স্রষ্টার অস্তিত্বের পক্ষে কালাম কসমোলজিক্যাল আর্গুমেন্ট:

১. যা কিছুর শুরু আছে তার শুরু হওয়ার পিছনের কোন কারণ আছে

২. এই মহাবিশ্বের শুরু আছে

৩. অতএব এই মহাবিশ্বের শুরু হওয়ার পিছনে কারণ আছে

উক্ত কারণের বৈশিষ্ট্য- উক্ত কারণ হলেন এমন একজন স্বত্ত্বা যিনি সর্বশক্তিমান, সময়ের উর্দ্ধে, অপরিবর্তনীয়, অশরীরী, স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি সম্পন্ন ।

১ নং- এর ব্যাখ্যা


ক. শূণ্য থেকে কোন কিছু একা তৈরী হতে পারে না

খ. যদি শূন্য থেকে কোন কিছু একা তৈরী হতে পারতো তাহলে প্রতি মূহুর্তে যে কোন কিছু কেন শূন্য থেকে তৈরী হয়ে যাচ্ছে না তা ব্যাখ্যা করা সম্ভব হত না

গ. আমাদের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা এবং বৈজ্ঞানিক প্রমাণাদি বলে যে শূণ্য থেকে কোন কিছু তৈরী হয় না

২ নং-এর ব্যাখ্যা

ক. দার্শনিক ব্যাখ্যা

– যদি মহাবিশ্বের শুরু না থেকে থাকে তাহলে আমাদের মহাবিশ্বের অস্তিত্ব কিভাবে আসল ব্যাখ্যা করা যায় না

– কারণ প্রকৃত অসীম (Actual infinity) সম্ভব নয়। কেন?

– কারণ, কোন ঘটনা সংকলন যা একটার পর একটা যোগ করে তৈর হয় তা কখনও প্রকৃত অসীম হতে পারে না

– সময়যুক্ত কোন ঘটনা পরম্পরা হল উক্ত ধরনের ঘটনা সংকলন

– সুতরাং সময়যুক্ত ঘটনা পরম্পরা প্রকৃত অসীম হতে পারে না

খ. বৈজ্ঞানিক প্রমান

– হাবল টেলিস্কোপে আবিস্কৃত তারকারাজির রেড শিফট যা প্রমাণ করে যে নক্ষত্রগুলো একটি থেকে আরেকটি দূরে সরে যাচ্ছে

– উইলসন ও পেনজিয়াস আবিস্কৃত কসমিক ব্যাকগ্রাউণ্ড রেডিয়েশন প্রমাণ করে আমাদের মহাবিশ্বে এক্সপ্লোসিভ অরিজিন

– বোর্ড-গুথ-ভিলেনকিন থিওরেম প্রমাণ করে যে ক্লাসিকাল স্থান-কালকে অতীতে অসীম পর্যন্ত বর্ধিত করা যায় না

– তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্র অনুযায়ী যে কোন এক মহাবিশ্ব বা চাক্রিক মহাবিশ্বের এনট্রপি বাড়তে থাকবে যতক্ষণ না তা ভারসাম্য পৌছায়

৩-নং এবং এর ব্যাখ্যা-

এই মহাবিশ্বের শুরু হওয়ার কারণ-এর কেমন হতে হবে?

– উক্ত কারণের অস্তিত্বের কোন কারণ থাকা যাবে না। কেননা, তার অস্তিত্বের কারণ থাকলে উক্ত কারণের কারণ থাকবে ও উক্ত কারণের কারনের কারণ থাকবে এবং এভাবে অসীম পর্যণ্ত যেতে হবে। কিন্তু আমরা দেখেছি প্রকৃতি অসীম সম্ভব নয়।

– উক্ত অস্তিত্ব হতে হবে ব্যাক্তিগত স্বত্ত্বা (personal being)। কেননা, এছাড়া ব্যাখা করার উপায় নেই যে কিভাবে একটি অসীম (eternal) কারণ থেকে সসীম ঘটনা এল

– উক্ত অস্তিত্বের স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি থাকতে হবে। কেননা, স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি ছাড়া ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয় যে কেন উক্ত স্বত্ত্বার সাথে মহাবিশ্ব সহউপস্থিত নয়।  

– তার অস্তিত্ব হতে হবে অশরীরী

– তার অস্তিত্ব হবে অপরিবর্তনীয়

– তিনি হবেন সময়ের উর্দ্ধে

– তিনি হবেন সর্বশক্তিমান

ইসলাম অনুযায়ী উক্ত সর্বশক্তিমান, সময়ের উর্দ্ধে, অপরিবর্তনীয়, অশরীরী, স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি সম্পন্ন স্বত্ত্বার নাম হল আল্লাহ। 

……..

রেফারেন্স রিডিং- https://www.reasonablefaith.org/writings/popular-writings/existence-nature-of-god/the-kalam-cosmological-argument/

স্রষ্টা অস্তিত্বের পক্ষে কন্টিনজেন্সি আর্গুমেন্ট:

-কোন সাপেক্ষ অস্তিত্ব (Contingent being), যার অস্তিত্ব থাকতে পারে বা নাও থাকতে পারে, তার অস্তিত্বশীল হওয়ার পিছনে কোন কারণ আছে

-কোন সাপেক্ষ অস্তিত্ব স্ব-অস্তিত্বশীল হতে পারে না

-সাপেক্ষ অস্তিত্ব-এর অস্তিত্বশীল হওয়ার কারণ হয় অন্য কোন সাপেক্ষ অস্তিত্ব বা আবশ্যকীয় অস্তিত্ব

-কোন সাপেক্ষ অস্তিত্ব অন্য কোন সাপেক্ষ অস্তিত্বের অস্তিত্বশীল হওয়াকে পূর্ণভাবে ব্যাখ্যা করতে পারে না

-কোন সাপেক্ষ অস্তিত্ব অস্তিত্বশীল হওয়ার ব্যাখ্যা চূড়ান্ত ভাবে কেবল আবশ্যকীয় অস্তিত্বই দিতে পারে

-মহাবিশ্ব বা সকল সম্ভাব্য মহাবিশ্ব হল সাপেক্ষ অস্তিত্ব

-অতএব মহাবিশ্বের অস্তিত্বশীল হওয়ার পিছনে কোন আবশ্যকীয় অস্তিত্ব আছে

-অতএব আবশ্যকীয় অস্তিত্ব আছে

আবশ্যকীয় অস্তিত্বের প্রয়োজনীয় বৈশিস্ট্য:

১. ইচ্ছা শক্তি

২. সময়ের উর্ধ্বে

৩. অপরিবর্তনশীল

৪. সর্বশক্তিমান

৫. সর্বজ্ঞানী

৬. একক

কোরআনে আলোকে উক্ত আবশ্যকীয় অস্তিত্ব হলেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা।  

স্বাস্থ্য উপদেশ

আকাশটা যদি নীল হত!

শিরোনাম পড়ে আপনার মনে হতে পারে আমি কোন সাহিত্য লিখতে বসেছি। কিন্তু না, আমি আসলেই আক্ষেপ করে বলছি। এই দূষিত নগরীর একজন নাগরিক হিসেবে আপনিও হয়ত একমত হবেন।

আপনি যদি ঢাকা শহরের বাইরে, বিশেষ করে পদ্মার ওপারে, নিয়মিত যাতায়াত করে থাকেন তাহলে হয়ত বুঝতে পারবেন কেন আমি এ কথা বলছি। দক্ষিণাঞ্চলে যারা নিজেদের গ্রামের বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত করেন, তারা হয়ত লক্ষ্য করে থাকবেন যে পদ্মা পার হবার সাথে সাথেই আকাশটা কেমন পরিস্কার হয়ে যায়। আবার, উল্টোপথে ঢাকায় আসার সময় আকাশের দিকে তাকালে দেখা যায় যেন নীল আসমান ঘোলাটে ধূসর হয়ে গিয়েছে। আমার চাকুরীর সুবাদে আমি দুই বছরের অধিক টুঙ্গিপাড়া থেকেছি। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি।

আমরা দৈনন্দিন ব্যস্ততায় এতটায় অভ্যস্থ হয়ে পড়েছি, যে ঢাকা শহরের দূষিত বাতাস আমাদের চিন্তার উদ্রেক করে না। কিন্তু, আপনি চাইলেই চট করে IQ Air-এর ওয়েবসাইট (১) থেকে ঢাকায় বাতাসে দূষণের পরিমাপটা দেখে নিতে পারেন। বাতাসে দূষণ পরিমাপ করা হয় Air Quality Index (AQI)-ব্যবহার করে। অন্যদিকে AQI-পরিমাপ করা হয় বায়ুদূষনের জন্য দায়ী কিছু অণুর ওপর ভিত্তি করে।

যে সকল পদার্থের অতিরিক্ত উপস্থিতি বাতাসকে দূষিত করে, যুক্তরাস্ট্র ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান United States Environmental Protection Agency (২) তার মধ্যে ছয়টি পদার্থকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এগুলো হল- কার্বন মনোক্সাইড (CO), সালফার ডাই অক্সাইড (SO2), নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড (NO2), লেড (Pb), পার্টিকুলেট ম্যাটার (PM2.5 & PM10), এবং ভূস্তরের ওজন (O3)। এই প্রতিটি পদার্থই মাত্রাতিরিক্ত পরিমানে থাকলে নানাবিধ স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরী হতে পারে। এই সমস্যাগুলোর মধ্যে আছে হাঁচি, কাশি, বুকে চাপ অনুভব করা, শ্বাস কষ্ট, হার্ট ও ফুসফুসে সমস্যা, হার্ট এটাকের ঝুঁকি বৃদ্ধি, ত্বক ও স্কিনের ক্যানসার। বায়ুদূষণ যে শুধুমাত্র মানুষের শারীরিক ক্ষতি করছে তা নয়, এটি পুরো ইকোসিস্টেমের ভারসাম্য নষ্ট করছে। এটি জীবজগতের অন্যান্য প্রাণীর, ফসল ও বনজঙ্গলের ক্ষতি, এসিড রেইন, আবহাওয়া পরিবর্তন প্রভৃতির জন্য দায়ী।   

বাংলাদেশে লেড বাদে বাকি পাঁচটি পলিউট্যান্ট-এর ওপর নির্ভর করে AQI হিসেব করা হয়। AQI এর উপর ভিত্তি করে বাতাসের অবস্থাকে ছয়টি ভাগে ভাগ করা হয় (৩)। এগুলো হচ্ছে-

১. ০ – ৫০: ভালো

২. ৫১ – ১০০ : মোটামুটি

৩. ১০১ – ১৫০ : সতর্কতামূলক

৪. ১৫১ – ২০০ : অস্বাস্থ্যকর

৫. ২০১ – ৩০০ : খুব অস্বাস্থ্যকর

৬. ৩০১ – ৫০০ : অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর

ঢাকার বাতাসের কোয়ালিটি প্রায় সবসময়ই ১০০-এর ওপরে থাকে, এমনকি প্রায়ই অস্বাস্থ্যকর হয়ে পড়ে। AQI ১০০-এর বেশী ও ১৫০-এর নিচে থাকলে অধিকাংশ ব্যক্তির জন্য বাতাস হয়ত নিরাপদ। কিন্তু, বয়স্ক ব্যাক্তি এবং শিশুদের জন্য এটি স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে (৪)।   বাতাসের এই অস্বাস্থ্যকর পরিণতির মূল কারণগুলো হচ্ছে – কলকারখানার দূষিত বায়ু নিঃসরণ, মোটরযানের ধোঁয়া এবং বিভিন্ন অবকাঠামোর নির্মাণ কাজ।

তাহলে, আমাদের উপায় কি? ব্যক্তিগত পর্যায়ে আমরা বায়ু দূষণের ক্ষতি থেকে বাঁচতে মাস্ক পরে চলাচল করতে পারি। মাস্ক আমাদের সব ধরনের পলুটেন্ট থেকে নিরাপদ রাখতে না পারলেও, PM2.5 এবং PM10 প্রতিরোধ করতে পারে। থাইল্যান্ডের একটি গবেষণা (৫) অনুযায়ী সবচেয়ে ভাল প্রটেকশন দিতে পারে N95 মাস্ক, যা PM2.5 থেকে প্রায় ৯৭.২% প্রটেকশন দেয়। সার্জিকাল মাস্ক PM2.5 থেকে প্রায় ৫৬.৩ – ৮৩.২% প্রটেকশন দেয়। PM10 সাইজে বড় হওয়ায় সার্জিকাল মাস্ক অনেকখানিই প্রতিরোধ করতে সক্ষম।  

বাতাসের AQI ৩০০-এর বেশী হলে Air Quality Alert দেয়ার কথা। সেক্ষেত্রে দরজা, জানালা বন্ধ করে ঘরে অবস্থান করতে হবে। যাদের সামর্থ আছে ঘরে ভাল এয়ার পিউরিফাইয়ার ইউজ করতে পারেন। ঘরের ভেতর কোন কিছু পোড়ানো থেকে বিরত থাকতে হবে। 

বায়ুদূষণ রোধে পলিসি মেকার পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। স্বাস্থ্যকর ট্রাফিক ব্যবস্থপনা, কলকারখানার ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণ, বিল্ডিং ও অবকাঠামো নির্মানের সময় দূষণ নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করা দরকার। উন্নত বিশ্বের অনেক দেশেই এখন ব্যাক্তিগত মোটর যানের পরিবর্তে সাইকেল ও ম্যাস ট্রান্সপোর্টকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন মোটরের ধোঁয়া কমছে, অন্যদিকে শরীর চর্চারও অনুশীলন হয়ে যাচ্ছে।   

নিজেদের জীবদ্দশায় ঢাকা শহরের সেই সর্বদা পরিচ্ছন্ন নীল আকাশটা কি আবার দেখতে পারব?

রেফারেন্স:

১. https://www.iqair.com/bangladesh/dhaka

২. https://www.epa.gov/criteria-air-pollutants

৩. Rana, Masud & Biswas, Swapan. (2019). Ambient air quality in Bangladesh 2012 – 2018. 10.13140/RG.2.2.14741.17128.

৪. https://www.nytimes.com/article/air-quality-index.html ৫. Arunnart M. Efficiency of Commercial Face Masks in PM2.5 Prevention. Ramathibodi Med J. 2021;44: 11–17. doi:10.33165/rmj.2021.44.2.243402

সার্বজনিন সম্ভাব্যতার সীমা

সম্ভাব্যতা বা প্রবেবিলিটি শব্দটির সাথে আমরা সবাই পরিচিত। সাধারনের ভাষায় সম্ভাব্যতা বলতে বুঝায়- আমি কোন একটি কাজ করব কি করব না? কোথাও যাবো কি যাবো না? এ ধরনের অনিশ্চয়তামূলক ভাব প্রকাশ। গানিতিক ভাষায় সম্ভাব্যতার অর্থ কাছাকাছি হলেও এটাকে সুনির্দিষ্ট সাংকেতিক ভাষায় প্রকাশ করা হয়। চলুন সম্ভাব্যতার একেবারে সরল কিছু উদাহরণ থেকে এ সম্পর্কে ধারণা নেই।
সম্ভাব্যতা:
একটি ছক্কা লুডুর কোটে এলোপাতাড়ী ভাবে ফেললে যে কোন একটি সংখ্যা পড়ার সম্ভাবনা = ১/৬
দুটি ছক্কা লুডুর কোটে এলোপাতাড়ী ভাবে ফেললে যে কোন দুটি সংখ্যা একত্রে পড়ার সম্ভাবনা = ১/৬ * ১/৬ = ১/৩৬ = ১/৬^২
তিনটি ছক্কা লুডুর কোটে এলোপাতাড়ী ভাবে ফেললে যে কোন তিনটি সংখ্যা একত্রে পড়ার সম্ভাবনা = ১/৬ * ১/৬ * ১/৬ = ১/৩৯৬ = ১/৬^৩
তিনটি ছক্কা লুডুর কোটে ফেললে একটিতে ‘১’, দ্বিতীয়টিতে ‘২’ এবং তৃতীয়টিতে ‘৩’ পড়ার সম্ভাব্যতা = ১/৩৯৬ = ১/৬^৩
আবার, তিনটি ছক্কা লুডুর কোটে ফেললে একটিতে ‘২’, দ্বিতীয়টিতে ‘৩’ এবং তৃতীয়টিতে ‘৬’ পড়ার সম্ভাব্যতাও = ১/৩৯৬ = ১/৬^৩
অর্থাৎ, আপনি তিনটি ছক্কার সংখ্যাকে নির্দিষ্টভাবে বলে দিলেও সম্ভাব্না একই এবং তা ১/৩৯৬ তথা ১/৬^৩।
লক্ষ্যনীয় এখানে ‘^‌’ চিহ্ন দিয়ে ‘টু দি পাওয়ার’ বুঝানো হচ্ছে। এবং মজার বিষয় হল আপনি ছক্কার সংখ্যা এভাবে ‘n’ সংখ্যক বাড়াতে থাকেন, তাহলে যে কোন একটি সংখ্যার পড়ার সম্ভাব্যতা হবে ১/৬^n।

লটারীর টিকিট:
ধরুন, ১০ জন ব্যক্তির একটি গ্রুপ তৈরী করার হয়েছে এবং ১ জনকে উক্ত গ্রুপের লিডার হিসেবে মনোনীত করা হবে। এ প্রেক্ষিতে প্রতিটি ব্যক্তিকে ১ থেকে ৯ পর্যন্ত ৯ টি অংক এবং একজনকে ‘০’ দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে, অর্থাৎ মোট দশটি অংক। এবার, ১০টি কাগজে নাম্বারগুলো লিখে লটারী করা হলো এবং একটি কাগজ উঠানো হল। তাহলে, যে কোন একটি সংখ্যা আসার সম্ভাবনা কত? উত্তর: ১/১০।
এরকম যদি ১০০ জন ব্যক্তির মধ্যে লটারী করা হয়, যে কোন একজনের ওঠার সম্ভাবনা = ১/১০ *১/১০ = ১/১০০। এক্ষেত্রে ‘০১’ চিহ্নিত ব্যক্তির কাগজটি ওঠার সম্ভাব্যতা যা ‘৫৬’ নম্বর ব্যক্তিটির কাগজ ওঠার সম্ভাব্যতাও তাই =১/১০০।
মনে করুন, আপনি গুলিস্তান থেকে একটি লটারীর টিকিট কিনেছেন এই আশায় যে আপনি ১,০০,০০,০০০ (এক কোটি) টাকা পাবেন। ধরুন, লটারীর মধ্যে অঙ্কিত সংখ্যাটিতে মোটি দশটি নাম্বার আছে। যেমন: ১৩৪৫৭৮৯৬০২ । প্রশ্ন হলো যদি লটারী সম্পন্ন করার দিন কোন কারচুপি না হয় এবং সম্পূর্ণ এলোপাতাড়ীভাবেই যে কোন একটি সংখ্যা তোলার সম্ভাবনা থাকে আপনার এই নাম্বারটি লটারীতে ওঠার সম্ভাবনা কত?
উত্তর: ১/১০ * ১/১০ * ১/১০* ১/১০* ১/১০* ১/১০* ১/১০* ১/১০* ১/১০* ১/১০ এর মধ্যে একবার
= অর্থাৎ, ১/১০০,০০,০০,০০০-এর মধ্যে একবার
= অর্থাৎ, ১০০ কোটি বারের মধ্যে একবার।
এই সংখ্যাটাকে যদি আমরা পাওয়ারে প্রকাশ করি= ১০^১০। সুতরাং,আপনার লটারীতে জেতার সম্ভবনা ১০^১০-মধ্যে একবার।
মজার বিষয় হলো,আপনার সাথে অন্য যে কয়জন কিনেছে তাদেরও জেতার সম্ভবনা একই।

প্রোবেবিলিটি রিসোর্স:
উপকরন
এখন, ধরুন, আপনি নাছোড় বান্দা আপনার লটারীতে জিততেই হবে, সেক্ষেত্রে আপনি কি করবেন? আপনাকে একাধিক লটারী কিনতে হবে। আপনি যদি একশটি লটারী সংগ্রহ করেন আপনার সম্ভব্যতা বেড়ে দাড়াবে
= ১/১০^১০ + ১/১০^১০ +……+ ১/১০^১০ (এভাবে ১০০টি ১/১০^১০)
= ১০০/ ১০^১০
= ১/ ১০^৮
অর্থাৎ, আপনার জেতার সম্ভাবনা বেড়ে দাড়ালো ১ কোটি বাড়ে একবার। কিন্তু এখনও সংখ্যাটা অনেক বড়। তাই আপনি ভাবলেন যে আপনি আপনার যেতার সম্ভাবনা আরও বাড়াবেন। এরকম করতে করতে আপনি যদি নিশ্চিতভাবেই জয়ী হতে চান আপনাকে ১০০ কোটির লটারীর কপিই কিনতে হবে। কেননা সেক্ষেত্রে আপনার জেতার সম্ভাব্যতা দাড়াবে = ১০^১০ / ১০^১০ = ১।
লটারীর দাম এক টাকা করে হলেও আপনার কিনতে খরচ পড়বে ১০০ কোটি টাকা। ১০০ কোটি টাকা খরচ করে ১ কোটি টাকা জিততে চেষ্টা করার মত কোন বোকা লোক এই ইহজগতে খুঁজে পাওয়া যাবে না।
এবার চিত্রটি আপনি একটু ভিন্ন ভাবে চিন্তাভাবনা করুন। ধরুন, আপনি অগাধ টাকার মালিক। আপনি ১ কোটি টাকা কাউকে লটারীর মাধ্যমে দিতে চান। আপনি ১০০ কোটি লটারীর টিকিট ছাপিয়েছেন বিলি করার ইচ্ছায়। আপনি নিশ্চিত হতে চান যে একজন ব্যক্তির কাছে টাকাটা পৌছুবেই। কিন্তু, কিভাবে নিশ্চিত হবেন? উত্তর: আপনাকে ১০০ কোটি মানুষের কাছেই টিকিট পৌছানো নিশ্চিত করতে হবে। কেননা সেক্ষেত্রে যে কোন একজনের হাতে প্রত্যাশিত টিকিটটি পৌছবেই। ধরুণ, আপনি সব টিকিট বিলি করেছেন কিন্তু একটি বাকি আছে। সেক্ষেত্রে্ও সম্ভবনা থেকে যাবে যে উক্ত বাকী টিকিটই বিজয়ী টিকিট হবে।
এই যে একশ কোটি লটারীর টিকিট বা একশ কোটি টিকিট ক্রেতা এদেরকে গানিতিক পরিভাষায় বলা হয় ‘প্রোবেবিলিটি রিসোর্স’। অর্থাৎ, আপনি কোন একটি এলোপাতড়ী প্রক্রিয়ায় একটি ঘটনা ঘটার সম্ভবনা বাড়াতে পারবেন সংশ্লিস্ট প্রোবেবিলিটি রিসোর্স বাড়ানোর মাধ্যমে। যেমনটা আমরা উপরে দেখেছি।
সময়
কিন্তু, আপনার অনেক বয়স হয়ে গেছে। আপনার হাতে সময় খুব কম। ধরে নিলাম, আপনি চান একশ কোটি লটারী নিজ হাতে বিলি করতে এবং আপনি কম্পিউটারে বসে এটি করতে চাচ্ছেন। এখন আপনি কোন বিশ্রাম না নিয়ে যদি প্রতি মিনিটে একটি করে বিলি করেন সময় লাগবে,
= ১০০ কোটি মিনিট = প্রায় ১ কোটি ৬৬ লক্ষ ঘন্টা = প্রায় ৬ লক্ষ ৯৪ হাজার দিন = প্রায় ১ হাজার ৯০২ বছর।
আপনি প্রতি সেকেন্ডে একটি বিলি করলে সময় লাগবে,
= ১০০ কোটি সেকেন্ড = প্রায় ১ কোটি ৬৬ লক্ষ মিনিট = প্রায় ২ লক্ষ ৭৭ হাজার ঘন্টা = প্রায় ১১ হাজার ৫৭৪ দিন = ৩১ বছর
আপনি প্রতি সেকেণ্ড ১০০টি বিলি করলে সময় লাগবে,
= ১ কোটি সেকেন্ড = প্রায় ১ লক্ষ ৬৬ হাজার মিনিট = প্রায় ২ হাজার ৭৭৭ ঘন্টা = প্রায় ১১৫ দিন = ০.৩১ বছর প্রায়
অর্থাৎ, সময়ও একটি প্রবেবিলিটি রিসোর্স।
সুতরাং, প্রোবেবিলিটি রিসোর্স তিন ধরনের: উপকরনের সংখ্যা, ঘটনাটি ঘটার জন্য প্রয়োজনীয় সময় (ইভেন্ট টাইম) এবং এভেইলেবল সময়।

সার্বজনিন সম্ভাব্যতার সীমা
এতক্ষণ আমরা দেখলাম সম্ভাব্যতার রিসোর্স কি কি ধরনের হতে পারে। এবার চলুন হিসেব করা যাক সার্বজনিন সম্ভাব্যতার সীমা কোনটি। প্রথমে জেনে নিই সার্বজনিন সম্ভাব্যতার সীমা বলতে কি বুঝায়? সার্বজনিন সম্ভাব্যতার সীমা বলতে বুঝায় কোন ঘটনা (যেমন: কোন রাসায়নিক বিক্রিয়া) ঘটার জন্য যে সকল প্রোবেবিলিটি রিসোর্স আছে গানিতিক ভাবে তা সর্বচ্চ কত পর্যন্ত হতে পারে। চলুন উপরের লুডুর ঘুটির বিষয়টি নিয়ে নিয়ে চিন্তা করি। মনে করুন আপনি একটি খেলা খেলছেন যেখানে আপনাকে বলা হল: আপনাকে লুডুর ছক্কা ফেলতে হবে যদি ছয়টি ‘৬’ একসাথে পড়ে বা একই ক্রমে পড়ে তাহলে আপনি একটি গিফট পাবেন। আপনাকে লুডুর গুটির সংখ্যা বেঁধে দেয়া হল না এবং আপনাকে যত সময় ইচ্ছে গুটি ফেলার অধিকার দেয়া হল। এক্ষেত্রে আপনি কয়েকভাবে ছয়টি ‘৬’ এক সাথে বা এক ক্রমে ফেলতে পারবেন।

  • প্রথমত আপনি যদি ‌৬^৬ তথা ৪৬,৬৫৬ টি গুটি একসাথে ফেলেন তাহলে এর মধ্যে নিশ্চিত ভাবেই ছয়টি ছয় পাবেন।
  • আপনার যদি একবার ছয় ফেলতে ১ মিনিট সময় লাগে তাহলে আপনি ৪৬,৬৫৬ মিনিট চেষ্টা করলে একবার অবশ্যই ক্রমান্বয়ে ছয়টি ছয় ফেলতে পারবেন।
    এখানে ৪৬,৬৫৬ টি গুটি বা ৪৬,৬৫৬ মিনিট হলো প্রবেবিলিটি রিসোর্স।
    এখন ধরুন আপনি অতিআনবিক পর্যায়ে একটি ইন্টার‍্যাকশন ঘটার সম্ভাব্যতা হিসেব করছেন। মনে করি ইন্টার‍্যাকশনটি ঘটে সবচেয়ে কম সময়ে। ইন্টার‍্যাকশনটি হবে দুটো পার্টিকেলের (দুটো প্রোটোন বা দুটো নিউট্রন) মধ্যে। তাহলে উক্ত ঘটনাটি ঘটার জন্য প্রয়োজনীয় প্রোবেবিলিটি রিসোর্স কি? এক্ষেত্রে এটির প্রবেবিলিটি রিসোর্স হল-
  • সবনিম্ন সময়: প্ল্যাংক সময় ১০^-৪৩ সেকেন্ড।
  • মহাবিশ্বের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত অতিবাহিত কাল – ১০^১৭ সেকেন্ড
  • দৃশ্যমান মহাবিশ্বের হিসেবকৃত পার্টিকেল সংখ্যা – ১০^৮০
    সুতরাং সার্বজনিন সম্ভব্যতার সীমা = ১০^৪৩ x ১০^১৭ x ১০^৮০ = ১০^(৪৩+১৭+৮০) = ১০^১৪০।
    বিজ্ঞানী David Abel-এর ভাষায় এটি হলো কোয়ন্টাম ওয়াল্ডের কোন ইভেন্ট-এর ইউনিভার্সাল প্লসিবিলিটি ম্যাট্রিক্স (১)। অর্থাৎ, কোন ঘটনা ঘটার সম্ভাব্যতা যদি ১০^১৪০-এর মধ্যে একবার হয় এবং উক্ত ঘটনা ঘটার জন্য মহাবিশ্বের সকল পার্টিকেল ও সকল সময় ব্যবহার করার সুযোগ দেয়া হয়, তাহলে ঘটনাটি একবার হলেও ঘটবে। কিন্তু, কোন ঘটনা ঘটার সম্ভাব্যতা যদি ১/ ১০^১৪১ হয়, তাহলে মহাবিশ্বের সকল পার্টিকেল ও সকল সময় ব্যবহার করেও উক্ত ঘটনা সুনিশ্চিতভাবে একবার ঘটবে না।
    তাহলে পাঠক একবার চিন্তা করে বলুনতো, কোন ঘটনা যদি এলোপাতাড়ি ভাবে একবার হবার সম্ভাবনা ১০^১৬৭ হয় মহাবিশ্বের ইতিহাসে উক্ত ঘটনা ঘটার কি আদৌ ঘটার কোন সম্ভাবনা আছে?

রেফারেন্স:
১) Abel DL. The universal plausibility metric (UPM) & principle (UPP). Theor Biol Med Model. 2009;6(1):1–10.

সম্ভাব্যতা, ইচ্ছেশক্তি ও দোয়া

আমাদের খুব পরিচিত একটি খেলা হচ্ছে লুডু। লুডুতে একটা কিউব থাকে যার ছয়টি পৃষ্ঠতলে ১ থেকে ৬ পর্যন্ত ছয়টি অক্ষর লেখা থাকে। আমরা এটিকে আঞ্চলিক ভাষায় ছক্কা বলি।

লুডু খেলায় ছক্কাকে যখন কোর্টে ছুড়ে মারা হয়, তখন আমাদের উদ্দেশ্য থাকে ছক্কাটির যে কোন একটি পৃষ্ঠতল যেন দৈবচয়নে (randomly) পরে। অর্থাৎ, যে কোন একটি সংখ্যা যেন র‍্যানডমলি আসে। উদ্দেশ্য হলো উক্ত সংখ্যা অনুযায়ী আমাদের ঘুটি ছক ধরে আগাবে।

ধরুন, আপনি এই মূহুর্তে লুডু খেলছেন। আপনি ছক্কা ফেলার পড় র‍্যানডমলি ‘২’ সংখ্যাটি আসল। কিন্তু, ছক্কা ফেলার আগ পর্যন্ত উক্ত ছক্কার যে কোন একটি পৃষ্ঠতল পড়ার সম্ভাবনা ছিল ১/৬। সুতরাং, আপনি যখন ছক্কাটিকে নিজের মত র‍্যানডমলি পড়ার সুযোগ করে দিলেন ‘২’ পড়ার মাধ্যমে অন্য ৫টি সম্ভাবনাকে নাকচ করে দিলেন।

অর্থাৎ, এখানে আপনার ছক্কা ছুড়ে মারার পদ্ধতির কারণে যে কোন একটি সংখ্যা যখন পড়ছে তখন সে অন্য সম্ভাব্যতাকে নাকচ করে দিচ্ছে।

বিষয় যদি আবার গুছিয়ে বলি- ছক্কা কোর্টে পড়ার আগে ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬ থেকে যে কোন একটি সংখ্যা পড়ার সম্ভাবনা ছিলো ১/৬। যখন ছক্কাটি কোর্টে পড়ে গেল তখন একটি সংখ্যা দৈবচয়নে অন্য সংখ্যা পড়ার সম্ভাবনাকে নাকচ করে দিয়ে প্রকাশিত হল।

লক্ষনীয় এখানে ছ্ক্কাটি যদিও ‘আপাত’ র‍্যানডমলি পড়ছে বলে আপনার বাহ্য দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, আপনি যদি ছ্ক্কা ফেলার মূহুর্তের গতি, বল, শক্তি, জড়তা, বাতাসের বাঁধা প্রভৃতি পুঙ্খানুপূর্ণভাবে হিসেব করতে পারতেন তাহলে আপনি হয়ত ছক্কা লুডুর কোর্টে পড়ে কোন সংখ্যাটি উপরে থাকবে তা হিসেব করে বলে দিতে পারতেন। কিন্তু, বাস্তবে যেহেতু তা আপনার পক্ষে সম্ভব নয়, উক্ত অবস্থায় আপনার জন্য ছক্কা পড়ার বিষয়টি হচ্ছে র‍্যানডম। 


এখন ভেবে দেখুন, আপনি খেলার নিয়মের জন্য হয়ত ছ্ক্কাটি এমনভাবে ছুড়েছেন যেন তা র‍্যানডমলি কোর্টে পড়ে। কিছুক্ষনের জন্য ভুলে জান যে আপনি নিয়ম মেনে লুডু খেলছেন। ধরুন আপনি ছক্কাটিকে স্বেচ্ছায় কোর্টে বসিয়েছেন এবং আপনি ‘৩’ বসিয়েছেন। এখন, আপনি যখন তিন বসালেন তখন আসলে আপনি উক্ত ছয়টি সংখ্যা থেকে একটি বাছাই করলেন। যেহেতুর লুডু ঘুটিতে ছয়টি পৃষ্ঠতলই থাকে সেহেতু এখানে আপনার চয়েজ ছিল ছয়টি। এর বেশী নয়।


আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে আমাদের ইচ্ছেশক্তির ব্যবহার করে এভাবে প্রতিনিয়ত অনেকগুলো সম্ভাব্যতাকে নাকচ করি। আমাদের সামনে যে ঘটনাগুলোর আসতে থাকে তার মধ্যে- কিছু ক্ষেত্রে সীমিত চয়েজ থাকে এবং কিছু ক্ষেত্রে ঘটনাগুলোর একটিও আমাদের নিয়ন্ত্রনের থাকে না। সীমিত চয়েজ থাকে কারণ ঘটনার পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়াগুলো এমন যে তা লুডুর ঘুটির মত কয়েকটি নির্দিষ্ট অপশনই কেবল দেখাতে পারে। আবার আমরা লুডু খেলার নিয়মে প্রবেশের পর আমাদের যেমন ছক্কাটির সংখ্যা বাছাই করে বসিয়ে দেয়ার সুযোগ নেই তেমনি জীবনের কিছু ঘটনা স্বেচ্ছায় বাছাইয়ের পর অন্য কিছু ঘটনা আমাদের বাছাইয়ের বাইরে পুরোপুরি র‍্যানডম সম্ভাব্যতায় পরিণত হয়। বাস্তবতা হল এ ধরনের ঘটনার সংখ্যাই আমাদের জীবনে বেশী যা আমারেদ হাত নেই।



যেমন ধরুন রাস্তায় চলার পথে আপনি দূর্ঘটনার স্বীকার হবেন কি না তা পুরোপুরি আপনার হাতে নেই। করোনা আক্রান্ত হলে আপনি মৃত্যুবরণ করবেন কিনা তা পুরোপুরি আপনার জানা নেই।

কেননা আপনার বাস্তবতায় তা এখন একটি সম্ভ্যাব্যতা।



কিন্তু, সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাআলার জ্ঞানের সাপেক্ষে এ সবগুলোই তাঁর চয়েজ। আমরা যখন দোয়া করি আল্লাহ আমাদের সামনের সম্ভাব্য সকল ঘটনার মধ্য থেকে আমাদের দোয়ার অনুকূলের ঘটনাটি বাস্তব করে দেন।


ধরুন, আপনি ঢাকা থেকে ময়মনসিংহের পথে আপনার গাড়ি চালিয়ে করে যাত্রা শুরু করলেন। গাড়ি চালানোর সময় আপনি দ্রুত চালাতে পারেন আবার সাবধানে চালাতে পারেন। আপনি যাই বাছাই করেন না কেন বাছাই করার আগ পর্যন্ত আপনার সামনে ঘটিতব্য ঘটনাগুলো অনেক রকম হতে পারে। আপনি যদি সাবধানে চালানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং চালান, আপনি উক্ত ঘটিতব্য সম্ভাবনাময় ইভেন্টগুলো থেকে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নাকচ করে দিলেন। কিন্তু, তার মানে এই নয় যে আপনি নিশ্চিত ভাবেই দূর্ঘটনা থেকে বেঁচে যাবেন। বরং, আপনার সাবধানতা সত্যেও বিভিন্ন ইভেন্টের মিথস্ক্রিয়ার কারণে আপনার চয়েজের বাইরে কিছু সম্ভাব্যতা তৈরী হবে। যেগুলো সম্পর্কে আপনার কোন জ্ঞান নেই। আপনি এ অবস্থায় দোয়া করলে হয়ত মহান আল্লাহ আপনার অনুকূলে নিরাপদে ময়মনসিংহে পৌছার সাথে সংশ্লিষ্ট ঘটনাবলি বাস্তবায়িত করে দেবেন। দোয়া না করলেও হয়ত আপনাকে আল্লাহ নিরাপত্তা দিবেন যদি আপনার হায়াত থেকে থাকে। কিন্তু, দোয়া করলে অন্তত তা আপনার আমলনামায় ইবাদাত হিসেবে লিখা থাকবে।


সুতরাং আমরা যখন ইচ্ছেশক্তি প্রয়োগ করি তখন অনেকগুলোর সম্ভাব্যতার মধ্যে থেকে কিছু সম্ভাব্যতা কমিয়ে নিয়ে আসি। আর যখন দোয়া করি তখনও অজানা অনেক সম্ভাব্যতার থেকে আমাদের অনুকুলের কোন ঘটনা বাছাইয়ের জন্য মহান রবের কাছে চাই। কোন কোন সময় আমার রব যখন কোন দোয়া কবুল করেন তা বুঝতে পারি, কোন কোন সময় হয়ত বুঝতে পারি না।

আসুন বেশী বেশী মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করি। আল্লাহ তাআলা আমাদের ক্ষমা করে দিন এবং করোনা মহামারী থেকে মুক্তি দিন।    

#https://web.facebook.com/Md-Abdullah-Saeed-Khan-112254973825726/?modal=admin_todo_tour
https://web.facebook.com/permalink.php?story_fbid=112333143817909&id=112254973825726&__tn__=K-R

সংশয় থেকে বিশ্বাস: এক পথিকের গল্প

মো: আবদুল্লাহ সাঈদ খান

পেশা- চিকিৎসক

আমার জন্ম একটি মোটামুটি প্র্যাকটিসিং মুসলিম পরিবারে। যদিও আমার পিতা প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে আলেম ছিলেন না তিনি ইসলাম সম্পর্কে স্বেচ্ছায় অনেক বিস্তারিত পড়ালেখা করেছিলেন। তার প্রভাবে আমাদের মা এবং ভাই-বোনদের চেষ্টা ছিলো ইসলামের বেসিক আমলগুলো ঠিকমত করার। সে সুবাদে আমিও ছোটবেলা থেকে চেষ্টা করতাম যেন মৌলিক ইবাদতগুলো মিস না হয়।

কিন্তু, শয়তান আল্লাহর সাথে ওয়াদা করেছে যে সে মানুষের চতুর্দিক থেকে আক্রমন করবে। তাই কিশোর বয়স থেকেই আমার মাঝে সংশয়ের বীজ রোপিত হতে শুরু করে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার রহমতে সংশয় আমাকে কখনই পুরোপুরি কুপোকাত করতে পারেনি। ফলে, আমার ইতিহাসটা হলো একটি যুদ্ধের ইতিহাস। সংশয়ের বিরুদ্ধের বুদ্ধিবৃত্তিক যুদ্ধের ইতিহাস। মজার বিষয় হলো, ঈমানকে লক্ষ্য করে আসা বিভিন্ন প্রশ্নগুলো আমার মাথায় অন্য কোন বই বা মানুষের প্ররোচনায় আসেনি। হ্যা, দু-এক জন বামপন্থী, নাস্তিক দু’একবার হিন্ট দিয়েছে। কিন্তু, আমার মস্তিষ্কের জন্য ওগুলোই হয়ত যথেষ্ট ছিলো। পরবর্তীতে নতুন নতুন সন্দেহপূর্ণ প্রশ্ন মাথায় একাই খেলা করতো।

তবে অন্তঃর্দ্বন্দ্বের এই সময়টা যে খুব আরামে কাটিয়েছি তা নয়। এখনও মনে পড়ে, প্রথম প্রথম এই সংশয়বাদী প্রশ্নগুলো নিয়ে যখন ভাবতাম বুকে চিন চিন ব্যাথা করতো, বুক চেপে আসতে চাইতো ও শ্বাসঃপ্রশ্বাস বন্ধ হয়ে আসত। ডাক্তার হওয়ার সুবাদে এখন বুঝি যে এগুলো ছিলো প্যানিক এটাকের লক্ষণ যা তীব্র এনজাইটি থেকে আসতো। আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা’র কৃপায় সংশয় নিরসন হওয়া সাথে সাথে তীব্র এক প্রশান্তি মনে এসে ভর করতো। পরবর্তীতে জানা ও চিন্তার ম্যাচুরিটির সাথে সাথে বিভ্রান্তীমূলক চিন্তা আস্তে আস্তে কমে আসতে থাকে। এখন নাস্তিকদের অযুক্তি, কুযুক্তি যতটুকু বুঝতে পারি তা এই তীব্র মানসিক যুদ্ধের ময়দানে প্রাপ্ত প্রশিক্ষনের ফসল।        

যতটুকু মনে পড়ছে আমার প্রথম সংশয়ের শুরুটা হয় তাকদির নিয়ে। তখন নবম শ্রেণীতে উঠেছি কেবল। কিন্তু, এমন একটি বিষয় নিয়ে সংশয় মনে দানা বেঁধেছে যেটি নিয়ে বেশী ভাবলে বিভ্রান্ত হয়ে যাবার সম্ভাবনা খুব বেশী। 

তাকদির সংক্রান্ত প্রশ্নগুলো সাধারণত যে ধরনের হয় তাকে সংক্ষেপে দুটি বাক্যে নিয়ে আসা যায়- আল্লাহ যদি সবকিছু নির্ধারণ করে রাখেন তাহলে আমাদের বিচার কেন হবে? অথবা, আল্লাহ যেহেতু সবকিছু লিখেই রেখেছেন তাহলে আমি আমার মত যা ইচ্ছে করতে থাকি।

আমার অভিজ্ঞতায় মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণকারী যারা তাকদির নিয়ে চিন্তা করেন তাদের মধ্যে কয়েকটি পরিণতি লক্ষ্য করা যায়। একদল, এই সংক্রান্ত চিন্তা ভাবনা থেকে নিজেকে বিরত রাখে যেন ঈমানে সমস্যা না হয়। আরেকদল, এটির ভুল অর্থ বুঝে নিয়ে পাপ কাজ অবলীলায় করতে থাকে। অর্থাৎ, সে তাকদির-এর বিশ্বাসও করে আবার পাপ কাজও করে। তবে, তাকদির সংক্রান্ত বিভ্রান্তি থেকে নাস্তিক হয়ে যাওয়ার লোকের সংখ্যা কম। যদিও এ বিষয়টি নিয়ে সংশয় সৃষ্টি করতে নাস্তিকরা বেশ তৎপর।

কিন্তু, আমি তো নাছোড়বান্দা। বুকের তীব্র ব্যাথাটাকে কমাতে আমাকে একটি স্যাটিসফ্যাকটরি উত্তর খুঁজে নিতে হবে। তাই আমি এই সংক্রান্ত চিন্তাভাবনা ও অধ্যয়ন শুরু করলাম।  প্রথমে জানার চেষ্টা করলাম যে তাকদির কি? হাদীস এবং আকিদার বইগুলো থেকে বুঝতে পারলাম যে তাকদির বলতে বোঝায় গাছের প্রতিটি পাতার নড়াচড়া থেকে শুরু করে মানুষের প্রতিটি আমলই আল্লাহ কর্তৃক পূর্বনির্ধারিত। এই পর্যায়ে এসে জিলাপীর প্যাঁচটা আরও বেড়ে গেলো। কারণ, তাকদির-এ বিশ্বাস একটি মৌলিক বিশ্বাস। সুতরাং উপরের কথাগুলো সত্য। আবার, এটাও সত্য যে মানুষের আমলের উপর বিচার হবে। আমি ভাবতে লাগলাম এ দুটোর মধ্যে কিভাবে সমন্বয় করা যায়।

আমি ইসলামী প্রশ্নোত্তর সংক্রান্ত কয়েকটি বই-এর আশ্রয় নিলাম। সিনিয়রদের প্রশ্ন করলাম। ‘তাকদির’ শিরোনামে একটি বইও পড়েছিলাম যার লেখকের নামটা মনে নেই। কয়েকবছরের পড়াশোনা থেকে প্রাপ্ত উত্তর এবং নিজের চিন্তার আলোকে আমি দুটি বিষয় এভাবে সমন্বয় করলাম-

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা সবকিছুর স্রষ্টা এবং তিনি সময়েরও স্রষ্টা। কিন্তু, আমরা সময়ের অধীন এবং আমাদের চিন্তা চেতনাও সময়ের অধীন। আল্লাহ তাআলার সাপেক্ষে সবকিছু ঘটে গেছে। ফলে তিনি সবকিছু জানেন। এমনকি আমরা ‘স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি’ দিয়ে কোন পথ বেছে নেবো তার খুঁটিনাটি তার জানা।  হাশরের ময়দানে কি বিচার হবে তা-ও তার জানা। জান্নাত ও জাহান্নামের অসীম সময় পর্যন্ত জ্ঞান তার নখদর্পনে। আমি অন্য যে কোন পথ বেছে নিলে কি করতাম এবং আমার পরিণতি কি হতো সে সম্পর্কেও তিনি অবগত।  তিনি তার সেই জ্ঞানের আলোকেই সবকিছু ‘পূর্বনির্ধারণ’ করে লিখে রেখেছেন আমাদের ‘সময় জ্ঞানের সাপেক্ষে’। লক্ষ্যনীয়, আল্লাহ তাআলার সাপেক্ষে পূর্বনির্ধারণ বলতে কিছু নেই। কিন্তু, আমরা যেহেতু সময়ের অধীনে তৈরী আমাদের সময়ের সাপেক্ষে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার এই লেখাগুলোই পূর্বনির্ধারণ। অর্থাৎ, ‘তাক্বদির’ আল্লাহ তাআলার পারস্পেকটিভ থেকে সৃষ্ট একটি বাস্তবতা (রিয়েলিটি)। মহাবিশ্ব স্থান ও সময়সহ অস্তিত্বশীল হয়েছে আল্লাহর ইচ্ছেয় এবং তা হয়েছে তার লিপিবদ্ধ ‘তাকদিরের’ আলোকে।

কিন্তু আমি ভাবলাম, আল্লাহ পূর্বনির্ধারণ করে রেখেছেন, এই বিষয়টিতে আমাদের কেন বিশ্বাস রাখতে হবে বা এই বিষয়টি কেনইবা জানতে হবে? এর অন্যতম কয়েকটি কারণ হল: আল্লাহর বিশালত্ব সম্পর্কে ধারণা তৈরী, হতাশ না হওয়া এবং অতিমাত্রায় ‘দরদী’ না হয়ে না ওঠা।  অতিমাত্রায় দরদী হয়ে যাওয়া বলতে বুঝাচ্ছি যে, কোন কোন সময় আমাদের মাথায় প্রশ্ন আসতে পারে যে আল্লাহকে অস্বীকারকারী এমন ব্যক্তি যারা অনেক ভালো কাজ করেছেন তারা কেন জান্নাতে যেতে পারবে না? এটির মূল উত্তরটা ‘তাকদীর’-এর মধ্যে নিহিত আছে। এ প্রসঙ্গে আবার স্মরণ করা উত্তম হবে যে, ‘তাকদীর’ হল আল্লাহ অসীম জ্ঞানের সাপেক্ষে সৃষ্ট বাস্তবতা। অর্থাৎ, একমাত্র আল্লাহই জানেন তিনি উক্ত ব্যক্তিকে কতটুকু স্রষ্টাকে চেনার সুযোগ দিয়েছিলেন এবং সে কতটুকু তার ব্যবহার করেছে।  আল্লাহ এও জানেন যে সে অন্য কোন পথ বেছে নিলে বা মুসলিম পরিবারে জন্ম নিলে বিশ্বাসের ওপর কতটুকু অটল থাকতে পারতো এবং কতটুকু ভাল কাজ করতো। অর্থাৎ, তার পথনির্বাচন ও পরিণতি আল্লাহর অসীম জ্ঞানের সাপেক্ষে সৃষ্ট তাকদীর। কিন্তু, আমাদের জ্ঞান যেহেতু সীমাবদ্ধ, আমরা আল্লাহর নির্ধারণকে প্রশ্নবিদ্ধ করার যোগ্যতা রাখি না।

তাকদির-এর পর যে বিষয়টি নিয়ে আমি সংশয়ে পড়ে যাই তা হল কোরআন কি সত্যই আল্লাহ প্রেরিত গ্রন্থ কিনা? এই প্রশ্নটির একটি পূর্ণ উত্তর পেতে পেতে আমার মেডিকেল কলেজের ফার্স্ট ইয়ার পার হয়ে গেছে। প্রথম প্রথম মরিস বুকাইলীর ‘বাইবেল, কোরআন ও বিজ্ঞান’,  মুহাম্মদ সিদ্দিক রচিত ‘নাস্তিকের যুক্তি খণ্ডন’ এবং আবুল আলা’র তাফসীর বইটি আমাকে সাহায্য করেছে। তখনও ইন্টারনেট দু:ষ্প্রাপ্য ছিলো। মেডিকেলের ফার্স্ট ইয়ারে যখন ইন্টারনেট- কিছুটা এক্সেস করা যাচ্ছে তখন হারুন ইয়াহিয়ার ‘মিরাকল অব দি কুরআন’ বইটি হাতে পাই যা উপকারে এসেছিলো। উল্লেখ্য, হারুণ ইয়াহিয়া বর্তমানে ‘সেক্স-কাল্ট’-এর লিডারদের মত হয়ে গেছেন, যেটি শুরুর দিকে ছিলো না। এছাড়াও আরেকটি বই পড়ে আমি প্রথমে খুব প্রভাবিত হয়েছিলাম যার শিরোনাম ছিলো ‘ইহার উপর ঊনিশ’। কিন্তু পরবর্তীতে ড. বিলাল ফিলিপ্স রচিত আরেকটি বই  ‘The Qur’an’s Numerical Miracle: Hoax and Heresy ’  থেকে ঊনিশ সংক্রান্ত মিরকাল খুঁজতে গিয়ে রাশাদ খলিফার কোরআন বিকৃত সম্পর্কে জানতে পারি এবং এও জানতে পারি যে  কুরআন অন্যতম প্রধান মুজিজা হলো এটি একটি সাহিত্যিক মিরাকল। এছাড়া রাসুলুল্লাহ (সা) এর জীবনী ‘সীরাত ইবনে হিশাম’ এবং ‘আর রাহীকুল মাখতুম’ থেকে পরোক্ষভাবে সাহায্য পেয়েছি।

যে পয়েন্টগুলোতে আমি কুরআনে আল্লাহর বাণী হওয়ার ব্যপারে নিশ্চিত হই তার মধ্যে কয়েকটি হল:

  • রাসুলুল্লাহ(সা) পড়ালেখা না জানা সত্যেও কুরআনের মত এমন একটি গ্রন্থ প্রচার করা যার চ্যালেঞ্জ তৎকালীন আরবী সাহিত্যে চূড়ান্ত উন্নতির যুগের কোন সাহিত্যিক বা কবি গ্রহন করতে পারেনি।
  • মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ (সা) কর্তৃক এমন একটি স্থান থেকে এমন একটি জাতি গঠন যারা অল্পসময়ের মধ্যে অর্ধপৃথিবী শাসন করেছে, যেটা তার বার্তাবাহক হওয়ার প্রমাণ।
  • কোরআনে কোন বৈজ্ঞানিক অসামঞ্জস্য না থাকা।
  • কোরআনের কিছু বর্ণনা যা বর্তমান বিজ্ঞানের আবিষ্কারের মাধ্যমেই নিশ্চিত হওয়া গেছে। যেমন: ভ্রূণ বিদ্যার বিভিন্ন স্তর সংক্রান্ত বর্ণনা ও মহাবিশ্বের সম্প্রসারনের কথা।
  • কোরআনের গানিতিক গাঁথুনি।
  • কোরআনের ভবিষ্যতবাণীর সত্যতা।

কোরআনে লিটারারীর মিরাকাল নিয়ে বিস্তারিত কোন বই বাংলায় বা ইংরেজীতে আমার মেডিকেলে পাঁচ বছরে পাইনি। বর্তমানে নোমান আলী খানের লেকচার সহ বেশকিছু বই ও ভিডিও লেকচার পাওয়া যায়।

এ সময়, সংশয়বাদী আরও অনেক প্রশ্ন আমার মাথায় এসেছিলো যার উত্তর বিভিন্ন বই থেকে পেয়েছি। দ্বাদশ শ্রেণী থেকে আমার মাথায় বিবর্তনের ভুত চেপে বসে। অর্থাৎ, এই সময় প্রথম ডারউইনবাদ সংক্রান্ত সংশয় শুরু হয়। যদি ফিজিক্স ও কেমিস্ট্রির রুল দিয়েই জীবের উৎপত্তি ও প্রজাতির আবির্ভাব ব্যাখ্যা করা যায় তাহলে কি আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করেননি? মানুষ কি এপ থেকে এসেছে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে গিয়ে শুরু হয় আমার বিবর্তনবাদ ও ডিজাইনতত্ত্ব সংক্রান্ত দীর্ঘ পড়ালেখা যা গত পনের বছর যাবৎ চলছে।            

প্রশ্নটাকে মূলত দুটো ভাগে ভাগ করা যায়, জীবের উৎপত্তি এবং প্রজাতির উৎপত্তি। বর্তমান বিবর্তনবাদীরা জীবের উৎপত্তি সংক্রান্ত প্রশ্নটিকে আলাদা বলতে চাইলেও আগে এটি বিবর্তনের অংশ হিসেবেই বিবেচনা করা হতো। যাই হোক, এ সংক্রান্ত পড়ালেখা শুরু করি মুহাম্মদ সিদ্দিকের ‘বিবর্তনবাদ ও স্রষ্টাতত্ত্ব’ এবং মাওলানা আবদুর রহীম-এর ‘বিবর্তনবাদ ও সৃষ্টিতত্ত্ব’-বই দুটো দিয়ে। মরিস বুকাইলির ‘Origin of man’ বইটি পড়ি ইংরেজিতে। 

এ সংক্রান্ত সংশয় দূরীভূত হতে শুরু করে মেডিকেল ফার্স্ট ইয়ারে। এ সময় প্রথম যে বইটি আমার সবচেয়ে বেশী উপকারে তা হলো হারুন ইয়াহিয়ার ‘Darwinism Refuted’। মনে পড়ে বইটি নেট থেকে ডাউনলোড করে ডেস্কটপের কম্পিউটার স্ক্রিনে রাত জেগে পড়ে শেষ করেছিলাম । অধিকন্তু, এই সময়ে অ্যানাটমী, ফিজিওলজি, বায়োকেমিস্ট্রি পড়ে জীবের গঠন শৈলী নিয়ে আমি নিজে নিজেই ভাবতাম যে এগুলো একজন ডিজাইনার ব্যতীত একা একা আসা কি আদৌ সম্ভব? উক্ত বই পড়ে উত্তরটা যেন আরও সহজ হয়ে যায়।

এরপর পড়ালেখা আরও বিস্তৃত হয়। সরাসরি পাশ্চাত্যের বিজ্ঞানীদের ডারউইনবাদ ও ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন সংক্রান্ত বইগুলো পড়া শুরু করি ফোর্থ ইয়ার থেকে।  চার্লস ডারউইনের অরিজিন অব স্পিসিস বইটি পড়তাম বুঝে বুঝে। উদ্দেশ্য ছিলো বিবর্তনবাদকে মূল থেকে বুঝবো। পাশাপাশি ডিজাইন সংক্রান্ত বইগুলো পড়ায় ডারউইনবাদের কতটুকু ঠিক, আর কতটুকু অতিপ্রচারণা তা সম্পর্কে ধারণা পরিস্কার হতে শুরু করে। ডারউইনবাদ ও ডিজাইন তত্ত্ব সংক্রান্ত আরও বিস্তারিত পড়ালেখা করতে গিয়ে আমি সর্বপ্রথম বুঝতে পারি যে ডারউইনবাদ আসলে একটি ফাঁকা কলসি যা বাজে বেশী । অর্থাৎ, পপুলার বইগুলোতে এবং আন্ডারগ্রাজুয়েট লেভেলের টেক্সট বইগুলোতে ডারউইনবাদকে যতটুকু প্রমাণিত হিসেবে পড়ানো হয়, ডারউইনবাদ তার চেয়ে বহুগুনে প্রমাণশুণ্য। আবার, ডারউইনবাদ যদি সত্যও হত তথাপি একে নাস্তিকতার ভিত্তি হিসেবে প্রচার করার কোন কারণ ছিলো না।

ডারউইন প্রদত্ত বিবর্তনতত্ত্বের মূল কথা ছিলো- প্রতিটি প্রজাতি নিজেকে টিকিয়ে (এক্সিসটেন্স) রাখার জন্য যুদ্ধ (স্ট্রাগল) করে। যুদ্ধটা হয় প্রকৃতিতে প্রাপ্ত বেঁচে থাকার উপকরণ নিয়ে। প্রজাতিতে জন্মান্তরে যে ভ্যারিয়েশন তৈরী হয় তার মধ্যে যে ভ্যারাইটি-টি বিদ্যমান উপকরণ বেশী ব্যবহার করতে পারে সে টিকে যায়। এভাবে জন্ম থেকে জন্মান্তরে মিলিয়ন বছরের ব্যবধানে এককোষী প্রাণী পৃথিবীর সকল প্রজাতির উদ্ভব হয়েছে!

প্রথমত, ডারউইনের মূল তত্ত্ব যে বিষয়টি  পুরোপুরি ব্যাখ্যা করতে পারেনি তা হল- কিভাবে ভ্যারিয়েশন তৈরী হচ্ছে? দ্বিতীয়ত, ডারউইন দৃশ্যমান মৃদু পরিবর্তন (মাইক্রোইভল্যুশন) থেকে বড় পরিবর্তনের (ম্যাক্রোইভল্যুশন) ব্যপারে যে সিদ্ধান্ত দিয়ে দিয়েছেন সে ব্যাপারে পর্যাপ্ত এভিডেন্স দেখাতে পারেন নি। তিনি তার সময়ে প্রাপ্ত ফসিল এভিডেন্সের আলোকে বলার চেষ্টা করেছেন এবং যথেষ্ট ফসিল না থাকার ব্যপারটিও স্বীকার করেছেন। কিন্তু, ডারউইনের সময় কোষের ভিতরের বিশাল মলিকিউলার জগত সম্পর্কে কোন ধারণা না থাকায় মলিকিউলার পর্যায়ে কিভাবে এই বড় পরিবর্তন আসতে পারে সে বিষয়ে কোন ধারণাই দেননি।   

গ্রেগর জোহানস মেন্ডেলের বংশগতির সূত্র আবিস্কার এবং ওয়াটস ও ক্রিকের বংশগতির ধারক হিসেবে ডিএনএ আবিস্কারের পর আর্নস্ট মেয়ার ও ডবঝানস্কি মিলে র‍্যানডম মিউটেশনকে ভ্যারিয়েশন তৈরীর প্রক্রিয়া হিসেবে প্রস্তাবনা করে তৈরী করেন মডার্ন সিনথেসিস অব ইভল্যুশন। এটি নিওডারউইনিজম নামেও পরিচিত।

তাদের এই প্রস্তাবনার পর মেয়ার নিজে এবং পরবর্তী অনেক বিজ্ঞানী র‍্যানডম মিউটেশন এক্সপেরিমেন্ট করেছেন। প্রায় প্রতিটি পরীক্ষানিরীক্ষাতেই প্রমানিত হয়েছে র‍্যানডম মিউটেশন প্রজাতির ক্ষতি আনে, কোন উপকারী ভ্যারিয়েশন তৈরী করে না। যদি কোন প্রজাতিতে র‍্যানডম মিউটেশন বেঁচে থাকতে সাহায্য করেও থাকে তা হয় উক্ত প্রজাতির গুরুত্বপূর্ণ এক বা একাধিক কার্যক্রম ত্রুটিপূর্ণ হওয়ার মধ্য দিয়ে কমে গিয়ে। যেমন: সিকেল সেল এনেমিয়া নামক রোগটি মানুষের রক্তে হিমোগ্লোবিনের সমস্যা সৃষ্টি করে। কিন্তু, ম্যালেরিয়া প্রবণ অঞ্চলে এই সংশ্লিষ্ট মিউটেশনটি ডিএনএ-তে থাকলে মানুষ বেঁচে যায়।  এই বেঁচে যাওয়া অনেকটা ‘নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভাল’ প্রবাদটির মত।

অর্থাৎ, র‍্যানডম মিউটেশন ‘ক্ষুদ্র’ বিবর্তন ব্যাখ্যা করতে পারলেও ‘বড়’ বিবর্তন ব্যাখ্যা করতে পারে না। তারপরও জোড় পূর্বক নিও-ডারউইনিজমকে বিজ্ঞান হিসেবে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে।   

 ডারউনের পর দেড়শ বছরে জীবাশ্ম প্রমাণের কি হল? গত দেড়শ বছরে বহু জীবাশ্ম আবিষ্কার হয়েছে। উক্ত জীবাশ্মের আলোকে ডারউইনবাদীরা দাবী করে যে কোন কোন প্রজাতির ক্ষেত্রে জীবাশ্মের মধ্যবর্তী প্রজাতিগুলো খুব স্পষ্টভাবে পাওয়া গেছে, সুতরাং বিবর্তনবাদ প্রমাণিত। কিন্তু, একটু গভীরে প্রবেশ করলে দেখা যায়, তাদের এই দাবী অনেকাংশেই মিথ্যা এবং বিভ্রান্তিপূর্ণ। এ প্রসঙ্গে তারা সরীসৃপ থেকে পাখির বিবর্তন, চতষ্পদী প্রাণী থেকে তিমির বিবর্তন, ঘোড়ার বিবর্তন এবং এপজাতীয় প্রাণী থেতে মানুষের বিবর্তন সংক্রান্ত কয়েকটি ধারাবাহিক অঙ্কিত চিত্র দেখায় এবং এদের ফসিল পাওয়া গেছে বলে দাবী করে। কিন্তু, এদের প্রদর্শিত ফসিল প্রমাণ হয় উদ্ধারকৃত অসম্পূর্ণ হাড়ের উপর ভিত্তি করে নির্মিত অথবা, উক্ত ফসিলকে বিদ্যমান বিভিন্ন ধরণের (কাইণ্ড) প্রাণীর মধ্যে কোন দলে ফেলা যায় তা নিয়ে বিতর্ক আছে। যেমন: আর্কিওপটেরিক্স নামক পালক ও লেজ বিশিষ্ট ফসিলটিকে পূর্ণাঙ্গ পাখি বা প্লাটিপাসের মত মোজাইক কোন প্রাণীর মধ্যে ফেলা যায়।

তবে, এরচাইতে বড় প্রশ্ন হচ্ছে জীবাশ্মের উপর ভিত্তি করে তারা এক ধরনের প্রজাতি (যেমন: সরিসৃপ) থেকে আরেক ধরনের প্রজাতি (যেমন: পাখি) আসার যে দাবী করছে তা তাত্ত্বিক বা মলিকিউলার বায়োলজির আলোকে সম্ভব কিনা? যে কোন একজন জীববিজ্ঞানের ছাত্র মাত্রই বিবেচনা করে দেখতে পারে এর জন্য প্রয়োজনীয় পরিবর্তন কতগুলো দরকার। যেমন: পাখির উদাহরণটা নিয়েই যদি একটু চিন্তা করি- একটি সরিসৃপকে পাখি হতে হলে সরিসৃপের ত্বকের স্কেলকে পালকে পরিণত হতে হবে, পালকের সাথে সংশ্লিষ্ট মাংসপেশীতে পরিবর্তন আসতে হবে, মাংসপেশীর সাথে সংযুক্ত নার্ভের পরিবর্তন লাগবে, নার্ভকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ব্রেইনের অংশে পরিবর্তন আসতে হবে, ব্রেইনের নিউরনের সংশ্লিষ্ট প্রোগ্রামিং-এর পরিবর্তন আসতে হবে, পাখির শ্বাসযন্ত্রকে একমুখী হতে হবে যেন উড়ার সময় শ্বাস নিতে সমস্যা না হয়, পাখির হাড়গুলো হালকা হতে হবে যেন উড়ার সময় ভাবে পরে না যায়  এবং এইভাবে এই লিস্ট আরও বড় করা যায়। সামান্য একটু চিন্তাতেই বুঝা যাচ্ছে এই ধরনের ট্রানজিশন এলোপাতাড়ি ভাবে আসার বিষয়টি অলীক কল্পনা। অধিকন্তু, সরিসৃপের  ডিএনএ-তে সংশ্লিষ্ট পরিবর্তন আনতে যে পরিমাণ সুনির্দিষ্ট পরিবর্তন দরকার তা ‘এলোপাতাড়ি’ মিউটেশনের মাধ্যমে  আসা আদৌ সম্ভব কিনা এই প্রশ্ন যদি কোন মলিকিউলার বায়োলজির ছাত্র ‘নিরপেক্ষ’ ভাবে চিন্তা করে সে উক্ত  সম্ভাব্যতা হেসে উড়িয়ে দেবে। 

তারপরও, ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইনের প্রবক্তা আনবিক জীববিজ্ঞানী ও গনিতবিদরা বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নিয়ে হিসেব কষেছেন। তারা বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে দেখিয়েছেন যে র‍্যানডম মিউটেশন বা তৎপরবর্তী প্রস্তাবিত অন্যান্য আণবিক প্রক্রিয়ায় একা একা এ ধরনের পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা নেই এবং সময়ও নেই।

ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইনের প্রবক্তাদের এই বিষয়গুলো আমি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়েছি এবং সাথে আনবিক জীববিদ্যার পাঠ্যপুস্তক গভীরভাবে অধ্যায়ণ করেছি, প্রোবেবিলিটি ও স্ট্যাটিসটিক্স-এর বেসিক বুঝে নিয়েছি, প্রয়োজনে অ্যানাটমী ও ফিজিওলজি মনোযোগ দিয়ে পড়ে নিয়েছি যেন তাদের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ বুঝতে পারি। আলহামদুলিল্লাহ, তাদের প্রস্তাবণা আমার কাছে অনেক বেশী স্যাটিসফেকরী মনে হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আমার পড়া বেস্ট বইগুলোর মধ্যে কয়েকটি উদাহরণ দেয়া জরুরী বোধ করছি- মাইকেল বিহে-এর Dawin’s Black Box ও Edge of Evolution, স্টিফেন মেয়ার-এর Signature in the cell ও Darwin’s Doubt, উইলিয়াম ডেম্বস্কি ও জোনাথান ওয়েলস-এর The Design of Life, জোনাথান ওয়েলস-এর Icons of Evolution ও Zombie Science, উইলিয়াম ডেম্বস্কি-এর The design inference এবং No free Lunch । এই বইগুলো একেকটা মাস্টারপিস এবং বইগুলোতে মলিকিউলার বায়োলজির এভিডেন্স ও ম্যাথমেটিক্স-এর উপর ভিত্তি করে ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন তত্ত্বকে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

যখন বায়োকেমিস্ট্রি থেকে প্রোটিন, আরএনএ এবং ডিএনএ-র বিস্তারিত গঠন জেনেছি তখন থেকেই নিজেই ক্যালকুলেশন করতাম যে এলোপাতাড়ি ভাবে এদের আসার সম্ভাবনা খুবই নগন্য এবং ডিজাইন ছাড়া এগুলো আসা সম্ভব নয়। মজার বিষয় হলো ডিজাইন সংক্রান্ত বইগুলোতে আমার চিন্তাভাবনার এনডর্সমেন্ট পেয়েছি। ফলে, ভাবনাগুলো পাকাপোক্ত হয়েছে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ করতে হয় যে, একদল বস্তবাদী বিজ্ঞানী আছেন যারা নিওডারউইনিজমের পদ্ধতিগত ত্রুটি আলোচনা করছেন ঠিকই কিন্তু বস্তুবাদের প্রতি তাদের আনুগত্য থেকে বের হয়ে আসতে পারছেন না। তারা প্রস্তাবনা রাখছেন ‘এক্সটেন্ডেড ইভল্যুশনারী সিনথেসিস’ অথবা ‘দি থার্ড ওয়ে’ নামে তৃতীয় কোন পদ্ধতির যেগুলো প্রকৃতপক্ষে আদিম কোষে প্রয়োজনীয় জেনেটিক তথ্যের উপস্থিতি আছে ধরে নিয়ে সামনে আগায়।  অন্যদিকে, একদল বিবর্তনবাদী আছে যারা বিশ্বাস করেন যে প্রজাতির উদ্ভব বিবর্তনের মাধ্যমেই হয়েছে, তবে তা স্রষ্টার পথনির্দেশনায় হয়েছে। এর মধ্যে আবার দুটি ভাগ আছে। একদল মনে করেন পৃথিবীর প্রথম দিকের কোষেই (আদিকোষ) এই পথনির্দেশনা দিয়ে দেয়া হয়েছে। আরেকদল বলতে চান যে সময়ে সময়ে প্রয়োজনীয় মিউটেশন স্রষ্টার গাইডেন্সে হয়েছে। এই দুই দলই প্রকৃতপক্ষে জীবজগতের সৃষ্টিতে ডিজাইনারের প্রয়োজনীয়তার কথা স্বীকার করে নিচ্ছেন। সুতরাং, ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন (আইডি) তাত্ত্বিকদের সাথে এদের মৌলিক পার্থক্যটা হল আইডি তাত্ত্বিকরা জীবজগতে ডিজাইন আবিস্কারের একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রস্তাবনা করছেন এবং তারা ডিজাইনারের প্রকৃতি নিয়ে মাথা ঘামানোর বিষয়টি দার্শনিক ও ধর্মপ্রচারকদের হাতে ছেড়ে দিয়েছেন। অন্যদিকে গাইডেড বিবর্তনে বিশ্বাসীরা সরাসরি ডিজাইনারের প্রস্তাবনাটাকে সাথে উল্লেখ করছেন।

খুব সংক্ষেপে এই ছিলো আমার বিবর্তনবাদ থেকে ডিজাইনতত্ত্বে ধাবিত হওয়া এবং বিবর্তন সংক্রান্ত সংশয় দূর হওয়ার পথপরিক্রমা। তবে আমার এই জার্নিতে আরও দুটো অধ্যায় হলো মহাবিশ্বের সৃষ্টিতে আল্লাহর প্রয়োজনীয়তা এবং আত্মার অস্তিত্ব বিষয়ক প্রশ্ন ।

বিগব্যাং-এর সত্যতা আবিস্কার এবং পদার্থবিজ্ঞানের বিভিন্ন সূত্রের ফাইন টিউনিং মহাবিশ্বের সৃষ্টিতে ডিজাইনারের উপস্থিতিকে স্পষ্ট করে তুলেছে। ডিজাইনার প্রয়োজনীয়তা এড়াতে নাস্তিক পদার্থবিদদের আবিস্কারগুলো এতটাই হাস্যকর যে এগুলোকে সিরিয়াসলি নেয়ার কোন কারণ পাইনি। গনিতবিদ রোজার পেনরোজ হিসেব কষে দেখিয়েছেন আমাদের মহাবিশ্বের অস্তিত্বে আসার সম্ভবনা ১০-এর পর ১০ টু দি পাওয়ার ১২৩ টি শূণ্য বসালে যে সংখ্যাটি হবে তার মধ্যে একবার। এলোপাতাড়ি তত্ত্ববাদী নাস্তিকদের জন্য এটি একটি মহাবিপদ। এজন্য নাস্তিক ম্যাক্স টেগমার্ক ‘মাল্টিভার্স’ নামক তত্ত্ব দিয়েছেন। যার অর্থ হলো ১০ টু দি পাওয়ার ১০ টু দি পাওয়ার ১২৩ (১০^১০^১২৩) টি মহাবিশ্ব আছে যা আমাদের থেকে ‘সময়-স্থানিক ভাবে বিচ্ছিন্ন’। ‘সময়-স্থানিক ভাবে বিচ্ছিন্ন’-এর অর্থ হচ্ছে উক্ত তথাকথিত মহাবিশ্বগুলোর সাথে আপনি কখনই যোগোযোগ করতে পারবেন না।  যেহেতু এত সংখ্যক ইউনিভার্স আপনি কল্পনা করতে পারছেন অতএব এরমধ্যে আমাদের মহাবিশ্ব থাকতেই পারে! তত্ত্বের বক্তব্য থেকেই দেখতে পাচ্ছেন যে এটি একটি অবাস্তব গানিতিক হিসাব যার অবতারণা করা হয়েছে স্রষ্টার অস্তিত্বকে অস্বীকার করার জন্য। অর্থাৎ, এই ধরনের তত্ত্বগুলো পিছনে নাস্তিকদের নিরন্তর পণ্ডশ্রমের কারণ যতটা না বৈজ্ঞানিক তার চেয়ে অনেক বেশী আদর্শিক। এ সংক্রান্ত যত আর্টিকেল ও বই পড়েছি এবং যত ভিডিও দেখেছি তার মধ্যে তিনটি বই আমি রিকোমেণ্ড করতে চাই- স্টিফেন বার-এর Modern Physics and Ancient Faith,  মাইকেল ডেনটন-এর Nature’s Destiny এবং পউল ডেভিস-এর The Goldlilock’s Enigma।

আপনি যখন বিজ্ঞানের জগতের গভীরে অধ্যয়ন করবেন তখন দেখবেন বিজ্ঞানের প্রতিটি ক্ষেত্রে নাস্তিকরা তাদের কালো থাবা বসিয়ে রেখেছে। তারা প্রতিটি ডিসিপ্লিনে তাদের মনগড়া তত্ত্ব বিজ্ঞানের মোড়কে পরিবেশন করেছে যেন স্রষ্টাকে অস্বীকার করা যায়। এ রকম আরেকটি জায়গা হচ্ছে ‘আত্মার অস্তিত্ব’। একজন মেডিকেলে সায়েন্সের ছাত্র হিসেবে আমাকে মানুষের ব্রেইনের গঠন বেশ ভালো ভাবেই পড়তে হয়েছে। আবার অন্যদিকে আত্মা ও মন নিয়ে আগ্রহ থাকায় আমি এই বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করেছি। আমার পড়াশোনা থেকে সংক্ষেপে শুধু এটুকু বলি যে, আমাদের মনকে ডেনিয়েল ডেনেটদের মত শুধু ব্রেইনের গঠনের কার্যকরী ফল বলা যায় না, অথবা মনকে খুবই উচ্চ মানের কম্পিউটার প্রোগ্রামও বলা যায় না। সুতরাং ‘মন’ এমন একটি জিনিস যা কোন বস্তুবাদী স্কেল দিয়ে পরিমাপযোগ্য নয়। এটিযে পরোক্ষভাবে আত্মার অস্তিত্বের দিকে নির্দেশ করে আমার কাছে তা পরিস্কার, আলহামদুলিল্লাহ। এ বিষয়ে আমি যে দুতিনটি বই-এর কথা বলতে চাই তা হল- ম্যারিও বুয়েরেগার্দ-এর The Spiritual Brain, মার্ক বেকার ও স্টুয়ার্ট গোতজ-এর Soul Hypothesis এবং রোজার পেনরোজ-এর Emperor’s New Mind।  

এখন আমার পড়াটা আরও বিস্তৃত হয়েছে। আগে ধর্মের দর্শন নিয়ে পড়েছি খুব কম। এখন এই অধ্যায়টিতে প্রবেশ করেছি এবং আবিস্কার করেছি যে কয়েকজন বিশ্বাসী দার্শনিক গত পঞ্চাশ বছরে এই ক্ষেত্রটিতে এত বেশী উন্নতি করেছেন যেন এখানে নাস্তিকদের কফিনে শেষ পেড়েক লাগানো হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে উইলিয়াম লেইন ক্রেইগ-এর পাশাপাশি, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আলভিন প্লানটিঙ্গা ও রিচার্ড সুইনবার্ণের নাম উল্লেখ করতেই হয়।

অল্প অল্প করে লিখতে লিখতে অনেক কথা লিখে ফেললাম। আমি প্রথমে বলেছিলাম আমার পড়াশোনার শুরুটা হয়েছে সংশয় থেকে। আল্লাহর রহমতে এখন সংশয়টা নেই, তবে পড়া-শোনা-লেখাও থেমে নেই। এক সময় পড়তাম বিভ্রান্তি দূর করতে। বিভ্রান্তি দূর হলে আল্লাহর ইচ্ছেয় আত্মার প্রশান্তি চলে আসতো।  এখনও পড়ি আর আল্লাহর অস্তিত্বের বিশালতা দেখে মাথা সেজদায় অবনত হয়ে আসে।

আমার এই দীর্ঘ জার্নিতে আমি লেখালেখির সুবাদে আমার মতই সংশয় কিংবা নাস্তিকতা থেকে উঠে আসা কিছু আল্লাহর বান্দার সঙ্গে পরিচিত হয়েছি যাদের পড়ালেখা, জ্ঞান ও  উপলব্ধির ব্যপ্তির কাছে আমার প্রচেষ্টা কিছুই না। এমন বেশ কয়েকজন লেখকের জীবনীও আপনারা এই বইটিতে পড়েছেন বা পড়বেন। আমি যখন তাদের লেখা পড়ি নিজের কর্মের দুর্বলতা দেখে আত্মগ্লানিতে মাথা নিচু হয়ে আসে। আমি তওবা করি, আবার পাপ কাজে নিমজ্জিত হই, আবারও আল্লাহ তাআলার কাছে এক বুক আশা নিয়ে ক্ষমা চাই।

ছোটবেলায় যখন সংশয়ে পড়ে যেতাম এবং আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করে সংশয় থেকে মুক্তি পেতাম তখন কোরআনের দুটি আয়াত আমি অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে অনুভব করতাম:

“পৃথিবী ও আকাশের সৃষ্টি এবং রাত ও দিনের পালাক্রমে যাওয়া আসার মধ্যে যে সমস্ত বুদ্ধিমান লোক উঠতে, বসতে ও শয়নে সব অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আকাশ ও পৃথিবীর গঠনাকৃতি নিয়ে চিন্তাভাবনা করে, তাদের জন্য রয়েছে বহুতর নিদর্শন ৷  (তারা আপনা আপনি বলে ওঠেঃ) হে আমাদের প্রভু! এসব তুমি অনর্থক ও উদ্দেশ্যবিহীনভাবে সৃষ্টি করোনি ৷ বাজে ও নিরর্থক কাজ করা থেকে তুমি পাক-পবিত্র ও মুক্ত৷” (সুরা আল ইমরান, আয়াত ৯০, ৯১)

আর, এখন যখন নিজের আত্মার সাথে জুলুম করে ফেলি মনে হয় যেন আল্লাহ আ’জ্জা ওয়া জাল্লাহ আমাকে উদ্দেশ্য করেই বলছেন:

“ (হে নবী,)বলে দাও,হে আমার বান্দারা  যারা নিজের আত্মার ওপর জুলুম করেছো আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না৷ নিশ্চিতভাবেই আল্লাহ সমস্ত গোনাহ মাফ করে দেন৷ তিনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু৷” (সুরা যুমার, আয়াত ৫৩)     

যুক্তি ও বিপরীত যুক্তি

নাস্তিক বিজ্ঞানীরা কি বিশ্বাসের বিপক্ষে বা অবিশ্বাসের পক্ষে যুক্তির কারণে নাস্তিক হয়?

যুক্তি ও বিপরীত যুক্তি সমান্তরালে চলে। মেডিকেলে পড়ার সময় আমার একজন সহপাঠীর সঙ্গে একদিন ক্লাস শেষে ফেরার পথে এ বিষয়ে কথা হচ্ছিল। সে একটি সুন্দর উপমা দিয়েছিলো যে যুক্তি ও বিপরীত যুক্তির উদাহরণ হচ্ছে রেললাইনের মত, সমান্তরালে চলে।

তবে, যুক্তিবিদ্যা সম্পর্কে পড়াশোনা থাকলে যুক্তি থেকে অ-যুক্তি ও কু-যুক্তি (logical fallacy) পার্থক্য করা যায়। অনেকে যুক্তিবিদ্যা নিয়ে সিস্টেম্যাটিক্যালী না পড়েও যথেষ্ঠ যুক্তিবোধ রাখেন। মানুষভেদে উক্ত যুক্তিবোধের একটা রেঞ্জ পাওয়া যায়।

এতদিন বাংলায় অবিশ্বাসীদের যুক্তিচর্চার ক্ষেত্র ছিল তুলনামূলক শূন্য। সে সুযোগে তারা বিশ্বাসের বিপক্ষে পশ্চিমাদের যুক্তি, অযুক্তি ও কুযুক্তিকে বিভিন্ন মোড়কে উপস্থাপন করেছেন। ফলে বিশ্বাসীদের পক্ষেও যে যুক্তির সম্ভার আছে তা অনুপস্থাপিত থেকে গেছে বহুদিন।

এরপর নাস্তিকদের ব্লগস্ফেয়ারেই মুসলিম ব্লগাররা বিশ্বাসের পক্ষের যুক্তি নিয়ে লিখালিখি করেছেন। এক সময় আলোচনা-সমালোচনা সীমাবদ্ধ ছিল অল্পকিছু মানুষের মধ্যে । ২০১৩ সালে পর বিভিন্ন কারণে উক্ত আলোচনা দ্রুত ছড়িয়ে পড়লো সবার মাঝে।

কিন্তু, সবার যুক্তিবোধ সমান নয়, আবার যুক্তি তর্কের ক্যাচক্যাচানি সবার ভালও লাগে না। এ কারণে গল্পের আকারে নাস্তিকদের যুক্তির খণ্ডন বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এই জনপ্রিয়তার মধ্য দিয়ে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, আমাদের ওয়ায়েজীনদের একটি বড় অংশ যখন জনসাধারনের মধ্যে সুরে-বেসুরে ইসলামের শিক্ষার রিমাইণ্ডার দিতে ব্যস্ত, তখন আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত তরুন মুসলিমদের একটি বড় অংশ আমলতো দূরের কথা বিশ্বাসের দিক দিয়েই সংশয়াপন্ন হয়ে গেছে। না হলে ‘প্রেম-রস-কাহিনী-উপাখ্যান’ বিহীন যুক্তি-তর্কের গল্পের বই এত জনপ্রিয় হয় কিভাবে?

যাই হোক মূল কথায় আসি। বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসী দুই পক্ষেরই যুক্তির অভাব নেই। এমনকি এ সংক্রান্ত পড়ালেখা করতে করতে একজনের জীবন পার করে দেয়া সম্ভব। ফলে, অধিকাংশই বিশ্বাসীদের পক্ষে বিপক্ষের যুক্তি নিয়ে গভীর পড়ার সময় বা যোগ্যতা রাখেন না। ফলে, তারা তাদের পারিবরিক বিশ্বাস বা পারিপার্শ্বিক অর্থডোক্স (প্রচলিত) বিশ্বাসের উপর আস্থা রাখেন অথবা এগনস্টিক অবস্থান নিয়ে নিজের কাজ চালিয়ে যান। এমনকি বিজ্ঞানী ও দার্শনিকদের ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য।

২০১৩ সালে David Bourget এবং David J. Chalmers একটি গবেষণা প্রকাশ করেন(1)। যার শিরোনাম ছিলো ‘দার্শনিকরা কি বিশ্বাস করেন?” (What Do Philosophers Believe?) উক্ত গবেষণায় তারা দর্শনের বিভিন্ন শাখার দার্শনিকদের কাছে দর্শনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করেন। এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূণ প্রশ্ন ছিল – স্রষ্টায় বিশ্বাস নিয়ে। তাদের গবেষণায় বেরিয়ে আসে যে যারা ‘ধর্মের দর্শন’ (Philosophy of Religion)-এ এক্সপার্ট তাদের মধ্যে মাত্র ২০.৮৭% অবিশ্বাসী এবং ৭৯.১৩% শতাংশ বিশ্বাসী। অন্যদিকে যারা ধর্মের দর্শন বিষয়ে এক্সপার্ট না (অর্থাৎ অন্যান্য দর্শন বিষয়ে এক্সপার্ট) তাদের মধ্যে ৮৬.৭৮% অবিশ্বাসী এবং ১৩.২২% বিশ্বাসী। অর্থাৎ, বলা যায় একজন দার্শনিকের স্রষ্টায় বিশ্বাসের যুক্তি গুলো নিয়ে গভীরভাবে পড়ালেখা করলে বিশ্বাসী হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় চারগুন বেশী।

কিন্তু, বিজ্ঞানের প্রতিটি শাখার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জ্ঞানের ব্যপ্তি এখন এত বেশী যে উক্ত যে কোন একটি বিষয় নিয়ে একজন গবেষকের জীবনের অধিকাংশ সময় পার করে দিতে হয় বা দিতে পারেন। ফলে, বিশ্বাসের দিক দিয়ে তার অবস্থান বিশ্বাস-অবিশ্বাসের যুক্তি নিয়ে পড়ালেখার উপর নির্ভর করে না বরং নির্ভর করে তার পারিবারিক বা সামাজিক ধর্মীয় শিক্ষা ও অবস্থা, পারিপার্শ্বিক পরিবেশ, একাডেমিক স্থানে সুবিধাজন পজিশনের থাকার প্রবণতা প্রভৃতি বিষয়ের উপর।

Ecklund এবং Scheitle যুক্তরাস্ট্রের ২১টি এলিট রিসার্চ ইউনিভার্সিটির বিভিন্ন বিজ্ঞানীদের উপর গবেষণা করে দেখেছেন বিভিন্ন শাখার বিজ্ঞানীদের ধার্মিক হওয়ার বিষয়টি তাদের নিজেদের ফিল্ড-এর এক্সপারটিজ-এর উপর নির্ভর করে না বরং নির্ভর করে তাদের বয়স, বৈবাহিক অবস্থা, সন্তান থাকা বা না থাকা, সে নিজে ছোট থাকাকালীন তার পরিবারের ধর্মীয় অবস্থা ইত্যাদির উপর(2)।

তারা আরও দেখিয়েছেন যে খুব কম বিজ্ঞানীই মনে করেন যে বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে বিবাদ আছে(3)। কিন্তু, নাস্তিকরা, বিশেষ করে নব্য-নাস্তিক (Neo-Atheist)-দের সঙ্গে কথা বললে মনে হয় যেন বিজ্ঞানীরা তাদের যুক্তিবোধের কারণে নাস্তিক হয়ে যায়। অথচ, উপরে আমরা দেখলাম বিশ্বাসের যুক্তি নিয়ে গভীরভাবে পড়লে বিশ্বাসী হবার সম্ভাবনা প্রায় চারগুন বেশী এবং বিজ্ঞানীদের মধ্যে অধিকাংশই শুধু যুক্তির কারণে নিধার্মিক বা নাস্তিক হয় না।

রেফারেন্স:

1. Bourget D, Chalmers DJ. Bourget, Chalmers, What Do Philosophers Believe. Philos Stud. 2014;130(3):465–500.

2. Ecklund EH, Scheitle CP. Religion among Academic Scientists: Distinctions, Disciplines, and Demographics. Soc Probl. 2007;54(2):289–307.

3. Ecklund EH, Park JZ, Sorrell KL. Scientists Negotiate Boundaries Between Religion and Science. J Sci Study Relig. 2011;50(3):552–69.

Majidul Mulhid:

আপনি প্রধানত দুটি পয়েন্ট তুলে ধরেছেন, উভয় নিয়েই আলোচনা করছি।

১. দর্শনের অন্যান্য ক্ষেত্রের তুলনায় ধর্মের দর্শনে বিশ্বাসীর সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে আপনি বলেছেন –

“বলা যায় একজন দার্শনিকের স্রষ্টায় বিশ্বাসের যুক্তি গুলো নিয়ে গভীরভাবে পড়ালেখা করলে বিশ্বাসী হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় চারগুন বেশী।”

এটিই কিন্তু একমাত্র হাইপোথিসিস নয়, এর আরও এক কারণ হতে পারে, সেটি হল –

“ধার্মিক বা আস্তিক হওয়ার কারণেই তারা ধর্মের দর্শন নিয়ে পড়ার সিধান্ত নিয়েছে এবং পূর্বধারণার (prejudice) কারণেই সে আস্তিক থাকে।”

কোন হাইপোথিসিস সঠিক?

এই গবেষণায় এই সিধান্তে আসার মতো পর্যাপ্ত পরিমাণে তথ্য নেই। তাই আমরা Helen De Cruz-এর একটি গবেষণার [১] উপর নির্ভর করব। এই গবেষণায় দেখা যাচ্ছে ধর্মের দর্শন বিষয়ে স্পেশালাইজেশন করার প্রধান উদ্দেশ্য হল – Faith seeking understanding অর্থাৎ, এটা তাদের বিশ্বাসকে গভীর করতে সাহায্য করে। দ্বিতীয় উদ্দেশ্য হল – Proselytism and witness, অনেকেই অন্য মানুষদের নিজ ধর্মে দীক্ষিত করানোর উদ্দেশ্যে এই বিষয়ে স্পেশালাইজেশন করে।

এছাড়া, আরও দেখা যায় যে এই ধর্মের দর্শন বিষয়ে পড়ার ফলে যতজন আস্তিক থেকে নাস্তিক হয় (৮.১%), তার তুলনায় নাস্তিক থেকে আস্তিক (১১.৮%) হওয়ার সংখ্যাও ৩.৭% বেশি।

এর ফলে দেখা যাচ্ছে আপনার হাইপোথিসিসটি ভুল বরং বেশিরভাগ ধর্মের দার্শনিকগণ আগে থেকেই ধার্মিক বা আস্তিক হওয়ার কারণেই ধর্মের দর্শন নিয়ে পড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে।

২. আপনার দ্বিতীয় দাবি হল –

“খুব কম বিজ্ঞানীই মনে করেন যে বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে বিবাদ আছে।”

এর প্রমাণ হিসেবে যেই আর্টিকেলটি দিয়েছেন সেখানে এমন কিছু লেখা নেই, সেখানে যা লেখা আছে সম্ভবত সেটি আপনি ভুল বুঝেছেন।

“only a minority of scientists see religion and science as always in conflict”- সম্ভবত এই বাক্যটি পড়ে আপনি এমন ধারনা করেছেন। ভালো করে দেখুন, এখানে ‘ always’ শব্দটি ব্যাবহার করা হয়েছে, অর্থাৎ এর বাংলা করলে দাঁড়ায়, “মাত্র স্বল্পসংখ্যক বিজ্ঞানী ধর্ম ও বিজ্ঞানের মধ্যে সর্বদাই বিরোধ দেখতে পান।”

এই গবেষণায় পাওয়া যায়, সাবজেক্টদের মধ্যে ১৫% বিজ্ঞানী মনে করে বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে সবসময় সংঘাত আছে, ১৫% বিজ্ঞানী মনে করে বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে কোনো সংঘাত নেই এবং ৭০% বিজ্ঞানী মনে করে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ধর্ম ও বিজ্ঞানের সংঘাত আছে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে মোট ৮৫% বিজ্ঞানী মনে করে ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের বিরোধ আছে। এবং এটাই যুক্তিযুক্ত অবস্থান, ধর্মে কাকতালীয়ভাবে কিছু জিনিস থাকতেই পারে যা বিজ্ঞানের সাথে সাংঘর্ষিক নয়। তাই বলে ধর্মের সব জিনিস বিজ্ঞানসম্মত তা তো নয়। যেমন বিবর্তনবাদ, এটা সম্পূর্ণরূপে ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক। আবার কুরআনে বলা আছে প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে, এটা আবার বিজ্ঞানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। কিন্তু, ধর্মগ্রন্থে একটি ভুল ধরা পড়লেই সেই গ্রন্থের ডিভাইন অরিজিন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে ওঠে।

আরও একটা পয়েন্ট হল, এখানে বিজ্ঞানীরা ধর্ম বলতে নির্দিষ্ট কোনো ধর্ম নেয়নি, অনেকেই আধ্যাত্মিকতাকেও ধর্ম ধরেছেন। বিজ্ঞানের কাজ ন্যাচারাল ওয়ার্ল্ড নিয়ে কাজ করা, তাই বিজ্ঞান আধ্যাত্মিকতা বিষয়ে কিছু বলতে পারেনা। কিন্তু, বিজ্ঞান ঠিকই বেদ, বাইবেল, গীতা, কুরআনের মধ্যে অনেক ভুল দেখাতে সক্ষম।

সুতরাং দেখা যাচ্ছে, আপনি প্রথম গবেষণার ক্ষেত্রে ভুল হাইপোথিসিস দাঁড় করিয়েছেন এবং দ্বিতীয় গবেষণার ব্যাপারে শুধুমাত্র সারাংশ পড়ে ভুল বুঝেছেন।

বিজ্ঞানীদের ক্ষেত্রে কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করা কঠিন, তা জানতে এই ভিডিওটি দেখতে পারেন –

===========================

রেফারেন্সঃ

[১] My qualitative study of religious attitudes and motivations of philosophers of religion

https://www.newappsblog.com/…/results-of-my-qualitative…

উত্তর:

আপনি আমার বক্তব্য থেকে দুটি পয়েন্ট নিয়ে কথা বলেছেন। কিন্তু, এর বাইরেও একটি পয়েন্টে আমি কথা বলেছি। তা হল- নাস্তিক বিজ্ঞানীদের নাস্তিক হওয়া তাদের বয়স, বৈবাহিক অবস্থা, সন্তান থাকা বা না থাকা, সে নিজে ছোট থাকাকালীন তার পরিবারের ধর্মীয় অবস্থা ইত্যাদির উপর নির্ভর করে।

এবার আসুন অন্য দুটো পয়েন্ট নিয়ে কথা বলা যাক। আমি বলেছি “একজন দার্শনিকের স্রষ্টায় বিশ্বাসের যুক্তি গুলো নিয়ে গভীরভাবে পড়ালেখা করলে বিশ্বাসী হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় চারগুন বেশী”। এটা বলেছি মূলত মূল পোস্টের ১নং রেফারেন্স-এর পরিসংখ্যান এর আলোকে।

আপনার আলোচনার প্রেক্ষিতে আমি Helen De Cruz-এর ২০১৮ সালের প্রকাশিত মূল আর্টিকেলটা পড়ে দেখলাম(1)। সে প্রেক্ষিতে আমি আমার হিসেবটি রিভাইজ করতে চাই। লক্ষনীয় আমার হাইপোথিসিস-এর আলোকে একজন দার্শনিক ফিলোসফি অব রিলিজিওন নিয়ে পড়ার আগে নাস্তিকও হয়ে থাকতে পারেন এবং আস্তিকও হয়ে থাকতে পারেন। আবার ডি ক্রজের আর্টিকেল থেকে দেখা যায় তার গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ৮৫ জন আস্তিক ফিলোসফার এর মধ্যে ১১ জন পূর্বে নাস্তিক বা এগনস্টিক ছিল, ৩৩ জন নাস্তিক বা এগনস্টিক দার্শনিকের (২৫ জন নাস্তিক ও ৮ জন এগনস্টিক)-এর মধ্যে ১২ বিশ্বাসী ছিল। আমরা ম্যাকনেমার টেস্ট করলে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সংখ্যার মধ্যে স্ট্যাটিসটিক্যাল সিমিলারিটি দেখতে পাই (p=1.000)। (লক্ষ্যনীয় আর্টিকেলের এই জায়গায় ডি ক্রজ একটা ভুল করেছেন। এখানে ফিসারস এক্সাক্ট টেস্টে হবে না হবে ম্যাকনেমার টেস্ট হবে। কারণ যখন কোন ডাইকোটোমাস ভ্যারিয়েবলকে রিপিটেড মিজার করা হয় তখন ম্যাকনেমার ব্যবহার করতে হয়।(2))। উপরোক্ত হিসেবে অনুযায়ী পূর্বে ৮৬ জন আস্তিক ছিল এবং ৩২ জন নাস্তিক/এগনস্টিক ছিল।

আপনি একটি ভ্যালিড পয়েন্ট এনেছেন যে এখানে একজন ফিলোসফার অব রিলিজিওনের পূর্বের বিশ্বাসকেও আমলে নিতে হবে। সুতরাং আমরা ডি ক্রুজের ২০১৮ সালের আর্টিকেলের হিসেবেকে আমলে নিয়ে পাচ্ছি একজন দার্শনিকের ফিলোসফি অব রিলিজিওন বিভাগে ঢুকার পূর্বে আস্তিক থাকার সম্ভাবনা ৭২.৮৮% এবং নাস্তিক বা এগনস্টিক থাকার সম্ভাবনা ২৭.১১% এবং উক্ত ডিপার্টমেন্টে ঢুকার পরে আস্তিক হওয়ার সম্ভাবনা ৭২.০৩% এবং নাস্তিক বা এগনস্টিক হওয়ার সম্ভাবনা ২৭.৯৬%। এখন আমরা যদি পূর্ববর্তী বিশ্বাসকে আমলে নেয়ার জন্য বেইস থিওরেম এপ্লাই করি তাহলে দেখা যায় একজন দার্শনিকের ধর্মের দর্শনে এক্সপার্ট হওয়ার থিইস্ট হওয়ার সম্ভাবনা (Likelihood) ৬০.৩৮% এবং অবিশ্বাসী/এগনস্টিক হওয়ার সম্ভাবনা ৫০.৬৮%। অর্থাৎ পূববর্তী বিশ্বাসকে আমলে নিলেও একজন দার্শনিকের ধর্মের দর্শন পড়ে বিশ্বাসী হবার সম্ভাবনা প্রায় ৯.৭৩% বেশী। অর্থাৎ, আবার পূর্বের হিসেবের ৪ গুনের জায়গায় মূল হিসেব হবে ১.১৯ গুণ বেশী।  

এছাড়া আপনি ডি ক্রুজের ব্লগ থেকে লিখেছেন- এই গবেষণায় দেখা যাচ্ছে ধর্মের দর্শন বিষয়ে স্পেশালাইজেশন করার প্রধান উদ্দেশ্য হল – Faith seeking understanding অর্থাৎ, এটা তাদের বিশ্বাসকে গভীর করতে সাহায্য করে। দ্বিতীয় উদ্দেশ্য হল – Proselytism and witness, অনেকেই অন্য মানুষদের নিজ ধর্মে দীক্ষিত করানোর উদ্দেশ্যে এই বিষয়ে স্পেশালাইজেশন করে।

এই তথ্য পুরোপুরি সঠিক নয়, কারণ Proselytism and witness অন্তত দ্বিতীয় কারণ নয়। মূল কারণগুলো হল – রিলিজিয়াস আইডেনটিটি (৩৬%), দার্শনিক আগ্রহ (৩৩.১%), দর্শক সংক্রান্ত শিক্ষা থেকে আগ্রহ ২০.১%, সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক বা সামাজিকভাবে ইন্টারেস্টিং মনে করার কারণে ১৪.৪%, ছোটবেলার কোন অভিজ্ঞতার কারণে ১০.৮%, অন্যান্য ৭.৯% এবং  Proselytism and witness ৭.২%। এমনকি যারা রিলিজিয়াস আইডেনটিটি ক্লাসে আগ্রহী ছিল তাদের মধ্যে এই প্রবণতাও ছিল যে তারা তাদের বিশ্বাসকে যুক্তির আলোকে প্রশ্ন করে দেখতে চায়- “I am a catholic, and philosophy of religion helps me in deepening my faith by way of—paradoxically—putting the faith itself into question and even criticizing it. — male assistant professor, public university, Italy.”

দ্বিতীয় পয়েন্টে বলি – আমি আর্টিকেলটা ভুল পড়ি নি এবং “খুব কম বিজ্ঞানীই মনে করেন যে বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে বিবাদ আছে”-এ কথাটা ভ্যালিড। কেন? বুঝিয়ে বলছি-

আপনি লিখেছেন- “এই গবেষণায় পাওয়া যায়, সাবজেক্টদের মধ্যে ১৫% বিজ্ঞানী মনে করে বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে সবসময় সংঘাত আছে, ১৫% বিজ্ঞানী মনে করে বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে কোনো সংঘাত নেই এবং ৭০% বিজ্ঞানী মনে করে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ধর্ম ও বিজ্ঞানের সংঘাত আছে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে মোট ৮৫% বিজ্ঞানী মনে করে ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের বিরোধ আছে।“

আপনার শেষের “৭০% বিজ্ঞানী মনে করে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ধর্ম ও বিজ্ঞানের সংঘাত আছে” থেকে “মোট ৮৫% বিজ্ঞানী মনে করে ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের বিরোধ আছে” কথাটা কিভাবে আসল পরিস্কার নয়। কারণ “৭০% বিজ্ঞানী মনে করে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ধর্ম ও বিজ্ঞানের সংঘাত আছে” এর অর্থ হল “৭০% বিজ্ঞানী মনে করে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই  ধর্ম ও বিজ্ঞানের সংঘাত নেই”। সুতরাং হিসেবটা হওয়ার কথা  “৮৫% বিজ্ঞানী মনে করে ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের নেই।“

ইন ফ্যাক্ট উক্ত হিসেবের আলোকে স্বয়ং অথররাই বলেছেন যে “only a minority of scientists see religion and science as always in conflict”। এখানে মাইনরিটি হচ্ছে ১৫%।

আমি অবশ্য স্বীকার করছি কথাটা এভাবে বললে ভাল হত “খুব কম বিজ্ঞানীই মনে করেন যে বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে সার্বক্ষনিক বিবাদ আছে।“

আপনার অন্যান্য কথার সাথে আমার কিছু জায়গায় মতের ঐক্য এবং কয়েক জায়গায় মতের মিল নেই। তবে সেই বিষয় নিয়ে আলোচনা বা তর্ক চালিয়ে যাওয়ার মত সময় আমার নেই। ধন্যবাদ।

রেফারেন্স:
1.           De Cruz H. Religious Beliefs and Philosophical Views: A Qualitative Study. Res Philos [Internet]. 2018;95(3):477–504. Available from: https://www.pdcnet.org/resphilosophica/content/resphilosophica_2018_0095_0003_0477_0504

2.        McNemar’s test in SPSS Statistics – Procedure, output and interpretation of the output using a relevant example | Laerd Statistics [Internet]. [cited 2019 Mar 8]. Available from: https://statistics.laerd.com/spss-tutorials/mcnemars-test-using-spss-statistics.php

মানুষের সাথে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের পার্থক্য – কিছু ভাবনা

চলুন, একটা মজার বিষয় চিন্তা করি- নিজেকে চ্যাট জিপিটির স্থানে রেখে কল্পনা করি।

ধরি, আপনি এমন ক্ষমতা পেয়ে গেলেন যে পৃথিবীর সমস্ত মানুষের সমস্ত লেখা আপনি পড়েছেন এবং মনে রাখতে পারছেন, ঐ লেখাগুলোতে ব্যবহৃত প্রতিটি শব্দ কতবার ব্যবহার হয়েছে এবং কোন শব্দ বা শব্দাবলীর আগে বা পরে ব্যবহার হয়েছে তা মনে রাখতে পারছেন, এবং সেই শব্দগুচ্ছের পারস্পরিক সম্পর্কের আলোকে আপনি লিখতে পারছেন।

কিন্তু, এই অস্বাভাবিক ক্ষমতার বিনিময়ে আপনার মধ্যে থেকে বোঝার ক্ষমতা নিয়ে নেয়া হয়েছে। অর্থাৎ, আপনি সব ভাষা শিখেছেন, সব তথ্য জানেন। কিন্তু, তার অর্থ জানেন না।

কি হবে একবার ভেবে দেখুন তো।


আপনাকে যে প্রশ্ন করা হবে, আপনি উত্তর করতে গিয়ে আপনার শেখা শব্দাবলীর মধ্যে সবচেয়ে সম্ভাব্য শব্দাবলির কম্বিনেশন ব্যবহার করবেন। কিন্তু, প্রথম দিকে আপনার এই শব্দাবলির কম্বিনেশন অনেক ক্ষেত্রেই অর্থহীন হবে। কিন্তু, ধরি আপনাকে শত শত মানুষের একটি দল, যারা অর্থ বোঝে তারা ভুল করলে ধরিয়ে দিয়েছেন। এভাবে আপনি সঠিক শব্দাবলির কম্বিনেশন সম্পর্কে একটা জেনে নিয়েছেন। সেক্ষেত্রে, আপনি যত বেশী জানবেন ততই হিউম্যান লাইক রিসপন্স দিতে পারবেন। কিন্তু, আপনি নিজে তার কিছুই বুঝবেন না।

অর্থাৎ, আপনি কোন কিছু না বুঝে নকল করছেন। কিন্তু, নকল করার ক্ষেত্রে অসংখ্য মানুষের ব্যবহৃত বাক্যের প্যাটার্ন থেকে সবচেয়ে সম্ভাব্য প্যাটার্ণকে মিমিক করছেন।

এমতাবস্থায়, আপনাকে একটি অধিক উন্নত মানের দ্রুত কার্যক্ষম সম্পন্ন নকলযন্ত্র ছাড়া আর কিছু কি বলা যাবে?

না, তাই না?

এবার চলুন একটু অন্যভাবে চিন্তা করি। আসলে ‘বুঝা’ (understanding) বলতে কি বুঝায়? হতে পারে আমাদের ব্রেইনের ভিতর এ ধরনেরই কোন ঘটনা ঘটছে। অর্থাৎ, আমরা ছোট বেলা থেকে যত ধরনের তথ্য দেখা, শোনা, গন্ধ নেয়া, স্বাদ পাওয়া এবং অনুভব করার বিভিন্ন অঙ্গের মাধমে পেয়ে এসেছি, আমাদের যখন কোন কিছু সম্পর্কে বলা হয়, আমাদের ব্রেইন উক্ত তথ্যগুলোর মধ্যে সম্ভাব্য স্ট্যাটিসটিক্যাল রিলেশনগুলো চেক করে, এবং তার ভিত্তিতে উত্তর দেয়।


আপনি হয়ত ভাবছেন- না। আমাদের ব্রেইন শুধু এরকম না। আমাদের মধ্যে মৌলিকভাবে মেশিন থেকে পার্থক্য আছে।


ওয়েল আপনি ঠিকই চিন্তা করেছেন। কিন্তু, পার্থক্যটা আসলে কোথায়?


এটি বুঝতে আপনাকে আরেকটু গভীরভাবে ভাবতে হবে।


যখন আমরা বিভিন্ন তথ্য বিভিন্ন সেন্সের মাধ্যমে জানছি, তখন আমাদের ব্রেইন আসলে বিভিন্ন ধরনের তথ্যের ফ্রিকোয়েন্সী ক্যালকুলেট করছে এবং তার ভিত্তিতে একটি সম্ভব্যতা হিসেব করছে।


আমি যখন একটি কালো পাখি দেখে, কা কা শব্দ শুনে কাক বলছি। তখন, আমি তাকে কাক হিসেবে চিনতে পারছি, কাক সম্পর্কে আমার পূর্বের নলেজ এর কারণে। এই নলেজ-এর মধ্যে আছে কাকের ভিজুয়েল, অডিটরী এবং লিঙ্গুয়িস্টিক তথ্য।


খেয়াল করে দেখুন, এখানে আমার ব্রেইন দু’ধরনের রিজনিং ব্যবহার করছে। একটি হচ্ছে ইনডাকটিভ। অর্থাৎ, আমার পূর্বের দেখা সব কাক কালো এবং কা কা শব্দ করে।


সুতরাং, একই ধরনের ইমেজ, সাউন্ডযুক্ত কোন পাখি সদৃশ দৃশ্য আমার চোখে পড়লে তাকে আমি কাক বলি। তবে এক্ষেত্রে, আমি ডিডাকটিভ রিজনিংও ব্যবহার করছি। কিভাবে? আমার জ্ঞানের সাপেক্ষে, যেহেতু হুবুহু কাক সদৃশ, কা কা শব্দ তৈরীকারী, কালো রঙ্গের সব পাখিই কাক- সেহেতু আমি এখন যে পাখিটা দেখছি তা কাক।


মজার বিষয় হলো, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স খুব এফিসিয়েন্টলি এই কাজটা করতে পারে।

তাহলে, মানুষের ইন্টেলিজেন্সের সাথে এ.আই.-এর পার্থক্যটা কোথায়?



পার্থক্যটা বুঝতে চলুন কিছুক্ষণ আগের উদাহরণটাতে আবার যাওয়া যাক। আমি, কাক সদৃশ পাখিটাকে জানালার শেইডে বসে থাকতে দেখে কাক বলছি, তখন আমি আসলে আরও কিছু সম্ভাবনাকে নাকচ করছি। এই সম্ভাবনাগুলো অবশ্য আমি কখনও শিখিনি। বরং, আমার ‘সেন্স’ আমার অজান্তেই কিছু ‘কাউন্টার ফ্যাকচুয়েল’কে নাকচ করছে। অর্থাৎ, এই যে কালো কাক সদৃশ কা কা শব্দকারী প্রাণীটি আমি দেখছি, তা যদি কাক না হয়ে অন্য কিছু হত তাহলে তার আওয়াজ, আকৃতি, বা রং কেমন হতে পারতো? এখন, এই ধরনের বিকল্প সম্ভব্যতা বা ব্যাখ্যাতো বিলিয়ন ট্রিলিয়ন বা অসংখ্য অগনিত হতে পারে। কিন্তু, আমরা সম্ভাব্য সবচেয়ে সঠিক ধারণাকে বেছে নিতে পারি। কিভাবে?


‘কমন সেন্স’ ব্যবহার করে। আমরা এই যে কমন সেন্স ব্যবহার করে সম্ভাব্য অসংখ্য ব্যাখ্যা থেকে একটি বেছে নেই, এটা হচ্ছে অ্যাবডাকটিভ রিজনিং।


ইন্টট্রেস্টিং বিষয় হচ্ছে, সকল প্রকার আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইনডাকটিভ এবং ডিডাকটিভ রিজনিং ব্যাবহার করে। কারণ, এগুলো প্রোগ্রাম করা যায়। কিন্তু, এখন পর্যন্ত অ্যাবডাকটিভ রিজনিং-প্রোগ্রাম করার করার কোন পদ্ধতি আবিস্কৃত হয়নি।


এমনকি বিভিন্ন সাইডওয়েস দিয়ে যদি অ্যবডাকশন প্রোগ্রামও করা যেত ‘কমন সেন্স’ কিভাবে প্রোগ্রাম করবে?


আরেকটু গভীরে ভাবলে বুঝা যায় যে, কমন সেন্সের বিষয়টি আমাদের উপলব্ধি করার ক্ষমতার সাথে অতপ্রতভাবে জড়িত। আমাদের ব্রেইনে ভিজুয়েল, অডিটরি, অলফ্যাকটরি, গাসটেটরি এবং প্রোপ্রিউসেপটিভ ইনফরমেশন যাওয়ার পর আমরা যে পারসিভ তথা উপলব্ধি করি, সেটাকে বলা হয় কোয়ালিয়া। আমাদের ইমোশোন আমাাদের অনন্য একটি বৈশিষ্ট্য।


কোয়ালিয়া, ইমোশন, কমন সেন্স, ফ্রি-উইল হচ্ছে মানুষের ইন্টেলিজেন্স-এর ইউনিক বৈশিষ্ট্য। হ্যা আমাদের স্বাধীন ইচ্ছেশক্তি ব্যবহার করে আমরা ‘না’ বলতে পারি। স্বাধীন ইচ্ছেশক্তি এবং কমন সেন্স-এর কারণেই আমাদের ব্রেইন অগনিত অল্টারনেটিভ থেকে সর্বত্তোম বেছে নিতে জানে। অসীম সময়ে হাতড়ে না বেড়িয়ে থামতে জানে।


আমাদের এই বৈশিষ্ট্যগুলো নন-কম্পিউটেবল। এগুলোর কারণে, আমরা তথা মানুষরা বুঝতে পারি যে কোন প্রোগ্রাম হাল্ট করবে এবং কোনটি হাল্ট না কররে চলতেই থাকবে। কিন্তু, কম্পিউটার অ্যালগরিদম তা নির্ধারণ করতে পারে না। 


আর, আমাদের আছে একটি সমন্বিত সেন্স বা self-awareness। আমাদের নিজেদের সম্পর্কে। যাকে আমরা নাম দিয়েছি কনসাসনেস। আর হ্যা, আমাদের কনসাসনেস আছে, কারণ আমাদের আছে আরও মৌলিক একটি সত্ত্বা। আর তা হল আমাদের আত্মা (soul), যা আমাদের মেশিন থেকে আলাদা করেছে।


সকল প্রশংসা আল্লাহর!            
..

মাইন্ড ব্রেইনের সাথে কিভাবে ইন্টারেকশন করে

মাইন্ড ব্রেইনের সাথে কিভাবে ইন্টারেকশন করে? এই প্রশ্নটা মাইন্ড-বডি ডুয়েলিজম-এর বিপরীতে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। কারণ, মাইন্ড ব্রেইনের সাথে ইন্টারেকশন করতে হলে মাইন্ড কর্তৃক এনার্জি ইনফিউজ করতে হবে। অর্থাৎ, শক্তির আদান প্রদান ছাড়া সাধারনত কোন কজাল রিলেশনশিপ সম্ভব নয়। অধিকন্তু, শক্তির নিত্যতা সূত্র অনুযায়ী আমরা জানি মহাবিশ্বের সর্বমোট এনার্জির কম বেশী হয় না। শক্তির কেবল রূপান্তর হয়। সে হিসেবে মাইন্ড কিভাবে ব্রেইনে শক্তি প্রবাহ করতে পারে সেটা নিয়ে নন-ডুয়্যালিস্টদের অবজেকশন আছে।

মজার বিষয় আধুনিক কোয়ান্টাম মেকানিক্সের আবিস্কারের মাধ্যমে এই অবজেকশন টিকে না। কারণ, কোয়ান্টাম মেকানিক্স অনুযায়ী দুটি এনট্যাঙ্গেলড পার্টিকেলের মধ্যে কোন প্রকার শক্তি প্রবাহ ছাড়াই ‘নন-লোকাল’ ইন্টারেকশন হতে পারে।

ধরুন, নাইট্রোজেনের দুটো পরমানু এনট্যাঙ্গেলড অবস্থায় আছে। আরও মনে করুন আপনি একটি পরমানুকে স্পেসশিপ দিয়ে মঙ্গল গ্রহে পাঠিয়ে দিয়েছেন। যদি পৃথিবীর পরমানু হয় Ne এবং মঙ্গল গ্রহের পরমানু হয় Nm, তাহলে দুটো পার্টিকেল বিপরীতমুখী স্পিনে ঘুরতে থাকবে (১/২ এবং -১/২).। ধরুন আপনি পৃথিবীতে বসে Ne এর স্পিন মাপলেন ১/২ তাহলে আপনি নিশ্চিত যে মঙ্গলগ্রহে যে আছে তার পরিমাপকৃত স্পিন হবে -১/২। মজার বিষয় হল আপনি যদি কোন ভাবে পৃথিবীর পার্টিকেলটার স্পিনি ঘুরিয়ে দিতে পারেন, মঙ্গল গ্রহের পরমানুটাও কোন প্রকার শক্তির আদান প্রদান ছাড়াই সম্পূর্ণ বিপরীত দিকে ঘুরে যাবে। একে বলা হয় নন-লোকাল ইন্টারেকশন।

সুতরাং, যদি স্বয়ং আধুনিক পদার্থবিদ্যা অনুযায়ী ননলোকাল কজেশন পসিবল হয় তাহলে মাইন্ড কেন ব্রেইনের সাথে শক্তি ছাড়া ইন্টার‍্যাকশন করতে পারবে না।।

(Further reading: The Soul Hypothesis, Mark Baker and Stuart Goetz, ed.) এবার একটু ভাবনার খোরাক। মজার বিষয় হল আমরা জানি পাটির্কেল গুলো অবজারভেশনের আগ পর্যণ্ত সুপারপজিশনে থাকে। যখন অবজারভেশন করা হয় তখনই কেবল কো্ল্যাপস করে। এখন আমাদের অবজারভেশনের অ্যাপারেটাস তথা আমাদের ইন্দ্রীয়সমূহ নিজেরাইতো এক ধরনের কোয়ান্টাম ম্যাকানিকাল এনসেম্বল। তাহলে একটা এনসেম্বল তথা আমাদের ব্রেইন কিভাবে আরেকটি এনসেম্বল তথা এক্সিপেরমেন্টাল এপারেটাসকে রিডাকশন করে। অর্থাৎ, ফিজিক্যাল সিস্টেম ছাড়াও আরও কিছু এখানে ফাংশন করছে। উক্ত কিছু হলো আমাদের মাইন্ড যার আলাদা একটি স্বত্ত্বা আছে। হতে পারে আমাদের ব্রেইনে আমাদের মাইন্ড নিয়মিত ফিজিক্যাল সিস্টেমের পরিবর্তন আনছে। যেমন: আপনি যখন কোন পাটিকুলার মুভমেন্ট করছেন তখন উক্ত মুভমেন্টের জন্য সংশ্লিষ্ট নিউরনাল সিগন্যাল মোটর কর্টেক্স-এ তৈরী হচ্ছে। হতে পারে যারা উক্ত মাইন্ডকে সুতীক্ষ্ণভাবে ব্যবহার করতে শিখেছে তারা ব্রেইনের বাইরের সিস্টেমকে অল্পমাত্রায় নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ পায়। থাক আর এগুচ্ছি না। এভাবে এগুতে থাকলে আলোচনা অন্যদিকে টার্ন করতে পারে।


সর্বপোরী আল্লাহই ভাল জানেন।

মানুষের আদি পিতা মাতা দুই জন

সাংবাদিকরা যখন বিজ্ঞান নিয়ে কথা বলেন তখন যে বিজ্ঞানের ‘ছেড়ে দে মা কেন্দে বাঁচি’ অবস্থা হয় তার সবচেয়ে উদাহরণ হল বাংলাদেশের চিকিৎসা বা চিকিৎসকদের নিয়ে করা প্রতিবেদন। ধরে নিলাম অধিকাংশ বাংলাদেশী সাংবাদিকদের নিয়ে এত বড় আশা কঠিন যে তারা কোন বিষয় সম্পর্কে বিস্তর জেনে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ দিবে। কিন্তু পাশ্চাত্যের সংবাদমাধ্যমগুলোর কি অবস্থা? বিজ্ঞানের কোন বিষয়ে তাদের কোন প্রতিবেদনে কি বিশ্বাস করা যায়?

ব্যক্তিগতভাবে আমার এই ধরনের সকল ‘পপুলার সায়েন্স নিউজ’-এ এক সময় ভালই আস্থা ছিল। কিন্তু, এখন আর তা করতে পারি না। কারণ, বিবর্তনবাদ, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রভৃতি নিয়ে সায়েন্স নিউজ রাইটারদের চটকদার নিউজ পড়ার পর যতবারই একটু গভীরে ঘেটে দেখেছি ততই তাদের তথা সায়েন্স (নিউজ) রাইটারদের প্রতি আমার বিশ্বাস হালকা হয়ে গেছে। সায়েন্স রাইটাররা দুই ধরনের হয়- হয় তারা ভাল জানে এবং জেনে ইচ্ছেকৃত স্পেসিফিক এজেন্ডা (সায়েন্টিজম-এর প্রসার) এর জন্য লিখে, অথবা, তারা জিনিসটা সম্পর্কে না জেনে বা না বুঝে লিখে। সব সায়েন্স নিউজ পোর্টাল এরকম হয় তাও বলছি না। তবু, সায়েন্স নিয়ে কোন ‘নিউজ’ দেখলে চেষ্টা করি মূল রিসার্চটা কি বলেছে একটু ঘেটে দেখার। বিশেষ করে, যদি সময় পাই, যে বিষয়টির টেকনিকাল দিকগুলো সম্পর্কে পড়েছি, অন্তত সে বিষয়গুলো একটু দেখে নেই।   



যাই হোক, ফেসবুকে দেখলাম ডেইলী মেইলের একটি নিউজ সবাই শেয়ার করছে যাতে বলা হচ্ছে যে, মার্ক স্টিকল ও ডেভিস থেলার নামক দু জন বিজ্ঞানী তাদের ২০১৮ সালের একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখিয়েছেন সমস্ত মানুষ এক জোড়া মানুষ থেকে এসেছে এবং এক লক্ষ বছর আগে একটি সর্বব্যপী দূর্ঘটনায় পৃথিবীর সব স্পিসিস প্রায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।(1)

এই নিউজ যারা পড়েছেন এবং শেয়ার করেছেন তাদের মধ্যে দু’ধরনের রিসপন্স দেখলাম-


১. যারা ডারউইনবাদকে বিতর্কিত তত্ত্ব বলে মনে করেন তারা এই গবেষণাটিকে বিবর্তনের বিপরীতে এভিডেন্স হিসেবে দেখছেন এবং তারা ইমপ্লিসিট ভাবে মনে করছেন যে এই আবিস্কার মেজর রিলিজিওন বর্ণিত ‘আদম-হাওয়া’ থেকে মানুষের আবির্ভাবকে এনডর্স করে।
 


২. যারা ডারউইনবাদকে প্রশ্নাতীতভাবে সত্য মনে করেন, তারা হয় চুপ আছেন বা এই রিসার্চ বিবর্তনতত্ত্বকে এনডর্স করে বলে মনে করছেন।

আগে থেকে এই ধরনের রিসপন্স সম্পর্কে পরিচিতি থাকায় আমি ভাবলাম মূল রিসার্চটা একটু পড়ে দেখা দরকার। যেই ভাবা সেই কাজ। আর্টিকেলটা পড়লাম। মলিকিউলার ইভল্যুশন সম্পর্কে আইডিয়া না থাকলে আর্টিকেল থেকে মূল বক্তব্য বের করাটা একটু কঠিন। তবে আমি যতটুকু বুঝেছি সেখান থেকে পাঠকদের জন্য আমার দুই পয়সা-
  

মূল রিসার্চটার টাইটেল হল “Why should mitochondria define species?” এটি প্রকাশিত হয়েছে হিউম্যান ইভল্যুশন জার্নালে ২০১৮ সালের মে মাসে(2)। নিচে আর্টিকেলে মূল বিষয়গুলো নিজের ভাষায় বলার চেষ্টা করছি।



১. আমরা জানি, প্রতিটি বহুকোষী জীব-এ মাইটোকন্ড্রিয়া নামক অঙ্গানু থাকে যা এটিপি হিসেবে শক্তি সঞ্চিত রাখে।

২. কোষে নিউক্লিয়ার ডিএনএ ছাড়াও মাইটোকন্ড্রিয়ার নিজস্ব ডিএনএ আছে।

৩. নিউক্লিয়ার ডিএনএ-তে মিউটেশনের ফলে জীবের ফিনোটাইপে (অর্থাৎ বাহ্যিক আকার আকৃতি ও বৈশিষ্ট্য) পরিবর্তন হয়।

৪. কিছু কিছু মিউটেশন আছে যাকে বলে ‘নিউট্রাল মিউটেশন’। কারণ, এই ধরনের মিউটেশনের ফলে প্রোটিনের অ্যামাইনো এসিড সিকোয়েন্সে কোন পরিবর্তন হয় না।

৫. কিন্তু, নিউক্লিয়ার ডিএনএ-তে এই ধরনের মিউটেশনের ফলেও ফেনোটাইপে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন  লক্ষ্য করা যায়।   

৬. প্রায় সব মিউটেশনই প্রোটিনের মূল ফাংশনের ব্যঘাত ঘটায়- হয় তার কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয় বা বিকল করে ফেলে। ফেনোটাইপে এ ধরনের পরিবর্তন হলে, উক্ত প্রানীটি রিপ্রোডাক্টিভ ক্ষমতা কমে যায়। কারণ, তার এক বা একাধিক ফাংশনে ত্রুটি থাকায় সে বেঁচে থাকার লড়াই-এ হেরে যায়। এ কারণে এই ধরনের মিউটেশনগুলো পরবর্তি জেনারেশনের প্রবাহিত হতে পারে না। অর্থাৎ, নিউক্লিওটাইড চেঞ্জযুক্ত প্রাণীগুলো অন্য প্রাণীর সাথে প্রতিযোগিতায় পরাজিত হয়। (এভাবে, মিউটেশনযুক্ত প্রাণীর মারা যাওয়া ও অরিজিনাল ফাংশনাল  সিকোয়েন্সযুক্ত প্রাণীর বেঁচে থাকার প্রক্রিয়াকে বলে পিউরিফাইং সিলেকশন।)

৭. এর ফলে ‘মা’ প্রানী ও ‘সন্তান’ প্রাণীর নিউক্লিয়ার ডিএনএ-তে খুব বেশী পরিবর্তন পাওয়া যায় না।

৮. কিন্তু, মাইটোকন্ড্রিয়ার ডিএনএ-এর ক্ষেত্রে ‘নিউট্রাল মিউটেশন’ কোন গুরুত্বপূর্ণ ফাংশনাল পরিবর্তন (ফেনোটাইপিক পরিবর্তন) আনে না। অর্থাৎ, মাইটোকন্ড্রিয়ার ডিএনএতে এই নিউট্রাল মিউটেশনগুলো থেকে যায়। অর্থাৎ ‘মা’ থেকে ‘সন্তানে’ জননকোষ বিভাজনের সময় সংঘটিত মাইটোকন্ড্রিয়াল মিউটেশনগুলো থেকে যায়।

৯. মাইটোকন্ড্রিয়ার ডিএনএতে এই নিউট্রাল মিউটেশনগুলো থেকে যাওয়া উপকারিতা কি?

১০. উপকারিতা হল- এর ফলে ‘মা’ এর তুলনায় ‘সন্তানদের’ মাইটোকন্ড্রিয়াতে যথেষ্ট জেনেটিক ডাইভারসিটি তৈরী হয়।

১১.  এখন, আপনি যদি ধরে নেন যে মাইটোকন্ড্রিয়ার ডিএনএ-তে প্রতিবার রিপ্রোডাকশনের সময় সংঘটিত পরিবর্তনগুলো একটি স্থির হারে হয় এবং আপনার যদি কোন স্পিসিস-এর প্রতি রিপ্রোডাকশনে মিউটেশনের হার জানা থাকে, তাহলে আপনি কোন প্রজাতির আভ্যন্তরিন জেনেটিক ডাইভারসিটি থেকে উক্ত প্রজাতি ও তার কমন এনসেস্টর-এর মর্ধবর্তী সময় বের করতে পারবেন(3)। (এই সময়কে বলা হয় কোলেসেন্স টাইম)

১২. বিজ্ঞানী স্টিকেল ও থেলার কোষের মাইটোকন্ড্রিয়ার এই বৈশিষ্ট্যটি ব্যবহার করে মানুষের কমন এনসেস্টর কত পূর্বে ছিলো এবং একই সাথে অন্যান্য প্রাণীদের কমন এনসেস্টর কতপূর্বে ছিলো তার একটি এস্টিমেট বের করেন।

১৩. তারা মাইটোকন্ড্রিয়ার COI barcode ডাটাবেজ BOLD-এর ডাটা ব্যবহার করেন। লক্ষ্যনীয় যে, GenBank এবং BOLD ডাটাবেজ মিলে প্রায় ৫০ লক্ষ প্রানীর COI barcode ডাটা সংরক্ষিত আছে।

১৩. তাদের হিসেব অনুযায়ী মানুষের কমন এনসেস্টর ছিলো প্রায় ১ লক্ষ বছর আগে। অর্থাৎ, প্রায় ১ লক্ষ বছর আগে একজন পুরুষ ও নারী থেকে বর্তমান মানব জাতি এসেছে। 

১৪. মজার বিষয় হলো, একই সাথে তারা অন্যান্য প্রাণীর বারকোড থেকে হিসেব করেন যে প্রাণী জগতের বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৯০%-এর কমন এনসেস্টর-এর বয়সও প্রায় ১ লক্ষ থেকে ২ লক্ষ বছর। অর্থাৎ, মানুষের মত অন্যান্য প্রাণীও ১ থেকে ২ লক্ষ বছর পূর্বের এক জোড়া কমন এনসেস্টর থেকে এসেছে।

১৫. এর অর্থ কি? সহজ বাংলায়, স্টিকেল ও থেলারের গবেষণা অনুযায়ী বর্তমানে প্রাণীজগতের প্রায় ৯০% প্রায় ১ লক্ষ থেকে ২ লক্ষ বছর আগের সংশ্লিষ্ট প্রজাতির এক জোড়া থেকে এসেছে। উদাহরণস্বরুপ, মানুষের ক্ষেত্রে এক জোড়া নারী-পুরুষ, বাঘের ক্ষেত্রে একজোড়া বাঘ ও বাঘিনী, ইত্যাদি। যারা প্রায় ১ লক্ষ থেকে ২ লক্ষ বছর আগে প্রায় কাছাকাছি সময় জীবিত ছিলো ।


১৬.  মানুষের ক্ষেত্রে এ ধরনের হিসেব (Estimate) আগেও করা হয়েছে।

১৭. লক্ষ্যনীয়, মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ শুধুমাত্র নারীদের জনন কোষ থেকে সন্তানের জাইগোটে প্রবাহিত হয়। ফলে, কেউ মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ থেকে মানুষের এনসেস্ট্রি অ্যানালাইজ করলে মানুষের সর্বশেষ কমন ‘মা’-কে ট্রেস করতে পারবে। ঠিক একই ভাবে শুধুমাত্র ‘Y’ ক্রোমোজোম নিয়ে এনসেস্টি অ্যানালাইজ করলে মানুষের সর্বশেষ কমন ‘বাবা’ কে ট্রেস করা যাবে।

১৮. মাইটোকন্ড্রিয়ার ভিত্তিতে প্রথম কমন ‘মাইটোকনড্রিয়াল ইভ’ এর বয়স বের করেন বিজ্ঞানী কেন, স্টোনকিং এবং উইলসন। তাদের হিসেবে অনুযায়ী মানুষের কমন ‘মাইটোকনড্রিয়াল ইভ’-এর বয়ষ প্রায় ২ লক্ষ বছর। অর্থাৎ ২ লক্ষ বছর আগে আমাদের কমন ‘মা’ পৃথিবীতে বিচরণ করেছিলেন। (4)


১৯.  ‘Y’ ক্রোমোজোম-এর ভিত্তিতে মানুষের কমন বাবা তথা ‘Y ক্রোমোজোমাল অ্যাডাম’-এর বয়স হিসেব ২০০০ সালের দিকে হিসেব করা হয়েছিলো প্রায় ৫০০০০ বছর(5)। যা ‘মাইটোকনড্রিয়াল ইভ’ থেকে প্রায় দেড় লক্ষ বছর ছোট।

২০. কিন্তু, পরবর্তীতে আরও রাইগোরাসটিল গবেষণা করে ‘মাইটোকনড্রিয়াল ইভ’ এবং ‘Y ক্রোমোজোমাল অ্যাডাম’-এর বয়স হিসেব করা হয় যথাক্রমে ৯৯ থেকে ১লক্ষ ৪৮ হাজার বছর এবং ১লক্ষ ২০ হাজার থেকে ১লক্ষ ৫৬ হাজার বছর(6)।

২১. বৈজ্ঞানিক গবেষণা অনুযয়ী, ‘মাইটোকনড্রিয়াল ইভ’ এবং ‘Y ক্রোমোজোমাল অ্যাডাম’ প্রায় কাছাকাছি সময় বাস করেছিলেন।


২২. তবে আমাদের মনে রাখা দরকার, এগুলো আসলে কিছু Provisional Estimate. কোন কনফার্মড হিসেবে নয়(7)।

২৩. যাই হোক, এখন আমরা যদি ১৫ নম্বর পয়েন্ট আবার পড়ি- স্টিকেল ও থেলারের গবেষণা অনুযায়ী বর্তমানে প্রাণীজগতের প্রায় ৯০% প্রায় ১ লক্ষ থেকে ২ লক্ষ বছর আগের সংশ্লিষ্ট প্রজাতির এক জোড়া থেকে এসেছে। উদাহরণস্বরুপ, মানুষের ক্ষেত্রে এক জোড়া নারী-পুরুষ, বাঘের ক্ষেত্রে একজোড়া বাঘ ও বাঘিনী, ইত্যাদি। যারা প্রায় ১ লক্ষ থেকে ২ লক্ষ বছর আগে প্রায় কাছাকাছি সময় জীবিত ছিলো।

২৪. এই রিসার্চ থেকে দুটি সিদ্ধান্তে আসা যেতে পারে।

২৫. এক, ১ থেকে ২ লক্ষ বছর আগে কোন এক বড় ধরনের  ক্যাটাস্ট্রফিক ইভেন্ট-এর কারণে তখনকার প্রায় অনেক প্রজাতির ‘ভিন্ন নিউক্লাওটাইড সিকোয়েন্স’ যুক্ত ভাই-বোনেরা মারা যায়। ফলে, যে একজোড়া পুরুষ-নারী থেকে পরবর্তী জেনারেশন-এর ডাইভারসিফিকেশন হয়। (একে বলা হয় পপুশেন বোটল নেক)


২৬. দুই,  ১ থেকে ২ লক্ষ বছর আগে পৃথকভাবে একজোড়া করে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী পৃথিবীতে পাঠানো হয় এবং তা থেকে পরবর্তী জেনারেশন-এর ডাইভারসিফিকেশন হয়।

২৭. মজার বিষয়, ‘ম্যাটেরিয়ালিস্ট’-দের জন্য ২৫ ও ২৬ দুইটাই প্রবলেমেটিক। কারণ, ২৫ ঠিক হলে নূহ (আ)-এর প্লাবণ-এর মত একটি ক্যাটাস্ট্রফের ইঙ্গিত পাওয়া, যার সম্পর্কে প্রায় সকল ধর্মগ্রন্থে বিভিন্নভাবে বর্ণনা এসেছে। আর, ২৬-কে তারা outright রিজেক্ট করে।


২৮. এজন্য আলোচ্য রিসার্চের দুইজন অথারকে বলতে শুনা যায়-

“This conclusion is very surprising,” co-author David Thaler of the University of Basel is quoted as saying, “and I fought against it as hard as I could.” His co-author is fellow geneticist Mark Stoeckle of Rockefeller University in New York (3)

২৯. মজার বিষয় হলো এরা আগে ২০০৪ সালের একটি পেপারে একই অথাররা পাখির দুটো লিনিয়েজ পরীক্ষা করে বলেছিলেন-
“The ad hoc modifications to neutral theory commonly proposed to account for low variation in individual cases, namely, recurrent bottlenecks or selective sweeps, struggle as general mechanisms. If bottlenecks limit variation, then a universal low ceiling implies recent population crashes for all species. This appears unlikely– almost a Noah’s Ark hypothesis–although perhaps long-term climate cycles might cause widespread periodic bottlenecks.” (8)

৩০. সবার শেষে Evolution News-এর এন্ড্রু জোনস-এর একটি কথা কোট করে শেষ করছি –

“In any case, one thing is clear: reconstructing the past is a complicated business and it is still full of surprises. There may be even bigger surprises in store.”

রেফারেন্স:

1.      McManus L. Every person was spawned from single pair of adults living up to 200,000 years ago, scientists claim | Daily Mail Online [Internet]. Daily Mail. 2018 [cited 2018 Nov 26]. Available from: https://www.dailymail.co.uk/news/article-6424407/Every-person-spawned-single-pair-adults-living-200-000-years-ago-scientists-claim.html?fbclid=IwAR25ZFBERNCQqdzNrdMfrQkVIFS8CSbBvJlRXTv8seHsngm-W8DR39Ke_HA

2.      Stoeckle MY, Thaler DS. Why should mitochondria define species? Hum Evol. 2018;33:1–30.

3.      Jones A. New Paper in Evolution Journal: Humans and Animals Are (Mostly) the Same Age? Evolution News. 2018.

4.      Cann RL, Stoneking M, Wilson AC. Mitochondrial DNA and human evolution. Nature [Internet]. 325(6099):31–6. Available from: http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/3025745

5.      Thomson R, Pritchard JK, Shen P, Oefner PJ, Feldman MW. Recent common ancestry of human Y chromosomes: Evidence from DNA sequence data. Proc Natl Acad Sci U S A [Internet]. 2000;97(13):7360–5. Available from: http://www.pnas.org/content/97/13/7360.abstract%5Cnhttp://www.pnas.org/content/97/13/7360.full.pdf

6.      Poznik GD, Henn BM, Yee MC, Sliwerska E, Euskirchen GM, Lin AA, et al. Sequencing Y chromosomes resolves discrepancy in time to common ancestor of males versus females. Science (80- ). 2013;341(6145):562–5.

7.      Klinghoffer D. About “Y Chromosome Adam” and & “Mitochondrial Eve” [Internet]. Evolution News. 2013 [cited 2018 Nov 26]. Available from: https://evolutionnews.org/2013/08/about_y_chromos/

8.      Stoeckle MY, Thaler DS. DNA barcoding works in practice but not in (neutral) theory. PLoS One. 2014;9(7):3–9.