Ask Yourself!

Have you thought once?

Why your eyes-

Look so beautiful

And see so nice?

Why your eyelashes

Don’t grow long?

Why your skull is

Built so strong?

Why your nose has

‘Concha’ in it?

How it tastes good

When you eat?

Do you know that

How you smell?

How you listen to a

Definite scale?

How you see and

How you read?

How you walk n’ run in

Flawless speed?

How you speak and

How you write?

Why your body grow to

Definite height?

Why you need n eat

Food to survive?

Why these foods grow-

In trees alive?

Why your dream seems

Real to you?

Why you get asleep?

What’s your view?

How it feels when

You get pain?

Why your sleep let you

Refreshed again?

Ask your self

And deeply think.

Did you get it?

Need some hint?

It, is, Allah

Who created you.

He gave us guidance

And true right view!

He made us intelligent

So that we can

Obey His orders and

Use our brain.

To spread the word

Of Islam to All.

O Allah! Pardon us n

Help us not fall-

Under wrong hand

And wrong way!

Give us light and

Show right way!

For The Thinkers

In the rise of the sun n’ the moon when sink,

There’re signs for those who gleefully think.

In the fall of  rain, in the growth of grain-

A glimpse of light may peep in your brain.

In the tip of the finger n’ the child when grow,

Lessons of truth we can obviously draw.

In the rivers that flow and the dweller of the sea,

Symbol of right are in hives of the bee.

In the flower that blooms and the fruits when ripe,

Tips for the thinkers are in various color type.

In the seasons that pass, in the passage of time,

Persistently we are in test n’ exam.

But, awful we people! Awful we are!

From the field of knowledge we’re so, so, far!

From the book of light we’re so, so, far!

From the orders of Allah we’re so, so, far!

We are so, so, far!

থ্রিডি চশমা ছাড়াই ত্রিমাত্রিক ছবি দেখুন

নিচে যে ছবি গুলো দেখতে পারছেন এগুলোর নাম অটোস্টেরিওগ্রাম। বিষয়টি সম্পর্কে প্রথম জানতে পারি ২০১৩ সালের দিকে নিউরোসায়েন্সের একটি বইয়ে। আমাদের দৃষ্টি কিভাবে কাজ করে বুঝতে গিয়ে মজার জিনিসটি পাই।

প্রথম দৃষ্টিতে ছবিগুলো জাস্ট হিজিবিজি রং বা এলোমেলো রিপিটেশন মনে হচ্ছে। কিন্তু, আপনি যদি ছবিগুলোর দিকে তাকিয়ে আপনার দুই চোখের দৃষ্টিকে কনভার্জ করে কাছে নিয়ে আসতে পারেন, তাহলে দেখবেন আপনার দৃষ্টিতে ত্রিমাত্রিক একটি চিত্র ভেসে আসছে। তবে কনভার্জ করে ছবিটি তৈরী হতে কিছুটা সময় লাগতে পারে এবং ছবিটিকে কিছুটা সামনে পিছনে করতে হতে পারে।

ত্রিমাত্রিক ছবি বলতে বুঝাচ্ছি আপনার কাছে মনে হবে সংশ্লিষ্ট ছবিটা থেকে ত্রিমাত্রিকভাবে আপনার দিকে একটি চিত্র ভেসে উঠেছে। ঠিক যেরকম থ্রিডি মুভিতে দেখা যায়। অর্থাৎ, একটা ডেপথ অফ ভিউ তৈরী হবে।

তবে ছবিগুলো দেখতে একটু অনুশীলন লাগে। কনভার্জেন্স করা নতুনদের জন্য একটু কঠিন। যারা নতুন, তারা চোখের সামনে আঙুল রেখে সেটার উপরে ফোকাস দিয়ে ছবিটা দেখার চেষ্টা করে দেখতে পারেন।

মজার বিষয় হল দৃষ্টিকে কনভার্জ করতে প্রথমে আপনার চোখে হালকা স্ট্রেইন হবে। কিন্তু যখন ত্রিমাত্রিক ছবিটি আপনার ভিশনে পরিস্কার হয়ে যাবে, তখন আপনি বিস্ময়কর আরাম বোধ করবেন। এই অবস্থায় আপনি ত্রিমাত্রিক ছবিটির দিকে তাকিয়ে যদি সামনে আসেন বা পিছনে যান, তাহলেও ছবিটি চলে যাবে না যতক্ষণ না আপনি আপনার চোখ দুটোকে পুনরায় স্বাভাবিক পজিশনে নিয়ে আসছেন।

বলুনতো নিচের ছবিগুলোতে কি দেখা যাচ্ছে?

প্রতিটি ছবির বর্ণনায় কি দেখতে পাওয়ার কথা লিখে দিয়েছি।

থ্রিডি চশমা ছাড়াই ত্রিমাত্রিক ছবি দেখুন

উপরের ছবিটিতে পাঁচটি বা দশটি কয়েন ভাসমান দেখা যাচ্ছে।

cubes

উপরের ছবিটিতে একটি পেয়ালার মধ্যে কতগুলো নীলচে-কালো রঙ্গের স্বচ্ছ ডায়মন্ড দেখা যাচ্ছে।

spirals web

উপরের ছবিটিতে দুটি ‘8’ আকৃতির ফিতা পরস্পরকে সমকোনে ভেদ করে আছে।

Human

উপরের ছবিটিতে একজন মানুষ একটি বৃত্তাকার জানালা বা গুহামুখ থেকে বের হয়ে একটি লাঠি ধরে আছে। (অনেকে এখানে বাঘ বা ডাইনোসর দেখতে পান।) এ ছবিটি দেখা উপরেরগুলোর তুলনায় একটু কঠিন।

সৃষ্টিতে স্রষ্টার নিদর্শন (৩): ‘পানি’

সৃষ্টিতে স্রষ্টার নিদর্শন (৩): ‘পানি’

ধরুন, আপনি বোটে করে সমুদ্র ভ্রমণে বেরিয়েছেন। পথিমধ্যে বোটের ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে গেছে। ওদিকে আপনি পান করার জন্য যতটুকু পানি নিয়ে এসেছেন তা শেষ হয়ে গেছে। আপনার কাছে সফট ড্রিংকস আছে। কিন্তু, তাতে কি আপনার তৃষ্ণা মিটবে? আপনি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন যে জীবনে পানির প্রয়োজনীয়তা কতটুকু।

মানুষের একটা স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সে যে বিষয়গুলো কোন প্রকার কষ্ট ছাড়াই প্রতিদিন উপভোগ করছে সেগুলো তার মনে কখনও ভাবনার উদ্রেক করে না। যেমন আমরা সবসময় দেখি কোন জিনিস উপর থেকে ফেললে নিচে পড়ে। কিন্তু, কেন পড়ে সেই বিষয়ে আমাদের কোন কৌতুহল জাগ্রত হয় না। যারা একটু ভিন্নভাবে চিন্তা করে তারা পর্যবেক্ষণলব্ধ ঘটনার মধ্যে কার্যকারণ খুঁজে পায়।

পানি হচ্ছে মহান আল্লাহর এমন একটি নেয়ামত যার গুরুত্ব আমরা সচরাচর উপলব্ধি করি না। তাই আসুন আজকে আমরা একটু পানি নিয়ে ভাবনার জগতে ডুব দেই।

আনবিক পর্যায়ে দুটি হাইড্রোজেন অ্যাটোম এবং একটি অক্সিজেন অ্যাটোমের সমন্বয়ে তৈরী হয় পানি। হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন দুটিই স্বাভাবিক তাপমাত্রায় বায়বীয় অবস্থায় থাকে। অথচ, এই দুটোর সমন্বয়ে তৈরী হয় অসাধারণ এক তরল যার উপর ভিত্তি করে দাড়িয়ে আছে সমগ্র জীবজগত। মানবদেহের প্রায় সত্তর শতাংশ হল পানি।

পানির অনেকগুলো ইউনিক বৈশিষ্ট্য আছে যা অন্যান্য তরল পদার্থের নেই। Michael Denton তার বই Nature’s Destiny: How the Laws of Biology reveals Purpose in the Universe-এ পানির বেশ কিছু ‘ইউনিক’ তথা স্বতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য লিপিবদ্ধ করেছেন। চলুন এ রকম কিছু বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জেনে নিই।

পদার্থের একটা সাধারন নিয়ম হল উত্তপ্ত করলে প্রসারিত হয় এবং ঠান্ডা করলে সংকুচিত হয়। পানির ক্ষেত্রেও এ রকম হয়। তবে অন্যান্য পদার্থকে ঠান্ডা করতে থাকলে সেগুলো সংকুচিত হতে হতে একটা সুনির্দিষ্ট তাপমাত্রায় গিয়ে কঠিন পদার্থে পরিণত হয়। উক্ত তাপমাত্রাকে বলা ‘ফ্রিজিং পয়েন্ট’। পানির একটি ‘ইউনিক’ বৈশিষ্ট্য হল পানি যেই তাপমাত্রায় (শুন্য ডিগ্রী সেলসিয়াস) গিয়ে বরফে পরিণত হয় ঠান্ডা করতে থাকলে পানি সেই পর্যন্ত সংকুচিত হয় না। বরং চার ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত সংকুচিত হওয়ার পর প্রসারিত হতে শুরু করে এবং বরফে পরিনত হওয়ার সময় হঠাৎ অনেক বেশী প্রসারিত হয়। পানির এ বৈশিষ্ট্যের কারণে অত্যন্ত ঠাণ্ডা এলাকায় পুকুর বা লেক বা মেরুঅঞ্চলের সমুদ্রে পানি উপরিতলে বরফে পরিনত হলেও নিচে তরল হিসেবে থাকে। ফলে, গভীরের বসবাসরত সামুদ্রিক জীবগুলো বরফে পরিণত হয় না এবং বেঁচে থাকে। কখনও কি ভেবে দেখেছেন, পানিও তো পদার্থ। তাহলে কেন এটা অন্যান্য পদার্থের মত ‘ফ্রিজিং পয়েন্ট’ পর্যন্ত সংকুচিত হয় না?

কোন পদার্থ যখন তরল থেকে বায়োবীয় অবস্থায় রূপান্তরিত হয় তখন পরিবেশ থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ তাপগ্রহন করে। একে বলে ‘ল্যাটেন্ট’ হিট। পৃথিবীতে যত তরল আছে তার মধ্যে পানির ‘ল্যাটেন্ট’ হিট সবচেয়ে বেশী। এই গরম কালে আপনি আপনার রুমে কিছু কাপড় ভিজিয়ে রেখে দেখুন। ধীরে ধীরে রুমটা অনেক ঠাণ্ডা হয়ে যাবে। কারণ কাপড়ের উপরিস্তর থেকে পানির অনু জলীয়বাস্প হয়ে উড়ে যাওয়ার সময় পরিবেশ থেকে তাপ শোষন করে নিয়ে যায়। পানির এই বৈশিষ্ট্য না থাকলে পৃথিবীর আবহাওয়া খুব দ্রুত তাপমাত্রা পরিবর্তন হত। ছোট ছোট লেক বা নদী খুব দ্রুত উধাও হয়ে যেত আবার উদয় হত। অন্যদিকে জীবজগতের শারিরীক তাপমাত্রার নিয়ন্ত্রন সুশৃংখলভাবে সম্ভব হচ্ছে পানির এই বৈশিষ্ট্যের কারণে।

কোন পদার্থের তাপমাত্রা এক ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড বাড়ানোর জন্য যতটুকু তাপ দেয়া দরকার তাকে বলে ‘থারমাল ক্যাপাসিটি’। পানির থার্মাল ক্যাপাসিটিও অন্যান্য সব পদার্থের চেয়ে বেশী। এইটাও পানির একটি ‘ইউনিক’ বৈশিষ্ট্য। কেন? এই বৈশিষ্ট্য না থাকলে শীতকাল ও গরমকালে তাপমাত্রার পার্থক্য আরও প্রকট হত। আমরা উপরে জেনেছি মানুষের শরীরের প্রায় সত্তরভাগ পানি। পানির তাপমাত্রা এক ডিগ্রী বাড়াতে যদি অল্প তাপ দিলেই হত তাহলে অতিদ্রুত কোষের অন্ত:স্থ তাপমাত্রা বেড়ে যেত। ফলে কোষের ভিতরের গাঠনিক উপাদানগুলোর গঠন নষ্ট হয়ে যেত। জীবের গঠনের একাগ্রতা (ইনটেগ্রিটি) বিনষ্ট হত।

পানির আরেকটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হল পানির তাপ পরিবহন ক্ষমতা অন্যান্য সাধারণ তরল থেকে চারগুন বেশী। পানির এই বৈশিষ্ট্য না থাকলে কোষের ভিতরে তাপমাত্রার সমসত্ব বিস্তৃতি সম্ভব হতো না।

অন্যদিকে বরফের তাপ পরিবহন ক্ষমতা কম। এ কারণে মেরু অঞ্চলে সমুদ্রের উপরিভাগ বরফ হয়ে গেলেও নিচের অংশ বরফ হয় না যা জলস্থ জীবের বেঁচে থাকার জন্য জরুরী।

যে কোন তরলের উপরের স্তরে একটা পৃষ্ঠটান (সারফেস টেনশন) থাকে। পানির পৃষ্ঠটান অনেক বেশী। যার ফলে মাটির তলদেশে গাছপালার মূল পানির সরবরাহ বজায় থাকে। অন্যান্য তরল পদার্থের মত পানির পৃষ্ঠটান থাকলে পৃথিবীতে বড় কোন বৃক্ষ থাকত না। পানির এই পৃষ্ঠটানের কারণে পাথরের মধ্যস্থিত ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ছিদ্র ও ফাটলগুলোতে পানি জমা হয় এবং এই পানি যখন ঠাণ্ডা হয়ে যায় তখন পাথর ভেঙ্গে যায় এবং পাথরে জমা হওয়া খনিজ পদার্থ মাটিতে ছড়িয়ে পড়ে। যার মাধ্যমে পানি পৃথিবীর পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

উপরে আমরা পানির যে ফিজিক্যাল বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানলাম জীবজগতের গঠনে এগুলো কোন উপকারেরই আসত না যদি না পানির রাসায়নিক গঠনও স্বতন্ত্র হত। পানিকে বলা হয় সার্বজনীন দ্রাবক। কারণ পানি অসংখ্য রাসায়নিক পদার্থকে দ্রবিভূত করতে পারে। পানি সার্বজনীন দ্রাবক না হলে জীবকোষের অসংখ্য রাসায়নিক প্রক্রিয়া সম্ভব হতো না এবং পৃথিবীতে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থের বিস্তৃতি সমান হতো না।

পানির আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল এটি বেশ সক্রীয় (রিএকটিভ) রাসায়নিক পদার্থ। তবে বিভিন্ন অ্যাসিড বা ক্ষারের মত এত বেশী সক্রীয় না। যদি হত, তাহলে যে কোন পদার্থ পানিতে দেয়া মাত্রই মিশে যেত এবং কোন জৈবিক বৈশিষ্ট্য গঠন করা সম্ভব হতো না।

যে বৈশিষ্ট্যের জন্য পদার্থের আঠালো ভাবটা তৈরী হয় তাকে বলে সান্দ্রতা বা ভিসকোসিটি। প্রকৃতিতে প্রাপ্ত বিভিন্ন তরল পদার্থের মধ্যে পানির সান্দ্রতা সবচেয়ে কম। শুধুমাত্র কিছু গ্যাসীয় পদার্থের (যেমন: হাইড্রোজেন) তরল অবস্থায় পানির চেয়ে কম সান্দ্রতা থাকে। মজার বিষয় হল পানির সান্দ্রতাও অত্যন্ত ভারসাম্যপূর্ণ সীমায় নির্ধারণ করা হয়েছে। পানির সান্দ্রতা যদি তরল হাইড্রোজেনের মত কম হত কোষের ভিতরস্থ কোন ধরনের আনুবিক্ষনিক গঠনকে ধরে রাখা সম্ভব হত না। আবার, পানির সান্দ্রতা বেশী হলে মাছ বলে কিছু থাকত না, পানিতে নৌকা চালানো সম্ভব হত না, সাতার কাটা যেত না। এমনকি, কোন আনুবিক্ষনীক জীব বা কোষের আভ্যন্তরীন ক্ষুদ্রাঙ্গের পক্ষে পানিতে চলাফেরা করা সম্ভব হত না।

ব্যাপন প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রনে সান্দ্রতার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। পানির মধ্য দিয়ে বিভিন্ন পদার্থ খুব দ্রুত ব্যাপন প্রক্রিয়ায় অল্প দূরত্বে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। কোষের ভিতর এবং বাহিরে বিভিন্ন উপাদানের আদান প্রদান নির্ভর করে ব্যাপন প্রক্রিয়ার উপর। পানির সান্দ্রতা দশগুন বেশী হলে ব্যাপন হার দশভাগ কমে যেত। ফলে কোন অনুজীব ব্যাপন প্রকিয়ায় খাদ্য উপাদান সংগ্রহ করতে পারত না।

কৈশিক জালিকার মত ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র নালী দিয়ে রক্ত প্রবেশ করার জন্য যে ধরনের সান্দ্রতা থাকা দরকার পানির সান্দ্রতাও ঠিক ততটুকুই ভারসাম্যপূর্ণ। সান্দ্রতা বেশী হলে কৈশিক জালিকায় রক্ত সঞ্চালনের জন্য হার্টের অনেক বেশী প্রেসার দিতে হত ফলে এমন কোন রক্তসঞ্চালন প্রক্রিয়া তৈরীই সম্ভব হত না যা সফলভাবে কাজ করে।

বরফের সান্দ্রতাও পৃথিবীতে জীবন ধারনের জন্য নিয়ন্ত্রিত। বরফের সান্দ্রতা পানির সান্দ্রতার তুলনায় ১০^১৬ গুন বেশী। বরফের সান্দ্রতা কয়েক ভাগ কম হলে বরফপিণ্ড কর্তৃক পাহাড়ের মাটি ভেঙ্গে প্রকৃতিতে মিনারেল ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব হতো না। অন্যদিকে সান্দ্রতা বেশী হয়ে গ্রানাইটের কাছাকাছি হলে মেরু অঞ্চলে পানির প্রবাহ থাকতো না, বিশাল বরফের স্তর থাকতো এবং পৃথিবীতে পরিমিত পরিমাণ তরল পানিই থাকতো না।

পানির ঘনত্বও জীবন গঠনের জন্য যথার্থ। পানির ঘনত্ব বর্তমানের তুলনায় কয়েকগুণ বেশী হলে জীবের ওজন বেশী হত, আকার আকৃতি অনেক ছোট হত এবং মানুষের মত সোজা মেরুদণ্ডী দ্বিপদী প্রানীর অস্তিত্ব সম্ভব হত না। শুধু তাই না ঘনত্ব বেশি হলে কার্বনভিত্তিক সকল জীব জলরাশির উপরের স্তরে ভেসে বেড়াতে হতো, ডুবতে পারতো না। অন্যদিকে ঘনত্ব কম হলে সিসার বলের মত পানির তলদেশে ডুবে যেত।

জীবনকে নিশ্চিত করার জন্য পানির এই সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যগুলোর সংখ্যা এখানেই শেষ নয়। আবহাওয়ার চক্র নিয়ন্ত্রনের পানির বিভিন্ন ফিজিক্যাল ও কেমিকাল বৈশিষ্ট্যগুলোর ঠিক যতটুকু ‘টিউনিং’ হওয়া দরকার ঠিক ততটুকুই টিউনিং করা আছে।

সুতরাং, আমরা বুঝতে পারছি কেন পানির অপর নাম জীবন।

আপনার কি ধারণা পানির এই সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যগুলো একা একাই উদ্দেশ্যহীন ভাবে তৈরী হয়ে গেছে? নাকি পানিকে এইভাবে পরিকল্পনা করেছেন কোন পরাক্রমশালী ও বুদ্ধিমান স্বত্তা যিনি জীবন তৈরীর জন্য পানির প্রয়োজনীয় গঠন সম্পর্কে জানেন?

এক গ্লাস পানি হাতে নিয়ে বসুন। একবার ভাবুনতো এই যে মাটি খুড়লেই আপনি ভুগর্ভস্থ পানি পেয়ে যাচ্ছেন কেন এবং কোথা থেকে এই পানি আসল? পানির যে বৈশিষ্ট্যের জন্য মাটির গভীরে বা পাথরের ফাঁকে পানি জমে থাকছে সেই বৈশিষ্ট্য কার রহমতে সৃজিত হল? চিন্তা করে দেখুনতো, এই পানির স্তর যদি আরও নিচে নেমে যেত তাহলে কি আপনি বেঁচে থাকতে পারতেন?

“বলুন, তোমরা ভেবে দেখেছ কি, যদি তোমাদের পানি ভূগর্ভের গভীরে চলে যায়, তবে কে তোমাদেরকে সরবরাহ করবে পানির স্রোতধারা?” (সুরা মূলক্, আয়াত নং-৩০)

ধর্ম, দর্শন ও বিজ্ঞান (১)

‘God of the gaps’ ফ্যালাসী হল বিজ্ঞানের অমিমাংসিত প্রশ্নগুলোতে স্রষ্টার দোহাই দিয়ে চুপ থাকা।

আপেলটা কেন মাটিতে পড়ল এই প্রশ্নটি নিয়ে চিন্তা করতে আপনি যদি এই বলে থেমে যান যে, আল্লাহর হুকুমে পড়েছে, তাহলে কিন্তু এই প্রশ্নটির উত্তর আর এগুবে না। এ কারণেই বিজ্ঞানের জগতে ‘Methodological naturalism’ অনুসরণ করা হয়। অর্থাৎ, যে কোন প্রাকৃতিক ঘটনার ব্যাখ্যা প্রাকৃতিক নিয়ম দিয়ে করতে হবে এ ধরনের একটি অঘোষিত নিয়ম বিজ্ঞানের জগতে মেনে চলা হয়।

তবে তার মানে এই না যে, বিজ্ঞান একটা ঘটনাকে প্রাকৃতিক নিয়ম দিয়ে ব্যাখ্যা করতে পারলে সে স্রষ্টার অস্তিত্বকে অস্বীকার করলো।

কারণ, বিজ্ঞানের শুরু হয় প্রশ্ন থেকে এবং প্রথম দিককার অধিকাংশ বিজ্ঞানীই তাদের অনুসন্ধানের পিছনে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে বলেছেন বা স্বীকার করেছেন যে স্রষ্টা কোন নিয়মে পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন সে বিষয়টিই অনুসন্ধান করার উদ্দেশ্যেই তাদের গবেষণা।

বিষয়টি একটি উদাহরণ দিয়ে বুঝাই। ধরুন পৃথিবীতে কিভাবে এত প্রজাতি আসল সেটা নিয়ে আপনি চিন্তা করছেন। এখন আপনি যদি বলেন যে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন তা-ই এসেছে তাহলে কিন্তু ঠিক ব্যাখ্যাটা এসে থেমে যাবে। প্রশ্নটি যদি আপনি একটু প্যারাফ্রেজ করে এভাবে চিন্তা করেন যে, কোন নিয়মে আল্লাহ বিভিন্ন প্রজাতি তৈরী করে থাকতে পারেন? তখন উত্তরে যদি আপনাকে উপযুক্ত প্রমাণ সহকারে দেখানো হয় প্রথম কোষগুলোর মধ্যেই ভ্যারিয়েশন সৃষ্টি ও প্রাকৃতিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় উক্ত ভ্যারিয়েশনের সিলেকশনের মাধ্যমে বিবর্তিত হয়ে বিভিন্ন প্রজাতি তৈরী হওয়ার পদ্ধতি দেয়া ছিলো, তাহলে বরং স্রষ্টা সৃষ্টিকুশলতা দেখে আপনার বিশ্বাস আরও দৃঢ় হবে।

ইন ফ্যাক্ট এই প্রেক্ষিতে আপনি যদি নিওডারউইনিজম প্রদত্ত পদ্ধতিতে আনস্যাটিসফাইড থাকেন তখন আপনি ‘বিশ্বাসী’ হয়েও বিকল্প হিসেবে অন্য কোন প্রাকৃতিক ব্যাখ্যা দাড় করাতে চেষ্টা করবেন। অর্থাৎ, তখন আপনি যদি নব্য-ডারউইনবাদের সমালোচনা করেন আপনার লক্ষ্য থাকবে নব্য-ডারউইনবাদের ‘পদ্ধতির’ সমালোচনা করে ‘বিকল্প’ প্রাকৃতিক পদ্ধতি উপস্থাপন করার চেষ্টা করা। সেক্ষেত্রে স্রষ্টার অস্তিত্ব ভুল প্রমানিত হয়ে যাবে না।

তাহলে, বিশ্বাসীদের মধ্যে বিজ্ঞানের ভিতর স্রষ্টাকে খুজার এই প্রবণতা আসলো কোথা থেকে? এর একটা অংশ এসেছে মিলিট্যান্ট নাস্তিক ও বিজ্ঞানবাদীতার অনুসারী কতৃক বিজ্ঞানকে নাস্তিকতার পক্ষে প্রমাণ হিসেবে প্রচারণার প্রতিক্রিয়াস্বরূপ।

যেমন: ডকিন্স বলছেন:

“Although atheism might have been logically tenable before Darwin, Darwin made it possible to be an intellectually fulfilled atheist” (১)

অর্থাৎ, ডকিন্স বিজ্ঞানকে পরোক্ষভাবে নাস্তিকতার পক্ষে প্রমাণ হিসেবে প্রচার করছেন। অথচ, উপরে আমরা দেখেছি যে বিবর্তনবাদ প্রমানিত হলেও স্রষ্টা অপ্রমানিত হয়ে যায় না।

বিখ্যাত নাস্তিক জীবাশ্মবিদ স্টিফেন জে গোল্ড ধর্ম ও বিজ্ঞানকে বলছেন ‘Non Overlapping Magisteria (NOMA)’ (২). অর্থাৎ বিজ্ঞান ও ধর্মের গবেষণা, পড়াশোনা ও প্রয়োগের ক্ষেত্র আলাদা।

কিন্তু, ডকিন্স, হ্যারিস, ডেনেট, হিচেন্সরা এমন একদল তরুন তৈরী করেছে যারা বিজ্ঞানবাদীতার অনুসারী। এদের মতে ধর্মের নিয়মনীতির জায়গাটুকুও (যেমন: মোরালিটি, অ্যারিস্টটালিয়ান ফাইনাল কজ সম্পর্কে প্রশ্ন ) বিজ্ঞান নির্ধারণ করে দিবে। যার মাধ্যমে সূক্ষ্ন ভাবে বিজ্ঞানীদের প্রতি এক ধরনের ঘৃণা বিশ্বাসীদের মন মগজে ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে।

এছাড়াও, অন্যান্য অনেক নাস্তিক বিজ্ঞানীও তাদের বৈজ্ঞানিক গবেষণা তথা Methodological naturalism-এর সাথে তাদের বিশ্বাস তথা Philosophical naturalism-কে জুড়ে দিচ্ছে।

অধিকাংশ বিশ্বাসীর ফিলোসফিকাল ডিসকোর্সের এই জটিল নিয়মাবলী (অর্থাৎ অ্যারিস্টটালিয়ান কজোলজীর ম্যাটেরিয়াল, ফর্মাল, ইফিসিয়েন্ট ও ফাইনাল কজ) সম্পর্কে মাথা ঘামানো সময় নেই বিধায় তাদেরকে ডকিন্স এণ্ড গং রা সহজেই ধোকায় ফেলতে পারছে।

আস্তিকদের জানা দরকার যে, উক্ত ফাইনাল কজ অর্থাৎ ‘সবকিছুর সর্বশেষ কারণ কে?’ এই প্রশ্নের উত্তর আমাদেরকে দুটো বিভাগ দেয়: দর্শন ও ধর্ম।

তবে দর্শন আপনাকে ফাইনাল কজ হিসেবে স্রষ্টার অস্তিত্বের নেসেসিটি, তার বৈশিষ্ট্য, ক্ষমতা, গুন সম্পর্কে ধারণা দিবে এবং ধর্ম আপনার উক্ত ধারণাকে তথা স্রষ্টার অস্তিত্বকে কনফার্ম করবে এবং স্রষ্টা আপনাকে কি উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন এবং কি করলে তার সন্তুষ্টি অর্জন করা যাবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত নিয়মাবলী জানাবে।

সুতরাং বিশ্বাসীদের একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল বিজ্ঞানবাদীতা (Scientism)-এর আবরণ থেকে বিজ্ঞানকে উন্মুক্ত করে উপস্থাপন করা এবং দেখানো যে বিজ্ঞান আসলে নাস্তিক দর্শনের এনডর্সমেন্ট দেয় না।

তবে একটা প্রশ্ন থেকে যায়, আল্লাহ কোরআনে যে বার বার বলেছেন সৃষ্টিতে তার নিদর্শন আছে। তাহলে সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করলে কি আমরা তার নিদর্শন পাবো না? আমার মনে হয়, বিজ্ঞানের মধ্য দিয়ে স্রষ্টাকে খুজার প্রবণতা তৈরী হওয়ার এটিও একটি কারণ।

এবং, আমি মনে করি স্রষ্টার সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করলে তার নিদর্শন পাওয়া যায়। যেমন: মহাবিশ্বের ফাইন টিউনিং, বায়োলজিকাল বিইং-এর ডিজাইন ইনফারেন্স ও হিউম্যান ইনটেলেক্ট-এর ইউনিক ফিচারস থেকে স্রষ্টার অস্তিত্বের পক্ষে অ্যাবডাকটিভ বা ইনডাক্টিভ ইনফারেন্স আনা যায়।

অর্থাৎ সায়েন্টিফিক ইনভেস্টিগেশন চূড়ান্ত পর্যায়ে দর্শনের দিকে স্বত:স্ফূর্তভাবেই নিয়ে যায়।


রেফারেন্স:
১. Dawkins, Richard. 1986. The Blind Watchmaker. New York: Norton, p 6.
২. Stephen Jay Gould, “Non overlapping Magisteria”. Accessed 15 March 2018; Retrieved

Brainstorming about Mind #1

What is creativity?

What is intelligence?

What is non-computable or non-algorithmic about intelligence?

The Turning halting problem has shown us that there is no program, which could decide whether any arbitrary computer program would halt or loop forever.

Godel’s Incompleteness theorem has shown us that deriving all mathematics from a group of axioms is not possible.

This means, there’s surely something non-computable about the mind that exists.

So, what is non-computable about our minds.

Let us think about the issue.

We know, whenever we face a complex problem, it is easy to deal with it by breaking it into simpler parts.

So when we think, imagine, or get creative about something, what does our mind actually do?

It processes sensory information from vision, hearing, smelling, tasting, and touch. In the sensory cortices of our brain, we process the electrochemical signals coming from sensory organs and perceive them in our own unique ways. This perception, dubbed ‘qualia’, is subjective and can’t be reached objectively.

Now, let’s think of our childhood brain as an empty slate with certain programs installed in it on how to process information. From infancy, we are exposed to a lot of information about relationships between different types of sensory information. For example, a child sees its surroundings and learns how to reproduce them. It sees our gestures during our talk, including facial and bodily movements, and the sounds we produce. It then reproduces this information using its motor apparatus. While processing this information, it learns the relationship between different types of information we have ascribed, knowingly or unknowingly, e.g., the relationship between sounds we produce and the hand movements we do, the minute facial muscle movements, and the sound units produced through this process, etc.

A child while getting acquainted with the ‘letters’ and their corresponding sound units- ‘phonemes’ during learning how to read and write, learns about our ascribed ‘relationship’ between a ‘curved line (e.g., letter ‘p’)’ and the sound (e.g., ‘p’ sound). The child then writes the ‘p’ and uses this information learned from experience.

It seems like a highly sophisticated computer using neural networks or parallel connections could do the same if trained through all the information in its surrounding environment over years (like a child learns through experience over time).

However, what is unique about us is that we can produce a completely ‘arbitrary’ relationship between two types of sensory information. For example, you can, just for fun, ascribe the sound ‘A’ to the letter ‘B’, the sound ‘B’ to the letter ‘C’, and write down cryptic sentences using your new symbolic language. However, a computer, running on algorithms, can’t produce a completely “novel” arbitrary relationship (i.e., ascribe arbitrary meaning between two types of sensory units).

Interestingly, we can also retrieve any arbitrary relationships by getting enough information about a new cryptic symbolic system.

When we do abstract thinking we actually manipulate and examine different types of arbitrary relationships between different sensory information and do logical or intuitive deduction.

If we think about this deeply, we can realize that- “The unique feature of human intellect is the ability to associate two unrelated objects with purpose.”

I came across this realization when I got a deeper understanding of our neuronal structure through several texts and other books. Interestingly, I got a similar insight from Dale Purves’ textbook ‘Neuroscience’ and pediatric neurosurgeon Michael Egnor’s talks.

Long ago, realizing this significant feature of the human mind, I put it in my Facebook profile intro. It now seems this understanding is being confirmed day by day.

Alhamdulillah! Allah is the Greatest.

বিজ্ঞানে তত্ত্বের মিথ্যা প্রমাণ যোগ্যতা

(Falsifiability in science)

ধরুন, আপনার কাছে আপনার বন্ধু এসে দাবী করল তার বাসার চিলেকোঠায় ‘নোম’ নামক এক প্রকার কিম্ভূতকিমাকার প্রাণী আছে। প্রাণীগুলো সাইজে লিলিপুটদের মত। সবুজ রঙের।

আপনি একজন রিজনেবল মানুষ। আপনি জানতে চাইলেন এই প্রাণী আছে তার প্রমাণ কি?

আপনার বন্ধু বলল যে, সে নিজ চোখে দেখেছে। আপনি তার কথায় বিশ্বাস করতে পারলেন না। এজন্য স্বচক্ষে দেখতে তার বাসায় গেলেন। কিন্তু, আপনি দরজা খুলে সম্পূর্ণ পরিচ্ছন্ন গোছানো একটি রুম ছাড়া কিছু দেখতে পারলেন না। আপনার বন্ধুও প্রমাণ হিসেবে তার বিশ্বাস ছাড়া কোন এনোম্যালী তথা বাসার স্বাভাবিক অবস্থা থেকে ব্যতিক্রম কিছু উপস্থাপন করতে পারলো না।

আপনার মনে হল আপনার বন্ধু বোধ হয় হ্যালুসিনেট করছে। কিন্তু, আপনি তার ইভ্যালুয়েশন করে কোন মেডিকেল কারণ খুজে পেলেন না। আপনার কাছে কোন উপাত্ত না থাকায় বা‘নোম’ এর উপস্থিতি প্রমাণ বা অপ্রমাণের কোন উপায় না থাকায়, তার বিশ্বাসকে আপনি মিথ্যাও প্রতিপন্ন করতে পারলেন না।

আপনার বন্ধুর দাবীটি(বা প্রকল্প বা তত্ত্বটি) বৈজ্ঞানিকভাবে মিথ্যা প্রমাণ যোগ্য নয় বিধায় বিজ্ঞানের দর্শনের পরিভাষায় একে বলা হচ্ছে ‘unfalsifiable statement’।

বিজ্ঞানের দার্শনিক (Philosopher of Science) কার্ল পপারের মতে কোন তত্ত্বকে ‘বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব’ হিসেবে স্বীকৃতি দেবার জন্য তা Falsifiable হতে হবে। অর্থাৎ, একদল গবেষক যদি দাবী করে যে নতুন এক ধরনের শ্বসনতন্ত্রের রোগ দেখা দিয়েছে যার পিছনের একটি ভাইরাস দায়ী। অন্য গবেষকদের সেটি পরীক্ষানিরীক্ষার মাধ্যমে মিথ্যা(বা মিথ্যা নয়) প্রমাণ করার সুযোগ থাকতে হবে।

কোন উপাত্ত ব্যাখ্যার জন্য প্রদত্ত তত্ত্ব যদি মিথ্যা প্রমাণ করার সুযোগ না থাকে তাহলে তা বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব হিসেবে স্বীকৃতি পাবে না।

এখন, কোন উপাত্তের অবস্থা যদি এমন হয় তা ব্যাখার জন্য প্রদত্ত তত্ত্ব পরীক্ষানিরীক্ষা করে পর্যবেক্ষণ সম্ভব নয়, সেক্ষেত্রে দার্শনিক রিজনিং প্রয়োগ করে উক্ত তত্ত্বের বিশ্বাস যোগ্যতা যাচাই করা যেতে পারে। কিন্তু, সেটা বিজ্ঞানের জগতের বাইরে দর্শনের জগতে প্রবেশ করবে।

সুতরাং, আমরা যারা গবেষক হতে চাই, আমাদের মনে রাখতে হবে যে আমরা আমাদের পর্যবেক্ষণ লব্ধ উপাত্ত থেকে রিজনিং-এর মাধ্যমে যে তত্ত্ব দিয়ে উক্ত উপাত্তের কার্যকারণ ব্যাখ্যা করতে চাই, তা যেন ফলসিফাইয়েবল হয়।

গবেষণায় যুক্তিপ্রয়োগ

রিসার্চ বা গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ হচ্ছে Inference । বাংলায় এর অর্থ হচ্ছে সিদ্ধান্ত নেয়া বা অনুমান করা।

আমরা যখন কোন রিসার্চ বা গবেষণা করি, তখন একটি গবেষণা চক্রের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। উক্ত গবেষণা চক্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ইনফারেন্স।

গবেষণা চক্রের গড়নটা হচ্ছে অনেকটা এ রকম- তত্ত্ব (Theory) – প্রকল্প (Hypothesis) – উপাত্ত (Observation) –অনুমান/সিদ্ধান্ত (Inference)- তত্ত্ব (Theory)।

ইনফারেন্স করার জন্য বৈজ্ঞানিকরা যে চিন্তা প্রক্রিয়া ব্যবহার করেন তাকে বলা হয় যুক্তি প্রয়োগ তথা Reasoning।

বৈজ্ঞানিক গবেষণায় কারণ খুঁজে বের করার প্রক্রিয়া বা যুক্তি প্রয়োগ (Reasoning) বিভিন্ন রকম হতে পারে। চলুন উদাহরণ দিয়ে বিষয়গুলো বোঝার চেষ্টা করি।

এক, ধরুণ আপনি ভিন্ন কোন গ্রহে প্রাণের খোঁজে গিয়েছেন। আপনি জানেন যে, কোন স্থানে জীব থাকলে পানিও থাকবে (প্রস্তাব ১)। আপনি উক্ত গ্রহে একটি জীব খুঁজে পেলেন (প্রস্তাব ২)। সুতরাং, আপনি যৌক্তিক সিদ্ধান্তে উপনিত হবেন যে উক্ত গ্রহে পানি আছে (সিদ্ধান্ত)। এই ধরণের রিজনিংকে বলা হয় Deductive Reasoning।

অর্থাৎ, ডিডাকটিভ রিজনিং-কে নিচের কাঠামো দিয়ে প্রকাশ করা যায়।

প্রস্তাব ১: সকল ‘ক’-ই ‘খ’।

প্রস্তাব ২: ‘গ’ হচ্ছে একটি ‘ক’।

সুতরাং: ‘গ’-ও একটি ‘খ’।

দুই, আপনি আপনার জীবনে যতগুলো কাক দেখেছেন সবগুলোই কালো (উপাত্ত)। সুতরাং, আপনার প্রকল্প বা হাইপোথিসিস হচ্ছে যে আপনি যদি আরেকটি কাক দেখেন তা কালো হবে (সিদ্ধান্ত)। এই ধরনের রিজনিংকে বলা হয় Inductive reasoning।

উপাত্ত: আপনার দেখা সকল কাক কালো।

সিদ্ধান্ত: সকল কাকই কালো।

ইনডাকটিভ রিজনিং-এর সমস্যা হলো আপনি সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন আপনার সীমিত পর্যবেক্ষনের মাধ্যমে। হতে পারে আপনার একজন বন্ধু একদিন একটি ‘সাদা কাক’ দেখতে পেলো। তখন আপনার পর্যবেক্ষনের মাধ্যমে প্রাপ্ত সিদ্ধান্তটি ভুল প্রমানিত হবে।

ইনডাকটিভ রিজনিং-কে নিচের কাঠামো দিয়ে প্রকাশ করা যায়।

উপাত্ত: সকল আপাত পর্যবেক্ষণ লব্ধ ‘ক’-ই ‘খ’।

সিদ্ধান্ত: সকল ‘ক’-ই ‘খ’।

তিন, আপনি একজন অনুজীব বিজ্ঞানী। আপনি দেখলেন ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে যে ফ্ল্যাজেলা আছে তাতে চল্লিশটি বিভিন্ন ধরনের প্রোটিন একটি সুনির্দিষ্ঠ গঠনে পরস্পরের সাথে আন্ত:নির্ভরশীল প্রক্রিয়ায় একটি ফিতার ন্যায় অংশের ঘূর্ণনের মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়ার নড়াচড়ার কাজ সম্পন্ন করে। আপনার মাথায় প্রশ্ন আসলো এ ধরনের একটি গঠন কিভাবে সৃষ্টি হল?

আপনি পর্যবেক্ষণ করে দেখলেন যে একমাত্র মানুষের মত ‘বুদ্ধিমান’ সত্ত্বাই এ ধরনের জটিল গঠন তৈরী করতে পারে- যেখানে অনেকগুলো পরস্পর নির্ভরশীল অংশের সমন্বয়ে গঠিত কোন যন্ত্র একটি নির্দিষ্ট কাজ বা উদ্দেশ্য সম্পাদন করতে পারে। কোন এলপাতাড়ি প্রক্রিয়া এ ধরনের জটিল গঠন কখনও একা একা তৈরী হয় না। যেখানে আপনি কখনো দেখতে পান নি একটি টর্ণেডো কোন স্তুপীকৃত ইট থেকে কোন ঘর বানিয়ে দিয়েছে। সেখানে কোন একটি মেশিন একা তৈরী হয়ে গিয়েছে সেটা অসম্ভব।

সুতরাং, আপনি অনুসিদ্ধান্তে আসলেন যে উক্ত ব্যাকটেরিয়া ফ্ল্যাজেলাম কোন র‍্যানডম চান্সের মাধ্যমে সৃষ্টি হওয়া সম্ভব নয়। এর পিছনে নিশ্চয়ই কোন ডিজাইনার ইন্টেলিজেন্স আছে।

এ ধরনের রিজনিং-কে বলা Abductive Reasoning ।

অন্যভাবে একে বলা হয়- Inference to the best explanation

অথাৎ, একাধিক উপাত্তের জন্য যদি কয়েকটি সম্ভাব্য কারণ বা প্রকল্প থাকে, তার মধ্যে সর্বত্তোম কারণ বা প্রকল্পটিকে বেছে নেয়াই হচ্ছে অ্যাবডাকটিভ রিজনিং।

সুতরাং, অ্যাবডাকটিভ রিজনিং-এর কাঠামো হচ্ছে –

প্রস্তাব ১: ‘ক’ হবার জন্য ‘খ’ বা ‘গ’ দায়ী।

প্রস্তাব ২: পর্যবেক্ষনে দেখা গেছে ‘ক’ জাতীয় কার্যকারণ ‘চ’-এর পিছনে ‘খ’ দায়ী।

সুতরাং: ‘ক’ হবার পিছনে সবত্তোম ব্যাখ্যা হচ্ছে ‘খ’ দায়ী।

অ্যাবডাকটিভ ইনফারেন্স-এর একটি সমস্যা হল, একটি সর্বচ্চো সম্ভাব্য কারণকে নির্দেশ করে। কিন্তু, উক্ত কারণ যে নিশ্চিতভাবেই দায়ী তা বলতে পারে না। ব্যাবহারিক কারণে আনুসঙ্গিক উপাত্ত থেকে এটিকেই বেস্ট ব্যাখ্যা হিসেবে ধরে নেয়া হয়।

সুতরাং, অনুমান/সিদ্ধান্ত কিভাবে নেয়া হচ্ছে তার ওপর ভিত্তি করে কারণ অনুসন্ধান (Reasoning) তিন ধরনের হতে পারে।

১. Deductive reasoning

২. Inductive reasoning

৩. Abductive reasoning

এই তিন ধরনের রিজনিং প্রক্রিয়াই যে কোন বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। একটি গবেষণায় উক্ত রিজনিং-এর যে কোন একটি বা একাধিক প্রয়োগ হতে পারে।

যারা বৈজ্ঞানিক বা স্বাস্থ্য গবেষক হতে চান, তাদের এই রিজনিং প্রক্রিয়া সম্পর্কে সম্মক ধারণা থাকা এবং তা চর্চা করা জরুরী।

আদিম পৃথিবীতে আদি কোষ বা তার উপাদান প্রোটিন, ডিনএনএ বা আরএনএ দৈবাৎ (Randomly) তৈরী হওয়া আদৌ কি সম্ভব?

দুদিন আগে সার্বজনিন সম্ভাব্যতার সীমা নিয়ে লিখেছিলাম। বিজ্ঞানী David Abel-এর ভাষায় কোয়ন্টাম ওয়ার্ল্ডের কোন ইভেন্ট-এর ইউনিভার্সাল প্লসিবিলিটি ম্যাট্রিক্স (১) হল ১০^১৪০। অর্থাৎ, কোন ঘটনা ঘটার সম্ভাব্যতা যদি ১০^১৪০-এর মধ্যে একবার হয় এবং উক্ত ঘটনা ঘটার জন্য মহাবিশ্বের সকল পার্টিকেল ও সকল সময় ব্যবহার করার সুযোগ দেয়া হয়, তাহলে ঘটনাটি একবার হলেও ঘটবে। কিন্তু, কোন ঘটনা এই সীমাকে ছাড়িয়ে গেলে উক্ত ঘটনা ঘটবার সম্ভাব্যতা কার্যত শূন্য।

আমরা জানি, একটি স্বত:বিভাজনশীল কোষের ভেতর ডিএনএ, আরএনএ ও প্রোটিন কমপ্লেক্স থাকতে হবে। চিন্তার সুবিধার্তে ধরে নেই যে পৃথিবীর আদিম পরিবেশে প্রোটিন বা ডিএনএ বা আরএনএ-আগে এসেছে । এরপর ধাপে ধাপে কোষ তৈরী হয়েছে (যা আসলে সম্ভব কিনা আলোচনা সাপেক্ষ)।

এবার, উপরোক্ত সম্ভাবত্যার সীমার কথা মাথায় রেখে আসুন দেখি আদিম পরিবেশে প্রোটিন বা ডিএনএ বা আরএনএ তৈরী হওয়া সম্ভব কি না।

প্রোটিন (তথা এনজাইম) আগে আসবে?

ডিএনএ না থাকলে প্রোটিনের কোড থাকবে কোথায় বা প্রোটিন কাজ করবে কার উপর? এছাড়া, মাত্র ১৫০টি অ্যামাইনো এসিড দিয়ে নির্মিত একটি মাঝারি সাইজের সুনির্দিষ্ট প্রোটিন আসাও গাণিতিকভাবে অসম্ভব একটি ব্যাপার। ডগলাস এক্স-এর হিসেবে অনুযায়ী এর সম্ভাব্যতা ১০^১৬৪। [২] অর্থাৎ, যে কোন র‍্যাণ্ডম ঘটনা এই সীমাকে ছাড়িয়ে গেলে আমাদের মহাবিশ্বে তা ঘটার সম্ভাবনা নেই। একটি মাঝারি সাইজের প্রোটিনের এই অবস্থা। অথচ, আরএনএ পলিমারেজ এনজাইম ১০০০-এর বেশী অ্যামাইনো এসিড যুক্ত তিনটি প্রোটিনের সমন্বয়ে গঠিত হয়। উল্লেখ্য যে, আরএনএ-র কপি তৈরীর জন্য আরএনএ পলিমারেজ এনজাইম লাগবে এবং আরএনএ-র জন্য সুনির্দিষ্ট পরিমানে নিউক্লিউকিওটাইড-এর যোগান সুনির্দিষ্ট তরল মাধ্যমে থাকতে হবে।

ডিএনএ আগে আসবে?

ডিএনএ থেকে তথ্য পড়বে কে? যদি ডিএনএ অণু এমন কোন গঠন তৈরী করতে সক্ষম হত যা এনজাইমের মত কাজ করে তাহলেও চিন্তা করার সুযোগ থাকতো। কিন্তু, আমরা জানি, ডিএনএ বৈচিত্রপূর্ণ গঠন তৈরী করতে পারে না। অর্থাৎ ডিএনএ কোন ক্রিয়াশীল এনজাইম বা স্ট্রাকচারাল প্রোটিনের মত গাঠনিক বৈচিত্র তৈরী করতে অক্ষম। সুতরাং বাকী রইল আরএনএ। আরএনএ কি কেমিকেল এভল্যুশন তথা এবায়োজেনেসিসকে উদ্ধার করতে পারবে?

বিজ্ঞানীরা ল্যাবরেটরীতে এমন এক ধরণের আরএনএ সংশ্লেষ করতে পেরেছেন যা নিয়ন্ত্রিত ও সুনির্দিষ্ট পরিবেশে এনজাইম হিসেবে কাজ কোরে আরএনএ পলিমারাইজেশনেকে (অর্থাৎ আরএনএ থেকে আরএনএ তৈরী হওয়া-কে) প্রভাবিত করতে পারে। অর্থাৎ, একটি সম্পূরক আরএনএ টেমপ্লেট-এর বিপরীতে নিউক্লিওটাইড (A এর বিপরীতে U, U এর বিপরীতে A, G এর বিপরীতে C, এবং C এর বিপরীতে G) যোগ করার মাধ্যমে নিজের একটি কপি তৈরী করতে পারে। এই বিশেষ ধরণের আরএনএকে বলে রাইবোজাইম। এর মাধ্যমে তারা বলতে চাচ্ছেন যে, আদিম পরিবেশে এ ধরণের একটি রাইবোজাইম আসার মাধ্যমে সেল্ফ-রেপ্লিকেশনের সূচনা হয়েছে এবং পরবর্তীতে ‘কোন একটি উপায়ে’ কোষের অন্যান্য গঠনগুলোর (তথা ডিএনএ, ও বিভিন্ন প্রোটিন, ফসফোলিপিড, গ্লাইকোক্যালিক্স) আবির্ভাব হয়েছে! যে কোন ব্যক্তি একটু মাথা খাটালেই বুঝবে এ ধরণের চিন্তা কতখানি অ্যাবসার্ড!

কিন্তু কেন?

এক, পৃথিবীর আদিম পরিবেশ ল্যাবরেটরীর মত নিয়ন্ত্রিত ছিলো না।

দুই, ‘রাইবোজাইম নিজের একটি কপি তৈরী করতে পারে’ এই অবস্থা থেকে ‘আরএনএ প্রোটিনের তথ্য ধারণ করে এবং তা প্রোটিন সংশ্লেষ করে’ এই অবস্থায় যাওয়ার কোন পথ নেই। কারণ, উপরে আমরা ডিএনএ-র ক্ষেত্রে যে রকম বলেছি ঠিক তেমনি কোন্ কোডনটি কোন্ অ্যামাইনো এসিডের জন্য নির্ধারিত হবে সেটি নির্বাচন করা একটি বুদ্ধিমান ‘মাইণ্ড’-এর কাজ। তদুপরি, যদি অপটিমাম ইউনিভার্সাল কোডনের জন্য র‍্যাণ্ডম অনুসন্ধান করা সম্ভবও হতো, সেক্ষেত্রে প্রতি সেকেণ্ডে ১০^৫৫টি অনুসন্ধান চালাতে হতো। কিন্তু, বায়োফিজিসিস্ট হার্বাট ইওকি হিসেব করে দেখিয়েছেন র‍্যাণ্ডম অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় ১.৪০ x ১০^৭০টি সম্ভাব্য কোডনের মধ্যে উক্ত অপটিমাম কোডন সিস্টেমকে খুঁজে বের করতে হবে এবং হাতে সময় পাওয়া যাবে ৬.৩ x ১০^১৫ সেকেণ্ড। [৩] এছাড়াও, রাইবোজোমে যে প্রোটিন সিনথেসিস হয় তাতে অনেকগুলো সুনির্দিষ্ট প্রোটিন ও আর-আরএনএ-র নির্দিষ্ট অবস্থানগত ও তড়িৎ-রাসায়নিক ভূমিকা আছে। অথচ, আরএনএ প্রোটিনগুলোর মত বিভিন্ন ধরণের স্ট্রাকচার গঠন করতে পারে না। কারণ, আরএনএ-র নিওক্লিটাইডের ধরণ সংখ্যা সীমিত এবং তাদের কেমিক্যাল স্ট্রাকচারও অ্যামাইনো এসিডের ন্যায় বৈচিত্রপূর্ণ নয়।

তিন, রাইবোজাইম নিজের কপি করতে পারে তখনই যখন তার সম্পূরক একটি টেমপ্লেট থাকে। অর্থাৎ, আদিম পরিবেশে সেল্ফ রেপ্লিকেটিং রাইবোজাইম আসতে হলে রাইবোজাইম ও তার সম্পূরক টেমপ্লেট দুটো অণুরই একসাথে আসতে হবে। জনসন ও তার সহকর্মীরা দেখিয়েছেন যে, আংশিকভাবে নিজের কপি তৈরী করতে পারে এরকম একটি রাইবোজাইমের নিউক্লিওটাইডের সংখ্যা ১৮৯। সুতরাং, উক্ত স্পেসিফিক রাইবোজাইম এবং তৎসংশ্লিষ্ট সম্পূরক ও সুনির্দিষ্ট টেমপ্লেট-এর একসাথে আসার সম্ভাব্যতা ৪^১৮৯ x ৪^১৮৯ তথা ৪^(১৮৯+১৮৯=৩৭৮) তথা প্রায় ১০^২৭৭, যা বিশ্বজনীন সম্ভাব্যতার সীমা ১০^১৪০ কে ছাড়িয়ে যায় (অর্থাৎ, অসম্ভব)। অথচ, পুরোপুরি কপি করতে পারে এরকম একটি রাইবোজাইমে নিউক্লিওটাইড সংখ্যা লাগবে আরও বেশী। অন্যদিকে, অর্গেল ও জয়েস দেখিয়েছেন যে, এরকম দুটি আরএনএ খুজে পাওয়ার জন্য ১০^৪৮ টি অণু খুঁজতে হবে যা পৃথিবীর মোট ভরকে অতিক্রম করে যায়। [৪] অর্থাৎ, আমরা দেখতে পেলাম আরএনএ এবায়োজেনেসিসকে উদ্ধার করতে কোন অবস্থাতেই সক্ষম নয়।

শুধুমাত্র একটা প্রোটিন বা আরএনএ আসতে যদি এত হার্ডেল পার হতে হয়। আপনারা একবার অনুমান করে দেখুনতো অসংখ্য সুনির্দিষ্ট মাত্রা ও গঠনের ডিএনএ, আরএনএ, প্রোটিন, ফসফোলিপিড, কার্বহাইড্রেট, মিনারেল কম্পোজিশান সহ আন্ত:কোষ তরল সমেত কোষ দৈবাৎ আসা কি আদৌ সম্ভব?

রেফারেন্স:

১. Abel DL. The universal plausibility metric (UPM) & principle (UPP). Theor Biol Med Model. 2009;6(1):1–10.

২. Meyer SC. Signature in the Cell. HarperCollins Publisher Inc. 2009; Page: 172

৩. Rana F. The Cell’s Design. Baker Books. 2009; Page: 175

৪. Stephen C. Meyer. Signature in the Cell. HaperCollins Publisher Inc. 2009; Page: 250

পৃথিবী থেকে নক্ষত্রের দূরত্ব, রেডশিফট, এবং মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ

গত ১৩/০৭/২০২২ তারিখে নাসার James Webb Space Telescope দিয়ে তোলা মহাশূণ্যের প্রায় ধূলিকনার সমান একটি অংশের ছবি প্রকাশিত হয়। উক্ত স্থিরচিত্রে ধরা পড়েছে প্রায় ৪.৬ বিলিয়ন বছর আগের অসংখ্য নক্ষত্ররাজী ও ছায়াপথের ছবি।

একটা বিশেষায়িত দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে বিজ্ঞানীরা মহাশূন্য পর্যবেক্ষণ করছেন। এতে বিভিন্ন ছায়াপথ থেকে আসা আলো ধরা পড়েছে। কিন্তু, তারা কিভাবে পরিমাপ করছেন যে কোন্ ছায়াপথ কত দূরে অবস্থান করছে? কিভাবে তারা হিসেব করলেন ৪.৬ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরত্বের নক্ষত্র থেকে আসা আলো দূরবীক্ষণ যন্ত্রে ধরা পড়ছে?

সহজ কথায়, পৃথিবী থেকে একটি নক্ষত্রের দূরত্ব কিভাবে হিসেব করা হয়?

এটি বিজ্ঞানীরা করেন দুটো উপায়ে।

এক, পৃথিবীর কক্ষপথের দূরত্ব এবং পৃথিবী থেকে দৃশ্যমান নক্ষত্রের কোণ এর সাহায্য নিয়ে জ্যামিতিক উপায়ে। এ প্রক্রিয়ায় বিজ্ঞানীরা পৃথিবী কক্ষপথের এক প্রান্তে পৌছার পর নক্ষত্রের সাথে পৃথিবীর কোণ হিসেব করেন এবং ৬ মাস পর আরেক প্রান্তে গেলে উক্ত নক্ষত্রের কোণ আবার হিসেব করেন। এভাবে পৃথিবীর কক্ষপথের সাথে নক্ষত্রের যে স্থানিক বিচ্যুতি তৈরী হয় (Parallax) তার সাহায্যে নক্ষত্রটি থেকে পৃথিবীর দূরত্ব হিসেব কসে বের করা যায়। তবে এই ধরণের হিসেব সম্ভব হয় শুধুমাত্র পৃথিবী থেকে ৪০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত তারকাসমূহের ক্ষেত্রে।

পৃথিবীর সাথে নক্ষত্রের সৃষ্ট প্যারালাক্স থেকে দূরত্ব নির্ণয় (সূত্র)

দুই, পৃথিবী থেকে ৪০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত তারকার ক্ষেত্রে অনুরূপ সরাসরি দূরত্ব মাপার কোন পদ্ধতি নেই। ফলে বিজ্ঞানীরা আলোর উজ্জ্বলতার পরিমাপ হিসেব করে দূরত্ব নির্ণয় করেন। মজার বিষয় হলো তারকার কালার স্পেকট্রাম উক্ত তারকার উজ্জ্বলতার একটি ভালো নির্দেশক। তারকার রঙের সাথে উজ্জ্বলতার এ সম্পর্ক বের করা হয়েছে পৃথিবী থেকে সরাসরি দূরত্ব পরিমাপযোগ্য তারকার উপর গবেষণা করে।

দূরবর্তী ছায়াপথের উজ্জ্বলতা অনেক কম হয়। তবে ছায়াপথ সমূহের Gravitational Lensing এর কারণে, দূরবর্তী ছায়াপথ সমূহের আলো উজ্জ্বলতা একেবারে শূণ্য হয়ে যায় না।

অন্যদিকে ছায়াপথ (Galaxy) বা নক্ষত্রপুঞ্জের রং-থেকে আবিস্কার হয়েছে যে মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ হচ্ছে। ডপলার ইফেক্টের কারণে একটি গতিশীল বস্তু আপনার থেকে যত দূরে যাবে, উক্ত বস্তু থেকে নি:সৃত তরঙ্গের দৈর্ঘ তত বাড়তে থাকবে। ফলে আলোর ক্ষেত্রে তা লাল আলো বা ইনফ্রারেড আলোতে পরিণত হবে। এ ঘটনাকে বলে Redshift । বিজ্ঞানী স্লাইফার প্রথম আবিস্কার করেন যে দূরবর্তী ছায়াপথ গুলো থেকে আসা আলোর রেড-শিফট হয়েছে। বিজ্ঞানী এডউইন হাবল দেখান যে গ্যালাক্সীগুলো একে অপরের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, তথা মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ হচ্ছে।

মজার বিষয় হল, মহাবিশ্বের সম্প্রসারণজনিত এই রেড শিফট তারকার নিজস্ব গতির ফলে হয় না। বরং, তারকাররাজীর মধ্যবর্তী শূণ্যস্থানের সম্প্রসারণের ফলে হয়। কোন একটি তারকা থেকে নি:সৃত আলো পৃথিবী পর্যন্ত সম্প্রসারমান স্পেস দিয়ে আসতে গিয়ে রেড-শিফট হয়ে যায়।

মহাশূণ্যের সম্প্রসারণের ফলে সৃষ্ট দূরবর্তী ছায়াপথের রেডশিফট
মহাশূণ্যের সম্প্রসারণের ফলে সৃষ্ট দূরবর্তী ছায়াপথের রেডশিফট (সূত্র)

বিজ্ঞানী হাবল আরও দেখান যে কোন একটি ছায়াপথের দূরে সরে যাওয়ার গতি উক্ত ছায়পথ থেকে পৃথিবীর দূরত্বের সমানুপাতিক। সম্প্রসারমান মহাবিশ্বের কোন কোন জায়গায় সম্প্রসারণের গতি আলোর গতির সমান বা তার বেশী। ফলে উক্ত জায়গা থেকে কোন আলো আমাদের কাছে কখনও পৌছে না। একে বলে Cosmic Event Horizon । ইভেন্ট হরাইজনের অন্তর্গত মহাবিশ্ব হচ্ছে ‌’দৃশ্যমান’ মহাবিশ্ব। আমরা জানিনা এই ইভেন্ট হরাইজনের পরে মহাবিশ্বের কোনো অংশ আছে কি নেই? বা কতটুকু আছে।

Cosmic event horizon
Cosmic Event Horizone (সূত্র)

প্রিয় পাঠক, একবার চিন্তা করে দেখুনতো যেই মহাবিশ্ব এত বিশাল, এত বিস্তৃত! সেই মহাবিশ্বের স্রষ্টার ক্ষমতার বিশলতা কত বেশী?

সুবহানআল্লাহ!

“যিনি সৃষ্টি করেছেন স্তরে স্তরে সাত আসমান। রহমানের সৃষ্টিতে আপনি কোনো খুঁত দেখতে পাবেন না; আপনি আবার তাকিয়ে দেখুন, কোনো ত্রুটি দেখতে পান কি?” (সুরা মূলক ৬৭, আয়াত- ৩).

“আর আসমান আমরা তা নির্মাণ করেছি আমাদের ক্ষমতা বলে এবং আমরা নিশ্চয়ই মহাসম্প্রসারণকারী।” (সুরা আল যারিয়াত ৫১, আয়াত-৪৭)

“মানুষ সৃষ্টি অপেক্ষা আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি অবশ্যই বড় বিষয়, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না।” (সুরা গাফির ৪০, আয়াত-৫৭)

“আসমানসমূহ ও যমীনের সৃষ্টিতে, রাত ও দিনের পরিবর্তনে নিদর্শনাবলী রয়েছে বোধশক্তি সম্পন্ন লোকদের জন্য। যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে আল্লাহ্‌র স্মরণ করে এবং আসমানসমূহ ও যমীনের সৃষ্টি সম্বন্ধে চিন্তা করে, আর বলে, ‘হে আমাদের রব! আপনি এগুলো অনর্থক সৃষ্টি করেননি , আপনি অত্যন্ত পবিত্র, অতএব আপনি আমাদেরকে আগুনের শাস্তি হতে রক্ষা করুন।’” (সুরা আল ইমরান ৩, আয়াত-১৯০,১৯১).

তথ্যসূত্রঃ

1. https://science.howstuffworks.com/question224.htm

2. https://www.space.com/30417-parallax.html

3. https://swimone21.medium.com/how-is-the-expansion-of-the…

4. https://en.wikipedia.org/wiki/Event_horizon

5. https://en.wikipedia.org/wiki/Cosmological_horizon