মাতৃদুগ্ধের উপকারিতা

হিউম্যান মিল্ক নিয়ে ফেসবুক ঝড় উঠার আগে এর উপকারিতা নিয়ে বিস্তর পড়া হয়নি । এখন খুঁজতে গিয়ে অনেক মজার বিষয় পেয়ে যাচ্ছি। যেমন-


– মাতৃদুগ্ধের মাধ্যমে মায়ের জিন মাতৃদুগ্ধসেবী বাচ্চার শরীরের প্রবেশ করে এবং বাচ্চার ডিএনএ-তে একীভূত হয়ে যায়। অর্থাৎ, মায়ের দুধ সেবনের মাধ্যমে বাচ্চা তার মায়ের জিনও নিজের শরীরের নিয়ে নেয়(1)।

  • ইঁদুরের উপর গবেষণা করে দেখা গেছে যে মায়ের দুধের মাধ্যমে স্টেম সেলও বাচ্চার শরীরের প্রবেশ করে। শুধু প্রবেশ করেই চুপ থাকে না, দুগ্ধ সেবনকারীর বাচ্চার ব্রেইনে গিয়ে বাসা বাঁধে এবং নিউরন ও গ্লাইয়াল কোষ তৈরী করে(2)।
  • মায়ের দুধ বাচ্চার এপিজেনেটিক মোডিফিকেশন করে। অর্থাৎ কিছু জিন সুইচ অন করে এবং কিছু জিন সুইচ অফ করে । দেখা গেছে যে সকল বাচ্চা দীর্ঘদীন গরুর দুধ খায় তাদের এমন কিছু জিন এপিজেনেটিক্যালী অ্যাক্টিভেট হয় যার ফলে বড় হলে তাদের ডায়াবেটিস, অবেসিটি, নিউরোডিজেনারেটিভ ডিজিজ ও ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়(3)।
  • মায়ের দুধে আছে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার এক বিশাল জগত ও ইকোসিস্টেম যা শিশুর অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়াজাল তৈর করতে ভূমিকা রাখে(4)।

     

রেফারেন্স:

1.        Irmak MK, Oztas Y, Oztas E. Integration of maternal genome into the neonate genome through breast milk mRNA transcripts and reverse transcriptase. Theor Biol Med Model [Internet]. 2012;9(1):1. Available from: ???

2.        Aydın MŞ, Yiğit EN, Vatandaşlar E, Erdoğan E, Öztürk G. Transfer and Integration of Breast Milk Stem Cells to the Brain of Suckling Pups. Sci Rep. 2018;8(1):1–9.

3.        Melnik B, Schmitz G. Milk’s Role as an Epigenetic Regulator in Health and Disease. Diseases. 2017;5(1):12.

4.        Ruiz L, García-Carral C, Rodriguez JM. Unfolding the human milk microbiome landscape in the omicsera. Front Microbiol. 2019;10(JUN):1–11.

মস্তিষ্ক প্রতিস্থাপন

আমি ভেবেছিলাম শুধু বাংলাদেশের নাস্তিকরাই বুঝি কলা বিভাগ থেকে বিজ্ঞান চর্চা করে। কিন্তু, সমগ্র পৃথিবীতেই যে এই ধরনের নাস্তিকের অভাব নেই, তার প্রমাণ পেলাম গত পরশু এক ফেসবুক পেইজ থেকে। ল্যাডবাইবেল নামক পেইজে একটা নিউজ শেয়ার করে যে এক চাইনিজ সার্জন Dr. Xiaoping Ren এবং ইতালিয়ান নিউরোসার্জন Dr. Sargio Canavero তাদের টিম সহ প্রথম সফলভাবে মানুষের মাথা ট্রান্সপ্ল্যান্ট করেছেন। লিংকের নিচে কমেন্ট বক্সে দেখি আস্তিকতা নাস্তিকতার ঝড় উঠেছে।

যাই হোক, আমার কাছে মনে হল ‘There is something fishy’. কারণ, আপনি হেড ট্রান্সপ্ল্যান্ট করবেন, অথচ ওটা নিয়ে সায়েন্টিফিক জার্নালে কোন আর্টিকেল না ছাপিয়ে আগে সাংবাদিকদের ডেকে সম্মেলন করবেন, এটা অন্তত পশ্চিমা বিশ্বে সম্ভব না।

নিউজের ভিতরে ঢুকে দেখি ব্যপারটা আসলেই তাই। এক সার্জন একটা মৃত মানুষের মাথার সাথে আরেকটি মৃত মানুষের শরীর জাস্ট স্টিচ করেছে মাত্র, এর চেয়ে বেশী কিছু না। হ্যা, তাদের পরিকল্পনা আছে জীবিত মানুষকে নিয়ে করার। কিন্তু, আগে করুন। আর্টিকেল ছাপুন। আপনার ফেলো সায়েন্টিস্টদের বলুন এটা নিয়ে সমালোচনা করতে। তাদের সমালোচনার সফল উত্তর দিন। তারপর, দাবী করুন যে আপনি সফল ভাবে হেড ট্রান্সপ্ল্যান্ট (নাকি ‘বডি ট্রান্সপ্ল্যান্ট’ কোনটা বলবেন?) করেছেন । অথচ, পত্রিকা ইতোমধ্যে প্রচার করছে সফল হেড ট্রান্সপ্ল্যান্ট। ‘সফলতার’ সংঙ্গা কোথায় গিয়ে নেমেছে?

আমি একটি মৃত হাতের সাথে আরেকটি মৃত হাতের কবজি লাগিয়ে যদি বলি সফল হাতের অপারেশন হয়েছে তাহলে কি আপনার আমার স্যানিটি নিয়ে প্রশ্ন রাখবেন না? যদি না রাখেন তাহলে আপনাদের চিন্তার সীমাবদ্ধতা নিয়েই আমার প্রশ্ন রাখতে হবে।

আরও বিস্ময়কর হল নাস্তিকদের এই তথাকথিক হাস্যকর সফলতার নিউজ নিয়ে উল্লম্ফন। স্টুপিডিটি ও মিথ্যাচারের লিমিটকেও ক্রস করে যাচ্ছে মিডিয়া এবং নাস্তিকরা।

অধিকন্তু, আপনি কেন মাথা ট্রান্সপ্ল্যান্ট বলছেন? আসলে তো বলার কথা বডি ট্রান্সপ্ল্যান্ট। কারণ, এখানে একজন জীবিত কিন্তু ঘাড় থেকে নিচ পর্যন্ত অকেজো মানুষের মাথার নিয়ে একজন ব্রেইন ডেড মানুষের ঘাড় থেকে নিচ পর্যন্ত শরীরটা লাগানো পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, জীবিত শরীরে ‘মাথা প্রতিস্থাপন’ কোন সহজ বিষয় না। সামান্য একটি কিডনী ট্রান্সপ্ল্যান্ট করতে গেলেও এইচ-এল-এ টাইপিং ম্যাচ করতে হয়। নাহলে শরীর উক্ত কিডনীকে রিজেক্ট করে। এমনকি এক ব্যাগ রক্ত দিতে গেলেও গ্রুপ মিলিয়ে নিতে হয়। আর, মাথা আসলে একটি অঙ্গ না, অনেকগুলো অঙ্গের সমষ্টি। ফলে একটি শরীর একটি মাথাকে রিজেক্ট করার সম্ভাবনা অনেক বেশী।

একজন মানুষের পা নষ্ট হয়ে গেলে যদি তার পা কেটে (অ্যাম্পিউট) করে ফেলা হয় তখনও তার কেটে ফেলা পায়ের মধ্যে সে ব্যাথা অনুভব করতে থাকে। একে ‘ফ্যানটম লিম্ব পেইন’ বলে। অনুরুপ একজন মানুষের মাথার সাথে পুরো নতুন শরীর যুক্ত করলেও তার ব্রেইন উক্ত শরীরকে নিজের হিসেবে রেজিস্ট্রার করবে না, ফলে সে পুরো শরীরে এক্সক্রুসিয়েটিং পেইন অনুভব করবে এবং সে একসময় উক্ত বডিকে কেটে ফেলতে বলতে পারে।

ধরুন, আপনি আপনার সমস্ত ঘরের তার যেখানে একত্রিত হয়েছে ওগুলো কেটে দিয়ে আরেকটি ঘরে পাওয়ার সাপ্লাইয়ের সাথে জাস্ট যুক্ত করে দিলেন, তাহলেই কি আপনার ঘরে ঠিকঠাক বিদ্যুৎ পাবেন? না, পাবেন না। কারণ, আপনার সুনির্দিষ্ট ভাবে সংযোগগুলো লাগাতে হবে। ঠিক একই ব্যাপার মস্তিষ্ক প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রেও। স্পাইনাল কর্ডকে আপনি এরকম বিলিয়নের অধিক তারের সমষ্টি হিসেবে চিন্তা করতে পারেন। মস্তিষ্ক প্রতিস্থাপনের সময় শুধুমাত্র একজনের স্পাইনাল কর্ডের সাথে আরেকজনেরটা বাইরে লাগিয়ে দেয়া হবে এবং অপেক্ষা করতে হবে যেন সুনির্দিষ্ট ভাবে ও একা একাই প্রতিটি তার একটি আরেকটির সাথে লেগে যায়।

অথচ, অন্যান্য প্রাণীতে যে সকল তথাকথিত সফল হেড ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা হয়েছিলো তাতে সর্বচ্চো সফলতা বলতে যেটা দেখা গেছে তা হল মাথাটা হয়তো শরীরের সাথে লেগে কয়েকদিন ( সর্বচ্চো বিশ দিন) বেঁচে ছিলো, কিন্তু স্পাইনাল কর্ড ঠিক মত জোড়া লাগেনি। ফলে, উক্ত প্রানী নড়াচড়াহীন অবস্থায়ই বেঁচে ছিলো অল্প কয়েকদিন।

সফল শরীর প্রতিস্থাপন আপনি তখনই বলতে পারেন যখন আপনি একজন স্পাইনাল এট্রফির মানুষের মাথা আরেকজনের বডির সাথে যুক্ত করার পর সে আরেকজনের বডিতে গিয়ে পুরোপুরি নাড়াচাড়া করতে পারবে এবং মাত্র ‘বিশ দিন’ বা ‘এক বছর’ বেঁচে থাকবে না, বরং অনেকদিন বেঁচে থাকবে কোন প্রকার কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস যন্ত্র বা অন্যান্য সাপোর্ট ছাড়াই। আপনি যে স্পাইনাল এট্রফির মানুষটাকে মাথা কেটে অপারেশন করবেন, সে যদি বিশদিনের বেশী না বাঁচে, অথচ তাকে হয়ত কৃত্রিমভাবে স্টিফেন হকিং-এর মত অনেক দিন বাঁচানোর সুযোগ আছে, তাহলে যে ‘ইথিকাল’ ইমপ্লিকেশন তৈরী হয় সেদিকে কি লক্ষ্য রাখছেন? নাকি চাইনিজ মানুষের জন্য ইথিক্স নাই (যার ওপর সার্জারী করার চিন্তা করা হচ্ছে সে একজন চাইনিজ)।

চিকিৎসাবিজ্ঞানকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আপনি এমন কিছু আবিস্কার করুন যাতে উক্ত স্পাইনাল এট্রফির-ব্যাক্তির স্পাইনাল কর্ড পুনরায় সচল হয়ে যায়। সেটা না করে ‘নাম-করার’ জন্য আপনি ‘কলা বিজ্ঞান’ করছেন বা ‘সাংবাদিক বিজ্ঞানী’ হয়ে যাচ্ছেন, এটাকে বিজ্ঞান বলে না, বলে অপ-বিজ্ঞান।

#বুকরিভিউ: “বিয়ে: স্বপ্ন থেকে অষ্টপ্রহর”এবং “সন্তান: স্বপ্নের পরিচর্যা”

    লেখক: মির্জা ইয়াওয়ার বেগ

    অনুবাদ ও প্রকাশ: সিয়ান পাবলিকেশন

    প্রথমে বলছি ‘বিয়ে: স্বপ্ন থেকে অষ্টপ্রহর” বইটি নিয়ে। মাত্র ৭৩ পৃষ্ঠার বইটি চমৎকার কিছু কথার সংযোজন। যারা বিয়ে করবেন এবং যারা করে ফেলেছেন, সবার জন্যই বইটি সমানভাবে প্রযোজ্য।

    মানুষের একটা স্বভাব হলো কোন একটি কাজ নিয়মিত করতে থাকলে বা নতুন একটি পরিবেশে নিয়মিত যেতে থাকলে উক্ত কাজ বা পরিবেশে সে নিজেকে সমন্বয় করে নেয়। প্রথম দিকে কাজ শুরুর আনন্দ বা পরিবেশের সৌন্দর্য্য চোখে পড়লেও  একসময় উক্ত পরিবেশের বা কাজের খুঁটিনাটি তার চোখে আর ধরা পড়ে না। পারিবারিক জীবনের শুরুতে যে আনন্দটা থাকে, কাজের চাপে সেটি একসময় স্তিমিত হয়ে যায়। ফলে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক আচরনে নতুনত্বের আনন্দ হারিয়ে যায়।

    কিন্তু, স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সম্মানবোধ এবং আত্ম-সমালোচনার পাশাপাশি ছোটখাটো কিছু বিষয়ের মাধ্যমে পরস্পরকে খুশী রাখার চেষ্টা করা যায় তাহলে উক্ত সম্পর্কটি অত্যন্ত দিনে দিনে আরও সুন্দর ও শক্ত হয়ে ওঠে।

    আর বিয়ে করার আগেই যদি কেমন ছেলে বা মেয়েকে জীবনসঙ্গি হিসেবে বেছে নিচ্ছি, কেমন পরিবারের সাথে সম্পর্ক গড়ছি, (মেয়েদের ক্ষেত্রে) যৌথ পরিবারে মানিয়ে নিতে পারবো না একক পরিবারে থাকতে চাই ইত্যাদি বিষয়গুলো যদি আগে থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়া যায় তাহলে সম্পর্কটা সুদৃঢ় হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।

    এ ধরনের সুন্দর সুন্দর কিছু কথা সম্বলিত বইটি প্রতিটি ছেলে বা মেয়ে, স্বামী বা স্ত্রী-র বারবার পড়া দরকার বলে মনে হয়েছে।    

    “সন্তান: স্বপ্নের পরিচর্যা”

    এই বইটিও ইউনিক। আপনি আপনার সন্তানের জন্য দুনিয়ার ধনসম্পদ করে দিয়ে তাকে বিপথে যাওয়ার পথ করে দিবেন না ছোট বেলা থেকেই পরিশ্রম করতে শেখাবেন? আপনার সন্তানের মনে তার স্রষ্টা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা এবং প্রধান অনুকরণীয় আদর্শ ও মহান নেতা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে পরিচয়টা কিভাবে করিয়ে দেবেন?

    এ প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে পাবেন ৯৬ পৃষ্ঠার ছোট্ট এই পুস্তিকাটিতে। এই বইটিও প্রত্যেক বাবা-মার অন্তত একবার পড়া জরুরী। 





    #বুক রিভিউ: রাফান আহমেদের বিশ্বাসের যৌক্তিকতা

    অল্প কিছু পাতায় বিশ্বাসের সপক্ষে বেশ কিছু কারণ চলে এসেছে। যারা আস্তিকতা-নাস্তিকতা নিয়ে বিভিন্ন বিষয় পড়েছেন তারা জানেন আস্তিকতার পক্ষে বেশ কিছু পরোক্ষ সিদ্ধান্ত আছে। এই সিদ্ধান্তগুলো এসেছে বিজ্ঞান ও দর্শনের বিস্তারিত আলোচনার মধ্য দিয়ে। মজার বিষয় হলো এই বইটি সেই বিস্তারিত তর্ক ও বিতর্ক আলোচনায় না গিয়ে সিদ্ধান্তগুলোকেই অল্প কথায় ও নাস্তিকদের রচিত বই থেকে উদাহরণ টেনে উপস্থাপন করেছে।  এ কারণে আস্তিকতা-নাস্তিকতা তর্কের সাথে অপরিচিত একজন পাঠকের বিষয়গুলো বুঝতে একটু বেগ পেতে হতে পারে।

    যাই হোক আমার কাছে বইটির শক্তি ও দুর্বলতা হিসেবে যে পয়েন্টগুলো মনে হয়েছে-

    শক্তি-

    ১. সহজ ভাষায় অল্প কথায় উপস্থাপন।

    ২. স্বয়ং নাস্তিক বিজ্ঞানীদের রেফারেন্স ব্যবহার।

    দুর্বলতা-
    ১. সরাসরি সিদ্ধান্তগুলোকে উপস্থাপন, যার ফলে পাঠকের জন্য বুঝতে একটু কষ্ট হতে পারে।

    ২. বিষয়বস্তুর উপস্থাপন আরেকটু সাবলিল হতে পারতো।

    #বুক রিভিউ: আরিফুল ইসলাম-এর ‘আর্গুমেন্টস অব আরজু’

    আমি জীবনে উপন্যাস পড়েছি খুব কম। ইন ফ্যাক্ট ছোটবেলা থেকে কয়টা ফিকশন পড়েছি তা হয়ত হাতে গোনা যাবে। হুমায়ুন আহমেদ বাংলা সাহিত্যে যে নতুন লেখনশৈলীকে জনপ্রিয় করেছেন তার একটি সুবিধে হল খুব সহজেই আপনি গল্পের ভিতর ডুবে যেতে পারবেন। আপনার কল্পনার দৃশ্যপটে গল্প এগুতে থাকবে যতক্ষন বইটি শেষ না হয়।

    অনেকে হয়ত বলবেন হুমায়ুন আহমেদ বা জাফর ইকবাল বা গল্প-উপন্যাসের অন্যান্য লেখকরা তাদের রচনার মধ্য দিয়ে সিম্পলি আনন্দ দিতে চেয়েছেন। কিন্তু, আমার কাছে মনে হয়েছে তাদের রচনার মধ্য দিয়ে তারা পাঠকদের সাবকনসাস মাইণ্ডে তাদের চিন্তা চেতনাও ঢুকিয়ে দিয়েছেন।   

    অর্থাৎ গল্পাকারে আপনার বক্তব্য উপস্থাপন করার উপকারীতা আছে। 

    সবার যুক্তিবোধ সমান নয় । কেউ অল্পতেই নাস্তিকদের একটি আউট-অব-কনটেক্স বক্তব্য ও কুযুক্তিতে বিভ্রান্ত হতে পারে। আবার কেউ হয়ত বিষয় সহজেই ধরতে পারে। 

    বর্তমানের অধিকাংশ তরুণদের ইসলাম নিয়ে পড়াশোনা ধর্ম বই পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। অন্যদিকে, নাস্তিকদের বিভ্রান্তিমূলক অ-যুক্তি ও কু-যুক্তিদিয়ে ইন্টারনেট ভরপুর। তার ফলে ইসলাম ও সর্বপরী আল্লাহতে বিশ্বাস সম্পর্কে বিভ্রান্তী চলে আসা খুব সহজ। এ বিভ্রান্তি নিরসনে গল্পাকারে একটির যুক্তির পটভূমি তৈরী  উপস্থাপনের এই পদ্ধতিটি আমার কাছে বেশ কার্যকরী মনে হয়েছে।

    আরিফুল ইসলাম লিখিত আর্গুমেন্টস অব আরজু উক্ত ধরনের আরেকটি চমৎকার বই। লেখক অনেকেই হয়, কিন্তু গল্প লেখার হাত সবার ভাল হয় না। গল্প লেখার ক্ষেত্রে আরিফের মুন্সিয়ানার তা’রিফ করতেই হয়। আল্লাহ তাকে উত্তম প্রতিদান দিন।


    আমার কাছে বইটির শক্তি ও দুর্বলতা হিসেবে যে পয়েন্টগুলো মনে হয়েছে-

    শক্তি-

    • নাস্কিকদের বেশ কিছু অযুক্তির সহজবোধ্য খণ্ডন
    • বিভিন্ন রেফারেন্সের উপযুক্ত ব্যবহার
    • সুন্দর নীলাভ পৃষ্ঠার নতুনত্ব

    দুর্বলতা-

    • গল্পের ফাইনাল এডিটিং এর সময় উপস্থাপিত তথ্যের ক্ষেত্রে এবং বাক্যের বিন্যাসের ক্ষেত্রে কয়েকবার রিভিউ করে নেয়া দরকার যেন ছোট খাটো ভুলও না থাকে।

    #বিবর্তনকথন ৬: বিবর্তনতত্ত্বের সুন্দর একটি পরিচিতি

    বায়োটেকনলজিস্ট মাতি লাইজোলা ছিলেন এক সময়ের কড়া ডারউইনবাদী। জীবের আণবিক লেভেলে গবেষণা করা এই বিজ্ঞানী এক সময় ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন তত্ত্ব নিয়ে পড়া শুরু করেন এবং ডিজাইনতত্ত্বে আশ্বস্ত হয়ে ডারউইনবাদ ছেড়ে ডিজাইনতত্ত্বের দিকে ধাবিত হন। তার এই ব্যক্তিগত পড়াশুনা, অভিজ্ঞতা ও চিন্তাভাবনাকে গুছিয়ে তিনি একটি বই লিখেছেন। বইটির নাম: Heretic: One Scientist’s Journey from Darwin to Design।

    অ্যামাজনে বইটির রিভিউয়ারদের মধ্যে একজন বইটির শেষের দিক থেকে একটি প্যারা তুলে দিয়েছেন। প্যারাটিতে লেখক (মাতি লাইজোলা) বিবর্তনতত্ত্বের বিশাল পরিচিতিকে খুব অল্প কথায় চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন। নিচে আপনাদের জন্য প্যারাটিকে কোনরকম অনুবাদ করে দিচ্ছি।

    বিবর্তন খুব ধীরে হয়, তবে তারাতারিও হয়।  বিবর্তন গতিশীল এবং সময়ের সাথে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে পারে, শুধু সেই ক্ষেত্র ব্যতীত যখন মিলিয়ন বছরের ব্যবধানে কোন জীবকে একই রকম রাখে। এটি জীবের চূড়ান্ত জটিলতাকেও ব্যাখ্যা করে, আবার মার্জিত সরলতাকেও বুঝিয়ে দেয়। এটি আমাদের শেখায় কিভাবে পাখি উড়তে শিখেছে এবং একই সাথে কিভাবে উড়ার যোগ্যতা হাড়িয়েছে। বিবর্তন চিতা বাঘকে বানিয়েছে দ্রুতগতিসম্পন্ন এবং কচ্ছপকে বানিয়েছে ধীরগতির। এটি কোন কোন প্রাণীকে বানিয়েছে বড় এবং কোন কোনটাকে ছোট, কাউকে বানিয়েছে চোখ ধাঁধানো সুন্দর ও কাউকে বানিয়েছে বিরক্তিকর ধূসর। এটি মাছকে জোড়পূর্বক হাটতে শিখিয়েছে এবং হাটতে পারা প্রাণীকে পুনরায় সমুদ্রে পাঠিয়ে দিয়েছে। এটি একটি গঠন থেকে অন্যান্য গঠনের বিস্তার ঘটায়, একই সাথে ভিন্ন গঠনকে একই গঠনে এনে মিলিত করে। এটি সূক্ষাতিসূক্ষ ডিজাইনকেও ব্যাখ্যা করে, আবার দীর্ঘ সময় ধরে ‘জাঙ্ক’ তৈরী করে। বিবর্তন কিছু সময় এলোপাতাড়ি ও দিক নির্দেশনাহী এবং অন্য সময় একটি লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে আগায়। বিবর্তনের অধীনে জীবন হল একটি দয়ামায়াহীন স্বার্থপর যুদ্ধক্ষেত্র, তবে সেই সময় বাদে যখন এটি পরার্থপরতা শেখায়। এবং বিবর্তন এসব করে নতুন নতুন গজিয়ে ওঠা হাইপোথিসিসের মাধ্যমে। আধুনিক বিবর্তনতত্ত্ব হল সকল তত্ত্বের ‘রুব গোল্ডবার্গ’ মেশিন। এবং এতসব অভিনব কল্পনাবিলাসের ফলাফল কি? ‘ফ্লগিস্টন’ নামক অকার্যকর তত্ত্বের ন্যায়, এটি কোন কিছু ব্যাখ্যা না করেও সবকিছুই ব্যাখ্যা করে।

    …..


    বি.দ্র.:
    ১. মূল ইংলিশ প্যারাটুকু খুব সাবলিলভাবে লেখা। যার মর্যাদা আমি অনুবাদে রাখতে পারিনি। যাদের আগ্রহ আছে বইটির নাম ধরে সার্চ দিয়ে অ্যামজনে ঢুকে Michael A. Johnson-এর রিভিউটা পড়বেন।
    ২. বইটি পড়ার সৌভাগ্য এখনও হয়নি। তবে উক্ত প্যারাটি পড়ে বইটি পড়ার আগ্রহ লক্ষগুনে বেড়ে গিয়েছে।

    #বিবর্তনকথন_৫.১

    ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন (আইডি)-এর প্রবক্তাদের একটি বড় বৈশিষ্ট্য হলো তারা জীববিজ্ঞানের অত্যন্ত জটিল বিষয়গুলো সাবলিল ভাবে উপস্থাপন করতে পারে। মলিকিউলার বায়োলজিস্ট, আইকনস অব ইভল্যুশন ও জম্বি সায়েন্স বই দুটির লেখক ড. জোনাথান ওয়েলস তাদের মধ্যে একজন। বরাবরের মতই তার চমৎকার আরেকটি লেখা আজকে পড়লাম তাদের মুখপাত্র সাইট www.evolutionnews.org-এ। (কমেন্টে পোস্টটির লিংক শেয়ার করলাম)

    প্রকৃতিতে Complex Specified Information (CSI) শুধুমাত্র বুদ্ধিমান সত্তার মানসিক কার্যক্রম (Mental activity) থেকে আসতে দেখা যায়। কোষের ডিএনএ-তে আছে CSI।  প্রোটিনের গঠন নির্ধারণকারী এই তথ্য আছে সরলরৈখিক ফর্মে।  এর বাইরেও কোষের ডিএনতে আরও কিছু কোড আছে: ডিএনএ-র কোন অংশ চালু হবে আর কোনটা চুপ থাকবে তার জন্য এপিজেনেটিক কোড, ডিএনএ-তে থেকে আরএনএ তৈরী হওয়া পর স্প্লাইসিং-এর জন্য স্প্লাইসিং কোড, ডিএনএ-থেকে ম্যাসেঞ্জার আরএনএ-তৈরী হয়ে কোথায় যাবে তার জন্য প্রয়োজনীয় জিপ কোড ইত্যাদি। এগুলো এক ধরনের সরলরৈখিক কোড যা একমাত্রিক।

    এর বাইরের কোষের গঠন এবং এক কোষ (জাইগোট) থেকে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রাণী হওয়ার জন্য আরও কিছু স্থানিক (Spatial) কোড আছে- বায়োইলেকট্রিক কোড এবং সুগার কোড। যেগুলো দ্বিমাত্রিক এবং ত্রিমাত্রিক কোড।

    বায়োইলেকট্রিক কোড-এর উপর নির্ভর করে এমব্রায়োর গঠন। অর্থাৎ, একটি কোষ থেকে বিভাজিত হতে হতে বহুকোষী প্রাণীতে পরিণত হওয়া সময়, কোষের ঝিল্লীতে তৈরী হওয়া আয়ন চ্যানেল গুলো এক ধরনের বায়োইলেকট্রিক ফিল্ড গঠন করে, যার উপর নির্ভর করছে এমব্রায়োর মাথা থেকে পা পর্যন্ত গঠনের সঠিক অবস্থান। অর্থাৎ, কোথায় মাথা হবে, কোথায় হাত-পা হবে, এগুলোর স্থানিক তথ্য ধারন করে এই বায়োইলেকট্রিক কোড।


    সুগার কোড নির্ধারণ হয় কোষঝিল্লীতে অবস্থিত গ্লাইকেন দ্বারা। সুগার কোডের কাজ হলো কোষ ঝিল্লীর ‘পোস্ট অফিস’ তৈরী এবং তার পোস্ট কোড নির্ধারণ করা। ঐ যে ডিএনএ থেকে বের হওয়ার আরএনএ যার মধ্যে জিপকোড ট্যাগ করা আছে, সে উক্ত পোস্ট কোডের উপর ভিত্তি করে কোষ ঝিল্লীর নির্দিষ্ট স্থানে যাবে। সুগার কোডের তথ্য বহনকারী কণার বৈশিষ্ট্যের কারণে সুগার কোড ডিএনএ-র জেনেটিক কোড অনেক বেশী জটিল।

    ফলে, সুগার কোড এবং বায়োইলেকট্রিক কোড জেনেটিক কোডের চেয়েও বেশী CSI ধারণ করে।


    যেখানে বিতর্কিত নিওডারউইনিয়ান প্রক্রিয়ায় জেনেটিক কোডের CSI ব্যাখ্যা করা সম্ভব না, সেখানে একটি কোষের অবস্থিত কয়েক লেয়ারের CSI কিভাবে এলোপাতাড়ি প্রক্রিয়ায় আসবে বলে দাবী করা যেতে পারে তা যে কোন ‘Sane’ ব্যক্তির জন্য বোঝাটা কঠিন।


    উল্লেখ্য, যে জেনেটিক কোড আবিস্কারের পর থেকে নিওডারউইনিজমের আধিপত্যের কারণে সেন্ট্রাল ডগমা নামক একটি দৃষ্টিভঙ্গি জীববিজ্ঞানের জগতে প্রচলিত ছিল। যেটি হল DNA থেকে RNA থেকে প্রোটিন (থেকে জীব)। ফলে ডিএনএ-র বাইরেও যে জটিল কোড থাকতে পারে এই প্রশ্নগুলো অনেক মুখ থুবড়ে পড়ে ছিলো। কিন্তু, নতুন নতুন আবিস্কারের মধ্য দিয়ে ডারউইনিয়ান প্যারাডাইম তার অন্তিম যাত্রাপথে ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটে থাকায় উক্ত প্রশ্নগুলো আলোর মুখ দেখছে।    

    #বিবর্তনকথন_৫: নাল হাইপোথিসিস, অল্টারনেট হাইপোথিসিস ও ডারউইনিয় বিজ্ঞান

    বৈজ্ঞানিক গবেষণা পদ্ধতি তথা রিসার্চ মেথডলজির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম হল- আপনি যখন নতুন বিষয় নিয়ে গবেষণা করতে চান আপনাকে একটি ‘গবেষণা প্রশ্ন’ তথা রিসার্চ কোয়েশ্চেন দাড় করাতে হবে। এরপর উক্ত প্রশ্নের আলোকে আপনি একটি ‘প্রকল্প’ তথা ‘হাইপোথিসিস’ তৈরী করবেন। কিন্তু, রিসার্চ শুরু করার আগেই আপনি উক্ত প্রকল্পকে সত্য ধরে নিয়ে এগুবেন না। বরং, আপনার ডিফল্ট হাইপোথিসিস হবে ‘নাল হাইপোথিসিস’ এবং  আপনার হাইপোথিসিসকে বলবেন- ‘বিকল্প তথা অল্টারনেট হাইপোথিসিস’। অত:পর, আপনার অনুসন্ধান লব্ধ উপাত্তের পরিসংখ্যান থেকে যদি দেখেন যে যে ‘নাল হাইপোথিসিস’-কে বাতিল করা যায় ‘অল্টারনেট হাইপোথিসিস’ গ্রহণ করবেন।

    কি? জার্গন বেশী হয়ে গেল? চলুন কয়েকটি উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করি।

    ধরুন, আপনি গবেষণা করে দেখতে চান যে ধুমপানের সাথে ফুসফুস ক্যান্সারের কোন সম্পর্ক আছে কি না? কারণ, আপনি লক্ষ্য করেছেন যে ধুমপায়ী ও অধুমপায়ী নির্বিশেষে সবারই ফুসফুসের ক্যান্সার হচ্ছে। এজন্য আপনি একটি রিসার্চ কোয়েশ্চেন দাড় করালেন- ধুমপান কি ফুসফুসের ক্যান্সারের জন্য দায়ী? এই প্রশ্নের আলোকে আপনার হাইপোথিসিস হল-

    (ক)  ধুমপান ফুসফুসের ক্যান্সারের জন্য দায়ী।

    এই হাইপোথিসিসকে পরীক্ষা করতে আপনাকে ধরে নিতে হবে যে-

    (খ) ধুমপান ফুসফুসের ক্যান্সারের জন্য দায়ী নয়।

    বিজ্ঞানের পরিভাষায় (খ) হল নাল হাইপোথিসিস এবং (ক) হল অল্টারনেট হাইপোথিসিস।  এবার আপনি একদল ক্যান্সোরের রোগী  এবং সমবয়সী ও সমলিঙ্গের আরেকদল সাধারণ মানুষ নিয়ে তাদের মধ্যে ধুমপানের অনুপাত পরীক্ষা করবেন এবং পরিসংখ্যানের অংক কষে দেখবেন যে নাল হাইপোথিসিস  (খ)-কে বাতিল করা যায় কিনা। যদি করা যায়, তাহলে আপনার অল্টারনেট হাইপোথিসিস (ক) গৃহিত হবে। অর্থাৎ, আপনি উপসংহার টানতে পারবেন যে ধুমপানের সাথে ফুসফুসের ক্যান্সারের সম্পর্ক আছে কি নেই।

    (এই নাল হাইপোথিসিস বাতিল করার পদ্ধতিটিতে সম্ভাব্যতার ব্যবহার আছে,যার সাথে আবার বিবর্তনবাদ ও এবায়োজেনেসিসের সম্পর্ক আছে- যে বিষয় অন্য সময় লিখব ইন শা আল্লাহ)  

    কিন্তু, প্রশ্ন হল আমি গবেষণায় ‘অল্টারনেট হাইপোথিসিস’ ধরে নিলে সমস্যা কি?

    উত্তর: সমস্যা আছে। সমস্যা হল এটি গবেষণাকে বায়াসড করে দিবে।

    কিভাবে?

    কিভাবে ‘বায়াস’ করে তার উত্তর জানতে চলুন আমরা একটি মসজিদ থেকে ঘুরে আসি। মনে করুন আপনি ‘গ’ মসজিদে গিয়ে ওযু খানায় ভুল করে মানিব্যাগ ফেলে এসেছেন। একজন সহৃদয় ব্যক্তি আপনার মানিব্যাগটি পেয়ে মসজিদের ইমামকে দিয়েছেন। জামাত শেষ হলে ইমাম মাইকে ঘোষণা দিলেন যে ওযুখানায় একটি মানিব্যাগ পাওয়া গিয়েছে, যারা মানিব্যাগ সে যেন উপযুক্ত প্রমান দিয়ে নিয়ে যায়। নামাজ শেষে ইমাম সাহেবের কাছে গিয়ে আপনি দেখলেন যে তার কাছে আপনি ছাড়াও আর একজন পরিপাটি ও সুদর্শন ব্যক্তি ‘ঘ’ মানিব্যাগটির দাবী করছে। এমতবস্থায় ইমামের ‘হাইপোথিসিস’ কি হবে? ইমাম যদি ‘ঘ’ সাহবের বেশভূষা থেকে ধরে নেন যে মানিব্যাগটা ‘ঘ’ সাহেবের, তাহলে উনি বায়াসড হয়ে গেলেন। ঠিক একই ভাবে যদি তিনি ধরে নেন মানিব্যাগটি আপনার তাহলেও উনি বায়াসড হয়ে গেলেন। এমতাবস্থায় তিনি মনে মনে ধরে নেবেন যে মানিব্যাগটি ‘গ’ বা ‘ঘ’ কাররই নয়, অর্থাৎ ‘নাল হাইপোথিসিস’। কিন্তু, তার মনে দুটি অল্টারনেট হাইপোথিসিস থাকবে- এক,  মানিব্যাগটি ‘গ’-এর এবং দুই, মানিব্যাগটি ‘ঘ’-এর।   এরপর যে ব্যক্তি মানিব্যগটির বৈশিষ্ট্যগুলোর সর্বচ্চো সঠিক বর্ণনা দিতে পারবেন, (যেমন: ওযু খানায় কোন দিকটাতে বসেছিলেন, মানিব্যাগের রং কি, কয়টি পকেট আছে, কি কি জিনিস ছিল, কত টাকা ছিল ইত্যাদি)  তাকে তিনি মানিব্যাগটি ফেরত দিবেন।

    চলুন আরেকটি উদাহরণ দেখে আসি কোর্ট থেকে। একজন ‘ব্যক্তিকে’ চুরির অপরাধে বিচার করা হচ্ছে। এমতাবস্থায় জাজ যদি উক্ত ব্যক্তিই চোর ধরে নেন তাহলে সম্ভাবনা থাকে যে তিনি একজন নিরাপরাধ ব্যক্তিকে শাস্তি দিয়ে দিবেন। কিন্তু, তিনি যদি ধরে নেন যে উক্ত ব্যক্তি চোর নয় (নাল হাইপোথিসিস) একজন নিরাপরাধ ব্যক্তি শাস্তি থেকে মুক্তি পেতে পারে। জাজ যদি উপযুক্ত তথ্য-প্রমানের আলোকে দেখেন যে এই ব্যক্তি চোর না হয়ে পারে না, তাহলে তিনি নাল হাইপোথিসিস বাতিল করে সিদ্ধান্ত নিবেন যে উক্ত ব্যক্তি চোর (অল্টারনেট হাইপোথিসিস) এবং শাস্তি দিবেন।

    আশা করি, উপরোক্ত উদাহরণগুলো থেকে পাঠক ‘নাল হাইপোথিসিস’ ও ‘অল্টারনেট হাইপোথিসস’ এর গুরুত্ব বুঝতে পেরেছেন।

    একটি কার্যকারণের পিছনে যদি একাধিক অল্টারনেট হাইপোথিসিস থাকে। তখন আমি কোন্ অল্টারনেট হাইপোথিসসটি গ্রহণ করবো তা নির্ভর করছে সংশ্লিষ্ট হাইপোথিসিসটির পক্ষে উপস্থাপিত প্রমানের সংখ্যা ও কোয়ালিটির উপর।

    একটি বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের পিছনে প্রমাণ প্রধানত  দুই ধরনের হয়- এক্সপেরিমেন্টাল ও অবজারভেশনাল। একটি করে উদাহরণ দিয়ে বোঝাই।

    বিজ্ঞানী রিচার্ড লেনস্কি ও তার দল ব্যাকটেরিয়াতে বিবর্তনের প্রমাণ দেখার জন্য একটি ‘লং টার্ম ইভল্যুশন এক্সপেরিমেন্ট’ চালাচ্ছেন।

    এবার চলুন আমরা দেখি বিজ্ঞানী ডারউইন কিভাবে তার বই-এ ‘বিবর্তনবাদ’-কে প্রজাতির আবির্ভাবে প্রমানিত তথা ডিফল্ট হাইপোথিসিস হিসেবে উপস্থাপন করছেন।          ডারউইন তার বই-এর প্রথমে আর্টিফিসিয়াল সিলেকশন, জিওগ্রাফীক ডিস্ট্রিবিউশন, হোমোলজি এবং ভেস্টিজিয়াল অর্গান নামক কিছু প্রমাণ উপস্থাপন করে প্রজাতির উৎপত্তি ব্যাখ্যাতে তার হাইপোথিসিস ‘বিবর্তনবাদ’-কে প্রমানিত হিসেবে উপস্থাপন করেছেন।

    বিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতা

    বিজ্ঞানের একটি অন্তঃর্নিহিত সীমাবদ্ধতা হল ‘Problem of Induction’। বিজ্ঞান কাজ করে অনুমিতি (Assumptions)-এর উপর ভিত্তি করে। কিন্তু, বিজ্ঞানবাদীরা বিজ্ঞান যে ‘অনুমিতি’ নির্ভর তা সুকৌশলে এড়িয়ে যায়।

    একটু খুলে বলি। ধরুন, আপনি পরীক্ষা করে দেখতে চান কাকের রং কি। যেই ভাবা সেই কাজ। আপনি ১০০০ হাজার কাক র‍্যানডমলি বাছাই করে পর্যবেক্ষণ করলেন। আপনি দেখলেন কাকের রং কালো। আপনি সিদ্ধান্তে আসলেন যে কাকের রং কালো। কিন্তু, ‘কাকের রং কালো’ এই সিদ্ধান্তটি কি ১০০% সত্য (Fact)। উত্তর হচ্ছে: না। কারণ, আপনার বন্ধু যদি কয়েকবছর পর ঘটনাক্রমে একটি সাদা কাক আবিস্কার করে ফেলে তাহলে ‘কাকের রং কালো’ সিদ্ধান্তটি প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

    বিজ্ঞানীদের কাজ হল পর্যবেক্ষনলব্ধ তথ্য উপাত্তের উপর ভিত্তি করে একটি তত্ত্ব (Theory) দাড় করানো। উক্ত তত্ত্বের কাজ দুটো: একটি হল বর্তমান তথ্য উপাত্তের একটি কার্যকরী ব্যাখ্যা দেয়া এবং দ্বিতীয়টি হল উক্ত তত্ত্বের আলোকে প্রেডিকশন করা যে মহাবিশ্বের অদেখা জায়গাগুলো ‘যদি একই রকমের নিয়ম মেনে থাকে’ তাহলে একই রকম তথ্য পাবার কথা।

    উক্ত ‘একই রকমের নিয়ম মেনে থাকে” বাক্যটি হচ্ছে আমাদের অনুমিতি যা হয়ত পরবর্তী পর্যবেক্ষণে সত্য নাও হতে পারে।

    সুতরাং মহাবিশ্বের (মানে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীবজগৎ সহ) কোন অংশ আমরা কিভাবে পর্যবেক্ষণ করছি এবং কতটুকু পর্যবেক্ষণ করতে পেরেছি, আমাদের প্রকল্প (Hypothesis) এবং তত্ত্ব তার উপর নির্ভর করে।

    যেমন টলেমীর জিওসেন্ট্রিক মডেল (তথা পৃথিবীর চারপাশে সূর্য ঘুরে) ততক্ষণ পর্যন্ত কার্যকর ছিলো যতক্ষন পর্যবেক্ষণলব্ধ তথ্য উক্ত মডেল দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাচ্ছিল। কিন্তু, যখনই নতুন পর্যবেক্ষণলব্ধ তথ্য উক্ত মডেল দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাচ্ছিল না তখন কোপারনিকাসের হেলিওসেন্ট্রিক মডেল (তথা সূর্যের চারপাশে পৃথিবী ঘুরে) এসে জায়গা করে নিলো।

    আরেকটা মজার বিষয় হল হাতে থাকা তথ্যকে অনেক সময় একাধিক মডেল বা প্রকল্প দিয়ে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। কিন্তু, এর মধ্যে কোন প্রকল্পটি গ্রহন করা হবে তা নির্ভর করছে উক্ত প্রকল্পটির ‘ব্যাখ্যা শক্তি’ (explanatory power) -এর উপর। যে প্রকল্পটি আহরিত তথ্যের সবচেয়ে ভাল ব্যাখ্যা দিতে পারবে এবং যেটি তুলনামূলক সহজ, রীতি হলো সেটি গৃহীত হবে।

    বিজ্ঞানী মহলে Occam’s Razor বলে একটি কথা আছে। যার বক্তব্য হচ্ছে- যখন কোন পর্যবেক্ষণ ব্যাখ্যা করতে একাধিক প্রতিযোগী প্রকল্প দাড় করানো হয় তখন সে প্রকল্পটি গ্রহন করতে হবে যেটি সর্বনিম্ন সংখ্যক ‘অনুমিতি’ নির্ভর তথা ‘সহজ’। তার মানে এই নয় যে অন্যান্য প্রকল্প ভুল। বরং, সংশ্লিষ্ট প্রকল্পটি এজন্য গ্রহন করা হচ্ছে যে এটি বৈজ্ঞানিকভাব তুলনামূলক সহজে পরীক্ষা (test) করা যাবে।

    সুতরাং, দেখা যাচ্ছে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি কখনও শতভাগ সত্যের নিকটে পৌছতে পারে না। কারণ, বিজ্ঞান নির্ভর করে মানুষের ‘পর্যবেক্ষণ’ সীমার উপর।


    ‘বিবর্তনবাদ’ ফসিল এভিডেন্স ও স্পিসিস-এর জিওগ্রাফিক লোকেশনের একটা সুন্দর ব্যাখ্যা দেয়। কিন্তু, একটা ব্যাকটেরিয়ার ফ্ল্যাজেলা কিভাবে ‘বিবর্তনের’ মাধ্যমে তৈরী হল তা বিজ্ঞানমহলে প্রচলিত কোন বিবর্তনের ম্যাকানিজম দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না। সুতরাং, যারা বিবর্তনবাদকে শতভাগ সত্য (Fact) বলে দাবী করে, তারা তা করে বিশ্বাসের ভিত্তিতে। এই বিশ্বাস যে, বিজ্ঞান মানুষকে শতভাগ সত্যের দিকে নিয়ে যায়। আর, যারা বিবর্তনবাদকে শুধমাত্র একটি বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব হিসেবে বিবেচনা করে, তাদের বিনয়ের সাথেই মেনে নেয় যে নতুন এমন অনেক পর্যবেক্ষন থাকতে পারে যা ‘বিবর্তনবাদ’ দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না।         

    লক্ষ্যণীয় ‘Observation’ তথা পর্যবেক্ষণ হচ্ছে জ্ঞান আহরনের একটি মাধ্যম মাত্র। মানুষের জ্ঞান অর্জনের আরও অনেক মাধ্যম আছে । ‘Epistemology’ তথা জ্ঞানতত্ত্ব হল দর্শনের একটি শাখা যা মানুষের জ্ঞান আহরনের মাধ্যম এবং মানুষের বিশ্বাস-এর ন্যায্যতা প্রতিপাদন (Justification) নিয়ে আলোচনা করে।
    শেষ করছি একটি প্রশ্ন রেখে। পাঠক ভেবে দেখুনতো মানুষের জ্ঞান আহরনের  আরও কি কি মাধ্যম আছে?

    ফ্যাটি লিভার আধুনিক মানুষের রোগ

    ফ্যাটি লিভার, ন্যাশ এবং লিভার সিরোসিস

    জনাব রফিকুল ইসলাম একজন ব্যবসায়ী। পুরোনো ঢাকার ব্যস্ত মার্কেটে তার কাজ মূলত বসে থেকে ব্যবসার তদারকী করা। ভোজনরসিক রফিক সাহেব ধূমপানের মত বদ অভ্যাস না করলেও একটু ভালো খাবারের লোভ সামলাতে পারেন না। এজন্য তার ওজন বেড়েছে বল্গাহীনভাবে। তার বিএমআই এখন ৩০। ডাক্তারদের ভাষায় অবিজ। একটু বাড়তি ওজন ছাড়া রফিক সাহেবের হিসেবে এতদিন সবকিছু ঠিকঠাক ভাবেই চলছিলো। কিন্তু, গত এক মাস যাবৎ তিনি শারীরিক দুর্বলতা অনুভব করছেন। মাঝে মাঝে পেটের উপরিভাগে ব্যথাও হচ্ছে। প্রস্রাবের চাপটাও বেড়েছে। টিভিতে স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রোগ্রাম থেকে তিনি জানতে পেরেছিলেন যে ডায়াবেটিসের লক্ষণ হল শারীরিক দুর্বলতা, বেশী বেশী ক্ষুধা এবং ঘন ঘন প্রস্রাব। তাই তিনি মেডিসিন বিভাগের একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেন। চিকিৎসক তাকে রক্তের সুগার, লিপিড প্রোফাইল পরীক্ষা করতে বলেন এবং পেটের আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে দেন। ওবেসিটির পাশপাশি ধরা পড়ে ডায়াবেটিস, হাই-ব্লাড প্রেসার এবং ফ্যাটি লিভার।  

    প্রাদুর্ভাব

    ফ্যাটি লিভার ডিজিজ। শব্দগুলো থেকেই বুঝা যাচ্ছে লিভারে ফ্যাটি জমা হয়ে সৃষ্ট রোগের নামই হচ্ছে ফ্যাটি লিভার ডিজিজ তথা ফ্যাটি লিভার। যদি ফ্যাটের কারণে  লিভারে ফ্যাট দুটি কারণে জমা হতে পারে। এক, অ্যালকোহল পান  এবং দুই, অ্যালকোহল ব্যতীত অন্য কারণ। প্রথমটিকে বলা হয় অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ এবং দ্বিতীয়টিকে বলা হয় নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ। বাংলাদেশে যেহেতু অ্যালকোহল পান এখনও লুকিয়ে লুকিয়ে এবং অনিয়মিত ফেনোমেনা সেহেতু অ্যালকোহলজনিত ফ্যাটি লিভার এ দেশে এখনও প্রাধান্য বিস্তার করতে পারেনি। তবে সারা বিশ্বের ন্যায় নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (এন.এ.এফ.এল.ডি) বাড়ছে আশংকাজনক হারে। লিভারের কোষ হেপাটোসাইটের ৫%-এর বেশী জুড়ে যদি লিপিড (তথা ফ্যাট) জমা হয় বা লিভারের মোট ওজনের ৫% যদি ফ্যাট হয় তখন একে বলা হয় নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ। বোঝার সুবিধার্থে আমরা প্রবন্ধের বাকি অংশে নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভারকে শুধু ফ্যাটি লিভার বলব।

    পৃথিবী জুড়ে প্রতি ১০০ জনে প্রায় ২৫ জন লোক ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত। পাশ্চাত্যে দীর্ঘ মেয়াদী লিভার রোগের প্রধানতম কারণ হল ফ্যাটি লিভার। ফ্যাটিলিভারের প্রাদুর্ভাবের দিকে দিয়ে উন্নত দেশগুলোর এক সময় এগিয়ে থাকলেও দক্ষিণ এশিয়াও এখন পিছিয়ে নেই। দক্ষিণ এশিয়ায় ফ্যাটি লিভারের প্রাদুর্ভাব ৫ থেকে ৩০ শতাংশ। তন্মধ্যে, বাংলাদেশ আছে সবচাইতে এগিয়ে। হ্যা, এখানে ফ্যাটি লিভারের প্রাদুর্ভাব ৪ থেকে প্রায় ৩৪ শতাংশ।

    জনাব রফিক ফ্যাটি লিভারের রিপোর্ট নিয়ে এসেছেন লিভার বিশেষজ্ঞের চেম্বারে। সিরিয়াল আসার অপেক্ষায় বসে বসে ফ্যাটি লিভার সংক্রান্ত একটা পুস্তিকা পড়ছিলেন। রফিক সাহেবের মনে মনে ভাবলেন- তার মানে বাংলাদেশে প্রায় ১০০ জনে ৩৪ জন মানুষ ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত? কিন্তু, কেন হচ্ছে এই রোগ? পরের পৃষ্ঠা উল্টোতেই পেলেন তার প্রশ্নের জবাব।

    রিস্ক ফ্যাক্টর