রবাহিত হয়ে আপনার সামনে সামনে সময়ের একটি অবাস্তব ধারণা সৃষ্টি করছে। কিন্তু আপনি বলছেন বাস্তবে আপনি যে পৃথিবীকে দেখছেন সেটা ‘বাস্তব’।

    কিন্তু এটা যে আপেক্ষিক নয় তা আপনি কিভাবে নিশ্চিত হলেন?

    আপনি যে রঙ দেখছেন, যে দূরত্ব উপলব্ধি করছেন, যে শব্দ শুনছেন, যে গন্ধ, স্বাদ, ব্যাথা, স্পর্শ, চাপ, কম্পাঙ্ক অনুভব করছেন, এমনকি যে সময় উপলব্ধি করছেন তার সবইতো আপনার ব্রেইনে সৃষ্ট অনুভূতি। বস্তুত ব্রেইনে এগুলো ইলেকট্রোকেমিক্যাল গ্র্যাডিয়েন্টরুপে প্রবাহিত হয়ে উপলব্ধির সর্বশেষ কেন্দ্রগুলোতে যাচ্ছে। অন্য কথায় এগুলো আপনার ব্রেইনে সৃষ্ট ‘Illusion’। আপনি বলছেন চলার সময় আপনি সামনে এগোচ্ছেন। অথচ হয়ত আপনি স্থিরই আছেন, বরং সবকিছু আপনাকে ছেড়ে পিছনে যাচ্ছে। আর আপনি চলবেনই বা কিভাবে? যে ত্রিমাত্রিক জগৎ আপনি আছেন, তাতো আপনার দুচোখের কারণে। ‘Space’ ও ‘time’ তো আপনার ব্রেইনে সৃষ্ট ধারণা মাত্র।

    যদি তাই না হয় তাহলে ঘুমের সময় আপনি স্বপ্নে এত কিছু উপলব্ধি করেন কিভাবে? অথচ এ সময় আপনার শরীর বিছানায় ঠিকই স্থির হয়ে আছে। উপরন্তু আপনি স্বপ্ন দেখছেন পৃথিবীর পর্যবেক্ষকের সাপেক্ষে খুবই অল্প সময়, কিন্তু স্বপ্নে আপনি বিশাল সময় পার করে দিচ্ছেন। কার্যত আপনার ব্রেইনের নির্দিষ্ট সেন্টারগুলোতে যদি কম্পিউটার জেনারেটেড নির্দিষ্ট মাত্রার ইলেকট্রোকেমিক্যাল সিগন্যাল তৈরী করা যায়, আপনার মনে হবে আপনি বাস্তব জগতেই আছেন। (ম্যাট্রেক্স মুভিটার কথা মনে পড়ছে কি?)

    অনেকে চিন্তিত যে মৃত্যুর পর কবরের জীবন আবার কিভাবে হয়? কবর খুড়ে তো আমরা কঙ্কাল দেখি। তাহলে কবরে শাস্তি বা পুরস্কার কিভাবে সম্ভব? (এরা আসলে ‘এক চোখ’ দিয়ে দেখে।) অথচ আমার মৃত্যুর সাথে সাথেই আমার জন্য সৃষ্ট পৃথিবীর স্থায়িত্ব শেষ হয়ে যায়। কার্যত এর পর পরই হয়ত আমি ‘Reboot’ হই বারযাখের জীবনে। (আল্লাহই ভাল জানেন)

    আমিই সময়ের অধীন কারণ আমার সামনে আমার জগতকে প্রবাহিত করা হয়। আল্লাহ সময়ের অধীন নন, কারণ তার সামনে সম্ভাব্য সকল জগত তৈরী আছে একই সাথে। (আল্লাহই ভাল জানেন)

    কে এই উপলব্ধি করে? হ্যা, উপলব্ধি করে আমাদের অন্তর্গত একটি সত্ত্বা যাকে বস্তুগত মাপকাঠি দিয়ে পরিমাপ করা যায় না, গনিত দিয়ে প্রকাশ করা যায় না এবং জৈবিক চোখ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা যায় না। আমাদের ভাষায় একে আমরা বলি ‘আত্মা’।   

    আমার ব্রেইনের ভেতরের যে ‘আমি’ উপলব্ধি করছে সে আমার আত্মা বই কিছু নয়। অথচ, বস্তুবাদীরা আত্মাকে ম্যাটেরিয়াল টার্মে এক্সপ্লেইন করতে না পেরে তা অস্বীকার করার জন্য নানাবিধ বিভ্রান্তিকর ও স্ববিরোধী তত্ত্ব দাড় করাতে থাকে।  

    ‘আত্মা’ হল আল্লাহর আদেশ। এর বেশী কিছু আল্লাহ আমাদের জানার তৌফিক দেন নি।

    “এরা তোমাকে রূহ সম্পর্কে প্রশ্ন করছে৷ বলে দাও, “এ রূহ আমার রবের হুকুমে আসে কিন্তু তোমরা সামান্য জ্ঞানই লাভ করেছো৷” (সুরা বনী ইসরাইল, আয়াত ৮৫)

    তাহলে এবার বলুন আপনার আমার সকল প্রচেষ্টা যদি শুধুমাত্র এই ইলিউসরি টেস্টিং প্লেসে টেম্পোরারি সুখানুভূতির জন্য হয়, আমরা হাশরের ময়দানে দাড়িয়ে আল্লাহর কাছে কি জবাব দেব????

  • নারী ও পুরুষের পার্থক্য (বিজ্ঞানের আলোকে)

    এই লেখাটি একজন ভাইয়ের পুরুষ-নারী সমতা শীর্ষক একটি লেখা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে লিখেছিলাম। লেখাটিতে উক্ত ভাইয়ের লেখা থেকে কিছু অংশ উদ্ধৃতি হিসেবে এসেছে। তাকে এখানে জনাব ‘ক’ হিসেবে উল্লেখ করা হলো। এছাড়া নিবন্ধটিতে নেটে ঘাঁটাঘাঁটি করে বিভিন্ন লেখা থেকে কোট করা হয়েছে বেশী। তবে সেগুলোকে গুছিয়ে মূল বক্তব্যটিকে স্পষ্ট করার চেষ্টা করা হয়েছে। (উদ্ধৃতির এমফ্যাসিসগুলো আমার দেয়া)

    ………………….

    জনাব ‘ক’ বলেছেন- ‘কাজের ক্ষেত্রে ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের মধ্যে আমি কোন পার্থক্য দেখিনি। আমার টিমে বেশ কয়েকজন নারী সফটওয়্যার ডেভেলপার ছিল। তারা তাদের পুরুষ সহকর্মীদের চেয়ে কোন অংশেই কম ছিল না। বরং অনেকে পুরুষদের চেয়ে ভালো ছিল।’

    এখানে একটি সমস্যা হল- কয়েকজন নারীকে দেখে একটি জেনারেলাইজড আইডিয়া নিয়ে নেয়া হয়েছে। অনেকবছর ধরেই ভর্তি পরীক্ষাগুলোতে ছেলে ও মেয়ে কোন বিভেদ নেই, তথাপি মেয়েরা ইঞ্জিনিয়ারিং-এ এত কম যাচ্ছে কেন?  বাংলাদেশ বাদ দিয়ে আমরা পাশ্চাত্য নিয়ে অনুসন্ধান করে দেখতে পারি।

    In USA: The percentage of female graduate students in engineering in 2001 was 20%. Doctoral degrees awarded to women in engineering increased from 11.6% to 17.6% of total degrees awarded between 1995 and 2004.  The workforce remains as the area of highest under representation for women; only 11% of the engineering workforce in 2003 were women. In Australia, Only 9.6% of engineers in Australia are women, and the rate of women in engineering degree courses has remained around 14% since the 1990s. (Source: en.wikipedia.org/wiki/Women_in_engineering)

    The number of male engineering graduates rose by 11% from 2004 to 2009, while the number of female engineering graduates actually fell by 5.2% over the same period, according to the National Center for Education Statistics. In 2009, the percentage of undergraduate degrees from engineering schools that went to women hit 17.8%, a 15-year low, according to the American Society of Engineering Education.”

    “Meanwhile, women are more attracted to engineering disciplines such as biomedical and environmental engineering than computer science. While 44% of environmental science majors and 37% of biomedicine majors were women in 2009, just 10.5% of computer-science graduates from engineering schools were women, according to the ASEE.” “Women are drawn to fields where the social relevance is high,” said C. Dian Matt, executive director of the group, Women in Engineering Pro Active Network. (Source: http://it-jobs.fins.com/Articles/SB130221786789702297/Women-Engineering-Graduates-at-15-Year-Low)

    অন্য সকল নারীবাদীদের মতই মনে আসতে পারে যে, এর কারণ হল সামাজিক চাপ। অর্থাৎ নারীদেরকে নির্দিষ্ট দিকে সামাজিকভাবে প্রভাবিত করা হচ্ছে। আমার প্রশ্ন হল- গত ১০০ বছর যাবত পাশ্চাত্যে নারীরা শিক্ষার দিক দিয়ে পুরুষদের সমান অধিকার লাভ করা সত্যেও এ অবস্থা কেন? বরং ইন্জিনিয়ারিং মেয়েরা এত কম কেন সেই প্রশ্নকে সামনে রেখে অনেক নারীদের অবস্থা উন্নয়ন কেন্দ্রিক ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে।

    আবারা বলা যেতে পারে, মেয়েদের গ্র্যাডুয়েশন-এর হার কম হওয়ার কারণে তাদের ইন্জিনিয়ারিং-এ কম দেখা যায়। কিন্তু বর্তমানে গ্র্যাডুয়েশন এর হারের দিকে তাকালে দেখা যায়, পশ্চিমা দেশগুলোতে মেয়েদের গ্র্যাডুয়েশন-এর হার, ছেলেদের তুলনায় বেড়ে গেছে। গ্র্যাডুয়েশন থেকে ছেলেদের ড্রপ আউট রেট বেশী।  ইকোনোমিস্ট পত্রিকার রিপোর্ট বলছে Organization of Economic Co-operation and Development(OECD)-এর হিসেব অনুযায়ী এর অন্তর্ভূক্ত ৩৪টি দেশের মধ্যে ৩২টিতেই মেয়েদের সেকেণ্ডারী এডুকেশন শেষ করার হার বেশী।

    ‘MORE girls than boys now complete their secondary education in 32 of the 34 countries that are members of the OECD, a think-tank, according to a new report published today’ (Source: http://www.economist.com/blogs/dailychart/2011/09/female-graduation-rates)

    ইউএসএ-র হাইয়ার সেকেণ্ডারী এডুকেশন এনালিস্ট টম মর্টেনসন দেখান:

    ‘In the fall of 2000 there were 5,578,000 men and 7,377,000 women enrolled in college as undergraduates.  In 1969 there were 4,008,000 men and 2,876,000 women undergraduate students enrolled in college.  Between 1969 and 2000 the number of men undergraduates increased by 1,570,000 or by 39 percent.  During this period the number of women undergraduates increased by 4,501,000 or by 157 percent.’

    ‘Between 1975 and 2001, the number of bachelor’s degrees earned by men increased by 26,999 (from 504,841 to 531,840), or by 5 percent.  During the same period the number of bachelor’s degree earned by womenincreased by 294,239 (from 418,092 to 712,331), or by 70 percent.  Of the total increase in bachelor’s degrees awarded during this period (321,238), 8 percent was earned by males and 92 percent was earned by females.  (National Center for Education Statistics)’

    ‘Bachelor’s degree completion:  Among 25 to 29 year olds the 2001 rate for males was 27.9 percent compared to 30.1 percent for females.  Females surpassed males in 1991. (Census Bureau)’ (Source: http://www.postsecondary.org/archives/previous/GuysFacts.pdf)

    এখন বরং, কেন ছেলেদের ড্রপ আউট বেশী হচ্ছে মেয়েদের গ্র্যাজুয়েশন বেশী হচ্ছে তা নিয়ে চলছে আলোচনা। কেউ কেউ বলছেন, জেনডার ডিসক্রিমিনেশন এর কথা বলে ছাত্রীদের জন্য এখনও বিভিন্ন ওমেন সেন্টার, ওমেনস মুভমেন্ট ইত্যাদি বজায় থাকায় ছাত্ররা যে কবেই যত্ন ও গাইডেন্স-এর আড়ালে চলে গেছে তা কেউ লক্ষ্যই করেনি। আমেরিকার পড়ালেখার উন্নত পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রতিষ্ঠিত American Council of Trustees and Alumni(ACTA) নামক একটি অলাভজনক সংগঠন তরুন ছেলেদের এই অবস্থা নিয়ে আক্ষেপ করছে এভাবে-

    A generation of young men is losing out in a very big way. But there is no real outrage as higher education becomes a feminized system. Indeed, the outrage is still running the other way–we hear continually about the marginalization of women in the academy, and the difficulties women students face. The question of why there are so few women in the hard sciences draws impassioned debate, urgent calls for equity, and lots and lots of money. But the question of why young men are disappearing from campus is not even being widely asked. And it certainly isn’t being studied systematically. It should be, and Margaret Spellings has the power to ensure that it is.’ (Source: http://www.goactablog.org/blog/archives/2005/09/#a000077)

    এটা অবশ্য ভিন্ন আলোচনার বিষয়। আমি যেটি বলতে চাচ্ছি তা হল- দুটো রিপোর্ট তুলনা করলে দেখা যায় মেয়েদের গ্র্যাডুয়েশন বাড়ছে, কিন্তু তাদের ইন্জিনিয়ার হওয়ার হার কমে যাচ্ছে, ফলে ওভার অল ইন্জিনিয়ার কমে যাচ্ছে।  প্রকৃতপক্ষে এর একটি সুস্পষ্ট সাইকোলজিকাল ও বায়োলজিকাল কারণও আছে-

    Female brains tend to process information verbally and arrive at decisions more quickly through discussion.  Male brains tend to process information internally and prefer not to discuss the situation aloud until they have arrived at a solution.”(Source:  http://www.hendricksonbusinessadvisors.com/newsletter/articles/malevfemale.asp)

    এ প্রসঙ্গে Dr. Louenn Brizendine, যিনি আমেরিকার বিখ্যাত নারী নিউরোসাইকিয়েট্রিস্ট এবং ‘The Female Brain’ নামক Best-Seller-এর লেখিকা, তার বইয়ে বলেন:

     “We now know that when girls and boys first hit their teen years, the difference in their mathematical and scientific capacity is non existent.  But as estrogen floods the female brain, females start to focus in tensely on their emotions and on communication—talking on the phone and connecting with their girl friends at the mall. At the same time, as testosterone takes over the male brain, boys grow less communicative and become obsessed about scoring—in games, and in the backseat of a car. At the point when boys and girls begin deciding the trajectories of their careers, girls start to lose interest in pursuits that require more solitary work and fewer interactions with others, while boys can easily retreat alone to their rooms for hours of computer time.” (Source: Dr. Louenn Brizendine, The female brain, page: 7)

    আসুন দেখি তো জনাব ‘ক’-এর নিচের কথাগুলোর কারণটা উপরের উদ্ধৃতিতে খুঁজে পাওয়া যায় কিনা?

    “ছেলে-মেয়ে দুইজনকে দিয়ে বোঝার চেষ্টা করি আসলে ছেলে-মেয়ের মধ্যে পার্থক্য কতটুকু বা কোথায় কোথায়। মেয়ে শুরু থেকেই তার ক্লাসে সবগুলো সেকসন মিলে প্রথম হয়ে আসছে। তার পড়াশোনার জন্য আমাদের সময় দিতে হয় খুব কম। নিজের পড়া নিজেই পড়ে, এখন বড় ক্লাসে, তাই মাঝে মাঝে অংক বা বিজ্ঞানের কিছু কিছু বিষয় আমার কাছে বুঝতে আসে। ছেলে তার বোনের চেয়ে ছোট। সেও ক্লাসে প্রথম হয়। তবে দুই-একবার দ্বিতীয়ও হয়েছে। পড়াশোনায় সেও খুব ভালো। এখনও পর্যন্ত নিজের পড়া নিজেই তৈরী করতে পারে। তবে সে পড়ার সময় স্ত্রীকে তার পাশে বসে থাকতে হয়। তা না হলে সে পড়তে পড়তে খেলে। তার খেলাগুলো হচ্ছে মিস্ত্রিজাতীয় খেলা। খেলনার মোটর খুলে খুলে ছোট জেনারেটর বানানো, সোলার সেল দিয়ে এলইডি জ্বালানো, ইন্টারনেট দেখে ছোটখাটো ইলেকট্রনিক সার্কিক বানানো – এসব নিয়ে সে অবসরে ব্যস্ত থাকে। লেখালিখিতেও দুইজনের রয়েছে সমান আগ্রহ এবং দক্ষতা”।

    ম্যাটেরিয়ালিস্ট ফেমিনিস্টরা বলে থাকেন: “মেয়েরা যদি ছেলেদের চেয়ে কম মেধাসম্পন্ন হয়ে থাকে, তাহলে আমার মেয়ে ক্লাসের বাকী দেড়শ ছেলের চেয়ে ভালো রেজাল্ট করে কি করে? অনেকে বলার চেষ্টা করেন, ছেলেদের লজিক্যাল ব্রেন মেয়েদের তুলনায় ভালো। এই ধারণার কোন প্রমাণও আমি পাইনি। আমার সাথে যেসব মেয়েরা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তো, তাদের অনেকেরই রেজাল্ট ছেলেদের চেয়ে ভালো ছিল। তাছাড়া যে মেয়েটি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে তার লজিক্যাল ব্রেইন একজন সাহিত্যের ছাত্রের চেয়ে বেশী হবে- এটাই ধরে নেয়া যায়”।

    আসুন দেখি রিসার্চ কি বলে:

    “On the “Truth About Boys and Girls” segment of NBC Nightly News, researchers indicate that men and women differ in their recall of emotional events. When discussing their wedding, Dick and Madeline Neuman exhibited some clear differences. Dick remembered the basic events, picking her up, going through the ceremony, having a reception and taking off. However, Madeline’s memory was much more detailed, they were married really early in the morning, their car was full of balloons and her veil caught on fire at the reception.”

    “The human brain is comprised of both gray matter, which represents information processing centers, and white matter, which works to network these processing centers. In a new study, UC-Irvine psychology Richard Haier found that men have 6.5 times the amount of gray matter than women. However, women have almost 10 times the amount of white matter. “These findings suggest that human evolution has created two different types of brains designed for equally intelligent behavior,” said Dr. Haier. He added that this also explains why men are generally better at tasks involving localized processing like mathematics, whereas women generally excel at integrating and assimilating tasks like language.

    In a 2006 study at the Institute of Evolutionary Biology in Edinburgh, researchers found that men were better than women at remembering the locations of objects, accessing both visual and location information. It seemed that the women relied on landmark or feature cues, while men accessed more abstract cues like geometrical properties of the environment and compass directions. Another study by psychologists Agneta Herlitz and Jenny Rehnman in Stockholm, Sweden confirmed that men were more likely to “find their way out of the woods” than women. The men outperformed women in visuo-spatial processing, they concluded.

    In July 2008, researchers at the Institute of Psychiatry, King’s College London posited that there males use different genes from females when creating long-term memories. This may account for why men are better at remembering tactical memories like trivia and travel directions. Furthermore, men have a larger parietal cortex, which explains why they are generally better with space perception, balance and recognition memory.

    Psychologists Agneta Herlitz and Jenny Rehnman in Stockholm, Sweden found that women excelled at episodic memory, recalling words, objects, scents and faces better than men. Verbal recall is usually better in women because of their enlarged hippocampus region, researchers conclude. Memories that are verbal in nature, whether spoken, heard or written, are easily processed by women.

    They were also better at finding the location of car keys, which requires both verbal and visuospatial processing.Since a girl’s corpus callosum (the bridge between different hemispheres of the brain) is up to 25 percent larger than a boy’s, women are better able to recall these memories involving various storage centers in the brain. They also have stronger neural connectors in their temporal lobes, which enables them to listen better, pick up on non-verbal communication cues (like tone of voice) and recall sensual details better than men.

    A Harvard Medical School study concluded that parts of the frontal lobe (the decision making center) and limbic cortex (which regulates emotion) are larger in women, compared to their male peers. This may also account for why women remember emotionally-charged incidents–weddings, birthdays, accidents–in more vivid detail than men. (Source: http://www.ehow.com/about_5244222_difference-between-boys-girls-memory.html)

    এখানে বোঝা দরকার যে, মেধা ছেলে ও মেয়ে উভয়ের মাঝেই কম বেশী হতে পারে। তবে ব্রেইনের একটা নির্দিষ্ট গঠন আছে যা বলে দেয় যে ছেলে এবং মেয়েটা কোন দিকে ভাল করবে। যে কাজ গুলোতে একাকী থাকা দরকার, চিন্তাভাবনা দরকার সেটায় ছেলেটা ভাল করবে এবং যে কাজে যোগাযোগ তথা ইন্টারেকশন দরকার সেটায় মেয়েটা ছেলেটার চেয়ে ভাল করবে। (ব্যাতিক্রম আছে, ব্যতিক্রম কখনই উদাহরণ নয়)

    সুতরাং  মেধা, দক্ষতা ও যোগ্যতার দিক থেকে নারী ও পুরুষ কেউ কারো থেকে সবদিক দিয়েই কম বা বেশী নয়। একেকজনের একেকটা দিক বেশী ডেভেলপড, মানুষভেদে কিছুটা ওভার‍ল্যাপও আছে। একজন মানুষের, সে নারী হোক বা পুরুষ হোক, তার দক্ষতা, যোগ্যতা, মানসিকতা ও গুণাবলীর একটি অংশ নির্ভর করে সে কোন পরিবেশে বেড়ে ওঠে, কোন শিক্ষায় শিক্ষিত হয়, তার উপর এবং আরেকটি বড় অংশ নির্ভর করে তার নিজস্ব বায়োলজি এবং সাইকোলজির উপর। কেননা বায়োলজিকে আপনি জীবন থেকে আলাদা করতে পারবেন না। পুরুষরা সেক্সুয়ালী বেশী একটিভ এবং তারা বেশী স্টিমুলেটেড হয় এবং এর প্রভাব তার কাজের উপর পড়বে এটাই স্বাভাবিক। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য:

    মানুষের যৌন তাড়ণা নির্ভর করে ‘টেস্টোস্টেরণ’ হরমোনের উপর যা এক ধরণের ‘অ্যান্ড্রোজেন। পুরুষদের এই হরমোন তৈরীর আলাদা অঙ্গই আছে যা হল টেষ্টিস বা অন্ডকোষ। কিন্তু নারীদের ক্ষেত্রে টেস্টোস্টেরণ তৈরী হওয়ার কোন অঙ্গ নেই । যতটুকু যৌন তাড়না নারীদের আছে তা তাদের এড্রেনাল কর্টেক্স এর জোনা ফ্যাসিকুলাটা থেকে নি:সৃত এন্ড্রোজেন এর কারণে। এজন্য নারীদের যৌন তাড়না পুরুষের চেয়ে অনেক কম।

    “Men have on average ten to one hundred times more testosterone than women.” (Source: Dr. Louenn Brizendine, The Female Brain, page: 89)

    একজন সেক্সুয়ালি একটিভ নারীর দিনে সর্বচ্চো ৪ বার যৌন তাড়না জাগ্রত হতে পারে। কিন্তু একজন পুরুষ যে সেক্সুয়ালী সবচেয়ে লেস একটিভ তারও দিনে অনেকবার বেশী যৌন চিন্তা জাগ্রত হতে পারে-

    “Sexual thoughts float through a man’s brain many times each day on average, and through a woman’s only once a day. Perhaps three to four times on her hottest days.” (Source: Dr. Louenn Brizendine, The Female Brain, page: 5)

    We also know that men have two and a half times the brain space devoted to sexual drive in their hypothalamus. Sexual thoughts flicker in the background of a man’s visual cortex all day and night, making him always at the ready for seizing sexual opportunity. Women don’t always realize that the penis has a mind of its own—for neurological reasons.” (Source: Dr. Louenn Brizendine, The Male Brain, page:  24)

    ব্রেইনের সেক্সুয়াল ট্রিগার সেন্টার একটিভ হওয়ার ক্ষেত্রেও নারী পুরুষে ভিন্নতা আছে। একবার যৌনমিলন-এর জন্য একজন নারীর মেন্টাল প্রস্তুতি নেয়ার প্রয়োজন হয় । সে তখনই অর্গেজম এ যাবে যখন সে দেখবে তার পুরুষ পার্টনার তার সাথে একটা কমিটেড রিলেশনশিপে আছে, তার পার্টনার তাকে সিকিউরিটি দিতে পারছে। সেক্সুয়ালী একটিভ হওয়ার জন্য তাকে রিল্যাক্সড স্টেটে থাকতে হয় । একজন পুরুষের ক্ষেত্রে ব্যপারটি ঠিক উল্টো। সে যত বেশী stressed, anxiety এর মধ্যে থাকে তত বেশী সে সেক্সূয়ালী একটিভ থাকে। (Source: The Female Brain, page 78)

    Female sexual turn-on begins, ironically, with a brain turn-off. The impulses can rush to the pleasure centers and trigger an orgasm only  if the amygdala—the fear and anxiety center of the brain—has been deactivated. Before the amygdala has been turned off, any last-minute worry—about work, about the kids, about schedules, about getting dinner on the table—can interrupt the march toward orgasm.” (Source: Dr. Louenn Brizendine, The Female Brain, page: 77)

    এ কারণে মাল্টি টাস্কিং একজন মেয়েকে সেক্স্যুয়ালী একটিভ হতে বাধা দেয়।

    “Multitasking women end up having more distractions, which occupy their brain circuits and get in the way of sexual desire. Three months after she took a new job that required long hours, another patient of mine began having trouble reaching orgasm. She didn’t have any downtime to relax with her husband, and she began faking orgasms to keep from hurting his ego. The worries and tension of her new job were interfering with her ability to relax, feel safe, and allow her amygdale to deactivate.” (Source: Dr. Louenn Brizendine, The Female Brain, page: 82)

    একজন পুরুষের শরীরের গড়ন নারীর জন্য কোন সেক্সুয়াল স্টিমুলাস নয়। বরং নারীর মাথায় কখনই প্রথমে সেক্স আসে না। একজন নারী ও পুরুষকে একসাথে বসে গল্প করতে দেখলে একজন নারী প্রথম দেখায় এদের কে বন্ধু মনে করবে। কিন্তু একজন পুরুষ তাদেরকে দেখে একটা ‘kiss’ anticipate করতে থাকবে। একজন নারীর অসমতল অবয়ব একজন পুরুষের জন্য সেক্সুয়াল ট্রিগার হিসেবে কাজ করে। পুরুষ Stimulated হয়, vision, smell, touch দ্বারা যতক্ষণ তার টেস্টোস্টেরণ সার্জ অব্যাহত থাকে, নারী Stimulated হয় শুধু মাত্র স্পর্শ দ্বারা। (এ সম্পর্কে আরেকটু বেশী জানতে আমার এই নোটটি পড়তে পারেন: সেক্সুয়াল ডিজায়ার কি টেস্টোস্টেরণ দ্বারা প্রভাবিত? নারী ও পুরুষের যৌনতার মাত্রা কি একই রকম?)

    আমারতো মনে হয়, এক দিকে পুরুষের বায়োলজিক্যালী স্বাভাবিক ও বেশী সেক্সুয়াল একটিভিটি এবং অন্য দিকে নারীদের কার্যত উলঙ্গ চলাফেরাই পাশ্চাত্যে পুরুষ গ্র্যাজুয়েশন ড্রপআউট বেশী হওয়ার কারণ।

    এছাড়া-ও উপরের পয়েন্ট গুলো ব্যাখ্যা করছে, কেন ইসলাম পর্দার হুকুম জারি করেছে, কেন পুরুষদের একাধিক বিয়ের অনুমতি আছে, কেন নারীদের পর্দা করতে বলা হয়েছে এবং নারীদের সংসার দেখাকে কেন উৎসাহ দেয়া হয়েছে ও নারীদের কেন তার স্বামীর যৌন আকাঙ্খা পুরণে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। উপরের বিষয়গুলো বৈজ্ঞানিক। মেনে নেয়া বা না নেয়া সচেতনতার ব্যাপার।

    একটা বিষয় লক্ষ্য করুন, নারী ও পুরুষের সমতার যে তর্ক, তার কারণটা কিন্তু আমাদের ‘মাপকাঠি’র সাথে সম্পর্কিত। একজন নারীর পুরুষ হয়ে উঠতে পারছে কিনা সেটাই যেন আমাদের মানদন্ড। অথচ নারীকে মাপতে হবে নারীত্বের মাপকাঠিতে আর পুরুষকে মাপতে হবে পুরুষত্বের মাপকাঠিতে। নাহলে নারীর নিজেকে সবসময় ইনফিরিওর মনে হতে থাকবে।  

    নারীর কাজে কোন বাধা নেই। আল্লাহর বিধান মেনে কাজ করলে, এটা তাদেরই নিরাপত্তা দেবে।  দুনিয়ায় কে কত বড় হল, কয়টা পুরস্কার পেল, কত টাকা উপার্জন করল এগুলো কখনই প্রকৃত মাপকাঠি নয়। আল্লাহর মাপকাঠি হল তাকওয়া। আর এটার হিসেব আল্লাহ যাকে যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তার আলোকেই নেবেন।

  • বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া ও স্রষ্টার পরিচয়

    যে কোন বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করে চলে। পর্যবেক্ষন, প্রশ্নকরণ, হাইপোথিসিস, পরীক্ষানিরীক্ষা, অবশেষে উপসংহার (যে হাইপোথিসিসটি কি ভুল না কি ঠিক?); ঠিক হলে তা ‘রুল’ এর মর্যাদা পাবে।

    এখন, অবজারভেশন হল পৃথিবীতে অসংখ্য জীবিত স্বত্ত্বা বিরাজমান। প্রশ্ন হল এগুলো কোথা হতে কিভাবে এল? হাইপোথিসিস পর্যায়ে এসেই অবজারভারদের দুটো ভাগ। এক ভাগের মতে প্রথম কোষ বা ‘ইউনিভার্সাল কমন এনসেস্টর’ এসেছে অজৈবজনন (Abiogenesis) প্রক্রিয়ায় এবং অন্যান্য প্রানী এসেছে ডারউইনবাদী প্রক্রিয়ায়। আরেকভাগের মতে প্রত্যেকটি প্রানীই পৃথক ভাবে সৃজিত হয়েছে একজন সর্বজ্ঞ স্রষ্টা দ্বারা। 

    এবার হাইপোথিসিস গুলো পরীক্ষা করে প্রমাণ করার পালা। এই পর্যায়ে এসেই বিপত্তি। বিবর্তনবাদীরা দেখাতে সক্ষম নন কিভাবে বিবর্তনের মধ্য দিয়ে এক প্রজাতি থেকে আরেক প্রজাতি এসেছে। তারা সর্বচ্চো যেটা দেখাতে পারেন একটি প্রজাতি কিভাবে আর্টিফিসিয়াল সিলেকশনের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ ঘটাতে পারে। কিন্তু এতে একটি প্রজাতি আরেকটিতে পরিবর্তন হয় না। মাইক্রোইভোলিউশনের যে উদাহরণ দেন সেখানেও কোন প্রজাতি পরিবর্তন হয়ে যাওয়ার বা করে ফেলার উদাহরণ নেই। এ পর্যায়ে এসে তারা তাই বিভিন্ন কল্পনার আশ্রয় নেয়া শুরু করেন। একটি হাইপোথিসিসকে ডিফেন্ড করেন আরেকটি হাইপোথিসিস দিয়ে। এভাবে কল্পনা সমাহার নিয়ে খুলে ফেলেন আলাদা ডিসিপ্লিন।

    অন্য দিকে যারা বলছেন স্রষ্টা সৃষ্টি করেছেন তাদের পক্ষেও এটা এক্সপেরিমেন্টালী দেখানো সম্ভব নয়। তবে সম্ভব হল ‘ইনডাইরেক্ট ইনফারেন্স’ টানা। ঠিক যেমনি একটি ডিজাইন দেখলে একজন ডিজাইনারের হাত আমরা সাথে সাথেই বুঝে নেই, তেমনি স্রষ্টাকে চিনতে সৃষ্টি জগতের ডিজাইনগুলো  দেখে নেয়া এবং দেখিয়ে দেয়াই এদের জন্য যথেষ্ঠ।

    এখন এ পর্যায়ে বিবর্তনবাদীদের তাদের তত্ত্ব প্রমাণ করতে হলে অবশ্যই দেখাতে হবে যে কোন ডিজাইন দূর্ঘটনা ক্রমে তৈরী হয় এবং ডারউইনবাদী প্রক্রিয়ায় একটি ডিজাইন থেকে আরেকটি ডিজাইন একা একা দূর্ঘটনার মধ্য দিয়ে আনগাইডেড প্রক্রিয়ায় (Randomly) আবির্ভূত হয়।  যেহেতু জীবের ফিজিওলজি থেকে শুরু করে মলিকিউলার বায়োলজি পর্যন্ত অনেক কিছুই এখন জানার সুযোগ হয়েছে, সেহেতু কিভাবে একা একাই পরিবর্তন হতে পারে সেগুলো প্রয়োজনীয় ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, গণিত দিয়ে ব্যাখ্যা করার দায়িত্ব তাদের।

    অর্থাৎ এ পর্যায়ে এসে দেখা যায়, যে হাইপোথিসিস গুলো দাড় করানো হল, ওগুলো নিয়ে ডারউইনবাদী ও ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইনবাদীদের আলোচনা ও তর্কবিতর্ক চলে তত্ত্বগত পর্যায়ে। আর যে প্রশ্নগুলো দাড় করানো হয়েছে সেগুলো হল ‘দর্শনগত’ পর্যায়ের।

    যেখানে ১৫০ অ্যামাইনো এসিডের একটি মাঝারি সাইজের প্রোটিন আসার বিষয়টি ডারউইনবাদীদের পক্ষে ব্যাখ্যা করা অসম্ভব, সেখানে হাজার হাজার প্রোটিন, লিপিড, কার্বহাইড্রেট, নিউক্লিউটাইড এবং সর্বপোরি নার্ভাস সিস্টেমে ইনস্টলকৃত প্রোগ্রামকে ব্যাখ্যা করার কথা বললে যে তাদের ‘ডেলিরিয়াম’ শুরু হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক তা তাদের লেখা ও মন্তব্যেই বুঝা যায়।

    যাই হোক, এ আলোচনায় দ্বিতীয় দল যদিও ‘একজন বুদ্ধিমান স্বত্ত্বার’ প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করতে পারে, একজন ‘অদৃশ্য’ সর্বজ্ঞ স্বত্ত্বায় বিশ্বাস স্থাপন করতে সাহায্য করতে  পারে, কিন্তু উক্ত স্বত্ত্বার পরিচয় পুরোপুরি তুলে ধরতে পারে না।  তাই, এই পরিচয়টা তুলে ধরা জন্যই এগিয়ে এসেছে মহাগ্রন্থ ‘আল কোরআন’; এজন্যই কি আল্লাহ তাআলা বলেন:

    “আলিফ লাম মীম ৷ এটি আল্লাহর কিতাব, এর মধ্যে কোন সন্দেহ নেই ৷ এটি হিদায়াত সেই ‘মুত্তাকী’দের জন্য, যারা ‘অদৃশ্যে বিশ্বাস’ করে…” (সূরা বাকারা: ১-৩)

    প্রশ্ন হল উপসংহার কি? জ্বি, এই চূড়ান্ত প্রশ্নগুলোর উপসংহার টানা হবে আখিরাতে। দুনিয়ায় যদি এর প্রমাণ দিয়ে দেয়া হত তাহলেতো ‘অদৃশ্যে বিশ্বাসের’ প্রয়োজনীয়তাই থাকত না এবং বলা হত না:

    “তিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন যেন তিনি পরীক্ষা করে নিতে পারেন কাজের দিক দিয়ে তোমাদের মধ্যে কে উত্তম।” (সূরা মূলক: ২)